মৃচ্ছকটিক – তৃতীয় অঙ্ক
মৃচ্ছকটিক – তৃতীয় অঙ্ক
(চেট-এর প্রবেশ)
চেট— যে মনিব তাঁর ভৃত্যের প্রতি দরদী তিনি দরিদ্র হলেও সুন্দর, কিন্তু যে মনিব ধনগর্বী, নীচ, তাঁর সেবা করা দুঃসাধ্য— পরিণামে তিনি ভয়ঙ্কর ॥ ১।। তা ছাড়া, শস্যলুব্ধ ষণ্ডকে যেমন নিবারিত করা যায় না— তেমনি পরস্ত্রীতে গভীরভাবে আসক্ত ব্যক্তিকে, জুয়াড়ীকে এবং স্বভাবদুষ্ট মানুষকে শোধরানো যায় না।। ২।।
অনেকক্ষণ হল আর্য চারুদত্ত গানবাজনা শুনতে গেছেন। মধ্যরাত হয়ে গেল তবু ফিরছেন না। যাই, আমি বার-দেউড়ির কাছের ঘরে ঘুমোই গো।
(বিদূষক ও চারুদত্তের প্রবেশ)
চারুদত্ত— আহা! অপূর্ব! রেভিল কী সুন্দর গাইল! বীণাটি যেন এমন এক রত্ন যা সমুদ্র থেকে উৎপন্ন নয়।[১] কারণ—
প্রেমকাতর মানুষের হৃদয়ের কাছে এ এক সহৃদয় সঙ্গী, বিরহদগ্ধ প্রেমিকের পক্ষে সময় কাটানোর এ এক অপূর্ব উপায়, যারা বিচ্ছেদ ব্যথায় পীড়িত তাদের কাছে এ হল সান্ত্বনার উপায়[২] আর প্রেমমুগ্ধকে এ দেয় আনন্দ যা তার অনুরাগকেই বাড়িয়ে তোলে ॥ ৩ ॥
বিদূষক— চলুন, বাড়ি চলুন এখন।
চারুদত্ত— রেভিল কিন্তু সত্যি চমৎকার গেয়েছে!
বিদূষক— আমার দুটো ব্যাপারে হাসি পায়— মেয়েদের সংস্কৃত পড়া আর ছেলেদের মিহি সুরে গান করা শুনে। মেয়েরা যখন সংস্কৃত পড়ে তখন নাকে নতুন দড়ি পরানো গরুর মতো একটু বেশি রকম ‘সু সু’ শব্দ করে। আর ছেলেদের মিন্মিনে সুরে গান শুকনো ফুলের মালা-পরা বৃদ্ধ পুরোহিতের মন্ত্রের মতো আমার কাছে অসহ্য।
চারুদত্ত— কিন্তু, বন্ধু, রেভিল আজ সত্যিই খুব ভালো গেয়েছে, তোমার ভালো লাগেনি?
মধুর, অনুরাগে পূর্ণ, স্পষ্ট ভাবে ভরা আর মিষ্টি—কী গান! আহা! কথা দিয়ে ঠিক বোঝানো যায় না— মনে হচ্ছিল, আড়াল থেকে কোনো মেয়েই বুঝি গাইছে ॥ ৪ ॥
আর-
সত্যি, গান শেষ হয়ে গেলেও তার রেশটুকু এখনো কানে বাজছে। যেতে যেতে অনুভব করছি— সেই মিষ্টি কণ্ঠের স্বরমূর্ছনা, বীণার তারে সুরের মৃদু ও উচ্চ উত্থান-পতন— স্বরের মিশ্রণ, শেষের দিকে সুরের মৃদুতা, সহজ সংযমে শব্দের দ্বিরুক্তি ॥ ৫।
বিদূষক— বন্ধু, কুকুরেরাও দোকানপাটের রাস্তার ধারে ধারে ঘুমে মগ্ন। কাজেই এখন বাড়ি চলুন, (অগ্রসর হয়ে ও দেখে) বন্ধু, দেখুন, দেখুন, অন্ধকারকে সুযোগ দিয়ে চন্দ্রদেবতা যেন তাঁর আকাশের প্রাসাদ ছেড়ে নেমে আসছেন!
চারুদত্ত— তুমি সত্যিই বলেছ—
চাঁদ অন্ধকারকে সুযোগ দিয়ে অস্ত যাচ্ছেন। জলে ডুবে-যাওয়া বুনো হাতির ধারালো দাঁতটি শুধু অবশিষ্ট আছে যেন ॥ ৬ ।।
বিদূষক— বাড়ি এসে গেছি। বর্ধমানক, বর্ধমানক, দরজা খোলো!
চেট— মৈত্রেয়মশাইয়ের গলা শুনতে পাচ্ছি। আর্য চারুদত্ত এসেছেন। তাহলে দরজা খুলি, (তাই করে) আর্য, প্রণাম, মৈত্রেয়মশাই, আপনাকেও প্রণাম। এখানে বিছানো আসনে বসুন।
(উভয়ে প্রবেশ ও উপবেশনের অভিনয় করে )
বিদূষক— বর্ধমানক, রদনিকাকে ডাকো, আমাদের পা ধুইয়ে দিক।
চারুদত্ত— (অনুকম্পা করে) ঘুমন্ত মানুষকে জাগানোর দরকার নেই।
চেট— মৈত্রেয়মশাই, আমি জল ঢালছি, আপনি পা ধুইয়ে দিন।
বিদূষক–(রেগে গিয়ে) বন্ধু, এই দাসীরব্যাটা বলে কী! ও জল ঢালবে আর আমি আপনার পা ধুইয়ে দেব?
চারুদত্ত— বন্ধু মৈত্রেয়, তুমি বরং জল ঢালো আর বর্ধমানক আমার পা ধুইয়ে দিক।
চেট— মৈত্রেয়মশাই, জল ঢালুন।
(বিদূষক তাই করে, চেট চারুদত্তের পা ধুইয়ে সরে গেল)
চারুদত্ত— ব্রাহ্মণের পায়েও জল ঢেলে দাও।
বিদূষক— আমার পায়ে জল ঢেলে আর কী হবে? আমাকে তো এক্ষুনি আবার মার-খাওয়া গাধার মতো মাটিতে গড়াতে হবে।
চেট— মৈত্রেয়মশাই, আপনি যে ব্রাহ্মণ!
বিদূষক— হ্যাঁ, আমি ব্রাহ্মণের শিরোমণি— সাপের মধ্যে ঢোঁড়া সাপ।
চেট— মৈত্রেয়মশাই, আমি আপনার পা ধুয়ে দিচ্ছি। (তাই করে) মৈত্রেয়মশাই, এই যে সোনার পেটিকা, দিনের বেলা আমি পাহারা দিয়েছি, এবার রাত্রে আপনি দিন। দয়া করে এটা নিন। (দিয়ে প্রস্থান)
বিদূষক— (হাতে নিয়ে) এটা এখনো আমাদের কাছে আছে! উজ্জয়িনীতে কি একটি চোরও নেই যে আমার এই হতচ্ছাড়া ঘুম-চুরিকরা জিনিসটি চুরি করে আমাকে স্বস্তি দেয়? বন্ধু, এটাকে অন্তঃপুরে কোথায় রেখে আসি?
চারুদত্ত— না বন্ধু, অন্তঃপুরে নিয়ে যেও না, একজন গণিকা এই অলঙ্কার ব্যবহার করেছে। ব্রাহ্মণ, তার কাছে ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত এটা তোমার কাছেই রেখে দাও ॥ ৭॥
(ঘুমের অভিনয় করে এবং ঘুমের ঘোরে বলতে থাকে, ‘সত্যি সে গানের…’ ইত্যাদি)
বিদূষক— ঘুমুচ্ছেন নাকি?
চারুদত্ত— হ্যাঁ, কপাল থেকে চোখজোড়া ঘুম যেন নেমে আসছে, এ যেন অদৃশ্যা ও মায়াময়ী জবার মতো যা মানুষের চেতনাকে আচ্ছন্ন করে মানুষের শক্তি হরণ করে ক্রমশ বাড়তে থাকে ॥ ৮ ॥
বিদূষক— তাহলে দুজনেই ঘুমোই। (ঘুমিয়ে পড়ার অভিনয় করে)
(শর্বিলকের প্রবেশ)
শর্বিলক— নিজের শিক্ষা ও গায়ের জোরে আমার মাপের মানুষের পক্ষে সহজে ঢুকে যাবার মতো যথেষ্ট বড়ো পথ তৈরি করেছি। এবার গর্তের দু’পাশে ঘষা খেতে খেতে খোলস ছাড়া সাপের মতো ঢুকে যাব ॥ ৯॥
(আনন্দে আকাশের দিকে চেয়ে) বাহ্, চন্দ্রদেব অস্ত যাচ্ছেন? তাই তো? স্নেহান্ধ মায়ের মতো সবকিছু গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে রাখা এই রাতও আমাকে ঢেকে রাখছে— তাই তো এখন চলাফেরায় রাজপুরুষের ভয় থাকা সত্ত্বেও আমি বীরের মতো অন্যের বাড়িতে চুরি করার জন্যে ঢুকতে পারছি ॥ ১০ ॥ বাগানের প্রাচীরের গায়ে সিঁধ কেটে বাড়ির মধ্যে ঢুকেছি, এবার অন্তঃপুরের দেওয়ালে সিঁধ কাটি। ঘুমন্ত মানুষের ঘরে চুরি করার ব্যাপারটাকে লোকে ছোট কাজ বলে— মানুষের বিশ্বাসকে ভাঁওতা দিয়ে চুরি করায় কৃতিত্ব নেই, লোকে এ-ও বলে। আমি কিন্তু বলি যে হাত জোড় করে লোকের চাকরগিরি করার চেয়ে নিন্দার হলেও স্বাধীন বৃত্তি অনেক ভালো। দ্রোণের পুত্র ক্ষত্রিয় রাজপুত্রদের ঘুমের মধ্যে হত্যা করে এমন দৃষ্টান্ত দেখিয়ে গেছেন ॥১১॥
তাহলে— কোন জায়গায় সিঁধ কাটি? জলে ভিজে ভিজে নরম হয়ে গেছে বলে কোনো শব্দ হবে না— এমন জায়গা কোথায়? দেওয়ালে এমন জায়গায় সিঁধ কাটতে হবে যেখানটা কারো নজরে আসবে না, লোনা-ধরা ভাঙা জায়গা কোথায় দেখতে হবে। কোনো স্ত্রীলোকের দৃষ্টির বাইরে থেকে কাজ হাসিল করতে পারা যাবে এমন জায়গা বাছা দরকার ॥ ১২ ॥
(দেওয়ালে হাত বুলিয়ে) এই তো পেয়েছি। রোদে পুড়ে আর জলে ভিজে ভিজে এই জায়গাটা খারাপ হয়ে গেছে, লোনা ধরেছে আর ইঁদুরেও মাটি তুলেছে দেখেছি। যাক্, এবার কার্যসিদ্ধি। কার্তিকের শিষ্যদের কাছে এটাই হল প্রথম লক্ষণ। এখন কীভাবে সিঁধ কাটা যায়? কার্তিকঠাকুর তো সিধ কাটার চার রকম উপায় দেখিয়েছেন। যেমন, ঝামা ইট টেনে খসানো, কাঁচা ইঁট হলে কেটে ফেলা, মাটির দেওয়ালে জল ঢালা, কাঠের তৈরি হলে কাটা। এখানে দেখছি ঝামা ইট, কাজেই টেনে বার করতে হবে। কিন্তু এখানে ‘ফোটা পদ্ম’, ‘সূর্য’, ‘বাল-চন্দ্ৰ’, ‘বড়ো’ দিঘি’, ‘স্বস্তিকা’, ‘পূৰ্ণকুম্ভ’–কোথায় কোন শিল্প দেখাব যা দেখে কাল নগরবাসী অবাক হয়ে যাবে? ॥ ১৩ ॥
ঠিক আছে, এখানে এই ঝামা ইটের কলসীর আকারের সিঁধই মানাবে। তাই কাটা যাক। লোনা-ধরা, অসমান অন্যের দেওয়ালে আমার সিঁধ কাটার কায়দা দেখে সকালবেলা প্রতিবেশীরা আমাকে দোষ দেবে, আবার প্রশংসাও করবে ॥ ১৪ ॥
বরদাতা কুমার কার্তিককে প্রণাম জানাই। দেব্রত কনকশক্তিকে নমস্কার, ভাস্করনন্দীকেও নমস্কার, আমার গুরু যোগাচার্যকেও প্রণাম, তিনিই সন্তুষ্ট হয়ে আমাকে এই যাদুময় উপকরণ দান করেছেন। এটা গায়ে মেখে নিলে রক্ষীরা আমাকে দেখতে পাবে না, গায়ে অস্ত্র পড়লেও চোট লাগবে না ॥ ১৫ ॥
(তাই করে) এই রে! মাপার ফিতে আনতে ভুলে গেছি। (ভেবে) ঠিক আছে, এই পৈতেটাই মাপার ফিতের কাজ করবে। সত্যি, পৈতে জিনিসটা ব্রাহ্মণদের, বিশেষ করে আমার মতো ব্রাহ্মণের যথেষ্ট কাজে লাগে। কারণ— এ দিয়ে সিঁধ কাটার মাপ ঠিক করা যায়, এ দিয়ে গায়ের গয়না টেনে নেওয়া যায়, যন্ত্রের মতো শক্ত দরজা এ দিয়ে খোলা যায়, আবার সাপে কামড়ালে এ দিয়ে বাঁধাও যায় ॥ ১৬॥
এইবার মাপ-জোক করে কাজ শুরু করা যাক। (তাই করে এবং দেখে) আর একটা ইট বাকি আছে। উহ্ আমাকে সাপে কামড়েছে। (পৈতে দিয়ে আঙুল বেঁধে বিষের জ্বালায় কষ্ট পাওয়ার অভিনয় করে) ব্যস, ঠিক হয়ে গেছি এখন। (আবার সিঁধ কেটে এবং দেখে) একি! একটা প্রদীপ জ্বলছে যে! তাই তো— সোনারবরণ প্রদীপশিখার আলো সিঁধের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে, চারিদিকে বিস্তৃত ঘন অন্ধকার— যেন কষ্টিপাথরে সোনার রেখা ॥ ১৭ ॥
(আবার কাজ করে) যাক্, সিঁধ কাটা শেষ। এইবার তবে ঢুকে পড়ি। না আগেই ঢুকব না। প্রথমে একটা নকল মানুষ ঢোকাই। (তাই করে) কেউ নেই তা হলে। কার্তিকঠাকুরকে প্রণাম জানাই। (প্রবেশ করে দেখে) দু’জন লোক ঘুমাচ্ছে দেখছি। পালানোর জন্যে বাইরের দরজাটা খুলে রাখা যাক। পুরনো বাড়ি, তাই কপাটটায় ক্যাচ-কোঁচ শব্দ হচ্ছে। দেখি, কোথাও যদি একটু জলটল পাওয়া যায়। জল কোথায় আছে কে জানে! (এদিক-ওদিক দেখে জল নিয়ে ভয়ে ভয়ে কপাটে জল দেয়) না, কাজ নেই আর। মাটি পড়ে জলের শব্দ হচ্ছে বড়ো। যাক্, এ পর্যন্ত তো হল একরকম। (পিঠ দিয়ে কপাট খুলে) এবার তবে পরীক্ষা করে দেখা যাক্, এরা সত্যিই ঘুমোচ্ছে কি না (তাদের ভয় দেখায় এবং লক্ষ করে) এরা তবে সত্যিই ঘুমোচ্ছে। কারণ, এদের নিশ্বাস পরিষ্কার ও সমানভাবে পড়ছে। চোখ ভালোভাবে বন্ধ করা। চোখের পাতা কাঁপছে না। এদের অঙ্গ শিথিলভাবে পড়ে আছে কারণ দেহের গ্রন্থিগুলো আলগা হয়ে আছে, যথাসম্ভব জায়গায় শরীর এলিয়ে শুয়ে আছে। যদি ঘুমের ভাণও করত তবে মুখের উপর প্রদীপের আলোটা কখনো সহ্য করতে পারত না ॥ ১৮ ॥
(চারিদিক দেখে) কী ব্যাপার? এখানে দেখছি একটা মৃদঙ্গ, বাঁশি আবার এখানে একটা বীণা, এখানে আবার কতগুলো বই— একি তবে সংগীতাচার্যের বাড়ি! আমি তো বাড়িটা দেখেই ঢুকেছি। বাড়ির মালিক কি সত্যি গরিব, না রাজা অথবা চোরের ভয়ে টাকাপয়সা মাটিতে পুঁতে রেখে দিয়েছে? কিন্তু শর্বিলককে ফাঁকি দেওয়া সহজ নয়। বীজ ছড়িয়ে দেখব। (তাই করে) তাই তো, বীজ ছড়ালাম, কিন্তু কোনোটাই ফুটে উঠল না। আহা, বেচারা সত্যিই গরিব। তা হলে চলেই যাই।
বিদূষক— (ঘুমের মধ্যে কথা বলে) বন্ধু, গর্তের মতো কি যেন দেখতে পাচ্ছি! চোরের মতো কে যেন দাঁড়িয়ে। এই সোনার পেটিকা আপনি নিন তা হলে।
শর্বিলক— গরিবের বাড়িতে ঢুকেছি বলে কী আমাকে ঠাট্টা করছে? তবে কি একে বধ করব? না কি দুর্বল প্রকৃতি বলে স্বপ্নে এরকম বলছে? (দেখে) ছেঁড়া-খোঁড়া স্নানের গামছায় বাঁধা সত্যিই কতকগুলো অলঙ্কার প্রদীপের আলোয় ঝকমক করছে— আচ্ছা, তবে নেওয়াই যাক। না, থাক, আমার মতো গরিব হলেও এই উচ্চবংশের লোকটিকে দুঃখ দেওয়া উচিত নয়। আমি বরং চলেই যাই।
বিদূষক— বয়স্য, গো-ব্রাহ্মণের দিব্যি, অলঙ্কারগুলো আপনি নিয়ে যান বলছি।
শর্বিলক— গো-ব্রাহ্মণের দিব্যি! তা হলে তো নিতেই হয়। কিন্তু প্রদীপটা জ্বলছে যে। আমার কাছে অবশ্য প্রদীপটা নেভানোর জন্যে এক ধরনের আগুনে পোকাও আছে। পোকা ছেড়ে দিই। (তাই করে) পোকাগুলো প্রদীপের উপর ঘুরে-ফিরে বেড়াচ্ছে। ভদ্রপীঠের পাখার ঝাপটায় প্রদীপ নিভে গেল। ওহ্ কী অন্ধকার! কিন্তু আমি কিনা ব্রাহ্মণবংশে জন্মে অন্ধকারে ঘুরে বেড়াচ্ছি? চতুর্বেদের অধিকারী, যে ব্রাহ্মণ কখনো দান গ্রহণ করেননি তাঁর পুত্র হয়ে আমি— ব্রাহ্মণ শর্বিলক কি না গণিকা মদনিকার জন্যে কুকর্ম করছি। যাকগে, এখন এই ব্রাহ্মণের অনুরোধটা রক্ষা করি তো।
(হাতড়াতে হাতড়াতে এগিয়ে যায়)
বিদূষক— বয়স্য! আপনার হাতটা এত ঠাণ্ডা কেন?
শর্বিলক— কী বিপদ বল দেখি! জল ঘেঁটে হাতটা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। আচ্ছা, বগলের মধ্যে হাতটা রাখি। (ডান হাত গরম করে অলঙ্কার নেয়)
বিদূষক— নিয়েছেন তা হলে?
শর্বিলক— ব্রাহ্মণের অনুরোধ কি এড়ানো যায়? নিয়েছি।
বিদূষক— জিনিসপত্র বিক্রি হয়ে যাবার পর বণিক যেমন নিশ্চিন্তে ঘুমোয়, তেমনি আমিও এবার ঘুমোই। (ঘুমিয়ে পড়ে)
শর্বিলক— ওহে, মহাব্রাহ্মণ, এখন তুমি একশ বছর ধরে ঘুমোও, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার এখন একমাত্র দুঃখ হল— গণিকা মদনিকার জন্যে গোটা ব্রাহ্মণকুলকে নরকে ডোবালাম, অথবা নিজেই নরকে ডুবলাম। দারিদ্র্যকে ধিক্, কারণ, এই দারিদ্র্যই পৌরষকে বিপথগামী করে। দারিদ্র্যের জন্যেই আমি কুকর্ম করছি, আবার তার নিন্দাও করছি ॥ ১৯ ॥
এখন তবে মদনিকার দাসত্ব ঘোচাতে বসন্তসেনার বাড়িতে যাওয়া যাক। (পরিক্রমা ও অবলোকন করে) কার যেন পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে, প্রহরীদের নয় তো? থামের মতো চুপ করে এখানে দাঁড়িয়ে থাকি। আমি হলাম গিয়ে শর্বিলক, রক্ষী আমার কী করবে?
বিড়ালের মতো নিঃশব্দে চলে, হরিণের মতো দ্রুতগতিতে যে ছোটে, গ্রহণছেদন কাজে যে বাজের মতো, কুকুরের মতো যে বুঝতে পারে কে নিদ্রিত, কে সুপ্ত, সাপের মতো আঁকাবাঁকা যার গতি, ছদ্মবেশে যে মায়ার মতো, ফুটো দিয়ে গলে যাবার ব্যাপারে যে সাপ, নানা ভাষায় যে অভিজ্ঞ এবং সরস্বতীর মতো জ্ঞানী, রাত্রে যে প্রদীপ, বিপদে শেয়াল, মাটিতে ঘোড়া আর জলে নৌকো–সেই শর্বিলকের আবার রক্ষীর ভয়! ॥ ২০ ॥
তাছাড়া,–
আমি গতিতে সর্প, স্থৈর্যে পর্বত, অবিরাম ওড়ায় গরুড়ের সমতুল্য, চারিদিক লক্ষের ব্যাপারে খরগোস, ছিনিয়ে নিতে আমি যেন বাঘ আর শক্তিতে সিংহ ॥ ২১॥
(রদনিকার প্রবেশ)
রদনিকা— হায়, এখন কী করি? বাইরের দরজার কাছের ঘরে বর্ধমানক ঘুমোচ্ছিল— তাকেও দেখছি না। আচ্ছা, তবে মৈত্রেয়মশাইকেই ডাকি। (পরিক্রমণ শর্বিলক— (রদনিকাকে মারতে উদ্যত, কিন্তু দেখে) এ কী! এ যে স্ত্রীলোক! তবে যাই (প্রস্থান)
রদনিকা— (ভয়ে ভয়ে গিয়ে) সর্বনাশ হয়েছে। চোর চুরি করে পালাচ্ছে! আমি গিয়ে মৈত্রেয়কে জানিয়ে দিই। (বিদূষকের কাছে গিয়ে) মৈত্রেয়মশাই, শিগগির জাগুন। বাড়িতে সিঁধ কেটে পালাচ্ছে!
বিদূষক–(উঠে পড়ে) আরে বেটী, বলিস কী? সিঁধ কেটে চোর পালাল?
রদনিকা— আরে নির্বোধ; ঠাট্টা নয়, দেখছ না ওই যে সিঁধ?
বিদূষক— ওরে বেটী, বলিস কী? দ্বিতীয় একটা দরজা তৈরি হয়েছে দেখছি! বন্ধ। বয়স্য চারুদত্ত, উঠুন, উঠুন, আমাদের বাড়িতে চোর সিঁধ কেটে পালিয়েছে!
চারুদত্ত— খুব হয়েছে। পরিহাস করছ কেন?
বিদূষক— পরিহাস নয়, আপনি নিজে এসে দেখুন।
চারুদত্ত— কোথায়?
বিদূষক— এই যে এদিকে।
চারুদত্ত— (লক্ষ করে) আহা, দেখার মতো সিঁধ বটে! উপর থেকে ইঁট সরিয়ে নিচের দিকে নামা হয়েছে। তাই উপরদিকটা সরু আর মাঝখানটা চওড়া। মনে হচ্ছে আমাদের রাজকীয় গৃহের হৃদয়টি যেন অযোগ্য লোকের সংসর্গের ভয়ে বিদীর্ণ হয়েছে। এই ধরনের কাজের মধ্যেও কী নৈপুণ্যo ॥ ২২॥
বিদূষক— বয়স্য! হয় কোনো বিদেশি অথবা কোনো শিক্ষানবিস দেশি লোক এই সিঁধ কেটেছে। তা না হলে, উজ্জয়িনীতে আমাদের বাড়ির অবস্থার কথা কে না জানে?
চারুদত্ত— কোনো বিদেশি অথবা কেবল শিখছে এ রকম কেউ এ কাজ করেছে। তার জানা ছিল না যে টাকাপয়সা নেই বলে বাড়ির লোক নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। প্রথমে আমাদের বাড়ির বাহ্যিক জৌলুস দেখে আশা করেছিল। তারপর অনেকক্ষণ ধরে সিঁধ কেটে ক্লান্ত হয়ে নিরাশ হয়ে ফিরে গিয়েছে ॥ ২৩ ॥
তাহলে এখন বেচারা বন্ধুদের কাছে গিয়ে কী বলবে? বলবে ‘বণিকের ছেলের বাড়িতে গিয়ে কিছুই পাইনি।’
বিদূষক— বটে! চোরটার ওপর খুব যে দরদ দেখছি! সে নিশ্চয়ই মনে করেছিল এই বিরাট বাড়ি থেকে সোনার অলঙ্কার, ধনরত্ন সব চুরি করে নিয়ে যাবে। ও ভালো কথা, সেই সোনার অলঙ্কারগুলো কোথায়? তা বয়স্য, আপনি সব সময় বলে থাকেন, ‘মৈত্ৰেয়টা একটা আস্ত নির্বোধ, মূর্খ’– কিন্তু আমি সেই অলঙ্কারগুলো আপনার হাতে দিয়ে ঠিক কাজ করেছি কিনা, বলুন তো? তা না দিলে চোরটা নিশ্চয়ই ওগুলো নিয়ে পালাতো, তাই না?
চারুদত্ত— আর পরিহাসে কাজ নেই।
বিদূষক— আমি এমনই মূর্খ যে পরিহাসের স্থানকাল বুঝি না?
চারুদত্ত— কখন দিলে তুমি?
বিদূষক— কেন? আপনাকে যখন বললাম, আপনার হাতটা কী ঠাণ্ডা—
চারুদত্ত— এ কথা আবার কখন বললে? (চারিদিক দেখে আনন্দে) বন্ধু, একটা সুখবর দিচ্ছি।
বিদূষক— কী? চুরি হয়নি তো?
চারুদত্ত— হ্যাঁ, চুরি হয়েছে।
বিদূষক— তবু বলছেন, সুখবর?
চারুদত্ত— চোর সন্তুষ্ট হয়ে চলে গেছে।
বিদূষক— কিন্তু সে যে গচ্ছিত জিনিস।
চারুদত্ত— কী বললে! সেই গচ্ছিত জিনিস? (মূৰ্চ্ছা)
বিদূষক— শান্ত হোন বন্ধু। চোরে গচ্ছিত জিনিস চুরি করেছে বলে আপনি মূৰ্চ্ছা যাচ্ছেন কেন? চারুদত্ত (সংজ্ঞা লাভ করে)— বন্ধু, সত্যি ঘটনা কে বিশ্বাস করবে? প্রত্যেকেই আমাকে নীচ মনে করবে। গৌরবহীন দারিদ্র্যকেই লোকে সন্দেহের চোখে দেখে ।। ২৪ ।।
ওহ্ কী দুর্ভাগ্য আমার! বিধি আমার ধন চুরি করালেন, এখন আমার চরিত্রকে নিষ্ঠুরভাবে হনন করছেন ॥ ২৫ ॥
বিদূষক— আমি সরাসরি অস্বীকার করব। দিয়েছে কে? নিয়েছেই-বা কে? সাক্ষী কোথায়?
চারুদত্ত— আমাকে কি এখন মিথ্যে কথা বলতে হবে? না, আমি বরং ভিক্ষা করে গচ্ছিত জিনিস ফেরত দেব, তবু মিথ্যা বলে চরিত্রনাশের কারণ ঘটাতে পারব না ॥ ২৬ ॥
রদনিকা— যাই ধূতা-মাকে খবরটা দিয়ে আসি। (প্রস্থান)
(চেটীর সঙ্গে চারুদত্তের স্ত্রীর প্রবেশ)
স্ত্রী–(ব্যস্ত হয়ে) ওলো, আর্যপুত্র মৈত্রেয়সহ অক্ষত শরীরে আছেন?
চেটী— সত্যি মা-ঠাকরুণ। কিন্তু সেই গণিকার গয়নাগুলো চুরি হয়ে গেছে।
স্ত্রী— (অচৈতন্য হওয়ার অভিনয় করে)
চেটী— শান্ত হোন্ মা ঠাকরুন।
স্ত্রী— (সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে) ওরে কী বলছিস তুই? ওঁর শরীরে কোনো আঘাত লাগেনি কিন্তু চরিত্রে আঘাত লাগার চেয়ে যে শরীরের আঘাত অনেক ভালো ছিল। এখন উজ্জয়িনীর সব লোক বলবে— অভাবের তাড়নায় উনি এই কাজ করেছেন। (উপরে তাকিয়ে ও দীর্ঘশ্বাস ফেলে) হায় ভগবান। পুরুষের ভাগ্যকে পদ্মপাতার জলের মতো চঞ্চল করে এ তোমার কী কৌতুক? আমার মায়ের বাড়ি থেকে পাওয়া এই একটিমাত্র রত্নহার আমার আছে। কিন্তু আমার স্বামী যে প্রকৃতির লোক— তিনি কিছুতেই এটা গ্রহণ করবেন না। ওলো, যা মৈত্রেয়মশাইকে একবার এখানে ডেকে নিয়ে আয়।
চেটী— যে আজ্ঞা, মা-ঠাকুরুন। (বিদূষকের কাছে গিয়ে) মৈত্রেয়মশাই ধূতা-মা আপনাকে ডাকছেন।
বিদূষক— কোথায় তিনি?
চেটী— এই যে ইনি এখানে। এদিকে আসুন।
বিদূষক— (এগিয়ে গিয়ে) কল্যাণ হোক।
স্ত্রী— প্রণাম জানাই। পুব দিকে মুখ ফিরিয়ে বসুন।
বিদূষক— এই আমি পুবমুখো হয়ে বসলাম।
স্ত্রী— এইটে আপনি রাখুন।
বিদূষক— কী এটি?
স্ত্রী— আমি রত্নষষ্ঠী ব্রত নিয়েছিলাম— তাতে যার যা ক্ষমতা সেই অনুসারে ব্রাহ্মণকে রত্নদান করতে হয়। এটা আমি একজন ব্রাহ্মণকে দিতে গিয়েছিলাম— কিন্তু তিনি গ্রহণ করলেন না। তাঁর হয়ে এই রত্নহারটি আপনি গ্রহণ করুন।
বিদূষক— (গ্রহণ করে) কল্যাণ হোক। যাই প্রিয়বন্ধুকে খবরটা দিই গো।
স্ত্রী— মৈত্রেয়মহাশয়, আমাকে লজ্জা দেবেন না। (প্রস্থান)
বিদূষক— (বিস্ময়ে) ওহ্। কী মহানুভবতা!
চারুদত্ত— মৈত্রেয় আসতে এত দেরি করছে কেন? মনের দুঃখে কিছু একটা করে না বসে। মৈত্রেয়, মৈত্রেয়!
বিদূষক— (কাছে এসে) এই যে এসেছি। এইটি নিন। (রত্নহার দেখান
চারুদত্ত— এটা কী?
বিদূষক— আপনি যে আপনারই যোগ্য স্ত্রী পেয়েছেন এ তারই প্রমাণ।
চারুদত্ত অ্যা, আমার ব্রাহ্মণী পর্যন্ত আমাকে করুণা করেন। আমি তবে সত্যিই গরিব— ভাগ্যদোষে হৃতসর্বস্ব আমার প্রতি স্ত্রী করুণা দেখাচ্ছেন। অর্থই পুরুষকে নারী করে দেয়, আবার অর্থই স্ত্রীলোককে পুরুষ করে ॥ ২৭ ॥
কিন্তু না, আমি দরিদ্র নই, কারণ— আমার স্ত্রী আমার ভাগ্যেরই অনুগমন করেন, সুখে-দুঃখে তুমি আমার বন্ধু, দরিদ্রের পক্ষে স্বাভাবিক হলেও আমি মনে-প্রাণে সত্যভ্রষ্ট হইনি ॥ ২৮ ॥
মৈত্রেয়, এই রত্নহার নিয়ে বসন্তসেনার কাছে যাও। তাকে আমার হয়ে বোলো, ‘তোমার সেই স্বর্ণ-অলঙ্কার আমার নিজের জিনিস মনে করে পাশা-খেলায় হারিয়েছি— তার বদলে এই রত্নহারটি দিচ্ছি, তুমি গ্রহণ করো।’
বিদূষক— চার সাগরের সার এই মহামূল্য রত্নহারটি সামান্য মূল্যের অলঙ্কারের পরিবর্তে দেওয়াটা মোটেই উচিত নয়। তাছাড়া সে অলঙ্কারটি আমরা ভোগও করিনি, আত্মসাৎও করিনি— চোরে নিয়েছে।
চারুদত্ত— না, বন্ধু, ঠিক তা নয়। যে বিশ্বাস নিয়ে সে আমাদের কাছে সেটা গচ্ছিত রেখেছিল আমি সেই বিশ্বাসেরই দাম দিচ্ছি ॥ ২৯ ॥
তাহলে বন্ধু, আমার গা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করো এটা গ্রহণ না করিয়ে তুমি এখানে আসবে না।
বর্ধমানক— ইটগুলো দিয়ে তাড়াতাড়ি সিঁধটা গেঁথে ফেল। দুর্নামের অনেক জ্বালা, তাই ওটাকে ওভাবে ফেলে রাখতে চাই না ॥ ৩০॥
বন্ধু, মৈত্রেয়, তুমি সসম্মানে ও উদারভাবে তাকে সম্বোধন করবে।
বিদূষক— বন্ধু, গরিব কি উদারভাবে কথা বলতে পারে?
চারুদত্ত— বন্ধু, আমি মোটেই গরিব নই। যার— (‘স্ত্রী অনুগতা’ ইত্যাদি বার বার বলতে থাকে)। তুমি তবে এসো— আমিও শুদ্ধ হয়ে সন্ধ্যা উপাসনায় যাই।
॥ সন্ধিচ্ছেদ-নামে তৃতীয় অঙ্কের সমাপ্তি ॥
—
টীকা
১. সমুদ্রের চতুর্দশ রত্ন :
লক্ষ্মী, কৌস্তুভ, পরিজাত, সুরাদেবী, ধন্বন্তরি, চন্দ্র, কামধেণু, ঐরাত, রম্ভাদি দেবাঙ্গনা, সপ্তমুয অশ্ব, বিষ, হরিধনু, শঙ্খ, অমৃত।
বীণা এখানে সমুদ্ররত্নের সঙ্গে তুলিত হল।
২ . তুলনীয় :
উৎসঙ্গে মলিনবসনে সৌম্য নিক্ষিপ্য বীণাং
মদ্গোত্রাঙ্কং বিরচিতপদং গেয়মুদ্গাতুকামা’ –(উত্তরমেঘ, ২৫)
৩. উপমাটির মাধূর্য লক্ষণীয়। শর্বিলককে আত্মগোপন করতে হবে তাই তিমির অবগুণ্ঠন তার প্রয়োজন। শর্বরী তাকে কোল দিচ্ছে মায়ের মতো। রাত্রিকে মাতৃমূর্তিতে যে কল্পনা করতে পারে সেই মুহূর্তে চৌর্যবৃত্তি তার পক্ষে সম্ভব কি? কিন্তু প্রণয়িনীকে পাবার জন্যে একাজ তাকে করতেই হচ্ছে।
‘কিং বা ন কারয়তি মন্মথঃ’! (দরিদ্র চারুদত্ত ৩য় অঙ্ক)
৪. অদ্ভুত চারুদত্তের ঔদার্য ও সৌন্দর্যবোধ। এ নিদারুণ সর্বনাশে তিনি ধৈর্য হারিয়ে ফেলেননি। অবাক বিস্ময়ে চোরের শিল্পচাতুর্যের প্রশংসা করছেন।
ভাসের চারুদত্তে এই অনবদ্য অংশটি নেই।
বিদূষক বলছে— চারুদত্ত! একটা আনন্দের সংবাদ দিই।
নায়ক— আনন্দের সংবাদটি কী? বসন্তসেনা এসেছিল?
বিদূষক— না, বসন্তসেনা নয়, এসেছিল বসন্তসেন।
বিদূষক এমন দুর্দৈব নিয়ে রঙ্গ করতে পারছে কারণ তার ধারণা স্বর্ণভাণ্ডটি সে চারুদত্তের হাতেই দিয়েছে, অতএব খোয়া যায়নি। স্বপ্নকেই যে সত্য ভেবেছে সে!