Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শার্লক হোমস সমগ্র ১ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    লেখক এক পাতা গল্প813 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১৪. বাস্কারভিলস হাউন্ড

    শার্লক হোমসের একটা ত্রুটি আছে। জানি না আর কেউ একে ত্রুটি বলবেন কিনা। পরিকল্পনা পরিপূর্ণভাবে সফল না-হওয়া পর্যন্ত সে-সম্বন্ধে তিলমাত্র আভাস দিতে নারাজ। এর জন্য কিছুটা দায়ী ওর কর্তৃত্বব্যঞ্জক প্রকৃতি–ধারেকাছে যারা থাকে তাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার আর তাদের চিত্তে চমক সৃষ্টি ওর স্বভাবের একটা বড় বৈশিষ্ট্য। বাকিটা এসেছে ওর পেশাগত সতর্কতা থেকে কোনো ফাঁক রাখতে সে রাজি নয়। ফলে সহযোগী আর অনুচরদের মনে চাপ পড়ে প্রচণ্ড উৎকণ্ঠায় ছটফট করতে থাকে ভেতরটা। এহেন মানসিক অস্থিরতায় বহুবার ভুগেছি এর আগে কিন্তু সেদিনের মতো নয়–অন্ধকারে গা ঢেকে গাড়িতে দীর্ঘ পথ পরিক্রমার সময়ে আমার মনের অবস্থা ভাষায় বোঝাতে পারব না। সামনেই সুকঠিন পরীক্ষা অগ্নিপরীক্ষাই বলা উচিত। শেষ চাল চালতে চলেছি। অথচ সে-বিষয়ে টু শব্দটি করছে না হোমস। কীভাবে বাজিমাত করবে, কী করবে না-করবে তা মনে মনে আঁচ করা ছাড়া আর পথ দেখছি না। ঠান্ডা হিম বাতাস মুখে আছড়ে পড়তেই রোমাঞ্চিত হল প্রতিটি স্নায়ু আসন্ন রোমাঞ্চর সম্ভাবনায় শিউরে উঠল প্রতিটি অণুপরমাণু। অন্ধকারে দু-পাশে জেগে উঠল সংকীর্ণ রাস্তার পর রাস্তা। বুঝলাম এসে গেছে রহস্যাবৃত বাদা। কদম কদম ঘোড়া এগোচ্ছে, আমরাও কদম কদম এগোচ্ছি চূড়ান্ত অ্যাডভেঞ্চার অভিমুখে। চাকা ঘুরছে এবং প্রতিটি ঘূর্ণনের সঙ্গেসঙ্গে কাছে এগিয়ে আসছে অজ্ঞাত ভয়ংকর।

    দু-চাকার খোলা ঘোড়ার গাড়িটা ভাড়া করা। চালক বসে থাকায় প্রাণ খুলে কথা বলতে পারছি না। বাধ্য হয়ে সময় কাটাচ্ছি অকিঞ্চিৎকর কথাবার্তায়। অথচ তখন উৎকণ্ঠা, আবেগ আর আসন্ন সম্ভাবনার চিন্তায় টান টান হয়ে রয়েছে প্রতিটি স্নায়ু। ফ্র্যাঙ্কল্যান্ডের বাড়ি পেরিয়ে আসার পর যখন বুঝলাম বাস্কারভিল হল এসে গেছে এবং কর্মক্ষেত্র আর দূরে নেই–তখন কিছুটা রেহাই পেলাম অস্বাভাবিক এই সংযমের কবল থেকে। দরজা পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে আর গেলাম না, নেমে পড়লাম ইউ-বীথির গেটে। ভাড়া মিটিয়ে দিলাম। তৎক্ষণাৎ গাড়ি নিয়ে কুমবে ট্রেসি ফিরে যেতে হুকুম দিলাম গাড়োয়ানকে। তারপর পদব্রজে রওনা হলাম মেরিপিট হাউস অভিমুখে।।

    লেসট্রেড, তুমি সশস্ত্র ?

    হাসল খর্বকায় ডিটেকটিভ। ট্রাউজার্স যতক্ষণ আছে, ট্রাউজার্সে একটা হিপপকেটও আছে। হিপপকেট যতক্ষণ আছে, তার মধ্যে একটা বস্তুও আছে।

    ভালো! আমি আর আমার এই বন্ধুটিও জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত হয়ে এসেছি।

    মি. হোমস, এ-ব্যাপারে অনেক, এগিয়ে গেছেন দেখছি। এখন কীসের খেলা খেলতে চলেছেন?

    অপেক্ষা করার খেলা।

    যাই বলুন, জায়গাটা খুব আহামরি নয়–প্রাণে পুলক জাগানোর মতো নয়, গ্রিমপেন মায়ারের ওপর জমে থাকা বিশাল কুয়াশা-সরোবর আর পাহাড়ের পর পাহাড়ের বিষাদকালো চালগুলোর দিকে তাকিয়ে শিউরে উঠে বললে ডিটেকটিভ। সামনেই একটা বাড়ির আলো দেখা যাচ্ছে।

    ওই হল মেরিপিট হাউস–আমাদের যাত্রাপথের শেষ। একটা অনুরোধ, পা টিপে টিপে হাঁটো, ফিসফিস করে কথা বলো–জোরে কথা একদম নয়।

    যেন বাড়ির দিকে যাচ্ছি, এইভাবেই হাঁটছিলাম রাস্তা বরাবর। কিন্তু শ-দুই গজ ব্যবধান থাকতেই হোমস দাঁড় করিয়ে দিল আমাদের।

    বললে, এতেই হবে। ডান দিকের এই পাথরগুলো পর্দার মতো চমৎকার আড়াল করে রাখবে আমাদের।

    অপেক্ষা করব? হ্যাঁ, ওত পেতে, এইখানেই বসে থাকব। লেসট্রেড, এই ফাঁকটায় ঢুকে পড়ো। ওয়াটসন, তুমি তো বাড়ির ভেতরে গেছিলে, তাই না? ঘরগুলো কোথায় কীভাবে আছে বলতে পারো? এইদিকের জাফরি কাটা জানলাগুলো কীসের?

    রান্নাঘরের জানলা মনে হচ্ছে।

    তার ওদিকে ওই যে জানলাটা খুব ঝলমল করছে, ওটা কীসের?

    নিশ্চয় খাবার ঘর।

    খড়খড়ি তোলা রয়েছে। এখানকার জমি তোমার চেনা। গুড়ি মেরে নিঃশব্দে এগিয়ে গিয়ে দেখে এসো কী করছে ওরা! কিন্তু খবরদার, ঘাপটি মেরে দেখছ এটা যেন টের না-পায়!

    পা টিপে টিপে গেলাম রাস্তা বেয়ে। মাথা-দাবানো ঘেরা ফলের বাগানের পাশ দিয়ে একটা পাঁচিল ঘেরা পুরো বাড়িটা। হেঁট হয়ে দাঁড়ালাম পাঁচিলটার পেছনে। ছায়ায় গা ঢেকে গুড়ি মেরে এগিয়ে গিয়ে এমন একটা জায়গায় দাঁড়ালাম যেখান থেকে পর্দাহীন জানলার মধ্যে দিয়ে সোজাসুজি ভেতরের দৃশ্য দেখা যায়।

    ঘরে রয়েছে দু-জন পুরুষ মানুষ স্যার হেনরি এবং স্টেপলটন। গোলটেবিলের দু-পাশে বসে দু-জনে। দু-জনেরই মুখের পাশের দিক ফেরানো রয়েছে কফি আর সুরা। স্টেপলটন তড়বড় করে কথা বলে চলেছেন প্রাণশক্তি যেন বিচ্ছুরিত হচ্ছে। স্যার হেনরি কিন্তু ফ্যাকাশে এবং অন্যমনস্ক। অলক্ষুণে বাদার ওপর দিয়ে একলা হেঁটে যেতে হবে ভেবেই বোধ হয় মুষড়ে পড়েছেন।

    কথা বলতে বলতে স্টেপলটন একবার উঠে দাঁড়ালেন। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। স্যার হেনরি ফের গেলাস ভরে নিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে চুরুট টানতে ল্যাগলেন। দরজায় কঁাচ-কাচ আওয়াজ শুনলাম। কাঁকরের ওপর বুটজুতোর কড়মড় আওয়াজ কানে ভেসে এল। আমি যে পাঁচিলের আড়ালে লুকিয়ে আছি, সেই পাঁচিলের অন্যদিকে এগিয়ে গেল পায়ের আওয়াজ। মাথা তুলে দেখলাম, ফলের বাগানের কোণে একটা আউট-হাউসের দরজার সামনে থমকে দাঁড়ালেন প্রকৃতিবিদ। চাবি ঘুরিয়ে তালা খুলে ভেতরে ঢোকার সঙ্গেসঙ্গে একটা অদ্ভুত খড়মড় আওয়াজ শোনা গেল ভেতরে। মিনিট খানেক ভেতরে থেকেই ফের বেরিয়ে এলেন স্টেপলটন। দরজায় তালা দিলেন। আমার সামনে গিয়ে ঢুকলেন বাড়িতে। অতিথির সামনে গিয়ে বসবার পর গুড়ি মেরে ফিরে এসে সঙ্গীদের বললাম কী-কী দেখেছি।

    বলা শেষ হলে হোমস জিজ্ঞেস করল, ভদ্রমহিলা ওখানে নেই বলছ?

    না।

    তাহলে উনি কোথায়? রান্নাঘর ছাড়া আর কোনো ঘরে তো আলো জ্বলছে না।

    আমার মাথায় আসছে না।

    আগেই বলেছি, সুবিশাল গ্রিমপেন পঙ্কভূমির ওপরে গাঢ়, সাদা কুয়াশা ভাসছিল। দেখা গেল ভাসতে ভাসতে কুয়াশাটা আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। অত্যন্ত জমাট গাঢ়, সুস্পষ্ট প্রাচীরের মতোই তা মন্থর গতিতে অবিচলভাবে আসছে আমাদের দিকে। চাঁদের আলোয় বিরাট তুহিন ক্ষেত্রের মতো ঝকমক করছে ভাসমান কুয়াশা। কুয়াশা ছুঁড়ে মাথা তুলে রয়েছে দূরে দূরে কালো পাহাড়গুলোর এবড়োখেবড়ো শীর্ষদেশ। হোমসের মুখ ঘুরে গেল সেইদিকে এবং ধীরগতি আগুয়ান শ্বেত কুয়াশার পানে তাকিয়ে বললে অস্ফুট, অসহিষ্ণু কণ্ঠে :

    ওয়াটসন, এ যে দেখছি নড়ছে।

    গুরুতর কিছু কি?

    খুবই গুরুতর। আমার সমস্ত প্ল্যান ভণ্ডুল করে দিতে পারে শুধু এই একটি জিনিস। ওঁর আসার সময় হয়েছে। এখনই তো দশটা বাজে। কুয়াশায় রাস্তা ঢেকে যাওয়ার আগেই যদি বেরিয়ে পড়েন, তবেই সফল হবে আমার প্ল্যান, প্রাণে বেঁচে যাবেন উনি।

    সুনির্মল নৈশ-আকাশ ঝকঝক করছে মাথার ওপর। তারাগুলো উজ্জ্বল এবং শীতল। কোমল, অনিশ্চিত প্রভায় সমগ্র দৃশ্যটা দীপ্যমান করে রেখেছে অর্ধ-চন্দ্র। সামনেই সুবৃহৎ অন্ধকারের পিণ্ডর মতো মেরিপিট হাউসের খাড়া খাড়া চিমনি আর করাতের দাঁতের মতো কাটা কাটা ছাদ স্পষ্ট হয়ে জেগে রয়েছে রুপোলি চুমকি বসানো আকাশের বুকে। ফলের বাগান আর জলার বুকে বিস্তৃত রয়েছে নীচু-নীচু জানলা থেকে বিচ্ছুরিত সোনালি আলোর চওড়া রশ্মিরেখা। একটা রশ্মিরেখা সহসা নিভে গেল। রান্নাঘর ছেড়ে চলে গেল চাকরবাকর। একটাই ল্যাম্প কেবল জ্বলতে লাগল বসবার ঘরে–যে-ঘরে মুখোমুখি বসে সিগার টানছেন দুই পুরুষ মূর্তি–একজনের অন্তরে খুনের সংকল্প, তিনি গৃহস্বামী; আরেকজন জানেন না কী ঘটতে চলেছে, তিনি অতিথি। দু-জনেই মশগুল গল্পে।

    বাদার অর্ধেক চাপা পড়ে গেছে সাদা পশমের মতো সুবিশাল কুয়াশা-প্রাচীরে। মিনিটে মিনিটে বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে মহাকায় শ্বেতপিণ্ডআলোকিত জানালার স্বর্ণাভক্ষেত্রে এর মধ্যেই হালকা পেঁজা তুলোর মতো সঞ্চয়মান কুয়াশা স্তবক দেখা দিয়েছে। ফলের বাগানের দূরস্থিত প্রাচীর এর মধ্যেই অদৃশ্য হয়েছে কুয়াশা যবনিকায়। কুণ্ডলী পাকানো শ্বেতবাষ্পের মধ্যে দাঁড়িয়ে যেন হি-হি করে কাঁপছে বৃক্ষসারি। মালার মতো বাড়ির দু-পাশ ঘিরে গাঢ় কুয়াশা গড়িয়ে এল সামনের দিকে এবং নিরেট নিচ্ছিদ্র প্রাচীরের মতো ফের এক হয়ে এগিয়ে এল আমাদের দিকে। ছায়াচ্ছন্ন সমুদ্রে ভাসমান বিচিত্র জাহাজের মতো কেবল দেখা গেল মেরিপিট হাউসের ওপর তলা আর ছাদখানা। আতীব্র আবেগে সবলে পাথরের ওপর হাত ঠুকল হোমস, অসহিষ্ণুভাবে পদাঘাত করল মাটিতে।

    আর পনেরো মিনিটের মধ্যে না-বেরোলে রাস্তা ঢেকে যাবে। আধঘণ্টা পরে নিজেদের হাতই আর দেখতে পাব না।

    পেছিয়ে গিয়ে উঁচু জমিতে দাঁড়ালে হয় না?

    হ্যাঁ, হ্যাঁ, সেটাই ভালো।

    কুয়াশা প্রাচীর যতই এগোয়, আমরাও ততই পেছোই। পেছোতে পেছোতে এসে গেলাম বাড়ি থেকে প্রায় আধ মাইলটাক দূরে। গাঢ় শ্বেত সমুদ্র কিন্তু তখনও এগোচ্ছে বিরামহীন মন্থর গতিতে চাঁদের আলোয় রুপোর মতো ঝকঝক করছে কিনারা।

    হোমস বললে, বড্ড দূরে চলে যাচ্ছি। আমাদের কাছে আসার আগেই ওঁর নাগাল ধরে ফেলুক, এটা আমি চাই না। কপালে যাই থাকুক, এ-জায়গা ছেড়ে আর নড়ছি না। বলে, হাঁটু গেড়ে বসে কান পাতল জমিতে। জয় ভগবান, উনি আসছেন, পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

    বাদার নৈঃশব্দ্য ভঙ্গ হল দ্রুত পদধ্বনিতে। পাথরের আড়ালে গুড়ি মেরে বসে পলকহীন চোখে চেয়ে রইলাম সামনের রৌপ্য-শীর্ষ প্রাচীরের দিকে। পায়ের আওয়াজ আরও কাছে এল। ঠিক যেন পর্দার আড়াল থেকে কুয়াশা ফুঁড়ে বেরিয়ে এলেন যাঁর জন্যে পথ চেয়ে বসে থাকা। সুনির্মল, নক্ষত্রালোকিত আকাশের তলায় বেরিয়ে এসে বিস্মিত হলেন, চারপাশে চেয়ে দেখলেন। তারপর দ্রুত চরণে পথ বেয়ে এসে আমাদের খুব কাছ দিয়ে পেছনের দীর্ঘ ঢাল বেয়ে উঠতে লাগলেন ওপরে। হাঁটতে হাঁটতে দু-কাঁধের ওপর দিয়ে ঘন ঘন তাকাতে লাগলেন পেছনে কিছুতেই যেন স্বস্তি পাচ্ছেন না।

    চুপ! চাপা গলায় গর্জে উঠল হোমস, সঙ্গেসঙ্গে পিস্তলের ঘোড় তোলার মৃদু কটাং আওয়াজ শুনলাম। সামনে তাকাও! আসছে, সে আসছে!

    মাটি কামড়ে গুড়ি মেরে এগিয়ে আসা কুয়াশা-প্রাচীরের কেন্দ্রস্থল থেকে ভেসে এল একটা একটানা মচমচ, খসখস খড়খড় শব্দ–ক্ষীণ কিন্তু চটপটে, দ্রুত, তেজালো। পঞ্চাশ গজ দুরে এসে গেছে মেঘপুঞ্জ। আতঙ্ক-বিস্ফারিত চোখে তিনজনেই চেয়ে রইলাম সেদিকে না-জানি কী শরীরী বিভীষিকা উদ্ধাবেগে আবির্ভূত হবে ভেতর থেকে। আমি দাঁড়িয়েছিলাম হোমসের কনুইয়ের কাছে, মুহূর্তের জন্যে তাকালাম ওর মুখের দিকে। ছাইয়ের মতো ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে মুখ, অথচ বিজয়োল্লাসে দুই চক্ষু ঝকঝক করছে চাদের আলোয়। আচম্বিতে দুটো চোখই যেন আড়ষ্ট স্থির চাহনি নিয়ে ঠিকরে বেরিয়ে এল কোটরের মধ্যে থেকে বিষম বিস্ময়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেল দুই ঠোঁট। সেই মুহূর্তে বিকট গলায় ভয়ার্ত চিৎকার ছেড়ে লেসট্রেড উপুড় হয়ে মুখ খুঁজড়ে শুয়ে পড়ল মাটিতে। তড়াক করে লাফিয়ে দাঁড়িয়ে উঠলাম আমি। অবশ হাতে চেপে ধরলাম পিস্তল, মন কিন্তু পঙ্গু হয়ে গেল কুয়াশার ছায়া থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসা ভয়াবহ আকৃতিটা দেখে। হাউন্ডই বটে, কয়লা-কালো অতিকায় হাউন্ড, কিন্তু মর-জগতের কোনো মানুষ এ-হাউন্ড আজও দেখেনি। গলগল করে আগুন ঠিকরে আসছে উন্মুক্ত মুখবিবর থেকে, ধূমায়িত জ্বলন্ত চাহনি লেলিহান হয়ে রয়েছে দুই চক্ষুতে; নাক-মুখ ঘাড়-গলকম্বল প্রকট হয়ে উঠেছে লকলকে অগ্নিশিখায়। কুয়াশা প্রাচীর ভেদ করে সেদিন যে কৃষ্ণকুটিল বন্য-বর্বর মুখ বিকট হাঁ করে তেড়ে এলে আমাদের দিকে, তার চাইতে হিংস্র, তার চাইতে রক্ত-জল-করা, তার চাইতে নারকীয় মুখের কল্পনা ঘোর উন্মত্ত মস্তিষ্কের বিকারগ্রস্ত দুঃস্বপ্নেও উদিত হয়নি আজ পর্যন্ত।

    লম্বা লম্বা লাফ মেরে ঢাল বেয়ে আসছে কৃষ্ণকায় প্রকাণ্ড প্রাণীটা বন্ধুটি যে-পথে গিয়েছে, ঠিক সেই পথে পদক্ষেপ অনুসরণ করে তীব্র বেগে খচমচ শব্দে এগিয়ে আসছে করাল আকৃতি। অলৌকিক এই প্রেতচ্ছায়া দর্শনে এমন পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলাম যে পাশ দিয়ে তা সাঁৎ করে বেরিয়ে যাওয়ার পর ফিরে পেলাম স্নায়ুশক্তি। পরক্ষণেই যুগপৎ গুলিবর্ষণ করলাম আমি আর হোমস। বিকট শব্দে গর্জে উঠল প্রাণীটা–দীর্ঘ টানা আর্তনাদে শিউরে উঠল জলার নৈঃশব্দ্য অন্তত একজনের গুলিও তাহলে লেগেছে। গুলি খেয়েও কিন্তু থামল না–নক্ষত্রবেগে প্রকাণ্ড লাফ মেরে ধেয়ে গেল সামনে। বহুদুরে রাস্তার ওপরে দেখতে পেলাম ঘুরে দাঁড়িয়েছেন স্যার হেনরি, চাঁদের আলোয় সাদা দেখাচ্ছে মুখখানা, নিঃসীম আতঙ্কে দু-হাত তুলে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, অসহায়ভাবে শুধু দেখছেন মূর্তিমান দুঃস্বপ্ন তেড়ে আসছে পেছন পেছন তাঁরই মাড়িয়ে আসা পথের ধুলোর ওপর দিয়ে।।

    হাউন্ডের যন্ত্রণা বিকৃত চিৎকারে কিন্তু আমাদের ভয় কেটে গিয়েছিল। যাকে আঘাত করা যায়, সে নিশ্চয় মর-জগতের প্রাণী এবং আহত যদি করে থাকি, বধও করতে পারব নিশ্চয়। সে-রাতে হোমস যেভাবে দৌড়ে গেল, সেভাবে কোনোদিন কাউকে দৌড়োতে দেখিনি। ক্ষিপ্রগতি বলে আমার সুনাম আছে। কিন্তু সেদিন আমি যেমন অক্লেশে পেছনে ফেলে এলাম খর্বকায় পেশাদার ডিটেকটিভকে, ঠিক তেমনি অক্লেশে আমাকে পেছনে ফেলে সামনে ধেয়ে গেল হোমস। ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে ছুটতে শুনলাম সামনের রাস্তা থেকে স্যার হেনরির মুহুর্মুহু আর্তনাদ ভেসে আসছে, সেই সঙ্গে গুরুগম্ভীর চাপা গলায় গজরাচ্ছে হাউন্ডটা। আমি ঠিক সময়ে গিয়ে পড়েছিলাম বলেই দেখতে পেলাম শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে মাটিতে আছড়ে ফেলে গলায় দাঁত বসাতে যাচ্ছে জানোয়ারটা, পরমুহূর্তেই গর্জে উঠল হোমসের রিভলবার—পর-পর পাঁচটা গুলি প্রাণীটার পার্শ্বদেশে প্রবেশ করিয়ে শূন্য করে ফেলল পাঁচটা নল। তা সত্ত্বেও যন্ত্রণাকাতর শেষ দীর্ঘ বিলাপ-ধ্বনিতে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে প্রাণীটা কটাৎ শব্দে কামড় বসিয়ে দিল শূন্যে। পরক্ষণেই উলটে গড়িয়ে গেল মাটিতে। চার থাবা দিয়ে ভয়ানকভাবে বাতাস আঁচড়াতে আঁচড়াতে কাত হয়ে গেল দেহ। হাঁপাতে হাঁপাতে হেঁট হয়ে আমি রিভলবারের নল চেপে ধরলাম জানোয়ারটার বীভৎস ঝকমকে মাথায়–কিন্তু ঘোড়া টেপবার আর দরকার হল না। দানব হাউন্ডের মৃত্যু হয়েছে।

    স্যার হেনরি যেখানে আছড়ে পড়েছিলেন, সেইখানেই সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। টান মেরে কলার খুলে ফেললাম আমরা। পাঁজর খালি করা স্বস্তির নিশেস ফেলে ঈশ্বরের জয়গান করে উঠল হোমস দেহের কোথাও আঁচড় নেই–মোটেই জখম হননি স্যার হেনরি যথাসময়ে এসে পড়ে বাঁচাতে পেরেছি তাকে। এর মধ্যেই চোখের পাতা কাঁপতে শুরু করেছে বন্ধুর, নড়াচড়ার সামান্য চেষ্টাও করছেন। ব্যারনেটের দু-পাটি দাঁতের ফাঁকে লেসট্রেড ওর ব্র্যান্ডি-ফ্লাস্ক গুঁজে ধরল। ভয়ার্ত চোখ মেলে স্যার হেনরি তাকালেন আমাদের দিকে।

    বললেন ফিসফিস করে, হে ভগবান! এটা কী? দোহাই আপনাদের, বলুন এটা কী?

    যাই হোক না কেন, এখন অক্কা পেয়েছে, বললে হোমস। জন্মের মতো খতম করে দিয়েছি। বাস্কারভিল ফ্যামিলির ভূতুড়ে হাউন্ডকে। ধরার ধুলোয় আর তার আবির্ভাব ঘটবে না।

    শুধু আকার আর দৈহিক শক্তির দিক দিয়েই এ এক ভয়ংকর প্রাণী। লম্বা হয়ে আমাদের সামনেই পড়ে আছে তার পিলে-চমকানো আকৃতি। খাঁটি ব্লাডহাউন্ড নয়, খাঁটি ম্যাসটিফও নয়। মনে হল দুইয়ের সংমিশ্রণ ছোটো সিংহিনীর মতোই কৃশ, হিংস্র এবং বিরাট। মরণেও তার বিরাট চোয়াল থেকে যেন নীলচে আগুন ছুঁয়ে ছুঁয়ে ঝরে পড়ছে এবং কোটরে গাঁথা, ছোটো ছোটো ক্রুর চোখ ঘিরে অগ্নিবলয় লকলক করছে। জলন্ত নাক মুখে হাত বুলিয়ে নিজেই চমকে উঠলাম। আমার আঙুলেও ধূমায়িত আগুন দেখা গিয়েছে–দপদপ করে জ্বলছে অন্ধকারে।

    বললাম, ফসফরাস।

    ফসফরাস দিয়ে তৈরি একটা মলম–একেই বলে ধড়িবাজি, মৃত প্রাণীটার গা শুকতে শুকতে বললে হোমস। নির্গন্ধ মলম। গন্ধ নেই বলেই গন্ধ শুকে পেছন ধাওয়া করার ক্ষমতায় বাগড়া পড়েনি। স্যার হেনরি, অ্যাপনাকে এই প্রচণ্ড ভয়ের মাঝে এগিয়ে দেওয়ার জন্যে আমাদের ক্ষমা করবেন। আমি তৈরি ছিলাম একটা হাউন্ডের জন্যে-এ-রকম একটা প্রাণীর জন্যে নয়। তা ছাড়া, কুয়াশার জন্যে টক্কর নেওয়ার সময় পর্যন্ত পাইনি।

    আমার জীবন রক্ষে করেছেন আপনি।

    প্রথমে বিপন্ন করার পর। দাঁড়াবার মতো শক্তি পেয়েছেন?

    আর এক ঢোক ব্র্যান্ডি দিন–তারপর যা বলবেন করব। এই তো এবার একটু ধরুন আমাকে। বলুন কী করতে চান?

    আপনাকে এখানে রেখে যেতে চাই। আজ রাতে আর নতুন অ্যাডভেঞ্চারের মতন অবস্থায় আপনি নেই। এখানে যদি অপেক্ষা করেন, আমাদের যে কেউ একজন আপনার সঙ্গে বাস্কারভিল হল পর্যন্ত যাবেখন।

    টলমলিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেন স্যার হেনরি। কিন্তু মুখভাব তখনও বিকট বিবর্ণ, হাত-পা তখনও ঠকঠক করে কাঁপছে। সবাই মিলে ধরাধরি করে একটা পাথরে বসিয়ে দিলাম। দু-হাতে মুখ গুজে বসে রইলেন তিনি। মুহুর্মুহু শিহরিত হতে লাগল প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।

    হোমস বললে, আপনাকে এখন এখানেই ছেড়ে যাব আমরা। কাজ এখনও বাকি প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। কেস হাতের মুঠোয় এসে গেছে, লোকটাকে এবার চাই।

    দ্রুতপদে হাঁটতে হাঁটতে জের টেনে নিয়ে বললে, বাড়িতে ওঁকে পাওয়ার সম্ভাবনা এখন খুবই কম। গুলির আওয়াজ শুনেই নিশ্চয় বুঝেছেন শেষ হয়েছে লীলাখেলা।

    অনেক দূরে ছিলাম কিন্তু আমরা, তা ছাড়া কুয়াশাতেও আওয়াজ চাপা পড়ে যায়।

    তুমি জেনে রেখো হাউন্ডের পেছন পেছন এসেছিলেন উনি কাজ ফুরোলেই ডেকে নেওয়ার জন্যে। না, না, এতক্ষণে পালিয়েছেন! তবুও বাড়ি তল্লাশ করে দেখতে হবে আছেন কিনা।

    দরজা দু-হাট করে ভোলা ছিল। তেড়েমেড়ে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। বেগে এ-ঘর ও-ঘর দেখলাম। বিমূঢ়ের মতো তাকিয়ে রইল জরাকম্পিত এক বৃদ্ধ ভৃত্য। করিডরে দেখা হল তার সঙ্গে। খাবারঘর ছাড়া কোথাও আর আলো নেই। খপ করে ল্যাম্পটা তুলে নিল হোমস, বাড়ির কোনো অংশ দেখতে বাকি রাখল না। কিন্তু যার পেছনে ছুটে আসা, তার চিহ্ন দেখা গেল না। কোথাও। ওপরতলায় উঠে দেখা গেল একটা শয়নকক্ষের দরজায় তালা দেওয়া।

    চেঁচিয়ে উঠল লেসট্রেড, ঘরের মধ্যে কেউ আছে! নড়াচড়ার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। দরজা খুলুন!

    ভেতর থেকে একটা ক্ষীণ গোঙানি আর খসখস শব্দ ভেসে এল। পায়ের চেটো দিয়ে তালার ঠিক ওপরে সবলে লাথি মারল হোমস, দড়াম করে খুলে গেল পাল্লা। উদ্যত পিস্তল হাতে তিনজনেই বেগে ঢুকলাম ভেতরে।

    কিন্তু উদ্ধত মরিয়া সেই মহাশয়তানের ছায়া পর্যন্ত দেখতে পেলাম না ঘরের মধ্যে। তার বদলে এমন একটা অদ্ভুত, অপ্রত্যাশিত বস্তু প্রত্যক্ষ করলাম যে তিনজনেই ক্ষণকাল বিস্ময় বিস্ফারিত চোখে চেয়ে রইলাম ফ্যালফ্যাল করে।

    ঘরটা ছোটো মিউজিয়ামের উপযোগী করে সাজানো। দেওয়াল বোঝাই সারি সারি কাচের আধার ভরতি প্রজাপতি আর মথপোকার বিবিধ সংগ্রহ–বিপজ্জনক এবং জটিল চরিত্রের এই ব্যক্তির অবসর বিনোদনের যা উপাদান; ঘরের কেন্দ্রে একটা সিধে কাঠের বরগা পোকায় খাওয়া সেকেলের ছাদের কড়িকাঠ ঠেস দিয়ে রাখার জন্যে কোনো এক সময়ে খাড়া করা হয়েছিল। এই খুঁটির সঙ্গে পেঁচিয়ে বাঁধা রয়েছে একটা মূর্তি অজস্র কাপড়ের ফেটি এবং বিছানার চাদর দিয়ে আপাদমস্তক বাঁধা থাকায় চেনা মুশকিল পুরুষ না নারী। গলার ওপর দিয়ে একটা তোয়ালে চেপে টেনে নিয়ে গিয়ে কষে বাঁধা হয়েছে খুঁটির পেছনে। আর একটা তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে বাঁধা মুখের নীচের দিক। তার ওপরে একজোড়া কৃষ্ণচক্ষু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আমাদের পানে–দুঃখ আর কষ্ট, লজ্জা আর অপমানের সঙ্গেসঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে একটা ভয়াবহ জিজ্ঞাসা প্রকট হয়ে রয়েছে চোখের ভাষায়। মুহূর্তের মধ্যে মুখ থেকে তোয়ালে খুলে সারাশরীরের বাঁধন খসিয়ে দিতেই আমাদের সামনে মেঝের ওপর লুটিয়ে পড়লেন মিসেস স্টেপলটন। বুকের ওপর মাথা ঝুলে পড়তেই দেখলাম ঘাড়ের ওপর কশাঘাতের টকটকে লাল স্পষ্ট দাগ।

    চিৎকার করে উঠল হোমস, জানোয়ার কোথাকার! লেসট্রেড, ব্র্যান্ডি-বোতল দাও! তুলে চেয়ারে বসিয়ে দাও! উৎপীড়ন আর ক্লান্তিতে জ্ঞান হারিয়েছেন দেখছি।

    চোখ মেললেন ভদ্রমহিলা। শুধোলেন, উনি নিরাপদ তো? পালিয়েছেন?

    ম্যাডাম, আমাদের খপ্পর থেকে পালাতে উনি পারবেন না।

    না, না, আমার স্বামীর কথা আমি বলছি না। স্যার হেনরি? নিরাপদ তো?

    হ্যাঁ।

    হাউন্ডটা?

    মারা গেছে।

    পরিতৃপ্তির দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মিসেস স্টেপলটন।ভগবান বাঁচিয়েছেন! ভগবান বাঁচিয়েছেন। উফ, কী শয়তান! দেখুন আমার কী অবস্থা করেছে! বলে, বাহু বাড়িয়ে ধরলেন আস্তিনের মধ্যে থেকে। শিউরে উঠলাম দাগড়া দাগড়া কালসিটে আর বেতের দাগ দেখে! এ তো কিছুই নয়। আমার মনটাকেই যে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে, মনের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে, অপবিত্র করে দিয়েছে। সব সইতাম–জীবনভোর প্রতারণা, নির্জনে বসবাস, দুর্ব্যবহার সমস্ত–যদি জানতাম সবার ওপরে আছে তার ভালোবাসা। শুধু এই আশা আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকতে পারতাম কিন্তু এখন জেনেছি তাও মিথ্যে তার কাছে আমি একটা উদ্দেশ্যসিদ্ধির টোপ, একটা যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। বলতে বলতে আকুল আবেগে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন ভদ্রমহিলা।

    হোমস বললে, ম্যাডাম, তার প্রতি আপনার কোনো সদিচ্ছা যখন নেই, তাহলে বলুন কোথায় গেলে তাকে পাওয়া যাবে। কুকর্মে যদি কখনো তার সহায় হয়ে থাকেন, তাহলে এখন তার প্রায়শ্চিত্ত করুন আমাদের সাহায্য করুন।

    পালিয়ে সে একটা জায়গাতেই যেতে পারে। পঙ্কভূমির একদম মাঝে একটা দ্বীপ আছে, সেই দ্বীপে একটা টিনের পুরোনো খনি আছে। হাউন্ড রাখত সেইখানে পালিয়ে গিয়ে যাতে আশ্রয় নিতে পারে, তার ব্যবস্থাও করে রেখেছে সেখানে। এখন সে সেইখানেই গিয়েছে।

    সাদা পশমের মতো কুয়াশা প্রাচীর দুলছে জানলার সামনে। সেইদিকে ল্যাম্প তুলে ধরল হোমস।

    বললে, দেখেছেন? আজ রাতে গ্রিমপেন পঙ্কভূমিতে পথ চিনে যেতে কেউ পারবে না।

    হেসে উঠে, হাততালি দিলেন মিসেস স্টেপলটন। ভীষণ উল্লাসে ঝিকমিক করে উঠল চোখ আর দাঁত।

    বললেন সোল্লাসে, খুঁজে খুঁজে যেতে ঠিক পারবে–বেরোতে আর পারবে না। পথ চেনার কাঠিগুলো দেখতে পাবে না তো আজকের রাতে! পঙ্কভূমির মাঝ দিয়ে পথ চিনে যাওয়ার জন্যে ও আর আমি দু-জনে মিলে পুঁতেছিলাম সরু লম্বা কাঠির সারি। ইস! আজকেই যদি তুলে ফেলতাম! তাহলে ওকে কবজায় পেতেন অনায়াসে।

    বেশ বুঝলাম, কুয়াশা না-সরা পর্যন্ত পিছু ধাওয়া করে কোনো লাভ নেই। তাই বাড়ি পাহারায় লেসট্রেডকে রেখে ব্যারনেটকে নিয়ে বাস্কারভিল হলে ফিরে এলাম আমি আর হোমস। স্টেপলটনের কাহিনি আর লুকোনো গেল না বটে, কিন্তু সে-আঘাত তিনি বুক বেঁধে সহ্য করলেন যখন শুনলেন তার প্রণয়িনীর প্রকৃত কাহিনি। নৈশ অ্যাডভেঞ্চারের নিদারুণ মানসিক আঘাত কিন্তু সহ্য করতে পারলেন না। স্নায়ু বিপর্যস্ত হয়ে যাওয়ার দরুন সকাল হওয়ার আগেই দারুণ জ্বরে বিকারের ঘোরে আবোল তাবোল বকতে শুরু করলেন! চিকিৎসা শুরু করলেন ডক্টর মর্টিমার। নিয়তির লিখনে দুজনকে একত্রে পৃথিবী ভ্রমণে বেরোতে হয়েছিল এরপর। দীর্ঘ এক বছর ভূমণ্ডল পর্যটনের পর আগের স্বাস্থ্য আর মন ফিরে পেয়ে অভিশপ্ত ভূসম্পত্তির ভার হাতে তুলে নিয়েছিলেন স্যার হেনরি বাস্কারভিল।

    অত্যাশ্চর্য এই উপাখ্যানের উপসংহারে এবার দ্রুত পৌছোচ্ছি। সুদীর্ঘকাল যে কৃষ্ণকুটিল বিভীষিকা আর নামহীন ভয়ংকর আতঙ্ক ঘিরেছিল এবং যে ভয়-বিভীষিকার অবসান ঘটল শেষ পর্যন্ত এইরকম শোচনীয়ভাবে পাঠক-পাঠিকাকে তার ভাগ দেওয়ার চেষ্টা আমি করেছি। হাউন্ডের মৃত্যুর পরের দিন সকালে কুয়াশা বিদেয় হওয়ার পর মিসেস স্টেপলটন আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন পঙ্কভূমির কেন্দ্রদেশে। যাওয়ার পথ ওঁরা স্বামী-স্ত্রী আবিষ্কার করেছিলেন। এখন স্ত্রীটি পরম আগ্রহে আর বিষম আনন্দে সেই পথ ধরেই নিয়ে গেলেন আমাদের পলাতক স্বামীর সন্ধানে। এই থেকেই উপলব্ধি করতে পারলাম কী নিদারুণ বিভীষিকার মধ্যে জীবন কাটিয়েছেন এই ভদ্রমহিলা। ক্রমশ সরু হয়ে একটা জমি ঢুকে গেছে দূর বিস্তৃত পঙ্কভূমির মধ্যে। জলাভূমির পচা উদ্ভিজ পদার্থে প্যাচপেচে শক্ত মাটির এই সরু অন্তরীপে গিয়ে দাঁড়ালেন ভদ্রমহিলা। অন্তরীপ যেখানে শেষ হয়েছে, সেখান থেকে কতকগুলো সরু লম্বা কাঠি এখানে সেখানে পোঁতা রয়েছে কাদার মধ্যে। অর্থাৎ পথটা আঁকাবাঁকাভাবে গিয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ নলখাগড়ার মাঝ দিয়ে। সবুজ গাঁজলা ভরতি পচা আগাছা আর নোংরা পাঁকের মধ্যে দিয়ে পথের সন্ধান পাবে না নতুন মানুষ। দেখেই শিউরে উঠবে। দুর্গন্ধযুক্ত নলবন এবং প্রচুর সরল এঁটেল মাটির মতো আঠালো জলজ উদ্ভিদ থেকে একটা পচা গন্ধ আর পুতিগন্ধময় ভারী বাষ্প এসে আছড়ে পড়ল আমার মুখে। পা ফসকে একাধিকবার ঊরু পর্যন্ত ডুবিয়ে ফেলেছি কালো পাঁকের মধ্যে, পায়ের তলায় কয়েক গজ জায়গা জুড়ে মৃদু কোমলভাবে তরঙ্গায়িত হয়েছে পাঁক কেঁপে কেঁপে উঠেছে বারংবার। পাঁকের নাছোড়বান্দা কামড় থেকে পা তুলতে বেগ পেয়েছি প্রতি পদক্ষেপে, ডুবে যাওয়ার পর মনে হচ্ছে অতল অঞ্চল থেকে যেন একটা সাংঘাতিক বৈরী হাত টেনে নামিয়ে নিতে চাইছে কুৎসিত তলদেশে। প্রতিবার পাঁকের খপ্পরে পা আটকে যাওয়ার সঙ্গেসঙ্গে এই একই অনুভূতি জাগ্রত হয়েছে অন্তরে–ক্রুর কুটিল অভিসন্ধি নিয়ে কে যেন আস্তে আস্তে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে পাকের তলায়। বিপদসংকুল এ-পথে আমাদের আগে যে একজন গিয়েছে, তার প্রমাণ পেলাম একবারই। আঠালো কাদার মধ্যে থেকে তুলোঘাসের একটা পটি বেরিয়ে গিয়েছে তার মধ্যে কালোমতো কী যেন একটা ঠেলে বেরিয়ে রয়েছে। পথ থেকে সরে গিয়ে বস্তুটা ধরতে গিয়ে কোমর পর্যন্ত ডুবিয়ে ফেলল হোমস এবং আমরা টেনে না বার করলে এ-জীবনে আর ওকে শক্ত ভূমিতে পা রাখতে হত না। একটা পুরোনো কালো বুট জুতো তুলে ধরল শূন্যে। ভেতরের চামড়ায় ছাপা রয়েছে একটা নাম–মেয়ার্স, টরোন্টো।

    বলল, কর্দম স্নানের উপযুক্ত জিনিসই বটে। এই সেই নিখোঁজ বুট–যা হারিয়েছিলেন আমাদের বন্ধু স্যার হেনরি।।

    পালানোর সময় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গেছেন স্টেপলটন।

    ঠিক ধরেছ। স্যার হেনরির পেছনে হাউন্ড লেলিয়ে দেওয়ার জন্যে হাতে রেখেছিলেন বুটটা–খেল খতম হয়েছে জেনে হাতে নিয়েই ছুটতে আরম্ভ করেন। এইখানে এসে ছুঁড়ে ফেলে দেন। এই পর্যন্ত নিরাপদে এসেছেন বেশ বোঝা যাচ্ছে।

    কিন্তু এর বেশি আর কিছু জানবার মতো ভাগ্য আমাদের ছিল না। কল্পনা অনেক কিছুই করা যেতে পারে, সঠিক কী হয়েছে বলা মুশকিল। জলার ওপর পায়ের ছাপ খুঁজে বার করার কোনো সম্ভাবনা নেই। সবসময়েই ভুরভুর করে কাদা উঠছে ওপরদিকে পায়ের ছাপ নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে দেখতে দেখতে। তা সত্ত্বেও বাদা পেরিয়ে শক্ত জমিতে পৌঁছোনোর পর সাগ্রহে পদচিহ্নের সন্ধান করলাম। কিন্তু ক্ষীণতম পায়ের ছাপও চোখে পড়ল না। মৃত্তিকার কাহিনি যদি সত্য বলে মেনে নিতে হয়, তাহলে বলব আগের রাতের কুয়াশা ঠেলে দ্বীপের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে আর পৌছতে পারেননি স্টেপলটন। সুবিশাল গ্রিমপেন পঙ্কভূমির বুকে কোথাও, প্রকাণ্ড বাদার নোংরা পঙ্কিল ক্লেদের মধ্যে তিনি তলিয়ে গিয়েছেন চিরতরে। শীতলচিত্ত নিষ্ঠুর-হৃদয় মানুষটির চিরন্তন কবর রচিত হয়েছে শীতল, নিতল পাঁকের রাজ্যে।

    বাদা-বেষ্টিত দ্বীপে হিংস্র স্যাঙাতকে লুকিয়ে রাখার অনেক চিহ্নই অবশ্য পেলাম। প্রকাণ্ড একটা চাকা কল আর আবর্জনায় অর্ধেক ভরতি একটা পাতালকুপ দেখেই বোঝা গেল কোথায় ছিল পরিত্যক্ত টিনের খনি। পাশেই খনি শ্রমিকদের কুটিরগুলো প্রায় মাটিতে মিশে এসেছে। চারপাশের পচা পাঁকের দুর্গন্ধে তিষ্ঠোতে না-পেরে নিশ্চয় সটকান দিয়েছিল বেচারিরা। এইরকম একটা ভগ্ন প্রায় কুটিরের দেওয়ালে ইংরেজি ইউয়ের মতো একটা আংটা লাগানো। আংটা থেকে ঝুলছে একটা শেকল, সামনে পড়ে বেশ কিছু চিবিয়ে-গুঁড়ো-করা-হাড়। এইখানেই তাহলে থাকত জানোয়ারটা। জঞ্জালের মধ্যে পড়ে রয়েছে একটা কঙ্কাল জট পাকানো বাদামি লোম লেগে রয়েছে কঙ্কালে।

    কুকুরের কঙ্কাল! বলল হোমস। আরে সর্বনাশ! এ যে দেখছি কোঁকড়া চুলো স্প্যানিয়েল। আহারে! পোষা কুত্তাকে ইহজীবনে আর দেখতে পাবেন না মর্টিমার বেচারা। যাক গে, এ-জায়গায় আর কোনো গুপ্ত রহস্য নেই–সব রহস্যের তলা পর্যন্ত দেখা হয়ে গিয়েছে। হাউন্ডকে উনি লুকিয়ে রেখেছিলেন ঠিকই, কিন্তু হাঁকডাক লুকোতে পারেননি। তাই রাতবিরেতে অমন রক্ত-জল-করা ডাক শোনা যেত দিনের আলোতে শুনলেও গা ছমছম করে উঠত। জরুরি অবস্থায় মেরিপিটের আউট হাউসে রাখতে পারতেন ঠিকই, কিন্তু তাতে ঝুঁকি প্রচণ্ড । তাই চরম মুহূর্তের দিনে মানে যেদিন ওঁর সর্বপ্রয়াসের অবসান ঘটতে চলেছে বলে মনে করতেন সেইদিনই কেবল আউট হাউসে হাউন্ড রাখার সাহস তার হত। টিনের কৌটোয় এই যে মলমটা, নিশ্চয় এই সেই আলোময় সংমিশ্রণ জন্তুটার সারাগায়ে মুখে জাবড়া করে লাগিয়ে দিতেন। মতলবটা মাথায় এসেছিল দুটো কারণে। প্রথম, ফ্যামিলি নরক-কুকুরের কিংবদন্তি; দ্বিতীয়, বৃদ্ধ স্যার চার্লসকে ভয় পাইয়ে মেরে ফেলার অভিলাষ, অন্ধকারের বুক চিরে জলার ওপর দিয়ে এ-রকম একটা প্রাণীকে লম্বা লম্বা লাফ মেরে যদি পেছনে তাড়া করে আসতে দেখা যায়, প্রত্যেকেই প্রাণের ভয়ে বিকট চেঁচাতে চেঁচাতে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়োয়–আমরাও দৌড়োতাম, স্যার হেনরিও দৌড়েছিলেন, মহাশয়তান কয়েদি বেচারাও দৌড়েছিল। অত্যন্ত সেয়ানা পদ্ধতি। শিকারকে কেবল যে ভয় দেখিয়ে মেরে ফেলার সম্ভাবনাই থাকছে, তা নয়। জলার বুকে এমন একটা প্রাণীকে চাষারা যদি দেখেও ফেলে–দেখেওছে অনেকে খোঁজখবর নেওয়ার মতো বুকের পাটা কি থাকবে? ওয়াটসন, লন্ডনে তোমাকে একবার বলেছিলাম, আবার বলছি এখানে হন্যে হয়ে যাঁর পেছনে ছুটে বেরিয়েছি এতদিন এবং যিনি ওই ওখানে কোথাও শুয়ে আছেন তার চাইতে বিপজ্জনক মানুষের পিছনে আজ পর্যন্ত আমাকে ধাওয়া করতে হয়নি বলে বাহু সঞ্চালন করে দেখাল নানাবর্ণের ছাপযুক্ত ধ্যাবড়া দূরবিস্তৃত পঙ্কভূমি–দূর হতে দূরে গিয়ে এক সময়ে যা মিশে গিয়েছে পাটবৰ্ণ তরঙ্গায়িত জলাভূমির সঙ্গে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশার্লক হোমস সমগ্র ২ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন
    Next Article When the World Screamed – Arthur Conan Doyle

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }