Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শার্লক হোমস সমগ্র ২ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    লেখক এক পাতা গল্প1414 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    শার্লক হোমস বিদায় নিলেন

    [ দ্য ফাইনাল প্রবলেম ]

    আমার বুক ভেঙে যাচ্ছে শার্লক হোমসের এই শেষের কাহিনি লিখতে। বিধাতা তাকে অনেক প্রতিভা দিয়ে এ-সংসারে পাঠিয়েছিলেন। তার সেই অসাধারণ ক্ষমতার কিছু কিছু অসংলগ্ন এবং অপর্যাপ্তভাবে এর আগে লিখেছি। কাহিনিমালা শুরু হয়েছিল স্টাডি ইন স্কারলেট মামলায় নেভাল ট্ৰীটি কেসে তা চূড়ান্ত রূপ নেয়। এরপর আর কিছুই লিখব না ঠিক করেছিলাম। যে-ঘটনার ফলে আজ আমার জীবন শূন্য হয়ে পড়েছে, দীর্ঘ দু-বছরেও তা নিয়ে এক লাইন লেখারও আর ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু কর্নেল জেমস মরিয়ার্টিং পত্র-মারফত যেভাবে তার ভাইয়ের স্মৃতিচারণ শুরু করেছেন এবং তার পক্ষ নিয়ে কথার জাল বুনে চলেছেন যে বাধ্য হয়ে আমাকে হাটে হাঁড়ি ভাঙতে হচ্ছে। ঠিক কী ঘটেছিল, আমি ছাড়া কেউ তা জানে না। দেখছি, তা গোপন রেখেও আর লাভ হচ্ছে না। যদূর জানি, এ-সম্পর্কে তিনটে বিবরণ বেরিয়েছিল আজ পর্যন্ত। ১৮৯১ সালের ৬ মে তারিখে জার্নাল দ্য জেনেভয়ের খবর, ৭ মে তারিখে ইংরেজি কাগজে রয়টার পরিবেশিত সংবাদ, এবং কর্নেল জেমস মরিয়ার্টি লিখিত পত্রাবলি–যার কথা এইমাত্র উল্লেখ করলাম। প্রথম দুটো নিরতিশয় সংক্ষিপ্ত। কিন্তু তৃতীয়টি সত্যের অপলাপ–ঘটনার বিকৃতিকরণ। তাই ঠিক করেছি এই প্রথম দেশের লোককে জানাব প্রফেসর মরিয়ার্টি এবং শার্লক হোমসের মধ্যে ঠিক কী ধরনের সংঘাত লেগেছিল শেষের সেই দিনগুলিতে এবং শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল।

    বিয়ের পর হোমসের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ কমে এসেছিল বটে, কিন্তু গোলমেলে কেসে সঙ্গীর দরকার হলেই ও আমাকে টেনে নিয়ে যেত বাড়ি থেকে। তারপর তাও কমে এল। ১৮৯০ সালে মাত্র তিনটি কেসে তার সান্নিধ্য পেলাম। ওই বছরের শীতকালে ফরাসি সরকার নিয়োজিত দুটি মামলায় সে এমন জড়িয়ে পড়ল যে খবরের কাগজের খবর থেকে বুঝলাম খুব তাড়াতাড়ি তার দর্শন আর পাব না এবং দীর্ঘকাল তাকে ফ্রান্সেই থাকতে হবে। তাই ২৪ এপ্রিল সন্ধের পর আমার চেম্বারে তাকে লম্বা পা ফেলে ঢুকতে দেখে সত্যিই হকচকিয়ে গেলাম। দেখলাম, দারুণ। ফ্যাকাশে মেরে গেছে আগের চেয়ে।

    আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে ও বুঝে নিলে আমার মনের কথা। বললে, আরে হ্যাঁ, কাজের চাপে নাওয়াখাওয়ার সময় পর্যন্ত পাচ্ছি না। ভায়া, জানলার খড়খড়িটা নামিয়ে দিলে অসুবিধে হবে?

    বলে, দেওয়ালে পিঠ ঘষটে এগিয়ে গিয়ে খড়খড়ি বন্ধ করে ছিটকিনি এঁটে দিল হোমস।

    খুব আতঙ্কে আছ দেখছি? বললাম আমি।

    তা আছি।

    কীসের আতঙ্ক?

    এয়ার গানের।

    মাই ডিয়ার হোমস, কী আবোল-তাবোল বকছ!

    ভায়া ওয়াটসন, ছায়া দেখে চমকে ওঠা আমার কোষ্ঠিতে লেখেনি–তা তুমি জানো। কিন্তু আসন্ন বিপদকে অবহেলা করার মধ্যে বাহাদুরি কিছু নেই। যাক গে, দেশলাইটা ধার দেবে? সিগারেট ধরিয়ে নিয়ে দু-চার টান মেরে যেন অনেকটা সহজ হল হোমস।

    বললে, এক্ষুনি কিন্তু তোমার বাগানের পেছনের পাঁচিল টপকে পালাব।

    কী ব্যাপার বল তো?

    উত্তরে আলোর সামনে হাত বাড়িয়ে ধরল হোমস। দেখলাম দুটো আঙুলের গাঁট ফেটে গেছে এবং রক্ত ঝরছে।

    কী বুঝলে? খুব একটা হালকা ব্যাপার তাহলে নয়? বউ কোথায়?

    বাড়ি নেই। দিনকয়েকের জন্যে বাইরে গেছে। তাই নাকি!

    তাহলে চলল আমার সঙ্গে হপ্তাখানেক ইউরোপ বেড়িয়ে আসবে।

    কোথায়?

    যেদিকে দু-চোখ যায়।

    এ তে বড়ো রহস্যজনক ব্যাপার! লক্ষ্যহীনভাবে ছুটি কাটানোর ধাত শার্লক হোমসের নেই। ফ্যাকাশে মুখ, শুকনো আকৃতি দেখেও মনে হচ্ছে মানসিক উৎকণ্ঠা চরমে পৌঁছেছে, নার্ভ টান-টান হয়ে রয়েছে। আমার নীরব প্রশ্ন চোখের ভাষায় পড়ে নিয়ে হাঁটুতে কনুই রেখে বসল ও, আঙুলের ডগাগুলো এক করে বুঝিয়ে বলল, কী ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে কাটছে তার দিবস-নিশির প্রতিটি মুহূর্ত।

    বলল, প্রফেসর মরিয়ার্টির নাম কখনো শুনেছ?

    জন্মেও না।

    এ-ব্যাপারেরও মজাই তো সেখানে। একেই বলে প্রতিভা! সারালন্ডন ছেয়ে আছে সে, অথচ কেউ তার নাম শোনেনি। অপরাধ ইতিহাসের তুঙ্গে পৌঁছেছে সে শুধু এই কারণেই। ওয়াটসন, এই দুষ্ট ব্রণটিকে যদি সমাজ থেকে নির্মূল করতে পারি, তাহলেই বুঝব আমার কর্মজীবনে চূড়ান্ত সাফল্য এসেছে। অবসর নিয়ে তখন বাকি জীবনটা শান্তিতে কাটাতেও আপত্তি নেই। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার রাজপরিবারের মামলা আর ফরাসি সাধারণতন্ত্রের সমস্যা সমাধান করে যে-অবস্থায় পৌঁছেছি, তাতে বাকি জীবনটা রাসায়নিক গবেষণা নিয়ে পরম শান্তিতে মনের সুখে কাটিয়ে দিতে পারি। কিন্তু শান্তি আমি পাব না, সুখে দিন আমার কাটবে না–যদ্দিন জানব প্রফেসর মরিয়ার্টির মতো একটা দুরাত্মা বুক ফুলিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে লন্ডনের পথেঘাটে–তার সঙ্গে টক্কর দেওয়ার মতোও কেউ নেই এ-শহরে।

    কিন্তু সে করেছে কী?

    অসাধারণ তার কর্মজীবন। সদ্বংশজাত, উচ্চশিক্ষিত, গণিতশাস্ত্রে অসাধারণ প্রতিভাবান। অঙ্কে অমন মাথা কোটিতে গুটি পাওয়া যায়। একুশ বছর বয়েসে বীজগণিতের বাইনোমিয়াল থিয়োরেম নিয়ে আশ্চর্য এক প্রবন্ধ লিখে টনক নড়িয়েছে পাকা গণিতবিদদের প্রবন্ধটা স্বীকৃতি পেয়েছে সারাইউরোপে। এই প্রবন্ধের জোরেই ছোটোখাটো একটা ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়েছিল। কিন্তু পৈশাচিক কাজ করার ঝোক পেয়েছিল সে জন্মসূত্রে, রক্তে লুকিয়েছিল একটা ক্রূর অপরাধী, একটা শয়তানি প্রবৃত্তি। গাণিতিক প্রতিভায় তা বিলুপ্ত না হয়ে বিপজ্জনকভাবে বেড়ে ওঠে। অসাধারণ মানসিক শক্তির দৌলতে কুটিল কাজ করার ক্ষমতাও বেড়ে গেল সীমাহীনভাবে। অনেক রকম ভয়ংকর কথা শোনা যেতে লাগল তার সম্পর্কে। শেষকালে অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে চলে এল লন্ডনে। সেনাবাহিনীর শিক্ষণ উপদেষ্টা হয়ে জাঁকিয়ে বসল শহরে। সাধারণ মানুষ তার চাইতে এর বেশি খবর রাখে না। কিন্তু আমি তোমাকে যা বলব, তা আমি নিজে খুঁজে পেতে জানতে পেরেছি।

    ওয়াটসন, বিরাট এই শহরের অপরাধী মহলের নাড়িনক্ষত্রের খবর আমি রাখি। আমার চাইতে উঁচু মহলের অপরাধীদের খবর আর কেউ রাখে না। অনেকদিন ধরেই আঁচ করছিলাম, একটা অদৃশ্য শক্তি প্রচ্ছন্ন থেকে যেন সুতো ধরে নাচিয়ে চলেছে লন্ডনের বাঘা বাঘা অপরাধীদের। সে ধরাছোঁয়ার বাইরে কিন্তু তার পরিকল্পনা মতোই সব হচ্ছে। খুন, ডাকাতি, জালিয়াতি ইত্যাদি বহুবিধ অপরাধের পেছনে বার বার এই প্রচণ্ড শক্তির অস্তিত্ব আমি টের পেয়েছি। দেখেছি, আইনের খপ্পর থেকে বার বার এই শক্তি অপরাধীদের রক্ষে করে এসেছে। যেসব মামলা আমার হাতে আসেনি, সেসবের মধ্যে এই প্রাণশক্তির খেলা আমি টের পেয়েছি। অনেক চেষ্টা, অনেক কষ্টের পর বিপদকে পদে পদে অতিক্রম করে আমি এই নাটের গুরুটির সন্ধান পেয়েছি। এই সেই বিখ্যাত প্রফেসর মরিয়ার্টি।

    ওয়াটসন, অপরাধ দুনিয়ার সম্রাট নেপোলিয়ন বলতে গেলে প্রফেসর মরিয়ার্টিকেই বোঝায়। মাকড়সার মতো জাল পেতে সে ঠিক মাঝখানটিতে বসে থাকে। নিজে নড়ে না, কিস্‌সু করে না–শুধু পরিকল্পনা করে। বিশাল সংগঠনের অগুনতি অপরাধী তার চক্রান্ত অনুসারে একটার পর একটা অপরাধ করে বেড়ায়। যদি ধরা পড়ে, এই প্রফেসরই টাকা ছড়িয়ে উকিল ব্যারিস্টার লাগিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনে। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও কেউ কল্পনা করতে পারে না নাটের গুরুটি আসলে কে। তার বিরাট সংগঠনের অসাধ্য কিছু নেই। যেকোনো কুকাজ করতে তারা পোক্ত। কাউকে খুন করার দরকার হলে, কারো ঘর তল্লাশির প্রয়োজন হলে বা মূল্যবান দলিলপত্র উধাও করে দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে শুধু প্রফেসরকে খবর দিলেই হল। নিজের লোক দিয়ে সুচারুভাবে কুকর্মটি করিয়ে দেবে সে। ধরা পড়লে খালাস করেও আনবে। ওয়াটসন, আমার নিজস্ব বিচারবুদ্ধি আর বিশ্লেষণী ক্ষমতা দিয়ে তিল তিল করে এগিয়ে দুস্তর বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে শয়তান শিরোমণি এই প্রফেসরের নাগাল আমি ধরেছি–এখন উঠে-পড়ে লেগেছি দেশের ললাকের সামনে এর মুখোশ খুলে সংগঠনটা সমূলে উৎপাটন করতে।

    কিন্তু মহাধড়িবাজ এই প্রফেসর নিজেকে হাজার গণ্ডির মধ্যে এমন আগলে রেখে দিয়েছে, কাছে যায় কার সাধ্য। আইনের চোখে সে নির্দোষ। কোনোরকমভাবেই তার অপরাধ আদালতে প্রতিপন্ন করা যায় না। তিন মাস একনাগাড়ে আমি সাক্ষ্য আর প্রমাণ খুঁজেছি যাতে তাকে আদালতে টেনে নিয়ে দায়রা সোপর্দ করতে পারি। এই তিন মাসে হাড়ে হাড়ে বুঝেছি, বুদ্ধির যুদ্ধে আমার যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী বলতে যদি কেউ দুনিয়ায় থাকে, তবে সে এই প্রফেসর মরিয়ার্টি। আমার অসাধ্যসাধনের ক্ষমতার কথা তুমি তো জান ভায়া, কিন্তু আমাকেও বারে বারে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছে মহা-ধুরন্ধর পিশাচ-শ্রেষ্ঠ কুটিল-সম্রাট প্রফেসর মরিয়ার্টি। কিন্তু মানুষমাত্রই ভুল করে, তা সে যত বড়ো প্রতিভাবানই হোক না কেন। প্রফেসরও ছোট্ট একটা ভুল করে বসল একদিন। সেই ভুলের সুযোগ নিয়ে আমি তার অনেক কাছে এগিয়ে এসেছি, চারধারে জাল গুটিয়ে এনেছি, ছোট্ট কিন্তু মারাত্মক ভুলের দৌলতেই আর কয়েকদিনের মধ্যেই তার দলের সবকটা রাঘব বোয়ালকে একসঙ্গে টেনে তুলব–ধর সামনের সোমবারেই দলবল সমেত পুলিশের হাতে ধরা পড়বে প্রফেসর মরিয়ার্টি এবং শুরু হবে এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড়ো ফৌজদারি মামলা পরিষ্কার হয়ে যাবে চল্লিশটা জটিল রহস্য এবং গলায় দড়ি পড়বে সবকটা বাছাধনের। কিন্তু সামান্য তাড়াহুড়ো করলেই ওরা হাত ফসকে পালাতে পারে শেষ মুহূর্তেও।

    সব ভালো হত যদি এত কাণ্ড প্রফেসরের অজ্ঞাতসারে করতে পারতাম। কিন্তু লোকটা এত ধড়িবাজ যে বলবার নয়। তাকে জালে ফেলবার জন্যে আমি যা-যা করেছি, তার প্রতিটি সে লক্ষ করেছে এবং পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু নাছোড়বান্দার মতো আমি অন্য দিক দিয়ে তাকে ধরেছি। নীরব এই দ্বন্দ্বের কাহিনি যদি কোনোদিন লেখা হয়, দেখবে গোয়েন্দাগিরির ইতিহাসে এ-রকম গৌরবময় বুদ্ধিসমুজ্জ্বল ঘটনা আর দ্বিতীয়টি নেই। বুদ্ধির খেলায় এত চমক আমি কখনো দেখাতে পারিনি বারে বারে এভাবে পর্যুদস্তও কখনো হইনি, প্রতিদ্বন্দ্বীর হতে এ-রকম নাকানিচোবানি কখনো খাইনি। সে যত গভীরে তলিয়েছে, আমি তার চাইতেও গভীরে ড়ুব দিয়েছি। আজ সকালেই শেষ ব্যবস্থা সাঙ্গ হয়েছে আর মাত্র তিন দিনের মধ্যেই লীলাখেলা শেষ হবে প্রফেসরের। ঘরে বসে এইসব ভাবছি, এমন সময়ে দরজা খুলে আমার সামনে এসে উড়াল স্বয়ং প্রফেসর মরিয়ার্টি।

    ওয়াটসন, আমার স্নায়ু পলকা নয়। কিন্তু যে আমার দিবানিশির চিন্তা জুড়ে রয়েছে হঠাৎ তাকে সামনে দেখে বেশ চমকে উঠলাম। এ-মূর্তির প্রতিটি বর্গ ইঞ্চি আমার মুখস্থ! অত্যন্ত রোগা এবং লম্বা কপালটা সাদা গম্বুজের মতো ঠেলে বার করা। কোটরে ঢোকানো দুই চোখে অন্তর্ভেদী দৃষ্টি, দাড়িগোঁফ কামানো, মুখ পাণ্ডুর, তাপসিক সৌম্যতাসমৃদ্ধ অধ্যাপক জীবনের আমেজ যেন এখনও আকৃতিতে লেগে রয়েছে। অতিরিক্ত পড়াশুনা করার দরুন দু-কাঁধ গোল, মাথা সামনে কুঁকে রয়েছে–একটু কোলকুঁজো ভাব। অদ্ভুত সর্পিল ভঙ্গিমায় মাথাটা একনাগাড়ে দুলছে ভাইনে আর বাঁয়ে–সাপ যেভাবে ফণা দোলায় ঠিক সেইভাবে। দুই চোখে নিঃসীম কৌতূহল জাগিয়ে ভুরু কুঁচকে আমাক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল প্রফেসর।

    বললে, মাথার সামনের দিকটা ভেবেছিলাম আরও পরিণত হবে–ড্রেসিং গাউনের পকেটে গুলিভরা রিভলভারের ঘোড়ায় আঙুল রাখা কিন্তু খুবই বিপজ্জনক অভ্যেস।

    ব্যাপারটা হয়েছে কী, প্রফেসরের অকস্মাৎ আবির্ভাবের সঙ্গেসঙ্গেই বুঝেছি আমার প্রাণহানি ঘটতে পারে এবার। তাই চক্ষের নিমেষে ড্রয়ার থেকে রিভলভার নিয়ে ড্রেসিং গাউনের পকেটে রেখে বাগিয়ে ধরেছিলাম তার দিকে। এখন তা বার করে রাখলাম টেবিলের ওপর। প্রফেসরের চোখে যে-দৃষ্টি দেখেছিলাম, মিটিমিটি হাসির ছটাতেও তার ভয়াবহতা ঢাকা পড়েনি। হাতের কাছে রিভলভার দেখে তাই স্বস্তি বোধ করছিলাম।

    প্রফেসর বলল–আমাকে দেখছি চেনেন না।

    ঠিক উলটো। আপনাকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসুন। পাঁচ মিনিট সময় দিলাম, যা বলবার বলুন।

    যা বলব বলে এসেছি, তা আপনি জানেন।

    তাহলে আমার জবাবটাও আপনি জানেন, বললাম আমি।

    এই কি শেষ কথা?

    এক্কেবারে।

    পকেটে হাত দিল প্রফেসর। তৎক্ষণাৎ ছোঁ মেরে পিস্তল তুলে নিলাম। কিন্তু পকেট থেকে একটা স্মারক-পত্রিকা বার করল প্রফেসর–তাতে লেখা অনেকগুলো তারিখ।

    বললে, চৌঠা জানুয়ারি আমার পথ মাড়িয়েছেন আপনি, তেইশে উত্ত্যক্ত করেছেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সাংঘাতিকরকম ঝামেলায় ফেলেছেন, মার্চের শেষে আমার সব পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে ছেড়েছেন, আর এখন এই এপ্রিলের শেষে এমন জাল বিস্তার করেছেন যে আমার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা পর্যন্ত ক্ষুণ্ণ হতে চলেছে। আপনার বিরামবিহীন উৎপাতের জন্যেই এই বিপদে পড়েছি আজ। অসম্ভব এই পরিস্থিতি আমি আর সহ্য করতে পারছি না।

    আমি বললাম কিছু প্রস্তাব থাকলে ঝেড়ে কাশুন মশাই।

    আমার পথ থেকে সরে দাঁড়ান।

    সোমবারের পর, বললাম আমি। ছিঃ, ছিঃ মি. হোমস। আপনার মতো বুদ্ধিমান মানুষের মুখে এ-কথা শোভা পায় না। এর পরিণাম ভালো হবে না। হাসছেন, বেশ বেশ হেসে নিন। কিন্তু আমার কথার নড়চড় হয় না জানবেন। এবার যে-রাস্তা ধরব, তাতে আপনার সর্বনাশ করে ছাড়ব।

    বিপদ আমার নিত্যসঙ্গী।

    দুর মশায়, বিপদের কথা বলছে কে? একেবারে শেষ হয়ে যাবেন যে। আপনার যত বুদ্ধিই থাক না কেন, আমার এই সংস্থার শক্তি এখনও আঁচ করতে পারেননি। একেবারে চিড়েচেপটা করে ছেড়ে দেব।

    উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, আমায় যে এখুনি বেরোতে হবে।

    প্রফেসেরও উঠে দাঁড়াল। নীরবে চেয়ে রইল। তারপর বিষণ্ণভাবে মাথা নেড়ে বললে, মি. হোমস, আপনার জন্যে দুঃখ হচ্ছে। আপনি কী-কী চাল চেলেছেন, সব আমি জানি। সোমবারের আগে আপনি আমাদের গায়ে হাত দিতে পারবেন না। আপনি ভেবেছেন, আপনার সঙ্গে আমার এই দ্বন্দ্বযুদ্ধে আমাকে হারাবেন, কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন, শেষ পর্যন্ত খতম করবেন। ভুল, মি.। হোমস। আপনি কিছুই করতে পারবেন না। আমাকে শেষ করতে গিয়ে নিজেই শেষ হয়ে যাবেন।

    আমি বললাম, মি. মরিয়ার্টি, আপনাকে শেষ করার পর যদি আমাকে শেষ হয়ে যেতে হয়–তাতে দুঃখ নেই।

    হিংস্র হায়নার মতো গর্জে উঠল প্রফেসর, প্রথম সম্ভাবনাটা ঘটবে কি না জানি না কিন্তু দ্বিতীয়টা অবধারিত। বলে চোখ মিটমিটিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।

    ওয়াটসন, সেই থেকে আমি অস্বস্তির মধ্যে রয়েছি। প্রফেসর কখনো ফাঁকা ভয় দেখায় না।

    এর মধ্যে চড়াও হয়েছে তোমার ওপর?

    মাই ডিয়ার ওয়াটসন, প্রফেসর মরিয়ার্টি কখনো পায়ের তলায় ঘাস গজাতে দেয় না। আজ দুপুরে অক্সফোর্ড স্ট্রিটে কাজে গিয়েছিলাম। মোড়ের মুখে একটা ঘোড়ার গাড়ি আর একটু হলে চাপা দিত–লাফিয়ে উঠলাম ফুটপাথে। গাড়িটা অদৃশ্য হয়ে গেল। একটু পরে একটা থান ইট পায়ের কাছে পড়ে গুঁড়িয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ পুলিশ নিয়ে পাশের বাড়িতে উঠলাম। কেউ নেই। জড়ো করা ইট আর টালি ছাড়া কিছু নেই ছাদে। পুলিশ বললে, হাওয়ায় একটা ইট খসে পড়েছে। ঘোড়ার গাড়ি চেপে ভাইয়ের বাড়ি গিয়ে সারাদিন কাটিয়ে তোমার এখানে আসবার। সময়ে একজন লাঠি নিয়ে তাড়া করল। ঘুসি মেরে তার দাঁত কপাটি উড়িয়ে দিলাম বটে, থানাতেও পাঠালাম–কিন্তু দশ মাইল দূরে ব্ল্যাকবোর্ডে অঙ্ক কষছে যে-গণিতবিদটি তার গায়ে আঁচড় কাটতে পারলাম না। ভায়া, সেইজন্যেই তোমার ঘরে ঢুকে জানলা বন্ধ করেছি–কথা শেষ হলে পালাব বাগানের পাঁচিল টপকে।

    শার্লক হোমস চিরকালই দুঃসাহসী। কিন্তু মাথার ওপর মরণের খাঁড়া নিয়ে সেদিন যেরকম নিশ্চিত নির্বিকারভাবে বিপদের বিবরণ দিতে শুনলাম, তেমনটি কখনো দেখিনি।

    বিমুগ্ধ বিস্ময়ে বললাম, রাতটা এখানে থাকবে তো? পাগল!

    তাতে তুমি বিপদে পড়বে। পরিকল্পনা মতো পুলিশ এখন ওদের পেছনে লেগে থাকুক, আমি গা ঢাকা দিয়ে থাকতে চাই। তোমাকে চাই। তোমাকে ডাকছি সেইজন্যে–চলো ইউরোপ ঘুরে আসি।

    আমার অসুবিধে হবে না। রুগির ভার প্রতিবেশী ডাক্তারের হাতে দিয়ে যাব।

    কাল সকালে বেরোতে পারবে?

    নিশ্চয়।

    তাহলে ঠিক যা বলব, তাই হবে। মনে রেখো, ইউরোপের সবচেয়ে জাঁহাবাজ, সবচেয়ে ধড়িবাজ, সবচেয়ে বিপজ্জনক লোকের সঙ্গে দ্বৈরথ সমরে নেমেছি আমি। আজকে রাতেই তোমার মালপত্র লোক মারফত ভিক্টোরিয়া স্টেশনে পাঠিয়ে দেবে। কাল সকালে যাকে গাড়ি ডাকতে পাঠাবে, সে যেন প্রথম দুটো গাড়ি যেচে আসতে চাইলেও ছেড়ে দিয়ে তৃতীয় গাড়িটা নেয়। গাড়ি এলেই তুমি তাতে লাফিয়ে উঠে লাউডার আর্কেড-এর এই ঠিকানায় গাড়ি হাঁকাতে বলবে। আর্কেড-এ পৌঁছেই দৌড়ে ওপারে পৌঁছাবে ঠিক ন-টা পনেরো মিনিটে। দেখবে, ফুটপাথ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে একটা ব্রহাম গাড়ি–কোচোয়ানের গায়ে লাল কলারওলা কালো কোট। এই গাড়িতে চেপে ভিক্টোরিয়া স্টেশনে পৌঁছোবে কন্টিনেন্টাল এক্সপ্রেস যখন ছাড়ে–ঠিক তখন।

    তুমি?

    স্টেশনে থাকব। ইঞ্জিনের পেছনে ফার্স্ট ক্লাস বগির সেকেন্ড কামরাটা আমার জন্যে রিজার্ভ করা আছে।

    এই বলে হোমস পেছনের বাগানে গিয়ে পাঁচিল টপকে লম্বা দিল সে-রাতের মতো পাছে আমার ক্ষতি হয়, তাই হাজার অনুরোধ ও উপরোধে রাতটা কাটিয়ে গেল না আমার ডেরায়।

    পরের দিন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চললাম ওর নির্দেশ। স্টেশনে পৌঁছে রিজার্ভড় কামরায় উঠে বসলাম বটে, কিন্তু যার জন্যে আসা সেই হোমসেরই টিকি দেখতে পেলাম না। ট্রেন ছাড়তে তখন মাত্র সাত মিনিট বাকি–অথচ সে নিপাত্তা। ভীষণ উদবেগে পড়লাম। এর মধ্যে নতুন বিপত্তি উপস্থিত হল এক থুথুরে বুড়ো ইতালিয়ান পাদরিকে নিয়ে। ভদ্রলোক ইংরেজি জানেন না, আমিও ইতালি ভাষা জানি না। তিনি মুটের সঙ্গে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে ঝগড়া-টগড়া করার কোন ফাঁকে যে আমাদের রিজার্ভড় কামরায় উঠে বসেছেন জানতাম না। যখন দেখতে পেলাম, তখন ট্রেনের বাঁশি পড়ে গেছে–ভদ্রলোককেও বোঝাতে পারলাম না যে এটা রিজার্ভড কামরা। তা ছাড়া হোমস শেষ পর্যন্ত না-আসায় এবং নিশ্চয় মারাত্মক কোনো বিপদে পড়েছে বুঝতে পেরে আমার তখন মাথার-ঘায়ে-কুকুর-পাগল হওয়া অবস্থা। ট্রেন নড়ে উঠতেই কিন্তু শার্লক হোমসের সকৌতুক বাণী শুনলাম ঠিক কানের কাছটিতে, ভায়া ওয়াটসন, এখনও পর্যন্ত গুড মর্নিং বলনি কিন্তু আমাকে।

    সচমকে ফিরে তাকালাম থুথুরে বুড়ো তালের নুড়ো সেই পাদরিটার দিকে। দেখতে দেখতে মিলিয়ে গেল তার মুখের অজস্র চামড়ার ভাঁজ আর বলিরেখা। চিবুকে ঠেকা নাকটা উঠে এল স্বাভাবিক অবস্থায়, নীচের ঠোঁটটা আর ঝুলে রইল না বিশ্রীভাবে, উধাও হল অস্ফুট বকুনি, নিষ্প্রভ চোখে জাগ্রত হল স্ফুলিঙ্গ এবং শিরদাঁড়া ভাঙা কুঁজো চেহারাটা সিধে হয়ে গেল নিমেষের মধ্যে। বুড়ো পাদরির নড়বড়ে চেহারার মধ্যে থেকে যেন জাদুমন্ত্র বলে বেরিয়ে এল শার্লক হোমস।

    কী সর্বনাশ! দারুণ চমকে দিয়েছ!

    চাপা গলায় হোমস বললে, হুঁশিয়ার! ওই দেখো মরিয়ার্টি এসে গেছে!

    ট্রেন তখন গড়াচ্ছে। ভিড় ঠেলে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এল লম্বা মতো এক ব্যক্তি–পাগলের মতো হাত নেড়ে ট্রেন থামাতে চাইল বটে কিন্তু তখন আর কোনো উপায় নেই। দেখতে দেখতে প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে বেরিয়ে এল ট্রেন।

    হাসতে লাগল হোমস, দেখলে তো, এত সাবধান হয়েও ঠিক খবর পেয়েছে ও। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত ফাঁকি দিতে পেরেছি, বলে উঠে দাঁড়িয়ে ছদ্মবেশের সরঞ্জাম প্যাক করে ঢুকিয়ে রাখল ব্যাগের মধ্যে।

    বলল, ওয়াটসন, সকালের কাগজ দেখেছ?

    না।

    বেকার স্ট্রিটের খবর তাহলে শোননি?

    বেকার স্ট্রিটের আবার কী খবর?

    শার্লক হোমস বিদায় নিলেন

    কাল রাতে আমাদের ওই দু-খানা ঘরে আগুন লাগানো হয়েছিল। খুব একটা লোকসান অবশ্য হয়নি। বল কী?

    ওদের লেঠেল পুলিশে ধরা পড়ার পর ভেবেছিল বেকার স্ট্রিটে ফিরে গিয়েছি তাই আগুন লাগিয়েছিল ঘরে। এখানে এসেছে তোমার পেছন নিয়ে আমাকে ওরা হারিয়ে ফেলেছিল। যা-যা বলেছিলাম, করেছিলে তো?

    আরে হ্যাঁ।

    কালো কোট গায়ে কোচোয়ানটি আমার ভাই মাইক্রফট। এ বিপদে পড়লে ভাড়াটে লোকের চেয়ে নিজের লোক বেশি কাজ দেয়। যাক, এবার মরিয়ার্টিকে নিয়ে ভাবা যাক।

    মরিয়ার্টি আর আমাদের নাগাল পাবে না।

    ভুল, বন্ধু, ভুল। মরিয়ার্টিকে কখনো এত ছোটো করে দেখো না আমার চেয়ে বুদ্ধি তার মোটেই কম নয়। আমি হলে কী করতাম বলো তো?

    কী?

    স্পেশ্যাল ট্রেন ভাড়া করতাম।

    তাতেও নাগাল পেতে না।

    ঠিক উলটো। এই ট্রেন ক্যান্টারবেরিতে কিছুক্ষণ দাঁড়ায়। স্টিমার ছাড়তেও মিনিট পনেরো সময় লাগে। তার মধ্যে ও আমাদের ধরে ফেলবে।

    খুনি আসামি নাকি আমরা? ওকেই বরং পৌঁছোনোর সঙ্গেসঙ্গে ধরিয়ে দিলে হয় না?

    তাতে আমার তিন মাসের হাড়ভাঙা খাটনি জলে যাবে। পালের গোদাটিকে ধরতে গিয়ে দলের অন্য রাঘব বোয়ালগুলো জাল কেটে ভাগলবা হবে। কিন্তু যদি সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করি, সব মিঞাকে একসঙ্গে জাল টেনে তোলা যাবে। না হে না, এখন নয়। সবুর করতে হবে।

    তাহলে এখন উপায়?

    ক্যান্টারবেরিতে নেমে যাব। মালপত্র নিয়ে ট্রেন চলে যাক। আমরা নিউহ্যাভেনের ট্রেন ধরে বেরিয়ে পড়ব দেশভ্রমণে। নানাদেশ ঘুরে পৌঁছোব সুইজারল্যান্ডে।

    চোরের মতো এইভাবে পালিয়ে বেড়াতে হবে শুনে পা থেকে মাথা পর্যন্ত জ্বলে গেল আমার। কিন্তু তর্ক করলাম না। ক্যান্টারবেরিতে নেমে ট্রেন ছেড়ে দিলাম। নিউহ্যাভেনের ট্রেন তখনও একঘণ্টা পরে। এমন সময়ে চাপা গলায় হোমস বলে উঠল, ওয়াটসন, ওয়াটসন, ওই দেখো!

    দেখলাম, দূরের কেন্ট বনানি থেকে উল্কাবেগে ধোঁয়ার পেছনে উড়িয়ে বেরিয়ে আসছে একটা স্পেশ্যাল ট্রেন। একখানা বগি নিয়ে ছুটছে একটা ইঞ্জিন। তাড়াতাড়ি মালপত্রের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম দুই বন্ধু–মুখের ওপর ধোঁয়া আর বাষ্প ছড়িয়ে দিয়ে নক্ষত্রবেগে পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল স্পেশ্যাল।

    দিগন্তে মিলিয়ে গেল গাড়ি। হোমস বললে, তার মানে ঘটে বুদ্ধি একটু কম আছে।

    তোমার লাইনে ভেবে নিয়ে যদি এখানে থামত প্রফেসর, তাহলে কী হত?

    আমাকে খুন করত, সে যা বলে গেছে, তাই করত।

    দু-দিন পরে স্ট্রাসবুর্গে পৌঁছে লন্ডনে টেলিগ্রাম করে খবর নিল হোমস। ভীষণ রেগে গেল যখন শুনল, প্রফেসর মরিয়ার্টি বাদে সব্বাই ধরা পড়েছে।

    রাগে গরগর করতে করতে টেলিগ্রামখানা ফায়ার প্লেসে ফেলে দিয়ে বললে, ওয়াটসন, আমি জানতাম ও পালাবে। আমি থাকলে এমনটা হত না। যাকগে ভায়া, তুমি এবার লন্ডনে গিয়ে রুগি সামলাও। আমাকে একা লড়তে দাও প্রফেসরের সঙ্গে। জীবন মরণের এ-খেলায় তোমাকে সঙ্গে রাখতে চাই না।

    কিন্তু অত সহজে যুদ্ধফেরত একজন প্রাণের বন্ধুকে বিপদের সময়ে ঝেড়ে ফেলা যায় না। শার্লক হোমসও পারল না। ঝাড়া একঘণ্টা কথা কাটাকাটির পর সেই রাতেই দুই বন্ধু জেনেভার পথে পাড়ি জমালাম।

    একদেশ থেকে আর একদেশে, পাহাড় থেকে পাহাড়ে, গ্রাম থেকে গ্রামে, কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো গাড়ি নিয়ে টো-টো করলাম দুই বন্ধু। প্রকৃতির লীলা নিকেতনের সৌন্দর্য কিন্তু মুহূর্তের জন্যেও শার্লক হোমসের মন থেকে প্রফেসরের চিন্তা দূর করতে পারেনি। বিপদ যে পায়ে পায়ে ঘুরছে, তা ওর চকিত চাহনি দেখে বুঝেছি। দূর গ্রামাঞ্চলেও প্রতিটি লোকের দিকে সজাগ চাহনি নিক্ষেপ দেখে উপলব্ধি করেছি–কাউকেও বিশ্বাস করছে না। একবার পাহাড়ি পথে হঠাৎ হুড়মুড় করে একটা মস্ত আলগা পাথর গড়িয়ে গিয়ে সশব্দে পড়ল লেকের জলে। তৎক্ষণাৎ ঝড়ের বেগে পাহাড়ের মাথায় উঠে গিয়ে চারপাশ দেখল হোমস, কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। গাইড বললে–ও কিছু নয়। এ-অঞ্চলে ওভাবে পাথরের চাঙড় হামেশা পড়ে। শার্লক হোমস মুখে কিছু বলল না। শুধু হাসল। বিচিত্র সেই হাসি দেখেই বুঝলাম কালান্তক যমদূতের মতো কার করাল ছায়া আঠার মতো লেগে রয়েছে তার সামনে–সে যা ভয় করেছিল তাই সত্যি হতে চলেছে।

    মৃত্যু যেকোনো মুহূর্তে আসতে পারে জেনেও বন্ধুবরের মুখে মৃত্যুর ছায়া দেখিনি। বরং জীবনে ওকে এমন ফুর্তিবাজ অবস্থাতেও দেখিনি। ঘৃণ্যকীট প্রফেসর মরিয়ার্টির কবল থেকে সমাজকে শেষ পর্যন্ত মুক্ত করার স্বপ্নে মশগুল থেকেছে অহোরাত্র।

    আমাকে বুঝিয়েছে, ওয়াটসন, দুঃখ কীসের? জীবনটা তো বাজে নষ্ট করিনি। আমার জন্যেই লন্ডনের লোক এখন থেকে শান্তিতে জীবন কাটাতে পারবে। আমার সব কীর্তির শেষে যেন একটা কীর্তি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকে ইউরোপের সবচেয়ে ভয়ানক চালাক কুচক্রী লোকটাকে

    আমিই যমালয়ে পাঠিয়েছি অথবা শ্রীঘরে পুরেছি।

    এর পরের ঘটনা সংক্ষেপে সারছি। বিস্তারিত বলবার মতো মনের অবস্থা আমার নেই। তবে কিছুই বাদ দেব না–খুঁটিয়েই বলব।

    তেসরা মে মেরিনজেন গ্রামে একটা সরাইখানায় উঠলাম। বৃদ্ধ মালিক বললেন, রাইখেনবাক জলপ্রপাতটা যেন দেখে যাই।

    চৌঠা মে বিকেল নাগাদ রওনা হলাম রোজেনলাউ গ্রামের দিকে যাবার পথে দেখতে গেলাম রাইখেনবাক জলপ্রপাত।

    সে কী ভয়াবহ দৃশ্য! বুক কেঁপে ওঠে, কানের পর্দা ফেটে যায়, স্মৃতির পর্দায় আতঙ্কের শিহর চিরকালের মতো লেগে থাকে। বরফ মেশানো সবজে জলস্রোত ভীমবেগে বজ্ৰনাদে ধেয়ে পড়ছে বহু নীচে দু-পাশের কুচকুচে কালো খোঁচা খোঁচা ধারালো বল্লমাকৃতি পাথরের মধ্য দিয়ে। বাড়িতে আগুন লাগলে যেভাবে কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া ওঠে, সেইভাবে জলবাষ্প উঠছে তো উঠছেই–সৃষ্টির প্রথম মুহূর্ত থেকে বিরাম নেই এক মুহূর্তের জন্যেও বিরাম নেই বিপুল বেগে বিকট শব্দে ফুটন্ত জলধারার আছড়ে পড়ার মধ্যেও। চাপা গুম গুম সেই বীভৎস শব্দ শুনলে মনে হয় যেন অমানুষিক অর্ধেক পশু, অর্ধেক মানুষের রক্ত-জল-করা আকাশফাটা বিকট হাহাকার। কিনারায় দাঁড়িয়ে নীচের দিকে চেয়ে থাকলেও মাথা ঘুরে যায়।

    পথ মাঝখানে শেষ হয়েছে–প্রপাতের একদম ধার পর্যন্ত না যাওয়া গেলেও প্রপাত দেখতে অসুবিধে হয় না। আমরাও শেষ পর্যন্ত আর গেলাম না। ফিরতে যাচ্ছি, এমন সময়ে ছুটতে ছুটতে এল একটা সুইস ছোকরা। চিঠি পাঠিয়েছে মেরিনজেন গ্রামে সরাইখানার বুড়ো মালিক। ডাক্তার ওয়াটসন এখুনি এলে বড়ো উপকার হয়। একজন ইংরেজ মহিলা দেশ দেখতে এসে হঠাৎ সাংঘাতিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ইংরেজ ডাক্তার ছাড়া সুইস ডাক্তার দেখাতে তিনি রাজি নন। হয়তো আর একটা ঘণ্টা বাঁচবেন। তাহলেও শেষ মুহূর্তে একজন ইংরেজ ডাক্তারকে পাশে চাইছেন।

    শার্লক হোমসকে ছেড়ে যেতে মন চাইল না। কিন্তু মৃত্যুপথযাত্রিণীর শেষ অনুরোধ ঠেলে ফেলাও সম্ভব নয়। তাই ঠিক হল। হোমস রোজেনলাউ গ্রামে একা চলে যাবে–আমি মেরিনজেনে রুগি দেখে রাতে ওর কাছে যাব।

    আসবার সময়ে দেখে এলাম, বুকের ওপর দু-হাত রেখে পাহাড়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নিমেষহীন চোখে দুরন্ত জলস্রোত দেখছে শার্লক হোমস। হায় রে! তখন যদি বুঝতাম এই দেখাই

    আমার শেষ দেখা!

    শেষ ধাপে পৌঁছে আবার ফিরে তাকালাম। জলপ্রপাত আর দেখতে পেলাম না বটে, তবে একজন দীর্ঘকায় ব্যক্তিকে দ্রুত পদক্ষেপে উঠে যেতে দেখলাম ওপর দিকে। সতেজ দৃপ্ত ভঙ্গিমায় তার যাওয়াটুকুই কেবল আমি দেখেছি, সবুজের পটভূমিকায় কালো ছায়ার মতো দেহরেখার সবটুকু চোখে পড়েনি। একটু পরে রুগির চিন্তায় লোকটিকে একদম ভুলে গেলাম।

    সরাইখানার সামনে পৌঁছোলাম ঘন্টাখানেকের মধ্যেই। দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল বৃদ্ধ মালিক। আমাকে দেখে সে তত অবাক। চিঠি দেখে আরও অবাক! এ-চিঠি তো তার লেখা নয়। কোনো ইংরেজ মহিলা তো অসুস্থ হয়নি সরাইখানায়!

    বললে, চিঠিতে সরাইখানার ছাপ রয়েছে দেখছি। বুঝেছি! আপনারা চলে যাওয়ার পরেই লম্বা মতো একজন ইংরেজ ভদ্রলোক এসেছিলেন। নিশ্চয় তিনিই লিখেছেন। বলছিলেন—

    আর বলছিলেন! বাকি কথা শোনবার আর সময় নেই তখন। ঝড়ের মতো ছুটলাম যে-পথে এসেছি সেই পথেই। নামতে লেগেছিল এক ঘণ্টা, উঠতে লাগল দু-ঘন্টা১৪। হোমসকে শেষবারের মতো যেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গেছিলাম, সেখানে গিয়ে শুধু তার ছড়িটা দেখলাম ঠেস দেওয়া অবস্থায় রয়েছে পাহাড়ের গায়ে। সে নেই!

    সে নেই! আশেপাশে কোথাও নেই! তিন ফুট চওড়া এই সংকীর্ণ পথের একদিকে মৃত্যুকূপের মতো গভীর খাদ, আর একদিকে আকাশছোঁয়া পাহাড়, দুইয়ের মাঝে কার পথ চেয়ে সে দাঁড়িয়েছিল? প্রফেসর মরিয়ার্টির? সুইস ছোকরা তাহলে চতুর-চূড়ামণি প্রফেসরের চর?

    শার্লক হোমস এখন কোথায়?

    প্রথমটা বিহ্বল হয়ে পড়লেও আস্তে আস্তে সামলে নিয়েছি নিজেকে। বন্ধুবরের পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় আমার দীর্ঘদিনের। সেই পদ্ধতি অনুসারে দেখলাম পায়ের ছাপ কোথাও আছে কি না। পেলামও না। দুজন লোকের পায়ের ছাপ পাথুরে রাস্তার পরেই ভিজে কাদার ওপর দিয়ে কিনারা পর্যন্ত গেছে, কিন্তু কোনো ছাপই আর ফিরে আসেনি। দুজনের কেউই কাদা মাড়িয়ে ফেরেনি, অথচ কাদা এত নরম যে পাখি হেঁটে গেলেও দাগ পড়বেই।

    গেলাম কিনারা পর্যন্ত। সেখানকার কাঁটাঝোপ আর ফার্ন ছিঁড়ে-খুঁড়ে একাকার হয়ে গেছে কাদায় পিণ্ডি পাকিয়ে গেছে, যেন প্রকাণ্ড ধস্তাধস্তি করেছে দুই ব্যক্তি। তারপর

    তারপর? মুখ বাড়ালাম সুগভীর খাদের অতল গহুর পানে। উখিত জলবাষ্প ফোয়ারার মতো ছিটকে এসে ভিজিয়ে দিল আমারমুখ, অর্ধ-মানবিক বিকট হাহাকারে ফেটে গেল যেন কানের পর্দা–

    ফাঁকে-ফোকরে দৃষ্টিসঞ্চালন করেও চিহ্ন দেখতে পেলাম না কারো। বার বার বুকফাটা চিৎকার করেও সাড়া পেলাম না কারো। হোমস সাড়া দিল না আমার ডাকে। শুধু বাতাস গুঙিয়ে উঠল। প্রপাত কেঁদে চলল। ধ্বনি আর প্রতিধ্বনির রেশ দুরে মিলিয়ে গেল।

    ফিরে এলাম। কী অবস্থায় ফিরলাম, তা শুধু আমিই জানি, আর ভগবান জানেন। হোমসের ফেলে যাওয়া ছড়ির কাছে ওর চকচকে সিগারেট কেসটাও রয়েছে দেখলাম। তলায় একটা চৌকোনা কাগজে মুক্তাক্ষরে লেখা আমার নামে একটা চিঠি। খুব যত্ন করে যেন বেকার স্ট্রিটের বসবার ঘরে বসে গুছিয়ে শেষ চিঠি লিখে গেছে শার্লক হোমস।

    ভায়া ওয়াটসন,

    হিসেব-নিকেশ করার জন্যে মরিয়ার্টি বসে রয়েছে, এই চিঠিখানা লেখবার সুযোগ সে-ই দিয়েছে। ইংরেজ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে কীভাবে আমার গতিবিধির খবর সে রেখেছিল এখুনি তা বুঝিয়ে দিল। প্রফেসরের অসাধারণ ক্ষমতা সম্পর্কে চিরকালই আমার ধারণা ভালো। এই কাহিনি শুনে তা দৃঢ়তর হল। এই শেষ মুহূর্তেও একটা কথা ভেবে খুশি না হয়ে পারছি না। এইরকম একটা দুর্দান্ত কুশলী ব্যক্তির করাল ছায়া থেকে অবশেষে সমাজকে আমি চিরতরে রেহাই দিতে যাচ্ছি–যদিও তার জন্যে খেসারত দিতে হবে বড্ড বেশি এবং আমার বন্ধুবান্ধবরা৫ প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পাবে–বিশেষ করে দুঃখে ভেঙে পড়বে আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু তুমি। আগেই তোমাকে বলেছি, এ-জীবনের সবচেয়ে বড়ো সংকটে এসে ঠেকেছে। আমার কর্মজীবন এবং এইটাই এর একমাত্র সম্ভবপর পরিণতি, আমার কীর্তিময় জীবনের পরিসমাপ্তিও সূচিত হবে এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে এবং তার চাইতে আনন্দময় ব্যাপার আমার কাছে আর কিছুই নেই। তোমার কাছে আর লুকোব না, আমি বুঝতে পেরেছিলাম মেরিনজেন থেকে আসা চিঠিটা স্রেফ ভাওতা। তা সত্ত্বেও তোমাকে যেতে দিয়েছিলাম শেষ লড়াই লড়ব বলে। ইনস্পেকটর প্যাটারসনকে বলবে পুরো দলটাকে দায়রা সোপর্দ করার উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ একটা নীল খামে ভরে এম চিহ্নিত খুপরিতে রেখেছি, খামের ওপর মরিয়ার্টির নাম লেখা আছে ইংলন্ড ত্যাগের আগেই আমার যাবতীয় বিষয়সম্পত্তি উইল করে আমার দাদা মাইক্রফটকে দিয়ে এসেছি। মিসেস ওয়াটসনকে আমার শুভেচ্ছা জানিয়ে এবং তুমি নিজে জেনো জনমে মরণে আমি তোমার প্রাণের বন্ধু হয়ে রইলাম।

    তোমার একান্ত অন্তরঙ্গ–শার্লক হোমস

    এর পরের কাহিনি অল্প কথাতেই শেষ করে দিচ্ছি। বিশেষজ্ঞরা লণ্ডভণ্ড কাদামাটি পরীক্ষা করে একবাক্যে বললেন, সত্যিই দুই ব্যক্তির মধ্যে প্রচণ্ড মারপিট চলেছিল সেখানে। ওই অবস্থাতে মারপিট ছাড়া আর পথও ছিল না। দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে গড়াতে গড়াতে একসঙ্গে ঠিকরে গেছে খাদের মধ্যে। নম্বর দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়াও আর সম্ভব নয়। ঘুরপাক খাওয়া জল আর উত্তাল ফেনায় ভরা ভয়ংকর ওই কটাহের অনন্ত শয্যায় ঘুমিয়ে থাকবে এ-শতাব্দীর সবচেয়ে বিপজ্জনক অপরাধী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বশ্রেষ্ঠ বীরপুরুষ। সেই সুইস তরুণটির আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। ছোকরা যে প্রফেসর মরিয়ার্টির অগুনতি মাইনে করা স্যাঙাতের অন্যতম, তাতে আর সন্দেহ নেই। কুখ্যাত দলটির পরিণতি শেষ পর্যন্ত কী হয়েছিল জনগণ তা ভালো করেই জানেন। দেশের লোক কোনোদিন ভুলতে পারবে না লোকান্তরিত মহাপুরুষ শার্লক হোমস সংগৃহীত সাক্ষ্য প্রমাণের দৌলতে কীভাবে সংগঠনের সমস্ত দুষ্কর্ম ফাঁস হয়ে যায় এবং প্রত্যেকে কড়া সাজা পায়। মৃত্যুর পরেও এইভাবে বুদ্ধির খেলা দেখিয়ে গেল আমার আশ্চর্য বন্ধুটি দেখিয়ে দিল মৃত্যুর সঙ্গেসঙ্গে ফুরিয়ে যায়নি তার ক্ষমতার প্রভাব। মহাপাপিষ্ঠ দলপতিটি সম্বন্ধে খুব একটা সংবাদ মামলা চলার সময়ে প্রকাশ পায়নি। তাই কিছু অবিবেচক সমর্থক উঠে পড়ে লেগেছিল যাতে তার স্মৃতি চিরউজ্জ্বল থাকে জনগণ মানসে। কিন্তু এই করতে গিয়ে এমন একজনকে তারা আক্রমণ করে চলেছে যার চাইতে জ্ঞানী আর সেরা পুরুষ আমার জীবনে আর আসেনি। প্রফেসর মরিয়ার্টির স্বরূপ আর শেষ দ্বন্দ্বের মর্মন্তুদ এই কাহিনি সবিস্তারে বর্ণনা করলাম শুধু সেই কারণেই।

    ——–

    টীকা

    শার্লক হোমস বিদায় নিলেন : দ্য ফাইনাল প্রবলেম স্ট্যান্ড ম্যাগাজিনের ডিসেম্বর ১৮৯৩ সংখ্যায় এবং নিউইয়র্কের স্ট্র্যান্ডের ১৮৯৩-এর ক্রিসমাস সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়।

    কর্নেল জেমস মরিয়াটি : প্রেফেসর মরিয়ার্টির প্রথম নাম এই গল্পে কোথাও বলা হয়নি। হয়েছে পরবর্তী গল্প দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য এমটি হাউস গল্পে। সেখানে ভাইয়ের মতো প্রেফেসর মরিয়ার্টিকেও জেমস বলা হয়েছে।

    রয়টার : জার্মান ব্যাঙ্ক কেরানি পল জুলিয়াস রয়টার ১৮৫১-র অক্টোবরে রয়টার্স টেলিগ্রাম কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে। প্রাথমিকভাবে এই কোম্পানি বেলজিয়ামের ব্রাসেলস এবং জার্মানির আখেন শহরের মধ্যে শেয়ারের দর জানাত। পরে এই সংস্থা আরও বড়ো হয় এবং সংবাদ সংস্থা হিসেবে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করে।

    এয়ারগান : ১৫৩০ সালে নুরেমবার্গের গুটের সংস্থা প্রথম এয়ারগান তৈরি করে। ভিক্টোরীয় যুগে ইংরেজরা হাঁটতে বেরোনোর ছড়ির মধ্যে এয়ারগান লুকিয়ে রাখতেন।

    জন্মেও না : দ্য ভ্যালি অব ফিয়ার উপন্যাসের ঘটনা দ্য ফাইনাল প্রবলেম-এর আগের সময়কার বলে গবেষকরা মনে করেন। তাই যদি হয়, তাহলে হোমস এবং ওয়াটসনের কথোপকথনের এই অংশ সম্পূর্ণ অবান্তর এবং অযৌক্তিক। কিংবা সম্পূর্ণ ভুল ওই অনুমান।

    বাইননামিয়াল থিয়োররম : স্যার আইজ্যাক নিউটন কর্তৃক ১৬৭৬ সালে প্রণীত বীজগণিতের সূত্র।

    মাথার সামনের দিকটা ভেবেছিলাম আরও পরিণত হবে : ভিক্টোরীয় যুগের ইংলন্ডে প্রচলিত, ফ্রাজ জোসেফ গল প্রচলিত, মগজের আকৃতি এবং মাথার খুলির আকার আয়তন থেকে মানুষের বুদ্ধি, সম্মানজ্ঞান,বা অন্যান্য বিষয় বিচারের বিজ্ঞান ফ্রেনোলজির (Phrenology) বিচারে শার্লক হোমসকে হেয় প্রতিপন্ন করতে সম্ভবত মরিয়ার্টির উক্তি।

    লাউডার আর্কেড : স্ট্র্যান্ড-এ অবস্থিত লন্ডন শহরের একটি বাজার এলাকা।

    স্ট্রাসবুর্গ : ফ্রান্সের লোয়ার অ্যালসেশিয়ায় অবস্থিত প্রাচীন শহর। ইল নদীর তীরবর্তী এই শহরের ইতিহাস বহু শতাব্দীর পুরোনো এবং এখানে ছয় লক্ষ বছর আগে আদিম মানুষের বসবাসের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

    সব্বাই ধরা পড়েছে :সব্বাই নয়। কর্নেল সিবাস্টিয়ান মোর‍্যান এবং পার্কার ধরা পড়েনি। হোমস-সিরিজের পরবর্তী কাহিনি দ্য এমটি হাউস দ্রষ্টব্য।

    মেরিনজেন : রাইখেনবাক প্রপাতের নিকটবর্তী এই শহর ইন্টারলাকেন-মেরিনজেনবাহন ন্যারোগেজ শাখা রেলপথের প্রান্তিক স্টেশন। এই শহর সুইজারল্যান্ডের বার্ন এলাকার অন্তর্গত।

    রোজেনলাউ : আল্পস পাহাড়ে রাইখেনব্যাশাল উপত্যকার সর্বোচ্চ জনপদ রোজেনলাউ।

    রাইখেনবাক জলপ্রপাত : সুইজারল্যান্ডের এই প্রপাতে আর (Aar) নদী ঝাঁপিয়ে পড়েছে আড়াইশো মিটার উঁচু থেকে। বর্তমানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মিত হওয়ায় কখনো জলের তোড় কমে আসে। শার্লক হোমসের কাহিনি আরও বিখ্যাত করেছে এই পর্যটনক্ষেত্রকে।

    উঠতে লাগল দু-ঘণ্টা : হোমস-গবেষক লেসলি এস. ক্লিংগার জানিয়েছেন মেরিনজেন-এ অবস্থিত হোটেল রাইখেনবাক থেকে রাইখেনবাকের লোয়ার ফলস হেঁটে পৌঁছোত পনেরো মিনিট লাগে। আর আপার ফলস পৌঁছোতে সময় লাগে পঁয়তাল্লিশ মিনিট।

    বন্ধুবান্ধবরা : দ্য পাইপ অরেঞ্জ পিপস গল্পে হোমস নিজের মুখে বলেছিলেন যে ওয়াটসন ছাড়া তার আর কোনো বন্ধু নেই।

    উইল : জুন ১৯৫৫ সংখ্যার লন্ডন মিস্ট্রি ম্যাগাজিনে শার্লক হোমসের শেষ উইল প্রকাশিত হয়। দেখা যায় তাতে ওয়াটসনকে পাঁচ হাজার পাউন্ড এবং হোমসের কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে।

    দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়াও আর সম্ভব নয় : রাইখেনবাক জলপ্রপাত যথেষ্ট উত্তাল হয়ে থাকলেও ওই জলধারা। শেষ পর্যন্ত পৌঁছেছে ব্রিঞ্জ লেক-এ। যেখানে জল বদ্ধ এবং শান্ত। রাইখেনবাক-এ কেউ পড়ে গেলে তা শেষ পর্যন্ত ব্রিঞ্জ লেক-এ এসে পড়বে এবং সেখানে সেই দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ – আরিফ আজাদ
    Next Article শার্লক হোমস সমগ্র ১ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }