Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    সুখের সন্ধানে – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    অপেক্ষবাদের অ, আ, ক, খ – বারট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    রুদ্র – খাদিজা মিম

    খাদিজা মিম এক পাতা গল্প239 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    রুদ্র – ৪০

    ৪০

    মনের কানায় কানায় তৃপ্ত করা আদর আর মিলন শেষে ঘুমোতে ঘুমোতে বেশ রাত হয়েছিল ওদের। গত চার রাতের নির্ঘুম রাত আর গতকালের ক্লান্তি মিলিয়ে বেহুঁশের মতো ঘুমোলো দু’জন। বেলা গড়িয়ে যখন দশটা তখন ঘুম ভাঙলো রুদ্রের। বুকের উপর সুরভী ঘুমিয়ে আছে। ওর কপালে আলতো চুমু খেয়ে গাল ছুঁয়ে দিতেই চোখ মেললো সুরভী। মুচকি হেসে সঙ্গে সঙ্গেই আবার চোখ বুজলো ও। আরো একটুখানি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রুদ্রকে।

    সুরভীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে রুদ্র জিজ্ঞেস করলো,

    — “ভালোবাসো আমাকে?”

    এক মুহূর্ত দেরী করলো না সুরভী। শোয়া থেকে উঠে বসলো রুদ্রের গা ঘেঁষে।

    — “তুমি করে বলি?”

    — “অবশ্যই!”

    — “তুমি চলে যাবার পর শুধু কি তুমি একাই পুঁড়েছো? আমাকে পোঁড়াওনি? তুমি আমাকে কাঁদিয়েছো রুদ্র! প্রতি মুহূর্তে তোমাকে মনে পড়েছে আমার। তোমার কথা, তোমার হাসি, তোমার যত্ন সবকিছু! নিজেকে অচল লাগছিল ভীষণ। মায়ের পর এত যত্নে তুমিই তো আমাকে আগলে রেখেছিলে এতগুলো দিন। অভ্যেস হয়ে গেছে তোমার যত্নের। এত যত্নে যেই মানুষটা আমাকে আগলে রাখতো সে হঠাৎ নেই। কী প্রচন্ড শূণ্যতায় তুমি আমাকে ভুগিয়েছো, তা তুমি জানো না রুদ্র। এইসব মন খারাপ, শূণ্যতা, কান্না পাওয়ার কারণটাও উপলব্ধি করেছি এই ক’দিনে।”

    — “কী?”

    রুদ্রের ঠোঁট নিজের বৃদ্ধাঙুলীতে ছুঁয়ে দিতে দিতে সুরভী বললো,

    — “ভালোবাসি তোমাকে!”

    লম্বা নিঃশ্বাস নিলো রুদ্র। বহু প্রতীক্ষার শব্দটা আজ সুরভীর কন্ঠে বাজছে! মনের ভেতর দখিন হাওয়া কেমন দাপটে তাকে এলোমেলো করছে একবার যদি ওকে দেখানো যেত! খাট থেকে নেমে এল সে।

    ফ্লোরে বসে বললো,

    — “পা দু’টো দাও আমাকে।”

    ভ্রু কুঁচকালো সুরভী।

    — “কেন?”

    — “দাও না!”

    পা দু’টো নিচে নামিয়ে দিলো সুরভী। ওর পায়ের পাতাজোড়া এক করে বুকে জড়িয়ে ধরলো রুদ্র।

    কাতর হয়ে বললো,

    — “তুমি আমাকে কী দিলে, তা তুমি নিজেও জানো না সুরভী! এই মুহূর্তটার জন্য আমি কত মরেছি তাও তোমার জানা নেই। এ আমার পরম প্রাপ্তি! এরচেয়ে বড় পাওয়া আমার জীবনে আর কিচ্ছু নেই। বলেছিলাম তোমাকে রাণী করে রাখবো। রাণী আমাকে ভালোবেসেছে, নিজেকে আমার কাছে সঁপে দিয়েছে। আমি শুধু রাণীর মন না, তার পা দু’টোও এভাবে বুকে আগলে রাখবো। তার কাছে মাথা নত করে থাকবো সারাজীবন।”

    সুরভীর বৃদ্ধাঙুলি জোড়ায় চুমু খেলো রুদ্র। স্তব্ধ হয়ে সুরভী চেয়ে রইলো রুদ্রের মুখে। এই মুহূর্তে কী বলা উচিত, কী করা উচিত ভেবে পাচ্ছে না ও!

    — “এখন থেকে আমার দিন শুরু হবে তোমার পায়ে চুমু খেয়ে। আমি চোখ মেলে তোমাকে দেখতে চাই সুরভী। পুরো পৃথিবী গোল্লায় যাক, তুমি আমার সামনে থাকবে ব্যস!”

    মাথা নুইয়ে রুদ্রের কপালে চুমু দিলো সুরভী। মাথার চুলগুলো গুছিয়ে দিতে দিতে বললো,

    — “কেমন সব পাগলামি তোমার?”

    — “আমার সমস্ত পাগলামি তো তোমার জন্যই সুরভী! তুমি আমার ঘর। আমার ঘরে আমি পাগলামি করবো, নাচবো, গাইবো, সম্পূর্ণ ভিন্ন এক রুদ্র হয়ে থাকবো। যে রুদ্রকে কেউ দেখে না. কেউ জানে না।”

    ৪১

    — “আমি আদনানের বিবাহিতা স্ত্রী। তিনবছর হয়েছে আমাদের বিয়ের, সেসব মিথ্যে নয়। তবে আদনানের বিপক্ষে আমি যা কিছু বলেছি, তা মিথ্যে। আমারই ইচ্ছায় আদনান এতদিন বিয়ের কথা কাউকে জানায়নি। ক্যারিয়ার গড়ে তারপর বিয়ের কথা জানানোর ইচ্ছে ছিল আমার। তবে আমার সেই লাইভের দিন সকালে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায় আমার এবং আমার পরিবারের সঙ্গে। আমাদের জিম্মি করা হয়। হত্যা করার হুমকি দেয়া হয়। জিম্মির মুখে লাইভে এসে এসব বলতে হয়েছে আমাকে। আদনানকে জানাবার সুযোগ আমি পাইনি। কারো কাছে সাহায্য চাইবো সেই সমস্ত পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এমনকি সেই লাইভের পর আমাকে অপহরণ করা হয় আমারই বাসার সামনে থেকে। মুক্তিপণ বাবদ দাবি করা হয় আমার হাজবেন্ড যেন তার মন্ত্রীপদ থেকে পদত্যাগ করে। আর সে কারণেই আদনান নিজেও এতদিন সবকিছু থেকে দূরে ছিল।”

    একঝাঁক সাংবাদিকের মাঝ থেকে একজন প্রশ্ন করলো,

    — “মাননীয় রেলমন্ত্রী এখনো পদে বহাল আছেন। পরবর্তীতে নেগোশিয়েটের ব্যাপারটা কী হলো?”

    — “আর প্রয়োজন হয়নি। যার নির্দেশে এতকিছু ঘটেছে তিনি একমাস আগে খুন হয়েছেন।”

    — “ম্যাম নামটা যদি উল্লেখ করতেন!”

    — “সাবেক সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রী মতিউর রহমান।”

    হৈচৈ পড়ে গেল কনফারেন্স রুমে। একের পর এক প্রশ্ন নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সাংবাদিকরা। ফেইসবুক লাইভে চলছে সাধারণ মানুষের কমেন্টের ঢল!

    মতি হত্যা মামলা রায়ের আজ একসপ্তাহ ফুরোলো। রায়ের পরবর্তী তিনদিন পরই পত্রিকায়, টেলিভিশনে এই নিয়ে আলোচনা থেমে গেছে। সামনে আসছে মেয়র ইলেকশনের পালা। পরবর্তী সপ্তাহ থেকেই শুরু হবে মেয়র ইলেকশন নিয়ে সংবাদ প্রচার। মাঝের এই ফাঁকা সময়টাকে কাজে লাগালো রুদ্র। ল্যাপটপের স্ক্রিন অফ করলো সে। আদনানের খেলাটা এই পর্যন্তই ছিল। গাছের নিচে ছায়ায় চেয়ারে বসে, অন্য চেয়ারে পা তুলে এতটা সময় আদনান-সোমার প্রেস কনফারেন্স দেখছিল সে।

    ল্যাপটপ থেকে চোখ সরাতেই নজর গেল সুরভীর দিকে। বাড়ির পেছনের গাছের টবগুলোতে কী যেন করছে ও। ঝুঁকে আছে নিচের দিকে। ওড়না বুক থেকে সরে গেছে অসতর্কতাবশত। জামার গলাও আলগা হয়ে আছে গা থেকে। হাসলো রুদ্র। ওখানে বসেই কল করলো সুরভীকে। কানে ইয়ারপড গুঁজে ছিল সুরভী। কল রিসিভ করে আবারও কাজে মন দিলো ও।

    — “আমাকে দেখেছো তুমি?”

    — “হ্যাঁ। দেখেছি তো অনেক আগেই। তখন তুমি ল্যাপটপে চোখ ডুবিয়ে রেখেছো। তা এটুকু দূরত্বে কল করার কারণ?”

    — “আমার চোখ কিন্তু এখন ডুবে আছে অন্য কোথাও!”

    — “কোথায়?”

    — “ক্লিভেজ দেখা যাচ্ছে।

    চোখ নামিয়ে নিজের অবস্থা দেখতেই চট করে ওড়না টেনে নিজেকে গুছিয়ে নিলো সুরভী।

    — “খেয়ালই করিনি আমি!”

    — “সে যাই হোক, বুকে ঝড় শুরু হয়ে গেছে। এখন ঝড় শান্ত করতে হবে।”

    রুদ্রের ইঙ্গিত বুঝে নিয়ে কপট রাগ ঝাড়লো সুরভী।

    — “একদম না। কাজ আছে আমার।”

    বলেই উঠে চলে যাচ্ছিল সুরভী, কোল থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে ছুটলো রুদ্র। চিৎকার করে বললো,

    — “তুমি বারণ করলেই আমি শুনবো নাকি!

    এক দৌড়ে সুরভীও চলে গেল বাড়ির ভেতর। রুদ্র আসার আগেই সে পৌঁছে গেল রান্নাঘরে। থেমে গেল রুদ্র। কলটা তখনও কাটেনি কেউই।

    নিচু স্বরে সে বললো,

    — “বেঁচে গেলে। কিন্তু কতক্ষণ? রান্নাঘরে তো আর গোটাদিন কাটিয়ে দেয়া যাবে না।”

    — “কাজ আছে সত্যিই। মা আমার হাতের মুরগির ঝোল খেতে চেয়েছে। রান্নাটা শেষ করে আসছি।”

    কল কেটে রান্নায় মন দিয়েছিল সুরভী। খানিক বাদেই একজোড়া হাতের জামার ভেতর অবাধ্য বিচরণে পেট ছুঁয়ে বুকে এসে পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে ঘাড়ের উপর অনুভব হচ্ছে গরম নিঃশ্বাস। প্রচন্ড আবেশে গা ছেড়ে দিলো সুরভী। রুদ্রের বুকে লেপ্টে রইলো ও।

    তার কানে ফিসফিসিয়ে রুদ্র বললো,

    — “বেঁচে যাওয়া এত্ত সহজ? তোমাকে চাই মানে চাই। লাগবেই তোমাকে এখনই। বাড়িটা আমার। আমার বাড়িতে আমার ওয়াইফকে আমি যখন যেখানে যেভাবে চাইবো সেভাবেই পাবো। বাসায় গেস্ট বসে আছে নাকি সার্ভেন্ট সেসব কোনো ব্যাপারই না! এক ইশারায় সরিয়ে দেবো সব।”

    পান চিবুতে চিবুতে পুরো প্রেস কনফারেন্স শেষ করলেন আজগর। পিকদানীতে পানের অবশিষ্টাংশ ফেলে ডায়াল করলেন হাবিবের নাম্বারে।

    — “পেয়াদাদের সামনে আনো। চাল বাড়ানোর সময় হয়েছে।”

    ৪২

    রোজকার নিয়মে ঘুম ভাঙলো রুদ্রের। সুরভী ঘরে নেই। বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে এল তার। কেন নেই ও?

    গলা ছেড়ে তাকে ডাকলো রুদ্র,

    — “সুরভী… এই সুরভী।”

    বাইরে থেকে একজন কর্মচারী কড়া নাড়লো দরজায়।

    ভেতর থেকে অনুমতি দিলো রুদ্র,

    — “এসো।”

    — “ভাবী বসার ঘরে আছেন। হাত কেটে গেছে উনার। ব্যান্ডেজ…’

    কর্মচারীর কথা ফুরোবার আগেই রীতিমতো বসার ঘরে উড়ে হাজির হলো রুদ্র। ব্যথায় চেহারা কুঁচকে রেখেছে সুরভী। হাত গড়িয়ে রক্ত ঝরছে ওর। দুজন কর্মচারী মিলে রক্ত থামাবার চেষ্টা করছে। ফেরদৌসী সুরভীর অন্য হাত চেপে ধরে বসে আছেন। মুহূর্তেই সবকিছু অন্ধকার হয়ে এল রুদ্রের। কর্মচারী দুজনকে সরিয়ে সুরভীর হাত টিস্যুতে চেপে ধরলো রুদ্র।

    চিৎকার করে ড্রাইভারকে ডাকলো,

    — “জাহিদ, গাড়ি বের করো এক্ষুনি।”

    কাতর হয়ে সুরভীকে জিজ্ঞেস করলো,

    — “কষ্ট হচ্ছে খুব?”

    রুদ্রের অস্থিরতা দেখে স্বাভাবিক হলো সুরভী। হাতে আর ব্যথা অনুভব হচ্ছে না। রুদ্রকে শান্ত করতেই ব্যস্ত হলো ও।

    — “তেমন কিছুই না। একটু স্যাভলন দিয়ে ব্যান্ডেজ করে নিলেই হবে।”

    — “না, হসপিটাল যেতে হবে।”

    ওপাশ থেকে ফেরদৌসী বললেন,

    — “বারবার বলি কাটাকাটি তোমার করতে হবে না। মাঝেমধ্যে শখের বশে রান্না করো ঠিক আছে। কিন্তু কাটা বাছা সব করবে কাজের লোক। কথা কেন যে শুনতে চাও না?”

    মেজাজ সপ্তম আকাশে চড়লো রুদ্রের। চিৎকার শুরু করলো বাড়ির প্রত্যেকের উপর,

    — “তোমরা থাকতে ও কেন কাজ করবে? কাজ না করতে পারলে বের হও সব আমার বাসা থেকে। আমি আজই নতুন লোক আনিয়ে নেবো।”

    লজ্জায় পড়ে গেল সুরভী। অকারণে সবাইকে বকা শুনতে হচ্ছে। রুদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে ও বললো,

    — “কারো কোনো দোষ নেই! ক্যারট জুস করতে চাচ্ছিলাম। বোকার মতো হাতের উপর রেখে কাটতে গেছি আর তখনই লেগে গেল। ওরা বলছিল বারবার আমি যেন না করি। আমিই আসলে…”

    — “চুপ করো তুমি। কী একটা অবস্থা করেছো হাত কেটে! ধ্যাত!”

    মূল ফটকের সামনে এসে গাড়ি দাঁড়িয়েছে।

    রুদ্র সুরভীকে বললো,

    — “চলো।”

    — “বাসায় করলে হয়ে যেত না?”

    — “আর একটা শব্দ তুমি করবে না। চলো আমার সঙ্গে।”

    *****

    ব্যান্ডেজ শেষে, হসপিটাল থেকে ফিরলো রুদ্র। কাপড় পাল্টে সে বেরিয়ে গেল অফিসের উদ্দেশ্যে। কাজের চাপ যাচ্ছে ভীষণ। সঙ্গে চলছে মেয়র ইলেকশনের প্রস্তুতি। সব মিলিয়ে রুদ্রের দিনরাত কেমন করে কাটছে, কখন বেলা ফুরোচ্ছে কিছুই টের পাচ্ছে না সে। কখনো শান্ত হয়ে কাজ করছে তো, কখনো মাথা গরম হচ্ছে। আর আজকের দিনটা তো শুরুই হলো কুৎসিত এক ঘটনা দিয়ে। বাসা থেকে বেরোবার আগে কঠিন আদেশ জারি করে গেছে সুরভীসহ প্রত্যেকের উপর, হাত ভালো হওয়ার আগ পর্যন্ত সুরভী কিছু করবে না। রান্নাঘরে পা রাখা

    একেবারেই নিষেধ! ও শুধু খাবে, মায়ের সঙ্গে গল্প করবে আর ঘুমাবে। রুদ্রের আদেশ পাত্তাই দিলো না সুরভী। সে চলে যেতেই ঘরময় ঘুরে ঘুরে এটা সেটা গোছাচ্ছে। শাশুড়ী, কর্মচারীরা শত বলা সত্ত্বেও কারো কথা শুনছে না ও। সারাদিন এভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা যায় নাকি!

    ঘন্টা দুয়েক পর কল এল রুদ্রের। বেশ গম্ভীর শোনাচ্ছে তাকে। কল রিসিভ করেই টের পেল সুরভী। বললো,

    — “কী হয়েছে তোমার? রেগে আছো কী নিয়ে?”

    — “কতগুলো ছাগল এসে দলে যোগ দিয়েছে। যেটাকে নমিনেশন দেয়া হয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ থেকে, একঘন্টা আগেই বিশাল ব্লান্ডার করে বসে আছে। পেয়েছে এক ফেসবুক। মূর্খের মতো যা পায় তাই পোস্ট করে, যা ইচ্ছে তাই স্ট্যাটাস দেয়। জঘন্য যতসব! এদিকে অফিসেও একটা এমপ্লয়ির ঝামেলার কারণে বড় সাপ্লাইটা আটকে গেছে। কতগুলো টাকা ইনভেস্ট আমার! এটা সুরাহা করতে লাগবে আরো ১০-১২ দিন। আজকের দিনটাই আমার খারাপ সুরভী! যেখানে আমার দিনের শুরু হয় তোমার পায়ে চুমু খেয়ে সেখানে আজ দিনের শুরুই হয়েছে তোমার হাত কাটা দিয়ে! বারবার বলি সকালে আমার চোখের সামনে থাকবে। নড়বে না কোথাও। আমি অফিস চলে গেলে যাও যেখানে খুশি! শুনতেই চাও না আমার কথা। এত চোখে চোখে রাখি কখন আবার কোন অসুখ বাঁধাও, ব্যথা পাও! তবুও তোমার ঘুরেফিরে ওদিকেই যাওয়া চাই।”

    এক নিঃশ্বাসে রুদ্র বলেই চলছে। চুপচাপ সব শুনলো সুরভী। কিছু বললো না। রুদ্র ফোন রাখতেই জামাটা বদলে ও বেরিয়ে গেল অফিসের উদ্দেশ্যে।

    *****

    অফিস এমপ্লয়িদের নিয়ে কনফারেন্স রুমে মিটিংয়ে ব্যস্ত রুদ্র। কোনো প্রকার নক ছাড়াই ভেতরে চলে এল সুরভী। রুদ্রের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে সুরভী সবার উদ্দেশ্যে বললো,

    ww

    — “এক্সকিউজ আস প্লিজ!”

    চোখের পলকে পুরো রুম খালি হয়ে গেল। সবাই চলে যাবার পর, ম্যানেজারও বেরিয়ে যাবার আগে দরজা লক করে গেল। রুদ্রের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে সুরভী। ঠোঁটের কোনে লেগে আছে হাসি। ওর চোখে স্বস্তি ভরা নজরে চেয়ে রইলো রুদ্র।

    — “তোমাকে এখন ভীষণ প্রয়োজন ছিল।”

    — “জানি তো!”

    রুদ্রের দিকে হাত বাড়ালো সুরভী।

    — “তোমার রুমে চলো। বিজি শিডিউল থেকে আজ আধঘন্টা আমি চুরি করবো।” সুরভীকে সঙ্গে নিয়ে নিজের রুমে এল রুদ্র। বাইরে রেখে এল একঝাঁক আলোচক। পুরো অফিসে ফিসফাস চলছে সুরভীকে নিয়ে। এই প্রথম বসের মিসেস অফিসে পা রেখেছেন। তিনি দেখতে কেমন, কথা বলার ভঙ্গি কেমন, স্যারের সঙ্গে তার সম্পর্ক কেমন হতে পারে এই নিয়েই গোটাদিন আলোচনা চলবে এই অফিসে।

    তিন সিটের সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে সুরভী। ওর বুকে পিঠ ঠেকিয়ে, গলার কাছে মাথা রেখে চোখ বুজে শুয়ে পড়লো রুদ্র। তার ঠোঁটের ভাঁজে সিগারেট রেখে, লাইটারে তা জ্বালিয়ে দিলো সুরভী নিজেই। বুকের উপর থেকে গুনে গুনে তিনটা বাটন খুলে, শার্টের ভেতর রুদ্রের লোমশ বুকে হাতড়ে দিচ্ছে সে। সুরভীর হাতের উপর হাত রাখলো রুদ্র। বললো,

    — “আমাকে বুঝতে শিখে গেছ তুমি।”

    — “ভালোবাসি তোমাকে। তোমার মনে কী চলছে, কী চাইছো বুঝবো না আমি?”

    — “সত্যিই তোমাকে খুব করে চাইছিলাম। কাজের চাপে বাসায় যেতে পারছিলাম না।”

    — “সেজন্য আমিই চলে এলাম।”

    — “সুরভী আমার সব স্ট্রেস একদিকে, তোমার স্ট্রেস আরেকদিকে। নিজের একটু খেয়াল রেখো প্লিজ!”

    — “সামান্য একটু কেটেছেই যা! এত রিএ্যাক্ট কেন করছো তুমি?”

    — “করবোই। এসব বুঝবে না তুমি। তোমার কিছু হলে আমার ভালো লাগে না। ইলেকশনের ঝামেলা. অফিসের ঝামেলা এসব আমি ম্যানেজ করে ফেলবো। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠেই এসব দেখলাম। আমি এখনও মাথা থেকে ঝাড়তে পারছি না।”

    রুদ্রের মাথায় থুতনি রাখলো সুরভী,

    — “ছাড়ো না রুদ্র! যা হবার হয়েই গেছে।”

    — “আর যেন না হয়।”

    — “আছো তো তুমি আমার খেয়াল রাখার জন্য। তুমি থাকতে আমার কী হবে?”

    ৪৩

    দুপুরের খাবার শেষে বিছানায় একটুখানি গড়াগড়ি করছিল সুরভী। দরজায় কড়া পড়লো ওর। উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখতে পেল নাজনীন প্রায় কান্নামুখো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

    প্রায় আঁতকে উঠলো সুরভী,

    — “কী হয়েছে আপু? মা ঠিক আছেন?”

    — “আমি একটা ঝামেলা করে ফেলেছি ভাবী।”

    — “কী ঝামেলা?”

    ঘরের ভেতর ঢুকে দরজা আটকে দিলো নাজনীন।

    — “আমি আন্টির আংটি হারিয়ে ফেলেছি ভাবী। গত বছরই ভাইয়া আন্টিকে এটা গিফট করেছিল।”

    — “কখন? কিভাবে?”

    — “আন্টি গতকাল রাতে আমাকে বললো এটা আলমারীতে তুলে রাখো। আমি কথা বলছিলাম ফোনে, আমার হাতেই ছিল তখনও। তারপর কথা বলতে বলতে কোথায় যে রেখেছি মনে করতে পারছি না।”

    — “আলমারিতে খুঁজেছেন?”

    — “হ্যাঁ। সবখানে খুঁজছি গতরাত থেকে। পাইনি কোথাও।”

    — “মাকে বুঝিয়ে বলবো আমি। উনি রাগ করবেন না। জানেনই তো মা কেমন মানুষ!”

    সুরভীর হাত ধরে ঝরঝর করে কেঁদে দিলো নাজনীন।

    — “আন্টির সামনে ছোট হয়ে যাবো ভাবী। প্লিজ উনাকে এটা জানাবেন না। আমি অন্য একটা উপায় ভেবে রেখেছি।”

    — “কী?”

    — “ভাইয়া কোন দোকান থেকে আংটিটা নিয়েছে জানি আমি। একই ডিজাইনের নতুন আরেকটা কিনে আনবো। আমার জমানো টাকা আছে। অনায়াসে হয়ে যাবে।”

    — “এতগুলো টাকা অকারণে খরচ করার মানে হয় না। ভুলবশত হয়ে গেছে, ব্যস! মাকে বললেই হবে।”

    — “না ভাবী! আমি আন্টি. ভাইয়ার সামনে ছোট হতে পারবো না। আপনি চলুন না আমার সঙ্গে! এতগুলো টাকা নিয়ে একা বের হওয়ার সাহস হচ্ছে না।”

    কয়েক মুহূর্ত চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো সুরভী। কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না।

    — “ভাবী? চলুন না?

    — “আচ্ছা আমি তৈরী হয়ে আসছি।

    ভাগ্যক্রমে সেই দোকানেই হারানো আংটির ডিজাইন খুঁজে পাওয়া গেল। স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো নাজনীন। আংটি কিনে নিচে নামার সময় ও বললো,

    — “আমি ওয়াশরুমে যাবো ভাবী।”

    — “হ্যাঁ যান আপনি। আমি এখানে দাঁড়াচ্ছি।”

    — “ওদিকটা বেশ নীরব, একা যাবো না। কিছু মনে না করলে আপনি দাঁড়াবেন বাইরে?”

    — “সিওর!”

    ওয়াশরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সুরভী। সত্যিই এদিকটায় কেউ নেই। একেবারে সুনশান। নাজনীন ফিরে আসতে আসতে দেয়ালের গায়ে হেলান দিয়ে একটুখানি নিউজ ফিড স্ক্রল করে নিচ্ছিলো সুরভী।

    ঠিক তখনই হঠাৎ আসিফ এসে বুকের মধ্যে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওকে। ঘটনার আকস্মিকতায় নিজেকে থিতু করতে এক মুহূর্ত সময় নিলো সুরভী। আসিফ এখন জীবনের চরম অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষ। এই সময়ে এখানে তার উপস্থিতিটাও অনাকাঙ্ক্ষিত। তার এই আচরণের বিপরীতে বোধ ফিরতেও দু’দন্ড সময় লাগলো সুরভীর। শরীরের সমস্ত শক্তিতে এক ধাক্কায় আসিফকে সরিয়ে দিলো সে। কোনো প্রশ্ন, জবাবদিহিতা না চেয়ে সরাসরি চড় কষালো তার গালে। দ্বিতীয়বারের মতো চড় খেয়ে মেজাজ হারালো আসিফও। শুরু হলো দু’জনের বাকবিতন্ডা।

    মাত্রই বাসায় ফিরেছে রুদ্র। পুরো ঘর সুরভীকে খুঁজেও পাওয়া গেল না। কেউই ওর খোঁজ দিতে পারছে না। বাড়ির সিকিউরিটিরা শুধু দেখেছে নাজনীনকে সঙ্গে নিয়ে সুরভী বেরিয়েছে। সঙ্গে দু’জন গার্ড যেতে চেয়েছিল। সুরভী এক প্রকার জোর করে তাদের রেখে গেছে। রাগ হলো রুদ্রের। ও কি কোনোদিনও শুধরাবে না? বারবার ওকে বলা হয়েছে কখনো গার্ড ছাড়া বাসা থেকে বেরোবে না। সেইফটির দিকটা মাথায় রাখবে সবসময়। কাউকে তো সঙ্গে নিলোই না! আবার কাউকে জানিয়েও গেল না কোথায় যাচ্ছে।

    ঘুমে ছিলেন ফেরদৌসী। রুদ্রের ডাকে জেগেছেন তিনি। তারও জানা নেই নাজনীন আর সুরভী কোথায় গেছে। এমন কান্ড নাজনীন কখনো করে না। আজ কী হলো ওর?

    সুরভীকে কল করবে বলে মোবাইল পকেট থেকে বের করতেই হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ এল তার। অন করে দেখলো আসিফের বুকে তার স্ত্রী। দেখেই রুদ্রের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে এল। হাতের কাছে থাকা ফুলদানীটা আছাড় মারলো সে ফ্লোরে। কর্মচারীরা যে যার মতে আতংকে বসার ঘর ছেড়ে পালালো। শুভ আর ফেরদৌসী উদ্যত হলো তার ক্ষোভের কারণ জানতে।

    অনবরত দু’জন দু’পাশ থেকে সম্ভাব্য সমস্ত কারণ তাকে জিজ্ঞেস করছে। মোবাইলে কার মেসেজ এসেছে তার কারণ জানতে চাইছে। কারো কথার কোনো জবাব দিচ্ছে না রুদ্র। সোফায় পায়ের উপর পা তুলে, মাথা হেলিয়ে বসে আছে সে। চেহারা কঠিন রূপ নিয়েছে। এই রূপ শুভর বেশ চেনা। আজ কার কপালে যে শনি নেমে আসছে কে জানে!

    *****

    মাগরিব আজানের আগ মুহূর্তে ঘরে ফিরেছে সুরভী। রুদ্রকে দেখতে পেয়ে হাসিমুখে তার দিকে পা বাড়াচ্ছিল, তখনই ওর চোখ পড়লো ফ্লোরে ছিটিয়ে থাকা কাচে। রুদ্রও স্বাভাবিক নেই। খানিক দূরেই দাঁড়িয়ে আছে শুভ। পাশে বসে আছে শাশুড়ী। তাদের দুজনকে কেমন ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। ফেরদৌসী ইশারায় কী যেন বলতে চাইলো ওকে। বুঝলো না সুরভী। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রুদ্রের কাছে এসে দাঁড়ালো ও।

    কপালে হাত রেখে জানতে চাইলো,

    — “কী হয়েছে তোমার?”

    সুরভী কিছু বুঝে উঠার আগেই ওর ডানগালে সজোরে চড় বসালো রুদ্র। গালে হাত দিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সুরভী। ঠোঁটের কোণ ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে ওর। হা হয়ে রুদ্রের দিকে চেয়ে আছে শুভ। সুরভীকে চড় মারলো উনি! সত্যিই? পেছন থেকে ছেলেকে কঠিন স্বরে শাসালেন ফেরদৌসী,

    — “এতবড় স্পর্ধা তোমার! বউর গায়ে হাত তোলো তুমি? আশরাফ কখনো

    মেয়েদের এভাবে অসম্মান করতে শিখিয়েছে তোমাকে?”

    — “বাবা আমাকে সম্মানের উপযুক্ত মানুষকেই সম্মান দিতে শিখিয়েছে। কোনো প্রতারক চরিত্রহীনকে নয়।”

    রুদ্রের দিকে পাহাড়সম বিস্ময় নিয়ে তাকালো সুরভী।

    — “চরিত্রহীন কাকে বলছো তুমি?”

    — “নিজেকে চিনতে পারছো না সুরভী?”

    — “কী বলছো বুঝতে পারছো তো?”

    সুরভীর দিকে ফোন এগিয়ে দিলো রুদ্র। আসিফের বুকে নিজেকে দেখে আঁতকে উঠলো ও।

    — “এই ছবি কে তুললো?”

    — “ধরা পড়ে গেছো তাই না? কী বাজেভাবে আমাকে তুমি ঠকালো সুরভী! এত ভালোবাসা, এত যত্ন দিয়েও তোমাকে বাঁধতে পারলাম না! তোমার ঐ থার্ডক্লাস প্রেমিকের জন্য এখনও মন পড়ে আছে তোমার!”

    কান্না জুড়ে দিলো সুরভী। এগিয়ে এসে রুদ্রের হাতটা একবার ধরতে চাইলো ও। ধাক্কা মেরে রুদ্র তাকে দূরে সরিয়ে দিলো।

    — “দূরে থাকো তুমি। তোমার স্পর্শ আমি কোনোভাবেই চাই না।”

    — “ভুল বুঝছো তুমি!”

    — “কী ভুল বুঝছি? কোনটা আমার ভুল বলো?”

    — “আমি কোনো প্রতারণা করিনি। আমার পুরো কথাটা শুনবে তো তুমি!”

    — “যা দেখার দেখেছি। শোনার রুচি আমার নেই।”

    ছেলেকে ধমকালেন ফেরদৌসী।

    — “তুই এক তরফা বলেই যাচ্ছিস, বলেই যাচ্ছিস। আগে শুনবি তো ও কী বলতে চাইছে।”

    — “কিচ্ছু শুনবো না আমি। দিনভর আমাকে ভালোবাসি বলে, গোপনে প্রেমিকের সঙ্গে তোমার দেখা করতে যাওয়া! এমন মেয়ে আমি আমার ঘরে রাখবো না। বেরিয়ে যাও তুমি। এক্ষুনি।”

    বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়াচ্ছে। আর চুপ থাকতে ইচ্ছে হলো না শুভর। সুরভীর হাত থেকে রুদ্রের ফোন নিয়ে, ছবিটা একবার দেখলো সে।

    — “ভাই, কে পাঠিয়েছে এই ছবি?”

    — “জানি না।”

    — “স্পষ্ট বুঝাই যাচ্ছে পুরো সিনটা প্রি প্ল্যানড। নয়তো ছবি তোলার জন্য কে দাঁড়িয়ে থাকবে ওখানে?”

    শুভর কথা কানেই তুললো না রুদ্র। প্রচন্ড রাগে চোখ-কান সব বন্ধ হয়ে আছে তার। সুরভীর গাল চেপে ধরলো সে। প্রচন্ড ঘৃণা ভরে তাকালো সুরভীর চোখে।

    — “আমি আর তোমার এই নোংরা চেহারাটা দেখতে চাই না। এক্ষুনি বের হবে তুমি। আর কোনোদিন আমার সামনে এসো না। আজ যেভাবে প্রেমিকের বুকে মিশে ছিলে, সেভাবেই প্রেমিকের বুকে মাথা রেখে শহর ছাড়বে তুমি। আমার চোখের সামনে দু’টোর একটাকেও যদি দেখি না, একদম টুকরো করে ফেলবো।”

    পৃথিবীর সমস্ত অসহায়ত্ব আজ সুরভীর চোখ জুড়ে। বাড়ির কর্মচারীরা রান্নাঘরের ওদিক থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে ওকে। কান পেতে শুনছে রুদ্রের সমস্ত অপবাদ। যে মানুষটা রাণী করে রেখেছিল সেই মানুষটা তাকে চরিত্রহীন অপবাদ দিতে দ্বিতীয়বার ভাবলো না? তাও এতগুলো লোকের সামনে? এই অপমানের গ্লানি সয়ে যাবার ক্ষমতা ওর নেই। ভালোবাসার মানুষটার অমন কুৎসিত প্রত্যাখ্যানের পর এই জীবন বয়ে যাওয়া বড্ড কঠিন হবে। প্রতিটা নিঃশ্বাস যেন আজ নিজের ওজনের চেয়েও ভারী মনে হচ্ছে। আর কোনো সাফাই সুরভীর দিতে ইচ্ছে হলো না। চরিত্রহীন অপবাদের কলঙ্ক নিয়েই খালি পায়ে বেরিয়ে এল ও রুদ্রের বাড়ি ছেড়ে। পেছন থেকে শাশুড়ীর ডাক শুনতে পাচ্ছে ও। তবুও থামলো না। যাকে কেন্দ্র করে এই বাড়িতে আসা, সে আর তাকে চায় না। সমস্ত সম্মান খোয়ানো শেষ। কিছুই নেই এখানে আর অবশিষ্ট। ফেরার পথও নেই।

    পেছন পেছন আসছে শুভ। কতভাবে বুঝিয়ে বলছে, “থেকে যান। কেউ ষড়যন্ত্র করেছে। খুঁজে বের করে সব ঠিক করে দেবো আমি।”

    তবুও থামলো না সুরভী। তৃতীয়পক্ষের ষড়যন্ত্রের কাছে হেরে যাবে এতটাও ঠুনকো সম্পর্ক তো ছিল না তাদের। একটা ছবিকে কেন্দ্র করে চরিত্রহীনের অপবাদ দিয়ে দিলো এত ভালোবাসার মানুষটা! এই অপমানের কাছে শুভর আশ্বাস তুচ্ছ!

    ৪৪

    মা-বাবার কাছে ফিরে এসেছে সুরভী। দরজা খুলে মেয়ের অমন বিধ্বস্থ চেহারা, কাটা ঠোঁট দেখেই চিৎকার শুরু করলেন মিতা।

    — “মাহিনের আব্বু? আমার মেয়েটার কী হলো গো?”

    স্ত্রীর চিৎকারে রীতিমতো ছুটে এলেন শরীফ সাহেব।

    — “কী হয়েছে মা তোর?”

    মেয়ের মাথায় হাত রাখতেই বাবার বুকে আছড়ে পড়লো সে। চিৎকার করে কাঁদছে।

    — “ও আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে আব্বু। বলেছে আমি চরিত্রহীন। কিন্তু আমি তো চরিত্রহীন না আব্বু। তুমি তো জানো! জানো না? এতবড় অপবাদ ও আমাকে কী করে দিলো আব্বু? এক মুহূর্তে রাণী বানিয়ে আবার অন্য মুহূর্তে এভাবে ও আমাকে পথে ছুঁড়ে মারলো কেমন করে, বলো না আমাকে?”

    মেয়েকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলেন শরীফ সাহেব। তিনি জানতেন এই সংসার টিকবে না। এভাবেই একদিন তার মেয়েকে রুদ্র ছুঁড়ে দেবে, প্রভাবশালী ধনীরা এমনটাই করে। তার মেয়েকে রুদ্র কোনোদিন ভালোবাসেনি। কোনোদিনও না। খেলার পুতুল বানিয়ে ঘরে সাজিয়ে রেখেছিল দুইমাস। খেলা শেষ, তাই ছুঁড়ে ফেললো এভাবে। চোখের কোল বেয়ে অশ্রু গড়ালো তার। চাপা দীর্ঘশ্বাসে সৃষ্টিকর্তার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়লেন তিনি, “কোন পাপের শাস্তি ছিল এটা?”

    — “অই হই হই রঙ্গীলা, রঙ্গীলা রে
    রিমঝিম ঝিম বরষায় মন নিলা রে…”

    কালজয়ী নায়ক রাজ্জাক আর নায়িকা শাবানা অভিনীত গান বাজছে আজগরের টেলিভিশনে। সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে পা দুলিয়ে গান শুনছে সে। মনে আজ তার যুদ্ধ জয়ের খুশি। যে রুদ্রকে নিজ ইশারায় নাচানো ছিল সমুদ্রকে বোতলবন্দী করার মতো অসম্ভব, সেই রুদ্রকে নিজ ইশারায় নাচাচ্ছে সে! পাশেই বসে ছিল হাবিব। খপ করে তার হাতটা ধরলো আজগর।

    বিজ্ঞের ন্যায় বলতে লাগলো,

    — “মানুষের সবচেয়ে বড় দোষ কী, জানো?”

    — “কী?”

    — “সে তার দুর্বলতার জায়গায় অন্ধ, বধির। তার দুর্বলতা নিয়ে বাইরের লোক একশো নিন্দা করুক, সে কখনো তা যাচাই করবে না। সত্যটা দেখলেও না দেখার ভান ধরে বসে থাকবে। অন্যায় দেখলেও মেনে নেবে। গলা উঁচিয়ে সবার কাছে নিজের দুর্বলতাকে শ্রেষ্ঠ, নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইবে। কিন্তু সেই দুর্বলতাই যখন তার সঙ্গে প্রতারণা করবে, মুখ ফিরিয়ে নেবে তখন আর সেটা মানুষ যাচাই করে না, সত্যিই কি প্রতারণা করলো? নাকি তার ভ্রম? নাকি এর পেছনে গুরুতর কোনো কারণ আছে? তৎক্ষনাৎ মানুষ অন্ধ-বধির হয়ে যায়। রাগ, ক্ষোভ আর কষ্ট ছাড়া আর কিছুই নিজের মাঝে অবশিষ্ট থাকে না। হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়। দুর্বলরা কাঁদে, নিজেকে ভাঙে। সবলরা প্রতিশোধ নেয়, যে প্রতারণা করলো তাকে ভাঙে। নিজের সঙ্গে হওয়া প্রতারণা মানুষ হজম করতে পারে না। সমস্ত যুক্তি, সত্যের উর্ধ্বে থাকে তাদের কষ্ট আর ক্ষোভ। তারপর যখন সময় গড়ায়, ধীরে ধীরে মানুষ শান্ত হয়, তখন যুক্তি সত্য তার মাথায় আঁটে। কিন্তু ততদিনে তো সব শেষ। সম্পর্ক শেষ, ভালোবাসার মানুষও শেষ।”

    — “ঠিক। সবাই না হলেও, বেশীরভাগ মানুষই এমন।”

    — “সেই বেশিরভাগের মাঝে আমাদের রুদ্রও একজন!” হাসলো হাবিব। বললো,

    — “পাহাড়ের মতো বুক চিতিয়ে যে দাঁড়িয়ে থাকতো সবসময়, কোনোদিন যাকে কেউ টলাতে পারেনি, হারাতে পারেনি সেই ছেলেটা কিনা একটা মেয়ের কারণে এভাবে আমাদের কাছে হারলো!”

    — “আমার আনন্দ ওর হার নিয়ে না। ওর পতন নিয়ে, ওর ভাঙন নিয়ে, রুদ্র এখনো অন্ধ হয়ে আছে। টের পাচ্ছে না কিছুই। কিন্তু যখন জানবে ওর সমস্ত কিছু ভুল ছিল, এত ভালোবাসার মানুষটাকে ঘরভর্তি চাকর বাকরের সামনে চরিত্রহীনের সিল লাগিয়ে ঘরছাড়া করেছে, সেই অপমান সইতে না পেরে বউ আত্মহত্যা করেছে; তার স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ সে নিজে। এই উপলব্ধির পর বাঁচবে ও? ভেতরে ভেতরে মরে যাবে চিরজীবনের জন্য। পুরুষ মানুষের ভালোবাসা বড় কঠিন, যাকে একবার মনের সবটা দিয়েছে তার কাছে নিজেকেই সঁপে দিয়েছে। এই ধকল রুদ্র নিতে পারবে না। আমার অর্জনটা ঠিক এখানেই।”

    — “সুপারম্যান হয়ে আদনানের বউকে বাঁচিয়েছে। জামাই বউ দুটোকে উধাও করে সব ঠিক করে ফেলেছে। এখন নিজের বউকে বাঁচাবে কে?”

    — “জিজ্ঞেস করো গাধা মজনুটাকে!” অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো দু’জনই।

    *****

    নিজের ঘরে দরজা আটকে বসে আছে রুদ্র। সন্ধ্যের পর আর দরজা খোলেনি। শুভও রয়ে গেছে এখানেই। আসিফের অপেক্ষায় আছে। নন্দীকে পাঠিয়েছে তাকে খুঁজে বের করতে। এখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি তার। তাকে পেলেই পুরো জট খুলে যাবে। নাজনীন আজ ফোনে ভীষণ ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পরপর কাকে যেন টেক্সট করছে। চোখ এড়ালো না ফেরদৌসীর। কালে কালে বয়স তো আর কম হয়নি I এই দু’চোখে মানুষও কম দেখা হয়নি। সেই সন্ধ্যে থেকে হিসেব কষছিলেন। এই বেলা এসে হিসেব বুঝি মিলেই গেল!

    দরজায় দাঁড়িয়ে শুভকে ডাকলেন ফেরদৌসী,

    — “শুভ…”

    — “জি আন্টি?”

    — “ঘরে এসো তো বাবা!”

    ফেরদৌসীর ইশারা মতে ঘরের দরজা আটকে তার পাশে বসলো শুভ।

    — “ঐ ছেলেটাকে পেলে?”

    — “এখনও না।”

    — “বিভীষণকে বোধহয় আন্দাজ করতে পারছি।”

    — “কে?”

    — “নাজনীন।”

    — “কী করেছে?”

    — “রুদ্রের বিয়ের পর থেকে ওর আচরণে বেশ পরিবর্তন দেখছিলাম। সারাক্ষণ বিষণ্নতা, উদাসীনতা। জোর করে হাসে, কথা বলে। অনেকবছর ধরে আমার সঙ্গে আছে তো! বুঝি আমি এসব। কারণ জিজ্ঞেস করেছি, বলেনি ও কখনো। সুরভীকে নিয়ে বহুবার আমার কান ভারী করতে চেয়েছে। মেয়েটাকে আমি অনেক আদর করতাম। কিন্তু সুরভীকে নিয়ে উল্টাপাল্টা বলার কারণে ও আমার মন থেকে একটু হলেও উঠে গেছে।”

    — “জেলাসী?”

    — “হ্যাঁ।”

    — “সকাল থেকে দেখছি ও ফোনে খুব ব্যস্ত। এখনও বাইরে কথা বলছে ফোনে। সুরভী নাকি ওকে নিয়ে শপিংমলে গিয়েছিল, আমার বিশ্বাস হয়নি। ওকে নিয়ে সুরভীর শপিংমলে যাবার প্রশ্নই আসে না। তাও আবার কাউকে না জানিয়ে!”

    — “সেটাই তো! প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে গেলে নাজনীনকে কেন নেবে? একাই যেত।”

    — “প্রশ্ন তো এখানেই শুভ!”

    এক সেকেন্ড আর দেরী করলো না শুভ। দরজা খুলে বেরিয়ে গেল বাড়ির পেছনে। একটানে নাজনীনের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো সে।

    ভয়ে চিৎকার করে উঠলো নাজনীন। চেহারা জুড়ে তার শুধুই আতংক।

    দাঁতে দাঁত চেপে শুভ বললো,

    — “এত কিসের ভয় তোমার? হুঁ?”

    কল লিস্ট চেক করে দেখলো হাবিবের নাম্বার, আসিফের নাম্বার। আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না তার। নাজনীনের চুলের মুঠি টেনে ধরলো শুভ।

    — “কার জীবনে বিষ ঢালতে চেয়েছিস, জানা আছে তোর? ঢাল হয়ে এই মানুষটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি আজ পাঁচবছর। হোক সেটা কারো বন্দুকের গুলি কিংবা ষড়যন্ত্র, কোনোকিছুই যেন তাকে ছুঁতে না পারে সেই কাজটাই জান প্রাণ দিয়ে করছি এতদিন ধরে। আর তুই কিনা নাকের নিচে বসে এতবড় কান্ড সেরে ফেললি?”

    চিৎকার শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে এল রুদ্র। পেছনের লিভিংয়ে ততক্ষণে জড়ো হয়ে গেছে বাড়ির অন্যান্য কর্মচারীরা। ধীর পায়ে এদিকে এসে পৌঁছে গেছেন ফেরদৌসীও।

    — “কী হয়েছে শুভ?”

    নাজনীনের গলায় পিস্তল ঠেকালো শুভ।

    — “বল কী করেছিস? নয়তো গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেবো!”

    হেঁচকি তুলে কাঁদছে নাজনীন। ভয়ে সমস্ত কথা হারিয়ে গেছে ওর। শুভর হাতে নাজনীনের ফোন। ওখানেই কিছু আছে হয়তো!

    আন্দাজবশত শুভর হাত থেকে মোবাইল নিলো রুদ্র। কল লিস্ট দেখে চোখ

    কপালে উঠে গেছে তার। ইনবক্স চেক করে পাওয়া গেছে সুরভীকে পাঠানো চারটা মেসেজ। প্রতিটা মেসেজের সারমর্ম, পুরো বাড়িজুড়ে সুরভীর নামে শুধুই ছিঃ ছিঃ চলছে। এই রটনা বাইরে রটতেও সময় লাগবে না। রুদ্র নিজ দায়িত্বে সব রটাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মা-ও! তার ছায়াও আর কেউ দেখতে চায় না। বেঁচে থাকতে এই মুখ আর সে দেখাবে কোথায়?

    ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে চারটা মেসেজের মূল ভাবার্থ একটাই যেখানে পরোক্ষভাবে সুরভীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা হচ্ছে ঠিক যেমনটা হয়েছিল সোমার বেলায়।

    চোখে সব ঝাপসা হতে লাগলো রুদ্রের। নাজনীনের গাল চেপে ধরলো সে.

    — “বিনিময়ে কী দিয়েছে তোকে?”

    — “বিনিময়ে শুধু আপনাকে চাই। আর কিছু না! এতগুলো বছর ধরে আপনার চোখের সামনে ঘুরছি, আপনার মাকে নিজের মায়ের চেয়ে বেশি আগলে রাখছি। আপনার পুরো সংসারের খেয়াল রাখছি, মেহমান এলে নিজে দাঁড়িয়ে আপ্যায়ন করছি। কেন করছি এতসব? শুধুই মাস শেষে টাকা পাবো বলে? না! আমি আপনাকে চাই। আপনার জন্য করেছি সব।”

    পিনপতন নীরবতা নেমে এল এখানে। কেউ কোনো শব্দ করছে না। স্তব্ধ আট জোড়া চোখ চেয়ে আছে নাজনীনের দিকে। হাউমাউ করে কাঁদছে ও।

    এসব কিছু পেরিয়ে রুদ্রের মনে পড়লো সুরভীর কথা। ঠিকঠাক আছে তো ও? বেঁচে আছে কি? ভয়ে বুঝি হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে এল তার। নিঃশ্বাস আটকে আসছে! নাজনীনকে দেখার সময় আপাতত ওর নেই। সুরভীর কাছে যেতে হবে। শুভর হাত টেনে ছুটলো রুদ্র।

    — “জলদি সুরভীর বাসায় চলো, কিছু একটা ঘটে যাবে নয়তো!”

    ফিনাইলের বোতলটা মুখে নেবার আগে আরেকবার মেসেজগুলোতে চোখ বুলালো সুরভী। যার দিকে কেউ কোনোদিন আঙুল তুলে কথা বলতে পারেনি, আজ তাকেই কিনা এতগুলো মানুষ চরিত্রহীনা বলে ধিক্কার জানাচ্ছে? আর কিছুদিন বাদে রুদ্র তালাকের নোটিশ পাঠাবে। সবার সামনে কারণ হিসেবে তাকে চরিত্রহীনাই উল্লেখ করা হবে। মা-বাবার কেমন অপমানবোধ হবে সেদিন! আর ভাবতে পারলো না সুরভী। ক্যাপ খুলে বোতলের ফিনাইল ঢেলে দিলো গলায়।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবাতাসে গুনগুন – খাদিজা মিম
    Next Article পৃথিবীর পথে – ম্যাক্সিম গোর্কি (অনুবাদ : খায়রুল আলম মনি)

    Related Articles

    খাদিজা মিম

    বাতাসে গুনগুন – খাদিজা মিম

    August 6, 2025
    খাদিজা মিম

    ইট’স কমপ্লিকেটেড – খাদিজা মিম

    August 6, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Our Picks

    কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    সুখের সন্ধানে – বার্ট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025

    অপেক্ষবাদের অ, আ, ক, খ – বারট্রান্ড রাসেল

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }