Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    রূপকথার রাজারানি

    উপন্যাস সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এক পাতা গল্প10 Mins Read0

    রূপকথার রাজারানি

    এক দেশে এক রাজা ছিল, তার একটা চোখ পাথরের।

    সেই রাজার তিন রানি, একজন জাদুবিদ্যা জানে, একজন সারাদিন ঘুমোয় আর সারারাত জাগে, সবচেয়ে ছোট রানির একটাও দাঁত নেই। জন্ম থেকেই তার দাঁত ওঠেনি, তাই সে চোখ দিয়ে হাসে।

    যে রানি জাদু জানে, তার নাম আশ্চর্যময়ী।

    আর নিশাচরী রানির নাম চাঁদনি।

    ছোটরানির নাম ফুটফুটি, এটাই তার ভালো নাম আর ডাক নাম।

    রাজার নাম রাজচন্দ্র, তাই শুধু রাজা বললেই চলে। এই রাজাটি খুব চিনেবাদাম ভালোবাসে। তাই তার রাজ পোশাকের দু-পকেট ভরতি চিনেবাদাম থাকে সবসময়।

    আশ্চর্যময়ী ইচ্ছেমতন ঝড়-বৃষ্টি ডেকে আনতে পারে। প্রাসাদের অলিন্দে দাঁড়িয়ে এক-এক সন্ধেবেলা সে আকাশের দিকে দু-হাত তুলে বলে, আয়-আয়। একটু পরেই শোঁ-শোঁ শব্দ শুরু হয়।

    রাজার বড় দুঃখ, তার কোনও দুঃখবোধ নেই।

    দুঃখ কাকে বলে, তা সে জানেই না। কোনওদিন তার এক ফোঁটাও চোখের জল পড়েনি।

    একটা চোখ না থাকলেও কি মানুষ কাঁদে না? জন্মান্ধরাও তো কাঁদে। এই রাজা কাঁদতে শিখলই না!

    নিশাচরী মেজরানি রাত্তিরবেলা স্নান করতে ভালোবাসে।

    রাজপ্রাসাদের পেছন দিকে অনেকটা বাগান। তার পাশেই একটা ছোট নদী। নদীটি ছোট হলেও সারা বছরই ছলছল করে জলস্রোত।

    রাত্তিরবেলা স্নান করলে আব্রু লাগে না। মধ্যরাত্রি পেরিয়ে গেলে ছোটো নদীটিতে নেমে চাঁদনি মনের আনন্দে সাঁতার কাটে।

    আসল রাজ্য শাসন করে মন্ত্রী, সেনাপতি আর কোটাল। রাজা শুধু চিনেবাদাম খায় আর গল্প শোনে। দুঃখের গল্প। রোজই একজন দুজন লেখক-কবিকে ডেকে আনা হয়, তারা প্রাণপণে দুঃখের কাহিনি বানায়, রাজাকে কাঁদাতে পারলেই তো মিলবে প্রচুর পারিতোষিক। এখনও পর্যন্ত কেউই সক্ষম হয়নি।

    রাজপুত্র কিংবা রাজকন্যা কি নেই? আছে কয়েকজন, কিন্তু তারা এলেবেলে। তারা গায়ে ফুঁ-দিয়ে বেড়ায়।

    বিকেলবেলা যখন কবি-লেখকরা গল্প-গাথা শোনাতে আসে, তখন আশ্চর্যময়ীকে ধারেকাছে দেখা যায় না। চাঁদনি তখন ঘুমোয়। শুধু ফুটফুটি মাঝে মাঝে এসে রাজার পাশে বসে।

    ফুটফুটির বয়েস মাত্র তেইশ। এই বয়েসের মেয়ে সম্পূর্ণ ফোকলা, এরকম কেউ কখনও দেখেনি। তার হাসি-বিচ্ছুরিত চোখ দুটির জন্য তার মুখে একটা সুন্দর আভা ফুটে ওঠে, তাই তাকে বিয়ে করার জন্য অনেক হোমরাচোমরা রাজা, মহারাজা, শ্ৰেষ্ঠী, যোদ্ধারা উঠে পড়ে লেগেছিল। রাজা রাজচন্দ্র অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে ফুটফুটিকে জিতে এনেছেন।

    কেউ একজন প্রস্তাব দিয়েছিল, ছোটরানিকে নকল দাঁত পরিয়ে দিলেই তো হয়। আজকাল কত রকম ব্যবস্থা হয়েছে।

    তাই শুনে রাজা এমন চটে গেল যে তখনই সে ব্যক্তিকে পাঠিয়ে দিল নির্বাসনে।

    ফুটফুটিকে সঙ্গে নিয়ে গল্প শোনা মহা মুশকিলের ব্যাপার। অতি কাঁচা দুঃখের গল্প শুনতে শুনতে মাঝপথে তার চোখের হাসি মুছে যায়। টপ-টপ করে জল ঝরতে থাকে, তারপর সে। ফুপিয়ে ওঠে।

    তা দেখে রাজার হাসি পায়।

    এ-রাজা গান-বাজনা বিশেষ পছন্দ করে না। নর্তকী-বাঈজি নিয়ে রাত্রি যাপনের শখ নেই। তার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে চিনেবাদামের খোসা ভাঙার শব্দ। মুচুর-মুচ। মুচুর-মুচ।

    তবু এ-প্রাসাদের অন্দরে কেউ একজন লুকিয়ে-লুকিয়ে বাঁশি বাজায়। যখন-তখন বেজে ওঠে বাঁশি। বাঁশির শব্দ গোপন রাখা যায় না। তবে যে বাজায়, সে থাকে লুকিয়ে।

    ফুটফুটির কান্না শুরু হলে আর থামতেই চায় না। তখন রাজা রক্তচক্ষে তাকায় সেদিনকার আহূত কবিটির দিকে। সে যে কাজের জন্য এসেছিল, তার উলটো ফল ফলেছে।

    কবিটি ভয়ে পালায়। রাজা মুঠো মুঠো চিনেবাদাম খেয়ে মেজাজ শান্ত রাখার চেষ্টা করে, রাগ কমতে শুরু করলে হাসে আপন মনে।

    আশ্চর্যময়ী একদিন জিগ্যেস করেছিল, হ্যাঁ রে ফুটফুটি, তুই ওইসব পচা-পচা গল্প শুনে কাঁদিস কেন রে? সবই তো একঘেয়ে। আমি দু-একবার শুনে ফেলেছি। গল্পগুলোতে থাকে শুধু কারা খেতে পায় না, খিদের জ্বালায় মরে কিংবা বন্যায় বাড়িঘর ডুবে যায়। আর কবিগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই সীতাহরণ কিংবা দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ, নামগুলো খালি বদলে দেয়। অন্যের দুঃখের কথা শুনে কাঁদবার কী আছে!

    ফুটফুটি চোখের পাতা বিস্ফারিত করে বলে, ওমা, আমি অন্যের দুঃখের কথা শুনে কাঁদতে যাব কোন দুঃখে? যেই ওসব গল্প শুনি, অমনি আমার নিজের দুঃখগুলোর কথা মনে পড়ে যায়।

    আশ্চর্যময়ীর আরও আশ্চর্য হয়ে বলে, তোর আবার কীসের দুঃখ রে?

    ফুটফুটি বলে, আছে গো দিদি! কত দুঃখ। মেয়েমানুষের কি দুঃখের শেষ আছে?

    আশ্চর্যময়ী গালে হাত দিয়ে বলে, শোনো মেয়ের কথা! আমরা কি মেয়েমানুষ নাকি? আমরা তো রানি। আমাদের কি রান্নাঘরে গা-পোড়াতে হয়, না ব্যাটাছেলের জামা-কাপড় কাচতে হয়? আমাদের কি পায়ে কাঁটা ফোটে? আমাদের কি পরপুরুষরা টানাটানি করে?

    ফুটফুটি জিগ্যেস করে, দিদি গো, তোমার কোনও দুঃখ নেই? সারা জীবনে একটাও?

    আশ্চর্যময়ী একটু চিন্তা করে বলে, একটা না হোক আধখানা আছে। সে কথা আমি কারওকে বলি না, সেজন্য আমার কান্নাও পায় না।

    চাঁদনির দুঃখ আছে কি না, তা ঠিক জানা যায় না। সে প্রায় কথাই বলে না কারও সঙ্গে। কথা বলবে কখন, সারাদিন তো সে ঘুমিয়েই থাকে। আর যখন সে জাগ্রত, তখন অন্যেরা ঘুমন্ত।

    রাত্রির তৃতীয় প্রহর পার হলে, যখন রোগী, ভোগী, এমনকী চোরেরাও ঘুমিয়ে পড়ে, তখন চাঁদনি প্রাসাদের আনাচেকানাচে ঘুরে বেড়ায়। খানিক আগে নদীতে সাঁতার কেটে এসেছে বলে তার শরীরটা চনমনে হয়ে আছে, অঙ্গে বেশি পোশাকের বালাই নেই, শুধু ঝুমঝুম করে বাজে তার। পায়ের নূপুর।

    এক-একদিন দেখা হয় একটা ভূতের সঙ্গে। ভূতটাকে প্রায় পোষা ভূত বলা যায়। সে দাঁড়িয়ে। থাকে সিঁড়ির নীচে, ঝাপসা-ঝাপসা চেহারা। চাঁদনি তাকে মোটেই ভয় পায় না।

    চাঁদনি তাকে জিগ্যেস করে, আজ কেমন আছিস রে ভুতু?

    ভূতটি আর্তস্বরে বলে ওঠে, আমাকে শরীর দাও, শরীর দাও।

    চাঁদনি বলে, সে আমি কী করে দেব? তুই কেন মরতে গিয়েছিলি? মরার পর কি শরীর থাকে?

    ভূতটি বলল, কেউ যদি খুব করে চায়, তা হলে আমরা শরীর নিয়ে ফিরে আসতে পারি। তুমি কি একটিবারও আমাকে চাইবে না?

    চাঁদনি বলে, তুই আমার সঙ্গে সাঁতার কাটতে পারবি?

    ভূতটি বলল, ধ্যাত, কী যে বল? ভূতেরা কখনও জলে নামে নাকি? কোনও গল্পে শুনেছ?

    চাঁদনি বলল, তা হলে থাক তুই ভূত হয়ে। আজ পর্যন্ত আমি একজনও সাঁতারের সঙ্গী পেলাম না।

    প্রাসাদের ছাদে দুপুরবেলা দাঁড়িয়ে আছে আশ্চর্যময়ী। ঝড়ের বেগ বাড়ছে ক্রমশ। এখনও বৃষ্টির দেখা নেই, কালো আকাশ চিরে ঝলসাচ্ছে লকলকে বিদ্যুৎ। ভেঙে পড়ছে গাছের ডাল। পাখিরা সামলাতে পারছে না সেই ঝড়ের তীব্রতা। গাছের শুকনো পাতার মতন মাটিতে ঝরে পড়ছে মৃত পাখি।

    আশ্চর্যময়ী দাঁড়িয়ে আছে স্থির হয়, পতাকার মতন উড়ছে তার শাড়ির আঁচল। আবেশে চোখ বুজে যাচ্ছে তার, সারা শরীরে যেন রভসের সুখ।

    একটু পরে রাজা উঠে এল ছাদে।

    বড়রানির কাঁধে হাত রেখে বলল, আশ্চর্য, তুমি এই ঝড় ঢেকে এনেছ?

    রানি উত্তর দিল না।

    রাজা বলল, এবার থামাও। শুনলাম নাকি প্রজাদের বাড়িঘর, ভেঙে পড়ছে।

    ঝড়কে ডেকে আনতে পারে আশ্চর্যময়ী, কিন্তু থামাবার ক্ষমতা তার নেই। এখানে তার জাদুবিদ্যা নিস্ফল।

    কথার উত্তর না পেয়ে রাজা আশ্চর্যময়ীর চুলের মুঠি ধরে প্রবল ধাক্কায় তাকে ফেলে দিল মাটিতে। আশ্চর্যময়ী সঙ্গে-সঙ্গে চেতনাহীন।

    তারপরই কমতে লাগল ঝড়।

    আকাশের দিকে তাকিয়ে রাজা বলল, বাঃ, তা হলে আমিও একটা জাদু শিখলাম!

    নিত্য নতুন কবি ও কথাকার খুঁজে বার করাই দুরূহ হয়ে উঠেছে। সবাই তো ব্যর্থ হয়েছে রাজাকে কাঁদাতে। আর নতুন লেখক পাওয়া যাবে কোথায়?

    মন্ত্রীমশাই হয়রান। সেনাপতিও কোটালকে অলিতে-গলিতে খোঁজাখুঁজি করতে পাঠায়।

    ভীমরাও নামে একজন বিদ্রোহী প্রজাদের খেপিয়ে বেড়াচ্ছে, তাকে ধরা যাচ্ছে না কিছুতেই। মাঝে-মাঝেই একজন দুজন এরকম মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তারপর তাদের ছিন্ন মুণ্ড ধুলোয় গড়ায়। এই ভীমরাও অনেকদিন পালিয়ে বেড়াচ্ছে, তাকে নিয়েও মন্ত্রীমশাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে আছে। অবশ্য ধরা সে পড়বেই, শুধু কয়েকটা দিনের অপেক্ষা।

    একদিন এক রাজপুত্র এক শ্রমিক পল্লিতে গিয়ে…। থাক, রাজপুত্রদের কথা থাক। এক গল্পে বেশি চরিত্র থাকলে মুশকিল হয়।

    সন্ধে হয়-হয়, হঠাৎ বাঁশির শব্দ শুনে রাজা উৎকর্ণ হয়ে উঠল। কে বাঁশি বাজায়? সেপাই, শান্ত্রী, প্রহরী-দ্বারপাল কেউ জানে না। বাইরের কেউ লুকিয়ে আছে রাজপ্রাসাদে? যদি বদ মতলবে কেউ লুকিয়ে থাকতে চায়, তা হলে বাঁশি বাজিয়ে জানান দেবে কেন?

    রাজার মনে খটকা লেগে থাকে। চিনেবাদাম খেতে থাকে মুঠো-মুঠো।

    ফুটফুটির ঘরের সামনের বারান্দায় অনেকগুলো পাখির খাঁচা। এইসব পোষা পাখিগুলোকে ফুটফুটি নিজের হাতে ছোলা খাওয়ায়। ওদের মধ্যে তার সবচেয়ে প্রিয় একটা ময়না।

    ফুটফুটির সঙ্গে সেই ময়নার অনেক মনের কথা হয়। ময়নাটা মানুষের মতন কথা বলতে পারে না, ফুটফুটিই পাখিদের ভাষা জানে। ফুটফুটির ঘরের দিকে যেতে যেতে রাজা অনেক সময় শোনেন সেই পাখি আর তাঁর ছোটো রানির বাক্যালাপ, কিছুই বুঝতে পারেন না।

    রাজা যে সব সময় প্রাসাদেই বসে থাকেন, তা নয়। মাঝে-মাঝে তিনি নগর পরিভ্রমণে যান । ছদ্মবেশে। কোনওদিন ফকির-দরবেশ সাজেন, কোনওদিন স্ত্রীলোক। নগর ছাড়িয়ে পল্লীগ্রামেও চলে যান, শুনতে পান মানুষের ঝগড়াঝাঁটি, কান্নাকাটি। এ সবও যেন পাখির ভাষার মতন, কিছুই তাঁর বোধগম্য হয় না।

    একদিন একজন নবীন কবিকে ধরে আনা হল, তার নাম সুজয়। এর আগে কয়েকবার তাকে অনুরোধ করা হয়েছিল, সে আসতে চায়নি।

    কবিটি বলল, মহারাজ, আপনাকে কাঁদাবার মতন কোনও গল্প-কবিতা আমার জানা নেই। তাই আমি এতদিন আসিনি। তবে, আমি একজনের জীবনী লিখছি, সেটা শেষ হলে আপনাকে শোনাবার ইচ্ছে আছে।

    রাজা জিগ্যেস করল, কার জীবনী?

    সুজয় বলল, আপনার।

    রাজা ভুরু কুঁচকে, চিবুকে হাত ঘষতে-ঘষতে বলল, আমার? তুমি আমার জীবনের কতটুকু জানো? কবি বলল, আপনার জন্মকাহিনি কিংবা বাল্যজীবন সম্পর্কে কিছুই জানি না বটে, কিন্তু আমি লিখছি আপনার ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে।

    আমার পরজন্ম নিয়ে?

    না, না, এই জন্মই। অদূর ভবিষ্যতের সব কথা। ধরুন, শুরু হয়েছে এ-বছর থেকেই। এখনও অবশ্য পুরোটা শেষ হয়নি।

    যতখানি লিখেছ তাই-ই শোনাও।

    কবিটি মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে পাঠ করল সেই আখ্যান কাব্য।

    সব শুনে রাজা গম্ভীরভাবে জিগ্যেস করল, এ সবই আজগুবি কাহিনি।

    কবি বলল, না মহারাজ, সত্য ঘটনা অবলম্বনে।

    রাজা বলল, যা এখনও ঘটেনি, তা সত্য হবে কি না, তুমি জানলে কী করে?

    কবি বলল, রামের জন্ম না হতেই রামায়ণ লেখা হয়নি? সব ঠিক-ঠিক মিলেছিল কি না? কবিরা এরকম পারে।

    রাজা বলল, আচ্ছা, পরবর্তী সাতটা দিন দেখা যাক!

    সেই যে একদিন ছাদে উঠে রাজা আশ্চর্যময়ীর কেশাকর্ষণ করে ঝড় থামিয়েছিল, তারপর থেকে আর একবারও ঝড় আসেনি। বৃষ্টিময় মেঘও আসেনি। খর তপ্ত হচ্ছে বাতাস।

    এর মধ্যে আশ্চর্যময়ীর সঙ্গেও রাজার কোনও কথা হয়নি।

    এক দাসীর মুখে খবর পেয়ে রাজা দৌড়ে গেল আশ্চর্যময়ীর ঘরে। সেখানকার দৃশ্য দেখে রাজা একেবারে তাজ্জব।

    সারা ঘর ভরতি চুল ছড়ানো। কালো মেঘের মতন পিঠ-কোমর ছড়ানো চুল ছিল আশ্চর্যময়ীর। প্রায় সব উঠে গেছে। শেষ কয়েকগাছি চুল টেনে-টেনে তুলছে আশ্চর্যময়ী।

    রাজা শুধু বলল, এ কী?

    আশ্চর্যময়ী মুখ ফেরাল। তার নাকের নীচে গোঁফ গজিয়েছে, গালে নবীন তৃণের মতন দাড়ি। দৃষ্টিতে লাল রঙের আভা।

    রাজার বুক কেঁপে উঠল।

    সেই কবিটি লিখেছিল না, রাজার একরানি হঠাৎ একদিন পুরুষ হয়ে যাবে?

    রানি যদি পুরুষ হয়ে যায়, সে কি হবে রাজার প্রতিদ্বন্দ্বী?

    দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে এসে রাজা প্রহরীদের হুকুম দিল, এ-ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখ। আর কোনওদিন খুলবে না।

    একটু শান্তি পাওয়ার জন্য রাজা গেল ফুটফুটির ঘরের দিকে।

    পাখির খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফুটফুটি। তার দু-চোখে ঝিলমিল করছে হাসি।

    রাজা জিগ্যেস করল, কেমন আছিস রে ফুটফুটি?

    ফুটফুটি দুদিকে দুটি হাত ছড়িয়ে দিল। তারপর কথা বলল পাখির ভাষায়।

    এরপর দুদিন ধরে রাজা ফুটফুটিকে কথা বলাবার চেষ্টা করে গেল। কোনও লাভ নেই। ফুটফুটি মানুষের ভাষা একেবারেই ভুলে গেছে।

    রাজার মনে পড়ল, পাখিদের দাঁত থাকে না। ফুটফুটি আস্তে-আস্তে পাখি হয়ে যাবে?

    দুপুরবেলা হা-হা করছে বাতাস। প্রাসাদটা যেন বড় বেশি নির্জন। লোকজন সব গেল কোথায়? একজন প্রহরীকে দেখতে পেয়ে রাজা বলল, শিগগির মন্ত্রীকে ডেকে আন।

    রাজা এল চাঁদনির ঘরে। পালঙ্কে শুয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছে চাঁদনি।

    রাজার তার শরীর ধরে নাড়াচাড়া করে বলতে লাগল, ওঠ, ওঠ, কেন, কেন তুই প্রত্যেকদিন সারাদিন ঘুমোবি? কেনই বা তা আমি সহ্য করব?

    চাঁদনি উঠে বসল। চোখ যেন খুলতেই পারছেনা।

    আবার রাজার বকুনি শুনে সে চোখ মেলল অতি কষ্টে। তার চোখের রং সাদা।

    কাতরভাবে চাঁদনি বলল, মহারাজ, আমি দিনেরবেলা দেখতে পাই না। সূর্যের আলো আমার সহ্য হয় না। আপনি আমাকে বকুন, মারুন, যা ইচ্ছে করুন। মাঝরাত্তিরে আমাকে জন্ম দিয়ে আমার মা মরে গেছে। তাই আমি শুধু রাত্রি চিনি।

    সবই তো মিলে যাচ্ছে। যত নষ্টের গোড়া ওই কবিটা।

    ওর লেখা থামিয়ে দিতে পারলে বাকি অংশটা মিলবে না। এর মধ্যে আরও অনেকটা লিখে ফেলেছে নাকি?

    রাজা চিল্কার করে উঠল, ওরে, কে কোথায় আছিস। শিগগির ওই সুজয় নামের কবিটাকে ধরে নিয়ে আয়।

    কেউ উত্তর দিল না। এর মধ্যে বেজে উঠল সেই লক্ষ্মীছাড়া বাঁশিটা।

    রাজা নিজে ছোটাছুটি করে খুঁজতে লাগল সেই বংশীবাদককে। না পেয়ে, ক্লান্ত, অবসন্ন হয়ে শুয়ে পড়ল এক সময়।

    রাজাদের সম্পূর্ণ অসহায় দেখায়, যখন তারা নিঃসঙ্গ।

    মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে উঠে রাজা দেখল, কোথাও কেউ নেই। ডাকাডাকি করেও সাড়া পাওয়া গেল না কারও।

    কবির লেখা এই অংশটা রাজা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেনি। তাও সত্যি হল? তবে কি সেনাপতি নিহত হয়েছে ভীমরাও-এর হাতে? মন্ত্রী নিরুদ্দেশ? আর সবাই পালিয়েছে ভয়ে?

    রাজা নিজের মুখে হাত দিয়ে দেখল, কী যেন চটচট করছে। রক্ত নাকি? না, জল। তিনি জিভ দিয়ে একটু চেটে দেখলেন। এর নাম কান্না?

    তারপর রাজা বুঝতে পারল, কান্না বেরুচ্ছে তার পাথরের চোখ দিয়ে। অন্য চোখটা শুকনো।

    সেই কবি নিজের কথা কিছু বলেনি। সে কোথায়?

    সে নদীতে সাঁতার কাটছে চাঁদনির সঙ্গে। চাঁদনি এত দিন পর পেয়েছে তার সঁOাতারের একজন সঙ্গী। দুজনে সাঁতারে-সাঁতরে চলে যাচ্ছে ছোট নদী থেকে বড় নদীতে, তারপর সমুদ্রের দিকে।

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleরূপকথা নয়!
    Next Article রেলের কামরার গল্প

    Related Articles

    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }