Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শার্লক হোমস সমগ্র ১ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    লেখক এক পাতা গল্প813 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১০. দ্বীপবাসীর শেষদিন

    বেশ ফুর্তির মধ্যে শেষ হল খাওয়াদাওয়া। ইচ্ছে করলে অনর্গল কথা বলতে পারে হোমস। সেদিন দেখলাম ওর সেই ইচ্ছেই রয়েছে। মনে হল একটা স্নায়বিক উল্লাসের মধ্যে রয়েছে বন্ধুবর। এ-রকম উল্লসিতভাবে কখনো ওকে দেখেনি। যেন ঝলমল করছে, চলনে বলনে ঝিকিমিকি দ্যুতি ঠিকরোচ্ছে। নানা বিষয়ে পরের পর কথা বলে চলল একাই। রকমারি বিষয়। কিন্তু প্রতিটিতে যেন বিশেষভাবে কৃতবিদ্য। বাইবেলের ঘটনা অবলম্বনে মধ্যযুগের অভিনয়, পঞ্চম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত মৃন্ময় পাত্র, স্টাডিফেরিয়াস বেহালা, সিংহলের বৌদ্ধধর্ম এবং ভবিষ্যতের উপাসনাপদ্ধতি—সবই যেন তার অধীত বিদ্যা। ক-দিন বিষণ্ণতার অন্ধকার কেটেছে আর এখন ফুর্তিতে কলকলিয়ে উঠেছে। দেখা গেল ডিউটির বাইরে আড্ডার আসর মাত করে দেওয়ার ক্ষমতা অ্যাথেলনি জোন্স রাখে। খানা খেল তারিয়ে তারিয়ে সম্মানীয় অতিথির মতোই। হাতের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছি, এই কল্পনায় ফুর্তি জেগেছিল আমার প্রাণেও হোমসের মতোই। তিনজনের কেউই অবশ্য খাওয়ার সময়ে এ-প্রসঙ্গ উত্থাপন করলাম না।

    টেবিলের কাপড় পরিষ্কার করার পর ঘড়ি দেখল হোমস–তিনটে গেলাসে কানায় কানায় ঢালল পোর্ট মদ।

    বলল, ছোট্ট এই অভিযান যেন সফল হয়। চল এবার বেরিয়ে পড়া যাক। ওয়াটসন, তোমার পিস্তল আছে তো?

    পুরোনো মিলিটারি রিভলবারটা আছে ডেস্কে।

    বার করে নাও। প্রস্তুত থাকা ভালো! গাড়ি এসে গেছে দেখছি। ঠিক সাড়ে ছটায় বলেছিলাম আসতে।

    সাতটা বেজে কয়েক মিনিটের সময়ে পৌঁছোলাম ওয়েস্টমিনিস্টার জেটিতে। লঞ্চ ভাসছে জলে। আগাপাশতলা সূচীতীক্ষ্ণ চোখ বুলিয়ে নিল হোমস।

    পুলিশবোট বলে মনে হতে পারে এমনি কোনো চিহ্ন আছে?

    আছে; পাশের ওই সবুজ লণ্ঠনটা। তাহলে নামান লণ্ঠন।

    সঙ্গে সঙ্গে উধাও হল সবুজ লণ্ঠন। ডেকে উঠতেই দড়ি খুলে দেওয়া হল জেটি থেকে। আমি, জোন্স আর হোমস বসলাম পেছনে। হাল ধরে রইল একজন লোক। একজন সামলাতে লাগল ইঞ্জিন, দু-জন কাঠখাট্টা পুলিশ ইনস্পেকটর রইল সামনে।

    জোন্স জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাব? টাওয়ারের দিকে। জ্যাকবসন্স ইয়ার্ডের উলটোদিকে থামতে বলুন।

    লঞ্চটা বাস্তবিকই অত্যন্ত দ্রুতগামী। সটাসট পেছিয়ে পড়ল মাল বোঝাই গাধাবোটগুলো–যেন নট নড়নচড়ন নট কিচ্ছু হয়ে ভাসছে জলে। একটা রিভার স্টিমারকে নক্ষত্ৰবেগে ওভারটেক করে আসার পর হৃষ্ট হাসি ফুটল হোমসের ঠোটে।

    বলল, নদীর বুকে যেকোনো নৌকারই নাগাল ধরতে পারব বলে মনে হচ্ছে। সবাইকে টেক্কা মারতে না-পারলেও এ-লঞ্চের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো লঞ্চ এ-তল্লাটে খুব কম আছে।

    অরোরার নাগাল ধরতেই হবে। লঞ্চটার সুনাম আছে–সাংঘাতিক জোরে ছোটে। ওয়াটসন, মনে পড়ে বড়ো বাধা পেরিয়ে আসার পর ছোট্ট বাধায় হোঁচট খাওয়ায় কীরকম তিরিক্ষে হয়ে উঠেছিলাম?

    নিশ্চয় পড়ে।

    তখন কী করলাম তুমি দেখেছ। রাসায়নিক বিশ্লেষণে মন ডুবিয়ে দিলাম, মানে মনটাকে জিরেন দিলাম। এ দেশের বিখ্যাত একজন কূটনীতিবিদ একবার বলেছিলেন, কাজ পালটানোই হল সেরা বিশ্রাম, এটাও তাই। হাইড্রোকার্বন দ্রবণীয় কিনা এই পরীক্ষায় তন্ময় হওয়ার পর হাইড্রোকার্বন যেই গুলে গেল–ফিরে এলাম শোল্টো রহস্যে। গোড়া থেকে নতুন করে ভাবতে বসলাম পুরো ব্যাপারটা। নদীর এদিক-ওদিকই খুঁজেছে আমার চরেরা–পায়নি কিছু। কোনো জেটিতেই দাঁড়িয়ে নেই অরোরা লঞ্চ ফিরেও আসেনি নিজের জেটিতে। সূত্র মুছে ফেলবার উদ্দেশ্যে অমন একখানা লঞ্চকে তলা ফাসিয়ে ডুবিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়, সব সম্ভাবনার ভরাডুবি হলে এ-ছাড়া তার সম্ভাবনাও অবশ্য থাকে না। জোনাথন স্মল লোকটা হীন ধড়িবাজিতে চৌকস জানি, কিন্তু উঁচুদরের সূক্ষ্ম কৌশলেও যে পোক্ত হতে পারে তা কল্পনা করিনি। এ-জিনিস উচ্চশিক্ষা না-থাকলে আসে না। ভেবে দেখলাম লন্ডনে সে বেশ কিছুদিন ছিল, ছিল বলেই পণ্ডিচেরি লজের খবর নিয়মিত জোগাড় করত। সুতরাং লন্ডন থেকে তার তল্পিতল্পা গুটোতে হলে কিছু সময় চাই–রাতারাতি অত ব্যবস্থা হয় না। আর কিছু না-হলে দাঁড়িপাল্লায় সব সম্ভাবনা ওজন করলে, পাল্লা ঝুঁকবে কিন্তু এই দিকেই।

    আমি বললাম, সম্ভাবনাটা কমজোরি। আমার তো মনে হয় গুপ্তধন উদ্ধারের অভিযানে বেরোনোর আগেই তল্পিতল্পা গুটিয়ে সে তৈরি হয়ে গিয়েছিল।

    আমার তা মনে হয় না। লন্ডনের এই গোপন বিবরটি তার কাছে অমূল্য। এ-ঘাঁটি ছেড়ে যাওয়ার মতো অনুকূল অবস্থা আসার আগেই ঘাঁটি ছেড়ে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ানোর মতো হঠকারিতা সে দেখাবে না। তবে আর একটা সম্ভাবনার কথা ভেবে খটকা লাগে। জোনাথন স্মল নিশ্চয় বুঝেছিল মর্কট সঙ্গীটিকে যতই ওভারকোট দিয়ে মুড়ে রাখুক না কেন, অদ্ভুত ওই চেহারা দেখলেই কানাঘুসো আরম্ভ হবে–এমনকী নরউড হত্যার মামলার সঙ্গে তাকে জড়িয়ে দেওয়াও বিচিত্র নয়। এটুকু আঁচ করবার বুদ্ধি তার ঘটে আছে। ঘাঁটি থেকে বেরিয়েছিল অন্ধকারে গা ঢেকে–ঘাঁটিতে ফিরে আসার মতলবও ছিল নিশ্চয় ভোরের আলো ফোটবার আগে।মিসেস স্মিথের কথা অনুযায়ী ওরা লঞ্চ ছেড়েছে তিনটের একটু পরেই। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আলো উঠে যাওয়ার কথা–লোকজনও বেরিয়ে পড়ল নদীতে। সুতরাং মনে মনে হিসাবে করে দেখলাম বেশিদূর ওরা যায়নি–যেতে পারে না। টাকার জোরে স্মিথের মুখ বন্ধ করে শেষ চম্পট না-দেওয়া পর্যন্ত ভাড়া করে রেখেছে তার লঞ্চ এবং রত্নপেটিকা নিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে গোপন ঘাঁটিতে। দিন দুয়েক লুকিয়ে থেকে দেখবে খবরের কাগজে কী লেখালেখি হচ্ছে এবং আদৌ পুলিশ তাদের সন্দেহ করতে পেরেছে কিনা। তারপর সুযোগ বুঝে রাতের অন্ধকারে গা ঢেকে ব্রেভস-এন্ড বা ডাউন্সে গিয়ে কোনো জাহাজে ধরবে সে-রকম ব্যবস্থাও নিশ্চয় হয়ে আছে আগে থেকে সোজা যাবে আমেরিকা বা কলোনিতে।

    কিন্তু লঞ্চটা থাকবে কোথায়? ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া তো সম্ভব নয়।

    তা ঠিক। মনে মনে তর্ক করে দেখলাম, লঞ্চ যতই অদৃশ্য থাকুক না কেন নিজেকে জোনাথন স্মল রূপে কল্পনা করলাম। ওই বুদ্ধি নিয়ে কী করতাম মনে মনে ভাবলাম। পুলিশ যদি পেছন নিয়ে থাকে, জেটিতে লঞ্চ দাঁড় করিয়ে রাখলে বা ঘাটে লঞ্চ ফিরিয়ে দিলে পুলিশের পক্ষে তার নাগাল ধরে ফেলা অনেক সহজ হবে। লঞ্চ তাহলে লুকোনো যায় কী করে? অথচ দরকার পড়লেই লঞ্চ পাওয়া যায় কীভাবে? আমি হলে কী করতাম? ভাবতে ভাবতে দেখলাম, পথ একটাই। নৌকো যারা বানায় বা সারায়, মেরামতের অছিলায় লঞ্চখানা তাদের জিম্মায় সঁপে দেওয়া। লঞ্চ তখন চালান হয়ে যাবে মেরামতি শেড বা ইয়ার্ডে, থাকবে চোখের আড়ালে কিন্তু চাওয়ামাত্র পাওয়া যাবে কয়েক ঘণ্টার নোটিশে।

    সোজা ব্যাপার।

    এই ধরনের সোজা ব্যাপারগুলোই সবচেয়ে বেশি চোখ এড়ায়। যাই হোক, ঠিক করলাম ব্যাপারটা বাজিয়ে দেখব। সঙ্গেসঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম নিরীহ নাবিকের এই ছদ্মবেশে, খোঁজ নিলাম নদীর দু-পারের সবকটা নৌকো কারখানায়। খালি হাতে ফিরলাম পনেরোটা ইয়ার্ড থেকে। কিন্তু যোলো নম্বর ইয়ার্ডে মানে জ্যাকবসনের ইয়ার্ডে ঢুকে খবর পেলাম কেঠো পা-অলা একটা লোক দু-দিন আগে সামান্য মেরামতির জন্যে অরোরা লঞ্চকে রেখে গেছে এখানে। ফোরম্যান বললে–হাল মেরামত করতে বলেছে বটে, কিন্তু তেমন কোনো গোলমাল নেই হালে। ওই তো রয়েছে অরোরা, লাল পটি দু-পাশে। ঠিক সেই মুহূর্তে কে এল জান? মর্ডেকাই স্মিথ–যাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান আমার চরেরা। মদে চুর-চুর অবস্থা। আমি চিনতাম না স্মিথকে। কিন্তু নিজে থেকেই বাজখাই গলায় নিজের নাম আর লঞ্চের নাম জাহির করে বললে, আজকেই রাত ঠিক আটটার সময় লঞ্চ চাই। সময়টা খেয়াল থাকে যেন রাত আটটা। তারপর এক মিনিটও দেরি সইবে না ভদ্রলোক দু-জনের। স্মিথকে যে টাকায় ডুবিয়ে রাখা হয়েছে, তা ওর শিলিং ছড়ানো দেখেই বুঝলাম। টাকা ঝন ঝন করছে পকেটে, একে ওকে হাতে গুঁজে দিচ্ছে খুচরো। পেছন পেছন গেলাম কিছুদূর, শুড়িখানায় ঢুকল স্মিথ। ফিরে এলাম ইয়ার্ডে। আবার এক ছোকরা চরের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে তাকে দাঁড় করিয়ে রাখলাম লঞ্চের ওপর নজর রাখার জন্যে। লঞ্চ স্টার্ট দিলেই নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে রুমাল নাড়তে বলে এসেছি। আমরা নদীর মাঝামাঝি থাকব। এর পরেই যদি রত্নপেটিকা সমেত দুশমন গ্রেপ্তার করতে না-পারি তো অবাক হতে হবে বই কী।।

    জোন্স বললে, ঠিক লোকের পেছনে চলেছেন কিনা তা জানি না। তবে ব্যবস্থাটা করেছেন ভালো। কিন্তু আমি যদি ব্যবস্থার মালিক হতাম জ্যাকবসনের কারখানায় পুলিশবাহিনী ঢুকিয়ে রাখতাম, হারামজাদারা এলেই গ্রেপ্তার করতাম।

    এবং সেটা কখনোই সম্ভব হত না। অসম্ভব ধড়িবাজ এই স্মল লোকটা। আগেভাগে চর পাঠিয়ে খোঁজ নিত পথ পরিষ্কার কিনা। সন্দেহ জাগলেই ঘাপটি মেরে থাকত ঘাঁটিতে আরও এক সপ্তাহ।

    আমি বললাম, কিন্তু মৰ্ডেকাই স্মিথের পেছন পেছন গিয়ে ওদের লুকিয়ে থাকার জায়গাটা দেখে আসা উচিত ছিল তোমার।

    তাতে নষ্টই হত সারাদিনটা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, রহস্যময় দুই যাত্রীর গোপন ঘাঁটির ঠিকানা মডেকাই স্মিথও জানে না। মদ আর টাকা পেলেই খুশি–এত প্রশ্ন করতেই-বা যাবে কেন? কখন কী করতে হবে, স্মিথের কাছে সে-খবর পাঠিয়ে দেয় দুশমন–বাস, তার বেশি নয়। না হে, সবদিক ভেবেই বলছি, এটাই সেরা উপায়।

    কথা বলতে বলতে একটার পর একটা সেতু পেরিয়ে এসেছি উল্কাবেগে–সুদীর্ঘ সেতুমালা এখন পেছনে। শহর যখন ছাড়িয়ে এলাম, অস্তগামী সূর্যের শেষ রশ্মি এসে পড়ল সেন্ট পলসের চুড়োয়। টাওয়ারে পৌঁছোলাম গোধূলি লগ্নে।

    সারির দিকে অনেকগুলো আকাশমুখো খোঁচা-খোঁচা মাস্তুল আর দড়িদড়ার দিকে আঙুল তুলে হোমস বললে, ওই হল জ্যাকবসনের কারখানা। জাহাজের মাল বোঝাই আর খালাস করার এই যে নৌকাগুলো সারি সারি ভাসছে, এদের আড়ালে গা-ঢাকা দিয়ে আগুপছু করা যাক কিছুক্ষণ। পকেট থেকে রাত্রে দেখবার দূরবিন বার করে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল তীরের দিকে। বলল, আমার ছোকরা পাহারাদার রয়েছে বটে, কিন্তু রুমাল তো নাড়ছে না।

    সাগ্রহ কণ্ঠে জোন্স বলল, এক কাজ করলে হয় না? চলুন না স্রোতের দিকে আরও কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে ঘাপটি মেরে থাকি ব্যাটাদের জন্যে? এলেই ধরব।

    জবাবে হোমস বললে, কোনো কিছু যে হবেই, এমনটি ধরে নিয়ে কাজ করা উচিত নয়। স্রোতের দিকেই যে ওরা যাবে, তার সম্ভাবনা পনেরো আনা জানি। কিন্তু তা নাও হতে পারে। এত নিশ্চিন্ত হওয়া ভালো নয়। এখান থেকে ইয়ার্ডে ঢোকবার আর ইয়ার্ড থেকে বেরোবার পথ দেখা যায় কিন্তু ওরা আমাদের দেখতে পাবে না। রাতটাও পরিষ্কার–আলোও যথেষ্ট। কাজেই এখান থেকে যাব না। ওই দেখুন গ্যাসলাইটের তলায় লোক জড়ো হচ্ছে কাতারে কাতারে।

    ইয়ার্ডের কাজ শেষ করে বেরুচ্ছে।

    বদমায়েশের দল! যেমন নোংরা চেহারা, তেমনি নোংরা ভেতরটা। আমি বাজি ফেলে বলতে পারি ওদের প্রত্যেকের ভেতরে কোথাও না কোথাও একটা নীতিহীন স্ফুলিঙ্গ লুকিয়ে আছে। সম্ভাবনা সুপ্ত রয়েছে–সুযোগ পেলেই মাথা চাড়া দেবে। আশ্চর্য হেঁয়ালি এই মানুষ জাতটা।

    আমি বললাম, কে যেন বলছে মানুষ মানে জানোয়ারের মধ্যে লুকোনো একটা আত্মা।

    হোমস বললে, এ-ব্যাপারে সবচেয়ে সাচ্চা কথা বলছেন উইনউড রিড। ওঁর কথায়, ব্যষ্টি হিসেবে মানুষ হেঁয়ালি, কিন্তু সমষ্টি হিসেবে মানুষ একটা গাণিতিক নিশ্চয়তা। অমুক ব্যক্তি কী করতে পারেন তা বলতে পারলেও সমষ্টির হিসেবে মানে গড়পড়তা হিসেবে কী হতে পারে তা তুমি সঠিকভাবে অনায়াসে বলতে পার। পৃথক পৃথক ভাবে এক-একটি মানুষ আলাদা, কিন্তু শতকরা হিসেবে মানুষ অপরিবর্তনীয়–একটা যুবক। মতামতটা পরিসংখ্যানবিদদের। রুমাল উড়ছে মনে হচ্ছে? হ্যাঁ, হা, ওই ত সাদা মতো কী একটা পতপত করছে অনেক দূরে।

    সোল্লাসে বললাম, তোমার ছোকরা সেন্ট্রি! স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।

    তা আমি দেখতে পাচ্ছি অরোরাকে, হৃষ্ট কণ্ঠ হোমসের। উল্কার মতো ছুটছে। ইঞ্জিনে লাগাও ফুল স্পিড। হলদে আলোজ্বালা স্টিমলঞ্চের পেছনে চলো। কী সর্বনাশ! এ যে দেখছি সাংঘাতিক স্পিডে ছুটছে! কলা না দেখায় আমাদের।

    ইয়ার্ডের ভেতর থেকে বেরোনোর সময়ে দেখা যায়নি অরোরাকে, দুটো তিনটে নৌকা পাশ কাটিয়ে যখন দৃশ্যমান হয়েছে, ততক্ষণে স্পিড তুলে ফেলেছে অনেকটা। ভয়ংকর গতিবেগে স্রোতের অনুকূলে তীর ঘেঁষে ছুটে চলেছে জল তোলপাড় করে। মুখ কালো হয়ে গেল জোন্সের।

    মাথা নেড়ে বললে, সাংঘাতিক জোরে ছুটছে তো! নাগাল ধরতে পারব বলে তো মনে হয় না।

    দাঁতে দাঁত পিষে গর্জে উঠল হোমস, ধরতেই হবে। স্টোকার, ঢালো কয়লা আরও। পুরো দমে ছোটাও লঞ্চ। আগুন ধরে গেলেও পোড়া লঞ্চ নিয়ে পৌছানো চাই হলদে আলোর পাশে।

    স্পিড এর মধ্যে উঠে গিয়েছে। সোঁ-সোঁ শব্দে আগুনের গজরানি শোনা যাচ্ছে চুল্লিতে, বিশালকায় ধাতব হৃৎপিণ্ডের মতো ঝনঝন কড়াং কড়াং, ঘড়াং, শব্দে বিপুল বেগে চলেছে শক্তিশালী ইঞ্জিন। নদীর প্রশান্ত জল কেটে দু-টুকরো হয়ে যাচ্ছে ধারালো, খাড়াই অগ্রভাগের সামনে এবং চাকার মতো গড়াতে গড়াতে উত্তাল তরঙ্গ ধেয়ে যাচ্ছে ডাইনে বাঁয়ে। জীবন্ত প্রাণীর হৃৎপিণ্ডের মতো ইঞ্জিনের প্রতিটি হৃদঘাত নাচিয়ে কঁপিয়ে ছাড়ছে আমাদের। গলুইয়ে ঝােলানো প্রকাণ্ড হলুদ লণ্ঠনের সুদীর্ঘ আলো থরথরিয়ে কাঁপছে সামনের জলে। ডান দিকে জলের ওপর আবছা মতো বস্তুটাই অরোরা। পেছনে সফেন জলরাশি দেখেই বোঝা যাচ্ছে কী প্রচণ্ড গতিবেগে ধেয়ে চলেছে স্টিমলঞ্চ। সওদাগরি জাহাজ, গাধাবোট, স্টিমার পেরিয়ে এলাম নক্ষত্র বেগে কখনো পাশ দিয়ে, কখনো ফাঁক দিয়ে, কখনো এঁকেবেঁকে সংঘর্ষ বাঁচিয়ে। অন্ধকারের ভেতর থেকে ভেসে এল উচ্চকণ্ঠের বিস্মিত নিনাদ আমরা কিন্তু থামলাম না, থামল না অরোরাও, ভীমবেগে বজ্ৰনাদে জল তোলপাড় করে উড়ে চলল সমানে আমরা পেছনে।

    চাপাও কয়লা, আরও চাপাও। আরও! আরও! ইঞ্জিনরুমের দিকে তারস্বরে চেঁচিয়েই চলল হোমস উৎকণ্ঠিত শানিত মুখ উদ্ভাসিত হয়ে রইল প্রজ্জ্বলিত ভয়ংকর আভায়। বাড়াও স্টিম–যতটা সম্ভব–তোলো স্টিম।

    অরোরার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে জোন্স বললে, একটু এগিয়েছি মনে হচ্ছে।

    আমি বললাম, হ্যাঁ, হ্যাঁ, এগিয়েছি, এগিয়েছি খানিকটা। নাগাল ধরে ফেলব মিনিট কয়েকের মধ্যেই।

    ঠিক এই সময়ে কপাল পুড়ল আমাদের একটা গাধাবোট তিনটে মালবোঝাই বজরা টেনে নিয়ে এসে গেল আমাদের সামনে অরোরা বেরিয়ে যাওয়ার পরেই। স্রেফ গায়ের জোরে হাল ঘুরিয়ে দিয়ে কোনোমতে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাঁচানো গেল বটে, কিন্তু গোল হয়ে পাশ কাটিয়ে ওপাশে বেরিয়ে যাওয়ার পর দেখা গেল দুশো গজ এগিয়ে গিয়েছে অরোরা। এখনও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে লঞ্চের চেহারা–তবে একটু একটু করে ঘোর অস্পষ্ট গোধূলি মিশে যাচ্ছে রাতের আঁধারের কবলে। নক্ষত্রখচিত কালো রাত স্পষ্ট হয়ে উঠছে মিনিটে মিনিটে। শক্তির শেষ সীমায় পৌঁছেছে বয়লারগুলো পাতলা পলকা খোল কাঁপছে থরথর করে, প্রচণ্ড গতিবেগে ধেয়ে যাওয়ার পথে ক্যাঁচ ক্যাঁচ আর্তনাদ উঠছে প্রতিটি সন্ধিস্থল থেকে এত গতিবেগ, এত উন্মাদনা যেন সইতে পারছে না জড়বস্তুটা। পুল পেরিয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডক পাশ কাটিয়ে, সুদীর্ঘ ডেডফোর্ড রীচ বরাবর নক্ষত্রবেগে গিয়ে আইল অফ ডগস পাক দিয়ে ফের ছুটছি স্রোতের অনুকূলে। সামনের সেই অস্পষ্ট ধোঁয়াটে বস্তুটা একটু একটু করে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে–ছিমছাম অরোরাকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। সার্চলাইট ঘুরিয়ে সামনের লঞ্চের ওপর ফেলল জোন্স–ডেকের মূর্তিগুলিকে দেখা গেল স্পষ্ট। লঞ্চের পেছনে উবু হয়ে বসে একটা লোক, দু-হাঁটুর মাঝে কালো মতো একটা জিনিসের ওপর ঝুঁকে রয়েছে। নিউফাউন্ডল্যান্ড কুকুরের মতো কালো-মতো কী যেন একটা পড়ে রয়েছে পাশে। হালের চাকা ধরে দাঁড়িয়ে ছেলেটা, চুল্লির গনগনে লাল আভায় দেখা যাচ্ছে বুড়ো স্মিথকে উর্ধ্বাঙ্গ নগ্ন– প্রাণের দায়ে বেলচা ভরতি কয়লা ঠাসছে ফার্নেসে। প্রথম প্রথম যদিও-বা একটু সন্দেহ ছিল আমরা আদৌ পিছু নিয়েছি কিনা, এখন আর তা নেই। যে-পথ দিয়ে অরোরা গিয়েছে, ঠিক সেই পথ দিয়ে আমরা এসেছি। প্রতিটি মোড়, কোণ, বাধা, ঝড়ের মতো ক্ষিপ্ত বেগে পেরিয়ে এসেছি। সুতরাং সন্দেহ আর নেই। গ্রিনউইচে পেরিয়ে গেলাম তিনশো গজ। ব্ল্যাকওয়েলে আড়াইশো। আমার বিচিত্র কর্মজীবনে বহুদেশের বহু প্রাণীকে তাড়া করেছি, কিন্তু টেমস নদীর বুকে দুরন্ত উন্মত্ত এই মনুষ্য মৃগয়ার মতো বন্য রোমাঞ্চ কখনো রক্তে এমন নাচন জাগায়নি। শনৈঃ শনৈঃ নাগাল ধরে ফেলেছি, একটু একটু করে কাছে এগিয়ে যাচ্ছি, মিনিটে মিনিটে ব্যবধান কমে আসছে। রাত নিস্তব্ধ, অরোরার যন্ত্রপাতির হাঁপানি আর ঝলসানি আমাদের লঞ্চ থেকে শোনা যাচ্ছে। পেছনের লোকটা এখনও উবু হয়ে বসে আছে, ডেকে হাতদুটো কেবল নড়ছে, কী যেন করছে দু-হাতে এবং মুহুর্মুহু চোখ তুলে দেখছে দুই লঞ্চের মধ্যেকার ব্যবধান আর কতখানি। ক্রমশই এগিয়ে আসছি কাছে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে থামতে বলল জোন্স! দুটো লঞ্চের মধ্যে তখন চারটে লঞ্চের সমান ব্যবধান এবং দুটো লঞ্চই জল ছুঁয়ে যেন উড়ে যাচ্ছে ভয়ংকর গতিবেগে। নদীবক্ষ এখন পরিষ্কার। একদিকে বার্কিং লেভেল৩, আর একদিকে বিষগ্ন প্লামস্টীড মার্সেস১৪! জোন্সের গলাবাজি শুনেই তড়াক করে লাফিয়ে দাঁড়িয়ে উঠল পেছনে উবু-হয়ে-বসে-থাকা লোকটা, মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুঁড়ে বিকট ভাঙা গলায় মুণ্ডপাত করতে লাগল আমাদের। লোকটার চেহারা ভালো, শক্তিমান পুরুষ, কিন্তু দু-পা ফাক করে দাঁড়ানোর দরুন স্পষ্ট দেখা গেল ডান পায়ের উরুর তলা থেকে, পায়ের বদলে রয়েছে একটা কাঠের ঠেকা! বিকট, বীভৎস, ক্রুদ্ধ হুংকার শুনেই পাশে-পড়ে-থাকা জড়বৎ কালো পিণ্ডটা নড়ে উঠল–সিধে হয়ে উঠে দাঁড়াল একটা খুদে লোক–জীবনে এত বেঁটে মানুষ আমি দেখিনি মাথাটা প্রকাণ্ড এবং বেঢপ আকারের, কালোচুলের বিপুল জটায় তা। আরও ভয়ংকর। হোমস রিভলবার বার করে ফেলেছে এর মধ্যেই। বর্বর, বীভৎস, বিকৃত প্রাণীটাকে দেখে আমিও তড়িঘড়ি বার করলাম আমার রিভলবার। কালো মতো অলস্টার বা কম্বলে আবৃত থাকার দরুন শুধু মুখ দেখা যাচ্ছে প্রাণীটার এবং সে-মুখ এমনই করাল-কুটিল যে একবার দেখলেই ঘুম উড়ে যায় চোখের পাতা থেকে। মানুষের মুখে নিষ্ঠুরতা আর পাশবিকতা যে এভাবে ফুটে উঠতে পারে জানা ছিল না আমার। ছোট্ট দু-চোখ জ্বলছে ঘোর আলোয়–নরকের স্ফুলিঙ্গ বুঝি একেই বলে জিঘাংসা-সংকীর্ণ দংষ্ট্রার ওপর থেকে গুটিয়ে সরে গেছে মোটা ঠোট এবং খটাখট শব্দে দাঁতের মাড়ি বাজিয়ে অর্ধেক-নর অর্ধেক-শ্বাপদের মতো দাঁত খিচোচ্ছে আমাদের পানে চেয়ে।

    শান্ত গলায় হোমস বললে, ওয়াটসন, ওর হাতের দিকে নজর রাখ–তুললেই গুলি করবে।

    দুটো লঞ্চের মধ্যে তখন ব্যবধান মাত্র একটা লঞ্চের শিকার প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছি বললেই চলে। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সেই মূর্তি; দু-পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে সাদা চামড়ার লোকটা গালাগাল দিয়ে পিণ্ডি চটকাচ্ছে আমাদের; পাশে দাঁড়িয়ে নীরবে দাঁত খিচোচ্ছে তার নারকীয় বামন সঙ্গী, লণ্ঠনের হলুদ আলোয় ঝকঝক করছে বড়ো বড়ো বিকট দাঁত! কদাকার মুখে ফুটে উঠেছে বর্ণনাতীত শয়তানি!

    এত কাছ থেকে এত স্পষ্টভাবে মূর্তিমান সেই আতঙ্ককে দেখতে পেয়েছিলাম বলেই বেঁচে গেলাম সে-যাত্রা। আমাদের চোখের ওপরেই কম্বল বা অলস্টারের তলা থেকে ফস করে সে টেনে বার করল স্কুল-রুলের মতো একটা খাটো গোলাকার কাঠের টুকরো এবং চেপে ধরল পুরু ঠোটের ওপর। যুগপৎ গর্জে উঠল আমাদের পিস্তল দুটো। বোঁ করে ঘুরে গিয়ে দু-হাত শূন্যে নিক্ষেপ করে দম আটকানো কাশির মতো খকখকিয়ে ভয়ংকর প্রাণীটা ঠিকরে গেল নদীবক্ষে। পাশ হয়ে পড়েছিল বলেই মুখখানা দেখতে পেয়েছিলাম পলকের মধ্যে। দেখেছিলাম ঘুরন্ত সাদা জলের মাঝে বিকট বিষ মাখানো বুক-কাঁপানো নিস্পলক চাহনি নিবদ্ধ রেখেছে সে আমাদের ওপর। ঠিক সেই মুহূর্তে একঠেঙে লোকটা বাঘের মতো লাফিয়ে গিয়ে পড়ল হালের চাকার ওপর এবং সমস্ত শক্তি দিয়ে চাকা ঘুরিয়ে দিতেই আচমকা যেন গোঁৎ খেয়ে দক্ষিণ তীরের দিকে সাঁৎ করে ঘুরে গেল অরোরা। পেছনের গলুইতে আমাদের লক্ষ্য আছড়ে পড়তে পড়তে পাশ কাটিয়ে বায়ুবেগে বেরিয়ে গেল মাত্র কয়েক ফুট তফাত দিয়ে। তক্ষুনি ঘুরে ফিরে এলাম বটে, কিন্তু অরোরা ততক্ষণে তীরের কাছে পৌঁছে গেছে। খাঁ-খাঁ করছে। চারিদিক। মাঝে মাঝে বদ্ধ জলা, কোথাও দিগন্তবিস্তৃত কাদাজমি, কোথাও পচা শ্যাওলা আর জলজ উদ্ভিদ ছাওয়া প্যাচপেচে মাঠ। অরোরা নক্ষত্রবেগে ধেয়ে গেল এই কাদার দিকে এবং ধপ করে উঠে পড়ল কাদা ভরতি তীরের ওপর সামনের গলুই ঠেলে উঠল শূন্যেপেছনের দিকটা ডুবে গেল নদীর জলে। সঙ্গেসঙ্গে লাফ দিল পলাতক, কিন্তু কাঠের পা-খানা আমূল ঢুকে গেল কাদামাটির মধ্যে। বৃথা হল টানা-হাচড়া, সমস্ত শরীর দুমড়ে মুচড়ে পা খোলার প্রাণান্ত চেষ্টা। এক পাও ফেলতে পারল না সামনে বা পিছনে। নিষ্ফল ক্রোধে ষাঁড়ের মতো চেঁচাতে চেঁচাতে লাফালাফি আর গায়ের জোর দেখাতে গিয়ে কাঠের খোটা আরও ভালো করে গেঁথে গেল কাদামাটির মধ্যে। লঞ্চ নিয়ে কাছে পৌছানোর পর তাকে কাদা থেকে টেনে তোলার জন্যে দড়ির ফাঁস ছুঁড়ে দিতে হল ঘাড়ের ওপর এবং অতিকষ্টে যেন কাদার সমুদ্র থেকে টেনে হিচড়ে উদ্ধার করল অতি করাল এক কুটিল মৎস্যকে। মুখ কালো করে লঞ্চে বসে ছিল স্মিথ। বাপবেটা কিন্তু হুকুম শুনেই সুড়সুড় করে উঠে এল পুলিশ লঞ্চে। অরোরাকে টেনে ভাসালাম জলে এবং বেঁধে নিলাম পেছনে। ডেকে পড়ে ছিল ভারতীয় কারুকার্য শোভিত নিরেট লোহার একটা সিন্দুক। নিঃসন্দেহে শোন্টোদের সেই অভিশপ্ত রত্নপেটিকা। চাবি নেই সিন্দুকের গায়ে কিন্তু বেশ ভারী! ধরাধরি করে বয়ে নিয়ে এলাম আমাদের ছোটো কেবিনে। স্রোতের প্রতিকূলে ঘসঘস শব্দে ধোঁয়া ছেড়ে ফেরবার সময়ে সার্চলাইট খুঁটিয়ে দেখলাম চারিদিক–কিন্তু পিশাচমুখো সেই দ্বীপবাসীকে আর দেখতে পেলাম না। টেমস নদীর তলদেশে তিমিরাবৃত আলয়ে জুড়োচ্ছে নিশ্চয় অর্ধ-পশু ভিনদেশীর ক-খানি হাড়। এদেশে আসাটাই কাল হয়েছে তার।

    লঞ্চের খোলে নামবার পাটাতনের দরজার আঙুল তুলে হোমস বললে, দেখ, দেখ, পিস্তল ছুড়তেও দেরি করে ফেলেছিলাম। সত্যিই তো! যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম দুই বন্ধ, ঠিক সেই জায়গাটিতে কাঠের গায়ে বিধে রয়েছে কালান্তক সেই বিষ কাটা–যার মরণ মারের নিদর্শন আমরা স্বচক্ষে দেখেছি। গুলি ছোড়ার সঙ্গেসঙ্গে আমাদের দুজনের মাঝখান দিয়ে সাঁৎ করে উড়ে গিয়ে কাঠে বিধেছে বিষের তির। আমার দিকে তাকিয়ে অভ্যেস মতো হোমস মৃদু হাসল বটে, আমার কিন্তু হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল, কী করাল মৃত্যুর খপ্পর থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছি ভাবতে গিয়ে মুক্ত কণ্ঠে স্বীকার করছি, রক্ত ঠান্ডা হয়ে এসেছিল সেদিন সাক্ষাৎ যমদূতের মতো সেই বিষ কাটা কানের ঠিক পাশ দিয়ে শনশনিয়ে উড়ে যাওয়ার দৃশ্যটা কল্পনা করে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশার্লক হোমস সমগ্র ২ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন
    Next Article When the World Screamed – Arthur Conan Doyle

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }