Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শার্লক হোমস সমগ্র ২ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    লেখক এক পাতা গল্প1414 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    পাণ্ডুলিপির প্যাঁচ

    [ দি অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্য থ্রি গেবলস ]

    থ্রি গেবলস-এর কাহিনি যেরকম অতর্কিত এবং নাটকীয়ভাবে শুরু হয়েছে, শার্লক হোমসের কোনো কাহিনি সেভাবে আরম্ভ হয়নি।

    হোমসের সঙ্গে দিনকয়েক মোলাকাত হয়নি বলে জানা ছিল না কী কী রহস্য নিয়ে সম্প্রতি ও মাথা ঘামাচ্ছে। সকালের দিকে তাই ফায়ার প্লেসের দু-পাশে দুটো চেয়ারে বসে ছিলাম দুজনে। হোমসের মুখে ধূমায়িত পাইপ। এমন সময়ে যেন একটা খ্যাপা ষাঁড় হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়ল।

    একটা নিগ্রো। পরনে চোখ ধাঁধানো চেক কোট। জ্বলজ্বলে টাই। চওড়া মুখ আর ধ্যাবড়া নাক সামনে ঠেলে বিষ মাখানো চোখে কটকট করে পর্যায়ক্রমে আমাদের দেখে নিয়ে বললে দাঁতে দাঁত পিষে, মাসার হোমস কে?

    স্মিত মুখে পাইপটা হাতে নিল হোমস।

    ওঃ, আপনি! টেবিল ঘুরে ভয়াবহ ভঙ্গিমায় এগিয়ে এল দানব নিগ্রো, মাসার হোমস, নিজের চরকায় তেল দিন–অন্যের ব্যাপারে কাঠি দিতে যাবেন না, বুঝেছেন?

    বলে যাও, ফাইন হচ্ছে।

    ফাইন হচ্ছে? হিংস্র কণ্ঠে গর্জে উঠল বর্বর কৃষ্ণকায়। ফাইন আর থাকবেন না আমি হাত লাগালে–একটু ঝেড়ে দিলেই বুঝবেন ঠেলাটা।

    বলে, গাঁটওলা প্রকাণ্ড থাবার মতো ঘুসি নাড়তে লাগল হোমসের নাকের ডগায়।

    খুঁটিয়ে ঘুসিটা দেখল হোমস। বলল, পেট থেকে পড়েই এমনি ঘুসি পেয়েছ না, আস্তে আস্তে বাগিয়েছ?

    ফায়ার প্লেস খুঁচোনোর লোহার ডান্ডাটা তুলে নিতে গিয়ে শব্দ করেছিলাম বলেই, না, হোমসের হিমশীতল আচরণের জন্যে কিনা জানি না, নিগ্রো দর্শনার্থীর উগ্রতা স্তিমিত হল যৎসামান্য।

    বললে, হ্যারোর পথ মাড়াবেন না–হুঁশিয়ার করে গেলাম। আইন আমি এই হাত দিয়ে বানাই–পিণ্ডি চটকে ছাড়ব।

    তোমার গায়ে বড়ো গন্ধ। অনেকদিন ধরেই খুঁজছিলাম, তোমার নামই তো কালসিটে ফেলনেওয়ালা স্টিভ ডিক্সি?

    হ্যাঁ, আমিই স্টিভ ডিক্সি। চুমু খেয়েছেন কি মরেছেন।

    পাগল, ওই জিনিসটা মরে গেলেও তোমাকে কেউ দেবে না। হলবর্ন পার্কে পার্কিন্স ছোকরার খুন হওয়ার ব্যাপারে ও কী! চললে নাকি?

    তড়াক করে লাফিয়ে পেছিয়ে গিয়ে ছাইয়ের মতো ফ্যাকাশে মখে চেঁচিয়ে উঠল নিগ্রো দৈত্য, মাসার হোমস! মাসার হোমস! পার্কিন্স নিজেই ঝঞ্জাট পাকিয়েছিল, আমি তো ট্রেনিং দিচ্ছিলাম কিন্তু তার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক?

    ম্যাজিস্ট্রেটকে বলো সে-কথা। তোমাকে আর বার্নে স্টকডেলকে সেইদিন থেকেই চোখে চোখে রেখেছি আমি।

    মাসার হোমস, রক্ষে করুন—

    বেরোও!

    যাই মাসার হোমস। রাগ করলেন না তো?

    কে পাঠিয়েছে তোমাকে?

    যার নাম এইমাত্র করলেন।

    তাকে কে হুকুম করেছে?

    তা তো জানি না। বার্নে আমাকে বলল–যা, মাসার হোমসকে একটু ভেঁটে দিয়ে আয়। হ্যারো মাড়ালেই জানে খতম হয়ে যাবে বলে চলে আয়। তাই এসেছিলাম।

    বলতে বলতে আবার ঠিক খ্যাপা ষাঁড়ের মতো চক্ষের নিমেষে ঘর থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল স্টিভ ডিক্সি। খুক খুক করে হেসে উঠে পাইপ থেকে ছাই ঝাড়ল হোমস।

    ডাহা ভীতু, কত সহজে কবজায় আনলাম দেখলে। যেভাবে ডান্ডা বাগিয়ে ধরে ছিল–বেচারার খুলি পাউডার হয়ে যেত আমি না-থাকলে। স্টিভ হল স্পেনসার জন গুন্ডাবাহিনীর মেম্বার–ওর গুরু বার্নের কলজে এর চাইতে মজবুত। টাকা খেয়ে হুমকি দেওয়া আর মারপিট করাই এদের ব্যাবসা!

    তোমার পেছনে কেন?

    হ্যারো উইল্ড কেসে পাছে হাত দিই–এই ভয়ে। এই ঘটনার পর হাত দেবই। নিশ্চয় লটঘট ব্যাপার কিছু আছে, নইলে বাড়ি পর্যন্ত চড়াও হত না।

    কেসটা কী?

    এই চিঠিখানা পড়লেই বুঝবে। ইচ্ছে থাকলে চল দুজনে ঘুরে আসি।

    চিঠিখানা এই :

    প্রিয় মিস্টার শার্লক হোমস,

    এ-বাড়িতে পর-পর এমন অনেক অদ্ভুত ব্যাপার ঘটেছে যে আপনার পরামর্শ আমার একান্তই দরকার। কালকে যেকোনো সময়ে বাড়িতেই পাবেন আমাকে। উইল্ড স্টেশন থেকে একটু দূরেই আমার বাড়ি। আমার স্বর্গত স্বামী মর্টিমার মেবারলি আপনার মক্কেল হয়েছিল এক সময়ে।

    আপনার বিশ্বস্ত
    মেরি মেবারলি
    থ্রি গেবলস, হ্যারো উইল্ড

    ট্রেনে চেপে আর সামান্য পথ একটা ঘোড়ার গাড়িতে পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গেলাম ইট কাঠ দিয়ে তৈরি বিষণ্ণ চেহারার বাড়িটার সামনে। পেছনে পাইন, সামনে অযত্নবর্ধিত ঘাস। সামনের জানলাগুলোর ওপরে তিনটে খোঁচা ঠেলে বেরিয়ে রয়েছে থ্রি গেবলস নামটার কিছুটা সার্থকতা শুধু সেইখানেই। বাড়ির ভেতরটা কিছু ভালো ভালো ফার্নিচারে ঠাসা। গৃহকত্রীও বেশ মার্জিত। প্রৌঢ়া মহিলা।

    হোমস বললে, আপনার স্বামীর সঙ্গে ছোট্ট একটা ব্যাপারে যোগাযোগ ঘটেছিল বটে।

    ভদ্রমহিলা বললেন, আমার ছেলে ডগলাসের নামও নিশ্চয় শুনেছেন?

    ডগলাস! লন্ডনের সবাই শুনেছে ও-নাম। দারুণ মানুষ! কোথায় তিনি?

    স্বর্গে। রোমে চাকরি করতে করতেই নিউমোনিয়ায় মারা গেছে গতমাসে।

    সেকী! এ-রকম তাজা প্রাণবন্ত মানুষটা… ভাবাও যায় না! ক্ষণজন্মা পুরুষ। স্বল্প জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত প্রচণ্ড তেজের সঙ্গে যাপন করে গেল।

    বড়ো বেশি তেজের সঙ্গে, মিস্টার হোমস। তাই ভেঙে পড়ল শেষের দিকে–বুক ভেঙে গেল–দেখলে আর চিনতেও পারতেন না।

    ভালোবাসার ব্যাপার?

    হ্যাঁ–এক শয়তানির সঙ্গে–পিশাচিনীর সঙ্গে। যাক গে, ছেলের কথা বলতে আপনাকে আনাইনি।

    বলুন কী সমস্যা।

    আমি এই বাড়িটা কিনেছি বছরখানেক আগে। অবসর জীবনযাপন কবর বলে পাড়া প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখিনি। তা সত্ত্বেও অনেক অদ্ভুত ব্যাপার ঘটছে এই বাড়ি ঘিরে। তিনদিন আগে একজন বাড়ির দালাল এসে এই বাড়ি কিনতে চাইল তার এক মক্কেলের জন্যে। আমি তো অবাক। এ তল্লাটে পাকাবাড়ি অনেক রয়েছে–তা সত্ত্বেও আমার বাড়ি কেন? যাই হোক, দেশভ্রমণের খুব ইচ্ছে আমার। তাই পাঁচশো পাউন্ড দর চড়িয়ে একটা দাম হাঁকলামসঙ্গেসঙ্গে রাজি হয়ে গেল দালালটা। তারপর বললে, বাড়ির মধ্যে যা কিছু আছে, সব রেখে যেতে হবে তার দামও দেওয়া হবে। ফার্নিচারগুলো ভালোই। তাই মোটা দর হাঁকলাম। রাজি হয়ে গেল লোকটা। এত টাকা একসঙ্গে হাতে পেলে শেষ জীবনটা নিশ্চিন্তভাবে কাটবে ভেবে বেশ আনন্দ হল।

    গতকাল সকালে দলিলের খসড়া রেখে গেল দালাল। আমার উকিল মিস্টার সত্রো এই অঞ্চলেই থাকেন। দলিল দেখেই তিনি বললেন–বড়ো অদ্ভুত শর্ত দেখছি। এতে সই করলে বাড়ির মধ্যে থেকে খড়কুটো পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবেন না আপনি।

    রাত্রে দালাল এলে বললাম, একী ব্যাপার। আমি তো শুধু ফার্নিচার বিক্রি করব। লোকটা বললে, তা হয় না। মক্কেলের বাতিক বড়ো বিদঘুটে। সব রেখে যেতে হবে। আমি বললাম–তাই কি হয়? আমার গয়নাগাটি কাগজপত্র। দালাল বললে–ঠিক আছে। ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে যেতে পারেন কিন্তু যাওয়ার সময়ে সব দেখিয়ে যেতে হবে। আমি খেপে গিয়ে বললাম তাহলে বাড়ি বেচব না। লোকটা গেল, আমিও ভাবনায় পড়লাম। এ-রকম অদ্ভুত কাণ্ড—

    এই পর্যন্ত শোনবার পর অদ্ভুত একটা বাগড়া পড়ল।

    নিঃশব্দে হাত তুলে মিসেস মেবারলিকে নিরস্ত করল হোমস। মার্জার চরণে হেঁটে গেল দরজার কাছে। এক ঝটকায় পাল্লা খুলে মস্ত চেহারার হাড়সর্বস্ব একটি স্ত্রীলোককে ঘাড় খামচে ধরে এমনিভাবে হিড় হিড় করে টেনে আনল যেন খাঁচা থেকে মুরগি বার করছে–স্ত্রীলোকটাও। ঝটপট করতে লাগল খাঁচা থেকে টেনে আনা মুরগির মতোই।

    একী। একী হচ্ছে! ছাড়ুন বলছি!

    সুশান! ওখানে কী করছিলে?

    এঁরা লাঞ্চ খাবেন কি না জিজ্ঞেস করতে আসছি, অমনি এই ভদ্রলোক—

    হোমস বললে, পাঁচ মিনিট ধরে তোমার সোঁ-সোঁ করে নিশ্বেস নেওয়ার শব্দ আমি শুনেছি সুশান।

    সুশানের মুখের রং পালটে গেল এই কথায়। তা সত্ত্বেও তেড়ে উঠে বললে, আমার ঘাড় আপনি ধরার কে?

    ধরেছি সামনাসামনি একটা জিনিস ভজিয়ে নেব বলে। মিসেস মেবারিল, আপনি আমাকে চিঠি লিখে ডেকে পাঠিয়েছেন–এ-কথা কাউকে বলেছেন?

    না।

    চিঠি ডাকবাক্সে কে ফেলেছিল?

    সুশান।

    সুশান, চিঠির কথা তুমি কাকে জানিয়েছিলে?

    কাউকে না।

    সোঁ-সোঁ করে যারা নিশ্বেস নেয়, তারা বেশিদিন বাঁচে না, সুশান। কেন মিথ্যে বলছ?

    সুশান, গর্জে উঠলেন মিসেস মেবারলি, আমি নিজের চোখে দেখেছি ঝোঁপের আড়ালে কার সঙ্গে যেন কথা বলছিলে।

    সে অন্য কথা, বেপরোয়া সুর সুশানের। আমার ব্যাপার—

    যাকে বলছিলে তার নাম বার্নে স্কটডেল, বলল হোমস।

    জানেনই তো জিজ্ঞেস করছেন কেন?

    সঠিক জানতাম না–এখন জানলাম। দশ পাউন্ড দোব সুশান–বলে ফেলো বার্নেকে কে পাঠিয়েছে।

    যে পাঠিয়েছে সে আপনার এক একটা দশ পাউন্ডের বদলে হাজার পাউন্ড দিতে পারে।

    এতই টাকার জোর ভদ্রলোকের? ভদ্রলোক নন–মিটিমিটি হাসছ দেখছি–ভদ্রমহিলা। যাক, অনেক কথাই তো বললে, এবার নামটা বলো–দশ পাউন্ড নিয়ে যাও।

    জাহান্নমে যান।

    সুশান, মুখ সামলে কথা বলো! কড়া গলা মিসেস মেবারলির।

    আপনার চাকরির কথায় আগুন! ঢের সয়েছি, আর না–চললাম। কাল লোক পাঠিয়ে দোব–আমার জিনিসপত্র দিয়ে দেবেন। বলেই দরজার দিকে ছিটকে গেল সুশান।

    গুডবাই সুশান–দরজা বন্ধ হয়ে যেতেই সহজ সুরে হোমস বললে, কত তাড়াতাড়ি গুন্ডার দলটা কাজ চালিয়ে গেছে দেখুন; আপনার চিঠিতে ডাকঘরের ছাপ পড়েছে রাত দশটায় আমার কাছে এদের শাসানি পৌঁছে গেছে আজ সকাল এগারোটায়। এইটুকু সময়ের মধ্যেই সুশান খবর পাঠিয়েছে নাটের গুরু সেই ভদ্রমহিলাকে–ভদ্রমহিলাই বলব, কেননা ভদ্রলোক বলায় সুশান ফিক করে হেসে ফেলেছিল আমিও গোড়ায় গলদ করছি দেখে। ভদ্রমহিলা ব্ল্যাক স্টিভকে পাঠিয়েছেন আমাকে ভয় দেখিয়ে সরিয়ে দিতে।

    কিন্তু ওরা চায় কী?

    সেইটাই তো প্রশ্ন। এ-বাড়ি আগে কার ছিল?

    একজন রিটায়ার্ড সী-ক্যাপ্টেনের।

    ভদ্রলোক সম্বন্ধে আশ্চর্য কোনো খবর জানেন?

    আমি অন্তত জানি না।

    কোথাও কিছু লুকিয়ে রাখেনি তো! আজকাল অবশ্য গুপ্তধন রাখতে হলে পোস্টঅফিসের বাস্কেই রাখা হয়। তবে কিছু পাগল-ছাগল আছে লুকিয়ে-চুরিয়ে কিছু করতে না-পারলে ঘুম হয় না। কিন্তু গুপ্তধনই যদি হবে তো ফার্নিচার নিতে চাইবে কেন? নিশ্চয় র‍্যাফেলের ছবি বা শেক্সপিয়রের পাণ্ডুলিপি এখানে নেই?

    মোটেই না। ক্রাউন ডার্বি টি সেট ছাড়া আর কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না।

    সেজন্যে এত ঝঞ্জাট পাকিয়ে রহস্য সৃষ্টির সার্থকতা থাকে না। টি-সেটই যদি দরকার হবে তো সোজাসুজি বললে পারত? সরাসরি দাম হেঁকে শুধু ওই বস্তুটাই কিনতে চাইত। বাড়িসুদ্ধ জিনিস নিতে যাবে কেন? মিসেস মেবারলি, আমার মনে হয় ওরা এমন একটা জিনিসের দখল চায় যেটা আপনি জানেন না আপনার কাছে আছে–জানলে প্রাণ গেলেও হাতছাড়া করবেন না।

    আমারও তাই মনে হয়। বললাম আমি।

    ডাক্তার ওয়াটসন একমত আমার সঙ্গে।

    জিনিসটা তাহলে কী হতে পারে, মিস্টার হোমস? শুধোন মিসেস মেবারলি।

    দেখাই যাক না মানসিক গবেষণা করে তার হদিশ পাওয়া যায় কি না। এ-বাড়িতে এক বছর আছেন?

    প্রায় বছর দুয়েক।

    আরও ভালো। এতদিনে কেউ আপনার কাছে কিছু চায়নি–হঠাৎ তিন চার দিনের মধ্যে উঠল বাই তো কটক যাই অবস্থা হল–জিনিসটা ভীষণ তাড়াতাড়ি দরকার। কী মনে হয় এতে?

    জিনিসটা খুব সম্প্রতি বাড়িতে এসেছে, বললাম আমি।

    আবার একমত হওয়া গেল ডাক্তারের সঙ্গে। বললে হোমস। মিসেস মেবারলি, দিন কয়েকের মধ্যে নতুন কী জিনিস এ-বাড়িতে পৌঁছেছে?

    কিছু না। এ-বছর নতুন কিছুই কিনিনি।

    তাই নাকি! ভারি আশ্চর্য ব্যাপার তো! তাহলেও গবেষণা চালিয়ে যাওয়া যাক। আপনার এই উকিল ভদ্রলোক খুব কাজের লোক?

    খুবই।

    সুশান ছাড়া আপনার আর কোনো ঝি আছে?

    একটা বাচ্চা মেয়ে আছে।

    মিস্টার সুত্রোকে দু-এক রাত এ-বাড়িতে থাকতে বলুন। আপনাকে আগলানো দরকার!

    কার খপ্পর থেকে?

    এখনও জানা নেই–ওদের উদ্দেশ্য কী বুঝতে পারলে সেইদিক থেকে নাটের গুরুর হদিশ বার করে ফেলতাম। দালালটার ঠিকানা কী?

    কার্ডেতে শুধু নাম আর পেশা লেখা আছে। হেন্স-জনসন, নিলামদার।

    ডিরেক্টরি হাঁটকেও ঠিকানা পাব না। সৎ কারবারিরা কখনো কারবারের ঠিকানা লুকিয়ে রাখে না। মিসেস মেবারলি, নতুন কিছু ঘটলে জানাবেন–আমি রইলাম আপনার পেছনে।

    হল ঘরের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসবার সময়ে শ্যেনচক্ষু হোমসের নজরে পড়ল এক কোণে বেশ কিছু ট্রাঙ্ক আর কাঠের বাক্স তাগাড় করা হয়েছে। হোমসের চোখ এড়ায় না কিছুই।

    বলল, বাক্সর গায়ে দেখছি মিলানো, লুসারেনে লেখা রয়েছে? ইটালি থেকে এসেছে।

    ডগলাসের জিনিসপত্র।

    এখনও খোলেননি? কদ্দিন এসেছে?

    দিন সাতেক।

    সেকী! আপনি যে বললেন দিনকয়েকের মধ্যে কিছুই আসেনি বাড়িতে। নিশ্চয় এর মধ্যে দামি জিনিস কিছু আছে যার জন্যে লোক লেগেছে আপনার পেছনে।

    দামি জিনিস কী আর থাকবে বলুন। ডগলাস মাইনে পেত সামান্যই।

    একটু ভাবল হোমস। বলল, আর দেরি করবেন না। সব জিনিস ওপরতলায় আপনার শোবার ঘরে নিয়ে যান। খুলে দেখুন কী আছে। আমি কাল আসছি।

    থ্রি গেবলস-কে যে খর নজরে রাখা হয়েছে, হাতেনাতে তার প্রমাণ পেলাম রাস্তায় বেরোতেই। মোড়ের মাথায় গাছের ছায়ায় ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকা দানব নিগ্রোর সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে গেলাম আচমকা। সঙ্গেসঙ্গে পকেটে হাত দিল হোমস।

    মাসার হোমস কি পিস্তল বার করছেন?

    না হে; সেন্টের শিশি বার করছি।

    আপনি বড়ো মজার লোক, মাসার হোমস।

    স্টিভ, আমি যদি তোমার পেছনে লাগি, খুব বেশি মজা আর পাবে না। সকালে সাবধান করেছি, খেয়াল নেই দেখছি।

    খুব খেয়াল আছে মাসার হোমস। সেইজন্যেই তো এসেছি আপনার কাজে লাগতে মাসার পার্কিন্সের ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে নয়।

    তাহলে বলো তো বাপু কে তোমাদের এ-কাজে নামিয়েছে?

    মাসার হোমস, ভগবানের দিব্যি আমি জানি না। বার্নির হুকুমে নেমেছি–এর বেশি জানি।

    স্টিভ, মনে থাকে যেন ও-বাড়ির ভদ্রমহিলা আর সব কিছুর দেখাশুনার ভার এখন আমার ওপর।

    মনে থাকবে, মাসার হোমস।

    কিছু দূরে এসে হোমস বললে, পালের গোদাটির নাম জানা থাকলে ব্ল্যাক স্টিভ এখন তার সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করে বসত। স্পেনসার জনের দলের লোকজনদের মতিগতি আমি জানি। ওয়াটসন, এ-কেসে ল্যাঙ্গডেল স্পাইকের সাহায্য দরকার। চললাম সেইখানে।

    আমি বলছি, মিস্টার হোমস। যদিও বলবার মতো তেমন কিছু নেই।

    সারাদিন আর টিকি দেখা গেল না হোমসের। আমি জানি ও যার কাছে গেছে, তার কাছ থেকে শহরের নোংরা কেলেঙ্কারির কিছু খবর ও আনবেই। ল্যাঙ্গলে স্পাইক লোকটা চার অঙ্কের মোটা টাকা রোজগার করে পত্রিকায় ফি হপ্তায় কদর্য কুৎসা পরিবেশন করে। এ-ব্যাপারে একযোগে সে রিসিভার এবং ট্রান্সমিটার। হোমস তার কাছে কেলেঙ্কারি কাহিনি মাঝে মাঝে পৌঁছে দেয়–বিনিময়ে নতুন খবর সংগ্রহ করে। কেলেঙ্কারি কাহিনির এহেন ডিপো থেকে রিক্তহস্তে যে সে ফেরেনি, তা বুঝলাম পরের দিন সকালে দেখা হওয়ার পর হাবভাব দেখে। কিন্তু তার পরেই এল টেলিগ্রামের আকারে একটা বিরাট বিস্ময় :

    এখুনি আসুন। মক্কেলের বাড়িতে রাতে চোর পড়েছিল। পুলিশ এসেছে।

    শিস দিয়ে উঠল হোমস, দেখলে তো ওয়াটসন, নাটকের গুরুটি বেশ করিতকর্মা ব্যক্তি। তোমাকে ওখানে রাত কাটাতে না-বলে খুব ভুল করেছি–সুত্রো লোকটা কোনো কাজের নয়। যাক গে, নাটক যখন ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছেছে, তখন হীরো উইন্ডে আবার না-গেলেই নয়।

    এবার পৌঁছে দেখলাম বিষণ্ণ বাড়িটার সামনে এক পাল নিষ্কর্মা লোকের ভিড়, জানলা আর ফুলের ঝোপ পরীক্ষা করছে পুলিশ কনস্টেবল। বাড়ির ভেতর আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন পক্ককেশ এক বৃদ্ধি ভদ্রলোক মিস্টার সুত্রো। পুলিশ ইনস্পেকটর হোমসের পুরোনো বন্ধু। সোল্লাসে বললেন, এক্সপার্টের দরকার হবে না। ছিঁচকে চুরি। হাড়হাবাতে পুলিশই সামলাতে পারবে।

    ছিঁচকে চুরি? হোমসের প্রশ্ন।

    এক্কেবারে। চোর কারা, তাও জানা হয়ে গেছে। বার্নে স্টকডেলের দলবলের কাজ নিগ্রোটাকেও দেখা গেছে ধারেকাছে।

    চমৎকার! কী চুরি গেল?

    তেমন কিছু না। মিসেস মেবারলিকে ক্লোরোফর্ম করে–ওই যে, এসে গেছেন উনি।

    ঝিয়ের কাঁধে ভর দিয়ে পা টেনে ঘরে ঢুকলেন মিসেস মেবারলি–মিস্টার হোমস আপনার কথা শুনিনি বলেই এই কাণ্ড ঘটল। মিস্টার সুত্রোকে আর কষ্ট দিতে চাইনি কাল রাত্রে।

    আজ সকালেই শুনলাম আপনার নির্দেশ, বললেন মিস্টার সুত্রো।

    খুব ক্লান্ত দেখছি আপনাকে, বললে হোমস। কী ব্যাপার খুলে বলতে পারবেন?

    মোটকা নোটবই ঠুকে ইনস্পেকটর বললেন, এর মধ্যেই সব পাবেন।

    ওঁর মুখে শুনতে চাই–যদি খুব ক্লান্ত বোধ না-করেন।

    আমি বলছি, মিস্টার হোমস। যদিও বলবার মতো তেমন কিছু নেই। বাড়িতে চোর ঢোকানোর ব্যবস্থাটা নিশ্চয় সুশানের কীর্তি। নাকে ক্লোরোফর্ম দেওয়ার পর জ্ঞান ছিল না। জ্ঞান ফিরে আসার পর দেখলাম বিছানার পাশে একটা লোক দাঁড়িয়ে। আর একজন হাতে করে কী তুলছে ছেলের ব্যাগের মধ্যে থেকে, ঝাঁপিয়ে পড়ে জাপটে ধরলাম তাকে। অন্য লোকটা নিশ্চয় তখন মেরে ফের অজ্ঞান করে দেয় আমাকে। আওয়াজ শুনে মেরি দৌড়ে এসে চেঁচামেচি করে পুলিশ ডাকে–চোর পালায় তার আগেই।

    কী নিয়ে গেছে?

    তেমন কিছু নয়। ডগলাসের বাক্সে ব্যাগে দামি কিছু ছিল না।

    সূত্র কিছু ফেলে গেছে চোরেরা?

    যে-লোকটাকে জাপটে ধরেছিলাম, তার হাত থেকে একটা কাগজ খামচে ছিঁড়ে দিয়েছিলাম বোধ হয়–মেঝেতেই পড়ে ছিল দলা পাকানো অবস্থায়। ছেলের হাতে লেখা কাগজ।

    তার মানে কোনো কাজে আসবে না। চোরেদের হাতের লেখা থাকলে একটা কথা ছিল, বললেন ইনস্পেকটর।

    ঠিক বলেছেন। তবুও কাগজটা দেখতে চাই।

    নোটবই থেকে ভাঁজ করা ফুলস্ক্যাপ কাগজটা বার করতে ইনস্পেকটর বললেন, পঁচিশ বছরের অভিজ্ঞতায় বুঝেছি, আঙুলের ছাপ-টাপ থেকে অনেক কিছু পাওয়া যায়।

    কাগজ দেখে হোমস বললে, আপনি কী পেয়েছেন এ থেকে?

    অদ্ভুত একটা নভেলের উপসংহার বলেই মনে হল।

    উপন্যাসের উপসংহার তো বটেই। পৃষ্ঠা সংখ্যা দেখছেন না, দু-শো পঁয়তাল্লিশ। আগের দু-শো চুয়াল্লিশ পৃষ্ঠা কোথায়?

    চোরে নিয়ে গেছে বোধ হয়। নিয়ে যাওয়াই সার হবে–লাভ হবে অষ্টরম্ভা।

    অদ্ভুত, গল্প চুরির জন্যে বাড়িতে চোর ঢোকাটা একটু অস্বাভাবিক নয় কি?

    তাড়াহুড়োর মাথায় হাতের কাছে যা পেয়েছে, তাই নিয়ে সটকেছে, বললেন ইনস্পেকটর।

    কিন্তু আমার ছেলের জিনিসের ওপর নজর পড়লে কেন? মিসেস মেবারলির প্রশ্ন।

    নীচের তলায় কিছুই পায়নি বলে। ইনস্পেকটরের জবাব।

    হোমস বললে, ওয়াটসন, জানলার কাছে এসো। পড়া যাক কাগজটা।

    আলোয় দাঁড়িয়ে পড়লাম একটা বাক্যের মাঝখান থেকে আশ্চর্য কয়েকটা কথা।

    … দরদর করে রক্ত পড়তে লাগল মুখের কাটা ছেড়া র্থ্যাতলানো জায়গাগুলো দিয়ে। কিন্তু ক্ষতবিক্ষত রুধিরপ্লাবিত হৃদয়ের তুলনায় মুখের ক্ষত কিছুই নয়। হৃদয় টুকরো টুকরো হয়ে গেল অনিন্দ্যসুন্দর সেই মুখখানির সহসা পরিবর্তন দেখে… সেই মুখ… যে-মুখের জন্যে জীবন পর্যন্ত নিঃশেষে বিলিয়ে দিতে পারত সে, সেই মুখ তার দিকে চেয়ে… তার যন্ত্রণা আর লাঞ্ছনার দিকে তাকিয়ে সামান্য একটু হাসল… হাসির মধ্যে ফুটে উঠল হৃদয়হীনার হায়নাহাসি… পিশাচিনীর নিষ্করুণ উল্লাস… সেই মুহূর্তেই… হ্যাঁ, হা… সেই মুহূর্তেই নির্মম ওই হাসি দেখেই প্রেম মারা গেল তার হৃদয়ের মধ্যে জন্ম নিল ঘৃণা। মানুষ কিছু নিয়ে বাঁচতে চায়। আমিও বাঁচব। প্রতিহিংসার অনলে হৃদয়ের জ্বালা জুড়োনোর জন্যে বাঁচব। তোমার প্রেম পাইনি প্রেয়সী, পাইনি তোমার বাহুবন্ধন–কিন্তু তোমার কীর্তিকাহিনি ফাঁস করে দেওয়ার জন্যেই বেঁচে থাকবে এই অধম।

    চমৎকার ব্যাকরণ! মৃদু হেসে কাগজটা ইনস্পেকটরের হাতে ফিরিয়ে দিতে দিতে বললে হোমস, সে আর তার কীরকম শেষের দিকে আবেগের মাথায় আমি হয়ে গেল লক্ষ করেছেন? চরম মুহূর্তে নিজেকেই নাটকের নায়ক কল্পনা করে বসেছে লেখক।

    লেখার যা ছিরি, কাগজটা নোটবইতে রাখতে রাখতে মন্তব্য করলেন ইনস্পেকটর। একী! চললেন নাকি, মিস্টার হোমস?

    যোগ্য ব্যক্তির হাতে তদন্তভার যখন রয়েছে, আমার আর থাকার দরকার নেই। মিসেস মেবারলি, আপনি দেশভ্রমণ করতে চাইছিলেন না?

    অনেক দিনের সাধ।

    কোথায় যেতে চান? কায়রো? মাদিরা? রিভিয়েরা?

    টাকা থাকলে পৃথিবীটা ঘুরে আসতাম।

    বেশ, বেশ, পৃথিবী ঘুরতে চান। ঠিক আছে, সুপ্রভাত সবাইকে। সন্ধে নাগাদ আমার চিঠি পেতে পারেন। বেরিয়ে আসার সময়ে ইনস্পেকটরের ঠোঁটের কোণে হাসিটুকুর মানে মনে হল এইরকম–সেয়ানা হলেই কি এমনি মাথাপাগলা হতে হয়?

    লন্ডন পৌঁছে হোমস বললে, এ-ব্যাপারের এখুনি নিস্পত্তি করা দরকার। ইসাদোরা ক্লিনের মতো মেয়েছেলের সঙ্গে একা দেখা করা নিরাপদ নয়–তুমিও চলো, সাক্ষী থাকবে।

    গাড়ি নিয়ে চললাম গ্রসভেনস স্কোয়ারের দিকে। কিছুক্ষণ চিন্তায় ড়ুবে থাকার পর আচমকা যেন জেগে উঠে হোমস বললে, ওয়াটসন, সব বুঝেছ নিশ্চয়?

    নাটের গুরুর সঙ্গে দেখা করতে চলেছ–এ ছাড়া কিছু বুঝিনি!

    ঠিক, ঠিক। ইসাদোরা ক্লিন নামটা শুনেও কিছু বুঝলে না? এ সেই বিখ্যাত স্প্যানিশ বিউটি–যার পূর্বপুরুষরা পুরুষানুক্রমে পারনামবুকোতে সর্দারি করে গেছে যে হঠাৎ কুবের হয়ে গিয়েছিল জার্মান চিনি সম্রাট ক্লিনকে বিয়ে করার পরেই বিধবা হওয়ার পর। তারপর থেকেই ঘরোয়া প্রেমে পুঁদ হয়েছিল বিখ্যাত বিউটি একাধিক পুরুষের সঙ্গে। পার্মানেন্ট প্রেমিক এ-জাতীয় মেয়েরা রাখে না ধরে আর ছাড়ে–শখ মিটে গেলেই ছুঁড়ে ফেলে দেয়। কিন্তু ডগলাস মেবারলি সোসাইটি প্রজাপতি না হয়েও এর জালে জড়িয়ে গিয়েছিল রূপের টানে অন্ধ পোকার মতো।

    উপন্যাসটা তাহলে ডগলাসের নিজের?

    এই তো বেশ জোড়াতালি লাগিয়ে ফেলছ। ইসাদোরা ডিউক অফ লোমোন্ডকে বিয়ে করতে যাচ্ছে শুনলাম–যদিও ছেলের বয়সি। ভাবী শাশুড়ি মানিয়ে নিলেও কেলেঙ্কারির মুখ চাপা দেওয়া যাবে না। এসে গেছি!

    ওয়েস্ট এন্ডের ভারি চমৎকার একটা কোণের বাড়ির সামনে এসে নামলাম দুই বন্ধু। যন্ত্রবৎ একজন ফুটম্যান হোমসের কার্ড ভেতরে নিয়ে গিয়ে ফিরিয়ে এনে দিয়ে বললে, ভদ্রমহিলা বাড়ি নেই। হোমস হৃষ্টকণ্ঠে বললে, তাহলে ফিরে না-আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাক।

    শুনে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল যন্ত্র।

    খেঁকিয়ে উঠে বললে, বাড়ি নেই মানে আপনার জন্যে নেই।

    তোবা! তোবা! তাহলে আর অপেক্ষা করতে হবে না। এই চিঠিটা গিয়ে দাও তোমার মনিবানিকে।

    নোটবইয়ের পাতা ছিঁড়ে হোমস শুধু লিখল, তাহলে কি পুলিশ আসবে? ফুটম্যান বিদেয় হতেই মুচকি হেসে আমাকে বললে, দেখো না কীরকম কাজটা হয়।

    হলও বটে–অত্যন্ত চমকপ্রদভাবে অতিশয় ঝটপট ফলটা ফলে গেল। এক মিনিটও গেল না, আরব্যরজনীর উপন্যাস বর্ণিত একখানা দারুণ জমকালো ড্রয়িং রুমে সাদরে ডেকে নিয়ে যাওয়া হল আমাদের। ঘরে আলো আর আঁধারির খেলা–মাঝে একটা গোলাপি রঙের বিদ্যুৎ বাতি জ্বলছে। বিখ্যাত বিউটিটিকে দেখে এইটুকুই বুঝলাম যে ভদ্রমহিলা এমন একটা বয়সের সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছেন যে-বয়সে পৌঁছে বিশ্বসুন্দরীরাও আলো আঁধারির মধ্যে থাকতে চায়। আমরা ঘরে ঢুকতেই রানির মতো দীর্ঘতনু সোফা থেকে সিধে করে মুখোশসদৃশ অপরূপ আননে গাঁথা ওয়ান্ডারফুল একজোড়া স্প্যানিশ চোখে খুন জাগিয়ে যেন এফেঁড়-ওফেঁড় করে ফেললেন আমাদের।

    নোটবই থেকৈ ছেঁড়া কাগজটা নাড়তে নাড়তে বললেন তীক্ষ্ণ্ণ তীব্র কষ্ঠে, মানে কী? এই হামলাবাজির মানেটা কী?

    মানেটা আপনি ভালোই জানেন। আপনার বুদ্ধিমত্তার ওপর আমার শ্রদ্ধা আছে–যদিও ইদানীং বড়ো ভুল করে ফেলছেন–বুদ্ধির ঘটে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।

    কীভাবে শুনি?

    আমাকে ভাড়াটে গুন্ডার ভয় দেখিয়ে ক্ষান্ত রাখার চেষ্টা করে। প্রাণের ভয় থাকলে এ-পেশা কেউ নেয় না ম্যাডাম। বিপদকে ভালোবাসে বলেই আসে। আপনিই সেই বিপদের লোভ দেখিয়ে কেসটার মধ্যে আমাকে টেনে এনেছেন।

    কী বলছেন বুঝছি না। ভাড়াটে গুন্ডার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক?

    ক্লান্ত ভঙ্গিমায় দরজার দিকে পা বাড়িয়ে হোমস বললে, সত্যিই আপনার বুদ্ধির ঘট শূন্য হতে চলেছে। চললাম।

    দাঁড়ান! কোথায় যাচ্ছেন?

    স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে।

    কয়েক পা যেতে-না-যেতেই ইসাদোরা ঝড়ের বেগে আমাদের পাশ কাটিয়ে গিয়ে দু-হাত দু-পাশে ছড়িয়ে পথ আটকে দাঁড়িয়ে গেল। চক্ষের নিমেষে স্টিল হয়ে গেল ভেলভেট।

    আসুন, বসুন। খোলাখুলি কথা বলা যাক। বন্ধুরূপে পেতে চাই আপনাকে।

    কথা দিতে পারছি না। দণ্ডমুণ্ডের কা আমি নই। যা বলবার বলুন, তারপর বলব আমি কী করব।

    আপনি খাঁটি ভদ্রলোক। বুকের পাটাও আছে। আপনাকে ভয় দেখাতে যাওয়াটা বোকামো হয়েছে।

    আসল বোকামি হয়েছে একদল রাসকেলের হাতে নিজেকে সঁপে দেওয়া। ওরা এখন হয় ব্ল্যাকমেল করবে আপনাকে, নয় সব ফাঁস করে দেবে।

    অত প্রাণখোলা আমি নই, মিস্টার হোমস। বার্নে স্টকডেল আর সুশান ছাড়া কেউ জানে না আমিই ওদের কাজে নামিয়েছি। ওরা তো এ-রকম কাজ এই প্রথম করছে না–চোখ টিপে বড়ো সুন্দরভাবে ইঙ্গিত করে কথাটা অর্ধসমাপ্ত রাখলেন পরমাসুন্দরী ইসাদোরা।

    তাই বলুন। এর আগেও ওদের কাজে লাগিয়েছেন।

    নিঃশব্দে কাজ সারতে ওদের মতো উঁদে হাউন্ড আর হয় না।

    এরাই আবার ঘুরে কামড়ে দেয় যে লেলিয়ে দেয় তাকেই। চুরির চার্জে শিগগিরই ধরা পড়বে প্রত্যেকেই পুলিশ পেছনে লেগেছে।

    লাগুক। ওরা মুখ বুজে থাকতে জানে। টাকা খায় সেইজন্যেই।

    কিন্তু আমি যদি মুখ খুলিয়ে দিই?

    আপনি দেবেন না। আপনি ভদ্রলোক। মেয়েদের গোপন কথা গোপনে রাখতে জানেন।

    তাহলে আগে ফেরত দিন পাণ্ডুলিপিটা।

    খিলখিল করে হেসে উঠে ফায়ার প্লেসের সামনে দাঁড়িয়ে আগুন খোঁচানোর ডান্ডা দিয়ে একগাদা কালো ছাই নাড়তে নাড়তে ইসাদোরা বললে, নিয়ে যেতে পারবেন?

    হোমসের মুখভাব এ-রকম গ্রানাইট কঠিন হতে কখনো দেখিনি।

    আপনার কপালে অনেক দুর্গতি আছে দেখছি। বড় বাড়াবাড়ি করে ফেললেন।

    ডান্ডাটা ছুঁড়ে ফেলে ইসাদোরা বললে, আপনি বড়ো নির্দয়! শুনবেন সব কথা?

    আমি বলছি, আপনি শুনুন।

    না, না, আমার মুখে শুনুন। মেয়েমানুষের স্বপ্নের প্রাসাদ যখন ভেঙে যাওয়ার মুখে এসে দাঁড়ায়, তখন এ ছাড়া আর কিছু করার থাকে না, মিস্টার হোমস।

    প্রথম পাপটা আপনার।

    হ্যাঁ, হ্যাঁ, স্বীকার করছি প্রথম পাপ আমার। ডগলাস ছেলেটা ভালো–কিন্তু সে বড়ো বেশি চেয়ে ফেলেছিল আমার কাছে–আমি ভান করেছিলাম যা দেওয়ার নয় তাকে তাই দোব–সে তা বিশ্বাস করেছিল। ভেবেছিল সে-ই শুধু পাবে আমাকে–আর কেউ নয়। অসহ্য! তাই তাকে সমঝে দেওয়ার দরকার হয়ে পড়েছিল।

    দোরগোড়াতেই গুন্ডা দিয়ে পিটিয়ে?

    সবই তো জানেন। বার্নে দলবল দিয়ে হাঁকিয়ে দিয়েছিল দরজা থেকেই, একটু বাড়াবাড়িই করেছিল অবশ্য। কিন্তু তারপর কী করেছিল জানেন? কোনো ভদ্রলোকের পক্ষে যা করা উচিত নয়–তাই করেছিল। আমাকে নেকড়ে আর নিজেকে মেষশাবক সাজিয়ে একটা উপন্যাস লিখেছিল। সে-উপন্যাস পড়লেই লোকে জেনে যেত আমার সমস্ত কীর্তিকাহিনি।

    অধিকার ছিল বলেই লিখেছিল।

    ইটালির নিষ্ঠুরতা ওর রক্তের মধ্যে মিশে গিয়েছিল। তাই জঘন্য সেই উপন্যাসের দুটো পাণ্ডুলিপি করে একটা আগেই আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল যাতে প্রকাশের আগেই জ্বলে পুড়ে মরি। আর একটা পাঠাত প্রকাশকের কাছে।

    প্রকাশকের কাছে যে পাঠিয়ে দেয়নি জানলেন কী করে?

    প্রকাশকের কাছে খোঁজ নিয়ে। এর আগেও অনেক বই ও লিখেছে–প্রকাশকের নাম ঠিকানা জানতাম। তারপরেই হঠাৎ খবর এল, ইটালিতে মারা গেছে ডগলাস। লোক লাগালাম পাণ্ডুলিপিটা উদ্ধার করার জন্যে–জানতাম মালপত্র মায়ের কাছে ফেরত আসবেই। প্রথমে সোজা আঙুলে ঘি তুলতে চেয়েছিলাম–পাণ্ডুলিপিসমেত পুরো বাড়িটা যেকোনো দামে কিনে নিতে চেয়েছিলাম। যখন পারলাম না, তখন আঙুল বাঁকাতে হল। মিস্টার হোমস, বলুন, এ ছাড়া আমার করার আর কী ছিল? ও-পাণ্ডুলিপি প্রেসে গেলে আমার ভবিষ্যৎ বলে আর কিছু থাকত। কি? স্বীকার করছি ডগলাসের ওপর অতটা নির্দয় না হলেই ভালো হত। কিন্তু আমারও তো একটা জীবন আছে?

    কাঁধ ঝাঁকিয়ে হোমস বললে, তা বলে আসুন একটা মন্দ রফা করা যাক। ফার্স্ট ক্লাস টিকিটে পৃথিবী বেড়িয়ে আসতে কত খরচ হয়?

    হাঁ করে পরম বিস্ময়ে চেয়ে রইলেন ইসাদোরা।

    পাঁচহাজার পাউন্ডে সম্ভব?

    নিশ্চয়!

    তাহলে পাঁচ হাজারের একটা চেক লিখে দিন–মিসেস মেবারলিকে আজই পৌঁছে দোব। ওঁর একটু হাওয়া পরিবর্তনের দরকার আপনারও তাঁর প্রতি কর্তব্যটা করা দরকার। আর হ্যাঁ, আঙুল তুলে হুঁশিয়ার করার ভঙ্গিমায় শেষ করল শার্লক হোমস, সাবধান! সাবধান! আগুন নিয়ে খেলতে গিয়ে চাপার কলির মতো ওই আঙুলও একদিন পুড়ে যেতে পারে খেয়াল থাকে যেন।

    ————-

    টীকা

    পাণ্ডুলিপির প্যাঁচ : দি অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য থ্রি গেবলস স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিনের অক্টোবর ১৯২০ সংখ্যায় এবং আমেরিকার লিবার্টি পত্রিকার ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৬ তারিখে প্রকাশিত সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়।

    হলবর্ন পার্কে : সম্ভবত গ্রেস ইন রোডের হলবর্ন বারস-এর কথা বলা হয়েছে।

    র‍্যাফেলের ছবি : ইতালির রেনেসাঁ যুগের চিত্রকর রাফায়েল সানতি (১৪৮৩-১৫২০) বা র্যাফায়েলো সানজিও-কে বলা হত ইলদিভিন্নো বা দ্য ডিভাইন। পোপ লিও দ্য টেনথ-এর আদেশে ভ্যাটিকানের সিসতিন চ্যাপেলের দেওয়ালে ছবি আঁকেন রাফায়েল।

    ক্রাউন ডার্বি টি সেট : ১৮৯০ সালে রানি ভিক্টোরিয়া ডার্বির একটি চিনামাটির বাসন তৈরির কারখানাকে ম্যানুফাকচারার্স অব পপার্সেলিন টু হার ম্যাজেস্টি আখ্যা দেন। তাদের নামের সঙ্গে রয়্যাল শব্দটি ব্যবহারের অনুমতি দেন। দ্য রয়্যাল ক্রাউন ডার্বি পোর্সেলিন কোম্পানির তৈরি চিনামাটির বাসনকে ক্রাউন ডার্বি বলা হয়।

    আপনাকে আগলানো দরকার : কোনো উঁকিলের পক্ষে এই ধরনের কাজ করা বেশ কষ্টকল্পিত।

    ডিরেক্টরি : সে যুগের ডিরেক্টরিগুলির মধ্যে কেলি অ্যান্ড কোং প্রকাশিত কেলিস ডিরেক্টরি ছিল সমধিক জনপ্রিয়।

    লুসারেনে : জার্মানভাষী শহর লুসার্ন বা জার্মান উচ্চারণে লুজার্ন, ইতালিয় উচ্চারণে লুসার্নে লেখা হওয়ার কথা। লুসারেনে ফরাসি উচ্চারণ।

    পুরোনো বন্ধু : শার্লক হোমসের কাহিনিতে একমাত্র এখানেই ইনস্পেকটরের নাম জানা যায়নি।

    পারনামবুকো : ১৬৫৪ সালে ওলন্দাজদের হাত থেকে পর্তুগিজদের দখলে আসে পারনামবুকো। ১৮৯১ সালে ব্রেজিল রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে স্পেনীয় উপনিবেশ বা দখল কোনোকালে ছিল না।

    পাঁচ হাজারের একটা চেক লিখে দিন : ডেভিড গেলারস্টিন লিখেছেন, এই টাকা থেকে যদি মিসেস মেবারলিকে হোমসের পারিশ্রমিক মেটাতে হয়, তাহলে কিন্তু ফার্স্ট ক্লাস টিকিটে পৃথিবী বেড়িয়ে আসার টাকা কুলোবে না।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ – আরিফ আজাদ
    Next Article শার্লক হোমস সমগ্র ১ – অনুবাদ : অদ্রীশ বর্ধন

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }