Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শার্লক হোমস সমগ্র ১ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    লেখক এক পাতা গল্প813 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৯. বডিমাস্টার

    ম্যাকমুর্দো হল সেই লোক যে নিজের অস্তিত্ব ঝটপট হাড়েহাড়ে টের পাইয়ে ছাড়ে আশপাশের লোকদের। শ্যাফটারের আস্তানাতেও সাতদিন যেতে-না-যেতেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করল সে। দশ বারো জন বোর্ডার ছিল সেখানে। কিন্তু তারা হয় দোকান পশারির মামুলি কেরানি, নয় তো কারখানার ফোরম্যান সাতে নেই পাঁচে নেই, পরিষ্কার লোক—তরুণ আইরিশম্যান যে ক্ষমতায় ক্ষমতাবান–তার ধারেকাছেও আসে না। সন্ধে নাগাদ একসঙ্গে আড্ডায় বসলে দেখা যেত সবচেয়ে মনমাতানো গান জুড়েছে ম্যাকমুর্দো, জমিয়ে কথা বলতেও তার জুড়ি নেই, ঠাট্টা-তামাশাতে তাকে টেক্কা মারার মতো কেউ নেই। সব কিছুতেই সে উজ্জ্বল, সপ্রতিভ, চমকপ্রদ। সঙ্গী হিসেবে ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা তার আছে বলেই চুম্বকের মতো কৌতুকের বিকিরণে নিজের চারধারে বন্ধু জোটাতে পারে অনায়াসেই।

    এ ছাড়াও কিন্তু আর একটা গুণ ছিল তার। মাঝে মাঝে আচমকা দপ করে জ্বলে উঠত সাংঘাতিক রাগে–রেলের কামরাতেই সে-নমুনা দেখা গেছে। প্রচণ্ড এই ক্রোধের জন্যে আরও বেশি খাতির পেয়েছে সে তার প্রতি ভয় আর শ্রদ্ধা বেড়েছে বহু গুণে। আইন-আদালতের ওপর তার আত্যন্তিক ঘেন্না কারো প্রাণে জাগিয়েছে পুলক, কারো প্রাণে আতঙ্ক। আইন সম্পর্কিত সব ব্যাপারেই ওর বিজাতীয় তিক্ততায় কেউ পেয়েছে ভয়, কেউ পেয়েছে আনন্দ।

    প্রথম দর্শনেই এ-বাড়ির মেয়ের রূপলাবণ্যে সে যে মুগ্ধ, খোলাখুলিভাবে তারিফ করে প্রথম থেকেই তা স্পষ্ট করে তুলেছিল। পাণিপ্রার্থী হিসেবেও অযোগ্য সে নয়। দু-দিনের দিন মেয়েটিকে বলল, ভালোবাসি; তারপর থেকে হামেশাই বলতে লাগল একই কথা। মেয়েটি তাকে নিরাশ করবে কিনা, তা নিয়ে মাথা ঘামাল না মুহূর্তের জন্যেও।

    বলত চিৎকার করে, আর একজন আবার কে। গোল্লায় যাক সে! নিজের চরকায় তেল দিক সে! জীবনে যে-সুযোগ একবারের বেশি আসে না, অন্তরের সেই বাসনাকে আর একজনের জন্যে জলাঞ্জলি দিতে হবে নাকি? যত খুশি না বল না কেন এট্টি, একদিন তোমাকে হা বলতেই হবে। আমার বয়স এমন কিছু হয়নি–সেদিনের পথ চেয়ে থাকব আমি।

    পাণিপ্রার্থী হিসেবে সে যে বিপজ্জনক তা তার ওই মন ভুলোনো মিষ্টি কথা আর বাকপটু আইরিশ রসনার মধ্যেই সুস্পষ্ট হয়ে উঠল। এ ছাড়াও তার সম্বল অনেক অভিজ্ঞতার ইন্দ্রজাল, মেয়েদের মন জয় করার রহস্য এবং সর্বোপরি মেয়েটিরই প্রেম। কাউন্টি মন্যাঘ্যান তার স্বদেশ। সেখানকার মনোহর উপত্যকা, দূরস্থিত অপরূপ দ্বীপ, নীচু পাহাড় আর সবুজ প্রান্তরের অজস্র ছবি উপহার দিত মুখে মুখে। পাঁক আর তুষার-মলিন এই দেশের পটভূমিকায় কল্পনারঙিন সে-দেশকে মনে হত আরও বেশি সুন্দর। এ ছাড়াও সুবিপুল অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল সে উত্তরাঞ্চল সম্পর্কে, মিচিগানের কাঠের শিবির আর ডেট্রয়েটের নগরজীবন সম্পর্কেও জ্ঞান তার গভীর, বাফেলো তার নখদর্পণে এবং শিকাগোের এক করাতকলে কাজ করার সময়ে অনেক কিছুই জেনেছে সেই শহরের। তারপরে কথায় কথায় এসেছে রোম্যান্সের আভাস। বিশাল শহর শিকাগোয় থাকার সময়ে আবেগময় এমন সব অদ্ভুত আর প্রাণের ব্যাপার ঘটেছিল, যা নাকি বলা সমীচীন নয়। সতৃষ্ণনয়নে বলত হঠাৎ চলে আসার কাহিনি, অনেকদিনের সম্পর্ক আচমকা ছিন্ন হয়ে যাওয়ার গল্প, ধু-ধু বিষণ্ণ এই অজানা দেশে পালিয়ে আসার উপাখ্যান কৃষ্ণকালো দুই আঁখিতে সুগভীর মমতা আর সমবেদনা নিয়ে প্রতিটি কথা হৃদয় দিয়ে শুনত এট্টি দুটিই অতি মহৎ গুণ যা শেষ পর্যন্ত এবং স্বভাবতই আচমকা মোড় নিতে পারে পবিত্র প্রেমে।

    ম্যাকমুর্দো সুশিক্ষিত। তাই হিসেবরক্ষকের একটা সাময়িক চাকরি জুটিয়ে নিয়েছিল। এই কাজেই বাইরে থাকতে হত সারাদিন, ফলে এনসেন্ট অর্ডার অফ ফ্রিম্যান লজের সর্বপ্রধানের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। গাফিলতিটা একদিন মনে করিয়ে দিল মাইক স্ক্যানল্যান–যার সঙ্গে দেখা হয়েছিল ট্রেনে। একই লজের সদস্য সে একদিন সন্ধ্যায় দেখা করতে এল ম্যাকমুর্দোর সাথে। লোকটা আকারে ছোটোখাটো, মুখটা ধারালো, একটুতেই ঘাবড়ে যায়। চোখ কালো। খুব খুশি ম্যাকমুর্দোকে ফের দেখে। দু-গেলাস হুইস্কি পান করার পর আসার উদ্দেশ্যটা বলল।

    ম্যাকমুর্দো, তোমার ঠিকানাটা মনে ছিল বলেই সোজা চলে এলাম। বডিমাস্টারের সঙ্গে এখন দেখা করনি দেখে অবাক হচ্ছি। ম্যাকগিন্টির কাছে এখনও না-যাওয়ার কারণটা কি বলতে পারো?

    চাকরি খুঁজতে হচ্ছিল যে। বড় ব্যস্ত ছিলাম।

    চুলোয় যাক সব কাজ, ওর সঙ্গে দেখা করার মতো সময় তোমার করতেই হবে। আশ্চর্য লোক তো তুমি! যেদিন এলে এখানে, তার পরের দিনই সকালে ইউনিয়ন হাউসে গিয়ে নামটা লিখিয়ে আসা উচিত ছিল। ম্যাকগিন্টির বিষ নজরে পড়লে কিন্তু না, না, তা যেন না হয়।

    মৃদু বিস্ময় দেখায় ম্যাকমুর্দো।

    স্ক্যানল্যান, বছর দুই হল লজের মেম্বার হয়েছি আমি, কিন্তু কর্তব্য যে এত জরুরি হতে পারে, তা তো শুনিনি কখনো।

    শিকাগোতে–হতে পারে, এখানে এইরকমই।

    কিন্তু একই সোসাইটি তো এখানেও।

    তাই কি? বেশ কিছুক্ষণ ওর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে স্ক্যানল্যান। কীরকম যেন একটা করাল ছায়া পড়ে চোখের তারায়।

    তাই নয় কি?

    একমাসের মধ্যেই জবাবটা তুমি নিজেই দেবে। শুনলাম আমি ট্রেন থেকে নেমে যাওয়ার পর টহলদার পুলিশের সঙ্গে তোমার কথা হয়েছিল?

    তুমি জানলে কী করে?

    খবর ঠিক বেরিয়ে যায় ভালো হোক, মন্দ হোক, কোনো খবরই চাপা থাকে না এ-অঞ্চলে।

    হ্যাঁ হয়েছিল। কুত্তাগুলোকে যা বলবার বলে দিয়েছি।

    বলো কী! ম্যাকগিন্টি তোমাকে যে মাথায় নিয়ে নাচবে।

    তাই নাকি? পুলিশ কি তারও চক্ষুশূল?

    অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল স্ক্যানল্যান।

    যাবার জন্যে উঠে পড়ে বললে, নিজেই গিয়ে দেখে এসো না। কিন্তু যদি না-যাও, পুলিশের বদলে তুমিই তার চক্ষুশূল হবে। বন্ধুর কথা শোননা, এখুনি যাও।

    ঘটনাক্রমে সুযোগটা এল সেইদিনই। সেই রাতেই আর একজনের সঙ্গে দেখা করতে হল ম্যাকমুর্দোকে। ম্যাকগিন্টির সঙ্গে দেখা করার চাইতেও এই সাক্ষাৎকারটি আরও বেশি জরুরি হলে কী হবে, কথাবার্তার পর ভেতর থেকে সে তাগিদ অনুভব করল ম্যাকগিন্টির সঙ্গে দেখা করার। আগের চাইতে এট্টির প্রতি তার দুর্বলতার বাড়াবাড়ির জন্যেই হোক, কি সরলমনা সুইডিশ গৃহস্বামীর মন্থর মগজে বিষয়টা ধীরে ধীরে প্রবেশ করার জন্যেই হোক, যুবাপুরুষকে নিজের প্রাইভেট রুমে হাতছানি দিয়ে ডেকে নিয়ে গেলেন বোর্ডিং-হাউসের মালিক এবং বিনাভূমিকায় কাজের কথা আরম্ভ করলেন।

    বললেন, মিস্টার, মনে হচ্ছে আমার মেয়ের দিকে ঝুঁকেছেন আপনি। ঠিক কিনা?

    ঠিক, জবাব দিল যুবাপুরুষ।

    তাহলে সোজা বলে দিই, সুবিধে হবে না। আপনার আগেই আর একজন এসে গেছে।

    জানি এট্টি বলেছে।

    নামটা বলেছে কি?

    না; জিজ্ঞেস করেছিলাম, বলেনি।

    ভয় পাবেন বলে বলেনি।

    ভয় পাব। নিমেষে জ্বলে উঠল ম্যাকমুর্দো।

    হ্যাঁ বন্ধু হ্যাঁ! তাকে ভয় পাওয়ার মধ্যে লজ্জা নেই। নাম তার টেড বলড়ুইন।

    সে আবার কে?

    স্কোরারস! নামটা আগে শুনেছি বটে। সবাই দেখছি কানাকানি করে স্কোরারস! এত ভয় কীসের? স্কোরারস মানে কারা?

    ভয়ংকর এই সমিতির কথা উঠলেই সবাই যেমন গলা নামিয়ে নেয়, ঠিক সেইভাবে আপনা হতে গলা খাদে নেমে এল গৃহস্বামীর।

    বললেন, স্কোরারস-রা এনসেন্ট অর্ডার অফ ফ্রিম্যান।

    চমকে ওঠে যুবাপুরুষ।

    সেকী। আমি নিজেও তো অর্ডারের মেম্বার।

    আপনি! আগে বলেননি কেন? হপ্তায় এক-শো ডলার দিলেও বাড়িতে থাকতে দিতাম না।

    কিন্তু অর্ডারের ওপর এত খাপ্পা কেন? অর্ডার তো একটা দানধ্যান আর মানুষে মানুষে সম্প্রীতি বৃদ্ধির সংস্থা। নিয়ম-টিয়ম সেইরকমই।

    ওসব অন্য জায়গায়–এখানে নয়!

    এখানে কী?

    মানুষ খুনের সমিতি।

    অবিশ্বাসের হাসি হাসল ম্যাকমুর্দো। বলল, প্রমাণ করতে পারেন? প্রমাণ করতে হবে! পঞ্চাশটা খুন কি প্রমাণ নয়? মিলম্যান আর ভ্যান শস্ট, নিকলসন পরিবার, বুড়ো মি. হিয়াম, ছোট্ট বিলি জেমস। এ-রকম আরও অনেকের জীবন যাওয়ার পরেও প্রমাণ চাই? এ-তল্লাটে এমন কোনো পুরুষ কি নারী আছে যে এসব জানে না? এর পরেও চাই প্রমাণ?

    ম্যাকমুর্দো সমস্ত অন্তর দিয়ে বললে, দেখুন মশায়, হয় যা বলেছেন তা ফিরিয়ে নিন, নইলে প্রমাণ করুন। আমি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে দুটোর একটা করতেই হবে আপনাকে। আমার জায়গায় নিজেকে বসান। এ-শহরে আমি নতুন। যে-সমিতির আমি সদস্য, আমি জানি তা অত্যন্ত নিরীহ সমিতি–অন্যায়ের মধ্যে নেই। যুক্তরাষ্ট্রের এ-মোড় থেকে ও-মোড় পর্যন্ত যেখানে যাবেন, দেখবেন একই চেহারা কোনোরকম অন্যায়ের মধ্যে নেই সমিতির কোনো শাখা। এখানকার শাখায় নাম লেখাব বলে তৈরি হচ্ছি, এমন সময়ে আপনি বললেন এটা একটা মানুষ খুনের সমিতি–নাম, স্কোরারস। মি. শ্যাফটার, হয় আপনি ক্ষমা চান, নইলে যা বলেছেন তা বুঝিয়ে বলুন।

    মিস্টার, দুনিয়া যা জানে আমি আপনাকে শুধু তাই বলতে পারি। এরা সবাই এক। একজনের ওপরওয়ালার সঙ্গে আরেকের ওপরওয়ালার কোনো তফাত নেই। একজনকে যদি চটিয়েছেন তো আরেকজন আপনাকে মরণ মার মারবে। অনেকবার সে প্রমাণ হয়ে গেছে।

    সমস্ত গুজব। আমি প্রমাণ চাই! বললেন ম্যাকমুর্দো।

    বেশিদিন এখানে থাকলেই প্রমাণ নিজেই পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভুললে চলবে না আপনি এদেরই একজন। ওদের মতো আপনিও শিগগির জঘন্য হয়ে যাবেন। আপনি আর কোথাও গিয়ে থাকুন, মিস্টার। জায়গা পেয়ে যাবেন। এখানে রাখতে পারব না। ওদের একজন এট্টির সঙ্গে প্রেম করবে না বলতেও পারব না কিন্তু আর একজন বোর্ডার হয়ে থাকবে, তা কি হয়? খুব খারাপ। না, মশাই, আজ রাতে এখানে আর শোবেন না।

    এইভাবেই একাধারে আরামের ঘর আর প্রাণের সখীর কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার নির্বাসনদণ্ড পেল বেচারা ম্যাকমুর্দো। সেই রাতেই বসবার ঘরে এটিকে একা পেয়ে দুঃখের কাহিনি বর্ষণ করল তার কানে।

    বললে, তোমার বাবা তো আমাকে নোটিশ দিয়ে দিলেন। শুধু ঘর ছাড়ার নোটিশ হলে ধার ধারতাম না। কিন্তু বিশ্বাস করো এট্টি, মাত্র সাতদিন আগে তোমাকে দেখলেও আমার চোখের মণি হয়ে উঠেছ তুমি। তুমি ছাড়া দুনিয়া এখন অন্ধকার আমার কাছে।

    আঃ, চুপ করুন না! ওভাবে কথা বলবেন না, মি. ম্যাকমুর্দো! বলিনি আপনাকে বড্ড দেরি করে ফেলেছেন? আপনার আগেই যে এসেছে, তাকে বিয়ে করব বলিনি ঠিকই, কিন্তু আর কাউকে বিয়ের কথা দেওয়াও আর সম্ভব নয়।

    প্রথমে এলে কি কপাল খুলত?

    দু-হাতে মুখ ঢাকা দেয় সুন্দরী।

    ফুঁপিয়ে উঠে বলে, ভগবান তাই করলেন না কেন।

    নিমেষের মধ্যে এট্টির সামনে নতজানু হয়ে বসে পড়ে ম্যাকমুর্দো।

    ঈশ্বরের দোহাই এট্টি, তাই হোক! কাকে কি কথা দিয়েছ তার জন্যে আমার আর তোমার দুটো জীবনই নষ্ট করবে নাকি? মন যা চায়, বিবেক যা বলে তাই করো, সখী! কথা যখন দিয়েছিলে, তখন কি জানতে, যা বলছ তার মানে কী? কাজেই এখন বিবেকই তোমাকে ঠিক পথ দেখাবে।

    বলিষ্ঠ বাদামি হাতে এট্টির ধবধবে সাদা দু-হাত আঁকড়ে ধরে ম্যাকমুর্দো।

    শুধু বলো তুমি আমার–তারপর কপালে যাই থাকুক না কেন লড়ে যাব পাশাপাশি।

    এখানে নয় তো?

    হ্যাঁ, এখানেই।

    না, জ্যাক, না? ম্যাকমুর্দোর বাহুবন্ধনে বাঁধা পড়ে এট্টি! এখানে তা হতেই পারে না। অনেক দূরে কোথাও নিয়ে যেতে পারো না?

    মুহূর্তের জন্য যেন একটা দ্বন্দ্ব ভেসে যায় ম্যাকমুর্দোর মুখের ওপর দিয়ে–কিন্তু তা ক্ষণিকের দ্বন্দ্ব–পরক্ষণেই গ্রানাইট পাথরের মতো কঠিন হয়ে ওঠে মুখাবয়ব।

    বলে, না, যা হবে এখানেই হোক। দুনিয়ার কারো ক্ষমতা নেই তোমাকে কেড়ে নিয়ে যায় আমার কাছ থেকে। আমি তোমায় আগলাব–এইখানে যেখানে আছি, সেইখানে।

    একসঙ্গে দু-জনে পালিয়ে গেলে হয় না?

    না, এট্টি। আমি পালাব না।

    কিন্তু কেন?

    তাড়া খেয়ে একবার যদি পালাই তো জীবনে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব না। তা ছাড়া ভয়টা কীসের? স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক আমরা। আমি যদি তোমাকে ভালোবাসি, আর তুমি যদি ভালোবাসো আমাকে মাঝে আসবার মতো বুকের পাটা কারো আছে কি?

    জ্যাক, তুমি জানো না। কদ্দিন-বা আর আছে এখানে। বলড়ুইনকে তুমি চেনো না। ম্যাকগিন্টি আর তার স্কোরারসদেরও চেনো না।

    চিনি না, ডরাই না, তোয়াক্কা করি না। ডার্লিং, জীবনটা আমার খারাপ লোকের সঙ্গে কেটেছে। আমি তাদের ভয় পাইনি–তারাই আমাকে ভয় করতে শিখেছে। তোমার বাবা বললেন স্কোরারসরা নাকি অপরাধের পর অপরাধ করে যায়, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সে-খবর রাখে–নাম-ধাম পর্যন্ত জানে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের বিচার হয় না কেন বুঝি না? জবাব দাও এট্টি, বুঝিয়ে দাও।

    সাক্ষী হবার মত বুকের পাটা কারো নেই বলেই বিচার হয় না। এ-দুঃসাহস যে দেখাবে, এক মাসের বেশি আর তাকে বাঁচতে হবে না। তা ছাড়া ওদের নিজেদের লোক সবসময়ে তৈরি থাকে মিথ্যে সাক্ষী দেওয়ার জন্যে গিয়ে বলে আসে অমুক সময়ে আসামি অকুস্থল থেকে অনেক দূরে ছিল। কিন্তু জ্যাক এসব তো তোমার পড়া উচিত। আমি তো জানি যুক্তরাষ্ট্রে সব খবরের কাগজেই এ নিয়ে লেখালেখি হয়েছে।

    পড়েছি ঠিকই, তবে তা গল্প বলেই মনে হয়েছে। হয়তো কারণ আছে বলেই এরা এসব করে। হয়তো এ ছাড়া আর গতি নেই বলেই করে।

    জ্যাক, এ-কথা তোমার মুখে শুনতে চাই না। ঠিক এইভাবেই কথা বলে সেই আর একজন!

    বলড়ুইন এই কথা বলে বুঝি?

    সেইজন্যেই দু-চক্ষে দেখতে পারি না তাকে। জ্যাক, তবে শোনো আমার মনের কথা; ওকে আমি দেখতে পারি না ঠিকই কিন্তু ভয় না-করেও পারি না। ভয়টা শুধু নিজের জন্যে নয়–বাবার জন্যেও বটে। আমার মনের কথা যদি বলে বসি তাহলে বাবার দুর্গতির আর সীমা থাকবে না। তাই ভাসা ভাসা কথা দিয়ে কোনোমতে ঠেকিয়ে রেখেছি। সত্যি কথা বলতে গেলে এ ছাড়া আর উপায় নেই আমাদের। কিন্তু যদি আমাকে নিয়ে পালাও, বাবাকে নিয়ে এমন জায়গায় যাব যেখানে এই বদমাইশদের হাত কোনোদিনও পৌঁছোবে না।

    আবার সেই মানসিক দ্বন্দ্বের খেলা দেখা গেল ম্যাকমুর্দোর মুখের পরতে পরতে, গ্রানাইট কঠিন হয়ে উঠল প্রতিটি পেশি।

    এট্টি, কোনো ক্ষতি হবে না তোমার তোমার বাবারও হবে না। বদমাইশ যাদের বলছ, শেষকালে হয়তো দেখবে তাদের চাইতে কোনো অংশে আমি কম যাই না।

    না, জ্যাক, না। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।

    তিক্ত হাসল ম্যাকমুর্দো।

    হায় রে, আমার সম্বন্ধে কত কমই-না জানো তুমি! মনে তোমার পাপ নেই, তাই বুঝতে পারছ না কী লড়াই চলছে আমার ভেতরে। কিন্তু দেখো তো কে এল?

    আচমকা দড়াম করে দরজা দুইটি হাট করে খুলে লম্বা লম্বা পা ফেলে ঘরে ঢুকল একদল যুবক–ভাবখানা যেন এ-বাড়ির মালিক সে-ই। সুদর্শন, ম্যাকমুর্দোর মতোই বয়স আর গড়নপেটন–সেইরকমই বেপরোয়া, তুখোড়। চওড়া কিনারাওয়ালা মাথার টুপিটা পর্যন্ত খোলার দরকার মনে করেনি ছোকরা। টুপির তলায় সুশ্রী মুখের ভয়ংকর চোখ দুটো বর্বর চাহনি হেনে রয়েছে চুল্লির পাশে উপবিষ্ট যুগল মূর্তির দিকে। ছোকরার নাক বাজপাখির চঞ্চুর মতো টিকোলো, চোখ থেকে যেন দাপট ঠিকরে বেরুচ্ছে।

    ভীষণ ভয়ে ভ্যাবাচাকা খেয়ে তড়াক করে লাফিয়ে দাঁড়িয়ে উঠেছিল এট্টি।

    বললে, আসুন, মি. বলড়ুইন, আসুন। একটু আগেই এসে গেছেন। বসুন। খুব খুশি হলাম আপনাকে দেখে।

    পাছার ওপর দু-হাত রেখে পলকহীন চোখে ম্যাকমুর্দোর পানে চেয়ে রইল বলড়ুইন।

    জিজ্ঞেস করল কাটছাঁট গলায়, এ কে?

    আমার বন্ধু, মি. বলড়ুইন–নতুন বোর্ডার। আসুন মি. ম্যাকমুর্দো আলাপ করিয়ে দিই মি. বলড়ুইনের সাথে।

    খেকি চোখে মাথা হেলিয়ে অভিবাদন জানায় দুই যুবাপুরুষ।

    শুধোয় বলড়ুইন, মিস এট্টির সঙ্গে আমার সম্পর্কটা নিশ্চয় শোনা হয়ে গেছে?

    আপনাদের মধ্যে আদৌ যে কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে, এটাই তো মাথায় ঢোকাতে পারছি না।

    পারছেন না বুঝি? এবার পারবেন। আমার মুখেই তাহলে শুনে রাখুন–এ-ভদ্রমহিলা আমার এবার সরে পড়ুন, সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়ে পড়ুন।

    ধন্যবাদ। সান্ধ্যভ্রমণের মেজাজ নেই।

    নেই বুঝি? পাশবিক চোখজোড়া বিষম ক্রোধে যেন স্ফুলিঙ্গ বৃষ্টি করে, হাতাহাতির মেজাজ আছে মনে হচ্ছে, মি. বোর্ডার?

    তড়াক করে লাফিয়ে দাঁড়িয়ে উঠে ম্যাকমুর্দো বললে হুংকার ছেড়ে, তা আছে। এতক্ষণে একটা কথার মতো কথা বললেন প্রাণ জুড়িয়ে গেল।

    ভগবানের দোহাই, জ্যাক, ভগবানের দোহাই! ক্ষিপ্তের মতো চেঁচিয়ে ওঠে বেচারি এটি। জ্যাক, জ্যাক, ও তোমার সর্বনাশ করে ছাড়বে।

    আরে সব্বোনাশ! এর মধ্যে জ্যাক পর্যন্ত পৌঁছে গেছে? বিশ্রী দিব্যি গেলে বলে বলড়ুইন। অনেকদ্দূর গড়িয়েছে দেখছি?

    টেড, মাথাটা ঠান্ডা করো–অত নিষ্ঠুর হোয়ো না। আমার দোহাই টেড, ভালো যদি বেসে থাকো আমায়–মনটাকে বড়ো করো, ক্ষমার চোখে দেখো!

    ঠান্ডা গলায় ম্যাকমুর্দো বললে, এট্টি তুমি একটু বাইরে গেলে দুজনের মধ্যে মিটিয়ে নিতে পারতাম ব্যাপারটা। নয়তো, আমার সঙ্গে রাস্তায় আসতে পারেন মি. বলড়ুইন। রাতটা

    সুন্দর, এ-বাড়ির পরেই খানিকটা ফাঁকা মাঠও আছে।

    আপনাকে শায়েস্তা করার জন্যে আমার হাত নোংরা করার দরকার হবে না, জবাব দিল শত্রুপক্ষ। শেষকালে আপশোস করে মরতে হবে এ-বাড়িতে পা দেওয়ার জন্যে।

    সেটা এখনই হয়ে যাক না কেন। গলার শির তুলে বললে ম্যাকমুর্দো।

    মিস্টার, আমার যখন সময় হবে, তখন আসব আপনাকে মাথা ঘামাতে হবে না। দেখুন! আচমকা জামার আস্তিন গুটিয়ে দেখালে একটা অদ্ভুত চিহ্ন। চামড়ার ওপর যেন দাগিয়ে আঁকা। বৃত্তের মাঝে একটা ত্রিভুজ। মানে জানেন?

    জানি না, পরোয়াও করি না!

    জানবেন, শিগগিরই জানবেন। কথা দিয়ে গেলাম। বেশি দেরি লাগবে না। মিস এট্টির কাছেও এর মানে কিছু কিছু শুনবেনখন। এটি, পায়ে ধরতে হবে আমার কাছে আসার জন্যে এই বলে দিলাম। কথাটা কানে ঢুকেছে? পায়ে ধরতে হবে! তখন বুঝিয়ে দেব শাস্তি কাকে বলে। যা করেছ তার পুরস্কার না-পেলে চলে কি? পুরস্কার আমি দেব। জ্বলন্ত চোখেব দু-জনের পানে তাকিয়ে বোঁ করে পেছন ফিরে বেরিয়ে গেল বলড়ুইন–দড়াম করে দরজা বন্ধ হয়ে গেল পেছনে।

    কয়েক মুহূর্ত নির্বাক হয়ে রইল ম্যাকমুর্দো আর এটি। তারপর দু-হাতে ম্যাকমুর্দোকে জড়িয়ে ধরল এটি।

    জ্যাক, এত সাহস তোমার। কিন্তু ওতে কোনো কাজ হবে না, জ্যাক–পালাও! আজ রাতেই পালাও–হ্যাঁ, হ্যাঁ, আজ রাতেই! এ ছাড়া বাঁচবার আর পথ নেই। ও তোমায় প্রাণে মারবে। ওর চোখ দেখেই বুঝেছি তোমার আর রক্ষে নেই। তুমি একা, ওরা জন বারো বস ম্যাকগিন্টি আর লজের সমস্ত শক্তি ওদের পেছনে পারবে না, জ্যাক, পারবে না।

    বাহুমুক্ত হয়ে এট্টির মুখচুম্বন করল ম্যাকমুর্দো–আলগোছে ঠেলে বসিয়ে দিল চেয়ারে।

    সখী, আমার জন্যে ভয় পেয়ো না, মাথা খারাপ কোরো না। আমি নিজে ফ্রিম্যান–একই সমিতির সদস্য। তোমার বাবাকেও বলেছি। ওদের চেয়ে ভালো নাও হতে পারি–তাই বলছি আমাকে সাধুসন্তু ঠাউরে বোসো না। আমিও শেষ পর্যন্ত চক্ষুশূল হয়ে উঠতে পারি অনেক বলে ফেললাম।

    তুমি আমার চক্ষুশুল হবে? বেঁচে যতক্ষণ থাকব, ততক্ষণ তোমাকে ঘৃণা করতে আমি পারব না। শুনেছি, ফ্রিম্যান হওয়াটা এখানেই কেবল অপরাধ–অন্য কোথাও নয়। কাজেই তোমাকে খারাপ ভাবব কেন? কিন্তু জ্যাক, তুমি যদি ফ্রিম্যানই হও তো এখুনি গিয়ে বস ম্যাকগিন্টির সঙ্গে ভাব জমিয়ে নাও! তাড়াতাড়ি যাও জ্যাক, তাড়াতাড়ি যাও। আগে গিয়ে তোমার কথা বললা, নইলে কুত্তার দল লেগে যাবে তোমার পেছনে।

    ম্যাকমুর্দো বললে, আমিও তাই ভাবছিলাম। এখুনি গিয়ে কাজ পাকা করে নিচ্ছি। বাবাকে বলে দিয়ো আজ রাত্রে এখানেই শোব কাল সকালে অন্য জায়গা খুঁজে নেব।

    ম্যাকগিন্টির সেলুনে মদের আড্ডা রোজকার মতো আজও জমজমাট। শহরের যত বদমাশের প্রিয় জায়গা এই সেলুন। ম্যাকগিন্টি নিজেও খুব জনপ্রিয় ওর কর্কশ আমুদে স্বভাবের জন্য আসলে ওটা বাইরের মুখোশ–ভেতরকার অনেক কিছু রেখেঢেকে দেওয়ার প্রয়াস। জনপ্রিয়তা ছাড়াও লোকে তাকে ভয় করে। শহরের প্রত্যেকে তো বটেই, তিরিশ মাইলব্যাপী উপত্যকার সর্বত্র, এমনকী দু-পাশের পাহাড়ের ওপাশেও যারা থাকে ম্যাকগিন্টির নামে কেঁপে ওঠে। এই কারণেই তার মদের আড্ডা এত সরগরম–কেননা ম্যাকগিন্টির বিরাগভাজন হয়ে বা তার পৃষ্ঠপোষকতা উপেক্ষা করে থাকার মতো বুকের পাটা এ-তল্লাটে কারুর নেই।

    লোকটার গুপ্ত শক্তি আছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জানে নির্দয়ভাবে এই শক্তির প্রয়োগ করতে তিলমাত্র দ্বিধা সে করে না। এ ছাড়াও সে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী, জনগণের বরণীয় প্রতিনিধি, মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলর এবং পথ কমিশনার। এ-পদে সে এসেছে গণভোটের জোরে এবং ভোট দিয়েছে মার্কামারা বদমাইশদের দল–কৃপালাভের প্রত্যাশায়। ট্যাক্স আর ডিউটি আকাশছোঁয়া, অথচ জনগণের কাজকর্ম সম্পূর্ণ উপেক্ষিত দুর্নামের ধার ধারে না ম্যাকগিন্টি। হিসাব পরীক্ষকদের মোটা ঘুস খাইয়ে হিসাবের গোঁজামিল চাপা দিয়ে রাখে। সুধী নাগরিকরা প্রাণের ভয়ে নিঃসীম আতঙ্কে পাবলিক ব্ল্যাকমেলিংয়ের টাকা গুনে দেয় কড়ায়-গণ্ডায়। টু শব্দটি করতে পারে না। সাংঘাতিক দুর্দৈবর ভয়ে। এই কারণেই বছর বছর বস ম্যাকগিন্টির হিরের পিন আরও বেশি ঠেলে বেরিয়ে এসেছে, সোনার চেন আরও বেশি ভারী হয়েছে, মানিব্যাগ দিনকে দিন আরও পেটমোটা হয়েছে। সেলুনটাও ক্রমশ আকারে লম্বা হতে হতে মার্কার স্কোয়ারের পুরো একটা দিকই প্রায় দখল করে নিতে বসেছে।

    সেলুনের দুলন্ত দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল ম্যাকমুর্দো। লোক গিজগিজ করছে ভেতরে, তামাকের ধোঁয়া আর সুরার গন্ধে ভারী বাতাস। অত্যুজ্জ্বল আলোয় ঝলমল করেছে চারিদিক, মোটা গিল্টি করা প্রকাণ্ড দর্পণ ঝুলছে প্রতিটি দেওয়ালে চটকদার আলোর সহস্র প্রতিফলনে ঘরে যেন সহস্র সূর্য জ্বলছে। শার্টের আস্তিন গুটিয়ে জনাকয়েক মদ্য পরিবেশক পুরু ধাতুর চাদর দিয়ে মোড়া বার কাউন্টারের ভেতরে মদ ঢালা নিয়ে ব্যস্ত কাউন্টার ঘিরে মদের প্রত্যাশায় দাঁড়িয়ে গল্পগুজব করছে সুরাসক্তরা। কাউন্টার ঘিরে ভর দিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে একজন দীর্ঘকায় বলিষ্ঠ আকৃতির পুরুষ–ঠোঁটের ফাঁক থেকে বেরিয়ে রয়েছে একটা জ্বলন্ত চুরুট স্বনামধন্য ম্যাকগিন্টি স্বয়ং দাঁড়িয়ে কাউন্টারে। লম্বা কালো কেশর দেখে মনে হয় যেন একটা দানব বিশেষ। হনু পর্যন্ত ঢাকা কালো দাড়িতে। দাঁড়কাক কালো-চুল লুটোচ্ছে কলারের ওপর। ইটালিয়ানদের মতোই শ্যামবর্ণ গায়ের রং। চোখ দুটো অদ্ভুত রকমের কুচকুচে কালো–চাহনি সামান্য ট্যারা হওয়ার ফলে মুখখানা কেমন যেন কুটিল। এ ছাড়া লোকটার সবকিছুই মন কেড়ে নেওয়ার মতো। চালচলন সম্রান্ত, আকৃতি নিখুঁত, কথাবার্তা প্রাণখোলা প্রত্যেকের সঙ্গেই হাসিঠাট্টার মধ্যে দিয়ে যেন এক হয়ে যাচ্ছে। যে কেউ দেখলেই বলবে, এ তো দেখছি রুক্ষ কিন্তু সরল, সজ্জন পুরুষ–কথাবার্তা কাঠখোট্টা হলেও ভেতরটা খাঁটি। কিন্তু মিশমিশে কালো, অনুতাপহীন নিতল চক্ষুর দৃষ্টি যার ওপর পড়ে, তার কলজে পর্যন্ত শুকিয়ে যায় নামহীন আতঙ্কে শরীরের প্রতিটি অণু-পরমাণু দিয়ে উপলব্ধি করে সামনে দাঁড়িয়ে আছে সুপ্ত পৈশাচিকতার অনন্ত সম্ভাবনা–শক্তি, সাহস, আর ধূর্ততার ফলে তা সহস্রগুণ বেশি মারাত্মক।

    খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ সমাপ্ত হলে নিজস্ব উদ্ধত বেপরোয়া ভঙ্গিমায় কনুইয়ের গুঁতো মেরে ভিড় ঠেলে ম্যাকগিন্টির দিকে গেল ম্যাকমুর্দো। শক্তিমান গুরুকে ঘিরে দাঁড়িয়ে স্তাবকের দল। রসের অতি ছোট্ট হাসির কথাতেই অট্টহেসে ঘর ফাটিয়ে দিচ্ছে। এদেরও কনুইয়ের গুতোয় দু-পাশে সরিয়ে দিয়ে একদম সামনে গিয়ে দাঁড়াল ম্যাকমুর্দো। নিমেষে মিশমিশে কালো মৃতবৎ দুই চক্ষুর দৃষ্টি নিবদ্ধ হল নবাগত তরুণের ধূসর সাহসিক দুই চোখের ওপর চশমার কাচের মধ্য দিয়ে নির্ভীক চোখে চেয়ে রইল নবাগত নিজেও।

    ইয়ংম্যান, আপনার মুখ তো মনে করতে পারছি না।

    আমি এখানে নতুন মি. ম্যাকগিন্টি।

    ভদ্রলোকের উপর্যুক্ত উপাধিটা না-বলার মতো নতুন নিশ্চয় নয়?

    ইয়ংম্যান উনি কাউন্সিলর ম্যাকগিন্টি, পেছন থেকে শোনা গেল একটা কণ্ঠস্বর।

    দুঃখিত কাউন্সিলর। এ-অঞ্চলের কিছুই আমি জানি না। কিন্তু আমাকে বলা হয়েছে আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্যে।

    এই তো বেশ দেখা হয়ে গেল। যা দেখছেন, আমি ঠিক তাই। কীরকম মনে হয় আমাকে?

    সবে তো এলাম। আপনার শরীরের মতো হৃদয়টাও যদি বড়ো হয়, মুখের মতো মনটাও যদি নিখুঁত হয় তাহলে বেশি আর কিছুই চাইব না। বললে ম্যাকমুর্দো।

    আরেব্বাস! মাথার মধ্যে আইরিশ জিভ ঢুকিয়ে বসে আছেন দেখছি, সাক্ষাৎপ্রার্থীর ঔদ্ধত্য দেখে ঠিক কী বলা উচিত ভেবে পায় না ম্যাকগিন্টি। মর্যাদা বজায় রেখে গম্ভীর হবে না, হেসে জবাব দেবে? আমার শরীরটা তাহলে মনে ধরেছে?

    নিশ্চয়, বলে ম্যাকমুর্দো।

    আপনাকে বলা হয়েছিল আমার সঙ্গে দেখা করার জন্যে?

    হ্যাঁ।

    কে বলেছিল?

    ভারমিসার ৩৪১ নম্বর লজের ব্রাদার স্ক্যানল্যান। কাউন্সিলর, আপনার স্বাস্থ্যপান করছি–আমাদের পরিচয় যেন আরও নিবিড় হয়। মদের গেলাস হাতে ধরিয়ে দিয়ে গিয়েছিল একজন। এখন সেই গেলাস ঠোঁটের কাছে তুলে ধরে কড়ে আঙুল উঁচু করে ধরল ম্যাকমুর্দো এবং পান করল এক নিঃশেষে।

    সংকীর্ণ চোখে যুবাপুরুষকে নিরীক্ষণ করছিল ম্যাকগিন্টি। মিশমিশে কালো দুই ভুরু তুলে এখন বললে, আচ্ছা, এই ব্যাপার। তাহলে আপনাকে আরও একটু ভালো করে জানা দরকার মিস্টার–

    মি. ম্যাকমুর্দো।

    একটু ভালো করে, আরও একটু কাছ থেকে আপনাকে দেখা দরকার। এ-তল্লাটে মুখের কথায় কাউকে আমরা বিশ্বাস করি না, শুধু বিশ্বাসের ওপর সব কিছু ছেড়ে দিই না। বারের পেছনে এদিকে একটু আসুন, ইয়ংম্যান।

    ছোট্ট একটা ঘরের ভেতরে ম্যাকমুর্দোকে নিয়ে গিয়ে সতর্কভাবে দরজা বন্ধ করল ম্যাকগিন্টি। ঘরের চারদিকে লাইন দিয়ে সাজানো পিপে। নিজে বসল একটা পিপের ওপর। রক্তহিম-করা সেই চাহনি মেলে বেশ কিছুক্ষণ নীরবে নিরীক্ষণ করে গেল নবাগতকে চিন্তামগ্নভাবে কেবল চিবিয়ে চলল চুরুটের গোড়া। মিনিট দুয়েক বসে রইল এইভাবে–একটা কথাও বলল না।

    উৎফুল্লভাবে পর্যবেক্ষণ-পর্ব দেখছিল ম্যাকমুর্দো। একহাত কোটের পকেটে, আর একহাত তা দিচ্ছে বাদামি গোঁফে। আচম্বিতে ভীষণদর্শন একটা রিভলবার তুলে ধরল ম্যাকগিন্টি।

    বললে, ওহে জোকার, এটা দেখে রাখো। ইয়ার্কি মারতে এসেছ যদি বুঝতাম, এক গুলিতেই পরলোকে পৌঁছে দিতাম।

    স্বাগতমটা অদ্ভুত রকমের হয়ে গেল না? মর্যাদা-গম্ভীর কণ্ঠে বললে ম্যাকমুদো। নতুন ব্রাদারকে এভাবে অভ্যর্থনা জানানো ফ্রিম্যানদের লজের বডিমাস্টারের পক্ষে কি শোভন?

    আরে সেইটাই তো প্রমাণ করতে চাইছিলাম আমি, বললে ম্যাকগিন্টি। ফেল করলে ভগবান ছাড়া আপনাকে কেউ রক্ষে করতে পারত না। কোন লজের মেম্বার?

    লজ ২৯, শিকাগো।

    কবে?

    ২৪ জুন, ১৮৭২।

    বডিমাস্টার কে?

    জেমস এইচ স্কট।

    জেলাশাসক কে?

    বার্থোলোমিউ উইলসন।

    কথায় খুব চৌকস দেখছি। এখানে কী করা হয়?

    আপনাদের মতোই একটা কাজ নিয়ে আছি–তবে আয় কম।

    উত্তরগুলো খুব ঝটপট দিয়ে যাচ্ছেন দেখছি।

    তা ঠিক। কথা বলি খুব তাড়াতাড়ি।

    হাত-পা-গুলোও কি তাড়াতাড়ি চলে?

    যারা আমাকে হাড়ে হাড়ে চিনেছে তারা ওইরকমই বলে বটে।

    শিগগিরই সে-মহড়া নেওয়া যাবেখন। এ-অঞ্চলের লজ সম্বন্ধে কিছু শুনেছেন?

    শুনেছি পুরুষ যে, সেই শুধু ব্রাদার হতে পারে এখানে।

    মি. ম্যাকমুর্দো, কথাটা আপনার বেলায় খাটে। শিকাগো ছাড়লেন কেন?

    আপনাকে বলতে পারব না।

    চোখের পাতা পুরো খুলে গেল ম্যাকগিন্টির। এভাবে কথা শুনতে সে অভ্যস্ত নয়।

    সকৌতুকে বলে, আমাকে বলবেন না কেন?

    ব্রাদার হয়ে ব্রাদারকে মিথ্যে বলতে পারব না বলে।

    সত্যিটা তাহলে এতই খারাপ যে মুখে আনা যায় না?

    সেইরকম দাঁড়াচ্ছে।

    মিস্টার, অতীত যে ঢেকে রাখে, তাকে তো লজে ঢুকতে দিতে পারি না। তারপর ভেতরের পকেট থেকে টেনে বার করে একটা খবরের কাগজের কাটিং।

    বলে, ফাঁস করে দেবেন না তো?

    চড়িয়ে গাল ফাটিয়ে দেব ফের যদি ওইভাবে কথা বলবেন! রুদ্রকণ্ঠে বললে ম্যাকগিন্টি।

    কুণ্ঠিতভাবে ম্যাকমুর্দো বললে, মাপ করবেন, কাউন্সিলর। না-ভেবেই বলে ফেলেছি। আমি জানি আপনার আশ্রয়ে আমি কত নিরাপদ। কাটিংটা পড়ুন।

    পড়ল ম্যাকগিন্টি। গুলি করে মানুষ খুনের খবর। চুয়াত্তরের নববর্ষের প্রথম সপ্তাহে শিকাগোর মার্কেট স্কোয়ারের লেক সেলুনে জোনাস পিন্টোকে কীভাবে গুলি করে মারা হয়েছে, চাঞ্চল্যকর সেই বিবরণ।

    কাগজটা ফিরিয়ে দিয়ে শুধোয় ম্যাকগিন্টি, আপনার কীর্তি?

    মাথা হেলিয়ে সায় দেয় ম্যাকমুর্দো।

    কেন গুলি করলেন?

    আঙ্কল স্যাস ডলার বানাত, আমি সাহায্য করতাম। ওর মতো অত ভালো না-হলে খরচ কম পড়ত, দেখতেও ভালো। পিন্টো মাল ছাড়তে সাহায্য করেছিল আমাকে

    কী করতে?

    বাজারে আমার তৈরি ডলার ছড়িয়ে দিতে। তারপরে বললে অন্য দল করবে। করেও ছিল হয়ত। অত খতিয়ে দেখার সময় পাইনি। খুন করে কয়লা উপত্যকায় পালিয়ে এসেছি।

    কয়লা উপত্যকায় কেন?

    কাগজে পড়েছিলাম ওসব নিয়ে এখানে কেউ খুব একটা মাথা ঘামায় না।

    হেসে ওঠে ম্যাকগিন্টি।

    প্রথমে টাকা জাল করেছেন, তারপর মানুষ খুন করেছেন। তারপর এদেশে এসেছেন এই ভেবে যে গলায় মালা দিয়ে বরণ করব বলে?

    অনেকটা সেইরকমই দাঁড়াচ্ছে বটে, জবাব দিল ম্যাকমুর্দো।

    আপনাকে দিয়ে অনেক কিছুই হবে দেখেছি। ডলার এখনও বানাতে পারেন?

    পকেট থেকে ছ-টা ডলার বার করে ম্যাকমুর্দো। বলে, ওয়াশিংটন ট্যাকশালের তৈরি নয়।

    বলেন কী! গরিলার হাতের মতো প্রকাণ্ড, লোমশ হাতে ডলারগুলো নিয়ে আলোর সামনে মেলে ধরে ম্যাকগিন্টি। তফাত তো কিছু দেখছি না। আপনি তো দেখছি দারুণ কাজের হবেন ব্রাদার। দোস্ত ম্যাকমুর্দো, এক আধটা বদলোকের টক্কর আমরা দু-জনে নিতে পারব। এই বলে দিলাম আপনাকে। আমাদের কোণঠাসা করতে চায় অনেকেই এখন থেকেই হঠাতে আরম্ভ না করি তো আমাদের অবস্থা সঙিন হয়ে উঠতে পারে।

    নিশ্চয়, অন্য স্যাঙাতের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমিও রাস্তা সাফ করে দিতে পারি।

    আপনার ধাত খুব শক্ত! চোখের পাতা একটুও কাঁপেনি পিস্তল দেখে।

    আমার প্রাণ তো যেত না।

    তবে কার যেত?

    আপনার, কাউন্সিলর।

    খাটো, পুরু ওভারকোটের পাশ-পকেট থেকে ট্রিগার ভোলা পিস্তল টেনে বার করে ম্যাকমুর্দো। নলটা গোড়া থেকেই আপনার দিকেই ফেরানো ছিল। আপনার গুলি চলার সঙ্গে আমারও গুলি।

    রেগে লাল হয়ে গেল ম্যাকগিন্টি। পরক্ষণেই ফেটে পড়ল প্রচণ্ড অট্টহাসিতে।

    বললে, স্পর্ধা তো কম নয়। অনেক বছর এমনি আতঙ্কর সাথে মোলাকাত ঘটেনি। লজের বুক দশহাত হবে আপনাকে পেয়ে। কী চাই? পাঁচ মিনিটও কি নিরিবিলিতে কথা বলতে দেবে না ভদ্রলোকের সঙ্গে? নাক না-গলালেই কি নয়?

    মুখ-টুখ লাল করে ফেলল মদ্য-পরিবেশক।

    দুঃখিত, কাউন্সিলর। কিন্তু এই মুহূর্তে মি. টেড বলড়ুউন দেখা করতে চান আপনার সঙ্গে।

    খবর দেওয়ার আর দরকার ছিল না। পরিচালকের কাঁধের ওপর দেখা গেল টেড বলড়ুইনের দৃঢ়সংবদ্ধ নির্মম মুখখানা। ঠেলে তাকে বাইরে বার করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল নিজেই।

    জ্বলন্ত চোখে ম্যাকমুর্দোকে প্রায় দগ্ধ করে বললে রুক্ষকণ্ঠে, আমার আগেই আসা হয়েছে দেখছি! কাউন্সিলর, এই লোকটা সম্পর্কে আপনার সঙ্গে কথা আছে।

    বজ্রকণ্ঠে বললে ম্যাকমুর্দো, এখানেই বলা হোক–আমার সামনে।

    আমার খুশিমতো, আমার সময়মতো বলব।

    পিপে থেকে নামতে নামতে ম্যাকগিন্টি বললে, আরে ছিঃ ছিঃ। এসব চলবে না। বলড়ুইন, নতুন ব্রাদারের সঙ্গে এমনি ব্যবহার তো আমাদের মানায় না! নাও, হাত মিলিয়ে মিটমাট করে নাও।

    ককখনো না! জ্বলে উঠল বলড়ুইন।

    ম্যাকমুর্দো–আমি যদি অন্যায়ই করে থাকি, লড়ে মিটিয়ে নিতে বলেছি। ঘুসির লড়াই লড়তে পারি, ইচ্ছে করলে অন্য যেকোনো ভাবেও লড়ে যেতে পারি। কাউন্সিলর, এবার বডিমাস্টার হয়ে বিচার করুন অন্যায়টা কার।

    —ব্যাপারটা কী নিয়ে?

    একটি মেয়েকে নিয়ে। তার পছন্দ-অপছন্দর ওপর কারো হাত চলে না।

    তাই কি? চিলের মতো চেঁচিয়ে ওঠে বলড়ুইন।

    বস বললে, একই লজের দুই ব্রাদারের মধ্যে এ-ঘটনা ঘটলে বলব নিস্পত্তির ভারটা মেয়েটির ওপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত।

    এই বুঝি আপনার বিচার হল?

    হ্যাঁ, এই আমার বিচার, দুই চোখে ক্রূর ইঙ্গিত এনে বলে ম্যাকগিন্টি টেড বলড়ুইনের কি তাতে আপত্তি আছে?

    জীবনে যাকে কখনো দেখেননি, তার জন্যে গত পাঁচবছর যে আপনার পাশে পাশে থেকেছে তাকে ঠেলে ফেলে দিলেন? জ্যাক ম্যাকগিন্টি, আপনি তো জন্মের মধ্যে বডিমাস্টার হতে আসেননি, এরপর যখন ভোটাভুটি হবে—

    বাঘের মতো লাফিয়ে গেল কাউন্সিলর। খামচে ধরল টেড বলড়ুইনের টুটি এবং এক ঝটকায় শূন্যে তুলে ছুঁড়ে ফেলে দিলে পিপের ওপর। ম্যাকমুর্দো বাধা না-দিলে উন্মত্ত ক্রোধে বলড়ুইনকে গলা টিপে মেরেই ফেলত মাকগিন্টি।

    ম্যাকমুর্দো তাকে টেনে সরাতে সরাতে বললে চিৎকার করে, করছেন কী কাউন্সিলর। ঠান্ডা হোন।

    টুঁটি ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়াল ম্যাকগিন্টি। টলতে টলতে, কাঁপতে কাঁপতে, খাবি খেতে খেতে কোনোমতে পিপের ওপর উঠে বসল বলড়ুইন। পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তখনও কাঁপছে থরথরিয়ে। ভয়াবহ আতঙ্ক ফুটে উঠেছে মুখের রেখায় রেখায়–নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ছিটকে বেরিয়ে এলে এইরকমই চেহারা হয় মুখের।

    বিশাল বুকখানা হাপরের মতো উঠিয়ে নামিয়ে বজ্ৰনাদে বললে ম্যাকগিন্টি, অনেকদিন ধরেই দেখছি বড্ড বেড়েছ তুমি, টেড বলড়ুইন, ভোটে আমাকে হারিয়ে বডিমাস্টার হওয়ার সাধ হয়েছে তাই না? লজ বিচার করবে, কে হবে না হবে। কিন্তু আমি যদ্দিন চিফ থাকব, তদ্দিন আমার মুখের ওপর কথা বলতে, আমার বিচার নিয়ে বেঁকা কথা বলতে কাউকে দেব না।

    গলায় হাত বুলোতে বুলোতে ক্ষীণ কণ্ঠে বললে বলড়ুইন, আপনার বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার নেই, বস।

    মুহূর্তের মধ্যে আবার সেই রুক্ষ কিন্তু সরল আমুদে মেজাজে ফিরে এল ম্যাকগিন্টি। বললে, তাহলে তো মিটেই গেল। আগের মতোই ফের বন্ধু হয়ে গেলাম সবাই।

    তাক থেকে এক বোতল শ্যাম্পেন নামিয়ে ছিপি খুলল। তিনটে উঁচু গেলাসে ঢালতে ঢালতে বললে, এসো, সবাই ঝগড়া মিটিয়ে নেওয়ার মদ্যপান করা যাক। জানোই তো লজের নিয়ম, এরপর আর কারো রক্তে বিষ থাকার কথা নয়। এসো, বাঁ হাত রাখো আমার কণ্ঠায়। টেড বলড়ুইন, রাগ কেন?

    আকাশ বড়ো মেঘলা, জবাব দিলে বলড়ুইন।

    কিন্তু আকাশ তো এবার ঝলমলে হবে–জন্মের মতো।

    আমিও শপথ নিলাম সেইমতো।

    মদ্যপান করল তিন জনে। একই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে যেতে হল বলড়ুইন আর ম্যাকমুর্দোকেও।

    দু-হাত ঘষে সোল্লাসে বললে ম্যাকগিন্টি, কালো রক্ত খতম হয়ে গেল এইখানেই। ব্রাদার ম্যাকমুদো, আজ থেকে তুমি লজের নিয়মানুবর্তিতার অধীন হলে। যদি অন্যথা হয়, ব্রাদার বলড়ুইন জানে, কঠোর হাতে হবে তার শাস্তি।

    বিশ্বাস রাখুন আমার ওপর, বলড়ুইনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললে ম্যাকমুর্দো। আমি যেমন হঠাৎ ঝগড়া করি, তেমনি হঠাই মিটিয়ে নেই মনেও রাখি না। লোকে বলে আমার রগচটা আইরিশ রক্তের জন্যেই এমনি হয়। জানবেন আমার মনে আর রাগ নেই। ভেতর পরিষ্কার হয় গেল।

    হাত বাড়িয়ে ধরেছে ম্যাকমুর্দো, ভয়ানক বসের কুচুটে চক্ষুও নিবদ্ধ বলড়ুইনের ওপর কাজেই হাতে হাত মেলাতে হল তাকে। কিন্তু অন্ধকার মুখ দেখেই স্পষ্ট বোঝা গেল, ম্যাকমুর্দোর কথায় সে ভেজেনি।

    সশব্দে দু-জনের কাঁধে চাপড় মারল ম্যাকগিন্টি।

    ছ্যাঃ, ছ্যাঃ, যত নষ্টের গোড়া এই মেয়েগুলো। আমারই দুই চ্যালার মাঝে জুটেছে এই মেয়ে। একেই বলে পাথরচাপা কপাল। কিন্তু খুঁড়িটাই মেটাক ঝামেলা–ওসব কাজ বডিমাস্টারের নয়। মেয়ে ছাড়াই এত ঝঞ্জাট, আর নয়। ব্রাদার ম্যাকমুর্দো, লজ ৩৪১-এ নাম লিখিয়ে নিয়ো। শিকাগোর নিয়মে আমরা চলি না আমাদের কাজকারবার একেবারেই আলাদা। আমাদের অধিবেশন বসে শনিবার রাতে। ভারমিস উপত্যকায় স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরার চিরকালের ছাড়পত্র পাবে ওই মিটিংয়েই–এসো কিন্তু।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশার্লক হোমস সমগ্র ২ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন
    Next Article When the World Screamed – Arthur Conan Doyle

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }