Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শার্লক হোমস সমগ্র ১ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    লেখক এক পাতা গল্প813 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৪. অন্ধকার

    বির্লস্টোনের সার্জেন্ট উইলসনের জরুরি তলব পেয়ে চিফ সাসেক্স ডিটেকটিভ রাত তিনটের সময় এক-ঘোড়ার হালকা গাড়ি চেপে দ্রুত গতি নিরুদ্ধ-নিশ্বাস ঘোড়ার পেছন পেছন এসে পোঁছোলেন অকুস্থলে। আলো ফুটতেই পাঁচটা চল্লিশের ট্রেনে খবর পাঠালেন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে আমাদের স্বাগত জানানোর জন্যে বির্লস্টোনে স্টেশনে হাজির রইলেন বারোটার সময়ে। হোয়াইট ম্যাসোন লোকটা শান্তশিষ্ট প্রকৃতির স্বচ্ছন্দ-চেহারার মানুষ। পরনে ঢিলেঢালা টুইড স্যুট। পরিষ্কার কামানো গাল, লাল-লাল মুখ, বলিষ্ঠ বপু। হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত চামড়ার পটি দিয়ে মোড়া পা-জোড়া একটু বাকা কিন্তু শক্তিশালী। দেখলে মনে হয় অবসরপ্রাপ্ত শিকারের জন্তুরক্ষক অথবা ছোটোখাটো কৃষক। ভূলোকের যেকোনো শ্রেণির মানুষ হিসেবে তাকে কল্পনা করা যায়–আদর্শ প্রাদেশিক ক্রিমিন্যাল অফিসারের উপযুক্ত নিদর্শন বলে মনে হয় না মোটেই।

    সত্যিই একটা তুমুল ঝড় বলা চলে কেসটাকে, মি. ম্যাকডোনাল্ড। বারে বারে একই কথা বলে চলে ম্যাসোন। খবর ছড়িয়ে পড়লেই দেখবেন মাছির মতো ভন ভন করবে খবরের কাগজের লোকগুলো। ওরা এসে সূত্র-টুত্র নষ্ট করে ফেলার আগেই আমাদের কাজ শেষ করে ফেলতে চাই। এ-রকম কাণ্ড আর দেখেছি বলে তো মনে পড়ে না। মি. হোমস, আপনার অনেক খোরাক পাবেন। ডা. ওয়াটসন, আপনিও পাবেন–ডাক্তারি শাস্ত্রের দরকার আছে তদন্তটায়। ওয়েস্টভিল আর্মস-এ আপনাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। থাকার জায়গা আর নেই–তবে শুনেছি জায়গাটা ভালো, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। আপনাদের ব্যাগ নিয়ে যাবে এই লোকটা। এইদিকে আসুন!

    ভদ্রলোক ভারি চটপটে, দৌড়ঝাঁপে ওস্তাদ এবং অতিশয় অমায়িক। দশ মিনিটে পৌঁছে গেলাম যে-যার ঘরে। পরের দশ মিনিটে সরাইখানার বারান্দায় বসে শুনলাম সংক্ষিপ্ত ঘটনাপঞ্জি আগের অধ্যায়ে যা বলা হয়েছে। মাঝে মাঝে পয়েন্ট লিখে নিলেন ম্যাকডোনাল্ড। কিন্তু তন্ময়চিত্তে সব শুনে গেল হোমস ভাবে-ভঙ্গিতে ফুটে রইল বিস্ময়, ভক্তি আর প্রশংসা–দুর্লভ এবং দুমূর্ল প্রস্ফুটিত পুষ্প অবলোকনের সময়ে যেমনটি দেখা যায় উদ্ভিদবিদের চোখে-মুখে।

    গল্প শেষ হলে বললে, চমৎকার! সত্যিই অতি চমৎকার আর কোনো কেসে এত আশ্চর্য আর অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আমি দেখিনি।

    ভীষণ খুশি হয়ে হোয়াইট ম্যাসোন বললেন, আমি জানতাম আপনি তাই বলবেন মি. হোমস। সাসেক্সে আমরাও পেছিয়ে নেই। রাত তিনটে থেকে চারটের মধ্যে সার্জেন্ট উইলসনের কাছ থেকে কেসটা বুঝে নেওয়ার সময়ে কী পরিস্থিতি দেখেছি আপনাকে তা বলেছি। বুড়ো ঘোড়াটাকে যা জোর ছুটিয়েছি যে বলবার নয়। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি করার দরকার ছিল না। সার্জেন্ট উইলসন সব ঘটনা লিখে রেখেছে। আমি মিলিয়ে দেখেছি। ভেবেছি। দেখলাম বাড়তি পয়েন্ট দু-চারটে জোড়া যায়।

    যেমন? সাগ্রহে শুধোয় হোমস।

    হাতুড়িটাকে সবার আগে পরীক্ষা করেছিলাম। ড. উড সাহায্য করেছিলেন। মারপিটের চিহ্ন নেই হাতুড়িতে। ভেবেছিলাম মেঝের ওপর ফেলে দেওয়ার আগে নিশ্চয় হাতুড়ি মেরে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছিলেন মি. ডগলাস। হত্যাকারীকে হয়তো মেরেওছেন। কিন্তু কোনো দাগ নেই।

    তাতে অবশ্য কিছুই প্রমাণিত হয় না। মন্তব্য করলেন ইনস্পেকটর ম্যাকডোনাল্ড। হাতুড়ি-হত্যা তো বড়ো কম হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই হাতুড়িতে দাগ থাকে না।

    তা ঠিক। আদৌ হাতুড়ি মারা হয়েছে কিনা দাগ না-থাকলে তা বলা যায় না ঠিকই। কিন্তু দাগ থাকলেও থাকতে পারত, সেক্ষেত্রে আমাদের কাজের সুবিধে হত। কিন্তু আদতে সে-রকম কোনো দাগ নেই। তারপর পরীক্ষা করলাম বন্দুকটা। হরিণ মারা বড়ো গুলির খোল রয়েছে ভেতরে এবং ট্রিগার দুটো তার দিয়ে বাঁধা–সার্জেন্ট উইলসন যেমনটি দেখেছিলেন। ফলে পেছনের ট্রিগার টিপলেই দুটো নল থেকেই গুলি বেরিয়ে যায়। এভাবে ট্রিগার বেঁধে জোড়া-গুলি ছোড়ার ব্যবস্থা যে করেছে, সে মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিল গুলি ফসকালে চলবে না–মারতেই হবে যে করে হোক। করাত দিয়ে কাটা বন্দুকটা লম্বায় দু-ফুটের বেশি নয়–কোটের তলায় লুকিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বন্দুক নির্মাতার পুরো নাম কোথাও নেই। দুটো নলের মাঝের খাঁজে PEN এই তিনটি অক্ষর কেবল রয়ে গেছে বাদবাকি নাম করাত দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে।

    P-টা বড়ো, মাথার দিকে কারুকাজ–E আর N-টা তার চাইতে ছোটো, তাই না? শুধোয় হোমস।

    এক্কেবারে ঠিক।

    পেনসিলভানিয়া স্মল আর্ম কোম্পানি-নাম করা আমেরিকান সংস্থা। বললে হোমস।

    গাঁইয়া ডাক্তার যে-অসুখ ধরতে না-পেরে নাকের জলে চোখের জলে হন, সেই অসুখের নাম, নিদান এবং চিকিৎসা এক কথাতেই হার্লে স্ট্রিট চিকিৎসা-বিশেষজ্ঞ যখন বলে দেন, তখন গেঁইয়া ডাক্তারটি চিকিৎসা-বিশেষজ্ঞের পানে যে-চোখে তাকান, সেই চোখে হোয়াইট ম্যাসোন তাকালেন আমার বন্ধুটির দিকে।

    চমৎকার বলেছেন, মি. হোমস! ওয়ান্ডারফুল! ওয়ান্ডারফুল! কথাটা খুব কাজে লাগবে আমাদের। আপনি কি পৃথিবীর সমস্ত বন্দুক নির্মাতাদের নামধাম মুখস্থ করে রেখেছেন?

    তাচ্ছিল্য ভরে হাত নেড়ে প্রসঙ্গ বাদ দিল হোমস।

    বলে চললেন হোয়াইট ম্যাসোন, বন্দুকটা আমেরিকান শট গানই বটে। কোথায় যেন পড়েছি আমেরিকায় কোথাও কোথাও করাত দিয়ে কাটা শট-গান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নলচেতে লেখা নামটা ছাড়াই সম্ভাবনাটা মাথায় এসেছিল আমার। তাহলে একটা প্রমাণ পাওয়া গেল, বাড়ির মধ্যে যে এসেছিল বাড়ির মালিককে খুন করতে সে আমেরিকান।

    মাথা নেড়ে ম্যাকডোনাল্ড বললেন, ওহে, তুমি দেখছি বড্ড তাড়াতাড়ি এগুচ্ছো। বাড়ির মধ্যে আদৌ বাইরের লোক ঢুকেছিল কিনা এখনও কিন্তু সে-প্রমাণ আমি পাইনি।

    খোলা জানলা, গোবরাটে রক্ত, অদ্ভুত কার্ড, কোণে বুটজুতোর ছাপ, বন্দুক।

    এর মধ্যে এমন কিছু নেই যা আগে থেকে সাজিয়ে রাখা যায় না। মি. ডগলাস নিজে হয়তো আমেরিকান ছিলেন, অথবা হয়তো আমেরিকায় দীর্ঘকাল বসবাস করেছিলেন। মি. বার্কারও ছিলেন আমেরিকায় দীর্ঘদিন। আমেরিকান কাণ্ডকারখানা প্রমাণ করবার জন্যে বাড়ির বাইরে থেকে আমেরিকান আদমি আমদানি না-করলেও চলবে।

    খাসচাকর অ্যামিস—

    লোকটা কি বিশ্বাসী?

    স্যার চার্লস চান্ডােজের চাকরিতে ছিল দশ বছর নিরেট পাথরের মতোই বিশ্বাসী। পাঁচ বছর আগে ম্যানর হাউসে মি. ডগলাস আসার পর থেকেই সঙ্গে আছে। এ-বন্দুক বাড়ির মধ্যে কখনো দেখেনি।

    লুকিয়ে রাখবার জন্যে নল কাটা হয়েছিল বন্দুকের। যেকোনো বাক্সের মধ্যে রেখে দিলে কারো চোখে পড়ার কথা নয়। কাজেই বাড়ির মধ্যে এ-বন্দুক কখনো ছিল না, দিব্যি গেলে এ-কথা বলছে কী করে?

    যাই হোক, বন্দুকটা ও কখনো দেখেনি।

    ম্যাকডোনাল্ড তার গোঁয়ার স্কচ মাথা নেড়ে বললে, বাড়ির মধ্যে কেউ এসেছিল এমন প্রমাণ কিন্তু এখনও আমি পেলাম না। বলতে বলতে উচ্চারণে অ্যাবারডোনিয়ান টান এনে ফেললেন ভদ্রলোক। কথায় ডুবে গেলেই যা হয় আর কী। Consider-কে বললেন Conseeder. বাইরে থেকে এ-বন্দুক বাড়ির মধ্যে আনা হয়েছিল এবং বাইরের লোক বাড়িতে ঢুকে কাজ সেরে লম্বা দিয়েছে–উঃ ভাবাও যায় না। সাধারণ বুদ্ধি দিয়েই তো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তা সম্ভব নয়। মি. হোমস, আপনি তো সব শুনলেন, আপনিই এখন বিচার করে দেখুন না কেন।

    বিচারপতিসুলভ মুখ করে হোমস বললে–বেশ তো মি. ম্যাক, বলুন আপনার কেস।

    বাড়িতে কেউ ঢুকেছিল যদি ধরেও নেওয়া যায়, তাহলে সে আর যাই হোক, চোর ছাচোড় নয়। আংটির ব্যাপার আর কার্ডখানা দেখেই বোঝা যায় খুনটা পূর্বপরিকল্পিত–কারণটা ব্যক্তিগত। বহুত আচ্ছা। খুন করার পাক্কা অভিসন্ধি নিয়ে তাহলে বাড়ি ঢুকল একটা লোক। বাড়ি ঘিরে পরিখা থাকার ফলে সে জানে, আদৌ যদি কিছু সে জেনে থাকে যে খুন-টুন করে পালাবার সময়ে মুশকিলে পড়তে হবে, তখন কী ধরনের অস্ত্র সে বাছবে বলুন তো? যে-অস্ত্রে কোনো আওয়াজই হয় না, কেমন ? তাহলেই বরং খুন করার পর জানলা গলে বাইরে বেরিয়ে ধীরেসুস্থে জল কাদা ঠেলে পেরিয়ে যেতে পারবে পরিখা। তার একটা মানে হয়। কিন্তু তা না-করে যে-অস্ত্রে কানফাটা আওয়াজে চক্ষের নিমেষে লোকজন ছুটে আসবে খুনের জায়গায় এবং পরিখা পেরোনোর আগেই চোখে পড়ে যাবে বাড়ির লোকের সে-অস্ত্র নিয়ে খুন করতে আসার কোনো মানে তো আমার মাথায় ঢুকছে না। আপনিই বলুন মি. হোমস এমন কি সম্ভব?

    চিন্তিত মুখে হোমস বললে, বললেন তো ভালোই–ফাঁক নেই কোথাও। মি. হোয়াইট ম্যাসোন, একটা প্রশ্ন : বাড়ি এসেই কি পরিখার ওপর পাড় দেখে এসেছিলেন? জল থেকে কেউ উঠলে তীরে চিহ্ন থাকার কথা কিন্তু।

    সে-রকম কোনো চিহ্ন ছিল না মি. হোমস। তা ছাড়া পাড়টা পাথর দিয়ে বাঁধানো চিহ্নর আশা করা যায় না।

    কোনোরকম পায়ের ছাপ-টাপ?

    কিস্‌সু না।

    বটে! মি. হোয়াইট ম্যাসোন, এখুনি বাড়ির দিকে গেলে কি আপত্তি আছে আপনার? ছোটোখাটো দু-একটা পয়েন্ট হয়তো কাজে লাগতে পারে।

    আমিও তাই বলতে যাচ্ছিলাম মি. হোমস। যাওয়ার আগে ভাবছিলাম সব ঘটনা শুনিয়ে রাখি। যদি কোথাও খটকা লাগে–দ্বিধাগ্রস্তভাবে শখের গোয়েন্দার পানে তাকান হোয়াইট ম্যাসোন।।

    মি. হোমসের সঙ্গে এর আগেও কাজ করেছি আমি। যা করবার উনিই করবেন। বললেন ইনস্পেকটর ম্যাকডোনাল্ড।

    হাসল হোমস। বলল, আমার কাজের অবশ্য একটা নিজস্ব ধরন আছে। আমি কেস হাতে নিই বিচার বিভাগ আর পুলিশের কাজে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে। সরকারি বাহিনী থেকে যদিও-বা কখনো আমাকে সরে থাকতে দেখা যায়–জানবেন সরিয়ে রাখা হয়েছে বলেই সরে থেকেছি। ওঁদের মেহনত নিয়ে নিজে বাহাদুরি কিনতে চাই না। সেইসঙ্গে এও জেনে রাখবেন, মি. হোয়াইট ম্যাসোন, আমি কাজ চালাই আমার নিজস্ব পদ্ধতিতে ফলাফল জানাই যখন সময় হয়েছে বুঝি তখন পুরোটাই একবারে জানাই বারে বারে অল্প অল্প করে নয়।

    অমায়িক কণ্ঠে হোয়াইট ম্যাসসান বললেন, আপনি এসে আমাদের ধন্য করেছেন, মি. হোমস। যা জানি সব আপনাকে দেখিয়ে সম্মানিত বোধ করব নিজেদের। আসুন ড. ওয়াটসন, সময় হলে আপনার গল্পের বইতে আমাদের ঠাঁই পাওয়ার আশা রইল।

    অদ্ভুতদর্শন গেঁয়ো পথ মাড়িয়ে এগিয়ে চললাম আমরা। দু-পাশে চুড়োহীন মুড়ো এলম গাছের সারি। ঠিক তারপরেই দুটো সুপ্রাচীন পাথরের থাম, রোদেজলে বাতাসে মলিন, শ্যাওলায় ঢাকা। চুড়োয় দুটো বেঢপ আকার-বিহীন পাথরের মূর্তি–এককালে পাথরের সিংহ-মূর্তি ছিল নিশ্চয় সামনের থাবা মেলে পেছনের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছিল বির্লস্টোনের প্রতীক চিহ্ন হিসেবে। আঁকাবাঁকা পথ ধরে একটু হাঁটতে হল–চারিপাশে কেবল সবুজ ঘাসে ছাওয়া জমি আর ওক গাছ–ইংল্যান্ডের পল্লিঅঞ্চলের যা সম্পদ। তারপরেই রাস্তা আচমকা মোড় নিয়ে শেষ হয়েছে একটা মান্ধাতা আমলের বাড়ির সামনে। জ্যাকেবিয়ান হাউস। টানা, লম্বা, নীচু। বিবর্ণ, যকৃৎ রঙিন ইট। দু-পাশে ডাল-পালাকাটা চিরসবুজ ইউ গাছ এবং সেকেলে ধাঁচের বাগান। আর একটু এগোতেই দেখা গেল কাঠের তৈরি ড্রব্রিজ আর ভারি সুন্দর চওড়া পরিখা। শীতের রোদে স্থির চকচক করছে পারদের মতো। এই সেই সুপ্রাচীন ম্যানর হাউস যার মাথার ওপর দিয়ে গেছে তিন-তিনটে শতাব্দীর অনেক ইতিহাস। কত নতুন প্রাণ জন্ম নিয়েছে এই ইটের ভবনে। বিদেশি সফর শেষ করে ফিরে এসেছে কত দুর্দান্ত ব্যক্তি, কত গ্রাম্য নাচের আসর আর শিয়াল-শিকারিদের মিলন-উৎসব বসেছে এই ইমারতের চৌহদ্দিতে। এত বয়েসে এমন একটা সম্রান্ত অট্টালিকার দেওয়ালে কুচক্রীর করাল ছায়াপাত ঘটেছে ভাবতে কেমন যেন অবাক লাগে। তবুও বলব অনেক ভয়ানক ক্রূর ষড়যন্ত্রের আলয় যেন ওই অদ্ভুতদর্শন সূচালো ছাদ আর ঢালু ছাদ দিয়ে ঘেরা দেওয়ালের বিচিত্র তিনকোনা উপরিভাগ। ভেতরে ঢোকানো জানলা আর ম্যাড়মেড়ে রঙের জল-ছলছলানে টানা লম্বা সামনের দিকটা দেখেই মনে হল এ বিয়োগান্ত দৃশ্যের উপযুক্ত এর চাইতে ভালো জায়গা আর আছে কিনা সন্দেহ।

    হোয়াইট ম্যাসোন বললেন, এই সেই জানালা–ড্রব্রিজ থেকে নেমেই ডান দিকে। কাল রাতে যেভাবে খোলা ছিল–এখনও খোলা রয়েছে সেইভাবে।

    মানুষ গলার পক্ষে বড্ড সরু জানলা দেখছি।

    লোকটা আর যাই হোক, মোটকা নয়। আপনার অবরোহ সিদ্ধান্ত ছাড়াই কিন্তু ও-কথা বলতে পারি। তবে আপনি বা আমি গলে যেতে পারি।

    পরিখার পাড়ে হেঁটে গেল হোমস, তাকাল ওপরে। তারপর খুঁটিয়ে দেখল পাথরের পাড় আর পাশে ঘাসের বর্ডার।

    হোয়াইট ম্যাসসান বললেন, আমি ভালো করেই দেখেছি মি. হোমস। দাগ-টাগ কিছু নেই। জল ঠেলে ওঠার কোনো চিহ্ন নেই। তা ছাড়া চিহ্নই-বা সে রাখতে যাবে কেন?

    ঠিক বলেছেন। চিহ্ন রাখতে যাবে কেন? জল কি এ-রকম বরাবর ঘোলা?

    সাধারণত এইরকম রং থাকে। স্রোতের সঙ্গে কাদামাটি আসে।

    গভীরতা?

    পাড়ের কাছে ফুট দুয়েক–মাঝামাঝি জায়গায় ফুট তিনেক!

    পরিখা পেরোতে গিয়ে ডুবে মরেছে, এ-সম্ভাবনা তাহলে নাকচ করা যায়?

    নিশ্চয়। বাচ্চার পক্ষেও জলে ডুবে মরা সম্ভব নয়।

    ড্রব্রিজ হেঁটে পেরিয়ে এলাম। পথ দেখিয়ে ভেতরে নিয়ে গেল অদ্ভুত চেহারার শুকনো খটখটে টাইপের গাঁটযুক্ত একটা লোক খাসচাকর অ্যামিস। বুড়ো বেচারা ভয়ে সাদা হয়ে গেছে–কাঁপছে ঠক-ঠক করে। খুনের ঘরে তখনও ডিউটি দিচ্ছিল গ্রাম্য সার্জেন্ট–বিষণ্ণবদন, দীর্ঘকায়, শিষ্টাচারনিষ্ঠ। বিদায় নিয়েছেন কেবল ডাক্তার।

    তাজা খবর কিছু আছে নাকি, সার্জেন্ট উইলসন? শুধোলেন হোয়াইট ম্যাসোন।

    আজ্ঞে না।

    তাহলে তুমি বাড়ি যাও। যথেষ্ট করেছ। দরকার পড়লে ডেকে পাঠাবখন। খাসচাকর বাইরে অপেক্ষা করুক। ওকে দিয়ে খবর পাঠাও মি. সিসিল বার্কার, মিসেস ডগলাস আর হাউস-কিপারের কাছে শিগগিরই ডাকতে পারি। এবার আমার যা মনে হয়েছে আগে তাই বলি–তাতে আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধে হবে।

    ভদ্রলোক গাঁইয়া বিশেষজ্ঞ হলে কী হবে, মনে দাগ রেখে যায়। প্রত্যেকটা ঘটনার খবর তিনি রাখেন, মাথাটিও ঠান্ডা, পরিষ্কার এবং সহজ বুদ্ধিতে ঠাসা ফলে এ-পেশায় জীবনে অনেক উন্নতি করবেন। সরকারি বড়ো গোয়েন্দা ঘনঘন অসহিষ্ণুতা দেখালেও হোমস তন্ময়চিত্তে সব কথা শুনল–এতটুকু অসহিষ্ণুতা দেখাল না।

    আমাদের প্রথম প্রশ্ন হল, এটা হত্যা না, আত্মহত্যা–তাই নয় কি জেন্টলম্যান? আত্মহত্যা যদি হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে ইনি প্রথমে বিয়ের আংটি খুলে লুকিয়ে রেখেছেন, তারপর ড্রেসিং গাউন পরে এই ঘরে নেমে এসেছেন, পর্দার আড়ালে ঘরের কোণে কাদা-মাড়ানো জুতোর ছাপ রেখেছেন যাতে মনে হয় ওত পেতে ছিল কেউ, জানালা খুলেছেন, গোবরাটে রক্ত রেখেছেন—

    আত্মহত্যার সম্ভাবনা বাদ দেওয়া যেতে পারে, বললে ম্যাকডোনাল্ড।

    আমারও তাই মনে হয়। সুইসাইডের প্রশ্নই ওঠে না। তাহলে এটা হত্যা। এখন প্রথমে বার করতে হবে হত্যাকারি বাইরের লোক না ভেতরের লোক।

    শোনা যাক তোমার যুক্তি।

    অসুবিধে দু-দিকেই আছে। তা সত্ত্বেও দুটোর একটা হতে হবে। প্রথমে ধরে নেওয়া যাক বাড়ির কেউ বা কয়েকজন এ-কাজ করেছে। এমন সময়ে এঁকে নীচে নামিয়ে এনেছে যখন চারিদিক নিস্তব্ধ, অথচ কেউ ঘুমোয়নি। তারপর এমন একটা অদ্ভুত আওয়াজওলা অস্ত্র দিয়ে কাজ সেরেছে যার আওয়াজে চক্ষের নিমেষে জেনে গেছে ব্যাপারটা কী–অথচ সে-অস্ত্র বাড়িতে আগে দেখা যায়নি। সূচনাটা নিশ্চয় সম্ভবপর মনে হচ্ছে না, তাই নয় কি?

    না মোটেই মনে হচ্ছে না।

    তাহলে সবাই মানছেন যে আওয়াজটা হওয়ার এক মিনিটের মধ্যে বাড়িসুষ্ঠু লোক জড়ো হয়েছিল এখানে অ্যামিস থেকে আরম্ভ করে সবাই। তাহলে কি বলতে চান এইটুকু সময়ের মধ্যে অপরাধী কোণে দাগ ফেলেছে, জানলার পাল্লা খুলেছে, গোবরাটে রক্ত লাগিয়েছে, মৃত ব্যক্তির আঙুল থেকে বিয়ের আংটি খুলে নিয়েছে এবং তারপরেও অনেক কাণ্ড করেছে? অসম্ভব!

    হোমস বললে, ভারি সুন্দর বলেছেন। জলের মতো পরিষ্কার। একমত আপনার সঙ্গে!

    তাহলে ফিরে আসতে হচ্ছে থিয়োরিতে লোকটা এসেছিল বাইরে থেকে। অসুবিধে এখনও অনেক রয়েছে, কিন্তু সেসবকে আর অসম্ভব বলা যায় না। লোকটা বাড়ি ঢুকেছে সাড়ে চারটে থেকে ছ-টার মধ্যে তার মানে সন্ধে যখন হচ্ছে তখন থেকে ড্রব্রিজ ওঠানোর মধ্যে। বাড়িতে অতিথি ছিলেন, দরজা খোলা ছিল, কাজেই বাধা পাওয়ার কথাও নয়। হয়তো সে মামুলি চোর ছাচোড় অথবা আগে কোনো কারণে রাগ ছিল মি. ডগলাসের ওপর। ব্যক্তিগত আক্রমণের থিয়োরিটা অনেক বেশি সম্ভবপর দুটি কারণে প্রথমত, মি. ডগলাস জীবনের বেশির ভাগ কাটিয়েছেন আমেরিকায়। দ্বিতীয়ত শটগানটা মনে হচ্ছে আমেরিকার তৈরি। এই ঘরটাই আগে পড়ে বলে সুট করে জানলা খুলে ঢুকল ভেতরে, লুকিয়ে রইল পর্দার আড়ালে। রইল রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত। ওই সময়ে ঘরে ঢুকলেন মি. ডগলাস। কথাবার্তা হয়েছে খুবই কম আদৌ যদি হয়ে থাকে। কেননা মিসেস ডগলাস বলছেন মি. ডগলাস তার কাছ থেকে চলে আসার পর বন্দুকের আওয়াজ শোনা পর্যন্ত সময়টা কয়েক মিনিটের বেশি নয়।

    মোমবাতিও তাই বলে, বললে হোমস।

    ঠিক বলেছেন। মোমবাতিটা নতুন, কিন্তু আধ ইঞ্চির বেশি পোড়েনি। আক্রান্ত হওয়ার আগেই টেবিলে রেখেছিলেন মোমবাতি, নইলে ঠিকরে পড়ত মেঝেতে। এ থেকেই বোঝ যাচ্ছে ঘরে ঢোকার সঙ্গেসঙ্গে তাঁর ওপর চড়াও হয়নি আততায়ী। মি. বার্কার ঘরে ঢুকে লক্ষ জ্বেলেছিলেন।

    পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।

    বেশ, এখন এই লাইনেই ঘটনাগুলো তৈরি করে নেওয়া যাক। মি. ডগলাস ঘরে ঢুকলেন। মোমবাতি টেবিলে রাখলেন। পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে এল একটা লোক। হাতে তার শট গান। বিয়ের আংটিটা সে খুলে দিতে বললে–ভগবান জানেন কেন বললে–কিন্তু আংটিই চাওয়া হয়েছিল। আংটি দিলেন মি. ডগলাস। তারপরই হয় ঠান্ডা মাথায়, আর না হয় ধস্তাধস্তির ফলে এইরকম বীভৎসভাবে ডগলাসকে গুলি করল লোকটা মাদুরের ওপর পড়ে থাকা হাতুড়ি তুলে হয়তো মারতে গিয়েছিলেন। ডগলাস বন্দুক ফেলে দিয়ে অদ্ভুত কার্ডটা রাখল পাশে কার্ডে লেখা V. V. 341-এর মানে যাই হোক না কেন–পালিয়ে গেল জানলা দিয়ে–সিসিল বার্কার যখন এ-ঘরে মৃতদেহ আবিষ্কার করছেন, ঠিক তখনই সে পরিখা পেরোচ্ছে। কীরকম লাগল বলুন, মি. হোমস। অত্যন্ত ইন্টারেস্টিং, কিন্তু একটু কম বিশ্বাসযোগ্য।

    ফেটে পড়ল ম্যাকডোনাল্ড এক্কেবারে ননসেন্স কথাবার্তা। খুন একজন করেছে ঠিকই কিন্তু তুমি যেভাবে বললে সেভাবে ছাড়াও যে খুনটা হতে পারে, পরিষ্কার প্রমাণ করে দিতে পারি আমি। পালানোর পথ বন্ধ করে তার লাভ? নিস্তব্ধতাই যখন তার চম্পট দেওয়ার একমাত্র সুযোেগ, শট-গান ছুঁড়ে সেই সুযোগ নষ্ট করে তার লাভ? মি. হোমস, আপনিই পথ দেখান নিজেই তো বললেন মি. হোয়াইট ম্যাসোনের যুক্তি আপনার মনে ধরেনি।

    তন্ময় হয়ে কথা শুনছিল হোমস। সজাগ কানে প্রতিটি শব্দ ধরে রেখেছে, তীক্ষ্ণ্ণ চোখে ডাইনে-বাঁয়ে সমানে ঘুরিয়েছে এবং গ্রন্থিল ললাটে দূর-কল্পনা ফুটিয়ে তুলেছে।

    এখন হাঁটু গেড়ে বসল মৃতদেহের পাশে। বলল, মি. ম্যাক, আরও কিছু ঘটনা হাতে না-এনে থিয়োরি খাড়া করাটা ঠিক হবে না। আরে সর্বনাশ! চোটগুলো দেখছি সত্যিই বীভৎস! খাসচাকরকে একটু ডাকা যাবে?… অ্যামিস, ডগলাসের হাতে বৃত্তের মাঝে ত্রিভুজের এই অত্যন্ত অদ্ভুত দাগটা নাকি প্রায়ই তোমার চোখে পড়ত?

    আজ্ঞে, হ্যাঁ।

    দাগটার মানে কী হতে পারে, এই ধরনের আন্দাজি কথাবার্তা কানে এসেছে?

    আজ্ঞে , না।

    দাগটা দেওয়ার সময়ে নিশ্চয় যন্ত্রণাও খুব হয়েছিল। নিঃসন্দেহে পোড়ানোর দাগ। মি. ডগলাসের চোয়ালের কোণে ছোট্ট এক টুকরো প্লাস্টার দেখেছি। উনি বেঁচে থাকার সময়ে এ-প্লাস্টার দেখেছিলে?

    আজ্ঞে হ্যাঁ। গতকাল সকালে দাড়ি কামাতে গিয়ে কেটে ফেলেছিলেন।

    এর আগে কখনো দাড়ি কামাতে গিয়ে গাল কেটে ফেলতে দেখেছ?

    অনেক দিন হল দেখিনি।

    প্রণিধানযোগ্য? বললে হোমস। নিছক কাকতালীয় হতে পারে, অথবা ঘাবড়ে থাকার লক্ষণও হতে পারে–আসন্ন বিপদাশঙ্কার ভয়ে সিটিয়ে থাকার লক্ষণ। অ্যামিস, গতকাল ওঁর ব্যবহারে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ করেছিলেন?

    একটু অস্থির আর উত্তেজিত দেখেছিলাম।

    আচ্ছা! আক্রমণটা তাহলে হয়তো অপ্রত্যাশিত নয়। একটু এগাতে পেরেছি বলে মনে হচ্ছে নয় কি? মি. ম্যাক, জেরাটা নিশ্চয় আপনিই করবেন?

    না, মি. হোমস। আমার চেয়ে ভালো লোকের হাতে জেরার ভার তো রয়েছে।

    বেশ, বেশ, তাহলে এই কার্ডটা নিয়ে কথা বলা যাক– V.V. 341… এবড়োখেবড়ো কার্ডবোর্ড। এ ধরনের বোর্ড বাড়ির মধ্যে আছে?

    মনে তো হয় না।

     

    ডেস্কের সামনে গেল হোমস। দুটো দোয়াত থেকেই একটু করে কালি শুষে নিল ব্লটিংপেপারে। বললে, এ-ঘরে এ-লেখা হয়নি। এটা কালো কালি, বোর্ডের লেখাটা একটু বেগুনি। মোটা কলমে লেখা–এ-কলমগুলোর নিব দেখছি বেশ সরু। না, এ অন্য কোথাও লেখা হয়েছে। অ্যামিস, লেখা দেখে তোমার কিছু মনে হচ্ছে?

    আজ্ঞে না, একদম না।

    মি. ম্যাক, আপনার কী মনে হয়?

    গুপ্তসমিতি-টমিতি গোছের কিছু একটা ব্যাপার এর মধ্যে আছে মনে হচ্ছে। তাদের এই ব্যাজটাও সেই সমিতির চিহ্ন।

    আমারও তাই ধারণা, বললেন হোয়াইট ম্যাসোন।

    কাজ চালানোর অনুমিতি হিসেবে ধারণাটা গ্রহণ করা যেতে পারে। তারপর দেখা যাবেখন অসুবিধাগুলো অদৃশ্য হয় কতখানি। এই ধরনের একটা সমিতির একজন চর ঢুকল বাড়িতে, ওত পেতে রইল মি. ডগলাসের জন্যে, মাথা উড়িয়ে দিল এই অস্ত্র দিয়ে, পালিয়ে গেল পরিখার জলকাদা ঠেলে তার আগে মৃতব্যক্তির পাশে রেখে দিল এই কার্ডখানা, যাতে খবরটা সংবাদপত্রে ছাপা হলেই সমিতির অন্য সদস্যরা জেনে যায় যে প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গেছে। সব তো হল। বেশ খাপ খেয়ে গেল। কিন্তু দুনিয়ার এত অস্ত্র থাকতে এ-অস্ত্রটা আনা হল কেন?

    ঠিক বলেছেন।

    আংটিটাই-বা খোয়া গেল কেন?

    ঠিকই তো।

    কেউ ধরাই-বা পড়ল না কেন? দুটো বেজে গেছে। ধরে নিচ্ছি, ভোর থেকেই চল্লিশ মাইলের মধ্যে প্রতিটি কনস্টেবল হন্যে হয়ে খুঁজছে জলে-ভেজা একজন আগন্তুককে।

    তা ঠিক, মি. হোমস।

    কাজেই যদি কোথাও লুকিয়ে না-পড়ে অথবা জামাকাপড় পালটে ভোল ফিরিয়ে না-নেয়, তাহলে কিন্তু তার ধরা পড়ে যাওয়া উচিত। পুলিশের চোখে পড়তই। তা সত্ত্বেও দেখুন, এখনও পর্যন্ত সে পুলিশের চোখে পড়েনি। জানালার সামনে গিয়ে আতশকাচ দিয়ে গোবরাটের রক্তচিহ্ন দেখতে দেখতে বললে হোমস। স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে জুততার ছাপ। আশ্চর্য রকমের চওড়া–চ্যাপটা বলা চলে। অদ্ভুত তো। কোণের এই কাদার ছাপ থেকে এইটুকুই শুধু ধরা যাচ্ছে যে শুকতলার আকারটা ভালো। ছাপগুলো কিন্তু অত্যন্ত অস্পষ্ট। সাইড টেবিলের তলায় এটা আবার কী?

    মি. ডগলাসের ডাম্বেল, বললে অ্যামিস।

    ডাম্বেল একটাই তো দেখছি। আর একটা কোথায়?

    জানি না, মি. হোমস। একটাই হয়তো আছে। অনেকদিন দেখিনি ডাম্বেল দুটো।

    একটা ডাম্বেল–সিরিয়াস হোমসের কণ্ঠ, কিন্তু কথা শেষ হওয়ার আগেই জোরালো টোকা পড়ল দরজায়। সটান আমাদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম দীর্ঘকায় এক পুরুষকে, রোদেপোেড়া মুখ, দাড়ি-গোঁফ পরিষ্কার কামাননা, শক্তসমর্থ ক্ষিপ্র আকৃতি। যাঁর কথা শুনেছি, ইনিই যে সেই সিসিল বার্কার তা বুঝতে দেরি হল না আমার। কর্তৃত্বব্যঞ্জক দুই চোখের জিজ্ঞাসাপূর্ণ দৃষ্টি পিচ্ছিল মসৃণ গতিতে ঘুরে গেল আমাদের প্রত্যেকের মুখের ওপর দিয়ে।

    বললে, কথায় বাগড়া দেওয়ার জন্যে দুঃখিত। কিন্তু সর্বশেষ ঘটনাটা আপনাদের জানা দরকার।

    ধরা পড়েছে?

    অদৃষ্ট অতটা প্রসন্ন নয়! তবে তার সাইকেলটা পাওয়া গেছে। সাইকেল ফেলেই পালিয়েছিল। আসুন না, এসে দেখে যান। বেশি দূর নয়, সদর দরজা থেকে এক-শো গজের মধ্যে।

    চিরহরিৎ ঝোপঝাড়ের লুকোনো জায়গা থেকে সাইকেলটা টেনে বার করে রাস্তায় রেখে দাঁড়িয়েছিল কয়েকজন সহিস আর নিষ্কর্মা ব্যক্তি। রাজ-হুইটওয়ার্থ সাইকেল, বহু ব্যবহারে জীর্ণ, দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কর্দমাক্ত। একটা ঝোলার মধ্যে তেলের টিন আর স্প্যানার যন্ত্র মালিক সম্বন্ধে এ ছাড়া আর সূত্র নেই।

    ইনস্পেকটর বললেন, পুলিশের দারুণ কাজে লাগবে। নম্বর লাগিয়ে খাতায় লিখে রাখা যাক। জিনিসটা পেয়ে আমাদের উপকার হবে ঠিকই, কোন চুলোয় সে গেছে জানতে–পারলেও কোত্থেকে এসেছে এবার জানা যাবে। কিন্তু এমন একটা জিনিস ফেলে যাওয়ার কারণটা তো বুঝছি না। এটা ফেলে রেখেই-বা সে গেল কোথায়? মি. হোস, মাথায় কিছুই ঢুকছে না।

    তাই নাকি? চিন্তা নিবিড় মুখে বলে বন্ধুবর। ভারি আশ্চর্য তো।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশার্লক হোমস সমগ্র ২ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন
    Next Article When the World Screamed – Arthur Conan Doyle

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }