Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শার্লক হোমস সমগ্র ২ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    লেখক এক পাতা গল্প1414 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    বসকোম ভ্যালির প্রহেলিকা

    শার্লক হোমসের টেলিগ্রামটা এল সকাল বেলা–আমি তখন স্ত্রীকে নিয়ে প্রাতরাশ খেতে বসেছি।

    দিন দুয়েকের জন্য বসকোম ভ্যালি যাবে? এইমাত্র টেলিগ্রাম পেলাম। তলব পড়েছে। প্যাডিংটন থেকে সওয়া এগারোটায় গাড়ি আছে।

    স্ত্রী-র উৎসাহে যাওয়াই মনস্থ করলাম। আফগানিস্তানে সামরিক জীবনে একটা জিনিস খুব ভালো রপ্ত করেছি। ঝট করে জিনিসপত্র গুছিয়ে রওনা হতে পারি। তাই যথাসময়ে স্টেশনে পৌঁছে দেখলাম প্ল্যাটফর্মে পদচারণা করছে শার্লক হোমস। আঁটসাঁট ধূসর পোশাকে দীর্ঘ কৃশ শরীরটা আরও তালঢ্যাঙা দেখাচ্ছে।

    উঠে বসলাম ট্রেনে। কামরায় আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। তন্ময় হয়ে একগাদা কাগজ পড়ে চলল হোমস, মাঝে মাঝে কী সব টুকে নিতে লাগল। তারপর দলা পাকিয়ে কাগজের তাড়া বাঙ্কের ওপর ছুঁড়ে দিয়ে বলল, কেসটা সম্পর্কে কিছু শুনেছ?

    কোনো কাগজই পড়িনি ক-দিন।

    মনে হয় খুব সহজ, সেইজন্যেই খুব জটিল।

    ধাঁধায় ফেললে দেখছি।

    কিন্তু কথাটা খাঁটি। যে-কেস চোখে পড়ার মতো, জানবে জলের মতো সোজা। কিন্তু যা সাদাসিদে গোলমাল তাতেই বেশি। এ-কেসে অভিযোগ আনা হয়েছে যিনি মারা গেছেন, তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে।

    খুনের মামলা?

    সেইরকমই মনে করা হয়েছে। কিন্তু তলিয়ে না-দেখা পর্যন্ত আমি সেরকম কিছু মনে করার পাত্র নই। কেসটা শোনো।

    বসকোম ভ্যালির সবচেয়ে বড়ো জায়গিরদার হলেন জন টার্নার। অস্ট্রেলিয়া থেকে অনেক টাকা রোজগার করে এনে জমিজমা কিনে চাষবাস করছেন। একটা গোলবাড়ি ভাড়া দিয়েছেন চার্লস ম্যাকার্থি নামে এক ভদ্রলোককে–ইনিও অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেছেন। সেখানে আগে আলাপ ছিল–এখানেও তাই প্রতিবেশী হয়ে রয়ে গেলেন। টার্নারের টাকাপয়সা বেশি থাকলেও তা মেলামেশার অন্তরায় হল না। দুজনেরই বউ গত হয়েছেন। টার্নারের এক মেয়ে, ম্যাকার্থির এক ছেলে–দুজনেরই বয়স আঠারো। প্রতিবেশীদের সঙ্গে কেউই খুব একটা মিশতেন না। টার্নারের বাড়িতে চাকরবাকর ছ-জন। ম্যাকার্থির দুজন।

    গত সোমবার তেসরা জুন ম্যাকার্থি বিকেল তিনটে নাগাদ বসকোম হ্রদে যান–চাকরকে বলে যান কার সঙ্গে নাকি দেখা করার কথা আছে। আর ফেরেননি।

    গোলাবাড়ি থেকে হ্রদ সিকি মাইল দূরে। দুজন দেখেছে ম্যাকার্থিকে যেতে। একজন বুড়ি–নাম জানা নেই। আর একজন বাগানের মালি। ম্যাকার্থির বেশ কিছু পেছনে তার ছেলে জেমসকেও যেতে দেখেছে সে হাতে বন্দুক ছিল। বাপকে যেন চোখে চোখে রেখে হাঁটছিল ছেলে।

    মালির মেয়েও দেখেছে বাপবেটাকে হ্রদের ধারে। বনের মধ্যে ফুল তুলছিল মেয়েটা। সেখান থেকেই দেখতে পায় কথা কাটাকাটি হচ্ছে বাপবেটায় ছেলে এমনভাবে একবার হাত তুলল। যেন এই বুঝি মেরে বসবে বাপকে। ভয়ের চোটে মেয়েটা দৌড়ে এসে মাকে সবে ঘটনা বলতে শুরু করেছে, এমন সময়ে ছুটতে ছুটতে জেমস এসে বললে–বাবাকে এইমাত্র মরে পড়ে থাকতে দেখে এসেছে বনের ধারে। জেমসের তখন বিহুল অবস্থা, মাথায় টুপি নেই, বগলে বন্দুক নেই, হাতে আর আস্তিনে কঁচা রক্ত লেগে আছে। জেমসের সঙ্গে গিয়ে দেখা গেল, সত্যিই ম্যাকার্থির মৃতদেহ পড়ে রয়েছে হ্রদের ধারে খুব ভারী কিন্তু ভেতা ধরনের কোনো অস্ত্র দিয়ে বেশ কয়েকবার ঘা মেরে খুলি ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঠিক যেন ছেলের বন্দুকের কুঁদোর মার। বন্দুকটাও পাওয়া গেল একটু তফাতে ঘাসের ওপর। ছেলেকে গ্রেপ্তার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

    সব শুনে আমি বললাম, এ অবস্থায় জেমসকেই দোষী বলতে হয়।

    সেভাবে দেখতে গেলে হয়তো অবিচারই করা হবে। জেমস দোষী হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। শুধু পরিস্থিতি দেখলে হবে না, অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। টার্নারের মেয়ে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের লেসট্রেডকে দিয়ে তদন্ত করাচ্ছে। তারই নিৰ্বন্ধে আমার এখন ছুটতে হচ্ছে। ঘণ্টায় পঞ্চাশ মাইল বেগে।

    কিন্তু হালে পানি পেলে হয়–শেষ পর্যন্ত তোমাকে সুনাম খোয়াতে হবে মনে হচ্ছে। কেস ততা জলের মতো পরিষ্কার।

    হাসল হোমস। বলল, পরিষ্কার ব্যাপারেই অনেক কিছু চোখের বাইরে থেকে যায়। লেসট্রেড যা দেখেনি, আমার চোখে তা পড়তে পারে। যেমন ধর না কেন তোমার শোবার ঘরের জানলাটা যে ডান দিকে, এ জিনিস হয়তো লেসট্রেডের চোখ এড়িয়ে যাবে কিন্তু আমার চোখ এড়ায়নি।

    সত্যিই অবাক হলাম, কিন্তু তুমি জানলে কী করে?

    তোমার নাড়িনক্ষত্র জানি যে আমি। মিলিটারিতে থাকার ফলে পরিষ্কার থাকা তোমার অভ্যেস দাঁড়িয়ে গেছে। রোজ দাড়ি কামাও। এইসব মাসে রোদুরে দাঁড়িয়ে কামাও। কিন্তু দেখছি তোমার দাড়ি তেমন কামানো হয়নি। তার মানে কি এই নয় যে, যে-জানলায় দাঁড়াও সেখানে রোদ থাকে না সকালে? খুঁটিয়ে দেখলে এমনি অনেক কিছু আবিষ্কার করা যায়, এই কেসেও সে-সুযোগ আছে বলে আমার বিশ্বাস।

    কীরকম?

    ছেলেটাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে গোলাবাড়ি ফিরে আসার পর অকুস্থলে নয়। তখন সে বলেছিল, সে নাকি জানত তাকে গ্রেপ্তার হতে হবে।

    তার মানেই খুনের অপরাধ স্বীকার করে নেওয়া হল।

    কিন্তু তারপরেই বলেছে খুন সে করেনি।

    কিন্তু তাতে সন্দেহ যায় না বরং বাড়ে।

    মোটেই না–সন্দেহ একেবারে চলে যায়। গ্রেপ্তারের সময়ে মেজাজ দেখালেই বরং সন্দেহ হত–পাগলকে পাগল বললেই রেগে যায়। কিন্তু বাপের সঙ্গে কথা কাটাকাটির পরেই বাপ খুন হয়েছে–সুতরাং যে কেউ বলবে খুনি সে-ই–এই সোজা কথাটা সোজা ভাবে যে বলতে পারে, বুঝতে হবে তার মনে পাপ নেই।

    কিন্তু ফাঁসি কি আটকানো যায়? এর চেয়ে কম সন্দেহের জোরে অনেকে ফাঁসিকাঠে উঠেছে।

    অন্যায় সন্দেহেও অনেকে ফাঁসিতে ঝুলেছে। ছেলেটি কী বলে? এই কাগজটা পড়লেই বুঝবে,বলে কাগজের তাড়ার একটা জায়গা আমাকে দেখিয়ে দিল হোমস।

    জেমস ম্যাকার্থি গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিবৃতি দিয়েছিল। এটা সেই জবানবন্দি। সে বলেছে :

    তিন দিন পরে বাড়ি ফিরে দেখলাম বাবা বাড়ি নেই। একটু পরে গাড়ির আওয়াজ শুনে দেখলাম, বাবা ফিরেছে। কিন্তু গাড়ি থেকে নেমেই হনহন করে ফের বেরিয়ে গেল। কোন দিকে গেল বুঝতে পারলাম না। বন্দুক নিয়ে আমি বেরোলাম হ্রদের পাড়ে গিয়ে খরগোশ শিকার করব বলে। রাস্তায় মালির সঙ্গে দেখা হল। আমি বাবার পেছনে পেছনে চলেছিলাম, সে বলেছে। কথাটা ঠিক নয়। আমি জানতামই না বাবা আমার সামনে আছে। হ্রদের কাছাকাছি গিয়ে একটা কু ডাক শুনলাম। এভাবে বাবা আমাকে ডাকে–আমিও বাবাকে ডাকি। তাই হনহন করে এগিয়ে গিয়ে দেখি লেকের ধারে বাবা দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে অবাক হল, রেগে গেল, মারতে এল। বাবার মেজাজ খুব উগ্র। আমি তাই কথা না-বাড়িয়ে চলে এলাম। কিন্তু কিছুদূর আসতে-না-আসতেই বিকট চিৎকার শুনলাম পেছনে। দৌড়ে গিয়ে দেখলাম সাংঘাতিক জখম হয়েছে বাবা–মাথা ছাতু হয়ে গেছে বললেই চলে! বন্দুকটা ছুঁড়ে ফেলে দিলাম, বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম, প্রায় সঙ্গেসঙ্গে মারা গেল বাবা। কাছেই বাড়িটা মি. টার্নারের মিনিট কয়েক বসে থাকার পর গেলাম সেখানে। সব বললাম। বাবার শত্রু নেই, এটুকু আমি জানি। বন্ধুও তেমন নেই।

    করোনার তখন জিজ্ঞেস করে, প্রাণটা বেরিয়ে যাওয়ার আগে বাবা কিছু বলেছিলেন?

    ইদুর সম্বন্ধে কী যেন বলছিল।

    মানে কি বুঝলে?

    ভুল বকছিল।

    বাবার সঙ্গে ঝগড়াটা হল কী নিয়ে?

    বলব না।

    বলতেই হবে।

    তার সঙ্গে এ ব্যাপারের কোনো সম্পর্ক নেই।

    সেটা কোর্ট বুঝবে। জবাব না-দিলে তোমার ক্ষতি হবে।

    হোক।

    কু ডাক দিয়ে বাবা তোমাকে ডাকত, তুমিও বাবাকে ডাকতে?

    হ্যাঁ! কিন্তু বাবা তো জানতেন না তুমি বাড়ি ফিরেছ? ডাকলেন কেন?

    ঘাবড়ে গেল জেমস। বললে, বলতে পারব না।

    বিকট চিৎকার শুনে ফিরে এসে সন্দেহজনক কিছু দেখেছিলে?

    সে-রকম কিছু দেখিনি।

    তাহলে কী দেখেছিলে?

    আমি তখন পাগলের মতো বাবার দিকে দৌড়োচ্ছি–কোনোদিকে খেয়াল নেই। সেই সময়ে মনে হল যেন বাঁ-দিকে ধূসর রঙের কী-একটা পড়ে আছে অনেকটা আলখাল্লার মতো। বাবার পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে জিনিসটা আর দেখিনি।

    মি. টার্নারের বাড়ি যাওয়ার আগেই দেখলে জিনিসটা নেই।

    হ্যাঁ।

    ঠিক কী বলে মনে হয় জিনিসটা?

    কাপড়ের মতো কিছু।

    ডেডবডি থেকে কত তফাতে?

    প্রায় বারো গজ তফাতে।

    বন সেখানে কদ্দূর?

    ওইরকমই। তাহলে বলতে চাও তুমি থাকতে থাকতেই জিনিসটা উধাও হয়ে গেল?

    আমি কিন্তু সেদিকে পেছন করে বসে ছিলাম।

    জেরা এইখানেই শেষ।

    পড়া শেষ করে বললাম, করোনার ঠিক ঠিক পয়েন্টেই চেপে ধরেছে। এক, বাবা তাকে দেখেনি, অর্থচ ডাকল কেন? দুই, ঝগড়ার বৃত্তান্ত চেপে যাওয়া। তিন, মরবার সময়ে ইঁদুর সম্বন্ধে কথা বলেছিলেন ম্যাকার্থি–মানেটা ছেলে বোঝেনি।

    হোমস হাসিমুখে বললে, যে-অসংগতিগুলো দেখে তুমি আর করোনার খড়্গহস্ত হয়েছ ছেলেটির ওপর সেগুলোই কি ওর সত্যি কথা বলার প্রমাণ? পুরো ব্যাপারটা বানিয়ে বলার মতো কল্পনাশক্তিই যদি ওর থাকত, তাহলে ওই তিনটে অসংগতি চাপাচুপি দিয়ে চমৎকার তিনটে গল্প শুনিয়ে দিতে পারত। মিথ্যে যে বলে, সে কি গল্পের মধ্যে সন্দেহের বীজ রেখে উদ্ভট অসংগতি শোনাতে চায়? না হে, ছেলেটা সত্যিই বলেছে। এখন আর এ নিয়ে কোনো কথা নয়। এই বইটা পড়তে বসলাম, বিশ মিনিটে সুইনডনে পৌঁছে লাঞ্চ খাব।

    রস শহরে যথাসময়ে পৌঁছোলাম। বেজির মতো ক্ষিপ্র, ইনস্পেকটর লেসট্রেড° দাঁড়িয়েছিল প্ল্যাটফর্মে। চোখে সেয়ানা চাহনি! আগে নিয়ে গেল সরাইখানায়। ঘর ঠিক করাই ছিল। চা খেতে খেতে বললে, এখুনি গাড়ি আসছে। সোজা অকুস্থলে চলুন।

    আজ রাতে গাড়ির দরকার হবে বলে মনে হয় না।

    তাই বলুন। কাগজ পড়েই তাহলে সমাধানে পৌঁছে গেছেন? খুবই সোজা কেস। কিন্তু মেয়েটা নাছোড়বান্দা। আপনার সঙ্গে কথা না-বলা পর্যন্ত রেহাই দিচ্ছে না। এই যে এসে গেছে।

    একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল সরাইখানায়। হুড়মুড় করে ঢুকল একজন পরমাসুন্দরী তরুণী। উদবেগ উৎকণ্ঠায় সামলাতে পারছে না নিজেকে।

    মি. শার্লক হোমস? পর্যায়ক্রমে আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে হোমসকে ঠিক চিনে নিল মেয়েটা, খুব আনন্দ হচ্ছে আপনাকে দেখে। জেমস নির্দোষ। এইটুকু বয়স থেকে ওকে চিনি। মাছি পর্যন্ত যে মারতে পারে না, সে করবে খুন? মি. হোমস, শুধু এই বিশ্বাস নিয়েই আপনি তদন্ত শুরু করুন।

    নিশ্চয় করব, জেমস যে নির্দোষ তাও প্রমাণ করব।

    ওর জবানবন্দি পড়ে কি আপনার মনে হয়নি ও নির্দোষ?

    সেইরকমই মনে হয়েছে।

    কী! বলেছিলাম না? লেসট্রেডের দিকে ফিরে তাচ্ছিল্যের সুরে বললে মেয়েটা।

    লেসট্রেড কঁধ ঝাঁকিয়ে বললে, মি. হোমস একটু তাড়াতাড়িই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাচ্ছেন।

    কিন্তু হক কথা বলেছেন। জেমস নির্দোষ। বাবার সঙ্গে ঝগড়ার কারণটা কেন বলেনি জানেন? ওর মধ্যে আমিও আছি বলে।

    কীরকম? শুধোয় হোমস।

    জেমসের বাবা চান আমার সঙ্গে জেমসের বিয়ে হোক। কিন্তু আমরা ছেলেবেলা থেকে ভাইবোনের মতো পরস্পরকে ভালোবেসে এসেছি। বাপবেটায় প্রায়ই ঝগড়া হত এই নিয়ে।

    তোমার বাবা কী বলত?

    তার মত নেই। জেমসের বাবা ছাড়া কারোরই মত নেই, বলতে বলতে সুন্দর মুখখানা লাল হয়ে গেল মিস টার্নারের।

    কালকে তোমার বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাব ভাবছি।

    ডাক্তার রাজি হবেন বলে মনে হয় না।

    কেন?

    গত কয়েক বছর ধরেই শরীর খুব খারাপ। তারপর এই ধাক্কায় একেবারে বিছানা নিয়েছেন। হাল ছেড়ে দিয়েছেন ডাক্তার। ভিক্টোরিয়ায় থাকার সময় থেকেই তো বন্ধুত্ব মিস্টার ম্যাকার্থির সঙ্গে।

    ভিক্টোরিয়ায়? খবরটা কাজে লাগবে।

    খনির কাজে ছিলেন। সোনার খনি, তাই না? টাকা রোজগার করেছেন সেইখানেই?

    হ্যাঁ।

    ধন্যবাদ। এ-খবরটাও কাজে লাগবে।

    জেমসের সঙ্গে নিশ্চয় দেখা করতে যাবেন জেলখানায়? ওকে বলবেন আমি জানি ও নির্দোষ।

    বলব, নিশ্চয় বলব!

    আর বসব না, চলি। বাবার অবস্থা ভালো নয়। বলতে বলতে বেগে বেরিয়ে গেল মিস টার্নার। একটু পরেই শুনলাম চাকার আওয়াজ মিলিয়ে যাচ্ছে দূরে।

    গম্ভীর গলায় লেসট্রেড বললে, কাজটা ভালো করলেন না মি. হোমস। মিথ্যে আশা দিলেন মেয়েটাকে!

    লেসট্রেড, জেমসকে খালাস করতে পারব এ-বিশ্বাস আমার আছে। জেলখানায় গিয়ে দেখা করার অনুমতি পাব কি আমি?

    শুধু আপনি আর আমি পাব।

    তাহলে চল বেরিয়ে পড়া যাক। ট্রেন পাওয়া যাবে?

    পাবেন। ওয়াটসন, ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে ফিরছি আমি।

    এই দুটো ঘণ্টা যেন আর কাটতে চাইল না আমার। ওদেরকে ট্রেনে তুলে দিয়ে একটু এদিক-ওদিক ঘুরে সরাইখানায় ফিরলাম। চটকদার উপন্যাস পড়বার চেষ্টা করলাম, কিন্তু মন চলে আসতে লাগল খুনের রহস্যে। বিরক্ত হয়ে বই ফেলে ভাবতে বসলাম। হোমসের খাতিরেই যদি ধরি ছেলেটা সত্যি বলছে, তাহলে সে বাবার কাছ থেকে চলে আসার সময় থেকে আরম্ভ করে বাবার চিৎকার শুনে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ভয়ানক কিছু একটা ঘটেছিল। আবার, বাবার কাছে পিছন ফিরে বসে থাকার সময়েও কেউ সেখানে এসে পেছন থেকে ধূসর জিনিসটা সরিয়ে নিয়ে গেছে। ভারি আশ্চর্য ব্যাপার তো! জিনিসটা কী? খুনির পোশাক? আমি নিজে ডাক্তার। কাজেই আঘাতের ধরনটা অনুধাবন করতে গিয়ে দেখলাম, চোট লেগেছে খুলির পেছনকার বাঁ-দিকের হাড়ে–গুড়িয়ে গেছে গুরুভার অস্ত্রের আঘাতে। অথচ ছেলেটিকে দেখা গেছে বাপের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ঝগড়া করতে। অবশ্য এ-যুক্তির কোনো মানে নেই। বাপ পেছন ফিরতেই হয়তো হাতিয়ার চালিয়েছিল জেমস। কিন্তু মরবার ঠিক আগে ইঁদুর নিয়ে বিড়বিড় করতে গেলেন কেন মি. ম্যাকার্থি? এ সময়ে আচমকা আঘাতে কেউ তো আবোল-তাবোল বকে না? কী বলতে চেয়েছিলেন ভদ্রলোক?

    হোমস একা ফিরল অনেক দেরিতে–লেসট্রেড শহরে থেকে গেছে।

    আসন গ্রহণ করে বললে, অকুস্থলে পৌঁছোনোর আগে বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেলে মুশকিলে পড়ব।–জেমসের সঙ্গে দেখা হল জেলখানায়।

    কী মনে হল? অন্ধকারে আলো দেখাতে পারল জেমস?

    একেবারেই না। প্রথমে মনে হয়েছিল খুনিকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। পরে দেখলাম নিজেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছে। খুব চৌকস নয় ছেলেটা, কিন্তু সুদর্শন। মনটা পরিষ্কার।

    মিস টার্নারের মতো মেয়েকে বিয়ে করতে যে চায় না, তার পছন্দরও খুব একটা তারিফ করা যায় না।

    ওহে ওর মধ্যেও একটা হৃদয়বিদারক ঘটনা রয়েছে। ছোকরা বোর্ডিং স্কুলে থাকার সময়ে ব্রিস্টলের একটা হোটেলের মেয়ের পাল্লায় পড়ে। তাকে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে পর্যন্ত করে। বোকা আর বলে কাকে। কাউকে কথাটা বলাও যাচ্ছে না। এদিকে বদমেজাজি বাবার কাছে ধমক খেতে হচ্ছে মিস টার্নারকে বিয়ে করতে চাইছে না বলে। হাত-পা ছুঁড়ে লেকের পাড়ে প্রতিবাদ জানিয়েও লাভ হয়নি। সত্যি কথাটা বললেই তো বাড়ি থেকে বার করে দেবে বাবা–গুমরে গুমরে তাই মরছে। তিন দিন ব্রিস্টলে স্ত্রীর সঙ্গে কাটিয়ে বাড়ি ফেরার পরেই খুন হয়ে গেল বাবা। কাগজে খবরটা পড়ল হোটেলের মেয়ে। জেমসের ফাসি হবেই বুঝতে পেরে নিজে থেকেই কেটে পড়ল। চিঠি লিখে জানিয়েছে, ওর আগের স্বামী বর্তমান কাজেই জেমসের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

    বেশ তো, জেমস যদি খুন না-করেই থাকে, তাহলে করলটা কে?

    দুটো ব্যাপার নিয়ে তোমাকে ভাবতে বলব। এক নম্বর হল, জেমসের বাবা জানতেন না ছেলে বাড়ি ফিরেছে–তা সত্ত্বেও তিনি কু করে ডেকেছিলেন। দু-নম্বর হল, লেকের পাড়ে যার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সে আর যেই হোক তার ছেলে নয় কারণ উনি জানতেন ছেলে এ-তল্লাটেই নেই। আজ আর এ-নিয়ে কোনো কথা নয়।

    সকাল বেলা গাড়ি নিয়ে এল লেসট্রেড। আকাশ নির্মেঘ। রাতেও বৃষ্টি হয়নি। গোলাবাড়ি আর হ্রদের দিকে রওনা হলাম আমরা।

    যেতে যেতে লেসট্রেড বললে, মি. টার্নার আর বাঁচেন কি না সন্দেহ।

    বয়স অনেক হয়েছে বুঝি? হোমস বললে।

    ষাট বছর তো বটেই। শরীরের ওপর অনেক অত্যাচার করেছেন বিদেশে থাকার সময়ে। এমনিতেই কাহিল ছিলেন, বন্ধু ম্যাকার্থির মৃত্যুতে একেবারে ভেঙে পড়েছেন। বন্ধুর জন্যে কম করেননি–গোলাবাড়ির ভাড়া পর্যন্ত নেন।

    বটে। খবরটা শুভ।

    বিনা ভাড়ায় শুধু থাকতেই দেননি, আরও অনেক উপকার করেছেন ম্যাকার্থির–পাঁচজনে বলেছে।

    তাই নাকি! একটা ব্যাপারে কি তোমার খটকা লাগেনি লেসট্রেড?

    কী বলুন তো?

    এত উপকার করা সত্ত্বেও মেয়ের সঙ্গে মি. ম্যাকার্থির ছেলের বিয়ে দিতে মি. টার্নার রাজি নন। অথচ মি. ম্যাকার্থি বিয়ের কথা সমানে বলে যাচ্ছেন–যেন খুবই স্বাভাবিক প্রস্তাব। মেয়েটি কিন্তু মি. টার্নারের সব সম্পত্তি পাবে। কী? আঁচ করতে পারলে?

    ঘটনার ঠেলায় অস্থির হয়ে পড়েছি, আঁচ করার হেপাজত আর পোয়াতে পারব না।

    তা ঠিক। ঘটনার ঠেলায় তুমি হিমশিম খাচ্ছ, গম্ভীর গলা হোমসের।

    চটে গেল লেসট্রেড। আপনি কিন্তু এখনও মরীচিকা দেখছেন। যা ভাবছেন, তা নয়।

    কুয়াশার চাইতে তো ভালো! হেসে বললে হোমস। এই যে, এসে গেছে গোলাবাড়ি।

    বেশ বড়ো গোলাবাড়ি। দোতলা। সদ্য শোকের ছাপ সর্বত্র। দরজায় ধাক্কা দিতেই ঝি বেরিয়ে এল। হোমস তার কাছে দু-জোড়া জুতো চাইল। মারা যাওয়ার সময়ে মি. ম্যাকার্থি যে বুট পরে ছিলেন, সেইটা। আর তার ছেলের একজোড়া বুট।

    জুতো এল। ফিতে বার করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সাত আট রকম মাপ নিল হোমস। তারপর রওনা হলাম লেকের দিকে।

    এবং পালটে গেল ওর চোখ-মুখের চেহারা। বরাবর দেখেছি এই ধরনের সন্ধানী অভিযানে নামলেই ও যেন শিকারি কুকুরের মতো আত্মনিমগ্ন আর হন্যে হয়ে উঠে। তখন কারো কথা কানে ঢোকে না–বেশি কথা বলতে গেলে খেঁকিয়ে ওঠে। ভুরু কুঁচকে ইস্পাত-কঠিন চোখে মাটির দিকে তাকিয়ে, দু-কাঁধ বাঁকিয়ে, নাকের পাটা ফুলিয়ে হনহন করে হেঁটে যায় হেঁট মাথায়। এইভাবেই মাঠে নামল, গেল লেকের ধারের জঙ্গলে। জলা জায়গায় অসংখ্য পদচিহ্ন। হোমসের নজর সব দিকেই। কখনো জোরে যাচ্ছে, কখনো আস্তে। মাঠটাকেও চক্কর দিয়ে এল একবার। রকম-সকম দেখে অবজ্ঞার হাসি হাসছে লেসট্রেড। আমার কৌতূহল কিন্তু বেড়েই চলেছে। শার্লক হোমসকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। অকারণে সে কিছু করে না।

    বসকোম লেকটাকে একটা বড়োসড়ো দিঘি বললেই চলে। একদিকে জায়গিরদার মি. টার্নারের বাড়ি আর একদিকে মি. ম্যাকার্থির গোলাবাড়ি। লেক ঘিরে আগাছা, ঘাস, জঙ্গল আর জলাজমি। এইখানে একটা ঘাস জমির ওপর পাওয়া গেছে মৃতদেহ। বেশ ভিজে জায়গা। হোমস শিকারী কুকুরের মতো আবার দৌড়াদৌড়ি আরম্ভ করেছে। অনেক কিছুই দেখতে পাচ্ছে। ঘাসজমির উপর পায়ের দাগ বিস্তর।

    হঠাৎ ফিরল লেসট্রেডের দিকে, এখানে কী করতে এসেছিলে?

    দেখছিলাম হাতিয়ারটা যদি পাওয়া যায়।

    খুব কাজ করেছ! পায়ের ছাপগুলোর বারোটা বাজিয়ে বসে আছ। নিজের পায়ের ছাপেই সব জায়গা ভরিয়ে তুলেছ! উফ! এর চাইতে একপাল মোষ এলেও বুঝি এ-রকম হত না! চিনতে পারছ এই জুতোর দাগটা? তোমার জুতো! আর এই যে বনরক্ষক মশায় দলবল নিয়ে কর্তব্য করে গেছেন–এখানে–ডেডবডির চারধারে ছয় থেকে আট ফুট পর্যন্ত জায়গায় যত পায়ের ছাপ ছিল, মাড়িয়ে দফারফা করে গেছেন। আ! এই যে একজোড়া পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। একদম আলাদা দাগ দেখছি, বলতে বলতে ভিজে মাটিতে বর্ষাতি বিছিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল হোমস। আতশকাচ বার করে মাটির ওপরকার বুট চিহ্ন দেখতে দেখতে যেন স্বগতোক্তি করে বলল, এই হল গিয়ে ছেলেটার জুতোর দাগ। দু-বার যাতায়াত করেছে–তারপরে টেনে দৌড়েছে দৌড়েছে বলেই গোড়ালির ছাপ প্রায় ওঠেনি চেটোর ওপরেই ভর পড়েছে বেশি। তার মানে, ছোকরা খাঁটি কথাই বলেছে। বাপের চিৎকার শুনে দৌড়ে এসেছিল। আর এইখানে পায়চারি করছিলেন মি. ম্যাকার্থি। পাশেই বন্দুকের কুঁদোর দাগ–বাপ বেটায় কথা হচ্ছিল এখানে। আরে! আরে! ওইটা আবার কী! বুটের মালিক একবার এল–আবার গেল–আবার এসেছে দেখছি… ও হ্যাঁ, আলখাল্লাটা কুড়িয়ে নিতে এসেছিল। কিন্তু এল কোত্থেকে? দেখা যাক।

    চেনা গন্ধ পেয়ে ব্লাড হাউন্ড যেভাবে নাক নামিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়োয়, হোমসও এবার সেইভাবে মাটি দেখতে দেখতে দৌড়োতে লাগল। পেছনে ছুটলাম আমরা। এসে পৌঁছোলাম বনের ধারে। আরও কিছুদূর গেল হোমস। ফের সটান উপুড় হয়ে শুয়ে মাটি পরীক্ষা করল আতশকাচ দিয়ে। শুকনো পাতা-টাতা সরিয়ে ধুলোর মতো খানিকটা বস্তু নিয়ে খামের মধ্যে ভরল। খুশিতে চোখ-মুখ বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। আশপাশ আবার দেখল আতশকাচের মধ্যে দিয়ে। এবড়োখেবড়ো একটা পাথর নিয়েও তন্ময় হয়ে রইল অনেকক্ষণ। শ্যাওলার মধ্যে পড়ে ছিল পাথরটা। গেল বড়োরাস্তা পর্যন্ত।

    ফিরে এসে সহজ গলায় বললে, ইন্টারেস্টিং মামলা। ডান হাতি বাড়িটা নিশ্চয় মি. টার্নারের। তোমরা এগোও–আমি আসছি মি. টার্নারের বাড়ির সরকারের সঙ্গে দেখা করে। একটা চিঠি লিখে আসতে হবে।

    মিনিট দশেক পরে হোমস এল। গাড়ি ছুটল শহরের দিকে।

    হোমসের হাতে শ্যাওলায়-পড়ে-থাকা সেই পাথরটা দেখলাম। লেসট্রেডের হাতে তুলে দিয়ে বললে, এই নাও হত্যার হাতিয়ার।

    কী করে বুঝব যে এটা দিয়েই খুন করা হয়েছিল? গায়ে তো কোনো দাগ দেখছি না।

    না, দাগ নেই। কিন্তু এটা যেখানে পড়ে ছিল, তার তলায় ঘাস ছিল। কোত্থেকে তুলে এনে ফেলা হয়েছে, তাও দেখতে পাইনি। যে ধরনের চোট দেখা গেছে খুলিতে, এই পাথর দিয়েই

    তা সম্ভব।

    খুনটা করেছে কে?

    সে মাথায় বেশ ঢ্যাঙা, ল্যাটা, ডান পা টেনে চলে, পুরু সোলের শিকারের বুট পরে, গায়ে ধূসর আলখাল্লা আছে, নলে ভারতীয় চুরুট লাগিয়ে খায়, পকেটে ভোতা পেনসিলকাটা ছুরি রাখে। এতেই হবে তোমার।

    হেসে ফেলল লেসট্রেড, আদালতে গ্রাহ্য হবে না যা বললেন। কল্পনা দিয়ে কারবার করলে চলে না আমাদের।

    আস্তে আস্তে হোমস বললে, তাহলে তুমি তোমার পদ্ধতিতে কাজ চালাও–আমি চালাই আমার পদ্ধতিতে। সন্ধের ট্রেনে লন্ডন ফিরব ভাবছি।

    সে কী! তদন্ত শেষ না-করেই যাবেন?

    আরে না, শেষ করেই যাব।

    সমস্যার সমাধান?

    সে তো হয়ে গেছে।

    খুনি কে?

    যার বর্ণনা দিলাম।

    তার নাম?

    খুঁজলেই পেয়ে যাবে–খুব একটা লোকজন এ-তল্লাটে নেই।

    দুর মশায়! খোঁড়া ল্যাটার সন্ধানে টো টো করলে হেসে কুটিপাটি হবে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড!

    হোমস শুধু বলল, সূত্র দিয়ে দিলাম আমার কর্তব্যও শেষ হল। এসে গেছে তোমার আস্তানা।

    নেমে গেল লেসট্রেড। আমরা ফিরলাম সরাইখানায়। খেতে বসে বিশেষ কথা বলল না হোমস। মুখ দেখে বুঝলাম, দোটানায় পড়েছে।

    খাওয়া শেষ হল। চুরুট ধরিয়ে হোমস বললে, ওয়াটসন, এ মামলায় দুটো অত্যন্ত আশ্চর্য ব্যাপার শুনে নিশ্চয় তোমার খটকা লেগেছে। এক হল, কু ডাক। দুই, মরবার সময়ে হঁদুর শব্দটা বলা। কু ডাকটা অস্ট্রেলিয়ায় চালু আছে। সেখানে একজন আর একজনকে এইভাবে ডাকে। মি. ম্যাকার্থি যাকে ডেকেছিল, সে-ও তাহলে অস্ট্রেলিয়ায় থাকত। সেখানেই দুজনের পরিচয়। দেখাও করতে গিয়েছিলেন তার সঙ্গে ছেলেকে ডাকেননি।

    ইঁদুর-ইঁদুর করে মারা গেলেন কেন?

    পকেট থেকে একটা কাগজ বার করে টেবিলে বিছিয়ে ধরল হোমস।

    বলল, এই হল ভিক্টোরিয়া কলোনির ম্যাপ। ব্রিস্টলে কাল চিঠি লিখে আনিয়েছি। ম্যাপের এক জায়গা হাত চাপা দিয়ে কী আছে পড়ো তো?

    ARAT হাত তুলে বলল, এবার?

    BALLARAT

    এই নামটাই মরবার আগে বলেছিলেন মি. ম্যাকার্থি–ছেলে শুধু শুনতে পায় শেষটুকু। নামটা নিশ্চয় খুনির।

    অদ্ভুত ব্যাপার তো!

    তিন নম্বর অদ্ভুত ব্যাপার হল সেই ধূসর জিনিসটা–যা একটা আলখাল্লা। তাহলে, ব্যালারাট নামে এক অস্ট্রেলিয়াবাসী গায়ে ধূসর আলখাল্লা চাপিয়ে ডাঙশ মারার মতো পাথর হাঁকিয়ে খুন করে গেছে মি. ম্যাকার্থিকে। পরিষ্কার?

    নিশ্চয়।

    এ-অঞ্চল তার নখদর্পণেও বটে। কেননা লেকে পৌঁছোনোর দুটোই তো কেবল রাস্তা–একটা গোলাবাড়ি থেকে, আর একটা মি. টার্নারের বাড়ি থেকে।

    ঠিক, ঠিক।

    জমি পরীক্ষা করে খুনির দেহের যে-বর্ণনা মাথামোটা লেসট্রেডকে শোনালাম, তুমিও তা শুনেছ।

    শুনেছি ঠিকই, কিন্তু কীভাবে অত খবর জানলে বুঝিনি। কতখানি লম্বা, সেটা না হয় দুটো পায়ের ছাপের মধ্যে ফাঁকটা দেখে আন্দাজ করলে। জুতোর চেহারাও ছাপ দেখে বলা যায়। কিন্তু এক পায়ে খোঁড়া জানলে কী করে?

    ডান পা সবসময়ে আলতোভাবে জমি ছুঁয়ে গেছে–চাপ পড়েনি। পা টেনে চলে বলেই অমন হয়েছে।

    কী করে বললে সে ল্যাটা?

    খুলির পেছনে হাড় কীভাবে গুঁড়িয়েছিল, তুমি জান। চোট লেগেছিল বাঁ-দিক ঘেঁষে। অর্থাৎ বাঁ-হাতে পাথর মেরেছে খুনি। বাপ-বেটায় ঝগড়ার সময়ে গাছের আড়ালে লুকিয়ে চুরুট খেয়েছে আর ছাই ঝেড়েছে। ১৪০ রকম তামাকের ছাই নিয়ে একটা প্রবন্ধ এককালে লিখেছিলাম। তাই ছাই দেখেই বুঝলাম, ইন্ডিয়ান সিগার। কিছুদূরে পেলাম চুরুটের গোড়া–ফেলে দেওয়া হয়েছে।

    নলে লাগিয়ে খাওয়া হয়েছে বুঝলে কী করে?

    গোড়াটায় দাঁতের কামড় নেই–নিশ্চয় নলে লাগানো হয়েছিল। যে-ছুরি দিয়ে কাটা হয়েছে, সেটা ভোতা–কেননা, কাটাটা অসমান।

    বুঝেছি তুমি কার কথা বলছ। খুনি হলেন—

    ঠিক এই সময়ে দরজা খুলে গেল। হোটেলের চাকর একজন আগন্তুককে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বললে, মি, জন টার্নার।

    ভদ্রলোকের চেহারাটা দেখবার মতো। বার্ধক্যের ভারে কাঁধ ঝুলে পড়েছে, পা টেনে টেনে হাঁটছেন, বলিরেখা আঁকা রুক্ষ মুখটি কিন্তু দুর্জয় মনোবলের প্রতিচ্ছবি। দাড়িতে জট, কার্নিশের মতো জটিল ভুরু–খানদানি, শক্তিমান চেহারা। কিন্তু মুখে যেন রক্ত নেই, ঠোট আর নাকের খাঁজ নীল হয়ে এসেছে। নিশ্চয় ছিনেজোঁক রোগের খপ্পরে পড়েছেন দীর্ঘদিন।

    প্রশান্ত কণ্ঠে হোমস বললে, চিঠি পেয়েছেন তাহলে। বসুন।

    আপনি লিখেছেন, কেলেঙ্কারি যদি না-চাই, তাহলে আপনার সঙ্গে যেন দেখা করি।

    নিজে আপনার কাছে যায়নি ওই কারণেই।

    বলুন কেন ডেকেছেন? কথাটা জিজ্ঞেস করলেন বটে, কিন্তু ক্লান্ত আর হতাশ চোখ দেখে মনে হল জবাবটা তিনি জানেন।

    চোখে চোখে চেয়ে হোমস বললে, ম্যাকার্থি ঘটিত সব ব্যাপার আমি জানি!

    দুই করতলে মুখ লুকিয়ে গুঙিয়ে উঠলেন বৃদ্ধ টার্নার।

    বললেন জড়িত স্বরে, কিন্তু জেমসের সর্বনাশ হতে আমি দেব না। যদি দেখি বিনা পাপে তার শাস্তি হচ্ছে, ঠিক করেই রেখেছি সব কবুল করব।

    শুনে খুশি হলাম।

    এতদিন কবুল করিনি মেয়েটার কথা ভেবে। বুক ভেঙে যাবে আমার গ্রেপ্তার হওয়ার কথা শুনলে।

    কিন্তু অতদূর জল গড়ালে তো। তার মানে?

    দেখুন মশায়, আমি সরকারের নুন খাই না। এ-কেসে নাক গলিয়েছি স্রেফ আপনার মেয়ের পীড়াপীড়িতে। আপনার মেয়ে যা চায়, আমিও তাই চাই–জেমসের গায়ে যেন আঁচ না-লাগে।

    মি. হোমস, বহুমূত্র রোগে আমি শেষ হয়ে এসেছি–বড়োজোর আর মাসখানেক আমার আয়ু। মৃত্যুটা বাড়িতেই হোক, এই আমি চাই জেলে যেন না হয়।

    কলম আর কাগজ নিয়ে হোমস বললে, আপনি বলুন কী করেছিলেন, আমি লিখে নিচ্ছি। সাক্ষী ওয়াটসন। জেমসকে যদি কোননামতেই আর বাঁচানো না-যায়, শুধু তখনই প্রকাশ করব এই স্বীকারোক্তি।

    শুধু দেখবেন, অ্যালিস যেন এই ঘটনা শুনে কষ্ট না-পায়। অবশ্য মামলা শেষ হওয়ার আগেই আমি শেষ হয়ে যাব।

    এই ম্যাকার্থি শয়তানটাকে আপনারা কেউই চেনেন না। গত বিশ বছর ধরে সে আমার জীবন বিষিয়ে তুলেছিল।

    ষাট দশকের গোড়ার দিকে আমরা ডাকাতি করতাম। রক্ত তখন গরম। অসৎ সংসর্গে মিশে ছ-জনের দল গড়লাম। চলন্ত গাড়ি থামিয়ে লুঠতরাজ করেছি, আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে ছিনতাই করেছি। ব্যালারাটের পাষণ্ড জ্যাকের নাম শুনলে শিউরে উঠত ওখানকার মানুষ।

    একদিন একটা সোনাভরতি গাড়ি লুঠ১৭ করলাম। ছ-জন পাহারাদারের চারজনকে আমরা খতম করলাম–ওরা খতম করল আমাদের তিনজনকে। ড্রাইভারের কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে গাড়ি দাঁড় করালাম–সে কিন্তু আমাকে খুঁটিয়ে দেখে নিয়েছিল। উচিত ছিল মাথাটা তখনই উড়িয়ে দেওয়া।

    এই লোকটাই হল ম্যাকার্থি। অত সোনা পেয়ে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে দল ভেঙে দিলাম। আর কুকাজ নয়, এবার সৎকাজে পুরানো পাপের প্রায়শ্চিত্ত করব–এই মনস্থ করে দেশে ফিরলাম, জমিজায়গা কিনলাম, বিয়ে করলাম, মেয়ে হল। স্ত্রীর মৃত্যুর পর এই মেয়েই আমাকে সৎপথে টেনে রেখেছে–ছন্নছাড়া হতে দেয়নি।

    এই সময়ে একদিন শহরে দেখা হয়ে গেল ম্যাকার্থির সঙ্গে। অবস্থা রাস্তার কুত্তার মতো। দেখিয়ে সে আমার সবচেয়ে ভালো জমি বিনা ভাড়ায় ভোগ করতে লাগল, টাকাপয়সা যখন-তখন চেয়ে নিত। নইলে পুলিশকে খবর দেবে–এই হুমকি দিয়ে চলল সমানে। জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠল আমার। অ্যালিস বড়ো হওয়ার পর তার নিগ্রহের মাত্রা ছাড়িয়ে গেল। অ্যালিস পাছে আমার অতীতের দুষ্কর্ম জেনে ফেলে, এই ভয়ে আমি সিটিয়ে থাকি দেখে একদিন চেয়ে বসল অ্যালিসকেই।

    কিন্তু এইবার আমি বেঁকে বসলাম। ওর নোংরা রক্ত আমার রক্তের সঙ্গে মিশবে, এ কখনোই হতে পারে না। তা ছাড়া ওর উদ্দেশ্য আমার সর্বস্ব গ্রাস করা। আমার আয়ু যে ফুরিয়ে এসেছে, সে-খবর ও জানত। জেমস ছোকরার ওপর আমার কিন্তু বিতৃষ্ণা নেই কিন্তু হাজার হলেও শয়তান ম্যাকার্থির ছেলে সে।

    তাই ঠিক করলাম বোঝাঁপড়া করা যাক। হ্রদের পাড়ে দেখা করার ব্যবস্থা হল। গিয়ে দেখি ছেলের সঙ্গে তর্ক হচ্ছে ম্যাকার্থির। আড়ালে দাঁড়িয়ে চুরুট খেতে লাগলাম। শুনলাম, ছেলেকে বোঝাচ্ছে আমার মেয়েকে বিয়ে করার জন্যে। এমনভাবে খেপাচ্ছে জেমসকে যেন আমার মেয়ে একটা বাজারের মেয়ে। শুনতে শুনতে অন্তরাত্মা পর্যন্ত বিষিয়ে উঠল। মাথার মধ্যে আগুন জ্বলে উঠল। আমার দিন তো ফুরিয়ে এসেছে। কিন্তু এই শয়তান বেঁচে থাকলে যে আমার জীবনে সুখ শান্তি কিছুই থাকবে না। ভাবতে গিয়ে মাথায় রক্ত চড়ে গেল। ঠিক করলাম, আর না। ওকে খতমই করব।

    তাই ওকে খুন করলাম মাথায় পাথর মেরে। মরণ-চিৎকার শুনে জেমস এসে পড়বার আগেই পালিয়ে গেলাম। কিন্তু আবার ফিরে আসতে হল ফেলে যাওয়া আলখাল্লাটা নিয়ে যাওয়ার জন্যে।

    হোমস সব লিখে নিল, ম্যাকার্থিকে দিয়ে সই করিয়ে নিল।

    তারপর বললে, আপনার বিচারের আয়োজন হচ্ছে ওপরকার বড়ো আদালতে –এ-আদালতে তাই এই স্বীকারোক্তি আমি আর পেশ করব না। কিন্তু যদি দেখি বিনা দোষে সাজা পেতে যাচ্ছে জেমস, তাহলে তাকে বাঁচানোর শেষ উপায় হিসেবে এই স্বীকারোক্তি আমি কাজে লাগাব। তদ্দিন এ-লেখা আমার কাছেই থাকবে। আপনার মৃত্যুর পরেও থাকবে। কেউ জানবে না।

    আঃ, বাঁচালেন। এবার আমি শান্তিতে মরতে পারব, বলে পা টেনে টেনে স্খলিত চরণে নিষ্ক্রান্ত হলেন বিশালদেহী বৃদ্ধ টার্নার।

    আদালতে স্বীকারোক্তি পেশ করার আর দরকার হয়নি–অন্যান্য প্রমাণের জোরে জেমসকে। খালাস করে আনে হোমস। মি. টার্নার এখন পরলোকে। আশা করি তার মেয়েকে নিয়ে সুখে ঘরকন্না করছে জেমস। আজও জানে না ওরা, কী কুটিল ছায়ায় একদিন অন্ধকার হয়ে এসেছিল তাদের অতীত জীবন।

     

    ————-

    টীকা

    ১. বসকোম বা বসকম্ব ভ্যালির প্রহেলিকা : বসকম্ব ভ্যালি মিস্ত্রি প্রথম প্রকাশিত হয় অক্টোবর ১৮৯১ সংখ্যার স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিনে।

    ২. টেলিগ্রামটা : ১৮৭৬ সালে লন্ডনে টেলিফোন ব্যবস্থা প্রচলিত হলেও টেলিগ্রামের জনপ্রিয়তা কমেনি। তখনও, ব্যাটারি, তামার তার, ম্যাগনেটিক সূচ প্রভৃতি সহযোগে তৈরি টেলিগ্রাফ যন্ত্র ১৮৩৭ সালে প্রবর্তন করেন স্যার উইলিয়াম কুক এবং চার্লস হুইটস্টোন। আমেরিকায় স্যামুয়েল মর্স তার আলাদা যন্ত্র এবং বর্ণমালার কোড প্রচলন করেন আরও সাত বছর পরে, ১৮৪৪-এ।

    ৩. স্ত্রীকে : ড. ওয়াটসনের এই স্ত্রী আবশ্যিকভাবে দ্য সাইন অব ফোর উপন্যাসের নায়িকা মেরি মাসটন।

    ৪. বসকোম ভ্যালি : বাস্তবে এই নামে কোনো শহর বা অঞ্চল ইংলন্ডে নেই। এটি লেখকের কল্পনাপ্রসূত।

    ৫. প্যাডিংটন : ইংলন্ডে যাত্রীবাহী রেলগাড়ি প্রথম চালু হয় ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে। গ্রেট ওয়েস্টার্ন রেলওয়েজের প্রান্তিক স্টেশন হিসেবে পাডিংটন স্টেশন নির্মিত হয় ১৮৩৮-এ। নির্মাতা-স্থপতি ইসামবার্ড কিংডম ব্রুনেল। রানি ভিক্টোরিয়া তার প্রথম রেলভ্রমণ শেষ করেছিলেন এই স্টেশনে।

    ৬. ট্রেনে : ১৮৩০-এ রেলপথে যাত্রী পরিবহন শুরু হওয়ার পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য উইলিয়ম হাসকিন ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান। সেটিই সম্ভবত প্রথম রেল দুর্ঘটনা। ১৮৪৮-এ ইংলন্ডে মোট রেলপথের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০০০ মাইল। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০০০ মাইলে।

    ৭. অস্ট্রেলিয়া : সেই সময়ে অস্ট্রেলিয়া ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত। অস্ট্রেলিয়ান কলোনিজ গভর্নমেন্ট অ্যাক্ট প্রণীত হয় ১৮৫০-এর অগাস্ট মাসে। সেই আইন মোতাবেক নিউ সাউথ ওয়েলস, ভিক্টোরিয়া, সাউথ অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়া, কুইন্সল্যান্ড এবং টাসমানিয়া স্বশাসিত কলোনি হিসেবে চিহ্নিত হয়।

    ৮. করোনার : ইংলন্ডের আইনে যেকোনো অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত করেন করোনার। তাকে সাহায্য করেন বারোজন জুরি। এই কাজের প্রয়োজনে করোনার সাক্ষ্যগ্রহণ করেন এবং নিজেই সাক্ষীদের প্রশ্ন করতে পারেন।

    ৯. সুইনডন : গ্রেট ওয়েস্টার্ন রেলওয়েজের যেকোনো ট্রেনকে সুইনডন স্টেশনে দশ মিনিট দাঁড়াতে হত। ১৮৯৫-এ এই প্রথা তুলে দেওয়া হয়।

    ১০. লেসট্রেড : এই গল্পের আগে প্রকাশিত উপন্যাসে লেসট্রেড হাজির থাকলেও স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিনে প্রকাশিত কোনো কাহিনিতে এটাই লেসট্রেড-এর আবির্ভাব।

    ১১. ভিক্টোরিয়ায় : ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে ভিক্টোরিয়া নামে একাধিক অঞ্চল, শহর, রাজধানী, পর্বতশৃঙ্গ ইত্যাদি থাকলেও এই ভিক্টোরিয়াকে অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত কলোনিয় হিসেবেই ধরে নিতে হবে।

    ১২. সোনার খনি : ভিক্টোরিয়ায় সোনার খনি আবিষ্কৃত হয় ১৮৫০-এ। এর ফলে মাত্র চার বছরে এই কলোনির জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় প্রায় চারগুণ।

    ১৩. একপাল মোষ এলেও : পায়ের ছাপ নষ্ট হওয়ার কারণে এই উপমা হোমসকে অন্যত্র অনেক কাহিনিতে ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে। আ স্টাডি ইন স্কারলেট-এ একথা বলেছিলেন শার্লক হোমস।

    ১৪. BALLARAT: মেলবোর্নের পঁচাত্তর মাইল পশ্চিমে অবস্থিত ব্যালারাটে সোনার খনি আবিষ্কৃত হয় ১৮৫১ সালে। আবিষ্কার করেন জন ডানলপ নামে এক স্বর্ণসন্ধানী।

    ১৫. এই নামটাই : অন্য নামও হতে পারত। লেখক খেয়াল করেননি, অস্ট্রেলিয়ায় ARARAT (আরারাত) নামেও একটি শহর আছে।

    ১৬. বহুমূত্র রোগ : ডায়াবেটিস মেলিটাস বা বহুমূত্র রোগ একটি মারাত্মক এবং প্রাণান্তকারী রোগ হিসেবে বিবেচিত হত।

    ১৯২১-এ ইনসুলিন আবিষ্কার হওয়ায় এর প্রতিষেধক পাওয়া যায়।

    ১৭. সোনাভরতি গাড়ি লুঠ : এই ঘটনার সঙ্গে দুটি বাস্তব সোনা লুঠের ঘটনার মিল লক্ষ করা গিয়েছে। প্রথমটি, ১৮৫৩-র ম্যাকআইভর গোল্ড রবারি, অন্যটি, ইউগোরা এসকর্ট রবারি, ঘটেছিল ১৮৬২-তে। দুটি ঘটনাতেই ছ-জন প্রহরী এবং দু-জন ডাকাতের মধ্যে গুলির লড়াই হয়েছিল বলে জানা যায়।

    ১৮. ওপরকার বড়ো আদালতে : হোমস লেসট্রেডকে টার্নারের চেহারার বিবরণ দিলেও, লেসট্রেডের তাকে ধরতে না-পারার বিষয়টি বেশ আশ্চর্যজনক মনে করেছেন বেশ কিছু হোমস-গবেষক। তা ছাড়া একজন খুনে ডাকাতকে ছেড়ে দিয়ে হোমস উচিৎ কাজ করেননি–মনে করেন অনেকে।

    ১৯. আজও জানে না ওরা : ড. ওয়াটসনের এই কাহিনি স্ট্যান্ডে প্রকাশিত হওয়ার পর জেমস আর অ্যালিস নিশ্চয়ই আসল ঘটনা জানতে পেরেছিল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ – আরিফ আজাদ
    Next Article শার্লক হোমস সমগ্র ১ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }