Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মাসুদ রানা ৪৭০ – কালবেলা

    কাজী মায়মুর হোসেন এক পাতা গল্প433 Mins Read0
    ⤶

    কালবেলা – ৫৫ (মাসুদ রানা)

    পঞ্চান্ন

    অন্ধকার আস্তাবলে সারি সারি ঘোড়া রাখার স্টল। শার্টের পকেট থেকে তালার চাবি নিয়ে হাসল স্ক্যালেস। অ্যারন ভাল করেছে তাকে মেয়েটার জেলার করে। ফ্ল্যাশলাইটের আলো জ্বেলে আস্তাবলের ভেতরের ছোট ঘরটার প্যাডলক তালা খুলল সে। দরজা সামান্য ফাঁক করে উঁকি দিল ভেতরে। আদর-ভরা কণ্ঠে বলল, ‘আমি এসে গেছি, ডার্লিং! এবার দু’জন মিলে দারুণ মজা করব! শুধু তুমি আর আমি!’’

    ছোট ঘরের কোণে সাদা চুনকাম করা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে জ্যাকি। দু’হাতে জড়িয়ে ধরেছে ভাঁজ করা দুই হাঁটু। স্ক্যালেসকে দেখে ভয়ের ছাপ পড়ল ওর মুখে। কড়া আলোয় কুঁচকে গেছে চোখ। জ্যাকির মুখে আলো ফেলে দাঁত বের করে হাসল স্ক্যালেস। বসে বসে কাঁদছে মেয়েটা। বাহ্, ভাল তো!

    ‘আগেই তো বলেছি, আবার ফিরে আসব!’ থুতনির নিচে ফ্ল্যাশলাইট গুঁজে ভয়ানক শয়তানি হাসি দিল স্ক্যালেস। ঘাড় ফিরিয়ে মাইক হ্যানোভারকে বলল,

    হ্যানোভারকে বলল, ‘কিছুক্ষণ এখানে থাকছি। তুমি চোখ-কান খোলা রাখবে। নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ কী করতে বলেছি?’

    ‘জানতাম না আপনি কাজের ভেতরেও ফুর্তি করেন, ব্রাদার,’ চোখ টিপে হাসল হ্যানোভার।

    ‘আমি শালা তোমার ব্রাদার নই,’ কড়া চোখে তাকে দেখল স্ক্যালেস। ‘অবশ্য আমার কাজ শেষে তোমাকেও সুযোগ করে দেব। আমার কথা বুঝতে পেরেছ?’ ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিল সে। আলো ফেলল জ্যাকির চোখে-মুখে। ‘যাক্, এবার আমরা একা হলাম!’

    চোখ পিটপিট করে উঠে দাঁড়াল জ্যাকি। জানে না এখন কী করা উচিত। সরে যাওয়ার আগেই ছুটে গিয়ে ওর ঘাড়ের পাশে জোরালো এক রদ্দা মারল স্ক্যালেস। পরক্ষণে তার ডানহাতি ঘুষি নামল জ্যাকির বাম গালে। মেয়েটা জ্ঞান হারিয়ে টলে পড়ে যাচ্ছে দেখে একহাতে ধরে ফেলল স্ক্যালেস। আস্তে করে শুইয়ে দিল ঘরের মেঝেতে। বিড়বিড় করে বলল, ‘যাক, এবার শুধু ফুর্তি! তুমি আর আমি! দেখি তো তোমার ভেতরে কেমন মজা পাই!’

    ভেতরে সব ঠিক আছে তো? ঘরের বাইরে থেকে বলল মাইক হ্যানোভার।

    ‘অ্যাই, ‘শালা, চোপ!’ ধমক দিয়ে অচেতন মেয়েটার পাশে বসে পড়ল স্ক্যালেস। কাঁধ থেকে নামিয়ে মেঝেতে রেখেছে এম ফোর কারবাইন। ফ্ল্যাশলাইট এমনভাবে তাক করল, যাতে আলো সরাসরি পড়ে জ্যাকির দেহের ওপরে। কোমরের খাপ থেকে নিল ইউএসএমসি কা-বার নাইফ।

    ভীতু মেয়েদেরকে জোর করে ধর্ষণ করার আগে ছোরা দেখিয়ে দারুণ মজা পায় স্ক্যালেস। কা-বারের ডগা দিয়ে পটাপট ছিঁড়ে দিল জ্যাকির ব্লাউস। একহাতে কাপড় সরিয়ে খুশি হয়ে ভাবল, এমন শ্বেত-পর্বত-চূড়াই তো তার চাই!’

    ঝুঁকে জ্যাকির স্তনবৃত্তে কামড় দিতে গিয়েও থমকে গেল সে। বাইরে র‍্যাঞ্চ হাউসে গুলির আওয়াজ।

    ‘ওদিকে গোলাগুলি, জোর গলায় বলল হ্যানোভার।

    ঘাড় কাত করে খেঁকিয়ে উঠল স্ক্যালেস, ‘চোপ, শালা! আরেকবার কথা বললে তোর পোঁদ দিয়ে ভরে দেব আমার কা-বার নাইফ!’ আবারও জ্যাকির স্তনের দিকে ঝুঁকল সে। এখন দুনিয়া নিয়ে ভাবার সময় নয়। বাইরে যা হবে সব সামলে নেবে বার্ব।

    ব্লাউস ছিঁড়ে ফালি করে জ্যাকির মুখ বেঁধে দিল সে। খুব ভয় পেয়ে কাঁপতে শুরু করেছিল মেয়েটা। আর সেজন্যে এখন জ্ঞান ফিরে পেলেও ছোরা দেখিয়ে আগের মত মজা পাবে না স্ক্যালেস। খাপে কা-বার নাইফ রেখে দূরে শুনতে পেল মাত্র একটা গুলির আওয়াজ। শব্দটা এসেছে র‍্যাঞ্চ হাউস থেকে। দরজার কাছে হ্যানোভারের নার্ভাস পায়চারির শব্দ শুনে একটু থমকে গেল প্রাক্তন মেজর। পরক্ষণে আনমনে হাসল সে। পুলিশের বাচ্চার আক্কেল হয়েছে। এখন আর কথা বলে বিরক্ত করছে না!

    ‘সুন্দরী, মরে তো গেল তোমার মাসুদ রানা!’ চাপা স্বরে বলল স্ক্যালেস। ‘এবার পা-দুটো ফাঁক করে নিয়ে একটু ঘুরে আসি তোমার গভীর পুকুর থেকে!’

    অজ্ঞান জ্যাকির উরুতে হাত বোলাল সে। ধীরে ধীরে হাত উঠে এল স্তন পেরিয়ে কাঁধ ও গলায়। ভাবছে স্ক্যালেস: ধর্ষণ করার পর অচেতন অবস্থায় গলা টিপে মারব? আগে কখনও এই কাজটা করিনি। বা কেমন হবে লাশের সঙ্গে যৌন মিলন করলে? নাকি জ্ঞান ফিরলে জোর খাটিয়ে ভোগ করাই অনেক বেশি মজার? কাজ শেষ করে হাসতে হাসতে গলা টিপে মারব? নাকি ছোরা দিয়ে কেটে দেব ওর গলা?

    মজার এই জগতে আসলে কত কিছুই না করা যায়!

    প্রতিদিন এমন কত না চিন্তা আসে স্ক্যালেসের মগজে। চাইলে যা খুশি করতে পারে সে। সত্যি কেউ নেই বাধা দেবার।

    না, এই সুন্দরীকে খুন করে পরে ভোগ করার দরকার নেই। কাজ শেষে ছোরা দিয়ে ফাঁক করে দেবে ওর গলা। জ্যাকির ঠোঁটে চুমু দিতে গিয়েও পিছিয়ে এল স্ক্যালেস। চেইন ও বোতাম খুলে নামিয়ে দিল মেয়েটার জিন্সের প্যান্ট। ভেতরে গোলাপি রঙের জাঙ্গিয়া দেখে শিরশির করতে লাগল স্ক্যালেসের তলপেট। একহাতে টান দিয়ে নামাল জ্যাকির জাঙ্গিয়া। ফিসফিস করে বলল, ‘উহ্, আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারছি না! তুমি তো এটা জানো না, আমার অস্ত্রটা পুরো নয় ইঞ্চি!’

    ‘আরেহ্, বাইরে কী যেন…’ বলে দরজার কাছে চুপ হয়ে গেল মাইক হ্যানোভার।

    দরজার কবাটে ধুপ্ ধুপ্ করে চাপড় দিচ্ছে সে।

    ‘মর্, শালা! ধমকে উঠল স্ক্যালেস। ‘কুত্তার বাচ্চা, তোকে না বলেছি ভুলেও বিরক্ত করবি না!’

    খুব জোরে কী যেন লাগল দরজায়। লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে মেঝে থেকে ফ্ল্যাশলাইট নিল স্ক্যালেস। ছুটে গিয়ে খুলল দরজা। এতই রেগে গেছে যে স্থির করেছে, ঘুষি মেরে হ্যানোভারের গোটা দশেক মাড়ির দাঁত খসিয়ে দেবে।

    কিন্তু ঘরের দরজার কাছে নেই লোকটা।

    আস্তাবলে বেরিয়ে এসে ফ্ল্যাশলাইটের আলোয় স্টলগুলো এক এক করে দেখতে লাগল স্ক্যালেস। নিচু গলায় ডাকল, ‘কী রে, কই গেলি, শালা পুলিশের বাচ্চা!’

    কোন জবাব নেই।

    লোকটা বোধহয় গেছে অন্যদেরকে সাহায্য করতে।

    ‘মর্, শুয়োরের বাচ্চা!’ বিড়বিড় করে বলল স্ক্যালেস। মনে মনে ভেবেছিল মেয়েটাকে খুন করে দু’ভাগ করে দেবে পুলিশ অফিসারের গলা। একটু হতাশ হলো। কয়েক ঘণ্টা ধরেই হামবড়া ভঙ্গি করছিল হারামজাদা। তার ওপরে শালা আবার পুলিশ। বহুদিন আইনরক্ষাকারী কাউকে খুন করে না সে। আগেও মনে হয়েছে, সাধারণ মানুষের চেয়ে পুলিশকে খুন করা অনেক বেশি মজার। তার ওপর সে যদি হয় দুর্নীতিপরায়ণ, তো কথাই নেই। মাইক হ্যানোভার শালা মরলে এবার কে ডাকবে পুলিশ? -মনে মনে হাসল স্ক্যালেস।

    আবার এসে ঢুকল ছোট ঘরটার ভেতরে। আর তখনই তার মুখে প্রচণ্ড বেগে ধুম্ করে লাগল কী যেন। চোখের সামনে সাদা আলোর বিশাল এক বিস্ফোরণ দেখল স্ক্যালেস। পরের সেকেণ্ডে চোখের সামনে জ্বলে উঠল কুয়াশাভরা লাখো নক্ষত্র। তার মুখ-নাক থেকে ছিটকে বেরোল রক্তের স্রোত। তাল সামলাতে না পেরে মেঝেতে পড়ে গেল স্ক্যালেস। তীব্র ব্যথার ভেতরে ভাবতে শুরু করেছে : মাটি ফুঁড়ে কখন এল এই হারামজাদা?

    ছাপ্পান্ন

    চট্‌ করে পাল্‌স্ দেখে বুঝে গেল রানা, একটু সময় লাগলেও জ্ঞান ফিরে পাবে জ্যাকি। ব্লাউস ছিঁড়ে নিয়ে সরু ফিতা তৈরি করে ওর মুখ বেঁধে দিয়েছে স্ক্যালেস। গিঠ খুলে মেঝেতে ফিতা ফেলল রানা। কেটে গেছে জ্যাকির ঠোঁটের কোণ। জোর ঘুষি লেগে ফুলে গেছে একদিকের গাল। কঠোর চোখে স্ক্যালেসকে দেখে নিয়ে সহজ সুরে বলল রানা, ‘আগে আমাকে দেখলেও মনে হয় না তুমি চেনো আমি কে।’ নলকাটা বন্দুক লোকটার মুখের দিকে তাক করল রানা।

    চোখ পিটপিট করে ওকে দেখছে প্রাক্তন মেজর। রক্তে ভেসে যাচ্ছে সারামুখ। হাসতেই দেখা গেল তার রক্তাক্ত মাড়ি ও দাঁত। নিচু গলায় বলল সে, ‘তুই একটা কুত্তার বাচ্চা!’

    ‘ভাল করেই জানতাম তোমাকে কোথায় পাব,’ বলল রানা। ‘উঠে দাঁড়াও।’

    স্ক্যালেস আহত হলেও অত দুর্বল নয়, চট্ করে উঠে দাঁড়াল। একটু ভাঁজ হয়ে গেছে দুই হাঁটু। লড়াইয়ের জন্যে তৈরি। চাপা স্বরে বলল, ‘চাইলে গুলি করো। ভয় পাই না।’

    হাত থেকে ইথাকা বন্দুক ছেড়ে দিয়ে বেল্টের খাপে রাখা ট্রেঞ্চ নাইফ স্পর্শ করল রানা। অবশ্য ছোরা বের না করেই বলল, ‘আগে টের পেয়েছ ছোরার হাতল কতটা শক্ত। আর এবার বুঝবে দেহে ফলা ঢুকে গেলে কেমন লাগে।’

    মেঝেতে রক্তমাখা থুতু ফেলল স্ক্যালেস। হাসি-হাসি মুখে বলল, ‘ভেবেছ আগে কখনও আমার গায়ে ক্ষত তৈরি হয়নি?’

    এবার শেষবার হবে,’ নিচু গলায় বলল রানা।

    ‘বিরাট ভুল করলে, মাসুদ রানা,’ রক্তাক্ত হাসি উপহার দিল স্ক্যালেস। ‘তোমাকে তো মাতাল লোক’ বলেই জানি। হাতের মদের বোতলটা এখন কোথায়? যেহেতু লড়তে চাও, কাজেই ছোরা দিয়ে কেটে আলাদা করে দেব হাত-পা। পরে সব গিলিয়ে দেব তোমাকেই। তোমার বান্ধবীর কলিজাটাও গিলতে হবে তোমাকে। অবশ্য তখন সঙ্গে গিলিয়ে দেব কয়েক ঢোক উইস্কি।’

    চুপ করে টনি স্ক্যালেসের চোখে চেয়ে আছে রানা।

    হাসতে হাসতে হঠাৎ করে খাপ থেকে কা-বার নাইফ নিয়ে দু’পা সামনে বেড়ে একপাশ থেকে সাঁই করে ছোরা চালান স্ক্যালেস। এমন রাউণ্ডহাউস স্ল্যাশ দেখলে ঘাবড়ে যায়’ অনেকে। ছোবল দেয়া র‍্যাটলস্নেকের মতই দ্রুত স্ক্যালেস। তবে একসেকেও আগেই রানা বুঝে গেছে, কী করবে লোকটা। ঝট করে পিছিয়ে যাওয়ায় রানার পেটের তিন ইঞ্চি দূর দিয়ে গেল ছোরার ডগা। আর তখনই হাত বাড়িয়ে খপ্ করে স্ক্যালেসের কবজি ধরেছে রানা। হাতের নার্ভে প্রচণ্ড চাপ পড়তেই আলগা হয়ে গেছে স্ক্যালেসের মুঠো। ঠং শব্দে মেঝেতে পড়ল কা-বার নাইফ। প্রায় একই সময়ে ঘুরে ডান, হাতের কনুই ঠাণ্ডামাথার খুনিটার মুখে গেঁথে দিল রানা। প্রচণ্ড ব্যথা পেয়ে মাতালের মত টলমল করে পিছিয়ে গেল লোকটা। এদিকে সামনে বেড়ে রানা ধরে ফেলল তার কবজি। অন্যহাতে বিদ্যুদ্বেগে খাপ থেকে নিল ট্রেঞ্চ নাইফ। শক্তহাতে ধরেছে নাকলডাস্টারের হাতল। পরক্ষণে ট্রেঞ্চ নাইফের কাঁটাভরা হ্যাণ্ডগার্ড ঠাস্ করে নামল স্ক্যালেসের নাকের ওপরে।

    প্রচণ্ড ব্যথায় পাগল হয়ে গেল লোকটা। জানেও না কোথা থেকে এসেছে তীব্র আক্রমণ, ফলে আত্মরক্ষাও করতে পারেনি। তার নাক হয়ে গেছে রক্তে ভরা ছোট একটা স্তূপ। আরেক গুঁতো খেয়ে ভেঙে যাওয়া নাক উঠে গেল বাম চোখের কাছে। পরক্ষণে হ্যাগার্ড মুখের ওপরে নেমে আসতেই খটাং শব্দে ভেঙে গেল স্ক্যালেসের চোয়ালের হাড়। মুখ থেকে ছিটকে বেরোল ভাঙা কয়েকটা দাঁত। একসেকেণ্ডের জন্যে আক্রমণে বিরতি দিচ্ছে না রানা। একেক আঘাতে ভেতরে ডেবে যাচ্ছে স্ক্যালেসের থেঁতলে যাওয়া নাক আর মুখ। কয়েক জায়গায় ভাঙল চোয়াল। ঠাস্ করে ফেটে গেল বাম অক্ষিকোটর। স্ক্যালেসের চেহারাটা হয়ে গেছে রক্ত ও থকথকে মাংসের দলার মত।

    তাল সামলাতে না পেরে চিত হয়ে মেঝেতে পড়ে গেল আমেরিকান স্পেশাল ফোর্সের প্রাক্তন মেজর, প্রায় অচেতন। তার কবজি ধরে রেখেছে রানা। নিজের ভাঁজ করা হাঁটুর ওপরে রেখে উল্টোদিকে জোর মোচড় দিতেই মড়াৎ শব্দে ভাঙল লোকটার বাহুর হাড়। রক্তভরা মুখে আর্তনাদ করতে গিয়ে গড়গড়ার মত আওয়াজ করছে স্ক্যালেস। তার হাত ছেড়ে দিয়ে অন্য হাতটা নিয়ে ভাঙল রানা। আর্তচিৎকার করার সাধ্য নেই ঠাণ্ডামাথার খুনির। তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কিলবিল করছে মেঝেতে। সে যেন গায়ে ডেটল ঢেলে দেয়া কোন মৃতপ্রায় কেঁচো। বুটের হিল দিয়ে তার গলায় জোরে চাপ দিল রানা। শ্বাস আটকে যাওয়ায় বিশ্রী ঘড়ঘড় শব্দ করছে লোকটার কণ্ঠনালী। থেঁতলে যাওয়া ফাটা মুখের দিকে চেয়ে নরম সুরে বলল রানা, ‘এতক্ষণ যে খাতির পেলে, সেটা এসেছে বেলা ওয়েসের তরফ থেকে।

    স্ক্যালেসের থুতনির নিচে নরম মাংসে ডগা ঠেকিয়ে গায়ের জোরে ওপরে ছোরা ঠেলল রানা। ভাঙা চোয়াল, জিভ ও তালু ভেদ করে মগজের গভীরে ঢুকল ট্রেঞ্চ নাইফ। গলে যাওয়া চোখদুটো উল্টে গেল নরপশুটার। ক্ষত-বিক্ষত, বিকৃত মুখটা আরেকবার দেখে নিয়ে হ্যাঁচকা টানে ছোরা বের কবল রানা। রক্তাক্ত মগজমাখা ফলা মুছে নিল মৃত মেজরের গেঞ্জিতে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে খাপে গুঁজে রাখল ট্রেঞ্চ নাইফ। রক্তপিশাচটাকে খুন করে বুকে রাগ বা তৃপ্তি কিছুই নেই রানার। ওর শুধু মনে হলো, শেষ করেছে নিজের জরুরি একটা কাজ। স্ক্যালেসের কারবাইনের ট্যাকটিকাল স্লিং বাম কাঁধে ঝুলিয়ে ইথাকা বন্দুক নিয়ে ওটা ঝোলাল ডান কাঁধে।

    স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিচ্ছে অচেতন জ্যাকি। তবে ওকে এখানে রাখা যাবে না। সাবধানে ওকে তুলে নিল রানা। আস্তাবলে বেরিয়ে একবার থামল এক স্টলের সামনে। ওটার ভেতরে রেখেছে স্ক্যালেসের এক সঙ্গীর লাশ। রানা চলে এল চওড়া গেটের কাছে। আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে দেখল ডানে- বামে কেউ নেই। এখন পর্যন্ত ওর হাতে মারা পড়েছে শত্রুপক্ষের ছয়জন। অর্থাৎ র‍্যাঞ্চ হাউসের ভেতরে ও বাইরে এখনও আছে অ্যারনের দলের আরও তিনজন খুনি।

    এ-ছাড়া আছে বার্ব। তার ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে, নিজেকে মনে করিয়ে দিল রানা। আস্তাবল থেকে বেরিয়ে চলে এল র‍্যাঞ্চ হাউসের উঠনে। শিরশির করছে মেরুদণ্ড। যে-কোন সময়ে হয়তো পিঠে এসে বিঁধবে বুলেট। ভাল করেই বুঝে গেছে, কোথায় রাখতে হবে জ্যাকিকে। সেজন্যে আগেই সংগ্রহ করেছে চাবি। জায়গাটা তেমন নিরাপদ না হলেও আপাতত আর কিছু করার নেই। জ্যাকিকে কাঁধে রেখে অন্যহাতে ডজ র‍্যাম পিকআপের দরজা খুলল রানা। মেয়েটাকে শুইয়ে দিল পেছনের সিটে। জানালার টিন্টেড কাঁচ কুচকুচে কালো, দিনের আলোতেও জ্যাকিকে দেখতে পাবে না কেউ।

    একটু পর জ্ঞান ফিরলে অচেনা জায়গায় হয়তো ঘাবড়ে যাবে বেচারি। তবে ওকে সব বুঝিয়ে বিদায় নেবার মত সময় এখন রানার হাতে নেই। নিঃশব্দে গাড়ির দরজা আটকে লক করে কি ফব-এর বাটন টিপে ডিসআর্ম করল অ্যালার্ম সিস্টেম। নইলে জ্যাকি জেগে উঠে দরজা খুলতে গেলে কর্কশ আওয়াজে বেজে উঠবে সাইরেন।

    ‘একটু অপেক্ষা করো,’ জ্যাকি কিছুই শুনছে না জেনেও নিচু গলায় বলল রানা। উঠন পেরিয়ে আবারও গিয়ে ঢুকল র‍্যাঞ্চ হাউসে। করিডরে থেমে উঁকি দিল লিভিংরুমের ভেতরে। মগজের ভেতরে চেরোকি কুঠার নিয়ে আর্মচেয়ারে বসে আছে ধূসর চুলের লোকটা। এ-বাড়িতে অস্ত্রাগার গড়ে তুলেছে বিগ রিয়ান কনার। বারের কাছে রক্তের পুকুরে পড়ে আছে অর্ধেক মাথা উড়ে যাওয়া একলোক। আশপাশে আর কেউ নেই। আবার করিডরে বেরিয়ে এল রানা। ওর ডানের দরজার তলা থেকে এসেছে রক্তের স্রোত। দরজাটা সামান্য ফাঁক করে উঁকি দিল রানা। রক্তের ভেতরে পড়ে আছে বিশালদেহী বয়স্ক এক লোক। তার চেহারার সঙ্গে অ্যারন কনারের অনেক মিল। বাড়ির ভেতরে ঢুকে প্রথম যে গুলির শব্দটা পেয়েছে রানা, ওটা এসেছিল এ-ঘর থেকেই। বুড়োকে কে খুন করল, জানা নেই ওর। অবশ্য জীবিত থাকলে হয়তো তার কারণে বিপদ বাড়ত রানার।

    সিঁড়ির দিকে চলল ও। খুঁজে বের করতে হবে অ্যারন কনারকে। সে এখানেই আছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। বোধহয় বসকে পাহারা দিচ্ছে লিয়াম বার্ব। সে যে কর্তব্য ভেবে সেটা করছে, তা নয়, আসলে নিয়মিত যার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা মেলে, তাকে খাতির না করে উপায় নেই বার্বের মত লোকের। এতবড় বাড়িতে অ্যারনকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে লোকটা? –ভাবল রানা। পরক্ষণে বুঝে গেল, গোলাগুলি হওয়ার সম্ভাবনা নিচতলায় বেশি, কাজেই আর যেখানেই থাকুক, একতলায় নেই তারা।

    করিডরের শেষদিকে কোন আলো নেই। আঁধার সিঁড়ির কাছে গিয়ে থামল রানা। প্রথম ধাপে পায়ের ওজন চাপিয়ে দেখে নিল ক্যাঁচকোঁচ শব্দ করে কি না। সিঁড়ির মাঝের অংশ মচমচে হলেও দু’দিকের কাঠ ঠিক আছে। বামের কিনারা ধরে উঠতে লাগল রানা। সামনে এক শ’ আশি ডিগ্রি ঘুরে উঠে গেছে সিঁড়ি। দোতলায় উঠে চওড়া করিডরে পা রাখল রানা। দু’দিকে ঘরের দরজা। করিডরের দেয়ালে ঝুলছে হরিণের বিশাল সব মাথা। চকচক করছে তাদের কাঁচের চোখ।

    করিডর ধরে এগিয়ে এক এক করে দু’দিকের দরজা সামান্য ফাঁক করে দেখতে লাগল রানা। পঞ্চম দরজা খুলে বুঝল ওটা বেডরুম। দরজা নিঃশব্দে বন্ধ করতে গিয়ে থমকে গেল। এইমাত্র ক্যাঁচকোঁচ আওয়াজ হয়েছে। ঘাড় কাত করে কান পাতল রানা। বুঝতে দেরি হলো না, পিছু নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসছে কমপক্ষে তিনজন লোক।

    র‍্যাঞ্চ হাউসে আবার পা রেখেছে অ্যারন কনারের দলের দস্যুরা। চট্ করে বেডরুমে ঢুকে দরজা আটকে দিল রানা। অন্ধকারে মন দিয়ে শুনতে লাগল পায়ের আওয়াজ। পদশব্দ উঠল দোতলায়। একটু আগে রানা যেভাবে দরজা খুলে দেখেছে, সেভাবে এক এক করে দরজা খুলছে তারা। এগিয়ে আসছে এ-ঘরের দিকে। দলে বোধহয় কমপক্ষে চারজন।

    মিনিটখানেক পর রানার ঘরের সামনে এসে থামল তারা। বাইরে থেমে গেছে পদশব্দ। দরজার তলা দিয়ে এল ফ্ল্যাশলাইটের সাদা আলো। রানার মনে হলো, শুনতে পেয়েছে কয়েকজনের ফিসফিস করে কথা বলার আওয়াজ।

    ঘুরতে শুরু করেছে দরজার হ্যাণ্ডেল।

    দু’পা পিছিয়ে কোমরের কাছ থেকে দরজার মাঝামাঝি জায়গায় ইথাকা বন্দুকের নল তাক করল রানা। পরক্ষণে দ্রুত পাম্প করে দরজা লক্ষ্য করে পাঠাল পর পর তিনটে বাকশট শেল। মাযল থেকে ছিটকে বেরোনো কমলা আগুনের আলোয় দেখতে পেল কবাটের বুকে তৈরি হয়েছে এবড়োখেবড়ো বিশাল এক গর্ত। ঝাঁঝরা হয়ে গেছে দরজার মাঝের কাঠ।

    গুলির প্রচণ্ড শব্দে ঝনঝন করছে রানার কান। তারই মাঝে শুনতে পেল সিঁড়ির দিকে ছুট দিয়েছে একজন। দেরি না করে ইথাকার ব্রিচে সলিড বুলেট ভরে নিল রানা। পাম্প করেই বন্দুক হাতে ঘুরে গেল ছুটন্ত পায়ের আওয়াজের দিকে। সামনে বাধা থাকলেও কোন সমস্যা নেই ওর। সলিড বুলেট কাঠের দেয়াল ভেদ করে ঠিকই লাগবে টার্গেটের গায়ে। রানার কাঁধে ঝাঁকি দিয়ে বিকট ‘বুম!’ আওয়াজে গর্জে উঠল ইথাকা। সঙ্গে সঙ্গে দেয়ালের বুকে দেখা দিল বড় এক গোল গর্ত। রানার গায়ে এসে লাগল একগাদা ঝুরঝুরে প্লাস্টার।

    সিঁড়ির কাছে ধুপ্ করে পড়ল কেউ। ঝড়ের বেগে দরজা খুলে করিডরে বেরিয়ে এল রানা। সামনেই মেঝেতে পড়ে আছে ক্ষত-বিক্ষত তিনটে লাশ। সেগুলো টপকে সিঁড়ির দিকে ছুটল রানা। পকেট থেকে নিল আরও কয়েকটা বুলেট। না থেমে দৌড়ের ওপরে গুলি ভরল শটগানের ম্যাগাযিন টিউবে। ওর পেছনে পড়ল দেয়ালের একটা গর্ত। ওদিক দিয়েই বের হয়েছে ইথাকার বুলেট। বাম দেয়ালে লাল রক্তের ছিটা। সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে নেমে গেছে আহত লোকটা। টার্গেটের পিছু নিয়ে মাঝের ল্যাণ্ডিঙে ‘পা রেখে, পরের সেকেণ্ডে ঝটকা দিয়ে পিছিয়ে এল রানা। নিচতলায় খাপ পেতে অপেক্ষা করছে আততায়ী। ওক কাঠের রেইলিঙে লেগে দেয়াল ভেদ করল তার ছোঁড়া বুলেট। একপাশে সরে গিয়ে ইথাকার নল রেইলিঙের ওদিকে নিল রানা। নিচের লোকটাকে লক্ষ্য করে পর পর পাঠাল চারটে বাকশট।

    কয়েক সেকেণ্ড পর মিলিয়ে গেল গুলির প্রতিধ্বনি। রানার গুলির জবাবে কোন প্রতিআক্রমণ নেই। নীরব হয়ে গেছে চারপাশ। সিঁড়ির অন্ধকারে পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে রানা। ধীরে ধীরে পেরিয়ে গেল দীর্ঘ এক মিনিট। তারপর আরেক মিনিট। নিচে নড়াচড়ার কোন আওয়াজ নেই।

    আরও দু’মিনিট পর সন্তুষ্ট হয়ে ওপরের করিডরে ফিরে এল রানা। গিয়ে থামল তিন লাশের পাশে। মেঝে ভেসে যাচ্ছে তাজা রক্তে। বিপরীত দেয়ালে রক্তের ছোপ। ক্ষত- বিক্ষত হয়ে গেছে ওদিকের দরজা। অন্ধকারে রানা দেখল, কাঠের দরজার স্প্রিন্টার লেগে ছিঁড়েখুঁড়ে গেছে লাশ তিনটের বুক-পেট। মৃতদেহ পাশ কাটিয়ে এক এক করে আবারও ঘরের দরজা খুলে দেখতে লাগল রানা। হ্যাণ্ডেল মুচড়ে টের পেল অষ্টম দরজার তালা লক করা। এ-দরজার কাঠ নিরেট লাথি মারলেও কোনভাবেই খোলা যাবে না।

    ‘বার্ব, এলে?’ ভেতর থেকে বলল কেউ। গলার আওয়াজ অ্যারন কনারের!

    কেউ জবাব দিচ্ছে না বুঝে ঘর থেকে গুলি করল লোকটা। পুরু কাঠের দরজায় তৈরি হলো সরু তিনটে ফাটল।

    ঝট করে দরজার কাছ থেকে সরে গেছে রানা। ওর বুঝতে দেরি হয়নি, লোকটার কাছে আছে ভারী ক্যালিবারের অস্ত্র। তাতে অসুবিধে নেই, আরও শক্তিশালী অস্ত্র আছে রানার কাছে। ইথাকার ব্রিচে আরেকটা ব্রেনেক বুলেট ভরে দরজার লকের সঙ্গে মাযল ঠেকিয়ে গুলি করল ও। দুনিয়ায় এমন কোন তালা নেই, যেটা ভারী বুলেটের আঘাতে চুরমার হবে না। প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়ে ভেতরের দিকে খুলে দেয়ালে গিয়ে লাগল দরজার কবাট।

    ঘরে ভীত ইঁদুরের মত লুকিয়ে পড়তে চাইছে অ্যারন কনার। কিন্তু ভেতরে কেউ ঢুকে পড়েছে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়াল। রানার বুকের দিকে তাক করতে গেল .৪৪ ম্যাগনাম রিভলভার। কিন্তু কাপুরুষটার ওপরে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মত ঝাঁপিয়ে পড়ল রানা। তার হাত থেকে মুচড়ে কেড়ে নিল ভারী রিভলভার। ওটার বাঁট দিয়ে প্রচণ্ড এক গুঁতো বসিয়ে দিল অ্যারন কনারের মুখে। ভীষণ ব্যথা পেয়ে ডেস্কের দিকে টলমল করে পিছিয়ে গেল লোকটা।

    বাড়ির অন্যান্য ঘরের মতই ঐতিহ্য বজায় রেখে স্টাডিরুম গুছিয়ে নিয়েছে বিগ রিয়ান কনার। প্রকাণ্ড ডেস্কে জ্বলছে তামা ও সবুজ কাঁচের ব্যাঙ্কার ল্যাম্প। পেছনে চামড়ার বিশাল চেয়ার। একটু দূরে উঁচু ফায়ারপ্লেস। ওপরের দেয়ালে এক র‍্যাকে আছে শিংওয়ালা বড় এক হরিণের স্টাফ করা মাথা। ওটার পাশে পুরনো আমলের নামকরা লিভার অ্যাকশন উইনচেস্টার রাইফেল। বুড়ো র‍্যাঞ্চার বোধহয় ওটা দিয়েই শিকার করেছিল হরিণের এই ট্রফি।

    ঘরের ভেতরে কী আছে ভালমত খেয়াল করতে পারেনি রানা। ওর চোখে ভাসছে আয়ারল্যাণ্ডের সৈকতে প্রাণভয়ে ছুটে আসা বেলার সেই করুণ দৃশ্য। বেচারির পেছনে তেড়ে আসছে অ্যারন কনারের পাঠিয়ে দেয়া দুই খুনি। রানা আগেও স্বপ্নে দেখেছে, পাথরের ওদিকে পড়ে আছে বেলার গলাকাটা লাশ।

    ‘না, প্লিয, আমাকে খুন কোরো না, আরও এক পা পেছাল অ্যারন। বিস্ফারিত হয়েছে দু’চোখ। সামনে বাড়িয়ে দিয়েছে দু’হাত। ও-দুটো দিয়ে যেন ঠেকিয়ে দেবে বারো গেজের বন্দুকের বুলেট।

    সরাসরি তার মুখে ইথাকার মাল তাক করল রানা। কালাহারকে বলা কথাটা মনে পড়ল: ‘আমি ঠাণ্ডামাথার খুনি নই।’ কিন্তু অ্যারন কনারের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কিছু করতে গিয়ে মন থেকে কোন আপত্তি এল না ওর।

    শটগান পাম্প করল রানা। ক্ল্যাক আওয়াজে পেছনে যাবে এক্সট্র্যাক্টর ক্ল। খপ করে ধরবে খরচ করা গুলির খোসার রিম। টেনে চেম্বার থেকে বের করে দেবে ইজেক্টর পোর্ট দিয়ে। তখনই ক্ল্যাক আওয়াজে সামনে আসবে পাম্প। ম্যাগাযিনের টিউব থেকে বেরিয়ে চেম্বারে ঢুকবে তাজা বুলেট। কিন্তু বড় ধরনের কোন ত্রুটি হয়েছে ইথাকা শটগানের মেকানিযমে। সামনে বাড়ছে না পাম্প। ঠিকভাবে কাজ করছে না অ্যাকশন। কী যেন আটকে দিয়েছে চেম্বার। একসেকেণ্ড পর রানা বুঝল, বিকল হওয়ায় গুলির খালি খোসা টেনে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে ইজেক্টর।

    পাম্প-অ্যাকশন শটগানের ক্ষেত্রে এটা বড় ধরনের ঝামেলা। পুলিশ বা সৈনিককে ফায়ারআর্ম ট্রেনিঙে শেখানো হয় কীভাবে সারাতে হবে এ-ধরনের সমস্যা। প্রতিটি ক্লাসেই এ-বিষয়ে আলাপ করা হলেও যুদ্ধক্ষেত্রে এমন ঘটে খুব কম। বলা চলে দশলক্ষ বারে একবার বিকল হয় পাম্প-অ্যাকশন বন্দুক। ব্যাপারটা আসলে গাড়ি নিয়ে মরুভূমিতে চলার সময়ে একাধিক চাকা ফুটো হওয়া বা ব্যাটারি নষ্ট হওয়ার মত। কিন্তু সেক্ষেত্রে জোর সম্ভাবনা থাকে, শেষমেশ করুণভাবে মরবে মানুষটা।

    রানা বন্দুকের কুঁদো জোরে মেঝেতে ঠুকতে পারে, অথবা হাত থেকে ফেলে দিতে পারে বিকল অস্ত্র। তার বদলে কাঁধ থেকে নেবে স্ক্যালেসের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া কারবাইন। কিন্তু সেক্ষেত্রে তা করতে হবে দু’ থেকে তিন সেকেণ্ডে। কারণ অ্যারন কনার বুঝে গেছে, ঝামেলায় পড়ে গেছে রানা।

    চোখে বিস্ময় নিয়ে ওকে দেখছে সে। পরের সেকেণ্ডে হুড়মুড় করে ডেস্কের কোনা ঘুরে বিশাল চেয়ারের ওদিকে গেল অ্যারন কনার। আরেকটু হলে হোঁচট খেয়ে মেঝেতে পড়ত। এক লাফে চলে গেল ফায়ারপ্লেসের ওপরের র‍্যাকের কাছে। ওটা থেকে হ্যাঁচকা টানে নিল হান্টিং রাইফেল। র‍্যাক থেকে কাত হয়ে নিচে এসে পড়ল শিংওয়ালা হরিণের মাথা।

    রাইফেলের লিভার টানল লোকটা। ম্যালফাঙ্কশন করল না বহু পুরনো বিশ্বস্ত অস্ত্র। ক্লিক শব্দে চেম্বারে ঢুকল তর্জনীর সমান দীর্ঘ প্রচণ্ড শক্তিশালী বুলেট। হতবাক রানা বুঝে গেল, নিজের সব অস্ত্রে গুলি তরে রাখত রিয়ান কনার!

    বিসিআই এজেন্টের মাথা লক্ষ্য করে অস্ত্রের মাযল তাক করল অ্যারন কনার, মুখে মুচকি হাসি!

    সাতান্ন

    হান্টিং রাইফেলের কালো মাযল চেয়ে আছে রানার দিকে। হাত থেকে আস্তে করে বন্দুক ফেলে দিল ও।

    ‘তেড়িবেড়ি না করে কারবাইনটাও ফেলো,’ নির্দেশ দিল অ্যারন কনার।

    কাঁধ থেকে স্লিং খুলে এ ফোর কারবাইন, মেঝেতে ফেলল রানা।

    ‘ছোরাটাও,’ বলল মেয়র কনার।

    খাপ থেকে ট্রেঞ্চ নাইফ নিয়ে একসেকেণ্ড ভাবল রানা, লোকটার বুক লক্ষ্য করে ওটা ছুঁড়বে? তবে বেশিরভাগ ছোরা থ্রোয়িং নাইফ নয়। ইস্পাতের ভারী নাকলডাস্টারের জন্যে লক্ষ্যভেদ প্রায় অসম্ভব। এদিকে একবার অ্যারন ট্রিগার টিপে দিলেই ঘরের মরা হরিণটার মত অক্কা পারে ও।

    হাত থেকে ছোরা ছেড়ে দিল রানা।

    ঠং শব্দে মেঝেতে পড়ল ওটা।

    খুশিতে চকচক করছে অ্যারনের দু’চোখ। ‘ভেবেছিলে এখানে এসে আমাকে খুন করবে, নাকি?’

    ‘মরতে তোমাকে হবেই, অ্যারন।

    ‘সেই মেয়েটার কথা বলছ, ঠিক না? বেটির নাম বোধহয় ছিল বেলা ওয়েস।’

    ‘বিস্মিত হলাম এখনও নামটা মনে রেখেছ,’ শ্লেষ ভরা কণ্ঠে বলল রানা।

    ‘তুমি ভেবেছ তাকে খুন করাতে গিয়ে আমার খুব ভাল লেগেছে?’

    ‘জানি, তোমার আর কোন উপায় রাখেনি বেলা,’ বলল রানা।

    ‘আমিও তো একই কথা ভাবি। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলেও এই একই কাজ করত।’

    ‘তা ঠিক। তুমি বেশিরভাগ মানুষের মতই।’

    ‘তা হলে কি ভাবছ, ওর দাবি মিটিয়ে দিলেই ভাল করতাম? তাতে থামত সে? জীবনেও না! সুযোগ পেয়ে রক্ত চুষে আমাকে শেষ করে দিত।’

    ‘তাই শেষমেশ সব রক্ত ঝরাতে হলো ওকেই,’ বলল রানা।

    ‘সবার জীবনেই গোপন কিছু বিষয় থাকে, রানা। তুমি এটা বলতে পারো, অন্যদের চেয়ে গোপনীয় বিষয় আমার বেশি। আর এ-ব্যাপারে তোমার বান্ধবী বহু কিছু জেনে গিয়েছিল।

    ‘ঠিক, প্রায় সবই জেনেছিল,’ বলল রানা। ‘আমি নিজে শুধু পূরণ করেছি শূন্যস্থান। ইতিহাস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বেলা জেনে গেছে বায়ার্ন কনারের নাম। তারপর খুঁজতে গিয়ে জেনেছে এই বংশে আমেরিকায় আছে এক রাজনৈতিক নেতা। সে গর্ব করে, তার পূর্বপুরুষ বায়ার্ন কনার এসেছে দুর্ভিক্ষপীড়িত আয়ারল্যাণ্ড থেকে। রাজনীতির ময়দানে এ- ধরনের তথ্য সাধারণ মানুষকে গেলাতে পারলে তারা অন্তর থেকে সমব্যথী হয়। কিন্তু বড়বেশি বকবক করতে লাগলে তুমি। ফলে ঐতিহাসিক কিছু তারিখ মেলাতে গিয়ে সব বুঝে গেল বেলা।

    ‘তা-ই নাকি?’ মুচকি হাসল অ্যারন কনার।

    ‘হ্যাঁ, বেলা গ্রেনফেলে খোঁজ নিয়ে জেনে গেল সত্যিকারের বায়ার্ন কনারের জন্মতারিখ। আর সে ছিল এবারডেন হলের সাধারণ এক আস্তাবল কর্মী। জন্ম নিয়েছিল আঠারো শ’ নয় সালে। আর তা। মৃত্যু হয় উনিশ শত সতেরোতে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অমরিকায় যে তথ্য সে দিয়েছে, সেটা অনুযায়ী তার জন্ম হয়েছে আঠারো শ’ বাইশ সালে। এই কয়েক বছরের ব্যবধান জানতে পেরে কৌতূহলী হয়ে গেল বেলা। তথ্যটা জেনে নিয়ে প্রথমে তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করল। তোমাকে জানাল, আয়ারল্যাণ্ড আর আমেরিকায় তোমার পূর্বপুরুষ বায়ার্ন কনারের জন্মতারিখ ও সাল মোটেও মিলছে না। এসব জেনেও বিষয়টা হালকাভাবে নিয়ে বেলার কথা উড়িয়ে দিতে পারতে। অথচ, সেটা না করে ঘাবড়ে গেলে। আর এটা শুধু তোমার মত নির্বোধ কারও পক্ষেই সম্ভব। তোমার কথায় সন্দেহপ্রবণ হলো বেলা। খুঁড়তে লাগল আরও গভীরে। পরেরবার যখন যোগাযোগ করল, ততক্ষণে জেনে গেছে কী পরিণতি হয়েছে সত্যিকারের বায়ার্ন কনারের। টাকা না দিলে সব ফাঁস করে দেবে বলে হুমকি দিল বেলা। ফলে সে হয়ে গেল তোমার চিরশত্রু। সত্য প্রকাশ হলে আসলে তোমাকে এত কিছু হারাতে হবে যে, তার মুখ চিরকালের জন্যে বুজে না দিয়ে তোমার উপায় থাকল না। আমি কি ঠিক বলেছি, অ্যারন?’

    দৃঢ়বদ্ধ হয়েছে লোকটার চোয়াল। সরু চোখে দেখছে রানাকে। উইনচেস্টারের ট্রিগারে চেপে বসেছে তর্জনী।

    ‘এবার বোধহয় বুঝলে, কীভাবে তোমার পূর্বপুরুষ লর্ড অ্যাঙ্গাস স্টার্লিংফোর্ডের ব্যাপারে সব জেনেছে বেলা,’ বলল রানা।

    ‘ও, তা হলে সবই জেনে গেছ, তা-ই না?

    ‘অ্যাঙ্গাস স্টার্লিংফোর্ড জন্মায় আঠারো শ’ বাইশ সালে। আর সেটাই আমেরিকান সরকারের জন্ম-মৃত্যুর রেজিস্ট্রি খাতায় আছে।’

    তিক্ত হেসে মাথা নাড়ল অ্যারন স্টার্লিংফোর্ড। ‘সত্যি তোমার প্রশংসা না করে পারছি না। ঠিকই বলেছ। কিন্তু তাতে তোমার কোন ধরনের ফায়দা নেই। আর কেউ কখনও জানবে না আমার পূর্বপুরুষ নীল রক্তের মানুষ লর্ড স্টার্লিংফোর্ড।’

    ‘জেনেছি, সে ছিল ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর এক কাপুরুষ,’ বলল রানা। ‘হত্যা করেছে বহু মানুষকে। নিজের স্ত্রীকে নির্যাতন করত। বায়ার্ন কনারের পরিচয় চুরি করার জন্যে তাকে খুন করে। নিজে মারা গেছে সেটা দেখাতে পুড়িয়ে দেয় তার লাশ। তারপর প্রথম সুযোগে পালিয়ে আসে আমেরিকায় তুমি তো অবশ্য আগেই এসব জানো। তোমার জানা আছে, কত বড় নরপশুর উত্তরপুরুষ তুমি। আর এটা মোটেও অবাক হওয়ার কিছু নয় যে, সেই জানোয়ারের মতই হয়ে গেছ রক্তপিশাচ

    অ্যারন স্টার্লিংফোর্ডের ঠোঁট থেকে মুছে গেল হাসি। ‘অপমান করে মজা পাচ্ছ, তা-ই না? সবই তো জেনে গেলে। আমার বাবাও আগে এসব জানত না। তবে তারপর আমার দাদার রেখে যাওয়া ডায়েরি থেকে সব জেনে নিয়েছে উনিশ শ’ ছাপ্পান্ন সালে। আবার আমার বাবা এসব বলেছে আমাকে, যখন আমার বয়স একুশ বছর। এবার বুঝলে?’

    ‘এটা জানতে, অ্যাঙ্গাস স্টার্লিংফোর্ড তার এক বয়স্ক বন্ধু নরম্যান আর্টিবল্ডের সঙ্গে মিলে ল্যাবে তৈরি করেছিল ভয়ঙ্কর এক বিষ?’ জানতে চাইল রানা। ‘কপালের জোরে ওটার কথা জেনে যান অ্যাঙ্গাসের প্রথম স্ত্রী জেনিফার হলওয়ে। সেটার কথা লিখেও যান তাঁর ডায়েরিতে। নরপশুগুলোর তৈরি করা ফিটোফোরা ইনফেস্ট্যান্স পচিয়ে দিয়েছিল আঠারো শ’ ছিচল্লিশ সালে আয়ারল্যাণ্ডের সমস্ত আলুর গাছ।’

    সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল অ্যারন। ‘হ্যাঁ, জানি। অ্যাঙ্গাস কী করেছিলেন, সেটা পরের পুরুষেরা সবাই জানত। যেহেতু একটু পর তোমাকে খুন করব, তো কোনকিছু গোপন রাখতে চাই না। আমার হারামখোর বাপ একবার বন্ধ মাতাল হয়ে সবই আমাকে বলে দিয়েছিল। আমার বয়স তখন পঁচিশ।’

    ‘তোমার পূর্বপুরুষ শুয়োরের চেয়ে হাজারগুণ নিকৃষ্ট, বিস্মিত হয়েছিলে, সেটা জেনে? তার কারণে আয়ারল্যাণ্ডে কয়েক মাসের ভেতরে মারা পড়ে বিশ লাখ মানুষ।’ কাঁধ ঝাঁকাল রানা। ‘আমি ধারণা করছি, সে আসলে ছিল ব্রিটিশ সরকারের গুপ্তচর।

    ‘এ-ধরনের কোনরকমের প্রমাণ নেই,’ মাথা নাড়ল স্টার্লিংফোর্ড।

    ‘ভুল বললে,’ বলল রানা। ‘খুন হয়েছিল বলে এ-বিষয়ে এরপর আর তদন্ত করতে পারেনি বেলা। তবে আমি নিজে ঠিকই খোঁজ নিয়েছি। অ্যাঙ্গাসের প্রথম স্ত্রী জেনিফার ইংল্যাণ্ডে পা রাখার পর আঠারো শত একান্ন সালে লণ্ডনে মার্টিন হাডসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সে ছিল বড় মাপের উকিল। ভদ্রমহিলা বোধহয় চেয়েছিলেন সব প্রকাশ করে দিতে কী ধরনের জঘন্য অপরাধ করেছে তাঁর প্রাক্তন স্বামী। কিন্তু উকিলের কাছে যাওয়া ছিল মস্তবড় ভুল। মহিলা জানতেন না সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আঁতাত ছিল মার্টিন হাউসনের। তখনকার সরকারের মাত্র কয়েকজন জানত, তাদের হয়ে আয়ারল্যাণ্ডে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ডেকে এনেছে বিশ্বস্ত গুপ্তচর অ্যাঙ্গাস স্টার্লিংফোর্ড। এরফলে খুন হয়েছে দখল করে নেয়া দেশটির বিপুল সংখ্যক মানুষ। আর এ-সুযোগে হাসতে হাসতে মিলিয়ন মিলিয়ন একর জমি দখল করে নিয়েছে ইংল্যাণ্ডের বড়লোকেরা।’

    চোখ সরু করে ওকে দেখছে অ্যারন স্টার্লিংফোর্ড। কয়েক সেকেণ্ড কী যেন ভেবে বলল, ‘চাইলে সবই বলতে পারো। তোমার খুলি উড়িয়ে দিতে খুব তাড়া নেই আমার।’

    ‘ব্রিটিশ সরকারের ওপরমহলের কর্মকর্তারা যখন জেনে গেল, সবই জানেন জেনিফার হলওয়ে, তারা দেরি করল না তাঁকে খুন করাতে। দোষ চাপিয়ে দিল নিরীহ এক স্কুল টিচারের ওপরে। জেনিফার খুন হওয়ার মাত্র ক’দিন পর তারই ঘরে গুলি খেয়ে মরল নরম্যান আর্চিবল্ড। অবশ্য আগেই সে সতর্ক করেছিল অ্যাঙ্গাস স্টার্লিংফোর্ডকে। এবার যে-কোন দিন খুন হবে বুঝে নিজেও ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর এক পরিকল্পনা করল অ্যাঙ্গাস। তখন তার চাই নিজের মত মানানসই আকারের লাশ। পেয়েও গেল তেমন একজনকে। আস্তাবল কর্মী বায়ার্ন কনারকে খুন করে নিজের পোশাক পরাল সে। আঙুলে দিল বংশের আঙটি। যাতে পরে মানুষ বুঝতে পারে আগুনে পুড়ে মরেছে অত্যাচারী জমিদার। এবারডেন হলে আগুন ধরিয়ে নিজের সমস্ত টাকা-পয়সা নিয়ে আমেরিকায় পালিয়ে এল অ্যাঙ্গাস। আমেরিকায় এসে দেখল আইরিশ হিসেবে নানান ধরনের সুবিধা পাচ্ছে। নিজের পরিচয় ফাঁস হলে বিপদে পড়বে, সে-ভয় ছিল তার। বোধহয় খুন হতো ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্সের এজেন্টদের হাতে। ঘটনা যা-ই হোক, মৃত্যুর সময়ে বিছানায় শুয়ে যাজক ছাড়া আর কারও কাছে নিজের সত্যিকার পরিচয় প্রকাশ করেনি সে।

    ‘বুঝলাম। এবার কথা শেষ হয়েছে তোমার?’

    ‘তোমার বড়আব্বা, দাদা, বাবা আর তুমি এমন এক বংশের জানোয়ার, যাদের পরিচয় প্রকাশ পেলে কবরেও থুতু দেবে না আইরিশেরা। নকল বংশ-পরিচয় বহন করে মস্ত বড়লোক হয়ে গেছ তোমরা। বিশেষ করে তুমি। অর্জন করেছ রাজনৈতিক ক্ষমতা, যেটা আসলে একদম মিথ্যার ওপরে ভর করে আছে। আইরিশেরা যদি কখনও জানতে পারে তোমার বড়আব্বা ছিল ব্রিটিশ সরকারের গুপ্তচর, আর তার কারণে খুন হয়েছে তাদের দেশের লাখ লাখ মানুষ-সেক্ষেত্রে তাদের সময় লাগবে না মুখ ফিরিয়ে নিতে অন্য কোন প্রার্থীকে ভোট দেবে তারা। শুধু তা-ই নয়, এই রাজ্যের সব পুলিশের সাহায্য নিলেও যে-কোন সময়ে খুন হবে তুমি। আসলে নিজেও এসব জানো তুমি। আর সেজন্যে দেরি করোনি বেলা ওয়েসকে খুন করতে। সত্যিই ওকে খুন না করে তোমার অন্য কোন উপায় ছিল না।

    এতক্ষণ চোখে চোখ রেখে কথা বলতে গিয়ে তিলতিল করে সামনে বেড়েছে রানা। ক’বার ভঙ্গি করেছে বদল করছে পা। কিন্তু এখন ডেস্কের এদিকে দাঁড়িয়ে আছে ও, আর ওদিকে অ্যারন স্টার্লিংফোর্ড।

    রানা ভাবছে: নলটা খপ করে ধরে লোকটার হাত থেকে কেড়ে নেবে রাইফেল। তবে সে-সুযোগ সত্যিই পেল না ও।

    আটান্ন

    কখন যেন সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় এসে উঠেছে মরণাপন্ন এক বৃদ্ধ। তার দেহ ভেসে যাচ্ছে রক্তে। করিডর পার করে হাজির হয়ে গেছে নিজের স্টাডিরুমের দরজায়।

    রানা হঠাৎ করে দেখতে পেল, চৌকাঠে এসে থেমেছে রিয়ান স্টার্লিংফোর্ড। তীব্র যন্ত্রণা ও প্রচণ্ড রাগে থরথর করে কাঁপছে সে। মুখে উঠে এসেছে তাজা রক্ত। দু’পাটি দাঁত খিঁচাচ্ছে হিংস্র পশুর মত। শ্বাস নিতে গিয়ে গলার গভীর থেকে বেরোচ্ছে ঘড়ঘড় শব্দ। হোঁচট খেয়ে স্টাডিরুমে ঢুকল বৃদ্ধ। ফুরিয়ে গেছে তার শরীরের শক্তি। টলমল করছে ঝড়ের প্রকোপে পড়া জাহাজের মত। সরাসরি চেয়ে আছে ছেলের দিকে। হয়তো ভাবছে: এই ছেলের জন্যে কী-ই-না করেছি, আর দ্বিধা না করে সে চেয়েছে আমাকে খুন করতে!

    ‘তুমি আজ আমার হাতে খুন হবে, ছেলে, ফিসফিস করে বলল বিগ রিয়ান। ঠোঁটের কোণে রক্তাক্ত বুদ্বুদ। মারা যাচ্ছে সেটা বুঝেও কোন তোয়াক্কা নেই। নিচতলা থেকে উঠে এসেছে নিজের খুনিকে শেষ করতে।

    রক্তমাখা হাত ওপরে তুলন বিগ রিয়ান। নিচতলার দেয়াল থেকে নিয়েছে পুরনো আমলের সিক্সগান। কক করা আছে অস্ত্রটা। কম্পমান রিভলভারের নল নিজের ছেলের বুকে তাক করল সে।

    বাবাকে জীবিত দেখে হতভম্ব হয়ে গেছে অ্যারন। দুই চোখে ফুটে উঠেছে চরম আতঙ্ক। রানার দিক থেকে সরিয়ে বাবার দিকে উইনচেস্টারের নল ঘোরাল সে।

    আর তখনই মিলেমিশে গেল জোড়া আগ্নেয়াস্ত্রের বিকট আওয়াজ। উইনচেস্টারের এক্সপ্রেস বুলেট বিঁধে গেল বিশ রিয়ানের হৃৎপিণ্ডে। সঙ্গে সঙ্গে মারা পড়ল বৃদ্ধ। ওদিকে ৪৫ ক্যালিবারের নরম সীসার বুলেট ভেদ করেছে অ্যারনের বাম ভুরু। খুলির ভেতরে মৌমাছির মত ভোঁ-ভোঁ করে ঘুরতে লাগল গুলি। ফলে মগজটা হয়ে গেল থকথকে সুপের মত। হাঁটু ভেঙে ধুপ্ করে মেঝেতে পড়ল অ্যারন স্টার্লিংফোর্ডের লাশ। পাশেই পড়েছে রাইফেল।

    একই সময়ে বাপ-ছেলের জান কবজ করেছে যমদূত। বিস্মিত চোখে লাশদুটো দেখে রানা বুঝে গেল, আজ সত্যিই নিভে গেছে স্টার্লিংফোর্ড বংশের প্রদীপ!

    স্টাডিরুম থেকে বেরিয়ে এল রানা। এবার জ্যাকিকে সঙ্গে নিয়ে চলে যাবে এই র‍্যাঞ্চ ছেড়ে।

    বাড়ি থেকে বের হয়ে রানা দেখল, গুমোট হয়ে উঠেছে পরিবেশ। কালো মেঘের ভেলায় ঢাকা পড়েছে আকাশের হাজারো নক্ষত্র। যে-কোন সময়ে নেমে আসবে ঝমঝমে বৃষ্টি। উঠনে ওক গাছের নিচে ঘন, ছায়ার ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে ডজ র‍্যাম। পকেট থেকে চাবি নিয়ে সেন্ট্রাল লকিং খুলতে গিয়ে রানা বুঝল, খোলা আছে পেছনের দরজা।

    গাড়ির ভেতরে নেই জ্যাকি!

    ডজ র‍্যামের দরজা ভেতর থেকে খুলে জ্যাকি বোধহয় চেয়েছে র‍্যাঞ্চের কোথাও লুকিয়ে পড়তে। হয়তো রানাকে খুঁজতে গেছে আস্তাবলে। অথবা, গাড়ির সেন্ট্রাল লকিং খুলে ওকে কিডন্যাপ করেছে কেউ। গাড়ির পেছনের মাটি ভাল করে দেখল রানা। মনে মনে নিজেকে দোষ দিল, মোটেই উচিত হয়নি সেন্ট্রাল অ্যালার্ম সিস্টেম ডিসেবল করে দেয়া। এবার যেভাবে হোক খুঁজে নিতে হবে মেয়েটাকে। গাড়ির কাছ থেকে সরে জোর গলায় ডাকল রানা, ‘জ্যাকি!’

    উত্তর দিল না কেউ।

    টাস্ শব্দে রানার কপালে পড়ল বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা। আরেক ফোঁটা নামল কাঁধে। তারপর আকাশ ভেঙে নেমে এল তুমুল বারিধারা। কয়েক সেকেণ্ডে ভিজে চুপচুপে হয়ে গেল রানা। গাড়িগুলোর ছাতে দামামা বাজাচ্ছে জোরাল বৃষ্টির হাজারো ফোঁটা। র‍্যাঞ্চ হাউসের ছাতের পাইপ বেয়ে নেমে চারপাশের জমি ভাসিয়ে নিচ্ছে যেন খরস্রোতা নদী।

    ‘জ্যাকি!’ আবারও গলা ছেড়ে ডাকল রানা।

    ‘এই যে, এখানে,’ বলল একটা কণ্ঠ।

    আধ পাক ঘুরে দাঁড়াল রানা।

    ওক গাছের ওদিক থেকে বেরিয়ে এল লিয়াম বার্ব। বর্মের মত বুকে সেঁটে ধরে রেখেছে জ্যাকিকে। একহাতে মুখ চেপে ধরে, অন্যহাতে পিস্তল ধরেছে মেয়েটার ঘাড়ে। ফ্যাকাসে হয়ে গেছে বার্বের মুখ। দাঁড়িয়ে থাকতে গিয়ে বেশ টলছে। তার পিস্তল ধরা হাত কাঁপতে দেখে রানা বুঝে গেল, একটু আগে র‍্যাঞ্চ হাউসের সিঁড়িতে চতুর্থ লোকটা ছিল বার্ব। দেহে অন্তত দু’বার বন্দুকের গুলি বিধে গেছে বলে তাকে হারাতে হয়েছে প্রচুর রক্ত। মারা পড়তে পারে সে-ভয়ে আগের চেয়েও সতর্ক।

    ধীর পায়ে হেঁটে বৃষ্টির মাঝে মুখোমুখি হলো রানা ও বার্ব। ঝটকা দিয়ে নিজেকে ছুটিয়ে নিতে গিয়ে ব্যর্থ হলো জ্যাকি। রানাকে দেখছে চোখে ভয় নিয়ে। বুঝে গেছে, যে- কোন সময়ে হয়তো খুন হবে ওর প্রিয় মানুষটা।

    গোলাগুলি এড়াতে স্ক্যালেসের কারবাইন মাটিতে নামিয়ে রাখল রানা। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, ‘তুমি বোধহয় কখনও হাল ছাড়ো না, বার্ব?’

    ‘একই কথা তোমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য,’ যন্ত্রণা-ভরা কাঁপা গলায় বলল প্রাক্তন মেজর লিয়াম বার্ব।

    ‘মেয়েটাকে ছেড়ে দাও, বার্ব। অন্যরা মারা গেছে। ‘ পিটপিট করে চোখ থেকে বৃষ্টির পানি ঝরাল বার্ব। ‘না, সবাই নয়।’

    ‘মেয়েটার তো কোন দোষ নেই,’ অনুরোধের সুরে বলল রানা। ‘ওকে ছেড়ে দাও। লড়াই করে এখন আর কিছুই পাবে না। বরং এটাই ভাল, যে যার পথে চলে যাই।’

    জ্যাকির ঘাড়ে পিস্তলের নল ঠেসে ধরল বার্ব। রাগ ও ঘৃণায় জ্বলজ্বল করছে তার দু’চোখ।

    ‘তুমি আসলে ওকে খুন করতে চাও না,’ বলল রানা।

    ‘তুমি ঠিকই ধরেছ,’ দাঁতে দাঁত পিষল বার্ব। জ্যাকির ঘাড় থেকে সরিয়ে রানার বুকে তাক করল পিস্তল। ‘দু’হাঁটু গেড়ে মাটিতে বোসো। মাথার ওপরে রাখবে দু’হাত।’

    ধীরে ধীরে হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে হাতদুটো মাথার ওপরে রাখল রানা। ঘাড় তুলে দেখছে বার্বের হাতের পিস্তল। ওর মুখ বেয়ে নেমে যাচ্ছে বৃষ্টির পানির অবারিত স্রোত। ভিজে গেছে প্যান্টের হাঁটু। বেশ ঠাণ্ডা লাগছে।

    কঠোর চেহারায় ওকে দেখল বার্ব। একটু কেঁপে গেল তার হাতের পিস্তল। চোখ পিটপিট করল সে। তারপর হঠাৎ করেই জোরে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল জ্যাকিকে। তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ল মেয়েটা।

    পরের সেকেণ্ডে গুলি করল লিয়াম বার্ব

    বুকে বুলেট লাগতেই পিঠ দিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ল মাসুদ রানা।

    কী ঘটে গেছে সেটা বুঝতে পেরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল জ্যাকি।

    হাসতে হাসতে কয়েক পা এগিয়ে এল লিয়াম বার্ব।

    বুকে তীব্র ব্যথা নিয়েও কাত হয়ে উঠে বসল রানা। ঝাপসা হয়ে গেছে ওর দৃষ্টি।

    রানার বুকে পিস্তল তাক করল বার্ব। বাঙালি লোকটাকে খুন করার পর খতম করে দেবে মেয়েটাকে। তারপর এই এলাকা ছেড়ে চলে যাবে চিরকালের জন্যে। দাঁতে দাঁত পিষল সে। ‘এবার বিদায় হবি, কুত্তার বাচ্চা!’

    ঊনষাট

    ‘এবার তা হলে সত্যিই বিদায়,’ ব্যথা-ভরা কণ্ঠে বলল রানা। কোমরের পেছনে বেল্ট থেকে ঝট করে নিল অ্যারন স্টার্লিংফোর্ডের .৪৪ ম্যাগনাম রিভলভার। ওটার সিলিণ্ডারে এখনও আছে দুটো বুলেট।

    একসেকেণ্ড পর ঝড়ের বেগে পর পর দু’বার ট্রিগার টিপে দিল রানা। দুটো গুলিই ভেদ করল বার্বের কপাল।

    পিছিয়ে হাত-পা ছড়িয়ে মাটিতে ধুপ্ করে পড়ল আমেরিকান আততায়ী। হাত থেকে ছুটে গেছে পিস্তল।

    ‘রানা!’ প্রিয় মানুষটার দিকে ছুটে এল জ্যাকি। ‘হায়, ঈশ্বর! রানা! প্লিয! তুমি মরে যেয়ো না!’

    প্রচণ্ড ব্যথায় চিত হয়ে শুয়ে পড়ল রানা। হাত থেকে খসে গেছে রিভলভার’। হাঁটু গেড়ে ওর পাশে বসল জ্যাকি।

    ওর চোখে চোখ রেখে বামহাতে জ্যাকেটের চেইন টেনে খুলল রানা। অবাক হয়ে ওকে দেখল জ্যাকি। রানার জ্যাকেটের ভেতরে আছে পুলিশ চিফ রিপার রিগবির বুলেটপ্রুফ ভেস্ট!

    ওটাতে লেগে আটকা পড়েছে চ্যাপটা হওয়া একটা বুলেট!

    বড় করে শ্বাস নিয়ে উঠে বসল রানা। ওর কেভলার ভেস্ট থেকে ভেজা ঘাসের মধ্যে টুপ করে খসে পড়ল ছেতরে যাওয়া গুলিটা।

    ‘তোমার তো গুলি লাগেনি!’ অবাক হয়ে বলল জ্যাকি।

    ‘বুকে বিঁধে না গেলেও জোর ধাক্কা দিয়েছে,’ ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল রানা। ‘তাতে ফাটল ধরে গেছে পাঁজরের একটা হাড়ে।’

    ‘আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে তুমি গুলি খেলে!’ উঠে রানাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরল জ্যাকি। বৃষ্টির চেয়েও জোরে অশ্রুবর্ষণ হচ্ছে ওর চোখ থেকে। ‘রানা… আমি কখনও তোমার এই ঋণ শোধ করতে পারব না!’

    ‘মনে হয়েছিল বুলেটপ্রুফ ভেস্ট কাজে লাগবে।’ বার্বের লাশটা দেখল রানা। কাদা-পানিতে মিশে যাচ্ছে রক্ত।

    আমেরিকান আততায়ীর পকেট থেকে ফোন সংগ্রহ করল রানা। বুক পকেট থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে ধরিয়ে দিল জ্যাকির হাতে।

    ‘আমার বাবার প্লিমাউথ!’ অবাক হয়েছে জ্যাকি, ‘আমি তো ভাবতেও পারিনি ওটা আর আস্ত পাব!’

    ‘আঁচড়টাও পড়েনি,’ বলল রানা। ‘একটু দূরেই রেখেছি।’

    ‘আমরা এবার কোথায় যাব?’ জানতে চাইল জ্যাকি।

    ‘তুমি ফিরে যাবে তোমার বাড়িতে।’

    ‘আর তুমি?’ অসহায় চোখে রানাকে দেখল জ্যাকি। ‘আমার বাসায় উঠবে না, রানা?’

    মাথা নাড়ল বিসিআই এজেণ্ট। ‘সেটা এখন সম্ভব নয়।’

    একটু পর আস্তাবলের পেছনে গেল ওরা। রানা ওখানেই রেখেছে গাড়িটা। বার্বের ফোন ব্যবহার করে নাইন ওয়ান ওয়ান নম্বরে কল দিল ও। পুলিশের লোক ধরতেই বলল, ভয়ঙ্কর গোলাগুলি হওয়ায় স্পিয়ারহেড র‍্যাঞ্চে মারা গেছে মেয়র কনার ও টুলসা পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ক’জন পুলিশ। তাদের ভেতরে আছে পুলিশ চিফ রিপার রিগবি। রানা এ- ছাড়া আরও জানাল, যেন যোগাযোগ করা হয় এফবিআই স্পেশাল এজেন্ট ববি হুকের সঙ্গে। যাতে সে কয়েকজন এজেন্টকে নিয়ে চলে যায় ব্ল্যাক বেয়ার ফার্মে। সেখানেও আছে বেশ কিছু লাশ।

    কথা শেষ করে ফোনটা ঘন এক ঝোপের ভেতরে ফেলল রানা। এবার ব্যস্ত হবে এফবিআই ও পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। আর তারা সন্দেহ করার আগেই ওর চলে যেতে হবে বহু দূরে।

    পুলিশ যখন স্পিয়ারহেড র‍্যাঞ্চে হাজির হবে, তার অনেক আগে প্লিমাউথ নিয়ে টুলসা শহরে পৌঁছে যাবে রানা ও জ্যাকি।

    .

    টুলসা শহরের দিকে ফেরার সময় ড্রাইভ করছে জ্যাকি। কিছুক্ষণ পর বলল, ‘সত্যিই আমার বাড়িতে উঠবে না?’

    এবারও মাথা নাড়ল রানা। ‘তোমার বাড়িতে হাজির হবে এফবিআই এজেণ্ট। চাই না তাদের সঙ্গে দেখা হোক।’

    ‘আর কখনও ফিরবে না টুলসায়, রানা?’

    ‘পরে হয়তো কখনও ফিরব।’

    ‘আমি তোমার জন্যে অপেক্ষা করব,’ বলল জ্যাকি।

    ‘উচিত হবে না,’ বলল রানা। ‘আমি তো চির ভবঘুরে। কখন কোথায় থাকি তার ঠিক নেই।’ দূরে চেয়ে আছে ও। জ্যাকি কিছু বলার আগেই জানাল, ‘শহরে ঢুকে প্রথম পার্কের পাশে আমাকে নামিয়ে দেবে।’

    ‘রাতের আঁধারে হারিয়ে যাবে, যাতে কেউ খোঁজ না পায়?’

    ‘ঠিকই ধরেছ।’

    ‘এরপর কোথায় যাবে, রানা?’

    ‘আসলে এখনও কিছু ঠিক করিনি।’

    একটু পর টুলসা শহরে প্রবেশ করল প্লিমাউথ ব্যারাকুডা।

    সামনে ঘাসে ভরা পার্ক দেখে গাড়ি রাখল জ্যাকি। রানার দিকে তাকাল। ওর চোখে টলমল করছে দু’ফোঁটা অশ্রু। রানার বাহুতে হাত রেখে ফিসফিস করে বলল, ‘যেখানেই থাকো, ভাল থেকো। আমি কখনও তোমায় ভুলব না। ভুলব না তোমার মায়াভরা চোখদুটোকে।’

    জ্যাকির নরম মুঠোদুটো হাতে নিয়ে মৃদু চাপ দিল রানা। ‘সত্যিই হয়তো আবারও দেখা হবে, জ্যাকি।’ গাড়ির দরজা খুলে নেমে পড়ল ও। ‘তার আগে পর্যন্ত বিদায়।’

    চুপ করে আছে মেয়েটা। পার্কে ঢুকে প্রথম বেঞ্চে বসে পড়ল রানা। কিছুক্ষণ ওকে দেখে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো জ্যাকি।

    প্লিমাউথ গাড়িটা চলে যেতে দেখল রানা। এবার সত্যিই অদৃশ্য হতে হবে ওকে। বেঞ্চি ছেড়ে উঠে দাঁড়াবে, তার আগে পকেট থেকে ফোন নিয়ে চেক করল রানা।

    ব্যস্ততার ভেতরে কখন যেন এসেছে একটা মেসেজ।

    স্কটল্যাণ্ড থেকে সংক্ষিপ্ত চিঠি লিখেছে জেসিকা থমসন :

    ‘রানা, তুমি কি পারবে আমাকে একবার ক্ষমা করে দিতে? মস্তবড় ভুল করে ফেলেছি তোমায় কষ্ট দিয়ে। আর তাই হয়তো আমার ওপরে চরম প্রতিশোধ নিলেন দয়াময় ঈশ্বর! রানা, তুমি জানো না, কতবড় পশু আমার স্বামী ও’রাইলি। প্রতিদিন তার কাছে অপমানিত হয়ে, মার খেয়ে হতক্লান্ত হয়ে গেছি। আবারও তোমাকে অনুরোধ করছি: দয়া করে ক্ষমা করো আমাকে। একবার কি আসবে আমার সঙ্গে দেখা করতে? বিশ্বাস করো, আগে জানতাম না, আসলে অন্তর থেকে তোমাকেই ভালবেসেছি আমি।’

    মেসেজটা দ্বিতীয়বার না পড়েই ডিলিট করল রানা। বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। পার্ক থেকে বেরিয়ে হেঁটে চলল অজানা এক গন্তব্যের উদ্দেশে।

    ***

    ⤶
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৭১ : নরকের শহর
    Next Article মাসুদ রানা ৪৬৯ – কিলিং মিশন

    Related Articles

    কাজী মায়মুর হোসেন

    অদৃশ্য ঘাতক – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৬৮ – স্বর্ণলিপ্সা

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    ধাওয়া – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মৃত্যু উপত্যকা – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    খুনে ক্যানিয়ন – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    July 25, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }