Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শার্লক হোমস সমগ্র ১ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    লেখক এক পাতা গল্প813 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৫. পণ্ডিচেরি লজের বিয়োগান্তক কাহিনি

    পণ্ডিচেরি লজের বিয়োগান্তক কাহিনি

    নৈশ অ্যাডভেঞ্চারে শেষ পর্বে পৌঁছোলাম রাত এগারোটা নাগাদ। বিরাট শহরের সাৎসেঁতে কুয়াশা ফেলে এসেছি পেছনে, আকাশ এখানে পরিষ্কার, রাত্রি অতি মনোহর। উষ্ণ পশ্চিমে হাওয়ার টানে ভারী মেঘগুলো মন্থর গতিতে ভেসে যাচ্ছে আকাশপথে, মাঝে মাঝে ফাঁকের মধ্যে দিয়ে উঁকি দিচ্ছে আধখানা বাঁকা চাদ। কিছুদূর পর্যন্ত সেই আলোয় স্পষ্ট দেখা গেলেও গাড়ির ভেতরে একটা সাইড-লণ্ঠন বের করে রাস্তায় বাড়তি আলোর ব্যবস্থা করল থেডিয়াস শোল্টো।

    মাটি আঁকড়ে দাঁড়িয়ে পণ্ডিচেরি লজ। ভাঙা কাচের টুকরো বসানো একটা বেজায় উঁচু পাথুরে দেওয়াল ঘিরে রয়েছে চারদিকে। ভেতরে ঢোকার দরজা একটাই; পাল্লার ওপর লোহার পাত বসানো। সংকীর্ণ এই দরজার কপাটেই অনেকটা ডাকপিয়ানদের কায়দায় খটাখট খটাখট শব্দে অদ্ভুত রকমের টোকা দিয়ে চলল আমাদের পথপ্রদর্শক।

    রূঢ়, চড়া গলায় কে যেন বললে ভেতর থেকে, কে?

    আমি, ম্যাকমুর্ভো, আমি। আমার ঢোকার আওয়াজ অ্যাদ্দিনে মুখস্থ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল তোমার।

    চাপা গজরানির আওয়াজ শোনা গেল এবার, সেইসঙ্গে চাবির ঝনৎকার। ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দে খুলে গেল ভারী দরজা, খর্বকায় কিন্তু বিশাল-বক্ষ এক পুরুষ মাথার ওপর লণ্ঠন তুলে ধরে দাঁড়াল দরজায় ঠেলে-বেরিয়ে-আসা মুখে চিকমিক করতে লাগল, অবিশ্বাস মাখানো দুই চক্ষু।

    মি. থেডিয়াস দেখছি! সঙ্গে কারা? আর কাউকে ঢুকতে দেওয়ার হুকুম নেই মনিবের।

    নেই কীহে? অবাক করলে দেখছি। কাল রাতেই ভায়াকে বলেছি জনাকয়েক বন্ধু আসবে আজ রাতে।

    আজ সকাল থেকেই ঘরের বাইরে আসেননি মনিব। হুকুমও পাইনি। হুকুম ছাড়া আমি চলি না মি. থেডিয়াস। আপনি আসতে পারেন কিন্তু বন্ধুদের ওইখানেই রেখে আসতে হবে।

    বাধাটা অপ্রত্যাশিত। হতচকিত, অসহায় মুখে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল থেডিয়াস শোল্টো।

    খুব খারাপ হচ্ছে কিন্তু, ম্যাকমর্ডো। আমার ওপরে তুমি কথা বলার কে? দেখতে পাচ্ছ না ভদ্রমহিলা রয়েছেন? উনি কি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবেন এত রাত্রে?

    অটল স্বরে বললে দ্বাররক্ষক, মাপ করবেন। আপনার বন্ধু হলেই যে আমার মনিবের বন্ধু হতে হবে, তার কোনো মানে নেই। নুন খেয়ে বেইমানি করতে পারব না। আমার কাজ আমাকে করতে দিন। আপনার বন্ধুদের কাউকেই আমি চিনি না।

    আলবাত চেনো, ম্যাকমুর্ডো। সোল্লাসে বললে শার্লক হোমস। এত সহজে আমাকে ভুললে তো চলবে না। চার বছর আগে তোমার বাজি জেতার রাতে অ্যালিসনের ঘরে তোমার সঙ্গে যে-অ্যামেচারটি তিন রাউন্ড লড়ে গিয়েছিল, তাকে কি একেবারেই মনে পড়ছে না বলতে চাও।

    আরে সর্বনাশ। মি. শার্লক হোমস যে! যেন ব্যাঘ্র গর্জন করল প্রাইজ-ফাইটার দ্বাররক্ষক। কী কাণ্ড? চিনতেই পারিনি আপনাকে! চুপটি করে ওইখানে দাঁড়িয়ে না-থেকে ভেতরে এসে চোয়ালের নীচে আপনার ক্রস হিটখানা ঝাড়লেই কিন্তু চিনে ফেলতাম সঙ্গেসঙ্গে। ক্ষমতা ছিল আপনার, নষ্ট করলেন! লাইনে এলে অনেক উঁচুতে উঠতেন।

    শুনে রাখ, ওয়াটসন, শুনে রাখ! জীবনে আর যদি কিছু করতেও না-পারি, বিজ্ঞানসম্মত একটা পেশা অন্তত খোলা রইল আমার সামনে, হাসতে হাসতে বললে হোমস। এবার নিশ্চয় আমাদের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে না, দো ম্যাকমুর্জো।

    জবাবে বলল ম্যাকমুর্জো, ভেতরে আসুন স্যার, ভেতরে আসুন। সবান্ধবে ভেতরে আসুন। মি. থেডিয়াস, আমি দুঃখিত। কিন্তু জানেন তো, হুকুম বড়ো কড়া। নিশ্চিন্ত না-হলে আপনার বন্ধুদেরও বাড়ির মধ্যে ঢোকানো নিষেধ।

    ভেতরে কঁকর বিছানো রাস্তাটা বেঁকে গিয়ে শেষ হয়েছে একতাল কদাকার জড়পিণ্ডের মতো প্রকাণ্ড বাড়িটার সামনে। খাঁ-খাঁ করছে চারিদিক–বাড়ি আর ফটকের মধ্যে অতখানি জমি মরুভূমির মতো নির্জন নিস্তব্ধ। চৌকোনা বাড়িখানাও কেমন জানি কাঠখোট্টা। চাঁদের আলো পড়েছে এক কোণে–ঝকমক করছে চিলেকোঠার জানালা–বাদবাকি অংশ ছায়ায় ঢাকা। মৃত্যুপুরীর মতো নিস্তব্ধতা, অট্টালিকার প্রকাণ্ড আকার আর থমথমে পরিবেশের জন্য বুক কেঁপে উঠল আমার। থেডিয়াস শোল্টো পর্যন্ত ঘাবড়ে গিয়েছে লক্ষ করলাম–খটাখট শব্দে লণ্ঠন কাঁপতে লাগল হাতে–চঞ্চল হল আলোর ধারা।

    বলল, ব্যাপার বুঝছি না। কোথায় যেন একটা গোলমাল হয়েছে। বার্থোলোমিউকে পই পই করে বলেছিলাম আমরা আসব, তা সত্ত্বেও তো কই ওর জানালায় আলো জ্বলছে না। সব গুলিয়ে যাচ্ছে।

    হোমস জিজ্ঞেস করল, ওঁর বাড়ি পাহারার ধরন কি এইরকম?

    ধরেছেন ঠিক। হুবহু বাবার মতো। বাবার চোখের মণি ছিল কিনা। আমার চাইতে বেশি ভালোবাসতেন ওকে। তাই তো আমার মনে হয় আমাকে যা বলেছেন তার চাইতে অনেক বেশি কথা বলে গেছেন বার্থোলোমিউকে। চাঁদের আলো যেদিকে পড়েছে, ওর জানালা কিন্তু ওইদিকেই! ঝকঝকে করছে দেখেছেন? কিন্তু ভেতরে আলো জ্বলছে না।

    না জ্বলছে না, বললে হোমস। তবে দরজার পাশে ছোটো জানলায় আলোর আভা দেখতে পাচ্ছি।

    ওটা হাউসকিপারের ঘর! মিসেস বার্নস্টোন বুড়ির আস্তানা। ওর মুখেই সব খবর পাব। আপনারা একটু দাঁড়ান। আমি একাই যাই। না-জানিয়ে হঠাৎ সবাই সামনে গেলে আঁতকে উঠতে পারে। কিন্তু ওকী! চুপ! চুপ!

    লণ্ঠন তুলে দাঁড়িয়ে গেল শোল্টো। কম্পিত হাতে কাঁপতে লাগল লণ্ঠনের বৃত্তাকার আলো। সেই আলোয় দেখতে লাগলাম আমার কবজি চেপে ধরলেন মিস মর্সটান। যেন হাতুড়ির বাড়ি পড়তে লাগল বুকের মধ্যে। কাঠের মতো দাঁড়িয়ে কান খাড়া করে শুনতে লাগলাম শব্দটা। সে-শব্দ আসছে মিশমিশে কালো মহাকায় বাড়ির দিক থেকে। রাতের নৈঃশব্দ্য খানখান করে আতীক্ষ্ণ ভাঙা গলায় চেঁচিয়ে চলেছে একটা ভয়ার্ত নারীকণ্ঠ–বুকের রক্ত জল হয়ে যায় সেই বিকট চিৎকার শুনলে।

    মিসেস বার্নস্টোনের গলা, অবশেষে বললে শোন্টো, বাড়িতে মেয়েছেলে বলতে আর কেউ নেই। আপনারা দাঁড়ান। এখুনি আসছি।

    দৌড়ে গেল শোল্টো, অদ্ভুত কায়দায় টোকা দিল দরজায়। দূর থেকেই দেখলাম পাল্লা খুলে দাঁড়াল একজন বৃদ্ধা মাথায় বেশ লম্বা। শোল্টোকে দেখে আনন্দে আটখানা হয়ে বললে :

    এসে গেছেন? আঃ বাঁচলাম আমি। কী আনন্দই-না হচ্ছে আপনাকে দেখে মি. থেডিয়াস, স্যার!

    আনন্দোচ্ছ্বাস শেষ পর্যন্ত শুনতে পেলাম না। শোন্টোকে ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল বুড়ি; চাপা কথাবার্তার আওয়াজ ভেসে এল বাইরে।

    লণ্ঠনটা নামিয়ে রেখে গিয়েছিল আমাদের গাইড। হোমস তুলে নিল লণ্ঠন, দুলিয়ে দুলিয়ে দেখতে লাগল চারিদিক। তীক্ষ্ণ্ণ চোখে চেয়ে রইল জমির ওপর স্তুপীকৃত রাশি রাশি রাবিশ, তারপর বাড়ির দিকে। মিস মানের হাত মুঠোয় নিয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রইলাম দুজনে। ভালোবাসা একটা অনির্বচনীয় জিনিস। আগে কেউ কাউকে দেখিনি। আলাপ সেই দিনই। দু-জনের কথায় বা ভাবে ভালোবাসার চিহ্ন পর্যন্ত প্রকাশ পায়নি। তা সত্ত্বেও বিপদের মুহূর্তে আপনা থেকেই দু-জনে চাইছি দু-জনকে। এই নিয়ে পরে অনেক ভেবেছি, অনেক আশ্চর্য হয়েছি। সেই মুহূর্তে কিন্তু ওঁর পাশটিতে গিয়ে দাঁড়ানোর আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়েছিল আমার ভেতরে। মিস মর্সটানও বহুবার শুনিয়েছেন একই কথা–একই আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়েছিল তাঁরও অন্তরে। বিপদ থেকে যেন আমি তাকে আগলে রাখি, নিরাপদ রাখি। হাতে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম ছোটো ছেলে-মেয়ের মতো চারপাশের তমালকালো বিকট অপচ্ছায়ার মধ্যেও অনাবিল শান্তি বিরাজ করতে লাগল হৃদয়ের কন্দরে।

    চারপাশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললে মসঁঠান, অদ্ভুত জায়গা বটে!

    ইংলন্ডের যত ছুঁচো যেন এখানেই জড়ো হয়েছে মনে হচ্ছে। ব্যালারাট একটা পাহাড়ের গায়ে এইরকম দৃশ্য দেখেছিলাম সোনা সন্ধানীরা মাটি খুঁড়ে তাগাড় করে ফেলে রেখেছিল এইভাবে।

    এখানেও তাই হয়েছে, বললে হোমস। এখানেও গুপ্তধন খোঁজা হয়েছে। মাটি খোঁড়া হয়েছে দীর্ঘ ছ-বছর পরে। তাই এই গর্ত জমিতে।

    ঠিক সেই মুহূর্তে দড়াম করে দু-হাট হয়ে গেল বাড়ির দরজা এবং দু-হাত সামনে বাড়িয়ে আতঙ্ক বিস্ফারিত চোখে ধেয়ে এল থেডিয়াস শোল্টো। সে কী চিৎকার–বার্থোলোমিউ বিপদে পড়েছে! বার্থোলোমিউয়ের কিছু একটা হয়েছে? আমার ভীষণ ভয় করছে। এত সইবার ক্ষমতা আমার নার্ভের নেই।

    সত্যি সত্যিই প্রায় সশব্দে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে শোল্টো। নিদারুণ ভয় পেয়েছে, ভেড়ার চামড়ার বিরাট কলারের ভেতর থেকে ভয়ার্ত শিশুর মতো অসহায় মিনতি মাখানো মুখখানা থরথর করে কাঁপছে, বিকৃত হয়ে যাচ্ছে ভয়ানক ভয়ে।

    কাট ছাঁট দৃঢ় কণ্ঠে হোমস শুধু বললে, বাড়ির ভেতরে চলুন।

    হ্যাঁ, হ্যাঁ, তাই চলুন! ফুঁপিয়ে উঠল শোল্টো। যা করবার আপনি করুন–বুঝতে পারছি এখন কী করা দরকার।

    অলিন্দ পথের বাঁ-দিকে হাউসকিপারের ঘর। সবাই গেলাম সেখানে। ছটফট করছে বুড়ি, হনহন করে পায়চারি করছে ঘরময়, আঙুল মটকাচ্ছে মট মট করে। দুই চোখের ভয় ব্যাকুল দৃষ্টি কিন্তু সহজ হয়ে এল মিস মর্সটানকে দেখে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল যেন।

    মৃগী রুগির মতো বললে ফেঁপাতে ফেঁপাতে, কী মিষ্টি শান্ত মুখ গো তোমার। বেঁচে থাক মা, বেঁচে থাক! বাঁচলাম তোমায় দেখে! যা উৎকণ্ঠা গিয়েছে সারাদিন!

    মিসেস বার্নস্টোনের শিরা-বার-করা মেহনত-ক্লিষ্ট বাহুতে মৃদু চাপড় দিয়ে কানে কানে দু-চারটে মধুর মেয়েলি সান্ত্বনার বাণী শোনাল হোমস। অদ্ভুত কাজ হল তাতে। রক্ত ফিরে এল বুড়ির নীরক্ত গালে।

    বললে, সারাদিন দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে রয়েছে কর্তা–কত ডাকছি, সাড়া দিচ্ছে। না। মাঝে মাঝে একলা থাকতে চায় জানি–তাই সকাল থেকে ডাকাডাকি করিনি। কিন্তু ঘণ্টা খানেক আগে উঁকি দিয়েছিলাম চাবির গর্ত দিয়ে। যা ভয় করেছিলাম, দেখি তাই হয়েছে; আপনি যান মি. থেডিয়াস–নিজে যান, গিয়ে দেখুন কী হয়েছে। দশ দশটা বছর মি. বার্থোলোমিউ শোন্টোকে দেখছি আমি অনেক হাসি কান্নার চেহারা তার দেখেছি কিন্তু এ-রকম মুখ কখনো দেখিনি।

    থেডিয়াস শোন্টোর দাঁতে দাঁত ঠোকাঠুকি আরম্ভ হয়ে গেছে দেখে লম্ফ তুলে নিয়ে গেল শার্লক হোমস। দারুণ ভয় পেয়েছে লোকটা আমি তার হাত ধরে সিঁড়ি দিয়ে উঠিয়ে না-নিয়ে গেলে পা টলে পড়ে যেত নির্ঘাত। হাঁটু পর্যন্ত কাঁপছিল ঠকঠক করে। সিঁড়ির ওপর নারকেল ছোবড়ার কাপেট পাতা। দু-বার হেঁট হয়ে পকেট থেকে লেন্স বার করে যা দেখল হোমস, আমার চোখে তা কার্পেটের গায়ে নিছক ধুলোর দাগ ছাড়া আর কিছু মনে হল না। মাথার ওপর লম্ফ তুলে সুচীতীক্ষ্ণ চোখে ডাইনে বাঁয়ে দেখতে দেখতে আস্তে আস্তে একটার পর একটা ধাপ মাড়িয়ে সবার আগে রইল হোমস। মিস মর্সটান রয়েছেন সবার পেছনে ভয়ে সিঁটিয়ে যাওয়া হাউসকিপারকে সঙ্গ দিতে।

    তৃতীয় সিঁড়ির শেষে একটা টানা লম্বা গলিপথ, ডান দিকে দেওয়াল ঢাকবার বিরাট ভারতীয় পর্দা পর্দায় আঁকা একটা প্রকাণ্ড ছবি। বাঁ-দিকে পরপর তিনটে দরজা। একইভাবে এদিক-ওদিক দেখতে দেখতে মন্থর গতিতে এগিয়ে চলল হোমস–আমরা রইলাম ঠিক পেছনে লম্বা কালো ছায়া লুটিয়ে রইল পেছনে দীর্ঘ করিডরে! থামলাম তৃতীয় দরজার সামনে। টোকা মারল হোমস, সাড়া না-পেয়ে ঘোরাল হাতল ধরে। সবশেষে ঠেলা মারল গায়ের জোরে। কিন্তু খোলা গেল না পাল্লা। ফাঁকে লক্ষ রেখে দেখলাম শুধু যে ভেতর থেকে তালাই দেওয়া তা নয়, মোটাসোটা বেজায় মজবুত একটা খিল ভোলা রয়েছে। চাবি দেওয়ার ফলে ফোকরটা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। হেঁট হয়ে ফুটোয় চোখ দিয়ে ছেড়া ধনুকের মতো সটান দাঁড়িয়ে উঠল শার্লক হোমস নিশ্বাস নিল সশব্দে।

    ওয়াটর্সন, এ যে দেখছি–শয়তানের খেলা আরম্ভ হয়ে গেছে, এভাবে বিচলিত হতে ওকে আমি কখনো দেখিনি। দেখে বল কী মনে হয়।

    কোমর বেঁকিয়ে হেঁট হয়ে ফোকরে চোখ লাগালাম এবং নিঃসীম আতঙ্কে শিউরে উঠলাম। ঝরনার ধারার মতোই যেন চাদের আলো ঢুকছে ঘরের মধ্যে। একটা চঞ্চল অস্পষ্ট দ্যুতিতে সারাঘর সমুজ্জ্বল। সোজা আমার দিকে তাকিয়ে আছে একটি মুণ্ডু। শুধু একটি মুণ্ডু যেন শুন্যে ভাসছে, কেননা নীচের অংশ আবৃত অন্ধকারে। মুখটি আমাদের নতুন বন্ধু থেডিয়াসের। একইরকম রক্তহীন মুখবর্ণ মাথা ঘিরে লালচে ঝাউয়ের মতো খাড়া খাড়া চুল, কেশহীন শীর্ষদেশ পর্বতচূড়ার আকারে সমুন্নত। একটা বিকট হাসি যেন কায়েমি হয়ে সেঁটে বসেছে আড়ষ্ট মুখের ওপর, হাসি তো নয়, যেন একটা স্থির, অস্বাভাবিক দাঁতখিচুনি। চাদের আলোয় মায়াময় ঘরের পরিবেশে সেই হাসি যেকোনো অপার্থিব কুটির চাইতেও ভয়াবহ স্নায়ু কাঁপিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। থেডিয়াসের মুখের সঙ্গে এ-মুখের সাদৃশ্য এত বেশি যে ঘাড় ফিরিয়ে দেখে নিলাম সত্যিই সে আমাদের সঙ্গে আছে কিনা। তার পরেই মনে পড়ল থেডিয়াস বলেছিল বার্থোলেমিউ আর সে আসলে যমজ ভাই!

    হোমসকে বললাম, কী ভয়ংকর! কী ভয়ংকর! কী করা যায় এখন বল তো?

    দরজা ভাঙতে হবে, বলেই লাফ গিয়ে পড়ল দরজার গায়ে, দেহের পুরো ওজন দিয়ে ধাক্কার পর ধাক্কা মেরে চলল যাতে তালা ভেঙে যায়।

    কিন্তু ভেঙে গেল না। মচমচ শব্দ হল বটে, দরজা অটুট রইল। শেষকালে আমিও ঠেলা মারতে লাগলাম ওর সঙ্গে। দু-জনের মিলিত ধাক্কায় কাজ হল, আচমকা মচাৎ শব্দের সঙ্গে ভেঙে ঠিকরে গেল তালা আর খিল–হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লাম বার্থোলোমিউয়ের চেম্বারে।

    ঘর তো নয়, যেন একটা কেমিক্যাল ল্যাবরেটারি–সেইভাবেই সাজানো। দরজার ঠিক উলটোদিকের দেওয়ালের তাকে কাচের ছিপি দেওয়া দু-সারি বোতল, মাঝে টেবিলে ছড়ানো বুনসেন বার্নার, টেস্টটিউব আর বকযন্ত্র। এককোণে বেতের ঝুড়িতে অ্যাসিডের পেটমোটা কার্বয়। একটা কার্বয় ভেঙে গেছে নিশ্চয়। অ্যাসিড পড়ছে চুইয়ে চুইয়ে। কালচে রঙের তরল পদার্থ গড়াচ্ছে মেঝেয়। বাতাসে উকট আলকাতরার ভারী গন্ধ। ভাঙা কাঠের বাতা আর চুনবালি রাবিশের ওপর দাঁড় করানো একটা কাঠের মই–মইয়ের মাথায় সিলিংয়ে একটা ফুটো মানুষ গলে যাওয়ার মতো। মইয়ের গোড়ায় তাগাড় করা বেশ খানিকটা দড়ি।

    টেবিলের পাশে কাঠের চেয়ারে বসে বাড়ির মালিক। বিধ্বস্ত অবস্থা! মাথা ঝুলে রয়েছে। বাঁ-কাঁধের ওপর। বীভৎস দুর্বোধ্য হাসি। প্রকট ঠোঁট আর দাঁত। দেহ ঠান্ডা, আড়ষ্ট প্রাণবায়ু শূন্যে মিলিয়েছে বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে। শুধু মুখের ভাবই নয়, সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গই সাংঘাতিকভাবে তেউড়ে বেঁকে ফ্যানট্যাসটিক চেহারা নিয়েছে। হাতের কাছে টেবিলের ওপর রয়েছে একটা অদ্ভুত যন্ত্র। বাদামি রঙের সরু একটা লাঠি লাঠির মাথায় মোটা সুতো দিয়ে কষে বাঁধা একটা পাথর অনেকটা হাতুড়ির মতো। পাশে খাতার পাতা থেকে ছেড়া একটা কাগজ তাতে টানা হাতে জড়ানো অক্ষরে লেখা কয়েকটা শব্দ। দেখল হোমস, তারপর তুলে দিল আমার হাতে।

    তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভুরু তুলে বললে–দ্যাখো।

    আমি দেখলাম। লণ্ঠনের আলোয় সে-লেখা পড়লাম এবং শিউরে উঠলাম।

    লেখাটা এই : চারের সংকেত।

    হে ভগবান! মানে কী এসবের? বললাম বিমূঢ় কণ্ঠে।

    মানে একটা হত্যা, মৃত ব্যক্তির ওপর ঝুঁকে পড়ে বললে, আ? যা ভেবেছিলাম। এই দ্যাখো।

    কানের ঠিক ওপরে চামড়ায় বেঁধা লম্বা, কালো কাটার মতো একটা বস্তুর দিকে আঙুল তুলে দেখায় ও।

    কাঁটা বলে মনে হচ্ছে, বললাম আমি।

    কাঁটাই তো। টেনে নিয়ে দেখ। তবে সাবধান, বিষ মাখানো আছে।

    তর্জনী আর বুড়ো আঙুল দিয়ে টেনে তুললাম কাঁটাটা। সহজেই বেরিয়ে এল চামড়া থেকে, দাগ বলতে সে-রকম কিছু রইল না শুধু একটা লাল বিন্দু ছাড়া চামড়া যেখানে ফুটো হয়েছিল, সেখানে।

    বললাম–এ তো দেখছি বড়ো গোলমেলে হেঁয়ালি। পরিষ্কার তো হচ্ছেই না, উলটে আরও গুলিয়ে যাচ্ছে।

    হোমস বললে, ঠিক তার উলটোটাই ঘটছে আমার কাছে। প্রতি মুহূর্তে হেঁয়ালি আরও পরিষ্কার হচ্ছে। দু-একটা ব্যাপার এখনও হাতে আসেনি, এলেই সম্পূর্ণ হবে কেসটা।

    চেম্বারে ঢোকবার পর ভুলেই গেছিলাম থেডিয়াস শোল্টোর কথা। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কাউ মাউ করে সমানে কঁদছিল আর কাঁপছিল সে হাতে হাত ঘষে ইনিয়েবিনিয়ে আলাপ করে যাচ্ছিল নিজের মনে। মূর্তিমান আতঙ্ক বলে যদি কিছু থাকে সেদিন তা প্রত্যক্ষ করলাম তার মধ্যে। আচমকা কেঁদে উঠল তীক্ষ্ণ্ণ, বিকট কুঁদুলে কণ্ঠে :

    গুপ্তধন নেই! গুপ্তধন নেই! লুঠ হয়ে গেছে গুপ্তধন। ছাদের ফুটো দিয়ে ধরাধরি করে বাক্সটা নামিয়েছিলাম দু-জনে। শেষবারের মতো আমিই ওকে দেখছি জ্যান্ত অবস্থায়। কাল রাতে যাওয়ার সময়ে এই ঘরেই দেখে গেছি ওকে, সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুনেছিলাম–তালা দিচ্ছিল দরজায়।

    ক-টা বেজেছিল তখন?

    দশটা! আজ আর সে নেই–পুলিশ আসবে, আমাকে সন্দেহ করবে! হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি জানি আমাকেই সন্দেহ করবে। কিন্তু আপনারা কি তাই করবেন? খুনই যদি করতাম তাহলে আপনাদের কি ডেকে আনতাম? কী সর্বনাশ। আমি কি পাগল হয়ে যাব?

    হাত ঘুরিয়ে, ছুঁড়ে, নাচিয়ে ক্ষিপ্ত নৃত্য শুরু করে দিলে থেডিয়াস।

    কাঁধে হাত রাখল হোমস। বললে কোমল কণ্ঠে, ভয় কী মি. শোল্টো। মিছে ঘাবড়াচ্ছেন। যা বলি তাই করুন। গাড়ি নিয়ে সোজা থানায় যান। পুলিশকে সব খুলে বলুন। ফিরে এসে এখানেই পাবেন আমাদের।

    আচ্ছন্ন অবস্থায় হুকুম প্রতিপালন করল খুদে ব্যক্তি। হোঁচট খেতে খেতে নেমে গেল অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশার্লক হোমস সমগ্র ২ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন
    Next Article When the World Screamed – Arthur Conan Doyle

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }