Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    রাজকন্যের সন্ধানে – অভীক দত্ত

    লেখক এক পাতা গল্প112 Mins Read0
    ⤷

    রাজকন্যের সন্ধানে – ১

    ১

    “কয়েকটা তথ্য হয়ত আমরা সবাই জানি, কিংবা কেউ কেউ জানি না। তবে বলে রাখা ভাল, এই তথ্যগুলোর উপর ভিত্তি করেই কিন্তু আমাদের অপারেট করতে হবে। গিলগিট বাল্টিস্তান পাকিস্তানী সরকার যেভাবে দখল করে রেখেছে, মূল অধিবাসী শিয়াদের উপর রাষ্ট্রের যে দমন নীতি, সেটাকে আমাদের এনক্যাশ করতে হবে। আমি কী বলছি বুঝতে পারছো সৈকত?”

    র চিফ চিৎকার করে উঠলেন। ঘরের একদম কোণার দিকে শেষ বেঞ্চে সৈকত রায় বসে বসে ক্যান্ডিক্রাশ খেলছিল। চিফের কথা শুনে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “ইয়েস স্যার”।

    চিফ বললেন, “বাল্টিস্তানে কারা অত্যাচারিত হচ্ছে?”

    সারা ঘর হেসে উঠল। যেন বাচ্চা ছেলেকে স্কুলে পড়া ধরা হচ্ছে। সৈকত বলল, “শিয়া মুসলিমরা স্যার”।

    চিফ বললেন, “তোমার মন কোথায় থাকে? কী প্রবলেম তোমার? প্রায়ই আজকাল মোবাইলে ঢুকে থাকছো?”

    সৈকত বলল, “শুনছিলাম স্যার। মাল্টিটাস্কিং”।

    চিফ বললেন, “দ্রাস সেক্টর থেকে মাল্টিটাস্কিং করে বাল্টিস্তানে ঢুকতে পারবে? তোমাকে একা পাঠাবো। পারবে?”

    সৈকত বিন্দুমাত্র না ভেবে বলল, “পারবো স্যার। এখন বেরবো?”

    বাকিরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করল। এ ছেলের কি ভয় টয় নেই নাকি?

    চিফ বললেন, “এই কনফিডেন্সের কারণ”?

    সৈকত বলল, “এখনো বরফ গলে নি। পাকিস্তান পর্যন্ত ওই অঞ্চলে ঠিক ঠাক সেনা মোতায়েন করতে পারছে না। আমার কিছু লোক আছে বাল্টিস্তানে। তারা কোন দিন তো কাজে আসুক!”

    চিফ বললেন, “এখন বেরোতে হবে না। দ্রাস থেকে তোমাকে ঢুকতেও হবে না। তুমি এক মাস ছুটিতে থাকো। কাজ কর্ম বিশেষ সিরিয়াসলি নিচ্ছো না আজকাল বোঝা যাচ্ছে। নাও গেট আউট”।

    সৈকত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, “বাট স্যার”…

    চিফ বললেন, “গেট আউট”।

    সৈকতের দিকে ঘরের সবাই তাকাচ্ছে। শেখরন মিটিমিটি হাসছে। দুজনের কিছুতেই বনিবনা হয় না। প্রাইম মিনিস্টারের সঙ্গে সাউথ আফ্রিকা গিয়ে দুজনের মধ্যে রীতিমত হাতাহাতি হয়েছিল।

    সৈকত সেমিনার রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ঘুম পাচ্ছে। দিল্লিতে এই সময় আবহাওয়া ভাল থাকে। গরম পড়ব পড়ব করছে, কিন্তু পড়ছে না। জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাল সে। এই পোড়ো বাড়িটার ভিতরে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ডেকেছিলেন চিফ। প্রথমেই সৈকতকে বের করে দিলেন। এখন আবার কলকাতা ফিরতে হবে।

    আগে ভাগে না আসতে বললেই পারতেন। আবার আড়াই ঘন্টার প্লেন জার্নি।

    সন্ধ্যে নেমেছে। হাওয়া দিচ্ছে।

    বাড়িটার বাইরে এসে চারদিকে তাকাল সৈকত। মোবাইল বের করল। রাস্তায় গিয়ে ক্যাব ডাকতে হবে।

    এগোতে যাবে, হঠাৎ করে পিঠে হাত পড়ল তার, চমকে তাকিয়ে দেখল চিফের ডানহাত রৌনক শেঠ। সৈকত বলল, “আরে স্যার, আপনি? মিটিঙ থেকে আপনাকেও বের করে দিল নাকি?”

    রৌনক একটা ছোট ব্যাগ তার হাতে দিয়ে বললেন, “তেহরান যাচ্ছো আজ রাতে। পাসপোর্ট আর ভিসা আছে। পরশু ইসলামাবাদ যাবে ওখান থেকে”।

    সৈকত অবাক হয়ে বলল, “চিফ বের করে দিলেন যে!”

    রৌনক হাসলেন, “বুড়ো হয়ে গেছো সৈকত, এখনো কোডগুলো বুঝলে না”?

    সৈকত আমতা আমতা করে বলল, “তা ঠিক। আমি কি একাই যাব?”

    রৌনক বললেন, “কেন? একা ভয় লাগবে? শেখরনকে পাঠাবো তোমার সঙ্গে?”

    সৈকত জোরে জোরে মাথা নাড়াল, “না স্যার। কোন দরকার নেই। আমি একাই কাফি। তেহরানে গিয়ে রিপোর্ট করব তো?”

    রৌনক বললেন, “কোন দরকার নেই। তেহরানে পৌঁছে কী কাজ আছে জেনে যাবে। বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে। এগিয়ে যাও, ওখানে একটা ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে। ওটায় উঠে পড়। ড্রাইভারকে বলা আছে”।

    সৈকত বলল, “বেঁচে ফিরবো না কেন? আপনি অকারণ ভয় দেখান কেন?”

    রৌনক বললেন, “তোমার কনফিডেন্স আছে তুমি বেঁচে ফিরবে?”

    সৈকত বলল, “নিশ্চয়ই। আপনি জানেন না আমার একশো বছর আয়ু আছে। যাক গে, স্যারকে বলে দেবেন এভাবে বের করলে প্রেস্টিজে লাগে”।

    রৌনক হাসতে হাসতে সৈকতের কাঁধে হাত রাখলেন, “বেস্ট অফ লাক”।

    ২

    ভারতীয় সময় রাত তিনটে। ইমাম খোমেইনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেরোল সৈকত। শিরশিরে ঠান্ডার মধ্যে গাইতে গাইতে রাস্তা দিয়ে হাঁটা লাগাল সে।

    তেহরান সে এর আগেও এসেছে। প্রচুর জনসংখ্যা এ শহরে। এত রাতেও শহর ঘুমোয়নি। এয়ারপোর্ট থেকে খানিকটা দূরে একটা বড় টয়োটা দাঁড়িয়ে আছে। ড্রাইভারের পাশের কাঁচে সে নক করল। জানলা নেমে গেল। সৈকত বলল, “জাভিদ?”

    ড্রাইভার মাথা ওঠানামা করে দরজা আনলক করে দিল।

    সৈকত গাড়িতে উঠে মাঝের সিটে বসতে গাড়ি স্টার্ট দিল।

    জাভিদ বলল, “আপনাকে জাহেদান নিয়ে যাওয়ার অর্ডার আছে”।

    সৈকত বলল, “অর্ডার আছে তো চল। কে বারণ করেছে?”

    জাভিদ বলল, “স্যান্ডউইচ খাবেন?”

    সৈকত বলল, “অনেক স্যান্ডউইচ খেয়েছি বাপ। নিয়ে চল। কতক্ষণের রাস্তা?”

    জাভিদ বলল, “গাড়ি না থামলে তিরিশ ঘন্টা। ক্ষেত্রবিশেষে সেটা বিয়াল্লিস তেতাল্লিশ ঘন্টাও হতে পারে”।

    সৈকত বাংলাভাষায় বিশেষ একটা অঙ্গ মেরেছে বলে বলল, “আমি ঘুমোলাম। তুমি একটানা চল। দাঁড়াতে হবে না। ইরানি সৈন্যরা জিজ্ঞেস করলে কী বলবে?”

    জাভিদ বলল, “আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন”।

    সৈকত দ্বিরুক্তি করল না। গাড়ির সিটে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ল। সকালে পাড়ার রাস্তায় ক্রিকেট খেলছিল। দুপুরে দিল্লি। রাতে তেহরান। এর আগেও এরকম হয়েছে। এই জীবনে অভ্যস্ত সে। এই জীবনটাই চেয়েছিল।

    হাই তুলে বলল, “কী আছে জীবনে, আম কাঠ পেছনে। একদিন তো মরতেই হবে। বাবা জাভিদ, টানো টানো”।

    জাভিদ কথা না বলে অ্যাক্সিলেটরে জোর দিল।

    সৈকত ঘুমিয়ে পড়ল।

    ঘুম ভাঙল যখন, রোদ উঠে গেছে। চারদিকে কিচ্ছু নেই। শুধু একটা হাইওয়ে ধরে গাড়িটা চলে যাচ্ছে। সে বলল, “জাভিদ মিয়াঁ, তুমি কি সত্যি সত্যিই গাড়িটা কোথাও দাঁড় করাও নি ভাই?”

    জাভিদ বলল, “না। চিফ বলে দিয়েছেন আপনাকে তাড়াতাড়ি পৌছতে হবে। আমি চেষ্টা করব যথাযথ নিরাপত্তার সঙ্গে আপনাকে জাহেদান বর্ডার দিয়ে পাকিস্তানে ঢোকাতে। বাকিটা নসীব”।

    সৈকত বলল, “স্যান্ডউইচ না কী আছে, দাও দেখি”।

    জাভিদ একটা প্যাকেট তার দিকে দিল। সৈকত প্যাকেট থেকে স্যান্ডউইচ বের করে বলল, “আজ রবিবার। বাড়িতে এই সময় লুচি টুচি হয়। এই স্যান্ডউইচ না জুতোর ছিবড়ে মানুষে খায়? যত্তসব। তুমি কি ইন্ডিয়ান জাভিদ”?

    জাভিদ উত্তর দিল না। সৈকত বলল, “অ। বুঝেছি। টপ সিক্রেট। তা ভাল। সিক্রেট থাকা ভাল”।

    জাভিদ বলল, “মিডওয়েতে কিছু খেতে পারেন। আপনি গাড়ি থেকে নামবেন না। আমি খাবার নিয়ে আসব”।

    সৈকত বলল, “হাগা মোতা করবো না?”

    জাভিদ বলল, “রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করাবো। টয়লেট পেপার আছে। কোন এক পাথরের আড়ালে চলে যাবেন। এখানে কেউ থাকে না”।

    সৈকত বলল, “অগত্যা”।

    কিছুক্ষণ পর সতিই জাভিদ রাস্তার পাশে একটা পাথরের কাছে গাড়ি দাঁড় করাল। সৈকত টয়লেট পেপার নিয়ে পাথরের আড়াল থেকে ঘুরে এসে বলল, “আর কত শাস্তি দেবে মাইরি। আমেরিকান মিসাইল যদি এসে পড়ত আমার ওখানে?”

    জাভিদ বলল, “আমেরিকা এখন এদিকে বেশি নজর দিচ্ছে না। দিলেও আপনার ওখানে মিসাইল ছোঁড়ার ওদের বিশেষ ইচ্ছে আছে বলে মনে হয় না”।

    সৈকত ঘাড় নাড়ল, “তা বটে। সে তো বলবেই তুমি”।

    গাড়ি আবার স্টার্ট নিল। জাভিদ বলল, “মিডওয়েতে দাঁড়াবো”?

    সৈকত বলল, “তুমি খাবে না?”

    জাভিদ বলল, “আমি দু তিন দিন না খেয়ে থাকতে পারি”।

    সৈকত বলল, “শিওর কমান্ডো ট্রেনিং আছে তোমার। তাই না?”

    জাভিদ উত্তর দিল না। গম্ভীর মুখে গাড়ি চালাতে চালাতে বলল, “ইসলামাবাদে গিয়ে সেক্টর সেভেনে ইলিয়াস খানের বাংলোয় গিয়ে দেখা করবেন। ও আপনাকে কাশ্মীর নিয়ে যাবে”।

    সৈকত বলল, “ইসলামাবাদে আমার কত বন্ধু আছে জানো তুমি?”

    জাভিদ বলল, “যত বন্ধুই থাকুক, কারো সঙ্গে দেখা করবেন না”।

    সৈকত মাথা চুলকে বলল, “তারপর পৌছে আমি কী করব?”

    জাভিদ বলল, “ইলিয়াস ব্রিফ করে দেবে। পনেরো জন স্পেশাল এজেন্টের মধ্যে চিফ শুধুমাত্র আপনাকে পাঠিয়েছেন। এই মিশনের ইম্পরট্যান্স আপনি বুঝবেন আশা করি”।

    সৈকত হিন্দি চুল উচ্চারণ করে বলল “… বুঝবো। একে তো বের করে দিল, তারপর কার পিছনে গোঁজার ধান্দা করছে কে জানে। যাক গে, গান চালাও ভাই, গান শুনি”।

    জাভিদ কোন গান চালাল না। পাথুরে মুখে গাড়ি চালাতে লাগল।

    ৩

    “আমি জানি না, চিফ আপনাকে কেন সিলেক্ট করলেন, আপনাকে দেখে আমার ভীষণ ক্যাজুয়াল মনে হচ্ছে। আপনাকে একটা ফ্রেন্ডলি অ্যাডভাইস দিয়ে রাখি, আপনি যে এলাকায় ঢুকছেন, সামান্য অসাবধানতা থেকে কিন্তু আপনার মৃত্যু হতে পারে”।

    গাড়ি দাঁড়িয়েছে মিডওয়েতে। সৈকতের জন্য খাবার নিয়ে এসেছে জাভিদ। সৈকত কথাগুলো শুনে বলল, “পাঠিয়েছে কেন বোঝ না তুমি? বাপে খ্যাদানো মায়ে তাড়ানো ছেলে পেয়েছে। কোন পিছুটান নেই। জানে মরলে চাপ নেই। আবার কী?”

    জাভিদ বলল, “মরলে সবার চাপ আছে। গত বছর আমাকে বালোচ দস্যুরা তিন মাস আটকে রেখেছিল। শুধু শুকনো রুটি খেতে দিত। আমারও পিছুটান নেই। তবু ভয় পেয়েছিলাম। ওদের দেখে ভয় পেয়েছিলাম। নির্মমভাবে ছুরি দিয়ে কুরবানী দেওয়ার মত মানুষের গলা কেটে ফেলে ওরা”।

    সৈকত বলল, “তুমি কাটোনি? মানুষের গলা? সত্যি করে বল”।

    জাভিদ বলল, “আমি কাটা আর আমারটা কাটা দুটোর মধ্যে তফাৎ আছে, তাই না?”

    সৈকত খেতে খেতে থমকে গেল, “অ, তার মানে কেটেছো। তা ভাল। হ্যাঁ, মজার ব্যাপারটা। যেন তোমার খৎনা হচ্ছে, আর তুমি খৎনায় নেমন্তন্ন খেতে গেছো, হেঁহেঁ”।

    জাভিদ সৈকতের দিকে তাকাল।

    সৈকত বিষম খেল, “উপস, সরি সরি। এ আমি কিন্তু কোন রিলিজিয়াস সেন্টিমেন্টে আঘাত করি নি মাইরি। রাগ করলে নাকি?”

    জাভিদ বলল, “রাগ করি নি। আপনার প্যান্ট খুলে ওরা দেখলে আপনার আর খৎনা হবে না, সোজা উপরে পাঠিয়ে দেবে”।

    সৈকত বলল, “ভয় দেখিয়ে লাভ নেই মামা, এখানে সবার ইয়ে, আমাকে খামোখা সন্দেহ করবে কেন? তাছাড়া দেখছো না, আমার মধ্যে একটা খানসেনা খান সেনা লুকস আছে। এই তো, একটা চুটুক দাড়ি রেখে দেব, ব্যস”।

    জাভিদ ড্রাইভিং সিট থেকে নেমে সৈকতের পাশের সিটে এসে বসে বলল, “এবার আপনার মিশনটা ব্রিফ করে দি। আপনি কিছুই জানেন না আশা করি”।

    সৈকত বলল, “না। জেনে কী হবে? পথেই জেনে নেব বলেছিল”।

    জাভিদ বলল, “গিলগিটের শিয়া নেতা আর স্ত্রীকে লস্কর খুন করেছিল আগের বছর। তার এক মেয়েকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট আপনাকে পাঠিয়েছে তাকে বের করে নিয়ে যাওয়ার জন্য”।

    সৈকত হাঁ হয়ে গেল। জাভিদের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি একা?”

    জাভিদ বলল, “হ্যাঁ, আপনি একা”।

    সৈকত বলল, “বোকাচোদা নাকি? শুয়োরের বাচ্চা। বাল। ভাগ। গাড়ি ঘুরাও। শিগগিরি গাড়ি ঘুরাও। আমার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই? এ কি বলিউডের সিনেমা পেয়েছো বাল? আমি নেই। তেহেরান নামিয়ে দাও আমায়”।

    জাভিদ বলল, “চিফ আমাকে বলে দিয়েছেন আপনাকে এটা জানাতে, আপনি না পারলে শেখরনকে পাঠাবেন উনি”।

    সৈকত কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে বলল, “শেখরনকে পাঠাবে? ও পারবে নাকি?”

    জাভিদ বলল, “চিফ সেটাই বললেন। বলেছেন আপনিই বেস্ট। না পারলে শেখরন”।

    সৈকত বলল, “এটা মিশন ইম্পসিবলের চারগুণ উপরে। পাকিস্তান গভর্নমেন্ট আছে, গাদা গাদা টেররিস্ট অরগানাইজেশন আছে, আমার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই? কেন মেয়েটাকে মারে নি কেন? কী আনন্দে?”

    জাভিদ বলল, “বিয়ে দেবে এর মধ্যেই। পাকিস্তানী আর্মির প্ল্যান হচ্ছে পৃথিবীকে দেখাবে শিয়া সুন্নী এখানে ভাই ভাই”।

    সৈকত বলল, “তো বিয়ে করলে করতে দাও। আমাদের চুলকানি কীসের?”

    জাভিদ বলল, “কূটনৈতিক সাফল্যের এর থেকে বড় সুযোগ আর পাওয়া যাবে কি? মেয়েটাকে ইন্ডিয়াতে রেসকিউ করে এনে ওকে দিয়ে প্রেস কনফারেন্স করালে গোটা পৃথিবী জানতে পারবে গিলটিট বাল্টিস্তানে পাকিস্তান কী ভাবে দমন পীড়ন করছে। আপনার এই বেসিক বুদ্ধিগুলো থাকবে, আশা করেছিলাম”।

    সৈকত বলল, “মানে আমাকে বলির পাঠা করা হল। ঠিক আছে, আমার কী? মরলে মরবে। শালা কী রকম চুতিয়া কেটে দিল আমার। উফ!”

    জাভিদ বলল, “আপনার পোশাক পাল্টাতে হবে। খানিকক্ষণ পরে আরেকটা পাথরের পাশে দাঁড়াব। আপনি চেঞ্জ করে নেবেন। কোয়েটা থেকে ইসলামাবাদ অবধি আপনি একা। ইলিয়াস খান আপনাকে সাহায্য করবে”।

    সৈকত বলল, “তুমি শিয়া?”

    জাভিদ উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে সৈকতের পাশ থেকে নেমে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল।

    সৈকত বলল, “আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিল। পরে বলতে পারতে প্ল্যানটা”।

    জাভিদ এবারেও উত্তর দিল না।

    ৪

    রুক্ষ পাহাড়ি পথ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে জাভিদ। সন্ধ্যে নামছে। চোদ্দ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে তাদের যাত্রা শুরু হবার।

    সৈকত বলেছিল বটে তার ঘুম আসবে না, বাস্তবে দেখা গেল সে রীতিমতো নাক ডেকে ঘুমিয়েছে।

    তার ঘুম ভাঙতোও না যদি তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে গাড়িটা দাঁড়িয়ে না যেত।

    ধড়মড় করে উঠে বসে সে বাংলায় বলে উঠল, “কী হল? যশোর রোডের রাস্তা আবার খারাপ হয়ে গেল নাকি?”

    জাভিদ বলল, “কী বলছেন?

    সৈকত চোখ মুছে বলল, “ওহ, জাভিদ তো! কী হল তোমার গাড়ির?”

    জাভিদ বলল, “দেখছি। আপনি গাড়ি থেকে নামবেন না। আর্মি এরিয়া কাছেপিঠেই আছে”।

    সৈকত “ঠিক আছে” বলে আবার ঘুমিয়ে পড়ল।

    জাভিদ অনেকক্ষণ ধরে গাড়ি সারাই করে উঠে স্টার্ট দিল।

    সৈকত এক চোখ খুলে জিজ্ঞেস করল, “গাড়ি সারাইও করতে পারো তুমি?”

    জাভিদ বলল, “এত লম্বা রাস্তায় তো আর মেকানিক নিয়ে ঘোরা সম্ভব না। কিছু কাজ শিখতে হয়েছে”।

    সৈকত বলল, “আর্মি এরিয়া হলে সমস্যা কোথায়? আর্মি ম্যানেজ করতে পারবে না?”

    জাভিদ বলল, “আর্মিরা আগে এত অ্যাগ্রেসিভ ছিল না। পাকিস্তানের একটা টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশন কয়েকজন আর্মিকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করেছিল। তারপর থেকে ওরা ভীষণ অ্যালার্ট হয়ে গেছে”।

    সৈকত বলল, “জইশ উল আদল। কোয়েটা শাসন করছে এখন। নটোরিয়াস গ্যাং। ওদের শিয়াদের ওপর খুব রাগ। দুজন মাথা, একজনের নাম আবদুল রিয়াজ। বাড়ি লাহোরে। ছোটবেলায় বাপের মার খেয়ে পালিয়ে করাচী গেছিল। সেখান থেকে জিহাদী বাহিনীতে নাম লেখায়। করাচীর শিয়া মসজিদে দুবার বোম্বার অ্যাটাকের মাথা। ঠিক বলছি তো?”

    জাভিদ বলল, “অনেক কিছু খবর রাখেন আপনি। তা হলে এত ক্যাজুয়াল থাকেন কেন?”

    সৈকত উঠে বসে বলল, “ইসলামাবাদে এক হাত ডিসট্যান্সে ছিল জানোয়ারটা। শুধু চিফের ইন্সট্রাকশন ছিল না বলে গুলি করি নি”।

    জাভিদ বলল, “এরপরে পেলে কারো ইন্সট্রাকশনের অপেক্ষা করবেন না। আগে গুলি মারবেন। আপনাকে ইরানের সেরা রেস্তোরাঁয় সেরা ডিশ খাওয়াবো। রিয়াজ মানুষ না। শয়তানের বাচ্চা। কাউকে খুন করার আগে একবারো ভাবে না। ওর বেঁচে থাকার কোন দরকার নেই”।

    সৈকত বলল, “তোমার কে ছিল ওই মসজিদে?”

    জাভিদ চুপ করে গেল।

    সৈকত বলল, “এই তোমার সমস্যা। মাঝে মাঝে চুপ করে যাও। কথা বলে সুখ নেই”।

    অন্ধকার নেমে এসেছে। জাভিদ খুব সন্তর্পণে গাড়ি চালাচ্ছে। বলল, “চিফ বলেছেন বলে, নইলে আজ কোথাও রেস্ট করলে ভাল হত। আপনাকে একটানা চলতে হবে। বালুচিস্তানটা সাবধানে পার হবেন”।

    সৈকত বলল, “বর্ডার তো পার করি আগে। আর কোন কিছুতে ভয় নেই। মরে গেলে আওয়ার কান্ট্রি উইল ডিজ ওন মি। এটাই যা কষ্ট থেকে যাবে”।

    জাভিদ বলল, “আর যাদের দেশ থেকেও নেই, তাদের কী হবে?”

    সৈকত বলল, “যেমন?”

    জাভিদ বলল, “কাশ্মীরিদের। দু দেশেই কাশ্মীরিরা মরে বেঁচে আছে। কাশ্মীরিদের কোন দেশ নেই। তাদের বেঁচে থাকা আর না থাকা সমান। কোন অধিকার নেই তাদের কোন দেশের উপরে”।

    সৈকত সন্দিগ্ধ গলায় বলল, “তুমি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের লোক, তাই তো?”

    জাভিদ বলল, “আপনি জেনে কী করবেন?”

    সৈকত বলল, “তোমার কথা বার্তা শুনে আগেই বুঝেছি। কেন বলতে চাও না তুমি?”

    জাভিদ বলল, “গিলগিটে আমায় দেখা মাত্র গুলি করার অর্ডার আছে। নিজের জন্মভূমিতে যদি যেতে না পারি, সে কাহিনী বলে কী করব আমি?”

    সৈকত বলল, “তা ঠিক, আমার ভাই সে ঝামেলা নেই। ইচ্ছে হলেই কলকাতা গিয়ে নন্দনে সিনেমা দেখতে পারি। চিফ চান না, আমার কী করা! আচ্ছা জাভিদ, তোমাদের রাজকন্যা কেমন দেখতে?”

    জাভিদ বলল, “আমার বড় ভাইয়ের এক মাত্র মেয়ে। ওর কিছু হলে আমি পাকিস্তানি আর্মির বারোটা বাজিয়ে দেব”।

    উত্তেজনায় জাভিদ গাড়ির গতিবেগ বাড়িয়ে দিল।

    সৈকত ঘাবড়ে গিয়ে বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে। চাপ নিও না বস। তুমি বেশি জোরে চালালে আমি তোমার ভাইঝির কাছে যাবার আগে তোমাদের আল্লাহর কাছে পৌঁছে যাব”।

    জাভিদ গাড়ির গতি স্বাভাবিক করল।

    সৈকত হাঁফ ছাড়ল, “বাঁচালে”।

    জাভিদ বলল, “আর্মির একটা গাড়ি পিছু নিয়েছে। কিছু সন্দেহ করছে হয়ত। আপনি কোন কথা বলবেন না। ওকে?”

    সৈকত চমকে পিছনে তাকাল।

    একটা গাড়ি বেশ দ্রুতবেগে আসছে।

    সে ব্যাজার গলায় বলল, “বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেবে হে জাভিদ। নাও নাও। কী আছে জীবনে, আমকাঠ পেছনে”।

    ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগোলোকপুরের পরশ পাথর – অভীক দত্ত
    Next Article যারা ভেবেছিল ওরা ফ্লাইওভারে ছিল – অভীক দত্ত

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }