Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শার্লক হোমস সমগ্র ১ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    লেখক এক পাতা গল্প813 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১২. বাদায় মৃত্যু

    সেকেন্ড খানেক কি দুয়েক দম বন্ধ করে বসে রইলাম, নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারলাম না তারপরেই ফিরে পেলাম বাকশক্তি এবং বোধশক্তি। নিমেষের মধ্যে দায়িত্বের একটা পাষাণ-ভার নেমে গেল মন থেকে। ছুরির মতো ধারালো বিদ্রুপ তীক্ষ্ণ্ম নিরুত্তাপ এই কণ্ঠস্বরের অধিকারী ত্রিভুবনে একজনই আছে।

    উল্লাসে তাই ফেটে পড়লাম পরক্ষণেই, হোমস! হোমস!

    বাইরে এসো। দয়া করে রিভলবারটা সামলে রেখো।

    দরজার ওপরকার এবড়োখেবড়ো পাথরটার তলা দিয়ে মাথা হেঁট করে বেরিয়ে এলাম বাইরে। দেখলাম, একটা পাথরের ওপর বসে বন্ধুবর। আমার চোখ-মুখের বিস্ময় দেখে কৌতুকে নৃত্য করে উঠল ধূসর দুই চক্ষু। একটু রোগা হয়ে গেছে বটে, কিন্তু বেশ সতর্ক এবং উজ্জ্বল। রোদে পুড়ে ব্রোঞ্জের মতো দেখাচ্ছে মুখখানা, ঝড়ো হাওয়ায় একটু রুক্ষও হয়েছে। টুইড সুট আর কাপড়ের ক্যাপ পরায় বাদার আর পাঁচটা টুরিস্টের মতোই দেখতে হয়েছে তাকে। বেড়ালের মতো নিজের চেহারাখানি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারেও এতটুকু ত্রুটি দেখলাম না। দাড়িগোঁফ কামিয়ে পোশাক পরিচ্ছদে যেমন ফিটফাট থাকে বেকার স্ট্রিটে, এখানেও রয়েছে তেমনি।

    দু-হাতে ওর দু-হাত সবলে চেপে ধরে বললাম, জীবনে কাউকে দেখে এমন খুশি আমি হইনি।

    এমন অবাকও হওনি?

    তা মানতেই হবে। বিশ্বাস করো, তুমি একাই অবাক হওনি। তুমি যে আমার গোপন আস্তানা বার করে ফেলেছ জানতাম না। শুধু বার করা নয়, ভেতরে ঢুকে বসে আছে–এটাও কল্পনা করতে পারিনি। পারলাম দরজা থেকে বিশ পা দূরে এসে।

    আমার পায়ের ছাপ দেখে নিশ্চয়?

    না, ওয়াটসন। দুনিয়ার লোকের পায়ের ছাপের মধ্যে তোমার পায়ের ছাপ চিনে নেওয়ার মতো ক্ষমতা আমার নেই। সত্যিই যদি ঠকাতে চাও আমাকে, তোমার তামাকওলা পালটাও। পোড়া সিগারেটের গায়ে ব্র্যাডলি অক্সফোর্ড স্ট্রিট ছাপাটা দেখলেই বুঝে ফেলি ধারেকাছে। কোথাও রয়েছে আমার বন্ধু ওয়াটসন। রাস্তার ধারেই দেখো পড়ে রয়েছে পোড়া সিগারেটটা। তেড়েমেড়ে শূন্য কুটিরে ঢোকবার সময়ে নিশ্চয় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গেছিলে।

    ঠিক ধরেছ।

    তোমার নাছোড়বান্দা স্বভাবটা তো জানি সত্যিই প্রশংসা করবার মতো। তাই সিগারেট যখন তোমার, তখন নিশ্চয় হাতিয়ার বাগিয়ে বসে আছো কুটিরে বাসিন্দার ফেরার প্রতীক্ষায়

    এটুকু বুঝতে দেরি হল না। তুমি তাহলে সত্যিই ভেবেছিলে আমিই ক্রিমিন্যাল?

    তুমি কে তা জানতাম না। কিন্তু ধনুর্ভঙ্গ পণ করেছিলাম, সেটাই জানব।

    চমৎকার, ওয়াটসন! ঠিক এই জায়গাতেই যে আছি বুঝলে কী করে? কয়েদির পেছনে ধাওয়া করছিলে যে-রাত্রে, তখন নিশ্চয় দেখেছিলে? বোকার মতো চাঁদকে পেছনে রেখে দাঁড়িয়ে ছিলাম পাহাড়চুড়োয়।

    হ্যাঁ, তখনই দেখেছি তোমায়।

    তারপর নিশ্চয় একধার থেকে সব কুটিরে খানাতল্লাশি চালিয়ে এখানে এসেছ?

    আরে না। তোমার ছোকরাটাকে দেখা গেছে। তাতেই বুঝেছি কোথায় খোঁজা দরকার।

    বুঝেছি। ওই বুড়ো টেলিস্কোপের মধ্যে দিয়ে দেখেছ। লেন্সের ঝিলিক কোনদিক থেকে এল প্রথমে ধরতে পারিনি। উঠে দাঁড়াল হোমস, উঁকি দিল কুটিরের ভেতরে! এই তো, কার্টরাইট খাবারদাবার এনেছে দেখছি। কাগজটা কীসের? তাই বল, কুমবে ট্রেসি গেছিলে?

    হ্যাঁ।

    মিসেস লরা লায়ন্সের সঙ্গে দেখা করতে?

    ধরেছ ঠিক।

    শাবাশ! দু-জনেরই গবেষণা দেখছি সমান্তরাল রেখায় ছুটছে। গবেষণার ফল এক করলে দেখা যাবে কেস সম্বন্ধে সব খবরই জানা হয়ে গেছে।

    তুমি যে এসেছ, এইতেই আমি খুশি। দায়িত্ব আর রহস্য সইতে পারছিল না আমার স্নায়ু। কিন্তু এখানে এলে কীভাবে? করছই-বা কী? আমি তো ভেবেছিলাম বেকার স্ট্রিটে বসে এখনও ব্ল্যাকমেলিং কেস নিয়ে নাওয়া-খাওয়া ভুলেছ।

    আমি চেয়েছিলাম তুমি তাই ভাবো।

    তার মানে? তুমি আমাকে খাঁটিয়ে নিতে চাও, কিন্তু বিশ্বাস কর না! হোমস, আরও একটু ভালো ব্যবহার তোমার কাছে আশা করেছিলাম।

    ভায়া, অন্যান্য কেসের মতো এ-কেসেও তুমি যা করেছ তা ভোলবার নয়। সামান্য একটু চালাকি অবশ্য করতে হয়েছে, ক্ষমা নিশ্চয় করবে। সত্যি কথা বলতে কী, এটুকু করতে হয়েছে কিছুটা তোমার কথা ভেবে। কী সাংঘাতিক বিপদের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি তুমি আঁচ করে ঘরে বসে থাকতে পারিনি। নিজে এসে সব দেখতে চেয়েছিলাম। স্যার হেনরি আর তোমার সঙ্গে থাকলে আমার দৃষ্টিভঙ্গি স্বভাবতই তোমার দৃষ্টিভঙ্গির মতোই হত। তা ছাড়া, আমার উপস্থিতিতে আমাদের দুর্ধর্ষ প্রতিপক্ষও হুঁশিয়ার হয়ে যেত। কিন্তু এখন কত সুবিধে দেখো। বাস্কারভিল হলে থাকলে যেখানে খুশি যেতে পারতাম না–এখানে থেকে পারি। কেউ জানেও না আমি কে। সুযোগের অপেক্ষায় ঘাপটি মেরে চুপটি করে বসে আছি। সংকট মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়ব সর্বশক্তি নিয়ে।

    কিন্তু আমাকে আঁধারে রাখা হল কেন?

    জানলে কি আমার বেশি উপকারে আসতে? আসতে না। উলটে আমার এখানকার আস্তানা হয়তো জানাজানি হয়ে যেত। নানা ধরনের খবর দেওয়ার জন্যে দৌড়ে আসতে, অথবা আমার থাকা খাওয়ার দুরবস্থা দেখে তোমার মতো হৃদয়বান মানুষ সহ্য করতে পারত না–আরামে যাতে থাকতে পারি সেইরকম টুকিটাকি জিনিস নিয়ে আসতে, অযথা একটা ঝুঁকি নিতে হত। এক্সপ্রেস অফিসে কার্টরাইট ছোকরার কথা মনে আছে? ওকে সঙ্গে এনেছি টুকটাক জিনিসপত্র এনে দেওয়ার জন্যে রুটি আর কাঁচা জামা প্যান্ট–এই তো আমার চাই। এর বেশি আর কী দরকার বলো? সেইসঙ্গে ওর বাড়তি একজোড়া চোখ আর ভারি চটপটে একজোড়া পায়ের সাহায্যও পেয়েছি। দুটোই সমান কাজে লেগেছে।

    তার মানে আমার রিপোের্টগুলো কোনো কাজেই লাগেনি? উত্তেজনায় গলা কেঁপে গেল আমার। মনে পড়ল কী কষ্টে লিখেছি প্রতিটি রিপোর্ট। অহংকারও হয়েছিল খুব।

    পকেট থেকে এক তাড়া কাগজ বার করল হোমস।

    ভায়া, এই দেখো তোমার রিপোের্ট। বিশ্বাস করো, প্রত্যেকটা লাইন খুঁটিয়ে পড়েছি। রিপোর্ট যাতে হাতে আসে, তার ব্যবস্থাও করেছিলাম চমৎকার শুধু যা একদিন দেরি হত। অসাধারণ দুর্বোধ্য এই কেসে তুমি যে দারুণ উদ্যম আর ধীশক্তি দেখিয়েছ, তার জন্যে আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন রইল।

    আমাকে ঠকানো হয়েছে, এই চিন্তাটা তখনও কুরে কুরে খাচ্ছে আমার ভেতরটা। কিন্তু হোমসের প্রাণঢালা প্রশংসায় রাগ জল হয়ে গেল। শুধু তাই নয়, বুঝলাম ভালোই করেছে। হোমস। জলায় সে আছে, এটা আমার না-জানা থাকায় বরং মঙ্গলই হয়েছে।

    এই তো চাই, আমার মুখের অন্ধকার কেটে যেতে দেখে বলল ও। এবার বলো মিসেস লরা লায়ন্সের সঙ্গে দেখা করে কী খবর জানলে। কুমবে ট্রেসি নিবাসিনী এই ভদ্রমহিলার কাছ থেকে অনেক খবরই যে পাওয়া যাবে, এটা আমি বুঝেছি বলেই ধরে নিয়েছিলাম ওখানে হানা দিয়েছ তুমি। সত্যি কথা বলতে কী, তুমি যদি আজকে না-যেতে, আমি নিজে কাল যেতাম।

    সূর্য অস্ত গেছে, বাদায় আঁধার ছড়িয়ে পড়ছে। হাড়-কাঁপানো বাতাস বইতে শুরু করেছে। কুটিরের ভেতরটা উষ্ণ বলে ভেতরে ঢুকলাম। গোধূলির আলোয় পাশাপাশি বসে হোমসকে বললাম কী কী কথা হয়েছে ভদ্রমহিলার সঙ্গে। শুনে ও এতই আগ্রহী হল যে কিছু ঘটনা দু-বার বলতে হল ওকে সন্তুষ্ট করার জন্যে।

    শেষ করার পর বলল, খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যাপারটা। অত্যন্ত জটিল এই ধাঁধার একটা জায়গার কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছিলাম না–এবার পেলাম। এই ভদ্রমহিলা আর স্টেপলটনের মধ্যে যে একটা নিবিড় ঘনিষ্ঠতা আছে নিশ্চয় তা উপলব্ধি করেছ?

    এ-রকম কোনো নিবিড় ঘনিষ্ঠতার খবর আমার জানা নেই।

    কিন্তু এ-ব্যাপারে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। ওদের মধ্যে দেখাসাক্ষাৎ হয়, চিঠি লেখালেখি হয় এবং পরিপূর্ণ বোঝাবুঝি আছে দু-জনের মধ্যে। ফলে, হাতে একটা শক্তিশালী অস্ত্র পাওয়া গেল। এই অস্ত্র হেনে স্ত্রী-কে যদি ওর কাছ থেকে আলাদা করা যেত—

    ওঁর স্ত্রী?

    অনেক খবরই তো দিলে, প্রতিদানে আমি তোমাকে একটা খবর দিচ্ছি। মিস স্টেপলটন নামে যিনি পরিচিতা, আসলে তিনি ওঁর স্ত্রী।

    বল কী হোমস! সঠিক জেনে বলছ তো? তাই যদি হয় তো বউয়ের প্রেমে স্যার হেনরিকে পড়তে দিলেন কীভাবে?

    প্রেমে পড়ার ফলে স্যার হেনরি ছাড়া আর কারো ক্ষতি হবে না। তুমি নিজেও লক্ষ করেছ, স্যার হেনরি যাতে স্ত্রীর সঙ্গে দৈহিক প্রেমের পর্যায়ে না-পৌঁছে যান, সে-ব্যাপারে কড়া নজর রেখেছেন স্টেপলটন। ফের বলছি শোনো, ভদ্রমহিলা ওঁর বোন নন, স্ত্রী।

    কিন্তু এত প্রতারণার কারণটা কী?

    বোন হিসেবে ভদ্রমহিলাকে আরও বেশি কাজে লাগানো যাবে বলে।

    ধাঁ করে অনেকগুলো ব্যাপার মাথা চাড়া দিল মনের মধ্যে। ভাষায় প্রকাশ করা যায় না এমনি অনেক সহজাত অনুভূতি আর আবছা সন্দেহ নিমেষের মধ্যে আকার পরিগ্রহ করে ঘিরে ধরল প্রকৃতিবিদকে। বর্ণহীন, আবেগহীন, উদাস লোকটার মধ্যে আচমকা দেখতে পেলাম একটা মহাভয়ংকরের প্রতিমূর্তি অপরিসীম ধৈর্য আর কৌশলের প্রতিমূর্তি–মুখে যার হাসি কিন্তু মনে যার খুনের সংকল্প হাতে যার প্রজাপতির জাল, আর মাথায় স্ত্রহ্যাট—অত্যন্ত মামুলি, সাদাসিদে, নির্বিরোধী মানুষ যেন ভাজা মাছটি উলটে খেতে জানে না।

    এই কি তাহলে আমাদের আসল শত্রু? এই লোকই কি ফেউয়ের মতো লেগেছিল পেছনে?

    ধাঁধার জবাব তাই বলছে।

    হুঁশিয়ারিটা তাহলে নিশ্চয় ওর স্ত্রীর লেখা!

    এক্কেবারে ঠিক।

    অর্ধ-দৃশ্য, অর্ধ-অনুমিত যেসব দানবিক শয়তানিতে পরিবৃত ছিলাম এতদিন, এবার তা অন্ধকারের মধ্যে থেকে স্পষ্ট চেহারা নিয়ে ফুটে উঠল আমার সামনে।

    হোমস, তুমি কি নিশ্চিত? ভদ্রমহিলা যে ওঁর স্ত্রী জানছ ক করে?

    তার স্বমুখে বলা আত্মজীবনীর একটা টুকরো থেকে। তোমার সঙ্গে প্রথম যেদিন তার আলাপ, সেদিন মুখ ফসকে বেরিয়ে গিয়েছিল কথাটা। তারপর নিশ্চয় পস্তেছেন পরে। উত্তর ইংলন্ডে এককালে স্কুলমাস্টার ছিলেন ভদ্রলোক। স্কুলমাস্টারের নাড়িনক্ষত্র জানার মতো সোজা কাজ আর নেই। শিক্ষাবিদদের একটা প্রতিষ্ঠান আছে। যেকোনো শিক্ষাব্রতী সম্বন্ধে খবর নিতে হলে এদের দ্বারস্থ হলেই হল। একটু খোঁজ নিতেই জানলাম, বর্বরোচিত পরিস্থিতির দরুন একটা স্কুলের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়ে এবং স্কুলের মালিক সস্ত্রীক উধাও হয়ে যান। তখন তাঁর নাম অন্য ছিল। কিন্তু চেহারার বিবরণ মিলে গেল। তারপর যখন জানলাম কীটবিদ্যায় পারঙ্গম ছিলেন ভদ্রলোক, সম্পূর্ণ হল শনাক্তকরণ।

    অন্ধকার সরে যাচ্ছে, কিন্তু এখনও অনেক অংশ ছায়া ঢাকা রয়েছে।

    প্রশ্ন করলাম, এই ভদ্রমহিলা ওঁর স্ত্রী হলে, মিসেস লরা লায়ন্স এর মধ্যে আসছে কী করে?

    তোমার নিজের গবেষণাতেই এ-প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেছে। ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা করে অনেক কিছুই স্পষ্ট করে তুলেছ। স্বামীর সঙ্গে ভদ্রমহিলার বিবাহ-বিচ্ছেদের ব্যবস্থা চলছে, এটা জানতাম না। তাহলেই দেখো, স্টেপলটনকে অবিবাহিত মনে করে তার স্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন সে দেখছে।

    স্বপ্ন যখন ধূলিসাৎ হবে?

    তখন তাকে আমাদের কাজে লাগানো যাবে। কালকে আমাদের প্রথম কাজ হবে তার সঙ্গে দেখা করা–দু-জনেই যাব। ওয়াটসন, তুমি কিন্তু দায়িত্ব থেকে অনেক দূরে সরে রয়েছ অনেকক্ষণ। তোমার এখন বাস্কারভিল হলে থাকা উচিত।

    পশ্চিম দিগন্তে শেষ রক্তরশ্মি ম্লান হয়ে মিলিয়ে গেছে। রাতের যবনিকা চেপে বসছে বাদার বুকে। বেগুনি আকাশে চিকমিক করছে কয়েকটা ক্ষীণ তারকা।

    উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, যাবার আগে আর একটা কথা জিজ্ঞেস করব, হোমস। তোমার আর আমার সঙ্গে এত লুকোচুরি খেলার কোনো প্রয়োজন আছে কী? মানে কি এসবের বলতে পারো? কী চায় সে? মতলবটা কী?

    গলার স্বর খাদে নেমে এল হোমসের। বললে, নরহত্যা, ওয়াটসন, ভেবেচিন্তে, ঠান্ডা মাথায়, প্ল্যানমাফিক অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে মানুষ খুন। তার জাল যেমন সেঁটে বসছে স্যার হেনরির চারধারে, আমার জালও তেমনি গুটিয়ে আসছে তার চারধারে তোমার সাহায্য পাওয়ায় বলতে পারো এখন তাকে হাতের মুঠোয় এনে ফেলেছি। ভয় পাচ্ছি শুধু একটা বিপদকে। আমরা আঘাত হানবার মতো প্রস্তুতি শেষ করার আগেই হয়তো উনি মরণ মার মেরে বসে থাকবেন। আর একদিন খুব জোর দু-দিনের মধ্যেই কেস সম্পূর্ণ করব। এই দুটো দিন তুমি স্যার হেনরিকে দু-হাতে আগলে রাখো–রুগণ শিশুকে মা যেভাবে চোখে চোখে রাখে, সেইভাবে তাকে চোখে চোখে রাখো। আজকের অভিযান অবশ্য অনেক কাজ দিয়েছে, কিন্তু আমার মন বলছে তুমি তার কাছছাড়া না-হলেই ভালো করতে ওই শোনো।

    বিকট বীভৎস একটা আর্ত চিৎকারে ফালা ফালা হয়ে গেল রাতের আকাশ–নিমেষ মধ্যে যেন খান খান হয়ে গেল বাদার নৈঃশব্দ্য রক্ত-জল-করা ভয়াল ভয়ংকর সেই চিৎকারে। নিঃসীম আতঙ্ক যেন হাহাকার হয়ে ফেটে পড়ল–ঠান্ডা বরফের মতো যেন জমে গেল আমার ধমনীর রক্ত।

    বললাম নিরুদ্ধ নিশ্বাসে, হা ভগবান! এ কী? এ কীসের আওয়াজ?

    ছিলে-ছেঁড়া ধনুকের মতো লাফিয়ে উঠেছিল হোমস। কুটিরের দ্বার দেশে দেখলাম ওর ক্রীড়াপটু দেহরেখা। কাঁধ বেঁকিয়ে, মুণ্ড বার করে উঁকি মারছে নীরন্ধ্র তমিস্রার মধ্যে।

    চুপ! একদম চুপ! বলল ফিসফিস করে।

    কলজে-ছেড়া তীব্রতার জন্যে অত উচ্চ-নিনাদী শুনিয়েছিল চিৎকারটা চিৎকারের উৎস ছিল কিন্তু ছায়াচ্ছন্ন প্রান্তরের মধ্যে কোথাও। এবার তা ফেটে পড়ল কানের ওপর–আরও কাছে, আরও জোরে, আরও ব্যাকুলভাবে।

    কোথায় বলো তো? ফিসফিস করে বলে হোমস। রোমাঞ্চিত কণ্ঠস্বর শুনেই বুঝলাম ওর মতো লৌহকঠিন মানুষের অন্তরাত্মাও শিহরিত হয়েছে এই চিৎকারে।

    ওয়াটসন, কোত্থেকে আসছে আওয়াজটা?

    ওইদিক থেকে মনে হচ্ছে, অন্ধকারের দিকে আঙুল তুলে বললাম আমি।

    না, এইদিকে!

    আবার নিস্তব্ধ রাতের বুক বিদীর্ণ করে তরঙ্গাকারে দিক হতে দিকে ছুটে গেল অবর্ণনীয় সেই চিৎকার–আগের চাইতেও আকুল হাহাকার যেন আরও কাছে চলে এসেছে, আরও জোরে শোনা যাচ্ছে। সেইসঙ্গে শোনা যাচ্ছে একটা নতুন শব্দ একটা অনুচ্চ, গভীর গুরু গুরু শব্দ, সংগীতময় অথচ রক্তহিম-করা, নিরন্তর সমুদ্রোচ্ছ্বাসের মতো সে-শব্দ নীচু খাদে উঠছে আর নামছে বিরামবিহীনভাবে।

    হাউন্ড! চেঁচিয়ে ওঠে হোমস। চলে এসো, ওয়াটসন, চলে এসো! হে ভগবান, দেরি না হয়!

    বাদার ওপর দিয়ে নক্ষত্ৰবেগে ছুটতে শুরু করেছে হোমস। পেছন পেছন ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছি আমি। আচম্বিতে আমাদের সামনেই কোথাও এবড়োখেবড়ো পাহাড়ি জমির দিক থেকে ভেসে এল নিঃসীম নৈরাশ্যের করুণ শেষ আর্ত চিৎকার, আর তারপরেই একটা চাপা, ভারী ধপাস শব্দ। থমকে দাঁড়িয়ে গিয়ে কান খাড়া করে রইলাম। বাতাসহীন রাতের নিথর নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে শোনা গেল না আর কোনো শব্দ।

    দেখলাম, বিক্ষিপ্তচিত্ত পুরুষের মতো কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে হোমস। সজোরে পা ঠুকল মাটিতে।

    ওয়াটসন, হারিয়ে দিল আমাদের। বড়ো দেরি করে ফেলেছি।

    না, না কখনোই না!

    হাত গুটিয়ে বসে থাকাটাই আমার মুখর্তা হয়েছে। ওয়াটসন, তুমিও দেখো, ওঁকে ছেড়ে আসার পরিণামটা কী দাঁড়াল! কিন্তু যদি ওঁর সর্বনাশ হয়ে গিয়ে থাকে, শোধ আমি নেবই নেব।

    অন্ধের মতো ছুটলাম বিষঃ অন্ধকারের বুক চিরে, বড়ো বড়ো গোলাকার পাথরের মাঝখান দিয়ে কখনো হাতড়ে, কখনো কাঁটাঝোপে হুমড়ি খেয়ে হাঁচড়পাঁচড় করে বেরিয়ে এসে কখনো হাঁপাতে হাঁপাতে ঢাল বেয়ে পাহাড়ে উঠে, আবার তিরবেগে নেমে গিয়ে ছুটতে লাগলাম একই দিকে যেদিক থেকে ভেসে এসেছে রক্ত-জল-করা চিৎকার। উঁচু জায়গায় উঠলেই সাগ্রহে আশপাশ দেখেছে হোমস, জলার গাঢ় কালোছায়ার বুকে সঞ্চরমাণ কিছুই চোখে পড়েনি।

    কিছু দেখতে পাচ্ছো?

    কিছু না।

    ওই শোনো! ও কী?

    একটা চাপা গোঙানি ভেসে এল কানে। বাঁ-দিক থেকে আসছে আওয়াজটা! সেদিকে একটা পাথুরে শিরা উঁচু পাহাড়ের আকার নিয়েছে, প্রস্তর-আকীর্ণ ঢালের ওপর যেন ঝুঁকে রয়েছে। এবড়োখেবড়ো খোঁচা-খোঁচা গড়ানের ওপর ডানা ছড়িয়ে পড়ে থাকা ইগলপাখির মতো কালো একটা বস্তু বিশৃঙ্খল আকারে পড়ে রয়েছে। বেগে নীচে নামতে নামতে দেখলাম জিনিসটা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অস্পষ্ট রেখা থেকে একটা নির্দিষ্ট আকার দেখা দিল। হুমড়ি খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে একটা লোক, মাথাটা বেঁকে বীভৎসভাবে ঢুকে রয়েছে দেহের নীচে, গোল হয়ে গিয়েছে দু-কাঁধ এবং সমস্ত দেহটা এমনভাবে ধনুকের মতন বেঁকে রয়েছে যেন এই বুঝি ডিগবাজি খেয়ে ছিটকে যাবে। কিম্ভুতকিমাকার ওই ভঙ্গিমা দেখেই কিন্তু নিমেষ মধ্যে বুঝে নিলাম গোঙানিটা কীসের প্রাণপাখি ছেড়ে গেছে দেহপিঞ্জর। কালো ছায়ামূর্তি এখন নিস্পন্দ, নিস্তব্ধ। ঝুঁকে রইলাম বটে, কিন্তু এতটুকু নড়াচড়ার লক্ষ্মণ দেখলাম না। গায়ে হাত রেখেই ভয়-বিকট গলায় পেঁচিয়ে হাত তুলে নিল হোমস। দেশলাই জ্বালাল পরক্ষণে। দেখলাম, চাপ চাপ রক্ত লেগে আঙুলে; ডেলা-ডেলা বিকট পদার্থ ছড়িয়ে পড়ছে ঘেঁতলানো করোটির চারপাশে; সেইসঙ্গে দেখলাম আরও একটা জিনিস। দেখেই অবশ হয়ে এল আমাদের দুজনেরই হৃদয়ের অন্তস্থল পর্যন্ত দেখলাম, স্যার হেনরি বাস্কারভিলের দেহ!

    অদ্ভুত লালচে রঙের এই টুইড স্যুট যে ভোলবার নয়। প্রথম যেদিন বেকার স্ট্রিটে এসেছিলেন উনি, এই স্যুট পরেছিলেন–দু-জনেরই স্পষ্ট মনে আছে। দেশলাইয়ের আলোয় অল্পক্ষণের জন্যে হলেও পরিষ্কার দেখলাম সেই বেশ, তারপরেই দপ দপ করে উঠে দেশলাই গেল নিভে, সেইসঙ্গে সব আশা মুছে গেল অন্তর থেকে। গুঙিয়ে উঠল হোমস। অন্ধকারের মধ্যেও দেখলাম চক চক করছে তার মুখ।

    পশু কোথাকার! দু-হাত মুঠি পাকিয়ে বললাম অব্যক্ত বেদনায়। হোমস! ওঁকে ছেড়ে আসার জন্যেই আজ এই ঘটনা ঘটল–এ আমি জীবনে ভুলতে পারব না।

    ওয়াটসন, তোমার চেয়ে আমার দোষই বেশি। কেসকে নিটোল করতে গিয়ে, সম্পূর্ণ করতে গিয়ে, মক্কেলের জীবন নাশ ঘটিয়েছি ওঁর দিকে তেমন নজরই দিইনি। এর চাইতে বড়ো আঘাত আমার কর্মজীবনে আর পাইনি, ওয়াটসন। কিন্তু কী করে যে এত বারণ করা সত্ত্বেও প্রাণ হাতে নিয়ে উনি একলা বেরোলেন জলায়?

    চিৎকারটা শুনেও যদি বাঁচাতে পারতাম! উঁঃ, কী ভীষণ চীৎকার! বুকফাটা হাহাকার শুনেও তো তাকে বাঁচাতে পারলাম না। কোথায়… কোথায় সেই জানোয়ার হাউন্ড? যার তাড়া খেয়ে শেষ পর্যন্ত মরতে হল স্যার হেনরিকে? নিশ্চয় এই মুহূর্তে ওত পেতে রয়েছে পাথরের কোনো খাঁজে। স্টেপলটনই-বা কোথায়? জবাবদিহি তো ওঁকেই করতে হবে।

    করবেন। আমি করিয়ে ছাড়ব। খুড়ো-ভাইপো খুন হয়ে গেলেন পর-পর। একজন শুধু জানোয়ারটাকে দেখেই আঁতকে উঠে মারা গেছেন ভেবেছিলেন অলৌকিক ব্যাপার। আর একজন তাড়া খেয়ে উন্মাদের মতো পালাতে গিয়ে ঘাড় গুঁজে পড়ে শেষ হয়ে গেলেন। মানুষ আর জানোয়ারটার মধ্যে সম্পর্ক সূত্রটা এবার প্রমাণ করতে হবে আমাদের। আওয়াজটুকুই কেবল আমরা শুনেছি তার বেশি কোনো প্রমাণ আর নেই। কেননা, স্যার হেনরি পাহাড় থেকে আছাড় খেয়ে মারা গেছেন। কিন্তু যত ধূর্তই সে হোক না কেন, চল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আমি আমার পায়ের তলায় এনে ফেলব।

    বিকৃত শবদেহের দু-পাশে তিক্ত অন্তঃকরণে দাঁড়িয়ে রইলাম দু-জনে। অকস্মাৎ এবং অপরিবর্তনীয় এই বিপর্যয়ে অভিভূত চিত্তে দাঁড়িয়ে রইলাম দু-জনে। বৃথা গেল দীর্ঘদিনের এত পরিশ্রম। চাঁদ উঠল আকাশে। যে পাহাড়ের ওপর থেকে প্রিয় বন্ধুর পতন ও মৃত্যু ঘটেছে, উঠলাম সেই পাহাড়ে। চূড়ায় দাঁড়িয়ে দৃষ্টি সঞ্চালন করলাম অর্ধেক রুপোলি অর্ধেক বিষণ্ণ ছায়াচ্ছন্ন বাদার ওপর দিয়ে। অনেক দূরে বেশ কয়েক মাইল দূরে একটিমাত্র নিষ্কম্প হলুদ আলো জ্বল জ্বল করছে। স্টেপলটনের নিরালা বাড়ির আলো নিশ্চয় অন্য কোনো বাড়ির আলো হতেই পারে না। বিষম আক্রোশে দাঁতে দাঁত পিষে গর্জে উঠলাম সেইদিকে চেয়ে।

    মুষ্টি আস্ফালন করে বললাম, এখুনি গ্রেপ্তার করলেই তো হয়?

    কেস এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। লোকটা অপরিসীম ধূর্ত আর হুঁশিয়ার। কী জেনে ফেলেছি, সেটা বড় কথা নয়–কী প্রমাণ করতে পারব, সেইটাই আসল কথা। একটু ভুল করলেই পগারপার হতে পারে নাটের গুরু।

    তবে করবটা কী?

    করবার মতো অনেক কাজ রয়েছে আগামীকালের জন্যে। রাত্রে বাকি শুধু একটা কাজ বন্ধুকৃত্য।

    খাড়াই পাহাড় বেয়ে নেমে এলাম দুজনে। রুপোর মতো ঝকঝকে পাথরের বুকে পড়ে দেহটা কালো এবং স্পষ্ট। দোমড়ানো মোচড়ানো অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রকটিত আতীব্র বেদনাবোধ চোখে জল এনে দিল আমার যন্ত্রণা সঞ্চারিত হল আমার মধ্যেও।

    হোমস, লোকজন ডাকা যাক! দু-জনে মিলে এতটা পথ বাস্কারভিল হলে ওঁকে বয়ে নিয়ে যেতে পারব না। আরে গেল যা! পাগল হয়ে গেলে নাকি?

    সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠে মৃতদেহের ওপর ঝুঁকে পড়েছিল হোমস। এখন ধেই ধেই করে নাচছে। হো-হহা করে হাসছে আর আমার দু-হাত ধরে মোচড় দিচ্ছে। এই কি সেই আত্মসংযত, কঠোর-প্রকৃতি শার্লক হোমস? এ যে ছাই চাপা আগুন!

    দাড়ি! দাড়ি! লোকটার দাড়ি আছে।

    দাড়ি?

    ব্যারনেট নয়–ব্যারনেট নয়–এ হল –আরে, এ যে আমার প্রতিবেশী–পলাতক কয়েদি!

    ক্ষিপ্তের মতো চিৎ করে শোয়ালাম দেহটা। রক্ত-চোয়ানো একটা দাড়ি উঁচিয়ে রইল স্নিগ্ধ, শীতল, সুস্পষ্ট চাঁদের পানে। ভুল হবার জো নেই–ওই তো সেই কোটরাপ্রবিষ্ট পাশবিক চোখ আর ঝুঁকে-পড়া অদ্ভুত কপাল। মোমবাতির আলোয় পাথরের ওপর থেকে আমার পানে জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছিল একটা মুখ ঘৃণ্য অপরাধী সেলডেনের মুখ।

    পরের মুহূর্তেই সমস্ত ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল আমার কাছে। মনে পড়ল ব্যারনেটের কথা–পুরোনো পোশাক দিয়েছিলেন ব্যারিমুরকে। ব্যারিমুর দিয়েছে সেলডেনকে পালানোর সুবিধের জন্যে। বুট, শার্ট, ক্যাপ–সবই স্যার হেনরির। অত্যন্ত মর্মন্তুদ বিয়োগান্তক দৃশ্য সন্দেহ নেই। কিন্তু বিধির বিধানে শেষ পর্যন্ত স্বদেশি আইনের কবলেই প্রাণবিয়োগ ঘটল তার। খুলে বললাম হোমসকে আনন্দে, কৃতজ্ঞতায় টইটম্বুর হয়ে রইল হৃদয়।

    সব শুনে ও বলল, তাই বলো। বেচারির মৃত্যুর কারণ তাহলে এই পোশাক। পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে স্যার হেনরিরই ব্যবহার করা কোনো জিনিসের গন্ধ শুকিয়ে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল হাউন্ডটাকে খুব সম্ভব হোটেল থেকে খোয়া যাওয়া সেই বুটটা ধরা হয়েছিল ওর নাকের সামনে একই গন্ধ এর জামা প্যান্ট-বুটে পেয়ে তাড়া করে এনেছে এতদুর। এ-ব্যাপারে একটা অত্যন্ত অসাধারণ রহস্য কিন্তু এখনও পরিষ্কার হল না। অন্ধকারের মধ্যে সেলডেন বুঝল কী করে যে হাউন্ড তাড়া করেছে?

    ডাক শুনে।

    বাদার বুকে হাউন্ডের ডাক শুনলেই ওর মতো ডাকাবুকো কয়েদি আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে এমন উদ্ভান্তের মতো খানা-খন্দ পাহাড় টপকে আকাশফাটা চিৎকার ছেড়ে দৌড়ায় না–পলাতক কয়েদি কখনন কুকুরের তাড়া খেয়ে চেঁচিয়ে লোক জড়ো করে নিজেকে ধরিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি নেয় না। চেঁচানির ধরন শুনে মনে হল অনেকদ্দূর থেকে অনেকক্ষণ পর্যন্ত ছুটেছে পেছনে হাউন্ড তাড়া করেছে টের পেয়ে। টের পেল কী করে?

    তার চাইতেও বড়ো যে-রহস্যটা এখনও দুর্বোধ্য রয়ে গেল আমার কাছে তা হল এই হাউন্ড। সবার সব ধারণা যদি সঠিক বলেই ধরে নেওয়া হয়—

    আমি কিছুই ধরে নিই না।

    বেশ তো, আমার প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু রাতেই হাউন্ডটাকে ছেড়ে দেওয়া হয় কেন? জলার বুকে নিশ্চয় সবসময়ে ছাড়া থাকে না যেখানে খুশি ছুটে বেড়ায় না। স্যার হেনরি জলায় আছেন না-জানলে কখনোই হাউন্ড লেলিয়ে দিত না স্টেপলটন।

    তোমার আর আমার সমস্যার মধ্যে আমারটাই কিন্তু আরও দুর্ধর্ষ কেননা তোমার সমস্যার সমাধান শিগগিরই করে ফেলব–চিররহস্য থেকে যাবে আমারটা। যাই হোক, আপাতত সমস্যা এই দেহটা নিয়ে। কী করি বল তো? শেয়াল দাঁড়কাকদের খপ্পরে ফেলে রেখে যাওয়া যায় না।

    আমি বলি কী, যেকোনো একটা কুটিরের মধ্যে রেখে দিয়ে চলো পুলিশকে খবর দিই। ঠিক বলেছ। কুটির পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যেতে পারব দু-জনে। আরে! আরে! ওয়াটসন, এ আবার কী? কী আশ্চর্য স্পর্ধা দেখেছ? নাটের গুরু নিজেই আসছে যে! খবরদার, তোমার ভেতরের সন্দেহ যেন একদম প্রকাশ না-পায়–একটা বেস কথাও যেন মুখ দিয়ে না-বেরোয়, সমস্ত প্ল্যানটা তাহলে মাঠে মারা যাবে।

    জলার ওপর দিয়ে এগিয়ে আসছে একটা মূর্তি। জ্বলন্ত চুরুটের ম্যাড়মেড়ে লাল আভা দেখা যাচ্ছে। চাদের আলো পড়েছে মাথায়, দূর থেকেও চেনা যাচ্ছে প্রকৃতিবিদের কর্মঠ আকৃতি–স্ফুর্তিবাজ চালচলন। আমাদের দেখেই থমকে গেলেন, পরমুহূর্তেই এগিয়ে এলেন।

    আরে, ডক্টর ওয়াটসন নাকি? এত রাতে আপনাকে বাদায় দেখব আশাই করিনি। কিন্তু একী! কী সর্বনাশ! কে জখম হল? স্যার হেনরি নাকি?

    বেগে আমাদের পাশ দিয়ে ছুটে গিয়ে মৃতদেহের ওপর ঝুঁকে পড়লেন স্টেপলটন। সশব্দে নিশ্বাস নেওয়ার চকিত আওয়াজ শুনলাম, চুরুট খসে পড়ল আঙুলের ফাঁক থেকে।

    বললেন তোতলাতে তোতলাতে, এ—একে?

    সেলডেন প্রিন্সটাউন জেল থেকে যে পালিয়েছিল।

    পাঙাশপানা বিকট মুখ ফিরিয়ে আমাদের দিকে তাকালেন সেলডেন। কিন্তু অসম্ভব মনোবল তার। অদ্ভুত কায়দার বিস্ময় আর নৈরাশ্যবোধকে নিমেষে দমিয়ে ফেললেন। সচকিত তীক্ষ্ণ্ণ চোখে পর্যায়ক্রমে তাকালেন আমার আর হোমসের পানে।

    কী সর্বনাশ! কী যাচ্ছেতাই ব্যাপার! মারা গেল কীভাবে?

    পাহাড় থেকে পড়ে মাথার খুলি গুঁড়িয়ে গেছে মনে হচ্ছে। বাদায় বেড়াচ্ছিলাম আমরা দুই বন্ধু, চিৎকার শুনে এসে দেখি এই কাণ্ড।

    চিৎকার আমিও শুনেছিলাম। সেইজন্যেই ছুটে এসেছি। স্যার হেনরির কথা ভেবে বসে থাকতে পারলাম না।

    স্যার হেনরির কথাই বিশেষ করে ভাবলেন? প্রশ্নটা ফস করে বেরিয়ে গেল মুখ দিয়ে।

    আমি তাকে আসতে বলেছিলাম বলে। না-আসায় অবাক হয়েছিলাম। বাদার বুকে। ওইরকম চিৎকার শুনে ভয় হল–বিপদে পড়লেন নাকি? ভালো কথা–দৃষ্টিশর চকিত ভঙ্গিমায় আমার মুখ থেকে সরে গিয়ে নিক্ষিপ্ত হল হোমসের মুখের ওপর, চিৎকার ছাড়া আর কিছু শুনেছিলেন?

    না, বললে হোমস; আপনি শুনেছেন?

    না।

    তাহলে জিজ্ঞেস করলেন কেন?

    চাষাদের গালগল্পর কথা কে না-জানে বলুন। জলায় নাকি কুকুর-ভূত টহল দেয়। গভীর রাতে নাকি তার ডাক শোনা যায়। আজ রাত্রে সে-রকম কোনো আওয়াজ স্বকর্ণে কেউ শুনেছে কিনা খোঁজ নিচ্ছিলাম।

    সে-রকম কোনো আওয়াজই শুনিনি, বললাম আমি।

    বেচারার মৃত্যুর কারণটা কি অনুমান করেছেন?

    উদবেগে আর দিনরাত খোলা আকাশের তলায় থেকে মাথা ঠিক রাখতে পারেনি। পাগলের মতো জলায় দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে পা ফসকে পড়ে গিয়ে ঘাড় ভেঙে ফেলেছে।

    খুবই যুক্তিসংগত অনুমান, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললে স্টেপলটন। আমার চোখে তা স্বস্তির নিশ্বাস বলেই মনে হল। মি. শার্লক হোমস, আপনার কী মনে হয়?

    বাতাসে মাথা ঠুকে অভিবাদন জানাল বন্ধুবর।

    বলল, আপনি দেখছি খুব তাড়াতাড়ি চিনে ফেলেন।

    ডক্টর ওয়াটসন আসবার পর থেকেই এ-অঞ্চলে আপনার আবির্ভাবের প্রত্যাশায় রয়েছি আমরা সকলেই। এসেই দেখলেন ট্র্যাজেডি।

    তা ঠিক। আমার বিশ্বাস ওয়াটসন ঠিকই বলছে–মর্মন্তুদ এই মৃত্যুর উপর্যুক্ত কারণ দর্শিয়েছে। অপ্রীতিকর স্মৃতি নিয়ে কালকেই ফিরে যেতে হবে লন্ডনে।

    কালকেই ফিরে যাবেন?

    সেইরকমই ইচ্ছে।

    এখানকার গোলমেলে ব্যাপারগুলোয় কিছু আলোকপাত করতে পারলেন?

    কাঁধ ঝাঁকি দিল হোমস। সাফল্যের আশা সবাই করে, কিন্তু সাফল্য জোটে ক-জনের ভাগ্যে? তদন্তকারীর একান্ত দরকার ঘটনা—উপকথা নয়, কিংবদন্তি নয়, গুজব নয়। এ-কেসটা সেদিক দিয়ে একেবারেই যাচ্ছেতাই।

    খুব খোলাখুলি এবং অত্যন্ত নির্লিপ্ত ভঙ্গিমায় কথাগুলো বলে গেল বন্ধুবর। স্টেপলটন কিন্তু তবুও খরখরে চোখে চেয়ে রইলেন তার পানে। তারপর ফিরলেন আমার দিকে।

    একে আমার বাড়ি নিয়ে যাওয়াই উচিত ছিল, কিন্তু দেখে আঁতকে উঠতে পারে আমার বোন। আমার মনে হয় গায়ে কিছু চাপা দিয়ে রাখলে সকাল পর্যন্ত নিশ্চিন্ত থাকা যাবে।

    সেই ব্যবস্থাই হল। স্টেপলটনের সনির্বন্ধ আমন্ত্রণ সবিনয়ে প্রত্যখ্যান করে হোমস আর আমি রওনা হলাম বাস্কারভিল হল অভিমুখে। একলাই বাড়ি ফিরে গেল প্রকৃতিবিদ। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম, বিশাল বাদার ওপরে তার ধীর সঞ্চরমাণ মূর্তি, সেইসঙ্গে দেখলাম চন্দ্রকিরণ বিধৌত রুপোলি পাহাড়ের ঢালে একটা কালো ধ্যাবড়া দাগ পলাতক কয়েদির নশ্বর দেহ।

    শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি টক্কর আরম্ভ হল, একত্রে বাদার ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললে হোমস। লোকটার স্নায়ুর জোরটা দেখলে! ষড়যন্ত্র করে যাকে সরিয়েছে, সে যে আসল শিকার নয়–এটা চোখের সামনে দেখেও কীভাবে সামলে নিল নিজেকে! সাংঘাতিক এই মানসিক আঘাতে দেহমন পঙ্গু হয়ে যাওয়া উচিত কিন্তু ওর কিছু হল? ওয়াটসন, লন্ডনেও বলেছি তোমায়, অবার বলছি এখানে আমাদের ইস্পাত শক্তির সঙ্গে সমানে পাল্লা দেওয়ার মতো এহেন শত্ৰু জীবনে আর দেখিনি।

    তোমাকে দেখে ফেলল, এইটাই যা দুঃখ।

    আমারও দুঃখ হয়েছিল প্রথমটায়। কিন্তু এড়ানোর পথ আর ছিল না।

    তুমি যে এখানে, ও তা জেনে ফেলেছে। এর ফলে ওর ষড়যন্ত্র কোন পথে চলবে বলে মনে হয় তোমার?

    হয় আরও সতর্ক হবে, না হয় মরিয়ার মতো দুম করে কিছু একটা করে বসবে। অধিকাংশ অপরাধীর মতোই নিজের ওপর অত্যধিক আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভাববে হয়তো আমাদের বেবাক বোকা বানাতে পেরেছে।

    এক্ষুনি গ্রেপ্তার করছি না কেন? ভায়া ওয়াটসন, ঠুটো জগন্নাথ হওয়ার জন্যে সৃষ্টিকর্তা তোমায় গড়েননি। অদম্য প্রাণচাঞ্চল্য টগবগ করে ফুটছে তোমার মধ্যে এ-জিনিস তোমার সহজাত। তর্কের খাতিরে ধরো আজ রাতেই ওঁকে গ্রেপ্তার করে ফেললাম। কিন্তু সেটা করে কী লাভটা হবে বলতে পারো? ওঁর বিরুদ্ধে কিছুই আমরা প্রমাণ করতে পারব না। পুরো চক্রান্তটার এইটাই হল মহাশয়তানিসুচতুর ধড়িবাজ! মানুষকে দিয়ে মানুষ মারার ষড়যন্ত্র করলে না হয় একটা প্রমাণ পাওয়া যেত–কিন্তু বিরাট একটা কুকুরকে কাঠগড়ায় টেনে নিয়ে কুকুরের মালিকের গলায় তো আর ফাঁসির দড়ি গলাতে পারব না।

    কিন্তু কেসটা তো খাড়া করে ফেলেছি।

    কেসের ছায়া পর্যন্ত খাড়া করতে পারিনি শুধু অনুমান আর কল্পনা করেছি। প্রমাণহীন গল্প নিয়ে কোর্টে গেলে টিটকিরি মেরে তাড়িয়ে দেবে।

    স্যার চার্লসের মৃত্যুটা তো মিথ্যে নয়।

    মৃত অবস্থায় তাকে পাওয়া গেছে কিন্তু সারাশরীরে কোনো দাগ পাওয়া যায়নি। তুমি আমি জানি নিদারুণ ভয়ে তার প্রাণপাখি খাঁচাছাড়া হয়েছিল–ভয়টা কেন পেয়েছিলেন তাও জানি। কিন্তু বারোজন নিরেট জুরিকে তা বোঝাব কী করে বলতে পারো? হাউন্ডের কোনো চিহ্ন কি সেখানে ছিল? কোথায় তার ছুঁচোলো দাঁতের দাগ? মড়াকে হাউন্ড কামড়ায় না ঠিকই–স্যার চার্লসের নাগাল ধরার আগেই স্রেফ ভয়ে তিনি মারা গেছিলেন। কিন্তু এসব তো প্রমাণ করতে হবে। প্রমাণ করবার অবস্থায় এখনও আমরা পৌঁছোইনি।

    বেশ তো, আজ রাতেও কি পৌঁছোইনি?

    না, আজ রাতেও অবস্থার বিশেষ উন্নতি ঘটেনি! হাউন্ড, আর একটা মানুষের মৃত্যুর মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্কসূত্র এবারও নেই। দু-জনেই কেউই স্বচক্ষে দেখিনি হাউন্ডটাকে। শুধু ডাক শুনেছি; কিন্তু সে যে এই বেচারাকে তাড়া করেছিল, তা প্রমাণ করতে পারব না, মোটিভ একেবারেই নেই। না, ভায়া, না; এই মুহূর্তে কেস এখনও কঁচা, এ-সত্য তোমাকে স্বীকার করতেই হবে। কেসকে পাকা করার জন্যে যেকোনো ঝুঁকি নিয়েও আরও অপেক্ষা করতে হবে।

    কী করবে বলে ঠিক করেছ?

    পরিস্থিতিটা স্পষ্ট করে তুলতে পারে কেবল মিসেস লরা লায়ন্স–বিরাট ভরসা রয়েছে তার ওপর। এ ছাড়া আমার নিজস্ব একটা প্ল্যানও আছে। কালকের দিনটা অনেক খারাপের মধ্যে দিয়ে যাবে ঠিকই; কিন্তু আশা আছে দিন ফুরোনোর আগেই পরিস্থিতি আয়ত্তে আনব।

    এর বেশি আর কিছু ওর কাছ থেকে বার করতে পারলাম না। বাস্কারভিল হল পর্যন্ত সমস্ত রাস্তা চিন্তায় ড়ুবে রইল হোমস।

    ভেতরে আসবে নাকি?

    আসব। আর লুকোছাপার কারণ দেখছি না। কিন্তু আমার শেষ কথাটা শুনে রাখো, ওয়াটসন। হাউন্ড সম্পর্কে কোনো কথা বলবে না স্যার হেনরিকে। সেলডেনের মৃত্যুর কারণটা স্টেপলটন যেমন বিশ্বাস করাতে চেয়েছিলেন আমাদের, ওঁদের ভাবতে দাও সেইভাবে যদ্র মনে পড়ে রিপোর্টে তুমি লিখেছিলে, আগামীকাল স্টেপলটনদের বাড়িতে খেতে যাবেন স্যার হেনরি। তখনই অতি কঠোর পরীক্ষা হয়ে যাবে তার স্নায়ুশক্তির–তার আগে আর পরীক্ষা নিতে যেয়ো না।

    খেতে তো আমিও যাচ্ছি।

    অছিলা করে ওঁকে একলাই পাঠাবে তুমি যাবে না। এ-ব্যবস্থা হয়ে যাবেখন। যাই হোক, দেরি অনেক হল; ডিনার না-পেলেও নৈশ-আহার পাওয়া যাবে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশার্লক হোমস সমগ্র ২ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন
    Next Article When the World Screamed – Arthur Conan Doyle

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }