Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শব্দযাত্রা লেখক সংঘ – জুবায়ের আলম

    জুবায়ের আলম এক পাতা গল্প333 Mins Read0

    শব্দযাত্রা লেখক সংঘ – ১২

    অবশেষে চেনা দেশে

    ডায়াসের ওপরে রাখা গ্লাসটা থেকে আরেকটু পানি খেয়ে ভদ্রলোক আরেকবার পৃষ্ঠা উল্টালেন।

    “যে সৃষ্টি সৃষ্টিকর্তার মনে ঈর্ষার জন্ম দেয় না সেটা কোন সৃষ্টিই না। লেখককে এটা মনে রাখতে হবে। যে লেখার জন্য নিজের প্রতি নিজেরই হিংসা হবে না, নিজের প্রতি নিজের একটা প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে না সেটা খুব একটা ভালো লেখা না। ‘আমি এর থেকেও ভালো কিছু লিখব’- এই বোধ যে সৃষ্টি বা লেখা লেখকের ভেতরে জাগিয়ে তুলতে পারবে সেটাই সত্যিকারের সাহিত্য, সত্যিকারের সৃষ্টি।”

    ঠিক তখনই ভোঁতা শব্দটা বার বার হতে লাগল। বার বার, যেন কাঁচের ওপরে কেউ সজোরে আঘাত করছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝন ঝন করে শব্দ হল। বিকট শব্দে সিলিং ভেঙে পড়ল। এসিটা সজোরে আছড়ে পড়ল মেঝের ওপরে। বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হল। চুন সুরকির ধূলায় ঢেকে গেল চারপাশ।

    ****

    কিছুদুর গিয়েই হঠাৎ দুজন লোককে বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখল সুকান্ত পাশের একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল। লোক দুজন লাইটটাকে পেছনে ফেলে দাঁড়িয়েছে বলে তাদেরকে দেখা যাচ্ছে না। কালো কার্ডবোর্ডে কাঁটা মানুষের অবয়ব বলে মনে হচ্ছে।

    লোক দুজনের একজন সিগারেট ফুঁকছে বলে মনে হল। ধোঁয়া উড়তে দেখল লোকটার মাথার ওপর দিয়ে। এই অখাদ্যটাতে যে মানুষ কি মজা পায়। আগুন দিয়ে টাকা পোড়ানো, সুকান্ত ভাবল। লোক দুজনের ভেতরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল সে।

    কিছুক্ষণ পর লোক দুজন ভেতরে গেল।

    সদর দরজাটা দিয়ে নিশ্চয় ঢোকা যাবে না। তাহলে উপায়? পাইপ অথবা গাছের ডালই ভরসা।

    সদর দরজার পাশ দিয়ে খুব সাবধানে হাঁটতে শুরু করল সুকান্ত উদ্দেশ্য, বাড়ির পেছন দিকে যাওয়া। ধরা পড়লে কি হবে জানা নেই, কিন্তু কিছু না হলেও অন্তত বিব্রত হতে হবে। তাছাড়া হিরণ তাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখে না।

    অন্ধকারেও বাড়ির দেওয়ালের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখল। কোন পাইপ বা গাছের ডাল পাওয়া যায় কিনা। উপায় তো একটা বের করতেই হবে জানতে হবে হিরণ এত রাতে কোথায় আসল।

    পাইপ একটা পাওয়া গেল। কিন্তু সেটা শ্যাওলা ধরা, পিচ্ছিল। হতাশ হতে হল সুকান্তকে। আরো কিছুটা এগোনোর পরে যেটা পাওয়া গেল সেটা অবশ্য তাকে কিছুটা সান্ত্বনা দিল। একটা দরজা। কাঠের পুরনো দরজা। সামান্য ধাক্কা দিতেই একটু ফাঁকা হয়ে গেল। আরেকটু ধাক্কা দিয়ে দেখল শব্দ হয় কিনা। আরেকটা কাজ করতে হবে। একটু দূরেই কিসের যেন ঝোপ। অন্ধকারটা ওখানে গাঢ়। ওখানে বসে একটা নুড়ি ছুঁড়ে মারল দরজাটা বরাবর।

    ঠকাস!

    নাহ, কেউ ‘কে’ বলে এগিয়ে আসল না। চারপাশ আগের মতই নীরব। আর এই নীরবতাই সুকান্তকে নিশ্চিত করল, দরজাটা দিয়ে ভেতরে যাওয়া যায়। তারপরও অবুঝ হৃদপিণ্ডটা ধাক্কা দিতে থাকে পাঁজরে। যদি এটা ফাঁদ হয়? যদি এটা একটা ‘একমুখী’ রাস্তা হয়? সব কিছু ভেবে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ল সুকান্ত।

    ফাঁকা একটু জায়গা। অন্ধকারেও বোঝা যায়। পুরনো কাগজপত্রের স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ নাকে এসে ঠেকল। ফাঁকা জায়গাটা পার হলেই আরেকটা খোলা দরজা। সেটা দিয়ে মৃদু আলো আসছে। যেন এক সাথে অনেকগুলো মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। হলুদ একটা আভা। ফাঁকা জায়গাটায় এলোমেলোভাবে অনেক ছেঁড়া কাগজ পড়ে আছে। সেগুলো সাবধানে পেরিয়ে দরজাটার দিকে এগিয়ে গেল সুকান্ত।

    উঁকি দিয়ে দেখল সে। একটা সরু হলওয়ে। হলওয়েতে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে এলোমেলোভাবে। সাথে সাথে মাথা সরিয়ে নিল সুকান্ত। লোকগুলো যদি এই মুহূর্তে দরজাটার দিকে হেঁটে আসে, সর্বনাশ হয়ে যাবে।

    কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে ওপরে একটা কার্নিশ চোখে পড়ল। লাফিয়ে কার্নিশের কিনার ধরে শরীরটা টেনে কার্নিশের ওপরে উঠিয়ে ফেলল সুকান্ত। এজন্য অবশ্য রীতিমত কসরত করতে হল তাকে। ক্ষতস্থানগুলো ব্যথায় ঝন ঝন করে উঠল। দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে বোঝাল, পেছনে ফিরে গেলে পুলিশের হাতে একদিন ধরা পড়তেই হবে। বরং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের একটা শেষ চেষ্টা করে দেখা যাক না।

    সুকান্ত কার্ণিশে ওঠার সাথে সাথে দরজাটা দিয়ে একটা ছায়া বের হয়ে আসল। এদিক ওদিক তাকিয়ে প্রাচীরের কাছে গিয়ে প্যান্টের জিপার খুলল। অন্ধকারে ছর ছর করে শব্দ শুনতে পেল সুকান্ত। ছায়াটা পেছনে ঘুরতেই হলুদ আভায় চেহারা চিনতে ভুল হল না সুকান্তের; হিরণ পাশা।

    কার্নিশের ধার ঘেঁষে একটু এগিয়ে গেল সুকান্ত। টালির ছাদ। ছাদের ওপরে গোল একটা গম্বুজ মত আছে। সেটার ধার ঘেঁষে অনেকগুলো আয়তাকার ছোট ছোট কাঁচের জানালা। হলুদ আভা আসছে সেগুলো দিয়েও।

    সুকান্ত কুঁজো হয়ে, খুব সাবধানে, প্রতিটা পদক্ষেপ মেপে মেপে সামনে এগিয়ে গেল। জানালাটার কাছে গিয়ে দেখল, কাঁচগুলো জানালার সাথে পার্মানেন্টলি লাগানো আছে। জানালার গরাদগুলো পুরনো, কিন্তু কাঁচটা নতুন।

    হাঁটু গেড়ে বসে জানালার ভেতরে উঁকি দিল সুকান্ত।

    একটা হলঘর বলে মনে হল। পুরো হলঘরটা আলোকিত হয়ে আছে কয়েকটা হলুদ ছোট ছোট স্পটলাইটের আলোতে। একটা আবছায়া আলো আঁধারী। লম্বা লম্বা রড নেমে গিয়েছে সিলিং থেকে, সেগুলোর শেষ মাথায় আবার ফ্যান। সিলিং-এ খুব সুন্দর কংক্রিটের টেরাকোটা দিয়ে কারুকার্য করা। বাঁকা হতে হতে সিলিংটা একটা গম্বুজ হয়ে গিয়েছে। একেবারে নিচে সারি সারি বেঞ্চ। সেগুলোতে যে মানুষ বসে আছে, সেটা বুঝতে বেশ সময় আর কষ্ট লাগল সুকান্তের।

    মঞ্চের দিকে চোখ গেল সুকান্তের। একটা ডায়াস আছে ঠিক মঞ্চের মাঝখানে। আর সেখানে একজন লোক এসে দাঁড়িয়েছেন। যদিও লোকটার মুখ দেখা যাচ্ছে না। সুকান্ত ঘাড় ঘুরিয়ে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করল, হল না। কিছুক্ষণ পরে আবিষ্কার করল, এই জানালাটা ছাড়াও আর আশেপাশে আরো কয়েকটা জানালা আছে। একই আকারে। ছোট আর আয়তাকার।

    খুব সাবধানে সবগুলো জানালাতে উঁকি দিল সুকান্ত। সবগুলোতেই প্ৰায় একই জিনিস দেখতে পেল, আর সেটাই স্বাভাবিক। একটা গম্বুজের চারপাশ দিয়ে ছোট ছোট জানালা, নিচে বড় হলরুম। একটা উঁচু প্ল্যাটফর্ম, তার ওপরে আরেকটু উঁচু স্টেজ।

    পরিষ্কার হয় গেল সুকান্তের কাছে, এটা একটা গীর্জা। পুরনো গীর্জা। ছোট ছোট জানালাগুলো বাতাস চলাচলের জন্য ছিল। কাঁচগুলো পার্মানেন্টলি লাগানো হয়েছে যখন এসি লাগানো হয়। পুরনো ফ্যানগুলো তারও আগে লাগানো।

    আদাবরে অনেক আগে একটা গীর্জা ছিল। একাত্তরে যেটা টর্চার সেল হিসাবে ব্যবহার করা হত। মিত্রবাহিনীর আক্রমনে যেটা ভেঙে গিয়েছিল। পরে এক কানাডা প্রবাসী সেই ভাঙা গীর্জাটা কিনে কোন রকমে সংস্কার করে ভাড়া দেয়।

    তাহলে এই সেই গীর্জা!

    সুকান্ত দেখল মঞ্চের ডায়াসের সামনের লোকটা পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছে। লোকটার মুখ দেখা যাচ্ছে না। মঞ্চের খানিকটা আলোকিত হয়ে বাকিটা অন্ধকারে ডুবে আছে।

    ঢ্যাক!

    কাঁচের ওপরে সুকান্তের কনুইয়ের বাড়ি লেগে শব্দ হল। টালির ওপরে পা হড়কে কাঁচে কনুইয়ের গুঁতো লাগার সাথে সাথে সুকান্ত নিজেকে সামলে নিল। নিচের হলরুমের সবাই এদিক-ওদিকে তাকাচ্ছে। তারমানে তারা শুনতে পেয়েছে শব্দটা।

    কিন্তু কেউ ওপরে না তাকানোতে সুকান্তের বুকের ভেতর থেকে একটা চাপা নিঃশ্বাস বের হয়ে আসল। ডায়াসের লোকটাও আগের মতই পাথরের মত দাঁড়িয়ে থাকল।

    মূর্তির মত সবাই বসে আছে। দাঁড়িয়ে আছে ডায়াসের লোকটাও। কাঁচের ভেতর দিয়ে যেন একটা পুরনো ফটোগ্রাফ দেখতে পাচ্ছে সুকান্ত।

    এভাবে কতক্ষণ গিয়েছে, মনে নেই সুকান্তের। নিঃশ্বাস বন্ধ করে স্থির দৃশ্যটা দেখার কোন কারণ নেই, তারপরেও তার নিঃশ্বাস স্বাভাবিক হচ্ছে না কোন এক বিচিত্র কারণে।

    হঠাৎ ডায়াসের লোকটা হাত তালি দিল। সাথে সাথে দুজন লোক অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসল। তাদের দুইজনের কাঁধে একটা মানুষের দেহ। দেহটা মঞ্চের ওপরে ফেলে দিয়ে লোক দুজন আবার অন্ধকারে চলে গেল।

    কী বলছে ডায়াসে দাঁড়ানো লোকটা? শুনতে হবে। যেভাবেই হোক, শুনতে হবে। কাঁচগুলো সরানোর বৃথা চেষ্টা করল সুকান্ত। নাহ, সরবে না কাঁচগুলো। তারপর হঠাৎ এসির কথা মনে হল। ভেতরে এসি আছে। ভেন্টিলেটরও নিশ্চয়ই থাকবে, হোক সেগুলো বন্ধ করা। গীর্জাতে অনেক বড় বড় ভেন্টিলেটর থাকে, থাকার কথা।

    ভেন্টিলেটর পাওয়া গেল, কিন্তু সেটা বন্ধ। হঠাৎ লম্বা চিমনীটার দিকে চোখে পড়ল। ওখান থেকে যদি কোন ছিটেফোঁটা শোনা যায়? সুকান্ত গিয়ে কান পাতল। শুনতে পেল, গমগমে গলায় লোকটাকে বলছে,

    “…আরেকবার স্বাগতম শব্দযাত্রা লেখক সংঘে। আরেকটা রাত আপনাদের সাথে। কেমন আছেন সবাই? জানি ভালো নেই। প্রতিটি লেখকের শব্দযাত্রা এক একটা বিষন্ন যাত্রা। এই যাত্রায় ক্ষোভ আছে, মানুষের প্রতি অভিমান আছে, ঘৃণা আছে, কষ্ট আছে। আমি জানি আপনারা সবাই কম বেশি রাইটার্স ব্লকে ভোগেন। লিখতে বসেছেন, কিন্তু লেখা নেই। এটা কষ্টের, ভীষণ কষ্টের। যারা এই ব্লকে কখনও ভোগেননি তারা বিন্দুমাত্র ধারণাও করতে পারবেন না এর কি জ্বালা। এটা গেল না লেখার কষ্ট, কিন্তু লেখার কষ্ট? সেটা আরো বেশি। যখন আপনি বুঝতে পারবেন আপনার লেখাটা অনেকদূর এগিয়েছে এবং আরো অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, তখন যতক্ষণ পর্যন্ত লেখাটা পরিণতি না পাচ্ছে, ততক্ষণ লেখকের ভেতরে একটা বিষাক্ত অস্থিরতা কাজ করে। ঠিক একজন প্রসূতি মায়ের মত। দুজনেই জানে ব্যথাটা বিষাক্ত, কিন্তু এর ফল খুব সুখকর। আর্নেস্ট হেমিংওয়ে যেমন লেখালেখিকে তুলনা করেছেন যৌন সঙ্গমের সাথে। লেখার সময়টা যায় অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে, কিন্তু লেখার শেষ অক্ষরটা লেখার যে সুখ, তা শুধু সঙ্গমের শেষ পরিণতির সুখের সাথেই তুলনীয়। যাই হোক, আপনাদের রাইটার্স ব্লক থেকে উত্তরণের জন্য আমরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এর মধ্যে প্রথমটা ছিল, অভিজ্ঞতা সঞ্চয়। একজন লেখক ঘরের কোণায় বসে কখনোই ভালো কিছু লিখতে পারবেন না। তাকে বাইরে বের হয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হবে যেটা আমি আগেও বলেছি। সেই অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের অংশ হিসাবে আপনাদেরকে গুপ্তহত্যার কিছু কলাকৌশল শেখানো হয়েছে। এবং আপনারা এরই মধ্যে বেশ কিছু কু-লেখককে খুনও করেছেন। কতজন করেছেন এর মধ্যে একটু হাত তোলেন তো?”

    দৌড়ে আবার সেই কাঁচের জানালার কাছে গেল সুকান্ত।

    দর্শক সারিতে বসে থাকা বেশ কয়েকজন হাত তুলল। সুকান্ত গোনার আগেই সবাই হাত নামিয়ে ফেলল। কতজন হবে? তাও কম করে বিশ বাইশ জন তো হবেই। সংখ্যাটা মনে করেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল সুকান্তের। এরা সবাই কু-লেখককে খুন করেছে। মানে, মানে এতদিন যতজন লেখক প্রকাশক খুন হয়েছেন, তাদের সবাই কি তাহলে এদের হাতেই খুন হয়েছে? হিসাব মিলাতে পারল না সে। তার আগেই হাত নামিয়ে ফেলল সবাই।

    “…এই খুনের মাধ্যমে দুটো লাভ হচ্ছে। এক, আমরা একটা পরিশুদ্ধি ঘটাতে পারছি। যেসব প্রকাশক লেখককে খোঁয়াড়ের শুয়োর মনে করে, যে শুধু মাংস দেবে আর তারা সেটা দিয়ে তারা ফুলে ফেঁপে উঠবে, আর যেসব লেখক, যারা অন্যকে দিয়ে বই লিখিয়ে নেয়, যারা সস্তা খ্যাতির জন্য বই লেখে, যারা লেখকের বই পুঁজি করে সিনেমা বানায়, কিন্তু লেখককে যথাযথ সম্মান আর সম্মানী কোনটাই দেয় না, তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাদেরকেই লেখকের শত্রু বলে মনে হবে, তাকেই আমরা নির্দ্বিধায় সরিয়ে দেব।

    “আর দুই, আমরা অভিজ্ঞতা পাচ্ছি। আগেই বলেছি, একজন লেখককে মৃত্যুর কাছাকাছি যেতে হবে। মৃত্যু দেখতে হবে। নিজ হাতে একটা জীবন নিয়ে নেওয়াটা খুব কঠিন। মানুষ সহজে মরে না। ধড়ফড় করে, বাঁচার জন্য কাঁটা মুরগীর মত ছট ফট করে। এই যে অভিজ্ঞতা, এটা একজন লেখকের কাছে অনেক দামি আর অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। বিশেষ করে আপনারা যারা থ্রিলার লেখক আছেন, তাদের জন্য তো বটেই। আর একটা কথা হল, যন্ত্রণায় কাতর মানুষের মৃত্যু আমাদের মস্তিষ্কে দীর্ঘমেয়াদী স্নায়বিক স্থিরতা আনে। এটা বেনযোডায়াযেপিন এনজিওলাইটিক হিসাবে কাজ করে। আর এটা, একজন মানসিক অস্থিরতায় ভোগা লেখকের জন্য অনেক বেশি উপকারী। যাই হোক, আজ আমাদের ভেতরে আরেক সৌভাগ্যবান মানুষ নিজেকে উৎসর্গ করবেন আমাদের এই ঐতিহাসিক উদ্দেশ্যে। হিরণ পাশা, এখনকার নাম করা থ্রিলার লেখক, তিনি আজকে এই মানুষটাকে হত্যা করবেন। তিনি হত্যা করবেন, আর আপনারা নোট করবেন। হত্যার বিবরণ লিখবেন। খাতাকলম নিয়ে সবাই প্রস্তুত হয়ে যান। লেখা হয়ে গেলে আমি সবারটা দেখব। মনে রাখবেন, যেকোন দৃশ্য বর্ণনা করবেন একজন পাঠকের দৃষ্টিতে, লেখকের দৃষ্টিতে না।”

    এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো শুনল সুকান্ত। সারা শরীর ঝন ঝন করে উঠল। তাহলে এটাই সেই শব্দযাত্রা লেখক সংঘ। যেটার হ্যান্ডবিল সে হিরণ পাশার ড্রয়ারে দেখেছিল। এই মুহূর্তে সে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সেই জায়গাটার নিচে বসে আছে জলজ্যান্ত সব খুনিরা। কাঁপা কাঁপা পায়ে আবার জানালার কাছে ফিরে গেল। মাথার ভেতরে সব ধোঁয়াটে হয়ে গিয়েছে, অনুভূতিহীন হয়ে গিয়েছে সারা শরীর।

    জানালা দিয়ে দেখল, শরীরটা নিথর হয়ে পড়ে আছে মঞ্চের ওপরে।

    ততক্ষণে হিরণ পাশা মঞ্চে উঠে গিয়েছে। তার হাতে কিছু একটা ধরা আছে, দেখা যাচ্ছে না। যাই হোক, সেটা যে ভালো কিছু না সেটা তার হাবভাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ছুরি ধরার মত করে জিনিসটা ধরে সে এগিয়ে যাচ্ছে মঞ্চের ওপরে পড়ে থাকা শরীরটার দিকে। আর ডায়াসের ওপরে দাঁড়ানো লোকটা অন্ধকারের দিকে সরে গেল।

    কি হচ্ছে এসব! ভাবার সময় নেই। লোকটাকে বাঁচাতে হবে। লোকটা কি পাগল নাকি? একজন তাকে মারার জন্য এগিয়ে আসছে আর সে চুপ করে শুয়ে আছে?

    কিছুক্ষণ পরে পরিষ্কার হল ব্যাপারটা। লোকটার হাত পা বেঁধে রাখা হয়েছিল। একজন লোক এসে ধারালো কিছু একটা দিয়ে লোকটার শরীরে পেঁচিয়ে থাকা দড়িগুলো কেটে দিতেই লোকটা তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালো। হিরণ লোকটার দিকে এগিয়ে যেতেই লোকটা পেছনে অন্ধকারে দৌড় দিল। কিন্তু অন্ধকার থেকে কয়েকজন লোক বের হয়ে এল, যাদের সবার হাতেই ধারালো ফলা। লোকটা কয়েকবার জোড় হাতে কি যেন একটা বলল। চারপাশে তাকিয়ে পালাবার পথ খুঁজতে লাগল। সুকান্ত স্পষ্ট বুঝতে পারল, লোকটা কাঁদছে। একটা খাঁচায় বন্দীর পশুর মত চিৎকার করছে। কিন্তু কিছুই শোনা যাচ্ছে না। কেউ তার জন্য এগিয়েও আসছে না। সবাই দর্শক সারিতে বসে খাতাকলম নিয়ে খস খস করে লিখছে। কিন্তু বন্দুক পিস্তলের বদলে এরা ধারালো অস্ত্র কেন ব্যবহার করছে? দুটো কারণ মাথায় আসল সুকান্তের। এক, গুলির আওয়াজ হলে আশেপাশের লোকজন জানাজানি হবে, তাই এরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করছে না। আর দুই, আগ্নেয়াস্ত্রে মৃত্যু ততটা যন্ত্রণাদায়ক হয় না যতটা এই ধারালো অস্ত্রে হয়। মৃত্যুকে অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক করতেই এই উপায়।

    একটা দূর্বিসহ নির্বাক সিনেমার সামনে দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না সুকান্ত।

    দুটো পথ খোলা। ডায়াসে দাঁড়ানো লোকটা তার এই বন্দী জীবনের অবসান ঘটাতে পারে। এই লোকটাকে ধরে কোন রকমে পুলিশের কাছে সমর্পণ করে দিলে তার মাথার ওপরে যে মিথ্যা দোষের পাহাড়, সেটা একেবারে সরে না গেলেও কিছুটা কমবে।

    আর আরেকটা পথ হল, জীবন ভিক্ষা চাওয়া মানুষটাকে বাঁচানো। একটু পরে এই মানুষটাকে মোরব্বার মত খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারা হবে। এক ফোঁটা জীবনের জন্য মানুষটার চোখের ব্যাকুলতা সুকান্তের গালে একটা চড় কষে দিল। তার নিজের জীবন থেকে যদি এই মানুষটাকে একটু জীবন ধার দেওয়া যায়?

    অন্ধকারে টালির ওপর দিয়ে খড়খড় শব্দ তুলে পাগলের মত ভেন্টিলেটোর খুঁজতে থাকল সুকান্ত। তার দুহাত হাতড়ে হাতড়ে খুঁজতে লাগল টালির ভেতরে বর্গাকার বার আয়তাকার চতুর্ভুজ। বেশ বড় সড় একটা চতুর্ভজ। ভেন্টিলেটর ভেঙে ভেতরে ঢুকবে সে। বাঁচাতে হবে লোকটাকে।

    একটা চতুর্ভূজ পাওয়া গেল। আঙুলগুলো স্পর্শ-ভাষায় বলল, একটা লতাপাতা আঁকানো বর্গাকার ভেন্টিলেটর। পুরনো, তাই স্বাভাবিক ভেন্টিলেটরের চেয়ে সাইজে বিশাল। বৃষ্টির পানিতে শ্যাওলা ধরে গিয়েছে। দ্বিতীয় কোন চিন্তা না করে লাথি চালালো সুকান্ত।

    একবার

    খটখলচ

    দুইবার

    ক্ল্যাকখট

    তিনবার

    ক্লচক্লক

    একটা অনিশ্চয়তার দেয়ালে একটা নিশ্চিত অর্বাচীনের আঘাত।

    জান্তব একটা গোঙানি দিয়ে শেষবারের মত লাথি চালালো সুকান্ত। হড় মড় করে শব্দ হল। অন্ধকারে সুকান্ত খেয়াল করেনি, ভেন্টিলেটরের ভেতর দিয়েই গিয়েছে এসির কেবলগুলো। মানে বন্ধ ভেন্টিলেটরের ওপাশেই বসানো ছিল এসি। সুকান্তের লাথিতে ভেন্টিলেটর ভেঙে হড়মড় করে এসিটা পড়ে গেল।

    আর তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল সুকান্তও। পায়ের নিচের কয়েকটা টালি সরে যেতেই পা হড়কে ভাঙা ভেন্টিলেটরের ভেতরে ঢুকে গেল সুকান্ত। কোন রকমে এসির কেবলটা আঁকড়ে ধরল। আর তাতেই বিপদটা আরো বাড়লো। এসির কেবলে টান লাগল, ফলে বাইরে টালির ছাদের ওপরে বসানো এসির কম্প্রেসারের বাক্সটা খড় খড় করে ভেন্টিলেটরে ঢুকে পড়ল।

    এসি আর এসির কম্প্রেসারের বাক্স সহ সুকান্ত একেবারে নিচে পড়ে যেতে শুরু করল। এসিটা নিচে পড়তেই বিকট শব্দে একটা বিস্ফোরণ হল।

    ওই তো ফ্যানে ঝুলতে থাকা রড! খামচে ধরল সুকান্ত। পুরনো মরচে ধরা রডে ঘষা খেয়ে ছড়ে গেল হাতের তালু। একেবারে নিচে পড়লে পড়তে হত বেঞ্চগুলোর ওপরে। মেরুদণ্ডের কশেরুকাগুলো একটাও আস্ত থাকত না।

    তৃতীয় জীবন

    খড়খড় করে টালি পড়তে লাগল এলোমেলোভাবে। নিচে পড়ে ঠাসঠাস করে ফাটতে লাগল। বেঞ্চগুলোতে বসে থাকা লোকগুলো চিৎকার করে সরে যেতে শুরু করল। কংক্রিটের ধুলো আর ভাঙা টালির গুঁড়োতে মুহূর্তের ভেতরে ধোঁয়াটে হয়ে গেল পুরো হলরুমটা।

    পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগল। কিন্তু কোলাহল থামল না। হাত দিয়ে মাথা ঢেকে কিংবা বেঞ্চের নিচে হামাগুড়ি দিয়ে সবাই সত্যতা প্রমাণ করল নিজেদের আদিম প্রবৃত্তির।

    এসিটা পড়েছে মঞ্চ থেকে দুই গজ দূরে। বেঞ্চের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হিরণ পাশা মঞ্চের পেছন দিকের অন্ধকারে লুকিয়ে দেখল সবটা। এই ধরণের পরিস্থিতি সে কেন, কেউ আশা করেনি। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা বলল, “সবাই শান্ত হোন। সবাই শান্ত হোন।” এই বিস্ফোরণ, এই চিৎকার চেঁচামেচি- কিছুই মানুষটাকে বিচলিত করেনি। পাথরের মত মঞ্চের ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে।

    হড়াং করে কি যেন একটা পড়ল। ধুলার মেঘের কারণে দেখা গেল না। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, ধুলো আর কংক্রিটের গুঁড়োর মেঘের ভেতর থেকে এক হঠাৎ একটা ফ্যানের ব্লেড এসে লাগল হিরণ পাশার মুখে। থ্যাক করে ভোঁতা শব্দ হল। হিরণ পাশা মঞ্চ থেকে কয়েক গজ দূরে ছিটকে পড়ে গেল।

    ****

    লোকটা কোথায়?

    ধোঁয়া আর ধুলোর ভেতরে ফ্যান নিয়েই হুড়মুড় করে পড়ল সুকান্ত। হড়াং করে শব্দ হল। ফ্যানের চাপে নিচের বেঞ্চগুলো ভেঙে গুড়িয়ে গেল। বাঁকা হয়ে ফ্যানের ব্লেড খুলে গেল একটা। সেটাই হাতে নিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করল সুকান্ত।

    চারদিকে তখন আরেকদফা চিৎকার।

    ফ্যানের ব্লেডটা আলগোছে ধরে এগিয়ে যেতে থাকল সুকান্ত। মঞ্চের এক কোণায় দেখতে পেল হিরণ পাশাকে। হাতে স্ক্রু ড্রাইভারের মত কিছু একটা ধরে আছে। দ্বিতীয় কোন চিন্তা না করে ব্লেডটা বসিয়ে দিল হিরণের মুখ বরাবর।

    হিরণ ছিটকে পড়ে গেল।

    “আপনি কোথায়? আমার সঙ্গে আসেন,” চিৎকার করে প্রশ্নটা করল সুকান্ত। নিজের কাছেই নিজেকে বোকা মনে হল। কাশতে কাশতে মঞ্চের অন্ধকারের দিকে এগিয়ে গেল।

    হঠাৎ কোথা থেকে একটা ধারালো ফলা বিঁধে গেল সুকান্তের কাঁধে। গলা চিরে বেরিয়ে এল আর্তনাদ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হ্যাঁক্স করে শব্দ হল, একটা চিৎকার। সুকান্ত পেছনে ঘুরে দেখল ফলাধারী সেই লোকটাকে কে যেন ঘুষি মেরেছে। সেই লোকটা, যে একটু আগে নিজের জীবনের জন্য প্রাণ ভিক্ষা চাচ্ছিল।

    সুকান্তের চোখে তখন সর্ষের ফুল। খুব দ্রুত রক্তচাপ কমে যাচ্ছে। আশেপাশে ধরে দাঁড়ানোর মত কিছু একটার আশায় হাত বাড়ালো সুকান্ত। ঠিক তখনই সেই লোকটা এসে সুকান্তকে কোনরকমে জড়িয়ে ধরল।

    ধোঁয়া কমে আসছে। আর কিছুক্ষণ পরেই চারপাশ পরিষ্কার হয়ে যাবে। খুব তাড়াতাড়ি বের হতে হবে এখান থেকে।

    লোকটা কি যেন একটা বলল। হয়ত বলল, “সুকান্ত তুমি!” কিন্তু সুকান্তের তখন সেগুলো শোনার সময় নেই।

    লোকটাকে সে বলল, “আপনি তাড়াতাড়ি বের হন। দেরি করলে বের হতে পারবেন না।”

    লোকটা অস্ফুট গলায় নিজের পরিচয় দিল বলে মনে হল। সেটাও সুকান্ত বুঝতে পারল না। দাঁতে দাঁত চেপে টেনে সুকান্তকে নিয়ে বেঞ্চগুলোর দিকে এগোতে লাগল। ডান হাতে কুড়িয়ে নিল মেঝেতে পড়ে থাকা একটা ফলা।

    ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে সুকান্তের। সুকান্ত দেখল, লোকটার অবস্থাও ভালো না। শরীরের এখানে ওখানে ব্যান্ডেজ। মাথার বেশ খানিকটা কামানো। তাকে বয়ে নিতে যে লোকটা অমানুষিক কষ্ট হচ্ছে সেটা বুঝতে কষ্ট হল না সুকান্তের।

    “প্লিজ, আমার আশা বাদ দেন। আপনি যান। গিয়ে পুলিশে খবর দেন।” সুকান্ত বলল।

    বাতাস কেটে বেরিয়ে এলো আরেকটা ফলা। পেছন থেকে কারো ব্যর্থ আঘাত। লোকটা সুকান্তকে ফেলে দিয়ে হাতের ফলাটা ঘাতকের গলায় বসিয়ে দিল।

    পেছন থেকে কে যেন বলে উঠল, “থামাও ওদের। শালার জানোয়ারগুলোকে ট্যাকেল করতে গিয়েই আমার জীবন গেল। থামাও। থামাও। সদর গেট বন্ধ করে দাও। আর রটওয়েলারগুলোকে ছেড়ে দাও।”

    রটওয়েলার!

    সুকান্ত প্রমাদ গুনল। এটা হিংস্র প্রজাতির কুকুর। শিকারী রটওয়েলার একটা ভাল্লুককেও ছিঁড়ে ফেলতে পারে। সুকান্ত দু’হাতে কোন রকমে সামনে এগোতে লাগল। লোকটা আবার তাকে তুলে নিতে গেলেই সুকান্ত ধমকে উঠল, “পাগলামি বন্ধ করেন। প্লিজ, আপনি যান। আমাদের দুজনের যেকোন একজনকে বাঁচতে হবে। আর এই মুহূর্তে বাঁচার সম্ভাবনা আপনার বেশি। যান। গিয়ে পুলিশ খবর দেন।”

    লোকটা চলে গেল। পড়ে থাকা কংক্রিটের একটা চাঁই ছুঁড়ে কাঁচের জানালা ভেঙে ফেলল। তারপর অন্ধকারে হারিয়ে গেল।

    কাছেই কুকুরের ডাক শুনতে পেল সুকান্ত। ঘেউ ঘেউ না। ডাকটা অনেকটা ঘ্যাক ঘ্যাক। রটওয়েলার। ঈশ্বর তাকে দুই দুইবার জীবন দিয়েছে। তৃতীয়বারের জীবনটা না হয় ওই মানুষটাই পাক। একজন মানুষ অন্য অনেক মানুষের জীবন ধার করে বাঁচে। সুকান্তও হয়ত কারো জীবন ধার করে বেঁচেছিল। হয়ত তাকে জন্ম দিতে গিয়ে তার মৃতা মায়ের জীবনের ঋণ সে আজ শোধ করল ওই মানুষটাকে জীবন দিয়ে।

    রটওয়েলারগুলোর একটা দৌড় দিল পলাতক লোকটার পেছনে। আরেকটা দৌড়ে এলো মেঝের ওপরে পড়ে থাকা অসহায় সুকান্তের ওপরে।

    যখন রটওয়েলারটা দাঁত বসালো সুকান্তের গলায়, তখন নিজের জীবনের শেষ অক্ষরটুকু সুকান্তের লেখা হয়ে গিয়েছে। আসলেই, একটা উপন্যাসের শেষ অক্ষর লেখার যে শান্তি, মৃত্যুর মুহূর্তটাও ঠিক একই রকম। মৃত্যুর সময় সব মানুষের মত তারও মনে হল, আসলে কিভাবে জীবনটাকে যাপন করা উচিৎ ছিল। বুক চিতিয়ে, নিজের অধিকার আদায় করে নিলে, গা বাঁচিয়ে না চলে কঠিন মুহূর্তের ভেতরে নিজেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলে আজ হয়ত মৃত্যুটা অন্যরকম হলেও হতে পারত তার। রমাকান্তকে হারাতে হত না, হয়ত নীহারিকার কোলে মাথা রেখে জীবনের শেষ দৃশ্যের যবনিকা পতন করতে পারত। ধীরে ধীরে, একটু হারিয়ে ফেলা সেই রমাকান্তের চেহারা, একটু বধু বেশে বসে থাকা নীহারিকার সেই চেহারা, সুভাষদার সেই প্রাণোচ্ছল হাসি, রতনের মুখ- ব্যস, তারপর সব অন্ধকার।

    সুকান্তের তৃতীয় জীবন নিয়ে অন্ধকারে হারিয়ে গেল কিছুক্ষণ আগে জীবন ভিক্ষা চাওয়া মানুষটা।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅন্যমনস্ক – জুনায়েদ ইভান
    Next Article প্রায়শ্চিত্ত প্রকল্প – জুবায়ের আলম

    Related Articles

    জুবায়ের আলম

    প্রায়শ্চিত্ত প্রকল্প – জুবায়ের আলম

    August 14, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.