Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এক পাতা গল্প332 Mins Read0
    ⤶

    ৯. বোবা ইয়াকুব

    অধ্যায় ৪১

    বোবা ইয়াকুব মেইনগেটের পাশে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দোতলা বাড়ির দিকে মুখ করে। মূক-বধির হিসেবে কোনো শব্দ তার কানে পৌঁছায় না বলে নারীকন্ঠের চিৎকারটা সে শুনতে পায় নি, চিৎকারটী কার সেটা বোঝা তো দরে কথা। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে দোতলায়!

    একটু আগে ম্যাডাম নীচতলার জানালার সামনে এসে তাকে ইশারায় ডেকে নিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে সে যেনো কোনোভাবেই গেটটা খুলে না দেয়। এরপর গেটের বাইরে কিছু লোকজন এসে গেট খোলার জন্য চিৎকার চেঁচামেচি করেছে। আর পুরো দৃশ্যটা সে দেখেছে গেটের মধ্যে একটা ছোট্ট ফুটো দিয়ে। ক্ষিপ্ত হয়ে এক লোক গেটে লাথিও মেরেছে, তারপরও সে গেটটা খুলে দেয় নি। একটু আগে গেটের বাইরে পুলিশের দুটো গাড়ি এসে থেমেছে। সঙ্গে সঙ্গে ইয়াকুব বুঝতে পেরেছিলো, ঐ ফালু ছেলেটাকে এখানে ঢুকতে না দিলে আজ এতোকিছু হতো না। সাফিনার ভাই ছাড়াও ফালু তার বনধুও বটে, তাই ইয়াকুব তাকে লুকিয়ে থাকার জন্য ম্যাডামের অগোচরে বাড়িতে ঢুকতে দিয়েছে। ওকে খুঁজতে যে পুলিশ চলে আসবে সেটা জানলে এই কাজ কখনওই করতো না।

    তার এই আক্ষেপটার স্থায়িত্ব ছিলো মাত্র কয়েক সেকেন্ডের। তারপরই দেখতে পায় দোতলার একটি ঘরে আগুন লেগে গেছে। নিমেষে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়লো পাশের ঘরে। দেখতে দেখতে পুরো দোতলায়। বাড়ির দিকে ছুটে গেছিলো সে, কিন্তু সবগুলো দরজাই বন্ধ। কয়েকবার দরজা-জানালায় ধাক্কা মেরে কোনো সাড়া পায় নি। ঘটনা কি কিছুই বুঝতে না পেরে আবারো মেইনগেটের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে। তার কোন ধারণাই নেই একটি নারীকন্ঠের চিৎকার প্রকম্পিত করেছে চারপাশ।

    হঠাৎ চোখের কোণ দিয়ে ডানদিকে কিছু একটা দেখতে পেয়ে চমকে তাকালো ইয়াকুব। দু-জন লোক পিস্তল হাতে ছুটে আসছে তার দিকে। আরেকজন সাদাপোশাকের লোক তখনও দেয়ালের উপরে। দু-জনের মধ্যে পুলিশের পোশাক পরা একজন আর অন্যজন সাদাপোশাকে। ইয়াকুব দু হাত তুলে কিছু বলার চেষ্টা করলেও শুধু গোঙানির মতো শব্দ করতে পারলো। তারপরই দু-জন মানুষ পিস্তল তাক করে তাকে মাটিতে বসে পড়ার জন্য হুকুম করলো। ওরা নিশ্চয়ই চিৎকার করে কিছু বলছে, কিন্তু বোবা শুধু ওদের ক্ষিপ্ত অভিব্যক্তি দেখতে পেলো।

    মাথার উপরে হাত তুলে হাটু গেড়ে বসে পড়লো দারোয়ান। পুলিশের পোশাক পরা একজন চিৎকার করে হাত নেড়ে চাবি চাইলে তার কাছে। দেরি করে কোমর থেকে চাবির গোছাটা বের করে পুলিশের হাতে দিয়ে দিলো সে। লোকটা দৌড়ে চলে গেলো মেইনগেটের দিকে। দ্রুত তালা খুলে টেনে গেটটা খুলে দিলো।

    এসপি মনোয়ার, ওসি আর দু-জন কনস্টেবল ঠুরমুর করে ঢুকে পড়লো বাড়ির ভেতরে। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা দোতলা বাড়িটির দিকে তাকালো সবাই। বাড়ির সামনে যে লন আছে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো তারা, বুঝতে পারলো না কি করবে।

    “স্যার, নীচতলায় এখনও আগুন ছড়ায়া পড়ে নাই,” কথাটা বললো আনোয়ার। “ভিতরে গিয়া দেখুম?”

    “জলদি করো, তাড়া দিয়ে বললো এসপি।

    এসআই আনোয়ার লনটা পেরিয়ে গেলো বড় বড় পা ফেলে। তার পেছন পেছন ছুটলো ডিউটিতে থাকা দু-জন পুলিশ। তাদের সবার হাতে পিস্তল। আনোয়ার মূল ভবনের গেটটা ধাক্কা মেরে বুঝতে পারলো ওটা ভেতর থেকে বন্ধ। পাশের জানালার কপাটে ধাক্কা মারলো, ওটাও বন্ধ। এবার সে দরজায় লাথি মারলো কিন্তু কাজ হলো না। সেগুন কাঠের ভারি দরজা, কয়েকজন মানুষের পক্ষেও লাথি মেরে ভাঙা সম্ভব নয়।

    আনোয়ার সাদাপোশাকের দু-জনকে বললো বাড়িটার পেছনে চলে যেতে, ওখানে কোনো দরজা খোলা আছে কিনা দেখতে। সঙ্গে সঙ্গে দু-জন পুলিশ চলে গেলো পেছন-বাড়িতে। আনোয়ার যখন আবারো লাথি মারতে যাবে দরজায় তখনই সেই চিৎকারটা ফিরে এলো আবার।

    নারীকণ্ঠের আর্তনাদ।

    এসপি মনোয়ার হোসেন বুঝতে পারলো এটা কার কণ্ঠ।

    মুশকান জুবেরি!

    “স্যার, কে চিল্লাইতাছে?” ওসি জানতে চাইলো তার কাছে।

    “জানি না,” মিথ্যে বললো সে।

    “বাড়িতে আগুন দিলো কে?” বিড়বিড় করে বললো ওসি।

    “হায় আল্লাহ, নুরে ছফা কোথায়?” এসপির মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলো কথাটা।

    ওসি কোনো জবাব দিতে না পেরে চেয়ে রইলো কয়েক মুহূর্ত। তারপরই গেটের দিকে নজর যেতে বলে উঠলো, “ঐ ব্যাটা দারোয়ানরে জিজ্ঞেস করি?”

    “ও বোবা…কথা বলতে পারে না।”

    এসপির দিকে ভুরু কুচকে তাকালো সুন্দরপুরের ওসি। মুশকান জুবেরির সাথে যে এসপির দারুণ সখ্যতা সেটা তারা ভালো করেই জানে। এখন দেখতে পাচ্ছে, এই বাড়ির অনেক খবরও এসপির জানা।

    নারীকণ্ঠটা আবারো চিৎকার দিয়ে মাঝপথে থেমে গেলো। ভয়ের সাথেই তারা দেখতে পেলো দোতলার আগুন নীচতলায় ছড়িয়ে পড়ছে। বন্ধ জানালাগুলোর ফাঁকফোকর দিয়ে দেখা যাচ্ছে আগুনের শিখা।

    “আরে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিন, জলদি!” চিৎকার করে বললো। এসপি।

    ওসি থতমত খেয়ে মোবাইলফোনটা বের করলো। “ওরা আসতে আসতে তো পুরা বাড়ি পুইড়া ছাই হইয়া যাইবো, স্যার,” নাম্বারটা ডায়াল করে কানে চাপালো ওসি।

    এসপিও এটা জানে। আশেপাশে সবচেয়ে নিকটে যে ফায়ার সার্ভিসের ডিপো আছে সেটা প্রায় ত্রিশমাইল দূরে। কিন্তু দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে তাদের খবর দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই। মনোয়ার হোসেন চোখ কুচকে তাকিয়ে রইলো বাড়িটার দিকে। নুরে ছফার পরিণতি নিয়ে সে ভীষণ চিন্তিত। এসআই আনোয়ার যে বোকার মতো বাড়িটার সদর-দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেটা দেখে আরো হতাশ হলো। সম্ভবত উপরতলায় নুরে ছফা আছে, আর তার পরিণতিটা কি সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই আগুন নেভানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ ভেতরে ঢুকে পড়লেও লাভ হবে না, তাতে কেবল হতাহতের সংখ্যা বাড়বে।

    একটা গোঙানির শব্দ শুনে পেছন ফিরে তাকালো এসপি আর ওসি। মেইনগেটের কাছে বোবা দারোয়ান ছোটার জন্য হাসফাস করছে। তাকে দু দিক থেকে শক্ত করে ধরে রেখেছে দু-জন কনস্টেবল।

    “কি হইছে,” ফায়ার সার্ভিসকে খবরটা দিয়ে ফোন নামিয়ে বললো ওসি।

    “স্যার, হে তো বাড়ির দিকে ছুঁইটা যাইতে চাইতাছে,” একজন কনস্টেবল জবাব দিলো। বোবাকে ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে তারা।

    “পাগল হইছে নি…ও কি দেখতাছে না বাড়িটাতে আগুন লাগছে.” বিরক্তমুখে বলে ফোনটা পকেটে রেখে দিলো সে। “আপনে তো কইলেন বোবা, এখন তো দেখতাছি চোখেও দেখে না। পুরাই আন্ধা!” এসপির দিকে ফিরে বললো ওসি।

    ঠিক এ-সময় নারীকণ্ঠের একটি চিৎকার ভেসে এলো। “মাগো লাগে; বাবাগো! বাঁচাও! বাঁচাও!” তবে সেটা দোতলা থেকে নয়, নীচতলা থেকে! এবারের চিৎকারটাও ভিন্ন রকম!

    এমন সময় পেছন-বাড়ি থেকে দৌড়ে এলো দু-জন কনস্টেবল। “সব গেট বন্ধ! বাড়ির পেছনে কেউ নাই!” তাদের মধ্যে একজন চিৎকার করে বলে উঠলো।

    “স্যার!” সদর দরজার সামনে থেকে পেছন ফিরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো এসআই আনোয়ার। “নীচতলায় কেউ আছে?”

    এসপি আর ওসি নড়েচড়ে উঠলো।

    “ওরে বলো দরজা ভিতর থেইকা খুইলা বাইর হইয়া আসতে!” ঝপটপ বললো ওসি।

    দ্রুত মাথা নেড়ে সায় দিয়েই আনোয়ার বলে উঠলো, “ভিতর থেইকা দরজা খুইলা বাইর হন…জলদি!”।

    নারীকন্ঠের চিৎকারটা বিরামহীনভাবেই হচ্ছে। যেনো উন্মাদ হয়ে গেছে কেউ। থামছেই না। কয়েক সেকেন্ড পরই ভেতর থেকে দরজাটা খুলে গেলে বীভৎস দৃশ্য দেখা গেলো। গায়ে জবুথুবু করে শাড়ি জড়িয়ে এক তরুণী দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। তার শাড়ির আঁচলের অগ্রভাগে এখনও আগুন জ্বলছে। তার হাত-মুখ-পা ঝলসে গেছে আগুনে। শাড়িটাও পুড়ে গেছে জায়গায় জায়গায়। মাথার চুলগুলো আগুনের লেলিহান শিখার স্পর্শে এসে কেমন কুঁকড়ে গেছে। তবে সবচাইতে ভয়ঙ্করভাবে ঝলসে গেছে মেয়েটির মুখ। সেটা দেখে চেনার উপায় নেই। মাংস আর পোড়া চামড়া লেপ্টে আছে যেনো মুখে! সম্ভবত মেয়েটার মাথায় আঘাত করা হয়েছে। মাথার চুল আর সারামুখ রক্তে ভিজে একাকার।

    “আমারে বাঁচান! আমারে বাঁচান! ঐ ডাইনি আমারে শ্যাষ কইরা দিছে!” মেয়েটি উদভ্রান্তের মতো বলতে লাগলো। আমার সারাশরীর জ্বলতাছে! মাগো-বাবাগো!” গগনবিদারি আহাজারি করতে লাগলো সে।

    এসআই আনোয়ার মেয়েটার একহাত ধরে তাকে কিছু বলতে যাবে অমনি মেইনগেট থেকে তীব্র একটা গোঙানি দিয়ে মেয়েটার দিকে ছুটে আসতে লাগলো বোবা দারোয়ান। দু-জন কনস্টেবল তাকে আর ধরে রাখতে পারে নি।

    এসপি মনোয়ার হোসেন আর ওসি ঝটপট ঘুরে দাঁড়ালো। ওসি দু-হাতে বোবা ছেলেটাকে জাপটে ধরে ফেললেও তাকে ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে কনস্টেবল দু-জন ছুটে এসে বোবাকে জাপটে ধরে মাটিতে শুইয়ে দিলো।

    “এই শালার কি মাথা খারাপ হইছে?” ওসি অবাক হয়ে বললো।

    “ওরে আমর কাছে আইতে দিয়েন না! আমারে হাসপাতালে নিয়া যান। আল্লার দোহাই লাগে, আমারে হাসপাতালে নিয়া যান?” চিৎকার করে বলতে লাগলো ঝলসে যাওয়া তরুণী। “আমারে বাঁচান! আমারে বাঁচান!”

    আগুনে পোড়া মেয়েটির আর্তনাদ উপস্থিত সবাইকে স্পর্শ করলো।

    “মেয়েটাকে এক্ষুণি হাসপাতালে নিয়ে যান। দেরি করলে বাঁচবে না!” মনোয়ার হোসেন আদেশের সুরে বললো ওসিকে।

    “জি, স্যার,” ওসি দ্রুত মাথা নেড়ে সায় দিয়ে আনোয়ারের উদ্দেশ্যে জোরে বললো, “ওরে বাইরে নিয়া আসো। এক্ষুণি হাসপাতালে পাঠাইতে হইবো।” কথাটা বলেই সে মেইনগেটের দিকে পা বাড়ালো।

    আনোয়ার মেয়েটার একহাত ধরে তাকে মেইনগেটের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। ঝলসে যাওয়া তরুণীকে দেখে মনে হচ্ছে সে চোখে কিছু। দেখছে না। এসপি জানে, এই বাড়ির কাজের মেয়েটি রাতকানা রোগে ভুগছে। বেচারি গরীবঘরের মেয়েটির জন্য তার খুব মায়া হলো। “ঐ ডাইনি সব জ্বালায়া দিছে! সব শ্যাষ কইরা দিছে! এক বেটারেও মারছে! আমারেও পুড়াইয়া মারতে চাইছিলো!” মেইনগেটের দিকে যেতে যেতে বললো আগুনে পুড়ে যাওয়া মেয়েটি।

    বোবা ইয়াকুব মেয়েটাকে চলে যেতে দেখে পাগলের মতো ছটফট করছে কিনতু তার উপরে চেপে বসা দু-জন কনস্টেবলের হাত থেকে ছাড়াতে পারছে নানিজেকে জবাই করা পশুর মতো গোঙানি দিচ্ছে মুখ দিয়ে।

    “ও নিজেও মরছে, সবাইরে মারছে!” মেইনগেটের সামনে এসে পেছন ফিরে অদৃশ্য কারোর উদ্দেশ্যে বললো মেয়েটি। যে হাতটা মুক্ত সেটা উদভ্রান্তের মতো নাড়ছে। “আল্লাগো! আমার সব শ্যাষ কইরা দিছে?”

    এসপির চোখমুখ তিক্ততায় কুচকে গেলো। অভাবে পড়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে এইসব মেয়ে, আর তাদের সাথে শেষ পর্যন্ত কী জঘন্য আচরণটাই করা হয়! মেয়েটা যেভাবে পুড়েছে তাতে মনে হচ্ছে না সে বাঁচতে পারবে।

    কিছুক্ষণ পরই ওসিকে সঙ্গে নিয়ে এসআই আনোয়ার ফিরে এলো বাড়ির ভেতরে।

    “স্যার, থানার জিপে কইরা মেয়েটাকে হাসপাতালে পাঠায়া দিছি,” ওসি রিপোর্ট করলো।

    মাথা নেড়ে সায় দিলো এসপি। “এখন কি করবো, স্যার?” ওসি কিছু বুঝতে না পেরে বললো।

    “আমিও তো কিছুই বুঝতে পারতাছি না, নিজের অপারগতা না দেখিয়ে পারলো না মনোয়ার হোসেন।

    পুরো বাড়িটা এখন নরককুণ্ড হয়ে জ্বলছে। রাতের আকাশ লালচে আলোয় আলোকিত। রীতিমতো গমগম শব্দ করে সবকিছু গিলে খাচ্ছে। আগুনের শিখাগুলো। যতোই খাচ্ছে ততোই যেনো বাড়ন্ত হচ্ছে।

    “বাড়ির ভিতরে তো যাওন যাইবো না…সবখানে আগুন, বাড়ির দিকে চেয়ে বললো সুন্দরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

    একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো এসপি৷ “নুরে ছফার কী হলো কে জানে!”

    মুখ ফুটে কিছু না বললেও সুন্দরপুর থানার ওসি জানে ডিবির ঐ ইনভেস্টিগেটরের পরিণতিটা। মুশকান জুবেরি নিজেও বেঁচে নেই। মহিলা শেষপর্যন্ত আত্মঘাতিনী হয়েছে। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে নিজেকে শেষ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেচারা নুরে ছফা সম্ভবত ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি এই মহিলা এরকম কিছু করতে পারে।

    এতোক্ষণে আশেপাশের অনেক উৎসুক মানুষ মেইনগেটের সামনে এসে জড়ো হয়ে দেখছে আগুন কিভাবে জ্বলন্ত চিতা বানিয়ে ফেলেছে জমিদার বাড়িটাকে।

    ওসি পেছন ফিরে দেখলো মেইনগেটের সামনে জড়ো হওয়া মানুষজন আস্তে আস্তে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ছে। “অ্যাই! বাড়ির বাইরে যাও! কেউ বাড়িতে ঢুকবে না!” চিৎকার করে বললো সে। “কেউ না!”

    গ্রামের লোকজন কয়েক পা পিছু হটে গেলেও তাদের আগ্রহ মোটেও পিছটান দিলো না।

    ফোনের রিং বেজে উঠলে এসপি মনোয়ার হোসেন চমকে বাড়ি থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখতেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার মুখ দিয়ে। “হ্যালো…” ওপাশ থেকে ছফার সহকারি জাওয়াদের উদ্বিগ্ন কণ্ঠটা শুনতে পেলো সে। “হূম…” চোখ বন্ধ করে মাথা নেড়ে সায় দিলো। “…আমরা সবাই সঙ্গে সঙ্গেই বাড়িতে চলে এসেছি… বাড়িটা এখন আগুনে জ্বলছে, সম্ভবত মুশকান জুবেরি আর নুরে ছফা বাড়ির ভেতরেই আছে…” আবারো মাথা নেড়ে সায় দিলো সে। “…ভেতরে যদি থেকে থাকে তাহলে মনে হয় না, কেউ বেঁচে আছে।”

    এমন সময় একটা হৈহল্লা শুনে কানে ফোন চেপে রেখেই সেদিকে তাকালো এসপি। বোবা ছেলেটা দৌড়ে চলে যাচ্ছে বাড়িটার দিকে। তাকে যারা ধরে রেখেছিলো তারা কিছুটা সামনে বেড়েই থমকে দাঁড়ালো। কোন্ ফাঁকে যে তাদের হাত থেকে ছুটে গেছে টেরই পায় নি।

    দারোয়ান ছেলেটি নীচতলার সদর-দরজা দিয়ে ঢুকে পড়লো ভেতরে। যেনো জ্বলন্ত নরকের ভেতর ঢুকে গেলো সে।

    “পাগল নাকি!” ওসি আবারো কথাটা বললো।

    এসপি মনোয়ার হোসেন কানে ফোনটা চেপেই ওসির পাশে এসে দাঁড়ালো বোবার এমন আচরণে সেও অবাক। “…ঐ বাড়ির দারোয়ান… বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়েছে…হুম…মাথা খারাপ হয়ে গেছে মনে হয়।” ওপাশে জাওয়াদের কথা শুনে আক্ষেপে মাথা দোলালো এসপি। “ধারেকাছে কোথাও ফায়ার সার্ভিস নেই..তারপরও আমি খবর দিয়েছি ওদের…না, না…দোতলা থেকে আগুন লেগেছে…যেভাবে জ্বলছে বাইরে থেকে পানি দিয়ে নেভানোর চেষ্টা করলেও কাজ হতো না।” আরো কিছুক্ষণ কথা শুনে ফোনটা কান থেকে সরিয়ে ফেললো সে।

    “বাড়িটা ভাইঙ্গা পড়তে পারে, স্যার,” ওসি বললো মনোয়ার হোসেনের দিকে তাকিয়ে।

    একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পকেটে ফোনটা রেখে দিলো ভদ্রলোক। আগুনের সর্বগ্রাসি রূপ দেখে তার মনে হচ্ছে নুরে ছফার লাশটাও খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।

    বাড়িটার সামনে থেকে সবাই একটু একটু করে পিছিয়ে গেলো। আগুনের উত্তাপ ক্রমশ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। ভবনের সামনে পার্ক করে রাখা প্রাইভেটকারটি কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুনের গ্রামে চলে যাবে। এসপি মনোয়ার হোসেন আগুনের উত্তাপ থেকে বাঁচার জন্য কয়েক পা পিছিয়ে গেলো।

    “বোবা পোলাটা মনে হয় আটকা পইড়া গেছে,” ওসি বললো।

    মাথা নেড়ে সায় দিলো এসপি। ছেলেটা কী মনে করে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো কে জানে। ভেতরে তার কোনো মূল্যবান জিনিস ছিলো? নাকি মুশকান জুবেরিকে উদ্ধার করার জন্য?

    ঠিক তখনই জ্বলতে থাকা বাড়ির নীচতলা থেকে গোঙানি শোনা গেলো। কণ্ঠটা নিশ্চয় কোনো পুরুষ মানুষের। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই কপাট খুলে রাখা সদর-দরজা দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে এলো বোবা। আগুনের হাত থেকে বাঁচার জন্য গায়ে মোটা একটা কম্বল জড়িয়ে রেখেছে সে। বোঝা যাচ্ছে তার কোলে অচেতন এক নারী! বোবা ছেলেটি বাড়ির সামনে লনের উপর মেয়েটিকে নামিয়ে রেখে হাত নেড়ে গোঙাতে গোঙাতে কী সব বলতে লাগলো। মেয়েটার শরীর অনেকটাই নগ্ন, শুধুমাত্র পেটিকোট আর ব্লাউজ আছে গায়ে। তবে তার শরীরে আগুনে পোড়ার কোনো চিহ্ন নেই!

    আশপাশ থেকে পুলিশ সদস্যরা ছুটে এলো। সুন্দরপুরের ওসিও পা বাড়ালো সেদিকে, তারপর কি মনে করে থমকে দাঁড়ালো। পেছনে ফিরে দেখলো এসপি মনোয়ার হোসেন বিস্ফারিত চোখে চেয়ে আছে অচেতন মেয়েটির দিকে।

    “কি হইছে, স্যার?”

    “এটা তো মুশকান জুবেরি না!”

    একটু ভিরমি খেলো ওসি। “কি!” তারপর ঢোক গিলে বললো, “তাইলে ওইটা কে ছিলো?”

    .

    অধ্যায় ৪২

    সুন্দরপুর থানার ওসির জিপটা এখন মহাসড়ক ধরে ছুটে চলেছে। রাস্তায় খুব কমই যানবাহন আছে, গতি বাড়াতে দ্বিতীয় চিন্তা করতে হচ্ছে না ড্রাইভারকে। যদিও পেছনের সিট থেকে আগুনে দগ্ধ মেয়েটির আর্তনাদ আর যন্ত্রণাকাতর কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে না এখন।

    একটু আগেও ঝলসে যাওয়া মেয়েটি আর্তনাদ করতে করতে সিটের উপরে ছটফট করছিলো। তার এই যন্ত্রণাকাতর গোঙানি পুলিশের ড্রাইভারকে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে তাগিদ দিচ্ছিলো যেনো। লোকটা ভেবে পাচ্ছিলো না দগ্ধ মেয়েটির সাথে জঘন্য এই কাজটা করেছে আরেকজন নারী! সেই মহিলা আবার বেশ শিক্ষিত।

    গাড়িটা যখন রবীন্দ্রনাথকে অতিক্রম করে সুন্দরপুর টাউন পার হয়ে সদর হাসপাতালের দিকে ছুটে যাচ্ছিলো তখন হঠাৎ করেই কাতরানোর শব্দ থেমে যায়। ড্রাইভার হয়তো মনে করে থাকবে আহত মেয়েটি মারা গেছে, তাই উৎসুক হয়ে পেছন ফিরে যে-ই না দেখতে যাবে অমনি সে তার জীবনে সবচেয়ে বড় ভয়টি পায়। সঙ্গে সঙ্গে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে। ছোটোবেলা থেকে শোনা সবগুলো ভুতের গল্পকে হার মানিয়ে দেবার জন্যই হয়তো বা পেছনের সিটে আগুনে পোড়া মেয়েটি তার দিকে পিস্তল তাক করে রাখে!

    “রাস্তার পাশে গাড়ি থামাও!” বেশ স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে ওঠে আগুনে। ঝলসে যাওয়া মুখটি। তার উচ্চারণে গ্রামটান নেই! “একদম নড়বে না। যা বলি তাই করবে, নইলে গুলি করবো।”

    মাথামুণডু কিছুই বুঝতে পারছিলো না বেচারা ড্রাইভার। হতবুদ্ধিকর এক ঘোরের মধ্যেই গাড়ির গতি কমিয়ে দেয় সে। আস্তে করে রাস্তার পাশে ওটা থামাতেই তার মনে হয় এই রাতে নির্জন রাস্তায় ভুতের খপ্পরে পড়েছে। সে। ভুতটা ভর করেছে এইমাত্র মরে যাওয়া মেয়েটির উপরে! কিন্তু সে ভেবে পাচ্ছিলো না ভুতটার হাতে পিস্তল এলো কিভাবে।

    পিস্তলের মুখে জিপ থেকে নেমে পড়ে সে। তারপর ভূতটার নির্দেশমতো ঘুরে দাঁড়ায় দু-হাত তুলে। কয়েক মুহূর্ত পরই শুনতে পায় গাড়িটা শব্দ করে চলে যাচ্ছে। পেছন ফিরে হতবাক হয়ে দেখতে পায় প্রচণ্ড গতিতে চলে যাচ্ছে ওটা।

    রিয়ার-মিররে ড্রাইভারের হতভম্ব হওয়া চেহারাটা দেখে মুচকি হেসেছিলো মুশকান জুবেরি। আমেরিকায় গিয়ে ষোলো বছর বয়সেই ড্রাইভিং শিখেছিলো। আঠারো পেরোবার পর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় থেকে নিজেই গাড়ি চালিয়ে ক্যাম্পাসে যেতো। ড্রাইভিংয়ের নেশা আজো ছাড়তে পারে নি।

    একহাতে দুইলটা ধরে অন্যহাত দিয়ে মুখের উপর থেকে রাবারের মতো শক্ত হয়ে যাওয়া ফেসিয়াল প্যাকের আস্তরণটি টেনে টেনে খুলে ফেললো। তার সুন্দর চুলগুলো কেমন কুঁকড়ে আছে, ফুলেফেঁপে রয়েছে। ভালো করে ধুলে ওগুলো আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। পিস্তলটা পাশের সিটের উপরে রেখে দিলো। জিনিসটা ছফার কাছ থেকে নিয়েছে। গায়ে। জড়ানো শাড়িটার কিছু করলো না। তার পেটে বেল্ট দিয়ে একটা ছোট্ট প্যাকেট বাঁধা আছে, ওটাতে আছে একসেট সালোয়ার-কামিজ, মোবাইলফোন আর কিছু টাকা।

    বাঁকাহাসি ফুটে উঠলো মুশকানের ঠোঁটে। খুব বেশি সময় পায় নি প্রস্তুতি নেবার জন্য। বিকেলের পরই সে বুঝে যায় ঐ নুরে ছফা পুলিশের লোক হতে পারে। যে-ই সেই পুলিশ নয়, অনেক ক্ষমতাধর একজন পুলিশ। বাড়ির বাইরে সাদাপোশাকে দু-জন লোকের আগমন, ওসি-এসপি-এমপি তার ফোন না ধরার একটাই মানে ছিলো তার কাছে।

    কি হতে যাচ্ছে সেটা যখন বুঝতে পারলো তারপর আর বেশি সময় নষ্ট করে নি। গভীর করে দম নিয়ে নিজেকে আগে প্রসতুত করে নেয়। গ্লাসে অল্প একটু রেডওয়াইন ঢেলে শান্ত হয়ে পান করতে বসে। গ্লাসটা খালি হবার আগেই একটি পরিকল্পনা করে ফেলে সে। কি কি করতে হবে মনে মনে ঠিক করে নিয়ে দ্রুত কাজে নেমে পড়ে। তার মধ্যে হয়তো একটু অস্থিরতা ছিলো, একটু উদ্বিগ্নতাও থেকে থাকবে কিন্তু সে নিশ্চিত ছিলো তার পরিকল্পনা সফল হবে। কঠিন পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়ার মতো নার্ভ তার নেই। ওটা অনেক আগেই ভেঙেচুড়ে একদম নিঃশেষ হয়ে আবার নতুন করে জন্ম নিয়েছে। তার মনে হয় না এ দুনিয়াতে এমন কোনো কঠিন। পরিস্থিতি আছে যা তাকে ভেঙে ফেলতে পারে।

    প্রথমেই মিউজিক প্লেয়ারের ভয়েস রেকর্ডারে একটি আর্তচিৎকার রেকর্ড করে। বেশি না, পর পর দু-বারই যথেষ্ট ছিলো। ফাইলটা কপি করে নেয় আরো কয়েকবার। ওটা শেষ করে দীর্ঘদিন ধরে আগলে রাখা পেপার ক্লিপিংসের অ্যালবামটা নিয়ে কাজে নেমে পড়ে।

    আরব্য-রজনীর সেই কাহিনীর মতোই নুরে ছফা পেপার-ক্লিপিংসের অ্যালবামের পৃষ্ঠা ওল্টানোর জন্য ডানহাতের তর্জনী বার বার জিভে লাগিয়ে ভিজিয়ে নিয়েছে আর নিজের অজ্ঞাতসারে শরীরে প্রবেশ করিয়েছে নার্ভ সিস্টেম বিকল করে দেয়ার মতো শক্তিশালী একটি ড্রাগস। একটু শক্তিশালী ডোজ ব্যবহার করতে হয়েছে তাকে। তার হিসেবে ছিলো তর্জনীতে লেগে থাকা ড্রাগস যেনো কমপক্ষে তিনবার জিভে স্পর্শ করতেই কাজ শুরু করে। বেশ রোমাঞ্চকর ছিলো ব্যাপারটা, কিছুটা নাটকীয়ও।

    এই ড্রাগসটি প্রথমে পা দুটো অসাড় করে দেয়। ছফা সম্ভবত এটা টের পেলেও মনে করেছিলো তার পায়ে ঝি-ঝি ধরেছে। কিছুক্ষণ বসে থাকলে এটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। পা থেকে ওটা যখন হাতে গিয়ে পৌঁছায় তখন ছফার টের পাবার কথা ছিলো কিন্তু সে ডুবে গেছিলো আন্দিজের কাহিনীতে। অবশেষে তার মুখটাও যখন বন্ধ হয়ে গেলো তখন আর কিছুই করার ছিলো না। মুশকান জানে, ঐ সময়ে ছফার চিন্তা-ভাবনাগুলোও বেশ বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছিলো-পুরোপুরি অচেতন হবার আগে এমনটিই হবার কথা।

    এরপর ঘরে থাকা অনেকগুলো ফেসিয়াল-প্যাক থেকে একটি প্যাক নিয়ে কাজে নেমে পড়ে। পুরো একটি টিউব ব্যবহার করে হাতে-মুখে-পায়ে আর গলার নীচে মেখে নেয়। প্যাকের অবশিষ্ট আঠালো তরল মেখে নেয় চুলে। এলোমেলো আর বিতস্ত্র করে ফেলে তার সুন্দর রেশমি চুলগুলো। ফেসিয়াল প্যাক দ্রুত শুকিয়ে গেলে আয়নায় দেখে সন্তুষ্ট হয় সে। আগুনে ঝলসে যাওয়া ভিক্টিমদেরও এরচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর লাগে না!

    ছফাকে নিয়ে কি করবে সেটা আগে থেকে ঠিক করে রাখে নি। সে শুধু চেয়েছিলো লোকটাকে অচেতন করে ফেলতে। তবে তার বাড়িতে ফালুর লুকিয়ে থাকাটা বাড়তি সুবিধা এনে দেয়। গোরখোদককে পালাতে সাহায্য করা হবে এই আশ্বাসে তাকে দিয়ে ছোট্ট একটা কাজ করিয়ে নেয়। তার ধারণা পুলিশ এটা দ্রুতই আবিষ্কার করবে।

    এরপর ফালুকে পালানোর সুযোগ করে দেয়। ছেলেটাকে বলে দিয়েছে। জোড়পুকুরের দক্ষিণে যে ভাঙা মন্দিরটা আছে, ওটার সামনের দিকে জলাশয় দিয়ে সাবধানে সাঁতরে গেলে সে এখান থেকে পালাতে পারবে।

    নীচে নামার সময় দোতলার ল্যান্ডিংয়ে সাফিনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। রাতের বেলায় কিছু দেখতে পায় না, তাই কান পেতে সব কিছু বোঝার চেষ্টা করছিলো। তার সৎভাই ফালুর সাথে কি করা হচ্ছে সেই কৌতূহল চেপে রাখতে পারে নি। তাকে ল্যান্ডিংয়ে দেখতে পেয়েই মুশকান সতর্ক শিকারী পশুর মতো নিঃশব্দ হয়ে যায়। তারপরও মেয়েটা কিভাবে যেনো টের পেয়ে ঘুরে দাঁড়ায়, রেলিং ধরে তড়িঘড়ি নীচে নামতে শুরু করে। ঠিক তখনই পেছন থেকে মেয়েটার মুখে ক্লোরোফর্মের রুমাল চেপে ধরে। তাকে অচেতন করে নীচতলার ভেতরের দিকে একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে গা থেকে শাড়িটা খুলে ফেলে। সে চায় নি আসন্ন জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্যে পড়ে মেয়েটার কোনো ক্ষতি হোক। সম্ভবত মেয়েটা অক্ষতই আছে।

    বোবা ইয়াকুব আরেকটুর জন্য সমস্যা বাঁধিয়ে দিতো। আর কেউ না চিনুক তাকে ওভাবে দেখেও ইয়াকুব ঠিকই চিনতে পেরেছিলো। সেটাই স্বাভাবিক। দিনের পর দিন যে শরীরটা ভোগ করতো সেটা অন্য যে কারোর চেয়ে তার কাছে বেশিই চেনা। সুতরাং বোবাকে ধোঁকা দিতে পারে নি। পুলিশের কারণে সে কিছু করতেও পারে নি। তাকে মাটিতে ফেলে দু-দুজন মানুষ চেপে ধরে রেখেছিলো।

    নীচতলা দিয়ে বের হবার আগে শেষবারের মতো দোতলায় যায় সে আগুন লাগাতে। মুশকানের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিলো এটাই। কাঠের মেঝে আর সিঁড়ি, বাড়িতে প্রচুর কাঠের আসবাব, গ্যাস-বার্নার আর অ্যালকোহলের কারণে আগুন ধরানোটা এমন কোনো ব্যাপার ছিলো না কিন্তু বাড়িটার প্রতি মায়া জন্মে গেছিলো তার। এই কয়েক বছরে বাড়িটা সত্যিকার অর্থেই ঠিকানা হয়ে উঠেছিলো তার। নিজের ঠিকানা ধ্বংস করা মোটেও সহজ কাজ নয়। তারপরও সেটা করতে হয়েছে। আর এটা করতে গিয়ে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এসেছিলো ভেতর থেকে। সে বুঝতে পারছিলো, এই জীবনে আর স্থায়ি ঠিকানা বলে কিছু থাকবে না। আন্দিজের পর থেকে সে থিতু হতে পারে নি। অনেক চেষ্টা করেছে, আমেরিকা ছেড়ে চলে এসেছে। ঢাকায়, তারপরও সে টিকতে পারে নি। সুন্দরপুরও তার জন্য শেষ পর্যন্ত আরেকটি ফেলে আসা অধ্যায় হয়ে গেলো।

    সব প্রস্তুতি শেষে সাফিনার শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে নেবার পর তার প্রিয় রেডওয়াইনের একটি বোতল নিয়ে ঢক ঢক করে কিছুটা পান করে, বাকিটুকু ঢেলে দেয় মাথায়। রক্তসদৃশ্য রেডওয়াইন মাথা থেকে সারামুখে ছড়িয়ে পড়ে। তারপরই গভীর করে দম নিয়ে নীচতলায় নেমে যায় চিৎকার দিতে দিতে। গ্রামটানে তার চিৎকার সবাইকে আরেকবার ধোঁকা দিতে সক্ষম হয়।

    মুশকান ভেবেছিলো তাকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নিতে কমপক্ষে দু জন পুলিশ থাকবে গাড়িতে, কিন্তু তা হয় নি। মাত্র একজন ড্রাইভারকে কায় নেয়া এমন কোনো কঠিন কাজ নয়, বিশেষ করে গুলিভর্তি পিস্তল হাতে থাকলে।

    রাস্তার পাশে একটা ঝুপডির পাশে জিপটা থামালো সে। সুন্দরপুর থেকে গাড়ি চালিয়ে অসংখ্যবার এ পথ দিয়ে ঢাকায় গেছে। পথের দু-ধারে সবই তার চেনা। এই ঘরটি কাঠ কিংবা এরকম কিছু রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। এখন ওটা বন্ধ। চারপাশে কোনো প্রাণীর চিহ্ন নেই। পিস্তলটা হাতে নিয়ে জিপ থেকে নেমে পড়লো। ঝুপড়িটার পেছনে একটা ডোবা আছে। জায়গাটা বেছে নেবার দুটো কারণের মধ্যে এটা অন্যতম। ঝুপড়ি ঘরটার পেছনে গিয়ে শরীর থেকে শাড়িটা খুলে ফেললো। অন্ধকারেই নেমে পড়লো ডোবায়। শীতের এমন রাতে তীব্র ঠাণ্ডা পানি তাকে বিন্দুমাত্র কাবু করতে পারলো না। এরচয়েও বেশি ঠাণ্ডায় বেঁচে ছিলো, একদিন নয় দুদিন নয় প্রায় আড়াই মাস।

    বুক সমান পানিতে নেমেই কয়েকবার ডুব দিলো নগ্ন মুশকান। এখন যদি নির্জন এই রাতে কেউ তাকে দেখেও ফেলে ভুত-প্রেত ছাড়া আর কিছু ভাববে না।

    হাত-মুখ আর শরীর থেকে ফেসিয়াল-প্যাকগুলো ঘষে ঘষে মুছে ফেলার চেষ্টা করলো। কিছুক্ষণ পর ডোবা থেকে উঠে দ্রুত পরে নিলো সালোয়ার কামিজ। জিপে উঠে বসলো আবারো, তবে এই গাড়িটা বেশিক্ষণ ব্যবহার করতে পারবে না, তাকে খুব দ্রুত এটা পরিত্যাগ করতে হবে।

    গাড়ির হুইল ধরে রাস্তার দিকে চোখ রেখে একটু ভেবে নিলো মুশকান। এ-মুহূর্ত যাবার মতো একটা ঠিকানাই আছে। আর সেটা অন্য একটি জরুরি কাজ করার জন্যেও উপযুক্ত জায়গা।

    .

    অধ্যায় ৪৩

    সুন্দরপুরের জমিদার বাড়িটি চিতার মতোই জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে গেছে। খবর পাবার চল্লিশ মিনিট পর ফায়ারসার্ভিসের একটা গাড়ি চলে এলেও ততোক্ষণে পুরো বাড়িটিতে আগুন এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে, দুটো হোস পাইপ দিয়ে আগুন নেভানোটা বালখিল্য বলেই মনে হয়েছে স্বয়ং ফায়ারম্যানদের কাছে। বলতে গেলে সারারাত ধরেই আগুন জ্বলেছে, আর সেই দৃশ্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে অল্প কিছু মানুষ।

    রাতকানা মেয়েটিকে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসার কিছুক্ষণ পরই তার জ্ঞান ফেরে। সে যা বললো, তা শুনে এসপি মনোয়ার এবং থানার ওসি হতভম্ব। তাদের সামনে দিয়ে, তাদের চোখে ধুলো দিয়ে, রীতিমতো বোকা বানিয়ে মুশকান জুবেরি সটকে পড়েছে। আর তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে স্বয়ং পুলিশ!

    থানার যে গাড়িটা করে মিসেস জুবেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো সেই গাড়ির ড্রাইভার আধঘন্টা পর এসে জানায় কি ঘটনা ঘটে গেছে। মনোয়ার হোসেন সব শুনে হতবাক হয়ে থাকে বেশ কয়েক মিনিট। আগুনে পুড়ে ঝলসে যাওয়া একজন মহিলা কিভাবে এটা করতে পারলো? তার তো বেঁচে থাকা নিয়েই সন্দেহ ছিলো। ড্রাইভার অবশ্য জানতে না পোড়া মেয়েটিই মুশকান জুবেরি। এসপি আর ওসি যখন তাকে এটা বললো সে চুপ মেরে গেলো। পুরো ব্যাপারটাই পুলিশের কাছে রহস্যময়। তারা এর কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পেলো না। মুশকান জুবেরি কিভাবে আগুনে পোড়ার ধোঁকা দিতে পারলো সেটা মাথায় ঢুকছে না।

    রাত দুটোর দিকে ব্যর্থমনোরথে নিজের কোয়ার্টারে ফিরে আসে এসপি। আর সুন্দরপুরের ওসি তার লোকজন নিয়ে নেমে পড়ে বাড়িটার আশেপাশে তল্লাশীর কাজে। দু-জন কনস্টেবলকে মেইনগেটে পাহারায় বসিয়ে দেয়। দোতলা বাড়িটি ভেতর থেকে ভেঙে পড়লেও সম্মুভাগটি তখনও দাঁড়িয়ে ছিলো। আগুনের শিখা নিভে গেলেও ছাইচাপা আগুন জ্বলেছে ভোর পর্যন্ত। ভোরের আজান যখন ভেসে আসছিলো দুরের কোনো মসজিদ থেকে তখনই একটা ঘটনা ঘটে বাড়ির পেছনে বাগানে। ঐ সময় পুলিশের লোজন জোড়পুকুর পাড়ের পাশে জলাশয়ের মধ্যে কুমিরগুলো খুঁজে পেয়েছে মাত্র। বিশাল জলাশয়ের একটি অংশ কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে আলাদা করা। তার মধ্যেই বিচরণ করতে দেখে বেশ কয়েকটি কুমিরের বাচ্চাকে। এটা নিয়ে সবাই যখন ব্যস্ত ঠিক তখনই এক কনস্টেবল চিৎকার করে ওঠে বাড়ির পেছনে থাকা ঔষধি বাগান থেকে। ওসি নিজে পড়িমরি করে তার লোকজন নিয়ে ছুটে যায় সেখানে। তারা গিয়ে দেখতে পায় বাগানের একটা ঝোপের আড়ালে ঘাসের উপরে ভারি কম্বলে ঢাকা একটি লাশ! মুখটা দেখেই ওসি চিনতে পারে, এটা নুরে ছফা। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্নই নেই, একেবারে অক্ষত৷ যেনো ঘুমিয়ে আছে।

    এসআই আনোয়ারই প্রথম খেয়াল করে ছফার বুক ওঠানামা করছে। মৃদু। সঙ্গে সঙ্গে ডিবির এই কর্মকর্তাকে পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় সদর হাসপাতালে। এসপিকে ঘুম থেকে জাগিয়ে ফোন করে এ ঘটনা জানানো হয়। কথাটা শুনে মনোয়ার হোসেন যতোটা না বিস্মিত হয়। তারচেয়েও বেশি হাফ ছেড়ে বাঁচে। তাহলে নুরে ছফা আগুনে পুড়ে মারা যায় নি। তাকে জীবিত উদ্ধারের কথা বলতে হবে এখন, আর এটাই তাদের মুখ। কিছুটা রক্ষা করবে।

    সঙ্গে সঙ্গে ওসিকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলে দেয় এসপি। ওসিও এটাই চাইছিলো। তাকেও তো কিছু করে দেখাতে হবে। মুশকান জুবেরি তাদের সামনে দিয়ে, তাদেরই সহায়তায় পালিয়ে গেছে-এই ব্যর্থতা ঢেকে ফেলতে হবে। সুতরাং পুলিশ তাদের রিপোর্টে জানালো, ছফাকে নীচতলার বাড়ির ভেতর থেকে অক্ষত উদ্ধার করা হয়েছে। এ কাজ করতে গিয়ে ওসি আর এসআই আনোয়ার জীবনের ঝুঁকি নিতেও কুণ্ঠিত ছিলো না। স্বয়ং এসপিসাহেবের যোগ্য নেতৃত্বে এটা করা হয়।

    *

    পরদিন সকালে সুন্দরপুরের সবাই জেনে গেলো ঘটনাটি। তবে কি কারণে মুশকান জুবেরি পালালো আর তার বাড়িটা আগুনে পুড়ে গেলো সেটা নিয়ে কারোর কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই। এক একজন মনের মাধুরি মিশিয়ে গল্প। বলে যেতে লাগলো। বলাই বাহুল্য, গল্পগুলো মুখরোচক।

    তবে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এসে যখন দেখতে পেলো রবীন্দ্রনাথ বন্ধ তখন অবাক হয়ে একে-ওকে জিজ্ঞেস করেও আসল কারণটা জানতে পারলো না।

    “ওই হোটেল আর জীবনেও খুলবো না, বুঝলেন?” মেজাজের সাথে কথাটা বললো রবীন্দ্রনাথের উল্টো দিকের টঙ দোকানি রহমান মিয়া।

    “কেন, কি হয়েছে?” একজন ভদ্রলোক উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো।

    “আরে, হে কি আমারে কইয়া গেছে ক্যান বন্ধ কইরা দিছে?” ঝাঁঝের সাথে জবাব দিলো রহমান।

    দু-জন ভদ্রলোক হতাশ হয়ে ফিরে গেলো রাস্তার ওপাড়ে পার্ক করা গাড়ির কাছে।

    “খাওনের কী শখ!” চোখমুখ বিকৃত করে বললো দোকানি। “গাড়ি লইয়া আইসা পড়ছে?” তারপরই ওয়াক থু। এই ঘেন্নাটা বেশ আনন্দের সাথেই প্রকাশ করতে পারলো সে। রহমান মিয়ার চোখেমুখে আনন্দ। সামনে রাখা গুড়ের পিণ্ডের উপরে এক ঝাঁক মাছি বসে থাকলেও সেগুলো হাত দিয়ে তাড়ালো না।

    রবীন্দ্রনাথ কেন, ঐ ডাইনিটাও আর কখনও এখানে আসবে না।

    .

    অধ্যায় ৪৪

    কেএস খান বসে আছে বিছানার পাশে। তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে জাওয়াদ। তারা দুজনেই চেয়ে আছে বিছানায় বসে থাকা নুরে ছফার দিকে। বাইরে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। ঘণ্টাখানেক আগে সুন্দরপুর থেকে ফিরে এসেছে একদম অক্ষত শরীরে। বলতে গেলে তেমন কিছুই হয় নি তার। সম্পূর্ণ সুস্থ আছে এখন। উদ্ধারের পর পরই জ্ঞান ফিরে পায় সে। কোথাও কোনো ধরণের চোট পায় নি। তবে গতরাতের ঘটনার কিছুই মনে করতে পারছে না। ডাক্তার বলেছে, তার কোনো সমস্যাই নেই। তবে কড়া ডোজের অজ্ঞাত একটি ড্রাগস দেয়া হয়েছে। ছফার রক্ত পরীক্ষা করলে সেটার পরিচয় জানা যাবে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, ড্রাগসটি অচেতন করে দিয়েছিলো তাকে।

    “আপনের কিছুই মনে নাই?” হতাশ হয়ে জানতে চাইলো কেএসকে। কফির কাপে চুমুক দিতে ভুলে গেছে সে।

    মাথা দুলিয়ে জবাব দিলো ছফা। বিছানার উপরে বসে আছে সে, তার হাতেও কফির কাপ। তবে জাওয়াদ কফি খায় না বলে তার হাত খালি।

    “ঐ বাড়িতে যে গেলেন, এইটাও মনে করতে পারছেন না?”

    মুখ তুলে তাকালো নুরে ছফা। “ওটা মনে আছে, স্যার…মানে ঐ বাড়িতে গেলাম…মহিলার সাথে কথা বললাম…তারপর…” চুপ মেরে গেলো।

    …মহিলা আমাকে একটা অ্যালবামের মতো কিছু দিলো…”

    উদগ্রীব হয়ে চেয়ে রইলো কেএস খান।

    “…সম্ভবত ছবির অ্যালবাম…”

    “একটা ছবির অ্যালবাম?”

    “জি, স্যার…ছবির অ্যালবাম।”

    “কার ছবি?”।

    “মুশকান জুবেরির…” মনে করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো সে৷ “.ওর ছোটোবেলার ছবি…” তারপর আর কিছু মনে করতে পারলো না।

    দীর্ঘশ্বাস ফেললো কেএসকে, সে বুঝতে পারছে ছফার অবস্থা। “একটা বইয়ে পড়ছিলাম…এক ধরণের ড্রাগস আছে…এইটা যে যার উপরে অ্যাপ্লাই করা হয় তার মেমোরি লস হইয়া যায়…টেম্পোরারি মেমোরি পুরা ইরেজ কইরা দেয়। এইজন্য ড্রাগসটা কাজ শুরু করার কয়েক মিনিট আগে থেইকা যে মেমোরি আছে তাও নষ্ট হইয়া যায়। একটু থেমে আবার বললো সে, “সব স্মৃতিই টেম্পোরারি মেমোরিতে থাকে..তারপর সেইটা পারমানেন্ট মেমোরিতে চইলা যায়। বুঝলেন?”

    ছফা অবাক হলো। ডিবির ইনভেস্টিগেটর এইসব কথা কি করে জানে।

    “এইগুলা সব বই পইড়া জানছি,” শিশুসুলভ হাসি দিয়ে বললো কেএস খান।

    “কিন্তু স্যার,” বললো নুরে ছফা, “যতোটুকু মনে পড়ছে, আমি ওখানে কোনো কিছুই খাই নি…ওই মহিলাও আমার থেকে বেশ দূরে বসেছিলো…তাহলে এটা কিভাবে হলো?”

    “কন কি?” অবাক হলো কেএসকে। নতুন কোনো ব্যাখ্যা খুঁজতে লাগলো। “কোনো রকম কন্ট্যাক্ট হয় নাই? আপনে কিছু মুখেও দেন নাই?”

    মাথা দুলিয়ে সায় দিলো ছফা। যতোটুকু মনে আছে এরকম কিছুই হয় নি। ঐ অ্যালবামটা খুলে পড়তে শুরু করেছি…তারপরই সবকিছু কেমন ওলট পালট হয়ে গেলো।”

    অনেকক্ষণ চুপ করে রইলো ডিবির সাবেক ইনভেস্টিগেটর। “অ্যালবামটা দেওনের আগে কি কি হইছে সব মনে আছে?” অবশেষে জানতে চাইলো সে।

    কপালের ডানপাশটা আঙুল দিয়ে ঘষলো ছফা। “অনেকটাই মনে আছে…মানে, আমি ঠিক শিওর না…”

    “থাক, কষ্ট কইরা মনে করনের দরকার নাই। কয়েকদিন রেস্টে থাকেন, সব ঠিক হইয়া যাইবো।”

    মাথা নেড়ে সায় দিলো নুরে ছফা। “মিসেস জুবেরি সবকিছুই নিজে। থেকে বলছিলো…আমি যেসব বিষয় নিয়ে সন্দেহ করছি তার সবকিছু পরিস্কার করে দিয়েছিলো…”

    “তাই নাকি?”

    “জি, স্যার। মহিলাকে নিয়ে আমি যেসব সন্দেহ করেছিলাম সব কিছুর লজিক্যাল এক্সপ্লানেশন দিয়েছিলো।”

    “এইসব আপনের মনে আছে?”

    “হ্যাঁ, মনে আছে।”

    “এইটা কি ঐ ফটো-অ্যালবামটা দেওনের আগে না পরে?”

    “আগে …”

    “হুম,” গভীর ভাবনায় ডুবে গেলো কেএসকে। “তাইলে কি ঐ অ্যালবামটার মইধ্যেই মেকানিজম করছিলো?” অনেকটা আপন মনে বিড়বিড় করে বললো সে।

    “কি বললেন, স্যার?” নুরে ছফা বুঝতে পারলো না।

    “আমার মনে হইতাছে মহিলা ঐ অ্যালবামটার মইধ্যেই কিছু করছিলো..মাইনে, আপনে তো কইলেন, ওইটা ছাড়া আর কিছু টাচ করেন। নাই…”

    “অ্যালবামের মধ্যে?…” ছফার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। “সেটা কিভাবে সম্ভব?”

    মুচকি হাসলো মি. খান। “ঐ যে…আরব্য-রজনীর কাহিনীতে আছে…বইটার প্রত্যেক পৃষ্ঠায় বিষ মাখায়া রাখছিলো?”

    ছফা বুঝতে পারলো কিনা সেটা বোঝা গেলো না, আলতো করে মাথা নেড়ে সায় দিলো সে।

    “এই ধরণের পয়জন কিন্তু বহুত আছে,” গুরুগম্ভীরভাবে বললো কেএস খান। “একটু ওভার-ডোজ হইলেই বিপদ আছিলো।”

    নুরে ছফা অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো, “স্যার, ঐ মহিলা পাঁচজন ভিক্টিমকে আসলে কি করেছে বলে মনে করেন, আপনি?”

    কেএস খান পেছন ফিরে জাওয়াদের দিকে তাকালো। ছেলেটা নিজের অভিব্যক্তি লুকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে পারলো না, গাল চুলকে কাচুমাচু খেলো একটু।

    “অর্গ্যান পাচারের ব্যাপারে কি কোনো প্রমাণ জোগাড় করতে পেরেছেন হাসপাতালের ঐ ডাক্তারের কাছ থেকে?”

    মাথা দোলালো কেএস খান।

    দীর্ঘশ্বাস ফেললো ছফা। “এই কেসটা তাহলে আপনার আমার দু জনের জন্যই প্রথম ব্যর্থ কেস হয়ে গেলো, তাই না, স্যার?”

    কেএসকে নিঃশব্দে হাসি দিলে নুরে ছফা একটু অবাকই হলো। “কেসটা কইলাম সলভ…খালি আসামী ধরন বাকি। ওইটা করা যাইবো। আপনে কোনো চিন্তা কইরেন না। সে ধরা পড়বোই।”

    ভুরু কুচকালো ছফা। “কেস সলভ মানে? আমরা তো জানিই না মুশকান জুবেরি পাঁচজন ভিক্টিমের সাথে কি করেছে!”

    হাসি দিয়ে ছফাকে আশ্বস্ত করলো কেএসকে। “এইটা আসলে আমরা জানি,” কথাটা বলে জাওয়াদের দিকে তাকালো। “আপনেরে পরে সব বলবো…এখন রেস্ট নেন।” উঠে দাঁড়ালো সাবেক ডিবি কর্মকর্তা।

    “আপনি জানেন?” মাথা নেড়ে সায় দিয়ে আবারো আশ্বস্ত করলো কেএস খান।

    “তাহলে আমাকে বলছেন না কেন, মুশকান জুবেরি ঐ পাঁচজন ভিক্টিমকে কি করেছে, কেন করেছে?”

    “মুশকান কোনো অর্গ্যান পাচারের সাথে জড়িত না, আপনের এই হাইপোথিসিসটা ভুল ছিলো।”

    পুরো কথাটা শোনার জন্য অপেক্ষা করলে সে।

    “মহিলা তার ভিক্টিমদের শরীরের একটা অর্গ্যান খায়া ফেলতো!”

    “কি!” কথাটা শুনে ভিরমি খেলো ছফা। “এরকম একজন রুচিবান মহিলা এটা কেন করবে?” অবিশ্বাসে বলে উঠলো সে।

    ছফা যে আন্দিজের ঘটনাটা জানে না সেটা বুঝতে পারলো। এই লম্বা গল্পটা এখন না বলে সরাসরি আসল প্রসঙ্গে চলে গেলো। “কারণ খুব কঠিন এক সিচুয়েশেনে পইড়া, বাই-অ্যাকসিডেন্ট সে ইনভেন্ট করছে, মানুষের শরীরে একটা বিশেষ একটা অঙ্গ খাইলে যৌবন ধইরা রাখা যায়।”

    বিস্ময়ে চেয়ে রইলো ছফা। “এটা তো পুরোপুরি আজগুবি কথা,” মেনে নিতে না পেরে বলে উঠলো। “কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই না। বিকৃত মস্তিষ্কের কাজ-কারবার!”

    কেএসকে কিছুই বললো না।

    “আ-আপনি এটা বিশ্বাস করেন, স্যার?”

    “দেখেন, আমি হইলাম যুক্তির মানুষ…যুক্তি ছাড়া কিছু বিশ্বাস করি না। যা দেখি নাই দুই নয়নে তা মানি না গুরুর বচনে?”

    “আমিও, স্যার। এইসব আজগুবি ফালতু কথা কে বলছে?”

    “ঐ ডাক্তার…আসকার ইবনে সায়িদ।”

    “ও-ওকে আমি এমন শিক্ষা দেবো…” দাঁতে দাঁত চেপে বললো ছফা। “ আমাদের সাথে রসিকতা! এসব কথা বলে ওই ডাক্তার আসলে অর্গান পাচারের ব্যাপারটা আড়াল করতে চাইছে, স্যার।”

    গাল চুলকালো কেএসকে।

    অবিশ্বাসে চেয়ে রইলো ছফা। সে জানে কেএস খানের এই ভঙ্গিটির অর্থ কি। “আ-আপনি এই উদ্ভট গল্পটা বিশ্বাস করেন?”

    কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বললো, “আমি কি বিশ্বাস করি না করি সেইটা বলার আগে আমারে একটা কথা বলেন। আপনে তো মহিলারে সামনে থেইকা দেখছেন…বললেন তো, ওর বয়স কতো হইতে পারে?”

    একটু ভেবে নিলো ছফা। “মমম…কতে হবে…ত্রিশ? বড়জোর পঁয়ত্রিশ এর বেশি হবে না। আমি নিশ্চিত। অবশ্য মহিলাকে দেখলে যদি আরো কম বয়সি মনে হয় তাহলেও দোষ দেয়া যাবে না।”

    দীর্ঘশ্বাস ফেললো কেএস খান। “মুশকান জুবেরির বর্তমান বয়স ছেষট্টি!”

    ছফার মনে হলো তার সাথে মশকরা করা হচ্ছে। “ছেষট্টি মানে??”

    “মাইট যোগ ছয়!”

    .

    অধ্যায় ৪৫

    সুন্দরপুরের এমপি আসাদুল্লাহ সারাদিন এখোটা ব্যস্ত ছিলো যে নিজের এলাকার খবর নিতে পারে নি। রাজনীতি এমনিতেই ব্যস্ততম একটি পেশা, তার উপরে ক্ষমতাসীন দলের এমপি হলে ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুন। শীতকালীন সংসদ অধিবেশন চলছে। অনেকদিন পর আজ সংসদে বসেছিলো কয়েক ঘণ্টা। এক সময় ঘুমিয়েও পড়েছিলো। এ নিয়ে কলিগেরা হাসাহাসি করেছে। নিজদলের এক এমপি টিটকারি মেরে বলেছে, মাল টেনে এসেছে কিনা। কথাটা সে সহজভাবেই নিয়েছে। অন্তত বাহ্যিকভাবে, কিনতু ভেতরে ভেতরে গজগজ করে উঠেছিলো। হারামজাদা, আমি এখনও তোর মতো হতে পারি নি! কোথায় কি খেয়ে যেতে হয় সেটা ভালো করেই জানি! অবশ্য মুখটা এমন করে রেখেছিলো যেনো কী-যে-বলেন-না-ভাই’ টাইপের।

    যাইহোক, রাত নটার পর সংসদ ভবন থেকে বের হয়ে আরেক এমপির বাসায় গিয়ে ‘মাল’ অবশ্য ঠিকই টেনেছে। সেটা আর এমন কি। সবাই তা করে। কেউ স্বীকার করে, কেউ করে ভণ্ডামি।

    রাত বারোটার পর ফাঁকা অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে মেজাজটাই বিগড়ে গেলো। সারাদিন এতো কাজ করার পর যদি শূন্য বাড়িতেই ফিরে আসতে হয় তাহলে এতোসব কিসের জন্য করছে? তার বউ-বাচ্চারা মনে করে এই দেশে মানুষ থাকে না! কানাডার নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করে ওরা। এজন্যে অবশ্য ওদেরকে খুব বেশি দোষও দেয়া যায় না। এক/এগারোর আগেভাগে সে নিজেই পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে অন্য অনেকের মতো বউ-বাচ্চাকে ওখানে পাঠিয়ে দেয়। শত শত রাজনীতিকের বেগমসাহেবরা থাকেন বলে কানাডার ঐ জায়গাটাকে এখন লোকজন বেগমগঞ্জ বলে টিটকারি মারে।

    জামা-কাপড় না খুলেই বিছানায় গিয়ে ধপাস করে শুয়ে পড়লো। পকেট থেকে দুটো সেলফোন বের করে রাখলো বালিশের পাশে। রাত বারোটার পর সব সেলফোন বন্ধ করে রাখে, শুধু একটা বাদে। ওটার নাম্বার খুব কম লোকের কাছেই আছে। যাদের কাছে আছে তাদের কাণ্ডজ্ঞান অতো নীচে কখনও নামবে না যে, রাত-বিরাতে অদরকারে-কমদরকারে ফোন করে প্রাইভেট লাইফে বিঘ্ন ঘটাবে।

    চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকলো কয়েক মুহূর্ত। টের পেলো মাথাটা খুব ধরে আসছে। সে জানে যথেষ্ট মদ পেটে না গেলে তার এরকম হয়। অন্যের মদ খেতে বসে একটু ভদ্রতা করেছিলো বলে এই অবস্থা। এখন আরেকটু না খেলে সারারাত এমন মাথাব্যথা নিয়েই বিছানায় পড়ে থাকতে হবে। অবশেষে বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রিজ থেকে পাসপোর্টের একটি বোতল আর গ্লাস নিয়ে আবারও ঢুকলো বেডরুমে। বিছানার পাশে সোফায় বসে কিছুটা পানীয় টেলে চকচক করে পান করলো। বোতলটা রাখলো সোফার পাশে মেঝেতে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ওষুধের মতো কাজ করলো যেনো। মাথাব্যথাটা চলে গেলো পুরোপুরি। আরেকটু পান করার লোভ সামলাতে পারলো না। বেশি খেলে তার খুব একটা সমস্যা হয় না, কম খেলেই যতো বিপত্তি।

    মাথাব্যথা কেটে যাবার পর সমস্ত ক্লান্তি অপসারিত হতেই মনে হলো সুন্দরপুরের খবর নেয়া দরকার। গতকাল এসপিকে ফোন দিয়েছিলো ঘটনা কি জানার জন্য কিন্তু হারামজাদা তার ফোন ধরে নি। ওকে এক সপ্তাহের মধ্যে ট্রান্সফার করতে হবে। পরক্ষণেই ভুল ভাঙলো তার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রভাবশালী একজনের কারণেই তার বিশ্বস্ত আর ঘনিষ্ঠ এসপি এ কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। এমনকি তাকেও হাতপা গুটিয়ে রাখতে হয়েছে ঐ লোকের ভয়ে। নইলে মুশকানকে সাহায্য করা তার জন্য কোনো ব্যাপারই ছিলো না। বরং তার গোয়াতুর্মি আর অধৈর্যের কারণে যে দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সেটা ঘোচানোর সুযোগ পাওয়া যেতো মেয়েটার বিপদে সাহায্য করে।

    মুশকানের কথা ভাবতেই একটা প্রশ্নের উদয় হলো তার মনে সে কি এমন করেছে, যার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঐ লোক ক্ষেপে আছে? কিছুক্ষণ ভেবেও আন্দাজ করতে পারলো না। ঠিক করলো আগামীকাল সকালে যেভাবেই হোক এসপির সাথে যোগাযোগ করে এটা জেনে নেবে, যদি আদৌ সে সবটা জেনে থাকে।

    হঠাৎ করে শোবার ঘরের খোলা দরজার দিকে তাকালো। বাইরের প্যাসেজ আর ড্রইংরুমের আলো নেভানো। আসাদুল্লাহ নিশ্চিত, অ্যাপার্টমেন্টে ঢোকার সময় সবগুলো বাতি জ্বালিয়েছিলো। একটু আগে যখন ফ্রিজ থেকে ওয়াইনের বোতলটা নিয়ে এলো তখনও বাতি জুলছিলো। পরক্ষণেই আবার অনিশ্চয়তায় পড়ে গেলো সে। মাতাল হিসেবে এরকম ভুল হতেই পারে।

    মদের গ্লাসটা হাতে নিয়েই উঠে দাঁড়ালো। দরজার সামনে এসে ডানে বামে তাকালো সে। এই সুরক্ষিত অ্যাপার্টমেন্টে কে টুকবে? অসম্ভব। মুচকি হাসলো আসাদুল্লাহ্ ক্ষমতাবানদের নিরাপত্তাহীনতা বোধ একটু বেশিই থাকে, যেটা বাইরের লোকজন বুঝতে পারে না সব সময়। শোবার ঘরের বাইরে প্যাসেজের বাতিটা জ্বালিয়ে দিয়ে সোফায় এসে বসলো আবার। গ্লাসটা খালি করে ভরে নিলো আরেক দফা। কিছুক্ষণ পর টের পেলো মদ কাজ করতে শুরু করেছে। কেমন হালকা হয়ে এসেছে মাথাটা! চোখ দুটো ভারি হয়ে আসছে৷ গ্লাসটা খালি করে সোফার হাতলের উপর রেখে ঘরের বাতি নিভিয়ে দিলো। বিছানায় শুয়ে পড়লো চিৎ হয়ে। একটু পর কিছু একটা টের পেয়ে খোলা দরজার দিকে তাকালো সে। ওখানে দাঁড়িয়ে আছে আবছায়া এক নারীমূর্তি!

    কে?

    অবয়বটি আস্তে আস্তে হেঁটে তার বিছানার কাছে চলে এলো। ঘরের বাতি নেভানো বলে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে না। বাইরের আলোয় অবয়বটি আবছায়া মূর্তি দেখে তার মনে হলো এই নারী তার অনেক দিনের চেনা।

    “কে?” এবার মুখ দিয়ে কথাটা বের করতে পারলো। “মুশকান?”

    “ঘরছাড়া এই পাগলটাকে এমন করে কে গো ডাকে করুণ গুঞ্জরি,” নারীকণ্ঠটি প্রায় ফিসফিসিয়ে, সুরে সুরে বলে উঠলো, “যখন বাজিয়ে বীণা বনের পথে বেড়াই সঞ্চরি।”

    আসাদুল্লাহর কাছে মনে হলো সে একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখছে। তার সামনে যে নারী দাঁড়িয়ে আছে তার সান্নিধ্য পাবার জন্য সে কতোটা ব্যাকুল তা কেউ না জানুক সে নিজে তো জানে। এই নারী তাকে পাগল করে তুলেছে। বার বার ফিরিয়ে দিয়ে অপমান করেছে তাকে। শেষে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পর মরিয়া হয়ে জোর খাটাতে শুরু করেছে ইদানিং, কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। মুশকান এমন ভাব করে, যেনো তার সমস্ত হম্বি-তম্বি শিশুতোষ পাগলামি ছাড়া আর কিছু না।

    নারীমূর্তিটি তার মুখের উপর কিছুটা ঝুঁকে এলো। যেনো তাকে ভালো করে দেখছে। আসাদুল্লাহ আবছা আবছা দেখতে পেলো মুখটি। সেই রহস্য!

    সেই দুর্দমনীয় আকর্ষণ! প্রলুব্ধকর চাহনি!

    “ভয় পাচ্ছো?” বলে উঠলো মুশকান। “দেখো, আমি তোমার ঘরে চলে এসেছি! তোমার জায়গায় আমি হলে প্রাণ খুলে গাইতাম ‘এসে এসো আমার ঘরে এসো…” সুরে সুরে গানটা গেয়ে আচমকা থেমে গেলো। “তোমার কাছ থেকে অবশ্য এটা আশা করাটাও বোকামি। তুমি একটা মাথামোটা ভাঁড়!”

    এমপি পিটপিট করে তাকালো শুধু।

    “তুমি ভয় পাচ্ছো?”

    বুঝতে পারলো না তাকে কেন এ প্রশ্ন করা হচ্ছে।

    “ভয় পাবার কিছু নেই। তুমি মোটেও খাওয়ার যোগ্য নও!”

    তারপরই নিঃশব্দে হেসে উঠলো সে। সেই হাসির কি অর্থ বুঝতে পারলো না আসাদুল্লাহ। গভীর ঘুমে তলিয়ে যাবার সময় মুশকানের আদরমাখা কণ্ঠটি।

    “তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও. আমি তোমাকে খাবো না!”

    *

    ঢাকায় আসার পরদিনই অফিসে চলে গেলো নুরে ছফা। ইচ্ছে করলে কয়েকটা দিন বিশ্রাম নিতে পারতো, কিন্তু ব্যাচেলর মানুষের আর যাইহোক নিজের ঘরে বেশিক্ষণ থাকতে ভালো লাগে না। তাছাড়া এমন কিছু হয় নি যে বিশ্রাম নেবার দরকার আছে।

    অফিসে এসেই কয়েকজন কলিগের সাথে দেখা করে নিজের ঘরে গিয়ে কয়েকটি পত্রিকা নিয়ে বসলো। কমিশনার এলে তাকে পুরো ব্যাপারটা ব্রিফ করতে হবে। পত্রিকা খুলতেই তার সহকারি জাওয়াদ ঢুকলো ঘরে। তার মধ্যে এক ধরণের অস্থিরতা দেখতে পেলো ছফা।

    “স্যার, ঘটনা শুনেছেন?”

    “কি?”

    “সুন্দরপুরের এমপি মারা গেছে গতরাতে!”

    ভুরু কুচকে ফেললো সে।

    “কিভাবে মারা গেলো? কোথায় মারা গেলো?”

    “হার্ট অ্যাটাকে, স্যার…নিজের ফ্ল্যাটে।”

    “ব্যাপারটা খুব কাকতালীয় হয়ে গেলো না?” পত্রিকা নামিয়ে রাখলো সে। “গতপরশু সুন্দরপুরে এতোবড় একটা ঘটনা ঘটলো আবার গতরাতে সেই এলাকার এমপি মারা গেলো…স্ট্রেইঞ্জা”।

    “স্যার, দুটো ঘটনা মোটেও কাকতালীয় নয়। আমি নিশ্চিত, এটা মুশকান জুবেরির কাজ।”।

    “কি?” আৎকে উঠলো ছফা। “কি বলতে চাচ্ছো? ওই মহিলা ধরা পড়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে…তাছাড়া তুমি বলছো এমপি হার্ট-অ্যাটাকে মারা গেছে, তাহলে মুশকান জুবেরিকে সন্দেহ করার কারণ কি?”

    “স্যার, সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে। খবরটা শোনার পর আমিও ভেবেছিলাম কাকতালীয় হতে পারে, কিন্তু টিভিতে নিউজটা দেখার পর বুঝলাম এটা মুশকান জুবেরিই করেছে।”

    “একটু খুলে বলবে?” অধৈর্য হয়ে উঠলো ছফা।

    “এমপি আসাদুল্লাহ কোথায় থাকে জানেন, স্যার?”

    “না।“

    “গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে। আর ঐ ডাক্তার আসকার ইবনে সায়িদও থাকেন একই অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে।”

    “মাইগড!” অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো ছফা।

    .

    উপসংহার

    মুশকান জুবেরিকে ধরা না গেলেও নুরে ছফা বেশ বাহবা পেলো উর্ধতন কর্মকর্তার কাছ থেকে। এমন কি শেষ ভিক্টিম হাসিবের মামা প্রধানমন্ত্রীর। কার্যালয়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিটিও ফোন করে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। যে কেসটার কোনো কূল-কিণারা কেউ করতে পারে নি, সামান্য অগ্রগতিও দেখাতে পারে নি সেখানে ছফা যতোটুকু করেছে তা তো বিস্ময়করই বটে। হ্যাঁ, আসামীকে ধরা যায় নি, তাতে কি? তাকে ধরার কাজ এখনও অব্যাহত আছে। যেকোনো সময় ঐ মহিলাকে ধরা সম্ভব হবে।

    কর্তাদের এমন কথায় অবশ্য ছফা মনে মনে একমত হতে পারে নি। তার ধারণা, মুশকান জুবেরি চিরকালের জন্য ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। এরপক্ষে যুক্তি দিতে পারবে না সে, তবে এটাই তার দৃঢ় বিশ্বাস। সুন্দরপুরের এমপি মারা যাবার কথা শুনে এ নিয়ে কমিশনারের কাছে গিয়ে বলেছিলো, ঘটনাটা নিছক হার্ট-অ্যাটাকের না-ও হতে পারে। একই ফ্ল্যাটে মুশকানের ঘনিষ্ঠ ডা: আসকার ইবনে সায়িদ থাকেন। এই ভদ্রলোক মুশকানের প্রায় সব ব্যাপারই জানেন। যদিও পাঁচজন ভিক্টিমের ব্যাপারটা তিনি জানতেন না বলেই দাবি করেছেন। ছফার কাছ থেকে এ কথা শুনে কমিশনার বলেছেন, ফরেনসিক রিপোর্টে যদি সন্দেহজনক কিছু থাকে তাহলে এটা নিয়ে তারা তদন্ত করে দেখতে পারে, কিন্তু নিছক একই ফ্ল্যাটে বসবাস করার জন্য এরকম সন্দেহ করাটা ধোপে টিকবে না। এই সন্দেহটা প্রমাণের জন্য শক্ত প্রমাণ দরকার।

    ছফা সেই প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করে শেষে হতাশ হয়েছে। এমপির মৃত্যুর কারণ হিসেবে ফরেনসিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে অতিরিক্ত মদ্যপানকে, সেটাও আবার সরকারী দলের হস্তক্ষেপের কারণে ধামাচাপা পড়ে গেছে। সেই রিপোর্ট প্রকাশ করা তো দূরের কথা, দেখারও সুযোগ হয়নি কারোর। ছফা অনেক চেষ্টা করে শুধু এটুকুই জানতে পেরেছে। সুতরাং এমপি আসাদুল্লাহর কেসটা নিয়ে এগিয়ে যাবার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও ডাক্তার আসকার ইবনে সায়িদের সঙ্গে দেখা করার জন্য গিয়েছিলো কিনতু ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। এমপি মারা যাবার পরদিনই ভদ্রলোক কী একটা কাজে আমেরিকায় চলে গেছেন, কবে ফিরবেন কেউ জানে না।

    বেশ কয়েকদিন হয়ে গেলেও কেএস খানের সাথে তার দেখা হয় নি। এর কারণ আরেকটি কেস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ভদ্রলোক।

    ডাক্তারের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে ছফা ফোন দেয় সাবেক ডিবি ইনভেস্টিগেরটকে। কেএসকে জানায় কয়েকদিন ব্যস্ত থাকার পর আজ বাড়িতে আছে বিশ্রাম নেবার জন্য। তার শরীর একটু খারাপ। কথাটা শুনে। মুচকি হেসেছিলো সে। মি. খানের শরীর কবে ভালো ছিলো মনে করার চেষ্টা করলো। কিংবা কখনও সে তাকে বলেছে কিনা তার শরীর আজ ভালো, মনে পড়লো না।

    “স্যার, তাহলে আমি আসছি আপনার বাসায়, একটু গল্প করে যাই। অনেকদিন দেখা হয় না,” বলেই ফোনটা রেখে দিলো ছফা।

    *

    জমিদার বাড়িটি পুড়ে যাবার পর এমপি আসাদুল্লাহর মৃত্যু সুন্দরপুরকে একটু নাড়িয়ে দিলেও দু-সপ্তাহ পরই সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠলো। কেবল রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেন নি বাদে!

    অদ্ভুত নামের রেস্টুরেন্টটি সেই যে বন্ধ হয়েছে আর খোলে নি। এর কর্মচারিরা কোথায় চলে গেছে, কে তাদের চলে যেতে বলেছে সেটা কেউ জানে না। এখনও অনেকেই রবীন্দ্রনাথের সামনে গাড়ি থামিয়ে হতাশ হয়ে দেখতে পায় দরজা-জানালা সব বন্ধ। চমৎকার আর অদভুত সাইনটাও জ্বলছে না। তাদের বেশিরভাগই রাস্তার ওপাড়ে রহমান মিয়ার টঙ দোকানে। গিয়ে জানতে চায় ঘটনা কি। শুরুতে এই এক কথা বলতে বলতে রহমানের মেজাজ প্রায়ই বিগড়ে যেতো, লোকজনের এইসব প্রশ্ন করা যেনো অচিরেই বন্ধ হয়ে যায় সেই কামনাই করতো মনে মনে, তবে দ্রুতই সে বুঝতে পারলো ব্যাপারটা তার জন্য লাভজনক হয়ে উঠছে। যারা জিজ্ঞেস করতে আসে তাদের মধ্যে কেউ কেউ হতাশ হয়ে তার চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে চা সিগারেট খায়। তাই রহমান মিয়াও তার বিজনেস পলিসি বদলে ফেললো : রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে খোঁজ করতে আসলেই সে এখন বলে, “সামনের মাস থিইকা আবার চালু হইবো।” এরকম পাক্কা খবর নাকি তার কাছে আছে।

    এ কথা শুনে হতাশ কাস্টমাররা কিছুটা আশা নিয়ে ফিরে যায়। যাবার আগে কেউ কেউ তার বিখ্যাত গুড়ের চা-ও খায়, সেইসঙ্গে সিগারেট।

    ওদিকে আতর আলী প্রায় এক সপ্তাহ হাসপাতালে থেকে বাড়ি ফিরে আসে। অল্পের জন্যে বেঁচে গেলেও সুস্থ হতে খুব বেশি সময় নেয় নি সে। আবারো থানার ইনফর্মার হয়ে কাজ করছে, তবে আগের মতো আর তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয় না তাকে। হাজার হলেও নুরে ছফার মতো জাঁদরেল লোকজনের সাথে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, যাকে ওসি তো ওসি, স্বয়ং এসপিও সমীহ করে চলে। এরমধ্যে দুয়েকবার ছফা ফোন করে তার খোঁজখবরও নিয়েছে। তার হাতে এখন যে নতুন মোবাইলফোনটা আছে সেটা ছফাই ঢাকা থেকে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে। এই উপহারের কথা সে সবখানে বলে বেড়ায়। লোকে যাতে বোঝে, ঐ নুরে ছফা তাকে কি চোখে দেখে। এখনও সে রহমান মিয়ার দোকানে এসে চা খায়, সিগারেট কেনে, কিন্তু দোকানি আর তার। অগোচরে তাকে নিয়ে আজেবাজে কিছু বলে না।

    *

    সুন্দরপুরের রমাকান্ত মাস্টার অভ্যাশবশত উঠোনে বসে সকালের রোদ পোহাচ্ছিলেন একদিন। এমন সময় পোস্টাফিসের পিয়ন এসে তার হাতে একটা মোটা প্যাকেট দিয়ে চলে যায়। ঢাকা থেকে এসেছে পার্সেলটি। প্রেরক ময়েজ উদ্দিন খোন্দকার নামের এক আইনজীবি। বিস্মিত মাস্টার ঘরে না গিয়ে উঠোনে বসেই প্যাকেটটা খুলে দেখেন অলোকনাথ বসুর সম্পত্তির বেশ কিছু অংশ তাকে ট্রাস্টি করে দান করা হয়েছে। ঢাকায় গিয়ে আইনজীবির সাথে বসে বাকি কাগজপত্র তৈরি করার জন্য তাকে অনুরোধ করে একটি চিঠিও দেয়া হয়েছে। সেই সাথে ছোট্ট একটি চিরকুট।

    রমাকান্তকামার বুঝতে পারলেন ওটা কার। অলোকনাথের নাতবৌ সুন্দরপুর ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে বোবা ছেলেটার মাধ্যমে এরকম হাতের লেখা চিরকুট পাঠিয়ে তাকে জমিদার বাড়িতে ডেকে নিয়ে গেছিলো। মহিলার কাছ থেকে প্রস্তাবটা শুনে ভিরমি খেয়েছিলেন মাস্টার। এতো বড় সহায় সম্পত্তি হ্রট করে তার মতো একজনের কাছে কেন দিতে চাইছে? তার সাথে তো মিসেস জুবেরির কখনও কথা-ই হয় নি। সুন্দরপরে আসার পর মহিলা দুয়েকবার লোক পাঠিয়ে দেখা করতে বলেছিলো, তিনি যান নি।

    প্রস্তাবটা শোনার পর অনেকক্ষণ চুপ থাকেন মাস্টার। কিছুটা ভয়ও পেয়েছিলেন, আর এ কথাটা মিসেস জুবেরির কাছে অকপটে বলেছিলেন তিনি। ভদ্রমহিলা তাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলো, এমপি আসাদুল্লাহকে নিয়ে তিনি যেনো কোনো দুর্ভাবনায় না থাকেন। তার সামান্য পরিমাণ ক্ষতি করার মতো অবস্থায়ও থাকবে না ঐ এমপি! মহিলার কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হয়েছে।

    গভীর করে দম নিয়ে চিরকুটটায় চোখ বোলালেন তিনি। খুব বেশি কথা লেখা নেই সেখানে।

    সম্পদ-সম্পত্তি খারাপ মানুষের হাতে পড়লে দশের ক্ষতি, দেশের ক্ষতি। ভালো মানুষের হাতে পড়লে মহৎ কিছুর জন্ম হয়। আপনি এ সম্পত্তি নিয়ে কি করবেন সে নিয়ে আমার মধ্যে কোনো সংশয় নেই। শুধু একটা ছোট্ট অনুরোধ, রবীন্দ্রনাথকে চমৎকার একটি লাইব্রেরি বানাবেন। বইয়ের চেয়ে শক্তিশালী খাবার এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়। নি। ওই লাইব্রেরিটা যদি রবীন্দ্রনাথের নামে হয় তাহলে আমি ভীষণ খুশি হবো। একটা কথা মনে রাখবেন, এটা আমি আপনাকে দেই নি।
    রাশেদ জুবেরি তার জীবন বাঁচানোর জন্য আপনার কাছে চিরটাকালই কৃতজ্ঞ ছিলো। সে হয়তো মুখ ফুটে সেটা কখনও বলতে পারে নি।
    —ভালো থাকবেন।

    রমাকান্তকামার শীতের নরম রোদে অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে রইলেন। তার ঘোলাটে দু-চোখে জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠলো একটি দৃশ্য। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা বুকে বই-খাতা জড়িয়ে দৌড়ে যাচ্ছে একটি স্কুলের দিকে। লাইব্রেরিতে মৌন-পাঠকের দল ডুব মেরে আছে অন্য এক জগতে!

    ⤶
    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনেমেসিস (বেগ-বাস্টার্ড – ১) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
    Next Article অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    Related Articles

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেমেসিস (বেগ-বাস্টার্ড – ১) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেক্সাস (বেগ-বাস্টার্ড ৩) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কনফেশন (বেগ-বাস্টার্ড ৪) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }