Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মৃত্যু উপত্যকা – কাজী মায়মুর হোসেন

    কাজী মায়মুর হোসেন এক পাতা গল্প184 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    মৃত্যু উপত্যকা – ১১

    এগারো

    একটু সুস্থির হয়ে ভাবল লিণ্ডা, যা ও জিমের জন্যে করছে সেটা কি শুধু দায়িত্ববোধ থেকে, না আসলে অন্তরের তাগিদ? দু’পক্ষের লড়াইতে নিজে একটা পক্ষ বেছে নিয়েছে এটা এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না লিণ্ডা। করছে কী ও? সবসময় ও-ভেবেছে সভ্য মানুষ তাদের বিবাদ ভদ্রভাবে মিটিয়ে নেবে, কিন্তু এখন ও নিজে কী করছে? এমন একটা কাজ, যেটা ওর সমস্ত পূর্ব ধারণা, সুস্থ চিন্তা নস্যাৎ করে দিচ্ছে। লড়াইতে প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ ভাবে অংশ নিয়ে নিয়েছে ও।

    নিজেকে প্রশ্ন করল, আমার না এখান থেকে চলে যাওয়ার কথা? তা হলে কী করছি আমি? কেন করছি? কার জন্যে?

    বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে জবাব পেল না। ও তো এখানে বাস করতে চায়নি! তা হলে?

    সবসময়েই প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থেকেছে ও। চাচা ছিলেন বিখ্যাত ডাক্তার, তিনি শিখিয়েছেন কীভাবে মানুষকে অন্তর দিয়ে মূল্যায়ন করতে হয়, সেবা করতে হয় আন্তরিকতা দিয়ে।

    এই এলাকার কঠোর কিন্তু সৎ লোকগুলোকে পছন্দ করে ও। প্রতিবেশীর জন্যে জীবন দিতেও দ্বিধা করে না তারা, এটা তাদের পৌরুষের অঙ্গ, প্রশংসা পাবার মত গুণ। কিন্তু আইনের প্রতি এদের মনোভাব মন থেকে কখনোই মেনে নিতে পারেনি ও। মনে হয় না পারবে কখনও।

    এ এলাকায় আইন আছে নামে মাত্র, বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। তাই বলে লিণ্ডা ভাবতেই পারে না নিজের হাতে কেউ আইন তুলে নেবে। অথচ তাই করে সবাই। বাবা-মার কথা মনে পড়ল। তাঁরা রুক্ষ কঠিন পশ্চিমের নিষ্ঠুরতার বলি হয়েছেন। আরও কত মানুষ মরেছে তার কোন হিসেব নেই।

    গুহার কাছে চলে এসেছে লিণ্ডা ভাবতে ভাবতে। নিজের কাছে স্বীকার করতে বাধ্য হলো, শুধু সেবাপরায়ণতা ওর থেকে যাবার কারণ নয়, সত্যিকার কারণ আরও অনেক গভীর। ব্যক্তিগত পছন্দ কাজ করছে ওর রয়ে যাবার পেছনে। জিমকে ও পছন্দ করে, ওর সঙ্গ উপভোগ করে, ভাল লাগে জিমের পৌরুষদীপ্ত নিৰ্ভীক সততা, ভদ্রতা।

    নিজের অন্তর্দ্বন্দ্ব লিণ্ডাকে আরও চিন্তিত করে তুলল। হ্যাঁ, জিম কার্সনকে ও জীবনসঙ্গী হিসেবে চায়, কিন্তু তার জীবনদর্শন ওর মোটেই পছন্দ নয়। ভয় লেগে উঠল নিজের মনোভাব স্পষ্ট বুঝতে না পেরে। অপেক্ষা করবে, ঠিক করল লিণ্ডা, সত্যি ও কী চায় তা বোঝার জন্যে হৃদয়কে সময় দেবে। একসময় সিদ্ধান্তে আসবে বিবেক। অনুভূতির জটলা থেকে একসময় বেরিয়ে আসবে আসল সত্য।

    তবে রয়ে গেছে ও; ভাবল লিণ্ডা। স্বীকার করতে বাধ্য হলো, প্রথম দফার লড়াইতে ওর নারীত্ব আর ভাল-লাগা এতদিনের চিন্তা-চেতনাকে হারিয়ে দিয়েছে।

    গুহার কাছে পৌছে ঘোড়াটাকে লুকিয়ে রাখল ও, তারপর ঢুকল গুহার ভেতরে। জিমের চোখ খোলা, চিৎ হয়ে শুয়ে আছে, কিন্তু দৃষ্টি দেখে মনে হলো না দেখছে কিছু। মুহূর্তের জন্যে তার চোখ স্থির হলো লিণ্ডার ওপর। দৃষ্টি আবার ফিরে গেল গুহার ছাদে। কোন কথা বলল না। সমস্ত শক্তি যেন নিঃশেষিত, কোন কিছুতেই উৎসাহ নেই আর। ব্যথার কারণে ঠোঁটে চেপে বসেছে ঠোঁট। সচেতনতা আর অচেতনার মাঝে দোদুল্যমান একটা স্তরে আছে ও।

    পাশে বসে কপালে হাত রাখল লিণ্ডা। জ্বর আরও বাড়ছে জিমের।

    ‘ঘুমানোর চেষ্টা করো,’ মৃদু গলায় বলল লিণ্ডা। ‘অনেক বিশ্রাম দরকার তোমার। আরেকটু হুইস্কি দেব, ঘুমাতে সুবিধে হবে?’

    আস্তে করে মাথা দোলাল জিম। টিনের কাপে মদ ঢালল লিণ্ডা, জিমের ঠোঁটের কাছে ধরল। তরলটুকু শেষ করে মাথা এলিয়ে দিল জিম, চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে চেষ্টা করল। অনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে ওর। গলার ভেতরে ঘড়ঘড় আওয়াজ হচ্ছে।

    জিমের পাশে শুয়ে পড়ল লিণ্ডা। ওরও বিশ্রাম দরকার। নিজেকে তৈরি রাখতে হবে যাতে দরকারের সময় জিম ওর সেবা পায়। অগভীর ঘুমে তলিয়ে গেল লিণ্ডা, একটু পর পর দুঃস্বপ্ন দেখে চমকে চমকে উঠল।

    ভোরের আগে ঘুম থেকে উঠে গুহার বাইরে গিয়ে ছোট একটা আগুন জ্বালল ও, বেকন আর কফি তৈরি করে নিভিয়ে দিল আগুন। সর্বক্ষণ মনে মনে ভাবছে, আমি আসন্ন লড়াইতে পক্ষ নিয়ে ফেলছি!

    কফি নিয়ে গুহায় ঢুকে জিমের কপালে হাত দিয়ে দেখল জ্বর এখনও আছে, তবে কমেছে। অনিয়মিত শ্বাস নিচ্ছে জিম। আস্তে করে হাত বুলিয়ে ওকে ঘুম থেকে তুলল লিণ্ডা। চোখ মেলে শূন্য দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল জিম, বোঝা গেল কোথায় আছে জানে না।

    ‘একটু কফি খাও, ভাল লাগবে,’ নরম গলায় বলল লিণ্ডা। আস্তে করে জিমের মাথা তুলে ধরল।

    কয়েক চুমুক দিল জিম, মনে হলো যেন খানিক শক্তি ফিরে পেয়েছে। বালিশে মাথা রেখে ছাদের দিকে তাকাল, ভাবার চেষ্টা করছে। একটু পর জিজ্ঞেস করল, ‘কোথায় আছি আমি? শর্টি কোথায়?’

    উডফোর্ডদের র‍্যাঞ্চে জিমকে নিয়ে যাবার পর থেকে কী কী ঘটেছে খুলে বলল লিণ্ডা।

    ও থামার পর জিম বলল, ‘শর্টি আমাকে পাহাড় থেকে বের করে আনল, সে পর্যন্ত মনে আছে। জ্ঞান হারাই তারপর। কেলটন তা হলে আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, না?’

    ‘হ্যাঁ। শহর দখলের পরিকল্পনা আছে ওদের।’

    শহরে কী ঘটেছে জানাল লিণ্ডা। জানাল শেরিফ কস্টিগ্যান গুলিতে নিহত হয়েছে, জেল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে লেভি ফক্সকে। শেষে বলল, ‘র‍্যাঞ্চাররা সবাই শহরে গেছে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে।’

    ‘তার মানে…’ থেমে থেমে বলল জিম, ‘হয় কেলটন ভয় পেয়েছে, নাহয় রাগে উন্মাদের মত আচরণ করছে। উডফোর্ড বা অন্যরা তাকে ঠেকানোর ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে?’

    ‘সবাই শহরে। ওদের ধারণা শহরটা কেলটন তছনছ করতে চেষ্টা করবে। আমার ধারণা শুধু শহর নিয়ে ব্যস্ত থাকবে না লোকটা, নিজের দলটাকে ভাগ করে একই সঙ্গে শহরে এবং র‍্যাঞ্চগুলোয় হামলা চালাবে।’

    ‘একসঙ্গে দু’দিক সামলাতে পারব না আমরা,’ চিন্তিত গলায় বলল জিম, ‘কেলটন তা জানে। আমাকে এখান থেকে বের হতে হবে। শুয়ে-বসে সময় নষ্ট করার মত পরিস্থিতি নেই এখন।’

    ‘কিন্তু বিশ্রাম দরকার তোমার,’ দৃঢ় শোনাল লিণ্ডার কণ্ঠ। ‘ক্ষতটা এখনও শুকাতে শুরু করেনি। গায়ে এখনও জ্বর। অনেক রক্ত হারিয়েছ। এই অবস্থায় তোমাকে আমি বাইরে যেতে দেব না। কিচ্ছু করার নেই তোমার। বিশ্রাম নেবে চুপচাপ। আগে দরকার শক্তি ফিরে আসা। সুস্থ হওয়ার পর ভেবো কীভাবে অন্যদের সাহায্য করতে পারবে।’

    ‘তা হয় না,’ আস্তে করে মাথা নাড়ল জিম, কিন্তু কণ্ঠে সিদ্ধান্তের সুর। ‘হাতে সময় নেই। আমাকে যেতে হবে। তুমি আমার ঘোড়াটা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছ না? ওটা দরকার হবে আমার।’

    ‘এনেছি ঘোড়া,’ রাগে লালচে চেহারায় জানাল লিণ্ডা। ‘লুকিয়ে রেখেছি। কেলটনের লোকরা ওটা খুঁজে পাবে না। তুমিও পাবে না।’

    লিণ্ডার দিকে গভীর মনোযোগে তাকাল জিম। স্পষ্ট বুঝল তর্ক করে কোন লাভ নেই। এ মেয়ের মত কিছুতেই বদলানো যাবে না। ঘুমিয়ে পড়ল একটু পরে। জানেও না কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছে শরীর।

    ধীরে ধীরে গড়াচ্ছে দিনটা। বারবার হালকা ঘুম ভেঙে যাচ্ছে জিমের। একটু পরই ঘুমিয়ে পড়ছে আবার। দুঃস্বপ্ন দেখছে। জ্বর ছাড়েনি এখনও। কিছু খেতে পারল না। রুচি নেই। যখন জেগে থাকছে সে তুলনায় ঘুমের ভেতর অস্বস্তি বোধ করছে বেশি। লিণ্ডা বুঝতে পারছে জাগ্রত অবস্থায় যে উদ্বেগ জিম লুকিয়ে রাখছে তা ঘুমের সময় প্রকাশ পাচ্ছে।

    দিনের বেশিরভাগ সময় জিমের পাশে বসে কাটাল লিণ্ডা, একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকল ঘুমন্ত জিমের দিকে। জিম জাগলে মাঝে মাঝে পানি খাওয়াল। কয়েকবার শীতল পানি দিয়ে মাথা ধুইয়ে দিল। জিমের জ্বর কমছে।

    নিজের ভেতর প্রচণ্ড দ্বন্দ্ব চলছে লিণ্ডার। যতই নিজেকে বোঝাবার চেষ্টা করুক যে এসব ও করছে স্রেফ একজন অসুস্থ মানুষের জন্যে, করুণার বশবর্তী হয়ে-কিন্তু মন তা মানছে না। আস্তে আস্তে অযৌক্তিক দম্ভপ্রসূত ভ্রান্ত চিন্তাগুলো দূর হয়ে যাচ্ছে, ও মানতে বাধ্য হচ্ছে এটা পশ্চিম, পুব নয়, সভ্য এলাকায় নেই ও, অনুভব করছে ওর আচরণের একটাই ব্যাখ্যা-যা করছে তা করছে ভাললাগা থেকে, ভালবাসা থেকে। মনের ওপর খুব চাপ পড়ছে অন্তরের কথা অনুভব করে।

    ভাবতে গিয়ে এখন বুঝতে পারছে, সত্যি জিমের সামনে লড়াই করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। কোন সক্ষম পুরুষই এটা মেনে নিতে পারবে না যে তাকে ঠকিয়ে তার জিনিস চুরি করা হবে আর সে তা বসে বসে দেখবে।

    বিকেলে একটা রাইফেলের হুঙ্কার শুনতে পেল লিণ্ডা। পাহাড়ে বাড়ি খেয়ে বারবার প্রতিধ্বনিত হয়ে মিলিয়ে গেল শব্দটা। একটু পরই পাহাড়ের ওপরের অংশ থেকে পরপর দু’বার গুলি ছুঁড়ে জবাব দেয়া হলো। পাহাড়ী লোকদের ব্যাপারে লিণ্ডা কিছু জানে না, কিন্তু আন্দাজ করতে পারল, জিমের খোঁজে বেরিয়েছে লোকগুলো। কেলটনের লোক তারা, জিমকে পেলে নির্দ্বিধায় মেরে ফেলবে! ভয় লাগল ওর। পাহাড়ী লোকরা এই ট্রেইলটা চেনে?

    নিশ্চয়ই চেনে।

    তার মানে আগে হোক পরে হোক, ট্রেইলে ওর চিহ্ন তাদের চোখে পড়বে। গুহাটা আসলে নিরাপদ নয়! বিরাট বিপদের মুখে আছে জিম। কিন্তু কী করবে ও? কান্না পেল লিণ্ডার। জিমের যা অবস্থা তাতে ঘোড়ায় চড়তে পারবে না। একা একটা মেয়ের পক্ষে আহত অর্ধঅচেতন জিমকে নিয়ে শহর পর্যন্ত পৌছানো সম্ভব না।

    সন্ধ্যা নামতে খুব ক্লান্তি লাগল লিণ্ডার, জিমের পাশে চুপ করে শুয়ে রইল ও। কখন ঘুমিয়ে পড়ল নিজেও বলতে পারবে না। যখন চোখ মেলল তখন সকাল, গুহার মুখে উজ্জ্বল সকালের সোনালী আলো। আগেই জেগে গেছে জিম, এক কনুইয়ে ভর দিয়ে কাত হয়ে শুয়ে একদৃষ্টিতে গভীর মনোযোগে তাকিয়ে আছে লিণ্ডার দিকে।

    ওই দৃষ্টি চিনতে কোন মেয়ের ভুল হয় না।

    লজ্জায় রাঙা হয়ে গেল লিণ্ডার মুখ, বিড়বিড় করে বলল, ‘ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম!’

    ‘অপূর্ব লাগছিল দেখতে,’ ঘোর লাগা স্বরে বলল জিম।

    এখন শরীর কেমন তোমার?’ লাজরাঙা চেহারায় তড়িঘড়ি করে জিজ্ঞেস করল লিণ্ডা।

    ‘একটু দুর্বল লাগছে,’ অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্বীকার করল জিম। ‘যতটা সময় এখানে থাকা উচিত তার চেয়ে বেশি থেকে ফেলেছি বলে মনে হচ্ছে। একটু আগে বনের ভেতর গুলির আওয়াজ শুনলাম। সরে পড়া দরকার আমাদের, কেলটনের লোকরা কাছে চলে আসছে।’

    উঠে দাঁড়াল লিণ্ডা। ‘একটু কফি করে দিই তোমাকে। খিদে লেগেছে? খাবে কিছু?’

    মৃদু হাসল জিম। ‘দিলে আস্ত একটা গরু খেয়ে ফেলতে পারব।’

    কফি আর বেকন গরম করতে করতে লিণ্ডা অবাক হয়ে অনুভব করল, জিম সেরে উঠছে বলে খুব ভাল লাগছে ওর, মনে বইছে প্রশান্তির সুবাতাস। ভাল লাগছে জিমের জন্যে খাবার তৈরি করতে। মন বলছে তোমার নিজের একান্ত মানুষটার জন্যে করছ তুমি। ও শুধু তোমার। শুধুই তোমার।

    কফি আর বেকন তৈরি হয়ে যেতে জিমকে আস্তে করে উঠতে সাহায্য করল লিণ্ডা। গুহার দেয়ালে পিঠ দিয়ে বসল জিম, যা ভাবতেও পারেনি তাই ঘটছিল। হঠাৎ তীব্র আবেগের বশে ওর কপালে ছোট্ট করে চুমু খেল লিণ্ডা। লিণ্ডার দিকে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকাল জিম। লিণ্ডা নিজেও বিস্মিত, খানিকটা দ্বিধান্বিত। চট করে সামলে নিতে চেষ্টা করল ও।

    ‘ভেবো না অন্য কিছু। চুমু দিয়েছি তোমাকে সুস্থ হতে উৎসাহিত করার জন্যে। মনে হলো এতে কাজ হতে পারে।’

    কোন কথা বলল না জিম, খেতে খেতে চিন্তা করছে, মাঝে মাঝে চুমুক দিচ্ছে চমৎকার কালো কফিতে।

    দুপুরে গুলির আওয়াজ আরও কাছে চলে এল। পেছনের পাহাড়ে ওদের খুঁজছে লোকগুলো। ক্রমেই কাছিয়ে আসছে। বিকেলে আরও স্পষ্ট শোনাল গুলির আওয়াজ।

    চুপ করে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছে জিম, বিশ্রাম নিয়ে চাঙা হয়ে উঠতে চাইছে। দিনের বেলায় বাইরে বের হওয়াটা বোকামি হবে। শক্তি সঞ্চয় করতে হবে যাতে রাতের আঁধারে বের হওয়া যায়। কপাল ভাল কিনা তার ওপর সফলতা নির্ভর করবে। অন্ধকার নামার আগেই যদি লোকগুলো ওদের খোঁজ পেয়ে যায় তা হলে বাঁচার আর কোন আশা নেই।

    লিণ্ডার চুমুটা দু’জনের মাঝে একটা দেয়াল তৈরি করেছে যেন। সারাদিন ওদের মাঝে কোন কথা হয়নি। লিণ্ডার অন্তরের কথা অনুভব করতে চেষ্টা করে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি জিম। শেষে হাল ছেড়ে দিয়েছে। কেই বা মেয়েদের মন বোঝে? স্বয়ং দেবতারও নারীর মন বোঝার ক্ষমতা নেই।

    সূর্যটা পাহাড়ের একটা চুড়োর পেছনে তলিয়ে যাওয়ায় ধূসর আলো গুহার মুখ থেকে পিছিয়ে যেতে শুরু করল। রাত নামছে। বনের মাঝে ঝিঁঝি ডাকতে শুরু করেছে। পাখির কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে, বাড়ি ফিরছে ওগুলো-নিরাপদ আশ্রয়ে।

    ‘আর এক রাত এখানে থাকা যাবে বলে মনে করো?’ এক সময় জিজ্ঞেস করল লিণ্ডা। ‘বিশ্রাম দরকার তোমার, যতটা সম্ভব।’

    ‘রাতে এখানে থাকা মানে কাল সারাদিনও এখানে আটকা পড়া। ঠিক হবে না সেটা। ওরা বড় বেশি কাছে চলে এসেছে। কালকে ওরা গুহাটা খুঁজে পেয়ে যাবে। তার আগেই, মানে রাতেই সরে যেতে হবে। অসুবিধে হবে না, ঘোড়ায় চড়তে পারব আমি।’

    ‘তা হলে পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে যাবার আগেই যাই, গিয়ে ঘোড়াটার স্যাডল বেঁধে ফেলি।’

    ‘আমি চাই না তুমি আরও ঝুঁকি নাও,’ আপত্তির সুরে বলল জিম। ‘ঘোড়াটা আমিই খুঁজে নিতে পারব।’

    দাঁড়াতে গিয়ে মাথা ঘুরে টলে উঠল জিম। চট করে ওকে হাত ধরে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করল লিণ্ডা, টের পেল কাঁপছে জিমের শরীর।

    ‘উপায় থাকলে তোমাকে কিছুতেই পরিশ্রম করতে দিতাম না আমি,’ দীর্ঘশ্বাস ফেলল লিণ্ডা। ‘গুহাটা নিরাপদ হলে যেতে দিতাম না।’

    ‘তোমার সঙ্গ উপভোগ করতে পারলে আমি দুনিয়ার আর কিছু চাইতাম না, হাসল জিম। ‘কিন্তু…কী করা বলো, তুমিই তো বললে গুহাটা নিরাপদ নয়। যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে সরে যেতে হবে আমাদের।’

    ‘শুয়ে থাকো তুমি,’ বলল লিণ্ডা, ‘যতটা পারো বিশ্রাম নিয়ে নাও। শহর অনেক দূরে, টিকে থাকতে হবে তোমাকে, অজ্ঞান হয়ে গেলে মস্ত বিপদ হবে। আমি ঘোড়াটা নিয়ে আসছি।’

    ‘আমি একটা আস্ত বোঝা, কষ্ট দিচ্ছি তোমাকে,’ জিমের চেহারা গম্ভীর, ‘ভাল হত যদি তুমি শর্টিকে আমার দেখাশোনা করতে দিতে।’

    কিছু বলল না লিণ্ডা, একবার জিমকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে দেখে বেরিয়ে গেল গুহা থেকে। জিম জানে না, লিণ্ডার মনে কাজ করছে একটাই চিন্তা-এই লোকটা শুধু আমার, আর কারও নয়। চিন্তাটা ওর ভেতরে কত বড় পরিবর্তন যে এনেছে তা হয়তো লিণ্ডা নিজেও পুরোপুরি অনুধাবন করে উঠতে পারেনি এখনও।

    একটু পরেই ঘোড়াটা নিয়ে গুহার মুখের সামনে চলে এল লিণ্ডা। দেয়ালে হেলান দিয়ে অপেক্ষা করছিল জিম, দুর্বল পায়ে ঘোড়াটার দিকে এগোল। লিণ্ডাকে ঘোড়ায় উঠতে সাহায্য করল ও, তারপর এক হাতের জোরে উঠে বসল স্যাডলে।

    ঘোড়ায় বসেই ওর কাঁধের পুরোনো ব্যাণ্ডেজ খুলে নতুন করে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দিল লিণ্ডা। কাজটা মাত্র শেষ করেছে এমন সময় চোখের কোণে ছায়াটা নড়তে দেখল ও। জিমের কাঁধে আড়ষ্ট হয়ে গেল ওর হাত।

    ‘কী ব্যাপার?’ জানতে চাইল জিম।

    জবাব দিল না লিণ্ডা, ঝট করে জিমের ঊরুতে বাঁধা হোলস্টারে ছোবল মারল ওর হাত।

    খাদের ভেতর পাথরের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসেছে কোর্ট রূমে লেভি ফক্সকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল যে লোকটা, সে। স্টিচ। কেলটনের ফোরম্যান। হাতে একটা রাইফেল। জিমকে ঘোড়ার পিঠে দেখেই একহাতে রাইফেল কাঁধে তুলতে শুরু করল সে।

    কাঁপা কাঁপা দু’হাতে জিমের ভারী ৪৫ সিক্সগানটা তাক করল লিণ্ডা, তারপর চোখ বন্ধ করে ট্রিগারে চাপ দিল।

    খাদের ভেতরে বিকট আওয়াজ হলো গুলির। ভয়ে ভয়ে চোখ মেলল লিণ্ডা, নাক কুঁচকে ফেলল কটুগন্ধী ধোঁয়ায়। চোখ জ্বলছে। তারই ফাঁকে দেখল বুক চেপে ধরে কাত হয়ে পড়ে গেল মারখাওয়া চেহারার লোকটা। আগেই তার হাত থেকে খসে পড়েছে রাইফেল।

    লিণ্ডার কাঁপা হাত থেকে অস্ত্রটা নিল জিম, পিছলে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল। একবার অবাক চোখে লিণ্ডাকে দেখে স্টিচের দেহের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। চিৎ হয়ে পড়ে আছে লোকটা। সারা মুখে কাটাকুটির চিহ্ন। এখানে ওখানে ফুলে আছে গাল। সেসব যন্ত্রণা আর কখনও অনুভব করবে না লোকটা। স্টিচ নামের নীচ একটা লোক এখন পৃথিবীতে নেই।

    ‘ম্যাক স্টিচ,’ লিণ্ডাকে বলল জিম, ‘কেলটনের ফোরম্যান।’

    ‘কোর্ট রূমে সেদিন দেখেছিলাম একে, ফাঁপা শোনাল লিণ্ডার কণ্ঠ, চেহারায় আতঙ্কের ছাপ। চোখে পানি টলটল করছে ওর। বিড়বিড় করে বলল, ‘আমি…আমি…মেরে ফেলেছি! …মরে গেছে!’

    স্টিচের রাইফেলটা তুলে নিয়ে ঘোড়াটার কাছে এসে দাঁড়াল জিম, লিণ্ডার কোমর জড়িয়ে ধরল শক্ত হাতে, সান্ত্বনার সুরে বলল, ‘কাজটা না করে কোন উপায় ছিল না তোমার। গুলি না করলে আমাকে মেরে ফেলত ও। শুধু তাই না, ও যেমন মানুষ ছিল তাতে এই নির্জনে তোমাকে পেলে সে তোমার সর্বনাশ করতে দ্বিধা করত না। হয়তো মেরে ফেলত তোমাকেও। ওর মত মানুষদের মারা আর বিষাক্ত সাপ মারার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।’

    লিণ্ডার কপোল বেয়ে জল নামছে। কাঁপছে মেয়েটা। আলতো করে ওর সুগন্ধী চুলে হাত বুলাল জিম। ‘সত্যি আর কোন উপায় ছিল না, লিণ্ডা। যা করেছ তা করতেই হত।’

    ‘কিন্তু…’ ফিসফিস করে বলল লিণ্ডা, ‘মেরে ফেলেছি! আমি মানুষ খুন করেছি! আমি…আমি…’

    ‘একটা সাপ খুন করেছ তুমি,’ নিচু স্বরে জোর দিয়ে বলল জিম। ‘বিষাক্ত একটা সাপ। ওই সাপটাকে যদি না মারতে তা হলে ওটার ছোবলে মারা পড়তাম আমি। তুমিও বাঁচতে না। আর বাঁচলেও সে বাঁচা তোমার কাছে হত মৃত্যুর চেয়ে যন্ত্রণাকর। যা করতেই হত তা-ই করেছ তুমি। এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।’

    ‘কিন্তু…’ চোখ মুছল লিণ্ডা।

    ‘কোন কিন্তু নেই, থামিয়ে দিল জিম। ‘তর্ক কোরো না। আমাকে বিশ্বাস করো। যেকেউ বলবে ঠিক কাজই করেছ তুমি। আত্মরক্ষা কোন আইনেই কখনও অপরাধ হতে পারে না।’

    জিমের চোখে তাকাল লিণ্ডা, নির্ভরতা খুঁজল। ওর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াল জিম। মাত্র এক মুহূর্ত, তারপর পিছিয়ে গেল ও, মুখে মৃদু হাসি। ওর চোখ স্থির লিণ্ডার মণিবিন্দুতে। নীরব ভাষায় আশ্বস্ত করল ও লিণ্ডাকে।

    ঘোড়ায় উঠে বসল জিম, ঘাড় ফিরিয়ে বলল, ‘এখান থেকে তাড়াতাড়ি সরে যেতে হবে। কেলটনের লোকরা গুলির আওয়াজ শুনেছে নিশ্চয়ই। ওরা আসবে এদিকে কী হলো দেখতে।’ রাশে দোলা দিয়ে ঘোড়াটাকে খাদের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যেতে নির্দেশ দিল ও, হঠাৎ চিন্তাটা মাথায় আসতে বলল, ‘স্টিচের ঘোড়াটা খুঁজে বের করতে হবে। দুটো ঘোড়া থাকলে তাড়াতাড়ি সরে যেতে পারব আমরা।’

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleখুনে ক্যানিয়ন – কাজী মায়মুর হোসেন
    Next Article ধাওয়া – কাজী মায়মুর হোসেন

    Related Articles

    কাজী মায়মুর হোসেন

    অদৃশ্য ঘাতক – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৬৮ – স্বর্ণলিপ্সা

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    ধাওয়া – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    খুনে ক্যানিয়ন – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    July 25, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }