Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শার্লক হোমস সমগ্র ১ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    লেখক এক পাতা গল্প813 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৯. উটার ফুল

    স্বদেশ ত্যাগ করে কত কষ্ট সয়ে নতুন দেশে শেষ পর্যন্ত আশ্রয় খুঁজে পেল মর্মোনরা, সেকাহিনি বলবার জায়গা এটা নয়। মিসিসিপি উপকূল থেকে শুরু করে রকি মাউন্টেনের ঢাল পর্যন্ত ওরা যে-জেদ নিয়ে এগিয়েছে, ইতিহাসে তার সমতুল্য নজির আর নেই বললেই চলে। প্রকৃতি যতরকম অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে, মর্মোনদের সামনে উপস্থিত হয়েছিল তার প্রতিটি। বর্বর মানুষ, হিংস্র শ্বাপদ, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ক্লান্তি, ব্যাধি–সবকটিই এসেছে ওদের শেষ করতে কিন্তু পারেনি। গোঁয়ার অ্যাংলো-স্যাক্সনদের মতোই সব বাধা পেরিয়ে এসেছে ওরা প্রচণ্ড জেদকে সম্বল করে। তা সত্ত্বেও বলিষ্ঠতম মর্মোনদেরও বুক কেঁপেছে বহুবার সুদীর্ঘ যাত্রাপথ এবং অসংখ্য আতঙ্কের মাঝে। তাই যেদিন রৌদ্রালোকিত উটা উপত্যকা ভেসে উঠল ওদের চোখের সামনে, সেদিন নতজানু হয়ে বসে সবাই প্রাণঢালা প্রার্থনা জানালে ঈশ্বরকে যে দেখিয়ে নিয়ে এসেছে এতগুলি মানুষকে অত্যাচারের আলয় থেকে মুক্তির দেশে। অবতার নিজেও বললে, এই সেই দৈবাদেশের দেশ, ঈশ্বর প্রতিশ্রুত দেশ। উর্বর এই অঞ্চল আজও কুমারী। মানুষের লাঙল স্পর্শ করেনি সেখানকার মাটি–সুজলা শ্যামলা এদেশ এখন থেকে কেবল দুঃসাহসী এই মর্মোনদেরই।

    ইয়ং যে সুদক্ষ শাসনকা, তা দেখিয়ে দিলে অচিরে। দৃঢ়চেতা দলপতি হিসেবেও সে অতুলনীয়। ম্যাপ আর চার্ট তৈরি হল তৎক্ষণাৎ। আঁকা হয়ে গেল ভবিষ্যৎ শহরের নকশা। মর্যাদা অনুসারে জমিজায়গাও বিলি হয়ে গেল দু-দিনে। যে ব্যবসাদার সে পেল ব্যবসার সুযোগ; যে কারিগর, তাকে লাগিয়ে দেওয়া হল হাতের কাজে। যেন জাদুমন্ত্রবলে রাস্তাঘাট বাগান চত্বর তৈরি হয়ে গেল শহরে। নর্দমা তৈরি, আগাছা সাফ, ঝোপঝাড়ের বেড়া, বীজ রোপণেই গেল একটা বছর। তারপর গ্রীষ্ম আসতেই সারাদেশ সোপার মতো ঝলমলিয়ে উঠল গমের চারায়। শ্রী আর সম্পদ উথলে উঠল সব কিছুর মধ্যেই। শহরের কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত বিরাট মন্দিরটাও ক্রমশ আরও বিরাট, আরও লম্বা হয়ে ঠেলে উঠতে লাগল আকাশের দিকে। দ্রুতবৃদ্ধির দিক দিয়ে মন্দিরটি ছাড়িয়ে গেল বিচিত্র এই উপনিবেশের সব কিছুই। উষার প্রথম অরুণিমা থেকে গোধুলির অবসান পর্যন্ত বিরাট এই স্মৃতিসৌধের সর্বত্র শোনা যেত হাতুড়ির ঠকাঠক আর করাতির ঘস ঘস আওয়াজ। যে পরম কারুণিকের কৃপায় এতগুলি মানুষ এত বিপদ পেরিয়ে সুখের নীড় পৌঁচেছে, তার উদ্দেশে ভক্তি উজাড় করে দিত কৃতজ্ঞ অধিবাসীরা।

    মহা-তীর্থযাত্রার শেষ অবধি সঙ্গে থেকেছে জন কেরিয়ার আর তার পালিত কন্যা লুসি ফেরিয়ার। ব্রাদার স্টানজারসনের ওয়াগনেই পরম সুখে দিন কাটিয়েছে লুসি সেবাযত্ন পেয়েছে স্ট্যানজারসনের তিন বউয়ের কাছে; খেলার সঙ্গীরূপে পেয়েছে স্ট্যানজারসনের বারো বছরের রগচটা, ডানপিটে পুত্রকে। বাচ্চাবয়স থেকে অনেক আঘাত, অনেক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আসতে হয়েছে লুসিকে। মায়ের মৃত্যুর পর নতুন এই পরিবেশেও বেশ খাপ খাইয়ে নিয়েছে সে। ক্যানভাস-ঢাকা এই চলন্ত বাড়ির আর এই তিন রমণীকে নিয়ে নতুন জীবনে দিব্বি মিশে গিয়েছে। জন ফেরিয়ারও প্রয়োজনীয় পথপ্রদর্শকরূপে সবার নজরে এসেছে। অল্প সময়ের মধ্যে প্রত্যেকের শ্রদ্ধা ভালোবাসা কেড়ে নেওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ যাত্রা শেষে সাব্যস্ত করা হল আর সবার মতো তাকেও উর্বর জমি-জায়গা দেওয়া হবে সম-পরিমাণে। সবচেয়ে বেশি পাবে অবশ্য ইয়ং স্বয়ং আর তার চার মুখ্য বয়স্ক স্ট্যানজারসন, কেমব্যাল, জন্সটন, ড্রেবার।

    নিজের জায়গায় প্রথমে একটা কাঠের গুঁড়ির কুঁড়ে তৈরি করল জন ফেরিয়ার। ক্রমে ক্রমে তাকে বড়ো করে নিজের হাতে বানিয়ে নিল আলো হাওয়া যুক্ত প্রশস্ত একটা ভিলা। মন তার বিষয় বুদ্ধিসম্পন্ন, হাতের কাজে দক্ষ, আচার-আচরণে আন্তরিক। লৌহ-কাঠামোর দৌলতে উদয়াস্ত পরিশ্রম তার কাছে কিছুই নয়। স্বহস্তে জমি চাষ আর জায়গা-জমির উন্নতি সাধনে ব্যয় করত সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে। দিনে দিনে তাই বেড়েই চলল তার জায়গা-জমির সম্পদ। তিন বছরে অবস্থা স্বচ্ছল হল প্রতিবেশীদের তুলনায়, ছ-বছরে হল বেশ বিত্তবান, ন-বছরে রীতিমতো ধনবান, বারো বছর পরে দেখা গেল ওর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো বড়োলোক ছ-জনও নেই সল্টলেক সিটিতে। সুবৃহৎ মধ্যবর্তী সমুদ্র থেকে সুদূর ওয়াসাচ মাউন্টেন্স পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জন ফেরিয়ারের চাইতে অধিক পরিচিত নাম আর রইল না একটিও।

    শুধু একটি ব্যাপার স্বধর্ম বিশ্বাসীদের মনে দাগা দিলে জন ফেরিয়ার। সঙ্গীসাথিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিয়ে বিয়ে থা করে সংসারী হলে খুশি হত সবাই। কিন্তু যুক্তিতর্ক অনুরোধ উপরোধ ব্যর্থ হল এই একটি ব্যাপারে। স্ত্রীলোক সংসর্গে এত অরুচি কেন, তার কারণ সে ব্যাখ্যা করেনি। কিন্তু একনাগাড়ে প্রত্যেকের কথাই পায়ে ঠেলেছে, গোঁয়ার গোবিন্দের মতো নিজের মতে অটল থেকেছে। কেউ বলেছে এ-ধর্মে ওর মতি তেমন সুদৃঢ় নয়, কেউ বলেছে পয়সা পিশাচ তো, পাছে টাকা খরচ হয় এই ভয়ে বিয়েতে নারাজ! কেউ শুনিয়েছে পুরোনো প্রেমের কল্পিত কাহিনি–প্রেমিকাটি নিশ্চয় আটলান্টিক পাড়ের মেয়ে, শুভ্রকেশী সুন্দরী। কারণ যাই হোক না কেন, জন কেরিয়ার অবিচল থেকেছে আপন মতে। অন্যান্য সব ব্যাপারে ধর্মের অনুশাসন মেনে চলেছে অক্ষরে অক্ষরে, একাত্ম হয়েছে ঔপনিবেশিকদের সঙ্গে, সুনাম কিনেছে অনমনীয় আর ঋজু মনোভাবের জন্য।

    কাঠের বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যেই বড়ো হল লুসি ফেরিয়ার। পালিত পিতাকে সাহায্য করেছে। সে প্রতিটি কাজে! পাহাড়ের শানিত হাওয়া আর পাইন গাছের স্নিগ্ধ সুগন্ধী যুগপৎ আয়া আর মা হয়ে এসেছে তার জীবনে। দিনে দিনে বড়ো হয়েছে। গাল আরও লাল হয়েছে, পদক্ষেপে শক্তি বিচ্ছুরিত হয়েছে, শরীরে স্বাস্থ্যের জোয়ার এসেছে। জন ফেরিয়ারের খামার বাড়ির পাশ দিয়ে হাইরোড বরাবর যেতে যেতে বহু পথিক তার দীর্ঘ, সুকুমারী মূর্তি দেখে উদবেলিত হয়েছে, শস্যক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে বাবার মাসট্যাঙ° ঘোড়ায় তার অনায়াস আরোহণ দেখে ফেলে আসা বিস্মৃত আবেগকে নতুন করে মনের মধ্যে অনুভব করেছে, পশ্চিমের দুর্দান্ত সন্তানের মতো অক্লেশে অথচ মনোরম ভঙ্গিমায় বুনো ঘোড়া মাসট্যাঙকে চালনার কৌশল দেখে বিস্মিত হয়েছে। এই ভাবেই একটু একটু করে কুঁড়ি ফুটে পাপড়ি মেলে ধরেছে অপরূপ একটি পুষ্প। প্রশান্তসাগরীয় অববাহিকায় ওরকম পরিপূর্ণ আমেরিকান সৌন্দর্য আর একটিও দেখা যায়নি। যে-বছরে জন ফেরিয়ার সবচেয়ে ধনী চাষি রূপে স্বীকৃতি পেল সারাতল্লাটে, সেই বছরেই অনন্যা আমেরিকান সুন্দরীরূপে নাম ছড়িয়ে পড়ল লুসি ফেরিয়ারেরও।

    শিশু লুসির যুবতী হওয়ার ঘটনা শুধু যে পিতৃদেবের নজরেই পড়েছিল–তা নয়। এসব ক্ষেত্রে কদাচিৎ তা ঘটে। রহস্যজনক এই পরিবর্তন আসে মৃদুমন্দ সঞ্চরণে, পা টিপে টিপে অতি সংগোপনে দিনকাল তারিখ সময় দিয়ে সে-হিসেব রাখা যায় না। লুসি নিজেও সচেতন ছিল না পরিবর্তনটা সম্পর্কে। খেয়াল হল যখন তার গলার স্বর নিজের কানেই একদিন অদ্ভুত শোনাল, বিশেষ একজনের হাতের ছোঁয়ায় বিচিত্র রোমাঞ্চ জাগ্রত হল বুকের মধ্যে। সভয়ে, সগর্বে সে জানল প্রকৃতি সম্পূর্ণভাবে, অনেক ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে তার তনুমনে। নতুন জীবনের এই উষাকাল যেদিন, যেভাবে দেখা দেয় কুমারী জীবনে কোনো মেয়েই তা ভোলে না। লুসি ফেরিয়ারের জীবনে এই মুহূর্ত এল বিষম গুরুত্ব নিয়ে। প্রভাব গিয়ে পড়ল তার ভবিষ্যৎ ভাগ্যচক্রে। সিরিয়াস ঘটনার রেশ প্রতিফলিত হল অন্যান্য অনেক ব্যাপারেও।

    জুন মাসের প্রভাত। পথঘাটে মাঠে প্রান্তরে ভ্রমর গুঞ্জনের মতো শ্রমব্যস্ত মানুষের চাঞ্চল্য ক্যালিফোর্নিয়ায় সোনা খোঁজার হিড়িক আরম্ভ হয়েছে। স্থলপথে রাস্তা গিয়েছে ইলেক্ট সিটির মধ্য দিয়ে। রাস্তায় তাই চলেছে সারি সারি ধূলিধূসরিত মালবোঝাই অশ্বতরঙ্গ। চলেছে অশ্ব আর অধিবাসীরা, পথশ্রমে ক্লান্ত, চলেছে দু-পাশের কর্ষিত ভূমির দিকে বলদ আর মেষ। পাঁচমিশেলি এই জনবাহনের মধ্যে দিয়ে পথ করে নিয়ে চলেছে লুসি ফেরিয়ার। অভ্যস্ত দক্ষতায় চালনা করছে তেজি ঘোড়াকে, কখনো লাফিয়ে, কখনো দুলকি চালে চলেছে সে অপরূপ ভঙ্গিমায়। বাদাম রঙের সুদীর্ঘ চুল উড়ছে পেছনে, ব্যায়াম-উচ্ছ্বাস জনিত রক্তচাপে লাল হয়ে উঠেছে মুখশ্রী। শহর থেকে বেরিয়েছে সে বাবার একটা কাজ নিয়ে। আগেও এভাবে বেরোতে হয়েছে। ভয়ডর তাই একেবারেই নেই। যৌবনের যা ধর্ম। কাজটা শেষ করতে হবে, এ ছাড়া কোনো চিন্তাও নেই। পথক্লান্ত দুঃসাহসীরাও অবাক হয়ে দেখছে তার এই মূর্তি। এমনকী সুখে দুঃখে উদাসীন রেড ইন্ডিয়ানরাও ঔদাসীন্য ত্যাগ করে ঘাড়ের বোঝা বিস্মৃত হয়ে সবিস্ময়ে দেখছে পাণ্ডুর মুখ এই অসামান্যা সুন্দরীর আশ্চর্য রূপ।

    শহরের প্রান্তসীমায় পৌঁছে মুশকিলে পড়ল লুসি। রাস্তা জুড়ে আসছে গোরু মোষের বিরাট একটা দল। তৃণভূমি থেকে তাড়িয়ে আনছে জনা ছয়েক বুনো চেহারার পশুপালক। তর সইল না লুসির। রাস্তা বন্ধ দেখে অধীর হয়ে ছোটো একটা ফাঁকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল ঘোড়া। ঢুকতে ঢুকতেই চারদিক থেকে নিরেট ভাবে গোরু মোষ বলদ ঘিরে ফেলল ওকে। ভীষণ লম্বা শিং নেড়ে, বুক-কাঁপানো চোখে তাকিয়ে ধেয়ে চলল ওকে ঘিরে, কিন্তু তাতে ভয় নেই লুসির। গোরু মোষ বলদ সামলাতে হয় কী করে তা সে জানে! তাই অকুতোভয়ে ওই অবস্থাতেও, ঘোড়া নিয়ে সদ্ব্যবহার করে চলল ছোটোখাটো সুযোগের, দীর্ঘ মিছিল ঠেলে বেরিয়ে যাওয়ার আশায় ঘোড়াকে চালিয়ে নিয়ে চলল অবিশ্বাস্য দক্ষতায়। এই সময়ে ইচ্ছায় হোক কী অনিচ্ছায় হোক, একটা শিংয়ের প্রচণ্ড গুতো লাগল মাসট্যাঙের পাশে, তাতেই খেপে গেল ঘোড়া। চক্ষের নিমেষে দাঁড়িয়ে গেল শির পা হয়ে এবং ভীষণ উত্তেজিত হয়ে এমনভাবে দাপাদাপি শুরু করে দিলে যে বসে থাকাই মুশকিল হল লুসির পক্ষে। রেগে নাক দিয়ে নিশ্বাসের ঝড় বইয়ে, হ্রেষারব করে পেছনের দু-পায়ে ঘন ঘন দাঁড়িয়ে উঠে ফেলে দিতে চাইল আরোহিণীকে। পাকা ঘোড়সওয়ার বলেই বারংবার সে-চেষ্টা ব্যর্থ করল লুসি! কিন্তু ক্রমশ তীব্র হতে লাগল সংকট বেড়েই চলল বিপদ। খ্যাপা ঘোড়ার চাট খেয়ে খেপে গেল বলদ আর মোষেরাও। এক একটা লাথির জবাব দিতে লাগল উপর্যুপরি শিংয়ের গোঁতায়। উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে লাগল মাসট্যাঙের উন্মত্ততা। অতিকষ্টে জিন আঁকড়ে ধরে ঘোড়ার পিঠে সেঁটে রইল লুসি—ঠিকরে পড়লেই দলিত পিষ্ট, ছিন্নভিন্ন হতে হবে ভয়ার্ত চক্ষু, ক্ষিপ্ত চতুষ্পদের খুরের তলার–অতীব ভয়ানক সেই মৃত্যু বর্ণনারও অতীত। অতর্কিতে বিপদগ্রস্ত হলে কীভাবে সামলাতে হয় নিজেকে, এই অভিজ্ঞতা কিন্তু ছিল না লুসির। তাই মাথা ঘুরতে লাগল লম্ফঝম্ফ, হাঁকডাক, তাণ্ডব নৃত্যের মাঝে; শিথিল হয়ে এল মুষ্টি লাগামের ওপর। ধুলোর মেঘে দম আটকে আসছে, ক্ষিপ্ত চতুষ্পদের গায়ের ঘাম বাম্পাকারে উঠে নাসারন্ধ্র যেন বুজিয়ে দিতে চাইছে; এ অবস্থায় ভাগ্যের হাতেই নিজেকে সঁপে দিতে লুসি হতাশ হয়ে ছেড়ে দিতে লাগাম কিন্তু তার আগেই দরদ-মাখা একটা কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হল পাশে–বললে, ভয় নেই! লাগাম ধরে থাকুন–ছাড়বেন না! সঙ্গেসঙ্গে ধূলি মেঘের মধ্যে থেকে এগিয়ে এল দড়ির মতো পাকানো একটা বলিষ্ঠ বাদামি হাত শক্ত মুঠোয় চেপে ধরল ভয়ার্ত ঘোড়ার মুখের লাগাম এবং ওই দাপাদাপির মধ্যে দিয়ে টেনে বার করে আনল মিছিলের বাইরে।

    ভদ্রভাবে বললে উদ্ধারকারী, মিস, লাগেনি তো?

    রোদে-পোড়া কালচে ভীষণ মুখটার পানে চাইল লুসি। প্রগম্ভ হাসি হেসে বললে অকপটে, ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম। এক পাল গোরুর মাঝে পড়ে এত ভয় পাব ভাবতে পারিনি।

    ভাগ্যিস সিট ছাড়েননি–পিঠ থেকে পড়লে আর বাঁচতেন না। বক্তা বয়েসে তরুণ। দীর্ঘকায় বুনো চেহারা। ছাই রঙের লোমযুক্ত তামাটে বর্ণ বিশিষ্ট অত্যন্ত তেজিয়ান ঘোড়ায় বসে দৃপ্ত ভঙ্গিমায়। পরনে শিকারীর মোটা কর্কশ পোশাক। কাঁধে লম্বা রাইফেল। আপনি বোধ হয় জন ফেরিয়ারের মেয়ে। তার বাড়ি থেকেই ঘোড়া নিয়ে বেরোতে দেখলাম আপনাকে। দেখা হলে জিজ্ঞেস করবেন সেন্ট লুইয়ের জেফারসন হোপকে মনে পড়ে কিনা। উনি যদি সেই ফেরিয়ার হন, তাহলে জানবেন আমার বাবা ওঁর বন্ধু ছিলেন।

    গম্ভীরভাবে লুসি বললে, তার চেয়ে আপনি নিজেই এসে একদিন জিজ্ঞেস করুন না?

    প্রস্তাবে খুশি হয়েছে বলে মনে হল তরুণটি। আনন্দে চিকমিক করে উঠল কালো চোখ। বললে, আসব! মাস দুয়েক হল পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরছি। ভদ্রলোকের বাড়ি যাওয়ার মতো চেহারা নয়। নিশ্চয় কিছু মনে করবেন না?

    বরং অনেক ধন্যবাদ জানাবেন। আমিও জানাব। আমি ওঁর চোখের মণি। গোরুর লাথিতে মারা গেলে সে-ধাক্কা বাবা কাটিয়ে উঠতে পারতেন না ইহজীবনে।

    আমিও না।

    আপনি! আরে আমি মরলে আপনার কী? আপনি তো আমাদের বন্ধুও নন।

    মন্তব্য যেন শেল হয়ে বিধল শিকারির বুকে। মুখটা এমন শুকিয়ে গেল যে গলা ছেড়ে হেসে উঠল লুসি।

    বললে, এই দেখুন! সত্যিই কি আমি তাই বলছি? ওটা কথার কথা। এখন তো আপনি আমার বন্ধুই। আসা চাই কিন্তু, ভুলবেন না। আর দাঁড়াতে পারছি না। দেরি হয়ে গেলে কাজ দিয়ে আর আমাকে বিশ্বাস করবেন না বাবা। গুড বাই।

    গুড বাই! প্রশস্ত কিনারাযুক্ত সমব্রেরো টুপি তুলে অভিবাদন করে তরুণটি, ঈষৎ হেঁট হয়ে স্পর্শ করে লুসির সুচারু হাত। মাসট্যাঙের মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে চাবুক হাঁকড়ায় লুসি, ধূলি-কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে উল্কার মতো ধেয়ে যায় চওড়া পথ বেয়ে।

    বিষণ্ণ, মৌন মুখে সঙ্গীদের নিয়ে ঘোড়া হাঁকিয়ে এগিয়ে যায় তরুণ জেফারসন হোপ। নেভাদা মাউন্টেনে ওরা ঘুরছে রুপোর খোঁজে। সন্ধানও পেয়েছে। সল্টলেক সিটিতে এসেছিল মূলধনের খোঁজে–রুপো তোলবার জন্যে। কাজের সময়ে সে অনন্য-মন। কিন্তু আজকের ঘটনায় মন তার অস্থির কাজ ছেড়ে অন্য চিন্তায় ব্যাপৃত। সিয়েরা সমীরণের মতো সতেজ এত সুন্দরী অকপট মেয়েটি নাড়া দিয়ে গেছে তার আগুন পাহাড়ের মতো বন্য হৃদয়ের মূল পর্যন্ত। অপস্রিয়মাণ অশ্বারোহিণীর পানে একদৃষ্টে চেয়ে থাকতে থাকতে সমস্ত অন্তর দিয়ে সে উপলব্ধি করেছে বড়ো কঠিন সংকট এসেছে তার জীবনে। রুপো অন্বেষণ বা তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ সম্পূর্ণ নূতন একটি বিষয় ছেয়ে ফেলেছে তার মনের দিগদিগন্ত। এ-ভালোবাসা অস্থিরমতি বালকের চঞ্চল প্রেমে নয়, দৃঢ়চেতা পুরুষের কঠিন সংকলন! প্রভুত্ব যার মেজাজে স্ফুলিঙ্গের মতোই বিচ্ছুরিত–দাবানলের মতোই প্রেমের আগুন আচমকা জ্বলছে সেই চিত্তে। দুর্দান্ত, বন্য আবেগে মথিত তার হৃদয়। জীবনে যা সে চেয়েছে, তাই পেয়েছে। কোনো প্রয়াসই তার ব্যর্থ হয়নি। এখনও হবে না। মনে মনে শপথ নিল জেফারসন হোপ, এই ইচ্ছা, এই কামনা, এই যাজ্ঞা, যদি মানুষের সাধ্যাতীত না হয় তবে তা সার্থক হয়ে উঠবেই তার জীবনে।

    সেই রাতেই জন কেরিয়ারের বাড়ি এল সে, এল তারপরেও অনেকদিন, মুখচেনা হয়ে গেল খামারবাড়ির প্রত্যেকের সাথে। খেতখামার নিয়ে তন্ময় থাকায় এই বারো বছর বহির্জগতের কোনো খবর পায়নি জন। সে-খবর পাওয়া গেল জেফারসনের মুখে। কথা বলার ভঙ্গিমাটি তার বড়ো সুন্দর। শুধু বাপের নয়, মেয়েরও ভালো লাগত শুনতে। ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাডভেঞ্চার অভিযানের পথিকৃৎ সে। সরস বর্ণনা শুনিয়েছে সেইসব দুরন্ত দিনগুলোর–সুখ আর শান্তিতে ভরা মধুময় অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি শুনতে শুনতে বিচিত্র রোমাঞ্চ অনুভব করেছে। পিতাপুত্রী দু-জনেই। আবিষ্ট হয়ে গিয়েছে কুবের সম্পদ পেয়েও হারিয়ে ফেলার রুদ্ধশ্বাসী বর্ণনায়। জেফারসন হোপ একাধারে সন্ধানী স্কাউট, ফাঁদে ফেলে পশুশিকারী, রুপো অন্বেষক এবং র্যাঞ্চম্যান অর্থাৎ গোরুমোষের পরিচালক। যেখানে বুক-কাঁপানো অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ পাওয়া গিয়েছে, জেফারসন হোপ ছুটে গিয়েছে সেইখানে।

    এইভাবেই দু-দিনেই বৃদ্ধ কৃষক জন কেরিয়ারের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠল জেফারসন। শতমুখে জন প্রশংসা করত জেফারসনের গুণের নাকি তার শেষ নেই। সত্যিই হিরের টুকরো ছেলে। নীরবে শুনত লুসি। তবে আরক্ত মুখ আর সুখ চকচকে উজ্জ্বল চক্ষু দেখে বোঝা যেত মন তার চুরি গিয়েছে। লক্ষণগুলো পিতৃদেবের নজরে না-এলেও যার জন্যে সে পাগলিনী, তার নজর এড়ায়নি।

    গ্রীষ্মের এক সন্ধ্যায় সড়ক বেয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে এল তার ঘোড়া–দাঁড়াল ফটকের সামনে। দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ছিল লুসি। ওকে দেখেই এগিয়ে এল কাছে। বেড়ার ওপর লাগাম নিক্ষেপ করে বাগানের পথ বেছে মুখোমুখি দাঁড়াল জেফারসন।

    লুসির দু-হাত তুলে নিয়ে নিবিড় চোখে মুখপানে তাকিয়ে বললে প্রেমস্নিগ্ধ কণ্ঠে, লুসি, আমি চললাম। এখন তোমায় নিচ্ছি না সঙ্গে, কিন্তু পরের বার আসবে তো?

    কবে আসবে? রক্তিম মুখে হেসে বলে লুসি। মাস দুই পর। এসেই তোমার পাণি প্রার্থনা করব। পৃথিবীতে কেউ নেই আমাকে রোখে। বাবা?

    রাজি হয়েছেন। শুধু একটা শর্ত–রুপপার খনিতে কাজ দেখাতে হবে। সে-ব্যবস্থা হয়ে এসেছে।

    জেফারসনের কপাটের মতো বিশাল বুকে লজ্জারুণ মুখ লুকিয়ে লুসি বললে, বাবা আর তুমি দু-জনেই যখন ব্যবস্থা করে ফেলেছ, আমি আর কথা বলব না।

    আঃ বাঁচালে! আবেগে গলা ভেঙে যায় জেফারসনের। আনত মুখে মুখ চুম্বন করে লুসির। তাহলে ওই কথাই রইল। আর দেরি করব না। যতই থাকি না কেন, যেতে আর ইচ্ছে যায় না। ওরা যে গিরিখাদে পথ চেয়ে আছে আমার। গুড বাই, ডার্লিং, গুড বাই। ফের দেখা হবে দু-মাস পরে।

    জোর করে লুসির বাহুপাশ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছুটে গিয়ে লাফিয়ে ঘোড়ার পিঠে উঠে পড়লে জেফারসন। টগবগিয়ে ঘোড়া হাঁকিয়ে নক্ষত্রবেগে উধাও হল দূর হতে দূরে–ক্ষণেকের জন্যেও পেছনে তাকাল না–পাছে মন দুর্বল হয়ে যায়, যেতে ইচ্ছে না হয়। ফটকে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে চেয়ে রইল লুসি! ধাবমান ঘোড়সওয়ার বিন্দুর মন ছোট্ট হয়ে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পর বুকজোড়া সুখ নিয়ে ফিরে এল বাড়িতে এত সুখ সেই মুহূর্তে বোধ হয় আর কোনো মেয়ের বুকে ছিল না।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশার্লক হোমস সমগ্র ২ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন
    Next Article When the World Screamed – Arthur Conan Doyle

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }