Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    লাভ ক্যান্ডি – জাফর বিপি

    জাফর বিপি এক পাতা গল্প185 Mins Read0

    ৪. ক্লিনিক্যাল পার্ট

    পারিবারিক প্রেসক্রিপশন-১

    ১২

    মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘মর্গ’ নামে স্পেসাল একটি পার্ট/রুম থাকে সেটা জানেন তো?

    এখানে কোন অপারেশন করা হয় না, কোন ডাক্তার এখানে পেসেন্টও দেখেন না। এখানে কিছু বর্জ্য রাখা হয়। যেটা জগতের সর্বোচ্চ ভয়ঙ্কর বর্জ্য। সেখানে এসব বর্জ্য না থাকলেও সাধারণ কোন মানুষ সহজেই সেখানে যেতে সাহস পর্যন্ত করে না।

    এটা কী এমন বর্জ্য যে, এর অনুপস্থিতিতেও মানুষ ঐ স্থানকে ভয় পায়? শুনুন তাহলে, এখানকার বর্জ্য হলো লাশ। মানুষের লাশ।

    হাসপাতালে চিকিৎসারত শতশত মানুষ যখন এই মর্গের বর্জে পরিণত হয় তখন এই মর্গটিতে একটি ভৌতিক অবস্থা বিরাজ করে। একদিকে নিটোল নিস্তব্ধতা আর অন্যদিকে কিছু কর্কশ শব্দের কলিজা চেরা আর্তনাদ। ভাবতেই লোমকূপ সতেজ হয়ে উঠছে…..

    হাসপাতালে প্রতিনিয়ত মৃতের প্রিয়জনদের বিকট চিৎকারের কানফাটা আওয়াজ চতুর্দিকের দেওয়ালে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। শরীরের এনার্জিটুকুন ফুরিয়ে গেলে কেউ সেখানেই নেতিয়ে পড়ে সেন্সলেস হয়ে যায় আবার কেউ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে নিরেট পাথর হয়ে যায়।

    আশ্চর্যের কথা কী জানেন? আমার কাছে এই অংশটিকে তেমন ভয়ঙ্কর মনে হয় না। এ যেন, স্বাভাবিক জীবনচক্রের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। জি, এটা জীবনচক্রের খুবই স্বাভাবিক এবং অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। আমার কাছে ভয়ঙ্কর মনে হয় জীবনের সেই অংশটিকে যখন কেউ মর্গে না গিয়েও মর্গের বজ্যে পরিণত হয়। কেউ তার জন্য তখন কাঁদে না, আর কাঁদবেই বা কেন? সে তো এখনও জীবিত, বর্জ্য হয়ে উঠেনি। হয়ে গেলে তখন না হয় একদফা দেখা যাবে। এখন অহেতুক কাউকে নিয়ে এসব ভেবে ইমেজ নষ্ট করে কাজ নেই।

    জানেন? কেন যেন মর্গের ঐ প্রতিধ্বনিত কর্কশ আওয়াজের চাইতে কিছু মানুষের হাসির আওয়াজ আমার কাছে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর মনে হয়। ঐ আওয়াজ আমার কানে পৌঁছে আমাকে অনেকটা ভাবিয়ে তুলে ঠিকই, কিন্তু ভীত করতে পারে না। কিন্তু সেই জীবিত মানুষগুলোর হাসি কেন যেন হৃদয়টাকে তোলপাড় করে আমাকে মূর্ছা যাবার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে চায় …

    স্তব্ধ হয়ে যাই এদের হাসির মাঝে লুকায়িত অব্যক্ত আর্তনাদ দেখে। খুব ইচ্ছে হয় এদের বুকের ভেতর থেকে সকল অবাঞ্ছিত অনুভূতিগুলোকে সিরিঞ্জ দিয়ে টেনে বের করে ফেলি। আর মুখে একচিলতে হাসি এনে দিই। জীবনের অবশিষ্ট সময়টুকুন অন্তত একটি জীবিত মানুষের পূর্ণ স্বাদ আস্বাদন করুক এরা…

    এদের খুব ইচ্ছে হয়, কেউ একজন এসে একটু বুকে টেনে নিয়ে পিঠ চাপড়ে দিয়ে কানে ফিস ফিস করে বলুক, এই বোকা, কিচ্ছু হবে না, সব ঠিক হয়ে যাবে ইন-শা-আল্লাহ, আমি আছি তো! এইতো আমি…।’

    ডা. রাকিব বেশ ইমোশনাল হয়ে পড়লেন কথাগুলো বলে। আদিব অবশ্য আজ হাসানকে নিয়ে আসেনি। আজ ওর এক দূরসম্পর্কের বোনের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে এসেছে। আদিবের কথার প্রেক্ষিতে ডা. রাকিব এসব কথা বলছিলেন।

    বোনটির অনেকগুলো সমস্যা। কোনটা রেখে কোনটার জন্য পরামর্শ দেবে? তাই তিনি আদিবের কাছে বোনটির বিস্তারিত জানতে চাইলেন। সে-সব শুনে তিনি কলম আর প্যাড সাইডে রেখে বললেন, ‘সব চিকিৎসা মেডিসিন দিয়ে হয় না। সুস্থতার জন্য এর বাইরেও অনেককিছু আছে।’

    ডা. রাকিব আরও বললেন, ‘আচ্ছা মি. আদিব, আপনার সেই বোন কি অস্বাভাবিক কান্না করে? নাকি অনুভূতিহীন পর্যায়ে চলে গেছে?’

    আদিব বলল, ‘জি স্যার, অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে। এজন্য তো সর্দি-কাশি আর মাথাব্যথাও লেগে থাকে।’

    ডা. রাকিব দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনরায় বলতে লাগলেন, ‘কিছু অশ্রু আসলে পানি না; এটা ক্ষরিত রক্তের রূপান্তরিত রূপ। ‘

    ডা. রাকিবের এই শক্তপোক্ত বাক্যটি শুনে আদিব কপাল কুঁচকালো। ‘সরি, ঠিক কী বুঝাতে চাইলেন স্যার? বুঝতে পারিনি।’

    ডা. রাকিব স্ত্রীর চিত্তে বললেন, ‘অনুভূতিরা খুন হয়ে বুক চিরে যে রক্তিম স্রোত প্রবাহিত হয়, সেখান থেকে এক আঁজলা রক্ত প্রক্রিয়াজাত হয়ে রঙ বদলে টুপটুপ করে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে। রঙ বদলায় এই কারণে যে, যাতে কেউ তার রক্তক্ষরণের বিষয়টি বুঝতে না পারে। তাই সে স্বচ্ছ পানির রঙ-কে বেছে নেয়। এতে সবাই এটাকে সাধারণ পানির মতোই মনে করে।

    এসব পানি মনস্তাত্ত্বিক ল্যাবে ডায়াগনোসিস করলে- কলিজা বিদীর্ণকারী আর্তনাদ, স্বপ্নভঙ্গের করুণ কীর্তি, নিপীড়িত হওয়ার অব্যক্ত কথন, কথার তীক্ষ্ণবানে মৃতপ্রায় এবং সর্বস্বহারা এক নিরীহ ক্ষতবিক্ষত সত্তার নির্জীব উপস্থিতি স্পষ্টভাবে পাওয়া যাবে।

    একে যদি প্রিন্ট করা সম্ভব হতো, তবে এর প্রতিটি অক্ষর হিরোসিমা নাগাসাকির পরিণতির মতকরে জাগ্রত বিবেক সত্তাকে কষ্টানুভূতির বিষক্রিয়ায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে ছাড়তো। দেহের প্রতিটি অণুচক্রিকাকে প্রবল গতিময় করে উচ্চরক্তচাপের অভ্যুদয় ঘটাতো।

    একে যদি নিক্তি দিয়ে পরিমাপ করার সুযোগ থাকতো, তবে এর মাঝে লুকায়িত কষ্টের তীব্রতা ঐ নিক্তির লৌহদণ্ডকে নুইয়ে দিতো।

    একে যদি গাণিতিক ধারায় বিশ্লেষণ করার সূত্র আবিষ্কৃত হতো, তবে এর সমাধানে খুবই সামান্য একটু কেয়ারিং-শেয়ারিং, একচিলতে নির্লোভ হাসি ও এক টুকরো মিষ্টি কথাই প্রমাণিত হতো। আর একটা কথা কী জানেন?’ এই বলে ডা. রাকিব থামল।

    আদিবের নিকট তার কথাগুলো বেশ কঠিন মনে হলো। কয়েকবার শুনতে পারলে হয়তো বুঝা সহজ হতো। তবুও আরও কিছু শোনার আগ্রহ নিয়ে আদিব অস্ফুটে প্রত্যুত্তর করল, ‘জি বলুন!’

    ডা. রাকিব পুনরায় বলতে শুরু করলেন, ‘মানুষের ইচ্ছেগুলো বড্ড বেয়ারা হয়। ভাবনাগুলো বেজায় বেপরোয়া হয়। উদ্ভট হয়।

    কখনও কখনও এই ইচ্ছে আর ভাবনাগুলোকে উগড়ে দিয়ে হালকা হতে হয়। স্থীর হতে হয়। কিন্তু যথোপযুক্ত ক্ষেত্রের অভাবে ইচ্ছে আর ভাবনারা বুক চিরে বেরুতে না পেরে ভেতরটাকে ঠুকরে খেতে থাকে।

    শিকারকৃত মুক্তিকামী পাখি যেমনটি করে খাঁচার প্রতিটি শিক তার ঠুনকো ঠোঁটের আঘাতে টুক টুক করে ভাঙতে চায় ঠিক তেমন করে। বঁড়শিতে আটকে পড়া মাছ যখন বাঁচার শেষ চেষ্টা হিসেবে নিজের ঠোঁট ছিঁড়ে হলেও ছুটতে চেয়ে এদিক-ওদিক ঢুঁ মারে ঠিক তেমন করে। শ্রাবণের আকাশ ঘন ভারী মেঘে টইটুম্বুর হয়ে যেমন করে প্রহর গুনে হঠাৎ আছড়ে পড়ে ঠিক তেমন করে।

    খুব ভয় হয়। ইচ্ছে আর স্বপ্নভঙ্গের ক্রমাগত আঘাতে বেদনার নীল রক্তগুলো ফিনকি দিয়ে নাকমুখ দিয়ে ঝপঝপ করে না আবার বেরিয়ে পড়ে! হৃৎপিণ্ডের ভেইন, আর্টারিগুলো না আবার টাস টাস করে ফেটে রক্তগুলো উপচে পড়ে! মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম আর্টারিগুলো চিড়চিড় করে ছিঁড়ে ব্রেইনটা রক্তকণিকায় না আবার লালেলাল হয়ে যায়। চক্ষুদ্বয় ছিটকে বেরিয়ে পড়ে পুরো দুনিয়াটা না আবার আঁধারে ছেয়ে যায়।

    মি. আদিব সাহেব, আসলে কী জানেন! অনুভূতিহীনদের দৃষ্টিগোচরে অনুভবের রাজ্যে প্রতিনিয়তই এসব ঘটে চলছে। সম্মুখের তরতাজা মানুষটির এমন বিভৎস প্রতিমূর্তি সকলে আঁচ করতে পারে না। যারা পারে, চাইলেই তাদেরকে কাছে পাওয়া যায় না।

    প্রতিটি মানুষের ইচ্ছে আর ভাবনাগুলোর অবাধ বিচরণের জন্য একটি যথোপযুক্ত ক্ষেত্রের খুব প্রয়োজন। আর সেটা খুব বেশি দেরি হয়ে যাবার আগেই।

    এই কীসব আবোলতাবোল বকছি আমি! যা হোক, তো আপনার বোন এই মুহূর্তে কোনো মেডিসিন খাচ্ছে কি?’

    আদিব মুহূর্তের জন্য কোথাও হারিয়ে গিয়েছিল। স্যারের বর্ণনার গভীরতা আর চিন্তার প্রখরতার মাঝে নিজেকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। শেষমেশ স্যারের প্রশ্ন শুনে সম্বিত ফিরে পেয়ে ধীর কণ্ঠে বলল, ‘স্যার, অনেক মেডিসিনই তো খেয়েছে। ডায়াগনোসিসও করেছে। কোনো ফলাফল নেই। কোনো প্রবলেমও ধরা যাচ্ছে না।’

    ডা. রাকিব টেবিলে রাখা পানির বোতল থেকে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে আদিবকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আসলে মি. আদিব, আপনার বোনের সমস্যার মূল কারণ যেটা বুঝলাম সেটা হলো সাইকোলজিক্যাল প্রব্লেম। এর অন্যতম প্রধান কারন হলো মানুষিক প্রেশার ও টেনশন। জেনারেলি এসবের সূত্রপাত হয় পারিবারিক বিষয়কে কেন্দ্র করে। বিষয়টা আপনিও কিছুটা জানিয়েছেন। এবার আমি আমার দিক থেকে বলি।

    প্রথমত পারিবারিক বিষয়গুলোর মধ্যে আছে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে সন্দেহ করা, একে অন্যের প্রতি অনাস্থা, একের ইচ্ছার বিপরীত অন্যজন চলা, শারীরিক কোন অক্ষমতা, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা বাড়ানো, বউ-শাশুড়ীর মনোমালিন্য, ছেলে-মেয়ের অবাধ্যতা, আর্থিক অস্বচ্ছলতা, সেক্রিফাইজ হীনতা, পরকীয়া সম্পর্ক, নিজেকে উইথআউট কন্ট্রল রাখা ইত্যাদি ইত্যাদি…

    এখন আমাকে এটা বলুন, এগুলোর মধ্যে কোন বিষয়টি আপনার বোনের ক্ষেত্রে ঘটছে?’

    আদিব একটু ভেবে নিয়ে বলল, ‘অনেকগুলোই আছে, তবে আমার কাছে যেটা প্রধান সমস্যা বলে মনে হয় সেটা হলো একের ইচ্ছার বিপরীত অন্যজন চলা। অর্থাৎ কেউ কারো মনমতো চলে না। কথা শোনে না। বোনটি চায় তার স্বামী দ্বীনের পথে চলুক। আর তার স্বামী চায় সে মর্ডান হয়ে চলুক। এখান থেকেই মূলত সূত্রপাত।’

    ডা. রাকিব বললেন, ‘জি বুঝতে পেরেছি ব্যাপারটি। এখানে আসলে প্রথমেই একটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, প্রতিটি মানুষই তার নিজস্ব চিন্তাধারার বাস্তবায়ন করতে চায়। সবাইকে তার সেই কল্পিত পথে হাটাতে চায়; বিশেষকরে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিষয়টি খুবই প্রকট। হোক সেটা ভুল বা সঠিক। এক্ষেত্রে কোনপ্রকার আপত্তি সে মেনে নিতে চায় না, আর তাতেই ঘটে বিপত্তি…

    মনে রাখা দরকার, স্ত্রীর যেমন কিছু ইচ্ছা থাকে যে, আমার স্বামী এভাবে এভাবে চলবে, নামায পড়বে, সুন্নাতের উপর-দ্বীনের উপর চলবে ইত্যাদি। তেমনি স্বামীরও কিছু ইচ্ছা থাকে যে, আমার স্ত্রী এভাবে এভাবে চলবে।

    তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বামীর গতিতেই স্ত্রীর স্বপ্ন সব ভেস্তে যায়, খুব অল্পসংখ্যক নারী তাদের পরম ভালবাসা আর আপ্রাণ চেষ্টার মাধ্যমে তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে পারে।

    এমতাবস্থায় উক্ত কারণে এবং শ্বশুরালয়ের সবারই উগ্রভাব, দ্বীনের ব্যপারে উদাসিনতা ইত্যাদির কারনে স্ত্রী সিমাহীন মানুষিক চাপ ও টেনশনের শিকার হন। এমনকি অনেকে মারাত্মকভাবে অসুস্থও হয়ে পড়েন।

    এমন অনেক পেসেন্ট দেখা যায় যে, তাদের অনেক পরীক্ষা-নিরিক্ষার পরও ফিজিক্যালি কোন সমস্যাই ধরা পড়ে না। বিভিন্ন পেইন ইত্যাদি সমস্যায় যথোপযুক্ত ইঞ্জেকশন/মেডিসিন দিয়েও নো রেসপন্স…!

    অবশেষে ফুল লাইফ হিস্ট্রি শুনে বুঝতে পারি আলোচ্য সাংসারিক বিষয়টিই তার সমস্যা। তাকে অনেকটা সময় দেওয়া এবং তার ভেতরের কথাগুলো শোনার মাধ্যমে বিষয়টি হ্যাঁন্ডেল করার চেষ্টা করি। কিন্তু পেসেন্ট মহিলা হওয়ার কারনে পুরোপুরি হ্যাঁন্ডেল করা সম্ভব হয়ে উঠে না। এক্ষেত্রে কোনো মহিলা ডাক্তারের কাছে রেফার করে দিই।

    একবার প্রচণ্ড বুকে ব্যথার সাথে পেটেও মৃদু ব্যথা, নিদ্রাহীনতা, অরুচি, মাথা ব্যথা, মাথা ঝিম ঝিম করা, ইরেগুলার মিন্সট্রুয়েশন এবং ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে এক পেসেন্ট আসে। ইতিপূর্বে অনেক ট্রিটমেন্ট নিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিঃসন্তান, তো সন্তান ধারণের জন্যও ট্রিটমেন্ট চলছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই নো রেসপন্স।

    পরে তার সাথে আসা বাবার কাছে জানতে পারি যে, সে প্রায় ১০ বছর যাবত নিঃসন্তান। শ্বশুরালয়ে গেলেই তার এই ব্যথা প্রকটভাবে বেড়ে যায়। বাবার বাড়িতে আসলে তুলনামূলক কিছুটা ভালো থাকে। তাই বছরের অধিকাংশ সময় বাবার বাড়িতেই সময় কাটাচ্ছে।

    তখন আর বুঝতে বাকি নেই যে, তিনি তার শ্বশুরালয়ের অমানুষিক টর্চারের স্বীকার। হোক সেটা শারীরিক কিংবা মানষিক।

    এধরনের পেসেন্ট সাধারনত প্রচন্ড মাথা ব্যাথা, বুকে ব্যাথা, অস্থিরতা, বিষণ্নতা, নিদ্রাহীনতা, অরুচি, ভগ্ন স্বাস্থ্য, চোখের নিচে কালো দাগ পড়া ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে আসে।

    তো এদের ক্ষেত্রে করণীয় হলো-

    ১। এ ধরনের পেসেন্টদের প্যাথলজিক্যাল কোন রিপোর্ট সো করে না।

    মেডিসিনেও তেমন ইম্প্রুভ করে না। তাই অযথা এদিক-ওদিক অর্থ অপচয় না করে কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি তার সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করাই বেটার অপশন।

    ২। তাকদিরে আল্লাহ তা’য়ালা যা রেখেছেন সেটাই হবে। তাই টেনশন না করে আগত অবস্থার সমাধানের জন্য চেষ্টা ও দোয়া করা। যিনি এই অবস্থা দিয়েছেন, তিনিই পারেন এর সমাধান করতে। তাই তার কাছেই সমাধান চান।

    ৩। টেনশনের দ্বারা কোন রেজাল্ট আসে না, বরং অবস্থা আরও জটিল হয় এবং নিজের অবস্থাও হয় কেরোসিন। যদি টেনশন করলে অবস্থার উন্নতি হয় তবে বলুন, আমি নিজেও সবার পক্ষ থেকে দৈনিক ঘণ্টাখানেক টেনশন করে দিই।

    এই পর্যন্ত এসে আদিব হেসে ফেলল। ডা. রাকিব অবিরত বলতে থাকলেন।

    ৪। যতই বলি টেনশন এসেই পড়ে? তবে যখনই টেনশন হয় সাথে সাথেই নিজেকে কোন কাজে লাগিয়ে নিন। চিন্তাকে কনভার্ট করে নিন। পারলে অযু করে দু’রাকাত নামাজ পড়ে নিন, ফ্রেশ লাগবে।

    ৫। কোন বিষয় সিরিয়াসলি নেবেন না। ইজিলি হ্যাঁন্ডেল করতে চেষ্টা করুন। আর ভাবুন যে, আপনার চাইতে কত মানুষ আরও অনেক বেশি সমস্যায় আছে। চাইলে যে কোন হাসপাতালে গিয়ে একটু ঘুরে আসুন। দেখে আসুন, মানুষ আপনার চেয়ে কত বেশি কষ্টে আছে। সো, আপনি তাদের অনেকের চেয়ে অনেক বেশিই ভালো আছেন। তাই সর্বদা আল্লাহর শোকর করুন।

    ৬। আপনি ছেলে হলে মুসআব ইবনে উমায়ের রা. এর জীবনি থেকে সবক নিন। মেয়ে হলে ফেরাউনের স্ত্রী হযরত আছিয়া রা. এর জীবনি থেকে সবক নিন। জানা না থাকলে কোন আলেমের নিকট থেকে জেনে নিন।

    ৭। আপনার হিতাকাঙ্ক্ষী এমন দু-একজনের সাথে মনের সকল ব্যথা ও কথা অকপটে সব শেয়ার করুন। এতে মনটা বেশ প্রফুল্ল থাকবে। কষ্ট চেপে রাখবেন না, এতে সমাধান না এসে কষ্ট বাড়তেই থাকবে। তবে যার-তার কাছেও শেয়ার করবেন না। শতভাগ নিরাপদ ও বিশ্বস্ত কারও কাছেই শেয়ার করুন।

    ৮। মনমরা হয়ে না থেকে সর্বদা হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন।

    ৯। আপনার স্বদিচ্ছা পূরনে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। হাল ছাড়া যাবে না এবং মোটেও হতাশ হওয়া যাবে না।

    ১০। তার যখন মন ভাল থাকে তখন তাকে অল্প অল্প করে বুঝাতে চেষ্টা করুন। মন ভাল না থাকা অবস্থায় নিরবতা পালন করুন। তাকে সান্তনা দিন তবে দু-এক দিনেই সম্পূর্ন ভাল করে ফেলার আশা করবেন না। ধীরে ধীরে এগোতে থাকুন, আল্লাহ ভরসা!

    ১১। মাঝেমাঝে স্থান পরিবর্তন করে কোথাও বেড়াতে যাওয়াও বেশ পজিটিভ! তবে অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তরের দ্বারস্থ হওয়া জরুরি।

    সবশেষে আমি বলি কী, প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর, অর্থাৎ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো।

    বিয়ের পর সাংসারিক এসকল সমস্যা এড়াতে চিকিৎসা ইত্যাদির চেয়ে বিয়ের পূর্বেই দ্বীনদারী, সম্পদ, সৌন্দর্য ও বংশের বিষয়গুলো দেখার পাশাপাশি বিপরীত মানুষিকতার কাউকে পছন্দ না করে নিজের সমপর্যায় বা কাছাকাছি মানুষিকতার কাউকে পছন্দ করলে অধিকাংশের ক্ষেত্রে বিষয়টি শুরুতেই প্রতিরোধ হয়ে যায়।

    এই ব্যাপারটিতে আমাদের গার্ডিয়ান মহলের যথাযথ বোধদয় হোক।

    ডা. রাকিব তার কথা শেষ করেই উঠে দাঁড়ালেন। দাঁড়িয়ে বললেন, ‘তো মি. আদিব, আশাকরি আপনি উপকৃত হয়েছেন।

    ‘অবশ্যই স্যার! তবে একটি বিষয়ের জন্য আমি সরি বলে নিচ্ছি, সেটা হলো আপনার অনুমতি ছাড়া আপনার আজকের এই কথাগুলো আমি রেকর্ড করে নিয়েছি। যাতে কোনোটা মিসিং না হয়ে যায়। এবং পরবর্তীতে বারবার শুনতে পারি। কথাগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারি।’

    ডা. রাকিব হাসলেন।

    ও আচ্ছা! না এতে কোনো সমস্যা নেই। আপনার বোনের জন্য অনেক অনেক দু’আ রইল। তো আজ আমরা উঠি তাহলে! বাসায় যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। দেরি করে গেলে ওদের মা-ছেলের শাসনে পরতে হয়।’

    ‘বাব্বাহ! আপনাকেও শাসন করে!’

    ‘কেন মি. হাসান! আপনাকেও করে নাকি?’

    ‘না মানে…।’

    ‘বুঝেছি বুঝেছি। হোমমিনিস্টার বলে কথা! হা হা হা…!

    পারিবারিক পেসক্রিপশন-২

    ১৩

    ‘জি, নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেতো। তবে বিয়ের শুরুতে অনেকবার ইমারজেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিলও খেয়েছে।’

    ‘আচ্ছা! তো এখন সব বাদ দিয়েছে কতদিন হয়?’

    ‘এই তো বছরখানেক হলো।’

    ‘এরমধ্যে একবারও কনসিভ করেনি?’

    ‘জি না। গতমাসে এক গাইনী ডাক্তারকেও দেখাই। ওর কিছু টেস্ট করিয়ে দেখল তেমন কোনো সমস্যা ধরা পড়ছে না। ভাবলাম আমার কোনো সমস্যা কি না, উনাকে এটা বলার পর আমাকেও কিছু টেস্ট দিল। রেজাল্টও ভালো। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? তাই আদিবের পরামর্শে আজ আপনার কাছে আসলাম।’

    হাসানের কথা শুনে ডা. রাকিব আদিবের প্রতি দৃষ্টি ফেরাল। গলা থেকে স্টেথিস্কোপটি নামিয়ে রেখে তিনি বললেন, ‘আদিব সাহেব, মি. হাসানকে আমার কাছে নিয়ে আসার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

    ‘জি স্যার, আশাকরি আপনার কিছু পরামর্শ ওর জন্য বেশ ইফেক্টিভ হবে।’ টেবিল থেকে হাত নামাতে নামাতে বলল আদিব।

    ডা. রাকিব হাসানের আপাদমস্তক একবার পরখ করে একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘হাসান সাহেব, কিছু মনে না করলে খোলামেলা কিছু আলাপ করতে চাই। অসুবিধা নেই তো?’

    ‘না না, বলুন স্যার। ‘

    ‘আপনি কি জানেন, বাংলাদেশে বর্তমান নিঃসন্তান দম্পতির সংখ্যা কত?’

    ‘জি না স্যার।’

    ‘সংখ্যাটা প্রায় ৩০ লক্ষ বা তার চেয়েও কিছু বেশি।’

    সংখ্যাটা শুনে হাসান ক্ষানিকটা ভড়কে গেল। বিড়বিড় করে বলল, ‘লক্ষেরও বেশি!?’

    ‘সত্যিই অবাক হওয়ার মত। আবার এই রেট ক্রমেই বাড়ছে। ইনফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট সেন্টারগুলোতে গেলে বুঝা যায় কী পরিমাণে বাড়ছে এই হার। আর নিঃসন্তান দম্পতির দীর্ঘশ্বাস সত্যিই খুব করুণ।’ ডা. রাকিবের কণ্ঠে ক্ষানিকটা হতাশা।

    হাসানের চেহারায় আতঙ্কের স্পষ্ট ছাপ দেখতে পাচ্ছে আদিব। ডা. রাকিব একটি কলম হাতে নিয়ে নাড়তে নাড়তে বলতে শুরু করলেন- ‘আমার এক ফ্রেন্ড যিনি ইনফার্টিলি ট্রিটমেন্ট সেন্টারে কাজ করে, সেখানকার এক রোগীর কথা সেদিন বলল, যে কিনা করজোড়ে অত্যন্ত মিনতির সাথে বলছিলেন, ডাক্তার সাহেব একটা বাচ্চা চাই, তার বিনিময়ে যা করতে হয় সব করতে রাজি আছি। টাকা যত লাগে দিতে রাজি আছি। শুধু একটা সন্তান চাই আমার…

    আরো এক পরিচিত পেসেন্ট আছে যিনি প্রায় ১০ বছর যাবত এই অব্যক্ত যন্ত্রনার ভুক্তভোগী এবং আরো জানা-অজানা এমন পেসেন্ট অনেক আছে। তাদের মধ্যে অনেকে প্রায়ই ফোনে আমাকে নক করে। পরামর্শ চায়। বিষয়টি খুব ভাবাচ্ছে আমাকে।

    একটা প্রশ্ন সহজেই মাথায় আসে, আজ থেকে মাত্র ১০০ বছর আগেও অর্থাৎ আমাদের নানা-দাদাদের সময়ে তো এত বেশি এরকমটা শোনা যায়নি। কেন এই সামান্য সময়ে আজ এত পরিবর্তন?’

    আদিব, হাসান উভয়ের মুখেই স্পষ্ট জিজ্ঞাসা- কেন?

    ডা. রাকিব বললেন, ‘কারণগুলোর ভেতর আমার কাছে যা মনে হয়;

    প্রথমত, বিয়ের পর পর আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করা।

    সন্তান আল্লাহর নেয়ামত। অনেকেই মনে করেন সবেমাত্র বিয়ে হলো, আরও ২-৪ বছর ইনজয় করি, ক্যারিয়ার গড়ি তারপর বাচ্চা নেওয়ার চিন্তা করব। তো এরপর পিল খাওয়া শুরু হয়। হ্যাঁ, সব ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এ্যাড দেয় ‘সম্পূর্ন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া মুক্ত আমাদের এই পিল।’ অথচ আমরা জানি, প্রতিটি মেডিসিনেরই কিছু না কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বা সাইডইফেক্ট আছে। চাই সেটা এন্টিবায়োটিক হোক, ব্যথানাশক হোক, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য হোক কিংবা প্যারাসিটামলই হোক।

    এমনকি ওরস্যালাইন, যেটাকে আমরা ক্ষতিকর হিসেবে কল্পনাও করতে পারি না, অপরিমিত ব্যবহারে এই ওরস্যালাইনেরও কিছু সাইডইফেক্ট আছে।

    একটা জিনিস সহজে বুঝা দরকার, সিগারেট কোম্পানী কিন্তু কখনও সিগারেটের বদনাম করবে না। যেটুকু করে সরকার বাধ্য করে বলে করে।

    একটু চিন্তা করি, প্রতি মাসে একজন বোন ২৮/২১টা পিল খাচ্ছেন। এটা প্রতি পিরিয়ড সাইকেলে হরমোনাল চেঞ্জ নিয়ে আসছে। যেটা স্পার্ম এবং ওভামকে উর্বর করতে দিচ্ছে না। এইভাবে ১-২-৩ বছর চলার পর স্বাভাবিক হরমোনাল কন্ডিশন অনেক ক্ষেত্রেই আর ফিরে আসে না। এমন অনেক পেসেন্টও দেখেছি যে, এগুলো খাওয়া বন্ধ করার পরও বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে কিন্তু তার ‘মা’ হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এদিকে আবার ক্লিনিক্যাল রিপোর্টেও বিশেষ কোনো সমস্যা ধরা পড়ছে না।’

    ডা. রাকিবের কথা শুনে আদিব আর হাসান পরস্পর চোখাচোখি করছে। তিনি কী বলছেন এসব! এমনকিছু তো ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি আমরা! ডা. রাকিব ওদের বিস্মিত ভাব বুঝতে পেরে বললেন, ‘জানি, আমার কথাগুলো বেশ উদ্ভট মনে হচ্ছে আপনাদের কাছে। কিন্তু সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমিও মানুষ। তাই কিছু অপ্রচলিত সত্য কথা একান্ত আপনজনদের কিংবা হিতাকাঙ্ক্ষীদের না বলেও পারি না।

    আমার কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনুন।

    বিজ্ঞানের আর এক আবিষ্কার ইমারজেন্সি পিল। ৭২ ঘণ্টা বা কিছু কম-বেশি সময়ের মধ্যে অ্যাক্সিডেন্টাল প্রেগন্যান্সি বা অনিচ্ছাকৃতভাবে কনসিভ করা এড়াতে এটা ব্যবহার করা হয়। একটোপিক প্রেগন্যান্সির সবচেয়ে বড় কারন এই ইমারজেন্সি পিল। একটোপিক প্রেগন্যান্সি বড় ভয়াবহ এক জিনিস। যেটা সংক্ষেপে, বাচ্চা হবে কিন্তু বাচ্চা ইউট্রাসে না হয়ে অন্য কোন যায়গায় হবে। এবং বাচ্চা বড় হয়ে যাওয়ার পর আল্ট্রাসোনোতে ধরা পড়লে ইউট্রাস কেটে ফালানো ছাড়া আর উপায় থাকে না। ভাবতে পারেন ব্যাপারটা?

    আবার বাচ্চা কনসিভ হয়ে গেছে এরপরের আর এক আবিস্কার এমএমর্কিট। যেটা ইউট্রাস থেকে বাচ্চা সদৃশ বস্তুকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়, প্রচুর রক্তক্ষরন হয় এতে।

    এসবকিছু ছাপিয়ে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কথা হলো, অনেক বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, একজন নারী জরুরি জন্ম নিরোধক পিল খেয়ে বলছে- ‘আমি এখন নিশ্চিন্ত’। কিন্তু আসলেই কি এসব জন্ম নিরোধক পিল খেয়ে নারী নিশ্চিন্ত হতে পারছে?

    হয়ত তার পেটে সন্তান বাসা বাধছে না, কিন্তু বাসা বাধছে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি।

    সম্প্রতি আমরা দেখেছি- রেনিটিডিন গ্রুপের ঔষধ সেবনে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে বিধায় তা দেশ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়।

    ধুমপানে ক্যান্সার হয়, বিধায় সিগেরেটের প্যাকেটে বড় করে লেখা থাকে, ‘ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।’ কিন্তু জন্মনিরোধীকরণ পিল সেবনে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকার পরও সেখানে লেখা থাকে- নিশ্চিন্ত, নিরাপদ, ভাবনাহীন… আশ্চর্য!

    উল্লেখ্য দেশে নারীদের মধ্যে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা। এসবের কারণ কী?

    কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এটা যে পিলের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে হচ্ছে তা মিডিয়া ও অধিকাংশ ডাক্তারগণ প্রকাশ্যে এড়িয়ে যাচ্ছে। উপরন্তু কিছু মিডিয়া দাবী করছে, বাল্যবিবাহের কারণে নাকি নারীদের ক্যান্সার বাড়ছে। কিন্তু কথা হলো- বাংলাদেশে তো বাল্যবিবাহ কমছে, তাহলে তো সূত্রমতে নারীদের ক্যান্সারও কমার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে বাল্যবিবাহ কমলেও ক্যান্সার বাড়ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, বাল্যবিবাহ ক্যান্সারের পেছনে দায়ী নয়, দায়ী অন্য কিছু, যা নারীদের মধ্যে ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অবশ্যই সেটা জন্মনিরোধীকরণ পিল, কিন্তু সেই বিষয়টি বিস্ময়করভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে সবাই।

    এখন কথা হলো- সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের একটি সাধারণ দাবি তোলা উচিত, তা হলো- ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকার কারণে হয় এসব জন্মনিরোধীকরণ পিল নিষিদ্ধ হোক অথবা সিগেরেটের প্যাকেটের মত এসব পিলের প্যাকেটেও বড় করে লেখা হোক- ‘সাবধান! জন্মনিরোধীকরণ পিল ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ।’

    ডা. রাকিবের কথা শুনে আদিব বেশ চমৎকৃত হচ্ছে। মনেমনে শোকর করছে যে, সে এসবের কোনোকিছু অ্যাপ্লাই করেনি। কিন্তু হাসানের মুখটা শুকিয়ে যাচ্ছে। অজ্ঞাত, ভয় আর অপরাধবোধ কেমন যেন ঘিরে ধরছে তাকে।

    এরপর ডা. রাকিব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘একটা মায়ের উপর এতগুলো ধকল চালানোর পর যখন ৩-৪ বছর পার হয় তখন চিন্তা করে এবার একটা বাচ্চা চাই। কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা ততদিনে অসন্তুস্ট হয়ে নেয়ামতকে উঠিয়ে নেন। এবার দৌড় শুরু হয় ইনফার্টিলিটি সেন্টারে, মাজারে, তাবিজ কবজ সহ আরও কত কী! তবে এই ইনফার্টিলিটি যে শুধু মেয়েদের হয় তা নয়, ছেলেদের ও হয়। কিন্তু আমরা দোষ সব মেয়েদেরকেই দিই। সন্তান না হলেই তাকে ডিভোর্স দিয়ে ভাগাড়ে ছুঁড়ে ফেলি। এতদিনের রঙিন স্বপ্ন, আর প্রতিশ্রুতিকে নিজ হাতে গলা টিপে হত্যা করি।’

    ‘আচ্ছা স্যার, পুরুষ এবং মহিলার এই ইনফার্টিলিতে চলে যাওয়ার উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ স্পষ্টভাবে বলবেন কি?’ আদিবের প্রশ্ন ডা. রাকিবের প্রতি।

    ডা. রাকিব একটু নড়েচড়ে বসে বললেন, মহিলাদের ইনফার্টিলিটির বেশকিছু কারণ আছে। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-

    ১। Stress অর্থাৎ অতিরিক্ত চাপে থাকা। বিশেষ করে চাকুরিজীবি মহিলাদের ক্ষেত্রে। ঘরেও চাপ অফিসেও চাপ। এজন্যই দেখা যায় গৃহিণী মহিলার চেয়ে চাকরিজীবি মহিলাদের ইনফার্টিলিটি রেট বেশি। অর্থাৎ তারা সন্তানধারণে গৃহিণী মহিলাদের চেয়ে তুলনামূলক কম সক্ষম।

    ২। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ও শব্দে বেশি সময় অবস্থান। যেটা গার্মেন্টস কর্মীদের দেখা যায়।

    ৩। অধিক সময় জন্মনিয়ন্ত্রন করা। আর এটাই মহিলাদের ইনফার্টিলিটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

    ৪। অধিক বয়সে সন্তান নেওয়ার প্রবণতা।

    আর পুরুষদের ইনফার্টিলিটির ব্যাপারটি একটু ভিন্ন। যেকোন কারণে পুরুষের প্রতি ML সিমেনে যদি স্পার্ম-এর পরিমাণ ২০ মিলিয়নের কম হয়ে যায়, তখন সে ইনফার্টিলিটিতে চলে যায়। এর অনেকগুলো কারনের মধ্যে অন্যতম হলো-

    ১। স্মোকিং, ড্রাগস বা যেকোন ধরনের নেশা।

    ২। এছাড়া পরিবেশ দূষনও একটা বড় কারণ।

    ৩। অতিরিক্ত তাপমাত্রা বা শব্দে যারা লম্বা সময় কাজ করে এটাও একটা কারণ।

    ৪। পর্নো ভিডিও দেখা ও হস্তমৈথুন করা। এতে করে তার গোপনাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শারীরিক ও মানুষিক নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়, এমনকি একপর্যায়ে সে ইনফার্টিলিটিতেও চলে যেতে পারে।

    ৫। আর একটা উল্লেখযোগ্য কারন হলো টাইট পোষাক পরা। স্কিন টাইট জিন্স। যেটা অনেকে ধারণাও করে না। যেটা পরলে অতিরিক্ত চাপের কারনে স্পার্ম সংখ্যা হ্রাস পেতে পারে। এর বিপরীত কারনেই মনে হয় যারা পায়জামা-পাঞ্জাবী বা ঢিলেঢালা পোশাক পরে অর্থাৎ হুজুরদের সন্তান বেশি হয়…

    এখানে এসে আমি বলতে চাই, আমরা ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার করে আমাদের পারিবারিক ক্যারিয়ার ধ্বংস না করি। বিয়ের পরপর শুরুতে আল্লাহ দিলেই বাচ্চা নিয়ে নেয়া। ২-১ টা বাচ্চা হওয়ার পর হাজবেন্ড-ওয়াইফ পরামর্শ সাপেক্ষে অভিজ্ঞ দ্বীনদার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কিছু একটা ভাবা যেতে পারে। মনে রাখবেন, সেই ডাক্তার যেন অবশ্যই অভিজ্ঞ ও রেজিস্টার্ড হয়। চিকিৎসা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয় এমন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেবেন। অন্যথায় নির্ঘাত পস্তাবেন। তো এতে অন্তত পারিবারিক বন্ধন ঠিক থাকবে। তা না হলে বিয়ের পরের রোমান্স দুই-চার বছর পর সন্তান না হলে জানালা দিয়ে পালাবে। অনেক দেখেছি এমন। মূলত সন্তানই হলো পারিবারিক বন্ধনের প্রধান হাতিয়ার।’

    ডা. রাকিব থামলেন। তার কথাগুলো হাসানকে অনুতাপের অনলে দগ্ধ করছিল এতক্ষণ। পিনপতন নিরবতায় ছিল দু’জন।

    ডা. রাকিব আরও বললেন, ‘এখানে আর একটি কথা না বললেই নয়, বিভিন্ন পদ্ধতিতে অ্যাবসনের নামে আজকাল যে মানুষ খুন করা হচ্ছে এটাকে কেউ আমরা পাত্তাই দিচ্ছি না। কারো চাহিদার বিপরীতে গর্ভে ছেলে বা মেয়ে আসলে সেটাকে খুন করে ফেলছে। কেউ ভরণ-পোষণের ভয়ে খুন করছে। কেউ-বা অবৈধ সম্পর্কের কথা ধামাচাপা দিতে খুন করছে। এককথায় এরা সকলেই খুনি। খুনের সাহায্যকারীও খুনি! ইহকালে যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, আর পরকালে- একবাক্যে জাহান্নাম।

    আচ্ছা বলুন তো! ছেলে কিংবা মেয়ে এটা নির্ধারণ করার মালিক কি মানুষ? যদি না হয়, তাহলে আপনার চাহিদা ম্যাচ না করায় নিষ্পাপ একটা বাচ্চাকে কেন খুন করছেন? আল্লাহর সিদ্ধান্তের সাথে কেন বিদ্রোহ করছেন? অথবা কারো রিযিকের মালিক কি মানুষ? যদি না হয়, তাহলে কী খাওয়াবেন কী পরাবেন এই ভয়ে কেন নিজেরা খুনের আসামী হচ্ছেন?

    আবার মানসম্মান বাঁচাতে অবৈধ সন্তানকে খুন করে কেনই-বা জাহান্নাম কিনে নিচ্ছেন? এতই যখন মানসম্মানের ভয় তাহলে কেনই-বা এমন অশ্লীলতায় গা ভাসিয়ে দিলেন? সরি এটা আপনাদেরকে বলছি না। যারা করে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছি।

    জানি, এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। এক দলা ঘৃণা এসকল মানুষের জন্য। মি. আদিব ও মি. হাসান আপনারা হয়তো আমার কথা শুনে কষ্ট পেতে পারেন, কিন্তু আমি স্ট্রেট যা বলার বলে দিলাম। সেজন্য সরি। জানেন! এই সেদিনও এক দম্পতি এসেছিল এবসনের ব্যাপারে পরামর্শ নিতে। তাদের ২টি সন্তান। এখন আর নিতে চাচ্ছে না। আমি তাদেরকে প্রশ্ন করলাম, আল্লাহ যখন দিয়েছেনই, তাহলে নিয়ে নিন না! বাচ্চাটাকে হত্যা করা ঠিক হবে না। তখন তারা নানান অপারগতা প্রকাশ করতে লাগল। তাদের আর্থিক সমস্যা এই-সেই ইত্যাদি। আমি তখন বললাম, ওর রিযিক নিয়েই ও পৃথিবীতে আসবে। আপনারা একটু ধৈর্য ধরুন। আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানোর আগেই তার রিযিক নির্ধারণ করে দেন। ভয়ের কিছু নেই।

    তারা অনড়। অবশেষে আমি বললাম, তাহলে একটা কাজ করুন। গর্ভের এটা যেমন আপনার সন্তান, আর বাকি দুইটাও আপনারই সন্তান। তো আপনার বড় সন্তানটি তো কিছুদিন পৃথিবীর আলো-বাতাস পেয়েছে। এবার তাহলে ওকে খুন করে ফেলুন। আর এই গর্ভের বাচ্চাটিকে কিছুদিনের জন্য পৃথিবীর আলো-বাতাসে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দিন। সন্তান হিসেবে প্রত্যেকের অধিকারই তো সমান তাই না?

    উনি আমার কথা শুনে উদ্ভ্রান্তের মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, ডা. রাকিব এসব কী বলছেন আপনি? আমি সাবলীলভাবে আবারও বললাম, হ্যাঁ, আপনার বড় সন্তানটিকেই বরং খুন করে ফেলুন।

    পাশ থেকে তার স্ত্রী এমনসময় বলে উঠল, ডাক্তার সাহেব, আমাদের কথা আপনি একটু বুঝার চেষ্টা করুন প্লিজ! তার স্ত্রীর এই কথা শুনে আমি বুঝতে পারলাম, আর কাজ হবে না। শেষমেশ পকেট থেকে বেশকিছু টাকা বের করে বললাম, আচ্ছা এই টাকাটা রাখুন। এটা দিয়ে ভালো ও পুষ্টিকর খাবার কিনে খাবেন। এতে গর্ভের সন্তানটা হৃষ্টপুষ্ট হবে। এরপর যখন ও পৃথিবীতে আসবে তখন ওকে আমাকে দিয়ে দেবেন। আমিই ওকে নিজ সন্তানের পরিচয়ে বড় করব। আমিই ওর বাবা হব। আমার স্ত্রী ওর মা হবে। তো এই সন্তানটা যেহেতু আমি নিয়ে নিলাম, সেহেতু ওর ভরণপোষণের দায়িত্বটাও আমার। আর তাই এই টাকাটা দিলাম। রাখুন এটা।

    একথা বলার পর লোকটির স্ত্রীর চোখে পানি দেখলাম। লোকটিও একদম বোকা বনে গেল। মনে হচ্ছিল এক আকাশ লজ্জা তার আপাদমস্তক ঢেকে নিয়েছে। হঠাৎ সে আমার দু’হাতে ধরে কান্না জুড়ে দিল। অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইল। আমি বললাম, ক্ষমা আমার কাছে না, আল্লাহর কাছে চান। তিনি যেন আপনাদের ওপর গোস্বা হয়ে না যান।

    তার স্ত্রী সেই মুহূর্তে অঝোরে কাঁদছিল। তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, আসলে এমন করে বলার জন্য আমি সরি বলছি। কিন্তু আপনাদের এবসনের কথা শোনামাত্রই একটা নিষ্পাপ চেহারা আমার চোখের সামনে সকরুণভাবে বলছিল, আঙ্কেল আমাকে বাঁচান! আমি বাঁচতে চাই। আমি সেই শিশুর আকুতি ফেলতে না পেরে অনেকটা বাধ্য হয়ে আপনাদেরকে কষ্ট দিলাম। আমি আবারও সরি।

    ‘আমাদেরকে আর লজ্জা দেবেন না প্লিজ। সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে খুব। আমাদের ভুলটা এভাবে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য আপনার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব স্যার।’ এই কথা বলে তারা বিদায় নিতে চাইলেন। অমনি তার স্ত্রী বলে উঠল, স্যার, আমাদের এই সন্তানের নামটা যদি আমরা আপনার নামেই রাখি, আপনার এতে কোনো আপত্তি থাকবে না তো?

    তার স্ত্রীর একথা শুনে আমার চোখদুটো আর সহ্য করতে পারল না। কেঁদে ফেললাম। এরপর অনেক দু’আ করলাম সেই বাচ্চাটির জন্য। তাদের স্বামী-স্ত্রীর জন্য। এরপর তারা চলে গেলেন।

    ডা. রাকিব থামলেন।

    আদিব ও হাসানের চোখ ছলছল করছে। এমনকরে কোনোদিন কোনো ডাক্তার কাউকে বলেছে বলে শোনেনি কখনও। হয়তো কল্পনাও করেনি। উভয়ে ডা. রাকিবের জন্য কল্যাণের দু’আ করলেন।

    ক্ষানিক পর আদিব অস্ফুটে বলল, ‘স্যার, আরও একটি বিষয়ে আপনাকে একটু কষ্ট দেব।’

    ‘না না সমস্যা নেই। বলুন।’

    ‘স্যার, বর্তমানে ডিভোর্স দেওয়ার প্রবণতা ও এর সমাধান সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন। হাসান ইদানীং ওর ওয়াইফের সাথে ম্যাচ করতে পারছে না। অনেক কিছু করার পর অবশেষে ডিভোর্সের দিকে যেতে চাচ্ছিল। কোনরকম আটকে রেখেছি।’

    কথাটি বলতেই হাসান কিছুটা বিব্রতবোধ করল। মুখফুটে বলল, ‘স্যার, আসলে আমি এখনও চাচ্ছি আমাদের সম্পর্কটা স্থায়ী হোক। কিন্তু কেন যেন পেরে উঠছি না।’ আক্ষেপের সুর হাসানের কণ্ঠে।

    ডা. রাকিব পেশায় একজন ডাক্তার হলেও বেশ যুগসচেতন। সামাজিকভাবেও দায়িত্বশীল। তাই এসকল বিষয় সম্পর্কে মোটামুটি ভালো জ্ঞান রাখে। কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে তিনি বললেন, ‘আসলে হাসান সাহেব, মানুষ অদৃশ্যের কথা জানে না। কারো মনের কথাও কেউ জানে না। এটার মালিক একমাত্র আল্লাহ। তাই ডিভোর্স সংক্রান্ত আমার কিছু ধারণা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব। কিন্তু তাই বলে আপনার ব্যাপারটিও যে এমন হবে সেটা নয়, আমি কেবল আমার ধারণাটা শেয়ার করছি। রাগ করবেন না তো?’

    ‘আরে না না! কী বলছেন এসব! আপনি নিঃসংকোচে বলুন।’

    ডা. রাকিব পাশে রাখা বোতল থেকে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে নিয়ে বললেন, ‘এবার আসলে একটু বৃত্তের বাইরে আসতে চাচ্ছি। মুখের জড়তা ভেঙ্গে কিছু কথা খোলামেলাভাবেই বলতে চাচ্ছি। সেজন্য অগ্রিম সরি…।’

    ‘আপনি বলুন স্যার।’ আদিবের সম্মতিসূচক উক্তি।

    ‘বেশ কিছুদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকের রিপোর্টে দেখলাম- শুধুমাত্র ঢাকায় ডিভোর্সের হার মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েই চলছে। যার অধিকাংশ হলো স্ত্রীর পক্ষ থেকে। রিপোর্টের কাটপিছটা এইমুহূর্তে কাছে নেই। বাসায় আছে।

    বোদ্ধা মহল এটার নানান কারণ ও সম্ভাব্য সমাধান ব্যাখ্যা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এটা নিয়ে বেশ লেখালেখি দেখেছি। কিন্তু তখন একেবারে চুপ ছিলাম আমি। কারণ, চলমান ইস্যুতে খুব জরুরি মনে না করলে তালে গা ভাসানো আমার পছন্দ না। কিন্তু এবার আপনাদের জন্য হলেও কিছু বলতে ইচ্ছে করছে।

    ডিভোর্সের যেসকল কারণ নিয়ে আলোচনা শোনা গেছে তা বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে। আমি সেদিকে যাচ্ছি না। আমি এমন একটি কারণ হাইলাইট করতে চাচ্ছি যেটা এযাবৎ কোথাও আলোচনা করতে দেখিনি। হয়তো কেউ করেনি অথবা ঠিক এভাবে করেনি। অন্তত আমার চোখে পড়েনি। কারণটি খুবই সেন্সিটিভ। তাই আবারও সরি বলে নিচ্ছি।’

    আদিব ও হাসানের পূর্ণ মনোযোগ ডা. রাকিবের প্রতি।

    ‘ডিভোর্সের এই ক্রমবর্ধমান হারের একটি মূল কারণ হলো পর্নোগ্রাফি।’

    পর্নগ্রাফি শুনেই দু’জনের চক্ষু তো চড়কগাছ! ‘একটু স্থির হোন। মন দিয়ে শুনুন।’ ডা. রাকিবের মন্থর উক্তি।

    ‘অন্ধকার জগতের এই বিচিত্র জগতে যে একবার পা ফেলে সে খুব সহজেই আর পা তুলতে পারে না। নেশা চেনেন? নেশাখোর হুটহাট নেশা করা ছাড়তে পারে? পারে না। কতশত চেষ্টা, চিকিৎসা আর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আছে, তবুও যেন নেশাখোরের পরিমাণ ও এর মাত্রা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে।

    পর্নোগ্রাফিও একটি নেশা। বড় ভয়াবহ নেশা। ড্রাগসের নেশা থেকে বাঁচাতে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বেশ তোড়জোড় চোখে পড়লেও পর্নোগ্রাফির নেশা থেকে আমাদের যুবসমাজকে বাঁচাতে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। অথচ ড্রাগসের নেশার চেয়ে পর্নোগ্রাফির এই নেশাটি অনেক বেশি ক্ষতিকর।

    ড্রাগস বিভিন্নভাবে আমাদের সামাজিক পরিবেশকে নষ্ট করে নানাবিধ অপরাধ প্রবণতা ও অসংগতি বাড়াচ্ছে। আর পর্নোগ্রাফি সরাসরি আমাদের সামাজিক ব্যবস্থাকেই ভেঙ্গে দিচ্ছে। এমনকি এই ভেঙ্গে পড়া সমাজকে রিপেয়ার করার সম্ভাবনাটুকুও নিভিয়ে দিচ্ছে। এক গভীর অমানিশার ঘোরে আমাদেরকে হাত-পা বেঁধে ধুপ করে ধাক্কা মেরে ফেলে দিচ্ছে।

    এবার মূল কথায় আসি। খুব সংক্ষেপে বুঝে নেবেন। একজন স্বামী সে পর্নোগ্রাফির চিত্তাকর্ষক অ্যাক্টরকে দেখে নিজের স্ত্রীকেও বিছানায় ঠিক সেভাবেই পেতে চায়। বিকৃত সব আচরণ নিজের অবলা স্ত্রীর কাছেও আশা করে। বেচারা স্ত্রী তাতে অসম্মতি বা অনাগ্রহ জানালেই ছোঁ করে ছুঁড়ে ফেলে তাকে। বেচারি আড়ালে মুখ লুকায়, কেঁদে বুক ভাসায়, না পারে সেটা করতে আর না পারে কাউকে কিছু বলতে। এভাবেই দিনের পর দিন চলে যায়। একপর্যায়ে স্বামী তার প্রতি আর আকর্ষণ বোধ করে না। পর্দার মেকাপ করা স্লিম আর রসালো নারী দেহের কাছে তার স্ত্রী নিতান্তই অখাদ্য হয়ে যায়। শুরু হয় পরকীয়া অথবা ফ্ল্যাট বিজনেস। এবং একপর্যায়ে নিশ্চিত ডিভোর্স।

    একই চিত্রের দ্বিতীয় পর্বও আছে। পর্নোগ্রাফির নেশায় যে কেবল ছেলেরাই মরেছে সেটা নয়, মেয়েদেরও অনেক বড় একটা অংশ এই নেশায় ব্যাধিগ্রস্ত। পর্দার স্বেত ভাল্লুকের পারফর্মেন্স দেখে দেখে নিজের স্বামীকে একলাফে ধ্বজভঙ্গ রোগী বানিয়ে ফেলে। অবশ্য ঘণ্টাব্যাপী পারফর্মকারীকে দেখে দেখে ৮-১০ মিনিটওয়ালাকে নিছক ধ্বজভঙ্গ রোগী মনে করাটাও অলীকতা নয়। অথচ এদেশের পুরুষদের গড় স্বাভাবিক সক্ষমতা হলো প্রায় ৩ থেকে ৭ মিনিট। এর বেশি হলে সেটা বোনাস।

    এখানে আমাদের বোঝা দরকার, প্রথমত পশ্চিমাদের খাদ্যাভ্যাস, আবহাওয়া ও জীবন প্রবাহের বৈচিত্র্যের জন্য স্বাভাবিকভাবেই এই উপমহাদেশের পুরুষদের তুলনায় ওরা একটু বেশি শক্তিশালী। এটা প্রাকৃতিকভাবেই নির্ধারিত। রবের ফায়সালা এমনই।

    তদুপরি নীল পর্দার নায়কদের যেসব পারফর্ম করতে দেখা যায় তা কিন্তু প্রাকৃতিক না! এমনকি বিরতিহীনও না! নানান কৌশল আর মেডিসিনের কারিশমায় ছোট্ট ছোট্ট ক্লিপের অনেকগুলো খণ্ডচিত্রের সম্মিলিত রূপকেই দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণ জ্ঞান বলে এটা একবারে ও একটানাই হয়েছে। তাই না? কিন্তু উঁহু। একদম না।

    একটু ভাবুন, ২ ঘণ্টার একটা সিনেমা কি একবারেই শেষ হয়? হয় না। মাসের পর মাস লেগে যায় একটা সিনেমা কমপ্লিট করতে। তেমনি এটাও একটা সিনেমা। একটা ফিল্ম। তবে পর্ণফিল্ম। এখানেও একেকটা ক্লিপ একবারেই কমপ্লিট হয় না। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেকগুলো ক্লিপ রেকর্ড করে সেখান থেকে বাছাইকৃত ক্লিপগুলো একত্র করেই সেটা ফাইনাল করা হয়। [এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ‘মুক্ত বাতাসের খোঁজে’ বইটি পড়ুন।]

    কিছু পয়েন্ট-

    নাম্বার ওয়ান- পশ্চিমারা প্রাকৃতিকভাবেই আমাদের এই উপমহাদেশের পুরুষদের চেয়ে একটু বেশি শক্তিশালী।

    নাম্বার টু- পর্দায় ওদের এই পারফর্ম সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নয়। নানান মেডিসিন ও কৌশলের সমষ্টিগত রূপ এটা।

    নাম্বার থ্রি- ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেকগুলো কাটপিছের সমষ্টি এটা।

    আর এভাবেই তারা ঘণ্টাব্যাপী পারফর্ম করে যায়। এসব দৃশ্য একজন স্ত্রী যখন দেখে, তখন স্বাভাবিকভাবেই নিজের স্বামীর কাছ থেকেও এমন পারফর্ম চায়। কিন্তু বেচারা স্বামী সারাদিন অফিস করে এসে প্রথমত ক্লান্ত, এরপর ফ্রেস হয়ে রাতের খাবার খেয়েই বিছানায় যায়। এদিকে মোবাইলে-ল্যাপটপে এসব ভিডিও দেখে স্ত্রী উতলা হয়ে আছে। অতঃপর বেচারা স্ত্রীকে খুশি করতে গিয়ে খুব দ্রুতই…

    এত অল্প সময়ে স্ত্রী খুবই অতৃপ্তি বোধ করে। তার মাথায় ভিডিও ক্লিপের সেই নায়ক ভেসে ওঠে। আর স্বামীকে ধ্বজভঙ্গ রোগী সাব্যস্ত করে ছ্যাঁত করে ঝাড়ি মেরে ওপাশে ফেলে দেয়। ডাক্তারের কাছে পাঠায়।

    এভাবে কয়েকবার এমন হলে বেচারা স্বামী আগের চেয়ে নিজেকে আরও বেশি দুর্বল হিসেবে খুঁজে পায়। শেষমেশ ডাক্তারের কাছে গেলে সবকিছু শুনে ডাক্তার দেখে- তার আসলে শারীরিক তেমন কোনো সমস্যা নেই। যেটা আছে সেটা হলো সাইকো সেক্সুয়াল ডিসফাংশন। যেটা সম্পূর্ণ মানুষিক একটি সমস্যা।

    ক্লান্তি ও মানুষিক চাপ নিয়ে স্ত্রীর কাছে গেলে স্ত্রীকে খুশি করা সম্ভব না। একদম খালিপেটে কিংবা ভরাপেটেও সম্ভব না। তদুপরি পর্নোগ্রাফি আসক্ত স্ত্রীকে তো কোনোভাবেই সন্তুষ্ট করা সম্ভব না। ফলাফল- সম্পূর্ণ সুস্থ-সবল একজন পুরুষ কল্পিত ধ্বজভঙ্গ রোগী। আর এই সুযোগে কলিকাতা হারবাল সহ বাহারি শিরোনামের ম্যাজিশিয়ানদের পকেট গরম। সবকিছু মিলিয়ে কিছুদিন পর বেচারা স্বামীর পেট-পিঠ সবটার অবস্থা একেবারে চরম!

    ব্যস, অতৃপ্তি থেকে কিছুদিন পর শুরু হয় অশান্তি ও মারামারির ধাপ পেরিয়ে পরকীয়া ও ডিভোর্সের মাধ্যমে এই অধ্যায় ক্লোজ হয়। শুরু হয় নতুন অধ্যায়। নতুন বলতে অন্ধকার জীবনের আরও অন্ধকারময় বিচ্ছিরি এক নতুন অধ্যায় …

    পৃথিবীর সকল স্ত্রীদেরকে ডেকে একটি কথা আমার খুব করে বলতে ইচ্ছে হয়, প্রিয় বোন আমার! চোখের এই গুনাহটি ছেড়ে দিন। স্বামীর শারীরিক ও মানুষিক অবস্থা বুঝে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ মতো উপযুক্ত সময়ে শালীনতা বজায় রেখে জীবনকে উপভোগ করুন। আর হ্যাঁ, আপনার স্বামীকে নীল পর্দার নায়ক ভাববেন না। সে খেটে-খাওয়া একজন সাধারণ মানুষ। তাকে সাধারণ মানুষ ভাবুন। কারণ, কেবল শারীরিক চাহিদাই জীবন নয়, এটা জীবনের ক্ষুদ্র একটি অংশ মাত্র। গুনাহের পথ থেকে ফিরে এসে স্বামীকে বুঝুন, তার মন-মেজাজের খবর রাখুন, আল্লাহকে ভয় করুন, সুখী হবেন। যে সুখ- অমৃত। যাতে কোনো খাঁদ নেই।

    আর সকল স্বামীদেরকে ডেকে বলতে ইচ্ছে হয়, প্রিয় ভাই আমার! চোখের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের দ্বারা নিজেকে ধ্বংস করবেন না। আর আপনার স্ত্রীকে নীল পর্দার নায়িকা ভাববেন না। সে সারাদিন আপনার ঘরের কাজকর্ম সমাধা করে আপনার অপেক্ষায় থাকা এক বিষণ্ণ মানবী। প্লিজ, তাকে নিছক উপভোগ্য একপি মাংশের দলা ভাববেন না। তার এই তুলতুলে দেহের অভ্যন্তরে তদপেক্ষা অধিক কোমল ও প্রস্ফুটিত একটি মন আছে, সেটাকে আবিষ্কার করুন, ভালোবাসুন, সুখ পাবেন। যে সুখ অম্লান। যাতে কোনো কলঙ্ক নেই।

    এখানে আরও একটি কথা। অনেক অবিবাহিত ভাই-বোন ভাবেন, বিয়ের আগে এসবে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে বিয়েই একমাত্র সমাধান। বিয়ে হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

    তাদের এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। বিয়ের দ্বারা কিছুটা উপকৃত হওয়া যায়। কিন্তু এই মারাত্মক নেশা থেকে সম্পূর্ণ বাঁচা যায় না। এজন্য তাদেরকে আমি বলি, আপনারা কিছু টিপস ফলো করুন, তা হলো-

    ১। দিনে-রাতে কখনওই একা থাকবেন না। একান্তই কাউকে না পেলে দরজা-জানালা খোলা রাখুন, নিজেকে আড়ালে রাখবেন না। রাতেও একা ঘুমাবেন না।

    ২। নেট দুনিয়া ও ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস অর্থাৎ মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি এসব থেকে কিছুদিনের জন্য দূরে থাকুন। বাটন ফোন ইউজ করুন।

    ৩। অশ্লীল ও অশালীন রোমান্টিক গল্প-উপন্যাস, পত্রিকা কিংবা ম্যাগাজিন পড়া থেকে বিরত থাকুন।

    ৪। নিজেকে প্রচুর ব্যস্ত রাখুন। ব্রেইনকে কাজ দিন। সে অলস থাকতে পারে না। কাজ দিলে করবে, কাজ না দিলে এদিক-ওদিক ঘুরবে। আর ঘুরে ফিরে সেই অন্ধকারেই পা বাড়াবে।

    ৫। শারীরিক পরিশ্রম করুন। ব্যয়াম বা খেলাধুলা করুন।

    ৬। দ্বীনি বই-পত্র পড়ুন। শিক্ষনীয় ও ইসলামী গল্প-উপন্যাস পড়ুন।

    ৭। বাজে বন্ধু ও অশ্লীলভাষীদের এড়িয়ে চলুন।

    ৮। পরিবেশ পরিবর্তন করুন। এজন্য সবচেয়ে সহজ ও উত্তম হয় কিছুদিনের জন্য তাবলীগে চলে গেলে। ৪০ দিন, ১২০ অথবা যতদিন সুযোগ হয় সময় লাগিয়ে আসুন। ভিন্নমতের হলে অন্যকোথাও বেড়িয়ে আসুন। প্রিয়দের সাথে দর্শনীয় কোথাও ঘুরে আসুন।

    ৯। নিয়মিত নামায-তিলাওয়াতে মন দিন।

    ১০। প্রতিবার মিসিং-এর জন্য নিজের প্রতি ফাইন ধরুন। যেমন- একবার ওসব করলে বা দেখলে ১০ রাকাত নামায ফাইন। অথবা ৫০০/১০০০ টাকা ফাইন। পরে সেটা সদকা করে দিন।

    ১১। সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রতিজ্ঞা করুন, নিজের সাথে জেদ করুন, শয়তানকে চ্যালেঞ্জ করুন, আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে দু’আ করুন, এভাবে যতবার হয়ে যায় ততবারই করুন, হতাশ হবেন না, বেঁচে থাকা অবধি হাল ছাড়বেন না। একসময় জিতে যাবেন।

    তাছাড়া এর সবচেয়ে সহজ সমাধানে সয়ং আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, যার অর্থ- ‘হে নবী! আপনি মুমিনদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের চক্ষুকে নিম্নগামী রাখে।’ অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

    আল্লাহর এই আদেশটি অমান্য করার ফলাফল কী জানেন?’

    ডা. রাকিব তার দীর্ঘ কথা শেষ করে আদিব ও হাসানের প্রতি শেষে এই প্রশ্নটি জুড়ে দিল।

    আদিব ক্ষীন কণ্ঠে বলল, ‘জি বলুন স্যার।’

    ডা. রাকিব টেবিলের ওপর রাখা পত্রিকাটি হাতে নিয়ে বললেন, ‘আজকাল এসব পত্রিকায় এমনসব নিউজ পাওয়া যায় যা পড়ে দেখাও দায়। গা ঘিনঘিন করে। গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়! হচ্ছেটা কী দেশে!

    মেয়ের জামাই শাশুড়িকে নিয়ে উধাও।

    আপন ছোটবোন স্বামী-সন্তান রেখে বড়ভাইকে নিয়ে উধাও।

    ছেলে তার মাকে….

    বাবা তার নিজ মেয়েকে…

    শিক্ষক তার ছাত্রিকে …

    ছাত্র তার শিক্ষিকাকে ….

    এগুলো তো পত্রিকার নিউজ। আমি নিজেও এমন একটি ঘটনার কথা জানি, যেখানে আপন বড়ভাই তার ছোট বোনের শ্লীলতাহানি করে প্রকাশ হবার ভয়ে খুন করে ফেলে। মা জেনে ফেললে তাকেও খুনের হুমকি দেয়।

    আর এসবের যুগে পরকীয়া তো এখন নৈতিক অধিকারের মত। প্রবাসীর স্ত্রী প্রতিবেশী কোনো ছেলের সাথে উধাও হওয়াটাও যেন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    এজাতীয় বিষয়গুলো খুবই স্পর্শকাতর। কিন্তু তবুও আজকাল এসবকিছু কেমন যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সইতে সইতে এখন আর খুব একটা প্রতিক্রিয়া অনুভব হয় না।

    স্বাভাবিকভাবে প্রতিটি বিবেকবান মানুষই এসবের প্রতিকার চায়। কিন্তু সেজন্য করণীয় কী সেদিকে কারো ভ্রূক্ষেপ নেই।

    অন্ধকার তাড়াতে দৌঁড়ঝাঁপ, মিছিল-মিটিং, হম্বিতম্বি ইত্যকার সকল কার্যক্রম শতভাগ ব্যর্থ। এখানে প্রয়োজন বাতি জ্বেলে দেওয়া। বাতি না জ্বেলে যতকিছুই করা হোক, আমাদের ঘাম ঝরবে ঠিকই, প্রয়োজনে রক্তও ঝরবে কিন্তু অন্ধকার দূর হবে না।

    এখন উপরোক্ত ঘটনাগুলো হলো অন্ধকার। এসব দূর করতে দ্বীনের বাতি জ্বেলে দেওয়ার বিকল্প নেই।

    সেই দ্বীনে শাশুড়ি মাহরাম হলেও মেয়ের জামাইর সাথে শাশুড়ির সম্পর্কের একটা সীমারেখা দেওয়া আছে। সেই সীমারেখা অতিক্রম করলেই অন্ধকার নামবে।

    সেই দ্বীন আপন ভাইবোনদের মাঝেও একটা পর্দা টেনে দিয়েছে। ১০ বছর বয়সেই বিছানা পৃথক সহ যাবতীয় রক্ষাকবচ দিয়ে দিয়েছে। সেটাকে এড়িয়ে গেলেই কেলেঙ্কারি ঘটবে।

    নিজ মা ও সন্তানের মাঝেও দ্বীন তার সীমারেখা এঁকে দিয়েছে। একটু বড় হলেই বিছানা আলাদা সহ আরও কিছু বিধি-নিষেধ ঠুকে দিয়েছে। এসবের ধার না ধারলে অন্ধকার নেমে আসবেই।

    বাবার ও মেয়ের সম্পর্কেও কিছু বিধিনিষেধ আছে। ছোটবেলা থেকেই আদর সোহাগের মাঝে একটা শালীনতা রাখা প্রয়োজন। তার সামনে মেয়ের গোপনীয়তা রক্ষা করা প্রয়োজন। অন্যথায় যেই বাবার অন্তরে রোগ আছে সেটার প্রভাব তার মেয়েকে ধ্বংস করবেই।

    শিক্ষাক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মিশ্রণ যে কতটা মারাত্মক! দ্বীন সেটা বলে দিতে মোটেও কার্পণ্য করেনি। বিপরীত লিঙ্গের কারো থেকে শিক্ষা নিতেও কড়া নিষেধাজ্ঞা রাখার পাশাপাশি দিয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কবার্তা। এসবে কেয়ারলেস হলে ফেতনাও ঘাড় বাকিয়ে বলবে- হু কেয়ারস!

    ভাই তার আপন ভাইয়ের সাথে, বোন তার আপন বোনের সাথে কতটুকু মিশতে পারবে সেটারও একটা লিমিটেশন দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

    বন্ধুদের সাথেও সম্পর্কের একটা রোডম্যাপ এঁকে দেওয়া হয়েছে।

    আর পরকীয়া রোধে সর্বোচ্চ কার্যকরী ব্যবস্থা এই দ্বীন ছাড়া আর কোথায় রয়েছে?

    সবশেষে কেউ যদি এই সীমারেখা লঙ্ঘন করে তার শাস্তিও এই দ্বীনে নির্ধারিত করা আছে।

    আমাদের জীবনব্যবস্থায় দ্বীনের এই বাতি না জ্বালা পর্যন্ত কস্মিনকালেও অন্ধকার দূর হবে না।

    মূলত পর্নোগ্রাফিই এসব বিকৃত চিত্র ও আইডিয়া আমাদের মানস্পটে এঁকে দিচ্ছে। নারী মানেই ভোগের বস্তু এমন একটা কনসেপ্ট আমাদের মাঝে তৈরি করে দিচ্ছে। ফলে মানুষও ধীরেধীরে সেটাকে অ্যাপ্লাই করার চেষ্টা করছে। নারীকুলের মধ্যে সে যাকেই দেখে তাকে জাস্ট একটা লাস্যময়ী মাংশপিণ্ড রূপে দেখে। ব্যবসায়ীরাও নারীকে নিজেদের বিজনেস চাঙ্গা করতে টোপ হিসেবে ব্যবহার করছে। নারীর সবকিছুকেই তারা মার্কেটিংয়ের মাধ্যম বানিয়েছে। অবশেষে একজন পুরুষ কামনার আগুনে ভস্ম হয়ে আপন-পর পার্থক্য করার ব্যাপারেও হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে।

    ঠিক এই সময়টাতে এসে সে একটু সুযোগ পেলেই যার-তার ওপর হামলে পড়ছে। যাকে-তাকে নিয়ে যাচ্ছেতাই ভেবে যাচ্ছে। কী ৮০ বছরের বৃদ্ধা আর কী ৮ বছরের বালিকা কেউ তার থাবা থেকে বাঁচতে পারে না।

    এই পর্নোগ্রাফি আমাদের শেষ করে দিল। একটি সবুজ বাগানে হিংস্র লালসার আগুন জ্বেলে সবকিছু ভস্ম করে দিল…

    আমি সবসময় যুবকদেরকে বলি, পর্নোগ্রাফিকে না বলো। বোনদের জন্যও বলি, পর্নোগ্রাফির বিষ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখো। না হয় আগামী প্রজন্মকে কী জবাব দেবে?’

    ডা. রাকিব থামার সাথে সাথেই আদিব বলল, ‘কিন্তু স্যার, নফসের সাথে যে পেরে ওঠা দায়! আমার অনেক বন্ধু এমন আছে, যে কি না প্রতিনিয়ত এসব থেকে বেঁচে থাকতে চায়। কিন্তু যত চায়, ঠিক ততটাই জড়িয়ে যায়। ওর জন্য কী করণীয়?’ একটি সম্পূরক প্রশ্ন জুড়ে দিল আদিব।

    ডা. রাকিব বললেন, ‘আমার এক স্যার ছিলেন। ছাত্রদেরকে প্রায়ই বিভিন্ন নসিহা করতেন। তো একবার আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলছিলেন- গুনাহের প্রবল ঝোঁক থেকে যখন তুমি ফিরে আসতে পারবে, তখন নিজের ভেতর ঈমানের এমন এক স্বাদ তুমি পাবে, যা অমৃত। এমন এক শক্তি তুমি পাবে, যা অপরাজেয়।

    এই কথাটি আপনার বন্ধুকেও শোনাতে পারেন। সেইসাথে একটু আগে যেই ১১টি টিপস বললাম সেটা ফলো করতে বলতে পারেন। সেইসাথে একটু চেষ্টা, অধ্যাবসায় আর দৃঢ়তা প্রয়োজন। ব্যস, বাকিটা আল্লাহ করে দেবেন। ইন-শা-

    আল্লাহ।

    আচ্ছা আদিব সাহেব, চলুন একটু বের হই, পাশের চায়ের দোকানটাতে বসি। একটুপর এশার আযান হবে। নামায পড়ে একটু তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে।

    অনেক দীর্ঘসময় ধরে ভারী ভারী সব কথা শুনতে শুনতে আদিব আর হাসানকেও ক্ষানিকটা ক্লান্ত দেখাচ্ছে। একটু হাঁটলে বেশ ভালোই লাগবে। সাথে হালকা লিকারের লাল চা! শরীরটা চাঙ্গা হয়ে উঠবে।

    ‘জি অবশ্যই, চলুন তাহলে।’ আগ্রহভরে বলল আদিব।

    হাসান বলল, ‘স্যার, রাতে পেসেন্ট আসে না? এত দ্রুতই বাসায় চলে যাবেন?’

    ‘আসলে। আমি এখানে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বসি। এখান থেকে মাগরিবের নামায পড়ার পর ৭টা বাজলেই সোজা বাসায় চলে যাই। কিন্তু ইচ্ছে করলে রাত ১০টা কিংবা ১১টা পর্যন্তও পেসেন্ট দেখা যায়

    ‘তাহলে দেখছেন না যে?’

    ‘জিজ্ঞেস যখন করেই ফেলেছেন তখন বলি, আমার একটা মাত্র ছেলে। ক্লাস টু-তে পড়ে। আশাকরি শীঘ্রই আরও একজনের আগমন ঘটবে। সকাল থেকেই নানান ব্যস্ততা শুরু হয়। বাচ্চার সাথে সকালে তেমন একটা কথা বলার বা খোঁজখবর নেওয়ার সময় পাই না। তাই রাতে একটু দ্রুত বাসায় গিয়ে প্রতিদিন ওদের সাথে ২ঘণ্টা সময় কাটাই। তাছাড়া আপনাদের ভাবি এখন বিশেষ সময় পার করছে। তাই তাকেও একটু সময় দেওয়া প্রয়োজন। সব মিলিয়ে ৭টার মধ্যে যে করেই হোক কাজ শেষ করি। পাশেই বাসা। আরেকটা মসজিদও আছে সাথে। গিয়ে ফ্রেস হয়ে মসজিদে গিয়ে এশার নামাজটা পড়ে নিই। এত আগে যাই তবুও শোবার আগে ১০-১১টা বেজে যায়। তো আরও দেরি করে গেলে গিয়েই শুয়ে পড়তে হবে। বাচ্চার সাথে রিলেশনশিপটা তখন আর হবে না। স্ত্রীর সাথেও বোঝাপড়ার অধ্যায়টা চকচকে থাকবে না। তাহলে আমার এতসব ব্যস্তাতা ঠিক কার জন্য? যা হোক, চলুন তাহলে। অনেক কথা বলে ফেললাম।’

    ডা. রাকিব অ্যাসিস্ট্যান্টকে রেখে আদিব আর হাসানকে সাথে নিয়ে চেম্বার থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো। ওরা সন্ধ্যার পর চেম্বারে এসেছিল। হেমন্ত পেরিয়ে শীতের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। ৬টার মধ্যেই সন্ধ্যা নামে।

    আজকের রোগীগুলো সন্ধ্যার আগেই মোটামুটি শেষ হয়ে গেছে। তাই বেশ লম্বা সময় পেল ওরা। প্রায় ঘণ্টাখানেক! ভাগ্যও বলতে হয়। উনার মতো একজন মানুষের সাথে এতটা সময় ধরে কথা বলতে পারা সবার ভাগ্য হয় না।

    ‘চাচা, তিনটা লাল চা দিন তো।’ দোকানিকে উদ্দশ্য করে বললেন ডা. রাকিব।

    আদিব আর হাসান পাশের বেঞ্চে বসল। ডা. রাকিবও ওদের সাথে বসলেন।

    হাসান কেমন যেন আমতা-আমতা করছে। ‘কী ব্যাপার মি. হাসান! কোনো অসুবিধা হচ্ছে? কিছু বলবেন?’

    ‘জি না স্যার। তেমন কিছু না। একটি কথা অবশ্য জিজ্ঞেস করার ছিল। স্মরণ ছিল না। এখন তো বের হয়ে পড়েছি।’

    ‘অসুবিধা নেই। বলুন।

    ‘না মানে, বাইরে, কেমন দেখায়…।’

    ‘কোনো অসুবিধা নেই। দোকানি চাচা আমার খুব প্রিয় মানুষ। বেশ রসিক। বলতে পারেন সমস্যা নেই।’

    ‘আসলে বলতে চাচ্ছিলাম যে, ‘আপনার সব কথাই খুব মন দিয়ে শুনেছি। কিন্তু তবুও আমার স্ত্রীকে কেন যেন আমার কাছে আর আগের মতো ভালো লাগে না। খুব চেষ্টা করি মনটা ধরে রাখতে। পেরে উঠছি না।’

    ডা. রাকিব চায়ে কয়েক চুমুক লাগিয়ে হাসানের প্রতি মনোযোগী হলেন। খোলা পরিবেশে হাসানের এমন প্রশ্ন শুনে আদিব কিছুটা ইতস্তত বোধ করছে। এদিক- ওদিক চোখ ফিরিয়ে ডা. রাকিবের দিকে তাকাতেই ডা. রাকিব বললেন, ‘মি. আদিব আর মি. হাসান, সর্বশেষ কিছু কথা বলছি। একটু খেয়াল করুন। ‘দৃষ্টিভ্রম’ শব্দটির সাথে আপনাদের পরিচয় আছে?’

    আদিব-হাসান কেউ কিছু বলছে না। ডা. রাকিব বললেন, ‘সেদিন একটি ছবি দেখলাম। পাঁচ কোণা বিশিষ্ট গোলাকৃতির মতো দেখতে। অনেকটা ফুটবলের উপরের ছাপের মতো। তাকাতেই মনে হলো ছবির সবকিছু ঘুরছে। এবার নির্দিষ্ট একস্থানে গভীর দৃষ্টি স্থির রেখে দেখি, আসলে কিছুই ঘুরছে না। আবার দৃষ্টি হালকা করে দেখি, ঘুরছে। অদ্ভুত না?!

    এটা হলো ‘দৃষ্টিভ্রম’। রিয়েলিটি এক জিনিস, অথচ দেখি আরেক জিনিস। আমরা ধোকাটা খাই ঠিক এখানেই। এটাকে হ্যালুসিনেশন বলে। আমি এর কোনো সাইন্টিফিক ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না। সরাসরি মূল কথায় আসছি।

    আমরা এমন অনেক কিছুই দেখি, যা আসলে যেমনটা দেখা যায়, ঠিক তেমনটা নয়। তবে কোনো সূক্ষ্মদর্শী যদি গভীর দৃষ্টিতে দেখে, তাহলে সে বিষয়টি বুঝতে পারে।

    আমরা দেখি, বৃষ্টির বাড়ির ছাদ ঘেঁষে আকাশ নেমেছে। গিয়ে দেখি, ফক্কা! আবার তাকিয়ে দেখি, বৃষ্টির বাড়ি ডিঙিয়ে রাত্রির বাড়িতে গিয়ে গোটা আকাশ আঁধারে ছেয়েছে। এবার গিয়ে দেখি, আন্ডা! আকাশ বোধহয় আঁধারেই মিলিয়ে গেছে। আবার ভোর হতেই দেখি, আকাশ আবারও তার স্টেশন বদলেছে। অন্যকোথাও সে ল্যান্ড করেছে।

    চাঁদনি রাতে পথচলতে গিয়ে কেউ কখনও চাঁদের সাথে হেঁটেছেন? হাঁটতে পারেন। কিন্তু আমি হাঁটিনি। বরং চাঁদ নিজেই আমার সাথে হেঁটেছে। আমি দাঁড়ালে সে-ও থমকে গেছে। আবার আগালে, সে-ও আমার সাথ ধরেছে।

    কী অদ্ভুত আমাদের দেখা তাই না?

    যেই মেয়েটিকে একাধিক ছেলে দেখতে গিয়ে পছন্দ না করে ফিরে যায়, অথচ এমন একজন একদিন আসে, যার চোখে এই মেয়েটিকেই অপরূপা মনে হয়। ছেলেটি তার কাছে ভালোবাসার তরী হয়। আর তাতে চড়ে মেয়েটি সুখের সাগরে ভেসে বেড়ায়।

    আমাদের চোখের দেখা এমনই বৈচিত্র্যময়। সৌন্দর্যের মাপকাঠি ব্যক্তিভেদে এভাবেই বদলে যায়। আর না হয়, কারও চোখের বিষ কারও হৃদয়ের মালি কী করে হয়?!’

    ডা. রাকিবের এমন অভূতপূর্ব কথাগুলো শুনে আদিব আর হাসান রীতিমতো বিস্মিত! কী সুন্দর কথা! কী মাধুর্য মাখা! যেন অমৃত…

    ডা. রাকিব ওদের প্রতি লক্ষ্য না করে বলে যাচ্ছেন। তিনি বললেন, ‘তবে আশ্চর্যের বিষয় কী জানেন? আমাদের চোখ পরনারীকে লাস্যময়ী হিসেবে দেখে। আসলে দেখানো হয়। ইবলিশ তার আপডেট ফটো ইডিটরের ভেলকিতে চোখদু’টোকে স্রেফ ছানাবড়া করে দেয়।

    নিজের ঘরে চোখ ঝলসানো রূপসী স্ত্রী থাকলেও পাশ দিয়ে বেদের মেয়ে হেঁটে গেলে ওটাকেই বেশি সুন্দরী মনে হয়। আকর্ষণীয় দেখায়। কাছে পেতে ইচ্ছে হয়। শুধু-শুধুই কি আর কেউ পরকীয়ায় জড়ায়? দৃষ্টিভ্রমের ফাঁদে পড়েই মানুষ এসকল লঙ্কাকাণ্ড ঘটায়। এজন্যই দৃষ্টিকে সংযত রাখতে হয়। রব্বে কারীমের আদেশও তাই।

    একবার তাকে পেয়ে গেলে খুব দ্রুতই ভ্রম কেটে যায়। আসল রূপ সামনে এসে যায়। অভিশপ্ত এই চোখ তখন আবার নতুন কিছু খুঁজে বেড়ায়।

    এক্ষেত্রে অবশ্য স্ত্রীদেরও দোষ আছে। যেটাকে খুব মারাত্মক দোষ হিসেবে দেখি আমি।

    একটি মেয়ে বিয়ের পূর্বে কতশত স্বপ্ন বুনে, বাহারি রকম সাজে মজে দিনরাত আবেগ-উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভাঙে। কিন্তু বিয়ে হতেই কেমন যেন সেসবকিছু থেকে সে একপ্রকার ইস্তফা দেয়। এদিকে অন্যকেউ দৃষ্টিভ্রমের জাল ফেলে বেচারা স্বামীকে বাগে নেয়। ব্যস, আর কী চাই। বাকিটা অটোই হয়ে যায়…

    আচ্ছা! সে কেমন স্ত্রী?! যার স্বামীকে তার চেয়ে শতগুণ অযোগ্য ও কুৎসিত কেউ দৃষ্টিভ্রমের জালে আটকে দেয়? তার সৌন্দর্য নিজের স্বামীকেই যদি নিবেদন করে তাকে ধরে রাখতে না পারে, তাহলে বলুন তো, এই সৌন্দর্য হাতে, পায়ে নাকি মাথায় দেয়?!

    আমাদের দ্বীনদার বোনদের মধ্যে এই বিষয়ে মাত্রাতিরিক্ত ঘাটতি রয়েছে। আজ শুধু আপনি না, অনেক দ্বীনদার স্বামীদের এই বিষয়ে গোপন অভিযোগও রয়েছে। বেচারা স্বামী কেবল ঈমান ও ব্যক্তিত্বের দাবিতে দিনের পর দিন নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখছে।

    আমার পক্ষ থেকে সেসব স্বামীকে স্যালুট দিচ্ছি। আর সেসব বোনের প্রতি করুণা প্রকাশ করছি। সেই সাথে মি. হাসান আপনাকেও স্যালুট। স্যালুট মি. আদিব আপনাকেও।

    ‘স্যার, স্যালুট তো আমরা আপনাকে দেব। এতটা সময় দিচ্ছেন আমাদের! সেইসাথে এত এত অমূল্য পরামর্শ!’

    ‘না না! আপনারা সচেতন স্বামীর পরিচয় দিয়েছেন। সাহস করে সমাধানের জন্য অকপটে আমাকে সব খুলে বলেছেন। অনেকে তো এটুকুও করে না। সমাধানের ন্যূনতম চেষ্টাটুকুও করে না।

    স্বামী বলে- অ্যাই!

    স্ত্রী বলে- এবার তাইলে বাপের বাড়ি যাই।

    মাঝে থেকে সন্তানগুলো বলির পাঠা হয়। খুব কষ্ট হয় এদের জন্য। যা হোক, আমার বাসার কাছেই মসজিদ আছে। ওখানেই নামাযটা পড়ে নেব। আপনারা এখান থেকেই পড়ে যান। আজ আসি তাহলে?’

    ‘স্যার আর একটি কথা বাকি রয়ে গেছে। কিন্তু আপনার যে দেরি হয়ে যাচ্ছে…

    ‘হুম, বলুন মি. হাসান। বলে ফেলুন।’

    ‘স্যার, আমার দাঁতেরও একটু সমস্যা। মাঝেমাঝে খুব দুর্গন্ধও হয়। কী যে করি…।’ এই বলে মাথা চুলকাচ্ছে হাসান। ডা. রাকিব একটা চিকন হাসি দিয়ে বললেন, ‘ইয়াং ম্যান! স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য হওয়ার এটাও একটা কারণ। স্ত্রী কাছে আসতে চায় না। এই ব্যাপারে খুব কিউট একটা পরামর্শ দিচ্ছি।

    যাদের দাঁতের মাড়ি দুর্বল, একটুতেই পেইন হয়, ব্লিডিং হয়, শক্ত আবরণ পড়ে ও হলদেটে হয়ে যায় এবং মুখে দুর্গন্ধ সহ বিভিন্ন সমস্যা হয় তাদের জন্য অব্যর্থ একটি মেডিসিন হলো ‘মেসওয়াক’।

    তবে দাঁতের বিশেষ সমস্যার জন্য ডেন্টিস্ট দেখানোর বিকল্প নেই। এর পাশাপাশি প্রায় সকল পেসেন্টকেই এই সাজেশনটি দেওয়া যায়। শুরুর কয়েকদিন একটু ব্লিডিং হওয়া বা রক্ত আসলেও কিছুদিন নিয়মিত ব্যবহার করার পর ইন-শা- আল্লাহ সুস্থতার দেখা মিলবে …

    মাড়ি শক্ত, পেইন উধাও, ব্লিডিং বন্ধ, শক্ত আবরণ পড়া বন্ধ ও ঝকঝকে ফ্রেস এবং সুইটি-কিউটি এক ফ্লেভারে মুখটা কেমন যেন মাখোমাখো হয়ে যায়। নিজের কাছেই খুউউউব ভাল্লাগে …

    বিবাহিতদের জন্য টিপসটি বেশ রোমান্টিক! অবিবাহিতরাও প্রিপারেশন হিসেবে শুরু করেতে পারে…

    তো ঠিক আছে! আজ আসছি তাহলে! হ্যাপি রোমান্টিসিজম…

    1 2 3 4
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅ্যাডগার অ্যালান পো রচনাসমগ্র / অনুবাদ : জাকির শামীম
    Next Article ইহুদি প্রশ্নে – কার্ল মার্কস
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }