Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    রাত নিঝুম – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত এক পাতা গল্প174 Mins Read0

    ২৪. ধাঁধার উত্তর

    ধাঁধার উত্তর

    কিরীটীর ডাকে সুব্রতর ঘুমটা ভেঙ্গে গেল-ওঠ হে সুব্রত রায়। জাগো, আঁখি মেল।

    ওঠ বন্ধু মুখ ধোও পর নিজ বেশ।
    গরম চায়েতে মন করাহ নিবেশ।

    সুব্ৰত চোখ মেলে দেখলে কিরীটীর হাতে এক কাপ ধূমায়িত গরম চা, মাঝে মাঝে সে আরাম করে চুমুক দিচ্ছে।

    সুব্রত তাড়াতাড়ি সলজ একটু হোেস শয্যা ছেড়ে উঠে বসল।

     

    একটু পরে দুই বন্ধু তখন বাইরের ঘরে বসে গত রাত্রির ঘটনার আলোচনা করছে। সিঁড়িতে জুতার শব্দ শোনা গেল।

    কিরীটী হাসতে হাসতে বললে, শ্ৰীধর ওরফে আমাদের রাজু আসছেন—

    সত্যি সত্যিই রাজু এসে ঘরে প্রবেশ করল।

    উৎকণ্ঠায় সে যেন হাঁপাচ্ছে। ঘরে ঢুকেই একটা চেয়ারের উপর ধাপ করে বসে পড়ে বলে। তারপর? এখন সব বল।

    কি ধাঁধার উত্তর তো?

    হ্যাঁ।

    এই নে। কিরীটী একটুকরো ভাঁজ করা কাগজ রাজুর সামনে এগিয়ে ধরল। অধীর আগ্রহে ভাঁজ করা কাগজটা রাজু খুলে ফেলল।

    ১ নম্বর—বোতাম : –ম +

    ২ নম্বর-ছয় বৎসর : –শ’ +

    ৩ নম্বর–চিঠি ও ফটো : শ + ম

    ৪ নম্বর–চিঠি : —শ—ম +

    ৫ নম্বর–কাটা আঙ্গুল : -ম + +

    ৬ নম্বর–পোড়া সিগারেট :–ম + +

    (ক) করালী চরণ : শ+ / ম++
    (খ) ছেলে চুরি : শ + / ম + + / ?

    খানিকক্ষণ কাগজটার উপর চোখ বুলিয়ে রাজু বিস্মিতভাবে কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলে, এ আবার কী?

    ঐ তো তোমার আগাগোড়া সমস্ত রহস্যের মীমাংসা।

    ধাঁধার উত্তর।

    বুঝিয়ে দে।

    তবে বলি শোন, কিরীটী সিগারেটের টিন থেকে একটা সিগারেট নিয়ে তাতে অগ্নি সংযোগ করতে করতে বলতে শুরু করল।

    শশাঙ্কমোহনের খুড়তুত ভাই হচ্ছে মৃগাঙ্কমোহন। আমরা উইলের ব্যাপারে জানি যে শশাঙ্ক মোহনের বাপ যে উইল করে যান তার অর্থ এই, শশাঙ্কমোহনের যদি ছেলে হয় তবে সে সম্পত্তি পাবে আর যদি মেয়ে হয় তবে অর্ধেক পাবে সেই মেয়ে আর বাকী অর্ধেক পাবে মৃগাঙ্গমোহন নিজে কিম্বা তার ওয়ারিশগণ। মৃগাঙ্গমোহন যেদিন জানতে পারলেন যে দাদার সন্তান হবে তিনি মনে মনে এক অভিসন্ধি করলেন, যদি ছেলে হয় তবে সে ছেলেকে হত্যা করে অন্য একটি মেয়েকে সেখানে বদলে রাখতে হবে। আর যদি মেয়ে হয় তবে তো কোন কথাই নেই। সব ল্যাটা চুকে যায়। কারালীচরণ ছিল চৌধুরী বাড়ির পুরাতন চাকর। সে একদিন সহসা সন্ধ্যার অন্ধকারে মৃগাঙ্গমোহনের ঘরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে মৃগাঙ্কমোহনকে একজন লোকের সঙ্গে চুপিচুপি পরামর্শ করতে শোনে এবং সব কথাই তার কানো যায়।

    মৃগাঙ্কমোহনের সঙ্গে ইতিপূর্বে আরো দু’একবার সেই লোকটি এসে পরামর্শ করেছে। তাও করালীচরণের নজর এড়ায়নি। কারালী কোন দিন মৃগাঙ্কমোহন কে দু’চোখে দেখতে পারত না। মৃগাঙ্ক যে সে কথা জানত না তা নয়। পুরানো চাকর হিসেবে চৌধুরী বাড়ির উপরে করালীর বেশ একটু আধিপত্যই ছিল। শশাঙ্ককে ঐ করালীই কোলে পিঠে করে একপ্রকার মানুষ করেছিল। সেইজন্যই মৃগাঙ্ক করালীর প্রতি সন্তুষ্ট না থাকলেও কিছু বলতে সাহস করত।

    এই পর্যন্ত বেশ সোজা-সরল একটি ষড়যন্ত্র। তারপরেই ব্যাপারটা জটিল হয়ে গেল।

    কি রকম? সুব্রত প্রশ্ন করে।

    সেই কথাই এবারে বলব, কিরীটী বলতে লাগল।

    স্থানীয় লেডী ডাক্তার ডাঃ মিস মল্লিকা সরখেলের সঙ্গে মৃগাঙ্কমোহনের রীতিমত একটা হৃদ্যতা ছিল, মল্লিকা মৃগাঙ্গকে বিয়ের জন্য তাকে বহুবার বলেছে কিন্তু মৃগাঙ্ক কান দেয় নি। অবশেষে মৃগাঙ্ক বললে-বিভাবতী তার বৌদি, সন্তান সম্ভাবিতা। ছেলে হবার সময় সুনিশ্চিত তার ডাক পড়বে। সেই সময় যদি একটি পুত্ৰ সন্তান হয়—এবং মল্লিকা সদ্যজাত সেই শিশুটিকে কোন মতে হত্যা করে সরিয়ে দিতে পারে তাহলে তাদের পথ পরিষ্কার। তাদের বিয়ে হতে পারে।

    বলিস কি?

    তাই, তবে মল্লিকা তখনো জানতে পারেনি মৃগাঙ্ক লোকটা কতবড় শয়তান!

    তা একথা জানালি কি করে তুই?

    মল্লিকাই জানায়!

    মল্লিকা!

    হ্যাঁ–একটা চিঠি দিয়েছিলাম তাকে-।

    তারপর।

    সে এখন শিলংয়ে ডাক্তারী করে। যাই হোক তারপর শোন-মৃগাঙ্কমোহন ডাঃ মল্লিকার সঙ্গে পরামর্শ করলেন ছেলে হলে মেরে ফেলতে হবে আর অন্যদিকে করালী দাঁইয়ের সঙ্গে গোপন পরামর্শ করে স্থির করে মৃগাঙ্কের দৃষ্টি থেকে বাঁচাবার জন্য সে দাইয়ের সাহায্যে সেই নবজাত শিশুটিকে আঁতুড় ঘর থেকে সরিয়ে ফেলবে-হত্যা করতে কিছুতেই দেবে না। যদি শশাঙ্কমোহনের ছেলে হয়, আর মেয়ে হলে তো ল্যাটাই নেই কোন।

    তারপর?

    এদিকে মৃগাঙ্কমোহনের প্রস্তাবে সম্মত হলেও ডাঃ মল্লিকা হাজার হলেও স্ত্রী-লোক মায়ের জাত-মনে মনে সে স্থির করে যদি ছেলেই হয় তো হত্যা করবে না, তাকে সরিয়ে ফেলবে-আর তাকে সাহায্য করবার জন্য দাইকে বলবে। দাই-মঙ্গলার ঐ কথা শুনে তো ভালই হলো। কারালীর সঙ্গে যে পরামর্শ হয়েছে সে কথা তাকে সে তখন বললে।

    হাতের সিগ্রেটটা নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। একটা নতুন সিগ্রেটে অগ্নি সংযোগ করে আবার কিরীটী তার অর্ধসমাপ্ত কাহিনী শুরু করে।

    যথা সময়ে সন্তান হলো-দাই মঙ্গলা ডাঃ মল্লিকার সঙ্গে পরামর্শ করে পূর্বাহ্নেই স্থির করে রেখেছিল ছেলে হলে সরিয়ে ফেলবে। কিন্তু ভগবানই হলেন ওদের সহায়-মেয়ে ও ছেলে দুই হলো।

    তার মানে?

    শ্ৰীলেখা, পানুর যমজ বোন।

    সে কি!

    হাঁ—আগে পানু পরে শ্ৰীলেখা জন্মায়। পানুর জন্মের প্রায় পয়ত্রিশ মিনিট পরে শ্ৰীলেখা জন্মায়। মৃগাঙ্গকে ডাঃ মল্লিকা জানাল শশাঙ্কর মেয়ে হয়েছে আর ছেলেটিকে সে সরিয়ে দিল দাইয়ের সাহায্যে মঙ্গলারই ঘরে।

    মঙ্গলার ঘরে।

    হাঁ, মঙ্গলার কোন সন্তানাদি ছিল না। সেই পানুকে বুকে তুলে নিল এবং মঙ্গলার বুকের মধ্যে পানু বড় হতে লাগল করালী ও মঙ্গলার তত্বাবধানে–

    তারপর–

    কিন্তু করালী বেশী দিন পানুকে মঙ্গলার কাছে রাখতে সাহস পায় না-সে তখন সরিয়ে দেয় পানু অর্থাৎ সুধীরকে হরমোহিনী আশ্রমে ডাঃ মল্লিকারই সাহায্যে। এবং সেখানে দিয়ে আসবার সময় করালী বুদ্ধি করে একটা কবচের মধ্যে ওর সত্যিকারের নাম ও পরিচয়টা লিখে হাতে বেঁধে দেয়। ঐ ঘটনার কিছুদিন পরেই মঙ্গলার মৃত্যু হয়। কারালীচরণ মধ্যে মধ্যে যেত হরমোনিহী আশ্রমে এবং সুধীরের খোঁজ খবর নিয়ে আসত—। পানু বা সুধীর বড় হতে লাগল অনাথ আশ্রমে আর শ্ৰীলেখা মা-বাবার কাছে। এমনি করেই চলছিল—তারপরই আকাশে দেখা দিল দুর্যোগের কালো মেঘ।

    কি রকম? সুব্রত শুধায়।

    কিরীটী আবার বলতে শুরু করে : ডাঃ মল্লিকা তারই ঠিকানা দিয়ে অনাথ বলে করালীর সাহায্যে পানুকে নিয়ে গিয়ে আশ্রমে ভর্তি করে দিয়েছিল আগেই বলেছি। হঠাৎ একদিন সুধীর আশ্রম থেকে অদৃশ্য হলো—সঙ্গে সঙ্গে আশ্রমের সুপারিনটেনডেন্ট চিঠি দিয়ে মল্লিককে কথাটা জানাল। ইতিমধ্যে মল্লিকার সঙ্গে মৃগাঙ্কর সমস্ত সম্পর্ক ছেদ হয়ে গিয়েছিল। মল্লিকা শিলংয়ে চলে গিয়েছিল সেও বলেছি। ডাঃ মল্লিকা সংবাদটা পেয়ে ভয় পেলে গেল এবং শ্ৰীপুরে সবকথা জানিয়ে করালীকে চিঠি দেয়।

    চিঠি?

    হ্যাঁ—সেই চিঠি দুৰ্ভাগ্যক্রমে পড়ল গিয়ে মৃগাঙ্কর হাতে সম্ভবতঃ ছয়বছর পরে অকস্মাৎ একদিন আর এই প্রথম মৃগাঙ্কের মনে সন্দেহ জন্মায় ঐ চিঠি পড়ে।

    মৃগাঙ্ক করালীকে চেপে ধরে।

    প্রথম লোভ দেখায়-তারপর ভয়-কিন্তু কিছুতেই মৃগাঙ্ক করালীকে যখন বাগে আনতে পারল না-সেই সময় শেষ চেষ্টা করার জন্য মৃগাঙ্ক এক রাত্রে করালীর ঘরে গিয়ে হাজির হলো।

    মৃগাঙ্কর গায়ে ঐ সময় একটা কালো রঙের ওভারকোট ছিল—পাছে তাকে কেউ না দেখে হঠাৎ চিনে ফেলে।

    তারপর আমার অনুমান দুজনার মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় ও উত্তেজনার মুহূর্তে হয়ত ভোজালি দিয়ে করালীচরণকে আঘাত করে মৃগাঙ্কমোহন। এবং সম্ভবতঃ আঘাত খেয়ে পড়বার সময় করালী মৃগাঙ্ককে জাপটে ধরতে যায় বা কিছু, মৃগাঙ্কর জামার একটা বোতাম ছিঁড়ে করালীর মুঠির মধ্যে থেকে যায়।

    করালীকে ঐ ভাবে নিষ্ঠুরের মত হত্যা করবার ইচ্ছা মৃগাঙ্কমোহনের ছিল কি ছিল না কে জানে, তবে করালীচরণ নিহত হলো মৃগাঙ্কমোহনের হাতেই, মৃত্যু ছিল বোধহয় তার মৃগাঙ্কমোহনের হাতেই। কিন্তু করালীর মৃত্যুতে মৃগাঙ্কমোহন ভয় পেয়ে গেল। এবং ভয় পেয়ে ব্যাপারটা হত্যা নয় আত্মহত্যা বলে চালাবার চেষ্টা করল। সেই কারণেই মৃতের হাতে ভোজলীটা গুজে দেয় এবং বারবার বলতে থাকে ব্যাপারটা হত্যা নয় আত্মহত্যা।

    সুব্রত প্রশ্ন করে, মৃগাঙ্কমোহনকে কি তুই আগেই সন্দেহ করেছিলি?

    হ্যাঁ—তবে প্রথমটায় নয়-কিছুদিন তদন্ত চালাবার পর–ওর প্রতি সন্দেহটা বদ্ধমূল হয়।

    কেন?

    চারটি কারণে তার উপরে আমার সন্দেহ জাগে। (১) করালীর হাতের মুঠিতে বোতাম-ঐ বোতামটার ব্যাপারে আমি রাজুকে অনুসন্ধান করতে বলি-বোতামটা ওকে দিয়ে। (২) রাজু খুঁজতে খুঁজতে মৃগাঙ্কমোহনের জামাটা আবিষ্কার করে,-মৃগাঙ্কমোহনেরই ঘরে একটা বইয়ের আলমারীর মধ্যে দালামোচড়া অবস্থায়। নিশ্চয়ই বইয়ের আলমারী জামা রাখার, বিশেষ করে অত দামী গরম কোট একটা রাখবার জায়গা নয়, সেটাও যেমন একটা সন্দেহের কারণ তেমনি বোতামটাও অবিশ্যি প্ৰথমে আমার মনে সন্দেহের উদ্রেক করেছিল–দামী সৌখীন বোতাম সচরাচর বড় একটা চোখে পড়ে না। (৩) মৃগাঙ্কমোহনের করালীর মৃত্যুটা আত্মহত্যা প্রমাণ করবার বিশ্ৰী চেষ্টাটা। (৪) মৃগাঙ্কর চিঠির ভাঙ্গা ‘S’ ও ‘b’ টাইপ দুটো।

    তারপর? এরপরে সুধীরের ইতিহাসে আসা যাক। সুধীর বা পানুর বাপ শশাঙ্কমোহন জানতেন না দীর্ঘদিন পর্যন্ত তার ছেলের ব্যাপারটা। প্রথম জানতে পারলেন পাঁচবছর আগে সুধীর অকস্মাৎ হরমোহিনী আশ্রম থেকে নিরুদ্দিষ্ট হবার পর। এবং জানতে পারেন তিনি ডাঃ মল্লিকার চিঠিতে। ডাঃ মল্লিকাই একটা চিঠিতে সব কথা—এমন কি কবচোর কথাটাও জানায় ও একটা গ্রুপ ফটো ওদের পাঠিয়ে দেয়। বলাই বাহুল্য শশাঙ্কমোহন এবার রীতিমতো বিচলিত হলেন এবং নিরুদ্দিষ্ট ছেলের সন্ধান করতে লাগলেন গোপনে গোপনে। পাছে মৃগাঙ্ক ব্যাপারটা জেনে ফেলে এই ভয়ে গোপনে অনুসন্ধান করতে লাগলেন-এমনি করে ছয়টা বছর আরো কেটে গেল-তারপর অকস্মাৎ একদিন দৈবক্রমে মল্লিকার চিঠিটা মৃগাঙ্কর হাতে পড়ল। মৃগাঙ্ক এই প্রথম আসল ব্যাপারটা জানতে পারেন-সো করালীকে চেপে ধরল-যার ফলে করালী ঘটনাচক্রে হলো মৃগাঙ্কর হাতে নিহত।

    অতঃপর আমাদের অকুস্থানে আবির্ভাব। করালীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে শশাঙ্কমোহন ফিরে এলেন শ্ৰীপুরে… বুঝলেন মৃগাঙ্ক সব জেনে ফেলেছে। অতএব কি করবেন স্থির করতে না পেরে–একেবারে বোবা হয়ে গেলেন যেন।

    কিন্তু মৃগাঙ্কমোহন তখন মরিয়া-সে চিঠি দিল আমাকে ইংরাজীতে টাইপ করে-মৃগাঙ্ক তার নিজের টাইপ রাইটিং মেসিনে টাইপ করে চিঠি দেয়—যে মেশিনের দুটো অক্ষর বড় হাতের ‘S’ ছোট হাতের “b” টা ছিল ভাঙ্গা-মৃগাঙ্কমোহনের বিরুদ্ধে মোক্ষম ও সর্বশেষ প্ৰমাণ। মৃগাঙ্ক বুঝেছিল অন্য কেউ না পারলেও আমরা হয়ত সুধীরের সন্ধান করতে পারব। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তার এতটুকুও সন্দেহ ছিল না-আর সেই কারণেই সে আমাকে করালীর হত্যার ব্যাপারেও অনুসন্ধান করবার জন্য ডেকে নিয়েছিল। অর্থাৎ আমাকে ডাকা ও পরে চিঠি দেওয়া দুটোর মূলেই ছিল সুধীরের অনুসন্ধান পাওয়া।

    কিন্তু কি করে তুই নিঃসন্দেহ হয়েছিলি যে মৃগাঙ্কই চিঠি দিয়েছে তোকে?

    বললাম তো-কিরীটী বলতে থাকে, হত্যানুসন্ধানের ব্যাপারে মৃগাঙ্ক মোহনের অত্যধিক আগ্রহ দেখে-তাছাড়া ঐ চিঠির মধ্যে উইলের কথা ছিল সেটাও মনে আমার সন্দেহের উদ্রেক করে। অতঃপর বুঝতে পারি ঐ ছেলে চুরি, উইল ও সর্বশেষ করালীচরণের হত্যা—সব এক সূত্ৰে গাঁথা। একটি অখণ্ড মালা। তবু নিশ্চিন্ত হবার জন্য ধূর্জন্টীর ছদ্মবেশে শশাঙ্কমোহনের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম শ্ৰীপুর এবং শশাঙ্কমোহনের সঙ্গে কথার ভাবেই আমি বুঝলাম যে, মৃগাঙ্কমোহনই আমায় চিঠি দিয়েছে। কেননা ষড়যন্ত্রকারী একজনের নাম জানতে গিয়ে আমি মৃগাঙ্কর নাম একটা ক্লিপে লিখে ওঁকে দেখিয়েছিলাম। সেই নাম দেখে শশাঙ্কমোহনের মুখের ভাব একেবারে বদলে গেল।

    এদিকে আমি চলে আসবার পর রাজু শশাঙ্কমোহনের দরজায় আমার ইসারা মত ‘কি হোল’ দেখতে গিয়ে শশাঙ্কমোহনের আলমারী তন্নতন্ন করে খোঁজা ও মুখের একটা অস্ফুট কথা শুনতে পায়। সেটা হচ্ছে, আশ্চর্য। চিঠির এই advertisement (বিজ্ঞাপন) ব্যাপার নিয়ে যে নানা রকম গোলমাল বাঁধতে পারে তা আমি জানতাম। পরিচয়ের আসল নিদর্শন কবচটি ও তার মধ্যেকার পরিচয় লিপি জোগাড় করা সম্ভব হবে না। হলও তাই। যে একজন ঠকাতে এল সে ঐখানেই ঠিকে গেল। আমি প্রথম থেকেই প্রথম সুধীর ‘জাল’ জেনেও কোন উচ্চবাচ্য করিনি—তার কারণ মৃগাঙ্কর মনে সুধীরকে পাওয়ায় কী পরিবর্তন দেখা দেয় সেটা পরীক্ষা করে দেখবার জন্য।

    তারপর যা যা ঘটে এবং শ্ৰীরামপুর থেকে আসল সুধীরকে কেমন করে পাওয়া যায়। তাতো তোমরা জানাই।

    সুধীর ফিরে এলে মৃগাঙ্কমোহন যে ক্ষেপে উঠবে তা আমি আগে থেকেই জানতাম এবং এও জানতাম। এবারে সে মরিয়া হয়েই হয়ত শেষ চেষ্টা একবার করে দেখবে। তাই রাজুকে বললাম, মৃগাঙ্কর উপর কড়া পাহারা দিতে।

    মৃগাঙ্ক নকল ও আসল সুধীরের গোলমালে পড়ে প্রথমটায় একটু হকচকিয়ে গেল। কিন্তু মীমাংসার সমাধান যখন হয়ে গেল, সে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে এল।

    একদিন হঠাৎ এক খোঁড়া ভিখারী জমিদার বাড়িতে ভিক্ষা করতে এল। মৃগাঙ্কমোহন দয়া পরবশ হয়ে একটা গোটা কাপড় ভিক্ষুককে দান করে বসলেন, যার হাত দিয়ে ইতিপূর্বে কখনও একটা আধলাও গলেনি।

    রাজুর মনে কেমন একটু সন্দেহ হওয়ায় সে ভিক্ষুককে অনুসরণ করল। ভিক্ষুক বরাবর স্টীমার ঘাটে এসে টিকিট কিনে স্টীমার চেপে বসল।

    রাজুও কাল বিলম্ব না করে স্টীমারে গিয়ে চাপল।

    এই পর্যন্ত বলে কিরীটী থামল। বললে : এখন এই পর্যন্ত। বাকী দুপুরে বলব।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅশান্ত ঘূর্ণি (অখণ্ড) – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    Next Article কিরীটী অমনিবাস ১১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    Related Articles

    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ১২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    কিরীটী অমনিবাস ৪ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কিরীটী অমনিবাস ১ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ১৩ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025

    কিরীটী অমনিবাস ২ – নীহাররঞ্জন গুপ্ত

    September 8, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.