Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    বাঙালী হিন্দুর বর্ণভেদ – নীহাররঞ্জন রায়

    September 9, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    যুগলবন্দী – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত এক পাতা গল্প102 Mins Read0

    যুগলবন্দী – পরিচ্ছেদ ৬

    ০৬.

    অনন্যর যা কিছু অস্থিরতা, মানসিক চাঞ্চল্য—সবই রাত্রে। রাত যত বাড়তে থাকে ততই যেন। কেমন ছটফট করতে থাকে। বোঝা যায় সে যেন কেমন চঞ্চল, অশান্ত, অস্থির-যতক্ষণ না ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, ঐ একই অবস্থা চলতে থাকে। রাত দুটোয় ঘুম ভেঙে যায়, সে ঘর থেকে বের হয়ে যাবার চেষ্টা করে, কিন্তু বিপাশা জেগে থাকে বলে ঘর থেকে বেরুতে পারে না।

    কিন্তু যতক্ষণ না অনন্য একটু সুস্থ হয়, ক্লান্তিতে অবসন্ন হয়ে পড়ে—বিপাশাকে যেন একটু যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়, আবার ঘুমিয়ে পড়লে সে নিশ্চিন্ত, এবং মজা হচ্ছে সকালে ঘুম ভাঙার পর অনন্য যেন সম্পূর্ণ অন্য মানুষ।

    ধীর-স্থির-শান্ত-বিপাশার সঙ্গে সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে কথা বলে, তাকে আদর করে, বার বার অকারণে ডাকে—বিপাশা! বিপাশা!

    বিপাশা হয়ত পাশের ঘরে তখন কাজে ব্যস্ত, তবু স্বামীর ডাক কানে গেলেই সে ছুটে আসে। বলে, কি, ডাকছ কেন?

    হাসতে হাসতে অনন্য বলে, না, এমনি–

    এমনি ডাকছিলে?

    হ্যাঁ, দেখছিলাম—

    কি দেখছিলে?

    তুমি কোথায়—

    একদিন বলেছিল অনন্য, জান, বড় ভয় করে–

    ভয়! কিসের ভয়?

    তুমি যদি হারিয়ে যাও!

    হারিয়ে যাব?

    যদি যাও!

    আচ্ছা পাগল তো—বিপাশা বলেছিল।

    না, না–সত্যিই মনে হয়—হঠাৎ যদি তুমি কোথাও চলে যাও?

    কোথায় আবার যাব?

    যেতেও তো পার

    না, যাব না।

    সত্যি বলছ?

    হ্যাঁ।

    আজ চেয়ারে নিদ্রাহীন বসে বসে ঐ কথাগুলোই কেন যেন মনে পড়তে থাকে বিপাশার। তবু দিনের বেলাটা অনন্য যেন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।

    একজন সুস্থ সবল মানুষ যেমন, ও যেন তেমনি।

    অফিসে যায় ঠিক সময়ে।

    অফিসের কাজকর্মের মধ্যে কখনও কোন অসংগতি ধরা পড়েনি। শোনাও যায়নি আজ পর্যন্ত সেরকম কোন কথা।

    অন্তত বিপাশার কানে আসে নি।

    মানুষের ঐ বয়সে কত বন্ধু থাকে—অনন্যর সেরকম কেউ নেই। মাত্র একজন প্রায়ই আসে তাদের বাড়িতে–নলিনাক্ষ সেন।

    নলিনাক্ষ একটা মার্চেন্ট অফিসে সামান্য মাহিনায় চাকরি করে। বাবা-মা ভাইবোন অনেকগুলো পোষ্য নিয়ে নলিনাক্ষর সংসার। অনন্যর স্কুলের বন্ধু নলিনাক্ষ।

    ধনীর পুত্র অনন্য আজ উচ্চশিক্ষিত এবং জীবনে নিজেও সুপ্রতিষ্ঠিত।

    নলিনাক্ষ আজও জীবনযুদ্ধে পর্যদস্ত হয়ে চলেছে প্রতিদিন—প্রতি মুহূর্তে।

    নলিনাক্ষ মধ্যে মধ্যে আসে এখানে—অনন্য ওকে পেলে খুব খুশি হয়। হৈ-চৈ করে গান গায়, হাসে-মজার মজার গল্প করে।

    বিপাশারও খুব ভাল লাগে মানুষটাকে। তার মুখেই শুনেছে বিপাশা, অফিসে মানে ব্যাংকে অনন্য নাকি একেবারে অন্য মানুষ!

    অনন্যর অসুস্থতার খবর নলিনাক্ষও জানে। কিছুটা অনন্য নিজেই বলেছে তাকে বিপাশাও কিছু কিছু বলেছে।

    নলিনাক্ষ সব শুনে বলেছিল, তুমি কিছু ভেব না বৌদিও চিরদিনই একটু বেশী ভাবপ্রবণ, একটু সেন্টিমেন্টাল। তাছাড়া আর কোন দোষ নেই ওর মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক।

    তবে রাত্রে ওরকমটা ওর হয় কেন?

    ভাল ডাক্তার দেখাও, দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।

    নলিনাক্ষই ডাঃ দাশগুপ্তের কথা বলেছিল তাকে একবার দেখাবার জন্য বলেছিল।

    পরের দিন অনন্য অফিস চলে গিয়েছে।

    বিপাশা স্নান সেরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মাথায় সিঁথিতে সিঁদুর দিচ্ছিল, পরেশ এসে দরজার সামনে দাঁড়াল।

    কি রে, পরেশ?

    বৌদিমণি, একজন মিলিটারি সাহেব এসেছেন—

    মিলিটারী সাহেব!

    হ্যাঁ।

    বললি না কেন বাবু নেই?

    বলেছিলাম–বললেন, আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।

    আমার সঙ্গে?

    হ্যাঁ।

    বিপাশা অবাক হয়।

    কে আবার মিলিটারী সাহেব এল আর তার সঙ্গেই দেখা করতে চায়!

    বসতে দিয়েছিস?

    না, নীচের হলঘরে দাঁড়িয়ে আছেন—উপরে এনে বসাব?

    না, তুই যা আমি নীচেই আসছি।

    পরেশ বললে, কি বলব বৌদিমণি?

    বললাম তো, তুই যা আমি আসছি—

    পরেশ এ বাড়িতে অনেক বছর আছে। বয়েস হয়েছে—অনিন্দ্যর আমলের লোক। বয়েস হয়েছে বলে আরও একজন ভৃত্যকে নিযুক্ত করেছিল অনন্য—সে যখন কলেজে পড়ে।

    অনিন্দ্যকে যখন মস্তিষ্ক বিকৃতির জন্য রাঁচীতে পাঠান হল, সেই সময় ঐ গৃহে আরও– একজন ছিল—ভবানী দেবী। অনিন্দ্যর এক বিধবা শালী। স্ত্রীর মৃত্যুর পর অনিন্দ্য ভবানী

    দেবীকে এনেছিলেন, ঐ গৃহে অনন্যকে দেখাশোনা করবার জন্য।

    অনন্যর বিবাহের আগে পর্যন্ত ভবানী দেবী ঐ গৃহে ছিলেন। সংসারের সবকিছু দেখাশোনা তিনিই করতেন। বিবাহ স্থির হবার পর অনন্য তাকে কাশীতে পাঠিয়ে দেয়।

    বস্তুত অনন্যর ইচ্ছাতেই ভবানী দেবী একদিন ঐ গৃহ ছেড়ে চলে যান। বিপাশা এখানে এসে ভবানী দেবীকে দেখেনি। কিন্তু জানতে পেরেছিল তার কথা।

    অনন্যকে একদিন বিপাশা বলেওছিল, তোমার মাসীমাকে নিয়ে এস না। এত বড় বাড়িতে একা একা আমরা থাকি–

    অনন্য বলেছিল, তোমার কি অসুবিধা হচ্ছে বিপাশা?

    অসুবিধা হবে কেন! আর একজন থাকলে বাড়িটা এত শূন্য শূন্য মনে হত না। তাই বলছিলাম আর কি–

    দরকার হলে রাত-দিনের জন্য একজন আয়া রেখে নাও না—অনন্য বলেছিল।

    আয়া দিয়ে কি হবে–দুজন চাকর তো আছেই—

    বিপাশা কথাটার আর জের টানেনি। কারণ সে বুঝেছিল ভবানী দেবীকে তাদের সংসারে আর ফিরিয়ে আনা তার স্বামীর ইচ্ছা নয়।

    মনে মনে আরও ভেবেছে হয়ত অনন্য কোন কারণে ভবানী দেবীর ওপরে সন্তুষ্ট নয়। বিপাশা দ্বিতীয় বার আর ঐ মাসী-প্রসঙ্গের উত্থাপন করেনি।

    সংসারের সবকিছু খুঁটিনাটি পরেশই দেখে।

    অনন্য বলেছিল—পরেশ লোকটা খুব বিশ্বাসী। আর ওর একটা মহৎ গুণ হচ্ছে যে ব্যাপার ওর নয় তা নিয়ে কখনও ও মাথা ঘামায় না।

    মাথা ঘামাক না ঘামাক, বিপাশা বিবাহের পর এ বাড়িতে এসে দেখেছিল—সর্বদা ছায়ার মত পরেশ ওদের আশেপাশে থাকলেও কথা খুব কম বলে। শান্ত, বিনয়ী, ভদ্র। তবু কেন যেন বিপাশার পরেশকে খুব ভাল লাগত না।

    মানুষটার মুখখানা যেন পাথরে খোদাই করা। ভাবলেশহীন। সর্বক্ষণ অত বড় বাড়িটার মধ্যে যেন একটা ছায়ার মত বিচরণ করছে।

    পরেশ অনন্যকে বলত কখনও দাদাবাবু—কখনও বাবু—আর বিপাশাকে বলত বৌদিমণি।

    বিপাশার মনে হয়, পরেশ যখন এসে আগন্তুক সাহেবের কথা বলছিল—ওর দুচোখের দৃষ্টিতে যেন কি একটা ছিল।

    বিপাশা নীচে নেমে এল সিঁড়ির নীচে সেই ছিমছাম আলোছায়ায় ভরা হলঘরটার মধ্যে। যেখানে পা দিলেই বিপাশার গা-টা যেন শিরশির করে ওঠে। বিরাট একটা স্টাফ করা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে বিপাশা দেখতে গেল, মিলিটারী পোশাক পরা এক দীর্ঘকায় পুরুষ পিছন ফিরে। শেষ সিঁড়িটা অতিক্রম করবার আগেই বিপাশা দেখতে পেল, আগন্তুককে।

    বিপাশার চপ্পলের মৃদু শব্দে আগন্তুক ঘুরে দাঁড়াল। সঙ্গে সঙ্গে বিপাশা আগন্তুককে চিনতে পারে ঐ আলোছায়াতেই চিনতে তার এতটুকুও কষ্ট হল না। সত্যিই সে যেন একটু বিস্মিতই হয়।—তুমি! অর্ধস্ফুট শব্দটা বিপাশার গলা থেকে বের হয়ে এল যেন তার নিজের অজ্ঞাতেই।

    হ্যাঁ, বিপাশা আমি—আগন্তুক সোজাসুজি তাকাল বিপাশার মুখের দিকে। আকস্মিকতার ধাক্কাটা একটু সামলে নিয়ে বিপাশা নিজেকে একটু যেন গুছিয়ে নেয়। সিঁড়ি থেকে নেমে সামনাসামনি এসে দাঁড়াল।

    হঠাৎ কি মনে করে রজত? বিপাশা প্রশ্ন করল।

    রজতশুভ্র মৃদু হাসল। বললে, আমি যে আবার আসব—আবার আমাদের পরস্পরের সঙ্গে দেখা হবে তুমি কি তা জানতে না বিপাশা!

    আশা করিনি—

    আশা করনি বুঝি?

    না।

    কেন?

    সেদিনকার পর আবার তুমি আমার সামনে আসবে আমি ভাবতে পারিনি।

    কেন ভাবতে পারনি?

    ভাবাটাই তো স্বাভাবিক ছিল।

    তোমার ভদ্রতা, তোমার সৌজন্যবোধ ও তোমার রুচির ওপরে আমি বিশ্বাস করেছিলাম বোধ হয়—

    এখন আর বোধ হয় রাখতে পারছ না, তাই না বিপাশা?

    না। যাক গে সেকথা-বল এবারে কেন এসেছ? হঠাৎ কি প্রয়োজন পড়ল আমার কাছে আবার আসার?

    প্রয়োজন ছিল বলেই তো এলাম।

    তুমিই বোধ হয় কাল সন্ধ্যায় এসেছিলে?

    হ্যাঁ–নামটা বলিনি, তবে জানতাম নাম না বললেও তোমার বোঝার অসুবিধা হবে না কে এসেছিল!

    বিপাশা রজতশুভ্রর কথার কোন জবাব দেয় না।

    দেড় বছরে ট্রেনিং শেষ করে নতুন পোস্টিং পেয়েই কয়েক দিনের ছুটি নিয়ে কলকাতায় এসেছি। রজতশুভ্র বললে।

    আমার কাছে কি দরকার?

    তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি। কথাটা যেন অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই উচ্চারণ করল রজতশুভ্র। এতটুকু কম্পন বা দ্বিধা মাত্রও যেন তার গলার স্বরে বা উচ্চারণের মধ্যে নেই। কোথাও।

    কি—কি বললে?

    বললাম, তো, তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি—

    আমাকে নিয়ে যেতে! মানে?

    হ্যাঁ। আমার কাছে আম্বালায় নিয়ে যাব বলেই এসেছি। কোয়াটার্সও পেয়ে গিয়েছি, সব সাজিয়ে গুছিয়ে এসেছি।

    ওরা কেউ লক্ষ্য করে না, দোতলার একটা জানলার খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে একজোড়া চোখের শ্যেনদৃষ্টি ওদের উপরে স্থিরনিবন্ধ হয়ে আছে। সে দুটো চোখ পরেশের।

    তোমার স্পর্ধা তো কম নয়—চাপা বিরক্তিভরা কণ্ঠস্বরে বললে বিপাশা।

    স্পর্ধার এর মধ্যে কি আছে! তুমি আমার—আর কারও নয়, তাই তোমাকে নিয়ে যেতে : এলাম।

    আনি অনন্যর বিবাহিত স্ত্রী। আমাদের বিবাহ হয়েছে—কথাটা নিশ্চয়ই তোমার মনে আছে।

    মনে থাকবে না কেন, বিবাহ হয়েছে তাতে হয়েছে কি তুমি আমার, আর কারও না, আমি মানি না—আমি তা হতে দিতে পারি না।

    রজত! চল আর দেরি কোরো না—তৈরী হয়ে নাওট্যাক্সি আমি বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছি।

    বিপাশা স্থির পাষাণমূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকে, অপলক দৃষ্টিতে মাত্র হাত দুই-তিন ব্যবধানে দণ্ডায়মান রজতশুভ্রর মুখের দিকে চায়।

    লোকটা তামাশা করছে না তো! নিছক একটা পরিহাস—কিম্বা লোকটা সত্যি সত্যিই পাগল। হয়ে গিয়েছে।

    কি হল—বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলে কেন? এস—যেমন আছ তেমনিই চলে এস।

    মনে হচ্ছে—

    কি মনে হচ্ছে?

    তোমার নিশ্চয়ই মাথা-খারাপ হয়ে গিয়েছে, মনে হচ্ছে আমার।

    আর না না সম্পূর্ণ সুস্থনরম্যাল আমি। আমাদের বংশে কেউ পাগল নেই আর ছিলও না কেউ কোনদিন।…কি হল, এখনও দাঁড়িয়ে রইলে কেন?

    চলে যাও এখান থেকে–

    চলে তো যাবই—অনন্য বক্সীর এই ভূতুড়ে বাড়িতে আমি থাকতে আসিনি—চল আমরা এখুনি বের হয়ে যাই।

    চলে যাও রজত!

    অবশ্যই যাব—তবে তোমাকে নিয়ে, এস—

    তুমি যাবে না? চাকর-দারোয়ানকে ডাকব?

    তাতে কোন লাভ হবে না। তোমাকে না নিয়ে এখান থেকে আমি যাচ্ছি না।

    পরেশ! গলা তুলে ডাকল বিপাশা।

    রজতশুভ্র পকেট থেকে একটা পিস্তল বের করল, আমি প্রস্তুত হয়েই এসেছি বিপাশা-কারও বাধা দেবার সাধ্য নেই আমাকে। বাধা কেউ দিতে এলে তার নির্বুদ্ধিতাই প্রকাশ পাবে।

    রজত! বিপাশার গলা ঋজু–কঠিন।

    হ্যাঁ, তোমাকে নিয়েই আমি যাব। এস–লেট আস গো!

    পরেশ প্রস্তুত হয়েই ছিল—তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল বিপাশার ডাক শুনে।

    বৌদিমণি, আমাকে ডাকছ?

    বাবুকে এখুনি একটা ফোন করে দে চলে আসবার জন্য–

    পরেশ বোধ হয় ফোন করবার জন্যই সিঁড়ি দিয়ে উঠতে থাকে, কিন্তু পশ্চাৎ থেকে বাধা। দিল রজত—ওহে পরেশচন্দ্র, দাঁড়াও—দেখছ এটা হাতে আমার কি—এগিয়েছ কি গুলি চালাব!

    পরেশ! বিপাশা বললে, যা বললাম তাই কর—যাও—ফোন করে দাও।

    পরেশ, যাবার চেষ্টা করলে গুলি চালাব! রজতশুভ্র বললে।

    ঠিক আছে আমিই যাচ্ছি, বলে বিপাশা সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল।

    বিপাশা, কেন একটা সিন ক্রিয়েট করবার চেষ্টা করছ! চলে এস আমার সঙ্গে—

    যেতেই হবে আমাকে? বিপাশা বললে হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায়। যেন কিছুই হয়নি।

    হ্যাঁ, যেতেই হবে, বললে রজতশুভ্র।

    কিন্তু এই মুহূর্তে এইভাবে তো তা সম্ভব নয় রজত

    কেন সম্ভব নয়। কাপড়জামার তোমার অভাব হবে না—

    একজন স্ত্রীলোকের কাপড়জামাই কি সব!

    তবে আর কিসের প্রয়োজন তোমার?

    যেতে হলে আমাকে একবার দোতলা থেকে ঘুরে আসতে হবে—

    বোধ হয় অনন্য বক্সীকে একটা ফোন করতে হবে, তাই কি?

    না, ফোন আমি করব না-তোমাকে কথা দিচ্ছি।

    শোন বিপাশা, তোমার সঙ্গে আমি পরিহাস করছি না কিন্তু—

    আমার একটা কথার জবাব দেবে রজত?

    বল কি কথা!

    জোর করে তুমি আমার দেহটা অধিকার করতে পার এই মুহূর্তে পিস্তলের হুমকি দেখিয়ে আমাকে তোমার সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে, কিন্তু আমার স্বামী তোমাকে মুক্তি দেবে না–তাকে তুমি জান না!

    কি করবে—আইন আদালত—

    হ্যাঁ। তুমি অস্বীকার করতে চাইলেও দেশে যখন আইন বলে একটা বস্তু এখনও আছে—

    তাতে কোন লাভ হবে না–বলে হাসে রজতশুভ্র।

    লাভ হবে না? না।

    হাসতে হাসতেই বললে রজত, কারণ আমি জানি তুমি আমার স্বপক্ষেই সাক্ষী দেবে— তাও জান?

    জানি বৈকি, সে বিশ্বাসটুকু না থাকলে কি এখানে তোমাকে নিতে আসতাম! চল মিথ্যে কেন দেরি করছ–

    আমাকে তুমি বিশ্বাস কর?

    তা করি।

    তোমার সঙ্গে আমাকে যেতে হবে এই তো তোমার ইচ্ছা!

    হ্যাঁ।

    কোথায় তুমি আছ–তোমাদের বাড়িতে কি?

    না—

    তবে কোথায়?

    এক বন্ধুর ফ্ল্যাটবাড়ির চারতলার ফ্ল্যাটে পার্ক স্ট্রীটে—আপাতত সেখানে আমি একাই আছি।

    ঠিক আছে সন্ধ্যার ঠিক পরেই তোমার ওখানে আমি যাচ্ছি–তুমি চলে যাও।

    কথা দিচ্ছ?

    হ্যাঁ, দিচ্ছি।

    বেশ, আমি চললাম—ঠিক সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ফ্ল্যাটে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব মনে থাকে যেন। ফ্ল্যাট বাড়িটার নাম নীলাকাশ, চারতলায় ১৪নং ফ্ল্যাট–

    ঠিক আছে—

    রজতশুভ্র হাতের পিস্তলটা পকেটে রেখে বললে, মনে থাকে যেন, সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সময় দিলাম। হলঘর থেকে বের হয়ে গেল অতঃপর রজতশুভ্র।

    বিপাশা তখন আর যেন দাঁড়াতে পারছে না সোজা হয়ে—তার মাথার মধ্যে কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে, সারা শরীরটা যেন কাপছে। হাত বাড়িয়ে বিপাশা সিঁড়ির রেলিংটা শক্ত মুঠিতে চেপে ধরল। প্রাণপণে সিঁড়ির রেলিংটা চেপে ধরে নিজের পতনটা রোধ করবার চেষ্টা করে বিপাশা।

    বৌদিমণি! পরেশ ডাকল।

    কেমন যেন অসহায় শূন্য দৃষ্টিতে পরেশের মুখের দিকে তাকাল বিপাশা।

    বাবুকে একটা ফোন করে দিন।

    বিপাশা পরেশের কথার জবাব দিল না—অসংলগ্ন শিথিল পায়ে সিঁড়ি বেয়ে ধীরে ধীরে দোতালায় উঠে গেল। কিছুই যেন তখন সে আর ভাবতে পারছে না। এখন সে কি করবে? কি করা উচিত? নিজের শোবার ঘরে এসে ঢুকে একটা সোফায় অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। রজতকে সে কথা দিয়েছে আজ সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে সে তার ফ্ল্যাটে যাবে। যদি সে না যায়, রজত কি করবে–কি সে করতে পারে? কিন্তু অনন্য–তার স্বামীকে সব কথা তার অবশ্যই বলা দরকার। আবার যদি রজত এখানে এসে হাজির হয়—অনন্যর ফিরতে ফিরতেও সেই রাত সাড়ে সাতটা পৌনে আটটা। অনেক দেরি হয়ে যাবে না কি!

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসামনে সমুদ্র নীল – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    Next Article কিরীটী অমনিবাস ৭ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    Related Articles

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    বাঙালী হিন্দুর বর্ণভেদ – নীহাররঞ্জন রায়

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    বাঙালী হিন্দুর বর্ণভেদ – নীহাররঞ্জন রায়

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    বাঙালী হিন্দুর বর্ণভেদ – নীহাররঞ্জন রায়

    September 9, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.