Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শুনছ, কোথাও আছো কি কেউ?

    ইয়স্তেন গার্ডার এক পাতা গল্প72 Mins Read0

    ৪. সমুদ্র

    আমি আঙ্গুর ঝোপটার দিকে ছুট দিলাম যেখান থেকে রাস্তাটা সমুদ্রের দিকে নেমে গেছে। পেছন ফিরে দেখি মিকা আকাবাঁকা পথে ডিগবাজী খাচ্ছে আর দৌড়াচ্ছে। শেষ অব্দি ও আমার নাগাল ধরতে সক্ষম হয়।

    এরপর ও একটা আঙ্গুর শাখা টেনে ধরে, শুঁকে দেখে। ম্যাগনিফায়িং গ্লাসটাও সাথে করে এনেছে ও। এটা সে তার মুখের কাছে তুলে ধরে আর লাল বেরিটাকে কত বড় দেখাচ্ছে, তাই দেখে খলখল করে হাসে, আঙ্গুর বনের পাশে লুকিয়ে পড়ে আমি ওর দিকে ফিরি।

    ‘তুমি কি কোনো কিছু শুনতে পাচ্ছ?’ আমি জিজ্ঞেস করি।

    কয়েক মুহূর্ত সে কান পেতে শোনার চেষ্টা করে।

    ‘কেউ পানির মধ্যে লাফালাফি করছে,’ সে জবাব দেয়।

    ‘ওটাই সমুদ্র,’ আমি বলি, সগর্বে।

    ‘সমুদ্র নিজেই লাফালাফি করে।’

    খাড়ির ঢালে মস্ত মসৃণ পাথরটাতে নামলাম আমরা। এখানেই আমাদের নৌকা বাঁধা থাকে। একা একা আমার এপর্যন্তই নামার অধিকার, এর চেয়ে এক ধাপও বেশি নয়। পাথরটার একটা খাঁজে বসে পড়ি। মা এটাকে বলে পাথুরে আসন। মিকাও আমার পাশে বসে।

    ইতিমধ্যে সূর্য অনেকটা ওপরে উঠে এসেছে। উজ্জ্বল সূর্যকিরণ পানির ওপর এমন ঝিকমিক করতে থাকে যে মিকাকে চোখ কচলাতে হয়। হয়তো এত উজ্জ্বল সূর্যকিরণে সে অভ্যস্ত নয়, আমি ভাবি।

    হঠাৎ সে ম্যাগনিফায়িং গ্লাসটা সূর্যের দিকে তুলে ধরে ওটাকে ভালোভাবে দেখার জন্য। আমি ঠিক সময়ে ওকে রক্ষা করতে পারলাম।

    ‘সাবধান!’ আমি চিৎকার করি। কখনো এমনটা করবে না!’

    এতে করে সে আবার চেঁচাতে শুরু করে। আমার ভয় হলো, পাছে না চাচী হেলেন বাড়ি থেকে শুনতে পায়। তবে এখন জানি কী করতে হবে। ওর ঘাড়ের পেছনে আঙুল রেখে সুড়সুড়ি দিতে শুরু করি। ‘ওখানে, ওখানে,’ আমি বললাম। সাথে সাথে কাজ দিল।

    আমার মনে আছে বাবা আর আমি একবার টেলিস্কোপের লেন্স ধরে আগুন জ্বালিয়েছিলাম। আমি মিকাকে ব্যাখ্যা করে বোঝালাম ম্যাগনিফায়িং গ্লাস সূর্য কিরণকে এক বিন্দুতে সংহত করবে। আমি বললাম এমন কি ম্যাগনিফায়িং গ্লাস দিয়ে এক টুকরো কাগজে আগুন ধরানোও সম্ভব।

    তখনও মিকা ফোঁস ফোঁস করে কাঁদছে, তবে সেটা বেশি কিছু নয়, আর ঘাড়ে সুড়সুড়ি দিয়েই থামানো যাবে।

    ‘আমাকে সমুদ্রের কথা বলো, সে জানাতে চায়, এদিকে আমি সুড়সুড়ি দিয়েই চলেছি। ‘এর মধ্যেও কি কোনো প্রাণী আছে?’

    ‘ম্যালা,’ আমি বলি।

    ‘ডাইনোসর নাই?’

    ‘আমি মাথা ঝাঁকাই, এর পর আমি মিকাকে সমুদ্রের কথা শোনাই।

    বিজ্ঞান আর প্রাকৃতিক ইতিহাসে আমার বরাবরই আগ্রহ ছিল। আমি ডাইনোসরের উপর বই সংগ্রহ করি, আর সেখান থেকেও পৃথিবীর ইতিহাস সম্বন্ধে অনেক কথা শিখি। এসব বিষয় নিয়ে প্রায়ই বাবার সাথে আমার কথা হয়। এবার আমি মিকাকে শোনাই এই গ্রহের সব প্রাণীই সমুদ্র থেকে এসেছে।

    ‘মানবজাতিও’? সে জিজ্ঞেস করে।

    আমি আভূমি কুর্নিশ করি। তারপর বলি: ‘এই গ্রহে জীবনের শুরু ৩০০ কোটি বছর আগে। তার অর্থ পৃথিবীর সব উদ্ভিদ ও প্রাণী পরস্পরের সাথে যুক্ত।’

    ‘কিন্তু ডাইনোসরদের কী হল?’ মিকা জিজ্ঞেস করে।

    ‘সেটা এক দীর্ঘ কাহিনী,’ আমি বলি। আর আমি এই কাহিনীর কিছুটা ওকে শোনাই।

    ‘প্রথম প্রাণীটা সমুদ্রেই জন্ম নিয়েছিল। ওরা এত ছোট ছিল যে তুমি চোখেই দেখতে পেতে না। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ওরাই ছিল একমাত্র প্রাণী, তবে ওদের মধ্যে পরিবর্তন আসতে থাকে। প্রতিটা পরিবর্তনই ছিল খুব সূক্ষ্ণ, তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সেই পরিবর্তনগুলো বড় হয়ে দেখা দেয়। শত কোটি বছর তাদের সাহায্য করে। এটা ঘটল হাজার হাজার বার।

    ‘প্রথম যে প্রাণীটির সৃষ্টি হলো, সেটা ছিল জেলিফিস আর চেপ্টা কৃমি, যাদের শরীর ছিল কোমল, আর ওরা এত বড় ছিল যে তুমি হাত দিয়ে ওদের ধরতে পারতে। আরো লক্ষ লক্ষ বছর কেটে গেল, তারপর সমুদ্রে আবির্ভাব হলো শক্ত খোলসের প্রাণী যেমন গল্‌দা চিংড়ি, কুচো চিংড়ি, কাঁকড়া।’ আমার মনে হয় না মিকা কুচো চিংড়ি, গলদা চিংড়ি বা কাঁকড়া দেখেছে, তবে আমি আমার গল্প চালিয়ে যাই।

    ‘আরো কোটি খানেক বছর বাদে সমুদ্রের মধ্যে মাছ দেখা গেল, ঝাঁকে ঝাঁকে। মাছেদের মধ্যে থেকেই কিছু কিছু উভচর প্রাণীতে রূপ নিল- যেসব প্রাণী জল ও স্থল উভয় জায়গাতেই শ্বাস নিতে পারত।’

    বুঝতে পারি কিছু কঠিন শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে, তবে শব্দগুলো সদ্য শিখেছি, তাই ব্যবহার করতে মজা লাগে।

    ‘এখন কি আশপাশে কোনো উভচর আছে?’ মিকা জিজ্ঞেস করে।

    আমার মনে পড়ল ব্যাঙ, কুনোব্যাঙ আর স্যালাম্যান্ডারের কথা, কিন্তু বললাম আদিযুগের কিছু কিছু উভচর এখনও পৃথিবীতে রয়ে গেছে।

    ‘কিন্তু ডাইনোসরেরা নাই?’- মিকা জেদ করে।

    আমি মাথা ঝাঁকাই। ‘ডাইনোসরদের আবির্ভাব অনেক পরে, আর এখন ওদের কেউ অবশিষ্ট নাই।’

    ‘তাহলে কী ঘটেছিল?’

    ‘উভচররা সমুদ্র থেকে উঠে এসে বুনো জলাভূমিতে বাস করা শুরু করে পৃথিবীতে যার বিস্তার ঘটতে থাকে। লাখ লাখ বছর কেটে গেল। কোনো কোনো উভচর সরীসৃপে রূপ নিল। ডাইনোসররাও এক প্রকারের সরীসৃপ। যদিও ডাইনোসররা আর বেঁচে নেই, তবে অসংখ্য সরীসৃপ রয়ে গেছে, আর তাদের কোনো কোনোটা দেখতে ডাইনোসরের মতো।’

    মিকা সন্তুষ্ট হতে পারে না। সে আরো জানতে চায়।

    ‘আর কোন ধরনের জন্তু থেকে তোমার আগমন?’

    ‘আমি একটা স্তন্যপায়ী আর সব মানুষের মতো।’ আমি ব্যাখ্যা করি, স্তন্যপায়ীরা সরীসৃপ থেকে বিকাশ লাভ করে। প্রথমে যারা এলো তারা বড় বড় চোখ আর ধারালো মস্তিষ্কের ছোট ছোট প্রাণী আর তাদের শরীর ছিল লোমে ঢাকা। এদের শত শত প্রজাতি বাদুড়, ঘোড়া, সিংহ বানর, নেকড়ে, জলহস্তী। এদের কেউই ডিম পাড়ে না। এরা সবাই জীবন্ত বাচ্চা প্রসব করে।’

    এ নিয়ে আমরা আগেও কথা বলেছি, তবে মিকা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে।

    ‘স্তন্যপায়ীদেরকে কি বাচ্চা হিসাবে বেঁচে থাকার আগে একটা দুটা ডিম পাড়তে হয় না?’

    আমার আবারো হাসি পায়, কারণ এই গ্রহের জীবন সম্বন্ধে অনেক কিছু মিকা জানে না। তবে এক দিক দিয়ে সে ঠিকই বলেছে। মা স্তন্যপায়ীরাও ডিম উৎপন্ন করে, তবে সে ডিমের শক্ত খোসা নাই, আর মায়ের পেটেই সেই ডিম থেকে বাচ্চা হয়ে মায়ের পেটেই বড় হতে থাকে। বাড়তে বাড়তে এক সময় বাইরের পৃথিবীতে বাঁচার জন্য বড় হয়ে বেরিয়ে আসে। অবশ্য শেষের কথাগুলো মিকাকে ব্যাখ্যা করে বুঝালাম না। সত্যি বলতে কি ব্যাপারটা আমিও ভালো করে বুঝি না। মিকা সমুদ্রের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে, যেখান থেকে এই গ্রহের সমস্ত প্রাণী উঠে এসেছে।

    ‘ডিম একটা বিস্ময়কর জিনিস’ অবশেষে মিকা বলে।

    কথাটা বিজ্ঞের মতো শোনায়, তবে এখনও বুঝতে পারিনি ডিম আর ডাইনোসর নিয়ে ওর আগ্রহ কেন।

    সারাক্ষণ আমরা কথা বলে চলি সমুদ্র নিয়ে, আর কি করে পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার হলো, তা নিয়ে আর সারাক্ষণ আমি মিকার ঘাড়ে সুড়সুড়ি দিয়ে চলেছি। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল ব্যাপারটা সে উপভোগ করছে, কারণ সুড়সুড়ি থামালেই সে পানির দিকে দৌড়ে যাচ্ছে। এটা করতে দেওয়া যায় না। মিকা সাঁতার জানে কি না আমার জানা নাই, তাই এই ঝুঁকি নেয়া যায় না, কাজেই আমার পাথুরে আসন ছেড়ে ওর পিছে পিছে ছুট দেই।

    সমুদ্র নিয়ে কথা বলার সময় বিস্ময়কর একটা ব্যাপার আমার মনে পড়ল। খাড়ির কাছাকাছি পৌঁছতেই মিকা সমুদ্রের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ শুনতে পেল। বুঝতে পারি এ সম্বন্ধে মিকার জানাশোনা আছে।

    তোমাদের গ্রহে কি পানি আছে? আমি জিজ্ঞেস করি। মিকা নত হয়ে সমুদ্রের দিকে তার হাত প্রসারিত করে। সে পানি থেকে এক গাছা জলজ আগাছা তুলে নিয়ে দোলাতে থাকে। আমাদের দুজনার গায়েই ঠান্ডা পানির ছিটা লাগে।

    ‘কোন গ্রহে যদি পানি ছাড়াই প্রাণের উদ্ভব হয়ে থাকে। তাহলে তা তোমার বা আমার প্রাণের চাইতে অবশ্যই আলাদা ধরণের হবে,’ মিকা বলে।

    যেহেতু এই মুহূর্তে আমার সঙ্গী হিসাবে এমন একজনকে পেয়েছি যে বহু দূরের কোন গ্রহ থেকে এসেছে, কাজেই এটা আমার জন্য এক বড় সুযোগ ওর গ্রহ সম্বন্ধে কিছু জানার। বহির্বিশ্ব সম্বন্ধে মিকা আমার চাইতে অনেক বেশি জানে। তবে আমাদের গ্রহের জীবন সম্বন্ধে ও কিছুই জানে না। মাত্র কয়েক ঘণ্টা হয় ও এখানে এসেছে।

    ‘তোমার কি মনে হয় অনেক গ্রহেই পানি আছে?’ আমি জিজ্ঞেস করি। উত্তরে সে বাউ করে, তার পর মাথা ঝাঁকায় ‘একটা ব্যাপার হলো, কোনো গ্রহে যদি পানি থাকে, তাহলে সেটা সূর্যের খুব কাছে থাকতে পারবে না, তা হলে পানি শুকিয়ে যাবে, আবার খুব বেশি দূরেও থাকা চলবে না, তা হলে পানি জমে বরফ হয়ে যাবে।’

    এবার মিকা অবতরণ ঘাট দিয়ে দ্রুত নেমে গিয়ে সোজা দাঁড়টানা নৌকায় চড়ে বসে। সে নৌকার ওপর লাফালাফি শুরু করে দেয়, নৌকাটা দারুন দুলতে থাকে। আমি ভীষণ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ি, পাছে ও না নৌকা থেকে পানিতে উল্টে পড়ে।

    ‘এমন করো না! নৌকায় উঠে লাফালাফি করা যায় না!’ ওকে সাবধান করলাম, আমার দুশ্চিন্তা হলো, কোনো কিছু করতে নিষেধ করলেই ও চিল্লাতে শুরু করে। অবস্থাটা এড়াতে গিয়ে, একটা বুদ্ধি বের করলাম।

    ‘তুমি কি শিখতে চাও কিভাবে নৌকা বাইতে হয়?’ আমি জানতে চাই, যদিও জানতাম এটা সম্পূর্ণ নিষেধ।

    আমি ভালোভাবে নৌকা বাইতে পারি না, তবে মিকাকে দেখিয়ে দিলাম কিভাবে দাঁড় বাইতে হয়, অন্য একটা বৈঠা নিজের হাতে নিলাম, বাবা আর আমি এভাবেই নৌকা বাইতাম। খাড়ির মধ্যে খানিক দূর গিয়ে বৈঠা তুলে নিয়ে নৌকাটাকে ভাসতে দিলাম। নৌকার তলায় একটা মাছধরার বড়শি ছিল। মিকা-ই ওটা উবু হয়ে তুলে নেয়। হয়তো ওটাতে হাত দিতে নিষেধ করা উচিত ছিল, কিন্তু ইতিমধ্যেই বড়শির কল ওর আঙুলে বিঁধে গিয়েছে ‘উঃ,’ চেঁচিয়ে উঠে সে।

    ভাগ্য ভালো কলটা বেশিদূর ঢুকে পড়েনি, তবে যখন ওটা মিকার চামড়া থেকে টেনে বের করলাম, দেখি এক ফোঁটা রক্ত ছুঁয়ে বের হলো ওর আঙুল থেকে, আর সেটার রঙ লাল নয়, এর রঙ ঘন নীল, প্রায় কালোর মতো।

    হয়তো এজন্য যে সে অন্য এক গ্রহ থেকে এসেছে! মিকা হয়তো সমুদ্রের মাছ থেকে বিকাশ লাভ করেনি, ‘অন্তত আমাদের সমুদ্র থেকে তো নয়ই, কারণ মাছের রক্তও লাল। হতে পারে সে স্তন্যপায়ীই নয়, তাহলে সে কী?

    এ নিয়ে বেশি কিছু ভাবার সময় পেলাম না। কারণ মিকা ইতিমধ্যে চিৎকার আর লাফালাফি করে মহা ফ্যাসাদ বাঁধিয়েছে। আমি নত হয়ে ওর ঘাড়ে সুড়সুড়ি দিতে থাকি।

    ‘এই যে, এই যে,’ আমি ওকে সান্ত্বনা দেই, আর হঠাৎ করেই ও একদম শান্ত হয়ে গেল। যেহেতু বড়শি নিয়ে এত কাণ্ড ঘটে গেল তাই স্থির করলাম এটা কোন কাজের জন্য তা ওকে ব্যাখ্যা করে বোঝাব। মিকাকে বেশি বোঝাতে হলো না। সে বড়শিটা ছুড়ে দিল। আমি প্রায়ই বাবার সাথে মাছ ধরতে যেতাম। কয়েক বার টোপ খেয়েছিল, তবে একবার মাত্র নিজে নিজে মাছ তুলেছিলাম, কাজেই মনে হলো না, প্ৰথম চেষ্টাতেই মিকা মাছ তুলতে সফল হবে।

    ওর বড়শির সুতোয় টান পড়তে দেখলাম ‘তোমার বড়শিতে মাছ লেগেছে,’ আমি ফিস ফিস করে বললাম। ‘এবার তোমাকে সুতো টান দিতে হবে।’

    মিকা একবার হাসে, আর পরক্ষণে চিৎকার করে, মনে হয় এর আগে ও কখনও জীবন্ত মাছ দেখে নাই। সে নিজে এটাকে ছুঁতে সাহস পায় না। তাই ওকে দেখিয়ে দিলাম কিভাবে এটার ঘাড় মটকাতে হয়। তারপর ম্যাকারেল মাছ রাখার গামলায় রেখে দিলাম, ‘আমি হেলেন চাচীকে বলব এটা রেঁধে দিতে। প্যানকেক খাওয়ার আগে আমরা এটা খেতে পারব,’ আমি বললাম।

    ‘প্যানকেক কী?’ মিকা জিজ্ঞেস করে। আমি বুঝিয়ে বললাম বিশেষ খারার হিসাবে হেলেন চাচী আমাদের জন্য প্যানকেক বানাচ্ছে, আর প্রতিশ্রুতি দিলাম, ওর জন্য লুকিয়ে কয়েকটা প্যানকেক নিয়ে আসব।

    আমার মনে হলো, মিকা এর আগে কি মাছ ধরেছে, না ওর ম্যাকারেল ধরাটা নেহাৎই দৈবাৎ। এটা আমাকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

    ‘তোমাদের গ্রহেও কি সমুদ্রে অনেক মাছ আছে?’ আমি জিজ্ঞেস করলাম। মিকা মাথা ঝাঁকায়। ওর হাবভাব দেখে মনে হলো ও চিৎকার শুরু করবে।

    ‘বেশ, আমার মনে হয়, অন্য ধরনের প্রাণী আছে। তোমরা কি তাদের ধরতে পার?’ মিকা আবার মাথা ঝাঁকায়।

    ‘আমরা যেখানে বাস করি, সে সমুদ্রে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী ছিল, কিন্তু পানি এত দূষিত হয়ে পড়ে যে সবকিছু মরে লুপ্ত হয়ে যায়,’ মিকা বলে।

    কথাটা এতই ভয়ংকর আর বেদনাদায়ক শোনাল যে আমারই চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হলো। তাই আমার ভাবাবেগ ঢাকার জন্য বললাম আমাদের আবার নৌকা বাওয়া উচিত। ঘাটে নৌকা ভেড়ার পর মিকাকে শেখালাম কিভাবে নৌকা বাঁধতে হয়।

    কাজেই এই হলো আমাদের মৎস্য শিকারের অভিযান। ফেরার পথে মিকার ধরা ম্যাকারেল সহ গামলাটা সাথে নিলাম। চ্যাপ্টা পাথরটার ওপর ফেলে রাখা ম্যাগনিফায়িং গ্লাসটা তুলে নিল মিকা।

    বাড়ি ফেরার পথে গোটা পথেই যা কিছু দেখে মিকা উবু হয়ে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে পরীক্ষা করে দেখে। গোলাপ ঝাড়ে যে সবুজ মাছিটা ভনভন করছিল এখন সে ওটা দেখায় ব্যস্ত, তবে ওটা স্থির হয়ে বসছে না। আসলে ওকে দেখতে দেয়ার মেজাজে নেই।

    ‘এটা দেখছি তোমাদের অক্ষরের চাইতেও ছোট,’ বিস্ময়কর কণ্ঠে বলে ও। এত ছোট একটা প্রাণী এত প্রাণবন্ত, বিস্ময়কর নয় কি?

    ওর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আনত হয়ে বাউ করি। আমিও এমনটাই ভাবি।

    একটু পরে দেখলাম গায়ে ফোঁটা ওয়ালা একটা গিরগিটি পাথরের ওপর গুড়ি মেরে অস্তে আস্তে চলছে। মিকা এর পিছু নিল।

    ‘এটা কী?’ ও জিজ্ঞেস করে।

    ‘একটা গিরগিটি,’ আমি বলি, ‘এটা একটা সরীসৃপ।

    ‘তাহলে এটা ছোট ডাইনোসর,’ মিকা বলে।

    ‘তা ঠিক,’ আমি বলি। ‘এর চেয়ে অনেক বড় বড় সরীসৃপও আছে, যেমন কুমীর, যা পৃথিবীর কোনো কোনো অঞ্চলে বাস করে, তবে কোনোটাই ডাইনোসরের মতো এত বৃহৎ নয়। তবে তাদের প্রায় সবগুলিরই আঁশযুক্ত চামড়ার ডাইনোসরের মতো, আর ঠান্ডা রক্ত। মনে রেখ এর অর্থ এই নয় যে তাদের ঠাণ্ডা রক্ত ছিল। এর অর্থ তারা তাদের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারত না। তাদের পারিপার্শ্বের তাপমাত্রার সাথেই তাদের শরীরের তাপ ওঠানামা করত, তাদের চলাচলের শক্তি সংগ্রহের জন্য রোদের মধ্যে পড়ে থাকতে হতো।’

    মিকা চোখ বড় বড় করে তাকায়।

    ‘এসব সরীসৃপের কোনোটা কি কথা বলতে পারত?’

    আমার হাসি পায়। ‘না, তারা ততটা অগ্রসর ছিল না,’ আমি বলি, শুধু মানুষেরাই কথা বলতে পারে।’

    ঠিক সেই সময় একটা কালো বিড়াল আমাদের দিকে দৌড়ে আসতে থাকে। আমি এটাকে আদর করে কাছে ডাকি, আর নত হয়ে এর নরম পশমে হাত বুলিয়ে দেই। বিড়ালটা মিউ মিউ করতে থাকে, অবশেষে গরগর করে।

    ‘আমি বুঝতে পারি না ও কী বলছে,’ মিকা অনুযোগ করে। ‘এর অর্থ বিড়ালরা কথা বলতে পারে না,’ আমি বলি। ‘কিন্তু আমি তো শুনলাম ও বলছে মিয়াও, মিয়াও তারপর এইরকম শব্দ করল,’ মিকা বিড়ালের গরগরানী অনুকরণ করে। ‘এটা কি কথা নয়? আর কথা বলতে না পারার অর্থ কি সে চিন্তাও করতে পারে না?’

    এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা ছিল না। আমি প্রায় নিশ্চিত ছিলাম যে বিড়াল ও গরুরা আমাদের মতো চিন্তা করতে পারে না। আমি জানতাম কোন কোন জন্তু কোন কৌশল শিখতে পারে না, তবে একটা বিড়াল যে জানে না সে এক গ্রহের বাসিন্দা যেটা মহাশূন্যে একটা নির্দিষ্ট পথে তারকার চারপাশে পরিক্রমা করছে।

    ‘এটা কি সরীসৃপ?’ মিকা জিজ্ঞেস করে।

    ‘না, আর এটা উভচরও নয়,’ আমি বলি। ‘বিড়ালরা স্তন্যপায়ী।’

    ‘কাজেই এরা ডিম পাড়ে না,’ মিকা ঘোষণা করে।

    সে ম্যাগনিফাইং গ্লাসটা বিড়ালের নাকের কাছে তুলে ধরে।

    ‘আমার মনে হয় এর ঘ্রাণশক্তি প্রখর, সে বলে।

    আর তখনি বিড়ালটা ছুটে পালায়, আর আমি ভাবতে থাকি বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে মিকাকে নিয়ে কী করব। হেলেন চাচীর কাছ থেকে ওকে লুকিয়ে রাখা সম্ভব হবে কি?

    আমি মিকাকে জিজ্ঞেস করলাম, সে বাইরে চালাঘরে অপেক্ষা করতে চাইবে কিনা। সেখানে অনেক রকম ছোট ছোট প্রাণী আছে যেগুলো সে বসে বসে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে পরীক্ষা করতে পারবে।

    মাছের গামলাটা আঁকড়ে ধরে ভিতরে চলে গেলাম। ম্যাকারেলের ব্যাপারটা হেলেন চাচীর কাছে কিভাবে ব্যাখ্যা করব তা এখন ভেবে ঠিক করিনি, যতক্ষণ না সে সশরীরে সামনে এসে দাঁড়ায়।

    ‘বালতির মধ্যে করে কী এনেছ?’ সে জিজ্ঞেস করে এমনভাবে আঁতকে ওঠে যেন মাছটা একটা দৈত্য।

    ‘একটা মাছ,’ আমি সগর্বে বলি। ‘এটা এমন এক প্রাণী যা শুধু পানির মধ্যেই বাস করে। এটা এক মেরুদণ্ডী, যার শিরদাঁড়া আছে, আমাদের মতো নিঃশ্বাস নেওয়ার এর ফুসফুস নাই, কাছেই এটা পালকের মতো ফুলকার সাহায্যে পানির মধ্য থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে।

    তা সত্ত্বেও এদের সাথে আমাদের সম্পর্ক আছে, কারণ আমরা সরীসৃপের অধস্তন প্রজাতি,’ আর সরীসৃপ উভচরের প্রজাতি আর উভচররা সামুদ্রিক মাছের প্রজাতি। চাচী হেসে আমার মাথার চুল নেড়ে দেয়।

    ‘আমি জানি তুমি একজন উঠতি প্রকৃতিবিদ, ‘ সে বলে। কিন্তু আমাকে বলবে কি এই বিশেষ মৎস্যটার আগমন কোথা থেকে?’

    ঠিক এই প্রশ্নের উত্তরটাই এখন পর্যন্ত ভেবে রাখা হয় নাই। আর সেটা ঢাকার জন্যই এতসব অখাদ্য উগরে দিলাম।

    ‘একজন ধরেছে, আমি তার কাছ থেকে নিয়ে নিলাম,’ আমি বলি। কথাটা পুরোপুরি সত্য। আশ্চর্যের ব্যাপার চাচী এ নিয়ে আর প্রশ্ন করে না। শুধু আমার হাত থেকে মাছের বালতিটা রান্নাঘরে নিয়ে রাখে। বুঝতে পারলাম, ময়দা নিয়ে এতো ঝামেলার পর মাছ নিয়ে ঘাটাঘাটি করার ইচ্ছা ছিল না তার।

    প্যানকেক খেতে খেতে দুইবার বাবার টেলিফোন আসে। বাচ্চার আবির্ভাব এখনও ঘটেনি। তবে মা ভালোই আছে, আর আমাকে আদর জানিয়েছে।

    খাবার খেতে খেতে আমি দুবার টয়লেটে গেলাম, যেটা চাচীর কাছে একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার মনে হলো। প্রত্যেকবার আধখানা করে কেক ওয়েলিংটন বুটের মধ্যে লুকিয়ে ফেললাম।

    ‘আজ বিকেলে তোমার কী করার ইচ্ছা, জো?’ হেলেন চাচী জিজ্ঞেস করেন। ‘আমরা কি সমুদ্রে বেড়াতে যাবো?’

    ‘না, ধন্যবাদ,’ আমি তাড়াহুড়া করে বলি। এখানেই আমার অনেক কাজ আছে।’

    ‘সুন্দর, চাচী বলে, ‘সেই ক্ষেত্রে আমি বাগানে গিয়ে বসব, তারপর রান্না বান্নার অনেক কাজ আছে, যাতে তোমার মা বাচ্চা নিয়ে ফিরে এলে বাড়িতে যথেষ্ট খাবার দাবার থাকে।

    চাচী হেলেন যখন রান্নাঘরে ধোয়া মোছায় ব্যস্ত, সেই ফাঁকে আমি চালাঘরে ছুটে যাই মিকাকে দেখতে। সেখানে কেউ নাই!

    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসোফির জগৎ – ইয়স্তেন গার্ডার
    Next Article রামায়ণের উৎস কৃষি – জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    ইয়স্তেন গার্ডার

    সোফির জগৎ – ইয়স্তেন গার্ডার

    July 10, 2025
    ইয়স্তেন গার্ডার

    শুনছ, কোথাও আছো কি কেউ?

    July 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.