Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    বাঙালী হিন্দুর বর্ণভেদ – নীহাররঞ্জন রায়

    September 9, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    যুগলবন্দী – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত এক পাতা গল্প102 Mins Read0

    যুগলবন্দী – পরিচ্ছেদ ৭

    ০৭.

    পরের দিন শেষরাত্রের দিকে নীলাকাশ আটতলা ফ্ল্যাট বাড়িটার কমপাউন্ডের ধার ঘেঁষে প্রথম একজন ট্যাক্সি ড্রাইভারই মৃতদেহটা আবিষ্কার করে রজতশুভ্রর, তার গাড়ির হেডলাইটের আলোয়। ভাল করে তখনও ভোরের আলো ফুটে ওঠেনি। একটা আলো-আঁধারের অস্পষ্টতা পাতলা চাঁদরের মত যেন চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে সর্বত্র।

    রাউরকেল্লা এক্সপ্রেসটা নির্ধারিত সময়ের মিনিট কুড়ি আগেই হাওড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল। ভাগ্যক্রমে সঙ্গে সঙ্গে একটা ট্যাক্সি পেয়ে সরিৎ সোজা নীলকাশে চলে আসে। ট্যাক্সি ড্রাইভার গেট দিয়ে সোজা কমপাউন্ডে ঢুকতেই ট্যাক্সির জোরালো হেডলাইটের আলোয় তার চোখে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে পাম গাছটার নীচে মৃতদেহটা, কমপাউন্ডের কিনারায়। সরিৎ কিন্তু দেখতে পায়নি ব্যাপারটা। তার দুচোখ তখন ঘুমে যেন জড়িয়ে আসছিল।

    ফ্ল্যাট-বাড়িটার মেইন গেটের হাত-দশেক দূরে কমপাউন্ডের ধার ঘেঁষে যে এক সারি পাম গাছ ছিল তারই প্রথম গাছটার নীচে পড়ে ছিল মৃতদেহটা।

    স্যার, একটা মানুষ পড়ে আছে ঐ দেখুনট্যাক্সি ড্রাইভার বললে।

    মানুষ! কোথায়? সরিৎ বললে।

    ট্যাক্সির দরজা খুলে সরিৎ তখন নেমে দাঁড়িয়েছে, পৌঁছে গিয়েছে বলে।

    ঐ যে দেখুন না, ঐ গাছটার নীচে!

    সরিৎও দেখতে পায়–তাড়াতাড়ি এগিয়ে যায় গাছটার সামনে। শানবাঁধানোে কমপাউন্ডের ধার ঘেঁষে মাটিতে কয়েকটা পাম গাছ—তারই নীচে চিৎ হয়ে পড়ে আছে। মাথাটা চূর্ণ হয়ে গিয়েছে, চারপাশে রক্ত জমাট বেঁধে আছে কিন্তু–কে ও, কে লোকটা—চেনা-চেনা লাগছে সরিতের! সে ড্রাইভারকে বললে, গাড়ির হেডলাইটটা জ্বলুন তো? ড্রাইভার হেডলাইটটা অন করে দিল। সেই আলোয় সরিতের এবার চিনতে কষ্ট হয় না—হ্যাঁ, রজতশুভ্রই তো!

    ড্রাইভারও ততক্ষণে সরিতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল, সে বললে, মনে হচ্ছে স্যার, উপর থেকে নীচে লাফিয়ে পড়ে সুইসাইড করেছেন ভদ্রলোক!

    সরিৎ তখন বোবা, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

    রজতশুভ্র উপর থেকে ঝাফিয়ে পড়ে সুইসাইড করেছে, কিন্তু কেন? কেন সে সুইসাইড করবে? কয়েকদিন আগে আম্বালা থেকে সরিৎ রজতের একটা চিঠি পেয়েছিল বিশেষ কাজে দিন দুই-তিনের জন্য সে কলকাতায় আসছে এবং তার যদি কোন অসুবিধা না হয় তো সে তার ফ্ল্যাটেই উঠবে। বকুলকেও লিখেছে সে, কলকাতায় দু-চার দিনের জন্য আসতে। সেও বোধ হয় আসবে।

    সরিৎও জানিয়ে দিয়েছিল রজতকে সঙ্গে সঙ্গে, মোস্ট ওয়েলকাম! তুমি আমার ফ্ল্যাটেই এসে উঠো রজত। গিন্নী আপাতত দিল্লীতে বেশ কিছুদিনের জন্য তার মা-বাবার কাছে গিয়েছে— সে সন্তান-সম্ভবা আর আমিও কোম্পানির কাজে দিন-সাতেকের জন্য রাউরকেল্লা যাচ্ছি। অতএব ফ্ল্যাট খালি। ভৃত্য পঞ্চানন রইল—তোমার কোন অসুবিধা হবে না, পঞ্চাননকে সে কথাটা জানিয়েও যাব। যদি কাজ শেষ হয়ে যায়—দেখা হবে, নচেৎ এযাত্রায় দেখা হল না। বকুল আসলে তো এখানেই উঠবে।

    সব যেন কেমন এলোমেলো গোলমাল হয়ে যাচ্ছে সরিতের।

    ড্রাইভারের কথায় সরিতের সম্বিৎ ফেরে যেন, ফ্ল্যাটের কেউ বোধ করি এখনও ব্যাপারটা জানতে পারেনি স্যার!

    লোহার গেট খোলার শব্দ শোনা গেল। নীচের গেটের দারোয়ান রামলক্ষণ কোলাপসিবল গেটের তালা খুলছে।

    রামলক্ষণ সিঁড়ির নীচেই থাকে। ফ্ল্যাটটায় সিঁড়ি এবং লিফ্ট দুই আছে। রাত সাড়ে বারোটায় লিফ্ট বন্ধ হয়ে যায়—ঐ সঙ্গে মেইন গেটও, অবিশ্যি তারপরে লিক্ট পাওয়া যায় না—তবে রামলক্ষণকে ডাকলে উঠে সে গেট খুলে দেয়।

    দশতলা ফ্ল্যাটবাড়ি নীলাকাশ। বিভিন্ন সম্প্রদায় ও জাতের লোক ফ্ল্যাটগুলোতে বাস করে। ছত্রিশ রকম মানুষের আড়া। ইতিমধ্যে আলো পরিষ্কার হয়েছে—চারিদিক বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সেই আলোয়। মেইন গেট থেকে জায়গাটা হাত-দশ-পনেরোর বেশি দূর হবে না। দণ্ডায়মান ট্যাক্সি ও দুজন মানুষকে গাছের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কৌতূহলী রামলক্ষণও এগিয়ে আসে ঐদিকে এবং রজতের মৃতদেহটার প্রতি তার নজর পড়তেই সে অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে, হায় রাম, এ কেয়া!

    সরিতের আর একটা ব্যাপার নজরে পড়ে, একটা সরু কালো কর্ড রজতের গলায় গিঁট দিয়ে বাঁধা। পরনে রজতের দামী টেরিটের প্যান্ট ও টেরিলিনের রঙ্গিন হাওয়াই শার্ট। হাতে সোনার ঘড়ি, কজিতে বাঁধা, আর পায়ে কাবলী চপ্পল। মাথাটা ফেটে চৌচির হয়ে গিয়েছে প্রায়—চোখ দুটো যেন ঠেলে কোঠর থেকে বের হয়ে এসেছে—মুখটা সামান্য হাঁ করা—উপরের পাটির দাঁত সামান্য দেখা যাচ্ছে—জিভটাও যেন সামান্য বের হয়ে এসেছে। বীভৎস-ওদিকে তাকানো যায় না যেন! সরিৎ দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিল-–চেয়ে থাকা যায় না ঐদিকে।

    সরিই পার্ক স্ট্রীট থানায় ফোন করে দিয়েছিল নিজের ফ্ল্যাটে এসে। ফ্ল্যাটের দরজা ভিতর থেকে ভেজানো ছিল। তিন কামরাওয়ালা ফ্ল্যাট দুটো বেডরুম, একটা বড় আকারের লিভিং রুম। সৌখীননা মানুষ সরিৎ। তাছাড়া ভাল চাকরি করে ভাল মাহিনা পায় বেশ ভাল করে সাজানো-গোছানো ফ্ল্যাট।

    পঞ্চানন কিন্তু ছিল না ফ্ল্যাটে! একটু অবাকই হয়েছিল সরিৎ পঞ্চাননকে দেখতে না পেয়ে। ফ্ল্যাট অরক্ষিত অবস্থায় ছিল। ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র যেমন সাজানো ছিল তেমনিই সাজানো আছে—এতটুকু নাড়াচাড়া হয়নি। দুটি বেডরুমেই দরজা ভেজানো। কেবল একটা বেডরুমের বাইরের দিককার জানালা খোলা আর ব্যালকনির দরজাটা খোলা। শোবার ঘরে একটা সুটকেস–বোধ হয় রজতশুভ্রেরই।

    সরিৎ একটা সোফার উপরে বসে ছিল একটা সিগ্রেট ধরিয়ে।

    ভৃত্য পঞ্চানন এসে ঘরে ঢুকেই থমকে দাঁড়াল, সাহেব!

    কোথায় ছিলি? সরিৎ প্রশ্ন করে।

    আজ্ঞে—

    ছিলি কোথায়?

    আজ্ঞে বৌবাজারে আমার শালার ওখানে ছিলাম।

    আমার পারমিশন ছাড়া তুই ফ্ল্যাট ছেড়ে গিয়েছিলি কেন?

    আজ্ঞে আপনার বন্ধু যিনি এসেছিলেন, কাল বিকেলে তিনি বললেন—

    কি–কি বললেন?

    আজ্ঞে শালার খুব অসুখ খবর পেয়েছিলাম, তাই ঘণ্টা দুয়েকের ছুটি চেয়েছিলাম বাবুর কাছে তিনি বললেন, রাতের মত তিনি আমাকে ছুটি দিচ্ছেন—সকালে এলেই হবে—তিনি বাইরে রাত্রে খেয়ে নেবেন।

    দিদিমণি বকুল আসেনি?

    আজ্ঞে না, দিদিমণি তো আসেন নি!

    তার তো গতকালই আসার কথা ছিল সকালের গাড়িতে গয়া থেকে!

    ঠিক ঐ মুহূর্তে একটি ২৬।২৭ বৎসরের তরুণী এসে ঘরে ঢুকল, দাদা!

    কে? বকুল?

    হ্যাঁ। ট্রেনটা কিছু লেট ছিল, দাদা—রজতকে দেখছি না—রজত আসেনি? তার তো দুদিন আগেই আসার কথা ছিল তোমার এখানে, আমাকেও তাই লিখেছে চিঠিতে–

    সরিৎ যেন বোবা। কি জবাব দেবে ছোট বোন বকুলের প্রশ্নের, বুঝতে পারে না।

    বকুল আবার প্রশ্ন করে, রজত আসেনি দাদা?

    বকুল!

    ঐ সময় দোরগোড়ায় কয়েক জোড়া জুতোর শব্দ পাওয়া গেল।—মিঃ সরিৎ ব্যানার্জি আছেন?

    কে? আমি পার্ক স্ট্রীট থানার সেকেন্ড অফিসার-ভিতরে আসতে পারি? আসুন অফিসার।

    পুলিশ অফিসার মিঃ অরুণ লাহিড়ী ঘরের মধ্যে এসে প্রবেশ করলেন। বয়েস ত্রিশ-বত্রিশের বেশী হবে না। বেশ উঁচু লম্বা বলিষ্ঠ চেহারা। পরনে সাদা ইউনিফর্ম। চোখে চশমা। একজন সার্জেন্ট সঙ্গে।

    আপনিই ফোন করেছিলেন?

    হ্যাঁ, আমিই সরিৎ ব্যানার্জী—আসুন।

    নীচে ডেড বডি দেখলাম—তা আপনি ঐ ভদ্রলোককে চিনতেন নাকি? পরিচয় ছিল আপনাদের? এ ফ্ল্যাটবাড়ির কেউ কি?

    না, বসুন।

    এই ফ্ল্যাটবাড়িতে থাকতেন না উনি? অফিসার একটা সোফায় বসতে বসতে বললেন।

    না। উনি একজন আর্মি অফিসার—আমার বন্ধু রজতশুভ্র চক্রবর্তী নাম।

    দাদা! একটা অস্পষ্ট চিৎকার বের হয়ে আসে বকুলের কণ্ঠ চিরে।

    যুগপৎ পুলিশ অফিসার ও সরিৎ ঐ চিৎকারে আকৃষ্ট হয়ে বকুলের দিকে তাকাল। বকুলের সমস্ত মুখটা যেন কেমন রক্তশূন্য ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে।

    কার—কার কথা বলছ তোমরা? কার ডেড বডি? দাদা কথা বলছ না কেন?

    বকুল—কি বুঝি বলবার চেষ্টা করে সরিৎ, কিন্তু পারে না।

    কি কি হয়েছে দাদা রজতের? বকুলের কণ্ঠে উৎকণ্ঠা ঝরে পড়ল।

    ইনি? অফিসার প্রশ্ন করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন সরিতের দিকে।

    আমার ছোট বোন বকুল ব্যানার্জী—গয়া থেকে এইমাত্র আসছে। বকুল, রজত চারতলা থেকে নীচে লাফিয়ে পড়ে সুইসাইড করেছে!

    না, না—

    সরিৎ উঠে গিয়ে বোনকে জড়িয়ে ধরে। ব্যাপারটা এখনও বুঝতে পারা যাচ্ছে না বকুল—রজতের রক্তাক্ত ডেড বডিটা নীচের কমপাউন্ডের ধারে পড়ে আছে—আমি একটুক্ষণ আগে রাউরকেল্লা থেকে ফিরে ট্যাক্সি থেকে নেমে দেখতে পেয়ে থানায় ফোন করেছিলাম।

    বকুল থরথর করে কাপছিল, সরিৎ তাকে ধরে সোফার ওপরে বসিয়ে দিয়ে নিজেও পাশে বসল।

    নীচে কমপাউন্ডে তখন সমস্ত ফ্ল্যাটবাড়ির লোক ভিড় করেছে। পুলিস তাদের সরাতে ব্যস্ত। অস্ফুট একটা গুঞ্জন। রজতের মৃতদেহটা তেমনিই পড়ে ছিল।

    সেকেন্ড অফিসার মিঃ লাহিড়ী প্রশ্ন করেন সরিৎকে, আপনার বন্ধু কবে এসেছিলেন এখানে?

    আমি দিনপাঁচেক আগে কোম্পানির কাজে রাউরকেল্লা গিয়েছিলাম—আজই সকালে ফিরছি—ওর আসার কথা ছিল গত পরশু, মানে শনিবার–

    পঞ্চানন তখন বললে, আজ্ঞে না, শুক্রবার ভোরেই উনি এসেছিলেন।

    মিঃ লাহিড়ী বললেন, আজ সোমবার উনি তাহলে তিন দিন আগে এসেছিলেন। এখানেই ততা ছিলেন, তাই না?

    হ্যাঁ–সরিৎ বলে।

    আর কেউ ছিল এখানে?

    না। ঐ সারভেন্ট পঞ্চানন ছিল—পঞ্চাননকে দেখিয়ে দিল সরিৎ।

    মিঃ লাহিড়ী পঞ্চালনের দিকে তাকালেন, তোমার নাম পঞ্চানন?

    আজ্ঞে পঞ্চানন বেরা—

    তুমি কিছু বলতে পার?

    আজ্ঞে আমি গতকাল সন্ধ্যা ছটা নাগাদ চলে গিয়েছিলাম বৌবাজারে—

    তুমি তাহলে ছিলে না এখানে?

    না স্যার—

    তাহলে দেখা যাচ্ছে কাল রাত্রে আপনার বন্ধু এই ফ্ল্যাটে একাই ছিলেন! পাশের ফ্ল্যাটে কে থাকেন? কি তার নাম?

    সরিৎ বললে, বাঁদিকে ১৩ নম্বরে থাকেন একজন দক্ষিণদেশীয় ভদ্রলোক—মিঃ পাঙ্গু, একটা অফিসের চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট—তার স্ত্রী ও ছোট ছোট দুটি ছেলে আর ১৫নং ফ্ল্যাটে ডানদিকে থাকেন মিঃ গোয়েল—একজন পাঞ্জাবী ভদ্রলোক—পাইলট, তার স্ত্রী ও দশ বছরের একটি মেয়ে–

    হুঁ। আপনি কতদিন এই ফ্ল্যাটে আছেন?

    বছর চারেক হবে।

    আপনি একাই?

    না, আমার স্ত্রী আছেন—

    তিনি?

    দিন-পনেরো হল দিল্লী গেছেন তার মা-বাবার কাছে।

    রজতবাবুর সঙ্গে আপনার কতদিনের পরিচয়?

    দশ বারো বছরের পরিচয়—একসঙ্গে বঙ্গবাসী কলেজে আমরা চার বছর পড়েছিলাম— সেই থেকেই পরিচয়।

    আর আপনার বোনের সঙ্গে?

    তাও অনেক দিনের—

    তবু কতদিন হবে?

    ও বরাবরই আমার কাকার কাছে থেকে পাটনায় পড়াশুনা করত—মধ্যে মধ্যে ছুটিতে কলকাতায় আসত তখুনি পরিচয় হয়—তাও ধরুন বছর পাঁচেক তো হবেই

    আপনার বন্ধু নিশ্চয়ই বিবাহিত ছিলেন না?

    না। সামনের অগ্রহায়ণে—ওদের মানে বকুলের সঙ্গে রজতের বিয়ে হবে ঠিক হয়ে ছিল—

    মিঃ লাহিড়ী আর একবার বকুলের দিকে তাকালেন।

    বকুল প্রস্তর-প্রতিমার মত সোফাটার উপরে বসেছিল মাথাটা নীচু করে।

    আচ্ছা মিঃ ব্যানার্জী, আপনার কি মনে হয় ব্যাপারটা?

    মনে তো হয় সুইসাইডই, কিন্তু—

    মৃতদেহের গলায় একটা সরু কালো কর্ড বাঁধা আছে গিট দিয়ে, নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন? করেছি।

    এমনও তো হতে পারে—

    কি?

    কেউ ওঁর গলায় ফাঁস দিয়ে নীচে ফেলে দিয়েছে–মিঃ লাহিড়ী বললেন।

    কিন্তু তা কে দেবে আর কেনই বা দেবে?

    কেউ দিতেও পারে তো–ধরুন ওঁর কোন শত্রু! এটা হয়ত আদৌ সুইসাইড নয়—হোমিসাইড—মার্ডার!

    কিন্তু ব্যাপারটা কেমন যেন বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না অফিসার!

    কেন?

    প্রথমত ও যে দুতিন দিনের জন্য এখানে আসছে—কারও তা জানবার কথা নয়। তাছাড়া ওর বিশেষ পরিচিত জন কেউ এখানে এ শহরে ছিল বলেও জানি না। তাছাড়া ওকে কে-ই বা মার্ডার করতে যাবে আর কেনই বা করবে!

    কি জানি মিঃ ব্যানার্জী, ব্যাপারটা আত্মহত্যা বলে যেন আমার মনে হচ্ছে না। আচ্ছা রজতবাবুর আর কোন পরিচিতজন এ শহরে আছেন যাদের আপনারা জানেন?

    দাদা!

    বকুলের ডাকে সরিৎ বোনের মুখের দিকে তাকাল।

    অনন্য চৌধুরী আর স্ত্রী বিপাশা—

    বিপাশা!

    হ্যাঁ, অফিসার এককালে শুনেছি বিপাশা ওর পাশের বাড়িতেই থাকত—পরিচয়ও ছিল ওদের পরস্পরের মধ্যে যথেষ্টবকুল বললে।

    অনন্য চৌধুরী বিপাশার কে? অরুণ লাহিড়ী প্রশ্ন করলেন।

    বিপাশার সঙ্গে রজতের একসময় যথেষ্ট পরিচয় ছিল–কিন্তু আট নয় মাস হবে, অনন্য চৌধুরীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আমি যতদূর জানি—ওদের পরস্পরের দেখাসাক্ষাৎ হয়নি—

    আচ্ছা বকুল দেবী?

    বকুল তাকাল অরুণ লাহিড়ীর মুখের দিকে।

    আপনার সঙ্গে শুনলাম রজতবাবুর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল—আপনারা পরস্পরের পরিচিত অনেকদিনের—বিপাশার কথা আপনি কিছু জানেন, যে মেয়েটির কথা এইমাত্র শুনলাম।

    শুনেছিলাম কয়েকবার রজতের মুখে বিপাশার নাম এবং একসময় ওদের সঙ্গে কিছুটা ঘনিষ্ঠতাও রজতের হয়েছিল শুনেছি, কিন্তু বছর তিন-চার আগে অনন্য চৌধুরীর সঙ্গে বিপাশার আলাপ পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা হবার পর আগের সে সম্পর্ক পরস্পরের মধ্যে ছিল না বলেই জানি।

    অতঃপর অরুণ লাহিড়ী উঠে দাঁড়ালেন, চলি মিঃ ব্যানার্জী। হয়ত আবার আসব মানে আসতে হতে পারে কথাগুলো বলে অরুণ লাহিড়ী ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।

    সরিৎ এতক্ষণে যেন ভাল করে তাকাল বোনের দিকে। বকুল কেমন যেন অসহায়ের মত বসে আছে সোফাটার ওপরে। শিথিল হাত দুটি কোলের ওপরে ন্যস্ত। জানালা-পথে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।

    বকুল! সরিৎ মৃদু কণ্ঠে ডাকল।

    বকুল সরিতের ডাকে ওর দিকে মুখ তুলে তাকাল। বিষণ্ণ ক্লান্ত—কেমন যেন অসহায় দৃষ্টি।

    তা কটা দিন এখানে থাকবি তো?

    না।

    কেন রে?

    ভাল লাগছে না দাদা, ভাবছি কালই রাত্রের ট্রেনে ফিরে যাব। তুমি দেখ যদি একটা রিজার্ভেশন পাও—

    ট্রাভেল এজেন্সির সাহায্যে সেটা পেতে হয়ত কষ্ট হবে না কিন্তু ছুটি নিয়ে এসেছিস যখন, থাক না কটা দিন এখানে।

    এখানে থাকলে রজতের কথা বেশী করে মনে পড়বে দাদা। আমাকে তুমি বাধা দিয়ো না দাদা, আমাকে যেতে দাও বকুলের চোখের কোল দুটো ছলছল করছে সরিৎ লক্ষ্য করে।

    সরিৎ আর কোন কথা বলে না। তার মাথার মধ্যে তখন পুলিস অফিসারের কথাগুলোই যেন ঘোরাফেরা করছে। তার ধারণা রজতকে কেউ হত্যা করেছে! রজতের গলায় বাঁধা কালো। সরু কৰ্ডটা দেখেই হয়ত কথাটা অফিসারের মনে হয়েছে। সত্যিই তো, ঐ কর্ডটা গলায় কোথা থেকে এল? আর কর্ডটা তার গলায় অমন করে গিট দিয়ে বাঁধা ছিল কেন? রজত সুইসাইড যদি করে থাকে, ঐ কর্ডটার তাৎপর্য কি?

    দাদা!

    বকুলের ডাকে সরিৎ বোনের মুখের দিকে তাকাল।

    তুমি দেখেছ কিনা জানি না কখনও, কিন্তু আমি দেখেছি—

    কি দেখেছিস?

    রজতের গলায় একটা সরু সিল্কের কর্ডে একটা মাদুলী বাঁধা ছিল—

    তাই নাকি?

    হ্যাঁ। একবার ও জলে ড়ুবে যায়—ওর যখন পাঁচ বছর বয়স—ওর বাবার গুরুদেব অপঘাত মৃত্যুকে এড়াবার জন্য কালো কর্ডে একটা মাদুলী বেঁধে ওর গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন, সেই থেকেই ওটা ছিল ওর গলায়। আমাকে ও বলেছিল। কিন্তু সেটা ওর গলায় পিছন থেকে অত টাইট করে গিঁট দিয়ে বাঁধা কেন?

    না বকুল, অফিসার যা বলে গেলেন—আমারও সন্দেহ তাই, মনে হচ্ছে হয়ত তার কথাই ঠিক। কেউ ওকে হত্যাই করে গলায় ফাঁস দিয়ে হয়ত নীচে ফেলে দিয়েছে ব্যালকনি থেকে।

    তাই যদি হয়ে থাকে, রজত কি বাধা দেয়নি সে-সময়?

    হয়ত একাধিক লোক ছিল। ব্যাপারটা সত্যিই মাথার মধ্যে যেন আমার আসছে না।

    অরুণ লাহিড়ী মৃতদেহটা হোমি-সাইডাল স্কোয়াড আসার অপেক্ষায় প্রহরায় রাখার একটা ব্যবস্থা করে তাঁর জীপে উঠে বসলেন। থানা দূরে নয়-কাছেই। থানায় পৌঁছে বড়বাবু ও. সি.-র ঘরে গিয়ে ঢুকলেন।

    ঐ থানার ও. সি. সুবিনয় ঘোষ তখন লালবাজার হোমিসাইড স্কোয়াডের বড় অফিসার সুদর্শন মল্লিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন।

    থানা থেকেই মিঃ মল্লিককে ফোন করা হয়েছিল।

    এই যে অরুণবাবু আসুন-মল্লিকসাহেব স্পটে যাবার জন্য রওনা হচ্ছিলেন! স্পট থেকে চলে এলেন কেন?

    আমি এতক্ষণ স্যার হোমিসাইডাল স্কোয়াডের অপেক্ষায় থেকে ডে বডিটা পাহারায় রেখে আপনাকে একটা খবর দিতে এলাম।

    মল্লিক বললেন, যে অফিসারটিকে স্পটে পাঠাব ভেবেছিলাম—খোঁজ নিতে গিয়ে শুনলাম সে গতকাল মাঝরাত্রে একটা রেইডের ইনফরমেশন পেয়ে সেই যে বেলঘরিয়ায় গিয়েছে এখনও ফেরেনি—তখন আমি নিজেই চলে এলাম। চলুন না আমার সঙ্গে স্পটে আর একবার।

    চলুন।

    দুজনে ও. সি.-র ঘর থেকে বের হয়ে জীপে গিয়ে উঠে বসলেন। অরুণ লাহিড়ী আর সুদর্শন মল্লিক।

    জীপে যেতে যেতেই অরুণ লাহিড়ী মোটামুটি ভাবে সুদর্শন মল্লিককে ব্যাপারটা বলে গেলেন এবং তাঁর মতে ব্যাপারটা যে একটা হত্যাকাণ্ড তাও বললেন।

    আপনার মনে হচ্ছে ব্যাপারটা এ কেস্ অফ মার্ডার, মিঃ লাহিড়ী?

    হ্যাঁ স্যার, সুইসাইড বলে তো আমার মনে হচ্ছে না।

    হুঁ। কর্ডের ব্যাপারটা সত্যিই সাস্‌পিসাস! কর্ডটা গলায় শক্ত করে গিঁট দিয়ে বাঁধা কেন?

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসামনে সমুদ্র নীল – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    Next Article কিরীটী অমনিবাস ৭ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    Related Articles

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    বাঙালী হিন্দুর বর্ণভেদ – নীহাররঞ্জন রায়

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    বাঙালী হিন্দুর বর্ণভেদ – নীহাররঞ্জন রায়

    September 9, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    বাঙালী হিন্দুর বর্ণভেদ – নীহাররঞ্জন রায়

    September 9, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.