Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শিউলিমালা – কাজী নজরুল ইসলাম

    কাজী নজরুল ইসলাম এক পাতা গল্প86 Mins Read0

    শিউলিমালা

    মিস্টার আজহার কলকাতার নাম-করা তরুণ ব্যারিস্টার।

    বাটলার, খানসামা, বয়, দারোয়ান, মালি, চাকর-চাকরানিতে বাড়ি তার হরদম সরগরম।

    কিন্তু বাড়ির আসল শোভাই নাই। মিস্টার আজহার অবিবাহিত।

    নাম-করা ব্যারিস্টার হলেও আজহার সহজে বেশি কেস নিতে চায় না। হাজার পীড়াপীড়িতেও না। লোকে বলে, পসার জমাবার এও একরকম চাল।

    কিন্তু কলকাতার দাবাড়েরা জানে যে, মিস্টার আজহারের চাল যদি থাকে – তা সে দাবার চাল।

    দাবা-খেলায় তাকে আজও কেউ হারাতে পারেনি। তার দাবার আড্ডার বন্ধুরা জানে, এই দাবাতে মিস্টার আজহারকে বড়ো ব্যারিস্টার হতে দেয়নি, কিন্তু বড়ো মানুষ করে রেখেছে।

    বড়ো ব্যারিস্টার যখন ‘উইকলি নোটস’ পড়েন আজহার তখন অ্যালেখিন, ক্যাপাব্লাঙ্কা কিংবা রুবিনস্টাইন, রেটি, মরফির খেলা নিয়ে ভাবে, কিংবা চেস-ম্যাগাজিন নিয়ে পড়ে, আর চোখ বুজে তাদের চালের কথা ভাবে।

    সকালে তার হয় না, বিকেলের দিকে রোজ দাবার আড্ডা বসে। কলকাতার অধিকাংশ বিখ্যাত দাবাড়েই সেখানে এসে আড্ডা দেয়, খেলে, খেলা নিয়ে আলোচনা করে।

    আজহারের সবচেয়ে দুঃখ, ক্যাপাব্লাঙ্কার মতো খেলোয়াড় কিনা অ্যালেখিনের কাছে হেরে গেল। অথচ অ্যালেখিনই বোগোল-জুবোর মতো খেলোয়াড়ের কাছে অন্তত পাঁচ পাঁচবার হেরে যায়!

    মিস্টার মুখার্জি অ্যালেখিনের একরোখা ভক্ত। আজও মিস্টার আজহার নিত্যকার মতো একবার ওই কথা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলে, মিস্টার মুখার্জি বলে উঠল – ‘কিন্তু তুমি যাই বল আজহার, অ্যালেখিনের ডিফেন্স – ওর বুঝি জগতে তুলনা নেই। আর বোগোল-জুবো? ও যে অ্যালেখিনের কাছ তিন-পাঁচে পনেরোবার হেরে ভূত হয়ে গেছে! ওয়ার্লড-চ্যাম্পিয়ানশিপের খেলায় অমন দু চার বাজি সমস্ত ওয়ার্লড-চ্যাম্পিয়ানই হেরে থাকেন। চব্বিশ দান খেলায় পাঁচ দান জিতেছে। তা ছাড়া, বোগোল-জুবোও তো যে সে খেলোয়াড় নয়!’

    আজহার হেসে বলে উঠল, ‘আরে রাখো তোমার অ্যালেখিন। এইবার ক্যাপাব্লাঙ্কার সাথে আবার খেলা হচ্ছে তার, তখন দেখো একবার অ্যালেখিনের দুর্দশা! আর বোগোল-জুবোকে তো সেদিনও ইটালিয়ান মন্টেসেলি বগলা-দাবা করে নিলে! হাঁ, খেলে বটে গ্রানফেল্‌ড।’

    বন্ধুদের মধ্যে একজন চটে গিয়ে বললে, ‘তোমাদের কি ছাই আর কোনো কম্ম নেই? কোথাকার বগলঝুপো না ছাইমুণ্ডু, অ্যালেখিন না ঘোড়ার ডিম – জ্বালালে বাবা।’

    মুখার্জি হেসে বলল, ‘তুমি তো বেশ গ্রাবু খেলতে পার অজিত, এমন মাহ ভাদর, চলে যাওনা স্ত্রীর বোনেদের বাড়িতে! এ দাবার চাল তোমার মাথায় ঢুকবে না!’

    তরুণ উকিল নাজিম হাই তুলে তুড়ি দিয়ে বলে উঠলে, ‘ও জিনিস মাথায় না ঢোকাতে বেঁচে গেছি বাবা! তার চেয়ে আজহার সাহেব দুটো গান শোনান, আমরা শুনে যে যার ঘরে চলে যাই। তার পর তোমরা রাজা মন্ত্রী নিয়ে বোসো।’

    দাবাড়ে দলের আপত্তি টিকল না। আজহারকে গাইতে হল। আজহার চমৎকার ঠুংরি গায়। বিশুদ্ধ লখনউ ঢং-এর ঠুংরি গান তার জানা ছিল। এবং তা এমন দরদ দিয়ে গাইত সে, যে শুনত সেই মুগ্ধ হয়ে যেত। আজ কিন্তু সে কেবলই গজল গাইতে লাগল।

    আজহার অন্য সময় সহজে গজল গাইতে চাইত না।

    মুখার্জি হেসে বলে উঠল,– ‘আজ তোমার প্রাণে বিরহ উথলে উঠল নাকি হে? কেবলই গজল গাচ্ছ, মানে কী? রংটং ধরেছে নাকি কোথাও!’

    আজহারও হেসে বলল, ‘বাইরের দিকে একবার তাকিয়ে দেখো।’

    এতক্ষণে যেন সকলের বাইরের দিকে নজর পড়ল। একটু আগের বর্ষা-ধোয়া ছলছলে আকাশ। যেন একটি বিরাট নীল পদ্ম। তারই মাঝে শরতের চাঁদ যেন পদ্মমণি। চারপাশে তারা যেন আলোক-ভ্রমর।

    লেক-রোডের পাশে ছবির মতো বাড়িটি।

    শিউলির সাথে রজনিগন্ধার গন্ধ-মেশা হাওয়া মাঝে মাঝে হলঘরটাকে উদাস-মদির করে তুলছিল!

     

    ২

    সকলের আর এক প্রস্থ চা খাওয়া হলে পর সিগার ধরিয়ে মিনিটখানিক ধূম্র উদ্‌গীরণ করে আজহার বলতে লাগল–

    তখন সবেমাত্র ব্যারিস্টারি পাশ করে এসেই শিলং বেড়াতে গেছি। ভাদ্র মাস। তখনও পূজার ছুটিওয়ালার দল এসে ভিড় জমায়নি। তবে আগে থেকেই দু-একজন করে আসতে শুরু করেছেন। ছেলেবেলা থেকেই আমার দাবাখেলার ওপর বড্ডো বেশি ঝোঁক ছিল। ও ঝোঁক বিলেতে গিয়ে আরও বেশি করে চাপল। সেখানে ইয়েটস্‌, মিচেল, উইন্টার, টমাস প্রভৃতি সকল নাম-করা খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলেছি এবং কেম্ব্রিজের হয়ে অনেকগুলো খেলা জিতেওছি। শিলং গিয়ে খুঁজতেই দু-একজন দাবা-খেলোয়াড়ের সঙ্গে পরিচয়ও হয়ে গেল। তবে তারা কেউ বড়ো খেলোয়াড় নয়। তারা আমার কাছে ক্রমাগত হারত। একদিন ওরই মধ্যে একজন বলে উঠল, ‘একজন বুড়ো রিটায়ার্ড প্রফেসর আছেন এখানে, তিনি মস্ত বড়ো দাবাড়ে, শোনা যায় – তাঁকে কেউ হারাতে পারে না – যাবেন খেলতে তাঁর সাথে?’

    আমি তখনই উঠে পড়ে বললাম, ‘এখনই যাব, চলুন কোথায় তিনি?’

    সে ভদ্রলোকটি বললেন, ‘চলুন না, নিয়ে যাচ্ছি! আপনার মতো খেলোয়াড় পেলে তিনি বড়ো খুশি হবেন। তাঁরও আপনার মতোই দাবা-খেলার নেশা। অদ্ভুত খেলোয়াড় বুড়ো, চোখ বেঁধে খেলে মশাই!’

    ‍আমি ইউরোপে অনেকেরই ‘ব্লাইন্ড ফোল্ডেড’ খেলা দেখেছি, নিজেও অনেকবার খেলেছি। কাজেই এতে বিশেষ বিস্মিত হলাম না।

    তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। আকাশে এক ফালি চাঁদ, বোধ হয় শুক্লাপঞ্চমীর। যেন নতুন আশার ইঙ্গিত। সারা আকাশে যেন সাদা মেঘের তরণির বাইচ খেলা শুরু হয়েছে। চাঁদ আর তারা তার মাঝে যেন হাবুডুবু খেয়ে একবার ভাসছে একবার উঠছে।

    ইউক্যালিপটাস আর দেবদারু তরুঘেরা একটি রঙিন বাংলোয় গিয়ে আমরা উঠতেই দেখি, প্রায় ষাটের কাছাকাছি বয়েস এক শান্ত সৌম্যমূর্তি বৃদ্ধ ভদ্রলোক একটি তরুণীর সঙ্গে দাবা খেলছেন।

    আমাদের দেশের মেয়েরাও দাবা খেলেন, এই প্রথম দেখলাম।

    বিস্ময়-শ্রদ্ধা-ভরা দৃষ্টি দিয়ে তরুণীর দিকে তাকাতেই তরুণীটি উঠে পড়ে বললে, ‘বাবা, দ্যাখো কারা এসেছেন!’

    খেলাটা শেষ না হতেই মেয়ে উঠে পড়েতে বৃদ্ধ ভদ্রলোক যেন একটু বিরক্ত হয়েই আমাদের দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই হাসিমুখে উঠে বললেন ‘আরে, বিনয়বাবু যে! এঁরা, কারা? এসো, বোসো। এঁদের পরিচয় —’

    বিনয়বাবু – যিনি আমার নিয়ে গেছিলেন, আমার পরিচয় দিতেই বৃদ্ধ লাফিয়ে উঠে আমায় একেবারে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন, ‘আপনি – এই তুমিই আজহার? আরে, তোমার নাম যে চেস-ম্যাগাজিনে, কাগজে অনেক দেখেছি। তুমি যে মস্ত বড়ো খেলোয়াড়! ইয়েটসের সঙ্গে বাজি চটিয়েছ, একী কম কথা! এই তো তোমার বয়েস! – বড়ো খুশি হলুম – বড়ো খুশি হলুম।… ওমা শিউলি, একজন মস্ত দাবাড়ে এসেছে! দেখে যাও! বাঃ, বড়ো আনন্দে কাটবে তাহলে। এই বুড়োবয়সেও আমার বড্ডো দাবা-খেলার ঝোঁক, কী করি, কাউকে না পেয়ে মেয়ের সাথেই খেলছিলুম!’ বলেই হো হো করে প্রাণখোলা হাসি হেসে শান্ত সন্ধ্যাকে মুখরিত করে তুললেন।

    শিউলি নমস্কার করে নীরবে তার বাবার পাশে এসে বসল। তাকে দেখে আমার মনে হল এ যেন সত্যই শরতের শিউলি।

    গায়ে গোধূলি রং-এর শাড়ির মাঝে নিষ্কলঙ্ক শুভ্র মুখখানি – হলুদ রং বোঁটায় শুভ্র শিউলিফুলের মতোই সুন্দর দেখাচ্ছিল। আমার চেয়ে থাকার মাত্রা হয়তো একটু বেশিই হয়ে পড়েছিল। বৃদ্ধের উক্তিতে আমার চমক ভাঙল।

    বৃদ্ধ যেন খেলার জন্য অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছিলেন। চাকর চায়ের সরঞ্জাম এনে দিতেই শিউলি চা তৈরি করতে করতে হেসে বলে উঠল, ‘বাবার বুঝি আর দেরি সইছে না?’ বলেই আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘কিছু মনে করবেন না! বাবা বড্ড দাবা খেলতে ভালোবাসেন! দাবা খেলতে না পেলেই ওঁর অসুখ হয়!’ বলেই চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘এইবার চা খেতে খেতে খেলা আরম্ভ করুন, আমরা দেখি!’

    বিনয় হেসে বলল, ‘হাঁ, এইবার সমানে সমানে লড়াই। বুঝলে মা মিস চৌধুরি, আমাদের রোজ উনি হারিয়ে ভূত করে দেন।’

    খেলা আরম্ভ হল। সকলে উৎসুক হয়ে দেখতে লাগল, কেউ কেউ উপরচালও দিতে লাগল। মিস চৌধুরি ওরফে শিউলি তার বাবার যা দু একটি ত্রুটি ধরিয়ে দিলে, তাতে বুঝলাম – এও এর বাবার মতোই ভালো খেলোয়াড়।

    কিছুক্ষণ খেলার পর বুঝলাম, আমি ইউরোপে যাঁদের সঙ্গে খেলেছি– তাঁদের অনেকের চেয়েই বড়ো খেলোয়াড় প্রফেসর চৌধুরি॥ আমি প্রফেসর চৌধুরিকে জানতাম বড়ো কেমিস্ট বলে, কিন্তু তিনি যে এমন অদ্ভুত ভালো দাবা খেলতে পারেন, এ আমি জানতাম না।

    আমি একটা বেশি বল কেটে নিতেই বৃদ্ধ আমার পিঠ চাপড়ে তারিফ করে ডিফেন্সিভ খেলা খেলতে লাগলেন। তিনি আমার গজের খেলার যথেষ্ট প্রশংসা করলেন। শিউলি বিস্ময় ও প্রশংসার দৃষ্টি দিয়ে বারেবারে আমার দিকে তাকাতে লাগল। কিন্তু একটা বল কম নিয়েও বৃদ্ধ এমন ভালো খেলতে লাগলেন যে, আমি পাছে হেরে যাই এই ভয়ে খেলাটা ড্র করে দিলাম। বৃদ্ধ বারংবার আমার প্রশংসা করতে করতে বললেন, ‘দেখলি মা শিউলি, আমাদের খেলোয়াড়দের বিশ্বাস, গজ ঘোড়ার মতো খেলে না। দেখলি জোড়া গজে কী খেললে! বড়ো ভালো খেল বাবা তুমি! আমি হারি কিংবা হারাই, ড্র সহজে হয় না!’

    শিউলি হেসে বললে, কিন্তু তুমি হারনি কত বছর বলো তো বাবা!’

    প্রফেসর চৌধুরি হেসে বললেন, না মা, হেরেছি। সে আজ প্রায় পনেরো বছর হল, একজন পাড়াগাঁয়ে ভদ্রলোক – আধুনিক শিক্ষিত নন – আমায় হারিয়ে দিয়ে গেছিলেন। ওঃ, ওরকম খেলোয়াড় আর দেখিনি!’

    আবার খেলা আরম্ভ হতেই বিনয় হেসে বলে উঠল, ‘এইবার মিস চৌধুরি খেলুন না মিস্টার আজহারের সাথে!’

    ‍বৃদ্ধ খুশি হয়ে বললেন, ‘বেশ তো! তুই-ই খেল মা, আমি একবার দেখি!’

    শিউলি লজ্জিত হয়ে বলে উঠল, ‘আমি কি ওঁর সঙ্গে খেলতে পারি?’

    কিন্তু সকলের অনুরোধে সে খেলতে বসল। মাঝে চেসবোর্ড একধারে চেয়ারে শিউলি – একধারে আমি! তার কেশের গন্ধ আমার মস্তিষ্ককে মদির করে তুলছিল। আমার দেখে মনে যেন নেশা ধরে আসছিল। আমি দু-একটা ভুল চাল দিতেই শিউলি আমার দিকে তাকিয়ে চোখ নত করে ফেললে। মনে হল, তার ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা। সে হাসি যেন অর্থপূর্ণ।

    আবার ভুল করতেই আমি চাপায় পড়ে আমার একটা নৌকা হারালাম। বৃদ্ধ যেন একটু বিস্মিত হলেন। বিনয়বাবুর দল হেসে বলে উঠলেন – ‘এইবার মিস্টার আজহার মাত হবেন।’ মনে হল, এ হাসিতে বিদ্রুপ লুকোনো আছে।

    আমি এইবার সংযত হয়ে মন দিয়ে খেলতে লাগলাম। দুই গজ ও মন্ত্রী দিয়ে এবং নিজের কোটের বোড়ে এগিয়ে এমন অফেন্সিভ খেলা খেলতে শুরু করে দিলাম যে, প্রফেসার চৌধুরিও আর এ-খেলা বাঁচাতে পারলেন না। শিউলি হেরে গেল! সে হেরে গেলেও এত ভালো খেলেছিল যে, আমি তার প্রশংসা না করে থাকতে পারলাম না। আমি বললাম – ‘দেখুন, মেয়েদের ওয়ার্লড-চ্যাম্পিয়ান মিস মেনচিকের সাথেও খেলেছি, কিন্তু এত বেশি বেগ পেতে হয়নি আমাকে, আমি তো প্রায় হেরেই গেছিলাম।’

    দেখলাম আনন্দে লজ্জায় শিউলি কমলফুলের মতো রাঙা হয়ে উঠেছে! আমি বেঁচে গেলাম। সে যে হেরে গিয়ে আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়নি – এই আমার যথেষ্ট সৌভাগ্য মনে করলাম।

    প্রফেসার চৌধুরির সঙ্গে আবার খেলা হল, এবারও ড্র হয়ে গেল।

    বৃদ্ধের আনন্দ দেখে কে! বললেন, ‘হাঁ, এতদিন পরে একজন খেলোয়াড় পেলুম, যার সঙ্গে খেলতে হলে অন্তত আট চাল ভেবে খেলতে হয়!’

    কথা হল, এরপর রোজ প্রফেসার চৌধুরির বাসায় দাবার আড্ডা বসবে।

    উঠবার সময় হঠাৎ বৃদ্ধ বলে উঠলেন, ‘মা শিউলি, এতক্ষণ খেলে মিস্টার আজহারের নিশ্চয়ই বড্ড কষ্ট হয়েছে, ওঁকে একটু গান শোনাও না!’ আমি তৎক্ষণাৎ বসে পড়ে বললাম, ‘বাঃ এ খবর তো জানতাম না।’

    শিউলি কুন্ঠিতস্বরে বলে উঠল, ‘এই শিখছি কিছুদিন থেকে, এখনও ভালো গাইতে জানিনে!’

    শিউলির আপত্তি আমাদের প্রতিবাদে টিকল না। সে গান করতে লাগল।

    সে গান যারই লেখা হোক – আমার মনে হতে লাগল – এর ভাষা যেন শিউলিরই প্রাণের ভাষা – তার বেদনা নিবেদন।

    এক একজনের কন্ঠ আছে – যা শুনে এ কন্ঠ ভালো কি মন্দ বুঝবার ক্ষমতা লোপ করে দেয়! সে কন্ঠ এমন দরদে ভরা – এমন অকৃত্রিম যে, তা শ্রোতাকে প্রশংসা করতে ভুলিয়ে দেয়। ভালোমন্দ বিচারের বহু ঊর্ধ্বে সে কন্ঠ, কোনো কর্তব নেই, সুর নিয়ে কোনো কৃচ্ছ্রসাধনা নেই, অথচ হৃদয়কে স্পর্শ করে। এর প্রশংসাবাণী উথলে উঠে মুখে নয় – চোখে!

    এ সেই কন্ঠ! মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কিছু বলবার ইচ্ছা ছিল না। ভদ্রতার খাতিরে একবার মাত্র বলতে গেলাম, ‘অপূর্ব!’ গলার স্বর বেরুল না। শিউলির চোখে পড়ল – আমার চোখের জল। সে তার দীর্ঘায়ত চোখের পরিপূর্ণ বিস্ময় নিয়ে যেন সেই জলের অর্থ খুঁজতে লাগল।

    হায়, সে যদি জানত – কালির লেখা মুছে যায়, জলের লেখা মোছে না!

    সেদিন আমায় নিয়ে কে কী ভেবেছিল – তা নিয়ে সেদিনও ভাবিনি, আজও ভাবি না। ভাবি – শিউলিফুল যদি গান গাইতে পারত, সে বুঝি এমনি করেই গান গাইত। গলায় তার দরদ, সুরে তার এমনি আবেগ!

    সুরের যেটুকু কাজ সে দেখাল, তা ঠুংরি ও টপ্পা মেশানো। কিন্তু বুঝলাম, এ তার ঠিক শেখা নয় – গলার ও-কাজটুকু স্বতঃস্ফূর্ত! কমল যেমন না জেনেই তার গন্ধ-পরাগ ঘিরে শতদলের সুচারু সমাবেশ করে – এও যেন তেমনই।

    গানের শেষে বলে উঠলাম, ‘আপনি যদি ঠুংরি শেখেন, আপনি দেশের অপ্রতিদ্বন্দ্বী সুর-শিল্পী হতে পারেন! কী অপূর্ব সুরেলা কন্ঠস্বর।’

    শিউলিফুলের শাখায় চাঁদের আলো পড়লে তা যেমন শোভা ধারণ করে, আনন্দ ও লজ্জা মিশে শিউলিকে তেমনই সুন্দর দেখাচ্ছিল।

    শিউলি তার লজ্জাকে অতিক্রম করে বলে উঠল, ‘না, না, আমার গলা একটু ভাঙা। সে যাক, আমার মনে হচ্ছে আপনি গান জানেন। জানেন যদি, গান না একটা গান।’

    আমি একটু মুশকিলে পড়লাম! ভাবলাম, ‘না বলি। আবার গান শুনে গলাটাও গাইবার জন্য সুড়সুড় করছে! বললাম, ‘আমি ঠিক গাইয়ে নই, সমঝদার মাত্র! আর যা গান জানি, তাও হিন্দি।’

    প্রফেসার চৌধুরি খুশি হয়ে বলে উঠলেন, ‘আহা হা হা। বলতে হয় আগে থেকে। তাহলে যে গানটাই আগে শুনতাম তোমার। আর গান হিন্দি ভাষায় না হলে জমেই না ছাই। ও ভাষাটাই যেন গানের ভাষা। দেখো, ক্লাসিকাল মিউজিকের ভাষা বাংলা হতেই পারে না। কীর্তন বাউল আর রামপ্রসাদি ছাড়া এ ভাষায় অন্য ঢং-এর গান চলে না।’ আমি বললাম, ‘আমি যদিও বাংলা গান জানিনে, তবু বাংলা ভাষা সম্বন্ধে এতটা নিরাশাও পোষণ করি না।’

    গান করলাম। প্রফেসার চৌধুরি তো ধরে বসলেন, তাঁকে গান শেখাতে হবে কাল থেকে। শিউলির দুই চোখে প্রশংসার দীপ্তি ঝলমল করছিল।

    বিনয়বাবুর দলও ওস্তাদি গানেরই পক্ষপাতী দেখলাম। তাদের অনুরোধে দু চারখানা খেয়াল ও টপ্পা গাইলাম। প্রফেসর চৌধুরির সাধুবাদের আতিশয্যে আমার গানের অর্ধেক শোনাই গেল না। শেষের দিকে ঠুংরিই গাইলাম বেশি।

    গানের শেষে দেখি আমাদের পিছন দিকে আরও কয়েকজন মহিলা এসে দাঁড়িয়েছেন। শিউলি পরিচয় করিয়ে দিল – ‘ইনি আমার মা– ইনি আমার মামিমা – এরা আমার ছোটো বোন।’

    তার পরের দিন দুপুরে প্রফেসর চৌধুরির বাড়িতে নিমন্ত্রিত হলাম। ফিরবার সময় নমস্কারান্তে চোখে পড়ল শিউলির চোখ। চোখ জ্বালা করে উঠল। মনে হল, চোখে এক কণা বালি পড়লেই যদি চোখ এত জ্বালা করে – চোখে যার চোখ পড়ে তার যন্ত্রণা বুঝি অনুভূতির বাইরে!

     

    ৩

    দেড় মাস ছিলাম শিলং-এ। হপ্তাখানেকের পরেই আমাকে হোটেল ছেড়ে প্রফেসর চৌধুরির বাড়ি থাকতে হয়েছিল গিয়ে। সেখানে আমার দিন-রাত্রি নদীর জলের মতো বয়ে যেতে লাগল। কাজের মধ্যে দাবা খেলা আর গান।

    মুশকিলে পড়লাম – প্রফেসার চৌধুরিকে নিয়ে। তাঁর সঙ্গে দাবাখেলা তো আছেই – তাঁকে গান শেখানোই হয়ে উঠল আমার পক্ষে সব চেয়ে দুষ্কর কার্য।

    শিউলিও আমার কাছে গান শিখতে লাগল। কিছুদিন পরেই আমার গান ও গানের পুঁজি প্রায় শেষ হয়ে গেল।

    মনে হল আমার গান শেখা সার্থক হয়ে গেল। আমার কন্ঠের সকল সঞ্চয় রিক্ত করে তার কন্ঠে ঢেলে দিলাম।

    আমাদের মালা বিনিময় হল না– হবেও না এ জীবনে কোনোদিন – কিন্তু কন্ঠ বদল হয়ে গেল! আর মনের কথা – সে শুধু মনই জানে!

    অজিত বাধা দিয়ে বলে উঠল, ‘কন্ঠ না কন্ঠী বদল বাবা? শেষটা নেড়ানেড়ির প্রেম! ছোঃ!’

    আজহার কিছু না বলে আবার সিগার ধরিয়ে বলে যেতে লাগল–

    একদিন ভোরে শিউলির কন্ঠে ঘুম ভেঙে গেল। সে গাচ্ছিল–

    ‘এখন আমার সময় হল
    যাবার দুয়ার খোলো খোলো।’

    গান শুনতে শুনতে মনে হল – আমার বুকের সকল পাঁজর জুড়ে ব্যথা। চেষ্টা করেও উঠতে পারলাম না। চোখে জল ভরে এল।

    আশাবরি সুরের কোমল গান্ধারে আর ধৈবতে যেন তার হৃদয়ের সমস্ত বেদনা গড়িয়ে পড়ছিল! আজ প্রথম শিউলির কন্ঠস্বরে অশ্রুর আভাস পেলাম।

    ঠুং করে কীসের শব্দ হতেই ফিরে দেখি, শিউলি তার দুটি করপল্লব ভরে শিউলি ফুলের অঞ্জলি নিয়ে পূজারিনির মতো আমার টেবিলের উপর রাখছে। চোখে তার জল।

    আমার চোখে চোখ পড়তেই সে তার অশ্রু লুকাবার কোনো ছলনা না করে জিজ্ঞাসা করল – আপনি কি কালই যাচ্ছেন?

    উত্তর দিতে গিয়ে কান্নায় আমার কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে এল। পরিপূর্ণ শক্তি দিয়ে হৃদয়াবেগ সংযত করে আস্তে বললাম – ‘হাঁ ভাই!’ আরও যেন কী বলতে চাইলাম। কিন্তু কী বলতে চাই ভুলে গেলাম।

    শিউলি শিউলি ফুলগুলিকে মুঠোয় তুলে অন্যমনস্কভাবে অধরে কপোলে ছুঁইয়ে বলল, ‘আবার কবে আসবেন।’

    আমি ম্লান হাসি হেসে বললাম, ‘তাও জানিনে ভাই! হয়তো আসব!’

    শিউলি ফুলগুলি রেখে চলে গেল। আর একটি কথাও জিজ্ঞেস করল না।

    আমার সমস্ত মন যেন আর্তস্বরে কেঁদে উঠল – ওরে মূঢ়, জীবনের মাহেন্দ্রক্ষণ তোর এই এক মুহূর্তের জন্যই এসেছিল, তুই তা হেলায় হারালি! জীবনে তোর দ্বিতীয়বার এ শুভ মুহূর্ত আর আসবে না, আসবে না।

    এক মাস ওদের বাড়িতে ছিলাম। কত স্নেহ কত যত্ন, কত আদর। অবাধ মেলামেশা – সেখানে কোনো নিষেধ, কোনো গ্লানি, কোনো বাধাবিঘ্ন কোনো সন্দেহ ছিল না। আর এ সব ছিল না বলেই বুঝি এতদিন ধরে এত কাছে থেকেও কারুর করে কর-স্পর্শটুকুও লাগেনি কোনোদিন। এই মুক্তিই ছিল বুঝি আমাদের সবচেয়ে দুর্লঙ্ঘ্য বাধা। কেউ কারুর মন যাচাই করিনি। কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসার কথাও উদয় হয়নি মনে। একজন অসীম আকাশ – একজন অতল সাগর। কোনো কথা নেই – প্রশ্ন নেই, শুধু এ ওর চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে।

    কেউ নিষেধ করলে না, কেউ এসে পথ আগলে দাঁড়াল না! সেও যেন জানে – আমাকে চলে আসতেই হবে, আমিও যেন জানি – আমাকে যেতেই হবে।

    নদীর স্রোতই যেন সত্য – অসহায় দুই কূল এ ওর পানে তাকিয়ে আছে। অভিলাষ নাই – আছে শুধু অসহায় অশ্রু-চোখে চেয়ে থাকা।

    সে চলে গেল টেবিলের শিউলিফুলের অঞ্জলি দুই হাতে তুলে মুখে ঠেকাতে গেলাম। বুঝি বা আমারও অজানিতে আমি সে ফুল ললাটে ঠেকিয়ে আবার টেবিলে রাখলাম। মনে হল, এ ফুল পূজারিনির – প্রিয়ার নয়। ভাবতেই বুক যেন অব্যক্ত বেদনায় ভেঙে যেতে লাগল।

    চোখ তুলেই দেখি, নিত্যকার মতোই হাসিমুখে দাঁড়িয়ে শিউলি বলছে – ‘আজ আমায় গান শেখাবেন না?’

    আমি বললাম – ‘চলো, আজই তো শেষ নয়।’

    শিউলি তার হরিণ-চোখ তুলে আমার পানে চেয়ে রইল। ভয় হল বলে তার মানে বুঝবার চেষ্টা করলাম না।

    ও যেন স্পর্শাতুর কামিনী ফুল, আমি যেন ভীরু ভোরের হাওয়া – যত ভালোবাসা, তত ভয়! ও বুঝি ছুঁলেই ধুলায় ঝরে পড়বে।

    এ যেন পরির দেশের স্বপ্নমায়া, চোখ চাইলেই স্বপ্ন টুটে যাবে!

    এ যেন মায়া-মৃগ – ধরতে গেলেই হাওয়ায় মিশিয়ে যাবে!

    গান শেখালাম – বিদায়ের গান নয়। বিদায়ের ছাড়া আর সব কিছুর গান। বিদায় বেলা তো আসবেই – তবে আর কথা বলে ওর সব বেদনা সব মাধুর্যটুকু নষ্ট করি কেন?

    সেদিনকার সন্ধ্যা ছিল নিষ্কলঙ্ক – নির্মেঘ – নিরাভরণ। আমি প্রফেসর চৌধুরিকে বললাম – আজকের সন্ধ্যাটা আশ্চর্য ভালোমানুষ সেজেছে তো! কোনো বেশভূষা নাই।

    বলতেই মুখের কথা কেড়ে নিয়ে প্রফেসর চৌধুরি বলে উঠলেন – ‘সন্ধ্যা আজ বিধবা হয়েছে!’

    এই একটি কথায় ওঁর মনের কথা বুঝতে পারলাম। এই শান্ত সৌম্য মানুষটির বুকেও কী ঝড় উঠেছে বুঝলাম। মনে মনে বললাম – তুমি অটল পাহাড়, তোমার পায়ের তলায় বসে শুধু ধ্যান করতে হয়! তোমাকে তো ঝড় স্পর্শ করতে পারে না!

    বৃদ্ধ বুঝি মন দিয়ে আমার মনের কথা শুনেছিলেন। ম্লান হাসি হেসে বললেন – ‘আমি অতি ক্ষুদ্র, বাবা! পাহাড় নয়, বল্মীকস্তূপ! তবু তোমাদের শ্রদ্ধা দেখে গিরিরাজ হতেই ইচ্ছা করে!

    আমি কিছু উত্তর দেবার আগেই শিউলি আমাদের সামনে এসে দাঁড়াল। হঠাৎ আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ল – ‘এই যে সন্ধ্যা দেবী!’ বলেই লজ্জিত হয়ে পড়লাম।

    শিউলির সোনার তনু ঘিরে ছিল সেদিন টকটকে লাল রং-এর শাড়ি। ওকে লাল শাড়ি পরতে আর কোনোদিন দেখিনি। মনে হল, সারা আকাশকে বঞ্চিত করে সন্ধ্যা আজ মূর্তি ধরে পৃথিবীতে নেমে এসেছে। তার দেহে রক্ত-ধারা রং-এর শাড়ি, তার মনে রক্ত-ধারা, মুখে অনাগত নিশীথের ম্লান ছায়া! চোখ যেমন পুড়িয়ে গেল, তেমনই পুরবির বাঁশি বেজে উঠল।

    শিউলির কাছে দু-একটা বাংলা গান শিখেছিলাম। আমি বললাম – ‘একটা গান গাইব?’ শিউলি আমার পায়ের কাছে ঘাসের উপর বসে পড়ে বলল – ‘গান!’

    আমি গাইলাম-

    ‘বিবাহের রঙে রাঙা হয়ে এল
    সোনার গগন রে?’

    প্রফেসর চৌধুরি উঠে গেলেন। যাবার সময় বলে গেলেন, ‘বাবাজি, আজ একবার শেষ বার দাবা খেলতে হবে!’

    চৌধুরি সাহেব উঠে যেতে আমি বললাম – ‘আচ্ছা ভাই শিউলি আবার যখন এমনই আশ্বিন মাস – এমনই সন্ধ্যা আসবে – তখন কী করব, বলতে পারো?’

    শিউলি তার দু-চোখ ভরা কথা নিয়ে আমার চোখের উপর যেন উজার করে দিল। তার পর ধীরে ধীরে বলল, – ‘শিউলিফুলের মালা নিয়ে জলে ভাসিয়ে দিয়ো!’

    আমি নীরবে সায় দিলাম – তাই হবে! জিজ্ঞাসা করলাম – ‘তুমি কী করবে!’ সে হেসে বললে, ‘আশ্বিনের শেষে তো শিউলি ঝরেই পড়ে!’

    আমাদের চোখের জল লেগে সন্ধ্যাতারা চিকচিক করে উঠল।

    রাত্রে দাবা-খেলার আড্ডা বসল! প্রফেসর চৌধুরি আমার কাছে হেরে গেলেন। আমি শিউলির কাছে হেরে গেলাম! জীবনে আমার সেই প্রথম এবং শেষ হার! আর সেই হারই আমার গলার হার হয়ে রইল!

    সকালে যখন বিদায় নিলাম – তখন তাদের বাংলোর চারপাশে উইলো-তরু তুষারে ঢাকা পড়েছে!

    আর তার সাথে দেখা হয়নি– হবেও না! একটু হাত বাড়ালে হয়তো তাকে ছুঁতে পারি, এত কাছে থাকে সে । তবু ছুঁতে সাহস হয় না। শিউলিফুল – বড়ো মৃদু, বড়ো ভীরু, গলায় পরলে দু-দণ্ডে আঁউরে যায়! তাই শিউলিফুলের আশ্বিন যখন আসে – তখন নীরবে মালা গাঁথি আর জলে ভাসিয়ে দিই!

    1 2 3 4
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleযুগলাঙ্গুরীয় – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (চলিত ভাষায়)
    Next Article রিক্তের বেদন – কাজী নজরুল ইসলাম

    Related Articles

    কাজী নজরুল ইসলাম

    ব্যথার দান – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 24, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    গানের মালা – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 22, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    যুগবাণী – কাজী নজরুল ইসলাম

    July 22, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    অগ্নিবীণা – কাজী নজরুল ইসলাম

    May 8, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    মহুয়ার গান – কাজী নজরুল ইসলাম

    May 8, 2025
    কাজী নজরুল ইসলাম

    চক্রবাক – কাজী নজরুল ইসলাম

    May 8, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }