Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প103 Mins Read0
    ⤶

    ১৪. নীপবন থাকে শূন্য

    ১৪

    বাড়ির সবাই এসেছে।

    মিসির আলি তাদের চোখে মুখে কৌতূহল এবং সেইসঙ্গে চাপা উদ্বেগ লক্ষ্য করলেন। সবচেয়ে বেশি চিন্তিত মনে হচ্ছে সাফকাতকে। সে রীতিমতো ঘামছে। ঘন—ঘন ঢোক গিলছে। মিসির আলি কীভাবে শুরু করবেন বুঝতে পারছেন না। নাদিয়া বললেন, ‘বলুন কি বলবেন। চুপ করে আছেন কেন?’

    মিসির আলি সিগারেট ধরালেন। সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে খানিকক্ষণ কেশে গলা পরিষ্কার করে শুরু করলেন—

    ‘কাল রাতে আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম। আমার বাথরুমের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বাতি নিভে গিয়েছিল। আমি অশরীরী একটি কণ্ঠ শুনলাম। একটা বাচ্চা ছেলে—আমার নাম ধরে ডাকল। ফুলের গন্ধ পেলাম। আপনারা বুঝতেই পারছেন, ভয়াবহ ব্যাপার। আমি আতঙ্কে অস্থির হয়ে গেলাম। অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি কিন্তু এ-জাতীয় একটি পরিস্থিতির জন্যে মনে-মনে তৈরি ছিলাম। আমি জানতাম একদিন-না-একদিন এ-রকম ঘটনা আমার ক্ষেত্রে ঘটবে। দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। বাতি নিভে যাবে। গলার আওয়াজ শুনব। ফুলের গন্ধ পাব। আমি খুব ভালোমতো জানতাম, পুরো ব্যাপারটা সাজানো। তার পরেও আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছি।….

    ‘আমি আমার নিজের ভয় থেকেই বুঝতে পারছি, ওসমান গনি সাহেব এবং তাঁর স্ত্রী কী পরিমাণ ভয় পেয়েছেন। তাঁর স্ত্রী সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই, কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, ওসমান গনি সাহেবকে এই অবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছিল। আমার ধারণা, তিনি আমার চেয়ে হাজার গুণ বেশি ভয় পেয়েছেন। কারণ তিনি জানেন না যে পুরো ব্যাপারটা সাজানো। তিনি ধরেই নিয়েছেন যা ঘটছে সবই সত্যি। একটা ভয়ংকর ভৌতিক কাণ্ড তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। এর সঙ্গে তিনি জড়িয়েছেন একটি শিশুর অপমৃত্যু।’

    নাদিয়া মিসির আলিকে থামিয়ে দিয়ে তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, ‘সাজানো ঘটনা কেন বলছেন? সাজানো ঘটনা বলার পিছনে আপনার যুক্তি কী?

    ‘যুক্তির অংশে যাবার আগে আপনি আমার কিছু প্রশ্নের জবাব দিন। আপনার বাবার মৃত্যু হয়েছিল বাথটাবে, তাই না?’

    ‘হ্যাঁ।’

    ‘কতটুকু পানি ছিল বাথটাবে?’

    ‘অল্প পানি ছিল।’

    ‘আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে—ঐ রাতে কলে পানি ছিল না?’

    ‘আমার তেমন কিছু মনে পড়ছে না। পানি আছে কি না তা নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো মনের অবস্থা আমার ছিল না।’

    মিসির আলি সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, ‘পানি না-থাকাটাই কিন্তু স্বাভাবিক। পানি থাকলে বাথটাব পানিতে পূর্ণ হয়ে যেত। দরজা ভেঙে বাথরুমে ঢুকলে আপনি দেখতেন তখনো কল দিয়ে পানি পড়ছে। আপনি নিশ্চয়ই তা দেখেন নি?’

    নাদিয়া বললেন, ‘আমি এত কিছু লক্ষ করি নি। তবে বাথরুমে ঢুকে আমি কল দিয়ে পানি পড়তে দেখি নি। বাথরুমে পানি ছিল কি ছিল না, তা এত জরুরি কেন?’

    ‘জরুরি কেন, বলছি।……

    ‘এক-এক করে বলি। ছোটবেলায় আমরা একধরনের খেলা খেলতাম। খেলার নাম ‘টক্কা খেলা’। পেঁপে গাছের পাতা দিয়ে খেলাটা খেলা হত। পেঁপে গাছের পাতার লম্বা ডাঁটাটা ফাঁপা। সেই ফাঁপা ডাঁটায় মুখ লাগিয়ে একজনের কানের কাছে ডাঁটার অন্য প্রান্ত নিয়ে বিকট চিৎকার করা—’টক্কা টক্কা’। এই হচ্ছে টক্কা খেলা। শব্দ শুনে কানে তালা লেগে যেত।……

    ‘পেঁপে পাতার ডাঁটা না নিয়ে একটা লম্বা নল যদি নেওয়া হয়, সেই নলে মুখ লাগিয়ে কেউ কথা বললে, নলের অন্য প্রান্তে যে আছে সে কথা শুনবে। শব্দ প্রবাহিত হয় বায়ুর মাধ্যমে। নলের ভেতর আছে বায়ু। ……..

    ‘এখন দেখা যাক বাথরুমে কী ঘটেছে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলি—দরজা আটকে যাবার কিছুক্ষণ পর আমি ঠিক আমার কানের কাছে একটা বাচ্চা ছেলের গলা শুনলাম। ভয়ংকর ব্যাপার তো বটেই। তবে ঘটনা কিন্তু সহজ। এক ধরনের টক্কা খেলা।’

    নাদিয়া তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, ‘টক্কা খেলা মানে?’

    মিসির আলি বললেন, ‘বাচ্চা ছেলের প্রেতাত্মা আমার সঙ্গে কথা বলে নি। প্রেতাত্মা সেজে অন্য কেউ কথা বলেছে—খুব সম্ভব একটি মেয়ে কথা বলেছে। মেয়েদের গলার স্বর বাচ্চাদের মতো হাই পিচের হয়ে থাকে। সে কথা বলেছে অন্য কোনো বাথরুমে বসে। বাথরুমের পানির ট্যাপের কাছে মুখ নিয়ে। যেহেতু নলে কোনো পানি নেই, ফাঁপা নল, সেহেতু টক্কা খেলার মতোই শব্দ ভেসে এসেছে আমার বাথরুমে। এই হল ব্যাপার।’

    নাদিয়া তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বললেন, ‘মিসির আলি সাহেব, পানির ট্যাংক ভর্তি থাকে পানিতে। পানির ট্যাপ পুরোপুরি পানিশূন্য হতে হলে ট্যাংক খালি হতে হবে।

    ‘তা ঠিক। কিন্তু আমার ধারণা ট্যাংক থেকে যে পাইপ এসেছে সেই পাইপে স্টপার আছে। অর্থাৎ ট্যাংক ভর্তি রেখেও স্টপার আটকে দিয়ে পানির পাইপ খালি করা যায়। যে-কোনো একটা ট্যাপ খুলে রাখলেই পাইপের সব পানি বের হয়ে আসবে।’

    সাফকাত বলল, ‘স্যার ঠিক কথাই বলেছেন। পাইপের মুখে একটা চাবি আছে। আমার মনে আছে, ঐ রাতে পানি ছিল না। আমি চাবিতে গণ্ডগোল আছে কি না দেখার জন্যে ছাদে গিয়েছিলাম।’

    মিসির আলি বললেন, ‘এখন আপনারা বুঝতে পারছেন ব্যাপারটা করা হচ্ছে ভয় দেখানোর জন্যে। এমন ভয়, যেন সেই ভয়ে হৃৎস্পন্দন থেমে যায়। বাথরুমের দরজা বন্ধ করা খুব সহজ। বাইরে থেকে কেউ খুব শক্ত হাতে নবটা চেপে ধরলেই হবে।’

    সাফকাত বলল, ‘স্যার, কিছু মনে করবেন না-আপনার ঘরের ব্যাপারটা ধরুন। আপনার বাথরুমের নব চেপে ধরতে হলে আপনার শোবার ঘরে ঢুকতে হবে। কিন্তু আপনার শোবার ঘর ছিল তালাবন্ধ।’

    ‘হ্যাঁ, তালাবন্ধ ছিল। কিন্তু সাফকাত সাহেব, আপনি ভুলে যাচ্ছেন কেন—এ—বাড়ির প্রতিটি বন্ধ দরজা চাবি দিয়ে বাইরে থেকে খোলা যায়। কাজেই এমন কেউ আমার ঘরে ঢুকেছে যার কাছে আছে চাবির গোছা। আমি যতদূর জানি এ-বাড়িতে দু’ সেট চাবি আছে। এক সেট আছে নাদিয়া গনির কাছে। অন্য সেট থাকে মিউজিক লাইব্রেরি ঘরের ড্রয়ারে।

    কেউ একজন চাবি দিয়ে দরজা খুলে আমার ঘরে ঢুকেছে। এক হাত দিয়ে চেপে ধরেছে আমার বাথরুমের নব। অন্য হাতে বাথরুমের সুইচ নিভিয়ে দিয়েছে। আপনারা হয়তো লক্ষ করেছেন, এ-বাড়ির প্রতিটি বাথরুমের সুইচ বাইরে। কাজেই যে ভয় পাওয়াতে চাচ্ছে, তার জন্যে খুব সুবিধা হয়ে গেল।………

    বুঝতেই পারছেন—ভয় দেখানোর এই ভয়ংকর খেলা একজনের পক্ষে সম্ভব নয়। খুব কম করে হলেও দু’ জনের টীম দরকার। খুব ভালো টীমওয়ার্ক ছাড়া এ—কাজ হবে না। একজন বাথরুমের দরজার নব চেপে ধরে থাকবে, অন্যজন অন্য কোনো বাথরুমের ট্যাপে মুখ লাগিয়ে কথা বলবে।…….

    আপনাদের আমি আগেই বলেছি, আমাকেও যে ভয় দেখানো হবে সে বিষয়ে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলাম এবং মনে-মনে তার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম। মানসিক প্রস্তুতি ছাড়াও অন্য ধরনের প্রস্তুতিও আমার মধ্যে ছিল। রাতের বেলা আমি যতবার বাথরুমে যেতাম ততবারই বাথরুমের বাইরের নবে কয়েক ফোঁটা সিলভার নাইট্রেটের দ্রবণ দিয়ে রাখতাম। দ্রবণটা পানির মতো বর্ণহীন, দু’-এক ফোঁটা দ্রবণে নবটা ভেজা ভেজা থাকত। বাথরুমের নব ভেজা থাকা কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। যে ভয় দেখাতে আসছে, সে কোনো কিছু না-ভেবেই নবে হাত দেবে। সঙ্গে-সঙ্গে তার হাতে দাগ পড়ে যাবে। সিলভার নাইট্রেটের দাগ কঠিন দাগ। সপ্তাহখানেক থাকবেই। আমি আরো একটি জিনিস করেছি। বাথরুমের দরজার সামনে যে দাঁড়াবে, তার পায়ের ছাপ যেন ভালোমতো পড়ে তার ব্যবস্থা করেছি।

    কেড্স জুতোর ছাপ আমার বাথরুমের দরজার সামনে আপনারা দেখতে পাবেন। জুতোর নাম্বার হচ্ছে বার। আব্দুল মজিদ এই জাতীয় জুতো পরে। আব্দুল মজিদ যদি তার হাত খোলে তাহলে সেখানে আমরা সিলভার নাইট্রেটের দাগ দেখতে পাব বলেই আমার ধারণা।’

    কেউ কোনো কথা বলছে না। সবাই স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শুধু সালেহার চোখ ভেজা। চোখে গভীর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে মজিদের দিকে। আব্দুল মজিদের দু’ হাত মুঠিবন্ধ। সে বসে আছে মাথা নিচু করে। সে কারো দিকেই তাকাচ্ছে না।

    মিসির আলি আব্দুল মজিদকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে নিজের মনে কথা বলে যেতে লাগলেন।

    ‘ফুলের গন্ধের ব্যাপারটা আপনাদের বলি। আমি ফুলের গন্ধ পেয়েছিলাম। এটা আসলে ছিল জর্দার গন্ধ, আসত আব্দুল মজিদের মুখ থেকে। জর্দা খাওয়ার কারণে সে সব সময় মুখে জর্দার গন্ধ নিয়ে বেড়ায়, নিজে তা বুঝতে পারে না। কারণ এই গন্ধে সে অভ্যস্ত। আব্দুল মজিদের ওপর সন্দেহ হবার আরেকটি কারণ হচ্ছে, সে একসময় রানা কনস্ট্রাকশানে প্লামিং মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেছে। কাজেই শূন্য নলের ভেতর শব্দ পরিচালনার ব্যাপার সে জানত। জানা বিদ্যাই সে ব্যবহার করেছে।

    এখন আসা যাক হত্যাকাণ্ডগুলি কীভাবে করা হল। প্রথম হত্যা—নাদিয়ার মা’র মৃত্যুর জন্যে আব্দুল মজিদ এবং তার মা দায়ী নয় বলেই আমার বিশ্বাস। শিশুটি মারা যাবার পর এই মহিলা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তীব্র অপরাধবোধের কারণে বাথরুমে গেলেই তাঁর মনে হত বাথরুমের দরজা বোধ হয় আর খুলবে না। এগুলি আমার অনুমান। ভয় পেয়ে হার্টফেল করে তিনি বাথরুমে মারা যান। ওসমান গনিকে হত্যার জন্যে আব্দুল মজিদ এবং তার মা এই ব্যাপারটি সুন্দর করে ব্যবহার করে। সুযোগ পেলেই তারা ভয় দেখাতে থাকে। বাড়িতে ভয়ংকর এক আবহাওয়াও তারা তৈরি করে। সবাইকেই ভয় দেখায়, যাতে করে সবার মনে এক সময় এই ধারণা হয় যে বাড়িতে ভৌতিক কিছু আছে। এটা আর কিছুই না, পরিবেশ তৈরি করা। মজিদ আশা করতে থাকে ওসমান গনির স্ত্রী যেভাবে মারা গেছেন—ওসমান গনিও সেইভাবে মারা যাবেন। ভয় পেয়ে হার্টফেল করবেন। তাই হয়। সুন্দর একটি হত্যাকাণ্ড ঘটে যায়। সুন্দর এই কারণে যে, হত্যাকারী হত্যা করে অনেক দূর থেকে। প্রচলিত আইনে এ-জাতীয় হত্যাকারীর বিচার আমার ধারণায় সম্ভব নয়।….

    এখন হত্যার মোটিভে আসি। মোটিভ জটিল নয়, সহজ। পরিবারের তিন সদস্যের দু’ জন শেষ, একজন বাকি। সেই একজন শেষ হলে—বিপুল সম্পত্তি চলে যাবে আব্দুল মজিদ এবং তার মার হাতে। কারণ এরাই ওসমান গনির নিকট আত্মীয়। আমার যা বলার আমি বলেছি। আপনাদের কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।

    কেউ কোনো প্রশ্ন করল না। মিসির আলি উঠে দাঁড়াতে-দাঁড়াতে বললেন, ‘আমি আমার নিজের আস্তানায় চলে যাব। আমার কাজ শেষ। নাদিয়া, আপনি কি আপনার ড্রাইভারকে একটু বলে দেবেন আমাকে পৌঁছে দিতে?’

    নাদিয়া পাথরের মতো মুখ করে বসে আছেন। মনে হচ্ছে না, মিসির আলির কোনো কথা তিনি শুনতে পেয়েছেন। মিসির আলি আব্দুল মজিদের মা’র দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনার একটি কথা আমার খুব ভালো লেগেছে। আপনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহ্ বলেন, নিয়তিকে গালি দিও না, কারণ আমিই নিয়তি।’ এটা কোথায় আছে বলুন তো? কোন সূরা?’

    বৃদ্ধা জবাব দিলেন না। স্থির চোখে মিসির আলির দিকে তাকিয়ে রইলেন। মিসির আলি বললেন, ‘নাদিয়া বলছিলেন, আপনি নাকি খুব সুন্দর গল্প বলতে পারেন। আমার খুব ইচ্ছা একদিন এসে আপনার গল্প শুনি। যদি অনুমতি দেন একদিন এসে আপনার গল্প শুনব। আচ্ছা, আজ তাহলে যাই।’

    গাড়ি মিসির আলিকে নিয়ে রওনা হয়েছে। তিনি আশা করেছিলেন, এ-বাড়ি ছেড়ে রওনা হবার সময় নাদিয়া এসে বিদায় দেবেন। কিছু বলবেন। নাদিয়া দোতলা থেকে নিচে নামেন নি। বাড়ি ছেড়ে যাবার সময় এই মেয়েটির সুন্দর মুখ আরেক বার দেখতে ইচ্ছা করছিল। জানতে ইচ্ছা করছিল সবুজ শাড়ি এই মেয়েটির এত প্রিয় কেন। জানা গেল না।

    মিসির আলি খুব ক্লান্ত বোধ করছেন। তাঁর অনেক দিনের সাথী ‘তীব্র মাথার যন্ত্রণা’ আবার ফিরে এসেছে। চোখ জ্বালা করছে। তাকিয়ে থাকতে পারছেন না। গাড়ির সীটে হেলান দিয়ে তিনি চোখ বন্ধ করে আছেন। রহস্যের জট খোলার মধ্যে তীব্র আনন্দ আছে। সেই আনন্দ তিনি পাচ্ছেন না। কারণ রহস্যের একটি অংশের জট তিনি খুলতে পারেন নি। একটি অংশ এখনো অমীমাংসিত। অম্বিকাবাবু কেন তাঁকে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়ালেন? তিনি কি আগাম জানতেন এমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে? যদি জানতেন, তাহলে কীভাবে জেনেছেন? ওসমান গনির কথাবার্তা থেকে আঁচ করেছিলেন? তিনি কখনো ওসমান গনির বাসায় যেতেন না। দূর থেকে এত বড় একটি ঘটনা আঁচ করা কি সম্ভব? তাহলে কি তাঁর জ্যোতিষ শাস্ত্র তাঁকে সাহায্য করেছে? তা হয় না। জ্যোতিষ শাস্ত্র বলে কিছু নেই।

    অম্বিকাবাবু কেন ওসমান গনির বাড়িতে কখনো যেতেন না? মিসির আলির মনে ক্ষীণ সন্দেহ–হয়তো-বা ওসমান গনির পালক পুত্রটি অম্বিকাবাবুর। তিনি তাঁর নিজের ছেলেকে এদের হাতে তুলে দেন। তা যদি হয়, তাহলে অম্বিকাবাবুর ওসমান গনির বাড়িতে না-যাওয়ার একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়। ব্যাখ্যাটি পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য নয়। অম্বিকাবাবু কেন তাঁর ছেলেকে দিয়ে দেবেন? এ-জাতীয় ঘটনা দরিদ্রদের মধ্যে ঘটে। অম্বিকাবাবু হতদরিদ্রের মধ্যে পড়েন না। তিনি একজন স্কুল শিক্ষক। তাছাড়া পুত্রের স্থান হিন্দু সমাজে অনেক ওপরে। মুখাগ্নিতে পুত্রের প্রয়োজন। মৃত্যুর পর পুত্রহীন পিতামাতার স্থান হয় পুনম নরকে। এমন অবস্থায় কেউ তার নিজের ছেলেকে দিয়ে দেবে, তা বিশ্বাস্য নয়। মিসির আলি আশা করেছিলেন গুলশান থানার ওসি সাহেব এ-ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করবেন। ছেলেটির অপঘাত মৃত্যুর পর নিশ্চয়ই থানায় জিডি এন্ট্রি করা হয়েছিল। সেখানে ছেলেটির সত্যিকার বাবার নাম থাকার কথা। কিন্তু ওসি সাহেব কোনো সাহায্য করতে পারেন নি। সতের বছরের পুরানো কাগজপত্র জোগাড় করা যায় নি। তবে এই রহস্যের সমাধান তেমন জটিল নয়। অম্বিকাবাবু এবং তাঁর কন্যাকে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে। এমনও হতে পারে অম্বিকাবাবুর পুত্রের যখন ছ’মাস বয়স তখন তাঁর স্ত্রী মারা যান। ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে অম্বিকাবাবু খুবই বিব্রত বোধ করতে থাকেন…… অতসীকে জিজ্ঞেস করলেই তো জানা যাবে কবে তার মা মারা গিয়েছেন। মিসির আলির কেন জানি জানতে ইচ্ছা করছে না। থাকুক না কিছু রহস্য অমীমাংসিত। প্রকৃতি সব রহস্য মানুষকে জানাতে চায় না। কিছু নিজের কাছে লুকিয়ে রাখতে চায়। থাকুক না সেই সব রহস্য লুকানো। সব জানতেই হবে এমন কোনো কথা আছে?

    সারা রাতের অনিদ্রা এবং ক্লান্তির কারণেই হয়তো-বা মিসির আলির তন্দ্রার মতো হল। তন্দ্রার মধ্যেই তিনি একটা স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নে সাত-আট বছরের একটি বালককে দেখা গেল। বালকটি ছুটতে ছুটতে তাঁর কাছে এসে থমকে দাঁড়াল। লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করল। মিসির আলি বললেন, ‘কিছু বলবে খোকা?’ ছেলেটি না-সূচক মাথা নাড়ল। স্বপ্নের মধ্যেই মিসির আলির মনে হল—এই সেই ছেলে—যে বাথরুমে কঠিন মৃত্যুকে গ্রহণ করেছে।

    মিসির আলি বললেন, ‘তুমি বাথরুমে মারা গিয়েছিলে, তাই না খোকা?’

    ছেলেটি হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল।

    ‘বুঝলে খোকা—এ হচ্ছে নিয়তি। নিয়তিকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই— কারণ নিয়তি হচ্ছে ঈশ্বর স্বয়ং।’

    ছেলেটি আবার হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল। মিসির আলি বললেন, ‘তুমি কিছু বলতে চাইলে বলতে পার।’

    ছেলেটি নিচু গলায় বলল, ‘আপনি আমার বোনকে বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন। আমি আপনার জন্যে উপহার নিয়ে এসেছি।’

    ‘কী উপহার?’

    ‘তা বলব না।’

    ছেলেটি খুব হাসতে লাগল। মিসির আলির ঘুম ভেঙে গেল। অন্য যে-কেউ এই স্বপ্নে অভিভূত হত, মিসির আলি হলেন না। কারণ তিনি জানেন, উত্তপ্ত মস্তিষ্কের কল্পনাই স্বপ্ন হিসেবে তাঁর কাছে এসেছে। এর বেশি কিছু না।

    গাড়ির ড্রাইভার বলল, ‘গান দেব স্যার?’ মিসির আলি হ্যাঁ, না কিছু বললেন না। ড্রাইভার গান দিয়ে দিল। মিসির আলি চোখ বন্ধ করে গান শুনতে লাগলেন—

    ‘এস কর স্নান নবধারা জলে
    এস নীপবনে ছায়াবীথি তলে…’

    মিসির আলির মনে হল ধারাজলে স্নানের এই আমন্ত্রণ সবার জন্যে। কিন্তু কেউ তা গ্রহণ করে না, নীপবন থাকে শূন্য……

    ⤶
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসায়েন্স ফিকশন সমগ্র – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article অনীশ – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই আমি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    মীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }