Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    রহস্য সমগ্র – অজেয় রায়

    লেখক এক পাতা গল্প543 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    মরণের মুখে

    এক

    সকাল দশটা নাগাদ।

    ভবানী প্রেসের সামনে সাইকেল থেকে নামল দীপক। একবার টুঁ মেরে যাই সম্পাদকের ঘর।

    ভবানী প্রেসের এক কোণে সাপ্তাহিক বঙ্গবার্তার ছােট্ট অফিসঘর। দীপক দরজা ঠেলে মুখ বাড়াতেই সম্পাদক কুঞ্জবিহারী মাইতি যথারীতি গমগমে গলায় আহ্বান জানালেন -“এসাে দীপক।”

    দীপক ঢুকল। কুঞ্জবাবুর সামনে এক ভদ্রলােক বসেছিলেন চেয়ারে। ছােটখাটো চেহারা। ফরসা রং। মানুষটিকে দেখেছে দীপক, তবে পরিচয় নেই। কুঞ্জবিহারী বললেন দীপককে, ‘কি কোনাে ইন্টারেস্টিং নিউজ আছে? কয়েক হপ্তা মােটে ভালাে স্টোরি যাচ্ছেনা। সেই থােড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি হােড়।’

    দীপক চেয়ারে বসতে বসতে মিনমিন করে—‘নাঃ তেমন কিছু নেই। শুধু ওই হনুমানের বিয়ে দেখা।’

    ‘কী রকম?’ নড়েচড়ে বসেন কুঞ্জবিহারী।

    গত শুক্রবার মানে তিন দিন আগে নানুরের কাছে একটা বিয়ে ছিল। কী সব স্ত্রী-আচার হচ্ছিল সকালে। হঠাৎ কোথেকে একটা গােদা হনুমান একদম ঘাড়ের কাছে পাঁচিলে বসে ঝুঁকে পড়ে দেখতে থাকে ব্যাপার। ভয় পেয়ে সব মেয়েরা মায় কনেসুদ্ধু মারে ছুট। ছেলেরা লাঠিসােটা দেখিয়ে হনুটাকে তাড়ায়। কিন্তু সে বেটা নাছােড়বান্দা। ওইসব অনুষ্ঠান যেখানেই হয় ঠিক গিয়ে উঁকি দেয়। শেষে লােকে হাল ছেড়ে দেয়। থাকুকগে। ওকে আর ডিসটার্ব করে না। হনুমানটাও কোনাে গােলমাল করে না। খুঁটিয়ে দেখে সব। বিকেলে ওকে কিছু কলা-মুলাে দেওয়া হয় খেতে। হাজার হােক নেমন্তন্নবাড়ি। তাই দিয়ে তৃপ্তিসহ ভােজ সেরে হনুটা বিদায় নেয়। লােকে বলছে ও নাকি আশীর্বাদ করে গিয়েছে। বর-কনের মঙ্গল হবে। এই নিয়ে খুব গুজব ছড়াচ্ছে। কাল খবর নিতে গিয়েছিলাম নানুরে।

    কুঞ্জবিহারী তার ঝাটার মতাে গোঁফজোড়া নাচিয়ে বললেন, “হুম ইন্টারেস্টিং। একটা স্টোরি করে দাও। দেখচ, অন্য জীবদের মানুষ সম্বন্ধে কেমন কৌতূহল।”

    সম্পাদকের সামনে বসা ভদ্রলােক বলে উঠলেন, ‘কেন থাকবে না মশাই? মানুষের যখন অন্য জীবজন্তু নিয়ে এত মাথাব্যথা! ওঃ, কত রকম মানুষ যে হয়। এই তাে ক’দিন আগে একজনের সঙ্গে আলাপ হল। ভদ্রলােকের শখ হচ্ছে সাপ। দিনরাত সাপুড়েদের কাছে ঘুরঘুর করেন। আবার সাপ পােষেন। উদ্ভট খেয়াল। ইস সাপ মশাই আমি দু’চক্ষে দেখতে পারি না। এই নিয়ে আবার কেউ রিসার্চ করে! এর চাইতে নানুরের ওই হনুমান ভালো।

    “তিনি কোথায় থাকেন? কী নাম?” কৌতূহলী দীপকের প্রশ্ন।

    ভদ্রলােক দীপকের দিকে চেয়ে একটু ইতস্তত করতে কুঞ্জবাবু বললেন — “আলাপ করিয়া দিই। এর নাম বগলাচরণ দত্ত। আর এ হচ্ছে দীপক রায়। বঙ্গবার্তার একজন রিপাের্টার।”

    দীপক ও বগলাচরণ পরস্পরে নমস্কার জানায়। তারপর বগলাবাবু বলেন —‘সেই ভদ্রলােক থাকেন সিয়েনের কাছে। বীরভূমের লােক নন। বাইরের লােক। সিয়েনের কাছে একটা বাসা ভাড়া করে রয়েছেন কিছুদিন। সাপ আর সাপুড়ের খোঁজে বীরভূমের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গােটা পশ্চিমবঙ্গেই নাকি ঘুরছেন এই উদ্দেশ্যে। নাম বললেন, হরিবাবু। হরিহর নাগ। নাগ বংশীয় কিনা, তাই বােধহয় সর্পকুলের ওপর এত টান।’  খিকখিক করে হাসেন বগলাচরণ।

    “কি, হরি নাগের একটা ইন্টারভিউ নেবে নাকি?” সম্পাদকের মন্তব্য।

    ‘তাই ভাবছি’, দীপক মাথা ঝাকায়।

    ‘বেশ, লেগে যাও।’ সম্পাদক উৎসাহ দিলেন, ‘ইন্টারেস্টিং কিছু পেতেও পার।’

    সম্পাদকের কথাগুলাে মনে রেখে দীপক বিদায় নেয়।

    দুই

    হরিহর নাগ যে বাসায় থাকেন সেটা গ্রামের এক প্রান্তে। বহু পুরনাে দোতলা পাকাবাড়ি। বাড়ির চারধারে অনেকখানি এলাকা। এখন বড় বড় গাছ আর ঝোপ-জঙ্গলে ভরা। পুকুরটা মজে গিয়েছে। একসময় ধনী সরকার পরিবারের বাস ছিল বাড়িটায়। তবে এখন গোটা বাড়ি ফাঁকা পড়ে থাকে প্রায় বছরভর। পরিবারের সবাই প্রায় গ্রাম ছেড়েছে। চাষের জমিও প্রায় সমস্ত বিক্রি করে দিয়েছে। শুধু প্রাচীন গৌরবের সাক্ষীস্বরূপ জীর্ণ বাড়িটা টিকে আছে কোনােরকমে। সরকারদের একটি পরিবার এখনও আছে বটে ভিটে আগলে কিন্তু তারা থাকে পুরনাে বাড়ি থেকে খানিক তফাতে। মাটির বাড়ি বানিয়ে নিয়েছে। পুরনাে বাড়িখানার যা দশা, কোনােদিন না ভেঙে পড়ে ছাদ। তাছাড়া এতকাল ফাঁকা পড়ে থাকায় ভূতুড়ে বলেও কিঞ্চিৎ বদনাম হয়েছে সরকার বাড়ির। হরিবাবু সরকারদের এই পাকাবাড়ির নিচের তলায় কয়েকটা ঘর নিয়েছেন নামমাত্র ভাড়ায়। সাফ করে থাকছেন। ওঁর ভূত বা সাপখােপের ভয় নেই। একদম একা থাকেন না অবিশ্যি। কালুয়া বলে একটি লােক থাকে সঙ্গে। কালুয়া জাতে সাপুড়ে। ওর বাড়ি নাকি বীরভূমেই। লাভপুরে। হরিবাবুর সঙ্গে এসেছে। সে হরিবাবুর কাজকম্ম করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে ঘােরেও। সাপুড়ে বলেই কালুয়ার সাপ সম্পর্কে ভয়ডর নেই। নইলে যে সাপ পােষে তার সঙ্গে অন্য লােক কেউ থাকত না।

    হরিবাবু সম্বন্ধে এসব জানল দীপক গ্রামের লােকের মুখে। বঙ্গবার্তা দফতরে হরিহর নাগের কথা শোনার কয়েকদিন বাদে এক দুপুরে সে হাজির হয় হরিবাবুর বাসায়। হরিবাবু তখন বাড়িতে ছিলেন না। কেউ ছিল না বাসায়। ঘর তালা বন্ধ। দীপক ফিরে যায়নি। এই অবসরে সে গ্রামে ঘুরে হরিবাবু এবং সরকার বাড়ি সম্বন্ধে কিছু খবর জোগাড় করল। তবে গায়ের লােকের হাবভাব দেখে তার একটা সন্দেহ হল যে এই আগন্তুককে গাঁয়ের লােক বিশেষ পছন্দ করে না। হয়তাে বা হরিবাবুর উদ্ভট খেয়ালের কারণে। গ্রামের মান্যগণ্যরা বেশ একটা অবজ্ঞা ও বিরক্তির ভাবই প্রকাশ করল হরিবাবু সম্পর্কে। তবে সােজাসুজি কোনাে বদনাম দিল না কেউ। হরিবাবুর চেয়ে হরিবাবুর সঙ্গী কালুয়া সম্পর্কেই মনে হল গাঁয়ের অপছন্দ বেশি। কারণটা ঠিক ধরতে পারে না দীপক।

    হরিবাবু ফিরলেন বিকেলে।

    বগলাচরণের মুখে যা বর্ণনা শুনেছিল তাই মিলিয়ে হরিবাবুকে আন্দাজ করে দীপক। লম্বা রােগা। পাকানাে শরীর। বয়স বছর চল্লিশ। লম্বাটে মুখ। রােদে পােড়া শ্যামবর্ণ। খাড়া নাক। চাপা ঠোট। রগের চুলে একটু পাক ধরেছে। পরনে ধুতি-পাঞ্জাবি। পায়ে রবারের জুতাে। কাধে একটা চটের ব্যাগ।

    গ্রীষ্মের পড়ন্ত বেলায় মেঠো পথ বেয়ে বড় বড় পা ফেলে এলেন ভদ্রলােক। তার বেশ খানিকটা পিছনে আসছিল আর একজন। লােকটির কাধে একটা বড়সড় থলে।

    ভদ্রলােক সরকার বাড়ির জঙ্গুলে এলাকায় ঢােকার মুখে দীপক এগিয়ে গিয়ে হাতজোড় করে বলল, “নমস্কার। আপনি কি শ্রীহরিহর নাগ?”

    ভদ্রলােক থমকে গিয়ে বললেন, “হ্যাঁ।”

    “আপনার সঙ্গে আলাপ করতে এলাম। আপনি নাকি সাপ নিয়ে রিসার্চ করছেন?”

    “আপনি?” হরিহরবাবু ভুরু কোচকান।

    ‘আমার নাম দীপক রায়। রিপাের্টার।

    ‘কোন কাগজ?’

    সাপ্তাহিক বঙ্গবার্তা।

    বঙ্গবার্তা? কোথা থেকে বেরােয় ?

    ‘বােলপুর। আপনার একটা ইন্টাভিউ নিতে চাই।

    আমার কথা শুনলেন কোত্থেকে?”

    “শুনেছি,’ রহস্যময় হাসে দীপক, “রিপাের্টারদের চোখ-কান খােলা রাখতে হয়।”

    হরিহরবাবু গম্ভীর মুখে বললেন, “রিসার্চ গবেষণা অত বড় ব্যাপার আমি করি না। সাপ নিয়ে সামান্য কিছু স্টাডি করছি। জীবজন্তু নিয়ে আমার চিরকালই আগ্রহ। আপাতত সাপ নিয়ে পড়েছি। হু, যদি সাবজেক্টটা আরও সময় দিতে পারি, নতুন কিছু পাই, ইচ্ছে আছে একটা বই লিখব। শুধু সাপ নিয়ে নয়, সাপুড়েদের নিয়েও।”

    ‘আপাতত যা জেনেছেন তাই নিয়েই বলুন কিছু।”

    হরিহর রুক্ষস্বরে বললেন, ‘মাপ করবেন। প্রেসকে এখন আমি ইন্টারভিউ দেব না। এই বিষয়ে অনেক পণ্ডিত আছেন। ভুলভাল কিছু বলে ফেললে এক্সপার্টরা আমার রক্ষা রাখবেন না। সমালােচনা করে তুলাে ধুনে দেবেন। আমি শখ করে এই নিয়ে মেতেছি। এখুনি সিরিয়াস ঝামেলায় জড়াতে চাই না।”

    হরিহর সােজাসুজি ইন্টারভিউ দিতে নারাজ বুঝে দীপক কথা ঘােরায়। ‘আপনি কলকাতায় থাকেন?”

    ‘না। ব্যারাকপুরে। চব্বিশ পরগনা।”

    ‘চাকরিতে ছুটি নিয়ে এই শখ মেটান বুঝি?”

    ‘চাকরি করি না। ব্যবসা করি। মাঝে মাঝে ব্যবসা থেকে ছুটি নিয়ে শখ মেটাই।”

    ‘আপনি কি সাপ পােষেন?”

    “ঠিক পােষ মানাবার চেষ্টা করি না। তবে কিছুদিন রাখি নিজের কাছে।”

    “কেন?”

    ‘তাদের ধরন-ধারণ স্টাডি করি বন্ধ ঘরে ছেড়ে দিয়ে।

    “বিষাক্ত সাপ?”

    ‘আপনি সেই ঘরেই থাকেন?”

    ‘থাকি কখনও কখনও।”

    ‘ডেঞ্জারাস। যদি কামড়ে দেয়?”

    “অবশ্যই বিষ বের করা সাপ। তাই কামড়ালেও মরি না।”

    ‘আপনি সাপ ধরতে পারেন?”

    —“না”।

    সাপ পান কোথেকে?”

    কিনি সাপুড়েদের থেকে।”

    ‘বিষদাঁত কামাতে পারেন?”

    না।”

    ‘তাহলে?”

    ‘কখনও সাপুড়েরা কামিয়ে দেয়। কখনও কালুয়া কামায়।

    ‘কালুয়া মানে আপনার ওই সঙ্গী?”

    ‘হু। ওর খবরও পেয়েছেন দেখছি। কালুয়া জাতে সাপুড়ে। সাপ ধরতে পারে। বিষ ঝাড়তে পারে। তাই এ কাজে ওকে নিয়ে ঘুরি।”

    কালুয়া নামে হরিহরবাবুর সঙ্গীটি খানিক তফাতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে একটুক্ষণ লক্ষ করেছিল দীপককে। তারপর হরিবাবু ইঙ্গিত করতেই সে ধীরপায়ে বাড়ির পিছন দিকে চলে যায়।

    কালুয়ার চেহারা বা ধরন-ধারণু বেশ অদ্ভুত। ঘোর কালাে রং। মাথায় ঝাকড়া বাদামি চুল। পুরুষ্ট পাকানাে গোঁফ। মাঝারি লম্বা। দারুণ গাট্টাগােট্টা। মুখ ভাবলেশহীন কঠিন। খুদে খুদে তীক্ষ চোখ! গায়ে ধুতি ও হাওলা গেঞ্জি। খালি পা।

    ‘আচ্ছা সাপগুলাে কিনে কিছুদিন রেখে মানে অবসার্ভ করে তারপর কী করেন? বিক্রি করে দেন?”

    ‘না। বিক্রি করি না। ছেড়ে দিই।”

    —“মানে?”

    —“হ্যাঁ, ছেড়ে দিই। তাদের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে দিই। ঝােপেঝাড়ে মাঠে ছেড়ে দিই।”

    দীপক অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।

    হরিহরবাবু বলেন, “দেখুন আমি একজন অ্যানিমাল লাভার। জীবজন্তুকে বন্দি কর রাখা আমি অন্যায় বলে মনে করি। তারা ভারি কষ্ট পায়। ভাবুন তাে জেলে আটকে রাখলে মানুষের কত বড় শাস্তি! যথেষ্ট আরামে রাখলেও। তবু বাধ্য হয়ে আমরা চিড়িয়াখানা বানাই। আর সাপুড়েরা যে সাপগুলােকে রাখে ঝাঁপির মধ্যে সারাক্ষণ, কী কষ্ট তাদের। মােটে নড়াচড়া করতে পারে না। এটা আইন করে বন্ধ করা উচিত। কিন্তু তাহলে আবার সাপুড়েরা ভাতে মরবে। উভয়ই সমস্যা।”

    দীপক পুলকিত হয় হরিহরবাবুর কথায়। সে নিজেও জীবজন্তু খুব ভালােবাসে। বন্দি প্রাণী দেখলে কষ্ট পায়। তাই হরিবাবুর ব্যথা সে বােঝে। বলে, “ঠিকই বলেছেন।

    হরিহরবাবু উৎসাহিত হয়ে আরও বলেন, “দেখুন সাপুড়েদের ঝাঁপিতে দিনের পর দিন জড়সড় হয়ে থেকে সাপেদের আয়ু কমে যায়। বেশিদিন বাঁচে না বেচারিরা। অনেক সময় বন্দি মৃতপ্রায় সাপকে সাপুড়ে নিজেই ছেড়ে দেয়। তবে সে বড় শেষ সময়ে। আমি তার আগেই কিনে নিই খানিক তাজা সাপ। কয়েকদিন নিজের কাছে রেখে স্টাডি করে ছেঁড়ে দিই তাদের, যাতে তারা আরও বেশ কিছুকাল বাঁচতে পারে। দুটো উদ্দেশ্যই সফল হয়। আমার ক্ষুদ্র সামথ্যে যেটুকু করা যায় আর কী।’

    ‘সদ্য ধরা একদম তাজা সাপ কিনে ছাড়লে তাে আরও ভালাে হয়।’ দীপক প্রস্তাব দেয়।

    ‘ভালাে হয় ঠিকই। তবে সেরকম সাপের দাম খুব চড়া। সাপুড়েরা সহজে বিক্রি করতে চায় না। খেলা দেখায়। বিষ বিক্রি করে তাই বাধ্য হয়ে একটু পুরনাে সাপ কিনি।’

    হরিহর নাগ সম্বন্ধে দীপকের শ্রদ্ধা হল। ভদ্রলােকের বাইরের আবরণ রুক্ষ হলেও সত্যি জীবপ্রেমী। গ্রামের লােক একে অপছন্দ করে কেন? হয়তাে ভদ্রঘরের ব্যক্তির সাপ নিয়ে ঘাটাঘাটি পছন্দ নয়। আর একটা কারণ হতে পারে, হরিবাবুর সঙ্গী কালুয়া। ওর হাবভাব দীপকেরও ভালাে লাগেনি।

    দীপক ভাবল যে হরিবাবু ইন্টারভিউ না দিলেও ওঁর সম্বন্ধে নিউজ ছাপলে তাে আটকাতে পারেন না। সে অধিকার আছে সাংবাদিকের। অতএব হরিহরের গতিবিধি কাজ ইত্যাদির খোজ আরও নিয়ে সে খবর ছাপবে বঙ্গবার্তায়। আশেপাশের গ্রামের লােক আর সাপুড়েদের থেকে শুনতে হবে হরিহরবাবুর সম্পর্কে।

    তিন

    দিন সাতেকের মধ্যে দীপক হরিহর নাগের বিষয়ে বেশ কিছু খবর পেল। বিচিত্র সব খবর।

    নানান গ্রামের সাপুড়েরা জানাল যে হরিবাবু তাদের কাছে অনেক কিছু জানতে আসেন বটে। সাপুড়েদের জীবনযাত্রা। সাপ নিয়ে তাদের বিশ্বাস, পালাপার্বণ। সাপেদের রকমসকম। খাতায় লিখে নেন কী সব। প্রায়ই সাপ কেনেন। তবে ছােট সাপ কেনেন না। বড় বড় সাইজের সাপ কেনেন। বিষধর বা নির্বিষ যে কোনাে সাপ। সাপ কে নিয়ে বড় দরাদরি করেন। কেনেন যথাসম্ভব কম দামে। ফলে পুরনাে নির্জীব সাপই মেলে বেশি।

    শুনে খারাপ লাগল দীপকের। হরিবাবু দীপককে যা বলেছিলেন তার সঙ্গে মিলছে না।

    যে কাজের ধারা। এতে হরিহরের সাপ কেনার প্রধান উদ্দেশ্যটাই যে ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। ভদ্রলােকের কি অর্থের অভাব? অথবা কিপ্টে স্বভাব?

    হরিহর যে গ্রামে বাসা বেঁধেছেন সেখানে খোঁজ করেও বিচলিত হয়। দীপক। গায়ের বেশির ভাগ লােক এই আগন্তুকের ওপর মহাখাপ্পা হয়ে উঠেছে।

    অন্য জায়গা থেকে সাপ এনে এই গাঁয়ে ছাড়বে—এইসব বদ খেয়াল চলবে না। গায়ে বিষাক্ত সাপের অভাব নেই। প্রতি বছরই দু-একজন কামড় খায় বিষধরের। মারাও যায় কেউ কেউ। তার ওপর এই বাড়তি উপদ্রব কেন? গ্রামের লােক এই নিয়ে হরিহরকে ধমকেছে।

    হবিহর নাকি বুঝিয়েছেন তাদের। তিনি এই গাঁয়ে বাইরে থেকে আনা সাপ কখনও ছাড়বেন না। সেগুলি ছেড়ে দেবেন গ্রামের সীমানা থেকে অনেক দূরে। গ্রামের লােক কিন্তু বিশ্বাস করেনি তার কথায়।

    এই গ্রামের লােকের আর একটা ক্ষোভ কালুয়াকে নিয়ে। বেপরােয়া ধরনের লােকটা গাঁয়ের কাউকে যেন গ্রাহ্য করে না। ইতিমধ্যে ওর সঙ্গে গাঁয়ের লােকের ছােটখাটো খিটিমিটি হয়ে গিয়েছে। কালুয়ার গতিবিধি অতি সন্দেহজনক। রাতবিরেতে নিঃশব্দে কোথায় যায় আসে? লোকটা যে সুবিধের নয় তার প্রমাণ মিলেছে। এখানকার থানা থেকে পুলিশ এসে কালুয়ার খোঁজখবর নিয়ে গিয়েছে। জানা গিয়েছে লােকটা নাকি লাভপুরে বছরখানেক আগে একটা ডাকাতির কেসে ফেঁসেছিল। বরাতজোরে প্রমাণ অভাবে সেবার ছাড়া পায়। তবে মারপিটের অভিযােগে বারকয়েক অল্পকালের জন্য জেল খেটেছে। বােলপুর থানা ওর ওপর তাই নজর রেখেছে। এমন একটি কুখ্যাত সঙ্গী জোটালেন কেন হরিবাবু?

    গ্রামের লােক মনিব-ভূত উভয়ের ওপরই সতর্ক চোখ রাখছে। বেচাল দেখলেই তাদের তাড়িয়ে ছাড়বে।

    ভদ্রলােকের ভবিষ্যৎ ভেবে শঙ্কিত হয় দীপক। বেইজ্জত না হন। ওঁকে সাবধান করে দিলে হয়।

    দাসপুর গিয়েছিল দীপক এক বন্ধুর শছে। কথায় কথায় বন্ধুটি বলল, ‘কাল এক কাণ্ড হয়েছে। হরিহর নাগ নামে এক ভদ্রলােক এসেছেন এ-তল্লাটে। নাম শুনেছিস?’

    ‘হ্যা, শুনেছি। কেন?’

    হরিহরবাবু নাকি সাপ পােষেন। সাপ নিয়ে রিসার্চ করেন।

    ‘হা, শুনেছি।’

    “ওঁর একটা চাকর আছে কালুয়া নামে। কাল যা ঘটেছে, গায়ের লােক কলুয়ার ওপর সাংঘাতিক চটে গিয়েছে।”

    “কেন?”

    “কালুয়াটা ঘােষদের আমবাগান থেকে একটা মস্ত ঢ্যামনা সাপ ধরে নিয়ে গিয়েছে লুকিয়ে।”

    “অ্যাঁ, ঢ্যামনা ধরল কী করে! যা ছােটে।”

    ‘সাপটা ব্যাঙ-ট্যাঙ কিছু খেয়ে নির্জীব হয়ে পড়েছিল। নড়তে পারছিল না। সেই সুযোগে ধরেছে। আমবাগানটা গ্রামের সীমানায়। কালুয়া ওর ভিতর দিয়ে যাচ্ছিল দুপুরে। তখন ধরে। একটা বাগাল ছেলে আগেই দেখেছিল সাপটা খাবার গিলে পড়ে আছে বাগানে। ছেলেটা দূর থেকে দেখে, কালুয়া ওখানে বসে কী জানি করল। তারপর চলে গেল। একটু বাদে বাগালটা গিয়ে দেখে সাপটা নেই। নির্ঘাৎ কালুয়ার কীর্তি। ওর মনিবকে দেবে।”

    বন্ধুটি উত্তেজিতভাবে বলে, “ঢ্যামনা সাপ চাষির উপকারী জীব। ধেড়ে ইঁদুর খায় প্রচুর। ধেড়ে ইঁদুর কত ধান খেয়ে লােকসান করে চাষির। গায়ের লােক পারতপক্ষে ঢ্যামনা সাপ মারে না।”

    ‘হরিবারও মারবেন না। উনি সাপ এনে কিছুদিন রেখে অবসার্ভ করেন। তারপর ছেড়ে দেন।” দীপক ঠান্ডা করার চেষ্টা করে।

    বন্ধুটি তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে, “ওঃ, এ গায়ের সাপ অন্য কোথাও ছাড়লে আমাদের লাভ? গ্রামের লােক ঠিক করেছে কালুয়া ফের এখানে এলে ওর ঠ্যাং ভেঙে দেবে।”

    দীপকের মনে নানান প্রশ্ন ঘােরে। ব্যাপারগুলাে কেমন গােলমেলে?

    সিয়েনের কাছেই জমির সাপুড়ের বাড়ি। জমিরের সঙ্গে দীপকের বহুদিনের চেনা। জমিরের ছেলের অসুখে খুব সাহায্য করেছিল দীপক। দশ বছরের মরমর ছেলেকে বােলপুর হাসপাতালে ভর্তি করতে এনে জমির তখন দিশেহারা। দীপক চটপট রােগীকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে। টাকাকড়ি দিয়ে সাহায্য করে জমিরকে। ক্রমে ছেলেটি সুস্থ হয়ে ওঠে। অনেকদিন বাদে দীপককে দেখে জমির ভারি খুশি। চা খাওয়ায়। এটা সেটা কথার পর দীপক জিজ্ঞেস করে, হরিহর নাগকে চেনাে?”

    “আজ্ঞে চেনা হয়েছে।”

    “তার কাছে সাপ বিক্রি করেছ?”

    “করিছি বাবু।”

    “কী কী সাপ?”

    “সে হরেক রকম।”

    “উনি কি সাপ পােষেন?”

    “হ, তাই বলেন।”

    “তুমি গেছ ওর বাসায়?”

    “আজ্ঞে গেছি।”

    ‘হরিবাবুর চাকর কালুয়া লােকটা কেমন?”

    দীপক লক্ষ করে যে জমির থতমত খায়। মুখে ত্রস্ত ভাব। সে জবাব দেয় না সঙ্গে সঙ্গে। খানিক চুপ করে থাকে। তারপর বলে, “জানি না ঠিক।”

    দীপক বলল, “ভাবছি এখন একবার হরিহরবাবুর বাসায় যাব। কেমনভাবে সাপ রাখেন, কী কী করেন দেখব। যাবে নাকি সঙ্গে?”

    জমির কাচুমাচুভাবে বলে “আজ একটু কাজ আছে।’ তারপর সে ইতস্তত করে বলে, ‘ওসব জিনিস দেখার দরকার কী? মা মনসার বাহন। ওদের মতিগতি বােঝা দায়। বড় মেজাজি জীব। শেষে বিপদ আপদ”—বলতে বলতে সে হঠাৎ থেমে যায়।

    “দূর, বিপদ আবার কী? যাক, চলি এখন।”

    দীপক রওনা দেয়।

    চার

    বেলা দুপুর। হরিহর নাগের বাসায় পৌঁছে দীপক দেখল যে বাড়ি বন্ধ। দরজায় তালা ঝুলছে। সে ঘরগুলাের দরজা জানলার কপাট ঠেলে ভিতরে উঁকি মারার চেষ্টা করতে লাগল। একটা ছােট ঘরের জানলা দেখল আধখােলা। সে ঘরের মধ্যে নজর করে।

    ভিতরে আলাে নেই। তবে বাইরে ঝাঁ ঝাঁ রােদ। তারই ফলে ভিতরটা মােটামুটি দেখা যাচ্ছে। ঘরে টাঙানাে দড়িতে কী যেন ঝুলছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে দীপক। একটা বিশ্রী গন্ধ ভেসে আসে ঘর থেকে।

    দীপক পরীক্ষা করে প্রতিটি জানলা দরজা। নাঃ, কোনােটাই খুলতে পারা যায় না। সে ভাবে কিছুক্ষণ। তারপর খানিক দূরে একটা ঝোপের আড়ালে গিয়ে লুকিয়ে বসে।

    চারপাশে ঘন গাছগাছালি থাকায় সরকারবাড়িটা বাইরে থেকে ভালাে দেখা যায় না। দীপকের পিছনে একটা ভাঙা গােয়ালঘর, সামনে কুলকোপ। সাবধানে সে দেখে নেয় চারধার। জায়গাটা সাপখােপের আড্ডা। বাগান ভেদ করে বাসায় ঢােকার পথটা রইল তার নজরে। আশা করলে তাকে কেউ দেখতে পাবে না।

    বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি দীপককে। কালুয়া ফিরল। সে ঘরের তালা খুলে ভিতরে ঢুকল। তারপরই একটা ছােট থলি হাতে বেরিয়ে গেল গ্রামের দিকে। মনে হল কিছু কিনতে গেল দোকানে। দরজায় তালা দিল না। শিকল তুলে দিল। অর্থাৎ এখুনি ফিরবে।

    দীপক কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে। হরিহরের দেখা নেই। তিনি বােধহয় পরে ফিরবেন। আলাদা বেরিয়েছেন। কালুয়া ফেরার আগে সময়টুকু কাজে লাগাই। হয়তাে এমন সুযোগ আর মিলবে না। দীপক শিকল খুলে বাসায় ঢুকল। এঘর ওঘর করে ঢুকল গিয়ে সেই ঘরটায়। দড়িতে ঝোলানাে বস্তুটি পরীক্ষা কাল। বিশ্রী গন্ধটায় গা গুলিয়ে উঠছে। তাকে রাখা অনেকগুলাে ছােটবড় সাপের ঝাঁপি। একটা বাঁশের লাঠি খাড়া করা রয়েছে দেওয়ালে। সেটা হাতে নেয়। এবার তার চোখ পড়ে ঘরের এক কোণে দুটো কাঠের প্যাকিং বাক্স। এক একটা হাত দেড়েক লম্বা, হাতখানেক চওড়া। তাদের ওপর কাঠের আলগা তক্তা চাপিয়ে ঢাকা দেওয়া।

    ডান হাতে লাঠিটা দৃঢ় মুষ্টিতে পাকড়ে বাঁ হাতে একটা বাক্সের ডালা তুলেই চমকে যায়। দীপক। ও, এই ব্যাপার। সে তাহলে ঠিকই সন্দেহ করেছিল।

    পিছনে খুট করে আওয়াজ হতেই দীপক চকিতে ঘুরে দাঁড়ায় লাঠি বাগিয়ে। কালুয়া ফিরেছে নিশ্চয়।

    কিন্তু যে দৃশ্য দেখল, কাঠ হয়ে গেল সে।

    কালুয়া নয়। স্বয়ং হরিহর নাগ দাঁড়িয়ে দরজায়। তার হাতে উদ্যত পিস্তল। কঠোর মুখ। চোখে তীব্র রাগ।

    “লাঠিটা ফেল, কঠিন কণ্ঠে আদেশ করেন হরিহর, নইলে গুলি করব! সাইলেন্সার লাগানাে আছে রিভলবারে। কেউ শুনতে পাবে না। তারপর লাশ পুঁতে দেব মাটিতে।

    দীপক লাঠি ফেলে দেয়। হরিহরের হিংস্র মূর্তি দেখে বিশ্বাস করে যে, ও যা বলছে তা করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না।

    “এবার পিছনে ফের।” আদেশ হয়।

    দীপককে ইতস্তত করতে দেখে খুব ঠান্ডাভাবে হরিহর রিভলবার তাক করেন ওর কপাল লক্ষ্য করে। নিরুপায় দীপক পিছন ফেরে।

    “কালুয়া, ওকে বেঁধে  ফেল” । হরিহরের কণ্ঠে হুকুম হয়।

    সঙ্গে সঙ্গে দুটো প্রচণ্ড বলশালী থাবা দীপকের হাত দুটো টেনে পিছনে এনে দড়ি জড়িয়ে শক্ত করে বেঁধে ফেলে। তারপরই তাকে ল্যাং মেরে মেঝেতে শুইয়ে দেয় কালুয়া। এবার বাঁধে তার পা।

    “একদম চুপ। পালাবার চেষ্টা করলেই মরবে।” হরিহর দীপকের বুকের ওপর রিভলবার তাক করে শাসায়।

    দীপকের হাত-পা বাঁধা হলে কালুরা দীপককে মেঝেতে শুইয়ে রেখে বেরিয়ে যায়। দ্রুত ফিরে আসে। ফিরেই সে একটা অদ্ভুত কাণ্ড করে। দীপকের নাকটা জোরে টিপে ধরে দু আঙুলে। নিঃশ্বাস নিতে বাধ্য হয়ে দীপক হাঁ করতেই কালুয়া তার মুখের মধ্যে ঠেসে দেয় একদলা ন্যাকড়া। দীপকের দমবন্ধ হওয়ার জোগাড়। সে ছটফট করে। কালুয়া নাক ছেড়ে দেয় বটে, তবে ঝটপট নিপুণ হাতে ওর মুখ বেঁধে ফেলে গামছা জড়িয়ে। দীপকের আর টু শব্দ করার উপায় থাকে না। কাতর চোখে দেখে। বােঝে না এদের মতলবটা কী?

    -“কালুয়া, আমাদের কোনাে বিষওলা সাপ আছে?” হরিহরের প্রশ্ন।

    -“আছে। একটা কেলে গােখরাের বিষ জমেছে দাঁতে।”

    -“ভেরি গুড়। দু-একটা এমন থাকা দরকার। কাজে লাগে।”

    এবার দীপকের উদ্দেশে তীক্ষ বিদ্রুপের সুরে ক্রুর হেসে বললেন হরিহর, “কীহে ইয়ংম্যান। রিপাের্টারি ছেড়ে ডিটেকটিভগিরি ধরলে কেন? এ গ্রেট ফুল। বড্ড বেশি জেনে ফেলেছ। তাই মরবে। নাগের লেজে পা দিয়েছ। ছােবল খেতেই হবে, উপায় নেই।”

    তিনি এবার কালিয়াকে বললেন, “শােন আমি বেরিয়ে যাচ্ছি এখুনি। বাসে বােলপুর শহরে যাব। কয়েকজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে রাতে ওখানেই কাটাব কোনো হােটেলে। সকালে ফিরব। আমি চলে যাওয়ার খানিক বাদে তুই গােখরােটাকে ছেড়ে দিবি এই ঘরে। তারপর বেরিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিবি। এরপর বাইরে থাকবি। উঠোনে ঘুরবি, কাজকর্ম করবি, দু-একবার গ্রামের ভেতরে যাবি। ফাঁকে ফাঁকে এসে লক্ষ করবি সাপটা একে কামড়াল কিনা। ছেলেটা অক্কা গেলে লাশ রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে গিয়ে ফেলে আসবি যতটা সম্ভব দূরে ধানখেতে। সাবধান, কেউ যেন না দেখতে পায়। ফেলার আগে এর ধাধন-টাধন সব খুলে দিবি। দেখে যেন মনে হয় আলপথে সাপে কেটে মরেছে।

    লাশ ফেলে এসে তুইও বেরিয়ে যাবি। ফিরবি একদম ভােরে। হ্যা, কালই সব মাল পাচার করে ফেলতে হবে। সন্দেহ করে সার্চ করলে যেন কোনাে প্রমাণ না পায়। সাপ কামড়াতে বেশি দেরি করলে জানলা দিয়ে ঢিল মেরে উসকে দিবি। তবে তাড়া নেই। এখন চারটেও বাজেনি। ঢের সময় আছে।”

    নির্দেশগুলাে দৃঢ় স্পষ্ট ভাষায় জারি করে দীপকের দিকে আর দৃপতি মাত্র না করে বেরিয়ে গেলেন হরিহর নাগ। কালুয়াও সঙ্গে গেল।

    কালুয়া ফিরে এল মিনিট দশেক বাদে। সে তাক থেকে একটা ঝাঁপি নামিয়ে মাটিতে রাখল। তারপর ঝাঁপির ডালা তুলে একটু ফাঁক রেখে চট করে পিছিয়ে গেল।

    কালাে কুচকুচে এক সাপের মাথা সেই ফাঁকটুকু দিয়ে ডালা ঠেলে বেরুতে শুরু করে। তার মুখ থেকে লকলকে চেরা জিভ বেরুচ্ছে আর ঢুকছে। কালুয়া দ্রুতপায়ে ঘরের বাইরে গিয়ে দরজার কপাট বন্ধ করে। বাইরে শিকল তােলার শব্দ হয়।

    ধীরে ধীরে বেরােয় সাপটা। অন্তত হাত চারেক লম্বা, তেমনি মােটা! চকচকে নিকষকালাে দেহ। সেটা চলতে শুরু করে।

    দীপক একেবারে কাঠ। সে জানে যে সাপ খাদ্যবস্তু ছাড়া অন্য প্রাণীকে নেহাত ভয় না পেলে অথবা বিরক্ত না করলে আক্রমণ করে না। দীপক বুকের ওঠানামা, শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ ও গতি কমিয়ে আনে প্রাণপণে। যতক্ষণ এইভাবে বাঁচা যায়।

    হাত পিছমােড়া করে বাঁধা থাকায় দীপক কিছুটা কাত হয়ে শােয়া। তার পায়ের দিকে দরজা। সাপের ঝাঁপিটা সামনে। খােলা জানলাটা পিঠের দিকে।

    সাপটা একবার ঘাড় তুলে দেখে নেয়। অতঃপর ধীরেসুস্থে এঁকেবেঁকে চলে দেওয়াল ঘেঁষে। বােধহয় ও কোনাে ফুটোর সন্ধান করছে বেরিয়ে পালাবার ধান্দায়। দীপকের অস্তিত্ব হয়তাে টের পায়নি অথবা বিপজ্জনক মনে হয়নি এখনও। সারা ঘরে চক্কর দিতে থাকে সাপটা।

    দীপক আড়চোখে নজর রাখছে সাপটাকে। কখনও সেটা তার কাছাকাছি চলে আসছে। কখনও দূরে। ইচ্ছে করে নয়, স্বাভাবিক আতঙ্কেই অবশ হয়ে যাচ্ছে দীপকের দেহমন। সাপটা যখন তার পিছন দিকে যাচ্ছে তখন যে কী অসহনীয় অবস্থা! প্রতি মুহুর্তে আশঙ্কা এই বুঝি ছােবল খেলাম। স্পর্শ পাব কোনাে হিমশীতল সরীসৃপ দেহের। কোথায় ওটা? নড়াচড়া বা মুখ ঘুরিয়ে দেখার উপায় নেই। একইভাবে স্থির হয়ে থাকে সে।

    জানলাটা দিয়ে আলাে ঢুকছে। মাঝে মাঝে ছায়া পড়ছে ঘরে। কেউ নিশ্চয়ই জানলায় দাঁড়াচ্ছে, রোদের পথ আগলে। আবার সরে যায় ছায়া। কালুয়া লক্ষ রাখছে সাপটা দীপককে ছােবল দিল কিনা।

    দীপকের মনে ভেসে ওঠে অনেক প্রিয়জনের মুখ-বাবা-মা দাদা-বউনি। ভাইপাে ছােটন। ভাইঝি ঝুমা। আরও কতজনের। ঘরে থাকলে বউদি এই সময় তাকে চা খেতে ডাকত। দাসুর রেস্টুরেন্টের আড্ডায় একটু পরে এক এক করে বন্ধুরা জুটতে শুরু করবে। চা খেয়ে দীপকও হাজির হত। বঙ্গবার্তা অফিসে কুঞ্জবাবু টেবিলে ঝুঁকে সম্পাদকীয় লিখছেন। হয়তাে আশা করছেন দীপককে।

    কেউ কি কল্পনাও করতে পারবে দীপক এখন কোথায়? নিশ্চিত মরণের মুখে কি যন্ত্রণাময় ভবিতব্যের প্রতীক্ষায় রয়েছে সে। সময় বুঝি আর এগােয় না। কতক্ষণ কেটেছে। পনেরাে মিনিট? আধ ঘন্টা? দীপকের বােধ হচ্ছে যেন কয়েক ঘণ্টা।

    মনের চাপ অসহ্য হয়ে ওঠে এক এক সময়। সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত ঘুরছে চারপাশে।

    রয়েসয়ে খেলাচ্ছে যেন উৎকট উল্লাসে। সে

    এর চেয়ে তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাক ভবলীলা, দিক ছোবল। আর সহ্য হয় না।

    আবার একটা মরিয়া চিন্তা মাথায় খেলে। এভাবে হাল ছেড়ে দিয়ে নিজেকে সঁপে দিই কেন মৃত্যুর কবলে? শেষ চেষ্টা করা যাক। হঠাৎ যদি বাঁধা জোড় পায়ের নিচে চেপে ধরতে পারি সাপটার মাথা থেতলে পিষে দিই ওর মুন্ডটা। যদি ফস্কাই মরব। সে তাে এমনিতেও এড়ানাে যাবে না। কিন্তু যদি সফল হই, তখন হাত-পায়ের বাঁধন খােলা অসম্ভব হবে না। জানলার গরাদ ভেঙে বেরুব। লাঠিটা রয়েছে ঘরে। কালুয়া বাধা দিলে মােকাবিলা করা যাবে। মােট কথা, এই একমাত্র উপায়। কালুয়ার কাছে নিশ্চয় পিস্তল নেই। সাপটার অজান্তে ধীরে অতি ধীরে উঠে দাঁড়াতে হবে। তারপর সাপটা কাছে আসার অপেক্ষা। নির্ভুল নিশানায় লাফিয়ে পড়তে হবে ওর মাথায়। দীপকের সমস্ত স্নায়ু টান টান। ইঞ্চি ইঞ্চি করে সে মাথা তুলতে থাকে মেঝে থেকে।

    সহসা বাইরে একটা আওয়াজ হল জোরে। কী ব্যাপার? দীপক স্থির হয়ে যায়।

    একটু বাদে দরজায় শব্দ হয়। শিকল খুলছে কেউ। পলকে সাপটা দরজা লক্ষ্য করে ফণা ধরে স্প্রিংয়ের মতাে খাড়া হয়ে ওঠে। দীপক তৎক্ষণাৎ মেঝেয় শুয়ে ফের নিথর হয়। নির্ঘাৎ কালুয়া এসেছে।

    পাঁচ

    দরজার কপাট খুলে যায়। যে মুখটা উঁকি দিল, তাকে দেখে দীপক থ। কালুয়া নয়। জমির। তার হাতে লম্বা লাঠি। সতর্ক চোখে জমির সাপটাকে নজর করে। এক পা ঢােকে ঘরে। ক্রুদ্ধ বিষধর সঙ্গে সঙ্গে সে তেড়ে যায় জমিরকে। মুহূর্তে লাঠির ঘা পড়ে সাপটার ঘাড়ে। ছিটকে যায় সাপটা। পরপর আরও কয়েক ঘা প্রচণ্ড আঘাতে জমির শেষ করে দেয় সাপটাকে। জমিরের পিছনে আরও একজন ঢোকে ঘরে। বসির। জমিরের ভাই।

    জমির চটপট দীপকের হাত-পা-মুখের বাঁধন খুলে দেয়। আকুল স্বরে জিজ্ঞেস করে, “সাপটা কি কেটেছে?”

    “না।” দীপক মাথা নাড়ে।

    “ওঃ, বাঁচলাম, আনন্দে চেঁচিয়ে ওঠে জমির, ভাবছিলাম বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে।”

    দীপক উঠে বসে হাঁপায়। অবিশ্বাস্য চোখে দেখে মৃত সাপটা। কী যে ঘটে গেল ঠিক ঠাহর হয় না। তারপর প্রশ্ন করে জমিরকে, “তুমি এখানে?”

    “আপনি চলে যাওয়ার পর খেয়াল হল, আপনাকে যেতে দেওয়া ঠিক হয়নি। এরা দুষ্ট লােক। যদি বিপদে পড়েন? তাই বসিরকে সঙ্গে নিয়ে এলাম আপনার পিছু পিছু। দূর থেকে দেখলাম, আপনি সরকারবাড়ির বাগানে ঢুকলেন। কালুয়া এল। হরিবাবু এলেন। হরিবাবু বেরিয়ে গেলেন। কালুয়া ঘােরাফেরা করছে। কিন্তু আপনার দেখা নেই। বাড়ি থেকে বেরুবার তাে একটাই পথ। দু’জনে গিয়ে বাগানে লুকোলাম। দেখলাম কালুয়া থেকে থেকে একটা জানলা দিয়ে দেখছে ভেতরে। সন্দেহ হল। কালুয়া এবার গায়ের দিকে যেতেই গিয়ে উঁকি দিলাম ওই জানলায়। দেখলাম আপনি মেঝেতে পড়ে আছেন মরার মতাে আর সাপটা ঘুরছে। ভয়ে হিম হয়ে গেল বুক। বসিরের সঙ্গে যুক্তি করলাম। একটু  বাদে কালুয়া ফিরল। ওকে পিছন থেকে এক ঘা দিয়ে পেড়ে ফেলে বেঁধে ফেললাম। তারপর ঢুকলাম এই ঘরে।”

    “ওই বাক্সটা দেখ।” দীপক একটা কাঠের বাক্স দেখায়।

    ডালা খােলা বাক্সে ঝুঁকে দেখে জমির নীরবে মাথা ঝাকায়।

    “ওই বাক্সটা খােল।” দ্বিতীয় কাঠের বাক্সটা দেখায় দীপক। সে নিজেও ওঠে।

    জমির বাক্সের চাপাটা তুলতেই দীপক দেখে অন্য বাক্সটার মতাে এটাও প্রায় ভর্তি সাপের চামড়ায়। নুন মাখানাে শুকনাে চামড়া। আঁশটে বোটকা গন্ধ ঠেলে ওঠে বাক্স থেকে।

    দুটো বাক্স এবং ঘরে দড়িতে টাঙানাে মস্ত একটা সাপের চামড়া দেখিয়ে দীপক জিজ্ঞেস করল জমিরকে, “তুমি জানতে এরা সাপ মেরে চামড়া ছাড়িয়ে নেয়?”

    “জানতাম বাবু।”

    “বলােনি কেন? সাপের চামড়ার ব্যবসা বেআইনি, জানতে না? সাপের দামি চামড়ার লােভে গাদা গাদা সাপ মারা হচ্ছিল। অনেক জাতের সাপ শেষ হয়ে যাচ্ছিল। সরকার তাই আইন করেছে সাপ মেরে চামড়া বিক্রি নিষিদ্ধ।”

    জমির কাচুমাচুভাবে বলে, “আজ্ঞে জানতাম। বলতে পারিনি ভয়ে।”

    “কীসের ভয়?”

    “একদিন এখানে হঠাৎ এসে দেখি পিছনের উঠোনে দড়িতে অনেকগুলাে সাপের চামড়া শুকাচ্ছে। বুঝতে পারি, এই এদের ব্যবসা। চলে আসার আগেই কালুয়ার চোখে পড়ে যাই। ও শাসায়, কাউকে বললে আমায় খুন করবে। লােকটা সাংঘাতিক। তাই ভয়ে মুখ বুজে থাকি। আমি ছাড়া বােধহয় আর কেউ টের পায়নি। তবে বাবু আমি অকৃতজ্ঞ নই। আপনার বিপদ বুঝে আর স্থির থাকতে পারিনি।”

    হাতে-পায়ে বাধনের জায়গাগুলাে টনটন করছে। ম্যাসেজ করে আড়ষ্টতা কমিয়ে দীপক বাইরে আসে। বারান্দায় একটা খুঁটিতে কালুয়া মােক্ষম করে বাঁধা। তার মাথার পিছনে এক জায়গায় রক্ত গড়াচ্ছে। লােকটার চোখ-মুখ বিকৃত হয়ে উঠেছে হিংস্র রাগে।

    শান্ত সুশীল জমিরেরও দেখা গেল ভিন্ন মূর্তি। দাঁত কিড়মিড় করে চাপা গর্জন ছাড়ে, “বসির, একটা বিষে টইটম্বুর কালনাগ নিয়ে আয় দিকি। শয়তানটার গায়ে ছেড়েদি। সাপের বিষে মৃত্যু কেমন আরাম টের পাক।”

    “থাক, থাক’, দীপক থামায়, এসাে।”

    খানিক তফাতে গিয়ে দীপক বলল, “কালুয়া যেমন আছে থাক। এক্ষুনি বােলপুর যেতে হবে। থানায়। জমির, তুমি আমার সঙ্গে চলাে। বসির এখানে কালুয়াকে পাহারা দিক। বাস, লরি, প্রাইভেট কার যা পারি ধরে চলে যাব। টের পেলেই হরি নাগ পালাবেন। উনিই আসল শয়তান। আজ রাতের মধ্যে দুটোকে অ্যারেস্ট করানাে চাই।”

    বাস রাস্তায় পৌঁছে দীপক দেখল যে বাস-স্টপে হরিহর নেই। অর্থাৎ উনি বােলপুর রওনা হয়ে গিয়েছেন। যাক, নিশ্চিন্তি।

    দুদিন বাদে। সকালে বঙ্গবার্তা অফিসে হাজির হল দীপক।

    কুঞ্জবিহারী চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠে দীপকের কাঁধ চাপড়ে দিয়ে হুঙ্কার ছাড়লেন, ‘কনগ্রাচলেশনস।’ তিনি উত্তেজিত স্বরে বললেন, “খানিক আগে থানার বড়বাবুর সঙ্গে দেখা হল। উনি বললেন, ‘কলকাতায় হরি নাগের গুদাম সার্চ করে প্রচুর সাপের চামড়া পাওয়া গিয়েছে। দেশে-বিদেশে চালান দিতেন গােপনে। এই কারবারে প্রচুর টাকা কামাতেন। ওঁর বিজনেস-পার্টনারকেও ধরেছে পুলিশ।’ এই লােভীগুলাের জন্যে কত প্রাণী যে লােপ পেতে বসেছে! এদের শাস্তি আরও কঠোর হওয়া উচিত।”

    দীপক বসতে, কুঞ্জবাবু প্রশ্ন করলেন, “বলাে তাে বাপু, কীভাবে সন্দেহ করলে কেসটা? সেদিন তােমায় টায়ার্ড দেখে ডিটেলস জিজ্ঞেস করিনি।”

    দীপক বলল, “গ্রামের লােকের কথায়। শুধু বুড়াে আর বড় সাপ কেনেন। এদিকে হরি নাগ মুখে বলেন অন্যরকম। বড় ঢ্যামনা সাপের অর্ডার দেন সাপুড়েদের। সাপ নিয়ে রিসার্চ করছে আর নির্বিষ ঢ্যামনা সাপ সম্বন্ধে গাঁয়ের লােকের সেন্টিমেন্ট জানেন না? স্ট্রেঞ্জ! আবার কালুয়ার মতাে দাগি গুন্ডাকে সঙ্গী জুটিয়েছেন! খটকা লাগল। ভাবলাম, ওঁর সম্বন্ধে আরও খোঁজ নিই।

    ওই গাঁয়ের পােস্টমাস্টার আমার চেনা। তাকে বলে রাখলাম, হরিহর কোনাে চিঠি পােস্ট করলে, কোথায় পাঠাচ্ছেন ঠিকানাটা টুকে রাখতে। তিন দিন বাদে ঠিকানা পেলাম। তাই দেখে চলে গেলাম কলকাতায়। ট্যাংরা অঞ্চলে। নাগ কোম্পানির অফিস-গুদাম বের করলাম। দেখি চামড়ার ব্যবসা। সন্দেহটা বাড়ল। তখন হানা দিলাম ওর ডেরায়। ভানে অ্যানিমাল লাভার। কী ধূর্ত।”

    “খুব বেঁচে গেছ। লােকটা ডেঞ্জারাস ক্রিমিনাল,” কুঞ্জবিহারী মন্তব্য করেন।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleথানা থেকে আসছি – অজিত গঙ্গোপাধ্যায়
    Next Article গল্পসংগ্রহ – অজেয় রায়

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }