Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শার্লক হোমস সমগ্র ১ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    লেখক এক পাতা গল্প813 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৮. ডক্টর ওয়াটসনের প্রথম রিপোর্ট

    শার্লক হোমসকে যেসব চিঠি লিখেছিলাম, আমার সামনে টেবিলের ওপর সেগুলো এখন সাজানো। এখন সেই চিঠিগুলোর অনুলিপি দেব–ঘটনার স্রোত কোনদিকে গিয়েছে এই চিঠি থেকে তা স্পষ্ট বোঝা যাবে। একটা পাতা দেখছি খোয়া গেছে, কিন্তু অন্যগুলো যেভাবে লিখেছিলাম সেইভাবেই রয়েছে। বিয়োগান্তক ঘটনাবলির যে স্মৃতি মনের মধ্যে এখনও দগদগ করছে তার চেয়ে অনেক মর্মস্পর্শী এই চিঠি। সেই মুহূর্তে, আমি যা উপলব্ধি করেছি, বা যাদের সন্দেহ করেছি, তার যথাযথ বিবরণ কিন্তু এই চিঠিগুলো। স্মৃতি থেকে এত খুঁটিয়ে লেখা সম্ভব নয়।

    বাস্কারভিল হল, তেরোই অক্টোবর

    প্রিয় হোমস,

    পাণ্ডববর্জিত এ-অঞ্চলে যা-যা ঘটেছে, তার সব খবরই আমার চিঠি আর টেলিগ্রাম মারফত পেয়েছ। স্বয়ং ঈশ্বরও বুঝি এ-জায়গা মাড়ান না। বেশিদিন এখানে থাকলে মারাত্মক অবসন্ন করে তোলে জলার প্রেতাত্মা–ধু-ধু বিস্তৃত জলার বিরাটত্ব আর বিকট সৌন্দর্য চেপে বসে মনের মধ্যে। জলার বুকে একবার পা দিলেই আধুনিক ইংলন্ডের সব চিহ্নই ফেলে আসতে হয় পেছনে, বিনিময়ে চারিধারে দেখা যায় প্রাগৈতিহাসিক মানবের বসবাস আর কাজকর্মের নিদর্শন। যেদিকেই হাঁটো না কেন, দু-ধারে কেবল দেখব বিস্তৃত এই মানবদের বাড়িঘরদোর, নয়তো কারখানা, অথবা বিরাট বিরাট পাথরের স্তম্ভ একটিমাত্র পাথর দিয়ে তৈরি প্রকাণ্ড এই থামগুলো নাকি তাদের মন্দির। উদ্ভিদবর্জিত ক্ষতচিহ্নযুক্ত পাহাড়গুলোর গায়ে নির্মিত প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড পাথরের কুটিরগুলোর পানে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হবে বর্তমান সময় থেকে পেছিয়ে গেছ, তখন যদি দেখো চামড়ার পোশাক পরা লোমশ মানব হামাগুড়ি দিয়ে নীচু দরজা পেরিয়ে এসে ধনুকের ছিলায় চকমকি পাথরের ফলক বাঁধা তির লাগাচ্ছে, তোমার মনেই হবে না এটা অতীত এবং অবাস্তব মনে হবে তোমার চাইতে বরং ওই লোকটাই অনেক স্বাভাবিক। সবচেয়ে অদ্ভুত কী জানো, ঊষরতম এই জমিতেই ওরা এত ঘন বসতি করে থেকে গেছে। আমি প্রত্নতত্ত্ববিদ নই, তবে আমার বিশ্বাস এরা তেমন লড়াকু জাত ছিল না, লুঠেরাদের অত্যাচারে দেশত্যাগী হয়ে এমন এক জায়গায় আস্তানা নিতে বাধ্য হয়েছিল, যে-জায়গায় দখল নিতে আর কেউ আসবে না।

    যে-কাজে পাঠিয়েছ, তার সঙ্গে এইসবের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তোমার কঠোর প্র্যাকটিক্যাল মনে এসব তত্ত্ব কোনো আগ্রহই সঞ্চার করতে পারছে না নিশ্চয়। পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে কি, সূর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে–এ-ব্যাপারে তোমার পরিপূর্ণ ঔদাসীন্য এখনও আমি ভুলিনি। তাই স্যার হেনরি বাস্কারভিল সম্পর্কিত ঘটনাবলির মধ্যে ফিরে আসা যাক।

    গত ক-দিনের রিপোর্ট না-পাওয়ার কারণ খবর দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটেনি। আজ কিন্তু সে-সুযোগ এসেছে, অত্যন্ত বিস্ময়কর একটা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে–যথাসময়ে তা বলছি। তার আগে এই পরিস্থিতি সম্পর্কিত অন্যান্য কয়েকটা ব্যাপার তোমাকে অবহিত করা দরকার।

    এর মধ্যে একটা ব্যাপারে তোমাকে খুব কম সংবাদই দিয়েছি। জেলখানার পলাতক সেই কয়েদির কথা আমি বলছি–পালিয়ে গিয়ে জলার মধ্যে সে আশ্রয় নিয়েছে। লোকটা আর

    ওখানেও নেই, এ-রকম বিশ্বাসের জোরদার কারণ দেখা গিয়েছে। এ-জেলায় যারা নিরালা। নির্জনে বাড়ি করে আছে, এ-সংবাদে তারা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। পলায়নের পর পনেরো দিন কেটেছে তার টিকি দেখা যায়নি, কোনো খবরও পাওয়া যায়নি। এতদিন জলায় ঘাপটি মেরে আছে, এটাও কল্পনায় আনা যায় না-ঘাপটি মেরে থাকাটা কঠিন কিছু নয়। পাথরের অত কুটিরের যেকোনো একটায় লুকিয়ে থাকলেই হল। কিন্তু খাবে কী? জলার ভেড়া ধরে জবাই করে খাওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। তাই মনে হয়, জলা থেকে সে বিদায় নিয়েছে। জলার ধারে ধারে যেসব কৃষকদের বাস, তারাও নিশ্চিন্ত মনে ঘুমোতে পারছে।

    এ-বাড়িতে আমরা চারজন সক্ষম পুরুষ রয়েছি। কাজেই আমাদের ওপর কেউ চড়াও হলে সুবিধে করতে পারবে না। কিন্তু স্টেপলটনদের কথা মনে হলে মনটা অস্বস্তিতে ভরে যায়। এক মাইল দূর থেকে সাহায্যের প্রত্যাশা করা যায় না। ভাইবোন ছাড়াও ও-বাড়িতে রয়েছে। একজন পরিচারিকা, আর একজন বৃদ্ধ পরিচারক। ভাইটিও তেমন বলবান নয়। নটিংহিল ক্রিমিন্যালের মতো জেলপালানো মরিয়া কয়েদি যদি কোনোরকমে একবার বাড়িতে ঢুকে পড়ে তো রেহাই পাবে না কেউই। আমি এবং স্যার হেনরি দু-জনেই এই পরিস্থিতির জন্যে উদবিগ্ন বোধ করছিলাম। আমাদের সহিস পাকিন্স গিয়ে ওঁদের বাড়িতে রাত কাটাক, এমন প্রস্তাবও করা হয়েছিল কিন্তু স্টেপলটন রাজি হননি।

    ব্যাপার কী দাঁড়িয়েছে শোনো। ব্যারনেট বন্ধুটি সুন্দরী প্রতিবেশিনীর প্রতি আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কেননা, এ-রকম একটা নিরালা জায়গায় সময় যেন কাটতে চায় না–ওঁর মতো কর্মঠ পুরুষের পক্ষে এ একটা যন্ত্রণা। মেয়েটিও প্রকৃত মোহিনী এবং পরমাসুন্দরী। ভাইটি যেমন শীতল আবেগহীন বোনটি ঠিক তার উলটো। গ্রীষ্মমণ্ডলের মানবী যেন বিদেশ থেকে আমদানি। তফাতটা আশ্চর্য রকমের। ভাইয়ের বুকেও অবশ্য সুপ্ত অগ্নি আছে–মাঝে মাঝে তার আভাস দিয়ে ফেলেন। বোনের ওপর ভাইয়ের প্রভাব নিশ্চয় জবরদস্ত রকমের, কেননা কথা বলতে বলতে বোনটি ঘন ঘন ভাইয়ের দিকে তাকান–যেন যা বলছেন তাতে ভাইয়ের অনুমোদন আছে কিনা চোখে চোখে জেনে নেন। আশা করি, বোনকে স্নেহ করে ভাই। মাঝে মাঝে ভদ্রলোকের চোখে শুষ্ক দীপ্তির যে ঝলক আর পাতলা ঠোঁটে যে কাঠিন্য লক্ষ করি তা অবশ্য রুক্ষ মেজাজের লক্ষণ। তোমার কাছে ইনি একটা গবেষণার বস্তু হয়ে দাঁড়াতেন।

    প্রথম দিনেই বাস্কারভিলের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন ইনি। দুষ্ট হিউগোর কিংবদন্তির উৎস যেখানে, পরের দিন সকালে নিয়ে গেলেন সেখানে। জায়গাটা জলার ভেতরে মাইল কয়েক ভেতর খাঁ-খাঁ করছে চারিদিকে গল্পের সৃষ্টি হয়তো সেই কারণেই। দু-পাশে দুটো এবড়োখেবড়ো পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে একটা উপত্যকা। উপত্যকা শেষ হয়েছে একটা খোলা, ঘাস ছাওয়া জমির সামনে সাদা তুলো ঘাসের ফুট-ফুট দাগ এখানে সেখানে। মাঝখানে খাড়া হয়ে রয়েছে প্রকাণ্ড পাথর। রোদে জলে ক্ষয়ে ধারালো হয়ে গিয়েছে ওপর দিক ঠিক যেন কোনো দানব-জন্তুর একজোড়া বিষদাঁত। সুপ্রাচীন কিংবদন্তির উপর্যুক্ত ক্ষেত্রই বটে। ট্র্যাজেডির যোগ্য জায়গা। স্যার হেনরি দেখলাম বিলক্ষণ কৌতূহলী হয়েছেন। একাধিকবার স্টেপলটনকে জিজ্ঞেস করলেন, নরলোকে অলৌকিক কারসাজির সম্ভাবনা তিনি বিশ্বাস করেন কিনা, দেহধারীদের জগতে বিদেহীদের কোনো হাত থাকে কিনা। হালকাভাবে জিজ্ঞেস করলেও লক্ষ করলাম কথাগুলো বেরোচ্ছে অন্তর থেকে। স্টেপলটন রেখেঢেকে জবাব দিয়ে গেলেন! স্পষ্ট বুঝলাম, ব্যারনেটের মনের অবস্থা উপলব্ধি করে ওঁর অভিমত উনি পুরোপুরি ব্যক্ত করছেন না। কতকগুলো অনুরূপ ঘটনা শুধু বললেন, অশুভ শক্তির প্রকোপে কীভাবে সর্বনাশ হয়েছে–সেইসব ঘটনার কথা শুনে এইটুকু বুঝলাম, এ-ব্যাপারে জনপ্রিয় অভিমতের সঙ্গে তাঁর মতের কোনো ফারাক নেই।

    ফেরার পথে মেরিপিট হাউসে লাঞ্চ খেতে গিয়ে মিস স্টেপলটনের সঙ্গে পরিচয় ঘটল স্যার হেনরির। প্রথম দর্শনেই স্যার হেনরি আকৃষ্ট হয়েছেন লক্ষ করলাম–মিস স্টেপলটনের মনোভাবও নিশ্চয় তাই। আকর্ষণটা পারস্পরিক। বাড়ি ফেরার পথে বার বার মিস স্টেপলটনের কথা বললেন স্যার হেনরি। সেইদিন থেকে আজ পর্যন্ত ভাই অথবা বোনের সঙ্গে রোজই দেখা হচ্ছে আমাদের একদিনও বাদ যায়নি। আজ রাত্রে এখানে খাবেন ওঁরা কথা চলছে সামনের সপ্তাহে আমরা যাব ওঁদের বাড়ি। একেই বলে মণিকাঞ্চন যোগ। স্টেপলটনের খুশি হওয়াই উচিত। কিন্তু বোনের সঙ্গে স্যার হেনরি ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করলেই তীব্র অননুমোদন তার চোখে ফুটে উঠতে দেখেছি। বোন-অন্ত-প্রাণ তিনি বুঝি, বোন চলে গেলে একক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে তাও বুঝি, কিন্তু এ-রকম চমকপ্রদ বিয়েতে বাদ সাধাও যে চরম স্বার্থপরতা। সম্পর্কটা যাতে প্রেমের সম্পর্কে দাঁড়ায়, ভাইটি মোটেই যে তা চান না, এ-বিষয়ে আমি নিশ্চিত! বেশ কয়েকবার লক্ষ করেছি, দু-জনের আলাদাভাবে দেখাসাক্ষাৎ বানচাল করে দিয়েছেন ভাইটি। আমার ওপর তোমার নির্দেশ আছে, স্যার হেনরির কাছ ছাড়া যেন না-হই। এ-নির্দেশ পালনে এমনিতে অনেক অসুবিধে আছে, তার ওপর যদি ভালোবাসাবাসির ব্যাপার এসে যায়, তাহলে ঝামেলার অন্ত থাকবে না। আমার জনপ্রিয়তা শিগগিরই ক্ষুণ্ণ হবে যদি তোমার নির্দেশ অক্ষরে-অক্ষরে তামিল করতে যাই।

    সেদিন—মানে, বৃহস্পতিবার ডক্টর মর্টিমার লাঞ্চ খেয়ে গেলেন আমাদের সঙ্গে। লঙ ডাউনে উনি একটা কবর খুঁড়েছেন। প্রাগৈতিহাসিক একটা করোটি উদ্ধার করে আনন্দে আটখানা হয়েছেন। সমস্ত মন জুড়ে রয়েছে একটিই বিষয় এবং তাই নিয়ে তার উৎসাহ দেখে কে! স্টেপলটনরা পরে এলেন; স্যার হেনরির অনুরোধে ডাক্তার সবাইকে নিয়ে ইউ-বীথিতে গেলেন বিয়োগান্তক সেই রাতে কোথায় কী ঘটেছিল দেখানোর জন্যে। জায়গাটা যেন কেমনতরো বিষাদের ভার বুকে চেপে বসে। বেশ লম্বা বীথি! দু-পাশে ছাঁটা-ঝোঁপের উঁচু দেওয়াল। পথের পাশে ঘাসের সরু পটি। একদম শেষে একটা ভেঙে পড়া গ্রীষ্মবাস। মাঝামাঝি জায়গায় জলার ফটক বৃদ্ধ চুরুটের ছাই ঝেড়েছিলেন সেখানে। সাদা কাঠের ফটক–হুড়কো লাগানো। তার ওদিকে বিশাল জলাভূমি। তোমার থিয়োরি মনে পড়ায় যা-যা ঘটেছে, তা মনে মনে ছবির মতো সাজাবার চেষ্টা করলাম। ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন বৃদ্ধ, হঠাৎ দেখলেন জলার ওপর দিয়ে কী যেন তেড়ে আসছে তারই দিকে। দেখেই নিঃসীম আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে ছুটতে ছুটতে বে-দম হয়ে পড়লেন। সুড়ঙ্গের মতো সুদীর্ঘ অন্ধকারাচ্ছন্ন ইউ-বীথি ধরে দৌড়েছিলেন প্রাণভয়ে, দিগবিদিক জ্ঞান হারিয়ে। কিন্তু কীসের ভয়ে? কে তাড়া করেছিল? কার করাল খপ্পর থেকে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন তিনি? জলারই কোনো ভেড়া-তাড়ানো কুকুর নয় তো? নাকি, নিঃশব্দে আবির্ভূত হয়েছিল কৃষ্ণকুটিল সেই দানব কুকুর–শরীরী প্রেত–ভয়াল-ভয়ংকর সেই প্রেতচ্ছায়া দেখেই ভয়ে প্রাণ উড়ে গিয়েছিল স্যার চার্লসের? নরলোকের কোনো মানবের হাত নেই তো? পাণ্ডুর-মুখ মহা-হুঁশিয়ার ব্যারিমুর মুখে যা বলেছে, পেটে তার চাইতে বেশি খবর জমিয়ে রাখছে না তো? সবই কেমন যেন অস্পষ্ট, আবছা–কিন্তু অপরাধের কালো ছায়া দুলছে সব কিছুরই পেছনে।

    শেষ চিঠির পর আর একজন প্রতিবেশীর সঙ্গে আলাপ হয়েছে। ইনি ল্যাফটার হলের মি. ফ্র্যাঙ্কল্যান্ড আমাদের বাড়ি থেকে মাইল চারেক দক্ষিণে ওঁর বাড়ি। ভদ্রলোকের বয়স হয়েছে, মাথার চুল সব সাদা, মুখের রং লাল এবং একটুতেই ধাঁ করে রেগে যান। এঁর ধ্যান-ধারণায় ব্রিটিশ আইন ছাড়া আর কিছুই নেই এবং সম্পত্তির বেশ খানিকটা অংশ মামলা-মোকদ্দমা করে উড়িয়েছেন। মামলা করেন স্রেফ মামলা করার জন্যে লড়ার জন্যে লড়া আর কী–ন্যায় অন্যায়ের বাছ-বিচার নেই–মিথ্যে মামলাও জুড়ে দেন স্রেফ মজা পাওয়ার জন্যে খুবই ব্যয়সাপেক্ষ মজা, সন্দেহ নেই। কখনো পাঁচজনের ন্যায়সংগত রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে চ্যালেঞ্জ করেন গোটা গ্রামটাকে আসুক কার ক্ষমতা, খুলুক এই রাস্তা। আবার কখনো নিজের হাতে অন্য লোকের গেট ছিঁড়ে ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে বলেন এখানে নাকি চিরকাল চলার রাস্তা ছিল–বিনা অনুমতিতে প্রবেশের জন্য যে পালটা মামলা হয়ে যেতে পারে তার ধার ধারেন না। ভদ্রলোক জমিদারের খাস-খামার সংক্রান্ত এবং জনসাধারণের ব্যবহার সংক্রান্ত যাবতীয় প্রাচীন অধিকারে মহাপণ্ডিত। জ্ঞানটা কখনো লাগানো হয় ফার্নওয়াদি গ্রামবাসীদের স্বপক্ষে, কখনো বিপক্ষে। তাই কখনো তাকে কাঁধে নিয়ে গ্রামে শোভাযাত্রা বেরোয়। আবার কখনো সর্বশেষ কুকীর্তির দরুন কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। শোনা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে তার হাতে সাতটা মামলা ঝুলছে। সম্পত্তির বাকি অংশটুকু এই সাতটা মোকদ্দমার পেছনে ছুঁকে দেওয়ার পর আশা করা যাচ্ছে তার হুলটাও সেইসঙ্গে বিদায় নেবে এবং বাকি জীবনটা আর কারো ক্ষতি করতে পারবেন না! চরিত্রের এই মামলাবাজ দিকটা ছাড়া ভদ্রলোক এমনিতে কিন্তু অমায়িক, মনটা ভালো। আশপাশের সব প্রতিবেশীদের বিবরণ চেয়েছিলে বলেই এঁর কথা লিখলাম। এই মুহূর্তে উনি আর একটা বিচিত্র নেশায় মেতেছেন। ইনি শখের জ্যোতির্বিজ্ঞানী। বাড়ির ছাদে একটা চমৎকার টেলিস্কোপও আছে। সারাদিন এই টেলিস্কোপে চোখ লাগিয়ে জলাভূমি চষে ফেলছেন পলাতক কয়েদিকে দেখবার আশায়। উদ্যমটা কেবল এই কাজে খাটালেই সবার মঙ্গল হত, কিন্তু গুজব শোনা যাচ্ছে, উনি ডক্টর মর্টিমারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবেন। ডাক্তারের অপরাধ, লঙডাউনে কবর খুঁড়ে প্রস্তরযুগের করোটি উদ্ধার করার আগে প্রতিবেশীর সম্মতি নেননি। জীবনের একঘেয়েমি ইনি ঘুচিয়ে দিচ্ছেন, মাঝে মাঝে নিতান্ত দরকার মতো হাস্যরসেরও সঞ্চার করছেন।

    পলাতক কয়েদি, স্টেপলটন ভাইবোন, ডক্টর মর্টিমার এবং ল্যাফটার হলের ফ্র্যাঙ্কল্যান্ডের সর্বাধুনিক সংবাদ পরিবেশনের পর এদের চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ খবর দিয়ে আমার এই চিঠি শেষ করব–ব্যারিমুর দম্পতি সম্পর্কে আরও খবর এবার দিচ্ছি তোমায় বিশেষ করে কাল রাতের বিস্ময়কর ঘটনা শুনলে তুমি চিন্তার খোরাক পাবে।

    প্রথমে ধরো তোমার সেই পরীক্ষামূলক টেলিগ্রামের ব্যাপারটা যেটা পাঠিয়ে তুমি জানতে চেয়েছিলে সত্যিই ব্যারিমুর বাড়ি আছে কি নেই। আগেই লিখেছি, পোস্টমাস্টারের কথাবার্তায় প্রমাণিত হয়ে গেছে, একেবারেই মাঠে মারা গিয়েছে তোমার পরীক্ষাটা। এই পরীক্ষা দিয়ে কোনোদিকেই কিছু প্রমাণ করতে পারবে না। স্যার হেনরিকে বলছিলাম পরিস্থিতি কী দাঁড়িয়েছে; উনি আবার লুকোছাপার ধার ধারেন না। সটান ডেকে পাঠালেন ব্যারিমুরকে। জিজ্ঞেস করলেন, টেলিগ্রামটা সে পেয়েছে কিনা। ব্যারিমুর বললে, হ্যাঁ, পেয়েছে।

    স্যার হেনরি জিজ্ঞেস করলেন, ছোকরা কি তোমার হাতে দিয়ে গিয়েছিল?

    ব্যারিমুর যেন অবাক হয়ে গেল। একটু ভাবল।

    বলল, না। আমি তখন বক্স-রুমে। আমার স্ত্রী ওপরে এনে দিয়েছিল আমার হাতে।

    জবাব তুমি নিজে দিয়েছিলে?

    না। স্ত্রীকে বলেছিলাম কী জবাব দিতে হবে, ও নীচে গিয়ে লিখে নিয়েছিল।

    সন্ধেবেলা ফের নিজেই এল বিষয়টা নিয়ে।

    বললে, স্যার হেনরি, সকালবেলা কেন অত কথা জিজ্ঞেস করলেন বুঝলাম না। আপনার বিশ্বাস হারানোর মতো কোনো অপরাধ করেছি কি?

    সে-রকম কিছুই নয় বুঝিয়ে বললেন স্যার হেনরি। ঠান্ডা করার জন্যে নিজের কিছু জামাকাপড়ও দান করলেন লন্ডন থেকে নতুন বেশভূষা এসে যাওয়ায় পুরোনো পরিচ্ছদের আর প্রয়োজন ছিল না।

    মিসেস ব্যারিমুর আমার কৌতূহল জাগিয়ে রেখেছে। ভারী চেহারা, নিরেট ব্যক্তিত্ব, কখনো মাত্রা ছাড়ায় না, অতিশয় সচ্চরিত্রা, এবং নীতিনিষ্ঠতার দিকে প্রবণতা আছে! এর চাইতে কম আবেগশূন্য মানুষ তুমি আর পাবে না। তা সত্ত্বেও, আগেই লিখেছি তোমায়, যেদিন পা দিলাম এ-বাড়িতে সেই রাতেই তাকে ফুঁপিয়ে বুকফাটা কান্না কাঁদতে শুনেছি আমি। তারপরেও একাধিকবার চোখে-মুখে অশ্রুর দাগ লক্ষ করেছি। মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়েছে হয়তো কোনো পুরোনো অপরাধের কথা ভুলতে পারছে না বলেই লুকিয়ে অশ্রু বিসর্জন করে; আবার কখনো সন্দেহ হয় ব্যারিমুরকে, বউকে যন্ত্রণা দেয় না তো? বরাবরই লোকটার স্বভাব-চরিত্র আমার কাছে কীরকম যেন অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক মনে হয়েছে, কাল রাত্রের অ্যাডভেঞ্চারের পর তুঙ্গে পোঁছেছে আমার সন্দেহ।

    এমনও হতে পারে ব্যাপারটা হয়তো নেহাতই অকিঞ্চিৎকর। তুমি তো জান ঘুমটা আমার কোনোকালেই খুব গাঢ় নয়, এ-বাড়ির পাহারায় মোতায়েন হওয়ার পর থেকে আরও পাতলা হয়ে এসেছে রাতের নিদ্রা। কাল রাত প্রায় দুটোর সময়ে ঘুম ছুটে গেল আমারই দরজার বাইরে পা টিপে টিপে চলার আওয়াজে। উঠে পড়লাম, দরজা খুললাম এবং উঁকি মারলাম। দেখলাম, একটা লম্বা কালো ছায়া লুটিয়ে চলেছে করিডর বরাবর। যার ছায়া, সেই লোকটি আলতো পায়ে হাতে একটা মোমবাতি নিয়ে হাঁটছে। পরনে শার্ট আর ট্রাউজার্স–পায়ে চটি বা জুতো কিছুই নেই। শুধু দেহরেখাটুকু দেখলাম বটে, কিন্তু উচ্চতা দেখে বুঝলাম ব্যারিমুর। খুব আস্তে এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে সে হাঁটছে এবং সমস্ত ভঙ্গিমাটার মধ্যে একটা তীব্র অপরাধবোধ আর গোপনতা অবর্ণনীয়ভাবে বিচ্ছুরিত হচ্ছে।

    আগেই বলেছি তোমাকে, করিডরটা শেষ হয়েছে হল ঘরের মাথায় চারদিক-ঘেরা রেলিং দেওয়া বারান্দায় এবং আবার শুরু হয়েছে অন্যদিক থেকে। চোখের আড়ালে না-যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়ালাম। তারপর ফের পেছন নিলাম। বারান্দা ঘুরে আসবার পর দেখলাম ওদিককার করিডরের প্রান্তে সে পৌঁছে গেছে এবং একটা ঘরের খোলা দরজা দিয়ে আলোর আভা দেখা যাচ্ছে। বুঝলাম, সারি সারি ঘরের একটায় সে ঢুকেছে। কেউ থাকে না এসব ঘরে, আসবাবপত্রও নেই তাই লোকটার এহেন অভিযান আরও রহস্যজনক মনে হল। আলো নড়ছে না অর্থাৎ স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে আছে ব্যারিমুর। নিঃশব্দে করিডর পেরিয়ে এলাম, খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে উঁকি দিলাম।

    কাচের শার্সির গায়ে মোমবাতি ধরে জানলার ওপর হুমড়ি খেয়ে রয়েছে ব্যারিমুর। মুখখানা অর্ধেক ঘোরানো আমার দিকে এবং জলার অন্ধকারের পানে চেয়ে থাকার ধরন দেখে মনে হচ্ছে যেন কিছুর প্রত্যাশায় রয়েছে–আড়ষ্ট হয়ে রয়েছে মুখ। বেশ কয়েক মিনিট নিবিড়ভাবে জমাট অন্ধকারের বুকে চেয়ে রইল সে। তারপর অধীরভাবে গুঙিয়ে উঠে নিভিয়ে দিল মোমবাতি। তৎক্ষণাৎ ফিরে এলাম আমার ঘরে এবং তার একটু পরেই আবার আমার ঘরের সামনে পা টিপে টিপে ফিরে যাওয়ার আওয়াজ ভেসে এল কানে। তার অনেকক্ষণ পরে যখন তন্দ্রার মতন এসেছে, কোথায় যেন তালার ফোকরে চাবি ঘোরানোর ক্লিক আওয়াজ শুনলাম কিন্তু ঠাহর করতে পারলাম না কোনদিক থেকে এল শব্দটা। মানে কী এসবের, মাথায় আসছে না। শুধু এটুকু বুঝছি বিষাদঘেরা এই পুরীতে চোখের অন্তরালে একটা গোপন কারসাজি চলছে; আজ হোক কাল হোক–এই ষড়যন্ত্রের শেষ আমাদের দেখতেই হবে। তুমি তো শুধু ঘটনা চেয়েছ আমার কাছ থেকে কাজেই অনুমতির বোঝা আর তোমার মাথায় চাপাব না। আজ সকালে স্যার হেনরির সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। গত রাতে আমি যা দেখেছি তার ভিত্তিতে একটা অভিযানের পরিকল্পনা আমরা স্থির করেছি। এখন সে-সম্পর্কে কিছু বলব না। তবে এর ফলে আমার পরবর্তী রিপোর্ট পড়ায় অনেক বেশি আগ্রহ পাবে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশার্লক হোমস সমগ্র ২ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন
    Next Article When the World Screamed – Arthur Conan Doyle

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }