Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    রামায়ণের উৎস কৃষি – জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

    জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এক পাতা গল্প204 Mins Read0

    ০৫. রাম নামের উৎস – পঞ্চম প্রকরণ

    ০৫. পঞ্চম প্রকরণ – রাম নামের উৎস

    রাম শব্দটি সম্পর্কে ডঃ সুকুমার সেন যে বক্তব্য রেখেছেন সেই উদ্ধতি তুলে আলোচনা শুরু করা যেতে পারে।

    “ভাববাচক ‘রাম’ শব্দটি-ক্লীবলিঙ্গ ‘রামন্‌’ রূপে—প্রাচীন ইরাণ ঐতিহ্যে—আবেস্তার—শান্তি ও প্রসন্নতার দেবভাব অর্থে পাওয়া যায়। মনে হয় ‘রাম’ এই ব্যক্তি নামটি ইরাণী (বা তন্নিকটস্থ দেশীয়) সূত্রেই আমরা পেয়েছি। ব্যক্তি নাম হিসাবে ‘রাম প্রথম আমরা পাচ্ছি ঐতরেয় ব্রাহ্মণে— ‘রাম মার্গবেয়’। মার্গবেয় কথাটির কেউ অর্থ বা ব্যুৎপত্তি দেন নি। মনে হয় শব্দটি এসেছে ‘মগু” এই স্থান-নাম থেকে। ইরাণের আকামেনীয় রাজাদের অধিকারে এই নামে একটি প্রদেশ ছিল এবং সে প্রদেশের রাজধানীরও এই নাম ছিল। আবেস্তায় নামটি পাই মোউরু (M০uru) রূপে। পরে নামটি দাঁড়ায় মের্ব (Merv)। এস্থানে আরবেরা খোরাসানের রাজধানী করেছিল। ……সুতরাং মনে হয় ইরাণ ও আশপাশ থেকেই শান্তি ও প্রসন্নতার ভাবটি রাম নামকে ঘিরে জমাট বেধে এখনে এসেছিল।” (১)

    “রাম নামটি দুদিক দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। ১। রাত্রির মতো, মেঘের মতে রং যার, এমন পুরুষ। ২। শান্তি, বিশ্রাম। ……প্রথম অর্থে ‘রাম’ উদ্ভূত প্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয় ‘রে’ ধাতু থেকে, যার থেকে সংস্কৃতে এসেছে রামী, রাত্রী। দ্বিতীয় অর্থে রাম (রামন্‌) শব্দ এসেছে প্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয় রেম (সংস্কৃত রম্) ধাতু থেকে, অর্থ আরাম কর।”(২)

    “রাম শব্দের এক অর্থ হল, কালো বড় পাখি, কাক (কাঠকগৃহাম্ এ)। ”(৩)

    ঐতরেয় ব্রাহ্মণের ‘রাম মার্গবেয়’ শব্দের “মার্গবেয় এই বংশ নামটি এসেছে ‘মৃগবা’ ‘মার্গবা’ (স্ত্রীলিঙ্গ) অথবা ‘মৃগব’ ‘মার্গব’ (পুং লিংগ) থেকে। স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ দুটির ব্যবহার মেলেনি, তবে পুংলিঙ্গ, দুটি শব্দের ব্যবহার পাওয়া গেছে। ‘মৃগব’ হল লক্ষের মতো এক নিদিষ্ট বৃহৎ সংখ্যা (বৌদ্ধ সংস্কৃতে প্রাপ্ত), আর ‘মার্গব’ হল এক মিশ্রজাতির নাম (‘নিষাদ’ ও ‘অয়োগব’ জাতির মিশ্রণে; মনুসংহিতা)।”(৪) অয়োগব হল শূদ্র হতে বৈশ্যায় জাত সন্তান বা সংকীর্ণ জাতি বিশেষ। (মনুসংহিতা ১০. ১২)। নিষাদ হল ব্রাহ্মণ হতে শূদ্র কন্যার জাত সন্তান বা জাতি বিশেষ। (মনুসংহিতা ১০.৮)। মার্গব শব্দে কৈবর্ত জাতি বুঝায়। (মনুসংহিতা ১০. ৩৪)। এরা নৌকর্মজীবী।

    ‘রাম’-কৃষ্ণ (ঋগ্বেদ ১০ ৩৩, সায়ণ)। রাম অর্থ প্রিয়।

    এবার প্রচলিত আভিধানিক অর্থগুলির সংকলন করা যেতে পারে। (ক) রা শব্দে বিশ্ব এবং ম শব্দে ঈশ্বর; রা এর (বিশ্বের) ম (ঈশ্বর), ষষ্ঠী তৎপুরুষ। (খ) ণিজন্ত রম্ বা রমি (রমণ করা বা রত করান) + ণ কর্তৃ; যিনি রমার সঙ্গে রমণ করেন, বা যিনি কার্যে রত করান। (গ) রমায় ইনি এই অর্থে রমা (লক্ষ্মী) + ষ্ণ। (ঘ) রম্ (রত হওয়া) + ঘঞ অধি; যাহাতে সকলে রত হয়। (ঙ) বরুণ, মৃগ বিশেষ। বিশেষ্য, পুংলিঙ্গ। উপরোক্ত সকল ক্ষেত্রেই রাম শব্দটি পুংলিঙ্গ; রামঃ।

    রাম শব্দটি ক্লীবলিঙ্গ হলে রামম্, অর্থ হয় বাস্তুকম্‌, কুষ্ঠম্‌, তমালপত্রম্‌। আর রামঃ শব্দটি ত্রিলিঙ্গ অর্থে মনোজ্ঞ, সিতঃ, অসিতঃ। আরবী ভাষায় একটি শব্দ আছে রামা (পুংলিঙ্গ) যার অর্থ নিক্ষেপকারী। কিন্তু সংস্কৃতে ‘রামা’, শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ; অর্থ উৎকৃষ্ট স্ত্রী, হিঙ্গু, নদী, গোরোচনা, গৈরিক, অশোক।
    আবেস্তার ‘রামাহুর’ শান্তির দেবতা ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলে ‘রামাসুর’। প্রথম ক্ষেত্রে দেবতা, অপর ক্ষেত্রে অসুর। ঋগ্বেদের রামাসুর পর্জন্যপত্নী সীতার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সম্পর্কবিহীন। সুতরাং রামায়ণের রামের সঙ্গে এই রামাসুরের কোন সম্পর্কই টানা যায় না। রাম শব্দটি বিশেষণ হলে অর্থ হয় মনোহর, রমণীয়, শুভ্র, ‘রমণস্থান’।

    রাম শব্দটির যত রকমের অর্থ ও ইংগিত পাওয়া যায় তার ভিত্তিতে বলা যায়,– (১) শব্দটি অবৈদিক, (২) মিশ্রজাতির প্রতি ইংগিতবহ এবং (৩) মেঘ নির্দেশক।

    রমায় (কৃষিশ্ৰী সীতা, লক্ষ্মী) ইনি, অর্থাৎ ফসল লাভের মূল উৎস মেঘবর্ষণ দেবতা।

    যিনি রমার সঙ্গে রমণ করেন, অর্থাৎ কর্ষিত জমির সঙ্গে মেঘবর্ষণের সংযোগ।

    যিনি কার্যে রত করান, এই অর্থে মেঘের আগমনে বৰ্ষাঋতু মানুষকে ফসল উৎপাদনের কাজে লিপ্ত করে। এই ঋতুতে উদ্ভিদজগতের পুষ্টি সাধন হয়।

    প্রচও গ্রীষ্মের পর মেঘের আবির্ভাব শান্তি বা আরাম প্রদান করে। রাত্রির মতো কালে রং মেঘের, কালে বড় পাখির মত মহাকাশে মেঘ আবির্ভূত হয়।

    রাম অর্থে বরুণ অর্থাৎ জলদেবতা, মেঘের রূপান্তর মাত্র। রাম অর্থ সিত, অসিত। মেঘের দুটিই স্বরূপ। বর্ষার মেঘ অসিত আর শরতের মেঘ সিত। সুতরাং সকল অর্থেই রাম শব্দে মেঘ-দেবতাকে নির্দেশ করা যায়।

     

    রামায়ণের রামের দেবত্বের বিস্তার বেদের কৃষিশ্রী লক্ষ্মীর ভর্তা মেঘ-দেবতাকে অবলম্বন করে। এইটি রামকথার মূল উৎস। এই প্রাথমিক রামকথা তথা মেঘ-দেবতার করুণ। বর্ষণকে উপলক্ষ্য করে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন কালে বিভিন্ন রূপে রামকাহিনী গড়ে উঠেছে দাবী করা যায়। এগুলির মধো বাল্মীকি রচিত ‘পৌলস্ত্য বধ’ তথা রামায়ণ শুধু প্রাচীনতম নয়, সুষ্ঠুভাবে গ্রস্থিত,—যদিও এই মহাকাব্য রহস্যধৰ্মী।

    রাম প্রসঙ্গে একটি বিশেষণ পাওয়া যায় ‘মার্গবেয়’। মৃগব শব্দটি মৃগ শব্দ হতে উদ্ভূত হতে পারে। তুলনীয়,-মালব, মাল + ব অস্ত্যৰ্থে। অতএব মৃগব শব্দে মৃগ (মৃগশির) নক্ষত্র সংশ্লিষ্ট অর্থ হয়। সুতরাং মার্গবেয় শব্দে জ্যোতিবিজ্ঞান নির্ভরশীল কৃষিতত্ত্বের ইংগিত গ্রহণ করা যায়। মৃগশির নক্ষত্রে বাসন্ত-বিষুব হলে ঐ নক্ষত্রে পূর্ণিমায় অগ্রহায়ণ মাসে শারদ বিষুব। প্রাচীনকালের বৃষ্টিনির্ভরশীল কৃষিকাজের উল্লেখযোগ্য অধ্যায় দুই বিষুবর মধ্যবর্তী ছয়মাসকাল। সুতরাং মেঘদেবতাকে মার্গবেয় সম্বোধন করা অথবা রূপকে ঐ শব্দ ব্যবহার করা অসংগত নয়। মৃগশিরা নক্ষত্রে বাসন্ত-বিষুব কালে অগস্ত্য তারার উদয় হত। সুতরাং অগস্ত্য তারার সঙ্গে মৃগশিরা নক্ষত্রর সম্পর্ক স্থাপন করার সম্ভাবনা থাকে। অগস্ত্য তারার উদয় অনুসরণ করে যে গোষ্ঠীর জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রিত হত, অর্থাৎ কৃষিজীবী এবং নৌকর্মজীবী তারা মার্গবেয় নামে পরিচিত হতে পারে। অগস্ত্য তারাকে দিব্যনৌকা বলা হয়েছে।(৫)

    মার্গবেয় শব্দে নৌকর্মজীবী কৈবর্ত জাতিকে বুঝান যায়।

    সুতরাং মার্গবেয় বিশেষণ ব্যবহার করে বাসন্ত-বিষুব সংক্রান্ত অর্থ ইংগিত করা হয়েছে। অতএব রামের সঙ্গে বাসন্ত-বিষুবর সম্পর্ক ছিল নিশ্চয়ই।

    রামের বিশেষণ মার্গবেয় বৈদিক কালের স্মৃতি বহন করে আনছে। সেইকাল হতে বর্তমান কাল পর্যন্ত মৃগশিরা নক্ষত্রে সূর্যর অবস্থানের সঙ্গে বর্ষা ঋতুর আগমনবার্তা এবং ঐ নক্ষত্রে চন্দ্রের অবস্থানে চান্দ্রমাস অগ্রহায়ণের সঙ্গে বর্ষার অবদান ফসলের সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। আর এই দুয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হল মেঘদেবতা রাম বা পর্জন্য বা ইন্দ্র। বৈদিক যুগ হতে কৃষিশ্রী জড়িয়ে রয়েছে ঋতুচক্রের সঙ্গে নক্ষত্রমণ্ডলে সূর্য ও চন্দ্রের অবস্থান নির্ভর করে।

     

    রাম শব্দ অ-বৈদিক, আবেস্তার রামাহুর হতে আগত মেনে নেওয়ার যুক্তি আছে। শব্দটির নানা অর্থের সঙ্গে বলা যায় মূল সংস্কৃত শব্দ ‘রামা’র (লক্ষ্মীর) পুংলিঙ্গে ‘রাম’ শব্দটি গ্রহণ করা যেতে পারে। ফলে সংস্কৃতের রাম এবং আবেস্তার রামাতুরের চরিত্রগত কোন পার্থক্য ঘটে না। পণ্ডিতগণের মতে প্রথমে বেদ-পন্থী এবং আবেস্ত-পন্থীগণ এক ছিল। কালক্রমে দু’টি স্বতন্ত্র ধারায় পরিণত হয়। উভয় পন্থীর বাসস্থানের ভৌগলিক অবস্থানও বিশেষ লক্ষণীয়। ভারতের উত্তর-পশ্চিমপ্রান্তে একদা যে বৈদিক সভ্যতার উন্মেষ হয়েছিল সেই ধারা পরবর্তীকালে পূর্বমুখী হয়ে হিমালয়ের দক্ষিণ সানুদেশ ও গঙ্গার উত্তরে প্রসার লাভ করে। অপর দিকে বর্তমান ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত আবেস্তাপন্থীগণ ধীরে ধীরে সরে গেল আরও পশ্চিমে ইরাণ, পারস্য, মিশর অঞ্চলে। এই দুই পন্থীদের গতিপ্রকৃতি এবং ভৌগলিক অবস্থান অনুসরণে প্রাচীন ভারতের প্রথম কৃষিভিত্তিক সিন্ধু সভ্যতার উপর বেদের তুলনায় আবেস্তার বেশী প্রভাব ছিল মানতে হয়। সিন্ধু সভ্যতার একটি ধারা দক্ষিণ ও মধ্যভারত তথা বিন্ধ্যপর্বতের পথ ধরে পূর্বগামী হওয়া খুবই স্বাভাবিক। সিন্ধু সভ্যতার সমুদ্র-বাণিজ্যপথে এই ধারা পূর্বভারতীয় অঞ্চলে প্রসারিত হওয়াও বিচিত্র নয়। প্রাচীন ব্রাত্য-সভ্যতার ছড়িয়ে থাকা নিদর্শনগুলি একথার প্রমাণ দেয়, যার সঙ্গে ‘সিন্ধু’ সভ্যতার বিশেষ সাদৃশ্য রয়েছে।

    যেকালে সাগরগামিনী সরস্বতী শ্রেষ্ঠা নদী ছিল, সে ঋগ্বেদের কাল। আর সেই কালে বর্তমান ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম-ভাগ অবশ্যই উর্বর পাললিক ভূখণ্ড ছিল। সেখানে গড়ে উঠেছিল কৃষিভিত্তিক সিন্ধু সভ্যতা।

    বৈদিক সভ্যতার উচ্চাবচ এলাকার আবহাওয়া, জীবনধারণ পদ্ধতি ও ধর্মচিন্তা সব কিছুই দক্ষিণের পাললিক ভূখণ্ড এলাকা হতে সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রথমটিতে অরণ্য সম্পদ, পশুপালন ও শিকার ছিল মুখ্য। শীতের প্রকোপে অগ্নি প্রধান উপাস্য। ধর্ম ও জীবনধারা যজ্ঞ-কর্মে নিয়ন্ত্রিত। বর্ষাকাল অভিশাপ স্বরূপ। কিন্তু দক্ষিণে সিন্ধু সভ্যতায় প্রধান উপজীব্য কৃষি, যা মেঘদেবতার করুণার উপর নির্ভরশীল। সুস্বাদু পানীয় জল এবং প্রচুর ফসলের আশা পূর্ণ হয় সুসম বর্ষণে। সুতরাং রাম তথা রামা তাদের প্রধান উপাস্য হওয়া স্বাভাবিক। আরবী ‘রামা’ অর্থে নিক্ষেপকারী, মেঘ হতে করুণ স্বরূপ বারিধারা বর্ষণকারী। যেখানে নিম্নচাপ সেখানে মেঘ আর যেখানে মেঘ সেখানে বর্ষণ। তাই রাম ধনুর্ধারী; ধনু অর্থ চাপ।

    রাম তথা রামার এই ভাবনা-চিন্তা সত্ত্বেও মাতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিতে ধরিত্রী প্রধানা। কারণ কর্ষণযোগ্য জমি বৃষ্টিকে ধারণ না করলে চাষ হয় না। কৃষি সম্পর্কে এই চিন্তাধারা বৈদিক চিন্তাধারার সমান্তরালে পূর্বদিকে প্রসারিত হয়ে একীভূত হয়েছে মনে হয়। তখন সরস্বতী নদী লুপ্তপ্রায়, গঙ্গা নদী প্রাধান্য পেয়েছে। উর্বর জমিতে মানবসমাজ স্থিতিশীল হয়ে কৃষিনির্ভর জীবনে অভ্যস্ত হয়েছে। নতুন ধারায় সভ্যতার নবজন্ম ঘটেছে।

    ঋগ্বেদের কালের মতো তখন মৃগশিরা বা রোহিণী নক্ষত্রে বাসন্ত-বিষুব ছিল না, আরও পিছিয়ে কৃত্তিকার প্রথম পাদ বা ভরণীর শেষ পাদে পৌঁছেছে। তবু বেদ-পন্থীদের কর্মযজ্ঞে পুরাতন সূক্ত ধ্বনিত; কিন্তু ব্রাত্যজনের কণ্ঠে মেঘবন্দনার লৌকিক গীতি; রাম-বন্দনা। আরও পরে বাল্মীকি এই লোকগীতির সুর ও ছন্দের সংস্কার করে তার ‘পৌলস্ত্যু বধ’ গীতিকাব্যর বাহ্যিক কাঠামো রচনা করেন, যদিও রহস্যে মূল ইতিহাস ব্যক্ত করেছেন। ফলে বেদের সীতা অবৈদিক ‘রামা’ তথা রামের ভার্যা হল। মৃগশিরা নক্ষত্রে বাসন্ত-বিষুব হয় না, তাই মার্গব বিশেষণ বর্জিত হল। নতুন বিশেষণ রাঘব, দাশরথি, কাকুৎস্থ ইত্যাদি গৃহীত হল। এই শব্দগুলির অর্থও সূর্য সম্পৰ্কীয়।

    বীণাতন্ত্রীলয়ে পাদবদ্ধ ছন্দে রাম এলেন, জয় করলেন, বন্দিত হলেন। সকল গুণের আধার রামের যতগুলি বিশেষণ নারদ-বাল্মীকি কথোপকথনে উল্লেখ করা হয়েছে, সবগুলিই মেঘদেবতার প্রতি প্রযোজ্য। সুতরাং রাম নামের উৎস আদিম কৃষি-সভ্যতার মেঘদেবতা, যিনি আদিতে হয়ত রাম নামে বন্দিত হতেন। কৃষি ভিত্তিক সভ্যতায় মেঘ শ্রেষ্ঠ দেবতা। অতএব কৃষিকাজের মধ্যে সুদূর অতীতের স্মৃতি বিজড়িত রাম নামের উদ্ভবের সন্ধান পাওয়া যায়।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশুনছ, কোথাও আছো কি কেউ?
    Next Article জিম করবেট অমনিবাস (অখণ্ড) – মহাশ্বেতা দেবী সম্পাদিত
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.