Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    রাজকন্যের সন্ধানে – অভীক দত্ত

    লেখক এক পাতা গল্প112 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    রাজকন্যের সন্ধানে – ২৫

    ২৫

    আর্মি কোয়ার্টার বেশ বড়। ইয়াসির হুসেন প্রথম যখন গিলগিটে এসেছিল, তখন এসব কিছু ছিল না। কিছুদিন পরে বিয়ে হয়েছিল তার।

    কোয়ার্টারের অনেক অংশ এক্সটেনশন করিয়েছিল। লাইন অফ কন্ট্রোলে ডিউটি করা ঝুঁকির কাজ। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে গিলগিট বাল্টিস্তানে পাক আর্মির কাজ হল সংযোগস্থাপন করা। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কাজ ইয়াসির দেখে।

    পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আত্মীয়রা এসেছে। একেকটা ঘর দখল করেছে। অবিবাহিত ছেলেদের আর্মি ব্যারাকে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। করাচীর ফুপা ফুপু এসেছে। কোয়েটা থেকেও অনেক আত্মীয় এসেছে।

    বাইরের ঘরে ছোট বাচ্চারা দৌড়োদৌড়ি করছে। ইয়াসিরের ভাই বোনেরা নাচের আসর বসিয়েছে।

    ইয়াসিরকে সেখানে বসতে হয়েছে। বলিউডি গানের সঙ্গে পা মেলাতে হয়েছে।

    বাড়ি ঘিরে পাহারা দিচ্ছে আর্মি জওয়ানেরা। গিলগিটে অতিথিদের জন্য আলাদা করে অস্থায়ী বিলাসবহুল বাসস্থান বানানো হয়েছে। ফুপু বিরক্তমুখে বসে আছে। ইয়াসিরের সে বিরক্ত মুখ দেখতে ভাল লাগছে না। ফুপু এসেই তার বক্তব্য পরিষ্কার করে জানিয়েছে। ইয়াসির বিয়েতে মত দেওয়ার আগে বাড়ির সব থেকে বয়স্কা ফুপুকে জিজ্ঞেস করে নি। এই নিয়ে তার আপত্তি। ইয়াসির বিশেষ পাত্তা দেয় নি।

    আমিনা তার এই ফুপুরই মেয়ে ছিল। তার প্রথম স্ত্রী। ভীষণ সন্দেহ করত তাকে। শেষে একদিন ইয়াসিরকেই যা করার করতে হয়। সন্দেহবাতিক স্ত্রী থাকার বিপদ বড় বেশি। গিলগিটের মেয়েরা তার থেকে অনেক বেশি সুন্দরী, আমিনার ধারণা হয়েছিল ইয়াসির তার আড়ালে সে সব মেয়েদের সঙ্গে প্রেম করে।

    আমিনা মরে যাবার পর ফুপু কিছুই সন্দেহ করে নি। অ্যাক্সিডেন্ট হতেই পারে। তবে তার এখন দাবী ছিল দ্বিতীয় বিয়েটা তার অনুমতি নিয়ে করতে পারত ইয়াসির। সেটা সে করে নি। ইয়াসিরের মাঝে মাঝেই ইচ্ছে করছে যেভাবে আমিনাকে মেরেছিল সেভাবে ফুপুকেও উড়িয়ে দেয়।

    করতে পারছে না। পারলে করে ফেলত। আনন্দের সময় কেউ মুখ ব্যাজার করে বসে থাকলে ভাল লাগে না।

    কোয়ার্টারের পিছনে হুইস্কি পার্টি বসেছে। আগুন জ্বালিয়ে কাবাব বানানো হচ্ছে। ইয়াসির সেখানে গিয়ে বসল। তার খালাতো ভাই নাহিদ কানে কানে বলল, “ভাবিজান খুব সুন্দরী হয়েছে মাশাল্লাহ। তুমি ভাগ্যবান”।

    ইয়াসির গ্লাস থেকে হুইস্কি গলায় ঢেলে বলল, “নিজের ভাগ্য নিজেকে তৈরী করতে জানতে হয় নাহিদ। কামাতে জানলে তোর বউও সুন্দরী হবে। তুই কোয়েটায় আজকাল কী করছিস?”

    নাহিদ বলল, “ইলেক্ট্রনিক্সের ব্যবসা। চলছে না তেমন কিছু”।

    ইয়াসির বলল, “এখানে চলে আয়। আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। মালামাল হয়ে যাবি। বিশ্বস্ত মানুষই তো দরকার আমার”।

    নাহিদ বলল, “যা বলবে ভাইজান। আম্মিও বলছিল তোমার সঙ্গে কথা বলতে। আমি ভাবতাম তুমি হয়ত বিরক্ত হবে”।

    ইয়াসির নাহিদের গলা জড়িয়ে ধরল, “কেন বিরক্ত হব? তুই আমার ভাই বলে কথা। আমিই ব্যবস্থা করে দেব সব”।

    নাহিদ বলল, “ভাইজান আমিনা ভাবীর কথা মনে পড়লে কষ্ট হয়?”

    ইয়াসিরের চোয়াল শক্ত হল, মুহূর্তে সেটাকে সামলে নিয়ে সে বলল, “তা তো হবেই। কী করব আর?”

    নাহিদ ইয়াসিরের কাঁধ চাপড়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করল। ইয়াসির মনে মনে হাসল। গাধার বাচ্চা সব। এরা এখনো কিছুই জানে না। একটা বউ মরলে হাজারটা মেয়ে পাওয়া যাবে। মন খারাপের কী আছে?”

    বেশ কয়েক পেগ হুইস্কি খেয়ে ইয়াসির নিজের ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিল।

    ঘুম ভাঙল মাঝরাতে। নাহিদ তাকে ধাক্কা দিচ্ছিল, “ভাইজান, ও ভাইজান”।

    ইয়াসির বিরক্ত গলায় বলল, “কী হয়েছে?”

    নাহিদ বলল, “কে একজন তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে দেখো”।

    ইয়াসির উঠে বসে চোখ কচলে বলল, “এখন?”

    নাহিদ বলল, “হ্যাঁ। বলছে খুব জরুরি। তোমার সঙ্গেই কথা বলবে”।

    ইয়াসির বলল, “নিয়ে আয়”।

    নাহিদ বলল, “ঠিক আছে”।

    মিনিট দুয়েক পরে ফাজিয়ার খালা ইয়াসিরের ঘরে প্রবেশ করল। তার মুখ থেকে যেন কেউ রক্ত শুষে নিয়েছে। ইয়াসির নেশাগ্রস্থ গলায় বলল, “কী হয়েছে?”

    ফাজিয়ার খালা বলল, “ফাজিয়া ঘরে নেই”।

    ইয়াসির বলল, “বুঝলাম না”।

    ফাজিয়ার খালা বলল, “বার বার বলা সত্ত্বেও ও ঘর আটকে ঘুমিয়েছিল। মাঝরাতে শব্দ হতে আমার ঘর থেকে বেরিয়ে দেখলাম ফাজিয়ার ঘরের দরজা খোলা। ও ঘরে নেই। ইয়া আল্লা, এবার কী হবে?”

    ইয়াসিরের চোয়াল শক্ত হল, “যা হবার তাই হবে। কোথায় আর পালাবে?”

    ফাজিয়ার খালা ভয়ে কাঁদতে শুরু করল।

    ২৬

    “ফাজিয়া বেটি, আমার সোনার টুকরো মেয়ে। কোথায় তুই?”

    আব্বা এভাবে ঘরে ঢুকত। ফাজিয়া ঝাঁপিয়ে পড়ত আব্বুর বুকে। যত রাতই হোক, যত কাজেই ব্যস্ত থাকত আব্বু, তার সঙ্গে বাড়ি ফিরে খেলবেই।

    আরেকটু বড় হলে ফাজিয়া তাদের বাড়ির এক গোপন কথা জানতে পেরেছিল। দুই দেশের যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে গিলগিটের বাসিন্দারা এক কালে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ বানিয়েছিল। সবার বাড়ির নিচে কুঠুরি ছিল। বাবা দেখিয়েছিল তাদের বাড়ির নিচের কুঠুরিটা। তার ঘরের কাঠের পাটাতন সরিয়ে বাড়ির নিচের কুঠুরিতে লুকিয়ে থাকত লুকোচুরি খেলতে খেলতে।

    বহুদিন সে কুঠুরি ব্যবহৃত হয় নি।

    ঘুমালেও ঘুম আসছিল না ফাজিয়ার। কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে দিচ্ছিল প্রতিনিয়ত।

    মাঝরাতে ঠুক ঠুক শুনে ঘুম ভেঙে গেল তার। প্রথমে ভাবল কেউ দরজায় আওয়াজ করছে। সে দরজা খুলল। কেউ নেই। পরক্ষণেই বুঝল শব্দটা মেঝে থেকে আসছে।

    খাটের তলায় ছুরি রাখা থাকে। সেটা হাতে নিয়ে অতি সন্তর্পণে পাটাতন খুলল সে।

    ইফতিকারচাচা! আনন্দে চেঁচিয়ে উঠতে যাচ্ছিল সে। এক অজানা লোককে নিয়ে কুঠুরির সিঁড়ি বেয়ে তার ঘরে উঠে এসে চাচা বলল, “তৈরী ফাজিয়া?”

    ফাজিয়া বলল, “টানেলের কথা তুমি কী করে জানলে চাচা?” খুশিতে তার কথা বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়।

    “ওরা কী করে জানবেন? গিলগিটের লোকেরা থোড়িই গিলগিটের সব সিক্রেট জানেন! এসব কাজ আমাকেই করতে হল। চলুন, এখন সিনেমার মত কান্নাকাটি করলে হবে না”।

    যে কথা বলল ফাজিয়া তার দিকে তাকিয়ে ইফতিকারের দিকে তাকাল।

    ইফতিকার বলল, “ও ঠিকই বলেছে। ওই নিয়ে এসেছে। তুমি চল। দেরী কোর না। তোমার ঘরের বাইরে জাসুস ভর্তি হয়ে আছে”।

    ফাজিয়া একটা ব্যাগে যা হাতের কাছে পায়, গুছিয়ে নিল।

    ইফতিকার বলল, “চল”।

    ফাজিয়া সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল। তার পেছনে ইফতিকার আর সৈকত। নিচে হামিদ অপেক্ষা করছিল। সৈকত পাটাতন বন্ধ করে দিয়ে নিচে নেমে বলল, “কাঠের মেঝে হলেও পরে বুঝতে পারবে, তাই না?”

    ফাজিয়া বলল, “হ্যাঁ। আমার ঘরের দরজাটাও খোলা রইল”।

    সৈকত বলল, “ঠিক আছে। থাকুক। আর ফিরতে হবে না। চলুন”।

    হামিদ টর্চ জ্বালিয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল। ফাজিয়া দেখল কুঠুরির একটা অংশেও পাটাতনের দরজা ছিল। সেটা খুলেই এরা এসেছে। সে এই পথটা জানত না। আব্বু জানত হয়ত।

    টানেলের ভিতরে অতটা শীত নেই। ফাজিয়া তবু কাঁপছিল। তার বিশ্বাস হচ্ছিল না সত্যিই এটা ঘটছে। ইফতিকার চাচা তাকে নিতে আসবে, বিশ্বাস হচ্ছিল না কিছুতেই।

    খানিকক্ষণ পরে আরেকটা ছোট কুঠুরিতে প্রবেশ করে সিঁড়ি বেয়ে একটা ঘরে প্রবেশ করল সবাই। খালেদ বসে ছিল। ফাজিয়াকে দেখামাত্র সসম্মানে উঠে দাঁড়াল। ফাজিয়ার আব্বু সবার অত্যন্ত সম্মানের পাত্র ছিলেন।

    ফাজিয়া হাঁফাচ্ছিল।

    সৈকত বলল, “কিছুক্ষণের মধ্যে খবর হয়ে যাবে। আমাদের তার আগে গিলগিট ছাড়তে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের চেকপোস্ট পেরোতে হবে”।

    খালেদ বলল, “সকালের আগে অবধি সময় আছে আমাদের কাছে?”

    সৈকত মাথা নাড়ল, “আমি অতক্ষণ অ্যাফোর্ড করতে পারব না”।

    খালেদ বলল, “লাদাখ বর্ডারের দিকে যাবেন বলছিলেন না? পারবেন না। আমি খোঁজ নিলাম, ওদিকটা লস্কর ঘিরে রেখেছে”।

    সৈকত বলল, “সে তো জানা কথা। ঠিক আছে, আমরা আজ রাতের মধ্যে তাহলে চিলাস পৌঁছতে পারলেও অনেকটা এগিয়ে থাকা যাবে। আপনি বোরখা পরুন। বেরনো যাক”।

    ফাজিয়া ব্যাগ থেকে বোরখা বের করে পরে নিল। তারা বাড়িটা থেকে বেরলো।

    পোড়ো পরিত্যক্ত বাড়ি। বেরনোর আগে হামিদ চুপ করে দাঁড়াল। এ বাড়িটা তারই।

    খালেদ হামিদের কাঁধে হাত রাখল, “মন খারাপ করে লাভ নেই। চল। যদি সত্যি ভাল দিন আসে, এই বাড়িটাই আবার নতুন করে তৈরী করা যাবে”।

    হামিদ চোখ ভর্তি জল নিয়ে গাড়িতে উঠল।

    চেকপোস্টে জওয়ানদের ভিড় কম। ফাজিয়া কাঠ হয়ে বসে ছিল। গিলগিটে ঢুকবার জন্য যতটা সতর্কতা নেওয়া হয়, বেরনোর জন্য অতটা নেওয়া হয় না। চেকপোস্টে কোন চেকিং ছাড়াই তাদের গাড়িকে ছেড়ে দিল।

    ইফতিকার বলল, “পরম করুণাময় আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন”।

    ফাজিয়া কাঁদছিল। নিজের বাড়িতে আর কোন দিন হয়ত সে আর ফিরতে পারবে না…

    #

    রাত দুটো। আই এস আই চিফ রফিক আহমেদ করাচীতে তার বাড়িতে শুয়ে ছিলেন।

    ফোন বেজে উঠল।

    সিক্রেট সার্ভিসের নাম্বার। রফিক তড়িঘড়ি ধরলেন, “হ্যাঁ”।

    “জনাব, বাজ পাকিস্তানে ঢুকেছে। জাহেদান থেকে এন্ট্রি নিয়েছিল”।

    রফিক উঠে বসলেন, “পারপাস?”

    “জানি না জনাব”।

    “এখন কোথায় আছে?”

    “জানি না জনাব”।

    “তাহলে কী জানো?” রেগে গেলেন রফিক।

    “বাজ পাকিস্তানে ঢুকেছে জনাব”।

    ফোন কেটে গেল।

    রফিক পর পর দশ জায়গায় ফোন করলেন।

    তার চোয়াল শক্ত হল।

    এইবার ছাড়া যাবে না, অনেকবার হাত থেকে বেরিয়ে পালিয়েছে। এবার কিছুতেই ছাড়া যাবে না।

    #

    অন্ধকার হলেও যথেষ্ট জোরে গাড়ি চলছিল। সৈকত হঠাৎই ফাজিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে হেসে বলল, “আমি সৈকত। আপনাদের আই এস আই ভালবেসে আমাকে বাজ বলে ডাকে”।

    ফাজিয়া হাত মেলালো না। পরপুরুষের সঙ্গে তারা হাত মেলায় না।

    ২৭

    ভোর ছ’টাতেই ঘুম ভেঙে গেল এনার। চীনের ডেলিগেটদের সঙ্গে সে গিলগিটে এসেছে। প্রথমে ঠিক করেছিল দেশে ফিরে যাবে। পাকিস্তান থেকেও যথেষ্ট চাপ দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল প্রচুর সমস্যা হবে গিলগিটে একা মেয়ে সাংবাদিক গেলে। এনা শোনে নি। চলে এসেছে।

    প্রচুর সিকিউরিটিতে তাদের একটা হোটেলে রাখা হয়েছে। তবু একরাশ হৈ হৈ আর গাড়ির হর্নের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল তার। এরকম শব্দ হলেই ড্যানিয়েলের কথা মনে পড়ে যায়। প্রবল শীত গিলগিটে। হাই অল্টিচ্যুডের জন্য প্লেন থেকে নেমে শ্বাসকষ্টও হয়েছে প্রথম দিকে। ড্যানিয়েল ঠিকই বলত। এই অঞ্চলের সৌন্দর্য অসাধারণ।

    হোটেলের জানলা দিয়ে এনা দেখল গোটা এলাকায় সেনা নেমে গেছে। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখল হোটেলের প্রতিটা ঘরে আইডি চেক হচ্ছে। এনার নিরাপত্তারক্ষীরা তার রুমের বাইরে থাকে। তাদের জিজ্ঞেস করতে জানা গেল ইয়াসির হুসেনের যার সঙ্গে বিয়ে হবার কথা ছিল, সে মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না। রাত থেকেই এলাকার প্রতিটা জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়েছে।

    এনা তৈরী হয়ে নিল। এই স্কুপ ছাড়া যাবে না। তাদের হোটেলেই ইসলামাবাদ থেকে আসা পাকিস্তান আর্মির বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ অফিসার উঠেছেন।

    তারা চিন্তিত মুখে ঘোরাফেরা করছিলেন। এনাকে দেখে এড়িয়ে যেতে শুরু করলেন তারা।

    ডিনার টেবিলে একজন ইসলামাবাদের সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল গতকাল। নাম সিরাজ। এনা দেখল সিরাজ ব্যস্ত হয়ে কোথাও যাচ্ছে। সে সিরাজের কাছেই দৌড়ে গিয়ে বলল, “তুমি কোথায় যাচ্ছো?”

    সিরাজ বলল, “আর্মি ক্যাম্পে। আপনার না যাওয়াই ভাল”।

    এনা বলল, “কেন?”

    সিরাজ চারদিকে তাকিয়ে নিয়ে বলল, “ইয়াসির হুসেন অত্যন্ত প্রভাবশালী অফিসার। এই বিয়েটার মিডিয়ায় ওয়ার্ল্ড কভারেজ হচ্ছে, পাকিস্তান মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরাও এখানে চলে এসেছেন। এখন যদি ইয়াসির হুসেনের উড বিকে না পাওয়া যায়, তাহলে কেয়ামত হয়ে যাবে”।

    এনা বলল, “যেগুলো বললে তার সবটাই আমি জানি। আমার না যাওয়ার কী আছে?”

    সিরাজ ম্লান হাসল, “আপনার নিরাপত্তার জন্য বলছি। শুধু আর্মি ক্যাম্প না, আমার অ্যাডভাইস হল, আপনি পারলে আজকেই ইসলামাবাদে চলে যান। আশা করি আপনাদের এমব্যাসি আজকেই কোন স্টেপ নিয়ে নেবে”।

    সিরাজ দাঁড়াল না। বেরিয়ে গেল।

    এত ভোরেই হোটেলের প্রতিটা ঘরে পাকিস্তানী আর্মির ব্যস্ততা দেখে এনা বুঝল সিরাজ ভুল কিছু বলে নি। সে তার ঘরে গিয়ে তার বস স্টিভকে ফোন করল।

    স্টিভ বলল, “এনা? ওখানে এখন ভোর না? কী হয়েছে?”

    এনা সবটা বলে বলল, “আমি আর্মি ক্যাম্পে যেতে চাই। এরা যেতে বারণ করছে। কী করব?”

    স্টিভ একটু ভেবে নিয়ে বলল, “ওখানে শুধু আর্মি অপারেট করে না। অন্য টেররিস্ট অর্গানাইজেশনগুলিও সমানভাবে অপারেট করে। তুমি দূরে থাকো। আমারও তাই মনে হয়”।

    এনা বলল, “ওকে। আমি দেখছি কী করা যায়”।

    স্টিভ বলল, “মেয়েটা কোন নোট লিখে গেছে?”

    এনা বলল, “না”।

    স্টিভ বলল, “হয় পালিয়েছে, নয় তো কোন অর্গানাইজেশন মুক্তিপণের জন্য কিডন্যাপ করেছে। ও যা দেশ, সব কিছু হতে পারে। স্টে অ্যালার্ট। কোথাও যেতে হবে না। চোখ কান ব্যবহার কর শুধু”।

    এনা ফোন রেখে তার পাশের ঘরের চীনা সাংবাদিকের দরজায় নক করল। মেয়েটার নাম এনা মনে রাখতে পারে না, তবে মেয়েটা ভাঙা ভাঙা ইংরেজি বলতে পারে।

    চীনাদের এখানে আদর অনেক বেশি। চীন আর পাকিস্তানের বন্ধুত্বর নমুনা গিলগিট দেখছে। এখানে প্রচুর প্রোজেক্ট চীনের আর্থিক অনুদানে হচ্ছে। আর্মির কোন জওয়ান কোন চীনের সাংবাদিকের ঘরে ঢু মারছে না।

    মেয়েটা দরজা খুলে তাকে দেখে বলল, “কী হয়েছে?”

    এনা বলল।

    মেয়েটা জানাল সে ঘরে ঘুমাচ্ছিল। এত কিছু হয়ে গেছে জানতোই না।

    মেয়েটা ফোন বের করে খান দশেক ফোন করল। বেজিং এ তাদের হেড অফিসেও ফোন করল। কিছুক্ষণ পর বলল, “তুমি আমাদের সঙ্গে আর্মি ক্যাম্পে যেতে পারো। আমাদের জন্য স্পেশাল কনভয় থাকছে”।

    এনা আর ভাবল না। মেয়েটার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল।

    কিছুক্ষণের মধ্যেই আর্মি ক্যাম্পে পৌঁছল চিনা সাংবাদিকদের কনভয়। আর্মি জওয়ানরা গেট বন্ধ করে দিয়েছে। তবু মিডিয়া ভিড় করে দাঁড়িয়েছে। ক্যাম্প থেকে একটা কনভয় বেরোল। সেটার পেছন পেছন সবাই ছুটল নিজেদের গাড়িতে। চীনা মেয়েটি এনাকে বলল, “এটাই সেই শিয়া নেতার বাড়ি”।

    এনা দেখল পাকিস্তানী সেনা বাড়ির সব আসবাবপত্র রাস্তায় বের করে দিয়েছে।

    প্রবল ভিড় হতে শুরু করেছে এলাকায় এত সকালেও…

    ২৮

    গিলগিটে যাওয়ার পথে আর্মির চেকিং যারা করেছিল, তাদের কারো গাড়ি দেখা গেল না চিলাস ভ্যালি ফেরার সময়। উলটে রাস্তায় একটার পর একটা পাকিস্তানী আর্মির গাড়িকে গিলগিটের দিকে যেতে দেখা গেল।

    সৈকত বলল, “চিলাস ভ্যালিতে কোন আস্তানা জানা আছে নাকি ইফতিকার সাব?”

    ফাজিয়া চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছে।

    ইফতিকার সেটা দেখে নিয়ে বলল, “বাচ্চাটার উপর দিয়ে এই ক’দিন ধরে কী পরিমাণ মানসিক চাপ গেছে সেটা অনুমান করার চেষ্টা করছি। আমরা যেখানে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করেছিলাম, সেই বাড়িটায় থাকলে হবে না?”

    সৈকত মাথা নাড়ল, “না। রাস্তার পাশে। বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার। তাহলে কি আমরা আজকে দাসু চলে যাব? খালেদ পারবে এতটা ড্রাইভ করতে?”

    খালেদ বলল, “করতেই হবে। আমি টেনে দেব যত কষ্টই হোক। কিন্তু চেক পোস্ট এলে?”

    সৈকত বলল, “দেখা যাবে। যতটা পারা যায় গিলগিট থেকে দূরে চলে গেলেই ভাল”।

    খালেদ বলল, “কোন সমস্যা নেই। তাই হোক”।

    সিন্ধু নদের পাশ দিয়ে ভাঙা চোরা রাস্তা দিয়ে গাড়ি কোন মতে এগোতে থাকল। ভোরের আলো প্রকট হবার আগে তারা দাসুর রাস্তা ধরে নিল। দাসুর রাস্তার হালও তথৈবচ।

    ফাজিয়া চোখ খুললে ইফতিকার বলল, “খিদে পেয়েছে?”

    ফাজিয়া বলল, “আমি কোথায় যাবো চাচা?”

    ইফতিকার বলল, “তুমি কোথায় যেতে চাও?”

    ফাজিয়া ম্লান মুখে মাথা নাড়ল, “জানি না”।

    সৈকত বলল, “আপনি আমার সঙ্গে ইন্ডিয়া যাচ্ছেন ফাজিয়া”।

    ইফতিকার সৈকতের দিকে রাগী চোখে তাকাল, “সেটা কখন ঠিক হয়েছে?”

    সৈকত বলল, “আপনি তাহলে বলুন ফাজিয়া এখানে থাকলে ওর নিরাপত্তায় কোন সমস্যা হবে না?”

    ইফতিকার বলল, “আমাকে এই ব্যাপারে চিফের সঙ্গে কথা বলতে হবে। দিল্লি থেকে অনুরোধ এলে ভাবতে পারি। আপনাকে কীভাবে বিশ্বাস করব?”

    সৈকত বলল, “দিল্লির অনুরোধের জন্য অপেক্ষা করে থাকলে আপনাদের মেয়েকে আর বাঁচাতে হবে না। যেখানে মেয়েদের মতামতের বিরুদ্ধেই তার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তাদের থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় না”।

    ইফতিকার বিদ্রুপাত্মক গলায় বলল, “ওহ, ইন্ডিয়াতে বুঝি মেয়েরা তাদের পছন্দমতোই বিয়ে করে? কোন রকম জোর জবরদস্তি হয় না?”

    সৈকত বলল, “আর কার কী হবে জানি না, তবে ইন্ডিয়াতে ফাজিয়াকে কেউ জোর জবরদস্তি করে বিয়ে দেবে না, এটুকু বলতে পারি”।

    ইফতিকার বলল, “আমি এই বিষয়ে এখনই কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছি না”।

    সৈকত বলল, “প্রতিটা সেকেন্ড মূল্যবান এখন, সেটা বুঝতে পারছেন? পাকিস্তানী আর্মি ছেড়ে দেবে ভেবেছেন?”

    ফাজিয়া বলল, “আমি এই দেশে থাকব না। এখানে থাকার কোন ইচ্ছে নেই আমার”।

    ইফতিকারের ফোন বাজল। ইফতিকার কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে মাথায় হাত দিল। সৈকত বলল, “কী হয়েছে?”

    ইফতিকার সৈকতের দিকে তাকিয়ে বলল, “ফাজিয়াদের বাড়ি তল্লাশির নামে পুরো খালি করে দেওয়া হয়েছে। নেহাত বিদেশী মিডিয়া আছে, নয়ত এতক্ষণে ও বাড়ি পুড়িয়ে দিত ওরা”।

    সৈকত ফিসফিস করল, “অ্যাজ এক্সপেক্টেড। ওরা গিলগিট সার্চ করবে, একই সঙ্গে মরিয়া হয়ে ফাজিয়াকে খুঁজে বেড়াবে। আমাদের হাতে সময় খুব কম… খুব”।

    ফাজিয়া বলল, “ওরা আমাদের বাড়িটাকেও পুড়িয়ে দেবে?”

    হামিদ বলল, “ওরা এ কাজটা খুব ভাল পারে”।

    ফাজিয়া দুহাতে মুখ ঢাকল।

    খালেদ বলল, “আমাদের কাছে কিছু আর ডি এক্স থাকলে ওই টানেলের ভিতরে রেখে দিয়ে আসা যেত। সময় থাকলে সেটা করতাম নিজের হাতে”।

    সৈকত বলল, “সেটা না করে ভালই করেছো। রক্তপাতহীন নিঃশব্দ এক্সট্রাকশান এখন অবধি। এখন অবধি পাকিস্তান জানে না কারা এই কাজটা করেছে। তবে জেনে যাবে। আমাদের হাতে খুব কম সময় আছে”।

    খালেদ বলল, “দাসু থেকে মুজফফরাবাদ হয়ে ইন্ডিয়ায় ঢুকবেন? সব থেকে টাফেস্ট রুট। সামান্য ভুলচুক হলে কেউ বাঁচবেন না”।

    সৈকত বলল, “না। মুজফফরাবাদ থেকে ফাজিয়াকে ইন্ডিয়াতে ঢুকানো অসম্ভব। ইসলামাবাদ ছাড়া আর কোন অপশন এই মুহূর্তে নেই। ইলিয়াসভাইকে ফোন করুন। বেশ কয়েকদিন গা ঢাকা দিতে হবে আমাদের”।

    ইফতিকার ইলিয়াসের নাম্বার ডায়াল করল।

    ২৯

    রাত সাড়ে দশটায় ইলিয়াস খান বাড়িতে ঢুকল। হোটেল থেকে রাতের খাবার খেয়ে এসেছে।

    বাড়ির তালা খুলে ঘরে ঢুকে ইলিয়াস টিভি চালাল। সব ক’টা খবরের চ্যানেল ঘুরে আশ্বস্ত হওয়া গেল যে এখনো কেউই বাইরের কারো হাত আছে বলে ব্যাখ্যা করে নি। ফাজিয়ার কোন গোপন প্রেম আছে কি না সে সংক্রান্ত গবেষণা চলছে। ইয়াসির হুসেন মিডিয়ায় জানিয়ে দিয়েছে কী কী চক্রান্ত হতে পারে তা নিয়ে পাক আর্মি বিস্তারিত পর্যালোচনা করছে।

    রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত টিভি দেখে ইয়াসির টিভি বন্ধ করে তার ঘরে গেল।

    পোশাক বদলে বাড়িতে তালা দিয়ে গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে বেরোল। খানিকটা যেতেই পুলিশ গাড়ি আটকালো। ইলিয়াস কাঁচ নামাতে পুলিশ জিজ্ঞেস করল, “এত রাতে কোথায় যাচ্ছেন?”

    ইলিয়াস বলল, “নাইটশিফট আছে”।

    পুলিশ আই কার্ড দেখতে চাইল।

    ইলিয়াস দিল। বেশ কিছুক্ষণ সময় নিল।

    ইলিয়াস বুঝল ঘুষ খেতে চাইছে। সে অপেক্ষা করল এরা কী চায় সেটা বোঝার জন্য। সব কাগজ দেখে মিনিট কুড়ি পরে ছাড়া পেল সে।

    বেশ খানিকক্ষণ ড্রাইভ করে ইসলামাবাদের বাইরে এক বস্তিতে গাড়ি দাঁড় করিয়ে অনেকটা রাস্তা হেঁটে একটা ঝুপড়ির সামনে পৌঁছে পিছন ফিরে দেখে নিল তাকে কেউ দেখছে কি না। আশ্বস্ত হয়ে ঝুপড়িতে ঢুকল।

    রাত প্রায় একটা বাজে। তিনজন বয়স্ক লোক এত রাত্রেও তার অপেক্ষা করছিল।

    ইলিয়াসকে দেখে তিনজনই উঠে তাকে আলিঙ্গন করে বলল, “মিশন সাক্সেসফুল, শুভানাল্লাহ”।

    ইলিয়াস বলল, “ওরা ইসলামাবাদেই আসছে। আপনারা এবার বলুন কী চান”।

    একজন বলল, “আমাদের মেয়েকে তেহেরানে নিয়ে যাব। ওখানে নিরাপদে থাকবে”।

    ইলিয়াস মাথা নাড়ল, “অসম্ভব। বালোচিস্তান বা আফগান রুট থেকে ফাজিয়াকে বের করা অসম্ভব। শুধুমাত্র পাক আর্মিই নয়, বেশ কয়েকটা সংগঠন ফাজিয়াকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমাদের ইন্ডিয়া রুট ইউজ করতে হবে”।

    বয়স্ক মানুষ তিনজনই অসন্তুষ্ট হলেন। ইলিয়াস বেশ কয়েকক্ষণ তাদের বোঝাল পাকিস্তান থেকে ফাজিয়াকে পশ্চিম দিক থেকে বের করা কতটা কষ্টসাধ্য কাজ।

    একজন বৃদ্ধ অনেকক্ষণ তার দাড়িতে হাত বুলিয়ে বললেন, “ইন্ডিয়া থেকে তেহেরানে পাঠানো যাবে?”

    ইলিয়াস বলল, “হ্যাঁ। অনায়াসে”।

    “তাহলে তাই হোক। কিন্তু ইন্ডিয়াতে কে নিয়ে যাবে?

    ইলিয়াস বলল, “সেটা আমি দেখছি কী করা যায়। আমাকে এখন ইজাজত দিন। আমি ফিরব”।

    তিনজনের অনুমতি নিয়ে ইলিয়াস বেরোল। গাড়ির কাছে এসে চারদিক দেখে গাড়িতে উঠে আবার নিজের বাড়ির দিকে গাড়ি নিয়ে এগোল। গাড়ির মিউজিক সিস্টেমে হালকা গান বাজছে। রাতে একবারেই ট্রাফিকের ঝঞ্ঝাট নেই। ইলিয়াসের বাড়ি পৌঁছতে বেশি দেরী হল না। বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করানোর ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে তার বাড়ির সামনে একটা জিপ এসে দাঁড়াল।

    ইলিয়াসের হৃদ স্পন্দন বেড়ে গেলেও প্রাণপণে মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা চালিয়ে গেল সে।

    “এত রাতে কোথায় গেছিলেন? আপনার ডিউটি তো রাত দশটাতেই শেষ হয়েছে”।

    আলী গাড়ি থেকে নামল।

    ইলিয়াস বলল, “একটা কাজে বেরিয়েছিলাম”।

    আলী সিগারেট ধরাল, “কী কাজে”?

    ইলিয়াস বলল, “ব্যক্তিগত কাজে”।

    আলী বলল, “ওহ। বলা যাবে না?”

    ইলিয়াস মাথা নাড়ল।

    আলী হাসল, “চলুন। অনেক কথা জানার আছে আপনার থেকে। গাড়িটা গ্যারেজে রেখে গ্যারেজে তালা দিয়ে চলুন”।

    ইলিয়াস বলল, “জি জনাব”।

    সে গাড়িতে উঠল। আলী হঠাৎ তার গাড়ির দরজা খুলে তার পাশে বসে বলল, “চলুন। গ্যারেজে না। যেখানে যেতে বলছি চলুন”।

    ইলিয়াস গাড়ি স্টার্ট দিল।

    আলী তার রিভলভার বের করে সেটাকে দেখতে দেখতে বলল, “শহর ছাড়িয়ে চলুন। আমার তাজা হাওয়া দরকার। সারাদিন অনেক পরিশ্রম গেছে”।

    ইলিয়াস প্রাণপণে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করতে করতে গাড়ি চালাতে লাগল। হাইওয়ে ধরে কিছুক্ষণ পরে গাড়ি শহর ছাড়তে আলী বলল, “দাঁড় করিয়ে দিন”।

    ইলিয়াস গাড়ি দাঁড় করাল।

    আলী বলল, “গাড়ি থেকে নামুন”।

    ইলিয়াস নামল।

    আলী বলল, “আপনি শিয়া?”

    ইলিয়াস বলল, “হ্যাঁ”।

    আলী বলল, “গিলগিটের বাসিন্দা?”

    ইলিয়াস মাথা নাড়ল।

    আলী বলল, “আমি আরেকবার প্রশ্ন করছি। ইন্ডিয়ান কনস্যুলেটে আপনি কেন গেছিলেন?”

    ইলিয়াস আগের উত্তরই দিল।

    আলী ফোন বের করল। একটা ছবি বের করে তার দিকে দেখাল, “দেখ, এটা চিনতে পারছিস?”

    ইলিয়াস দেখল তার আর র চিফের ছবি। ছ’ মাস আগে র চিফ ইসলামাবাদে এসেছিলেন সরকারি কাজে।

    আলী বলল, “কতদিন লাগল সত্যিটা বের করতে? কতদিন লাগল? আমাদের গাধা বলে মনে হয়?”

    ইলিয়াস উত্তর দিল না।

    আলী বলল, “হাঁটতে শুরু কর। পিছনে ফিরবি না। যা। তোর গাড়িটা আমি নিলাম। গদ্দারির টাকায় কেনা গাড়ি তো, আমার কাজে লাগবে”।

    ইলিয়াস হাঁটতে শুরু করল।

    আলী ইলিয়াসের দিকে বন্দুক তাক করে বলল, “জাহান্নামে যা…”

    ইলিয়াস হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। আলী হো হো করে হাসতে হাসতে বলল, “হয়ে গেল? ইন্ডিয়ান স্পাই কুত্তা? দম বেরিয়ে গেল তো? পাকিস্তানীর সামনে পড়লে তোদের এই অবস্থাই হয়। সব তেল বেরিয়ে যায়, শালা কুত্তা”। আলীর কথা শেষ হবার আগেই ইলিয়াস তার জুতোয় লুকিয়ে রাখা রিভলভার বের করে নিখুঁত নিশানায় আলীর পায়ে গুলি করল।

    আলী প্রস্তুত ছিল না। তীব্র যন্ত্রণায় পড়ে গিয়ে কাতরাতে লাগল।

    ইলিয়াস দৌড়ে এসে আলীর রিভলভারটা লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দিল।

    আলী গজরাতে লাগল, “তুই বাঁচবি না। দেখে নেবো তোকে আমি”।

    ইলিয়াস আলীর মুখ সজোরে লাথি কষাল। আলী ছিটকে পড়ল।

    আলী কাতরাতে শুরু করল এবার। ইলিয়াস বলল, “জাহান্নামে গিয়ে মাথার চুল ছিড়িস, একা একা আমাকে নিয়ে বেরিয়েছিলি ভেবে”।

    আলীর কপাল লক্ষ্য করে গুলি চালাল ইলিয়াস। বুলেট আলীর তৃতীয় নয়নের মাঝখান দিয়ে ঢুকল।

    ইলিয়াস সময় নিল না। নিস্তব্ধ রাস্তায় তার গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিল।

    আস্তানা বদলের সময় এসেছে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগোলোকপুরের পরশ পাথর – অভীক দত্ত
    Next Article যারা ভেবেছিল ওরা ফ্লাইওভারে ছিল – অভীক দত্ত

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }