Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প138 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৬. কাল রাত – মেকু কাহিনী

    খাওয়া শেষ করে বদি শব্দ করে একটা ঢেকুর তুলল। মতি তার দিকে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে বলল, “ঢেকুর তোলা অভদ্রতা তুমি জান না?”
    “অভদ্রতা?” বদি অবাক হয়ে বলল, “ভালো খেলে মানুষ সব সময় ঢেকুর তুলে।”
    জরিনা অর্ধভুক্ত খাবারের দিকে তাকিয়ে বলল, “এই খাবার তোমার কাছে ভালো লেগেছে?”
    বদি দ্বিতীয় আরেকটা ঢেকুর তুলে বলল, “খিদে পেলে আমার সব খাবার ভালো লাগে।”
    জরিনা এর কিছু বলল না। মতি বলল, “খাবারের ভালোমন্দ নিয়ে আর মাথা ঘামিও না। বাইরে না গিয়ে ঘরে বসেই যে খেতে পেরেছি সেটাই বেশি।”
    “তা ঠিক। পায়ের যা অবস্থা ন্যাংচাতে ন্যাংচাতে নিচে যেতে হলে অবস্থা কেরোসিন হয়ে যেত।”
    “এখন ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে হবে।”
    মতি বলল, “পাশাপাশি দুইটা রুম নিয়েছি। একটাতে আমি আর বদি অন্যটাতে জরিনা আর মেকু।”
    জরিনা দেওয়ালে বসে থাকা গোবদা মাকড়শাটার দিকে তাকিয়ে বলল, “এই ব্যাটা মাকড়শাকে দেখে কী ঘেন্না লাগে, ছিঃ!”
    বদি আর মতি দুজনেই মাকড়শাটার দিকে তাকাল, তাদের কাছে সেটা এমন কিছু ঘেন্নার জিনিস মনে হল না। বদির বরং দেখতে ভালোই লাগল, কেমন সুন্দর ফুলের মতো পা ছড়িয়ে আছে। জরিনা বলল, “আমি এই রুমে এই মাকড়শার সাথে থাকব না।”
    মতি তার জুতো খুলে দেওয়ালে মাকড়শার দিকে ছুঁড়ে মারতেই মাকড়শাটা তার লম্বা পা ফেলে তিরতির করে দৌড়ে ঘুলঘুলির দিকে পালিয়ে গেল। বদি বলল, “ভালোই হয়েছে, লাগে নাই।”
    “কেন? লাগলে কি হত?”
    “মাকড়শা মারলে গুনাহ হয়।”
    মতি একটু অবাক হয়ে বদির দিকে তাকিয়ে বলল, “একটা মানুষের বাচ্চা কিডন্যাপ করতে তোমার আপত্তি নেই, তখন গুনাহ নিয়ে চিন্তা হয় না?”
    “ওইটা হচ্ছে বিজনেস। বিজনেসে গুনাহ-সওয়াব নাই।”
    “ও।”
    বদি মেকুর পাশে লম্বা হয়ে শুয়ে একটা সিগারেট ধরাল। জরিনা অবাক হয়ে বলল, “তুমিও সিগারেট খাও নাকি?”
    “সব সময় খাই না। যখন টেনশান হয় তখন খাই।”
    “এখন টেনশান হচ্ছে?”
    “হ্যাঁ।”
    মতি বলল, “তাড়াতাড়ি সবাই শুয়ে পড়। আগামী কাল অনেক কাজ।”
    জরিনা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, “আমার মনে হয় এত সহজে ঘুম আসবে না।”
    মতি পকেট হাতড়ে একটা শিশি বের করে বলল, “ এই যে আমার কাছে ঘুমের ওষুধ আছে। ঘুমানোর আগে একটা ট্যাবলেট খেয়ে নিও, দেখ ভালো ঘুম হবে।”
    “দেখি কী টেবলেট?”
    জরিনা ওষুধের শিশিটা নিয়ে দেখতে থাকে। মতি বলল, “কড়া ওষুধ, একটা খেলেই রাত কাবার হয়ে যায়। গোটা দশেক খেলে হাসপাতালে নিতে হবে।”
    মেকু চোখের কোনা দিয়ে ওষুধের শিশিটা দেখার চেষ্টা করল, এই ট্যাবলেট কয়েকটা যোগাড় করতে পারলে মন্দ হয় না। সকাল বেলা কোনো একজনের চায়ের মাঝে দিয়ে দিতে পারলে ঘুমে কাদা হয়ে থাকবে!
    মেকু হঠাৎ বাঁশির মতো একটা শব্দ শুনতে পেল। শব্দটা কোথা থেকে আসছে বোঝার জন্যে সে এদিক ওদিক তাকায়, তখন জরিনার হাসি শুনতে পেল। জরিনা বলল, “বদির কাণ্ড দেখেছ? এর মাঝে শুয়ে নাক ডাকতে আরম্ভ করেছে!”
    মতিও একটু হাসল, বলল, “হ্যাঁ, বদি খুব সহজে ঘুমিয়ে যেতে পারে। যে কোনো জায়গায় বসে বসে ঘুমিয়ে নেয়।”
    মেকু বদির দিকে তাকাল, একটা সিগারেট টানতে টানতে ঘুমিয়ে গেছে, সিগারেটের হাতটা একেবারে মেকুর কাছে। সিগারেটের বাজে একটা গন্ধ আসছে। তার আম্মা কাছাকাছি থাকলে এ জন্যে বদির মুণ্ডুই মনে হয় আলাদা করে ফেলতেন। সিগারেটের গন্ধটা খুব খারাপ লাগছে, মেকু একবার সিগারেটের দিকে তাকাল, ইচ্ছে করলে হাত থেকে টেনে নিয়ে নিচে ছুঁড়ে দিতে পারে। চেষ্টা করে দেখবে নাকি?
    মেকু এদিক সেদিক তাকাল, জরিনা আর বদি অন্য দিকে তাকিয়ে আছে, তাকে খেয়াল করছে না। সে সাবধানে সিগারেটটা ধরে বদির হাত থেকে নিয়ে আসে, এখন একটু চেষ্টা করলেই দূরে ছুঁড়ে দিতে পারবে। মেকু ছুঁড়তে গিয়ে হঠাৎ থেমে গেল, ছুঁড়তেই যদি হয় তা হলে বদির উপরে ছুড়লেই তো হয়, তিরিং বিড়িং করে যা একটা লাফ দেবে সেটা নিশ্চয়ই দেখার মতো একটা ব্যাপার হবে। মেকু বদির বুকের উপর নিশানা করে সিগারেটটা ছুঁড়ে মারল। শুয়ে থেকে মেকু ঠিক দেখতে পেল না সিগারেটটা বুকে পড়ে গড়িয়ে তার সার্টের বুক পকেটে ঢুকে গেছে, সেখানে তার ম্যাচটা রয়েছে। মেকু একটা চিৎকার এবং লাফ ঝাপ আশা করছিল কিন্তু তার কিছুই হল না। মেকু যখন প্রায় নিঃসন্দেহ হয়ে গেল সিগারেটটা সে ঠিকমতো বদির উপরে ফেলতে পারে নি ঠিক তখন ব্যাপারটি ঘটল, হঠাৎ করে বদির বুক পকেটের পুরো ম্যাচটাই দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। বদি ভয়ংকর একটা চিৎকার করে উঠে বসে, হঠাৎ করে তার বুকের মাঝে কেন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে বুঝতে পারে না, সে মিছাই বুকে থাবা দিয়ে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে পাগলের মতো লাফাতে থাকে, বিছানায় পা বেঁধে সে দড়াম করে আছাড় খেয়ে পড়ে, সেখান থেকে মচকে যাওয়া পা নিয়ে সে আবার তিড়িং করে লাফিয়ে উঠে তারপর ন্যাংচাতে ন্যাংচাতে সারা ঘরে ছোটাছুটি করতে থাকে।
    জরিনা এবং মতিও বদির পিছনে পিছনে দৌড়াতে থাকে – পলিস্টারের সার্ট আগুন ধরে গেলে নেভানো কঠিন, টান দিয়ে বোতাম ছিঁড়ে সার্টটা খুলতে হল এবং পা দিয়ে তার উপর লাফিয়ে সেই আগুন নেভাতে হল। বদির বুকের কাছে খানিকটা জায়গা পুড়ে গেছে, বুকের লোম পুড়ে সারা ঘরে একটা বোটকা গন্ধ। সব মিলিয়ে একটা ভয়ংকর অবস্থা। চেচামেচি এবং হই চই নিশ্চয়ই বেশি হয়ে গিয়েছিল কারণ হোটেলের লোকজন এসে দরজা ধাক্কাধাক্কি করে জানতে চাইল কী হয়েছে। জরিনা দরজা ফাঁক করে মধুর হাসি হেসে বলল, “কিছু হয় নাই। তেলাপোকা উড়ছিল দেখে ভয় পেয়েছে।”
    “তেলাপোকা দেখে এত ভয়?”
    “কেউ তেলাপোকা দেখে ভয় পায়। কেউ মাকড়শা ভয় পায়। কেউ ইঁদুর ভয় পায়। যার যেটাতে ভয়।”
    “কিন্তু পোড়া গন্ধ কিসের?”
    “ভয় পেয়ে সিগারেট ছুঁড়ে দিয়েছে, চুলে এসে পড়েছে। চুল পোড়া গন্ধ।”
    ব্যাখ্যাটুকু মানুষগুলির কতটুকু বিশ্বাস হয়েছে ঠিক বোঝা গেল না, কিছুক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে তারা চলে গেল। মতি আর জরিনা তখন বদির দিকে নজর দিল। জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”
    “বু-বুকে আগুন লেগে গেছে!”
    “সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি।” জরিনা রেগে মেগে বলল, “শুধু বাংলা সিনেমায় শুনেছি বুকে আগুন লেগে যায়। তোমার বুকে কেমন করে আগুন লাগল?”
    বদি নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাশে মুখে বলল, “মনে হয় ঘুমের মাঝে সিগারেটটা শরীরে পড়ে গেছে!”
    মতি হাল ছেড়ে দেবার ভঙ্গি করে বলল, “ শুধু মাত্র পুরোপুরি গবেট হলে মানুষ সিগারেট খেতে খেতে ঘুমিয়ে যায়।”
    বদি মিন মিন করে বলল, “ইচ্ছে করে তো আর ঘুমাই নাই। হঠাৎ কেমন যেন ঘুম এসে গেল। টেনশান হলেই আমার বেশি ঘুম পায়।”
    জরিনা মাথা নেড়ে বলল, “আমি জন্মেও এরকম কথা শুনি নি, টেনশান হলে বেশি ঘুম পায়!”
    মতি বলল, “যার যেরকম নিয়ম।”
    বদি মেঝে থেকে তার সার্টটা তুলে দেখে পকেট পুরোটা জ্বলে গিয়ে বুকের মাঝে পোড়া একটা গর্ত। স্থানে স্থানে পুড়ে পুরো সার্টটা কুঁকড়ে গেছে। বদি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “কোনো কাপড় জামা আনি নাই কাল এই সার্ট পড়ে বের হব কেমন করে?”
    মতি একটা নিশ্বাস ফেলেল বলল, “সেটা কাল দেখা যাবে, এখন ঘুমানোর ব্যবস্থা করা যাক।”
    বদি মুখ বিকৃত করে বলল, “বুকের ভিতর যা জ্বালা করছে!”
    জরিনা মুখ ভেংচে বলল, “ একেবারে বাংলা নাটকের ডায়ালগ!”
    “সত্যি বলছি! মনে হয় ফোসকা পড়ে যাবে।”
    “এখন কিছু করার নেই।” মতি বলল, “রাতটা কোনোভাবে কাটিয়ে দাও, কাল ভোরে দেখা যাবে।”

    মেকুকে একটা বিছানায় শুইয়ে তার পাশে জরিনা বসে একটা সিগারেট টানছে। সিগারেটের দুর্গন্ধে মেকুর নাড়ি উলটো আসতে চায় কিন্তু কিছু করার নেই। মানুষ কেন যে এই দুর্গন্ধের জিনিসগুলি খায় কে জানে। সিগারেট টানা শেষ করে জরিনা তার ব্যাগ থেকে ওষুধের শিশিটা বের করল, শিশিটা খুলে সেখান থেকে একটা ট্যাবলেট হাতে নিয়ে শিশিটা বন্ধ করার জন্যে ছিপিটা লাগানর চেষ্টা করছিল, মেকু তখন বিছানায় শুয়ে থেকেই জরিনার হাতের কবজিতে গায়ের জোরে একটা লাথি কষালো। ওষুধের শিশিটা শুন্যে উড়ে গিয়ে সবগুলি ট্যাবলেট চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিছু ট্যাবলেট এসে পড়ল তার শরীরে, কিছু তার আশেপাশে।
    জরিনা একটা চিৎকার করে মেকুর দিকে ছুটে এসে বলল, “বদমাইশ পাজি ছেলে! গলাটিপে মেরে ফেলব। একেবারে জানে শেষ করে ফেলব।”
    মেকুর এক মুহূর্তের জন্যে মনে হল সত্যিই বুঝি জরিনা তার গলা টিপে ধরবে, সে তাড়াতাড়ি তার মাড়ি বের করে একটা হাসি দিল এবং এই হাসি দেখে জরিনা শেষ পর্যন্ত একটু নরম হল। সে নিচু হয়ে গজ গজ করতে করতে ট্যাবলেটগুলি তুলে নিতে শুরু করে। মেকু সেই ফাকে তার আশেপাশে পড়ে থাকা ট্যাবলেটগুলি তুলে নিতে শুরু করে, সব মিলিয়ে পাঁচটা ট্যাবলেট সে তার দুই হাতে মুঠি করে লুকিয়ে ফেলল। জরিনা মেঝে থেকে ট্যাবলেটগুলি তুলে বিছানায় পড়ে থাকা ট্যাবলেটগুলিও তুলে শিশিতে ভরে শিশিটা আবার ব্যাগে ভরে নেয়।
    মেকু চোখের কোনা দিয়ে দেখল জরিনা একটা ট্যাবলেট খেয়ে লাইট নিবিয়ে তার বিছানায় গিয়ে শুয়েছে। ওষুধ খেয়ে শুয়েছে। নিশ্চয়ই কিছুক্ষণের মাঝে ঘুমিয়ে পড়বে। মেকু ইয়ে ইয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, এখনো তার দুই মাস হয় নাই আর মাঝে সে একি বিপদে পড়ল? তার আম্মা সত্যি সত্যি তাকে উদ্ধার করতে পারবেন তো?
    মেকু শুনল জরিনা তার বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে। মনে হচ্ছে ঘুম আসছে না। হোটেলের ঘরটা ছোট, দুটি বিছানা বেশ কাছাকাছি, আলো নিবিয়ে দেওয়ার পরও জানালা দিয়ে অল্প আলো এসে ঘরের মাঝে একটা আলো আঁধারি ভাব চলে এসেছে। কত রাত হয়েছে কে জানে, চারিদিক খানিকটা চুপচাপ হয়ে এসেছে। মেকুর কেমন জানি ভয় ভয় করতে থাকে। একা একা শুয়ে তার মন খারাপ হয়ে যায়। ইচ্ছে হয় চিৎকার করে একটু কেঁদে নেয়, মনে হয় শব্দ করে একটু কেঁদেও ফেলেছিল কারণ হঠাৎ জারিনা লাফিয়ে বসে ভয় পাওয়া গলায় বলল, “কে?”
    ঠিক তখন মেকুর মাথায় বুদ্ধিটা এল। আগে যতবার সে কথা বলেছে ততবারই মানুষেরা ভয় পেয়েছে, এখন ভয় দেখানোর জন্যেই কথা বললে কেমন হয়? মেকু চিন্তা করল কী বলা যায় – মানুষকে ভয় দেখানোর জন্যে কী বলতে হয় কে জানে? জরিনার নাম ধরে ডাকাডাকি করে দেখা যাক। মেকু যতটুকু সম্ভব গলার স্বর মোটা করে বলল, “ জরিনারে জরিনা —”
    তখন যা একটা কাণ্ড হল সেটা আর বলার মতো না! জরিনা লাফিয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে ভাঙা গলায় বলল, “কে? কে?”
    মেকু গলার স্বর মোটা করে বলল, “আমি!”
    “আমি কে?”
    “আমারে তুমি চেনো না, হি- হি- হি –”
    জরিনা তখন লাফিয়ে বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করতে গিয়ে মশারিতে পা বেঁধে হুড়মুড় করে নিচে পড়ে গেল। একটা চিৎকার করে উঠতে গিয়ে টেবিলে মাথা ঠুকে গেল, অন্ধকারে কোনোমতে সে দরজার দিকে ছুটে যেতে থাকে, মেকু তখন আবার সুর করে গাইতে লাগল,
    “জরিনারে জরিনা
    কেন তরে ধরি না
    ধরে কেন মরি না
    ও জরিনারে জরিনা!”

    জরিনা দরজায় মাথা ঠুকে খামচা খামচি করতে করতে কোনমতে দরজা খুলে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। একটু পরে মেকু শুনতে পেল জরিনা পাশের ঘরে গিয়ে হাউ মাউ করে কান্নাকাটি করছে।
    কিছুক্ষণের মাঝেই মতি এবং বদিকে নিয়ে জরিনা ফিরে এল। তিনজন খুব সাবধানে দরজা খুলে ভিতরে এসে ঢুকল, মতি এবং বদি দুজনের হাতেই একটা করে রিভলবার। জরিনা লাইট জ্বালাতেই মেকু চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে যাবার ভান করল। মতি এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল, “ এই ঘরে কেউ নাই।”
    জরিনা বলল, “আমি জানি কেউ নাই।”
    “তা হলে কে কথা বলবে?”
    “আমি জানি না।”
    “কোথা থেকে শব্দটা এসেছে?”
    জরিনা মেকুর বিছানা দেখিয়ে বলল, “ওইদিক থেকে।”
    “ওই দিকে তো কেউ থাকতে পারে না, খালি বাচ্চাটা ঘুমাচ্ছে।”
    বদি মাথা নিচু করে মেকুর বিছানার নিচে তাকিয়ে বলল, “এই ঘরে কেউ নাই জরিনা। তুমি ভুল শুনেছে।”
    “আমি ভুল শুনি নাই। আমি স্পষ্ট শুনেছি। বলেছে, জরিনারে জরিনা –”
    মতি ভুরু কুঁচকে বলল, “গলার স্বর কী রকম?”
    জরিনা দুর্বল গলায় বলল, “নাকী গলার স্বর। মেয়েদের মতন।”
    “মেয়েদের মতন?” মতি অবাক হয়ে বলল, “মেয়েদের গলায় কে কথা বলবে?”
    জরিনা কাঁপা গলায় বলল, “আমার মনে হয় এই ঘরটায় দোষ আছে।”
    বদি অবাক হয়ে বলল, “ঘরের আবার দোষ থাকে কেমন করে?”
    মতি গম্ভীর গলায় বলল, “ কোনো ঘরে ভূত প্রেত থাকলে বলে ঘরে দোষ আছে।”
    বসি এবারে ঘাবড়ে গেল, বলল, “এই ঘরে ভূত আছে?”
    “ধুর!” মতি হাত এরে বলল, “ভূত আবার কোথেকে আসবে?”
    “তা হলে আমি কী শুনেছি?”
    “ভুল শুনেছ।”
    জরিনা রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলল, “আমি ভুল শুনি নাই। স্পষ্ট শুনেছি।”
    মতি ঠোটে আঙুল দিয়ে বলল, “আস্তে কথা বল। এই বাচ্চা ঘুমিয়েছে, ওঠে গেলে ঝামেলা হয়ে যাবে।”
    জরিনা গলা নামিয়ে বলল, “আমি স্পষ্ট শুনেছি। কোনো ভুল নাই।”
    মতি বলল, “তুমি কী ঘুমের ওষুধটা খেয়েছিলে?”
    “হ্যাঁ। একটা ট্যাবলেট খেয়েছি।”
    মতি গম্ভীভাবে মাথা নেড়ে বলল, “মনে হয় ওষুধের জন্যে হয়েছে। হেলুসিনেশান হয়েছে।”
    জরিনা মুখ শক্ত করে বলল, “আমার হেলুসিনেশান হয় নাই।”
    বদি বিরক্ত হয়ে বলল, “ তাহলে কী তুমি বলতে চাও এই বাচ্চাটা ঘুমের মাঝে তোমাকে নিয়ে গান গাইছে?”
    জরিনা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, “না, আমি সেটা বলছি না।”
    “তা হলে এটা নিয়ে আর কথা বলে কাজ নেই। কাল অনেক কাজ, এখন ঘুমাও। তোমার যদি ভয় লাগে তা হলে আমি এই ঘরে ঘুমাই।”
    ভয় লাগার কথা বলায় জরিনার আত্মসম্মানে একটু আঘাত লাগল। সে বলল, “না, ঠিক আছে। আমিই ঘুমাব।”
    বদি আর মতি বের হয়ে যাবার পড় জরিনা দরজা বন্ধ করে পুরো ঘরটা আবার ভালো করে পরীক্ষা করে বিছানায় বসে একটা সিগারেট খেল। তারপর লাইল নিভিয়ে আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। মেকু আবার চোখ খুলে তাকাল, ভয় দেখানোর ব্যাপারটি সে যতটুকু আশা করছিল তার থেকে অনেক ভালোভাবে কাজ করেছে। ঘুমানোর আগে আরো একবার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।
    মেকু বেরশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে। যখন মনে হল জরিনা প্রায় ঘুমিয়ে যাচ্ছে তখন সে আবার সুর করে ডাকল, “জরিনা-আআআআআআ—-”
    মেকুর ডাক শুনে জরিনা এক লাফ দিয়ে বিছানা থেকে ওঠে বসে। এবারে সে আগেরবার থেকেক বেশি ভয় পেয়েছে। মেকু আবার সুর করে গাইল,
    “জরিনা…আ্‌…আ…আ…আ…আ…আ………”
    তোরে ছাড়া নড়ি না…আ…আ…আ…আ…আ…আ…………”

    মেকুর কথা শেষ হবার আগে জরিনা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বিছানা থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ে তারপর হামাগুড়ি দিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়, কোনোভাবে দরজা খুলে ঘর থেকে বের হয়ে পাশের ঘরের দরজায় দমাদম লাথি মারতে থাকে। হাসির চোটে মেকুর প্রায় পেট ফেটে যাবার অবস্থা হল, সে পেট চেপে একা একাই খিক খিক করে হাসতে লাগল।
    কিছুক্ষণের মাঝেই মতি বদি এবং তাদের পিছু পিছু জরিনা এসে ঢুকল। ঘরে এসে আলো জ্বালিয়ে আবার ঘরের চারিদিক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হল, কোথাও কিছু নেই। জরিনা ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ফেলেল বলল, “আমি এই ঘরে থাকব না। এই ঘরের দোষ আছে।”
    মতি বলল, “এই ঘরে থাকবে না কারণ এইখানে ভূত আছে। ওই ঘরে থাকবে না কারণ সেখানে মাকড়শা আছে। তুমি তা হলে থাকবে কোথায়?”
    “আমি মাকড়শার সাথেই থাকব। কিন্তু ভূতের সাথে থাকব না।”
    “ঠিক আছে তুমি তা হলে বাচ্চাটাকে নিয়ে ওই ঘরে যাও। আমি আর বদি এই ঘরে থাকি।”
    জরিনা মাথা নাড়ল, “না না। আমি একলা থাকতে পারব না। আমার সাথে বড় একজনের থাকতে হবে। এই দেখ ভয়ে এখনো আমার হাত-পা কাঁপছে।”
    বদি এবং মতি দুজনেই দেখল জরিনার হাত তির তির করে কাঁপছে, মুখ ফ্যাকাশে, উসকোখুসকো চুল এবং কিছুক্ষণের মাঝেই চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। মতি চিন্তিত মুখে বলল, “ঠিক আছে বদি তুমি জরিনার সাথে ওই ঘরে থাক। আমি বাচ্চাটাকে নিয়ে এই ঘরে থাকি।”
    মেকু চোখের কোনা দিয়ে তাকিয়ে দেখল জরিনা আর বদি পাশের ঘরে গিয়েছে। মতি তার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করল। হাতের রিভলবারটা টেবিলের ওপর রেখে ঘরের আনাচে কানাচে পরীক্ষা করে লাইট নিবিয়ে নিজের বিছানায় গিয়ে ঢুকে একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলল। পুরো ব্যাপারটা যেভাবে যাওয়ার কথা সেটা মোটেও সেভাবে যাচ্ছে না। পদে পদে বাধা।
    মতির চোখে যখন প্রায় ঘুম নেমে এসেছে হঠাৎ করে সে একটা বিচিত্র শব্দ শুনল, একটা দীর্ঘশ্বাসের মতো শব্দ। তারপর মেয়েলি গলায় কে যেন স্পষ্ট গলায় ডাকল, “মতি, এই মতি—”
    মতি লাফিয়ে উঠে বসে। ভয় পাওয়া গলায় বলল, “কে?”
    মেকু চোখের কোনা দিয়ে মতিকে লক্ষ করল, তার কাছে একটা রিভলবার আছে আবার গুলি না করে দেয়। খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে সুর করে বলল,
    “মতি রে মতি
    তোর নাই গতি
    এক কামড়ে ছিঁড়ে নিব
    তোর কানের লতি—”

    মেকুর গানের গলা ভালো না, সুরও খুব আছে বলে মনে হয় না, গানের কথাও খুব উচু দরের না কিন্তু সব মিলিয়ে তার ফল হল ভয়ানক। মতি চিৎকার করে কলমা পড়তে পড়তে দরজার দিকে ছুটে গেল, দরজাটা বন্ধ সে কথাটা তার মনে নেই সেখানে প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়ে সে উলটো দিকে আছাড় খেয়ে পড়ল। কাছাকাছি একটা পলকা চেয়ার ছিল সেটা ভেঙে মতি একেবারে মেঝেতে কাটা কলাগাছের মতো পড়ে গেল। মেকু সুযোগ ছাড়ল না, আবার নতুন উৎসাহে গেয়ে উঠল,
    “মতি মতি মতি
    তুই যদি তেলাপোকা হতি
    কী হতো রে ক্ষতি?”

    মতি শুয়ে থাকা অবস্থা থেকে তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে আবার দরজার দিকে ছুটে গেল। প্রচণ্ড জোরে দরজায় আঘাত করে এবারে দরজার ছিটকিনি ভেঙে বের হয়ে গেল। “আঁ আঁ আঁ” করে চিৎকার করে সে পাশের ঘরের দরজার সামনে আছাড় খেয়ে পড়ল। সেখানে হাঁটু ভেঙে পড়ে থাকা অবস্থায় অপ্রকৃতস্থ মানুষের মতো কলমা পড়তে লাগল।
    দরজা খুলে বদি এবং জরিনা বের হয়ে আসে, মতির বিকট চিৎকার এবং ছিটকিনি ভেঙে বের হয়ে আসার শব্দে হোটেলের আশেপাশের লোক এবং নিচে থেকে হোটেলের কর্মচারীরাও উঠে এল। জরিনা চাপা গলায় বলল, “মতি! কী শুরু করেছ? মানুষের ভিড় জমে যাচ্ছে দেখেছ?”
    মতি তখনো থর থর করে কাঁপছে, কথা বলতে পারছে না। হাতের রিভলবারটা সেই অবস্থায় লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করল। বদি বলল, “মতি, আল্লাহ্‌র কালাম পড়ছ, ওজু আছে তো?”
    মতি সাথে সাথে চুপ হয়ে গেল, যা ব্যাপার ঘটেছে তাতে ওজু থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না। হোটেলের একজন কর্মচারী এগিয়ে এসে বলল, “কী ব্যাপার? মাতলামী করছে কেন?”
    বদি বলল, “মাতলামী না। ভয় পেয়েছে।”
    “ভয় পেয়েছে? কী দেখে ভয় পেয়েছে?”
    জোড়ীণা বোল্ল, “ভূত।”
    হোটেলের কর্মচারী অবাক হয়ে বলল, “ভূত?”
    “হ্যাঁ। এই ঘরে কে যেন নাকী সুরে কথা বলে। ডাকাডাকি করে।”
    মানুষজন হঠাৎ করে পিচিয়ে গেল। এক-দুইজন অনুচ্চ স্বরে আয়াতুল কুরসি পড়ে নিজেদের বুকে ফুঁ দিয়ে দিল। হোটেলের কর্মচারী আমতা আমতা করে বলল, “ভূত কীভাবে আসবে?”
    জরিনা কঠিন গলায় বলল, “আমার কথা বিশ্বাস না করলে এই ঘরে কিছুক্ষণ থাকেন। পেটের ভাত চাউল হয়ে যাবে।”
    “আপনার বাচ্চাটা কোথায়?”
    তখন সবার মেকুর কথা মনে পড়ল। জরিনা বলল, “ওই ঘরে।”
    “ভূতের সাথে রেখে এসেছেন? বাচ্চা ভয় পাবে না।”
    মেকু তখন তার শরীর বাঁকা করে ভয়ংকর চিৎকারটা দেওয়া শুরু করল। তার মনে হল এরকম অবস্থায় এ ধরনের একটা ভয়ংকর চিৎকার দেওয়া হলে পরিবেশটা আরো জমজমাট হবে। বাচ্চা বিপদে পড়লে মায়েরা নিজের জীবন বিপন্ন করে ছুটে যায় কিন্তু এখানে সেরকম কিছু ঘটল না। জরিনা বদিকে খোঁচা দিয়ে বলল, “বদি যাও, দেখ কী হয়েছে।”
    “আমি কেন যাব? তুমি যাও।”
    হোটেলের কর্মচারী অবাক হয়ে বলল, “আপনারা কী রকম বাবা মা? নিজের বাচ্চার জন্যে কোনো মায়া দয়া নাই?”
    বদি এবং জরিনা তখন একসাথে আমতা আমতা করতে শুরু করল, বলল, “না-মানে-ইয়ে-আসলে – কিন্তু—ইয়ে—মানে—”
    হোটেলের কর্মচারী মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, “আপনাদের সবকিছুই কেমন জানি সন্দেহজনক। কোথা থেকে একটা বাচ্চা এনেছেন। কে বাচ্চার মা কে বাবা তাও ঠিক করে বলতে পারেন না। একবার সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়েন। একবার ঘরে আগুন দিয়ে দেন। একবার বলেন ভূতের ভয় পেয়েছেন। আপনাদের বাচ্চা একা একা ঘরে চিৎকার করে কাঁদছে কেউ একবার দেখতেও যাচ্ছেন না। কী হচ্ছে এখানে?”
    উপস্থিত অন্য সবাই মাথা নাড়ল এবং হঠাৎ করে মতি বদি জরিনা বুঝতে পারল ব্যাপারটা ঠিক হচ্ছে না। জরিনা বদিকে নিয়ে গেল মেকুকে দেখতে আর মতি নিজেকে সামলে নিয়ে যেটুকু অঘটন ঘটেছে সেটা সামলানোর চেষ্টা করতে লাগল। হোটেলের কর্মচারী অবিশ্যি সোজা মানুষ নয়, আরেকটু হলে সে পুলিশকেই খবর দিয়ে দিতে যাচ্ছিল, একেবারে কড়কড়ে দুইটা পাঁচ শ টাকার নোট দিয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে শান্ত করতে হল।

    গভীর রাতে মেকুকে একটা বিছানায় শুইয়ে অন্যেরা কেউ মেঝেতে, কেউ চেয়ারে এবং কেউ বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে। ঘরে আলো জ্বলছে, আলো নিভিয়ে অন্ধকার করার কারো সাহস নেই। আজ রাতে কারো চোখে আর ঘুম আসবে বলে মনে হয় না। মেকু অবিশ্যি মজা দেখার জন্যে আর জেগে থাকতে পারল না, ঘুমে তার দুই চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল, সে ঘুমিয়ে পড়ল, আগামী কাল মেকুর অনেক কাজ – ভালো করে ঘুমিয়ে না নিলে কেমন করে চলবে? ঘুমের মাঝেও সে তার দুই হাত শক্ত করে মুঠি করে রাখল, সেখানে পাঁচটা ঘুমের ট্যাবলেট ধরে রেখেছে, ভোর বেলা কায়দা করে সেগুলো ব্যবহার করতে হবে।
    জরিনা ঢুলু ঢুলু চোখে কিছুক্ষণ বসে থেকে হঠাৎ মতির দিকে তাকিয়ে খিল খিল করে হেসে ফেলল। মতি একটু গরম হয়ে বলল, “কী হল, হাস কেন?”
    “তোমাকে দেখে।”
    “আমাকে দেখে হাসির কী হয়েছে?”
    “তুমি যখন দরজা ভেঙে বের হয়ে এসেছ তখন তোমার আরেকটা জিনিস ভেঙ্গেছে।”
    “কী?”
    “নাক। নাক্তা দেখেছ তোমার? এখন এক পাশে কাৎ হয়ে আছে।”
    মতি নিজের নাকটা স্পর্শ করে একটা নিশ্বাস ফেলল, সত্যি সত্যি সে নিজের নাকটা নিজে ভেঙে ফেলেছে।
    “শুধু যে কাৎ হয়ে আছে তাই না, লাল হয়ে টমেটোর মতো ফুলে উঠেছে। হি হি হি!” জরিনা আবার হাসতে থাকে।
    মতি রেগে মেগে বলল, “এখন এইটা নিয়ে রাত দুপুরে হাসাহাসি করতে হবে?”
    “কী করব? ঘুমাতে যখন পারবই না এই গুলি নিয়েই গল্প-গুজব করি। হাসি তামাশা করি।”
    “ঠিক আছে। তা হলে আমিও তোমাকে নিয়ে হাসি তামাশা করি। তোমাকে দেখতে কী রকম লাগছে জান? তোমাকে দেখাচ্ছে ঠিক একটা পেত্নীর মতো। পেত্নী চিন তো? ওই যে গাব গাছে শুকনো ঠ্যাং ঝুলিয়ে বসে থাকে- ”
    “কী বললে তুমি? আমি পেত্নী?” জরিনা সোজা হয়ে বসে একটা গ্লাস তুলে বলল, “এই গ্লাসটা ছুঁড়ে তোমার চোখ আমি কানা করে দেব।”
    বদি বিরক্ত হয়ে বলল, “এই মাঝরাতে তোমরা এটা কী শুরু করলে বাচ্চা পোলাপানের মতো?”
    জরিনা ক্রুদ্ধ গলায় বদিকে ধমক দিয়ে বলল, “তুমি চুপ কর হোঁদল কুতকুত কোথাকার –”
    “কী বললে? কী বললে আমাকে?”
    “আমি বলেছি হোঁদল কুতকুত।”
    “আমি যদি হোঁদল কুতকুত হই তা হলে তুমি হচ্ছ মাকড়শার ঠ্যাং –”
    “কী বললে?” জরিনা আগুন হয়ে বলল, “কী বললে আমাকে? আমি মাকড়শার ঠ্যাং —”
    মতি হাত তুলে বলল, “চুপ, চুপ সবাই চুপ। হোটেলের কর্মচারী এসে আমাদের বের করে দিলে একেবারে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এই রাতে আমাদের কিন্তু আর থাকার জায়গা নেই। মহা কেলেংকারি হয়ে যাবে।”
    কথাটা একেবারে পুরোপুরি সত্যি কাজেই বদি এবং জরিনা চুপ করে গিয়ে ট্রেনের ইঞ্জিনের মতো ফোঁস ফোঁস করতে লাগল। মতি বলল, “এখন সবাই একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর। কালকে আমাদের জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। সারারাত বসে বসে ঝগড়াঝাঁটি করলে সকালে কিছুই করতে পারব না।”
    জরিনা একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলেল মেকুর দিকে তাকাল, কী আরামে বাচ্চাটা ঘুমাচ্ছে দেখে হিংসায় তার চোখ ছোট ছোট হয়ে যায়।
    আগামী কালের জন্যে মেকু কী পরিকল্পনা করে রেখেছে জানলে জরিনার অবশ্যি তখন তখনই হার্টফেল হয়ে যেত।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }