Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শার্লক হোমস সমগ্র ২ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    লেখক এক পাতা গল্প1414 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    মোর‍্যানের মারাত্মক হাতিয়ার

    [ দি অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য এম্পটি হাউস ]

    ১৮৯৪ সালের বসন্তকাল।

    অনারেবল রোনাল্ড অ্যাডোয়ারের হত্যায় দুনিয়ার সমস্ত শৌখিন সমাজে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছিল, সাড়া পড়ে গেছিল লন্ডনের আপামর জনসাধারণের মধ্যে। যেরকম অস্বাভাবিক পরিবেশের মধ্যে তিনি খুন হয়েছিলেন, বুদ্ধি দিয়ে তার ব্যাখ্যা চলে না।

    দীর্ঘ দশ বছর বাদে আজ আমি অনুমতি পেয়েছি সারি সারি পরস্পরনির্ভর আশ্চর্য ঘটনাগুলোর হারিয়ে যাওয়া অংশগুলো লেখবার।

    প্রথমেই সবাইকে জানিয়ে রাখি, দীর্ঘদিন ধরে এই চাঞ্চল্যকর কাহিনি চেপে রাখার জন্যে আমার কোনো দোষ নেই। অতীতে যে অতি আশ্চর্য পুরুষটির অনন্যসাধারণ চিন্তাধারা আর কার্যকলাপের একটু আধটু খবর জানিয়ে সবার চিত্তবিনোদন করতে সক্ষম হয়েছিলাম, এ-কাহিনি না-লেখার সুকঠিন নির্দেশ পেয়েছিলাম তার নিজের মুখ থেকেই। আজ তা লিখতে বসেছি, কেননা গত মাসের তিন তারিখে সে নিজেই এ-নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে আমার লেখনীর ওপর থেকে।

    অনারেবল রোনাল্ড অ্যাডেয়ার আর্ল অফ মেনুথের দ্বিতীয় পুত্র। আর্ল অফ মেনুথ সে সময়ে অস্ট্রেলিয়ার একটা কলোনির গভর্নর ছিলেন। অ্যাডেয়ারের মা অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে এসেছিলেন চোখের ছানি অপারেশন করাতে। ৪২৭ নম্বর পার্ক লেনে ছেলে রোনাল্ড আর মেয়ে হিলডাকে নিয়ে থাকতেন তিনি। সমাজের সেরা মহলে ঘোরাফেরা করত রোনাল্ড। এবং যতদূর জানা যায়, তার কোনো বিশেষ বদঅভ্যাস ছিল না, কোনো শত্রুও ছিল না। কারস্টেয়ার্সের মিস এডিথ উডলির সঙ্গে তাঁর বিয়ের সম্বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু সে-সম্বন্ধ শেষ পর্যন্ত ভেঙে যায় মাস কয়েক আগে উভয়পক্ষের সম্মতি নিয়ে। এবং এর ফলে রোনাল্ডের মনে যে কোনো দাগ পড়ছে তারও কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। সবাই জানত, রোনাল্ড খুব সীমিত এবং সনাতন পরিধির মধ্যে জীবন কাটিয়ে দিতে ভালোবাসেন–কেননা আবেগের কোনো বালাই ছিল না তার প্রকৃতিতে। স্বভাবটিও ছিল বেশ শান্ত। কিন্তু তবুও শেষ পর্যন্ত এমন শান্তশিষ্ট তরুণ অভিজাতের শিরে নেমে এল মৃত্যুর পরোয়ানা এল অত্যন্ত আশ্চর্য এবং অপ্রত্যাশিতভাবে ১৮৯৪ সালের তিরিশে মার্চ রাত দশটা থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যে।

    তাস খেলতে ভালোবাসতেন রোনাল্ড অ্যাডেয়ার। একটানা খেলে যেতেন, কিন্তু চোট খাওয়ার মতো ঝুঁকি কখনো নিতেন না। বল্ডউইন, ক্যাভেন্ডিস আর বাগাটেলী ক্লাবের সভ্য ছিলেন তিনি। জানা গেছে, মৃত্যুর দিন বাগাটেলী কার্ড ক্লাবের ডিনারের পর রাবার অফ হুইস্ট খেলেছিলেন রোনাল্ড। বিকেলেও তাঁকে খেলতে দেখা গেছে সেখানে। খেলার সাথি ছিলেন মি. মারে, স্যার জন হার্ডি এবং কর্নেল মোর‍্যান। এঁদের কথা থেকেই জানা যায় যে হুইস্ট খেলেছিলেন রোনাল্ড এবং খেলাতে মোটামুটি সমানভাবে পড়েছিল সবার তাস। অ্যাডেয়ার খুব জোর পাঁচ পাউন্ড হেরে থাকতে পারেন তার বেশি নয়। তার আর্থিক অবস্থা খুবই সচ্ছল এবং এ সামান্য ক্ষতিতে মুষড়ে যাবার মতো মানুষ তিনি নন। প্রায় প্রতিদিনই একটা-না-একটা ক্লাবে তাস খেলতেন রোনাল্ড। কিন্তু এমনই সাবধানী খেলোয়াড় তিনি যে বড়ো-একটা হারতেন না–পকেট ভারী করে তবে টেবিল ছাড়তেন। আরও জানা গেল যে, হপ্তাখানেক আগে কর্নেল মমর্যানকে পার্টনার নিয়ে এক হাত থেকেই গডফ্রে মিলনার এবং লর্ড ব্যালোেরালের কাছ থেকে প্রায় চারশো কুড়ি পাউন্ড জিতেছিলেন। সাম্প্রতিক ইতিহাস বলতে তদন্তের ফলে এই সবই জানা গেছিল তার সম্বন্ধে।

    খুনের রাতে ক্লাব থেকে ঠিক দশটায় বাড়ি ফিরে আসেন অ্যাডেয়ার। মা আর বোন বেরিয়েছেন কোনো আত্মীয়ের সঙ্গে। তিনতলায় সামনের ঘরটা সাধারণত তার বসবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করা হয়–পরিচারিকা এই ঘরেই ঢোকবার শব্দ শুনেছে। আগেই ঘরে চুল্লি জ্বেলে দিয়েছিল সে, ধোঁয়া হচ্ছিল বলে জানলাটাও খুলে এসেছিল। রাত এগারোটা কুড়ি মিনিটে লেডি মেনুথ আর তাঁর মেয়ে ফিরে এলেন। কিন্তু তখনও পর্যন্ত কোনো শব্দ শোনা গেল না ঘর থেকে। শুভরাত্রি জানাবার জন্যে লেডি মেনুথ ছেলের ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখলেন ভেতর থেকে দরজায় চাবি দেওয়া। চেঁচিয়ে, ধাক্কা দিয়ে কোনো সাড়াশব্দ যখন পাওয়া গেল না, তখন লোকজন ডেকে জোর করে খোলা হল দরজা। টেবিলের কাছে পড়ে ছিলেন হতভাগ্য রোনাল্ড। রিভলভারের বুলেটে বীভৎসভাবে বিকৃত হয়ে গেছিল তার মাথার খুলি। ঘরের মধ্যে কিন্তু ও-জাতীয় কোনো হাতিয়ার খুঁজে পাওয়া যায়নি। টেবিলের ওপর দশ পাউন্ডের দুটো নোট পড়ে ছিল–আর ছিল ছোটো ছোটো থাকে সাজানো সোনা রুপোয় মিশানো সতেরো পাউন্ড দশ শিলিং। একটা কাগজে কতকগুলো সংখ্যা বসানো ছিল–পাশে পাশে লেখা কয়েকজন ক্লাবের বন্ধুর নাম। কাজেই ধরে নেওয়া হল, মৃত্যুর আগে তাসের জুয়োর হারজিতের একটা মোটামুটি খসড়া করার চেষ্টা করছিলেন তিনি।

    মিনিটখানেক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে আরও জটিল হয়ে দাঁড়াল কেসটা। প্রথমত ভেতর থেকে দরজায় চাবি দেওয়ার কোনো যুক্তিসংগত কারণ খুঁজে পাওয়া গেল না। খুব সম্ভব এ-কাজ খুনির। খুনের পর খোলা জানলা দিয়ে উধাও হয়েছে সে দরজায় চাবি যেমন ছিল তেমনি রেখে। মাটি থেকে কম করে বিশ ফুট উঁচুতে জানলাটা। অবশ্য জানলার ঠিক নীচেই ফুলে ফুলে ঢাকা ক্রোকাসের একটি ঝোপ ছিল। বিশ ফুট উঁচু থেকে সেখানে কেউ লাফিয়ে পড়লে ফুল-টুল ছিঁড়ে ঝোপ তো লন্ডভন্ড হতই, মাটিতেও গভীর পায়ের ছাপ পাওয়া যেত। কিন্তু সে-রকম কোনো চিহ্নই দেখা গেল না। ঝোঁপের মধ্যে দিয়ে ইদানীং কেউ হেঁটেছে বলেও মনে হল না। তাহলে দাঁড়াচ্ছে এই যে, অ্যাডেয়ার নিজেই দরজায় চাবি দিয়েছিলেন ভেতর থেকে। তাই যদি হয়, তাহলে মৃত্যু এল কোন পথে? কোনোরকম চিহ্ন না-রেখে কারো পক্ষেই কিছু বেয়ে জানলায় উঠে আসা সম্ভব নয়। ধরা যাক জানলা দিয়ে কেউ গুলি চালিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে তার খুলি। তাহলে তো হত্যাকারীর হাতের টিপ অসাধারণ বলতে হবে। কেননা, রিভলভার থেকে গুলি ছুঁড়ে এ-রকম মরণ ঘা দেওয়া বড়ো সোজা কথা নয়। বেশ, তাই যদি হয়, তাহলে জনবহুল পার্ক লেনে কেউ-না-কেউ গুলির আওয়াজ নিশ্চয় শুনতে পেত। বাড়ি থেকে শ-খানেক গজের মধ্যে ভাড়াটে গাড়ির একটা আচ্ছা আছে। সেখান থেকেও ফায়ারিং-এর কোনো শব্দ শোনা যায়নি। সব ঠিক। কিন্তু তবুও রিভলভারের বুলেটেই মারা গেছেন অ্যাডেয়ার। মারা গেছেন নিতান্ত আচম্বিতে খুদে কালান্তকের চকিত চুম্বন পলকের মধ্যেই অনারেবল রোনাল্ড অ্যাডেয়ারের দেহ থেকে মুছে নিয়ে গেছে প্রাণের সমস্ত চিহ্ন।

    এই হল পার্ক লেন রহস্য। খুনের পেছনে কোনো মোটিভ পাওয়া যায়নি, কেননা আমি আগেই বলেছি রোনাল্ডের কোনো শত্রু ছিল না। তা ছাড়া তাঁর ঘরের টাকাপয়সা সরানোরও কোনো প্রচেষ্টা হয়নি। কাজেই, মোটিভের কোনো নামগন্ধ না-থাকায় আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এই আশ্চর্য রহস্য।

    সারাদিন ধরে শুধু এই সবই ভাবলাম বার বার। স্বীকার করতে লজ্জা নেই, যে-পরিমাণে মস্তিষ্কের গ্রে-সেলগুলোকে কষ্ট দিলাম, সে-অনুপাতে সমস্যার সুরাহা বলতে গেলে কিছুই হল না।

    সন্ধের দিকে বেড়াতে বেড়াতে পার্কের দিকে এসেছিলাম। ছ-টা নাগাদ এসে পৌঁছোলাম পার্ক সেন আর অক্সফোর্ড স্ট্রিটের মোড়ে। ফুটপাথের ওপর এক দঙ্গল উঞ্ছ প্রকৃতির লোককে দেখলাম ভিড় করে একদৃষ্টে ওপরতলার বিশেষ একটা জানলার পানে তাকিয়ে থাকতে। বুঝলাম যে-বাড়ির সন্ধানে আসা এ সেই বাড়ি। পিছু হটতে গিয়ে ধাক্কা লেগে গেল আধবুড়ো এক কুঁজোর সঙ্গে। আমার ঠিক পেছনেই একগাদা বই হাতে দাঁড়িয়ে ছিল লোকটা। ধাক্কা লেগে কয়েকটা বই ছত্রাকার হয়ে পড়ল ফুটপাথের ওপর। লজ্জিত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়ে দেখলাম আমার কাছে বইগুলোর যে-দামই থাকুক না কেন এবং তাদের সঙ্গে আমি যত খারাপ ব্যবহারই করি না কেন, আধবুড়ো গ্রন্থকীট ভদ্রলোকের কাছে তাদের দাম অপরিসীম। কেননা, আমার কথা শুরু হতে-না-হতেই দাঁত খিচিয়ে দারুণ ঘৃণায় এক হুংকার ছেড়ে পেছন ফিরে পা চালালেন ভদ্রলোক ভিড়ের দিকে। পেছন থেকে ভিড়ের মধ্যে আমি শুধু দেখতে পেলাম তার সাদাকালো কোঁকড়ানো জুলপি জোড়া।

    পার্ক লেনের ৪২৭ নম্বর বাড়ি দেখে আমার আসল সমস্যার কোনো সুরাহাই হল না। রাস্তা আর বাড়ির মাঝে রেলিং লাগানো একটা নীচু পাঁচিল দেখলাম। তাও সব মিলিয়ে পাঁচ ফুটের উঁচু নয়। কাজেই রেলিং টপকে যে কেউ অনায়াসেই ঢুকতে পারে বাগানে, কিন্তু জানলার নাগাল পাওয়া একেবারেই অসম্ভব। কেননা, জলের পাইপ কি ওই জাতীয় কিছুই দেখতে পেলাম না ধারেকাছে। আগের চেয়ে আরও বেশি হতভম্ব হয়ে ফিরে এলাম কেনসিংটনে। পাঁচ মিনিটও হয়নি আমার স্টাডিতে বসেছি আমি, এমন সময়ে পরিচারিকা এসে খবর দিলে এক ভদ্রলোক দেখা করতে চান আমার সঙ্গে।

    ঘরে ঢুকলেন যিনি তাঁকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। পার্ক লেনের সেই অদ্ভুত প্রকৃতির আধবুড়ো গ্রন্থকীট। লম্বা লম্বা পাকা চুলের মাঝে ধারালো কঠিন মুখ। ডান বগলে ডজনখানেক তার সেই মহামূল্যবান কেতাব।

    কীরকম যেন অদ্ভুত কর্কশ স্বরে শুধোলেন, আমাকে দেখে বেজায় অবাক হয়ে গেলেন দেখছি?

    স্বীকার করলাম যে কিছুটা হয়েছি বই কী।

    কিছু মনে করবেন না স্যার, বিবেকের কামড় সইতে না-পেরে আসতে হল আমায়। আপনার পিছু পিছু আসছিলাম আমি। আপনাকে এ-বাড়িতে ঢুকে পড়তে দেখে ভাবলাম বলে যাই আমার রুক্ষ ব্যবহারে যেন কিছু মনে না-করেন। আপনার ওপর মোটেই রাগ করিনি আমি, বরং বইগুলো তুলে দেওয়ার জন্যে অশেষ কৃতজ্ঞ।

    আমি আপনার প্রতিবেশী। চার্চ স্ট্রিটের মোড়ে আমার বইয়ের দোকানটা হয়তো দেখে থাকবেন আপনি। আপনার সঙ্গে আলাপ করে সত্যিই খুব খুশি হলাম, স্যার। আপনারও হয়তো বই কেনার বাতিক থাকতে পারে। এই দেখুন ব্রিটিশ বার্ড, ক্যাটাল্লাস, আর হোলি ওয়ার প্রতিখানা বাড়িতে রাখার মতো। পাঁচখানা বই দিয়ে আপনার দ্বিতীয় সেলফের ওই ফাঁকটা ভরাট করে ফেলতে পারেন। বড়ো নোংরা লাগছে, কি বলেন স্যার?

    ঘাড় ফিরিয়ে পেছনের ক্যাবিনেটটা দেখে আবার যখন সামনে তাকালাম দেখলাম আমার পানে হাসিমুখে তাকিয়ে স্টাডি-টেবিলের ওপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে শার্লক হোমস।

    দাঁড়িয়ে উঠে সেকেন্ড কয়েক রীতিমতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে। তারপরেই বোধ হয় জীবনে সেই প্রথম এবং শেষবারের মতো অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম আমি। ধোঁয়াটে রঙের খানিকটা কুয়াশা ঘুরপাক খেয়ে উঠল চোখের সামনে! কুয়াশা পরিষ্কার হয়ে যেতে দেখলাম আমার কলারের বোতাম খোলা এবং ঠোঁটের ওপর ব্র্যান্ডির চনচনে স্বাদ। ফ্লাস্ক হাতে ঝুঁকে পড়ে আমার চেয়ারে বসে ছিল হোমস।

    শুনলাম সেই পরিচিত স্বর যা কোনোদিনই ভোলা যায় না, মাই ডিয়ার ওয়াটসন, আমার ঘাট হয়েছে, ক্ষমা করো আমায়। তুমি যে এ-রকম শক পাবে, তা আমি কল্পনাই করতে পারিনি।

    সজোরে আঁকড়ে ধরলাম তার হাত।

    হোমস! সত্যিই তুমি তো? বাস্তবিকই কি তুমি বেঁচে আছ? শেষ পর্যন্ত সেই ভয়ংকর খাদ বেয়ে উঠে আসতে পেরেছিলে তুমি?

    সবুর! সবুর! এসব কথা আলোচনা করার মতো অবস্থায় আছ তো? আবির্ভাবটা এতটা নাটকীয় করার কোনো দরকার ছিল না। বড়ো জোরালো শক দিয়ে ফেলেছি তোমায়।

    কিচ্ছু হয়নি আমার। কিন্তু, হোমস, আমি যে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছি না ভাই। গুড হেভেনস আমি ভাবতেও পারিনি কোনোদিন যে তুমি… তুমি আবার এসে দাঁড়াবে আমার স্টাডিতে, সজোরে আবার তার বাহু আঁকড়ে ধরে শিরাবহুল সরু পাকানো হাতে হাত বুলিয়ে বললাম, না, তুমি আর যাই হও, প্রেত নয়। বলো কীভাবে সেই ভয়াবহ খাদের ভেতর থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরে এলে।

    আমার উলটোদিকে বসে হোমস তার পুরোনো কায়দায় যেন কিছুই হয়নি এমনি উদাসীন ভাবে একটা সিগারেট ধরালে। পরনে তার বইয়ের দোকানির জীর্ণ ফ্রক কোট। বাকিটুকু, অর্থাৎ চুলের রাশি আর পুরোনো বইয়ের গাদা, পড়ে ছিল টেবিলের ওপর। হোমসকে আগের চাইতেও রোগা এবং সজাগ মনে হচ্ছিল বটে, কিন্তু তার তীক্ষ্ণ্ণ নাক, ধারালো চিবুক আর শুকনো মুখে মৃতের মুখের মতো পাঙাশপানা রক্তহীনতা লক্ষ করে বুঝলাম ইদানীং খুব স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে।

    সিগারেট ধরিয়ে বলল হোমস, গা এলিয়ে বসে বাঁচলাম, ওয়াটসন। লম্বা মানুষের পক্ষে পুরো এক ফুট ছেটে ফেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অভিনয় করে যাওয়া বড়ো সোজা কথা নয়। যাক, ভাই, তোমার সাহায্য আমার এখন দরকার। আজ রাতেই অত্যন্ত কঠিন আর বিপজ্জনক অভিযানে তোমাকে পাশে না-পেলে আমার চলবে না। কাজটা শেষ হলে, সমস্ত কিছু খুলে বলাই ভালো, কি বল?

    কৌতূহলের চাপে ফেটে মরে যাব আমি। যা বলবার এখনই বলো।

    আজ রাতে আমার সঙ্গে আসছ তো?

    এক-শোবার। যখনই বলবে, যেখানেই বলবে–আমার অমত নেই।

    বাস্তবিকই পুরোনো দিনগুলো যেন আবার ফিরে এল। যাবার আগে চটপট হাত চালিয়ে ডিনারটাও খেয়ে যেতে হবে। বেশ, তাহলে শুরু হোক খাদ-প্রসঙ্গ। খাদ থেকে প্রাণ নিয়ে বেরিয়ে আসতে আমায় খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি ওয়াটসন। কারণ জলের মতো সরল। খাদের ভেতর আমি কোনোদিনই পড়িনি।

    খাদের মধ্যে পড়ইনি?

    না, ওয়াটসন, কোনোদিনই না। তোমাকে যে-চিরকুটা লিখে গেছিলাম, তাতেও কোনো মিথ্যা ছিল না। যে সরু পথটা বেয়ে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছোনো যায়, ঠিক তার মুখটাতে যখন পরলোকগত প্রফেসর মরিয়ার্টির শয়তান মূর্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম, তখন অবশ্য আমার আর বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না যে আমার লীলাখেলা শেষ হয়ে এসেছে। লোকটার গ্রানাইট কঠিন ধূসর চোখে দেখলাম চাপা ফন্দির ঝিলিক। দু-চারটে কথা বলার পর প্রফেসরের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ছোট্ট চিরকুটটা লিখে ফেললাম–এই চিরকুটটাই তোমার হাতে পৌঁছেছিল। সিগারেটের বাক্স আর বেড়াবার ছড়িসমেত চিরকুটটা রেখে সরু পথ বরাবর এগিয়ে গেলাম–পিছু পিছু এলেন মরিয়ার্টি। পথের শেষে একেবারে খাদের কিনারায় পৌঁছে ঘুরে দাঁড়ালাম হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে। কোনো হাতিয়ার না-নিয়ে সিধে আমার দিকে দৌড়ে এসে লম্বা লম্বা হাত দিয়ে আমায় জাপটে ধরলেন তিনি। তার খেল যে খতম হয়েছে, তা মরিয়ার্টি ভালোভাবেই জানতেন, তাই যেনতেনপ্রকারেণ প্রতিশোধ নেওয়াই ছিল তার মুখ্য উদ্দেশ্য। পড়ো পড়ো হয়ে সেই সরু কিনারায় দাঁড়িয়ে কোনোরকমে তাঁর ধাক্কা সামলে নিলাম। তুমি তো জানই আমি একটু-আধটু বারিৎসু জানি। জাপানি পদ্ধতিতে কুস্তির এই বিশেষ কায়দা বহুবার আমি কাজে লাগিয়েছি অনেক সঙ্গিন পরিস্থিতিতে। আমাকে জাপটে ধরার প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই পড়ো পড়ো হয়েও চট করে পিছলে বেরিয়ে গেলাম তার আলিঙ্গন থেকে। বিকট চিৎকার করে প্রফেসর কয়েক সেকেন্ড পাগলের মতো হাত ছুড়লেন, দু-হাতের আঙুল বেঁকিয়ে আঁকড়ে ধরলেন বাতাসকে। কিন্তু এত চেষ্টা করেও দেহের সমতা ফিরিয়ে আনতে পারলেন না তিনি, তলিয়ে গেলেন নীচে! কিনারা থেকে মুখ বাড়িয়ে বহুদূর পর্যন্ত তাকে পড়তে দেখলাম। তারপর একটা পাথরে লেগে ঠিকরে গিয়ে ঝপাস করে তলিয়ে গেলেন জলের তলায়।

    বড়ো বড়ো চোখ করে হতবাক হয়ে শুনছিলাম হোমসের যমালয় থেকে জীবন্ত ফিরে আসার কাহিনি। সিগারেট টানার ফাঁকে রসিয়ে রসিয়ে বলে চলেছিল সে।

    থামতেই আমি চেঁচিয়ে উঠলাম, কিন্তু পায়ের ছাপ! আমি নিজের চোখে দেখেছি দু-জোড়া পায়ের ছাপ কিনারা পর্যন্ত গেছে–কোনোটাই কিন্তু ফেরেনি।

    ফিরেছিল অন্য পথে। প্রফেসর অদৃশ্য হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে বিদ্যুৎ-চমকের মতোই বুঝলাম দৈবের কৃপায় কী অসাধারণ সুযোগ এসে গেছে আমার হাতের মুঠোয়। আমাকে যমের দক্ষিণ দুয়ার দেখানোর শপথ যে মরিয়ার্টি একা করেননি, তা আমি জানতাম। নেতার মৃত্যুতে অন্ততপক্ষে তিনজনের প্রতিশোধ-স্পৃহা বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে পারে! তিনজনের প্রত্যেকেই অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রকৃতির মানুষ। এদের মধ্যে একজন-না-একজন আমাকে শেষ করবেই আর যদি উলটো দিক থেকে ভাবা যায়, অর্থাৎ দুনিয়ার সবাই যদি জানতে পারে এবং বিশ্বাস করে যে, আমিও পরলোকের পথে রওনা হয়েছি, তাহলে এই লোকগুলোও আরও বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করার চেষ্টা করবে। ফলে, একদিন-না-একদিন আমি তাদের সাবাড় করবই। এবং তিনজনকে খতম করতে পারলেই দুনিয়াকে আবার জানিয়ে দেওয়া যাবে যে, আমি মরিনি, এই সুন্দর ভুবনেই দিব্যি বেঁচে আছি আর পাঁচজনের মতো। মস্তিষ্কের কাজ যে কত দ্রুত হতে পারে তা বুঝলাম সেদিন, কেননা আমার বিশ্বাস প্রফেসর মরিয়ার্টি রাইখেনবা ফল-এর তলা পর্যন্ত পৌঁছোনোর আগেই এতগুলো জিনিস ভাবা আমার শেষ হয়ে গেল।

    দাঁড়িয়ে উঠে পেছনের পাথুরে দেওয়াল পরীক্ষা করে দেখলাম। মাস কয়েক পরে এই দুর্ঘটনার ছবির মতো বিবরণ তোমার রচনায় পড়ে বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। তুমি লিখেছিলে যে, পাথুরে দেওয়ালটা খাড়া উঠে গেছে। কথাটা অক্ষরে অক্ষরে সত্য নয়। কেননা পা রাখবার ছোটো ছোটো জায়গা তো ছিলই, তাকের মতো খানিকটা পাথরও বেরিয়ে এসেছিল। পাহাড়টা এমনই খাড়াই যে, আগাগোড়া বেয়ে ওঠা একেবারেই অসম্ভব, ঠিক তেমনই অসম্ভব ভিজে পথে পায়ের ছাপ–রেখে বেরিয়ে পড়া। এ-রকম ক্ষেত্রে এর আগে আমি যে-চালাকি করেছি, তা করতে পারতাম। অর্থাৎ স্রেফ পিছু হেঁটে বেরিয়ে যাওয়া। কিন্তু একইদিকে তিনজোড়া পায়ের ছাপ এগিয়ে যাওয়া দেখলেই চালাকি ফাঁস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। কাজেই সব দিক ভেবে, দেখলাম পাহাড় বেয়ে ওপরে ওঠাই সবচেয়ে ভালো। ভাই ওয়াটসন, কাজটা খুব মজার নয়। নীচ থেকে জলপ্রপাতের গর্জন এসে আছড়ে পড়ছিল কানের পর্দায়। বাজে কল্পনা আমার মাথায় কোনোদিন আসে না কিন্তু বিশ্বাস কর, সেদিন যেন শুনলাম খাদের গহুর থেকে আর্তনাদ করে আমায় ডাকছে মরিয়ার্টির কণ্ঠ। একটু সামান্য ভুল মানেই মৃত্যু। একাধিকবার ঘাসের চাপড়া উপড়ে এসেছে হাতের মুঠোয় অথবা পাহাড়ের ভিজে খাঁজে হড়কে গেছে বুটের ডগা প্রতিবারই ভেবেছি এই বুঝি সব শেষ। কিন্তু কিছুতেই না-দমে অতিকষ্টে ইঞ্চি ইঞ্চি করে ওপরে উঠে শেষকালে পৌঁছোলাম সবুজ শ্যাওলায় ঢাকা কয়েক ফুট গভীর একটা পাথরের তাকে। দিব্যি আরামে সবার চোখের আড়ালে থেকে টানটান হয়ে শুয়ে পড়লাম এইখানে। মাই ডিয়ার ওয়াটসন, এইখানেই শুয়ে শুয়ে দেখলাম কী গভীর সহানুভূতির সঙ্গে অথচ কী বিশ্রী আনাড়িভাবে আমার মৃত্যুর তদন্ত শেষ করলে তুমি।

    অনেকক্ষণ পরে শেষকালে তোমার অকাট্য কিন্তু আগাগোড়া ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে হোটেলের দিকে রওনা হলে। একলা শুয়ে শুয়ে তোমায় যেতে দেখলাম বিষণ্ণ মুখে। ভেবেছিলাম আমার অ্যাডভেঞ্চারের ইতি বোধ হয় এইখানেই। কিন্তু আর একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনার ফলে বুঝলাম বিস্ময়ের এখনও অনেক বাকি। ওপর থেকে বিরাট একটা পাথরের চাই গড় গড় করে গড়িয়ে এসে সাঁৎ করে আমার সামনে দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে দমাস করে পড়ল নীচের পথে এবং পর মুহূর্তেই ছিটকে গিয়ে পড়ল খাদের মধ্যে। মুহূর্তের জন্য ভাবলাম বুঝি নিছক প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা। কিন্তু পরের মুহূর্তেই ওপরে তাকিয়ে দেখলাম কালো হয়ে আসা আকাশের পটে একজন পুরুষের মাথা, সঙ্গেসঙ্গে গড়িয়ে এল আর একটা পাথর, এসে পড়ল যে-তাকটায় শুয়ে ছিলাম। ঠিক তার ওপরেই মাথার এক ফুট দূরে। চকিতে বুঝলাম সব। মরিয়ার্টি একা আসেননি। তাঁকে পাহারা দিচ্ছিল তারই একজন স্যাঙাত একনজরেই চিনেছিলাম লোকটাকে। কী ভীষণ প্রকৃতির লোক সে, তা ওই একবার দেখেই বুঝেছিলাম। আমার চোখের আড়ালে থেকে দূর থেকে সে দেখেছে তার বন্ধুর মৃত্যু এবং আমার পলায়ন। হট করে কিছু না-করে অপেক্ষা করছে সুযোগের প্রতীক্ষায়। তারপর খাড়াই পাহাড়ের একেবারে ওপরে উঠে কমরেডের অসমাপ্ত কাজটাই সম্পূর্ণ করতে শুরু করেছে।

    ওয়াটসন, এসব কথা ভাবতে আমার বেশি সময় যায়নি। পাহাড়ের চুড়োয় ভয়ংকর মুখটাকে আবার দেখতে পেলাম বুঝলাম আর একটা পাথর নেমে আসতে আর দেরি নেই। হাঁপাঁক করে খামচে নামতে লাগলাম নীচের পথের ওপর। ঠান্ডা মাথায় এ-কাজ করতে পারতাম না

    আমি। ওপরে ওঠার চেয়ে এক-শো গুণ বেশি কঠিন নীচে নামা। কিন্তু বিপদের কথা ভাববার আর সময় নেই তখন। পাথরের তাক ধরে ঝুলে পড়তেই আর একটা পাথর পাশ দিয়ে গুম করে নেমে গেল নীচে। মাঝামাঝি আসতেই পিছলে গেলাম আমি হড়হড় করে নেমে এলাম নীচে। কিন্তু ঈশ্বরের কৃপায় কাটাছেড়া রক্তাক্ত দেহে এসে পড়লাম রাস্তার ওপরেই খাদের মধ্যে নয়। নেমেই টেনে দৌড়। অন্ধকারে গা ঢেকে পাহাড়ের সারির মধ্যে দিয়ে পেরিয়ে গেলাম দশ মাইল। এক হপ্তা পরে পৌঁছোলাম ফ্লোরেন্সে। এক বিষয়ে নিশ্চিন্ত ছিলাম। দুনিয়ার কেউই জানেনি আমি কোথায় আছি এবং কীভাবে আছি।

    আমার অজ্ঞাতবাসের খবর জানত শুধু একজনই–আমার ভাই মাইক্রফট। মাই ডিয়ার ওয়াটসন, জানি না এজন্যে আমায় তুমি ক্ষমা করতে পারবে কি না। কিন্তু ভাই, এ ছাড়া আর উপায়ও ছিল না। আমি চেয়েছিলাম প্রত্যেকেই জানুক এবং বিশ্বাস করুক যে, আমি মারা গেছি। এবং এও ঠিক যে আমি মৃত এ-কথা তুমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস না-করলে কি আমার অক্কালাভের অমন রোমাঞ্চকর বিবরণ লিখতে পারতে? ও-লেখা যে একবার পড়েছে, তারই দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, আমি আর নেই। গত তিন বছরে বারকয়েক কলম নিয়ে বসেছিলাম তোমাকে দু-এক লাইন লিখতে, কিন্তু প্রতিবারেই নিজেকে সামলে নিয়েছি আমার প্রতি তোমার গভীর অনুরাগের কথা ভেবে। কেননা আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে এমন কিছু অশোভন কাণ্ড করে বসতে যে, আমার গোপন রহস্য আর গোপন থাকত না। ঠিক এই কারণেই আজ সন্ধ্যাবেলাতেও যখন আমার বইগুলো রাস্তায় ফেলে দিলে তুমি, আমাকে সরে পড়তে হয়েছে। সে সময়ে খুবই বিপদের মধ্যে ছিলাম আমি। অবাক হয়ে যদি তাকিয়ে থাকতে তুমি অথবা আবেগে চঞ্চল হয়ে উঠতে, তাহলেই ছদ্মবেশ ফুঁড়ে আসল পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়ত সন্ধানীদের চোখে। পরিণাম হত অত্যন্ত শোচনীয় এবং এবার যা হারাতে তা আর ফিরে পেতে না। মাইক্রফটের কাছে আমার গুপ্ত কথা ফাঁস করতে হয়েছে শুধু প্রয়োজনমতো টাকা পাওয়ার জন্যে।

    ইতিমধ্যে শুরু হল মরিয়ার্টি মামলা। শেষও হল। কিন্তু ফলাফল খুব সুখের হল না। আশা করছিলাম অনেক কিছুই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল দলের দুজন সবচেয়ে ভীষণ প্রকৃতির লোকই রইল জেলের বাইরে। আমার ওপর প্রতিহিংসা নেবার জন্যে এই দুজনেই মরণপণ করেছিল। দুজনেই আমার পরম শত্রু।

    কাজেই, দু-বছর ঘুরে বেড়ালাম তিব্বতে লামা দেখে এবং প্রধান লামার কাছে থেকে বেশ কিছুদিন মজায় কাটিয়ে দিলাম। এরপর গেলাম পারস্যে, মক্কা দেখলাম এবং খারটুমে খলিফের সঙ্গে সাক্ষাও করলাম। সে ভারি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। সব কথা আমি যথাসময়ে ফরেন অফিসে জানিয়ে দিয়েছি। ফ্রান্সে ফিরে এসে আলকাতরা থেকে পাওয়া যৌগিক পদার্থ নিয়ে কয়েক মাস গবেষণা করলাম দক্ষিণ ফ্রান্সের সঁপেলিয়ারের একটা ল্যাবরেটরিতে১২। ফলাফল হল খুবই সন্তোষজনক। ইতিমধ্যে জানলাম আমার দুজন শত্রুর মধ্যে বাকি রয়েছে শুধু একজন। কাজেই লন্ডনে ফিরে আসার আয়োজন করছি, এমন সময়ে শুনলাম পার্ক লেনের রহস্যের চাঞ্চল্যকর খবর। শুনেই আর দেরি করলাম না। কেসটার বিশেষ কয়েকটি পয়েন্ট সম্পর্কে আমার আগ্রহ তো জেগেছিলই, কিন্তু শুধু এই কারণেই অত তাড়াতাড়ি ফিরিনি। খবরটা পড়েই বুঝেছিলাম আবার দৈব আমার সহায়। অদ্ভুত কতকগুলো ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধে হাতের মুঠোয় এসে পড়বে এই সময়ে যদি ফিরে আসতে পারি লন্ডনে। লন্ডনে পৌঁছেই হাজির হলাম বেকার স্ট্রিটে। মিসেস হাডসন তো আমাকে দেখেই আঁতকে উঠে ঘন ঘন মূছা যেতে লাগলেন।

    একটু থেমে আবার বললে হোমস, মাই ডিয়ার ওয়াটসন, দুঃখের সবচেয়ে বড়ো দাওয়াই হল কাজ। আজ রাতের কাজটাও যদি দুজনে মিলে শেষ করতে পারি এবং সফল হতে পারি–তাহলে জানব এ-গ্রহে অন্তত একটা পুরুষের বেঁচে থাকার যথেষ্ট অধিকার আছে।

    বৃথাই আমি হাতজোড় করলাম, কাকুতিমিনতি করলাম আরও কিছু বলার জন্যে। কিন্তু অটল, অনড়ভাবে সে শুধু বললে, সকাল হওয়ার আগেই অনেক কিছু দেখতে শুনতে পাবে তুমি। অতীতের পুরো তিনটে বছর নিয়ে এখনও বকবক করা বাকি আছে। সাড়ে নটা পর্যন্ত তাই চলুক, বেশি নয়। ঠিক সাড়ে নটার সময় বেরিয়ে পড়ব আমরা, তারপর শুরু হবে খালি বাড়িতে আমাদের মনে রাখবার মতো অ্যাডভেঞ্চার।

    ভাড়াটে গাড়িতে পকেটে রিভলভার নিয়ে ঠিক তার পাশটিতে বসে মনে পড়ে গেল পুরোনো দিনের কথা। ওস্তাদ শিকারির ভাবগতিক দেখে বুঝেছিলাম, বেশ গুরুতর রকমের অ্যাডভেঞ্চারের পথে পা বাড়িয়েছি আমরা। মাঝে মাঝে তার তাপসিক গাম্ভীর্য ভেদ করে ফুটে উঠছিল ব্যঙ্গবঙ্কিম মৃদু হাসি–তাতে আমার কৌতূহল কমা দূরে থাকুক, উত্তরোত্তর বেড়েই যাচ্ছিল।

    ভেবেছিলাম বেকার স্ট্রিটে চলেছে, কিন্তু ক্যাভেন্ডিস স্কোয়ারের কোণে গাড়ি দাঁড় করাল হোমস। লক্ষ করলাম, গাড়ি থেকে নামার সময়ে ডাইনে বাঁয়ে অন্ধকারের মধ্যে চোখ চালিয়ে তন্নতন্ন করে সে দেখে নিল। অনেকক্ষণ পরে পৌঁছোলাম ব্ল্যান্ড ফোর্ড স্ট্রিটে। পৌঁছেই বোঁ করে একটা সরু গলিতে ঢুকে গেল হোমস! ওদিককার কাঠের ফটক পেরিয়ে পৌঁছাল একটা পরিত্যক্ত চত্বরে। পকেট থেকে চাবি বার করে একটা বাড়ির পেছনের দরজা খুলে সাঁৎ করে মিলিয়ে গেল ভেতরে। ভালোমন্দ কিছু ভাববার সময় ছিল না। হোমসের পিছু পিছু আমিও ঢোকামাত্র তৎক্ষণাৎ দরজা বন্ধ করে দিল সে।

    ঘুটঘুটে অন্ধকার ভেতরে। বেশ বুঝলাম বাড়িটা একদম খালি। হঠাৎ ডান দিকে ঘুরে বিরাট চারকোনা একটা খালি ঘরে ঢুকল সে। ঘরের কোণগুলো ঘন আঁধারে ঢাকা, রাস্তার আলোয় মাঝখানের অন্ধকার একটু পাতলা হয়ে এসেছিল। কাছাকাছি কোনো বাতি দেখতে পেলাম না, জানলার কাছে প্রচুর ধুলো জমে থাকায় শুধু দুজন দুজনকে দেখতে পাওয়া ছাড়া আর কোনো দিকেই চোখ চলল না। কাঁধে হাত রেখে কানের গোড়ায় মুখ এনে ফিসফিস করে উঠল হোমস, কোথায় এসেছি জান?

    ধুলোজমা জানলার ভেতর দিকে তাকিয়ে বললাম, বেকার স্ট্রিটে, তাই না?

    শাবাশ। আমাদের পুরোনো আস্তানার ঠিক উলটো দিকের বাড়ি এটা–নাম, ক্যামডেন হাউস।

    কিন্তু এখানে মরতে এলাম কেন তাই তো বুঝছি না।

    এলাম এই কারণে যে এখান থেকে চমৎকার দেখা যায় ওই ছবির মতো জিনিসটাকে। মাই ডিয়ার ওয়াটসন, খুব সাবধানে জানলার আরও কাছে এগিয়ে যাও, খুব সাবধানে, কেউ যেন বাইরে থেকে দেখতে না-পায়। এগিয়ে গিয়ে যে-ঘর থেকে আমাদের ছোটোবড়ো সবরকম অ্যাডভেঞ্চারের সূত্রপাত, সেই পুরোনো ঘরটার মধ্যেই একবার ভালো করে উঁকি মেরে দেখ! দেখা যাক, তিন বছর তোমার কাছ ছাড়া হয়েও তোমাকে চমকে দেবার মতো ক্ষমতা এখনও আমার আছে কি না।

    পা টিপে টিপে এগিয়ে তাকালাম পরিচিত জানলাটার পানে। তাকিয়েই এমন চমকে উঠলাম যে মুখ দিয়ে অজান্তে অস্ফুট শব্দ বেরিয়ে গেল।

    জানলার পর্দা নামানো ছিল, আর খুব জোরালো একটা আলো জ্বলছিল ঘরের মধ্যে। জোর আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল জানলার পর্দা, আর ঠিক মাঝখানে ফুটে উঠেছিল একটা স্পষ্ট, কালো ছায়ামূর্তি। মূর্তিটি একটি পুরুষের। চেয়ারে বসে ছিল লোকটি, তার মাথা হেলানোর কায়দা, চৌকো কাঁধ আর ধারালো মুখের আদল আমার চেনা অনেক দিনের চেনা। মুখটা অর্ধেক ঘুরিয়ে বসে ছিল সে–এ-রকম কালো কুচকুচে সিলুয়েট মূর্তি আমাদের বাপঠাকুরদার চোখে পড়লে হয়তো সঙ্গেসঙ্গে বাঁধিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতেন।

    ছায়ামূর্তিটি হোমসের অথবা অবিকল হোমসের মতো কোনো পুরুষের। এমনই আশ্চর্য হয়ে গেছিলাম যে হাত বাড়িয়ে হোমসের গায়ে হাত বুলিয়ে দেখে নিলাম সত্যিই সে আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে কি না।

    অবরুদ্ধ হাসিতে হাসছিল হোমস। বলল, কী হল?

    গুড হেভেনস! করেছ কী?

    অবিকল আমার মতোই দেখতে হয়েছে, তাই না ওয়াটসন?

    আমি তো দিব্যি করে বলতে রাজি আছি যে তুমি ছাড়া আর কেউ নয়।

    কৃতিত্বটুকু গ্রিনোবল-এর মসিয়ে অস্কার মনিয়ারের প্রাপ্য। ছাঁচটা তৈরি করতে বেশ কিছুদিন গেছে ভদ্রলোকের। মোমের তৈরি শার্লক হোমসের আবক্ষ মূর্তি১৪। বাকি যা দেখছ সেটুকু আজ বিকেলে বেকার স্ট্রিটে গিয়ে আমায় করে আসতে হয়েছে।

    কিন্তু কেন?

    মাই ডিয়ার ওয়াটসন, কারণ শুধু একটি। আমি যখন বাড়িতে নেই, তখন কয়েকজন লোক বিশ্বাস করুক যে আমি বাড়িতেই আছি! এবং এই অদ্ভুত বিশ্বাস তাদের মনে ঢুকিয়ে দেওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে বলে আমিও বিশ্বাস করি।

    অর্থাৎ, তোমার বিশ্বাস ঘরের ওপর চোখ রেখে কেউ বসে ছিল বা এখনও আছে।

    ছিল এবং আমি তা জানি।

    কারা?

    আমার পুরোনো শত্রুরা ওয়াটসন। যে কুখ্যাত সমাজের নেতা এখনও রাইখেনবা ফল-এ শুয়ে–তারা। তুমি তো জানই আমি যে বেঁচে আছি, তা একমাত্র তারা ছাড়া আর কেউ জানে না। এবং বিশ্বাস করে যে, একদিন-না-একদিন, দু-দিন আগে হোক, আর পরে হোক, আমার ঘরে আমি ফিরে আসবই। সমানে এই তিন বছর তারা পাহারা দিয়ে এসেছে, আজ সকালে সার্থক হয়েছে তাদের প্রতীক্ষা–স্বচক্ষে তারা দেখেছে আমায় ফিরে আসতে।

    তুমি জানলে কী করে?

    খুব সহজে। জানলা দিয়ে তাকাতেই ওদের চৌকিদারকে আমি চিনেছি। লোকটার নাম–পার্কার, স্বভাবটি খুব নিরীহ, পেশা হল ফাঁস দিয়ে খুন করে রাহাজানি করা, ইহুদিদের হার্প-৫ বাজানোয় জুড়ি মেলা ভার। পার্কারকে আমি ডরাই না, ডরাই তার পেছনে যে আরও ভয়ংকর লোকটা আছে তাকে। যে ছিল মরিয়ার্টির হরিহর-আত্মা বন্ধু; যে রাইখেনবা ফল-এর পাহাড়ের চুড়ো থেকে পাথর গড়িয়ে আমাকেও মরিয়ার্টির পাশে পাঠাতে চেয়েছিল, যে লন্ডনের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ, ধুরন্ধর আর পয়লা নম্বরের বদমাশ–এ হচ্ছে সেই-ই! ওয়াটসন, আজ রাতে আমার পিছু নিয়েছে সে নিজেই, কিন্তু ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেনি তার পিছু নিয়েছি আমরা।

    ধীরে ধীরে বন্ধুবরের মতলব স্বচ্ছ হয়ে এল আমার কাছে। এ-বাড়িতে আমরা এসেছি হোমসের ডামি দেখতে নয়, ডামিকে যারা চোখে চোখে রেখেছে তাদের দেখতে, লুকোনো জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে। জানলার পর্দায় ডামির কালো ছায়াটা টোপ আর আমরা হলাম শিকারি। অন্ধকারের মাঝে, উঁচ পড়লে শোনা যায় এমনি স্তব্ধতার মধ্যে আমরা দুজনে চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম রাস্তা দিয়ে হনহন করে যাওয়া মূর্তিগুলোকে। অনেকক্ষণ পরে অবশেষে রাত যখন আরও গভীর হল, ফাঁকা হয়ে এল রাস্তা উত্তেজনা আর সে চেপে রাখতে পারলে না। অস্থিরভাবে ঘরের এ-মোড় থেকে ও-মোড় পর্যন্ত শুরু হল অশান্ত অবিরাম পায়চারি। ভাবলাম, এই সময় আমার কিছু বলা দরকার। কিন্তু কথা বলতে গিয়ে চোখ তুলে আলোকিত জানলার পানে তাকাতেই আবার আগের মতো বিস্ময়ের ধাক্কায় স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। সজোরে হোমসের হাত আঁকড়ে ধরে আঙুল তুলে চিৎকার করে উঠলাম—

    হোমস দেখেছ? ছায়াটা সরে গেছে!

    প্রথমবারে দেখেছিলাম পাশ ফিরে বসা অবস্থায় ডামির ছায়া। এবার দেখলাম পিছন ফিরে বসা অবস্থায়। তিন বছরেরও যে হোমসের রুক্ষ মেজাজ মোলায়েম হয়নি তার প্রমাণ পেলাম তখনই। তার মতো বুদ্ধিমান পুরুষের পক্ষে এ-রকম তিরিক্ষে মেজাজ এবং এত অল্পতেই এভাবে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠা মোটেই মানায় না। আমার কথা শেষ হতে-না-হতেই খ্যাক করে উঠল সে, নড়েছে তত হয়েছে কী? তুমি কি আমাকে এমনই নিরেট গাধা ভেবেছ যে একটা নিছক ডামি খাড়া করে ইউরোপের সবচেয়ে জাঁহাবাজ সবচেয়ে ধড়িবাজ কয়েকজনের চোখে ধুলো দিতে পারব? তুমি আমায় ভাব কী ওয়াটসন? ঘণ্টা দুয়েক হল এ-ঘরে এসেছি আমরা। এই দু-ঘণ্টার মধ্যে মিসেস হাডসন ডামিটাকে নড়িয়ে-চড়িয়ে বসিয়েছেন সবসুদ্ধ আটবার অর্থাৎ প্রতি পনেরো মিনিটে একবার। সামনের দিকে থাকার ফলে তার ছায়া কোননামতেই জানলার পর্দায় পড়ছে না। চুপ!হঠাৎ দারুণ উত্তেজনায় যেন দম আটকে গেল হোমসের। ফিকে আলোয় দেখলাম–সামনের দিকে মাথা বাড়িয়ে দেহের প্রতিটি অঙ্গে সজাগ প্রতীক্ষা ফুটিয়ে তুলে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে সে। চারিদিক নিস্তব্ধ এবং ঘন আঁধারের মাঝে দেখলাম শুধু জ্বলজ্বলে ঝলমলে হলুদ পর্দার ওপর ফুটে রয়েছে কালো কুচকুচে ছায়াছবির দেহ-রেখা। থমথমে স্তব্ধতার মাঝে আবার শুনলাম জিব আর তালুর মধ্যেকার অতি-পরিচিত মৃদু সতর্কধ্বনি–বুঝলাম কী নিদারুণ চাপা উত্তেজনায় আচম্বিতে টানটান হয়ে উঠেছে তার দেহের প্রতিটি অংশ। মুহূর্তকাল পরেই এক হ্যাচকা টানে আমাকে ঘরের কালির মতো কালো অন্ধকারে ঢাকা একটা কোণে টেনে নিয়ে গেল হোমস–অনুভব করলাম আমার উৎসুক ঠোঁটের ওপর তার সাবধানী আঙুলের স্পর্শ। বুঝলাম তার অর্থ হুশিয়ার! যে-আঙুল দিয়ে হোমস আমাকে আঁকড়ে ধরেছিল, স্পষ্ট অনুভব করলাম থরথর করে তা কাঁপছে। কোনোদিন বন্ধুবরকে এতখানি বিচলিত হতে দেখিনি। আমি কিন্তু যতদূর পারলাম চোখ চালিয়ে নিথর নিস্তব্ধ রাস্তায় ভয় পাওয়ার মতো কোনো কারণ দেখতে পেলাম না।

    কিন্তু আচমকা আমিও সজাগ হয়ে উঠলাম। তীক্ষ্ণ্ম অনুভূতি দিয়ে আমার আগেই হোমস যার সাড়া পেয়েছে এবার আমার স্কুল অনুভূতিতেও সে সাড়া জাগালে। খুব মৃদু চাপা একটা আওয়াজ ভেসে এল কানে। শব্দটা এল বেকার স্ট্রিটের দিক থেকে নয়, যে-বাড়িতে আমরা ঘাপটি মেরে বসে, তারই পেছন দিক থেকে। একটা দরজা খোলা ও বন্ধ হওয়ার শব্দ। পরমুহূর্তেই প্যাসেজে শুনলাম পায়ের শব্দ–কে যেন পা টিপে টিপে এগিয়ে আসছে। অতি কষ্টে চেষ্টা করছে সে নিঃশব্দে এগিয়ে আসতে, কিন্তু খাঁ খাঁ বাড়ির মধ্যে ওইটুকু শব্দই হাহাকার শব্দে কর্কশ প্রতিধ্বনি তুলে আসন্ন বিপদের ডমরুধ্বনি বাজিয়ে চলেছে। দেওয়ালের সঙ্গে সাপটে রইল হোমস। আমিও রিভলভারের ওপর হাত রেখে যতটা পারলাম দেওয়ালের সঙ্গে মিশে রইলাম। অন্ধকারের মধ্যে উঁকি মেরে দেখলাম খোলা দরজার দিকে অন্ধকারের পটভূমিকায় মিশমিশে কালো একটা ছায়ামূর্তির আবছা দেহরেখা। এক মুহূর্ত দাঁড়াল ছায়ামূর্তি–তারপরেই আবার হিংস্ৰ নিশাচর শ্বাপদের মতো গুড়ি মেরে এগিয়ে এল ঘরের মাঝে। ঠিক তিন গজ দূরে যখন তার ক্রূর মূর্তি এসে পৌঁছোল, আমি দেহের প্রতিটি পেশি টান টান করে তৈরি হলাম লাফাবার জন্যে। কিন্তু পরক্ষণেই বুঝলাম সে জানেই না যে আমরা হাজির আছি ঘরের মধ্যে। গা ঘেঁষে এগিয়ে গেল ছায়ামূর্তি। জানলার ধারে পৌঁছে খুব আলতোভাবে কিন্তু নিঃশব্দে আধ ফুট তুলে ধরলেন জানলার শার্সি। খোলা জানলার ঠিক পাশটিতে সে গুড়ি মেরে বসে পড়তেই রাস্তার আলো সোজাসুজি এসে পড়ল তার মুখের ওপর। আলোর প্রতিফলনে আকাশের বুকে চিকমিকে তারার মতোই জ্বলছিল তার চোখ দুটো। উত্তেজনায় থির থির করে কেঁপে উঠছিল তার মুখের মাংসপেশি। বয়স হয়েছে তার, নাকটা সরু, ঠেলে বেরিয়ে এসেছে সামনের দিকে। কপালটা উঁচু, সামনের দিকে টাক পড়ে যাওয়ায় অনেকটা চওড়া। ধোঁয়াটে রঙের মস্ত একজোড়া গোঁফ, মাথার পেছনের দিকে বসানো ছিল অপেরা হ্যাট, খোলা ওভারকোটের মধ্যে দিয়ে চকচক করছিল ইভনিং ড্রেস-শার্টটা। ভারী কিন্তু মলিন মুখ অসংখ্য রুক্ষগভীর রেখায় কলঙ্কিত। একহাতে একটা লাঠির মত জিনিস দেখলাম, কিন্তু মেঝের ওপর রাখতেই কঠিন ধাতব শব্দ হওয়ায় বুঝলাম আমার ধারণা ঠিক নয়। ওভারকোটের পকেট থেকে বড় আকারের একটা জিনিস বার করে তৎপর হয়ে উঠল সে, কিছুক্ষণ বাদে শুনলাম জোরালো তীক্ষ্ণ্ণ একটা আওয়াজ। যেন ক্লিক শব্দে ঘাঁটিতে আটকে গেল স্প্রিং বা ওই জাতীয় কিছু। তখনও শেষ হয়নি তার তৎপরতা। হাঁটু গেড়ে বসে এবার সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে দেহের সমস্ত ওজন আর শক্তি দিয়ে চাপ দিতে লাগল বোধ হয় কোনো লিভারের ওপর ফলে অনেকক্ষণ ধরে জাঁতা ঘোরার পর ঘড়ঘড় একটা আওয়াজ শুনলাম শেষ হল আবার একটা জোরালো ক্লিক শব্দে। এবার সে সিধে হতেই তার হাতে দেখলাম বন্দুকের মতো একটা জিনিস বাঁটটা কিন্তু বিদঘুটে রকমের। ব্রিচের দিকটা খুলে ফেলে কী-একটা ঢুকিয়ে খটাস করে বন্ধ করে দিল ব্রিচব্লক১৬। তারপর গুঁড়ি মেরে বসে নলচের প্রান্তটা রাখল জানলার কিনারায়, লম্বা গোঁফ ঝুলে পড়ল কুঁদোর ওপর মাছি বরাবর জ্বলজ্বলে চোখ রেখে টিপ ঠিক করতে লাগল সে তন্ময় হয়ে। তারপর শুনলাম স্বস্তির ছোট্ট শ্বাস ফেলার শব্দ–বন্দুকের কিম্ভুতকিমাকার বাঁটটা কাঁধের ওপর তুলে নিয়ে তৈরি হল সে লক্ষ্যভেদের জন্য। মাছি বরাবর দৃষ্টিরেখার অপর প্রান্তে জ্বলজ্বলে হলদে পটভূমিকায় কালো ছায়ামূর্তি তার নিশানা চোখ তুলে একবার দেখে নিলাম এই আজব টার্গেটকে। তারপর চোখ নামিয়ে আনতে দেখলাম মুহূর্তের জন্যে আড়ষ্ট হয়ে নিথর হয়ে গেল সে। পরমুহূর্তেই ঘোড়ার ওপর শক্ত হয়ে বসল তার আঙুল। অদ্ভুত শন শন শব্দ শুনলাম। বাতাস কেটে কী যেন উড়ে গেল তিরবেগে, সঙ্গেসঙ্গে জানলার কাচভাঙার মিষ্টি জলতরঙ্গের মতো আওয়াজ। ঠিক সেই মুহূর্তেই বাঘের মতো লাফিয়ে উঠল হোমস–এক লাফেই বন্দুকবাজের পিঠে পড়ে চিত করে আছড়ে ফেলল মেঝের ওপর। পরমুহূর্তেই ছিটকে গেল লোকটা এবং পলক ফেলার আগেই সাঁড়াশির মতো আঙুল দিয়ে আঁকড়ে ধরলে হোমসের টুটি। এবার আমি তৎপর হলাম, রিভলভারের বাঁট দিয়ে মাথায় এক ঘা মারতেই শিথিল হয়ে লুটিয়ে পড়ল সে মেঝের ওপর। ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে চেপে ধরতেই হোমস তীব্র শব্দে হুইসল বাজিয়ে দিল। ফুটপাথে শুনলাম ধাবমান পায়ের খটাখট শব্দ, পরক্ষণেই ইউনিফর্ম পরা দুজন কনস্টেবল আর সাদা পোশাক পরা একজন ডিটেকটিভ তিরবেগে সামনের দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ল ঘরের মধ্যে।

    লেসট্রেড তো? শুধোল হোমস।

    ইয়েস, মি. হোমস। আমি নিজেই এলাম। আপনাকে আবার লন্ডনে দেখে খুবই খুশি হলাম, স্যার।

    দু-দিক থেকে জোয়ান কনস্টেবল দুজন লোকটাকে চেপে ধরায় আমরা দুজন উঠে দাঁড়ালাম। হাপরের মতো হাঁপাচ্ছিল সে। হোমস এগিয়ে গিয়ে শার্সিটা টেনে নামিয়ে পর্দা ফেলে দিলে। লেসট্রেড দুটো মোমবাতি জ্বালিয়ে ফেলল। কনস্টেবল দুজনও তাদের চোরা লণ্ঠনের ঢাকনা খুলে ফেলতে লোকটার দিকে ভালো করে তাকালাম।

    মুখখানা তার পুরুষের মতোই বটে। চোখে-মুখে অফুরন্ত তেজের দীপ্তি, ধারালো বুদ্ধির প্রখরতা, অথচ কেমন জানি নিষ্ঠুর, নির্মম, শয়তানি মাখানো। দার্শনিকের মতো চওড়া উন্নত কপাল, কিন্তু ইন্দ্রিয়াসক্ত ভোগী পুরুষের মতো চোয়াল! জীবনের শুরু হয়েছিল তার অসীম কর্মক্ষমতা নিয়ে কিন্তু কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায়, ক্ষমতা প্রয়োগ করার সময়ে তা ভাবেনি। তার ক্রূর নীল চোখের দিকে তাকানো যায় না; ঝুলে-পড়া দুই পাতায় ফুটে উঠেছে সমস্ত মানুষজাতির প্রতি অসীম ঘৃণা। তাকানো যায় না তার ভয়ংকর রকমের বেপরোয়া নাক এবং শিহরন জাগানো গভীর বলি-আঁকা কপালের পানে সেখানে অনায়াসেই পড়া যায় প্রকৃতির সহজতম ভাষায় লেখা বিপদের সংকেত। আমাদের কোনোরকম আমল দিলে না সে, অপলকে তাকিয়ে রইল হোমসের পানে–সে-দৃষ্টিতে পাশাপাশি ফুটে উঠেছিল ঘৃণা আর বিস্ময়।

    দুমড়ে-যাওয়া কলারটা ঠিক করতে করতে হোমস বললে, কর্নেল, পুরোনো একটা নাটকে পড়েছিলাম, সব যাত্রার শেষ হয় প্রেমিকদের মিলনে। রাইখেনবা ফল-এ পাথরের তাকটায় শুয়ে থাকার সময়ে আপনার সুনজরে পড়ে অসীম দয়ার যে একটু নমুনা পেয়েছিলাম, তা মনে করেই আবার আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করাটা খুব সুখময় হবে বলে মনে করিনি।

    সম্মোহিতের মতো কর্নেল কটমট করে তাকিয়ে ছিলেন হোমসের পানে। উত্তরে দাঁতে দাঁত পিষে শুধু বললেন, ফিচেল শয়তান কোথাকার।

    হোমস বলল, ভালো কথা, এখনও আলাপ করানো হয়নি। জেন্টলমেন, ইনিই হলেন কর্নেল সিবাসটিয়ান মোর‍্যান। হার ম্যাজেস্টিস-এর ইন্ডিয়ান আর্মিতে এঁর সুনাম আছে এবং আজ পর্যন্ত আমাদের পূর্বাঞ্চলের সাম্রাজ্যে দূরপাল্লার বন্দুকবাজ যত আছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে নামকরা ইনি। কর্নেল, আপনার বাঘের ঝুলির জুড়ি আজও পাওয়া যায়নি… তাই না?

    কোনো উত্তর এল না ভীষণ চেহারার বুড়ো কর্নেলের দিক থেকে। জ্বলন্ত চোখে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন তিনি বন্ধুবর হোমসের পানে। জ্বলন্ত ক্ষুধিত চোখে ভয়ংকর চাহনি আর ঝাঁটার মতো বড়ো বড়ো গোঁফ–সব মিলিয়ে তাঁকে খাঁচায় বন্দি বাঘের মতোই মনে হচ্ছিল।

    হোমস বললে, আমার এই অতি সরল ধোঁকাবাজিতে আপনার মতো এমন একজন বুড়ো শিকারি যে এত সহজে বোকা বনে যাবেন, তা ভাবতেও আশ্চর্য লাগছে।

    নিদারুণ রাগে চাপা গর্জন করে সামনের দিকে লাফিয়ে পড়লেন কর্নেল, কিন্তু কনস্টেবল দুজনের হ্যাচকা টানে আবার যথাস্থানে ফিরে যেতে বাধ্য হলেন। তার চোখ-মুখের তখনকার

    সে-জিঘাংসা বেশিক্ষণ দেখলেও শিউরে উঠতে হয়।

    হোমস বললে, আমি স্বীকার করছি আমাকেও আপনি একটু অবাক করে দিয়েছিলেন। আপনি নিজেই যে খালি বাড়ির এমন পছন্দসই জানলার সামনে বসে তাগ করবেন, তা আমি ভাবিনি। আমি ভেবেছিলাম রাস্তা থেকেই হুকুম দেবেন আপনি তাই লেসট্রেড সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে আপনার প্রতীক্ষাই করছিল বাইরে। শুধু এইটুকু ছাড়া সবটুকু আমার হিসেবমতোই হয়েছে।

    লেসট্রেডের পানে একবার ঘুরে দাঁড়ালেন কর্নেল মোর‍্যান।

    বললেন, আমাকে গ্রেপ্তার করার কোনো কারণ থাকুক আর না-থাকুক, এই লোকটাকে দিয়ে আমাকে বিদ্রুপ করানোর অধিকার কি আপনার আছে? আইনের হাতেই যদি আমি এসে থাকি, সব কিছু আইনসম্মতভাবেই হওয়া উচিত।

    লেসট্রেড বলল, তা অবশ্য ঠিক বলেছেন। মি. হোমস, আর কিছু বলবেন কি?

    মেঝে থেকে শক্তিশালী এয়ারগানটা তুলে নিয়ে যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করতে করতে বললে হোমস, তুলনা হয় না এমন অস্ত্রের, শব্দহীন কিন্তু অসাধারণ এর ক্ষমতা বাস্তবিকই তারিফ করতে হয় এমন হাতিয়ারের। প্রফেসর মরিয়ার্টির অর্ডার অনুয়ায়ী অন্ধ জার্মান মেকানিক ভন হার্ডার তৈরি করেছিল এটা। ভন হার্ডারকে আমি চিনি। বেশ কয়েক বছর ধরে জানতাম এই অস্ত্রের কথা, কিন্তু কোনোদিন নাড়াচাড়া করার সৌভাগ্য হয়নি। লেসট্রেড, মন দিয়ে জিনিসটা দেখে রাখ এবং যে-বুলেট এর মধ্যে আঁটে–সেগুলোকে ভুলো না–এ আমার বিশেষ অনুরোধ।

    দরজার দিকে সবাইকে নিয়ে এগোতে এগোতে লেসট্রেড বললে, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন মি. হোমস। আর কিছু বলবেন নাকি?

    শুধু একটি প্রশ্ন। কী চার্জ আনছ কর্নেলের বিরুদ্ধে?

    কেন, মি. শার্লক হোমসকে খুন করার চেষ্টা?

    না, না, লেসট্রেড। যাকে সমস্ত পুলিশবাহিনী বৃথাই খুঁজে বেড়াচ্ছে, ইনিই সেই কর্নেল সিবাসটিয়ান মোর‍্যান–যিনি গত মাসের তিরিশ তারিখে ৪২৭ নং পার্ক লেনের উলটোদিকের বাড়ির দোতলার১৭ খোলা জানলা দিয়ে এয়ারগান থেকে বুলেট ছুঁড়ে অনারেবল রোনাল্ড অ্যাডেয়ারকে খুন করেছিলেন। লেসট্রেড, এই হল তোমার চার্জ। ওয়াটসন, ভাঙা জানলার ঠান্ডা বাতাস যদি কিছুক্ষণ সহ্য করতে পার, তাহলে সিগার টেনে আধঘণ্টা সময় আমার স্টাডিতে কাটিয়ে যাও, সময়টা যে বাজে খরচ হবে না, সে-গ্যারান্টি আমি দিচ্ছি।

    মাইক্রফট হোমসের তত্ত্বাবধানে আর মিসেস হাডসনের নিয়মিত যত্নে আমাদের পুরোনো ঘরগুলিতে দেখলাম কোনো পরিবর্তনই আসেনি। চারদিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেখে অবশ্য একটু অস্বস্তি লাগছিল, তবে যে-জিনিসটা যেখানে ছিল, ঠিক সেখানেই দেখলাম আছে। কেমিক্যাল কর্নারে আগের মতোই অ্যাসিডের দাগ লাগা দেবদারু কাঠের টেবিলটাকে দেখলাম। সেলফের ওপর সারি সারি সাজানো স্ক্র্যাপবুক আর রেফারেন্স বুক। বইগুলোর বিকট চেহারা দেখে অবশ্য আমাদের স্বজাতিদের মধ্যে অনেকেই সেগুলোকে পুড়িয়ে ফেলতে পারলেই পরম খুশি হত। রেখাচিত্র, বেহালার বাক্স, পাইপের র্যাক–এমনকী তামাক ভরতি পারস্যের চটিটাও চোখে পড়ল চারদিক তাকাতে গিয়ে। ঘরের মধ্যে হাজির ছিল দুজন। প্রথম জন মিসেস হাডসন, আমরা ঘরে ঢুকতেই চোখে-মুখে উপচে-পড়া খুশি নিয়ে ফিরে দাঁড়ালেন তিনি। দ্বিতীয় জন হোমসের অদ্ভুত ডামিটা–আজ রাতের অ্যাডভেঞ্চারের দারুণ গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু অভিনয়ের ফলে সর্বাঙ্গীণ সাফল্য এনে দিয়েছে আমাদের হাতের মুঠোয়। মডেলটা মোমের, দেহের মিল তো বটেই, রংসুদ্ধ এমনই নিখুঁত যে দেখলে পরে হোমস বলেই মনে হয়। ফুলের টব রাখার সরু লম্বামতে একটা টেবিলের ওপর বসানো ছিল মূর্তিটা, গায়ে এমন কায়দায় হোমসের একটা পুরোনো ড্রেসিং গাউন জড়ানো যে রাস্তা থেকে দেখলে ভুল হওয়া স্বাভাবিক।

    হোমস বলল, মিসেস হাডসন, যেরকম বলেছিলাম, ঠিক সেইরকম করেছিলেন তো?

    প্রতিবারই হাঁটু দিয়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয়েছে আমায়।

    চমৎকার। বাস্তবিকই আপনার সাহায্য না-পেলে এত নিখুঁতভাবে ধোঁকা দেওয়া যেত না। ওদের। বুলেটটা কোথায় লেগেছে তা দেখেছেন তো?

    হ্যাঁ। আপনার অমন চমৎকার মুর্তিটা কিন্তু নষ্ট হয়ে গেছে। বুলেটটা মাথার ভেতর দিয়ে গিয়ে দেওয়ালে লেগে চেপটা হয়ে পড়ে ছিল মেঝেতে। এই দেখুন!

    আমার হাতে বুলেটটা তুলে দিয়ে বলল হোমস, বুঝতেই পারছ ওয়াটসন। রিভলভারের নরম বুলেট না হলে এ-অবস্থা হয় না। একেই বলে প্রতিভা–কেননা এ-জিনিস যে এয়ারগান থেকে ফায়ার করা হয়েছে–তা কারোর মাথাতেও আসবে না। ঠিক আছে, মিসেস হাডসন, সাহায্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ।

    জরাজীর্ণ ফ্ৰককোটটা খুলে ফেলেছিল সে, এবার ডামির ওপর থেকে ইঁদুর রঙের ড্রেসিং গাউনটা তুলে নিয়ে গায়ে জড়াতেই ফিরে এল পুরোনো হোমস–মাঝখানে যে সুদীর্ঘ তিনটে বছরের ব্যবধান আছে, তা আর মনেই রইল না।

    মূর্তিটার কপাল চুরমার হয়ে গেছিল বুলেটের ঘায়ে। খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে হাসিমুখে বলল হোমস, বুড়ো শিকারির স্নায়ু দেখছি এখনও আগের মতোই ঠিক তেমনই ধীরস্থির। চোখের ধারও দেখছি এতটুকু কমেনি। বুলেটটা মাথার পেছনে ঠিক মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে ঢুকে ব্রেনটা লন্ডভন্ড করে দিয়ে বেরিয়ে গেছে সামনে দিয়ে। অব্যর্থ বন্দুক চালানোয় এঁর জুড়িদার ইন্ডিয়াতে ছিল না। আমার তো মনে হয়, লন্ডনে এঁকে টেক্কা দেওয়ার মতো বন্দুকবাজ অল্প কয়েকজনই

    আছে। ভদ্রলোকের নাম কি এর আগে শুনেছিলে?

    না।

    বটে, বটে, নামযশের কী করুণ পরিণতি! অবশ্য প্রফেসর জেমস মরিয়ার্টির নামও তুমি কোনোদিন জানতে না, অথচ তাঁকে শতাব্দীর সূর্য বললে বোধ হয় অত্যুক্তি হয় না, আগামী শতাব্দীতেও এ-রকম প্রতিভা আর দেখা যাবে বলে মনে হয় না। সেলফ থেকে জীবনচরিতের স্ক্র্যাপ বইখানা নামাও, একটু চোখ বুলাননা যাক।

    সিগার থেকে রাশি রাশি ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে অলসভাবে চেয়ারে হেলান দিয়ে পাতা ওলটাতে লাগল হোমস। তারপর বইটা আমার হাতে তুলে দিল। মোর‍্যানের সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত দেখলাম বেশ গুছিয়ে লিখে রেখেছে।

    মার্জিনে গোটা গোটা অক্ষরে হোমসের হাতে লেখা : লন্ডনের দ্বিতীয় সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যক্তি।

    হোমসের হাতে বইটা তুলে দিয়ে বললাম, আশ্চর্য, সৈনিক জীবনে লোকটা দেখছি প্রচুর সম্মান পেয়েছেন।

    সত্যিই তাই ওয়াটসন। সৈনিক জীবনের অনেকদ্দূর পর্যন্ত তার সুনামের অন্ত ছিল না। হঠাৎ বিগড়ে গেলেন কর্নেল মোর‍্যান, শুরু হল তাঁর বিপথে কুপথে যাওয়া। প্রকাশ্য কেলেঙ্কারি অবশ্য কোনোদিনই হয়নি, কিন্তু পাঁচ কান হওয়াও বাকি থাকেনি, তবে তাঁর পক্ষে ইন্ডিয়ায় বেশিদিন থাকা সম্ভব হল না। অবসর নিলেন কর্নেল, এলেন লন্ডনে, আসতে-না-আসতেই আবার শুরু হল তার দুর্নাম কুড়ানোর পালা। এই সময়ে প্রফেসর মরিয়ার্টির সুনজরে পড়লেন তিনি মরিয়ার্টি কিছুদিনের জন্যে তার সাঙ্গোপাঙ্গদের পাণ্ডা করে দিয়েছিলেন কর্নেলকে। যাই হোক, কর্নেলকে এন্তার টাকা দিতে লাগলেন মরিয়ার্টি। যেসব উঁচু ধরনের কাজ সাধারণ অপরাধী সমাজ কোনোদিন ভাবতেও সাহস করত না, এইরকম দু-একটা কাজেও লাগালেন কর্নেলকে। ১৮৮৭ সালে লন্ডারে মিসেস স্টুয়ার্টের মৃত্যুকাহিনি মনে পড়ছে তোমার? পড়ছে না? মোর‍্যান যে এর মূলে ছিলেন, সে-বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। অবশ্য প্রমাণ করা যায়নি কিছুই। কর্নেলকে এমনই চালাকি করে আড়ালে রাখা হয়েছিল যে মরিয়ার্টির দল ভেঙে যাওয়ার পরেও কোনোমতেই মোর‍্যানকে জালে জড়ানো যায়নি। মনে পড়ে তোমার, তোমাকে তোমার বাড়িতে ডাকতে গিয়ে এয়ারগানের ভয়ে কীভাবে জানলার খড়খড়ি টেনে বন্ধ করে দিয়েছিলাম? তখনও তুমি ভেবেছিলে কল্পনার মাত্রা আমার ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু আমি জানতাম আমার এত সাবধান হওয়া অকারণ নয়, কেননা এই অসাধারণ এয়ারগানের অস্তিত্ব আমি তখনই জানতাম এবং এও জানতাম পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা বন্দুকবাজের একজনের হাতেই থাকতে পারে হাতিয়ারটা। সুইজারল্যান্ডে মরিয়ার্টির সাথে ইনিই আমার পেছনে ধাওয়া করেছিলেন। রাইখেনবাকের পাথরের তাকে শুয়ে থাকার সময়ে সেই ভয়ংকর পাঁচটা মিনিটের জন্যও দায়ী ইনিই।

    ফ্রান্সে অজ্ঞাতবাসের সময় মন দিয়ে কাগজ পড়তাম কবে আবার তাকে আমার পাছু নেওয়াতে পারব ওই সুযোগের প্রতীক্ষায়। তাই অপরাধ-সংক্রান্ত খবর নিয়মিত শুধু দেখে যেতাম। জানতাম একদিন-না-একদিন তাকে আমি বাগে পাবই। তার পরেই মৃত্যু হল রোনাল্ড অ্যাডেয়ারের। যে-সুযোগের প্রতীক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে হাপিত্যেশ করে বসে থাকা, শেষ পর্যন্ত পেলাম সেই সুযোগ! এ-কাজ যে কর্নেল মোর‍্যানের সে-বিষয়ে আমার তিলমাত্র সন্দেহ ছিল না। রোনাল্ডের সাথে তাস খেলার পর ক্লাব থেকে পিছু নিয়ে বাড়ি পর্যন্ত এসেছিলেন। তারপর গুলি চালিয়েছিলেন খোলা জানলা দিয়ে। সঙ্গেসঙ্গে ফিরে এলাম লন্ডনে। পাহারাদার আমায় নজরে রেখেছেন দেখলাম এবং বুঝলাম তার মনিবের কাছে যথাসময়ে পৌঁছে যাবে আমার ধূমকেতুর মতো উদয় হওয়ার খবর। রোনাল্ডকে খুন করার সঙ্গেসঙ্গে আমার ফিরে আসার উদ্দেশ্য যে কী, তাও আবিষ্কার করা কঠিন হবে না তার পক্ষে। তৎক্ষণাৎ হুঁশিয়ার হয়ে গিয়ে আমাকে পথ থেকে সরানোর জন্যে তৎপর হয়ে উঠবেন কনেল। সঙ্গে আনবেন তার বহু অপরাধের সঙ্গী রক্তখেকো হাতিয়ারকে। তাঁর সুবিধার জন্যে জানলায় চমৎকার ছায়াবাজি দেখিয়ে পুলিশকে সাবধান করে দিলাম, হয়তো তাদের সাহায্য দরকার হতে পারে আমার। যাই হোক, আমি যেখানে ঘাপটি মেরে কর্নেলের ওপর নজর রাখব ভেবেছিলাম, কর্নেল যে শেষ পর্যন্ত সেইখান থেকেই আক্রমণ শুরু করবেন, তা ভাবিনি। তাহলে মাই ডিয়ার ওয়াটসন, আর কিছু বুঝতে বাকি রইল কি?

    আছে বই কী। অনারেবল রোনাল্ড অ্যাডেয়ারকে খুন করার পেছনে কর্নেলের কী মোটিভ থাকতে পারে, সে-বিষয়ে কিছুই বলনি তুমি।

    আমার তো মনে হয় সব জটিলতাই সরল হয়ে আসবে আমার অনুমান দিয়ে। সওয়ালের সময়ে জানা যায় যে মোর‍্যান আর অ্যাডেয়ার দুজনে মিলে প্রচুর টাকা জিতেছিলেন। মোর‍্যান যে শেষ পর্যন্ত ল্যাজে খেলতে শুরু করে তা মোর‍্যান-চরিত্র যে জানে সে-ই বুঝতে পারবে। আমার বিশ্বাস খুনের দিনই অ্যাডেয়ার জানতে পারেন যে মোর‍্যান তাকে ঠকাচ্ছেন। তখনই হয়তো আড়ালে ডেকে কর্নেলকে তিনি ভয় দেখিয়েছিলেন যে ক্লাবের সভ্যতালিকা থেকে নিজে থেকে নাম না-কাটিয়ে নিলে এবং চিরকালের মতো তাস খেলা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি না-দিলে তিনি সব কিছু ফাঁস করে দিতে বাধ্য হবেন। কর্নেলকে শুধু ভয় দেখিয়েই কাজ সারতে চেয়েছিলেন রোনাল্ড। ক্লাব থেকে বিতাড়িত হওয়া মানেই মোর‍্যানের নিকেশ হওয়া, কেননা তাস খেলে অসাধু উপায়ে টাকা নিয়েই ইদানীং তার দিন কেটেছে। কাজেই বিনা দ্বিধায় রোনাল্ডকে খুন করলেন তিনি। খুন হওয়ার সময়ে হিসেব করতে বসেছিলেন রোনাল্ড। অসৎ পার্টনারের সঙ্গে খেলে যে-টাকা জিতেছিলেন, তা হজম করার প্রবৃত্তি তার ছিল না। তাই হিসেব করতে বসেছিলেন কাদেরকে কত টাকা ফেরত দিতে হবে। দরজা বন্ধ করেছিলেন তিনিই। কেননা মা আর বোন এসে একসাথে অত নাম আর খুচরো টাকাপয়সা দেখে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেই ফ্যাসাদে পড়তে হত–তাই ওই সাবধানতা। কেমন, ঠিক আছে তো?

    নিঃসন্দেহে। বিলকুল সত্যকেই অনুমান করে বসেছ তুমি।

    মামলা চলার সময় বোঝা যাবে সত্যি কি মিথ্যে। আপাতত আমি স্বাধীন। কর্নেল মোর‍্যান আর আসবেন না আমার দিবানিশার শান্তি কেড়ে নিতে, ভন হার্ডারের বিখ্যাত এয়ারগানও শান্তি পাবে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মিউজিয়ামে, আর আবার শুরু হবে শার্লক হোমসের পুরোনো জীবন, শুরু হবে লন্ডনের জটিল জীবনের বিস্তর সমস্যার সমাধানে তার সর্বশক্তির বিনিয়োগ।

    ———-

    টীকা

    মোরানের মারাত্মক হাতিয়ার : দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য এমটি হাউস কলিয়ার্স উইকলি পত্রিকার ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯০৩ সংখ্যায় এবং স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিনের অক্টোবর ১৯০৩ সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত। পাঠকদের কাছে শার্লক হোমসের সমস্ত কাহিনির মধ্যে, প্রকাশের সঙ্গেসঙ্গে এই গল্পটি সর্বাধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল শার্লক হোমস ফিরে আসবার কারণে।

    ৪২৭ নম্বর পার্ক লেনে : হাইড পার্কের পূর্ব প্রান্তের লাগোয়া পার্ক লেন অভিজাত উচ্চবিত্ত মানুষদের বসবাসের এলাকা।

    ক্যাভেন্ডিস আর বাগাটেলী ক্লাব : ১৮৯১ সাল নাগাদ লন্ডন শহরের ওয়েস্ট এন্ড অঞ্চলে জুয়া খেলার বেশ কয়েকটি ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়।

    লর্ড ব্যালমোরাল : দ্য নোবল ব্যাচেলর এবং দ্য সিলভার ব্লেজ গল্পে লর্ড ব্যালমোরালের উল্লেখ পাওয়া গেছে। ব্যালমোরাল ক্যাসল রানি ভিক্টোরিয়া লিজ নিয়েছিলেন। পরে প্রিন্স আলবার্ট রানির জন্য এটি কিনে নেন। জানা যায়, রানি ভিক্টোরিয়া গোপনীয়তার কারণে অনেক সময় নিজেকে ডাচেস অব ব্যালমোরাল ছদ্ম-উপাধিতে পরিচয় দিতেন।

    এই সবই ভাবলাম বার বার : হোমস-গবেষক ক্রিস্টোফার মর্লে প্রশ্ন তুলেছেন, নিজের ডাক্তারির পেশা ছেড়ে ওয়াটসন গোয়েন্দাগিরি করতেন কেন? এবং কখন?

    বারিৎসু : একপ্রকার জাপানি কায়দায় কুস্তি। বারিৎসু ইউরোপে জনপ্রিয় হয় ১৮৯৯-এ পিয়ার্সনস ম্যাগাজিনে এই বিষয়ে ই. ডবলু বার্টন রাইটের প্রবন্ধ প্রকাশিত হওয়ায়।

    তিব্বত : ওই বিশেষ সময়ে তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাই লামার শাসনকাল চললেও, তিব্বত ছিল চিনের কিঙ বা মাঞ্চু বংশীয় রাজাদের ছত্রছায়ায় শাসিত।

    প্রধান লামা : ১৮৯৩-এ ত্রয়োদশ দালাই লামা যুবতেন গিয়োৎসোর বয়স ছিল পনেরো বছর; এবং নবম পাঞ্চেন লামা চোকেই নিমার বয়স ছিল নয় বছর। শার্লক হোমস মজায় কাটিয়েছিলেন কার সঙ্গে?

    মক্কা দেখলাম : স্যার রিচার্ড বার্টন ছদ্মবেশে মক্কা দর্শন করেন ১৮৫৩-তে। হোমস মুসলমান না হয়ে কোন ছদ্মবেশে মক্কায় প্রবেশ করতে সক্ষম করলেন?

    খারটুম : আফ্রিকার দেশ সুদানের রাজধানী খারটুম ১৮৮৫ সালে অল মাহেদীর নেতৃত্বে তার অনুগামীরা দখল করে নেয় এবং তারা খারটুমকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে অমরখানে নতুন রাজধানী পত্তন করে। ১৮৯৮-এ ইংরেজরা খারটুম পুনর্দখল করলে গভর্নর জেনারেল লর্ড কীচেনার-এর পরিচালনায় এই শহর পুনর্নির্মিত হয়। ১৮৯১-এ হোমস কোন খারটুম চেয়েছিলেন?

    খলিফ : ওই সময়ে খলিফা ছিলেন আবদুল্লাহি (১৮৪৬-১৮৯৯)। ইনি আবদআল্লা নামেও পরিচিত ছিলেন।

    মঁপেলিয়ারের একটা ল্যাবরেটরিতে : ১২২০-তে প্রতিষ্ঠিত ইউনিভার্সিটি অব সঁপেলিয়ারের কোনো ল্যাবরেটরি হওয়া সম্ভব।

    পকেট থেকে চাবি বার করে : হোমস ওই বাড়ির চাবি কোথা থেকে পেলেন, সেই রহস্য কিন্তু পরিষ্কার হয়নি।

    মোমের তৈরি…আবক্ষ মূর্তি : বেকার স্ট্রিটের অদূরে, মেরিলিবোন রোডে ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় মাদাম ত্যুসো-র মোমের মূর্তির সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করেন মেরি গ্রেজহোট ব্যুসো (১৭৬০-১৮৫০)। অচিরে বিশ্বখ্যাত সেই মিউজিয়ামের কোনো কারিগর হোমসের এই মূর্তি বানাতে সাহায্য করে থাকতে পারেন বলে অনুমান করেন বহু হোমস-গবেষক।

    হার্প : ধাতু বা কাঠের ফ্রেমে বাঁধা তারের বাদ্যযন্ত্র। এশিয়া এবং ইউরোপে এই বাজনা বহু শতাব্দী যাবৎ প্রচলিত।

    ব্রিচব্লক : বন্দুকের গুলির খোপ বন্ধ করবার ধাতব অংশ।

    পার্ক লেনের উলটোদিকের বাড়ির : পার্ক লেনের সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্যে একদিকে বাড়ির সারি, অপরদিকে হাইড পার্ক। অর্থাৎ এই রাস্তায় কোনো বাড়ির উলটোদিকের বাড়ি বলে কিছু থাকতে পারে না।

    জেমস মরিয়ার্টি : প্রফেসরের প্রথম নাম এই প্রথম উল্লিখিত হয়েছে। দ্য ফাইনাল প্রবলেম গল্পে জানা যায় প্রফেসরের ভাইয়ের নামও জেমস।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ – আরিফ আজাদ
    Next Article শার্লক হোমস সমগ্র ১ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }