Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    রাইফেল, রোটি, আওরাত – আনোয়ার পাশা

    লেখক এক পাতা গল্প301 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১৬. ওরা হাইকোর্টের কাছে গাড়ি ঘুরিয়ে

    ওরা হাইকোর্টের কাছে গাড়ি ঘুরিয়ে শান্তিনগরের দিকে মোড় নিলেন। রাজারবাগ পুলিশের সদর দফতর দেখলেন। দেয়ালে প্রকান্ড আয়তনের গর্তগুলি পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিকট মুখভঙ্গির প্রতীক হয়ে তাদের দিকে ব্যঙ্গ ছুঁড়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের বাড়িঘরগুলির উপর কি অবাধ অধিকার। যেখানে ইচ্ছে কামান দেগে বড়ো বড়ো ফুটো বানিয়ে দাও। যেখানে ইচ্ছে আগুন দাও। ধুলোর সঙ্গে মিশিয়ে দাও। যা তোমার মর্জি।…মনে মনে অসম্ভব রকমের তেতে উঠলেন ফিরোজু। ওদের মর্জির উপর আমাদের জীবন? ইস, কিভাবে আগুন দিয়ে সারা এলাকাটাকে জ্বালিয়েছে। পুলিশরাও সব আওয়ামী লীগের লোক ছিল নাকি! সকালবেলার হাসিম শেখের কথা সুদীপ্ত স্মরণ করলেন। আর ফিরোজ? তিনি তখন ভাবছিলেন, এখানে কয়েকটি ছবি নেওয়া যায় না? ওরে। বাবা, লোহার টুপিধারী খবিশগুলো রাইফেল হাতে কিভাবে তাদের পানে তাকাচ্ছে দেখেছ। অন্য কেউ কোথাও না থাক, খবিশগুলো ঠিকই আছে। ফিরোজ তার গাড়ির গতি সামান্য একটু মন্থর করেছিলেন মাত্র। একেবারে থামান নি। কিন্তু একজন সৈনিক তাকে একেবারেই থামবার নির্দেশ দিল। অগত্যা থামতে হল। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মতো এখানেও আবার। গাড়ি-তল্লাশি হবে বোধ হয়। অতএব গাড়ি থামতেই ওরা নামলেন। প্রথমে। নামলেন সুদীপ্ত, তারপর ফিরোজ। এবং ফিরোজ নেমে মেয়েদের নামার পথ। করে দিতে গেলেন। কিন্তু থমকে গেলেন সুদীপ্তর অবস্থা দেখে। সুদীপ্ত নামতেই রাইফেলের নল এসে ঠেকেছিল তার বুকে। গুলি করবে নাকি! ফিরোজ বিবর্ণ হয়ে গেলেন। কি অদ্ভুত প্রশ্ন রে বাবা।

    তোম বাঙালি হ্যায়, না বিহারী হ্যায়, না হিন্দু হ্যায়? বোলো।

    তুমি বাঙালি? না বিহারী? না হিন্দু?—এ কোন ধরনের শ্রেণীকরণ? শ্রেণীকরণ সম্পর্কে জ্ঞান থাকে কাদের? কিন্তু এতো সব প্রশ্ন নিয়ে আন্দোলিত হবার অবকাশ তখন সুদীপ্তর ছিল না। এই মুহূর্তে সামান্য ভুলের মাশুল অতি চরম হতে পারে। তিনি এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই কেমন একটা অলৌকিক শক্তি আয়ত্ত করেছেন যেন। ঠিক সময়ে ঠিক উত্তরটি মুখে এসে যায়। তিনি বললেন–

    হাম মুসলমান হায়, হাম পাকিস্তানি হ্যায়।

    কিন্তু না। এ উত্তরে পাকিস্তানি জওয়ান খুশী হল না। এ ধরনের ঘোরাননা প্যাচানো জবাব সে জানেন, কেউ তেমন জবাব দিলে তা সে বরদাশত করতেও মা রাজী নয়। অতএব সুদীপ্তকে একটা ধমক খেতে হল। ওই সব চলবে না। সোজা আমার জবাব দাও।

    সিধা বাত কাহো।

    সুদীপ্ত তখন সিধা কথাই বললেন–না, সবটাই তার সত্য নয়। কিছুটা। সত্য, এবং অনেকখানিই মিথ্যা। তিনি বললেন, তিনটের কোনোটাই তিনি নন। তিনি কলকাতা থেকে এসেছেন, তিনি মোহাজের। তবে তার পূর্বপুরুষ বিহারী ছিলেন বটে। কিন্তু দাদার আমল থেকে ঢাকায় আশ্রয় নিয়েছেন।

    আচ্ছা ঠিক আছে। তোমাকে তা হলে এখন ছাড়া যায় মনে হচ্ছে। সুদীপ্তকে ছেড়ে রাইফেলের নল এবার প্রসারিত হলো ফিরোজের পানে। ফিরোজ আবার উর্দু বলতে পারেন না। হয়তো শিখলে পারতেন। শেখেন নি। পশ্চিম পাকিস্তানিরা যেমন বাংলা শিখতে চায় না, তেমনি আমাদের উর্দু শিখতে চাওয়া উচিত নয়।—এমনি একটা যুক্তি ফিরোজের দিক থেকে ছিল। কিন্তু ফিরোজের যুক্তি সকল বাঙালি মানেন না। তাঁরা পাল্টা যুক্তি খাড়া করেন–তুমি অধম, তাই আমি উত্তম হইব না কেন? হাঁ, তাই হও। চিরকাল। উত্তম হতে গিয়েই তো মরেছ বাবা।

    কিন্তু এখন যে ফিরোজেরই মরণ। সুদীপ্ত চট করে বলে উঠলেন—

    উন লোগ মেরা গাড়িকা ড্রাইভার হ্যায়।

    হাঁ, ড্রাইভার হতে পারে। প্যান্ট ও হাওয়াই সার্ট খুব একটা কেতাদুরস্ত নয়। এমন পোশাক ড্রাইভারদেরও হতে পারে। সুদীপ্তকে একটা সালাম ঠুকে সৈনিকটি তার স্বস্থানে দাঁড়াতে গেল।

    মালিবাগের মোড়ে এইখানে ফারুক ইকবালের কবর ছিল না? এই তো। কয়েক দিন মাত্র আগে মিছিল পরিচালনা করার সময় পাকিস্তানি জওয়ানদের গুলিতে নিহত হয়েছিল তরুণ কলেজছাত্র ফারুক ইকবাল। তার স্মৃতিকে অমর করার জন্য এই তো এখানে মালিবাগের মোড়ে এই ক্ষুদ্র গোল পার্কে তার কবর দেওয়া হয়েছিল। সে তো এই মার্চ মাসেরই কথা। কিন্তু কবরও। চুরি যায় নাকি। সত্যই ওরা ফারুক ইকবালকে কবর থেকে চুরি করে নিয়ে কেবল স্তুপাকার ইটগুলো কোনোমতে এখনো কবরের সাক্ষ্য বহন করছে মাত্র। হায় হায়, এতোদিন পরে কি ছিল কবরে! কয়েকখানা হাড় বৈ তো নয়। তা হোক, তবু সে তো বিপ্লবীর হাড়। প্রত্যেকটি বিপ্লবীই দধীচি। দধীচির হাড়ে বজ নির্মিত হয়েছিল, সেই বত্র যা দিয়ে অসুর ধংস করে স্বর্গের পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছিল দেবতাদের পক্ষে। পাকিস্তানিরা অসুর ছাড়া কি? কিন্তু একটি বিপ্লবীর কঙ্কাল চুরি করে তারা করবে কি? ফারুক তো একজন নয়। ফারুকের মা তো কান্নাজড়িত কণ্ঠে সেই কথাই বলেছিলেন ফারুকের বন্ধুদের লক্ষ্য করে তোমাদের মধ্যেই আমার ফারুক বেঁচে রইল বাবারা। তোমরা। আমাকে মা ডেকেছ। তোমাদের মধ্যেই ফিরে পেয়েছি আমার ফারুককে। হ্যাঁ, বাংলাদেশ আজ শত শত ফারুকে ভরতি হয়ে গেছে।

    সুদীপ্ত মনে মনে ফাতেহা পাঠ করলেন। ফিরোজের কিন্তু সে কথা মনেই এল না। কি করে প্রতিশোধ নেওয়া যায় সেই কথাটাই তীব্রভাবে কয়েকবার ঘুরপাক খেল তার মনের মধ্যে। আর মেয়েরা? বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কেন্দ্রের কাছেই তারা মূক বধির হয়ে গেছেন। মীনাক্ষী তো বটেই, আমিনাও মনে মনে আল্লাহকে ডেকে চলেছেন চোখ-কান বন্ধ করে। ফিরোজ তাঁর বন্ধু ও বন্ধু পত্মীকে নিয়ে তার চাচার বাসায় উঠলেন।

    মালিবাগের একটা গলিতে ফিরোজের এক চাচা থাকেন, তার বাপের। চাচাত ভাই— জামাতে ইসলামের সমর্থক। কিন্তু তাতে কি। ওতে চাচা ভাইপোর সম্পর্কে কখনো ফাটল সৃষ্টি হয় নি। আওয়ামী লীগের প্রবল। আধিপত্যের সময় চাচা দিব্যি দাড়িতে হাত বুলিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন—ভাইপো ফিরোজ থাকতে তার ভাবনা কি? ভাইপোকে আভাসও দিয়েছিলেন জামাতে ইসলামের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করবেন তিনি। মওলানা মওদুদী আর আগের। মতো নেই। তিনিও খালি পশ্চিম পাকিস্তানেরই স্বার্থ দেখছেন। ঐ দলের সাথে। আর সম্পর্ক রাখা যায় না।

    না, এ সকল কথা ফিরোজ মোল আনা বিশ্বাস করেছিলেন এমন নয়। কেবল এইটুকু বুঝেছিলেন যে, চাচা তার সাহায্য চান। জামাতে ইসলামের কাজ করেছেন বলে আওয়ামী লীগকে ভয় পাচ্ছেন তিনি। হাঁ, যেভাবে ওই জামাতে ইসলাম নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের কুৎসা রটিয়েছিল তাতে নির্বাচনের পর তার ভীত হওয়ার কারণ কিছু ছিল বৈ কি। কিন্তু আওয়ামী লীগ চাচা, তোমাদের মতো পার্টি নয়—ফিরোজ মনে মনে বলেছিলেন, আর হেসেছিলেন। তোমরা বৃথাই ভয় পাচ্ছ চাচা। অবশ্য তোমরা জিতলে আওয়ামী লীগকে এবার যে সাতঘাটের পানি খাওয়াতে সেটা তোমরাও জান। তাই এখন নিজেরা সেই ভয়ে ভীত হচ্ছ। কিন্তু চাচা, আওয়ামী লীগ নির্ভেজাল গণতন্ত্রে। বিশ্বাসী—এটা মনে রেখো।

    ফিরোজ মনে রেখেছিলেন, ব্যক্তিগতভাবে চাচা তার হিতাকাতক্ষী। সেই ধারণাতেই এসে উঠেছেন চাচার বাসায়। আমিনাকে নিয়ে নাজমা ভেতরে চলে। গেছেন। এ বাড়িতে মীনাক্ষী নাজমা শুধুই নাজমা। মীনাক্ষী শব্দটা চাচা-শ্বশুরের ভারি অপছন্দ। অতএব সুদীপ্ত শব্দটাও চাচার পছন্দ হবে না—এটা ফিরোজ জানতেন। তিনি সুদীপ্তর পরিচয় দিলেন এইভাবে–

    ইনি শাহিন, ইউনিভার্সিটির একজন সিনিয়র লেকচারার, আমার বন্ধু!

    ইউনিভার্সিটির টিচার? এ তো বহুত ভয়ের কথা বাপ ইউনিভার্সিটির কথা শুনলেই মেলেটারি আজকাল ক্ষেপে উঠতেছে।

    তাই নাকি। তা হলে তো চাচা তোমার বাড়িতে রাত্রি-যাপনের বাঞ্ছাটা পরিত্যাগ করতে হয়। কিন্তু এসেই তো আর ওঠা যায় না। হাতের ঘড়ি দেখে নিলেন ফিরোজ, এবং ঠিক করলেন, পাঁচ মিনিট পরেই উঠে পড়বেন। কিন্তু দুমিনিট পরেই চাচা তার গাড়ির চাবি চেয়ে বসলেন।

    এই একটু বাপ যাব আর আসব। পাঁচ মিনিটের বেশি লাগবে না।

    কিন্তু চাচা আমরা বেরুবো এখনি।

    আজকের রাতটা না হয় বাপ গরীবের বাড়িতে থেকেই গেলে। ক্ষতি হবে তাতে? আমার একটু বাইরে যাওয়া বিশেষ দরকার। অথচ গাড়িতে তৈল নাই। ভাইপো হয়ে আমার মুশকিলে আসান করবে না একটু।

    তা তো করতেই হবে। ভাইপো যখন হয়েছেন তখন চাচার সুবিধা অসুবিধা একটু দেখতে হবে বৈ কি। তা ছাড়া, একটা রাত চাচা তো থেকে যেতেই বলেছেন। হাঁ, থাকতেই হবে। আজ আর পথে বেরুনোর প্রবৃত্তি নেই। অতএব পাঁচ মিনিট কেন, পঁচিশ মিনিট কাটিয়ে আসুন না—কে বাধা দিতে যাচ্ছে। ফিরোজ চাবি বের করে দিলেন। কিন্তু চাচার গাড়ি কি কেবলি তেলের জন্য অচল হয়ে আছে? এতো শীঘ্র দেশে তৈল-সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে নাকি! না বোধ হয়। কিন্তু সত্যই যদি এরি মধ্যে তেলের সঙ্কট সৃষ্টি হয়ে থাকে তা হলে বুঝতে হবে সত্যই পাকিস্তানি শাসকদের মনে বাংলাদেশকে ঘিরে কোনো দুরভিসন্ধি ছিল না। অথচ দুরভিসন্ধি ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসেই সারা এয়ারপোর্ট বিমান বিধ্বংসী কামান ও রাডার দিয়ে সাজানো হয়েছিল কি ওর শোভা বাড়ানোর জন্য? তখন থেকেই দেশের মাশরেকী মুলুকে তলে তলে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল বর্বর ক্ষমতা লোলুপ ইয়াহিয়া ও তার দলবল। অতএব নিঃসন্দেহে গাড়ির তেলও প্রচুর পরিমাণে মজুদ রেখেছে তারা। অতএব তেলের সঙ্কট সৃষ্টি হতেই পারে না। হাঁ, ফিরোজের অনুমান সত্য ছিল। চাচার গাড়ি কিছুকাল থেকেই অকেজো হয়ে পড়েছিল। কেন থাকবে। না। কিনলেন তো একখানা পুরোনো ফিয়াট গাড়ি। গাড়িই যদি কিনবে চাচা, তা হলে কি অত কৃপণতা করলে চলে!—এইভাবে চাচাকে কেন্দ্র করে ফিরোজ সুদীপ্তর কাছ থেকে যেন বহু দূরে সরে গিয়েছিলেন। অতএব ফিরোজের পাশের সোফাতে বসে থেকেও সুদীপ্ত এখন ভীষণভাবে একাকী। হয়ে পড়েছেন। কিন্তু ইচ্ছে করলেই তো এখন একটা কথা বলে তিনি ফিরোজকে নিজের সঙ্গী করে নিতে পারেন। এসো না ভাই যতোক্ষণ আছি, আমরা একসঙ্গে থাকি।…কিন্তু নাহ্, কিছু ভাল লাগছে না। একটি কথাও। বলতে ইচ্ছে করছে না। কোনো মতে একটু ঘুমিয়ে পড়া যায় না এখন?…

    মীনাক্ষী ভাবীর সঙ্গে মেয়েটিকে চেনা মনে হচ্ছে। হাঁ, তারই এক ছাত্রী হামিদা। হামিদার কপালে সেই টিপ নেই। ফিরোজের চাচার বাড়ি টিপ পরে। আসার সাহস হয় নি বোধ হয়। কিন্তু বাড়িতে আসার তার দরকারটাই বা কি? চট করে ফিরোজের চাচার সঙ্গে হামিদার কোনো আত্মীয়তার কথা সুদীপ্তর মনে এল না। হয়ত প্রতিবেশী হবে। হয়ত মীনাক্ষীদের সঙ্গে আগে থেকেই জানাশোনা আছে।

    মেয়েটি সুদীপ্তর দিকে তাকাল না। নাকি তাঁর অজ্ঞাতে এক সময় তাকিয়েছিল। তিনি টের পান নি! না না, তা কি হয়? তার কোনো ছাত্র বা ছাত্রী তাঁকে দেখে না চেনার ভান করবে এটা হতেই পারে না। নিশ্চয়ই মেয়েটি তাকে দেখেই নি।

    মীনাক্ষী তার স্বামীর সঙ্গে মেয়েটির পরিচয় করিয়ে দিল—

    একে চেন? একটু দূর সম্পর্কে আমার মামাতো বোন। তোমার চাচা আবার এর মায়ের খালাত ভাই! এবার অনার্সে সেকেন্ড ইয়ার।

    আদাব দুলাভাই।

    ও আদাব। এখানে করে এসেছ তোমরা?

    তোমরা নয় তুমি। ও একাই এসেছে সপ্তাহ খানেক হল। থাকত রোকেয়া হল-এ।

    রোকেয়া হল থেকে অবশ্য নিজের ইচ্ছায় সে এখানে আসে নি। বোনের টেলিগ্রাম পেয়ে ফিরোজের চাচা নিজে গিয়ে হামিদাকে তার বাসায় নিয়ে এসেছেন। অর্থাৎ বাঁচিয়েছেন। হল-এ থাকলে কি দশা হতঃ ফিরোজ জানেন না। আসবার পথে সাহস করে হল-এর মধ্যে ঢুকতে পারলে তবু কিছুটা টের পেতেন। তিনি শুধালেন–

    শেষ পর্যন্ত তোমাদের হল-এ কজন মেয়ে ছিল জান নাকি?

    ঠিক জানি নে। বারো-চৌদ্দ জন হতে পারে। ওদের ভাগ্যে কি যে ঘটেছে কে জানে।

    হাঁ, এখনো সব খবর সকলে জানে না। একটা জনরব ছড়িয়েছে, বারো-চৌদ্দটি মেয়ে মারা গেছে, আর ধরে নিয়ে গেছে দশ-বারো জনকে। কিন্তু হামিদার উক্তিতেই ফিরোজ বুঝলেন, অত মেয়ে হল-এ ছিল না।

    স্যারদের খবর কিছু জানেন নাকি দুলা ভাই?

    শুনছি বারো থেকে পনেরো জন মারা গেছেন। আমি তো সকলকে চিনিনে। নামও মনে নেই সকলের।

    এই অবস্থায় মনে রাখা সম্ভবও নয়। তবু যে কয়েকজনের নাম মনে ছিল ফিরোজ বলে গেলেন—ডঃ গোবিন্দ্রচন্দ্র দেব, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, ডঃ জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ডঃ ফজলুর রহমান, ডঃ মুকতাদির আর নাম মনে আসছে না। ফিরোজ থামলেন। হামিদা শুধাল–

    সুদীপ্ত স্যার?

    সুদীপ্ত? মানে, সুদীপ্ত শাহিন? তারও মৃত্যু সংবাদ রটেছে নাকি। ফিরোজ বললেন–

    কোন সুদীপ্তর কথা বলছ তুমি? তোমার সামনেই তো একজন সুদীপ্ত বসে আছেন।

    ওমা, তাই তো! সুদীপ্ত স্যারই তো। হামিদা ভালো করে তাকিয়ে এবার চিনতে পারল। কিন্তু প্রথমে চিনতে পারে নি। এ কি চেহারা হয়েছে স্যারের। হামিদা তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল। ফিরোজ বলল–

    হামিদার অন্যায় কিছু হয় নি সুদীপ্ত। এই কদিনে একেবারে অন্য রকম হয়ে গেছ তুমি। তার উপরে আজ শেভও কর নি। এবং দুপুর অবধি ঘুরে ঘুরে চেহারাকেও কেমন ক্লিন্ন করে তুলেছ।

    তুই সুদীপ্ত ভাইয়ের ছাত্রী! মীনাক্ষী বললেন, তুই না হিস্ট্রি নিয়েছিলি শুনেছিলাম।

    প্রথমে তাই কথা ছিল বটে। তবে শেষ পর্যন্ত ইংরেজিতেই ভর্তি হয়েছে। সে। কিন্তু সে কথা হামিদা আর বলতে পারল না বোনকে। সে ততক্ষণে কেঁদে ফেলেছে। যার মৃত্যু-সংবাদ দ্রুত জেনে সারা চিত্ত বেদনামথিত হয়েছে, সহসা। তাকে জীবিত দেখলে প্রাণে যে আনন্দ বাজে সেই আনন্দের আঘাতে উদ্গত। অশ্রু হামিদার চোখে। কিন্তু হামিদা যা শুনেছিল তা শোনা কি অস্বাভাবিক ছিল? তেইশ নম্বর বিল্ডিং যেভাবে আক্রান্ত হয়েছিল তাতে ওর মধ্যে কারো কি। বাঁচার কথা? ওই বিল্ডিংয়ের সকলেই মৃত বলে খবর রটেছিল। হামিদ নিজেকে সামলে নিয়ে বলল।

    স্যার যখন শুনলাম, আমাদের ডিপার্টমেন্টের মুর্শেদ স্যার, গুহঠাকুরতা স্যার এবং আপনি তিনজনেই জল্লাদদের হাতে খতম হয়ে গেছেন তখন কী যে অবস্থা হল আমাদের!

    মুর্শেদ স্যার নিখোঁজ, তার সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না। তবে আমার ধারণা তিনি বেঁচে আছেন।

    আল্লাহ তাঁকে বাঁচিয়ে রাখুন। আফিয়ার কথা মনে আছে স্যার?

    আফিয়া? দেখলে চিনতে পারব।

    ছাত্র-ছাত্রী অনেককেই দেখলে চেনা যায়। কিন্তু নাম বললেই গোলমাল। বাধে। অনেক মুখ ভেসে উঠে, তার মধ্যে কোন নামটা কার তা ঠিক করা যায় না। স্যারকে নীরব দেখে হামিদা আরো পরিচয় দিল আফিয়ার।–

    সেই যে মেয়েটা স্যার, হাত ভরে চুড়ি পরে। আর কখনো ইংরেজিতে কথা বলে না।

    হাঁ মনে পড়েছে। হামিদা সেই মেয়ের কথা বলছে, যাকে ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী বলে মনে হয় না। বড়ো বেশি বাঙালিনী। আর

    আমাদের সঙ্গেই এক গ্রুপে টিউটোরিয়াল ছিল।

    আর বলতে হবে না। এবার পুরোপুরি তাকে চিনেছেন সুদীপ্ত। তার স্বামী তো বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন শিক্ষক ছিলেন। কি হয়েছে তার?

    ওর স্বামীকে আর্মিরা মেরে ফেলেছে। ঘর থেকে ডেকে নিয়ে বাইরে। আফিয়ার চোখের সামনে গুলি করে মেরেছে। গতকাল পাশের বাড়িতে সে তার ভাইয়ের কাছে এসে উঠেছে।

    এ সংবাদের আজ যেন কোনোই গুরুত্ত্ব নেই। কেউই গুরুত্ব দিল না আফিয়ার ট্রাজেডিকে। ছাত্র-ছাত্রীদের কোন দুঃসংবাদ সুদীপ্তকে আদৌ স্পর্শ। করে নি এমন কখনো ইতিপূর্বে হয় নি। কিন্তু আফিয়া তো কেবলি ছাত্রী নয়। তারই এক সহকর্মীর স্ত্রীও। তবু আফিয়ার জন্য মনে তেমন প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। কই? অন্য সময় হলে? ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ সামসুজ্জোহা মিলিটারির গুলিতে মারা গেলে কতো বিক্ষোভ পড়ে গিয়েছিল! এবং তা কেবলি রাজশাহীতেই নয়, প্রদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই। আর। এখন? যাক গে, সে কথা আর ভেবে লাভ কি।

    সকলকে নিপ দেখে হামিদা আবার বলল–

    আর সবচেয়ে দুঃখের কথা কি জানেন স্যার! আফিয়ার স্বামীর লাশ পর্যন্ত ওরা দেয় নি। কোথায় নাকি গর্ত করে পুঁতে ফেলেছে।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল অধ্যাপককেই ওরা অমনি করে মাটি চাপা দিয়েছে। ধর্মীয় বিধান অনুসারে সৎকারটুকু পর্যন্ত করতে দেয় নি! কে জানে, হয়ত একই গর্তে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শুয়ে আছেন কোনো পকেটমারের সঙ্গে জড়াজড়ি হয়ে! এমনটা করা কি উচিত হয়েছে?—সুদীপ্ত ভাবছিলেন। আর ফিরোজ ভাবছিলেন—ঠিক ওই রকম ছাড়া ও খবিশরা আর করবে কি শুনি! অধ্যাপক তো কখনো দেখে নি জীবনে। দৌড় তো সেই মক্তবের ওস্তাদজি পর্যন্ত। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে লেক্টরাইট। বর্বরদের সঙ্গে একত্র বাসের এই হচ্ছে জ্বালা। জীবনের মূল্যবোধ যাদের মধ্যযুগীয় তাদের পাশে আধুনিক চেতনাকে পদে পদে বিড়ম্বনা সইতেই তো হবে। কিন্তু আর নয়। এর অবসান এখন চাই-ই।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা
    Next Article অপার্থিব প্রেয়সী – আফজাল হোসেন

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }