Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    সুখের সন্ধানে – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    অপেক্ষবাদের অ, আ, ক, খ – বারট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    রুদ্র – খাদিজা মিম

    খাদিজা মিম এক পাতা গল্প239 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    রুদ্র – ৪৫

    ৪৫

    সুরভীর বাসার নিচে গাড়ি নিয়ে পৌঁছুতেই রুদ্র দেখলো সুরভীকে ধরাধরি করে সিএনজিতে তুলছে ওর বাবা, চাচাতো ভাইয়েরা। বিলাপ করে বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁদছে সুরভীর মা।

    — “আমার মেয়ে মরে গেছে। ছেড়ে চলে গেছে আমাকে!

    গাড়ির ভেতর থেকে সুরভীর নিথর দেহটা দেখলো রুদ্র। সমস্ত পৃথিবী বুঝি ওখানেই শেষ তার। একটা আঙুল নাড়াবার শক্তিও আর তার নেই। গাড়ির সিটে শরীরের সমস্ত ভার ছেড়ে দিলো সে।

    বিড়বিড় করে বললো,

    — “শেষ!”

    মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো শুভর। দৌড়ে সে নেমে এল গাড়ি থেকে। সি এন জির কাছে যেতেই সুরভীর বাবা কঠিন হুঁশিয়ারী দিলেন তাকে,

    — “দূরে থাকো। এক পা এগোবে না আমার মেয়ের কাছে।”

    — “আংকেল রাগ করার সময় এটা না, উনাকে হসপিটাল নিতে হবে।”

    — “মেয়েকে এই বুকে রেখে বড় করেছি, বাকি পথটাও আমিই দেখবো। সরো সামনে থেকে।”

    সুরভীকে নিজের কোলে শুইয়ে সিএনজি নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন শরীফ সাহেব। আবারও গাড়িতে ছুটে এল শুভ। তাদের পিছু হসপিটাল যেতে হবে তাকে।

    স্তব্ধ রুদ্রের কাঁধ চাপড়ালো শুভ,

    — “ভাইয়া, বেঁচে আছে এখনো!”

    শুভর কথায় মাথা তুলে বসলো রুদ্র।

    — “ওর মা যে তখন বলছিল!”

    — “জানি না কেন বলেছে? কিন্তু আছে এখনো। কিছু হবে না। সময়মতো পৌঁছাতে পারলেই চলবে।”

    — “সত্যি করে বলো?”

    — “সত্যি বলছি!”

    পথ যেন আজ ফুরোচ্ছেই না! মনে প্রাণে সৃষ্টিকর্তার দুয়ারে ফরিয়াদ জানাচ্ছে সে, “কোনোদিন যদি পূণ্য করে থাকি, সেই সমস্ত পূণ্যের বিনিময়ে হলেও ওকে ফিরিয়ে দাও। ওকে ফিরতেই হবে! আমাদের সমাপ্তি এভাবে হতে পারে না। কোনোভাবেই না।”

    ৪৬

    রাত পেরিয়ে ভোর হয়েছে। সুরভীর জ্ঞান এখনো ফেরেনি। পুরো রাত জায়নামাজ ছাড়েননি দুই মা। আকুল হয়ে স্রষ্টার দুয়ারে একটা প্রার্থনাই করে গেছেন, সুরভীর প্রাণ ভিক্ষা। অবজারভেশন রুমের বাইরে গোটা রাত অপেক্ষা করেছে ছয়জন মানুষ- রুদ্র, শুভ, সুরভীর বাবা, চাচা আর চাচাতো ভাইয়েরা। এক মুহূর্তের জন্যও নড়েনি কেউ। চোখের সামনে পিশাচটাকে অসহ্য ঠেকলেও সয়ে গেছেন শরীফ সাহেব। মেয়ের এই সংকটাবস্থায় বাকবিতন্ডা নিরর্থক তার কাছে। সারারাত সুরভীর মাথার কাছে বসে ছিল দু’জন ডাক্তার। ঘুমোয়নি তারাও। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নির্দেশ এসেছে তাদের উপর।

    ফজরের নামাজ শেষে যখন আকাশে ভোরের আলো ফুটতে লাগলো, সেই মুহূর্তে স্রষ্টা ফিরিয়ে দিলেন সুরভীকেও। চোখ মেলেছে ও। ভেতর থেকে খবর আসতেই রুদ্র ছুটতে চাইলো সুরভীর কাছে।

    তার সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন শরীফ সাহেব।

    — “আমার মেয়ের গায়ে তোমার ছায়াও আমি দেখতে চাই না। পুরো রাত তোমাকে আমি সহ্য করেছি। আর না! চলে যাও তুমি।”

    পুরো রাতের এতখানি মানসিক চাপের পর শরীফ সাহেবের এই বাঁধা অসহ্য ঠেকলো রুদ্রের। সুরভীকে দেখার জন্য মরছে সে। আর এদিকে এই লোকটা কিনা বলছে চলে যেতে! সম্পর্ক ভুলে বেঁকে বসলো সে।

    — “যাবো না, এখানেই থাকবো।

    রুদ্রের গালে চড় কষালেন শরীফ সাহেব। রাগে পুরো শরীর কাঁপছে তার বড্ড শীতল প্রতিক্রিয়া জানালো রুদ্র,

    — “মেরেছেন? শান্তি এখন? সরুন এবার। আপনার সঙ্গে এই মুহূর্তে সিন ক্রিয়েট করতে ভালো লাগছে না আমার। সুরভীর কাছে যাবো আমি।”

    — “তোকে ওর জীবনে আবার দেখার চেয়ে ওর মৃত্যু মেনে নেয়া সহজ আমার কাছে।”

    নিজের কন্ঠনালীতে আঙুল চেপে ধরলো রুদ্র। চোয়াল শক্ত হয়ে এসেছে তার। শরীফ সাহেবের মুখের কাছাকাছি ঝুঁকলো সে,

    — “আপনার মেয়েকে দেখার জন্য এইখানে নিঃশ্বাস আটকে আছে আমার। কেমন যন্ত্রণায় আছি বুঝতে পারছেন আপনি? বাড়াবাড়ি করবেন না। নয়তো তান্ডব হবে আজ!”

    এগিয়ে এল শরীফের সাহেবের ছোট ভাই। কানে কানে বললো,

    — “ও মানুষ সুবিধার না। ভেতরে যেতে দিন। আমাদের মেয়ে এখনো অসুস্থ, এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। নতুন করে ওর উপর চাপ পড়বে এমন কিছু করা যাবে না।”

    থেমে গেলেন শরীফ সাহেব।

    রুমে ঢুকেই ডাক্তারদের বেরিয়ে যেতে ইশারা করলো রুদ্র। সুরভীর পাশে এসে বসলো সে। সুরভীর হাত টেনে নিজের গালে মেশালো। তার চোখের পানিতে ভিজে যাচ্ছে সুরভীর হাত। চোখ মেললো সুরভী। নিস্তেজ চোখ জোড়া রাজ্যের সমস্ত শীতলতা নিয়ে চেয়ে আছে তার চোখে। ওর চাহনী বুকে বিঁধলো রুদ্রের। মুখে কিছু না বলেও কত কী বলে দিচ্ছে ওর চোখ দু’টো।

    কাঁপা স্বরে সে বললো,

    — “এভাবে তাকিও না প্লিজ! ভেঙে গুঁড়িয়ে যাচ্ছি আমি।”

    ম্লান হাসলো সুরভী।

    — “নোংরা চেহারাটা দেখতে এসেছো রুদ্র?

    সুরভীর মাথার কাছ থেকে সরে ওর পায়ে মুখ গুঁজলো রুদ্র। ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। খানিকবাদে পা সরিয়ে নিলো সুরভী। কথা বলতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ওর। তবুও নিজের সঙ্গে জোর করেই বললো,

    — “চলে যাও রুদ্র।

    — “যাবো না আমি।”

    — “আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমাকে তুমি আর দেখতে চাও না। আমি সেটা মেনেই বেরিয়ে এসেছি। তোমার সামনে আমি এক মুহূর্তের জন্যও দাঁড়াতে চাই না। তোমাকে এই নোংরা চেহারা দেখানোর চেয়ে মরে যাওয়া সহজ!”

    শ্বশুরের কথার পুনরাবৃত্তিই করলো তার স্ত্রী। যে কথা শুনে শ্বশুরের উপর সে চড়াও হয়েছিল, সেই একই কথায় পুরো পৃথিবীটাই যেন অন্ধকার হয়ে এল তার। সুরভীর কণ্ঠের শীতলতা, এভাবে মুখ ফিরিয়ে কথা বলা, স্পষ্ট তাকে জানান দিচ্ছে সে তাকে আর চায় না। চিরতরে সরে যেতে চাইছে তার কাছ থেকে।

    সুরভীর কাছে উঠে এল রুদ্র। ওর গলায় মুখ গুঁজে কাঁদছে ভীষণ।

    ফোঁপাতে ফোপাঁতে সে বললো,

    — “তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে সুরভী? তুমি আমাকে দূরে ঠেলে দিলে আর কোথায় যাবো আমি? কে আমাকে সামলাবে?”

    — “দূরত্ব তুমি চেয়েছো।”

    — “মাফ করে দাও না! আমার মাথা কাজ করছিল না তখন! তুমিই না বলো আমাকে ভালোবাসো। আমি না বলতেই আমার সব কথা তুমি বুঝে ফেলো! আমি কেন এমন করলাম একটু বুঝে নাও প্লিজ! এবারের মতো আমাকে মাফ করো।”

    — “আমি তোমাকে আর চাই না। এক মুহূর্তের জন্যও না। তুমি চলে যাও।” দুর্বল শরীরে অবশিষ্ট সমস্ত শক্তি দিয়ে রুদ্রকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলো সুরভী। ওর হাত যতটা না ভারী ছিল তারচেয়ে বেশি ভারী লাগলো ওর অভিমান, ঘৃণা ভরা প্রত্যাখ্যান। ঝাপসা চোখে ওর দিকে তাকালো রুদ্র। সত্যিই তাকে আর সুরভী চাইছে না। তার উপস্থিতি, স্পর্শ সুরভীকে কেমন ভোগাচ্ছে তা সুরভীর চেহারায় স্পষ্ট পড়তে পারছে রুদ্র।

    শেষবারের মতো তবুও একবার জানতে চাইলো সে,

    — “সত্যিই আর চাও না আমাকে? একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো তুমি?”

    — “চাই না। আমাকে মুক্ত করো এবার।”

    স্তব্ধ হয়ে সর্বহারার মতন রুদ্র চেয়ে রইলো সুরভীর দিকে। আজকের এই দিনটা, এই মুহূর্তটা কি মৃত্যু যন্ত্রণাকেও হার মানাচ্ছে না?

    অসুর রূপে বেরিয়ে এল রুদ্র। ভেতরে ফেলে এল তার আরেক সত্ত্বাকে যার মাঝে এখনও ভালোবাসা, মায়া, আবেগ, বিবেক বিদ্যমান। হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে রুদ্র শুভকে বললো,

    — “কাল সকালের মধ্যে দু’টো লাশ আমার চাই।”

    — “হয়ে যাবে।”

    — “সুরভী আমাকে আর চায় না।”

    — “যা কিছু ঘটেছে উনার জন্য কঠিন ছিল, সময় দিন। আস্তে ধীরে সামলে নেয়া যাবে সব।”

    — “পারবো না। সুরভীর চোখে আমার জন্য ঘৃণা দেখেছি আমি। ওর চোখে ঘৃণা সয়ে প্রতি মুহূর্তে মরার চেয়ে, একেবারে মরে যাওয়া ভালো। কিন্তু আমি তো মরতে চাই না শুভ। ওকে নিয়ে আরো বহুবছর বাঁচার আছে আমার!”

    — “সব হবে। ধৈর্য্য ধরতে হবে কিছুদিন।”

    — “আজ একটু আগে যা দেখেছি, যা শুনেছি তারপর আর একদিনও অপেক্ষা করবো না আমি। আমার সুরভীকে আমি আমার সঙ্গে চাই, আজই চাই ব্যস! কাল সকালের সূর্য ওকে ছাড়া আমি দেখতে চাই না।”

    — “জোর করতে গেলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।”

    — “জোর কে করবে? কেউ জোর করবে না ওকে। ও ফিরবে ওর নিজের ইচ্ছেতে।”

    — “কিভাবে?”

    জবাব দিলো না রুদ্র। গাড়িতে বসেই ইকবাল মাহমুদ আর রাষ্ট্রপতি সাইফুল ইসলামকে কল কনফারেন্সে নিয়ে এল সে।

    ৪৭

    গালে হাত রেখে বসে আছেন রাষ্ট্রপতি। অপেক্ষায় আছেন প্রধানমন্ত্রী আপত্তি জানাবেন সেই আশায়। অথচ তাকে চমকে দিয়ে ইকবাল মাহমুদ পুরো পরিকল্পনায় সায় দিয়ে দিলেন।

    হতাশ ভঙ্গিতে তিনি রুদ্রকে বললেন,

    — “বয়স হয়েছে। চোখের সামনে নয়জনকে গুলি করে ঝাঁঝরা করা হবে, সেটা দেখে সুস্থ থাকা সম্ভব না।”

    ভ্রু কুঁচকালো রুদ্র।

    — “যুদ্ধ করেছেন, গুলিও খেয়েছেন। ছাত্র রাজনীতি করা কালীন সময়ে গোলাগুলিও করেছেন।”

    — “তখন রক্ত গরম ছিল। এখন তো বয়স হয়েছে রে বাবা। আমাকে এই প্ল্যান থেকে বাদ দাও না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আনো। ওর বুকভরা সাহস।”

    — “আপনাকেই লাগবে।”

    প্রধানমন্ত্রী বললেন,

    — “প্ল্যান যা করছে একটু ভয়ংকর বটে, তবে ব্যাপার না। দু’চারটা কেউটে মারতে গেলে একটু দুঃসাহস দেখাতেই হয়। আমারই ভুল হয়েছে। পানি মাথায় চড়ার আগেই সামলানো উচিত ছিল।”

    — “চাইলে ওদেরকে বাসা থেকে তুলে এনে টুকরো করে সমুদ্রে গায়েব করে দিতে পারতাম। কিন্তু তাতে আমার বউ তো ফিরে আসবে না।”

    হাসলেন রাষ্ট্রপতি। ইকবাল মাহমুদের পিঠে খোঁচা মেরে বললেন,

    — “এই ছেলে যখন ছোট ছিল, গিয়েছিলাম ওদের বাড়ি। দেখি রোমান্টিক গানে তাল মিলিয়ে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে হেলেদুলে হাঁটছে। তখনই ওর বাবাকে বলেছিলাম, এই ছেলে বড় হয়ে মজনু হবে। আশরাফ আমাকে পাত্তাই দিলো না! হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। বেঁচে থাকলে ওকে বলতাম, ভুল হয়েছে আমার। তোমার ছেলে মজনু না, মজনুর বাপ হয়েছে!”

    ফিক করে হেসে ফেললেন ইকবাল মাহমুদ।

    — “গুরুতর মুহূর্তে আপনার রসিকতার স্বভাব গেল না সাইফুল ভাই!”

    কপাল থেকে ভাঁজ সরছে না শুভর। জীবনে ভয়ংকর কত কান্ড একাই সামলেছে সে। অথচ আজ জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর দায়িত্বটাই যে রুদ্র সঁপে দিলো তার হাতে!

    বোঝার সুবিধার্থে পুরো পরিকল্পনা আবার আউরাতে লাগলো রুদ্র,

    — “আবার বলি, মন দিয়ে শুনুন। হাবিব আর আজগর দু’জনকেই ইকবাল আংকেল কল করবে। আমি নেগোশিয়েট করতে চাচ্ছি সেই বাহানায় আজগরের নরসিংদীর ফার্ম হাউজে দেখা করতে বলবে। মন্ত্রী পরিষদ নিয়ে আলোচনার কথা বললে ওরা কখনোই ইকবাল আংকেলের ডাক ফেরাবে না। কারণ ওদের ডিমান্ডই মন্ত্রীত্ব। তার উপর সঙ্গে থাকবে সাইফ আংকেল। ওদের বারণ করার প্রশ্নই আসে না। আমরা সবাই যাবো সেখানে। যার যার বডিগার্ডও থাকবে সেখানে উপস্থিত। হাবিব আর আজগরের সঙ্গে এখন শুধু একজন করে বডিগার্ড থাকে। দু’জনের সঙ্গে আমার বডিগার্ড সুমনকে পাঠাবো বাইরে খাবার, হার্ড ড্রিংকস এসব আনতে। এই কাজটা করবে ইকবাল আংকেল। ওরা বেরিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত একেবারেই বুঝতে দেয়া চলবে না পরিস্থিতি সেখানে কী হতে যাচ্ছে। ওরা বেরিয়ে যাবার পর এনকাউন্টার লিস্ট থেকে বাছাই করা সাতজন জঙ্গিকে বাড়ির ভেতর ঢুকানো হবে। তারপরই কল যাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। আমাদের জিম্মি করা হয়েছে। মুক্তিপণ হিসেবে তারা ইকবাল মাহমুদের ক্ষমতা হস্তান্তর চায়। সেইসঙ্গে মিডিয়ার কানেও খবর পৌঁছানো হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রেস কনফারেন্স করবেন। সেখানে তিনি জানাবেন হাবিব আর আজগর জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সংযুক্ত। তাদের হাতেই আমরা এখন জিম্মি। সবশেষে দেখানো হবে পুলিশ এবং র‍্যাবের সম্মিলিত অভিযানে ওরা নয়জন স্পটডেড এবং আমি জঙ্গীদের গুলিতে আহত।”

    — “ঐ নয়জনকে শ্যুট করবে মূলত কারা?”

    — “আজগর, হাবিবকে অবশ্যই আমি। বাকিদের প্রশাসন, আর আমাকে শুভ।” আপত্তি জানালো শুভ।

    — “আমাকে দিয়ে হবে না ভাই। র‍্যাব, পুলিশ যাকে দিয়ে ইচ্ছে হয় করান। আমাকে বাদ দিন।”

    — “মেরে ফেলতে বলিনি শুভ, গুলি করতে বলেছি শুধু।”

    — “এটাই কেন হতে হবে? অন্য কোনো উপায় কি নেই?”

    — “গুরুতর অপরাধের জন্য গুরুতর শাস্তি। আমি যা করেছি ধরে নাও তারই প্রায়শ্চিত্ত!”

    রুদ্রের দিকে চেয়ে রইলেন ইকবাল মাহমুদ। বললেন,

    — “তোমার এই রূপ দেখার ভাগ্য হবে ভাবিনি কখনো! এই গল্পটা আমার মেয়েদের খুব শোনাতে ইচ্ছে করবে। কিন্তু আফসোস, ওদের আমি কিছু জানাতে পারবো না। তবে রুদ্র, মা সবসময় একটা কথা বলতো- নারী এমন জাত, চাইলে পুরুষকে বাদশাহ করতে পারে, আবার রাস্তার মিসকিনও করতে পারে। আজ কথার সত্যতা দেখছি। একটা মেয়ের জন্য রুদ্র কিসব ঘটিয়ে ফেলছে!”

    — “আপনি ইকবাল মাহমুদের কাছে আমি কোনো সুখ পাই না। পাই শুধু টেনশন আর স্ট্রেস। তবুও কত কী করছি! ঐ মেয়েটা আমার জীবনে স্বর্গ নামিয়ে এনেছে, ওকে ধরে রাখার জন্য যত যাই করি সবই তুচ্ছ। এবার যান, আপনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সব বুঝিয়ে দিন। আজগর, হাবিব সামলান। আমি প্রশাসন দেখছি। কালকের সূর্য কোনোভাবেই আমি আমার সুরভীকে ছাড়া দেখবো না। এটাই ফাইনাল!”

    ৪৮

    গুলিতে ঝাঁঝরা হওয়া লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ফার্মহাউজের এখানে সেখানে। বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করছে মিডিয়া, ফায়ার সার্ভিস আর পুলিশ, র‍্যাবের কয়েকটা ফোর্স। পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে পৌঁছেছে র‍্যাবের স্পেশাল ফোর্স। ভেতরে চলছে তুমুল গোলাগুলি। কে বাঁচবে, কে মরবে বাইরের কারো জানা নেই সেই কথা। গোটা দেশের মানুষ চেয়ে আছে টিভির স্ক্রিনে। ঘন্টাখানেক আগে খবর পেয়ে অসুস্থ শরীর নিয়েই হসপিটাল ছেড়ে রুদ্রের বাড়ি চলে এসেছে সুরভী। মা এখানে একা। এই মুহূর্তে আপনজনের সঙ্গ ভীষণ জরুরী! সুরভীকে পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ফেরদৌসী। বারবার গতকাল ঘটে যাওয়া ঘটনা আওড়াচ্ছেন। তার ছেলে ভুল বুঝতে পেরেছে, কষ্ট পাচ্ছে সে কথা বারবার বলছেন। দু’চোখ বেয়ে পানি ঝরছে সুরভীর। শাশুড়ীর হাত চেপে অধীর অপেক্ষায় চেয়ে আছে সে টিভির স্ক্রিনে। রুদ্র বেঁচে ফিরবে তো? গতকাল প্রচন্ড অভিমানে বলা কথাগুলো সত্যি হয়ে যাবে না তো? দূরে চলে যাবে না তো ও?

    — “টাইম ওয়েস্ট হচ্ছে। শ্যুট মি, শুভ।”

    হাত কাঁপছে শুভর। বুক ঢিপঢিপ করছে ইকবাল মাহমুদেরও।

    — “আমাকে দিয়ে হবে না।”

    — “আমাকে মুমূর্ষু অবস্থায় না দেখলে সুরভী গলবে না। বুঝতে পারছো না কেন?”

    — “হচ্ছে না। সত্যিই!”

    — “ধুর!”

    ছোঁ মেরে শুভর হাত থেকে পিস্তল কেড়ে নিলো রুদ্র। নিজের বুক আর কাঁধের মাঝামাঝি গুলি করে নিজেকেই রক্তাক্ত করলো সে।

    দশমিনিট বাদে ভেতর থেকে বেরিয়ে এল রেসকিউ টিম।

    দলের প্রধান ছোট্ট করে ক্যামেরার সামনে জানিয়ে গেলেন,

    — “অপারেশন সাকসেসফুল। সাবেক মন্ত্রী আজগর এবং হাবিবসহ জঙ্গী সদস্য প্রত্যেকে স্পর্টডেড। ভেতরে জিম্মি ব্যাক্তিরা সুরক্ষিত আছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা শাহরিয়ার মির্জা ছাড়া। তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।”

    মিডিয়াকে আর কোনো প্রশ্নের সুযোগ না দিয়েই ভেতরে চলে গেলেন রেসকিউ টিম হেড। হেলিকপ্টার উপস্থিত হয়েছে ফার্মহাউজের পেছনের মাঠে। তাতে করেই ঢাকায় পৌঁছানো হবে আহত রুদ্র, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতিকে।

    টেলিভিশনে লাইভ চলছে পুরো দৃশ্য। পুলিশ এবং র‍্যাবের কড়া নজরদারি পেরিয়েও দু’একজন ক্যামেরাম্যান নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টায় পুরো দৃশ্য সরাসরি পৌঁছে দিচ্ছে টিভির পর্দায়। কান্নায় ভেঙে পড়লো সুরভী। ফেরদৌসীকে আঁকড়ে চিৎকার করে সে বলছে,

    — “ওর কাছ থেকে দূরে যেতে চেয়েছিলাম। ওর মৃত্যু তো আমি চাইনি মা! ও ফিরবে তো?”

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবাতাসে গুনগুন – খাদিজা মিম
    Next Article পৃথিবীর পথে – ম্যাক্সিম গোর্কি (অনুবাদ : খায়রুল আলম মনি)

    Related Articles

    খাদিজা মিম

    বাতাসে গুনগুন – খাদিজা মিম

    August 6, 2025
    খাদিজা মিম

    ইট’স কমপ্লিকেটেড – খাদিজা মিম

    August 6, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Our Picks

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    সুখের সন্ধানে – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    অপেক্ষবাদের অ, আ, ক, খ – বারট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }