Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    সুখের সন্ধানে – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    অপেক্ষবাদের অ, আ, ক, খ – বারট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    রুদ্র – খাদিজা মিম

    খাদিজা মিম এক পাতা গল্প239 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    রুদ্র – ৫

    ৫

    অফিস থেকে সরাসরি শুভর বাসায় চলে এসেছে রুদ্র। সবাই জানে রুদ্র এখন ঢাকার বাইরে। বডি গার্ড দু’জন আর শুভ ছাড়া চতুর্থ ব্যক্তি কেউ জানে না রুদ্র এই শহরেই আছে। যখনই টানা কাজ করতে করতে মানসিক ক্লান্তি চেপে বসে কিংবা তীব্র বিষণ্নতায় মন ডুবে যায় তখনই রুদ্র চলে আসে শুভর ফ্ল্যাটে ২-৩ দিন থাকবে বলে। এই ২-৩ দিনে ফ্ল্যাটের বাইরে সে বেরোয় না। খুব জোর ছাদ কিংবা গলির মাথায় সিগারেটের দোকান পর্যন্ত যায়। নয়তো সারাদিন ঘরেই বসে কাটায়। মা ছাড়া তেমন কারো একটা কলও রিসিভ করে না। খুব জরুরি না হলে ফোন থেকে দূরেই থাকে রুদ্র। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

    রুদ্র আসবে বলে জলদিই বাসায় ফিরে এসেছিল শুভ। পুরো বাসা গুছিয়ে টিপটপ করে রেখেছে সে। বাসার কাছেই এক ভদ্রমহিলা হোমমেড খাবার বিক্রি করে, তাকে খবর দেয়া হয়েছে সেই দুপুরেই। আজ রাতের খাবারটা তার ওখান থেকে সময়মতো এই বাসায় পৌঁছে দিয়ে যাবে।

    শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় এসে বসলো রুদ্র। চারবছর আগে চার বেডের এই ফ্ল্যাটটা শুভকে সে কিনে দিয়েছিল। একা মানুষের জন্য এতবড় ফ্ল্যাটের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। বারবার আপত্তি করছিল শুভ। রুদ্র শোনেনি। বলেছিল, “তোমার মা বোন আসবে মাঝেমধ্যে এখানে বেড়াতে, বিয়ে শাদী হবে একদিন। বারবার তো আর কিনে দেবো না, যা দেয়ার একেবারে দিচ্ছি। শুধু ফ্ল্যাটই না, পুরো বাসা ফার্নিচার দিয়ে সাজিয়েও দিয়েছিল রুদ্রই। বাসাটা এখনও টিপটপ আছে। ব্যাচেলর থাকে এই বাসায় কে বলবে!

    — “ভাই, খাবার চলে এসেছে। আমি টেবিলে সার্ভ করছি। আপনি আসুন।”

    — “সুমন আর মেজবাহকে ডাকো। একসঙ্গে খেয়ে নেই।”

    — “ওরা টেবিলেই আছে।”

    — “আসছি আমি।”

    পুরো টেবিল ভর্তি রুদ্রের প্রিয় সব খাবার। শুভ জানে, রুদ্র অত খাবে না, তবুও সে অর্ডার করেছে। রুদ্র এই বাসায় এলে যত্ন আর আপ্যায়নের কোনো ত্রুটি রাখে না সে। রুদ্র কিছু চাওয়ার আগে যেন সব হাজির থাকে, সেই বন্দোবস্ত করাই থাকে।

    চেয়ার টেনে বসতে বসতে রুদ্র বললো,

    — “আমি কি জামাই? এমন জামাই আপ্যায়ন কেন করো প্রতিবার?”

    — “আমার ভালো লাগে।”

    — “এত কে খাবে?”

    — “যতটুকু খাওয়া হবে হোক, বাকিটা কিছুটা একটা করে নেবো।”

    — “কাল দুপুরে খাবার আনার বা রান্না করার প্রয়োজন নেই, বক্সে করে রেখে দাও। কাল গরম করে খাওয়া যাবে।”

    — “বাসি খাবেন?”

    — “খাবার অপচয়ের কোনো মানে হয় না! বাসি খেলে আমি মরে যাবো না। এসবে আমার অভ্যাস ছিল, তা তুমিও জানো।”

    কথা বলতে বলতে প্রথম লোকমা মুখে তুলতেই কল এল রুদ্রের নাম্বারে। আদনান কল করেছে। সঙ্গে সঙ্গে কল রিসিভ করলো সে।

    — “হ্যাঁ আদনান?”

    — “ভাইয়া…”

    তার কন্ঠ বিমর্ষ শোনাচ্ছিল। ইতিবাচক কিছু শোনার আশা তখন‍ই মিটে গেছে রুদ্রের। আদনানকে জিজ্ঞেস করলো,

    — “খবর কী?”

    — “খুবই খারাপ! আমি ওর কাছে গিয়ে বসতেই পারছি না। কথা বলতে গেলেই পাগলের মতো আচরণ করছে। বারবার বলছে আমি ওকে ঠকিয়েছি। ওকে মেন্টালি আনস্ট্যাবল মনে হচ্ছে। ভয় লাগছে আমার। সুইসাইড এটেম্পট নিয়ে নেবে না তো!”

    — “থ্রেট করছে?”

    — “হ্যাঁ। ও সত্যিই স্ট্যাবল না আপাতত। বাজেভাবে ব্রেনওয়াশ করেছে ওর। “উফ আদনান! কেন যে ফ্যামিলির দিকে খেয়াল রাখো না!”

    — “ওকে এটাও বলেছে, আমি ওর কাছে আসবো। ক্ষমা চাওয়ার মিথ্যে নাটক করবো। যেন ঝামেলায় না পড়ি সেজন্য ওর সঙ্গে আপোষ করার মিথ্যে আশা দেখাবো। ওকে ঘরে তুলতে চাইবো। আসলে এসব আমার ছল চাতুরী। এই যে আমি এসেছি, ও ধরে নিয়েছে আমি ছল করছি।”

    — “সুইসাইড করলে কিন্তু খুব ঝামেলা হয়ে যাবে!”

    — “আমিও বুঝতে পারছি কিন্তু চোখে চোখে কতক্ষন রাখা যাবে? ওয়াশরুমে গিয়ে কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেললে?”

    — “দেখো না আরেকবার! তোমারই তো বউ! কিভাবে বললে কনভিন্স হবে বুঝো না?”

    — “পাল্টে গেছে একদম। ওকে বুঝতে পারছি না আমি! মনে হচ্ছে যেন ও আমাকে আর চাইছে না। এত খারাপ ব্যবহার কখনো দেখিনি আগে।”

    — “ডোন্ট বি হোপলেস! সিচুয়েশন আউট অফ কন্ট্রোল কোনোভাবেই করা যাবে না। সামলাও সবকিছু আদনান!”

    আর কথা বাড়ালো না রুদ্র। বলার মতো আর কিছু ছিলও না। এতটা সময় পেটে খিদে থাকলেও হুট করে খিদেটা মরে গেল।

    শুভ পাশ থেকে জিজ্ঞেস করলো,

    — “সুইসাইড পর্যন্ত গড়াবে?”

    — “সেটাই ভাবছি।”

    — “চোখে চোখে রাখতে হবে আরকি।

    — “আদনান যা বললো মনে হয় মেয়ে আর সেন্সে নেই। কারো মাথায় একবার সুইসাইডাল থট চলে এলে সেটা আর সহজে দূর করা যায় না। এরা সুযোগ বুঝে একটা ঘটনা ঘটিয়েই ফেলে। দোয়া করি, এমন কিছু না হোক। আমার মনে হচ্ছে ওকে ব্রেনওয়াশ মূলত দেয়াই হয়েছে যেন ও সুইসাইড করে। আজগরের খুব সূক্ষ্ম বুদ্ধি। খুন খারাবায় গিয়ে নিজের হাত নোংরা করবে না। অন্যভাবে ফাঁসাবে।”

    — “এই প্রথম আপনার কোনো প্ল্যান এভাবে আটকে দিতে দেখলাম!”

    আর কিছু বললো না রুদ্র। মাথা এভাবে কাজ করা কেন ছেড়ে দিলো কে জানে! এই মুহূর্তে এক সেকেন্ড ব্রেন কাজ করা ছেড়ে দিলেই লস।

    দ্রুত খাবার শেষ করে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো রুদ্র। সিগারেট ধরিয়ে চেয়ে রইলো গ্রিলের বাইরে। দম বন্ধ লাগছে ভীষণ। কোনোকিছুতেই শান্তি নেই, সুখ নেই। নিজের নিঃশ্বাস, নিজের কাছে বড্ড বোঝা লাগছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি চলছে। এই সময়টাতে শীত না নামলেও, খুব একটা গরমও নেই। সুন্দর আবহাওয়া অথচ কী বিষণ্ণ! মন খারাপের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, বুকের ভেতর হাহাকার জাগায়। অতীত স্মৃতি মনে পড়ে। সরল সুখের দিনগুলো হারিয়ে গেছে, আর কোনোদিন ফিরবে না সে কথা বারবার মনে করিয়ে দেয়। যে জীবন সে কোনদিন চায়নি, সেই জীবনই আজ সে যাপন করছে। ক্ষমতা, অর্থ আর রক্তের খেলায় মেতে উঠেছে। অথচ এই জীবনটা তো পাখির মতো হবার কথা ছিল। সরল সুন্দর সুখের হবার কথা ছিল। হলো না। কিচ্ছু হলো না। প্রথমে বাবা হারিয়ে গেল, তারপর নিজেকে হারালো। বাবা কিংবা নিজের এই হারিয়ে যাওয়া সে মেনে নিতে পারে না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে গিয়ে মাঝে মাঝে ভীষণ অস্বস্তি হয়। সে যে আর মানুষ নেই! নিজের সুন্দর সত্তা বিসর্জন দিয়ে অসুর হয়েছে। এই জীবন আর কত দূর লম্বা কেউ কি এসে বলবে তাকে?

    হঠাৎ হঠাৎ তীব্র ঝড় যে উঠে বুকের মধ্যে- কেউ কি এসে সে ঝড় থামাবে? কেউ কি কখনো এসে তার অশান্ত মনটা শান্ত করবে? বেঁচে থাকার কঠিন দিনগুলোকে কি সহজ করবে? মনের সমস্ত কথাগুলো অকপটে বলে দেবার প্রশ্রয় কি দেবে? সব শুনে কি তাকে বুকে আগলে রাখবে, হোক সে ন্যায় কিংবা অন্যায়? সবকিছু সামলে নিয়ে দিনশেষে যখন সে ক্লান্ত হবে তখন কেউ কি তাকে সামলে নেবে? এইসব জঞ্জাল, সব মন্দ এক মুহূর্তের জন্য ভুলিয়ে দিয়ে তাকে আশ্রয় দেবে। আছে কি এমন কেউ? নেই! এমন কেউই নেই। কোথাও কেউ নেই! এ জীবন তাকে এভাবেই বয়ে বেড়াতে হবে মৃত্যু অব্দি।

    ৬

    দুপুরে ঘুমোনোর অভ্যেস নেই রুদ্রের। তবুও আজ কেমন করে যেন চোখ লেগে গেছে তিনটার দিকে। সেই ঘুম ভাঙলো সাড়ে চারটায়। মাথা ব্যথা করছে দুপুরে ঘুমিয়ে। শরীরটাও কেমন ভার লাগছে। হাত-মুখ ধুয়ে নিজের জন্য এক মগ আদা লেবু দিয়ে চা বানালো রুদ্র। এক হাতে সিগারেট, অন্য হাতে চায়ের কাপ নিয়ে এসে দাঁড়ালো বারান্দায়। বাইরে থেকে খিলখিল শব্দের হাসি আর হৈ হুল্লোড়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তিনতলার উপর থেকে নিচে উঁকি দিলো রুদ্র। অ্যাপার্টমেন্টের ঠিক পেছনেই দোতলা বাড়িটার ছাদে তিন সাইজের তিনটা বাচ্চার সঙ্গে একটা বড় মেয়ে ছাদময় ছুটোছুটি করছে। বয়স কত হবে ওর? ২০-২২ হয়তো! এখনও শিশুমন ওকে ছেড়ে যায়নি। নয়তো আজকালকার এই বয়সী মেয়েরা বাচ্চাদের নিয়ে ছাদময় দৌড়ায় নাকি?

    সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো রুদ্র। আশপাশটা দেখছে সে। শুভর বাসার সবচেয়ে সুন্দর ব্যাপারটা হচ্ছে এই গলিটা ঘনবসতি না। উঁচু দালানও তেমন নেই। পুরো গলিতে এই একটা এ্যাপার্টমেন্টই সবচেয়ে উঁচু। বেশিরভাগ বাড়িই দোতলা, কিংবা তিনতলা। প্রত্যেকের বাড়ির চারপাশে একটু করে খালি জায়গা আছে। প্রতিটা বাড়িতে অন্তত একটা করে গাছ আছে। পাখির আনাগোনাও তাই বেশি। বাইরে দেখতে ভালো লাগে। মনে হয় যেন প্রকৃতি এখনও এই শহরে মরে যায়নি। আশপাশের বাড়িগুলোর দেয়ালে, গাছের পাতায় নিজের শেষ আলোটুকু লেপ্টে দিয়ে আজকের মতো বিদায় নেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে সূর্য। মহিলা, বাচ্চারা গলি ধরে হাঁটছে, খেলছে। সাদা মেঘ মাথায় করে পাখিরা দল বেঁধে কিংবা জোড়া বেঁধে ঘরে ফিরছে। চায়ের কাপে চুমুক, আর সিগারেটে টান দিতে দিতে চুপচাপ সেসব দেখছে রুদ্র। ফাঁকে ফাঁকে দেখছে দোতলার ছাদে ওদের ছুটোছুটি। ভালো লাগছে সবাইকে দেখতে। নিজের ছোটবেলা মনে পড়ে যাচ্ছে। আগে বাবার সঙ্গে বাড়ির সামনের রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে বেড়াতো দু’জনে। কখনো প্রতিবেশী বাড়িগুলো থেকে বন্ধুরা আসতো বাসায়। ছাদে কিংবা লনে সবাই মিলে এভাবেই হৈ হুল্লোড় করে ছুটোছুটি করতো। খেলা শেষে সন্ধ্যেবেলায় ঘরে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে মা ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে যেত।

    বলতো, “হাত-পা ঘষে ঘষে সাফ করো। গেঞ্জিটা বদলাও।”

    তারপর ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে নাস্তা সামনে দিতো। সঙ্গে মা-ও বসে খেত। যেদিন বাবা বাসায় থাকতো, সেদিন বাবাও সঙ্গে নাস্তা করতো। অসাধারণ সব মুহূর্ত ছিল। জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া অমূল্য কিছু মুহূর্ত! চা আর সিগারেট শেষ করে উঠে এল রুদ্র। বাইরে তখনও হৈ হুল্লোড় চলছে। আর দেখতে ইচ্ছে করছে না। তার জানা মতে আজ ইন্ডিয়া-পাকিস্তানের ম্যাচ আছে। তা-ই দেখতে বসার ঘরে যাচ্ছে সে। পুরোনো স্মৃতি মনে পড়লেই এভাবে পালাতে থাকে রুদ্র। অন্য কিছুতে ব্যস্ত হবার বাহানা খোঁজে। সুন্দর সেইসব দিনগুলো হারিয়ে গেছে চিরতরে, আর কোনোদিন সুন্দর দিন জীবনে ফিরে আসবে না। সুখী রুদ্রকে আর কোনোদিন সে আয়নায় দেখতে পাবে না, সেই ভাবনা মাথার ভেতর ছুটতে থাকে। গলার কাছে কষ্ট দলা পাকিয়ে নিঃশ্বাস রোধ করে। যন্ত্রণা হয় তার খুব!

    ৭

    — “জরুরি সময়ে যদি এভাবে চলে যাও, তাহলে চলে? তুমিই বলো?”

    — “আমার নিজের ব্যক্তিগত জীবন বলতে কিছু আছে।”

    — “আহা! অবশ্যই আছে। তোমার রিফ্রেশমেন্টের ব্যাপার আছে একটা। বেড়াতে গেছ, ভালো কথা কিন্তু কল দিলে অন্তত রিসিভ করো।”

    — “করলাম তো।”

    দুইদিন পর ইকবাল মাহমুদের কল রিসিভ করলো রুদ্র। ওপাশ থেকে বিরোধী দল, আজগর, মতি ওদের নিয়েই বলে চলছেন তিনি। কথা শুনতে শুনতে আবারও বারান্দায় এসে দাঁড়ালো রুদ্র। মধ্যদুপুর। পেছনের দোতলা বাড়িটা পেরিয়েই চারতলা একটা নীল দেয়ালের বাড়ি। পুরো এলাকায় সাদা, অফহোয়াইট কিংবা পেস্ট কালার বাড়ির ভীড়ে এই একটা বাড়িই আছে একদম ভিন্ন। যে কারো চোখে পড়বেই আলাদাভাবে। প্রতিবার বারান্দায় এসে দাঁড়ালে সবার আগে এই নীল দেয়ালের বাড়িটাতেই না চাইতেও নজর যায় রুদ্রের। এখনও যাচ্ছে। বিশেষ করে ঐ বাড়ির তিনতলার বারান্দায়। ভেজা চুলে লাল জামা পরে একটা মেয়ে এসেছে। কনুইয়ের ভাঁজে তার ভেজা কাপড়। গোসল করে এসেছে মাত্রই। ভালো করে একবার তাকালো রুদ্র। গতকাল বিকেলের মেয়েটাই তো ও! এই বাসায় থাকে বুঝি! ওর দিকে আর মাথা ঘামালো না রুদ্র। চোখ ফিরিয়ে নিলো অন্য দিকে। ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে কথা এখনো চলছে। শুনতে শুনতে অজান্তেই আবার চোখ গেল ঐ বারান্দায়। ভেজা কাপড় সব মেলে দেয়া শেষ ওর। সবশেষে ভেজা গোলাপী রঙের অন্তর্বাস রশির একপাশে পাশে মেলে দিলো ও। মাথায় পেঁচানো তোয়ালেটা খুলে ভালোভাবে চুলগুলো মুছে নিচ্ছে মেয়েটা। চোখ আবারও অজান্তেই ফিরিয়ে অন্যদিকে নিলো রুদ্র। তার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো মেয়েটাকে মুগ্ধ হয়ে কিংবা লোলুপ দৃষ্টিতে দেখতো। কিন্তু রুদ্রের সেদিকে খেয়ালই নেই। আকাশে পাখি উড়ে যাবার দৃশ্যের মতোই এই মেয়েটার অন্তর্বাস মেলে দেয়া, ভেজা চুল মুছে নেয়ার ঘটনাও খুব সাধারণ। এতটা সময় আশেপাশে চোখ ঘুরলেও মনোযোগ সব পড়ে ছিল ফোন কলে, ইকবাল মাহমুদের কথায়। হঠাৎ কেমন বিরক্তি ধরে এল রুদ্রের। বারান্দা থেকে সরে এসে সে বললো, – “আংকেল, সব বিষয়ই কি আমার সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি? এতবছর ধরে রাজনীতি করছেন, বুঝেন তো কোথায় কী করতে হবে!”

    — “তোমার চেয়ে বিশ্বস্ত, বুদ্ধিমান আপাতত কাউকে চোখে পড়ে না আমার।”

    — “আপনি দেখুন কী করবেন। কোনোকিছু প্রয়োজন হলে কল করবেন।

    ইকবাল মাহমুদ বুঝে গেলেন রুদ্রের বিরক্তি। এই ছেলের এই এক সমস্যা! হঠাৎ হঠাৎ কী যে হয়! সব ছেড়ে ছুড়ে বসে থাকে তিনদিন, চারদিন কখনোবা এক সপ্তাহ! রাজনীতির খাতায় নাম লেখানোর পর এভাবে চাইলেই উধাও হওয়া যায় না সে কথা কে বোঝাবে ওকে?

    *****

    — “বুইড়া বাইনচোদ, খুব উড়ছোস, তাই না? এক টানে আকাশ থেইকা মাটিতে আছাড় মাইরা শেষ করমু তোরে।”

    — “দুইদিনের বাচ্চা আমারে থ্রেট করে দেখো!”

    বড্ড কুৎসিত কায়দায় ফোনের ওপাশে হাসছে আজগর।

    — “তোর নবনিযুক্ত মন্ত্রীর বউ তো গলায় দড়ি দিলো রে রুদ্র। খোল খোল, টিভিটা জলদি কইরা খোল!”

    দ্রুত রিমোট হাতে নিয়ে টিভি অন করলো রুদ্র। ব্রেকিং নিউজে সোমার আত্মহত্যার খবর। আরো বিকট শব্দ করে আজগর হাসছে। তার হাসির শব্দে প্রচন্ড রাগে গা রি রি করছে রুদ্রের। হেরে যাচ্ছে সে আজগরের কাছে। কোনো পথ খোলা নেই সামনে। এভাবে কিভাবে সম্ভব! এক পা কবরে পৌঁছে যাওয়া একটা বৃদ্ধ লোকের কাছে হেরে যাবে সে! এত দুর্বল নিজেকে কখনো মনে হয়নি। চোখের সামনে তার গা থেকে ধোঁয়া বেরুতে দেখছে সে। মনের সমস্ত জোর, মাথার ভেতরের সব বুদ্ধি ধোঁয়া হয়ে উড়ে যাচ্ছে, মিশে যাচ্ছে শূণ্যে। মুঠোবন্দি করে ধোঁয়া আটকাতে চাইছে কিন্তু পারছে না। ফ্লোরে পড়ে থাকা মোবাইল থেকে এখনও আজগরের বিকট শব্দের হাসি শোনা যাচ্ছে। অসহ্যরকম দিশেহারা হয়ে নিজের চুলগুলো টেনে ছিঁড়ছে রুদ্র।

    ঠিক খানিকবাদেই ঘাড়ের উপর নরম হাতের শিহরন জাগানো স্পর্শ অনুভব করলো সে। ঘাড় ফেরাতেই দেখতে পেলো, সামনের বাড়ির ঐ মেয়েটা। পরনে কালো পায়জামা, গোলাপী ব্রা! গায়ে আর কিচ্ছু নেই। ভেজা চুলগুলো কাঁধ গড়িয়ে বুকের একপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। ফোঁটা ফোঁটা পানি জমে আছে গলার উপর। সেগুলো ধীর গতিতে নেমে আসছে অন্তর্বাসে চাপানো আধখোলা স্তনের খাঁজে। ওর কাছ থেকে ভেসে আসছে বডিশপের ব্রিটিশ রোজ শাওয়ার জেলের সুবাস। কাম ভরা দৃষ্টিতে মেয়েটা চেয়ে আছে তার চোখে। ঐ চোখে তাকে একান্ত নিজের করে পাবার, এই শরীরের লোমে লোমে ছুঁয়ে দেখার তীব্র বাসনা দেখতে পাচ্ছে রুদ্র। আসন পেতে বসে ছিল সে। শিকারী বেড়ালের ন্যায় ধীর গতিতে হাঁটুতে ভর করে তার কোলে, দু’পাশে পা ছড়িয়ে বসলো মেয়েটা। একঝটকায় ভেজা চুলগুলো বুকের উপর থেকে পিঠে সরাতে গিয়ে, রুদ্রের চোখে-মুখে সজোরে ঝাপটা লাগলো। চোখ বুজে ফেললো রুদ্র। নিজেকে হারাতে বসেছে সে। আজগর, ইকবাল মাহমুদ, দল, ক্ষমতা, মা, বাবা, বাসার ঠিকানা, ফোন নাম্বার সব ভুলে গেছে সে। ভুলে গেছে তার নামটাও! কোলে চড়ে বসা এই মোহিনীর কাছে সব খুইয়ে বসেছে সে। কখন যেন শার্টের বোতাম খুলেছে মেয়েটা! টের পায়নি একদম। তার লোমশ বুকে হাত বুলিয়ে দিতেই টের পেলো সে কথা। মেয়েটা টেনে নিলো তার হাতও। রাখলো স্তনের খাঁজে, যেখানটায় পানি গড়িয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছিলো। কেঁপে উঠলো রুদ্র। চোখ বুজে রইলো তখনও। ওর চোখের পাতায় আলতো হাতে ছুঁয়ে দিয়ে বললো,

    — “চোখ মেলে দেখো আমাকে! আমাদের এই মুহূর্তকে।”

    চোখ খোলার সাহস তবুও হলো না রুদ্রের। হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে নিঃশ্বাস গাঢ় হতে লাগলো তার। চোখ না মেলার দায়ে মেয়েটার বিরক্তির কারণ হলো সে। চোখ বুজেও সে কথা দিব্যি টের পাচ্ছে। ঠিক তার পরমুহূর্তেই বুকের লোমে খামচে ধরে, টেনে নিজের বুকের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো মেয়েটা। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে শুষে নিতে চাইলো পুরো তাকেই। চোখ মেললো রুদ্র অথচ কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছে না। মেয়েটার আগ্রাসী চুমুতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তার। এক চুমুতেই কি নিঃশ্বাসের অভাবে মরণ হবে তার? অস্থির হলো রুদ্র। শত চেষ্টায়ও নিজেকে ছাড়াতে পারছে না সে। বুকের লোম টেনে রেখেছে এখনো। বুকের ঠিক মধ্যখানো, চামড়ায় ব্যথা লাগছে বেশ। চুমুতে হাঁপিয়ে উঠছে সে। নিঃশ্বাস ফুরিয়ে আসছে।

    কানের কাছে ফোন বাজতেই লাফিয়ে উঠলো রুদ্র। এসি চলছে মাথার উপর। তবুও ঘেমে ভিজে গেছে তার চুলের গোঁড়া, কপাল, শরীর! জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। বুকের মাঝখানে ব্যথা করছে এখনো। গেঞ্জির ভেতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে বুকে হাত বুলাতেই টের পেলো সেখানে দুটো ছোট গর্ত। ডিম লাইটের আলোতে দেখতে পেলো বিছানায়, ঠিক তার শোবার জায়গাটাতে চার্জার রাখা। কখন কিভাবে এখানে এসেছে জানে না সে। এতটা সময় হয়তো উপুড় হয়ে এই চার্জারের উপর শুয়ে ছিল সে। চার্জার পিনগুলো ওভাবে বুকের মধ্যেখানে দেবে গিয়ে দাগ ফেলে দিয়েছে। এখনও নিঃশ্বাস স্বাভাবিক হচ্ছে না রুদ্রের। কল আসছে আবারও! স্ক্রিনে সাদাত নামটা দেখা যাচ্ছে কিন্তু কোনোভাবেই মনে পড়ছে না কে এই সাদাত!

    স্বপ্ন থেকে এখনো বেরোতে পারেনি সে। এত জীবন্ত স্বপ্ন হয় কখনো! মেয়েটার স্পর্শ এখনো নিজের গায়ে টের পাচ্ছে। চোখের সামনে ওর অর্ধনগ্ন নারী শরীরটা এখনো স্পষ্ট! এই ঠোঁট জোড়ায় এখনো ওর ঠোঁটের স্পর্শ, দাঁতের ধার অনুভূত হচ্ছে। শরীর ঘামছে এখনো! নিজেকে শক্তিশূন্য মনে হচ্ছে। ঐ মেয়েটা, আর ওকে ঘিরে এতক্ষণ চলমান সব অনুভূতির বাইরে আর কোনো অনুভূতি কাজ করছে না, আর কিছুই মনে পড়ছে না। স্বপ্নের মতন বাস্তবেও নিজেকে খুইয়েছে রুদ্র একটা কাল্পনিক কিংবা অবাস্তব অনুভূতির কাছে। খাট থেকে নেমে ফ্লোরে শুয়ে পড়লো সে। শরীরের লোমে লোমে শিহরণ জেগে আছে তার। এমন অনুভূতি এর আগে কোনো নারীর কাছে পায়নি সে। প্রথম! এবারই প্রথম তাকে কেউ এতখানি কাবু করেছে, নিজের শরীরে কোনো নারী শরীর এত গাঢ় হয়ে লেপ্টে থাকার অনুভূতি দিচ্ছে। অদ্ভুত এক সুখে হারিয়ে যাচ্ছে রুদ্র। স্বপ্নে সেই চুমু যতটা না যন্ত্রণা দিচ্ছিল, নারী শরীরে স্পর্শ মনের ভেতর যতটা না সংশয়, ভয় সৃষ্টি করছিল, স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসার পর সবকিছু তার চেয়ে অনেক বেশি মধুময় লাগছে তার। সব ভুলে এই ডুবে থাকা শান্তি দিচ্ছে তাকে। অস্থির মন ধীরে ধীরে স্থির হচ্ছে।

    ৮

    ভোরের আজান হচ্ছে। রুদ্র আর শুভ একই ঘরে ছিল। আজানের আওয়াজে ঘুম ভাঙলো শুভর। পাশে রুদ্র নেই। ওয়াশরুমের বাতিও নেভানো। কোথায় গেল সে? বিছানা ছাড়তেই টের পেল বারান্দা থেকে সিগারেটের গন্ধ ভেসে আসছে। বারান্দার দরজায় দাঁড়িয়ে সে জিজ্ঞেস করলো,

    — “রাতে ঘুমাননি?”

    ঘাড় ফেরালো রুদ্র। প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো সে।

    — “তুমি জেগে গেলে যে?”

    — “আজানের শব্দ শুনে ভাঙলো।”

    — “বসো এখানে।”

    পাশের টুলে ইশারা করে বললো রুদ্র। শুভর হাতে একটা সিগারেট ধরিয়ে দিয়ে বললো, নাও। সিগারেট ধরিয়ে রুদ্রের দিকে চেয়ে রইলো শুভ। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলতে যাচ্ছে সে। খুব জরুরি কোনো সিদ্ধান্ত বা আলাপের সময় এভাবেই সামনের জনের হাতে সিগারেট ধরিয়ে দেয়া রুদ্রের পুরোনো অভ্যেস। তবে সবার ক্ষেত্রে না. তার পছন্দের কেউ কিংবা কাছের কারো বেলাতেই এমনটা হয়। হয়তো রুদ্রের কাছে কাউকে সঙ্গে নিয়ে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে জরুরি সিদ্ধান্ত নেয়া তাকে আলাদা স্বস্তি দেয় কিংবা জটিল আলাপ, সিদ্ধান্ত সহজ করে দেয়। এটা শুভর নিজস্ব মতামত। কখনো রুদ্রকে আলাদা করে জিজ্ঞেস করা হয়নি, কেন সে এমনটা করে?

    — “তোমার তো নারীসঙ্গের এক্সপেরিয়েন্স আছে। একটা কথা বলো তো, সেক্স কিংবা ইন্টিমেসি কি স্ট্রেস রিলিফ করে?”

    রুদ্রের এমন প্রশ্নের কারণ খুঁজে পেলো না শুভ। নারী কিংবা নারীসঙ্গ এসবে কখনোই রুদ্রের আগ্রহ দেখেনি শুভ। কত উচ্চ পর্যায়ের লোকেরা শুধু নিজের সুবিধা আদায়ের জন্য, তাদের জানাশোনা সেরা লাস্যময়ীকে রুদ্রের কাছে পাঠাতে চাইলো, সামনে এনে হাজির করলো! সেদিকে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে উল্টো মেজাজ দেখাতো। বলতো, মেয়ে মানুষের পাল্লায় আমাকে ফেলতে পারবেন না। জীবনে অনেক খারাপ কাজ করেছি, করছি; কিন্তু এই মন্দে আমি জড়াবো না। আমার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইলে আপনার কাজ আর বুদ্ধি আমাকে দেখান। পুরো মন্ত্রী, ব্যবসায়ী মহল জানে রুদ্রের মেয়ে লোকের প্রতি আগ্রহ নেই। তাকে কোনোভাবেই সেদিকে কাবু করা সম্ভব না। তবে আজ কী হলো তার? সে কি নারী সান্নিধ্য চাইছে?

    জবাব না পেয়ে রুদ্র আবার বললো,

    — “আমি কি খুব ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে ফেললাম?”

    — “না, না! আপনি হঠাৎ এই প্রশ্ন! সেটাই ভাবছিলাম আরকি।”

    — “বলো।”

    — “হ্যাঁ, স্ট্রেস রিলিফ হয়। অনেকটা সময়ের জন্য বেটার ফিল হয়।”

    — “জমে যাওয়া বুদ্ধি সব আবার কাজ করতে শুরু করে?”

    — “হ্যাঁ ওয়ার্ক স্পিড আসে, ব্রেন ঠিকঠাক কাজ করে। বাট ইট অল ডিপেন্ডস অন ইউর পার্টনার’স পারফরম্যান্স।”

    — “আচ্ছা, স্যাটিসফেকশনের একটা ব্যাপার আছে তো!”

    — “হ্যাঁ।”

    — “ওয়েল, শি পারফর্মড টু গুড!”

    ভ্রু কুঁচকালো শুভ। কার কথা বলছে রুদ্র? কবে? কখন? কিভাবে হলো?

    বাইরে এখনো আলো ফোটেনি। বারান্দার বাইরেই কয়েক হাত দূরে ল্যাম্পপোস্ট। সে আলো এসে ছড়াচ্ছে বারান্দা পর্যন্ত। শুভর মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলো রুদ্র। রহস্য ভরে হাসলো সে। সিগারেটে টান দিয়ে বললো,

    — “ইন মাই ড্রিমস!”

    রুদ্রের হাসি আর জবাবে, সৌজন্যতার খাতিরে হাসলো শুভও। তবে সংশয়ভরে। রুদ্রের কথা হাসিতে এত রহস্য কেন? রাতে শোবার আগেও যাকে অস্থির দেখাচ্ছিল, বিষন্ন লাগছিল… কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে কী এমন হলো যে তাকে এতটা শান্ত, স্থির দেখাচ্ছে? তার উপর নারীসঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন!

    — “শুভ?”

    — “জি?”

    — “আমি যদি তোমার এখানে আরো সপ্তাহখানেক স্টে করি, কোনো আপত্তি আছে?”

    — “না, আপত্তি কেন হবে?”

    — “তোমার ব্যক্তিগত জীবন আছে। আমরা এখানে থাকলে, তিথি এখানে আসবে না। আমার জন্য তোমাদের দু’জনের…”

    রুদ্রকে কথা শেষ করতে দিলো না শুভ। তার আগেই সে বলে উঠলো,

    — “তিথি কিংবা আমাদের ব্যক্তিগত মুহূর্ত এসব কোনো সমস্যাই না। আপনি ওসব নিয়ে ভাববেন না। যতদিন ইচ্ছে থাকতে পারেন।”

    আর কিছু বললো না রুদ্র। হাতে থাকা সিগারেটটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাই হয়তো চুপ আছে। এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সে সামনের দিকে। কিছু একটা ভাবছে হয়তো! শুভও বলছে না কিছু। দ্রুত টানে হাতের সিগারেট শেষ করছে সে। জ্বলন্ত সিগারেটের অবশিষ্টাংশ পায়ের কাছে ফেলে, স্যান্ডেলে মারিয়ে নেভালো রুদ্র। দুই হাত আঙুলবন্দী করে মাথার পেছনে রেখে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসলো সে। তখনও তার নজর সামনের দিকেই

    — “মানুষ যতই অমানুষ, বিবেকহীন, পাথর হৃদয়ের হোক না কেন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও, কারো না কারো কাছে সে দুর্বল। নিষ্পাপ শিশুর মতন রূপ। এই রূপ পৃথিবীর অন্য কেউ দেখেনি কখনো। যাকে সে তার দুর্বলতা দেখিয়েছে, তার নিষ্পাপ রূপ দেখিয়েছে, তাকে সে নিঃস্বার্থ ভালোবেসেছে এবং তার জন্য সেই মানুষ পুরো পৃথিবী উল্টে ফেলার ক্ষমতা রাখে।”

    — “কার কথা বলছেন?”

    — “আজগর।”

    রুদ্রের দিকে মনোযোগী হলো শুভ।

    — “প্ল্যান কী?”

    — “প্ল্যান হলো আজগরের দুর্বল রগটাকে চেপে ধরা। বিনিময়ে আজগরকে পৃথিবী উল্টাতে হবে না। দলের বিরুদ্ধে কোথায় কোন এভিডেন্স সে রেখেছে সেগুলো দিয়ে দিলেই চলবে। হিসেব কষে দেখলাম, চাইলে ওকে পথ থেকে সরানোই যায়। কিন্তু আঙুল অবশ্যই দলের দিকে উঠবে, বিরোধী দলের উপর না। মিডিয়া উঠে-পড়ে লাগবে। এই যে আজগরের লোকেরা এখন চুপ করে আছে, সরাসরি ঝামেলায় নামছে না, ওদের গুরুর কিছু হয়ে গেলে ওরা আর চুপ থাকবে না। সঙ্গে যোগ হবে মতি আর হাবিবের দলবল। সংখ্যায় ওরা একেবারে কমও না। তবুও এসব মিডিয়া, ওর চ্যালাদের চাপ হয়তো কোনো একভাবে সামলে নেয়া যাবে। তবে এটা পারফেক্ট টাইম না! সবে দল ক্ষমতায় এসেছে। এখনই দলীয় কোন্দল সৃষ্টি করা যাবে না। বাইরে আমাদের কনফ্লিক্ট নিয়ে চর্চা হচ্ছে, হোক। প্রমাণ তো নেই। কেউ চোখে তো দেখছে না। মুখে মুখে চর্চা হচ্ছে জাস্ট, সেটা লোকের মুখ পর্যন্তই থাকুক। পুরো দেশকে দেখাতে হবে, উই আর ওয়ান। আমাদের একতা আগের মতোই আছে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা, আজগর কাঁচা খেলোয়ার না। ও ভালো করেই জানে ওকে যখন তখন উড়িয়ে দেয়া হবে। সেই মানসিক প্রস্তুতি ও নিয়েই রেখেছে। আগেও বলেছি, মরণের ভয় ওর নেই। যদি ওর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়, তাহলে দলের বিপক্ষে পরবর্তী স্টেপ কী হবে সেটা ও বিশ্বস্ত কাউকে বুঝিয়ে রেখেছে। মুখে মুখে ওরা বদনাম করুক, দলের যত ডার্ক সিক্রেট আছে সব জনসমক্ষে বলে দিক সেসব সমস্যা না। জনগণের আইওয়াশ, ব্রেনওয়াশ করে নেয়া যাবে। কিন্তু প্রমাণ সহ হাজির হয়ে গেলেই বিপদ! সেজন্য ভাবছি আগে প্রমাণ সরাবো, তারপর আজগরকে কী করবো দেখা যাবে।”

    — “এভিডেন্সই ওর পাওয়ার। দুর্বল রগে আঘাত করেও কাজ হবে না মনে হয়। এগুলো হাত ছাড়া হওয়া মানে আজগরের সব ক্ষমতা ফুটস।”

    — “বললাম তো, এরা যাদের ভালোবাসে সমস্ত পৃথিবী তুচ্ছ করেই ভালোবাসে।”

    — “যতদূর বুঝি দুর্বল রগ ওর মেয়ে।”

    — “হ্যাঁ। বুড়ো বয়সে এই মেয়েকে জন্ম দিয়েছে। ওর সারা পৃথিবী একদিকে, অদিতি আরেকদিকে।’

    — “মেয়েটা এখন লন্ডন আছে, তাই না?”

    — “হ্যাঁ।”

    — “প্ল্যান কী?”

    — “ইনফরমেশন কালেক্ট করো আগে। শুনি, বুঝি তারপর স্টেপ নেবো।” মাথা দুলিয়ে সায় দিলো শুভ। চোখ মুখ কচলাতে কচলাতে রুদ্র বললো,

    — “ঘুমিয়ে পড়ো।”

    — “আপনি?”

    — “যাবো। আদনানের সঙ্গে কথা আছে।”

    — “ঠিকাছে। ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, কিছু জিজ্ঞেস করি?”

    — “সিওর।”

    — “হঠাৎ নারীসঙ্গের ব্যাপারে জানতে চাইলেন! আমি কি দেখবো ব্যাপারটা?” দুষ্টুমি ভরে হাসলো রুদ্র।

    —”হ্যাঁ, তোমাকেই দেখতে হবে।”

    রুদ্রের উত্তরে যেন ধাক্কা লাগলো শুভর। রুদ্র তবে কথার ছলে জানতে চায়নি। সত্যিই চাইছে কাউকে! এত বছরে যেই মানুষটাকে কোনো নারীর দিকে আগ্রহ ভরে চোখ তুলে তাকাতে দেখেনি, সে কিনা চাইছে নারীসঙ্গ! ঠিক বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হলো না শুভ-র। তবুও বরাবরের মতো, মাথা দুলিয়ে “জি ভাই” বলে সম্মতি জানালো শুভ। দু’জনে একসঙ্গে উঠে এল বারান্দা ছেড়ে। শুভ শুয়ে পড়লো নিজ বিছানায় আর রুদ্র চলে গেল বসার ঘরে। বারান্দায় বসে আদনানের সঙ্গে ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলা অনুচিত মনে হলো তার।

    ৯

    ভোর হবে আর কিছুক্ষণ বাদে। পুরো দিন অসংখ্য দুশ্চিন্তা আর অনিশ্চয়তায় কাটানোর পর, রাতটাও কেটেছিল নির্ঘুম। এই শেষ রাতে এসে মাত্রই চোখের পাতা এক হয়েছিল, তখনই কল এল আদনানের নাম্বারে। হুরমুরিয়ে উঠে বসলো সে। এক মুহূর্তেই চোখ থেকে ঘুমের রেশ কেটে গেল তার। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো রুদ্রের নাম।

    — “জি ভাইয়া?”

    — “কোথায় আছো?”

    — “বাসায়।”

    — “কোন বাসায়?”

    — “আমার।”

    — “বউ কোথায়?”

    — “ওর বোনের ওখানে।”

    — “আলাদা কেন?”

    — “সহ্য করতে পারছে না, বললাম না?

    — “তাই বলে ওভাবে রেখে চলে আসবে? তোমার বউ তুমি কিভাবে সামলাবে সে কথা এখন তোমাকে আমার শেখাতে হবে?”

    — “রেখে এসে আমার কি খুব ভালো লাগছে? টেনশনে ঘুম-খাওয়া কিছু হচ্ছে না আমার। কখন কী যেন করে বসে! অসুস্থ হয়ে গেছে ও। আমাকে দেখলেই এ্যাবনরমাল বিহেভ করে। খুব চিৎকার করে, কাঁদে। ওর বাসার মানুষও আর আমাকে ওর কাছে এলাউ করছে না।”

    — “তাই তুমিও বাসায় এসে বসে আছো, তাই তো?”

    — “আর কী করবো?”

    — “লাখ লাখ মানুষের ব্রেনওয়াশ করার ক্ষমতা তোমার আছে। বক্তৃতার মাঠে তুমি জনগণের একজন প্রিয় মুখ। কঠিন থেকে কঠিন সিচুয়েশন তোমাকে আমি সামলাতে দেখেছি। এমনি এমনি তোমাকে এত গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাইনি আমি। তোমার মাঝে যোগ্যতা আছে বলেই এই সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। দেশের ইতিহাসে ইয়াংগেস্ট মিনিস্টার তুমি। অথচ সেই যোগ্য ছেলেটাই কিনা নিজের বউকে সামলাতে পারছে না!”

    — “সত্যিই পারছি না! সোমাকে এতটা কঠিন কখনো দেখিনি আমি। ভালোবাসতো ও আমাকে। আমার খারাপ সময়ে ও খুব সাপোর্ট দিয়েছে। কখনো উঁচু গলায় আমার সঙ্গে চেঁচায়নি। হাজার ঝগড়া হোক, অভিমান-অভিযোগ থাকুক, ও কখনো বলেনি তুমি আমার চোখের সামনে থেকে দূর হও। সোমার কাছে আমার ছায়াটাও প্রিয় ছিল। গলা উঁচালে সোমার কন্ঠ শুনতে কেমন হয় তা এতবছরে জানা হয়নি কখনো আমার! যার চোখে খুব ঝগড়ার মুহূর্তেও শুধু ভালোবাসাই দেখেছি, সেই মেয়েটা আর আমাকে সহ্য করতে পারছে না! ওর চড়া কন্ঠ আর দু’চোখ ভর্তি এত ঘৃণার সামনে দাঁড়ানোর সাহস আমার হচ্ছে না। কাছে যেতে চাইলেই সুইসাইডের হুমকি দিচ্ছে। ওর ঐ কথা শুনলে আমার সাহস, শক্তি আরো ভেঙে পড়ে।”

    — “কথা শোনো আমার।

    — “জি?”

    — “যেই মেয়েগুলো সত্যিই ভালোবাসে ওরা বিনিময়ে লাইফ পার্টনারের এটেনশন চায়। কেয়ার চায়। লাইফ পার্টনার ওদের সমস্ত রেসপনসেবলিটি নেবে এটাই ওদের ডিমান্ড। পার্টনারের পজিশন, ব্যাংক ব্যালেন্স এসব কিছুই ম্যাটার করে না ওদের কাছে। পার্টনার ওকে কতখানি ভালো রাখছে, সবশেষে এটাই ওদের কাছে ম্যাটার করে। সোমা শেষ কবে তোমার কাছে একটু এটেনশন, যত্ন পেয়েছে বলতে পারো? রাজনীতি, দল, লোক এসব করেই দিন পার তোমার। পেছনে একটা মেয়ে যে ফেলে এসেছো তার কী হবে? বিয়ে করেছো ওকে। কিন্তু ওকে ভালো রাখার দায়িত্ব কিন্তু তুমি পালন করোনি। এতদিন ধরে সোমা একাই একটা লাভলেস, কেয়ারলেস রিলেশন টেনে যাচ্ছে। এত অবহেলার মাশুল একটু হলেও গুনতে হবে তোমাকে।”

    গালিগালাজ করুক। – “গুনবো। সোমা শাস্তি দিক আমাকে। ইগনোর করুক, প্রয়োজন চড় থাপ্পরও মেনে নেবো। কিন্তু এভাবে মুখ ফিরিয়ে নেবে ও! আত্মহত্যা করতে চাইবে? এই মাশুল তো গোনা যাচ্ছে না।”

    — “সোমা তোমাকে দূরে থাকতে বলেছে তুমিও দূরেই গেলে। জোর করে কি কাছে যাওয়া যেত না? ওকে শক্ত করে জড়িয়ে রাখলে কতক্ষণ আর তোমাকে দূরে সরানোর চেষ্টা করতো বলো? ভালোবাসে ও তোমাকে, হাজারটা অন্যায় করো তবুও ভালোবাসবে। এত সহজে কারো ভালোবাসা ফুরায় না, আদনান। সোমার উইকনেস এখনও তুমিই আছো। ও যা রিএ্যাক্ট করছে সবটা ওর অভিমান। তোমার কাছ থেকে ওর অপ্রাপ্তি, জমে থাকা অভিমানটা এভাবে আজগর কাজে লাগিয়ে নিলো অথচ তুমি ওর ভালোবাসাটা কাজে লাগাতে পারলে না? তুমি ওর হাজবেন্ড। নিজের এই পজিশটা ইউজ কেন করতে শেখোনি তুমি?”

    চুপ করে রইলো আদনান।

    — “ওর বাসার মানুষের বাঁকা চাহনী কিংবা সোমার ঘৃণা, হুমকি কিচ্ছু দেখার সময় নেই আপাতত। তুমি ওর বাসায় যাও। বের করে নিয়ে এসো ওকে।”

    রুদ্রের কথায় চমকে উঠলো আদনান।

    — “বের করে নিয়ে আসবো মানে?”

    — “তোমার ওয়াইফ এখন থেকে তোমার কাছে থাকবে। বিয়ে করেছো তিনবছর হয়েছে, এবার তো ওর দায়িত্ব নাও!”

    — “দায়িত্ব নেবো আমি। এখন, এই মুহূর্তে নেবো। আর কোনো বাহানা করবো না। কিন্তু ও আসতে চাইবে না।”

    — “আসতে না চাইলে জোর করে তুলে আনো। এই মুহূর্তে জোর করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।”

    — “জোর করে তুলে আনতে গেলে ওর ফ্যামিলি ঝামেলা করবে না?”

    — “কিসব বলছো আদনান? ঝামেলা করবে মানে? এসব ঝামেলার পরোয়াও করো তুমি!”

    — “এটা বিপক্ষ দল না, আমার শ্বশুরবাড়ি!”

    — “যেই মুহূর্তে তোমার ইচ্ছে বিরুদ্ধে যে কেউ বাঁধা হবে সেই মুহূর্তে ঐ লোকটাই তোমার বিরোধী দল। হোক সে তোমার শ্বশুরবাড়ি কিংবা নিজের বাড়ির লোকজন। সঙ্গে লোক নাও। মেয়ে ধরে আনার সময় ফ্যামিলি লোকজন জড়ো করে তোমাকে আটকাতে চাইবে, সেই সুযোগ ওদের দেবে না। এমনকি ওরা যেন চিৎকার করার সুযোগটুকুও না পায়। এলাকার মানুষ যত কম জানাজানি হবে তত ভালো।”

    — “চিৎকার চেঁচামেচি তো হবেই!”

    — “ঘরের কর্তার কপাল বরাবর মেশিন ঠেকে গেলে সব এমনিই চুপ হয়ে যাবে। আর এখানে, যদি-কিন্তু প্রসঙ্গ টেনো না। যাকে তুলে আনতে যাচ্ছো সে তোমার বউ। পূর্ণ অধিকার তোমার আছে। তুমি কাউকে শ্যুট করছো না, কারো ক্ষতিও করছো না। সংসার বাঁচাতে এসব ঝামেলা একটু আধটু করা যেতেই পারে।”

    রুদ্রের কথায় পুরো পরিস্থিতি সামলে নেয়ার মানসিক শক্তি ফিরতে লাগলো আদনানের। লোকটা টনিকের মতো। যখনই দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, মস্তিষ্ক কাজ করা ছেড়ে দেয়, মানসিক শক্তি হারাতে থাকে তখনই সে মন্ত্রের মতো বলতে শুরু করে। পুরো একটা ভেঙে পড়া দলকে নিজের কথার ধারে মুহূর্তে দাঁড় করাবার চমৎকার ক্ষমতা তার আছে। ওপাশ থেকে তখনও বলে চলছে রুদ্র। তার কথায় আরো মনোযোগী হলো আদনান।

    — “মেয়েরা সবকিছুতে সিকিউরিটি চায়, বিশেষ করে সংসারে। আর এই সংসারে ওদের কাছে বিগেস্ট সিকিউরিটি, সংসারের সৌন্দর্য আর হাজবেন্ডের লাগাম টেনে রাখার মূল অস্ত্র হলো তাদের সন্তান। ওরা ভাবে কোলজুড়ে একটা বাচ্চা এলেই সবকিছু ওদের কন্ট্রোলে থাকবে। বাচ্চার টানে হলেও হাজবেন্ড সোজা হয়ে চলবে। পরনারীতে আসক্ত হয়ে বেঁকে বসবে না।”

    রুদ্রের ইশারা আন্দাজ করতে পারছে আদনান। তার আন্দাজ সত্যি করে পর মুহূর্তেই রুদ্র বলে উঠলো,

    — “গেট হার প্রেগন্যান্ট আদনান। ও তোমার কাছে একটা সংসার চাইছে, ওকে দাও। বিয়ে করেছো অনেকদিন হলো, তোমাদের মাঝে একটা বাচ্চা আনার সময় হয়েছে। এবার সংসার শুরু করো পুরোদমে। সোমার খেয়াল রাখো। যেই মেয়েটা তোমার এত অবহেলা পেয়েও তোমাকে ছেড়ে যায়নি, তাকে খুশি রাখা আহামরী কিছু না। তোমার একটু চেষ্টাতেই ও খুশি হয়ে যাবে।”

    — “কিন্তু এখনই যদি বাচ্চার কথা বলি ও ভেবে নেবে আমি আমার পজিশন ক্লিয়ার করার জন্য ওকে বাচ্চার লোভ দেখাচ্ছি।”

    — “এটা ওর মাথায় তুমি কেন আসতে দেবে? আমি বলছি না আজই গিয়ে ওকে বাচ্চার কথা বলো। এটলিস্ট এক দুইমাস সময় নাও। তোমাদের সম্পর্কটা গুছিয়ে নাও। বাচ্চার কথা আমি বলতাম না। বলছি, কারণ সোমা এই মুহূর্তে ইনসিকিউর ফিল করছে। ওকে সিকিউর ফিল করাও। ওকে বুঝাও এই সংসার আর সোমার প্রতি তুমি লয়্যাল। আর কোথাও তুমি যাচ্ছো না। ওকে নিয়েই সেটেল হতে চাচ্ছো ফর লাইফটাইম।”

    এক মুহূর্ত চুপ করে রুদ্রের কথা মাথায় এঁটে নিলো আদনান। লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,

    — “ঠিক আছে।”

    — “তুমি আপাতত তোমার পি.এ.- কে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে ডিসকানেক্ট থাকো কিছুদিন। সোমা আর নিজের সম্পর্ককে সময় দাও। এটা সামলে নিলে বাকি সব সামলে নেয়া যাবে। সিলেটে আমার টি স্টেটে চলে যাও দু’জন। কোথায় যাচ্ছো তোমার লোকজন যেন না জানে। আমি আমার লোক সঙ্গে দেবো। তোমাদের সিকিউরিটি, প্রাইভেসি সবকিছু ওরা দেখবে। আর আমার বাংলোর চাবি পাঠাচ্ছি সুমনের হাতে, সঙ্গে গাড়ি আর ড্রাইভারও। তোমার গাড়ি নেবার প্রয়োজন নেই আপাতত। ওটা নিয়ে তারপর সোমার বাসায় যাও। সেখান থেকে সোজা সিলেট।”

    — “আচ্ছা।”

    — “তেতো শোনালেও একটা কথা বলি, সোমার প্রতি তোমার ভালোবাসার অভাব আছে। যতটা ডেডিকেশন আর ভালোবাসা তুমি তোমার স্বপ্ন পূরণে দিয়েছো ততটা তুমি সোমার জন্য দাওনি। ওকে তুমি এক অর্থে ঠকাচ্ছো।”

    — “ওকে আমি ভালোবাসি না বলছেন?”

    — “বাসো না, তা বলিনি। তবে ঘাটতি আছে। নিজেকেই একটাবার জিজ্ঞেস করো না! সোমা আজ পর্যন্ত তোমার জন্য যা কিছু স্যাক্রিফাইস করেছে, সব মেনে নিয়েও তোমাকে ভালোবেসেছে, তুমি কি ওর জন্য অতটা করতে?”

    চুপ করে রইলো আদনান। সম্পর্কের প্রথম দিন থেকে একে একে সব মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো সে। এই সম্পর্কে কার কতটা চেষ্টা ছিল তা-ই স্মরণ করতে থাকলো। ঘুরে-ফিরে মনের ভেতর থেকে বারবার সোমার নামটাই ফিরে আসছে।

    আদনানের জবাবের আশায় কিছুটা সময় চুপ ছিল রুদ্র। জবাব না পেয়ে রুদ্র আবার বলতে লাগলো,

    — “একটা মানুষ তোমাকে ভালোবাসে, তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না সেই নিশ্চিয়তা পাওয়া মানে তাকে হেলায় ফেলায় এক কোণায় ফেলে রাখা না। যে তোমার সব ধরনের সিচুয়েশনে তোমার পাশে থাকার মানসিকতা রাখে তাকে মাথায় করে রাখা উচিত। এবার ওকে ওর প্রাপ্যটুকু বুঝিয়ে দিও প্লিজ! এক সপ্তাহের মধ্যে আমি সবকিছু ঠিক দেখতে চাই আদনান। তোমাকে যতটুকু বুঝানোর ছিল, বুঝিয়েছি। তোমার ওয়াইফকে তুমি কিভাবে সামলে নেবে বাকিটা তুমি বুঝে নাও। নয়তো লম্বা ভুগতে হবে তোমাকে।”

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবাতাসে গুনগুন – খাদিজা মিম
    Next Article পৃথিবীর পথে – ম্যাক্সিম গোর্কি (অনুবাদ : খায়রুল আলম মনি)

    Related Articles

    খাদিজা মিম

    বাতাসে গুনগুন – খাদিজা মিম

    August 6, 2025
    খাদিজা মিম

    ইট’স কমপ্লিকেটেড – খাদিজা মিম

    August 6, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Our Picks

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    সুখের সন্ধানে – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    অপেক্ষবাদের অ, আ, ক, খ – বারট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }