Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    কেইগো হিগাশিনো এক পাতা গল্প280 Mins Read0

    অধ্যায় ৪ – অনুসন্ধান : কিয়োইচিরো কাগা’র দিনলিপি

    অধ্যায় ৪ – অনুসন্ধান : কিয়োইচিরো কাগা’র দিনলিপি

    ওসামু নোনোগুচিকে গ্রেফতার করেছি চার দিন হতে চলল। নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিলেও খুনের মোটিভ নিয়ে কিছু বলেনি এখনও। মুখে কুলুপ এঁটে আছে। ছোটবেলার বন্ধু, যার কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য পেত, তাকে কেন খুন করলো সে? চিফ পরিস্কার বলে দিয়েছেন, মোটিভ জানা ব্যাতীত আসামীকে আদালতে হাজিরই করা যাবে না। নিজের বক্তব্য বদলে ফেলতে পারে নোনোগুচি, তার আইনজীবিও হাজারটা ফোকর খুঁজে বের করে সন্দেহের উদ্রেক ঘটাতে পারে সবার মনে। আদালতে তখন অনর্থক অপদস্থ হতে হবে আমাদের।

    তবুও বারবার প্রশ্ন করা সত্ত্বেও তার একটাই উত্তর—”হুট করে মাথায় রক্ত চড়ে যায়। ক্ষণিকের উত্তেজনায় কাজটা করে ফেলি, ব্যস।”

    মাটিভ হিসেবে এটুকু কোনমতেই গ্রাহ্য হবে না কোথাও। তবে, আসল মোটিভ কি হতে পারে, সেটা খানিকটা আন্দাজ করতে পারছি। সেক্ষেত্রে প্রথম সূত্র ছিল ‘তুষার দ্বার’ বইটা।

    এখানে আমার বলে রাখা উচিত মি. নোনোগুচির ওয়ার্ড প্রসেসরের হার্ড ড্রাইভে আমরা পান্ডুলিপিটা খুঁজে পাই, যেমনটা আমি ধারণা করেছিলাম পাব। তাছাড়া সেদিন হিদাকাদের বাসায় সে যে ডিস্কে করে নতুন অধ্যায়টা নিয়ে গিয়েছিল, সেটাও পাওয়া যায় ডেস্কের ড্রয়ারে। কুনিহিকো হিদাকার কম্পিউটারের লেখার সাথে পুরোপুরি মিলে গেছে ওটুকু।

    তবুও আমার বিশ্বাস হয় না, এই খুনটা পূর্বপরিকল্পিত। অফিসের বাকি সবাই আমার সাথে এই ব্যাপারে মোটামুটি একমত। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। মি. নোনোগুচি পকেটে করে ‘তুষার দ্বার’ উপন্যাসের পরবর্তি অধ্যায়টা নিয়ে গেছিল কেন। হিদাকার উপন্যাসের পান্ডুলিপি তার কাছে গেলই বা কী করে?

    অবশ্য তাকে গ্রেফতার করার আগেই এই প্রশ্নটার একটা সম্ভাব্য উত্তর চিন্তা করে রেখেছিলাম। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, এই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেলে খুনের মোটিভটাও পরিস্কার হয়ে যাবে।

    মি. নোনোগুচি সব স্বীকার করে নিলেই ল্যাঠা চুকে যেত কিন্তু সে যেন পণ করেছে আমাদের কোন প্রকার সহযোগিতা না করার। তুষার দ্বারের পান্ডুলিপিটার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে বলে যে, “খেয়ালের বশে লিখে ফেলেছিলাম। ইচ্ছে ছিল ওকে চমকে দেয়ার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি লেখা শেষ করতে না পারে তাহলে আমারটাই ছাপিয়ে দিতে পারে চাইলে কিন্তু ও ব্যাপারটা কৌতুক হিসেবেই নেয়, যেমনটা আমি চেয়েছিলাম আমার বোধহয় আলাদা করে বলে দেয়ার দরকার নেই যে নোনোগুচির কথা কতটা অযৌক্তিক শোনাচ্ছে। কিন্তু চেপে ধরলেই বলছিল যে বিশ্বাস- অবিশ্বাস আমাদের ব্যাপার।“

    আমার লোকজন আবারো তল্লাশি চালাত মি. নোনোগুচির অ্যাপার্টমেন্টে। প্রথমবার কেবল তার ডেস্ক আর ওয়ার্ড প্রসেসিং ইউনিটের হার্ড ড্রাইভটা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল।

    দ্বিতীয়বারের তল্লাশিতে আমরা আঠারোটার মতন আলামত সংগ্ৰহ করি। এর মধ্যে আটটা স্পাইরাল বাইন্ডিং করা পুরু নোটবুক, আটটা ডাবল ডেনসিটি ফ্লপি ডিস্ক আর দুটো ফাইল ফোল্ডার, যার ভেতরে হাতে লেখা পান্ডুলিপি রাখা ছিল। আমরা নিশ্চিত হই যে স্পাইরাল বাইন্ডিং করা নোটবুকগুলোর হাতের লেখা এবং পান্ডুলিপিগুলোর হাতের লেখা মি. নোনোগুচির। এগুলো সবই বিভিন্ন ঘরানার ছোট গল্প এবং উপন্যাস।

    লেখাগুলো দেখে চমকাতে বাধ্য হবে যে কেউ। একটা ফ্লপিতে তো ‘তুষার দ্বার’ উপন্যাসটার গোটা পান্ডুলিপি খুঁজে পাই আমরা। অবশ্য এটা যে পাওয়া যাবে তা আমার থিওরি অনুযায়ী অনুমিতই ছিল। পান্ডুলিপিগুলো মাসিক সোমেইয়ের সম্পাদক মি. ইয়ামাবেকে দেখাই আমি। তিনি বলেন :

    “এটা যে ‘তুষার দ্বার’ উপন্যাসটার পান্ডুলিপি সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে গল্পটা হুবহু একই হলেও মি. হিদাকার কাছ থেকে আমি যে পান্ডুলিপি পেতাম সেটায় কিছুটা এদিক সেদিক আছে। কিছু জিনিস যোগ করা হয়েছে, আবার কিছু বাদ পড়েছে। তাছাড়া বাক্য আর শব্দের ব্যবহারও ভিন্ন। “

    অর্থাৎ, নোনোগুচি তার অ্যালিবাই হিসেবে ব্যবহার করার জন্যে যে পান্ডুলিপিটা নিয়ে গিয়েছিল, সেটার সাথে প্রসেসরের হার্ড ড্রাইভে পাওয়া পান্ডুলিপিটার লেখার ধরণ মিলে গেছে ।

    তদন্ত দলটা কুনিহিকো হিদাকার প্রকাশিত সমস্ত কাজ সংগ্রহ করে এবং পড়ে ফেলে। (দলের মধ্যে বেশ কয়েকজন অবশ্য বলে যে দীর্ঘ সময় ধরে কিছু না পড়ায় বই পড়ার অভ্যাস চলে গেছিল তাদের। কিন্তু আরো অনুযোগ কানে তুলিনি আমরা)।

    আমরা আবিষ্কার করি, ওসামু নোনোগুচির অ্যাপার্টমেন্টে প্রাপ্ত হাতে লেখা পাঁচটা পূর্ণাঙ্গ উপন্যাসের সাথে কুনিহিকো হিদাকার প্রকাশিত উপন্যাসের মিল আছে। অধ্যায়ের শিরোনাম, চরিত্রের নাম, ঘটনার এলাকা—এসবে পার্থক্য থাকলেও মূল গল্পটা একই।

    ফ্লপি ডিস্কে আরো তিনটা উপন্যাস আর বিশটার মত ছোটগল্পের সন্ধান মেলে। এর মধ্যে সবগুলো উপন্যস আর সতেরোটা ছোটগল্পের সাথে মি. হিদাকার প্রকাশিত কাজের মিল রয়েছে। যে তিনটা ছোট গল্পের সাথে মিল পাওয়া যায়নি, সেই তিনটা ছোটগল্প বাচ্চাদের গল্প হিসেবে মি. নোনোগুচির নামে প্রকাশিত হয়েছে।

    দুটো হাতে লেখা ছোটগল্পের সাথে মি. হিদাকার কোন কাজের মিল পাওয়া যায়নি। হলদে হয়ে আসা কাগজ দেখে অবশ্য বোঝাই যাচ্ছিল এগুলো অনেক আগের লেখা। আরো বিস্তারিত তদন্ত করলে হয়তো কিছু জানা যেতে পারে।

    কারো বাসা থেকে ভিন্ন একজন লেখকের প্রকাশিত এতগুলো কাজের পান্ডুলিপি পাওয়ার বিষয়টা কিন্তু আসলেই বড্ড অস্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তার উপরে, হাতে লেখা পান্ডুলিপি আর প্রকাশিত কাজগুলোর মধ্যে ছোটখাটো কিছু পার্থক্যও আছে। স্পাইরাল বাইন্ডিং করা নোটবুকে লেখা উপন্যাসগুলোতে মার্জিনে বিভিন্ন মন্তব্য আর কাটাছেঁড়া চোখে পড়েছে। দেখে মনে হচ্ছিল কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি।

    আমার থিওরি মতে, ওসামু নোনোগুচি কুনিহিকো হিদাকার গোস্ট রাইটার হিসেবে কাজ করতো। কিন্তু তাদের এই বোঝাপড়ার মধ্যে কোন একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়, যে কারণে খুন হন মি. হিদাকা।

    জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে আমি আমার থিওরিটা মি. নোনোগুচিকে খুলে বলি 1 কিন্তু মাথা ঝাঁকিয়ে আমাকে স্রেফ মানা করে দেয় সে। “আপনার ধারণা ভুল।”

    স্পাইরাল নোটবুক আর ফ্লপি ডিস্কের গল্পগুলোর ব্যাপারে জানতে চাইলে আবারো কুলুপ আটে মুখে। জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে আমার সাথে যে সহকারী অফিসার ছিল, সে-ও চেষ্টা করে তার মুখ খোলানোর, কিন্তু লাভ হয়নি।

    দিনের পর দিন, ঘন্টার পর ঘন্টা একইভাবে প্রশ্ন করে গিয়েও আর বেশি কিছু জানতে পারিনি আমরা। কিন্তু আজকে জিজ্ঞাসাবাদের মাঝামাঝি অপ্রত্যাশিত একটা ঘটনা ঘটে।

    হঠাৎই পেটে হাত রেখে মি. নোনোগুচি জানায় যে ভীষণ ব্যথা করছে তার। ব্যথার আকস্মিকতা এবং তীব্রতা দেখে আমার সন্দেহ হয়, কোন একভাবে হয়তো বিষ জোগাড় করেছে সে।

    সাথে সাথে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করা হয় তাকে। কিছুক্ষণ পরে চিফ নিজে ফোন করে আমাকে বিস্ময়কর তথ্যটা জানায়। ওসামু নোনোগুচি ক্যান্সারে ভুগছে।

    ***

    জিজ্ঞাসাবাস কক্ষে পড়ে যাওয়ার পরদিন তার সাথে হাসপাতালে দেখা করতে যাই আমি। প্রথমে অবশ্য কর্তব্যরত ডাক্তারের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলি।

    তার বক্তব্য অনুযায়ী, নোনোগুচির আভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোতে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে। অবস্থা বেশ নাজুক। তাকে বাঁচাতে চাইলে যত দ্রুত সম্ভব সার্জারি করতে হবে।

    ক্যান্সারের বিষয়টা নতুন নাকি আগে থেকেই এই অসুখে ভুগছে নোনোগুচি, এই কথা জানতে চাইলে ডাক্তার বলেন, খুব সম্ভবত ক্যান্সার ফিরে এসেছে নোনোগুচির শরীরে।

    কথাটা শুনে অবাক হইনি কারণ তদন্ত করতে গিয়ে আমরা জানতে পারি, বছর দুয়েক আগে ক্যান্সারের কারণে পাকস্থলির কিছুটা অংশ কেটে বাদ দিতে হয়েছে নোনোগুচির। যার কারণে বেশ লম্বা একটা সময় স্কুল থেকে ছুটিতে কাটাতে হয় তাকে।

    এরপর আর হাসপাতালমুখী হয়নি নোনোগুচি। যদিও ডাক্তারের ধারণা বেশ কয়েকদিন ধরেই সে বুঝতে পারছিল, ক্যান্সার ফিরে এসেছে তার শরীরে।

    এরপর ডাক্তারের কাছে আমি জানতে চাই, সার্জারি করলে নোনোগুচির জীবন বাঁচবে কি না। প্রশ্নটা শুনে কিছুক্ষণ ভাবেন ডাক্তার। এরপর বলেন “ফিফটি-ফিফটি চান্স।”

    আর যা-ই হোক, এই উত্তরটা শুনতে চাইনি আমি।

    ডাক্তারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওসামু নোনোগুচির সাথে দেখা করতে যাই আমি।

    একটা প্রাইভেট রুমে রাখা হয়েছে তাকে। “জেলের ভাত খাওয়ানোর বদলে আমাকে এরকম আরাম আয়েশে রেখেছেন আপনারা, ভাবতেই খারাপ লাগছে,” দূর্বল হেসে বিছানায় শুয়ে থেকে বলে নোনোগুচি। আমি বুঝতে পারি যে তার এরকম বুড়িয়ে যাওয়ার কারণ শুধু বয়স বাড়াই নয়।

    “কেমন লাগছে এখন আপনার?”

    “ভালো না। কিন্তু আমার যা হয়েছে, সেই তুলনায় ভালোই আছি বলতে হবে।”

    চুপচাপ তার বিছানার পাশে বসে রইলাম কিছুক্ষণ। বেশ খানিকক্ষণ পর আমার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলো, “বিচার শুরু হবে কবে? খুব বেশি সময় লাগলে আমাকে না-ও পেতে পারেন কিন্তু।”

    নোনোগুচি কৌতুক করছে কি না সেটা বুঝতে পারছি না। কিন্তু নিজের আসন্ন মৃত্যুর বিষয়টা যে সে মেনে নিয়েছে তা পরিস্কার।

    “বিচার শুরু হতে সময় লাগবে। আমাদের হাতে এখনও পর্যাপ্ত সূত্রাদি নেই।”

    “নেই মানে? আমি তো দোষ স্বীকার করে নিয়েছি। প্রমাণও খুঁজে পেয়েছেন আপনারা। বিচারে আমাকে দোষী বলেই রায় দেয়া হবে। এটাই কি যথেষ্ট না? আমি আমার বক্তব্য বদলাবো না, কথা দিচ্ছি।”

    “আসলে, আমি চাই আপনি বক্তব্যটা বদলান। এই মুহূর্তে খুনের মোটিভটা স্পষ্ট না।“

    “আবারো সেই কথা?”

    “আপনি যদি একবার আমাকে বলে দেন তাহলেই আর জিজ্ঞেস করবো না।”

    “যেমনটা আপনাকে আগেও বলেছি, মোটিভ বলতে আসলে ওরকম কিছু নেই। মাথা গরম করে কাজটা করে ফেলেছি। এর পেছনে কোন কারণ বা যুক্তি খোঁজাটা অনর্থক সময় নষ্ট বৈ কিছু নয়।”

    “কোন কারণ ছাড়া মাথা গরম হয় না কারো।”

    “কারণ যেটাই হোক না কেন, সেটা জরুরি নয়। সত্যি বলতে আমি নিজেও মনে করতে পারছি না, সেদিন কেন ওরকম রেগে গিয়েছিলাম। এজন্যেই বোধহয় এটাকে ‘হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলা’ বলে। আমি চাইলেও আপনাকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলতে পারবো না।”

    “আপনার কি আসলেই ধারণা যে আমি এই জবাবটা মেনে নেব?”

    “এছাড়া আপনার কাছে আর কোন উপায় আছে বলে মনে হয় না। আবারো চোখাচোখি হলো আমাদের। তার দৃষ্টিতে আত্মবিশ্বাসের কোন কমতি নেই। “

    “আপনার অ্যাপার্টমেন্টে খুঁজে পাওয়া পান্ডুলিপিগুলোর ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।”

    চেহারায় হতাশা ভর করলো তার। “ওসবের সাথে আপনার কেসের কোন সম্পর্ক নেই। এভাবে সবকিছু একসাথে জোড়া দেওয়ার কোন দরকার দেখছি না আসলেই।”

    “তাহলে আমাকে সত্যটা খুলে বলুন। সবকিছু ঠিকমতো সাজাতে সাহায্য করুন। ওগুলো আসলে কি? কেন লেখা হয়েছিল?”

    “কিছু না। শুধু খাতা আর ডিস্ক।”

    “যে খাতা আর ডিস্কে অন্য একজন লেখকের লেখা আছে। ঠিকমত বললে, যে নোটবুক আর ডিস্কের লেখার সাথে কুনিহিকো হিদাকার প্রকাশিত উপন্যাসগুলো প্রায় হুবহু মিলে যায়।”

    নাক দিয়ে শব্দ করল নোনোগুচি। “আপনার কি ধারনা? আমি একজন গোস্ট রাইটার? তাও আবার ওর? একটু বেশি ভেবে ফেলছেন না? “

    “এছাড়া তো যৌক্তিক আর কিছু মাথায় আসছে না।”

    “আপনাকে বরং যৌক্তিক জবাবটাই দেই। ওগুলো আসলে আমার হোমওয়ার্ক। যারা লেখক হতে চায় তাদের পরিশ্রম করতে হয, জানেন তো? এটাও অনুশীলনের বিষয়। হিদাকার লেখাগুলো নিজের মতো করে লিখে অনুশীলন করেছি আমি। চেষ্টা করেছি লেখার অলিগলি এবং বাঁকগুলো শিখতে। কিভাবে অনুভূতিগুলোকে ছাপার অক্ষরে নিয়ে আসতে হয় তা শেখার চেষ্টা করেছি। অনেক উঠতি লেখকই এমনটা করে থাকেন।”

    আমার আগেই ধারণা হয়েছিল সে এই ধরণের কিছু বলবে। কুনিহিকো হিদাকার সম্পাদকের সাথে যখন কথা বলেছিলাম, তিনিও এই ধারণাই ব্যক্ত করেছিলেন। তবে সম্পাদক সাহেবের মতে, এমন কিছু ঘটলেও তিনটা প্রশ্নের জবাব অজানা রয়ে যায়। প্রথমটা হচ্ছে, আমরা যেসব পান্ডুলিপি খুঁজে পেয়েছি, সেগুলোর লেখা কুনিহিকো হিদাকার লেখার ধাঁচের চেয়ে কিছুটা অন্যরকম। দ্বিতীয়টা হচ্ছে, এমনটা ঘটতেই পারে কেউ হয়তো পুরো উপন্যাস নকল করেছে অনুসরণের জন্য। কিন্তু সেটা যে কেবলমাত্র একজন মাত্র লেখকের এই বিষয়টা একটু সন্দেহজনক। তৃতীয় বিষয়, কুনিহিকো হিদাকা একজন বেস্টসেলিং লেখক, কিন্তু তাই বলে তার লেখা এমন নয় যে সেটা অন্ধ অনুকরণ করতে হবে।

    ওসামু নোনোগুচিকে ঠিক এই কথাগুলোই বললাম।

    তার অভিব্যক্তিতে কোন পরিবর্তন এলো না। বিন্দুমাত্র না ঘাবড়ে আমাকে বলল, “এর পেছনেও যুক্তিযুক্ত কারণ আছে। শুরুতে আমি হিদাকার লেখা হুবহু নকল করতাম। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই এতে আমার বিরক্তি ধরে যায়। একসময় কিছু কিছু জায়গায় বাচণভঙ্গি বদলে দেই। কিছু ঘটনাও আগে পরে করি। বুঝতে পারছেন আমার কথা? হিদাকার লেখাগুলো দিয়ে শুরু করি আমি, এটা ঠিক। কিন্তু সেই সাথে চেষ্টা করতে থাকি নিজের লেখার উন্নতি করার। গোটা অনুশীলনের মূল কারণ এটাই। এরকম দেখে দেখে লেখা উপন্যাসের সংখ্যা এত বেশি কারণ অনেকদিন ধরেই কাজটা করছি আমি। বিয়ে-শাদী করিনি কারো সাথে কোন সম্পর্কও নেই, তাই বাসায় ফিরে অফুরন্ত সময়। আর আপনার শেষ কথাটার প্রেক্ষিতে বলবো-হ্যাঁ, হিদাকার লেখা হয়তো একদম আদর্শ নয়, কিন্তু ওর লেখায় সহজাত এবং ঠাস বুনোট একটা ভাব আছে। যে কেউ পড়ে সহজেই বুঝতে পারবে। ওর লেখা যে এত বেশি সংখ্যক মানুষ পড়ে, সেটাই কিন্তু এর প্ৰমাণ।”

    ওসামু নোনোগুচির ব্যাখা একদম ফেলনা নয়। কিন্তু এখান থেকে আরেকটা প্রশ্নের উদ্রেক ঘটে। যদি এসব সত্যি হয়েই থাকে, তাহলে আগে কেন কিছু বলল না সে? বরং, অ্যাপার্টমেন্টে লেখাগুলো খুঁজে পাওয়ার পর থেকে জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে জ্ঞান হারানো অবধি মুখে কুলুপ এঁটে ছিল। এমনটাও হতে পারে যে হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে নতুন এই ফন্দি এঁটেছে। এটা যদি সত্যি হয়েও থাকে, তাহলে প্রমাণ করা হবে অত্যন্ত কঠিন।

    এই পর্যায়ে কৌশল বদলানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। আরেকটা সূত্র হাতে এসেছে আমাদের, এবারে সেটা ব্যবহারের সময়। ওসামু’র ডেস্ক ড্রয়ারে আমরা বেশ কয়েকটা মেমো পেয়েছি। সেখানে একটা গল্পের খসড়া করা হয়েছে। চরিত্রগুলোর নাম থেকে এটা নিশ্চিত যে খসড়াটা ‘তুষার দ্বার’ উপন্যাসের অপ্রকাশিত অংশের। এখনও লেখা হয়নি ওটুকু।

    এটার ব্যাখায় সে বলেছে-”এটাও অনুশীলনের অংশ মাত্র। পাঠকেরাও কিন্তু অনুমানের চেষ্টা করে যে গল্প কোনদিকে এগোচ্ছে। আমি সেটাই লিখে বোঝার চেষ্টা করছিলাম আরকি।”

    “কিন্তু আপনি তো শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি লেখায় মনোনিবেশ করেছেন, তাই না? তাহলে এখনো অন্য একজন লেখকের লেখা অনুকরণ করছেন কেন? চাইলেই তো আপনি নিজের গল্প লিখতে পারেন, ভুল বললাম?”

    “বোকার মত কথা বলবেন না। এখনো শেখার অনেক কিছু বাকি আছে আমার। প্রতিষ্ঠিত লেখক হতে হলে পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ। হাতে যেহেতু সেরকম কোন কাজ ছিল না, প্রচুর সময় পেয়েছি।”

    তার এই ব্যাখ্যাও পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতে পারেনি আমাকে।

    আমার চেহারা দেখে নিশ্চয়ই সেটা বুঝতে পারে ওসামু। “আমি জানি আপনি আমাকে হিদাকার গোস্টরাইটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। সেক্ষেত্রে আমি বলবো আমার মেধাকে বেশি মূল্য দিয়ে ফেলছেন। আমার ওরকম প্রতিভা নেই। তাছাড়া আপনার থিওরি সত্য হলে আমি নিজেই ঢোল পেটাতাম ‘ওগুলো আমার লেখা উপন্যাস। আমিই আসল লেখক।’ আমি উপন্যাসগুলো লিখিনি, বিশ্বাস করুন। লিখলে নিজের নামে প্রকাশ করতাম। ওর নাম কেন ব্যবহার করতে যাব? আপনার মনে কখনো এই প্রশ্নটা আসেনি?”

    “এসেছে। এজন্যই গোটা বিষয়টা এত অদ্ভুত লাগছে।”

    “অদ্ভুতের কিছু নেই। আপনি আসলে শুরুতেই ভুল একটা অনুমান করে নিয়েছেন। আর সেই কারণেই ঠিকভাবে দেখতে পারছেন না কোন কিছু। একটু বেশিই ভেবে ফেলছেন গোটা ব্যাপারটা নিয়ে।”

    “আমার তা মনে হয় না।“

    “মনে হলেই ভালো হতো। এই বিষয়ে আমার আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। আদালতের কাজ শুরু করে দেয়া যায় না? মোটিভ দিয়ে কি আসে যায়? আপনারা নিজের মত একটা বিবৃতি লিখে নিন, আমি সেটার নিচে সই করে দিব। “

    তার কন্ঠস্বরেই স্পষ্ট যে এসব নিয়ে তার আসলেই আর কোন প্রকার মাথা ব্যথা নেই।

    হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আমাদের মধ্যকার কথোপকথন নিয়ে লম্বা একটা সময় চিন্তা করলাম। যেভাবেই ব্যাখা দেয়া হোক না কেন, কিছু কিছু বিষয়ে ধোঁয়াশা একদমই কাটছে না। তাছাড়া আমার থিওরিও পুরোপুরি নির্ভুল নয়। কোথাও একটা গলদ থেকেই যাচ্ছে।

    সে যদি আসলেই কুনিহিকো হিদাকার গোস্ট রাইটার হয়ে থাকে, তাহলে আমাকে কারণটা সম্পর্কে জানতেই হবে। তার কি ধারণা ছিল যে মি. হিদাকার নামে প্রকাশিত হলে বইগুলো বেশি চলবে? কিন্তু এমনটা ভাবার তো কোন কারণ নেই। যে বইটা দিয়ে মি. হিদাকা প্রথমে সবার নজর কাড়েন, খুব সম্ভবত সেটাও ওসামু নোনোগুচির লেখা। সুতরাং, সেই সময় তার অন্য কারো নামে বই প্রকাশ করার কোন দরকারই ছিল না। নিজের প্রথম বই হিসেবে প্রকাশ করলে কি সমস্যা হতো?

    হয়তো তখনও শিক্ষকতার পেশার সাথে সম্পৃক্ত ছিল বলে নিজের নাম আড়ালে রাখে সে? কিন্তু এই যুক্তিটাও কেমন যেন ঠুনকো শোনাচ্ছে। আমি কখনো শুনিনি যে লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ততার কারণে কোন শিক্ষকের চাকরি চলে গেছে। তাহলে আসল কারণট কি? আর তাকে যদি বাধ্য করা হতো দুটো পেশার মধ্যে একটা বেছে নিতে, তাহলে আমি নিশ্চিত লেখকের পেশাই বেছে নিত সে।

    তাছাড়া মি. নোনোগুচি হাসপাতালে যেটা বলল, কুনিহিকো হিদাকার গোস্টরাইটার হলে সেটা অস্বীকার করার তো কোন কারণ নেই। একজন বেস্টসেলিং লেখকের গোস্টরাইটার হিসেবে পরিচয় দিতে পারলে তো তারই লাভ।

    তাহলে আসলেই হয়তো গোস্টরাইটার নয় সে। অ্যাপার্টমেন্টে প্রাপ্ত নোটবুক আর ডিস্কগুলো নিয়েও মিথ্যে কথা বলেনি।

    কিন্তু এমনটা ঘটা অসম্ভব।

    আমি যে ওসামু নোনোগুচিকে চিনি, সে নিজের কার্যকলাপের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী আর দাম্ভিক। এরকম একজন মানুষ কারো লেখা অনুকরণ করবে, তা বিশ্বাস করা কষ্ট। হোক সেটা অনুশীলনের জন্যে।

    স্টেশনে ফিরে মি. নোনোগুচিকে নিয়ে চিফের সাথে আলাপ করলাম। মুখ ব্যাজার করে আমার রিপোর্ট শুনলেন ডিটেক্টিভ সাকোদা।

    আমার কথা শেষ হলে বললেন, “হিদাকাকে হত্যার মোটিভ কেন গোপন করতে চাইবে নোনোগুচি?”

    “তা জানি না। কাউকে সে খুন করেছে, এর চেয়ে গোপন খারাপ কিছু কি হতে পারে?”

    “তোমার কি ধারণা? এর সাথে হিদাকার উপন্যাসগুলোর কোন সম্পর্ক আছে?”

    “হ্যাঁ।”

    “ওসামু নোনোগুচিই উপন্যাসগুলোর প্রকৃত লেখক? যদিও বিষয়টা অস্বীকার করছে সে?”

    প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত সময় এই কেসের পেছনে নষ্ট করতে চায় না ডিপার্টমেন্ট, এটা স্পষ্ট। গণমাধ্যমের লোকজন ইতিমধ্যে গোস্টরাইটার থিওরিটার ব্যাপারে প্রশ্ন করা শুরু করে দিয়েছে। তারা এই বিষয়ে কিভাবে জানলো, তা বুঝতে পারছি না। আমরা তো এই ব্যাপারে কারো সাথে কথা বলিনি, কিন্তু পেপারগুলো আগামীকাল থেকেই এই ব্যাপারে প্রতিবেদন ছাপানো শুরু করবে খুব সম্ভবত। অর্থাৎ, একের পর এক ফোন আসতে শুরু করবে স্টেশনে।

    “তাহলে তার মতে মাথা গরম করে হিদাকাকে খুন করে ফেলেছে সে?” মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন সাকোদা। “ওসামু নোনোগুচি যদি সামনের দরজা দিয়ে বের হয়ে আবার বাগান ঘুরে পেছনের জানালা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে থাকে, তাহলে এটা স্পষ্ট যে হিদাকাকে খুন করার ইচ্ছা আগে থেকেই ছিল তার। খুব সম্ভবত সেদিন প্রথমবার দেখা হওয়ার পরেই হিদাকাকে খুন করার পরিকল্পনা আঁটে সে।”

    “তাহলে, এখন প্রশ্নটা হচ্ছে, কোন বিষয়ে কথা হয়েছিল তাদের?”

    “নোনোগুচির বক্তব্য থেকে এই ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। আমার ধারণা হিদাকা কানাডায় চলে যাওয়ার পরে কিভাবে তাদের মধ্যে কাজ চলবে সেই ব্যাপারে আলাপ করে দু’জনে। হয়তো তখন হিদাকা এমন কিছু বলে বসে যেটা নোনোগুচির পছন্দ হয়নি।”

    “হতে পারে।”

    আমরা ইতিমধ্যে ওসামু নোনোগুচির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু সেখানে কুনিহিকো হিদাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কোন প্রকার লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে নগদ লেনদেনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।

    “এই দু’জনের অতীত সম্পর্কে আরো খোঁজ খবর নিতে হবে বলে মনে হচ্ছে,” চিফ বললেন।

    তার কথায় সায় দিলাম আমি।

    ***

    সিদ্ধান্ত নিলাম আমার দুইজন সহকর্মীকে নিয়ে রাই হিদাকার সাথে কথা বলে আসবো। মি. হিদাকা যে বাড়িটায় খুন হয়েছে, সেটা ছেড়ে এখন নিজের বাবা-মা’র বাসায় ফিরে গেছে সে। টোকিও’র পশ্চিমে মিতাকা শহরতলীতে সেই ঠিকানা। মফস্বলই নলা চলে। ওসামু নোনোগুচি গ্রেফতার হবার পর এই প্রথম তার সাথে দেখা হচ্ছে আমার। চিফ অবশ্য আগেই ফোন করে তাকে বলে দিয়েছেন আমাদের যাওয়ার কথা। তবে আমার গোস্টরাইটার থিওরির বিষয়ে কিছু জানাননি। তবে সাংবাদিকদের কল্যাণে কিছু না কিছু অবশ্যই শুনেছে রাই হিদাকা। তাদের যেরকম ছোঁক ছোঁক করা স্বভাব, নিশ্চয়ই কয়েক হাজার বার ফোনও দিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে। আমরা তাকে কিছু প্রশ্ন করবো তো বটেই, আমাদের জন্যেও নিশ্চয়ই প্রশ্নের অভাব নেই তার কাছে।

    মিতাকার বাড়িটায় পৌঁছানোর পর সংক্ষেপে তাকে সবকিছু খুলে বলি। মি. নোনোগুচির অ্যাপার্টমেন্টে যে পান্ডুলিপিগুলো খুঁজে পেয়েছি সেগুলোর ব্যাপারে জানালাম ভদ্রমহিলাকে। শুনে অবাকই হলো রাই।

    পান্ডুলিপিগুলোর সাথে তার প্রয়াত স্বামীর কাজের এতটা মিল কেন, এই বিষয়ে তার কিছু জানা আছে কি না জানতে চাইলাম

    জবাবে মাথা ঝাঁকিয়ে মানা করে দিলো রাই। “আমার মনে হয় না উপন্যাসের আইডিয়ার ব্যাপারে কারো কাছ থেকে কোন প্রকার সাহায্য নিত ও। অনুকরণ করা তো দূরের কথা। নিত্য নতুন প্লট খুঁজে বের করা সহজ কাজ নয়, মাঝে মাঝে বেশ কষ্ট হয়ে যেত ওর, কিন্তু তাই বলে গোস্টরাইটার নিয়োগ দেয়ার মত মানুষ ছিল না ও।” শান্তকণ্ঠে কথাগুলো বললেও চোখের তারায় জ্বলন্ত কয়লার আভা দেখতে পেলাম। ধিকিধিকি জ্বলছে।

    কিন্তু তার কথা বিশ্বাস করে নেয়াটা আমার জন্যে কষ্টকর। কুনিহিকে হিদাকার সাথে তার বিয়ে হয়েছিল এক মাস আগে। আমি নিশ্চিত প্রয়াত স্বামীর বিষয়ে অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেছে ভদ্রমহিলার।

    আমার দোটানার কারণটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে সে। “আপনি যদি ভেবে থাকেন যে আমাদের বিয়ের বয়স খুব বেশি নয়, তাহলে ভুল ভাবছেন না। কিন্তু সেই সাথে আপনাকে এটাও মনে রাখতে হবে এর আগে আমি তার সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেছি।”

    এই তথ্যটাও আগে থেকেই জানা ছিল আমার। হিদাকা যে প্রকাশনীগুলোর সাথে কাজ করতো, তারই একটায় চাকরি করতো রাই। সেই সূত্রেই পরিচয় হয়েছিল দু’জনের।

    “আমি যখন ওর সম্পাদক ছিলাম, তখন আগামীতে কী লিখবে সেই ব্যাপারে বিস্তারিত আলাপ হতো। কেবলমাত্র একটা বইয়ের সম্পাদনার ক্ষেত্রেই আমি সাহায্য করেছিলাম ওকে। কিন্তু আমরা যদি আলাপ না করতাম, তাহলে বইটা হয়তো প্রকাশিতই হতো না। তাই এসবের সাথে নোনোগুচির সম্পৃক্ততার বিষয়টা একটু বেশি দুর্বোধ্য ঠেকছে আমার কাছে।“

    “কোন উপন্যাসটার ব্যাপারে কথা বলছেন?”

    “সমুদ্রের ডাক। গত বছর প্রকাশিত হয়েছিল ওটা।”

    হিদাকার এই বইটা আমি এখনও পড়িনি। তাই সাথে আসা একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, সে পড়েছে কি না। তদন্তের খাতিরে আমার সহ- গোয়েন্দাদের অনেকেই হিদাকার কাজের ব্যাপারে মোটামুটি বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছে।

    জবাবে সে যা বলল তাতে কৌতুহল বাড়ল বৈ কমলো না। সমুদ্রের ডাকের কোন পান্ডুলিপি খুঁজে পাওয়া যায়নি ওসামু নোনোগুচির বাসায় তবে শুধু সমুদ্রের ডাকই নয়, লেখালেখির ক্যারিয়ারে শুরুর তিন বছরে কুনিহিকো হিদাকার যেসব কাজ প্রকাশিত হয়েছে সবগুলোই মৌলিক। এমনকি এরপরেও তার যেসব কাজ প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে প্রায় অর্ধেকের কোন পান্ডুলিপি বা খসড়া পাওয়া যায়নি নোনোগুচির ডেস্কে বা হার্ডড্রাইভে। অর্থাৎ এমনটা হতে পারে যে কুনিহিকো হিদাকা কিছু কিছু উপন্যাস নিজে লিখেছেন এবং বাকিগুলোর ক্ষেত্রে গোস্টরাইটারের সাহায্য নিয়েছেন।

    আর এটা যদি সত্যি হয়েই থাকে, তাহলে মিসেস রাইয়ের বক্তব্য বিবেচনায় নিলেও আমার থিওরিটা ভুল প্রমাণিত হয় না।

    সম্পূর্ণ নতুন একটা দৃষ্টিকোণ থেকে গোটা কেসটা দেখার চেষ্টা করলাম আমি। রাইকে জিজ্ঞেস করে যায় যে ওসামু নোনোগুচির হাতে হিদাকার খুন হওয়ার সম্ভাব্য কোন কারণ মাথায় আছে কি না তার।

    “ওকে আপনারা গ্রেফতারের পর থেকেই ব্যাপারটা নিয়ে ক্রমাগত ভেবে চলেছি আমি, জানেন তো। সত্যি কথা বলতে, আমার এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না। ওরা তো খুবই ভালো বন্ধু ছিল। কখনো ঝগড়া বা তর্ক করতেও দেখিনি। পুরোটাই হয়তো বড় ধরণের কোন ভুল বোঝাবুঝি।”

    রাইয়ের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে না কোম প্রকার অভিনয় করছে সে। যা বলার, মন থেকেই বলছে। তার সাথে আরো টুকটাক কিছু কথা বলে বিদায় নিলাম।

    আমরা বের হচ্ছি এই সময় ধূসর মলাটের একটা বই আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো রাই হিদাকা। তার মনে নিশ্চয়ই ঘুরছে যে আমার নিজের সমুদ্রের ডাক বইটা পড়া উচিত। তাহলে আর কুনিহিকো হিদাকার প্রতিভা নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলবো না।

    সেই রাতেই বইটা শুরু করি আমি। কিছুদিন ওসামু নোনোগুচিকে যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম হিদাকা কোন রহস্যোপন্যাস লিখেছে কি না, তখন এই বইটার নামই বলেছিল সে। নোনোগুচির আমাকে এই বইটার নাম বলার পেছনে অন্য কোন কারণ ছিল কি না,সেটাই ভাবছি। হিদাকার প্রকাশিত যে বইটার সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই, হয়তো সেটা ইচ্ছে করেই পড়তে বলেছিল আমাকে।

    সমুদ্রের ডাকের গল্পটা এক বয়স্ক লোক এবং তার তরুণী স্ত্রী’কে নিয়ে। লোকটা একজন চিত্রশিল্পী এবং তার স্ত্রী হচ্ছে মডেল। এক পর্যায়ে চিত্রশিল্পীর সন্দেহ হতে থাকে যে তার স্ত্রী হয়তো পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছে। এই ধাঁচের বইগুলোর মধ্যে একদম সাধারণ একটা ঘটনা এই বিষয়টা। কিন্তু, তার স্ত্রী আসলে একজন দ্বৈত সত্ত্বার মানুষ। দুই সত্ত্বার ব্যক্তিত্বও দু’রকম। চিত্রশিল্পী স্ত্রী’র এই বৈশিষ্ট্যটা সম্পর্কে জানার পর থেকেই আসল ঘটনা শুরু হয়। তরুণীর দুই সত্ত্বার মধ্যে একটা সত্ত্বা স্বামীকে একদম অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসে। কিন্তু অন্য সত্ত্বাটার একজন আলাদা প্রেমিক আছে। ধীরে ধীরে পরিস্কার হয় যে দ্বিতীয় সত্ত্বাটা তার স্বামীকে হত্যা করার পরিকল্পনা আঁটছে। চিত্রশিল্পী বুঝে উঠতে পারে না যে স্ত্রী’কে হাসপাতালে নিয়ে যাবে কি না। সেই সময় ডেস্কে একটা চিরকুট খুঁজে পায় সে। যেখানে লেখা :

    “ড্রাগটা কাকে হত্যা করবে? আমাকে নাকি ওকে (স্ত্রী’র দ্বিতীয় সত্ত্বা)?”

    চিরকুটটা চিত্রশিল্পীর দ্বিতীয় সত্ত্বার লেখা। বার্তাটা পরিস্কার-চিকিৎসায় তার মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার ঠিক হলেও যে সত্ত্বাটা রয়ে যাবে সে চিত্রশিল্পীকে ভালোবাসবে কি না।

    গোটা বিষয়টা নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় ভুগতে শুরু করে চিত্রশিল্পী। রাতে দুঃস্বপ্নও দেখে এই ব্যাপারে। এসব স্বপ্নে মুখে মধুর একটা হাসি ঝুলিয়ে শোবার ঘরে প্রবেশ করে তার স্ত্রী। কিছুক্ষণ পর খুলে দেয় জানালাটা। সেই জানালা গলে উদ্যোত ছুরি হাতে ঘরে প্রবেশ করে আততায়ী। কিছুক্ষণের মধ্যে আততায়ীর চেহারার জায়গায় ভেসে ওঠে তার স্ত্রী’র মুখটা। এই পর্যায়ে ঘেমে নেয়ে ঘুম ভেঙে যায় চিত্রশিল্পীর।

    শেষ অবধি আসলেও তাকে আক্রমন করে বসে তরুণী স্ত্রী। আত্মরক্ষার সময় ভুলক্রমে স্ত্রী’কে পাল্টা জখম করে চিত্রশিল্পী। তার হাতের উপরেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে তরুণী। একদম শেষ মুহূর্তে চোখের দিকে তাকিয়ে চিত্রশিল্পী বুঝতে পারে তার স্ত্রী’র এই সত্ত্বা তাকে অন্তর থেকে ভালোবাসে। তাহলে চিত্রশিল্পীর হাতে যে প্রাণ হারালো, সে কি মন্দ নাকি ভালোর প্রতিনিধি? চিত্রশিল্পী এই উত্তর আর কখনো খুঁজে পাবে না।

    মোটের উপরে এটাই কাহিনী। কিন্তু আমি নিশ্চিত বিদগ্ধ পাঠকেরা

    হয়তো রূপক কোন অর্থ খুঁজে বের করতে পারে গল্প থেকে। বুড়ো বয়সে সুন্দরি স্ত্রী ঘরে আনার অর্থ হতে পারে কামলোভী কোন বুড়োর জীবনের বয়ান এবং তার করুণ পরিণতি। সত্যি বলতে স্কুলে থাকতে সাহিত্য কখনোই আমাকে সেভাবে টানেনি। লেখার মান নিয়েও কোন প্রকার মন্তব্য করার যোগ্যতা নেই। তবে একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, রাই হিদাকার মতামতের প্রতি পূর্ণাঙ্গ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, বইটা খুব একটা সুবিধার নয়।

    ***

    এবারে এই দু’জনের ক্যারিয়ারের ব্যাপারে আলোকপাত করা যাক-ভিক্টিম এবং খুনি।

    কুনিহিকো হিদাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন একটা বেসরকারি হাই স্কুল থেকে পাশ করার পর সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই সাহিত্য এবং দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করে। ডিগ্রি শেষ হলে প্রথমে যোগ দেয় একটা বিজ্ঞাপন সংস্থায় এবং পরবর্তিতে একটা প্রকাশনা সংস্থায়। প্রায় দশ বছর আগে তার লেখা একটা ছোটগল্প একটা সাহিত্য পত্রিকায় সেরা নতুন কন্ঠের পুরষ্কার জিতে নেয়। সেখান থেকেই তার ঔপন্যাসিক জীবনের শুরু। পরবর্তি দুই আড়াই বছর অবধি অবশ্য তার কোন বই খুব বেশি একটা বিক্রি হয় না। কিন্তু চতুর্থ বছরে প্রকাশিত প্রকাশিত ‘নিভে যাওয়া অনল’ জিতে নেয় নামকরা একটি সাহিত্য পুরষ্কার। সেখান থেকেই বিখ্যাত লেখক হিসেবে তার উত্থানের শুরু।

    ওসামু নোনোগুচি পৃথক একটা বেসরকারি হাই স্কুল থেকে পড়াশোনার পাঠ চুকানোর পরে ভর্তি হয় সরকারি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য বিভাগে। তার মেজর ছিল জাপানি সাহিত্য। শিক্ষকতার পেশায় যোগদানের পরীক্ষাতেও উতরে যায় সে। যোগ দেয় সরকারি মিডল স্কুলে। এই বছরের শুরুতে স্বেচ্ছা অবসর নেয়ার আগ অবধি তিনটা পৃথক পৃথক স্কুলে চাকরি করে সে। আমার সাথে নোনোগুচির যেখানে পরিচয় হয়, সেটা ছিল তার দ্বিতীয় কর্মস্থল।

    বছর দুয়েক আগে একটা দ্বি-বার্ষিক কিশোর পত্রিকায় গল্প ছাপানোর মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে লেখালেখির জীবনে পদার্পণ তার। এখন অবধি কোন উপন্যাস প্রকাশিত হয়নি তার।

    হাইস্কুল থেকে দুজন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় পড়াশোনা করলেও, ওসামু নোনোগুচির ভাষ্যমতে সাত বছর আগে আবার দেখা হয়ে যায় দুজনের হিদাকার নাম খবরের কাগজে দেখার পর বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে সে।

    খুব সম্ভবত এই কথাটা সত্যিই বলেছে নোনোগুচি। কারণ তাদের দু’জনের পুনরায় যোগাযোগের ছয় মাসের মাথায় ‘নিভে যাওয়া অনল’ বইটার জন্যে সাহিত্য পুরষ্কার লাভ করে কুনিহিকো হিদাকা। এই উপন্যাসটার একটা পান্ডুলিপি নোনোগুচির বাসায় খুঁজে পাই আমরা। সুতরাং, এটা বলাটা অত্যুক্তি হবে না যে পুরনো বন্ধুর সাথে যোগাযোগের ফলস্বরূপ পাল্টে যায় হিদাকার ভাগ্য।

    নিভে যাওয়া অনল বইটার সম্পাদকের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম আমি। ছোটখাটো লোকটা বর্তমানে একটা সাহিত্য পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কাজ করে।

    তার কাছে আমি মূলত জানতে চাই পূর্বে প্রকাশিত লেখাগুলো বিবেচনায় নিয়ে তার মনে হয় কী না কুনিহিকো হিদাকার পক্ষে ওরকম একটা উপন্যাস লেখা সম্ভব।

    আমার প্রশ্নের জবাব দেয়ার আগে পাল্টা আরেকটা প্রশ্ন করে মি. মাইমুরা। “আপনি কি ওসব গোস্টরাইটার ছাইপাঁশ নিয়ে তদন্ত করছেন?”

    এটা পরিস্কার যে, মি. মাইমুরা আমার থিওরির সাথে বিশেষ একমত নন। মৃত্যুর পর কুনিহিকো হিদাকার সুনাম নষ্ট করে তার কোম্পানিরও কোন লাভ হবে না।

    “এটাকে আসলে এখনও শক্ত কোন থিওরি বলতে নারাজ আমি। এটার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণাদি এখনও নেই আমাদের কাছে। আমি কেবল সবকিছু খতিয়ে দেখছি, এই যা।”

    ১০১

    “তদন্তের বিষয়-আশয় আপনি আমার চেয়ে ঢের ভাল বোঝেন। কিন্তু এরকম গুজবের পেছনে ছোটা আর আলিয়ার পেছনে ছোটা একই কথা। সময় নষ্ট।” এটুকু বলে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন সম্পাদক সাহেব, এরপর আমার প্রশ্নের জবাবে বললেন, “সত্যিকার অর্থেই নিভে যাওয়া অনল হিদাকার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তার উন্নতি ছিল চোখে পড়ার মতন। রাতারাতি এরকম অগ্রগতি সাধারণত দেখা যায় না।”

    “তাহলে আপনার মতে এই বইটা পূর্বে প্রকাশিত ওনার অন্যান্য বইয়ের চাইতে মানগত দিক দিয়ে ভালো?”

    “তা বলা যায়। কিন্তু আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন তাহলে বলবো এটা অপ্রত্যাশিত কিছু না, অন্তত আমার কাছে। হিদাকা বরাবরই শক্তিশালী লেখক। শুরুর দিকে লেখাগুলোয় কিছুটা খামখেয়ালিপনা ছিল, সেজন্যই ওই বইগুলো বেশি পাঠকপ্রিয়তা পায়নি। কিছু বাহুল্যের কারণে মূল বার্তাটা ধরতে পারেনি অনেকেই। কিন্তু নিভে যাওয়া অনল একদম বাহুল্য বর্জিত I আপনি নিজে পড়েছেন কি বইটা?”

    “হ্যাঁ, পড়েছি। বেশ ভালো ছিল।”

    “আমার মতে এটাই হিদাকার সেরা কাজ।”

    এই বইয়ের গল্পটা মূলত সাধারণ এক চাকুরিজীবীকে নিয়ে। একটা জায়গায় কোম্পানির ট্যুরে গিয়ে আতশবাজির প্রদর্শনী দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় সে। সিদ্ধান্ত নেয় চাকরি বাদ দিয়ে আতশবাজির ব্যবসা শুরু করার। মূল গল্পটা আসলেই ভালো। আমার সবচেয়ে উপভোগ্য লেগেছে বিভিন্ন ধরণের আতশবাজির বিস্তারিত বিবরণ।

    “এই উপন্যাসটা তো ধারাবাহিকভাবে কোথাও প্রকাশিত হয়নি। একেবারে লিখে জমা দিয়েছিলেন হিদাকা, তাই না?”

    “ঠিক বলেছেন।”

    “উনি উপন্যাসটা লেখা শুরু করার আগেই কি আপনারা এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন?”

    “নিশ্চয়ই। আমাদের এখানে যত লেখক আছে সবার সাথেই এভাবে কাজ করি আমরা।”

    “মি. হিদাকার সাথে কি বিষয়ে কথা হয়েছিল আপনার তখন?”

    “মূল প্লটটা নিয়ে আলাপ করি আমরা। সেই সাথে প্রধান চরিত্রটা কেমন হবে, বর্ণনার ধরন এসব।”

    “মূল সিদ্ধান্তগুলো কি সব আপনার একসাথে নিতেন?”

    “নাহ। এগুলো মি. হিদাকার নিজের ব্যাপার। হাজার হলেও তিনিই তো লেখক। আমি শুধু আলোচনার মাধ্যমে কিছুটা মতামত দিয়েছি আর কি। “

    “মূল চরিত্র যে আতশবাজির কারিগর হবে এই সিদ্ধান্তটা কি মি. হিদাকা নিয়েছিলেন?”

    “হ্যাঁ।”

    “আইডিয়াটা শুনে আপনার কেমন লেগেছিল?”

    “মানে আমার পছন্দ হয়েছিল কি না জানতে চাচ্ছেন?”

    “আমি বোঝাতে চাইছি এই ধরনের আইডিয়ার কথা তার মুখে আগেও শুনেছেন কি না।”

    “না, তা শুনিনি। কিন্তু অবাকও হইনি। এমন নয় যে আতশবাজির কারিগরদের নিয়ে সে-ই প্রথম লিখেছে।”

    “আচ্ছা মি. মাইমুরা, উপন্যাসটায় কি এমন কিছু ছিল যা আপনার সাথে আলোচনার প্রেক্ষিতে সেখানে রেখেছিলেন মি. হিদাকা?”

    “বড়সড় কিছু না। চূড়ান্ত খসড়াটা দেখার পর কিছু বিষয়ে পরামর্শ দেই আমি। কিন্তু সেই পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন কি না, সেটা পুরোপুরি হিদাকার সিদ্ধান্ত। “

    “শেষ প্রশ্ন। মি. হিদাকা যদি কারো লেখা অনুকরণ করে নিজের মত করে লেখেন, সেটা কি আপনি ধরতে পারবেন?”

    জবাব দেয়ার আগে কিছুক্ষণ ভাবলেন মাইমুরা। “সত্যি বলতে, না। বর্ণনার ধরণ আর শব্দের ব্যবহারই মূলত একজন লেখককে আরেকজন থেকে আলাদা করে।“

    তবে শেষ পর্যন্ত আরেকটা কথা যোগ করা থেকে পিছপা হলেন না মি. মাইমুরা। “ডিটেক্টিভ, ‘নিভে যাওয়া অনল’ নিঃসন্দেহে হিদাকার মৌলিক কাজ। এটা লেখার সময় বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল আমাদের। অনেক খেটেছে সে এটার পেছনে। মাঝে মাঝে তো আমার মনে হতো এই বুঝি পুরোপুরি ভেঙে পড়বেন। অন্য কারো উপন্যাস হলে কিন্তু এমনটা ঘটতো না।”

    তার এই কথার প্রেক্ষিতে আমি আর কথা বাড়াইনি, ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিয়ে বের হয়ে এসেছি। তবে মনে মনে একটা পালটা যুক্তি ঠিকই তৈরি করে ফেলেছিলাম। কোন কিছু নিয়ে আনন্দিত হবার অভিনয় করাটা কঠিন হলেও, এর বিপরীতটা তুলনামূলক সোজা। সম্পাদক সাহেব যা-ই বলুক না কেন, আমি এখনও আমার গোস্টরাইটার থিওরি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।

    ***

    একজন পুরুষ যখন আরেকজন পুরুষকে হত্যা করে, প্রায়শই দেখা যায় ঘটনার সাথে কোন নারীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততা থাকে। তবে ওসামু নোনোগুচির জীবনে কোন নারী আছে কি না,সেই বিষয়ে আমরা এখনও কোন প্রকার তদন্ত করিনি। ডিপার্টমেন্টে সবারই ধারণা এই খুনটা আসলে ‘ওই ধরণের’ কিছু নয়। হয়তো মি. নোনোগুচির ব্যক্তিত্বের কারণেই এমনটা ধারণা হয়েছে সবার। তার চেহারা কুৎসিত, তা বলবো না। কিন্তু নোনোগুচির পাশে কোন নারীকে কল্পনা করা খানিকটা কষ্টকরই বটে।

    তবে আমাদের আন্দাজ ভুল। অন্তত একজন নারীর সাথে বিশেষ সম্পর্ক ছিল তার। আমার পরে তদন্ত দলের যারা নোনোগুচির অ্যাপার্টমেন্টে তল্লাশির জন্যে যায়, তারাই এই তথ্যটা আবিষ্কার করে। মোট তিনটে সূত্র পায় তারা।

    প্রথমটা হচ্ছে চেক প্যাটার্নের মেয়েলি ডিজাইনের একটা অ্যাপ্রন। ধোয়া এবং আইরন করা অ্যাপ্রনটা সুন্দরমত ভাজ করে রাখা ছিল ওসামু নোনোগুচির ড্রয়ারে। আমাদের ধারণা মাঝে মাঝে নোনোগুচির বাসায় এসে টুকটাক কাজ করার সময় অ্যাপ্রনটা পরে সেই নারী।

    দ্বিতীয় সূত্রটা হচ্ছে একটা সোনার নেকলেস। প্যাকেট থেকে অবশ্য বের করা হয়নি ওটা। একটা নামকরা জুয়েলারি দোকান থেকে কেনা হয়েছিল নেকলেসটা। খুব সম্ভবত উপহার দেয়ার উদ্দেশ্যে।

    তৃতীয় সূত্র হচ্ছে একটা জরিপের ফর্ম। সুন্দর মত ভাজ করে নেকলেসের বাক্সের সাথেই রাখা ছিল ওটা। জরিপের ফর্মটা ওকিনাওয়ার একটি ট্রাভেল এজেন্সির। বছর সাতেক আগের মে মাসের দশ তারিখ দেয়া ফর্মটায়। ভ্রমণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল জুলাই মাসের ৩০ তারিখে। এই সময়টায় সাধারণত ছুটি থাকে শিক্ষকদের। কিন্তু ফর্মটা যেহেতু পূরণ করে ফেরত দেয়া হয় নাই, এটা পরিস্কার যে ঘুরতেও যাওয়া হয়নি নোনোগুচির।

    দুই ভ্রমণকারীর নামও লেখা আছে ফর্মটায়। একটা হচ্ছে ওসামু নোনোগুচি। আরেকটা হাতসুকো নোনোগুচি, বয়স উনিত্রিশ বছর।

    কিন্তু আমরা খোঁজ খবর নিয়েও এই নামে কাউকে খুঁজে পাইনি। অন্তত ওসামু নোনোগুচির আত্মীয়দের মধ্যে এই নামে কেউ নেই। আমাদের ধারণা হাতসুকো নোনোগুচি একটা ছদ্মনামে। কাউকে নিজের স্ত্রী’র বেশে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল নোনোগুচি।

    এখান থেকে আন্দাজ করা যায় যে সাত বছর আগে অন্তত একজন নারীর সাথে হলেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ওসামু নোনোগুচির। খুব সম্ভবত এখনও সেই নারীর জন্যে আবেগ কাজ করে তার। নতুবা নেকলেস আর অ্যাপ্রনটা ওভাবে যত্ন করে রেখে দেয়া হতো না।

    চিফের কাছে এই ব্যাপারটা আরো খতিয়ে দেখার জন্যে অনুমতি চেয়েছি আমি। হাতসুকোর সাথে আমাদের কেসের কোন সম্পর্ক আছে কি না জানি না, তবে নিভে যাওয়া অনল বইটা খ্যাতি লাভ করে মোটামুটি সেই সময়েই। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে সেই সময়ে নোনোগুচির সাথে যার সম্পর্ক ছিল, তার সাথে কথা বললে আমি হয়তো নতুন কিছু তথ্য জানতে পারবো।

    প্রথমে ওসামুকেই জিজ্ঞেস করি আমি। আমরা তার অ্যাপার্টমেন্টে নেকলেস আর জরিপের ফর্মটা খুঁজে পেয়েছি শুনে হাসপাতালের বিছানায় প্রায় অর্ধেক উঠে বসে সে।

    “আপনি কি আমাকে বলবেন যে অ্যাপ্রনটা কার, নেকলেসটা কাকে দেয়ার ইচ্ছে ছিল আপনার আর কার সাথে ওকিনাওয়ায় ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন?”

    এর আগে করা আমার প্রশ্নগুলো শুনে খুব একটা বিচলিত হয়নি নোনোগুচি। কিন্তু এবারে তার চেহারায় পরিস্কার দুশ্চিন্তার ছাপ পড়তে দেখলাম। “এর সাথে আপনাদের কেসের কি সম্পর্ক? আমি একটা খুন করেছি, সেজন্যে আমাকে শাস্তি পেতে হবে। কিন্তু তাই বলে আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও কথা বলতে হবে, যার সাথে কেসের কোন সম্পর্কই নেই?”

    “আমি তো আপনাকে বলিনি যে এসব তথ্য পুরো দুনিয়ার মানুষ জানবে। শুধুমাত্র আমি জানব। আমার যদি মনে হয় যে কেসের সাথে এসব তথ্যের কোন সম্পর্ক নেই, তাহলে আর আপনাকে এই ব্যাপারে কোন প্রশ্ন করা হবে না। মিডিয়ার লোকজনের কানেও কিছু যাবে না। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, ভদ্রমহিলাকে কেউ বিরক্ত করবে না।”

    “মাফ করবেন, কাগা। কিন্তু কেসের সাথে ওর কোন সম্পর্ক নেই। আমার মুখের কথাই বিশ্বাস করে নিতে হবে আপনাকে।“

    “আমাকে বলে দিলেই কিন্তু ঝামেলা মিটে যায়। নতুবা আমরা তদন্ত করতে বাধ্য হব। সেক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। আর একবার আমাদের গোয়েন্দারা এই বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া শুরু করলে, মিডিয়ার লোকজনদের কাছেও ব্যাপারটা গোপন থাকবে না। সেটা নিশ্চয়ই চাইবেন না আপনি। “

    আমার হাজারো চাপাচাপি সত্ত্বেও মহিলার নামটা মুখে আনলো না ওসামু নোনোগুচি। এমনকি তার অ্যাপার্টমেন্টে আমাদের বারবার তল্লাশি চালানোর বিষয়টা নিয়েও আপত্তি তুলল। “আপনারা ওভাবে বারবার আমার ব্যক্তিগত জিনিসগুলো ওলট-পালট না করলেই খুশি হবো। ওখানকার অনেকগুলো আমি উপহার হিসেবে পেয়েছি বন্ধুদের কাছ থেকে। সেগুলোর গুরুত্ব আমার কাছে অনেক বেশি।”

    এই সময় ডাক্তার এসে জানালো নোনোগুচির সাথে আমার সাক্ষাতের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেছে বেরিয়ে যেতে হবে।

    আমারও মনে হলো যা জানার আপাতত জেনে গিয়েছি। ওই মহিলার ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে হবে। নোনোগুচির মোটিভের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য হাতে আসতে পারে তাহলে।

    প্রথমে নোনোগুচির প্রতিবেশীদের সাথে গিয়ে কথা বললাম। জানতে চাইলাম তার অ্যাপার্টমেন্টে কোন নারীকে কখনো আসতে দেখেছে কি না, কিংবা কারো গলার শব্দ শুনেছে কি না। পুলিশের সাথে কথা বলতে সাধারণত যারা দ্বিধাবোধ কর, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রতিবেশীদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের ব্যাপারে কথা বলতে তাদের কোন আপত্তি থাকে না। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রতিবেশীরা খুব বেশি কিছু জানাতে পারল না। এমনকি নোনোগুচির পাশের ফ্ল্যাটে যে গৃহিণী থাকে, সে-ও কখনো কোন নারীকে আসতে দেখেনি।

    “গত কয়েক মাসের কথা বলছি না কিন্তু। গত কয়েক বছরের মধ্যে কাউকে আসতে দেখেছেন কি?”

    জবাবে মহিলা আমাকে বলল, প্রায় দশ বছর ধরে এখানে থাকছে সে, অর্থাৎ নোনোগুচির সমসাময়িক সময়েই অ্যাপার্টমেন্টটায় উঠেছিল তারা। কারো সাথে যদি নোনোগুচির সম্পর্ক থেকে থাকে, সেটা জানবার কথা তার।

    “একজনকে বোধহয় দেখেছিলাম,” কিছুক্ষণ ভেবে বলে সে। “তবে সেটা অনেক আগের কথা। মাফ করবেন, আমার পরিস্কার মনে নেই কিছু। “ ওসামু নোনোগুচির ব্যক্তিগত এবং পেশাগত সব সম্পর্কগুলো নিয়েই নতুন করে ভাবা শুরু করলাম আমি। মার্চে যে স্কুল থেকে অবসর গ্রহণ করে সে, সেই স্কুলটায় গেলাম প্রথমে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলাম প্রায় কেউই তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু বলতে পারছে না। আসলে নোনোগুচিকে কোন অর্থেই মিশুক বলা সম্ভব না। কাজের বাইরে কারো সাথে সময় কাটিয়েছে সে, এমন ঘটনাও বিরল।

    এরপর আমি গেলাম মিডল স্কুলটায়। ওকিনাওয়ায় ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা এই স্কুলে চাকরি কালীন সময়েই করেছিল সে। তবে এখানে যাওয়ার ব্যাপারে একটা অনীহা কাজ করছিল আমার মধ্যে। আমিও তো এখানেই চাকরি করতাম।

    ক্লাস নেয়ার সময় শেষ হবার পরে স্কুলে যাই আমি। স্কুলের তিনটা দালানের মধ্যে দুটো সংস্কার করা হয়েছে। তাছাড়া সবকিছু একদম দশ বছর আগে যেরকম দেখেছিলাম, সেরকমই আছে।

    গেটের সামনে গিয়ে হঠাৎ করেই ভেতরে ঢোকার সাহস হারিয়ে ফেললাম। শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে বেরিয়ে যাচ্ছে স্কুল থেকে। এসময় একটা পরিচিত মুখের দেখা পেলাম। ইংরেজির শিক্ষিকা, মিসেস টোম। আমার থেকে বয়সে প্রায় সাত-আট বছরের বড় হবেন ভদ্রমহিলা। পেছন থেকে তাকে ডাকলাম আমি। আমাকে চিনতে পেরে একটা হাসি ফুটলো তার মুখে। হাসির সাথে খানিকটা বিস্ময়ও খেলা করছে চোখে।

    নোনোগুচির ব্যাপারে আলাপ শুরু করার আগে কুশল বিনিময় করলাম আমরা। প্রাক্তন সহকর্মীর নাম শোনা মাত্র গম্ভীর হয়ে গেল মিসেস টোমের চেহারা।

    স্কুলের পাশেই একটা কফিশপে বসলাম আমরা। আমি যখন চাকরি করতাম, তখনও ছিল না এই কফিশপটা।

    “ঘটনা শুনে তো আমাদের সবার মাথা ঘুরে গেছে। মি. নোনোগুচি এমন কিছু করতে পারেন তা অবিশ্বাস্য,” উত্তেজিত ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বললেন তিনি। “আর কাকতালীয়ভাবে আপনিই কি না এই কেসের তদন্ত কর্মকর্তা!”

    জবাবে বললাম, এই কাকতালীয়তার জন্যই আমার কাজ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সমস্যাটা বুঝতে পারছেন, এই ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন তিনি। এরপর আমার প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু করলাম। প্রথমেই জানতে চাইলাম নোনগুচির জীবনে কোন নারীর ব্যাপারে কিছু জানেন কি না তিনি।

    মিসেস টোম বললেন এই প্রশ্নটার জবাব দেওয়া একটু কঠিন। “আমি একদম নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবো না, কিন্তু আমার ধারণা তার জীবনে কেউ ছিল না।”

    “এমনটা মনে হওয়ার কারণ?”

    “অনুমান?” বলেই নার্ভাস ভঙ্গিতে হাসলেন মিসেস টোম। “আমি জানি এই ধরনের ব্যাপারে অনুমান করে কিছু বলা ঠিক নয়। কিন্তু সবকিছু বিবেচনা করে এটিই আমার কাছে ঠিক মনে হচ্ছ। আপনি কি জানেন যে অনেকেই কিন্তু মি. নোনোগুচিকে ব্লাইন্ড ডেটে যাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করেছে।”

    “না, তা জানতাম না। সে কারো সাথে ডেটিংয়ে যাবে এটা আমার জন্য বিশ্বাস করা একটু কষ্টকরই বটে।”

    “ক্যাজুয়াল ডেটিং নয়, বরং বিয়ে করার জন্যে কাউকে খুঁজছিল সে। আমি মোটামুটি নিশ্চিত আমাদের প্রধান শিক্ষক মহাশয়ও তার পরিচিত একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন নোনোগুচিকে। যে বিয়ে করার জন্যে এমন হন্য হয়ে পাত্রী খুঁজবে, তার জীবনে তো কারো থাকার কথা নয়।

    “কত বছর আগের কথা বলছেন?”

    “এখানকার চাকরি ছাড়ার খুব বেশিদিন আগের কথা না। পাঁচ-ছয় বছর হবে।”

    “তার আগে? তখনও কি কাউকে খুঁজে দেয়ার ব্যাপারে কিছু বলতো সে?”

    “আমার আসলে একদম ঠিকঠাক মনে নেই। অন্য টিচারদের এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবো? সেই সময়ে নোনোগুচির সাথে চাকরি করতো এমন অনেকেই আছে এখনও।”

    জানালাম, তেমনটা হলে আমার জন্যে খুবই ভালো হবে।

    একটা ডায়রি বের করে সেখানে বিষয়টা টুকে নিলেন মিসেস টোম।

    এবারে আমার দ্বিতীয় প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করলাম তাকে। “ওসামু নোনোগুচি আর কুনিহিকো হিদাকার সম্পর্কের ব্যাপারে কিছু জানা আছে আপনার?”

    “ওহ, ততদিনে তো আপনি স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন।”

    “কুনিহিকো হিদাকা যখন পুরষ্কারটা জেতেন।”

    “আমার আসলে ঠিক মনে নেই যে তখন এখানে ছিলাম কি না। সাহিত্য সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখা হয়নি কখনোই। পুরষ্কার-টুরষ্কার তো দূরের ব্যাপার।”

    “নোনোগুচি যদি স্কুলে সবাইকে ঘটা করে না বলতো, তাহলে আমিও জানতাম না। বন্ধু পুরষ্কার জেতায় খুবই খুশি হয়েছিল সে।”

    “সেই সময়ে কি মি. নোনোগুচি আর হিদাকার মধ্যে যোগাযোগ ছিল? এই ব্যাপারে কিছু জানা আছে আপনার?”

    “আমি নিশ্চিত নই, তবে থাকার সম্ভাবনা কম। তবে কিছুদিন পরে দু’জনের মধ্যে যোগাযোগ হয়।”

    “কতদিন পর? দুই-তিন বছর?” সেক্ষেত্রে হিদাকার সাথে সাত বছর আগে দেখা হয়েছিল নোনোগুচির, যেমনটা দাবি করেছিল সে।

    “হ্যাঁ, ওরকমই হবে।”

    “মি. নোনোগুচি কি হিদাকার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করতো?”

    “কী রকম আলোচনা?”

    “যেকোন ধরণের। তার স্বভাব চরিত্র কেমন, সে মানুষ হিসেবে কেমন। কিংবা তার লেখা সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেছিল হয়তো।”

    “তার স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে কিছু বলেছিল কি না,তা মনে নেই। কিন্তু মি. নোনোগুচি প্রায়ই হিদাকার লেখার ধরণ নিয়ে অভিযোগ জানাতেন।”

    “ওনার উপন্যাসগুলো পছন্দ ছিল না নোনোগুচির? বিশেষ কোন ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছিল কি?”

    “ওই ঘুরে ফিরে একই কথা। মি. হিদাকা সাহিত্য বোঝেন না। তার চরিত্রগুলো বাস্তবসম্মত হয়না। বইগুলোর গুণগত মান ভালো না।”

    ওসামু নোনোগুচির মুখে হিদাকার লেখা নিয়ে এরকম কিছু শুনিনি। যে ব্যক্তি হিদাকার উপন্যাসগুলোকে নিজের লেখার মডেল হিসেবে ব্যবহার করে, তার মুখে এরকম কথা একদমই মানানসই না।

    “পছন্দ না হওয়া সত্ত্বেও হিদাকার বই পড়তো সে? আবার গিয়ে দেখাও করেছে?”

    “হ্যাঁ, করেছে। আমার ধারণা এক প্রকার আক্ষেপ থেকেই ওই কথাগুলো বলতো নোনোগুচি।”

    “আক্ষেপ?”

    “মি. নোনোগুচি নিজেও তো লেখক হতে চাইত। কিন্তু তার ছেলেবেলার বন্ধু সেই প্রতিযোগীতায় হারিয়ে দেয় তাকে। চাইলেও হিদাকার কাজগুলোকে অস্বীকার করতে পারেনি সে। হয়তো অবচেতন মনেই ভাবত-’এগুলো আর এমন কি? আমি এর চেয়ে ভাল লিখতে পারি।’“

    এরকম কিছু কল্পনা করা তুলনামূলক সহজ আমার জন্যে।

    “নিভে যাওয়া অনলের জন্যে যখন পুরষ্কার জিতলেন হিদাকা, তখন ওসামু নোনোগুচির প্রতিক্রিয়া কি ছিল, মনে আছে আপনার?”

    “আমি যদি বলি তার চেহারাটা হিংসায় বিকৃত হয়ে যেতে দেখেছিলাম, সেটাই বোধহয় বেশি মুখরোচক খবর হবে। কিন্তু সত্যি বলতে তাকে গর্বিতই মনে হয়েছিল।”

    এই তথ্যটার সম্ভাব্য অর্থ অনেক কিছুই হতে পারে। তবে তথ্যটা দরকারি, সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। নোনোগুচির কোন প্রেমিকার ব্যাপারে কিছু জানতে না পারলেও একদম খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে না। সময় দেয়ার জন্যে মিসেস টোমকে ধন্যবাদ জানালাম।

    প্রয়োজনীয় আলাপ শেষ হবার পর আমার প্রাক্তন সহকর্মী জানতে চাইল যে শিক্ষকতার চাকরি ছাড়ার পর কেমন আছি, নতুন চাকরি কেমন চলছে। কোনমতে বিষয়টা এড়িয়ে গেলাম, এই ব্যাপারে কথা বলতে আমার আসলে ভালো লাগে না।

    সে-ও বোধহয় বুঝলো ব্যাপারটা, খুব বেশি চাপাচাপি করলো না। কিন্তু একদম শেষ মুহূর্তে বলল, “বুলিয়িং” কিন্তু এখনও একটা সমস্যা।”

    “সেই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। “খবরের বুলিয়িং বিষয়ে যখনই কিছু দেখায়, মনোযোগ দিয়ে দেখি আমি। কারণ সেই সময়কার ব্যর্থতা এখনও তাড়া করে বেড়ায় আমাকে।

    কফিশপ থেকে বের হয়ে যে যার পথ ধরলাম।

    ***

    মিসেস টোমের সাথে দেখা হবার দিনেই ছবিটা হাতে এলো আমাদের। নোনোগুচির অ্যাপার্টমেন্টে তল্লাশি চালাতে গিয়ে এটা খুঁজে পেয়েছে মাকিমুরা।

    হাতসুকো নামের সেই নারীর বিষয়ে তথ্যের আশায় আবারো নোনোগুচির বাড়িতে এসেছিলাম আমরা। আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল কোন ছবি পাওয়া যায় কি না, সেটা খুঁজে দেখা। আমি এক প্রকার নিশ্চিত ছিলাম ছবির ব্যাপারে। যে ব্যক্তি অ্যাপ্রন আর নেকলেসটা ওরকম যত্ন সহকারে রেখে দিয়েছে, সে অবশ্যই ছবিও যত্ন করে রাখবে। কয়েকটা অ্যালবাম চোখে পড়লো আমাদের, কিন্তু সেগুলোর একটাতেও সঠিক বয়সের কাউকে খুঁজে পাইনি।

    “নোনোগুচি ছবি কেন রাখবেন না?” বিশ্রাম নেয়ার ফাঁকে মাকিমুরাকে জিজ্ঞেস করি আমি।

    “হয়তো কোন ছবি নেই তার কাছে। সাধারণত একসাথে কোথাও ঘুরতে গেলে স্মৃতি ধরে রাখার জন্যে ছবি তোলে যুগলরা। কিন্তু নোনোগুচি তো বোধহয় ওনিকাওয়া যেতে পারেনি। সেজন্যে ছবি নেই। “

    “আসলেই? ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজপত্র যে ড্রেসারে রেখে দিয়েছে, নিদেনপক্ষে একটা ছবি তো তার তোলারই কথা।”

    অ্যাপ্রনটার উপস্থিতি প্রমাণ করে যে সে মহিলা এক সময় নিয়মিত আসত এই বাড়িতে। আমরা জানি যে তার একটা ক্যামেরা আছে। সুতরাং, মহিলা যখন এখানে আসত, তখন একটা ছবি তুলতেই পারে সে।

    “সেক্ষেত্রে,” একটু ভেবে বলে মাকিমুরা, “আমরা ছবিটা খুঁজে পাচ্ছি না কারণ ওটা কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়েছে।”

    “ঠিক এটাই ভাবছিলাম আমি। কিন্তু লুকাবে কেন? তার বাসায় যে পুলিশ আসবে এটা তো সে জানত না, তাই না?”

    “আরেকটা রহস্য।”

    ঘরটায় তল্লাশি চালাচ্ছিল এই সময় নোনোগুচির বলা একটা কথা মাথায় খেলে গেল আমার। সেদিন হাসপাতালে সে বলেছিল তার ব্যক্তিগত জিনিসপত্র যেন তল্লাশির নাম করে নষ্ট না করি। বিশেষ করে বইগুলো।

    নোনোগুচির অফিস রুমটার একপাশের দেয়াল জুড়ে বইয়ের তাক। ডিটেক্টিভ মাইমুরা এবং আমি নিজেদের মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক করে বইগুলো ভাগাভাগি করে নিলাম। এরপর প্রতিটা বইয়ে একদম শুরুর পাতা থেকে শেষ পাতা পর্যন্ত খুঁজতে লাগলাম। ছবি, চিঠি, চিরকুট-যে কোন কিছু থাকতে পারে এখানে।

    প্রায় দু’ঘন্টার মত সময় লাগল আমাদের। লেখকদের বাসায় বই বোঝাই থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। খুঁজতে খুঁজতে পিসার হেলানো টাওয়ারের মতন বইয়ের হেলানো টাওয়ার বানিয়ে ফেললাম আমরা দু’জনই।

    একটা পর্যায়ে গিয়ে মনে হলো যে ভুল বুঝেছিলাম আমি। যে ছবিটা দেখার জন্যে এত কষ্ট করতে হবে, সেই ছবিটা কেন রাখবে কেউ? নিশ্চয়ই এমন কোথাও রাখবে, যেখান থেকে বের করে দেখতে বেশিই ঝক্কি পোহাতে হবে না।

    মি. নোনোগুচির ওয়ার্ড প্রোসেসরটা যে টেবিলে রাখা, সেটার দিকে এগোলো মাকিমুরা। এমন ভঙ্গিতে চেয়ারে বসলো যেন লেখালেখি শুরু করবে। “ধরো আমি আমার নতুন উপন্যাসটা লিখছি, এসময় তার কথা মনে হলো। সেক্ষেত্রে ছবিটা তো কাছাকাছিই রাখবো,” ওয়ার্ড প্রসেসরটার ঠিক পাশের খালি জায়গাটার দিকে দেখাল মাকিমুরা।

    “এমন একটা জায়গাও হতে পারে যেটা সহজে চোখে পড়বে না, কিন্তু হাত বাড়ানো দূরত্বে থাকবে।”

    আশপাশে নজর বুলায় মাকিমুরা। সামনেই একটা ডিকশনারি, যেটার ভেতরে অনেকগুলো বুকমার্ক রেখে দিয়েছে নোনোগুচি। হেসে সেটার দিকে হাত বাড়ালো মাকিমুরা। ওর অনুমান একদম সঠিক। পাঁচটা বুকমার্কের মধ্যে একটা হচ্ছে কম বয়সি এক নারীর ছবি। রাস্তার পাশে একটা রেস্তোরার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে। সাদা কালো দাবার ছকের মত নকশার একটা ব্লাউজ আর সাদা স্কার্ট তার পরনে।

    তার পরিচয় বের করতে খুব বেশি কষ্ট করতে হলো না। রাই হিদাকাকে দেখাতেই চিনে ফেলল। তরুণীর নাম হাতসুমি হিদাকা—কুনিহিকো হিদাকার মৃত স্ত্রী।

    “হাতসুমির বিয়ের আগে নাম ছিল শিনোদা,” আমাদের উদ্দেশ্যে বলে সে। “প্রায় বারো বছরের সংসার ছিল ওদের। পাঁচ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার আগ অবধি বিবাহিত ছিল ওরা। আমার সাথে হিদাকার যখন পরিচয় হয়, ততদিনে মারা গেছে হাতসুমি। কিন্তু অ্যালবামগুলোতে ওর ছবি এতবার দেখেছি যে চেহারা মুখস্থ হয়ে গেছে।”

    তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ওই অ্যালবামগুলো আমরা দেখতে পারবো কি না। “আমার কাছে নেই তো অ্যালবামগুলো। হিদাকার সাথে আমার বিয়ের পরপরই ওগুলো সহ হাতসুমির অন্যান্য সব জিনিসপত্র তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল ও। কানাডাতে আমরা যা যা পাঠিয়েছে সেখানে হয়তো কিছু জিনিস থাকতে পারে, আমি নিশ্চিত নই আসলে। তবুও খুঁজে দেখব। কানাডা থেকে ফেরত আসছে সবকিছু। কয়েকদিনের মধ্যেই জাপানে পৌঁছে যাবে।”

    অ্যালবামগুলো কেন ফেরত পাঠালেন হিদাকা তা জানতে চাইলাম।

    ভ্রুকুঁচকে গেল রাইয়ের। “আমার কারণেই হয়তো। কিন্তু, সত্যি বলতে ছবিগুলো থাকলেও আসলে আমার কোন সমস্যা হতো না। বারো বছর কিন্তু লম্বা সময়। প্রাক্তন স্ত্রীর কিছু স্মৃতিচিহ্ন রাখতেই পারত ও কিন্তু রাখেনি হিদাকা, এমনকি এই বিষয়ে আমাদের মধ্যে কোনদিন কোন কথাও হয়নি। কে জানে, হাতসুমির কথা মনে হলেই হয়তো খারাপ লাগে ওর। আর আমিও কখনো বিষয়টা নিয়ে কিছু বলিনি। এমন নয় যে হাতসুমিকে নিয়ে কোন প্রকার হিংসা কাজ করে আমার মধ্যে। আসলে কখনো দরকারই হয়নি এই ব্যাপারে কথা বলার।”

    আমার কাছে মনে হলো রাই হিদাকা একটু বেশিই চেষ্টা করছে এই বিষয়ে নিজেকে নির্মোহ প্রমাণ করার। তবে তার কোন দরকার ছিল না। তার বক্তব্যে কোন কিছু অস্বাভাবিক বা সন্দেহজনক ঠেকেনি আমার কাছে। তবে আমাদের কাছে তার স্বামীর প্রাক্তন স্ত্রী’র ছবি কিভাবে এলো তা জানতে চাইলো সে। কেসের সাথে ছবিটার কোন সম্পর্ক আছে কি না, সেটাও জিজ্ঞেস করলো।

    “এই ব্যাপারে আমরা এখনও নিশ্চিত নই আসলে,” বললাম। “আসলে ছবিটা বেশ অপ্রত্যাশিত একটা জায়গা থেকে হাতে এসেছে, তাই ভাবলাম একটু খোঁজখবর নেই। “

    “অপ্রত্যাশিত জায়গা বলতে কী বোঝাচ্ছেন?”

    বুঝলাম যে ভুল করে ফেলেছি। “মাফ করবেন, কিন্তু এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। “

    “

    তবে রাই হিদাকা ততক্ষণে অন্য ব্যাপারে ভাবতে শুরু করে দিয়েছে। হঠাৎই বিস্ময় ভর করলো তার চেহারায়। “মি. নোনোগুচি কিছুদিন আগে বেশ অদ্ভুত একটা প্রশ্ন করেছিল আমাকে।

    “কী প্রশ্ন?”

    “আমাদের ভিডিওটেইপগুলো কোথায়, সেটা জানতে চেয়েছিল।”

    “ভিডিওটেইপ?”

    “ভেবেছিলাম হিদাকা যে ছবিগুলো সংগ্রহ করেছে, সেগুলোর কথা বলছে। কিন্তু আমার ধারণা ভুল ছিল। আসলে হিদাকা লেখার রিসার্চের জন্যে যে ভিডিওগুলো দেখত, সেগুলোর কথা জানতে চায় সে।”

    “উপন্যাস লেখার জন্যে যে ভিডিওগুলো দেখতেন মি. হিদাকা?”

    “হ্যাঁ। রিসার্চের জন্যে কোথাও গেলে প্রায়ই ভিডিও করে আনত হিদাকা।”

    “মি. নোনোগুচিকে কি বলেছিলেন আপনি?”

    “বলি যে টেপগুলো খুব সম্ভবত কানাডায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। গোছগাছের সময় কাজ সংক্রান্ত সবকিছু হিদাকা নিজের হাতে সামলেছিল। তাই আমি আসলেই জানতাম না।”

    “নোনোগুচি কি বলেছিল এটা শুনে?”

    “বলেছিল কানাডা থেকে জিনিসগুলো ফেরত আসলে তাকে জানাতে। সে নাকি তার নিজের কাজ সংক্রান্ত কিছু টেপ ধার দিয়েছিল হিদাকাকে।”

    “টেপগুলো কিসের সেই ব্যাপারে কিছু বলেনি নোনোগুচি?”

    মাথা ঝাঁকিয়ে মানা করে দিলো রাই হিদাকা। “আপনার কি মনে হয়, হাতসুমির ভিডিও ওগুলো?”

    এই ব্যাপারে কোন মন্তব্য করলাম না। শুধু বলে রাখলাম টেপগুলো ফেরত আসলে আমাকে জানাতে। শেষ প্রশ্নটা করলাম এরপর। “এটা বাদে মি. নোনোগুচি এমন কোন কিছু কি জিজ্ঞেস করেছিল আপনাকে, যেটা অদ্ভুত শোনায়?”

    কিছুক্ষণ ইতস্তত করার পর মুখ খুলল রাই হিদাকা। “কুনিহিকো শেষকৃত্যে নয়, নোনোগুচি বেশ কিছুদিন আগে জিজ্ঞেস করেছিল হাতসুমির কথা। তবে শুধুমাত্র একবার।”

    “কি জিজ্ঞেস করেছিল?”

    “দুর্ঘটনাটার ব্যাপারে।

    “ওহ। দুর্ঘটনার ব্যাপারে আবার কি কথা।”

    “এবারেও কথা বলার আগে দ্বিধা ভর করলো রাইয়ের চেহারায়। তবে নিজেকে দ্রুত সামলে নিল সে। “বলেছিল, তার ধারণা ওটা নিছক কোন দুর্ঘটনা ছিল না।”

    এটা হেলাফেলা করার মত কোন কথা নয়। তাকে খুলে বলতে বললাম ব্যাপারটা।

    “সেটাই তো সমস্যা। এই বিষয়ে আর কথা বাড়ায়নি নোনোগুচি। হিদাকা কিছুক্ষণের জন্যে ঘর থেকে বের হয়েছিল, সেই সুযোগে মন্তব্যটা করে। কথাটা কেন উঠেছিল, সেটা ভুলে গেছি। কিন্তু শব্দগুলো মাথায় গেঁথে আছে।”

    কথাটা শুনে অবাক হলাম না। কারো হবু বউকে এই ধরণের কিছু বলা আসলেও অস্বাভাবিক।

    “যদি ওটা ‘নিছক কোন দুর্ঘটনা’ না হয়, তাহলে কি হয়েছিল? আপনি কি বলেছিলেন?”

    “আমি জিজ্ঞেস করি যে এমন একটা কথা কেন বলল সে। তখন তার চেহারা দেখে মনে হয় মুখ ফসকে বলে ফেলেছে কথাটা। আমাকে বিষয়টা ভুলে যেতে বলে অনুরোধ করে যেন হিদাকাকে কিছু না জানাই।”

    “আপনি কি আপনার স্বামীর সাথে এই বিষয়ে কোন আলাপ করেছিলেন?”

    “আসলে, বলিনি। যেমনটা আপনাকে আগেও বলেছি, হাতসুমিকে নিয়ে কখনোই খুব একটা কথা হতো না আমাদের মধ্যে। আর এমন একটা বিষয় নিয়ে হুটহাট কথাও বলা যায় না।“

    এই বিষয়ে দ্বিমতের কোন সুযোগ নেই।

    ***

    তবুও নিশ্চিত হওয়ার জন্যে ছবিটা আমরা হাতসুমি হিদাকাকে আগে থেকে চেনে এমন কয়েকজনকে দেখালাম-যে সম্পাদকদের কুনিহিকোর বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল এবং প্রতিবেশীদের। তাদের প্রত্যেকেই নিশ্চিত করলো ছবিটা হাতসুমির।

    এখন প্রশ্ন হচ্ছে হিদাকার প্রাক্তন স্ত্রী’র ছবি কেন নিজের কাছে রাখবে নোনোগুচি। তাও ওরকম একটা জায়গায়?

    এখানে খুব বেশি ভাবনা চিন্তার কিছু নেই। যার অ্যাপ্রন অ্যাপার্টমেন্টটায় পাওয়া গেছে, নেকলেসটা যাকে উপহার দেয়ার জন্যে কেনা হয়েছিল, ওনিকাওয়ায় নোনোগুচির সম্ভাব্য সহযাত্রী আর কেউ নয়, কুনিহিকো হিদাকার প্রাক্তন স্ত্রী হাতসুমি হিদাকা। ভ্রমণের কাগজপত্রে হাতসুমি নামটা বদলে হাতসুকো লেখা হয়েছে। সেই সময় হিদাকার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিল সে, অর্থাৎ নোনোগুচির সাথে তার সম্পর্কটাকে পরকীয়া বলা যায়। এটা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে তাদের সম্পর্কটা তৈরি হয়েছিল সাত বছর আগে হিদাকা এবং নোনোগুচির আবারো দেখা হওয়ার পর।

    আমি এখন মোটামুটি নিশ্চিত যে হিদাকাকে খুন করার মোটিভের সাথে এই ব্যাপারটা জড়িত। ওসামু নোনোগুচি কুনিহিকো হিদাকার গোস্টরাইটার হিসেবে কাজ করছিল এই থিওরিতে ফিরে যাওয়া যাক। সব প্রমাণ সেদিকেই নির্দেশ করছে, কেবলমাত্র নোনোগুচির মোটিভ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি টাকা পয়সা লেনদেনের কোন প্রকার প্রমাণ আমরা খুঁজে পাইনি। তাছাড়া বেশ কয়েকজন সম্পাদকের সাথে কথা বলে যা বুঝেছি, সাহিত্য জগতে সাফল্য এনে দিতে পারে এরকম কোন লেখার দাবি একজন লেখকের পক্ষে এভাবে ছেড়ে দেওয়া আসলেই বড় কঠিন। হোক সেটা টাকার জন্য।

    কিন্তু এমনটা কি হতে পারে যে, নোনোগুচির কোন প্রকার ঋণ ছিল হিদাকার কাছে?

    আর এখানেই কোন একভাবে হাতসুমি হিদাকা ঘটনার সাথে জড়িয়ে আছে। এটা বোঝার জন্য শার্লক হোমস হতে হবে না যে হিদাকা তাদের দুজনের অবৈধ সম্পর্কের বিষয়ে জেনে গিয়েছিল। ওসামু নোনোগুচিকে সে বাধ্য করত উপন্যাসগুলো লিখতে। বিনিময়ে মুখ বন্ধ রাখবে সে। কিন্তু সেক্ষেত্রে হাতসুমির মৃত্যুর পরেও কেন লেখা থামায়নি নোনোগুচি?

    ওসামু নোনোগুচি আর হিদাকাদের মধ্যে আসলে কি হয়েছিল, সেই বিষয়ে খোঁজ-খবর নিলেই কেবলমাত্র সত্যটা জানা যাবে হয়তো।

    এছাড়া রাই হিদাকাকে হাতসুমির মৃত্যু নিয়ে নোনোগুচির বলা ওই কথাটাও ভুলে গেলে চলবে না। এমন একটা কেন বলল সে?

    সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম, হাতসুমির মৃত্যুর ব্যাপারে আরো খোঁজ খবর নিব। ডাটাবেজে একটা সার্চ করে জানলাম পাঁচ বছর আগে মার্চ মাসে মারা যায় সে। রাত এগারোটার দিকে বাসার পাশের দোকান থেকে একটা জিনিস কিনতে যাওয়ার পথে ট্রাক মেরে দেয়। দুর্ঘটনাটা যেখানে ঘটে, সেখানে বেশ তীক্ষ্ণ একটা বাঁক ছিল, যে কারণে হাতসুমিকে দেখতে পায়নি চালক। বৃষ্টি হচ্ছিল সেই রাতে। রাস্তায় কোন জেব্রা ক্রসিংও ছিল না।

    আদলতে বিচারল বলেন যে ট্রাক ড্রাইভারের অমনোযোগীতার কারণেই দুর্ঘটনাটা ঘটেছে। এই ধরণের কেসে সচরাচর যা বলা হয় আরকি। কিন্তু নথিপত্র অনুযায়ী ড্রাইভার লোকটা কখনো দোষ স্বীকার করেনি। তার ভাষ্যমতে হাতসুমি নাকি হঠাৎ লাফ দিয়ে তার ট্রাকের সামনে এসে পড়েছিল। পথচারীদের রাস্তায় গাড়িচাপা দেয়ার পরে বেশিরভাগ চালকই এই একই কথা বলে। ট্রাফিক পুলিশেরাও এই অজুহাত শুনতে শুনতে ক্লান্ত। এই কেসের ক্ষেত্র চালক যদি সত্যি কথা বলেও থাকে, দুর্ভাগ্যবশত অন্য কেউ সেই মুহূর্তে রাস্তায় উপস্থিত ছিল না। সুতরাং তার কথা সত্যি না মিথ্যে তা যাচাই করার কোন উপায় নেই।

    তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম ট্রাক চালকের কথাই ঠিক। সেক্ষেত্রে নোনোগুচির বক্তব্য বিবেচনায় নিলে দুটো সম্ভাবনা দাঁড়ায়। আত্মহত্যা অথবা খুন।

    খুন করার জন্যে কেউ যদি আসলেও ধাক্কা দিয়ে থাকে হাতসুমিকে, তাকে অবশ্যই দেখতে পাওয়ার কথা ট্রাক চালকের। তেমনটা হলে

    আদালতে সেই ব্যক্তির কথা অবশ্যই উল্লেখ করতো সে।

    এখানে যৌক্তিক অনুমান এটাই বলে যে নোনোগুচির ধারণা হাতসুমি আত্মহত্যা করেছে।

    কিন্তু এই ভাবনাটাই বা তার মাথায় আসবে কেন? তার কাছে কি কোন প্রমাণ ছিল? হাতসুমি কোন বিদায়ী চিঠি বা চিরকুট পাঠিয়েছিল তাকে? নাকি ওসামু নোনোগুচি জানত কোন একটা কারণে আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা করছে হাতসুমি? হয়তো তাদের পরকীয়াই সেই কারণ।

    হয়তো হাতসুমির স্বামী জেনে ফেলেছিল পরকীয়ার ব্যাপারে। হিদাকা তাকে ছেড়ে চলে যাবে এই ভয়েই কি সে আত্মহত্যা করেছিল?

    মোদ্দা কথা, আমাকে হাতসুমির ব্যাপারে আরও তথ্য জোগাড় করতে হবে।

    চিফের অনুমতি জোগাড় করে মাকিমুরাকে সাথে নিয়ে তার বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। শিনোদাদের বসবাস ইয়োকোহামার কানাযাওয়া ওয়ার্ডে, বনেদি এক পাড়ায়। বাড়ির সামনে বিশাল বাগান। কানাযাওয়া পাহাড়ি এলাকা, গাড়ি বেশ সাবধানে চালাতে হয়।

    আমি শুনেছি হাতসুমির বাবা-মা দুজনেই বেঁচে আছেন। তবে সেদিন তার বাবা বাইরে ছিলেন, তাই কেবল মার সাথেই কথা হলো। ছোটখাটো গড়নের, পরনের পোশাক একদম পরিপাটি। ভদ্রমহিলার নাম ইউমি শিনোদা।

    আমাদের দেখে খুব একটা অবাক হলেন না তিনি। বরং বললেন যে আমাদের আসতে এত দেরি হয়েছে দেখেই বিস্মিত হয়েছে। কুনিহিকো হিদাকার হত্যাকান্ডের খবর সংবাদপত্রের প্রকাশিত হবার পর থেকেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন।

    জানতে চাইলাম প্রয়াত কন্যার স্বামীর সম্পর্কে তার ধারণা কেমন ছিল। “লেখকরা যেমন হয়, একটু খামখেয়ালী ধরনের। দ্রুত মেজাজ হারাতো। হাতসুমি একবার আমাকে বলেছিল কাজ নিয়ে কোন ঝামেলায় পড়লে মেজাজ একদম সপ্তমে চড়ে থাকতো হিদাকার। তবে আমার মতে স্বামী হিসেবে চমৎকার ছিল ও। চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিত সব বিষয়ে। ভদ্রমহিলা কথাগুলো মন থেকে বলছেন নাকি স্রেফ বলার জন্যে বলছেন তা বুঝতে পারছি না। বয়স্ক মানুষদের, বিশেষ করে নারীদের মাথায় কি ঘুরছে তা আন্দাজ করা মুশকিল।

    মহিলার ভাষ্যমতে কুনিহিকো হিদাকা এবং হাতসুমির পরিচয় হয়েছিল একটা ছোটখাটো বিজ্ঞাপনী সংস্থায় চাকরি করার সময়। সেখান থেকে একটা প্রকাশনীতে চাকরি নিগে চলে যায় কুনিহিকো হিদাকা। এর কিছুদিনের মধ্যেই দু’জনে বিয়ে করে। তার অল্প কয়েকদিন পরেই সেরা তরুণ লেখকের পুরষ্কারটা পায় হিদাকা। তখন চাকরি ছেড়ে লেখালেখিতে পুরোপুরি মনোনিবেশ করে সে।

    “ঘনঘন চাকরি বদলায়, এমন কারো হাতে মেয়েকে তুলে দেয়ার ব্যাপারে একটু সন্দিহান ছিলাম আমি আর আমার স্বামী। তবে ওদের কখনো টাকা-পয়সা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়নি। আর একবার যখন হিদাকার উপন্যাসগুলো বেস্টসেলারের তালিকায় উঠে যায়, মেয়ের ভালো থাকা নিয়ে আমাদের মন থেকে সমস্ত দুশ্চিন্তাও দূর হয় চিরতরে। কিন্তু দুর্ঘটনাটা…আপনার যতই টাকা থাকুক না কেন, ভাগ্যের হাত থেকে নিস্তার নেই।”

    মিসেস শিনোদার চোখের কোণে পানি জমলেও আমাদের সামনে কাঁদলেন না তিনি। পাঁচ বছর লম্বা সময় একজনের মানুষের পক্ষে শোক সয়ে নেয়া শেখার জন্যে।

    “দোকানে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি, তাই তো?” বললাম।

    “কুনিহিকো তেমনটাই জানিয়েছিল আমাদের। হাতসুমি নাকি স্যান্ডউইচ কেনার রুটি কিনতে বেরিয়েছিল।”

    “ট্রাক ড্রাইভারের দাবি হাতসুমি হঠাৎ লাফ দিয়ে রাস্তার মাঝে এসে পড়েছিলেন।”

    “সেটাই তো শুনেছি। কিন্তু আমার মেয়ে এরকম অস্থির স্বভাবের কখনোই ছিল না। তার চরিত্রের সাথে ভীষণ বেমানান ব্যাপারটা। তবে ও যেখান দিয়ে রাস্তা পার হবার চেষ্টা করেছিল সেটা ভীষণ বিপজ্জনক একটা জায়গা। বাঁকের কারণে আড়াল থেকে দেখা যায় না কিছু। আর হাতসুমিও তাড়াহুড়ায় ছিল।”

    “দুর্ঘটনার আগে কুনিহিকো হিদাকার সাথে ওনার সম্পর্ক কেমন যাচ্ছিল?”

    এই প্রশ্নটা শুনে বেশ অবাক হলেন মিসেস শিনোদা। “ঠিকঠাকই তো। একথা জিজ্ঞেস করছেন কেন?”

    “বিশেষ কোনো কারণ নেই। অনেক সময় দুর্ঘটনার সম্মুখীন ব্যক্তিরা তাদের ব্যক্তিগত জীবনের কোন কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকার কারণে চারপাশে মনোযোগ দিতে পারে না,” দ্রুত জবাব দিলাম।

    “আমার যতদূর মনে আছে সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। নতুন একটা উপন্যাসের কাজে হাত দিয়েছিল কুনিহিকো। তাই মাঝে মাঝে কিছুটা নিঃসঙ্গ বোধ করত হাতসুমি, এর বেশি কিছু না। “

    “উনি নিজে বলেছিলেন আপনাকে কথাগুলো?” নিঃসজ্ঞতার কারণেই অমনোযোগী থাকার ফলে দুর্ঘটনাটা হয়েছে, এটা আমার মনে হয় না। “দুর্ঘটনার আগে প্রায়ই দেখা হত আপনাদের?”

    “না ওর স্বামী নতুন একটু উপন্যাসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিল। তাছাড়া আমাদের এখানে খুব বেশি একটা আসতো না ও। যা কথা হওয়ার ফোনেই হত।“

    “তার কণ্ঠস্বর শুনে কি কোন কিছু অন্যরকম লেগেছিল আপনার কাছ?” মাথা ঝাঁকিয়ে মানা করে দিলেন বয়স্ক মহিলা, এরপর দ্বিধান্বিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, “কুনিহিকোর খুন হবার সাথে এসবের কোন সম্পর্ক আছে?”

    জবাবে বললাম যে যোগাযোগ থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। সাধারণত একটা খুন হবার পর ভিকটিমের পরিচিত সবার সাথে কথা বলা রুটিনের মধ্যেই পরে একজন ডিটেক্টিভের জন্য। ব্যাখ্যা তার মনঃপুত হয়েছে বলে মনে হয় ন।

    “আপনার মেয়ে কি কখনো আপনার সাথে ওসামু নোনোগুচির ব্যাপারে কথা বলেছিলেন?” এবারে মূল বিষয়ে আলাপ শুরু করলাম।

    “বলেছিল ওদের বাসায় মাঝে মাঝে আসতো সে। উনি তো বোধ হয় কুনিহিকোর বন্ধু, লেখক হবার ইচ্ছে ছিল যার?”

    “আর কিছু?”

    “আসলে এসব তো অনেক আগের কথা। ইদানিং সবকিছু মনে রাখতেও কষ্ট হয়। তবে এর বেশি আর কিছু ও আমাকে বলেনি খুব সম্ভবত।

    এসময় আমার মনে হলো ওসামু নোনোগুচির সাথে যদি আসলেই পরকীয়ার সম্পর্ক থাকতো হাতসুমির, তবে নিজের মাকে নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে কিছুই বলবে না সে।

    “আমি শুনেছি ওনার বেশিরভাগ ব্যবহার্য জিনিস এখানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছ। সেগুলো একটু দেখা যাবে কি?”

    বিস্ময় ভর করল ভদ্রমহিলার চোখ। “খুব বেশি কিছু নেই আমাদের এখানে।”

    “যে কোন কিছুই আমাদের কাজে আসতে পারে।”

    “আমি আসলে বুঝতে পারছি না কিভাবে…”

    “উনি কি নিয়মিত ডায়রি লিখতেন?”

    “না, এই অভ্যাস ছিল না ওর।”

    “কোন ছবির অ্যালবাম?”

    “হ্যাঁ, সেটা আছে…”

    “আমরা কি ওগুলো একটু দেখতে পারি?”

    “অ্যালবামগুলোয় কেবল কুনিহিকো আর হাতসুমির ছবি।”

    “ওটাই যথেষ্ট আমাদের জন্যে। একবার চোখ বুলালেই বুঝে যাব যে আমাদের কাজে কিছু আসবে কি না।”

    ভদ্রমহিলা নিশ্চয়ই ভাবছেন আমি এসব নিয়ে কেন কথা বলছি। ওসামু নোনোগুচির বিষয়টা জানালে এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো না আমাকে। কিন্তু চিফ অনুমতি দেননি এই ব্যাপারে কিছু বলার।

    চোখে সন্দেহ নিয়েই ভিতরে ঢুকে অ্যালবামগুলো নিয়ে আসলেন তিনি। একটা প্লাস্টিকের বক্সে রাখা ছিল ওগুলো।

    আমি আর ডিটেক্টিভ মাকিমুরা সবগুলো অ্যালবাম ঘাটতে শুরু করলাম। অ্যালবামগুলোর এই মহিলাই যে ওসামু নোনোগুচির বাসায় খুঁজে পাওয়া ছবিটার সেই মহিলা, সে বিষয়ে আর কোন সন্দেহ নেই।

    প্রতিটা ছবিতে টাইম স্ট্যাম্প দেয়া এক কোণায়, তাই নোনোগুচির সাথে হাতসুমির সম্ভাব্য যে সময়ে পরকীয়া চলছিল, সেই সময়ের ছবিগুলোও চোখে পড়লো। আমি ছবিগুলো দেখে কোন সূত্র পাওয়া যায় কি না সেটা বোঝার চেষ্টা করলাম।

    এবারেও মাকিমুরাই প্রয়োজনীয় ছবিটা খুঁজে পেল। নীরবে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো সেটা। কেন এই ছবিটা বিশেষভাবে ওর নজর কেড়েছে, তা বুঝতে অসুবিধা হলো না আমার।

    মিসেস শিনোদার কাছে অনুমতি চাইলাম অ্যালবামটা এক সপ্তাহ আমাদের হেফাজতে রাখার। সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালেও মানা করলো না সে।

    “হাতসুমির আর কিছু কি আপনার কাছে আছে?”

    “কিছু গয়নাপাতি আর জামাকাপড়। কুনিহিকো যেহেতু দ্বিতীয় বিয়ে করেছে তাই খুব সম্ভবত এগুলো আর ওই বাসায় রাখতে চায়নি।”

    “চিঠি বা পোস্টকার্ড জাতীয় কিছু নেই?”

    “না মনে হয়, আপনারা চাইলে আমি আরেকবার ঠিকমতো দেখতে পারি।”

    “ভিডিওটেইপ? ক্যাসেট টেপের মত ছোটগুলো?” হিদাকা তার রিসার্চের সময় ৮ মিলিমিটারের ছোট টেপগুলোই ব্যবহার করতো।

    “এরকম কিছু আমার চোখে পড়েনি।”

    “হাতসুমির কাছের কোন বন্ধুর নাম মনে আছে আপনার?”

    “কাছের কেউ?” বলে ভেতরে চলে গেলেন ভদ্রমহিলা। কিছুক্ষণ পর একটা নোটবুক হাতে নিয়ে ফিরলেন

    “এটা আমাদের অ্যাড্রেস বুক। ওর কয়েকজন বন্ধুবান্ধবের নাম এখানে আছে।”

    তিনজনের নাম আমাদের বেছে দিলেন তিনি। দুজন হাতসুমির স্কুলের বন্ধু আর একজন সেই বিজ্ঞাপনী সংস্থার প্রাক্তন সহকর্মী, যেখানে হিদাকা আর হাতসুমি একসাথে কাজ করতো। তিনজনই নারী। তাদের নামধাম আর যোগাযোগের নম্বর টুকে নিলাম আমি।

    ***

    অফিসে ফিরেই হাতসুমির বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ শুরু করে দিলাম আমরা। স্কুলের বান্ধবী দু’জনের সাথে কথা বলে জানা গেল যে বিয়ের পর তাদের খুব বেশি যোগাযোগ হয়নি হাতসুমির সাথে। তবে শিজুকো নাগানো নামের সহকর্মীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল হাতসুমির। এমনকি মারা যাওয়ার কিছুদিন আগেও ফোনে কথা হয়েছিল দুজনের।

    শিজুকো আমাদের বলে, “প্রথম দিকে কিন্তু হাতসুমির নজরে পড়েননি মি. হিদাকা। একদম প্রথম দর্শনে প্রেম, এটাও বলা যাবে না। কিন্তু মি. হিদাকা বারবার চেষ্টা করতে থাকেন। পেশাগত ব্যক্তিগত-কোন ক্ষেত্রেই ব্যর্থতা মেনে নেয়ার মত মানুষ ছিল না সে। আর হাতসুমিও একটু লাজুক আর চুপচাপ স্বভাবের। একটা পর্যায়ে গিয়ে আর মানা করতে পারেনি। মি. হিদাকা যখন তাকে প্রোপোজ করে, তখনও হয়তো পুরোপুরি নিশ্চিত ছিল না হাতসুমি, কিন্তু তাকে রাজি করিয়ে ফেলে মি. হিদাকা।

    “তবে আমি এটা বলবো না যে বিবাহিত জীবনে অসুখি ছিল ও। ভালোই দিন কাটাচ্ছিল, যদিও মি. হিদাকা পুরোপুরি লেখক বনে যাওয়ার পর একটু মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে যায়। লেখালেখির সময় তো নির্দিষ্ট কোন রুটিন মানত না হিদাকা, তাই আরকি। তবে কখনো অভিযোগ করেনি ও।”

    ফোন কলটার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে শিজুকো বলে, “আমিই ফোন দিয়েছিলাম ওকে, যদিও বলার মতন ওরকম কিছু ছিল না। ও সবসময় যেভাবে কথা বলে, সেভাবেই বলছিল। ঠিক কি কথা হয়েছিল, পুরোপুরি মনে নেই আমার। তবে খুব সম্ভবত কোথায় শপিংয়ে যাওয়া যায় আর নতুন রেস্তোরাঁর বিষয়ে আলাপ করেছিলাম। আসলে এ রকম টুকটাক ব্যাপারেই কথা হতো আমাদের মধ্যে। দুর্ঘটনার খবরটা শুনে অবাক হয়েছিলাম খুব। এতটাই যে কাঁদতেও ভুলে গেছিলাম। তবে শেষকৃত্যে গিয়েছিলাম।

    শেষকৃত্যে কুনিহিকো হিদাকাকে কেমন দেখেছিল, সেটা জিজ্ঞেস করলাম এবারে। “এরকম লোকেরা তো খুব একটা আবেগ দেখায় না কখনোই। কিন্তু সেদিন মি. হিদাকাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না পাঁচ বছর হয়ে গেল ওর মারা যাওয়ার।”

    ওসামু নোনোগুচির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে বলল-”কে? হিদাকার খুনি? সে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় এসেছিল কি না আমার মনে নেই। অনেক লোক হয়েছিল অনুষ্ঠানে। পুলিশ এতদিনে হাতসুমির বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছে কেন? খুনের সাথে এসবের কোন সম্পর্ক আছে?”

    ***

    হাতসুমির মা’র সাথে কথা বলার দু’দিন পর ডিটেক্টিভ মাকিমুরা আর আমি গেলাম ওসামু নোনোগুচির সাথে হাসপাতালে দেখা করতে। প্রথমে তার ডাক্তারের সাথে কথা বললাম।

    ভদ্রলোককে দেখে মনে হলো ঝামেলার মধ্যে আছেন। তিনি চাইছেন যত দ্রুত সম্ভব সার্জারিটা সেরে ফেলতে কিন্তু রোগি সম্মতি দিচ্ছে না। নোনোগুচির মতে সার্জারিতে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা কম হলে সে বরং সার্জারি না করে আরো কয়েকটা দিন বেশি বাঁচতে চায়।

    “সার্জারির কারণে তার মৃত্যু তরান্বিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে?” ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম।

    “আসলে এসব ব্যাপারে কিছুই বলা যায় না। সম্ভাবনা তো আছে অবশ্যই।”

    কিন্তু ফলাফল ভালো হবার সম্ভাবনাও যেহেতু আছে, ডাক্তার যত দ্রুত সম্ভব সার্জারিটা করে ফেলতে চান।

    এই কথা শুনে আমরা নোনোগুচির ঘরে গেলাম। বসে বসে একটা বই পড়ছিল সে। আগের তুলনায় একটু শুকিয়ে গেলেও চেহারা দেখে তুলনামূলক ভালোই মনে হলো তাকে।

    “আপনাদের কথাই ভাবছিলাম। অনেকদিন দেখা নেই,” চেহারা দেখে খানিকটা সুস্থ মনে হলেও গলার স্বরে কোন জোর নেই ওসামুর।

    “আরেকটা অনুরোধ আছে আমার,” বললাম।

    ওসামু নোনোগুচিকে কিছুটা হতাশ মনে হলো। “আপনি দেখি নাছোড়বান্দা। নাকি ডিটেক্টিভ হতে হতে এরকম বনে যায় সবাই?”

    জবাবে কিছু না বলে ডিকশনারিতে খুঁজে পাওয়া হাতসুমির ছবিটা দেখালাম তাকে।

    একদম জমে গেল নোনোগুচির চেহারা। মুখ খুলেও বন্ধ করে নিল। পরিস্কার বুঝতে পারছি যে তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

    “হ্যাঁ?” কোনমতে বলল কিছুক্ষণ পরে। বুঝতে পারলাম যে এই একটা শব্দ বলতেই তার বেগ পেতে হচ্ছে।

    “কুনিহিকো হিদাকার প্রাক্তন স্ত্রীর ছবি আপনার কাছে কেন? তাও ওরকম একটা জায়গায়?”

    জানালা দিয়ে কিছুক্ষণ বাইরে তাকিয়ে থাকলো নোনোগুচি। ভাবছে। তার চেহারা থেকে নজর হটালাম না আমি।

    “আমার কাছে হাতসুমির ছবি আছে তো কি হয়েছে?” জানালা থেকে মুখ না ফিরিয়ে অবশেষে বলল সে। “আপনার কেসের সাথে এটার কোন সম্পর্ক নেই ডিটেক্টিভ।”

    “সেই সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে দিন।”

    “আপনাদের সত্যি কথাটাই বলছি।”

    “তাহলে এই ছবিটার ব্যাপারে কিছু বলুন দয়া করে।“

    “বলার মত কিছু তো নেই। ওর একটা ছবি তুলেছিলাম কিন্তু দেওয়ার কথা মনে ছিল না, ব্যস।“

    “আর সেটা বুকমার্ক হিসেবে ব্যবহার করতেন?”

    “সামনে পড়ে ছিল, এজন্য হয়তো।”

    “ছবিটা কোথায় তোলা? আর কবেকার। দেখে তো মনে হচ্ছে রাস্তার পাশের কোন রেস্তোরাঁ।”

    “ভুলে গেছি। ওদের দুজনের সাথে প্রায়ই ঘুরতে বের হতাম আমি। নানা রকম উৎসবে যেতাম। ওরকমই কোন একটায় হয়তো।“

    “কিন্তু ছবিতে তো কেবল হাতসুমিকেই দেখা যাচ্ছে। কোন দম্পতির সাথে কোথাও ঘুরতে গিয়ে কেবলমাত্র একজনের ছবি তোলার বিষয়টা একটু কেমন না?”

    “দেখতেই তো পাচ্ছেন একটা রেস্তোরায় তোলা। হিদাকা হয়তো বাথরুমে গিয়েছিল। “

    “সেবারের আর কোন ছবি আছে আপনার কাছে?”

    “আমি তো বুঝতেই পারছি না এটা কোথাকার ছবি, আপনাকে কিভাবে বলবো? কোন একটা অ্যালবামে আছে হয়ত। আমি ফেলেও দিতে পারি সেটা। যা-ই হোক, আমার মনে নেই।”

    বোঝাই যাচ্ছে যে ভীষণ অস্বস্তিতে ভুগছে ওসামু নোনোগুচি।

    আরো দুটো ছবি বের করে তার সামনে রাখলাম। ছবি দুটোই ফুজি পর্বতের সামনে তোলা। “এগুলোর কথা তো আপনার মনে আছে, তাই না?”

    ছবিগুলোর দিকে তাকালো সে। খেয়াল করলাম, একবার ঢোক গিলল। “আপনার একটা অ্যালবাম থেকেই ছবিগুলো খুঁজে পেয়েছি আমরা। এগুলোর কথা নিশ্চয়ই ভোলেননি?”

    মাথা ঝাঁকাল নোনোগুচি। “কবে যে তোলা হলো ঠিক মনে পড়ছে না।” তার কণ্ঠ দুর্বল শোনাচ্ছে এখন।

    “দুটো ছবিই এক জায়গায় তোলা। আপনার মনে নেই কোথায়?”

    “সরি।”

    “ফুজি নদী। একদম ঠিকঠাকভাবে বললে ফুজি নদীর পাশে রেস্ট এরিয়াতে। আপনাকে একটু আগে দেখানো ছবিটাও সেখানেই তোলা। পেছনের সিড়িটা দেখুন, একদম এক।”

    কিছু বলছে না ওসামু নোনোগুচি।

    আমার দলের বেশ কয়েকজন তদন্ত কর্মকর্তা রেস্ট এরিয়াটা চিনতে পেরেছে। তাদের কাছ থেকে এই কথা শুনে শিজুকা প্রিফেকচারের পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সাথে যোগাযোগ করি আমরা। তারাই একদম সঠিক জায়গাটা খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

    “বাথরুমের ছবিগুলোর ব্যাপারে কিছু না বলতে পারলেও, ফুজি পর্বতের ছবিগুলোর ব্যাপারে তো কিছু না কিছু মনে আছে আপনার? ওগুলো আপনার অ্যালবাম থেকেই পেয়েছি আমরা। আচ্ছা, বলুন তো, এই ছবিগুলো রাখলেও হাতসুমির ছবিটা আপনি অ্যালবামে রাখেননি কেন?”

    “সরি, এই ছবিগুলোর কথা মাথাতেই ছিল না আমার।” ইচ্ছেকৃত বোকা সেজে থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে।

    “আরো একটা ছবি আছে আমার কাছে,” বলে শেষ ছবিটা জ্যাকেটের পকেট থেকে বের করলাম আমি। এই ছবিটাই হাতসুমির মা’র কাছ থেকে ধার নিয়েছিলাম আমরা। “এখানে কিছু একটা নিশ্চয়ই আপনার পরিচিত ঠেকবে?”

    ছবিটার দিকে তাকাতে দেখলাম তাকে। তিনজন মহিলা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। একটু হলেও বড় হয়ে যেতে দেখলাম নোনোগুচির চোখজোড়া।

    “মি. নোনোগুচি?”

    “সরি, আপনি কি বলতে চাইছেন তা বুঝতে পারছি না,” ফ্যাসফেসে শোনাচ্ছে তার কন্ঠস্বর।

    “আসলেই? মাঝের জন যে হাতসুমি হিদাকা, সেটা তো বুঝতে পারছেন?”

    নোনোগুচির নীরবতাকে সম্মতি হিসেবে ধরে নিলাম।

    “তার পরনের অ্যাপ্রনটা দেখুন। দাবার ছকের মত নকশা যেটার। আপনার অ্যাপার্টমেন্টে ঠিক এরকম একটা অ্যাপ্রনই পেয়েছিলাম আমরা।”

    “তো?”

    “তো ওনার ছবি নিজের কাছে রাখার যেনতেন একটা ব্যাখা দিয়ে পার পেয়ে গেলেন। কিন্তু অ্যাপ্রনটা নিজের কাছে রাখার ব্যাপারে কী বলবেন? আপনার সাথে হাতসুমি হিদাকার কোন সম্পর্ক ছিল কি না?”

    গোঙিয়ে উঠল নোনোগুচি।

    “দয়া করে সত্যটা খুলে বলুন। আপনাকে আগেও বলেছি, যত লুকোবেন, তত গভীরে গিয়ে ঘাঁটতে হবে আমাদের। আর এটা মাত্র সময়ের ব্যাপার যে সংবাদমাধ্যমের কেউ কিছু একটা জেনে কাল্পনিক রিপোর্ট ছেপে ফেলল। এমনটা নিশ্চয়ই কাম্য নয় আপনার। আমাদের এখনই সব খুলে বলুন, তাহলে আর ওরকম কিছু হবেনা।“

    আমার কথা আদৌ কোন প্রভাব ফেলল কি না তার মনে তা বোঝা যাচ্ছিল না। শুধু এটুকু বুঝতে পারছিলাম যে ভীষণ দোটানায় পড়ে গেছে।

    অবশেষে মুখ খুলল সে, “আমার আর হাতসুমির মধ্যে যা-ই ঘটুক কেন, তার সাথে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। এ কথা পরিষ্কার বলে দিতে চাই আপনাদের।”

    এতক্ষণে কাজের কথা বলছে সে। “তাহলে আপনি স্বীকার করে নিচ্ছেন যে ওনার সাথে আপনার সম্পর্ক ছিল?”

    “এটাকে ঠিক সম্পর্ক বলা যায় কি না জানি ন। কিছু সময়ের জন্য আমরা একে অপরের একটু কাছাকাছি হয়েছিলাম। কিন্তু আবেগটুকু ফিকে হয়ে যেতেও সময় লাগেনি।”

    “আরম্ভটা হয়েছিল কখন?”

    “আমার ঠিক মনে নেই। হিদাকাদের ওখানে যাওয়া আসা শুরু করার পাঁচ ছয় মাসের মধ্যে হয়তো। খুব জ্বরে পড়েছিলাম সেবার। হাতসুমি আমাকে দেখতে আসত মাঝে মাঝে। ওভাবেই শুরু।”

    “কতদিন চলেছিল এসব?”

    “দুই-তিন মাস। যেমনটা বললাম, দু’জনই খুব দ্রুত আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। এসব ক্ষেত্রে যেমনটা হয়, প্রথম দিকে খুব জোশ থাকে, এরপর উত্তাপ হারায় সম্পর্ক।”

    “কিন্তু এরপরেও তো হিদাকাদের সাথে সম্পর্ক রাখেন আপনি। অন্য কেউ হলে তো দূরে দূরে থাকত।”

    “এমন কিন্তু নয় যে আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা বিষিয়ে উঠেছিল। একে অপরকে দেখতে পারতাম না। ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলি আমরা, সিদ্ধান্ত নেই যে সম্পর্কটা আর আগে বাড়ানো উচিত হবে না। তবে সেটা যে পুরোপুরি সম্ভব হয়েছিল, তা বলবো না। ওদের বাড়িতে গেলে একজন আরেকজনের দিকে তাকাতাম। তবে বেশিরভাগ সময়েই বাইরে থাকত ও। ইচ্ছেকৃতভাবেই এড়ানোর চেষ্টা করতো আমাকে। ও সেই সময় দুর্ঘটনার সম্মুখীন না হলে আমি নিজেই যাওয়া বন্ধ করে দিতাম হয়তো।”

    একবার মুখ খোলার পর আর থামছে না নোনোগুচি। কিছুক্ষণ আগের সেই ভয় বা দ্বিধার ছিটেফোঁটাও উপস্থিত নেই। তার অভিব্যক্তি খেয়াল করলাম আমি। বোঝার চেষ্টা করছি কতটুকু সত্য বলছে সে আর কতটুকু মিথ্যা। যদিও চেহারায় মিথ্যে বলার কোন ছাপ আপাতদৃষ্টিতে চোখে পড়ছে না। কিন্তু আশ্চর্য রকমের শান্ত মনে হ”েছ তাকে।

    “অ্যাপ্রনটার পাশাপাশি একটা নেকলেস আর ট্রাভেল এজেন্সির ফর্মও পেয়েছি আমরা।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো সে। “একসাথে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম আমরা। কিন্তু সেই পরিকল্পনা আর বাস্তবায়িত হয়নি।”

    “কেন?”

    “কারণ আমাদের মনে হয়নি কাজটা ঠিক হবে। এটাও বলতে হবে?”

    “আর নেকলেসটা?”

    “যেমনটা আপনারা সন্দেহ করছেন, ওটাও ওকে দেয়ার জন্যেই কিনেছিলাম। কিন্তু সিদ্ধান্ত বদল করি শেষ মুহূর্তে। অন্যান্য পরিকল্পনাগুলোর মতনই।”

    “আপনার কাছে কি হাতসুমি হিদাকার আর কিছু আছে?”

    কিছুক্ষণ ভাবলো ওসামু নোনোগুচি। “একটা নেকটাই খুঁজে পাবেন আমার ড্রয়ারে। ওটা ছিল ওর পক্ষ থেকে দেয়া উপহার। এছাড়া কাবার্ডে একটা মেইসান চায়ের কাপ আছে। আমার বাসায় এলে ওটা ব্যবহার করতো ও। কাপটা আমরা একসাথে গিয়ে কিনেছিলাম।“

    “কোত্থেকে কিনেছিলেন?”

    “গিনজার কোথাও থেকে। কিন্তু দোকানটার নাম বা অবস্থান মনে নেই আমার।”

    পরের প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করার আগে নিশ্চিত হলাম যে ডিটেক্টিভ মাকিমুরা তথ্যটা টুকে নিয়েছে। “আপনি বোধহয় এখনও হাতসুমি হিদাকাকে ভুলতে পারেননি, তাই না?”

    “ভুলিনি, কিন্তু এসব অনেক আগের বিষয়।“

    “তাহলে স্মৃতিচিহ্নগুলো এত যত্ন করে রেখে দেয়ার কারণ কি?”

    “এত যত্ন’ করে রেখে দিয়েছি, এটা একটু বেশি বেশি বলে ফেলছেন। ওগুলো কখনো ফেলে দেয়া হয়নি—এই যা।”

    “আর ছবিটা? বুকমার্ক হিসেবে যেটা ব্যবহার করছিলেন সেটাও ফেলে দেয়ার কথা ভুলে গেছেন?”

    এই প্রশ্নটার জবাব দিতে বেগ পেতে হলো নোনোগুচিকে। কিছুক্ষণ পর মুখ খুলল সে, “আপনারা যা খুশি ভেবে নিতে পারেন, খুনের সাথে সবার কোন সম্পর্ক নেই।”

    “আপনি নিশ্চয়ই মি. সেকিকাওয়ার উপর অনেক রেগে আছেন?”

    “এটা আবার কে?”

    “তাতসুয়ো সেকিকাওয়া। নামটা তো শুনেছেন নিশ্চয়ই?”

    “না। কখনো শুনিনি।”

    তার এই জবাবেরই অপেক্ষা করছিলাম আমি।

    এবারে বললাম,”হাতসুমিকে যে ট্রাকটা ধাক্কা দিয়েছিল সেটা উনিই চালাচ্ছিলেন।”

    নোনোগুচিকে দেখে মনে হলো ভীষণ অবাক হয়েছে। “ওহ। এই নাম ছিল লোকটার।”

    “আপনি যেহেতু লোকটার নামও জানেন না, তাহলে কি আমরা ধরে নেব তার প্রতি আপনার কোন রাগ নেই।

    “না, ওরকম কিছু না। রাগ তো অবশ্যই আছে। নামটা ভুলে গিয়েছিলাম আরকি। তাছাড়া রাগ করলে তো আর ওকে ফিরিয়ে আনা যাবে না।”

    “আপনি ড্রাইভারের উপর রাগ করে নেই…এর অর্থ কি এটা হতে পারে যে আপনি ধরেই নিয়েছিলেন যে ঘটনাটা আত্মহত্যা।”

    বিস্ফোরিত নয়নে আমার দিকে তাকালো নোনোগুচি। “একথা কেন বলছেন?”

    “কারণ আপনি একজনকে এই কথা বলেছিলেন।”

    আমি বোধহয় যথেষ্ট হেয়ালি করতে পারিনি, কারণ নোনোগুচির চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে বুঝে গেছে কার কথা বলছি।

    “দেখুন”আসলে আবেগের বশে কথাটা বলে ফেলেছিলাম। খুব বেশি ভাবনা চিন্তা করিনি। এটাকে ধরে বসে থাকবেন না দয়া করে।”

    “সে যা-ই হোক, আমি কারণটা জানতে চাইছি।”

    “ভুলে গিয়েছি। আপনাকে যদি এখন আমি পাঁচ বছর আগেকার ছোট কোন কথার ব্যাখা জিজ্ঞেস করি, আপনি নিজেও বলতে পারবেন না। “

    এরপর আর কথা বাড়ালাম না। তবে বের হয়ে আসার আগে নোনোগুচিকে বলে দিলাম যে শিঘ্রই আবার দেখা হবে আমাদের।

    ব্যক্তিগতভাবে, মনে মনে আমি খুশিই ছিলাম। তার সাথে কথোপকথনে এটুকু মোটামুটি নিশ্চিত হতে পেরেছি যে সে আসলেই ধরে নিয়েছে হাতসুমি আত্মহত্যা করেছে।

    ***

    আমরা কেবলই অফিসে ফিরেছি এসময় রাই হিদাকার ফোন এলো। কানাডা থেকে জিনিসগুলো ফেরত এসেছে আর সেখানে কুনিহিকো হিদাকার অনেকগুলো ভিডিও টেপ খুঁজে পেয়েছে সে। সাথে সাথে বের হয়ে পড়লাম আমরা।

    “এই কয়টা টেপই পেয়েছি,” ৮ মি.মি.র সাতটা টেপ সাজিয়ে রাখা টেবিলে। প্রতিটার রেকর্ডিং টাইম এক ঘন্টা। একটা একটা করে ওগুলো হাতে নিয়ে দেখলাম আমি। প্রতিটায় ক্রমান্বয়ে এক থেকে সাত পর্যন্ত নম্বর দেয়া। কোনটারই আলাদা কোন শিরোনাম নেই। ভেতরে কি আছে তা মনে রাখার জন্য নিজস্ব কোন পদ্ধতি ছিল কুনিহিকো হিদাকার।

    রাইকে জিজ্ঞেস করলাম সে ভিডিওগুলো দেখেছে কি না।

    দেখেনি সে। “আসলে দেখার কথা মনে হতেই কেমন জানি লাগছিল।”

    জিজ্ঞেস করলাম ওগুলো ধার নিতে পারি কি না। জবাবে মাথা নেড়ে সায় দিলো সে।

    “এখানে আরেকটা জিনিস আপনারা বোধহয় দেখতে চাইবেন।” লাঞ্চ বক্সের মত দেখতে চৌকো একটা কাগজের বক্স টেবিলের উপরে রাখল রাই। “হিদাকার কাপড় চোপড়ের সাথে রাখা ছিল এটা। আমি আগে কখনো দেখিনি। অর্থাৎ ও নিজেই রেখেছিল সেখানে।”

    বক্সটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে ঢাকনা খুললাম। ভেতরে প্লাস্টিকে মোড়ানো একটা ছুরি। হাতলটা বেশ শক্তপোক্ত গড়নের। আর ফলাটা কমপক্ষে বিশ সেন্টিমিটার লম্বা। বক্সটা হাতে তুলে নিলাম। ওজন আছে জিনিসটার।

    রাইকে জিজ্ঞেস করলাম সে জানে কি না ছুরিটা কি কাজে ব্যবহৃত হয়। মাথা ঝাঁকিয়ে না করে দিলো, “আমার কোন ধারনাই নেই, সেজন্যই তো আপনাদের দেখাচ্ছি। কুনিহিকো এটার কথা আগে কখনো আমাকে বলেনি।”

    ব্যাগের ভেতর দিয়েই ছুরিটা ভালো মত দেখলাম। খুব একটা ব্যবহৃত মনে হচ্ছে না। তবে এটা নিশ্চিত যে জিনিসটা নতুন নয়। কুনিহিকো হিদাকার পাহাড়ে চড়ার অভ্যাস ছিল কি না জিজ্ঞেস করলাম। জবাবে রাই বলল, তার জানামতে ছিল না।

    টেপসমেত ছুরিটা হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টে নিয়ে এলাম। এরপর ভাগাভাগি করে দেখতে শুরু করলাম ভিডিওগুলো। আমার ভাগ্যে যে টেপটা পড়েছে সেটায় কিয়োটোর ঐতিহ্যবাহী নানারকম শিল্পের ভিডিও। দক্ষ শিল্পীদের হাতের কাজ, তাদের জীবনধারা-এসব। মাঝে মাঝে নিচু স্বরে কিছু মন্তব্য করছে একজন। এটা যে কুনিহিকো হিদাকার কন্ঠস্বর, তা বুঝতে সমস্যা হলো না। আমার টেপটার আশি ভাগ জুড়ে এই ভিডিও, বাকিটা ব্ল্যাংক।

    অন্যান্য ডিটেক্টিভদের সাথে কথা বলে বুঝলাম তাদের টেপগুলোতেও কম বেশি এই একই জিনিস ছিল। হিদাকার লেখালেখির জন্যে রিসার্চ ফুটেজ বাদে আর কিছু নেই টেপগুলোতে। তবুও আরেকবার নিশ্চিত হবার জন্যে টেপগুলো বদলাবদলি করে দেখলাম আমরা। কিন্তু মতামত বদলাল না।

    আমি ধরেই নিয়েছিলাম ওসামু নোনোগুচি টেপগুলো দেখতে চায় কারণ সেখানে হয়তো বিশেষ কিছু আছে। যেটা সে চায় না আমরা দেখি। কিন্তু একটা টেপেও এমন কিছু চোখে পড়লো না যেটার সাথে নোনোগুচির কোন সম্পর্ক থাকতে পারে।

    অফিসের সবাইই যে কমবেশি হতাশ, তা পরিস্কার বুঝতে পারছি। একটা সুযোগ হারিয়েছি আমরা। এই সময় ফরেনসিক থেকে খবর এলো যে ছুরিটার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করেছে তারা।

    তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, “ফলার একপাশে উঁচুনিচু কিছু দাগ প্ৰমাণ করে যে ব্যবহৃত হয়েছে জিনিসটা। কিন্তু সেই ব্যবহারের পরিমাণ খুব বেশি নয়। রক্তের উপস্থিতির কোন প্রমাণ মেলেনি। তবে হাতের ছাপ পাওয়া গেছে, যেটা ওসামু নোনোগুচির বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি।”

    এটা অবাক করার মত ব্যাপার। কুনিহিকো হিদাকা ওসামু নোনোগুচির আঙ্গুলের ছাপ সমেত একটা ছবি এত যত্ন করে রেখে দেবে কেন। আর বিষয়টা সে তার স্ত্রীর কাছ থেকেও লুকিয়েছে, কেন? একটা জবাব আমার মাথায় ঘুরতে শুরু করলো। কিন্তু সেটা এতটাই বিস্ময়কর যে আরো প্রমাণাদি ছাড়া কাউকে কিছু বলার সাহস পেলাম না।

    একবার ভাবলাম নোনোগুচিকে জিজ্ঞেস করবো ছুরিটার কথা। কিন্তু আপাতত বাদ দিলাম চিন্তাটা। ডিপার্টমেন্টের সবার মাথায় একই চিন্তা ঘুরছে। এই ছুরিটাই হবে আমাদের বাজির শেষ দান।

    ***

    পরদিন রাই হিদাকার কাছ থেকে আরেকট ফোন পেলাম আমরা। আরেকটা টেপ খুঁজে পেয়েছে সে। আমরা দ্রুত ছুটলাম সেটা নিয়ে আসতে।

    “এটা দেখুন,” বলে সমুদ্রের ডাক বইটার একটা পেপারব্যাক কপি আমার দিকে বাড়িয়ে ধরলো রাই। এই বই। আগেও আমাকে দিয়েছিল।

    কৌতূহলী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম।

    “প্রচ্ছদটা উল্টান।“

    তার কথামতো কাজ করলাম। হাঁ হয়ে গেল ডিটেক্টিভ মাকিমুরার মুখটা। আমারও প্রায় একই দশ। ভেতরে বইয়ের পাতাগুলো কেটে বের করে ফেলা হয়েছে। সেখানে গুজে রাখা হয়েছে একটা ভিডিও টেপ। মনে হচ্ছে কোন পুরনো গোয়েন্দা সিনেমার দৃশ্য।

    “এই বইটা অন্যান্য বইগুলোর থেকে আলাদা একটা বক্সে রাখা ছিল। এজন্যেই কৌতূহলী হয়ে খুলে দেখেছিলাম,” আমাদের বলল রাই হিদাকা।

    জানতে চাইলাম তার বাসায় এই মুহূর্তে কোন ভিডিও প্লেয়ার আছে কি না। সে হ্যাঁ বলাতে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ওখানেই ভিডিওটা দেখো। অফিসে ফেরত নিয়ে গিয়ে সময় নষ্ট করার কোন মানে নেই।

    প্রথমেই একটা পরিচিত জানালা আর বাগানের ভিডিও ভেসে উঠল পর্দায়। হিদাকাদের উঠানের দৃশ্য। ভিডিওটা রাতে করা হয়েছে তাই চারপাশ। আলোর উৎস বলতে মাঝখানের জানালাটা।

    পর্দার একদম কোনায় দেখা যাচ্ছে ভিডিওটা কবে এবং কখন করা হয়েছিল। সাত বছর আগের ডিসেম্বর মাস।

    উত্তেজনার বশে সামনে ঝুঁকে বসলাম। কি দেখতে পাবো সেই চিন্তা ঘুরছে মাথায়। কিন্তু ক্যামেরায় কেবল জানালা আর বাগানটাই দেখা যাচ্ছে। ঘটছে না কিছুই।

    “ভিডিওটা ফাস্ট ফরোয়ার্ড করে একটু এগিয়ে দেই?”

    এবারে নাটকের কুশীলব পা রাখলেন মঞ্চে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য নেম অব দ্য গেম ইজ অ্যা কিডন্যাপিং – কেইগো হিগাশিনো
    Next Article নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    Related Articles

    কেইগো হিগাশিনো

    স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স – কিয়েগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য রেড ফিঙ্গার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য মিরাকলস অব দ্য নামিয়া জেনারেল স্টোর – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    নিউকামার – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    কেইগো হিগাশিনো

    দ্য নেম অব দ্য গেম ইজ অ্যা কিডন্যাপিং – কেইগো হিগাশিনো

    August 1, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.