Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মৃত্যু উপত্যকা – কাজী মায়মুর হোসেন

    কাজী মায়মুর হোসেন এক পাতা গল্প184 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    মৃত্যু উপত্যকা – ৪

    চার

    লিণ্ডা দোকানের কাউন্টারের সামনে একটা চেয়ারে বসে জিমের জন্যে অপেক্ষা করছে। সামান্য ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে ওর চেহারা। শক্ত করে ধরে আছে হাতের ছোট্ট ব্যাগটা। মনের ভেতর নানা অনুভূতির খেলা চলছে।

    ‘লড়াই শেষ হলো তোমার?’ জিমকে দেখে আড়ষ্ট গলায় জিজ্ঞেস করল ও। স্পষ্ট বোঝা গেল জিমের আচরণ ও সমর্থন করছে না।

    তৎক্ষণাৎ জবাব দিল না জিম, চোখ ভরে উপভোগ করছে লিণ্ডার রূপসুধা। দেখে মনেই হয় না এ মেয়ে এই রুক্ষ এলাকার বাসিন্দা-এখানে ও একেবারেই বেমানান। সযত্নে প্রস্ফুটিত টবের গোলাপ যেন ভুল করে ফুটেছে কোন বিরান মরুভূমিতে। অদ্ভুত কোমল কিন্তু ব্যক্তিত্বসম্পন্না এক মেয়ে ও। সহজে ওর অন্তরের কাছে যাওয়া যায় না। উষ্ণ ওর আচরণ, যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ; কিন্তু ভেতরে কাজ করে মানসিক একটা প্রচণ্ড শক্তি, অযাচিত ভাবে এগোতে বাধা দেয় নীরবে।

    এখন চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছে লিণ্ডা। মোহ-নীরবতা কাটিয়ে উঠতে হলো জিমকে।

    ‘লেভিকে আবার জেলে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ঝামেলা হয়নি কোন।’ লিণ্ডার চোখ বলল জিমের হালকা ভাবে ব্যাপারটাকে নেয়া ও পছন্দ করছে না।

    ‘কাজ শেষ হয়েছে তোমার? হলে রওনা হতে পারি। আমি তৈরি।’

    ‘এখানে আর কোন কাজ নেই। যাওয়া যায়। তোমাকে উডফোর্ডের ওখানে পৌছে দিয়ে বাড়ি ফিরব। বাড়িতে ফিরেই লম্বা একটা সফরে বের হতে হবে আমাকে।’

    বেরিয়ে এল ও দোকান থেকে, উডফোর্ডের বাগিটা হিচরেইল থেকে নিয়ে এসে দোকানের সামনে রাখল। পেছনে নিজের ঘোড়াটাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে। একটু পর রওনা হলো ওরা। নীরবে ওর পাশে গম্ভীর চেহারায় বসে আছে লিণ্ডা।

    নীরবতা এতই দীর্ঘস্থায়ী হলো যে শেষ পর্যন্ত সহ্য করতে না পেরে লিণ্ডার দিকে সরাসরি তাকাল জিম। ডানদিকের পাহাড়ের দিকে চেয়ে আছে লিণ্ডা।

    খুক খুক করে কাশল জিম, তারপর বলল, ‘আজকে নতুন একটা অভিজ্ঞতা হলো তোমার যে ইণ্ডিয়ান অঞ্চল কেমন। এব্যাপারে তোমার কী মত?’

    না ফিরে দূরে তাকিয়ে থাকল লিণ্ডা, একটু পর বলল, ‘আমার ধারণা এলাকাটা মানুষ বসবাসের জন্যে বড় বেশি বুনো। অসভ্য একটা অঞ্চল। সভ্যতার বিকাশে মানুষ কোন কার্যকর ভূমিকা রাখছে না।’

    ‘তাই? আজকের ঘটনায় কোন্‌টা তোমার অসভ্য বলে মনে হলো?’

    ‘সবটাই। সবাই যদি সভ্য মানুষের মত আচরণ করত তা হলে আজকে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না। জনি উডফোর্ড আর তোমার ফোরম্যান সত্যি যদি লেভি ফক্সকে গরু মারতে দেখে থাকে তা হলে তাদের উচিত ছিল ঝামেলা না বাড়িয়ে তার কাছ থেকে গরুর দামটা আদায় করে নেয়া। তা হলেই গোলমাল চুকে যেত। কিংবা উকিলের সাহায্যও নিতে পারত ওরা। উকিল জরিমানা আদায়ের ব্যবস্থা করত। লেভি ফক্স জরিমানা দিতে না চাইলে তাকে আইনত শাস্তি দেয়ার সুযোগ ছিল। সেটা সভ্য সমাজের উপযুক্ত কাজ হত।’

    বিস্মিত একটা মুহূর্ত লিণ্ডার অপরূপ মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থাকল জিম। বাস্তবতা জানে না মেয়েটা। হাসি পেলেও হাসল না জিম। অত্যন্ত সিরিয়াস লিণ্ডা। যা সঠিক মনে করছে তা-ই বলছে। ওর গলার আওয়াজ থেকে এটা বুঝে নিতে অসুবিধে হয়নি জিমের। আজকের আসন্ন বিরোধপূর্ণ পরিবেশ গভীর ছাপ ফেলেছে লিণ্ডার কোমল মনে।

    ‘আমরা ওকে আইনত শাস্তি দিতে পারতাম না, লিণ্ডা। এখানে কোন আইন নেই। চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে লেভি। সেজন্যে তাকে ধরে আনা হয়েছে। জনি তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিল। জনি খুন হয়ে গেছে। আমাদের সবার জন্যে এটা একটা মস্ত আঘাত। কিন্তু করার কিছু নেই। অঞ্চলটা এমনই। এখানে চলে শুধু অস্ত্রের আইন। ‘

    ‘ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়,’ ঝাঁঝাল গলায় বলল লিণ্ডা। ‘কোন অজুহাত দিয়ে লড়াইকে সমর্থন করা যুক্তিসঙ্গত নয়। সদিচ্ছা থাকলেই সবাই মিলে আইন মেনে চলতে পারে। তা এই এলাকার মানুষ করবে না। এটা তাদের ব্যর্থতা। তাদের অযোগ্যতা।’

    এবার না হেসে পারল না জিম। আন্তরিকতার সঙ্গে মতামত প্রকাশের জন্যে জিমের দিকে তাকিয়েছিল লিণ্ডা, জিমকে হাসতে দেখে এবার সত্যি সত্যি রেগে গেল।

    ‘তুমি মনে করছ যে আমি বাচ্চাদের মত কথা বলছি, না?’ গালে লাল ছোপ পড়েছে লিণ্ডার। ‘তুমি বোধহয় ভাবছ যা বলছি সে সম্বন্ধে আমার কোন ধারণা নেই?’

    ‘না, তা ভাবছি না। তুমি বাচ্চাদের মত কথা বলছ না। তুমি কথা বলছ আদর্শবান মানুষের মত। এধরনের আদর্শ পুবে খাটে। এখানে নয়। এটা পশ্চিম। নতুন এলাকা। খারাপ মানুষের কোন অভাব নেই। আইন যদি থাকত তা হলেও তা মেনে চলার মত লোক খুব কমই পাওয়া যেত এখানে। তোমার যাতায়াত শহরের সভ্য মহিলাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হওয়ায় পরিস্থিতি সম্বন্ধে সত্যিকার কোন বাস্তব ধারণা গড়ে ওঠেনি। এটা তোমার দোষ নয়।’

    ‘কে বলল এখানে আইন নেই?’ প্রতিবাদ করল রাগান্বিত লিণ্ডা। ‘আইন ঠিকই আছে। শেরিফ কস্টিগ্যানের কথা ভুলে যাচ্ছ তুমি। কোর্ট আছে, জাজ আছে, জুরি আছে-আইন ঠিকই আছে। আইনের প্রয়োগের দায়িত্ব তাদের। নিজেদের হাতে আইন তুলে নেয়া অত্যন্ত বেআইনী একটা কাজ।’

    ‘আইন আছে মুখে মুখে। আইন এখানে আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আর কিছু নয়। সত্যিকার কোন আইনগত ভিত্তিও নেই। আইন না ভাঙলে কাউকে গ্রেফতার করবে কী করে? চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে লেভি। গত এক দেড় বছর ধরে আমরা গরু হারাচ্ছি। এই প্রথম কাউকে গরু চুরির সময় হাতেনাতে ধরা গেল। সেজন্যেই লেভিকে ধরে আনা হয়েছে, জুরিদের সামনে প্রমাণ করা গেছে যে আসলেই সে দায়ী। কাউকে অপরাধী প্রমাণ করা সহজসাধ্য কাজ নয়।’

    ‘এ থেকে কি প্রমাণ হয় না যে আইনের অস্তিত্ব আছে এখানে? এটা কি প্রমাণ হয় না যে আমার কথাই সত্যি? কোর্ট তো সুবিচারের জন্যেই আছে। কর্তৃপক্ষ লেভিকে গরু চুরির দায়ে দায়ী করেছে। ব্যস, ব্যাপারটা এখানেই চুকে গেল। যা শাস্তি দেয়ার তারা দেবে। তারপরও সবাই মিলে বিরোধে জড়িয়ে পড়ার কোন অর্থ হয়?’

    ‘বিরোধ সেজন্য নয়,’ গম্ভীর শোনাল জিমের কণ্ঠ। ‘লেভি একটা চুনোপুঁটি। ওকে যতই দায়ী করা হোক আর ফাঁসি দেয়া হোক, আসল যে হোতা, আসল যে অপরাধী, সে রয়ে যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে। লেভি ফক্স বার্ড কেলটনের অসংখ্য কর্মচারীর একজন ছিল মাত্র। ও মারা গেলে ওর জায়গা নেবে আরও এক ডজন লোক।’

    ‘স্রেফ সন্দেহের বশে বার্ড কেলটনকে অভিযুক্ত করছ। আমার ধারণা এর পেছনে তোমার ব্যক্তিগত অপছন্দ কাজ করছে।’

    ‘কেলটন কেমন মানুষ সেটা আমি জানি।’

    ‘হয়তো অতীতে কোন খারাপ কাজ করেছে সে, মানলাম। কিন্তু এখানে সে এসেছে নতুন করে জীবন শুরু করতে। অনেকেই অতীতের ভুল শুধরে নতুন করে জীবন শুরু করে। আমার ধারণা সেজন্যে তাদের অযথা সন্দেহ করা অর্থহীন, নীচতা। প্রত্যেকেরই ভাল হবার সুযোগ পাওয়া উচিত।’

    ‘তা ঠিক,’ স্বীকার করল জিম, পরক্ষণে বলল, ‘কিন্তু আমি নিশ্চিত যে সমস্ত রাসলিঙের পেছনে আছে ওই কেলটন।’

    ‘তা হলে তাকে গ্রেফতার করানোর ব্যবস্থা নাও।’

    ‘ওর বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ আমরা সংগ্রহ করতে পারিনি-এখনও।’

    ‘তার মানে দাঁড়াচ্ছে, সে দোষী সেটা তোমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছ না। নিজেকে তুমি বিচারক এবং জুরি মনে করছ, প্রমাণ ছাড়াই অভিযুক্ত করছ তাকে। আমার মতে এধরনের আচরণই হচ্ছে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মত অন্যায়। তোমার আচরণ বিচার করলে বলতে হয় যে ওই চোরদের মতই তুমিও আইনের প্রতি কোন শ্রদ্ধা পোষণ করো না।’

    ‘লিণ্ডা, বুড়ো এক মানুষকে দয়াপরবশত শেরিফ করেছি আমরা। তার সাধ্য নেই কিছু করে। আসলে একা কারও পক্ষেই কিছু করা সম্ভব নয়। পারবে কস্টিগ্যান কেলটনের র‍্যাঞ্চে গিয়ে ওকে বলতে যে সে নিজের অপরাধ স্বীকার করুক, নইলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে? আমি জানি কেলটন চোরাই গরু বিক্রি করেছে। কস্টিগ্যান কেলটনকে জেলে ঢোকাতে পারবে? এটা তো ঠিক যে কেলটন নিজে গরু মারেনি বা বাছুর চুরি করেনি। লোক দিয়ে করিয়েছে সে যা করার। রাসলিং পরিচালনা করছে সে, নিজে থাকছে নিরাপদ অবস্থানে, ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাকে থামানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে বমাল ধরে তাকে খুন করা। তার লোকদের খুন করা, অথবা এই এলাকা থেকে খেদিয়ে দেয়া। এছাড়া আমাদের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই, লিণ্ডা। এলাকাটাই এমন। জানি কেমন লাগছে তোমার আমার কথাগুলো শুনতে, কিন্তু এটাই বাস্তবতা। সত্যিকার ভাবে আইন প্রয়োগ করতে হলে যে সংগঠন দরকার তা হয়তো গঠিত হবে আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পর।’

    ‘সমস্ত বিরোধই শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটমাট করা সম্ভব,’ দ্বিমত পোষণ করল লিণ্ডা। জ্যাকফর্ক পাহাড়শ্রেণীর দিকে তাকিয়ে আছে ও। আপনমনে বলল, ‘ওই যে পাহাড়গুলো। কী অপূর্ব আর প্রশান্তি মাখা। ঝর্না নেমেছে শীতল ধারায়, স্ফটিকের মত স্বচ্ছ। ওখানে বনে বিচরণ করে হরিণ, সবুজ ঘাসে ছাওয়া মাঠে মিষ্টি সুরে শিস দেয় কোয়েল, গান গায় ঘুঘু। অপূর্ব একটা অঞ্চল এটা, জিম। মাটির পৃথিবীতে এ যেন এক স্বর্গ। কিন্তু মানুষ প্রকৃতির প্রশান্তি নষ্ট করছে, নিজেদের দোষে বিবাদে লিপ্ত হচ্ছে। রক্তপাত কি কারও কাম্য হতে পারে, বলো, জিম? ভদ্রতার সঙ্গে সমস্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায়, অথচ সে পথ তোমরা কেউ গ্রহণ করছ না। তোমরা মনে করছ তোমাদের রক্ষার জন্যে কোন আইন নেই, আর সেকারণেই তোমরা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিচ্ছ। এলাকাটা বুনো বলে বন্য জন্তুর মত বিরোধে লিপ্ত হচ্ছ সবাই। অপ্রয়োজনে মানুষের রক্তপাত করছ। এটা কি ঠিক? নিজেদের প্রতিই কি অন্যায় করছ না তোমরা? তোমার কী মনে হয় না মানুষ খুন করা ভয়ানক একটা অন্যায়?’

    এক মুহূর্ত চুপ করে থাকল জিম, তারপর মৃদু গলায় বলল, ‘তুমি মনে করছ আমি একটা বন্য জন্তু, অস্ত্র হাতে সবুজ ঘাসে নিরপরাধ মানুষের রক্ত ঝরাতে উদ্‌গ্রীব হয়ে আছি। আসলেই আমাকে তা-ই মনে করো তুমি? মনে করো আমি অন্যায় করছি?’

    ‘আজকে কোর্ট রূমে আরেকটু হলেই গোলাগুলি শুরু করতে তুমি, ‘ অভিযোগের সুরে বলল লিণ্ডা। ‘হয়তো একজন বা কয়েকজন খুন হয়ে যেত তোমার হাতে। হয়তো মারা পড়তে তুমি নিজেই। কী ভাবছিলে, যখন মানুষগুলোকে গুলি করার জন্যে মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলে?’

    ‘কিছুই ভাবিনি,’ নরম স্বরে বলল জিম। ‘ভাবার কিছু ছিল না। বন্দিকে কিছুতেই ছুটিয়ে নিয়ে যেতে দেব না, এটা ছাড়া আর কোন চিন্তা ছিল না আমার। লেভি বন্দি থাকবে এটা আমি নিশ্চিত করতে চেয়েছি। পেরেওছি আমরা।’

    ‘তোমাদের সমস্যা কি জানো? আইনের প্রতি কোন শ্রদ্ধা নেই তোমাদের। ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ খুন করতে পারো তোমরা। তারপর ভুলেও যেতে পারো অনায়াসে। বন্দির পলায়ন ঠেকাচ্ছ কিনা বা কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায় সেটা বড় ব্যাপার নয়, তোমরা বিচার করো কে আগে গুলি করল। খুন করতে পারলে কিনা। মানুষ খুন করা তোমাদের কাছে মাছি মারার মতই স্বাভাবিক।’

    আগে কখনও লিণ্ডাকে এমন আবেগপ্রবণ হতে দেখেনি জিম। লিণ্ডা নিজের আবেগ গোপন করার চেষ্টা করছে, কিন্তু সফল হচ্ছে না।

    ‘টেক্সাসে আমার বাবা-মাকে গুলি করে খুন করা হয়েছে,’ আবার শুরু করল লিণ্ডা। ‘যে খুন করেছে তার কাছে হয়তো ওটা কোন ব্যাপার বলেই মনে হয়নি। কিন্তু আমি? ভাবতেও পারবে না আমার জীবনে ওই ঘটনা কতবড় একটা আঘাত। রেঞ্জ ওয়ার চলছিল। একা আমি একটা মেয়ে। আমার পক্ষে র‍্যাঞ্চটা চালানো সম্ভব ছিল না। সব বেচে দিয়ে এখানে চলে আসতে হয়েছে আমাকে। নিজের বলে কী আছে আমার, বলো?’

    ‘আমি তোমাকে ব্যক্তিগত কথা মনে পড়িয়ে দিয়ে কষ্ট দিতে চাইনি, ‘ মৃদু গলায় বলল জিম, দুঃখিত বোধ করছে লিণ্ডার জন্যে।

    ‘জানি।’ হাসার চেষ্টা করল লিণ্ডা। ‘এখন যাদের কাছে আছি তারা খুব ভাল মানুষ। হ্যাঁ, উডফোর্ডরা আমার আত্মীয়। সবাই আমাকে পছন্দও করে। কিন্তু তারা তো আমার বাবা-মা নয়। আমি আশ্রিতা। তাছাড়া এখানে এসেও দেখছি সেই একই বিরোধ। রেঞ্জ ওয়ার। কবে এই আশ্রয়ও হারাতে হবে তা ঈশ্বর বলতে পারেন।’

    দীর্ঘক্ষণ একটানা বাগি চালাল জিম, তারপর বলল, ‘আমি তোমাকে বুঝি, লিণ্ডা। আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। কিন্তু তুমি কেন রাজি হও না সেটা আমি জানি না। আগেও কয়েকবার আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছ তুমি।’

    ‘তুমি আমাকে যে সংসার দেবে সেটা হবে আমার বাবা আমার মাকে যেমন সংসার দিয়েছিল তেমন। আমি এমন সংসার চাই না যে সংসারের জানালায় সারাজীবন হানা দেবে মৃত্যুর সম্ভাবনা। এমন জীবন সইতে পারব না আমি। অতীত আমাকে অনেক পীড়া দেয়।’

    ‘ও।’ হতাশ বোধ করল জিম।

    নিঃসন্দেহে লিণ্ডা সত্যিকারের চমৎকার একটা কোমল মনের অধিকারিণী মেয়ে। ও এমন এক মেয়ে যাকে আপন করে পাবার স্বপ্ন দেখবে পুরুষমানুষরা। কিন্তু এই এলাকার চলনবলন ওর জানা নেই। জিম অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারে এটা ওর কল্পনার বাইরে। বিশ্বাস করতে পারে না যে আসলেই আইন এখানে নেই বললেই চলে।

    জ্যাকফর্ক পাহাড়ের পাদদেশ ঘেঁষে এঁকেবেঁকে এগিয়ে যাওয়া পথটা ধরে একটানা চলছে বাকবোর্ড। ডানদিকে পাহাড়ের গায়ে মাঝে মাঝেই চোখে পড়ছে ওক বা পাইন গাছ, সুশীতল ছায়া দিচ্ছে। ওদের বামদিকে তৃণভূমি, কোমর সমান উঁচু সবুজ ঘাসে ছাওয়া।

    পাহাড়ের ওপরের কোল্ড স্প্রীং থেকে নেমে আসা পানির স্রোতগুলো অতিক্রম করল ওরা। গাছের ছায়ায় রাস্তাটা সাপের মত বাঁক নিয়েছে, চলে গেছে সামনের দিগন্ত বিস্তৃত প্রেয়ারির দিকে। সত্যি চমৎকার একটা অঞ্চল এটা। উর্বর। যত গরু এখানে চরানো সম্ভব তত গরু আগামী বিশ বছরেও এলাকার লোকদের হবে কিনা সন্দেহ।

    এ তো গেল প্রেয়ারির দিকটার কথা। ওদিকে পরিবেশ কেমন সেটা লিণ্ডার জানা আছে। ও যেটা জানে না সেটা হলো উল্টোদিক, অর্থাৎ পাহাড়শ্রেণীর পরিস্থিতি। জ্যাকফর্ক পাহাড়শ্রেণী দুর্গম একটা এলাকা। হরিণের যাতায়াতে তৈরি পথ ছাড়া আর কিছু নেই। ইচ্ছে করলে যেকোন লোক জঙ্গলে পাহাড়ে ঢুকে হারিয়ে যেতে পারবে। গোটা একটা আর্মিরও সাধ্য হবে না তাকে খুঁজে বের করে।

    জ্যাকফর্ক পাহাড়শ্রেণী। আউট-লদের নিরাপদ স্বর্গ। আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে ইণ্ডিয়ান টেরিটোরির সমস্ত বদলোক এখানে এসে জুটেছে। কেউ এসেছে অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্যে, আবার কেউ এখানে স্থায়ী আবাস গড়েছে এখান থেকে তাদের বেআইনী কাজ চালানোর জন্যে। টেরিটোরিতে যে কয়েকজন ফেডারাল অফিসার আছে তারা সতর্কতার সঙ্গে এই অঞ্চল এড়িয়ে চলে। গাছের মাঝ দিয়ে যেসব ট্রেইল গেছে সেগুলো কোনটাই নিরাপদ নয়। ইচ্ছে করলে কেউ যেকোন জায়গা থেকে যেকোন সময় অ্যাম্বুশ করতে পারবে, মরতে হবে বেঘোরে।

    আউট-লরা ছাড়া আর কেউ বিশাল পাহাড়ী অঞ্চলটা চেনে না। যারা সামান্য চেনে তাদের কাছে জ্যাকফর্ক একটা রহস্যময় গোলকধাঁধা।

    দূর থেকে পাহাড়ী অঞ্চলের নৈঃসর্গিক দৃশ্যটা অপূর্ব লাগে দেখতে। কিন্তু ওখানে বাস করে এমন সব মানুষ, যাদের অন্তরটা রাতের বেলায় হরিণের তৈরি পথ যেমন অন্ধকার হয় তার চেয়েও কালো। চোর-বাটপার-খুনি-ডাকাত-সবাই এখানে আস্তানা গেড়েছে। অস্ত্রের জোরে তারা নিজেদের ইচ্ছে পূরণ করে নেয়। হয় পিস্তল নয়তো ছুরির আইন চলে এখানে। মাঝে মাঝে তারা বের হয় নিরাপত্তা ছেড়ে, যে সব বোকা লোক জীবিকা নির্বাহের জন্যে কাজ করে তাদের ওপর চড়াও হতে। সাধারণ মানুষ যারা পরিশ্রমের মাধ্যমে এলাকাটাতে সভ্যতা আনতে চেষ্টা করছে তারা আউট-লদের জন্মশত্ৰু।

    ইণ্ডিয়ান টেরিটোরি বলে সরকার নাক গলাতে ইচ্ছুক নয়। দক্ষিণ-পশ্চিমের যত খারাপ সাদা মানুষ আছে সবাই সুযোগটা নিচ্ছে। অস্ত্র হাতে নিজের তৈরি আইন বজায় রাখতে পারলেই এখানে জমির মালিক হওয়া যায়। কাউকে ভয় পাওয়ার দরকার পড়ে না এখানে। শুধু ছোট র‍্যাঞ্চারদের একটু সমঝে চলতে হয়। ওদের গরু চুরি করেই বেশিরভাগ চাহিদা মেটায় আউট-লরা।

    তাদের ঠেকাতে হলে অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। গায়ের জোরে হারিয়ে দিতে হবে তাদের। সেটা লিণ্ডার পছন্দ নয়। ওর ধ্যান ধারণা একেবারেই ভিন্ন। ও এমন কোন পুরুষকে ভালবাসতে পারবে না যে অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে জীবন- মৃত্যুর প্রতিযোগিতায় নামে।

    উডফোর্ডদের র‍্যাঞ্চহাউসের সামনে চওড়া উঠানে বাকবোর্ড থামাল জিম, লিণ্ডাকে নামতে সাহায্য করল। ততক্ষণে হাজির হয়ে গেছে র‍্যাংলার। বাকবোর্ডটা পেছন দিকে কোথাও নিয়ে গেল সে। ঘোড়ার পাশে দাঁড়িয়ে আছে জিম, ওর বাহুতে একটা হাত রাখল লিণ্ডা। ওর দৃষ্টি নিবদ্ধ দিগন্তের কাছে তাপতরঙ্গের দিকে। মুহূর্তের জন্যে জিমের মনে হলো লিণ্ডার চোখের তারায় বিষাদ আর কষ্টের ছাপ ফুটে উঠেছে। জোর করে হাসি টেনে এনে জিমের দিকে তাকাল লিণ্ডা।

    ‘জিম, আমি দুঃখিত। হয়তো বিশ্বাস করবে না তোমাকে আমি কতটা পছন্দ করি। একজন পুরুষের যেসব প্রশংসনীয় গুণ থাকতে পারে তার সবই আছে তোমার মধ্যে। আসলে… তারপরও…’

    ‘আমি বুঝি,’ মৃদু স্বরে বলল জিম। তিক্ত আর শীতল শোনাল ওর কণ্ঠ ‘আমরা এখানে সভ্যতা গড়ে তুলতে পারিনি। সময় লাগবে, তবে হতাশ হয়ে হাল ছাড়ব না আমরা। ভাল কথা, মিসেস উডফোর্ডকে একটু দেখে রেখো। ছেলে হারিয়ে একেবারে যেন ভেঙে না পড়ে। … পরে তোমার সঙ্গে দেখা হবে। মিসেস উডফোর্ডকে জানিয়ো, আমাকে ডাকলেই হাজির হয়ে যাব।’

    লাফ দিয়ে স্যাডলে উঠল জিম। স্পারের স্পর্শে ঘোড়াটাকে ঘুরিয়ে নিয়ে বেরিয়ে এল উডফোর্ডদের উঠান থেকে। জনির মা’র সঙ্গে দেখা হয়নি বলে মনে মনে স্বস্তি বোধ করছে। আধঘণ্টা পর নিজের র‍্যাঞ্চে পৌঁছাল ও। পুরোটা পথ লিণ্ডার কথা চিন্তা করেছে। সম্পর্কটা ওর কাছে কেমন যেন ধোঁয়া ধোঁয়া লেগেছে। মেয়েটা যেন বাস্তব একটা স্বপ্ন। আর স্বপ্ন দেখে বোকা পুরুষমানুষরা।

    .

    করালের কাছে যাওয়ার পর স্যাডল পরানো ঘোড়াটা দেখতে পেল জিম। ঘোড়াটার পিঠে ময়দার বস্তার মত আড়াআড়ি বেঁধে রাখা হয়েছে একজন লোককে। এক মুহূর্ত দেরি হলো না ওটা কে তা বুঝতে। ওটা গাস লিওস্টর্মের লাশ!

    উপুড় হয়ে আছে লাশটা। পা দুটো একদিকের স্টিরাপের সঙ্গে বাঁধা, হাত দুটো বাঁধা উল্টোদিকের স্টিরাপের সঙ্গে।

    মাথায় একটা গুলি খেয়েছে লিওস্টর্ম। বুকেও বুলেটের কয়েকটা ফুটো আছে। খুন করার আগে প্রচণ্ড মারপিট করা হয়েছে তাকে। রক্তাক্ত চেহারাটা ক্ষতবিক্ষত, প্রথম দর্শনে চেনার উপায় নেই।

    লাশটা ঘোড়ার পিঠ থেকে নামাল জিম। ইতিমধ্যেই ওটা শক্ত হয়ে গেছে। লিওস্টর্মকে কাঁধে নিয়ে বাঙ্কহাউসে একটা বাঙ্কের ওপর শুইয়ে দিল ও। চোখ দুটো সরু হয়ে আছে, হাত দুটো মুঠো করা-মনের মধ্যে প্রলয়ংকরী ঝড় বইছে।

    খুনিরা জানত ঘোড়াটাকে ছেড়ে দিলে বাড়ি ফিরে আসবে ওটা। সেজন্যেই গাস লিণ্ডস্টর্মের লাশ ঘোড়ার পিঠে বেঁধে দিয়েছে।

    এটা পরিষ্কার একটা হুমকি। জিম কার্সনকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, বাড়াবাড়ি কোরো না, শেষ হয়ে যাবে।

    দাঁতে দাঁত পিষল জিম। মাথায় শুধু কাজ করছে শোধ নেবার চিন্তা।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleখুনে ক্যানিয়ন – কাজী মায়মুর হোসেন
    Next Article ধাওয়া – কাজী মায়মুর হোসেন

    Related Articles

    কাজী মায়মুর হোসেন

    অদৃশ্য ঘাতক – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৬৮ – স্বর্ণলিপ্সা

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    ধাওয়া – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    খুনে ক্যানিয়ন – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    July 25, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }