Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মৃত্যুক্ষুধা – কাজী নজরুল ইসলাম

    কাজী নজরুল ইসলাম এক পাতা গল্প154 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    মৃত্যুক্ষুধা – ২৩

    বহুদিন পরে লতিফার মুখে হাসি দেখা দিল। নাজির সাহেব অফিস থেকে এসেই ঘুমন্ত লতিফাকে তুলে বললেন, ‘ওগো, শুনেছ? রুবির যে নদিয়ার ডিস্ট্রিক্ট-ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে এলেন!”

    এক নিমেষে লতিফার ঘুম যেন কোথায় উড়ে গেল! সে ধড়মড়িয়ে উঠে বললে, “সত্যি বলছ? মিস্টার হামিদ একা এলেন, না, রুবিও সঙ্গে আছে?”

    ধরাচূরা খুলতে খুলতে নাজির সাহেব বললেন, “তা তো ঠিক জানিনে। তবে কে যেন বললে, হামিদ সাহেবের ছেলেমেয়েরাও এসেছে সঙ্গে।”

    লতিফার চোখ কার কথা ভেবে বাষ্পাকুল হয়ে উঠল! মনে মনে বলল, “সেই তো এলি হতভাগি, দুদিন আগে এলে হয়তো একবার দেখতে পেতিস!”

    পরদিন বিকালে লতিফার দোরে একটা প্রকান্ড মোটর এসে দাঁড়াল। লতিফা দোরে এসে দাঁড়াতেই মোটর হতে এক শ্বেতবসনা সুন্দরী হাস্যোজ্জ্বল মুখে নেমে এল।

    লতিফা তাকে একেবারে বুকের ওফর টেনে নিয়ে বললে, “রুবি, তুই! তুই এমন হয়েছিস?” বলতে বলতে তার চোখ দিয়ে টস টস করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগাল।

    রুবি ধমক দিয়ে বললে, ‘চুপ! কাঁদবি তো এখনই চলে যাব বলে দিচ্ছি! মাগো! তোদের চোখের জল যেন সাধা ; কোথায় এতদিন পরে দেখা, একটু আনন্দ কর, তা না, কেঁদেই ভাসিয়ে দিলি?”

    লতিফা চোখ মুছে বললে, “সেই রুবি, তুই এই হয়েছিস! তখন যে তোর মতন কাঁদুনে কেউ ছিল না লো আমাদের দলে, আর এখন এমনই পাথর হয়ে গেছিস?”

    রুবি লতিফার গাল টিপে দিয়ে বললে, “পাথর নয় লো, বরফ! আবার গ্রীষ্মকাল এলেই গলে জল হয়ে যাব!” বলেই তার ছেলেমেয়েদের আদর করে, চুমু খেয়ে, কোলে নিয়ে চিমটি কেটে কাঁদিয়ে, তারপর মিষ্টি, কাপড় দিয়ে ভুলিয়ে – বাড়িটাকে যেন সরগরম করে তুললে!

    পাড়ার অনেক মেয়ে জুটেছিল, কিন্তু রুবির এক হুমকিতে সব যে যেখানে পারল সরে পড়ল! বাপ! ম্যাজিস্টরের মেয়ে!

    রুবি হেসে বলল, “জানিস বুঁচি, আমি বেশি লোক দেখতে পারিনে! একপাল লোক মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে, ভাবতেও যেন অসোয়াস্তি লাগে। ওদের তাড়িয়ে দিতে কষ্ট হয়, কিন্তু না তাড়িয়ে যে পারিনে ভাই।”

    বুঁচি ওরফে লাতিফা হেসে বললে, “ তুই ম্যাজিস্টেটের মেয়ে, তাই ওরা অমন চুপ করে সরে গেল, নইলে এমন ভাষায় তোর তাড়নার উত্তর দিয়ে যেত যে, কানে শীল-মোহর করতে ইচ্চে করত।”

    রুবি দুষ্টু হাসি হেসে বললে, “তাহলে তুই বেশ খাঁটি বাংলা শিখে ফেলেছিস এতদিনে?”

    লতিফা হেসে ফেলে বললে, “ হ্যাঁ, তা আমি কেন, আমার ছেলেমেয়েরাও শিখে ফেলেছে। এমন বিশ্রী পাড়ায় আছি ভাই, সে আর বলিসনে। ছেলেমেয়েগুলোর পরকাল ঝরঝরে হয়ে গেল। কিন্তু ও কথা যাক, ছেলেমেয়েগুলোকে ছেড়ে একটু স্থির হয়ে বস দেখি, কত কথা আছে জানবার, জানাবার। যেতে কিন্তু বেশ দেরি হবে তোর। মোটর এখন ফিরে যেতে বল, রাত্রে খেয়ে দেয়ে যাবি।”

    রুবি আনন্দে ছেলেমানুষের মতো নেচে উঠে সোফারকে গাড়ি নিয়ে যেতে বলল এবং ঝিকে ওই সঙ্গে বাড়ি পাঠিয়ে তার মাকে ভাবতে মানা করে রাত্রি দশটায় গাড়ি আনতে বলে দিল।

    রুবি ছুটে এসে লতিফার পালঙ্কের উপর সশব্দে শুয়ে পড়ে লতিফাকে কাছে টেনে নিয়ে বলল, “বাস, এইবার আর কোনো কথা নয়। তুই তোর সব কথা বল, আমি আমার সব কথা বলি।” বলেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, “ও বাব, এখুনই আবার তোর নাজির সাহেব আসবে বুঝি! ওকে কিন্তু আজ তাড়াতাড়ি খাইয়ে-দাইয়ে বাইরে ভাগিয়ে দিবি।”

    তার কথা বলার ধরনে লতিফা হেসে গড়িয়ে পড়ে বললে, “দাঁড়া, মিনসে আসুক তখন তোকে ধরিয়ে দিয়ে তবে ছাড়ছি। কিন্তু ভয় নেই তোর, আজ উনি শিকারে বেরিয়েছেন। ফিরতে রাত বারোটার কম হবে না।”

    রুবি লতিফার পিঠ চাপড়ে বললে, “ব্রাভো! তবে আজ আমাদের পায় কে! গ্র্যান্ড গল্প করে কাটিয়ে দেওয়া যাবে।”

    লতিফা হেসে বললে, “গল্প করলে তো পেট ভরবে না। তার চেয়ে বরং চল রান্নাঘরে, আমি পরোটা করব, আর তুই গল্প করবি।”

    রুবি হেসে বললে, “তাই চল ভাই, কতদিন তোর হাতের রান্না খাইনি।”

    পরোটার নেচি করতে করতে রুবি বললে, “আমি কী করে তোর খবর পেলুম জানিস, বলেই একটু থেমে বলতে লাগল, “একদিন কাগজে পড়লুম, তোদের বাড়িতে মি. আনসারকে পুলিশ অ্যারেস্ট করেছে!” বলেই রুবি হঠাৎ চুপ করে গেল।

    লতিফার হাসিমুখ হঠাৎ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠল। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে সে বলল, “আমিও তোর কথা প্রথম শুনি দাদ-ভাইয়ের কাছে! দাদু এখন রেঙ্গুনে স্টেট- প্রিজনার হয়ে বন্দী আছেন, শুনেছিস বোধহয়!”

    রুবি তার ডাগর চোখের করুণ দৃষ্টি দিয়ে লতিফার দিকে খানিক তাকিয়ে থেকে বললে, “হ্যাঁ জানি। খবরের কাগজে সব পড়েছি। আচ্ছা ভাই বুঁচি, আনু ভাই তোকে কিছু বলেছিল আমার সম্বন্ধে?”

    লতিফা শান্তকণ্ঠে বলল, “হাঁ, বলেছিল! আচ্ছা রুবি আমার কাছে লুকোবিনে, বল?”

    রুবি স্থিরকন্ঠে বলে উঠল, “দেখ ভাই বুঁচি, আমি আমার মনের কথা কারুর কাছেই গোপন রাখিনে। এর জন্য আমায় চরম দুঃখ পেতে হয়েছে, তবু মনকে চোখ ঠারতে পারিনি। তুই যা জিজ্ঞাসা করবি তা জানি!”

    লতিফা রবির দিকে খানিক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল, “তুই তোর স্বামীকে ভালোবাসতিস?”

    রুবি সহজ শান্তকণ্ঠে বলে উঠল, “না। সে তো আমার ভালোবাসা চায়নি, আমিও চাইনি। সে চেয়েছিল আমাকে বিয়ে করে ধন্য করার দাবিতে বিলেত যাওয়ার পথ-খরচা। তা সে পেয়েও ছিল। কিন্তু কপাল খারাপ, সইল না, বেচারার জন্য বড়ো দুঃখ হয় বুঁচি।” একটু থেমে আবার বলতে লাগল, “মৃত্যুর দিন-কতক আগে সে তার ভুল বুঝতে পেরেছিল। এই ভুলই হয়তো তার কাল হল। আমি সেবা-শুশ্ৰষা সবই করেছি, অবশ্য আমাকে খুশি করতে নয়, তাকে আর আমার বাপ-মাকে খুশি করতে। কিন্তু একদিন সে ধরে ফেলল আমার ফাঁকি! সে স্পষ্টই বলল, “তুমি আমায় ভালোবাস না, এর চেয়ে বড়ো দুঃখ আমার আর নেই রুবি। আমার সবচেয়ে কাছের লোকটিই আমার সবচেয়ে অনাত্মীয়, এ ভাবতেও আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। হয়তো আমি বাঁচতুম, কিন্তু এর পরেও আমার বাঁচবার আর কোনো সাধ নেই।”

    লতিফার যেন শ্বাস রোধ হয়ে আসছিল। সে আর বলতে না দিয়েই প্রশ্ন করল, “এ শুনেও তুই চুপ করে রইলি?”

    রুবি তেমনই সহজভাবে নেচি করতে বলল, “তা ছাড়া আর কি করব বল? একজন ভদ্রলোককে চোখের সামনে মরতে দেখলে কার না কষ্ট হয়! কিন্তু সে কষ্ট কোনদিনই আত্মীয়-বিয়োগের মতো পীড়াদায়ক হয়নি আমার কাছে।”

    লতিফা চমকে উঠল। যেন হঠাৎ সে গোখরো সাপের গায়ে পা দিয়ে ফেলছে ! কিন্তু ইচ্ছা করেই সে এর পরেও আর কোনো প্রশ্ন করল না। তার মনে হতে লাগল, সে যেন ক্রমেই পাষাণ-মূর্তিতে পরিণত হতে চলেছে। যা শুনল, যা দেখল, তা যেন কল্পনারও অতীত। এমন নির্লজ্জ স্বীকারোক্তি কোনো মেয়েলোকে করতে পারে, ভাবতেও তার যেন শ্বাসরোধ হয়ে আসতে লাগল।

    রুবি অদ্ভুত রকমের হাসি হেসে বলে উঠল, “শুনে তোর খুব ঘেন্না হচ্ছে আমার ওপর, না? তা আমার বাপ-মাই ঘেন্না করেন, তুই তো তুই। কিন্তু বুঁচি, তুই শুনে আরও আশ্চর্য হয়ে যাবি যে, যেদিন আনু ভাইকে ধরে নিয়ে গেল পুলিশে, কাগজে পড়লুম, সেদিনই মনে হল, আমার সুন্দর পৃথিবীকে কে যেন তার স্থূল হাত দিয়ে তার সমস্ত সৌন্দর্য লেপে-মুছে দিয়ে গেল! ওই একটি ছাড়া, পৃথিবীতে আর কারুর জন্যই আমার কোনো দুঃখ-বোধ নেই।”

    বলতে বলতে তার স্থির-তীব্র চক্ষু অশ্রুভারে টলমল করে উঠল।

    লতিফ একটু তীক্ষ্ণকণ্ঠেই বলে উঠল, “কিন্তু ভাই, এ কি মস্ত বড়ো অন্যায় নয়?”

    রুবি চোখের জল মুছবার কোনো চেষ্টা না করে ততোধিক শ্লেষের সঙ্গে বলে উঠল, “আমার হৃদয়-মনকে উপবাসী রেখে অন্যের সুখের বলি হতে না পারাটাই বুঝি খুব বড় অন্যায় হয় তোদের কাছে, বুঁচি? হয়তো তোদের কাছে হয়, আমার কাছে হয় না। আমার ন্যায়-অন্যায় আমার কাছে। অন্যকে খুশি করতে গিয়ে সব কিছু উপদ্রব নীরবে সইতে পারাটাই কিছু মহত্ত্ব নয়! আমার বাপ-মার স্নেহ-ভালোবাসার ঋণ শোধ করতে গিয়েই তো আমি আজ এমন দেউলিয়া! আমার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, জীবনের আনন্দের পথ বেছে নেওয়ার আমারই কোনো অধিকার থাকবে না ?” বলেই নিষ্ঠুর হাসি হেসে বললে, “আমার স্বামী মহৎ ভাগ্যবান এবং বুদ্ধিমান লোক ছিলেন, তাই তাড়াতাড়ি মরে গিয়ে সারা জীবন দুঃখ পাওয়ার দায় থেকে বেঁচে গেলেন।”

    লতিফার মনে হতে লাগল পৃথিবী যেন টলছে। তার মাথা বোঁ বোঁ করে ঘুরতে লাগল। কোনোরকমে কষ্টে সে বলতে পারল, “মেয়েমানুষ কী করে এমন নিষ্ঠুর হয়, আমি যে ভাবতেই পারছিনে রুবি! কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে!”

    রুবি এইবার হো-হো করে হেসে উঠল। কিন্তু সে হাসিতে কোনো রসকষ নেই। ততক্ষণে নেচি তৈরি করা শেষ হয়ে গিয়েছিল। সে হাত ধুতে ধুতে বলল, “দেখ বুচি, পানি চমৎকার শীতল পানীয় দ্রব্য, কিন্তু সেই পানি যখন আগুনের আঁচে টগবগ করে ফুটতে থাকে, এখন তা গায়ে পড়লে ফোসকা তো পড়বেই! — কিন্তু তোর তাওয়ায় যে ধোঁয়া উঠে গেল, নে, এখন পরোটা কটা ভেজে নে!”

    লতিফা যন্ত্র-চালিতের মতো পরোটা হালুয়া চা তৈরি করে রুবির সামনে ধরল।

    রুবি হেসে বলল, “এসব কিছু আমি বাড়িতে খাইনে, আজ তোর কাছে খাব।”

    লতিফা বিস্ময়-বিস্ফারিত চক্ষু মেলে রুবির দিকে তাকিয়ে রইল। সে যেন কিছুই বুঝতে পারছিল না।

    রুবি হেসে বলল, “নে, খা এখন। এ সবের মানে তুই বুঝবিনে। দেখছিস তো, আমি থাকি হিন্দু-বিধবাদের মতো। একবেলা খাই, তাও আবার নিরামিষ। ঘি খাইনে, চা, পান তো নয়ই। সাদা থান পরি, তেল দিইনে চুলে। এই সব আর কী! এখন বুঝলি তো?”

    খেতে খেতে হেসে ফেলে বলল, “যে স্বামীকেই স্বীকার করল না, তার আবার বৈধব্য! আমারই তো হাসি পায় সময় সময়!”

    লতিফা একটু ক্রুদ্ধস্বরেই বলে উঠল, “হাঃ, বাড়াবাড়িরও একটা সীমা আছে ভাই রুবি।”

    রুবি সে কথার উত্তর না দিয়ে চা খেতে খেতে বলল, “আঃ, এই একটু চা পেলে আনু ভাই কেমন লাফিয়ে উঠত আনন্দে, দেখেছিস!”

    লতিফা এইবার হাঁফ ছেড়ে বেঁচে বলে উঠল, “সত্যি ভাই রুবি, দাদু বোধ হয় তোর চেয়েও চায়ের কাপকে বেশি ভালোবাসে!”

    রুবি গভীর হওয়ার ভান করে বলে উঠল, “তার কারণ জানিস, বুঁচি? চায়ের কাপটা যত সহজে মুখের কাছে তুলে ধরা যায়, আমায় যদি আমনি করে হাতে পেয়ে মুখের কাছে তুলে ধরে পান করতে পেত তোর দাদু, তাহলে আমিও ওই চায়ের চেয়ে বেশি প্রিয় হয়ে উঠতুম !” বলেই হেসে ফেললে।

    লতিফা লজ্জায় লাল হয়ে উঠে বললে, “ওমা, তুই কি বেহায়াই না হয়েছিস রুবি! একেবারে গেছিস!”

    রুবি সায় দিয়ে বলে উঠল, “হাঁ, একেবারেই গেছি, আর ফিরব না।”

    চা খাওয়া হলে রুবি বলে উঠল, “শুধু একজনের জন্য ওই চা-টার ওপর লোভ হয়!”

    রুবির অতিরিক্ত প্ৰগলভতায় ক্ষুব্ধ হয়ে লতিফা বলে উঠল, “এতই যদি তোর লোভ, তাহলে চা-খোর লোকটাকে বেঁধে রাখলিনে কেন ? তাহলে সেও বাঁচত, তুইও বাঁচতিস। আমরাও বাঁচতাম।”

    রুবি বিনা-দ্বিধায় বলে উঠল, “একটা ভুল বললি ভাই বুঁচি। আমরা হয়তো বেঁচে যেতুম সত্যি, কিন্তু তোর দাদু বাঁচত না।”

    রুবি লতিফার হাতে কটাস করে টিমটি কেটে দিয়ে বলল, “মর নেকি! তাও বুঝলিনে।” তারপর একটু থেমে বলল, “যে মরেনি তার আবার বাঁচা কি! তোর দাদু তো আমার মতন মরেনি। দিব্যি জ্বলজ্যান্ত বেঁচে থেকে কুলিমজুর নিয়ে মাঠে-ঘাটে চরে খাচ্ছে। আমার একটা বড়ো দুঃখ রইল ভাই, যার জন্যে মরলুম, তাকে মেরে যেতে পারলুম না।”

    লতিফা কতকটা কূল পেয়ে হেসে ফেলে বললে, “বাপ রে! কী দস্যি মেয়ে তুই! শোধ না নিয়ে যাবিনে ! তা তোকে একটা খোশখবর দিচ্ছি ভাই। সে হয়তো মরেনি তোর মতো, কিন্তু ঘা খেয়েছে।”

    রুবি একেবারে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত স্বরে বলে উঠল, “না, না, এ হতেই পারে না! ও শুধু মানুষের বাইরের দুঃখকেই দেখেছে, ভিতরের দুঃখ দেখবার ওর ক্ষমতা নেই, হৃদয় বলেই কোনো কিছুর বালাই নেই ওর! ও শুধু তাদেরই দুঃখ বোঝে, যারা ওর কাছে কেবলই পেতে চায়। যে তাকে তার সর্বস্ব দিয়ে — চেয়ে নয়, সুখী হতে চায়, তার দুঃখ ও বোঝে না, বোঝে না।”

    খুলে-পড়া এলোচুলের মাঝে রুবির চোখ আঁধার বনে সাপের মানিকের মতো জ্বলতে লাগল।

    লতিফার চোখ দুঃখে, আনন্দে, গর্বে ছলছল করে উঠল। তার দাদুকে এমন করে ভালোবাসারও কেউ আছে। সে রুবিকে একেবারে বুকে চেপে ধরে শান্তস্বরে বলল, তোর অভিমানের কুয়াশায় কিছু দেখতে পাচ্ছিনে রুবি, আমিও তো মেয়ে মানুষ। আমি সত্যি বলছি, সে তোকে ভালোবাসে।”

    রুবির চোখের বাঁধ ছাপিয়ে জল ঝরতে লাগল। জ্যৈষ্ঠ মাসের দগ্ধ দুপুরে বর্ষা নামার মতো।

    লতিফা তার চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলতে লাগল, “আমার দুঃখ হচ্ছে রুবি, ভালোবাসার এই অতলতার সন্ধান পেলে তার কারাবাসও বেহেশ্‌তের চেয়ে মধুর হয়ে উঠত। তুই ভালোবাসিস শুধু এইটুকুই সে জানে। তার তল যে এত গভীর, তা বোধহয় জানে না।” বলেই রুবির গাল টিপে হেসে বলল, “জানলে দেশসেবা ছেড়ে দিয়ে কোনদিন তোর পদসেবা শুরু করত।”

    রুবি কিন্তু এর পরে একটি কথাও কইল না। অতল পাথরের ঝিনুক যেমন দিনের পর দিন ভেসে বেড়ায় ঢেউয়ে ঢেউয়ে, একবিন্দু শিশিরের আশায়, স্বাতী নক্ষত্রের শিশিরের আশায়, তারপর সেই শিশিরটুকু বুকে পেয়েই সে জলের অতল তলে ডুবে যায় মুক্তা ফলাবার সাধনায় – এ-ও তেমনই।

    “সেও ভালোবাসে” শুধু এইটুকু সাত্ত্বনাতেই যেন রুবির বুক ভরে উঠল। শুধু এই একবিন্দু শিশিরের প্রতীক্ষাতেই যেন সে তার তৃষ্ণার্ত মুখ তুলে অনির্দেশ শূন্যের পানে তাকিয়ে ছিল। তার বুক ভরে উঠেছে। তার মুখের বাণী মূক হয়ে গেছে। সে আর কিছু চায় না। এইবার সে মুক্তা ফলাবে। সে অতল তলে ডুবে গেল।

    ঝিনুকের মুখে একবিন্দু শিশির! নারীর বুকে একবিন্দু প্রেম!

    আকাশের এক কোণে এক ফালি চাঁদ! কোন মাসের চাঁদ জানে না, তবু রুবির মনে হতে লাগল, ও যেন ঈদের চাঁদ! ওর রোজার মাস বুঝি শেষ হল আজ!

    আকাশের কোলে একটুকু চাঁদ, শিশু-শশী। ও যেন আকাশের খুকি। সাদা মেঘের তোয়ালে জড়িয়ে আকাশ-মাতা যেন ওকে কোলে করে আঙিনায় দাঁড়িয়েছে।

    অমনি খুকি…

    লজ্জায় রুবির মুখ ‘রুবি’র মতোই লাল হয়ে উঠল। এ কী স্বপ্ন! এ কী সুখ!

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleব্যথার দান – কাজী নজরুল ইসলাম
    Next Article বাঁধনহারা – কাজী নজরুল ইসলাম

    Related Articles

    কাজী নজরুল ইসলাম

    ব্যথার দান – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 24, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    গানের মালা – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 22, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    যুগবাণী – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 22, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    অগ্নিবীণা – কাজী নজরুল ইসলাম

    May 8, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    মহুয়ার গান – কাজী নজরুল ইসলাম

    May 8, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    চক্রবাক – কাজী নজরুল ইসলাম

    May 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }