Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    রবিজীবনী (১ম খণ্ড) – প্রশান্তকুমার পাল

    প্রশান্তকুমার পাল এক পাতা গল্প692 Mins Read0

    ০২. রবীন্দ্রজীবনের দ্বিতীয় বৎসর

    দ্বিতীয় অধ্যায়
    ১২৬৯ [1862-63] ১৭৮৪ শক ॥ রবীন্দ্রজীবনের দ্বিতীয় বৎসর

    এই বছরের প্রথম উল্লেখযোগ্য ঘটনা, ১লা বৈশাখ [রবি 13 Apr] ব্রাহ্মসমাজের নববর্ষের উৎসব উপলক্ষে সস্ত্রীক কেশবচন্দ্র সেন দ্বিতীয়বার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অন্তঃপুরে আসেন। এই কারণে কেশবচন্দ্রকে সাময়িকভাবে গৃহত্যাগ করতে হয়। সৌদামিনী দেবী এই প্রসঙ্গে লিখেছেন : ‘কেশববাবুর স্ত্রী তিন-চার মাস আমাদের কাছে ছিলেন। তখন আত্মীয়স্বজনেরা আমাদিগকে ত্যাগ করিয়াছেন, কেহ আমাদের বাড়িতে আসিতেন না। সেই সময়ে কেশববাবুর স্ত্রীকে আমাদের আত্মীয়রূপে পাইয়া আমরা বড়ো আনন্দে ছিলাম। প্রথমটা তাঁহার মন বিমর্ষ ছিল—বিশেষত তাঁহার একটি ছোটো ভাইয়ের জন্য তাঁহার হৃদয় ব্যাকুল হইত। সেই সময় সোম, রবি ও সত্য শিশু ছিল—তাহাদিগকেই তিনি সর্বদা কোলে করিয়া থাকিতেন—বলিতেন, রবিকে তাঁহার সেই ছোটো ভাইটির মতো মনে হয়।…তাঁহাকে আমাদের ভগিনীর মতোই মনে হইত—তিনি যাইবার সময় আমরা বড়ো বেদনা পাইয়াছিলাম।’১

    প্রসঙ্গটি সম্বন্ধে স্বর্ণকুমারী দেবীর বর্ণনাটি এইরূপ :

    ১৮৬২ খ্রীষ্টাব্দে কেশববাবু সস্ত্রীক আমাদের বাড়ী আসিয়া কিছুকাল বাস করিয়াছিলেন। সেদিন জোড়াসাঁকো ভবনে একটি পর্ব্বোৎসব পড়িয়া গিয়াছিল। যেন বহু পুরাতন আত্মীয়ের সহিত সেদিন আমাদের পুনর্ম্মিলন ঘটিল। কেশবাবুর স্ত্রীর ভারী একটি অমায়িক মধুর মুখশ্রী ছিল। আমি যদিও তখনও মাত্র ছয় বৎসরের বালিকা তথাপি তাঁহার সেই রূপলাবণ্যে মুগ্ধ হইয়া গিয়াছিলাম। সর্বদা তাঁহার কাছাকাছি থাকিতে আমার বড় ভাল লাগিত। তিনি দিদিদের সহিত গল্প করিতেন আমি চুপ করিয়া তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া থাকিতাম। প্রীতি-আনন্দে হৃদয় ভরিয়া উঠিত। …(কেশবচন্দ্র) বেশ গল্প করিতে পারিতেন। দেখা হইলেই আমরা গল্পের জন্য তাঁহাকে বিব্রত করিয়া তুলিতাম। তাঁরও গল্পের ভাণ্ডার কখনো ফুরাইত না।২

    এই ঘটনা দেবেন্দ্রনাথের অন্তঃপুরে বিশেষ কতকগুলি পরিবর্তনের সূচনা করে। সৌদামিনী দেবী লিখেছেন : ‘কেশববাবুদের অন্তঃপুরে মিশনরি মেয়েরা পড়াইতে আসিত। আমাদের শিক্ষার জন্য পিতা তাহাদিগকে নিযুক্ত করিলেন। বাঙালি খ্রীস্টান শিক্ষয়িত্রী প্রতিদিন আমাদিগকে পড়াইতেন এবং হপ্তায় একদিন মেম আসিয়া আমাদিগকে বাইবল পড়াইয়া যাইতেন। মাস কয়েক এইভাবে চলিয়াছিল। অবশেষে একবার পিতৃদেব আমাদের পড়াশুনা কেমনতর চলিতেছে দেখিতে আসিলেন। একখানা শ্লেটে শিক্ষয়িত্রী আমাদের পাঠ লিখিয়া দিয়া গিয়াছিলেন—তাহারই অনুসরণ করিয়া কপি করিবার জন্য আমাদের প্রতি ভার ছিল। শ্লেটে লিখিত সেই পাঠের বানান ও ভাষা দেখিয়া পিতা আমাদের এই নিয়মের শিক্ষা বন্ধ করিয়া দিলেন।’৩ পরবর্তীকালে স্ত্রী-শিক্ষার জন্যই আর-একজন অনাত্মীয় পুরুষ ব্রাহ্মসমাজের উপাচার্য অযোধ্যানাথ পাকড়াশী অসূর্যম্পশ্য অন্তঃপুরে প্রবেশ করেন, কিন্তু তা আরও কিছুকাল পরের কথা।

    ইতিমধ্যে দ্বিজেন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ পুত্র দ্বিপেন্দ্রনাথের জন্ম হয় ২১ আষাঢ় [শুক্র 4 Jul]; রবীন্দ্রনাথের থেকে তাঁর এই ভ্রাতুষ্পুত্র মাত্র এক বছর দু’মাসের ছোটো।

    এই বৎসরের আর-একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, ১৮ ফাল্গুন [রবি 1 Mar 1863] দেবেন্দ্রনাথ রায়পুরের জমিদার প্রতাপনারায়ণ সিংহ প্রভৃতির কাছ থেকে বোলপুরের নিকটবর্তী ভুবনডাঙা গ্রামের বাঁধ-সংলগ্ন বিশ বিঘা জমি বার্ষিক পাঁচ টাকা খাজনায় মৌরসী-স্বত্ব গ্রহণ করেন। শোনা যায়, প্রতাপনারায়ণ দেবেন্দ্রনাথের তত্ত্বাবধানে কলকাতায় থেকে পড়াশোনা করতেন এবং তখনই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হন। দেবেন্দ্রনাথ ১২ শ্রাবণ ১৭৮০ শক [১২৬৫ : 1858] সিমলা থেকে রাজনারায়ণ বসুকে লেখেন : ‘তুমি শুনিয়া অবশ্য আহ্লাদিত হইবে যে বীরভূমনিবাসী শ্ৰীযুক্ত প্রতাপনারায়ণ সিংহ ব্ৰহ্মরসের আস্বাদন পাইয়া তাহাতে অত্যন্ত অনুরক্ত হইয়াছেন।’৪ হিমালয় থেকে ফিরে দেবেন্দ্রনাথ উপর্যুপরি অন্তত দুবার রায়পুরে গমন করেন। ১৮ চৈত্র ১৭৮৩ শক [১২৬৮] সিংহ-বাড়িতে তিনি যে উপাসনা করেন তা একটি পুস্তিকায় মুদ্রিত হয়, তার আখ্যাপত্রটি এইরূপ : ‘বীরভূমের রায়পুর নিবাসী বিখ্যাত গুণরাশি শ্ৰীযুক্ত বাবু ভুবনমোহন সিংহ মহোদয়ের গৃহে ১৭৮৩ শকের চৈত্র মাসের অষ্টাদশ দিবসে যে ব্রহ্মোপাসনা হয় তাহাতে প্রধান আচাৰ্য মহাশয় যে ব্যাখ্যা করেন এবং যে সকল ব্ৰহ্মসঙ্গীত গীত হয় তাহা প্রকাশিত হইল।‘ উপাসনার শুরুতেই দেবেন্দ্রনাথ বলেন : ‘আমরা পুনর্ব্বার এখানে উপাসনার নিমিত্তে সকলে একত্র সম্মিলিত হইয়াছি। কেমন তাঁহার করুণা, আমরা এক মাস পূর্ব্বে এখানে মিলিত হইয়া তাঁহার চরণে পূজোপহার প্রদান করিয়াছি, আবার অদ্য স্নেহময় পিতার নাম এখানে প্রতিধ্বনিত হইবে।’ এর থেকে বোঝা যায়, ফাল্গুন মাসেও দেবেন্দ্রনাথ রায়পুরে এসে উপাসনা করেছিলেন। এই বিবরণ দিয়ে শান্তিনিকেতনের ‘আশ্রমধারী’ অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন : ‘রায়পুর যাতায়াত করিবার সময় এই দিগন্তপ্রসারিত প্রান্তরের অপূৰ্ব্ব গাম্ভীর্য্যে মহর্ষির চিত্ত আকৃষ্ট হয়। এই বিশাল প্রান্তরে দৃষ্টি অবারিত, অনন্ত আকাশ ব্যতীত দিগ্বলয়ে আর কিছুই দৃষ্টিগোচর হয় না। অনন্তস্বরূপের এই উদাত্ত সৌন্দর্য্যে তাঁহার হৃদয়মন প্লাবিত হইল, উন্মুক্ত আকাশতলে এই নির্জ্জন প্রান্তর তপস্যার একান্ত অনুকূল বলিয়া তাঁহার ধারণা হইল।’৫

    স্থানটির প্রতি দেবেন্দ্রনাথের আকর্ষণ কিভাবে জন্মাল তার ইতিহাস বিকৃত করেছেন অজিতকুমার চক্রবর্তী : ‘রায়পুরের সিংহ-পরিবারের সঙ্গে তাঁহার বিশেষ বন্ধুতা ছিল। একদিন সেখানে নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে যাইবার সময় বোলপুর স্টেশন হইতে রায়পুরের পথে শান্তিনিকেতনের দিগন্তপ্রসারিত প্রান্তরে যুগল সপ্তপর্ণচ্ছায়ায় তিনি ক্ষণকালের মতো দাঁড়াইলেন। সমস্ত প্রান্তরের মধ্যে তখন ঐ দুটি মাত্র গাছ ছিল; চারি দিকে অবারিত তরঙ্গায়িত ধূসর মাঠ, তাহার কোনো জায়গায় সবুজ রঙের আভাস মাত্র নাই। শুধু দূর দিক্‌চক্রবালে একশ্রেণী ঋজু তালগাছ ধ্যানমগ্ন মহাদেবের তপোবনপ্রান্তে স্তব্ধ পাহারার মতো দাঁড়াইয়া আছে। যতদূর দৃষ্টি যায় কোনো বাধা নাই। কিছুই দেখিবার নাই। উপরে অনন্ত আকাশ, নীচে এই স্থলসমুদ্র। এই জায়গাটি হঠাৎ তাঁহার মনকে টানিল। এই ছাতিমের ছায়াটিকে তাঁহার নির্জন সাধনার উপযুক্ত বলিয়া তাঁহার মনে হইল। তার পর হইতে ঐ ছাতিম গাছের তলায় মাঝে মাঝে তাঁহার তাঁবু পড়িতে লাগিল।’৬ লক্ষণীয়, অজিতকুমার এখানে তাঁর যাত্রাপথ উল্লেখ করেছেন বোলপুর স্টেশন থেকে রায়পুর অভিমুখে, যা আদৌ স্বাভাবিক যাত্রাপথ নয়। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন : ‘হিমালয় হইতে নামিয়া আসিবার পর দেবেন্দ্রনাথ রায়পুর আসেন; আমাদের মনে হয় নৌকাযোগে ভাগীরথী দিয়া কাটোয়া হইতে গুনুটিয়ার ঘাটে নামেন ও সেখান হইতে পালকী-পথে রায়পুর আসেন। চীপ সাহেব নির্মিত সুরুল-গুনুটিয়া রাস্তার পাশেই বর্তমান শান্তিনিকেতন ও ছাতিম গাছ দুটি পড়ে। বোলপুর স্টেশন হইতে রায়পুর যাইতে শান্তিনিকেতন পথে পড়ে না।’৭ প্রমথনাথ বিশী এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন : ‘আমার বিশ্বাস, কোনো একবার পশ্চিম হইতে ফিরিবার সময়ে মহর্ষি আমদপুর স্টেশনে নামিয়া রায়পুর যাইতেছিলেন। শিউড়ি হইতে বোলপুর যাইবার যে সড়ক আছে আমদপুর স্টেশনে নামিয়া তাহা ধরিয়া বোলপুর হইয়া রায়পুর যাওয়া যায়। এই পথ ধরিয়া চলিলে পথে শান্তিনিকেতনের মাঠ অতিক্রম করিতে হয়।’৮ পূর্বোক্ত অঘোরনাথের পুত্র জ্ঞানেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় সঙ্গত কারণেই এইসব ঘুরপথ সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, রায়পুরে আসার আগে দেবেন্দ্রনাথ গুসকরায় তাঁবুতে বাস করেছিলেন। তিনি নির্জন স্থান খুঁজছিলেন। রায়পুরে এসে পাল্‌কিতে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে তিনি এই জায়গাটি পছন্দ করেন।’৯ ভুবনমোহন সিংহের জমিদারির অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ভুবননগর মৌজার অন্তর্ভুক্ত কুড়ি বিঘা জমির পাট্টা নেওয়া তাঁর পক্ষে সহজ হয়েছিল। জ্ঞানেন্দ্রনাথ লিখেছেন : ‘পাট্টা লওয়া হয়েছিল মহর্ষিদেবের রায়পুরে আসার এক বছর পরে ভুবনবাবুর পুত্রদের কাছ থেকে। সুতরাং তাঁর আগমন ও পাট্টা লওয়ার মধ্যবর্ত্তী সময়ে ভুবনবাবু পরলোকগমন করেছিলেন এরূপ অনুমান করতে হয়। জ্ঞানেন্দ্রনাথের অনুমান সঠিক বলেই আমরা মনে করি।

    যাই হোক, এই আকর্ষণের পরিণতি ঘটল 31 Mar 1863 [মঙ্গল ১৯ ফাল্গুন ১২৬৯], যেদিন এই জমি হস্তান্তরের দলিল রেজেস্ট্রি হয় দলিলসমূহের রেজিস্ট্রার গোবিন্দচন্দ্র চৌধুরী ও জজ ও. ডব্লিউ. ম্যালেট-এর সামনে। রায়পুরের অধিবাসী লক্ষ্মীনারায়ণ ঘোষ আট আনা দিয়ে স্ট্যাম্প কাগজ-বিক্রেতা নিত্যানন্দ পালের কাছ থেকে 28 Feb 1863 [শনি ১৭ ফাল্গুন] দলিলের কাগজ ক্রয় করেন ও পরদিন ১৮ ফাল্গুন [রবি 1 Mar] দলিলটি লিখিত ও স্বাক্ষরিত হয়। মূল দলিলটি হারিয়ে যাওয়ায় পরবর্তীকালে এর একটি প্রত্যয়িত প্রতিলিপি প্রস্তুত করানো হয়। সেটি বর্তমানে শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবন অভিলেখাগারে সুরক্ষিত। নীচে তার একটি প্রতিলিপি দেওয়া হল :

    প্রতিলিপি
    প্রতিলিপি
    প্রতিলিপি

    লিখিয়া দিলাম ইতি সন ১২৬৯ সাল বার সত উন সত্ত এসাহী তারিখ

    ১৮ ফাল্গুন ইসাদী
    তপশীল চৌহদ্দী শ্রীরামধন ঘোষ শ্রীশ্রীনাথসী°হ
    বান্ধের উত্তরাংশে শান্তীনিকেতন সা° রাইপূর সা° রাইপূর
    বান্ধের উত্তরাংশে শান্তীনিকেতন শ্রীরামেশ্বর লাহিড়ি শ্রীহরিচরণ
    নামা গৃহের চতুপার্শ্বের মধ্যে সা° সান্তীপূর পরামাণিক
    ২০৴ বিঘা মো° রাইপূর সা° রাইপূর
    শ্রীরাধামোহন মিশ্র শ্রীনিত্যানন্দ
    সা° মথুরাপুর মো° ঘোষ সা°
    রাইপূর রাইপূর

    ৩৭৪ নং

    সাল ১৮৬৩। ২৮ ফিরওয়ারি শ্রীনিত্যানন্দ পাল

    ইষ্টাম্প কোরফা মো° রাইপূর জেলা বিরভোম

    খরিদার শ্রীলক্ষ্মীনারায়ণ ঘোষ সা° রাইপূর

    দাম ॥০ আনা

    J. M. Louis

    Registrar

    —এই দলিলে যেটি লক্ষ্য করবার বিষয়, তপশীল চৌহদ্দীতে বর্ণিত ‘বান্ধের উত্তরাংশে শান্তীনিকেতন নামা গৃহের চতুপার্শ্বের মধ্যে ২০৴ বিঘা’ অংশটি। এর অর্থ, ১৮ ফাল্গুন তারিখে এই দলিল লিখিত ও স্বাক্ষরিত হবার পূর্বেই এখানে ‘শান্তিনিকেতন’ নামে একটি গৃহ প্রস্তুত হয়েছিল, কাঁচা অথবা পাকা সে-গৃহের চেহারা যাই হোক-না-কেন। ১২৭১ বঙ্গাব্দের [1864-65] আগে দেবেন্দ্রনাথের বিস্তারিত হিসাব-সংবলিত কোনো ক্যাশবহি আমাদের হস্তগত হয়নি, সুতরাং এই গৃহ সম্পর্কে সুনিশ্চিতভাবে কিছু বলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

    স্থানটি পূর্বে ছিল অত্যন্ত ভয়ের জায়গা। অজিতকুমার চক্রবর্তী লিখেছেন : ‘শান্তিনিকেতনের সামনে ভুবনডাঙা গ্রাম, সে গ্রামে থাকিত এক ডাকাতের দল। বোলপুর হইতে নানা গ্রামে গ্রামে পথ গিয়াছে, পথের মধ্যে এই বিশাল প্রান্তর, চারি দিক জনশূন্য। ডাকাতির পক্ষে এমন উপযুক্ত জায়গা আর হইতে পারে না। কত লোককে যে তাহারা খুন করিয়া ঐ ছাতিম গাছের তলায় তাহাদিগের মৃতদেহ পুঁতিয়া রাখিয়াছিল, তাহার ঠিকানা নাই। দেবেন্দ্রনাথের কাছে সেই ডাকাতের দলের সর্দ্দার ধরা দিল; ডাকাতি ব্যবসায় ছাড়িয়া তাঁহার সেবায় আপনাকে নিযুক্ত করিল। যে জায়গা ছিল বিষম ভয়ের জায়গা, তাহাই হইল পরম আশ্রয়ের জায়গা—আশ্রম।’১০ অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় এই সেবক সম্পর্কে অন্যরূপ বিবরণ দিয়েছেন : ‘মহর্ষির অবস্থিতিকালে শান্তিনিকেতনে একবার ডাকাতি হয়। এজন্য তিনি দস্যুদলের অবস্থাভিজ্ঞ একজন উপযুক্ত দারোয়ান অনুসন্ধান করিতে থাকেন। শুনিয়াছি মানকরের জমিদার বাবু হিতলাল মিশ্র একজন দীর্ঘদেহ বলিষ্ঠ লাঠিয়ালকে মহর্ষির নিকটে পাঠাইয়া দেন। ইহার নাম দ্বারিক সর্দ্দার। দ্বারিক সর্দ্দার এই কর্ম্মসূত্রে মানকর হইতে আসিয়া ভুবনডাঙ্গায় বাসস্থাপন করিয়াছিল। …দ্বারিক সর্দ্দার “ডাকাতের দলের সর্দ্দার” রূপে ধরা দেয় নাই, চাকরী করিতে আসিয়া ভুবনডাঙ্গায় বাস করিয়াছিল। সুতরাং অজিতবাবুর উক্তি ভ্রমাত্মক।’১১ একে বালক রবীন্দ্রনাথ, এমন-কি ব্রহ্মচর্যাশ্রমের প্রথম যুগের ছাত্ররা—প্রমথনাথ বিশী, সুধীরঞ্জন দাস প্রভৃতিরাও দেখেছিলেন বলে তাঁদের স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেছেন।

    ব্রাহ্মসমাজের কয়েকটি সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দেবেন্দ্রনাথ ২০ শ্রাবণ [সোম 4 Aug] পিতার ষোড়শ সাংবৎসরিক শ্রাদ্ধবাসর উপলক্ষে ভোজ্য উৎসর্গ করেন। এই উপলক্ষে যে ব্রাহ্ম সংসৎ-এর আয়োজন হয়েছিল, তার বিবরণ একটি ক্ষুদ্র গ্রন্থে নিবদ্ধ করে তার দুই সহস্র খণ্ড বিনামূল্যে বিতরণ করেন।১২ কেশবচন্দ্র সেনও ব্রাহ্মধর্মের নূতন অনুষ্ঠান-পদ্ধতি অনুসারে পুত্রের জাতকর্ম সম্পাদন করেন। সোমপ্রকাশ পত্রিকায় এক পত্ৰলেখক এই সংবাদ দিয়ে অভিযোগ করেন, ‘তৎকালে পৌত্তলিকদের ন্যায় “আয়ু দাও শ্রী দাও” ইত্যাদি প্রার্থনা করা হইয়াছিল।’১৩ ঘটনাগুলি সামান্য নয়; এই কারণেই ব্রাহ্মসমাজের মধ্যে বিভেদের বীজ রোপিত হয়। ১২৭০ বঙ্গাব্দের ১৩ আশ্বিন সংখ্যার সোমপ্রকাশ-এ এই সংবাদটি পরিবেশিত হয় : ‘কলিকাতা বহুবাজার স্ত্রীটে ৭৯ সংখ্যক ভবনে একটী “ব্রহ্মোপাসনালয়” সংস্থাপিত হইয়াছে। মূল ব্রাহ্মসমাজের ব্রাহ্মেরা অনুষ্ঠানপ্রিয় হইয়া পড়াতে কয়েকজন ব্রাহ্ম স্বতন্ত্র হইয়া এই নূতন সমাজ করিলেন। গত ৫ই আশ্বিন রবিবার ইহার উপাসনাকাৰ্য্য আরম্ভ হইয়াছে।’ [৫ম বর্ষ, ৪৬ সংখ্যা]।

    এই বৎসরের সম্ভবত শেষের দিকে [1863] রবীন্দ্রনাথের কনিষ্ঠ ভ্রাতা বুধেন্দ্রনাথের জন্ম হয়। তাঁর জন্ম-মৃত্যুর সাল-তারিখ সঠিক ভাবে জানা যায় না, সাধারণত জীবৎকাল 1863-64 এইভাবে উল্লিখিত হয়। কিন্তু 26 May 1862 [ সোম ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১২৬৯] তারিখে গণেন্দ্রনাথকে তাঁর কনিষ্ঠ ভগ্নীপতি নীলকমল মুখোপাধ্যায় একটি পত্রে কৌতুক করে লিখেছেন, ‘…your aunt the wife of Babu D. T. [Debendranath Tagore] is pregnant, your cousin sister the wife of Sharoda is pregnant and you heard before that our Burro dada’s wife is also pregnant.’১৪ এই পত্র অনুসারে বুধেন্দ্রনাথের জন্ম পৌষ বা মাঘ মাসে অথবা তৎপূর্বে হয়েছিল বলে অনুমান করা যায়। 16 Nov 1863 [সোম ১ অগ্র ১২৭০] লণ্ডন থেকে পত্নীকে লেখা একটি পত্রে সত্যেন্দ্রনাথ লেখেন, ‘রবির পরে আমার আর এক ভ্রাতা হইয়াছে শুনিয়াছিলাম, তাহার নাম কি হইয়াছে?’১৫ এই উদ্ধৃতি থেকে অবশ্য তাঁর জন্মমাস সম্পর্কে কোনো ধারণা করা যায় না, তবে অনুমান করা যায় যে তিনি তখনও জীবিত ছিলেন। সৌদামিনী দেবীর কনিষ্ঠা কন্যা ইন্দুমতীর জন্মসাল আমাদের জানা নেই—উপরে উদ্ধৃত পত্রে হয়তো তাঁরই জন্ম-সম্ভাবনার কথা উল্লিখিত হয়েছে।

    রাজনৈতিক ঘটনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য 23 Apr [বুধ ১১ বৈশাখী স্যার জন পিটার গ্রান্ট অবসর গ্রহণ করলে স্যার সিসিল বীডন বাংলার লেফটেনান্ট গবর্নর হন এবং 1 Jul [মঙ্গল ১৮ আষাঢ়] থেকে সুপ্রীম ও সদর আদালত একত্র হয়ে হাইকোর্ট স্থাপিত হয়। ১ অগ্রহায়ণ [শনি 15 Nov] ইস্টবেঙ্গল রেলওয়ে [E. B. R.] কুষ্টিয়া পর্যন্ত যাত্রীচলাচল শুরু করে, এর ফলে ঠাকুরপরিবারের উত্তরবঙ্গের জমিদারিতে যাতায়াত অনেক সুগম হয়ে পড়ে।

    এই বৎসর ২৯ পৌষ [সোম 12 Jan] স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম হয়। লর্ড সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ জন্মগ্রহণ করেন ১২ চৈত্র [মঙ্গল 24 Mar] তারিখে।

    উল্লেখপঞ্জি

    ১ ‘পিতৃস্মৃতি’, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ। ১৬৯

    ২ ‘সাহিত্যস্রোত’; ড পশুপতি শাশমলের স্বর্ণকুমারী ও বাংলা সাহিত্য গ্রন্থে উদ্ধৃত, পৃ ৪৯-৫০

    ৩ ‘পিতৃস্মৃতি’, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ। ১৫৫

    ৪ পত্রাবলী।

    ৫ অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় ও জ্ঞানেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় : ‘শান্তিনিকেতনের স্মৃতি’, শান্তিনিকেতন আশ্রম [১৩৫৭]। ১০-১১

    ৬ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ৪৪২

    ৭ প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় : রবীন্দ্রজীবনী ১ [১৩৯২]। ৪০

    ৮ প্রমথনাথ বিশী : রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন [১৩৫৩]। ৫

    ৯ দ্র শান্তিনিকেতন আশ্রম। ১১-১২

    ১০ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ৪৪২

    ১১ শান্তিনিকেতন আশ্রম। ১৫-১৭

    ১২ দ্র সোমপ্রকাশ, ২৭ শ্রাবণ [৪র্থ বর্ষ ৩৯ সংখ্যা]

    ১৩ ঐ, ৭ মাঘ [৫ম বর্ষ ১০ম সংখ্যা]

    ১৪ Tagore Family Correspondence [পাণ্ডুলিপি] Vol. I, p. 117

    ১৫ পুরাতনী। ৪৮

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleডুগডুগির আসর – প্রশান্ত মৃধা
    Next Article মহাসিন্ধুর ওপার থেকে – প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.