Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শেবা – জ্যাক হিগিনস

    জ্যাক হিগিনস এক পাতা গল্প262 Mins Read0

    ০৯. কেইন লম্বা একটা শ্বাস নিল

    ০৯.

    কেইন লম্বা একটা শ্বাস নিল আর এক হাতের পিছন দিয়ে চোখের ঘাম মুছলো। ঘুরে রুথ কানিংহামের ভয়ে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকাল-”আপনি ঠিক আছেন তো?

    সে ঘাড় কাত করল।নিচে নামার সময় আমি শক্ত করে ধরে রেখেছিলাম।

    কেইন দরজা খুলে লাফ দিয়ে মাটিতে নামল। র‍্যাপিডের নাকটা নরম বালুতে অর্ধেক ডুবে রয়েছে আর বামদিকের ডানাটা বাঁকা হয়ে মুচড়ে অকার্যকর হয়ে গেছে।

    ‘আমি বুঝলাম না আগুন লাগে নি কেন, সে ভুরু কুঁচকে বলল, তারপর দরজার কাছে এসে ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলের দিকে তাকাল। আশ্চর্য তেলের ট্যাংকতো খালি।’

    রুথ কেবিনের এপাশে এসে দরজার বাইরে মুখ বাড়িয়ে বলল, এর মানে কী হতে পারে?

    “ঠিক বলতে পারব না। ইঞ্জিন যেহেতু বন্ধ হলো, সেটা তেলের অভাবে হতে পারে, কিন্তু বুঝতে পারলাম না তা কেন হবে! এখন রেডিওর অবস্থা কি কে জানে।

    সে রেডিও পরীক্ষা করবার জন্য কেবিনে উঠল। রুথ কানিংহাম বলল, সিগন্যাল শোনার মতো ধারে কাছে কেউ কি আছে?

    কেইন মাথা নাড়ল, জর্ডনের ক্যাম্পে একটা শর্ট ওয়েভ রিসিভার আছে।’ রেডিও সেটটা চট করে পরীক্ষা করে সে মুখ বাঁকা করে বলল, এটাও গেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কাজ করার উপযোগী করে এটা তৈরি করা হয় নি।

    রুথ কানিংহাম হাত দিয়ে মুখ মুছে বলল, ‘এক গ্লাস পানি পেলে হতো।’

    ‘শিগগিরই এটা ঠিক করে ফেলব।’ এই কথা বলে সে পেছনের সিটে হাত বাড়াল পানির বড় একটা জেরি ক্যান আর প্লাস্টিক কাপের জন্য।

    ‘এটা ভর্তি আছে। কাজেই পানি নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা হবে না।’

    রুথকে পানি দিয়ে নিজেও পানি খেলো। তারপর এরোপ্লেনের ডানার ছায়ার নিচে বসে কোন কথা না বলে চুপচাপ সিগারেট টানতে লাগল।

    কিছুক্ষণ পর রুথ কেইনের দিকে ঘুরে তাকিয়ে স্থির কণ্ঠে বলল, গ্যাভিন ঠিক করে বলুনতো কোন আশা আছে?

    ‘আপনি যা ভাবছেন তার চেয়ে অনেক বেশি। আমার হিসাবে আমরা শাবওয়া থেকে প্রায় ত্রিশ মাইল এসেছি। দিনের গরমে এই দূরত্ব পার হবার চেষ্টা করা ঠিক হবে না। সবচেয়ে ভাল হবে এখানে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যায় রওয়ানা দেওয়া। রাতের ঠাণ্ডায় আমরা অনেক তাড়াতাড়ি যেতে পারব।’

    আপনার কি মনে হয় তারা আমাদের খুঁজতে আসবে?’

    অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে মাথা নেড়ে সে বলল, অবশ্যই আসবে। মেরি আর জর্ডন বার আল-মাদানিতে যখন জানতে পারবে যে আমাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, তখন সাথে সাথে তারা একটা অনুসন্ধান দল পাঠাবে। তার ফোর্ড ট্রাকগুলো মরুভূমিতে কাজ করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে।’

    রুথ তার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু খুঁজলো, তারপর মৃদু হেসে বলল, ‘আপনার সাথে আছি বলে আমি আনন্দিত গ্যাভিন। অন্য কেউ হলে আমি ভয় পেতাম, সত্যি ভয় পেতাম।

    সে মৃদু হেসে রুথকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করল, এখানে ভয় পাবার কিছু নেই, কেবল কয়েক ঘণ্টা কষ্ট করতে হবে। পরে বছরের পর বছর ধরে এই ঘটনা নিয়ে আপনি গল্প করতে পারবেন। আর দিনের পর দিন ঘটনার বিবরণ বেড়ে যাবে।’

    ‘আপনার কথাই হয়তো ঠিক।’ তার কাঁধ ঝুলে পড়েছে আর বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।

    কেইন তাকে কেবিনের দিকে ঠেলে বলল, কয়েক ঘণ্টা ঘুমাতে চেষ্টা করুন। ভেতরে একটু ঠাণ্ডা পাবেন। আমি বিকালে জাগিয়ে দেব।

    সে দরজা বন্ধ করে এরোপ্লেনের ডানার নিচের ছায়ায় এক হাতে মাথা : রেখে শুয়ে পড়ল।

    সে আশা করছে যতটুকু নিশ্চয়তা সে দিতে চেষ্টা করেছে সে রকমই ভাবতে পারলে ভাল হতো। একা একা আর প্রচুর পানি নিয়ে রাতের বেলা জোর কদমে হাঁটলে শাবওয়া পৌঁছাবার ভাল চান্স আছে, কিন্তু সাথে একজন মহিলা থাকলে…!

    একটা বিষয় নিশ্চিত, মেরি আর জর্ডন ওদেরকে অবশ্যই খুঁজতে আসবে। তবে সমস্যা হলো এই বিশাল মরুভুমিতে ঠিক কোন জায়গায় খুঁজবে।

    সে নিরবতায় কান পেতে শুনতে থাকল আর অনুভব করল গরম প্রায় একটা দৈহিক শক্তির মতো তার উপর চেপে বসছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সে ঘুমিয়ে পড়ল।

    হঠাৎ কোথাও একটা আর্তচিৎকার শোনা গেল আর টের পেল শক্ত কিছু একটা তার চোয়ালে খোঁচা মারছে। চোখ খুলতেই লম্বা একটা বন্দুকের ব্যারেল তার নজরে পড়ল।

    রঙিন পাগড়ি পরা একজন ইয়েমনি বন্দুক ধরে আছে। তার অর্ধনগ্ন শরীরে নীল দিয়ে লেপা। দুই কান কাটা–আর ডানদিকের গালে ছাপ মারা একজন চোরের চিহ্ন।

    আরো দুই জন রুথ কানিংহামকে কেবিন থেকে টেনে হিঁচড়ে নামাচ্ছে। কেইন কোন মতে উঠে দাঁড়াতেই রুথের শার্ট ছিঁড়ে গেল, সে মাটিতে পড়ে গেল। একজন লোক হাসতে হাসতে তার চুল ধরে টেনে দাঁড় করাল।

    লোকটির মুখের এক পাশ খেয়ে গেছে। চোখের পাশে চামড়া পোড়া আর নাকের জায়গায় কেবল দুটো ছিদ্র। রুথ কানিংহাম ভয়ংকর সেই মুখের দিকে তাকিয়ে জ্ঞান হারালো।

    কেইন রুথের দিকে এগোতেই তিন ইয়েমনি তার দিকে রাইফেল তাক করল। আর এগোলে ভাল হবে না। কান কাটা লোকটা আরবিতে কর্কশ কণ্ঠে বলে উঠল।

    কেইন তার শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে বলল, “আমাদেরকে বার আল-মাদানি নিয়ে চলো, তোমাদের ভাল বকশিষ দেওয়া হবে।

    বিভৎস মুখের লোকটা একটা গালি দিয়ে মাটিতে থুথু ফেলল। সে দ্রুত সামনে এক কদম এগোল তারপর রাইফেলটা উল্টো করে তার বাট দিয়ে কেইনের পেটে জোরে একটা গুতো মারল। আরেকজন তার হিপ পকেট থেকে কোল্ট অটোমেটিকটা বের করে নিল। কেইন মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকল আর অপেক্ষা করতে থাকল যন্ত্রণাটা চলে যাবার। ওরা কিছুক্ষণ তাকে এভাবে ফেলে রাখল।

    লোক তিনটা যে ডাকাত তা বোঝাই যাচ্ছে। এখন ওদেরকে নিয়ে তারা কী করতে যাচ্ছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লোকগুলো কিছু একটা বিষয়ে তর্ক করছে। কেইন চোখ খুলল, তার নিশ্বাস এখন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ওদের কথা শুনতে চেষ্টা করল।

    চামড়ার স্যান্ডেল পরা নোংরা বাদামি একটা পা তার মুখের সামনে এল একটা হাত তাকে টেনে তুলে বসালো। সে এখন দু’কান কাটা লোকটার মুখোমুখি।

    সে কেইনের সামনে আসন পেতে বসল। হাতের রাইফেলের ঘোড়া টিপে ধরে দাঁত বের করে হাসল। এবার আমাদের যাওয়ার সময় হয়েছে।

    ‘আমাদেরকে বার আল-মাদানি নিয়ে চলো।’ কেইন অনুরোধ করল। ‘আমি কথা দিচ্ছি তোমাদেরকে প্রচুর পুরষ্কার দেওয়া হবে। পাঁচ হাজার মারিয়া থেরেসা ডলার।’

    ইয়েমনি লোকটা দু’দিকে মাথা নাড়ল। সীমান্তের ওপারে আমি একজন মৃত লোক। সে রুথ কানিংহামকে দেখিয়ে বলল, এই মহিলাটিকে সানার দাস বাজারে বিক্রি করে আমরা অনেক টাকা পাবো।

    কেইন বলল, দশ হাজার, কত চাও বল। এই মহিলা নিজের দেশে একজন ধনী মানুষ।

    আরব লোকটি মাথা নাড়ল। কী করে আমি বুঝবো সে আমাকে ন্যায্য দাম দেবে? ইয়েমনে একজন শেতাঙ্গ নারীর অনেক দাম পাওয়া যায়।

    ‘আর আমার ব্যাপারে? কেইন বলল।

    ইয়েমনি লোকটা কাঁধ ঝাঁকাল, আমার বন্ধুরা তোমার গলা কেটে ফেলতে চায়। কিন্তু আমি তাদের রাজি করিয়েছি অন্য কিছু করতে। তুমি বাঁচো কী মর সেটা তোমার নিজের ব্যাপার। একজন শক্তিশালী মানুষের জন্য শাবওয়া খুবই কম দুরত্ব।

    কেইন ভুরু কুঁচকালো, তোমার কথা বুঝতে পারলাম না।

    ইয়েমনি লোকটা দাঁত বের করে হাসলো, আমাকে চিনতে পারো নি?’ দু’বছর আগে বাল হারিস যখন শাবওয়ার কাছে তাঁবু গেড়েছিল? তখন একটা ঘোড়া চুরির ব্যাপার ঘটেছিল। ওরা আমাকে ধরতে পারলে প্রাণে মেরে ফেলতো। তুমি অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত আমাকে তোমার ট্রাকে লুকাতে অনুমতি দিয়েছিলে। আল্লাহর ইচ্ছা দেখো, কী আশ্চর্য।

    সাথে সাথে কেইনের ঐ ঘটনার কথা মনে পড়ল, সে একটু ঝুঁকে গলা নামিয়ে বলল–আমাদেরকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে চল। আমি তোমাকে অনেক পুরষ্কার দেব। অন্তত এটুকু করার জন্য তুমি আমার কাছে ঋণী।

    ইয়েমনি লোকটি মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়াল, ‘জানের বদলে জান। এখন তোমার কাছে আমার কোন ঋণ নেই। ব্যস শোধ বোধ হয়ে গেল। আমার বন্ধুরা কম করে হলেও তোমার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলতে চেয়েছিল। যদি তুমি বুদ্ধিমান হও তবে আমরা যাওয়া পর্যন্ত চুপচাপ বসে থাকবে।

    তারপর সে তার সঙ্গীদের সাথে যোগ দিল। ওরা ততক্ষণে ওদের উটের পিঠে চড়ে বসেছে। একজন আরব রুথ কানিংহামের অচেতন দেহটা কাঠের জিনের উপর আড়াআড়ি ভাবে ঝুলিয়ে দিল। কেইন অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের চলে যাওয়া দেখল, যতক্ষণ না ওরা বালিয়াড়ির অপর দিকে অদৃশ্য হয়ে গেল।

    সে ঘড়ির দিকে তাকাল। দুপুর পার হয়ে গেছে, তার মানে সে একটু বেশি সময় ঘুমিয়েছে। কয়েকটা মুহূর্ত সেখানে বসে একের পর সম্ভাব্য কর্তব্য ভাবলো আর বাতিল করল। কিন্তু কোন সমাধান খুঁজে পেল না, শুধু এটুকু আশা আছে যে হয়তো সে রেডিও ব্যবহার করে কিছু একটা করতে পারবে। কেবিনে ঢুকে সে কাজ শুরু করল।

    প্রথম থেকেই তার চেষ্টা অসফল ছিল। তারপরও সে অবিরাম কাজ করে। যেতে লাগলো। অনেকক্ষণ পর বোঝা গেল রেডিওর ক্ষতিটা মেরামতের অযোগ্য। যদি কোন ভাবে একটু খানি স্পার্ক ফিরে আসতে যাতে বহির্জগতে একটা মেসেজ পাঠাতে পারে, তাহলেই চলতো।

    তার শরীর থেকে টপ টপ করে ঘাম ঝরতে লাগল। কেবিনের প্রচণ্ড তাপ, তার সারা শরীর এমনভাবে ঢেকে ফেলেছিল যে তাকে কয়েকবার বিশ্রাম নিতে আর পানি পান করতে হয়েছিল। তিনটার একটু পর সে পরাজয় স্বীকার করল। ক্লান্ত হয়ে সিটে বসে একটা সিগারেট ধরাল।

    ঠিক সেই মুহূর্তে নিঃস্তব্ধতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে আসা একটা ইঞ্জিনের শব্দ পাওয়া গেল।

    সে এক লাফে মাটিতে নেমে দাঁড়িয়ে কান পেতে শুনতে লাগল, হঠাৎ তার মনে ক্ষীণ আশা জেগে উঠল। শব্দটা কাছে, আরো কাছে চলে এলো। সে এক হাত চোখের উপর রেখে উপরের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল প্রায় একশো গজ সামনে একটি ট্রাক একটা বালিয়াড়ির উপরে উঠল, তারপর তার দিকে এগিয়ে এল।

    মেরি ট্রাক চালাচ্ছে, পাশে জামাল বসা। কেইন ওদের দিকে এগিয়ে যেতেই সে ইঞ্জিন বন্ধ করল, তারপর ট্রাক থেকে নেমে ওর দিকে দৌড়ে এল, ‘তুমি ঠিক আছে তো গ্যাভিন?’ সে উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করল।

    সে মাথা নাড়ল, “আমি ঠিক আছি, কিন্তু বুঝতে পারলাম না তুমি এত তাড়াতাড়ি এখানে কি করে এলে?

    ‘সে এক লম্বা কাহিনী, মিসেস কানিংহাম কি প্লেনে আছেন?

    কেইন মাথা নাড়ল, না নেই।

    সে দ্রুত সব কিছু খুলে বলল। তার বলা শেষ হলে মেরিকে চিন্তিত দেখাল, সন্ধ্যার আগে যদি আমরা ওদের ধরতে না পারি, তাহলে জানার কোন উপায় নেই ওরা তার সাথে কি করতে পারে।

    কেইন সায় দিল। তবে এখন রওয়ানা দিতে পারলে ওদেরকে খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট হবে না।’

    সে সামনের সিটে মেরির পাশে বসল, জামাল বসল পেছনে। তারপর কয়েক মিনিটের মধ্যে ওরা তিনটি উটের পরিষ্কার পায়ের ছাপ অনুসরণ করে চলতে শুরু করল।

    বারোটা ফরওয়ার্ড গিয়ার আর ফোর হুইল ড্রাইভের কারণে ট্রাকটা বালিয়ারিতে চলার অত্যন্ত উপযোগী ছিল।

    কেইন সিটে হেলান দিয়ে বসল। বার আল-মাদানিতে কি কি হয়েছে সব খুলে বল।

    মেরি বলল, এগারোটার মধ্যে জর্ডনের সাথে আমার কাজ শেষ হয়ে যায়। তারপর সে তার ড্রাইভারকে দিয়ে জামাল আর আমাকে ট্রাকে করে গ্রামে পাঠিয়ে দেয়। এয়ারস্ট্রিপে পৌঁছে দেখলাম ওমর সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সে জানাল উপকুল এলাকা থেকে একজন আগন্তুক গ্রামে এসে বলে বেড়াচ্ছে তুমি আর ফিরে আসবে না।

    কেইন বলল, ওমর এমনি এমনি নিজে থেকে তোমাকে খবরটা দিল?

    সে মৃদু হাসল। আরবদের এই জটিল মনস্তত্ত তুমি কখনও বুঝতে পারবে না, গ্যাভিন। মুখোমুখি লড়ে একজন শত্রুকে মেরে ফেলা এক জিনিস, কিন্তু ছলচাতুরি করে এরোপ্লেনের ক্ষতি করাটা,’ সে কাঁধ ঝাঁকাল। ওমরের কাছে এ ধরনের কাজ সম্মানহানিকর।

    কেইন বলল, মানলাম একথা। কিন্তু ঠিক কী ঘটেছে, সেটা তুমি কী করে নিশ্চিত হলে?

    ‘ওমর আমাদের সে লোকটিকে দেখিয়ে দেয়। আর জামাল তাকে একটা কুঁড়েঘরের পেছনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। লোকটা খুবই একগুয়ে ছিল, কিন্তু ডান হাত ভাঙ্গার পর যখন তাকে বলা হলো বাম হাতেরও একই অবস্থা হবে, তখন সে হার মানল।’

    কেইন অবাক হয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল–’মাই গড, তুমি অর্ধেক কোন কিছুতে বিশ্বাস করো না, তাই না?

    ‘আমার মা ছিলেন একজন রশিদ, সে শান্ত স্বরে বলল। আমরা কঠিন মানুষ, বিশেষত যে জিনিসকে আমরা মূল্য দেই তার উপর কোন ধরনের আঘাত এলে আমরা ছেড়ে দেই না।

    এ কথার পর আর কোন কিছু বলার দরকার পরে না। কেইন বলল, ‘আমার মনে হয় সে তেলের ট্যাংকে কিছু কারসাজি করেছে, তাই না?

    ‘গ্রামের লোকজন যখন দল বেঁধে আততায়ীদের লাশের চারদিকে জমায়েত হচ্ছিল, তখন সে সুযোগটা নেয়, ভিড়ের মধ্যে কেউ তাকে খেয়াল করেনি।

    ‘তুমি কী জানতে পেরেছো কে তাকে এই কাজ করার জন্য টাকা দিয়েছে?’

    সে মাথা নাড়ল। তুমি যা ভেবেছিলে–সেলিম।

    কেইন ভুরু কুচকালো। সে নিশ্চয়ই আমাকে এত ঘৃণা করে যে এতদূর পর্যন্ত এগোতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি প্লেনটা কীভাবে খুঁজে পেলে?

    ‘আমি জানতাম তুমি একটা ডাইরেক্ট লাইনে শাবওয়া থেকে মারিব উড়ে যাবে। আমি একটা বেয়ারিং নিলাম, কম্পাস ধরে ধরে এগোলাম আর বাকিটা ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিলাম। সমস্ত বিষয় সম্পর্কে একটা নোট লিখে জর্ডনের ড্রাইভারকে তার কাছে পাঠিয়ে দিলাম।

    কেইন দাঁত বের করে হাসল, ‘তুমি দ্রুত অপরিহার্য হয়ে যাচ্ছে।

    কোন কথা না বলে সে এক মনে ড্রাইভ করতে লাগল। উটের আঁকাবাঁকা পায়ের ছাপ সহজেই অনুসরণ করতে করতে শেষ পর্যন্ত ওরা একটা চওড়া সমতল ভূমিতে এসে পৌঁছলো। বালুর সাথে নুড়ি মেশানো পথটা বেশ দূরে চলে গেছে। সে টপ গিয়ার দিয়ে বোর্ডে পা চেপে ধরল।

    ট্রাক ধুলির ঝড় তুলে সমতল ভূমির পথে ছুটে চলল। একটু পর তিনজনেরই আপাদমস্তক বালুতে মাখামাখি হয়ে গেল। কেইন মুখে পানির ঝাপটা দিল আর সারাক্ষণ দুরের কালো কালো বিন্দুর মতো আকৃতিগুলোর দিকে কিছু একটার আশায় চেয়ে থাকল।

    ট্রাকের ছাদে দুটো রাইফেল ব্রাকেটে আটকানো ছিল। সেগুলো নামিয়ে একটা জামালকে দিল। বিশালাকৃতির সোমালি অত্যন্ত নিপুণতার সাথে রাইফেলটা পরীক্ষা করে কোলে নিয়ে বসল, একটা আঙুল ট্রিগার গার্ডে ধরে রাখল।

    কেইন তার রাইফেলটা শক্ত হাতে ধরে ধুলোভরা চোখে উইন্ডশিল্ড দিয়ে বাইরের দিকে তাকাল। অপেক্ষা করতে করতে তার মন এতই শূন্য হয়ে গিয়েছিল যে মেরি যখন তার কানের কাছে চিৎকার করে উঠল তখন সে চমকে উঠল। দূরের কালো ফোঁটাগুলো দ্রুত ওদের দিকে এগিয়ে আসছে।

    সে রাইফেলটা একটু উঁচু করে ধরে অপেক্ষা করতে লাগল। দ্রুত উট তিনটার কাছে পৌঁছাতেই সব শেষের লোকটা পেছন ফিরে ওদের দেখতে পেয়ে মুখ হাঁ করে চিৎকার করে উঠল। সে তার উটকে দ্রুত সামনে এগিয়ে নিয়ে চলল।

    মেরি হুইল ঘুরিয়ে ট্রাকটা আরব লোকগুলোর সামনে এগিয়ে গেল। কেইন ওদেরকে সতর্ক করার জন্য রাইফেল তুলে মাথার উপর দিয়ে একটা গুলি করল। ট্রাকটা ওদের সামনে গিয়ে থামল।

    মেরি ব্রেক কষে থামতেই ক্ষতবিক্ষত চেহারার লোকটা, যে তার উটের পিঠে রুথ কানিংহামকে বহন করছিল, সে তাকে ছেড়ে দিতেই রুথ মাটিতে পড়ে গেল। লোকটা এক হাতে রাইফেল তুলে নিতেই জামাল দ্রুত একটা গুলি করল। লোকটা গুলির ধাক্কায় উটের পিঠ থেকে নিচে পড়ে গেল।

    মেরি ট্রাকটা সামনে চালিয়ে নিয়ে রুথ কানিংহামের পাশে থামাল। সে দুই হাতে মাথা চেপে ধরে কাঁদছিল। মেরি তাকে শান্তস্বরে জিজ্ঞেস করল, তারা আপনার কোন ক্ষতি করেছে?

    রুথ কানিংহাম কয়েকবার মাথা নেড়ে অনেক কষ্টে কথা বলতে পারল। ভয়ংকর চেহারার লোকটা অনবরত আমার গায়ে হাত দিচ্ছিল, কিন্তু ওদের মধ্যে যে লোকটা নেতা ছিল সে তাকে বাধ্য করল আমাকে ছেড়ে দিতে। কাঁদতে কাঁদতে সে মাটিতে বসে পড়ল। মেরি তাকে ধরে আস্তে আস্তে ট্রাকে নিয়ে একটা সিটে বসিয়ে দিল।

    কেইন অন্য লোকদুটোর দিকে এগিয়ে গেল। জামালের উদ্যত কারবাইনের সামনে ওরা উটের পিঠে শান্ত হয়ে বসেছিল। কান কাটা লোকটা কেইনের দিকে চেয়ে দাঁত বের করে হাসল–”আল্লাহর ইচ্ছা কী বিচিত্র।

    ‘তুমি একেবারে সঠিক কথাটাই বলেছো, আসলেই তাই, কেইন বলল। ‘তোমার ভাগ্য ভাল যে তুমি তার কোন ক্ষতি করেনি। এখন এখান থেকে ভাগো।

    কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সে লোকদুটোর উট নিয়ে চলে যাওয়া দেখল, তারপর মৃত লোকটির জন্য একটা অগভীর কবর খোঁড়ার জন্য জামালকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেল।

    যখন ওরা ট্রাকে ফিরে এল তখনো রুথ কানিংহাম মেরির কাঁধে মাথা রেখে নিঃশব্দে কোঁপাচ্ছিল। কেইন ভুরু উঁচু করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই মেরি মাথা নাড়ল। কেইন কাঁধে ঝাঁকি দিয়ে বলল, এখন কোন তাড়া নেই। ঘণ্টা খানেক বিশ্রাম নিয়ে তারপর ফিরতে শুরু করব।’

    ট্রাকের পাশে পিঠ দিয়ে সে বালুতে বসল। বুশহ্যাটের কিনারা চোখের উপর টেনে নামাল। একটু পর মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে এলো আর সে ঝিমুতে শুরু করল।

    মনে হলো যেন এক মিনিট মাত্র কেটেছে। ঠিক তখনই কাঁধে মৃদু ঠেলা খেয়ে সে জেগে উঠল। মেরি তার দিকে চেয়ে মৃদু হাসল। এখন আমাদের যাওয়া দরকার গ্যাভিন, ছয়টা বেজে গেছে।

    কেইন উঠে দাঁড়িয়ে ট্রাকের ভেতরে দেখল। রুথ কানিংহাম একটা প্যাসেঞ্জার সিটে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে রয়েছে। কেইন মেরির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল, তারপর ড্রাইভিং সিটে বসল। মেরি আর জামাল ঘুরে অন্য পাশে গিয়ে বসল। কেইন আস্তে ক্লাচ ছেড়ে ট্রাকটা এগিয়ে নিয়ে চলল।

    গাড়ির ড্যাশবোর্ডে একটা কার কম্পাস ছিল। কেইন সিদ্ধান্ত নিল উটের রাস্তা ছেড়ে আরো সরাসরি পথ খুঁজে নিয়ে শাবওয়া যাবে।

    একটু পর একটা বিরাট কমলা রঙের বলের মতো সূর্য দিগন্তে ডুবতে শুরু করল। দ্রুত রাত নেমে এলো, যে রকম হয়ে থাকে মরুভূমিতে। আকাশ পরিষ্কার। হিরের টুকরার মতো দিগন্ত জুড়ে তারার মালা ছড়িয়ে রয়েছে আর চাঁদের অপার্থিব সাদা আলো যেন মরুভূমিকে ধুয়ে রেখেছে।

    কেইনের কাঁধে মাথা রেখে মেরি ঘুমে ঢুলছিল। সে সিটে হেলান দিয়ে স্টিয়ারিং হুইলে হাত স্থির রেখে সামনে রাতের অন্ধকারের দিকে সোজা চেয়ে রয়েছে।

    হঠাৎ দৃশ্যটা দেখে সে এমন একটা ধাক্কা খেল যে সাথে সাথে সজোরে ব্রেকে পা চাপতেই ট্রাকটা এমন জোরে থামাল যে সবাই সিটের সামনের দিকে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। তাদের ঘুম ভেঙে গেল।

    কী হয়েছে গ্যাভিন? মেরি ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠল।

    সে কোন কথা না বলে গাড়িটার ডান দিকে আঙুল তুলে দেখাল।

    সামনে একটা ঢিবির উপর সুন্দর একটা পাথরের স্তম্ভ। চাঁদের আলোয় বালুতে তার লম্বা ছায়া পড়েছে।

    কেইন ট্রাক থেকে নামল। মেরিও নেমে তার পিছু পিছু স্তম্ভটার দিকে এগোল। কয়েক ফুট দূরত্বে পৌঁছার পর তার পায়ের সাথে ধাতব কিছু একটার ধাক্কা লাগল।

    সে নিচু হয়ে কয়েকটা ক্যান তুললো হাতে। কনড বিফ আর স্যুপ। লোকটা যেই হোক আরব নয়, এটা নিশ্চিত।’

    তারপর সে নিচু হয়ে আরেকটা বস্তু তুলে নিল। এমন সময় রুথ কানিংহাম আর জামালও ওদের সাথে যোগ দিল। প্রথমে বুঝা গেল না জিনিসটা কি। তারপর উল্টো করে ওদের দিকে তুলে ধরল–বেশ বড় একটা খালি এলুমিনিয়ামের পানির বোতল।

    .

    ১০.

    জামাল সযত্নে স্তম্ভটার গোড়া থেকে আলগা বালু পরিষ্কার করতে লাগল। আর কেইন তার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে একটা শক্তিশালী ইলেট্রিক টর্চ ধরে থাকল।

    খানিকক্ষণ পর জামাল কাজ শেষ করে কেইনকে দেখাল। কেইন সামনে ঝুঁকে দেখল পরিষ্কার খোদাই করা একটি দীর্ঘ সঙ্কেতলিপি ফুটে উঠেছে। কয়েক মিনিট নিবিষ্টভাবে লিপিগুলো পড়ে দেখল, তারপর উঠে দাঁড়িয়ে ট্রাকের দিকে হেঁটে গেল।

    একটা স্পিরিট স্টোভ জ্বালানো হয়েছে। মেরি আর রুথ কানিংহাম একটা পাত্রে গরম পানিতে মটরশুটি গরম করছে। কেইন ওদের পাশে এসে বসতেই রুথ একটা টিনের মগে কফি ঢেলে তার হাতে দিল–আর কিছু পেলেন?

    কেইন কফিতে চুমুক দিয়ে বলল, একটা দীর্ঘ সাবেঈন শিলালিপি প্রাচীন শেবা রাজ্যের ভাষা। দুর্ভাগ্যবশত সাথে কোন বই নেই আর আমার স্মৃতিতেও একটু মরচে পড়েছে। মগটা আরো কফির জন্য সামনে এগিয়ে ধরল। দু’একটা সঙ্কেতলিপির অর্থোদ্ধার করতে পেরেছি। যেমন, অ্যাসথার আর দূরত্ব নিয়ে কিছু লেখা, যার সাথে আমি পরিচিত নই।’

    মেরি এক হাতে চুল ঠেলে সরালো। স্পিরিট–স্টোভের আলো বাতাসে ভেসে এসে তার মুখের উপর নেচে বেড়াচ্ছিল। তুমি বলতে চাও এটা এক ধরনের মাইলস্টোন?

    কেইন মাথা কাত করল। এটা সেই আলেক্সিয়াস কথিত সাতটি স্তম্ভের একটি।

    সে বলল, “কিন্তু তা কি করে সম্ভব? রানি শেবার সময়ে যদি স্তম্ভটি প্রোথিত হয়ে থাকে, তাহলে তো এটা প্রায় তিন হাজার বছর পুরোনো।

    কেইন বলল, মরুভুমির শুষ্ক তাপের কারণে তা অবশ্যই সম্ভব। আমি মারিবে আড়াই হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো শিলালিপি দেখেছি। সেগুলো দেখে এমন মনে হয়েছে যেন মাত্র গত কাল কোন রাজমিস্ত্রি সেগুলো খোদাই করেছে। আরেকটা বিষয়, তুমি তো জানোই কত ঘন ঘন এখানে বালুঝড় হয়ে থাকে। এগুলি হয়তো বালুর নিচে চাপা পড়েছিল, তারপর বাইরে উঠে এসেছে, বছরের পর বছর ধরে এরকম অনেকবার হয়েছে।’

    ‘আর ঐ পানির বোতল আর খালি ক্যানটা সম্পর্কে কী মনে করেন? কেইনের হাতে এক প্লেট মটরশুটি তুলে দিয়ে রুথ বলল।

    ‘আমার মনে হয় আপনার স্বামী এগুলো এখানে ফেলে রেখে গেছেন। এটা তো আমরা জানি তিনি শাবওয়া থেকে উটে চড়ে যাত্রা শুরু করেছেন। এরপর তার যাই হোক না কেন, বোঝা যাচ্ছে তিনি এ পর্যন্ত এসেছিলেন।’

    রুথ বলল, কিন্তু ঐ তিন ডাকাত?’ এরকম ডাকাততো আরো থাকতে পারে।

    সে মাথা নাড়ল–তাও সত্যি। সমস্ত মানুষ ওদের ধরতে চায় বলে ডাকাতগুলো এমন জায়গায় যায়, যেখানে অন্য কোন মানুষ যেতে সাহস করে না। কিন্তু কোন এক রীতি অনুযায়ী এখান পর্যন্ত ওরাও আসে না। ওরা মরুভুমির ধারে ঘুরে বেড়ায় আর যেখানে পানি পাওয়া যায় তার কাছাকাছি থাকে। যাইহোক শুধু ইউরোপিয়ানরাই এ ধরনের পানির বোতল ব্যবহার করে। বেদুঈনরা ছাগলের চামড়ার তৈরি মশক ব্যবহার করে।

    একটু পর মেরি বলল, তাহলে সবই সত্যি–শেবা আর তার মন্দির। আলেক্সিয়াস আর তার রোমান অশ্বারোহী বাহিনী!

    ‘হ্যাঁ, তারা হয়তো এই পথ দিয়েই গিয়েছিল। কেইন বলল।

    তার কথার পর এক ধরনের ভূতুড়ে নিরবতা নেমে এল, মনে হল কেউ নিঃশ্বাস নিচ্ছে না। আর একটা মুহূর্ত সে প্রায় আশা করে বসেছিল, যেন শুনতে পাবে দুরে ঘোড়ার রাশের টুং টাং শব্দ আর দেখতে পাবে বালিয়াড়ির উপরে রোমান অশ্বারোহী বাহিনী উপস্থিত হয়েছে। নেতৃত্বে আলেক্সিয়াস, তার বর্মের উপর চাঁদের আলো ঠিকরে পড়ে চিক চিক করছে। ঘোড়ার রাশ টেনে ধরে তিনি সামনে মরুভুমির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।

    তারপর নিঃস্তব্ধতা ভেদ করে শোনা গেল একটা নিচু লয়ে কেঁপে কেঁপে ওঠা গুঞ্জন, শব্দটা বাড়তে বাড়তে কান ফাটিয়ে ফেলছে। রুথ কানিংহাম আতঙ্কে ফিরে তাকাল। মেরি তার হাতে হাত রেখে আস্বস্ত করল। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাপের পরিবর্তনের কারণে এটা হচ্ছে। বালুর একটা স্তর অন্য স্তরটির উপর উঠে যাচ্ছে।

    কেইন মৃদুস্বরে বলল, ‘গান গাওয়া বালু, ভাবছি আলেক্সিয়াসও কি এটা শুনেছিলেন?

    রুথ কানিংহাম বলল, তবে একটা বিষয় নিশ্চিত, তিনি তেমন কাউকে পান নি যে তাকে এ বিষয়ের কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে পারতো।

    ‘একই কথা। আমার মনে হয় না তিনি এতে ভীত হতেন,’ কেইন শান্ত স্বরে বলল। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে সে একটা দোমরানো সিগারেটের প্যাকেট বের করল। এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এরপর আমরা কি করব।’

    মেরি একটা সিগারেট নিয়ে স্পিরিট–স্টোভের আগুন থেকে ধরাল। যখন সে উঠে বসল, তখন তার মুখ দেখে মনে হল কিছু একটা ভাবছে সে। শাবওয়া থেকে এই মন্দিরটার অবস্থান আলেক্সিয়াস কতদূর বলেছিল?

    ‘প্রায় নব্বই মাইল, কেইন বলল।

    ‘আমরা এখন শাবওয়া থেকে প্রায় চল্লিশ মাইল এসেছি, তাই না?

    কেইন ঘাড় কাত করে সায় দিল। মেরি শুয়ে পড়ল, তার মুখ অর্ধেকটা ছায়ায় ঢেকে গেছে। একটু পর সে ধীরে ধীরে বলল, আমার মনে হয়, এখন আমাদের উচিত হবে ঘুরে গিয়ে মারিবের পথ খুঁজে বের করা। যদি অন্য স্তম্ভগুলো দাঁড়ানো অবস্থায় নাও পাই, তারপরও আমাদের উচিত আলেক্সিয়াসের বর্ণনা মাফিক ঐ মাটি খুঁড়ে গজিয়ে উঠা শিলাস্তূপটা খুঁজে বার করা।

    রুথ কানিংহাম সাগ্রহে কেইনের দিকে তাকাল, আপনার কি মনে হয় আমরা তা পারব?

    সে মাথা নাড়ল—না পারার তো কোন কারণ দেখি না। আমাদের হাতে যথেষ্ট তেল, পানি আছে। এখন রওয়ানা দিলে ভোরের মধ্যে সেখানে পৌঁছতে পারব। প্রচুর চাঁদের আলোয় দিনে চলার চেয়ে রাতে চলা অনেক আরামপ্রদ হবে।’

    মেরি উঠে দাঁড়াল–তাহলে এ সিদ্ধান্তই হল। আমরা সবকিছু গোছগাছ। করে এখুনি রওয়ানা দেব। কেইন ঘুরতেই সে তার শার্টের হাতা ধরল। ‘তোমার একটু ঘুমানো দরকার গ্যাভিন। কয়েক ঘণ্টা আমি চালাই–তারপর আবার তুমি চালিও।

    সে প্রত্যাখান করতে চাইছিল, কিন্তু ক্লান্তি তার কাঁধে ভারী একটা কম্বলের মতো চেপে বসায় আধা ঘণ্টা পর সে পেছনে মালপত্রের মাঝে সটান ঘুমিয়ে পড়ল।

    মুখে একটা তিক্ত স্বাদ নিয়ে সে জেগে উঠল। কনকনে শীত, উঠে বসে সামনে ঝুঁকল। জামাল পাশেই ঢুলছে আর রুথ কানিংহাম ঘুমিয়ে রয়েছে, তার মাথা একটু পর পর পেছন দিকে হেলে পড়ছে।

    সে সামনের সিটে এল। মেরি তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসতেই সে লক্ষ করল তার চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। কেইনের মনের অন্তঃস্থলে এক অজানা আর তাৎক্ষণিক কোমলতা জেগে উঠল।

    সে বলল, কয়টা বেজেছে?’

    ‘প্রায় সাড়ে তিনটা।’

    সে অন্য পাশ থেকে স্টিয়ারিং হুইলটা তার হাতে নিল। তুমি সরো, আমি চালাবো। আরো এক ঘণ্টা আগেই তোমার উচিত ছিল আমাকে জাগানো।’

    মেরি একটা সিগারেট ধরিয়ে কেইনের ঠোঁটে গুঁজে দিল। তারপর দুহাত ভাঁজ করে কেইনের কাঁধে মাথা রেখে তার গায়ে হেলান দিল। এখন আমি ক্লান্তি বোধ করছি।

    কেইন সিগারেটে একটা টান দিয়ে মৃদু হাসল, আমার সৌভাগ্য।’

    সে সন্তষ্ট হয়ে বলল, “এটা চমৎকার।

    ওরা একটা সমতল এলাকা অতিক্রম করছিল। কেইন এক হাতে স্টিয়ারিং হুইল ধরে গাড়ি চালাচ্ছিল আর অন্য হাত দিয়ে মেরির কাধ ধরে তাকে কাছে টেনে নিল। অনেক কিছুই তার বলার ছিল, কিন্তু কোন কিছু বলারও প্রয়োজন নেই।

    একটু পর মেরি মুখ তুলে কেইনের গালে একটা চুমু খেলো। চোখে কৌতুক নিয়ে সে বলল, ‘বেচারি গ্যাভিন।’

    সে বলল, “যাও তুমি! উচ্ছন্নে যাক সমস্ত নারী!

    মেরি মৃদু হাসল-এটা নিয়ে আমরা এখন কি করব?

    সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল–আর কি, যা সবাই করে তাই করব। মুকাল্লাতে ফাদার ও’ব্রায়ান আছে। তাকে দিয়ে তোমার কাজ চলবে?’

    ‘অবশ্যই–আমি ফাদার ও’ব্রায়ানকে পছন্দ করি,’ সে বলল। তারপর কি হবে?

    কেইন কাঁধ ঝাঁকাল। এরপর ঘটনাপ্রবাহ আমাদের টেনে নিয়ে যাবে।’

    এই ব্যাপারটা নিয়ে মেরি একটু তর্ক করতে চাচ্ছিল, তারপর সে কাঁধ ঝাঁকাল, যেন এই মুহূর্তে সে সন্তুষ্ট হয়েছে। “আচ্ছা সে দেখা যাবে।

    একটু পর সে ঘুমিয়ে পড়ল আর কেইন তাকে এক হাতে ধরে রেখে উইন্ডস্ক্রিন দিয়ে সামনে তাকিয়ে রইল। মনে মনে বলছিল, জীবন তাকে আবার ধরে ফেলছে। তবে ভেবে খুশি হলো যে এই পরিবর্তনে সে কিছু মনে করেনি। আগাছাভরা জমি শেষ হয়ে এলে সে ধীরে ধীরে মেরিকে এক কোনে শুইয়ে দিল। লো গিয়ারে বদল করে ট্রাকটা বালিয়াড়ির খাড়া দিক দিয়ে উপরের দিকে উঠতে লাগল।

    চাঁদ মলিন হয়ে এসেছে। পুব আকাশে ভোর ছুঁতেই দিগন্তের উপরে ছোট ছোট আলোর টুকরো দেখা দিল। অনিদ্রায় তার চোখ জুলছিল আর গত কয়েক ঘণ্টা অনবরত ট্রাক চালাবার কারণে দুই হাত ব্যথা করছিল।

    একটা বালিয়াড়ির উপর এক মুহূর্ত থেমে ফিল্ড গ্লাস দিয়ে মরুভুমির চার পাশ খুঁজে দেখল। দিগন্তের উপর সুর্য উঠল, আকাশ আলোয় ভেসে যেতেই দূরে কিছু একটা চিক চিক করে উঠল। সে ফিল্ড গ্লাস ফোকাস করল। মরুভুমির ছয় সাত মাইল দূরে মাটি খুঁড়ে উঠে আসা লালচে রঙের বিশাল একটা শিলাস্তূপ দেখা গেল।

    সে লো গিয়ার দিয়ে বালিয়াড়ির খাড়া ঢাল বেয়ে নিচের দিকে নামতে শুরু করল। একদম নিচে পৌঁছার পর একটা ফাঁকের মাঝ দিয়ে ট্রাক চালিয়ে আরেকটা বালু ও আগাছায় ভরা সমতল জমিতে পৌঁছাল। এবার স্পিড বাড়িয়ে দূরের পাথরের পাহাড়টির দিকে ছুটে চলল।

    টাকটা হঠাৎ লাফিয়ে উঠে দ্রুত চলতেই সবাই জেগে উঠল। মেরি উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে?

    সে দূরের দিকে মাথা কাত করে দেখাল–’আমরা প্রায় পৌঁছে গেছি।’

    রুথ কানিংহাম সামনে ঝুঁকল। সে দুহাত দিয়ে এত শক্ত করে সিটের প্রান্ত ধরে রেখেছে যে তার আঙ্গুলের গাঁটগুলো সাদা হয়ে গেছে।

    শিলাস্তূপ বড় হতে হতে একটা পাহাড় সমান আকৃতি নিয়ে ওদের মাথার উপরে উঠে এসেছে, এরপর ওরা একটা গভীর গিরিখাতের মধ্যে প্রবেশ করল যা এঁকে বেঁকে এর অন্তঃস্থলে ঢুকে গেছে। কেইন ব্রেক কষে ট্রাকের ইঞ্জিন বন্ধ করল। চারপাশ একদম নিস্তব্ধ, এক মুহূর্ত পর সে একটা রাইফেল হাতে নিয়ে মাটিতে পা রাখল—ট্রাকটা এখানে রেখে যাওয়া যেতে পারে। সামনে কি দেখতে পাবো আমরা জানি না।’

    জামাল অন্য রাইফেলটা নিল, তারপর ওরা গিরিখাতের জমাট শিলাস্তরের উপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ রুথ কানিংহাম অবাক বিস্ময়ে চেঁচিয়ে উপরের দিকে দেখাল। পাথরের গায়ে ওটা কি একটা শিলালিপি নয়?

    গিরিখাতের মধ্যে সূর্যকিরণ প্রবেশ করতেই পাথরের গায়ে উত্তীর্ণ শিলালিপিগুলো হঠাৎ ওদের চোখে পড়ল। কেইন কাছে গিয়ে উপরে তাকাল। এক মুহূর্ত পর সে মাথা নাড়ল। এগুলো সাবেঈন লিপি। আমরা ঠিক জায়গায়ই এসেছি।’

    সে সামনে এগোল, অন্যরাও তার পিছু পিছু চলল। আরো কয়েকটা শিলালিপি ওরা পার হল। তারপর একটা পাথরের দেয়াল ঘুরে এসে থামল।

    দুই পাশে স্তম্ভ শোভিত একটি প্রশস্ত পথ সামনে প্রসারিত হয়ে রয়েছে। কিছু কিছু স্তম্ভ ধ্বসে পড়েছে, অন্যগুলো এখনও অক্ষত। পথের শেষ মাথায় দেখা গেল একটি বিশাল মন্দিরের প্রায় ভেঙে পড়া সম্মুখভাগ। মন্দিরটি গিরিখাতের মুখেই নির্মিত।

    কেইনের মুখ শুকিয়ে গেল। এই রকম মুহূর্ত তার জীবনে কখনো আসেনি। সে দ্রুত সামনে এগোতে শুরু করল। অন্যরাও তার পিছু চলতে লাগল।

    স্তম্ভশোভিত প্রশস্ত পথের শেষ মাথায়, মন্দিরের ঠিক সামনে একটি গভীর জলাধার। টলটলে পরিষ্কার পানি, কোন এক অদৃশ্য ঝর্না থেকে নেমে আসছে। সে এক লাফে জলাধারের পাশে নিচু হয়ে দুহাতে আঁজলা ভরে পানি পান করল।

    পেছনে অন্যদের আসার শব্দ পেল। দুই মহিলা উত্তেজিত কণ্ঠে কথা বলছিল। সে চেঁচিয়ে উঠল, এই পানি বরফের মতো ঠাণ্ডা।

    হঠাৎ তাদের কথা বলা থেমে গেল। আর কেইন মুখ তুলতেই পানিতে একটা প্রতিবিম্ব দেখে রাইফেলটা তুলতে গেল।

    একটা বুলেট ছুটে এসে জলাধারের কিনারায় পাথরের টুকরো ভেঙে ফেলল। দুই হাত মাথার উপর তুলে সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। জলাধারের অন্যপাশে জনাছয়েক অর্ধনগ্ন বেদুঈন দাঁড়িয়ে আছে, সবার হাতে অত্যাধুনিক লি এনফিল্ড রাইফেল। তাদের ঠিক সামনে বিদ্রুপাত্মক হাসি নিয়ে সেলিম দাঁড়িয়ে আছে।

    প্লিজ বোকার মত কিছু করার চেষ্টা করো না, সে তার অতি সতর্ক কাটা কাটা ইংরেজিতে বলল।

    বেদুঈনের দলটি দ্রুত জলাধার ঘুরে এপারে এল, তারপর দুভাগ হয়ে দ্রুততার সাথে কেইন আর তার সঙ্গীদের চারপাশে থেকে ঘিরে ফেলল। সেলিম ধীরে সুস্থে এগোল, এক হাত জাম্বিয়ার বাঁটে রেখে অন্য হাত দিয়ে ধীরে ধীরে দাড়ি টানতে লাগল। এক দুই ফুট দূরত্বে এসে থামতেই কেইন মৃদুস্বরে বলল-’পৃথিবীটা বেশ ছোট।

    সেলিম মাথা কাত করে সায় দিল–”তোমাকে মারা বড়ই শক্ত। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে ডান হাতের মুঠো দিয়ে কেইনের মুখ বরাবর একটা ঘুসি চালালো।

    কেইন কিছুক্ষণ মাটিতে পড়ে রইল। তারপর মাথা ঝাড়া দিতেই টের পেল কতগুলো রাইফেলের মাজল তার দিকে তাক করে রাখা হয়েছে। সে মুখ থেকে রক্ত মুছে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল।

    সেলিম মৃদু হাসল–পুরনো একটা ঋণের ডাউন পেমেন্ট করা হলো। বাদবাকি পরে দেওয়া হবে। আমি কোন সময় ঋণ ভুলি না। সে বেদুঈনদের উদ্দেশ্যে দ্রুত কিছু নির্দেশ দিতেই ওরা গোল হয়ে কাছে এগোল। তারপর কর্কশ স্বরে চেঁচিয়ে বন্দিদের সামনে এগোতে বলল।

    মন্দিরে ওঠার বিশাল সিঁড়ির ধাপগুলোর দিকে হোঁচট খেয়ে এগোতে এগোতে কেইন ঘটনাপ্রবাহের হঠাৎ এই পরিবর্তনের কথাটা ভাবলো। প্রথম থেকেই তার বোঝা উচিত ছিল, জন কানিংহাম হয়তো ঠিকই মরুভূমি অতিক্রম করতে পেরেছিল-তবে কোন মানুষ তার ফিরে আসার পথ রুদ্ধ করে রেখেছিল। কিন্তু এখানে সেলিম কেন? এর কোন অর্থ সে খুঁজে পেল না।

    সিঁড়ির সর্বোচ্চ ধাপে পা রেখে যখন সে বারান্দা অতিক্রম করল, তখন একেবারে কাছ থেকে মন্দিরের দৃশ্য দেখার পর তার মন থেকে অন্যসব চিন্তাভাবনা দূর হয়ে গেল। মন্দিরটি পাহাড়ের মুখে তৈরি করা হয়েছে। দ্বারমন্ডপ ও পুরো প্রবেশ পথকে ঘিরে রাখা বিশাল স্তম্ভগুলো কমপক্ষে ষাট ফুট উঁচু।

    মেরি ওর কাঁধের কাছে এসে হতবাক কণ্ঠে বলল–এরকম কোন কিছু আমি কখনো দেখিনি। পুরো আরবে এমন কিছু নেই যা একে স্পর্শ করতে পারে।’

    কেইন ঘাড় কাত করে সায় দিল। আমার মনে হচ্ছে, প্রচণ্ড মিশরীয় প্রভাব রয়েছে। একই রকম দ্বারমন্ডপ কারনাকের মন্দিরে দেখা যায়।

    ভেতরে বেশ ঠাণ্ডা আর খুব নিস্তব্ধ পরিবেশ। ক্ষিণ আলোয় তার চোখ সয়ে এল। গোলাপি রঙের মার্বেল পাথরের মেঝে। সুদক্ষ মিস্ত্রির হাতে নিপুনভাবে কাটা চৌকোণ পাথরের স্তম্ভগুলো সোজা উঠে গেছে উপরে। জমকালো মূল অংশের অন্যপ্রান্তে এক বিশাল প্রতিমুর্তি অন্ধকার থেকে আবছা বেরিয়ে এসেছে।

    সেলিম নির্দেশ দিতেই দলটি সেখানেই থামল। তিনজন প্রহরি ছাড়া বাদবাকি সব বেদুঈনদেরকে সে বাইরে থাকার নির্দেশ দিল। কেইনের দিকে ফিরে বলল, তোমরা সবাই এখানেই থাকবে। যদি কেউ পালাবার বা সন্দেজনক কোন কিছু করার চেষ্টা করো, প্রহরিদের নির্দেশ দেওয়া আছে সাথে সাথে গুলি করে মারবে।

    কেইন বলল, “ঠিক আছে, তুমিইতো এখানে বস। তবে যাবার আগে একটা কথা আমাদের বলে যেতে পারো। মিসেস কানিংহামের স্বামীর কী হয়েছে? কেননা তার কারণেই আমাদের এখানে আসা।’

    সেলিম কাঁধ ঝাঁকাল। সে জীবিত এবং সুস্থ আছে–অন্তত এই মুহূর্ত পর্যন্ত।

    ক্লথ কানিংহাম সামনে এগোল। আমি কখন তাকে দেখতে পাবো? প্লিজ আমাকে তার কাছে নিয়ে চলুন।

    তার গাল রক্তিম হলো। চোখ জ্বল জ্বল করছিল। সেলিম এমনভাবে তার দিকে তাকাল যেন এই প্রথম তাকে দেখছে। কয়েক মুহূর্ত পর সে ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল–এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। যদি ঠিক মত আচরণ করেন, তবে পরে তার দেখা পাবেন। এখন এখানেই অপেক্ষা করতে হবে।

    ‘কেইন জানতে চাইল, ‘কিন্তু কেন?। ফায়ারিং স্কোয়াড, গলা কাটবে না নতুন কেউ আসবে?

    সেলিম মৃদু হাসল। আমি এখানে প্রশ্নের উত্তর দিতে আসিনি। সে ঘুরে দ্রুত সেখান থেকে চলে গেল। কেইন পকেট থেকে দোমড়ানো সিগারেটের প্যাকেটটা বের করল। একটা মাত্র সিগারেট অবশিষ্ট ছিল। সিগারেট ধরিয়ে একটা টান দিয়ে সে মূর্তিটির দিকে তাকাল।

    এরকম কোন কিছু ইতোপূর্বে সে কখনো দেখেনি। নিরেট পাথরের তৈরি। ইন্দ্রিয়পরায়ণ পুরুষ্টু ঠোঁট। উঁচু কপোলের উপরে উপরের দিকে তির্যক দৃষ্টিতে তাকানো চোখদুটো বন্ধ, যেন ঘুমিয়ে রয়েছে। হিন্দু দেবী কালী মূর্তির সাথে এর বেশ মিল রয়েছে। ইতোপূর্বে ভারতীয় বিভিন্ন মন্দিরে সে অনেকবার কালী মূর্তি দেখেছে। একটু ভুরু কুঁচকালো, এই সমস্যার একাডেমিক দিকটি নিয়ে তার মনে চিন্তা শুরু হলো। এরপর চোখে পড়ল উঁচু বেদিটা, লক্ষ করল আগুন জ্বালাবার বাঁকা ধুনচি। মনে পড়ল রোমান অশ্বারোহীদল আর সেই বৃদ্ধা পূজারিণীর কথা, যে বেদিতে আগুন জ্বালাতে রয়ে গিয়েছিল। মনে হলো সময়ের কোন অর্থ নেই। এটি একটি বৃত্ত, আপনা আপনি এর মাঝে অনন্তকাল ধরে ঘুরছে।

    মেরি তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে বলল, আমার একটা অদ্ভুত অনুভতি হচ্ছে এটা জেনে, যে সে–মানে আমি বলতে চাচ্ছি আলেক্সিয়াস হয়তো এখানেই দাঁড়িয়েছিল।’

    কোন কথা না বলে কেইন ঘাড় কাত করে সায় দিল। এক মুহূর্ত পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ওরা একই কথা ভাবছিল। হঠাৎ দরজার কাছে একটা শব্দ শোনা গেল। কেইন ঘুরতেই দেখল ধুলিধুসরিত খাকি পোশাক পরা একজন লোক ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। তার মাথায় আরবি স্টাইলে কাপড় জড়ানো আর চোখ ঢাকা রয়েছে বালু নিরোধক গগলসে। কয়েক ফুট দূরত্বে থেমে সে নিশব্দে ওদেরকে লক্ষ করল,তারপর চোখ থেকে গগলস খুলল। ইনি হলেন প্রফেসর মুলার।

    সে আড়ষ্টভাবে একটুখানি মাথা নোয়ালো। আশা করি ভদ্রমহিলাদের কোন ধরনের অসুবিধা হয় নি?

    কেই এক পা এগোল, কিন্ত সে কিছু বলার আগেই একটা পরিচিত কণ্ঠস্বর শোনা গেল। “আহা আমার বন্ধু ক্যাপ্টেন কেইন। শেষ পর্যন্ত তুমি এখানে পৌঁছতে পারলে?’ স্কিরোজ অন্ধকার থেকে বের হয়ে এল।

    .

    ১১.

    প্রায় দুপুরবেলা দুজন প্রহরী কেইনকে নিয়ে যেতে মন্দিরে এল। ইতোপূর্বে সকালেই মেরি আর রুথ কানিংহামকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তার একটু পর জামালকেও নিয়ে যাওয়া হয়।

    প্রহরীদের সাথে মন্দিরে একা বসে কেইন একের পর এক ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বার বার ভাবছিল, কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারল না। কোন অর্থই সে খুঁজে পেল না। যদি মুলার এই মন্দির হঠাৎ আবিষ্কার করেই থাকে, তবে সে কেন সারা বিশ্বকে এই আবিষ্কারের কথা জানাল না? এতে তো সে জগৎ বিখ্যাত হয়ে যেতো। আর স্কিরোজ আর সেলিমের ব্যাপারটাই বা কি? ওরা কীভাবে এখানে এল? সমস্যাগুলোর কোন সমাধান খুঁজে না পেয়ে অধৈর্য হয়ে সে অপেক্ষা করতে লাগল। ঠিক এই সময়ে ওকে নিয়ে যেতে বেদুঈন দুটো ফিরে এল।

    মন্দিরের ভেতরের শীতল আবছা আলো থেকে বের হয়ে প্রখর সূর্যের আলোয় তার চোখ মুহূর্তের জন্য ধাঁধিয়ে যেতেই সে সিঁড়ির সর্বোচ্চ ধাপে একটু থামল। একজন প্রহরী তাকে সামনে ঠেলতেই সে প্রায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কয়েক ধাপ হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল।

    এই ঘটনায় লোকদুটো বেশ মজা পেল। কেইন অনেক চেষ্টা করে রাগ সামলে ওদের দুজনের মধ্য দিয়ে শান্তভাবে হেঁটে চলল। যেতে যেতে তীক্ষ্ণ দষ্টিতে সে উপত্যকার সবকিছুর দিকে নজর দিয়ে চলল।

    পাথরের দেয়ালগুলোর উপর অনেক শিলালিপি খোদাই করা। কয়েক জায়গায় অন্ধকার গুহামুখ দেখতে পেল। হঠাৎ গিরিখাতের মেঝে সামান্য ঢালু হয়ে গেছে। এর নিচে একটি শূন্য গর্ভের মধ্যে একটি মরুদ্যানের সবুজ পাম গাছের কাছে কয়েকটি তাঁবু খাটানো হয়েছে দেখতে পেল।

    নিচে ক্যাম্পের দিকে যেতে যেতে সে অবাক হলো লোকজন আর উটের সংখ্যা দেখে। সব দিকেই সূর্যের প্রচণ্ড তাপে ঘর্মাক্ত লোকজন ভারী ভারী বাক্স উটগুলোর পিঠে ওঠাচ্ছিল। যেন কোথাও যাবার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

    এখানে কয়টি গোত্রের লোক এসেছে সে গুণে শেষ করতে পারল না। রঙিন পাগড়ি পরা অর্ধনগ্ন ইয়েমনি, শরীরে উল্কি আঁকা আর নীলের ছোপ সারা গায়ে। রশিদ বেদুঈন, মুসাবেইন, বাল হারিস–সব গোত্রই রয়েছে সেখানে। দুই প্রহরী তাকে ভিড়ের মাঝ দিয়ে সামনে ঠেলতেই সবাই মাথা ঘুরিয়ে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকাল।

    সবচেয়ে বড় তাবুটার সামনে থেমে ওরা কেইনকে ভেতরে ঢুকতে ইশারা করল। তাঁবুর ঝাঁপ সরিয়ে কেইন ভেতরে ঢুকল। ছোট একটা ফোল্ডিং টেবিলে বসে কফি পান করতে করতে মুলার ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে ভাঙ্গা মৃৎপাত্রের একটা টুকরা পরীক্ষা করছিল। সে মুখ তুলেই মৃদু হাসল, ‘আহ, কেইন এসো এসো! ভেতরে এসো!

    কেইন উল্টোদিকে একটা ক্যাম্প টুলে বসল। মুলার কফির পট তুলে আবার মৃদু হাসল–কফি?’ কেইন সায় দিতেই একটা কাপ ভরে সামনে ঠেলে দিল।

    কেইন সামনে ঝুঁকে টেবিলে দুহাত রেখে বলল–’মহিলা দুজনকে নিয়ে তোমরা কি করেছো?

    মুলার ব্যথিত চেহারা নিয়ে বলল, “আমরা বর্বর নই। কাছেই একটা তাবুতে তাদেরকে পাহারা দিয়ে রাখা হয়েছে। মন্দিরের চেয়ে এখানে তারা আরামে থাকবেন।

    ‘অসীম দয়া তোমার, কেইন বলল। আর কানিংহামকে কি করেছো?’

    ‘এখন আমরা তার কাছেই যাচ্ছি, মুলার শান্ত স্বরে বলল। তবে প্রথমে স্কিরোজ তোমার সাথে দেখা করতে চায়।

    কেইন বলল। আচ্ছা এখানে আসলে কি হচ্ছে বলো তো?

    মুলার উঠে দাঁড়িয়ে হ্যাট হাতে নিল। সে জন্যইতো আমি তোমাকে ডেকে আনতে বলেছি বন্ধু, এখনই সব জানতে পারবে।

    সে তাঁবুর ঝাঁপ ঠেলে বেরুতেই কেইন তাকে অনুসরণ করল। মরুদ্যানের মধ্য দিয়ে ওরা সামনেই গিরিখাতের এক পাশ দিয়ে উপরের দিকে উঠতে শুরু করল। দুই বেদুঈন ঠিক পেছনে পেছনে আসছে। ভারী ভারী বাক্স কাঁধে করে লোজন ওদের পাশ কাটিয়ে নিচের মরুদ্যানের দিকে যাচ্ছিল।

    ওরা একটা সরু র‍্যাম্পের উপর উঠল, যেটা সম্ভবত নিরেট পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছে। উপরে একটা গুহায় ঢুকবার মুখ, পাশে প্রহরী দাঁড়ানো। কোমর পর্যন্ত খালি গায়ে অনেক মানুষ কাজ করছে। লোকগুলো আরো বাক্স টেনে এনে এখানে গাদা করে রাখছে। তারপর সেগুলো নিচে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মুলার ওদের পাশ কাটিয়ে সামনে এগোল আর কেইনও সাথে সাথে তাকে অনুসরণ করে চলল।

    গুহাটা বেশি বড় না হলেও চারপাশে বিভিন্ন ধরনের টেকনিকেল যন্ত্রপাতি সারি সারি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। স্কিরোজ একটা জটিল শর্ট-ওয়েভ ট্রান্সমিটিং ও রিসিভিং সেটের সামনে বসে রয়েছে। ওরা ভেতরে ঢুকতেই সে মাথা থেকে ইয়ারফোন খুলে রিভলভিং টুলটা ঘুরিয়ে তাকাল। এই যে ক্যাপ্টেন কেইন। তুমি এসেছো তাহলে?

    তার মুখে কৌতুকপূর্ণ মৃদু হাসি দেখা দিল, যেন কোন পার্টি চলছে আর কেইন বহু প্রতিক্ষিত একজন অতিথি।

    কেইন বলল, তোমরা তো বেশ ভাল একটা সেটআপ গড়ে তুলেছো?’।

    স্কিরোজ মাথা নেড়ে সায় দিল। এটি নিয়ে আমরা গর্বিত।’ বুক পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে সামনে ধরল–সিগারেট?

    কেইন একটা সিগারেট নিয়ে বলল, “আচ্ছা তোমাদের কি এখনো সময় হয় নি এখানে কি চলছে সে সম্পর্কে আমাকে কিছু বলার?

    স্কিরোজ মাথা নাড়ল। তাতে অবশ্যই। এখানে আর কি জন্য তোমাকে আনা হয়েছে?’ স্তূপীকৃত বাক্সগুলো দেখিয়ে সে বলল, “নিজেই খুলে দ্যাখো।’

    ধাতুর তৈরি বাক্সগুলো হালকা ছাই রঙের। কেইন একটা বাক্স সামনে টেনে ঢাকনিটা খুলল। বাক্স ভর্তি সুন্দর করে সাজানো সদ্য ফ্যাক্টরি থেকে আনা নতুন, গ্রিজ মাখা চকচকে রাইফেল। পরের বাক্সটায় রয়েছে সাবমেশিন গান।

    সে একটা তলে পরীক্ষা করল–জার্মানিতে তৈরি। সে ঘুরে কঠিন চোখে তাকাল। আমি তোমাকে আন্ডারএস্টিমেট করেছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ দেশের বাইরে বেআইনীভাবে পাচার করছে, কিন্তু এই…’।

    স্কিরোজ আত্মতুষ্টির হাসি দিল। হ্যাঁ। এটি সত্যি একটা বিশাল ব্যাপার, তাই না? আমরা সত্যি ভাগ্যবান যে, এরকম একটা জায়গা খুঁজে পেয়েছিলাম। এ জন্য মুলারকে ধন্যবাদ।’

    ‘কানিংহাম আসা পর্যন্ত। এটা নিশ্চয়ই তোমাদেরকে একটা ধাক্কা দিয়েছিল।’

    স্কিরোজ মাথা নাড়ল। সামান্য একটু অসুবিধা হয়েছে। ব্যস আর কিছু না।’

    কেইন আবার ঘুরে স্থূপীকৃত অস্ত্রশস্ত্রের বাক্সগুলোর দিকে ফিরে একটা বাক্সের গায়ে লাথি মারল। আমার মনে হয় এ কারণেই ওমান সীমান্তে বিভিন্ন উপজাতির সাথে ব্রিটিশদের এত ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে?

    স্কিরোজ মৃদু হাসল। আমরা আমাদের তরফ থেকে যথাসাধ্য করছি। তবে এই অস্ত্রগুলো আমাদের সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন গোত্রদের প্রতি পারিশ্রমিক বলতে পারো। এরপর এগুলো নিয়ে ওরা কি করে তা ওদের নিজেদের ব্যাপার।’

    কেইন আবার বাক্সগুলোর দিকে তাকাল–ঐ সাবমেশিনগুলো জার্মানির তৈরি?

    ‘এম পি ৪০, সর্বশ্রেষ্ঠ।

    ‘তাহলে তুমি গ্রিক নও?

    ‘আমার মা ছিল গ্রিক, তার নাম ছিল স্কিরোজ। তবে আমি বলতে গর্ব বোধ করি যে আমার বাবা একজন জার্মান ছিলেন। তার নাম যাই হোক না কেন?’

    কেইন ঘুরে মুলারের দিকে তাকাল। সে পাশেই নিরবে দাঁড়িয়েছিল। ‘এখানে মুলারের ভুমিকা কী?

    ‘অত্যন্ত পরিষ্কার। এই জায়গাটার অস্তিত্ব সে আবিষ্কার করেছে একজন বুড়ো বেদুঈনের কাছ থেকে। এক রাতে পিপাসায় মৃতপ্রায় অবস্থায় লোকটা শাবওয়ার কাছে ওর ক্যাম্পে এসে পড়ে।

    কেইন বলল। ঈশ্বরের দোহাই লাগে মুলার, কী কারণে তুমি এরকম একটা শকুনের সাথে কারবার করতে পারলে? ইউরোপ আমেরিকার এক ডজন ফাউন্ডেশনের যে কোন একটি খুশি হয়ে তোমাকে আর্থিক সহায়তা দিত।

    মুলারকে বিব্রত দেখাল–এর কিছু কারণ ছিল।’

    ‘অবশ্যই ছিল, স্কিরোজ হেসে উঠল। তুমি যেহেতু এখান থেকে কোথাও যেতে পারছে না, কাজেই সত্যি কথাটা তোমাকে না বলারতো কোন কারণ আমি দেখি না, প্রিয় বন্ধু। আমার মতো প্রফেসারও একজন জার্মান–একজন ভাল জার্মান। আমরা থার্ড রাইখ এবং আমাদের ফুয়েরার এডলফ হিটলারের সেবা করি।’

    কেইন বলল, ‘মাই গড।’

    ‘আমি এবহোয়েরের হয়ে কাজ করি, তুমি জানো সেটা কি?

    “জার্মান সামরিক গোয়েন্দা।

    ‘একদম ঠিক। আগামি যুদ্ধে আমরা জিতবো বন্ধু। আগামি পরশু পয়লা সেপ্টেম্বর। সেদিন আমরা পোলাভে অভিযান চালাচ্ছি।’

    কেইন বলল, ‘পাগলামি, তোমরা সবাই একসাথে নরকে যাবে।

    ‘আমার তা মনে হয় না। দ্যাখো আমাদের বড় বড় ব্যাটালিয়ান আছে। আরো আছে ক্যাপ্টেন কার্লোস রোমেরো আর তার বন্ধুরা। এরা এস, এস, স্পেনিশ ভলান্টিয়ার। ওরা আগামিকাল ক্যাটালিনাতে এখানে পৌঁছাবে। তারপরের দিন ওরা সুয়েজ খালে ল্যান্ড করবে, সমস্ত খালে মাইন পুঁতবে তারপর সেটা উড়িয়ে দেবে। এ ঘটনার পর মিশরে আর লন্ডনে আমাদের ইংরেজ বন্ধুরা আঙুল চিবোবে।

    কেইন অনেক চেষ্টা করল পুরো বিষয়টা বুঝতে। এটা আমার বিশ্বাস হয় না।’

    ‘তাতে আমার কিছু আসে যায় না।’

    কেইন একটা লম্বা শ্বাস নিল–এখন কী হবে?

    ‘তোমার?’ স্কিরোজ কাঁধ ঝাঁকাল। দুই একদিন মুলার তোমার সহায়তা নেবে, তবে তারপর…’ তার কণ্ঠস্বর ভেসে গেল আর সে এমনভাবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল যেন সে খুবই দুঃখিত হয়েছে।

    ‘সেটা খুব একটা ভাল কাজ হবে না, কেইন বলল।

    স্কিরোজ ভুরু একটুখানি উপরে তুলল। আমার মনে হয় এ কথা বলার পেছনে তোমার কোন কারণ আছে?

    কেইন চেষ্টা করল নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ করতে। আমরা ঠিক কোথায় যাচ্ছি, সেকথা জানিয়ে এডেনের আমেরিকান কনসালকে আমি একটা চিঠি পাঠিয়েছি। সে কাঁধ ঝাঁকাল। এটা স্বাভাবিক সতর্কতা–তুমিতো জানোই মরুভুমিতে যে কোন কিছু ঘটে যেতে পারে।

    ‘তুমি মিথ্যা বলছো।

    কেইন মাথা নাড়ল। মনে পড়ে আমি তোমাকে চিঠিটা দিয়েছিলাম মেইল ব্যাগে ভরার জন্য?

    ‘তুমি খুব চালাক বন্ধু,’ স্কিরোজ বলল মৃদু কণ্ঠে।

    মুলারের চেহারায় পুরোপুরি ভীতি ফুটে উঠেছে। সে গোলাবারুদের একটা বাক্সের উপর বসে পড়ল আর রুমাল দিয়ে মুখ আর ঘাড় থেকে ঘাম মুছলো। ‘আমাদের এখান থেকে বের হয়ে যেতে হবে। তার গলা কাঁপছিল।

    ‘এতো ঘাবড়িও না।’ স্কিরোজ একটা সিগারেট নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে প্যাকেটের উপর টোকা দিতে থাকল।

    কেইন মৃদু হাসল। আমরা যদি একটা যুক্তিযুক্ত সময়ের মধ্যে ফিরে না যাই। তখন এডেনের আমেরিকান কনসাল নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তারা অবশ্যই আমাদের খুঁজতে আসবে।

    স্কিরোজ মৃদু হাসল–একেবারে সঠিক। তুমি নিজেই পয়েন্টটা তুলে ধরেছে। একটা নির্দিষ্ট সময় পার না হওয়া পর্যন্ত কনসাল কোন পদক্ষেপ নেবে না।’

    কেইন মনে মনে নিজেকে অভিশাপ দিল কারণ স্কিরোজ ঠিকই বলেছে আর সেটা সে জানে। মুলারের চেহারা থেকে ভীতির ভাব চলে গেল। সে বলে উঠল। হায় ঈশ্বর, তুমিতো ঠিক বলেছো।

    স্কিরোজ মাথা নাড়ল। অবশ্যই ঠিক বলেছি। কমপক্ষে এক মাসের আগে আমেরিকান কনসাল কোন পদক্ষেপ নেবে না। আর এদিকে আমরা দুদিনের মধ্যে চলে যাবো।

    ‘দুই দিন!’ মুলার বলল। এ কথা শুনে তাকে বেশ আহত মনে হলো। ‘তাহলেতো আমার হাতে বেশি সময় থাকবে না। আমি জানি না এর মধ্যে আমাদের কাজ সেরে ফেলতে পারব কি না।

    ‘সত্যি বলতে কী, মুলার। আমাদের চলে যাওয়ার আগে তোমার সেই জঘন্য সমাধি তুমি খুঁড়ে দেখতে পারো কী না তাতে আমার কোন আগ্রহ নেই।’

    ‘অন্য দুজনের সাথে আমি কেইনকে কাজে লাগাতে পারি না?’ মুলার জিজ্ঞেস করল।

    স্কিরোজ কেইনের দিকে ফিরল। আমি নিশ্চিত এ বিষয়ে তোমার কোন আপত্তি নেই। কেননা এ ধরনের কাজের সাথে তোমার কাজের ধরনের মিল আছে।’

    কেইন কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল, কিন্তু এই মুহূর্তে সে হার মানল। ‘আমার মনে হয় এটা তোমার রাউন্ড।

    স্কিরোজ সেঁতো হাসল। ঠিক তাই কেইন। বিষয়টা নিয়ে একজন দার্শনিকের মতোই ভাবো। তারপর তার চেহারা বদলে গিয়ে কঠোর হলো। ‘এখন তোমরা যাও। আমার অনেক কিছু করার বাকি আছে।

    সে চেয়ারে ঘুরে বসে ইয়ারফোনটা তুলে নিল। মুলার কেইনের কাঁধে একটা টোকা দিয়ে তাকে বাইরে যাবার পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল। ডান দিক ঘুরে একটা চওড়া পথ দিয়ে এগিয়ে চলল। আরেকটা গুহার প্রবেশ মুখে দুজন সশস্ত্র প্রহরী আসন পেতে বসে রয়েছে। গুহাটার উচ্চতা চার ফুটের বেশি হবে না, কেইন নিচু হয়ে ভেতরে উঁকি দিল।

    মুলার রুমাল দিয়ে মুখের ঘাম মুছে বিব্রতকরভাবে বলে উঠল–এ সবের জন্য আমি দুঃখিত, কেইন।

    কেইন তাকে বলল, তোমার স্বীকারোক্তি শোনার মত আমার মেজাজ নেই। এখন কী করতে হবে সেটা বলো।

    প্রবেশ পথের মুখেই একটা স্পট ল্যম্প ছিল। মুলার সেটা জ্বালিয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল! গুহাটা দৈর্ঘ্যে ত্রিশ কিংবা চল্লিশ ফুট আর ছাদটা ওদের মাথা থেকে দুই ফুট উঁচু হবে। ল্যাম্পের শক্তিশালী আলো দেয়াল দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে তারপর হঠাৎ চমকে ওঠার মতো তীর ধনুক হাতে দুজন মানুষের অঙ্কিত চেহারা দেয়ালে ভেসে উঠল।

    কেইন সামনে এগিয়ে আগ্রহের সাথে অঙ্কিত চিত্র দুটো পরীক্ষা করল। বহুবর্ণের ওয়াল পেইনটিঙ,’ অত্যন্ত যত্নের সাথে আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে বলল। ‘খুব ভাল ভাবে সংরক্ষিত হয়েছে।

    এর কি তারিখ তুমি ধারণা করো?’ মুলার জিজ্ঞেস করল।

    ক্ষণিকের জন্য শত্রুতা ভুলে গিয়ে কেইন কাঁধে একটা ঝাঁকি দিল। বলা শক্ত। একই ধরনের জিনিস আমি সাহারার হোগার্ট পাহাড়ে দেখেছি তবে দুটোর মাঝে তুলনা করা কঠিন। এটুকু অন্তত বলা যায় কমপক্ষে আট হাজার। বছর আগের, এরকম চিত্রকর্ম আর কি আছে?

    মুলার বাতিটা ঘুরিয়ে পাথরের গায়ে কয়েকটা এচিং দেখাল। তারপর বাতির আলো এসে থামল গুহার শেষ মাথায় একটা সরু প্রবেশ পথের ধারে পাথরকুচির একটা স্তূপের উপর। আমার মনে হয় এটা তোমার কাছে আরো বেশি আকষণীয় মনে হবে।

    কাজটা মানুষের করা তা বোঝাই যাচ্ছে আর রাজমিস্ত্রির হাতে তৈরি পাথরের ব্লক সরিয়ে একটা পথ করা হয়েছে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য।

    তুমি কী মনে করো এটা একটা সমাধির প্রবেশ পথ?’ কেইন বলল।

    ‘আর কী হতে পারে?’ মুলার বলল। মন্দিরটা বেশি পুরোনো না হলেও সাবেঈন যুগের তো বটেই। যদি এই উপত্যকা একটা পবিত্র স্থান হয়ে থাকে, তাহলে স্বভাবতই ধরে নেওয়া যায় এখানে গোর দেওয়া হত।

    গুহায় ঢোকার পর থেকেই কেইন একটা ক্ষিণ শব্দের আভাস পাচ্ছিল। এবার সে দেখল গুহাপথ দিয়ে একটা আলো এগিয়ে আসছে। জামাল আবির্ভুত হলো। ওর এক হাতে একটা বাতি আর অন্য হাত দিয়ে খোয়া ভর্তি একটা বিরাট ঝুড়ি টেনে আনছে। এক মুহূর্ত থেমে ওদের দিকে শান্তভাবে তাকাল। তার বিশাল শরীর ধুলা আর ঘামে মাখামাখি হয়ে রয়েছে। ঝুড়িটা সেখানে খালি করে সে আবার অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

    ‘আমার ধারণা কানিংহামও সেখানে আছে, কেইন বলল।

    মুলার মাথা নেড়ে সায় দিল। অনিচ্ছাসত্ত্বে হলেও তার সাহায্যে গত কয়েক সপ্তাহে আমাদের কাজ অনেকটা এগিয়েছে।

    ‘আমি একটা বিষয় বুঝতে পারছি না, কেইন বলল। তোমাদের ক্যাম্পেতো অনেক বেদুঈন আছে। সেখান থেকে কয়েকজনকে নিয়েও তো শ্রমিকের কাজ করাতে পারতে?’

    মুলার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। প্রথম কথা, আমার কাজের প্রতি স্কিরোজের খুব একটা সহানুভূতি নেই আর সে অনুমতি দিতে রাজি হয় নি। তাছাড়া লোকগুলো ভীষণ কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তাদের বিশ্বাস এই গুহাগুলোতে বদ আত্মারা যাতায়াত করে।

    কেইন উত্তর দেবার আগেই পেছন থেকে একটা কণ্ঠস্বর শোনা গেল–যদি তুমি ছাদটা ভালভাবে পরীক্ষা করো তাহলে এখানে তাদের কাজ করতে না আসার ভাল একটা কারণ খুঁজে পাবে। কেউ একটা কাশি দেওয়া মাত্রই ছাদশুদ্ধ পুরো জিনিসটা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে।

    গুহাপথ থেকে মাঝারি উচ্চতার একজন লোক বেরিয়ে এল, কোমর পর্যন্ত খালি গা আর সারা শরীর জামালের মতো আপাদমস্তক ধুলোয় মাখামাখি হয়ে রয়েছে।

    মুলার মন্তব্যটি উপেক্ষা করল। কাজ কেমন এগোল আজ, কানিংহাম?

    ‘কাল কিংবা পরশুর চেয়ে ভাল নয়,’ কানিংহাম উত্তর দিল। আমার যদুর ধারণা, খুব তাড়াতাড়ি আমরা কোথাও পৌঁছাতে পারছি না। যদি তুমি এই কাজে কোথাও পৌঁছাতে চাও তাহলে একদল শ্রমিক আর নিউমেটিক ড্রিল মেশিন লাগবে।

    ‘তোমার সাথে আমি একমত বন্ধু, কিন্তু কি করব বলো?’ মুলার বলল। যাইহোক আজ নতুন একজনকে আনলাম। এধরনের কাজে কেইনের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। আমি নিশ্চিত তোমরা দুজনে মিলে কিছু একটা উপায় বের করতে পারবে।’

    কেইন বলল, “আমি তোমাকে একটা কথা জানাতে চাই আমি কিন্তু অনেকক্ষণ না খেয়ে আছি।’

    একটু পরেই, দুপুরবেলা আমি কিছু খাবার পাঠাবার ব্যবস্থা করছি, মূলার বলল। এর বদলে আমি অবশ্যই কিছু ফলাফল দেখতে আশা করি। তারপর সে ওদেরকে ফেলে চলে গেল।

    কানিংহাম দেয়ালে হেলান দিয়ে হাত দিয়ে মুখ মুছলো। আপনি আবার কে? আজ সকালে যে বিশালদেহি লোকটাকে ওরা এখানে রেখে গেল তার সাথে আপনার কোন সম্পর্ক আছে নাকি? ঐ লোকটার মুখ থেকে আমি একটা শব্দও বের করতে পারি নি।

    ‘এতে অবাক হবার কিছু নেই। তার জিহ্বা নেই। তবে সে ঠিকই শুনতে পাবে যদি আপনি সোমালি কিংবা আরবিতে কথা বলেন।

    কানিংহাম হেসে উঠল–”আচ্ছা তাই বলুন। আমার আরবি অবশ্য খুব একটা খারাপ নয়। তবে সোমালির ব্যাপারে আমাকে ক্ষমা করতে হবে।’

    কেইন হাত বাড়াল। আমার নাম কেইন, সে বলল। আপনাকে খুঁজে বের করার জন্য আপনার স্ত্রী আমাকে নিযুক্ত করেছেন। এডেনের ব্রিটিশ কনসালের কাছে রেখে আসা আপনার চিঠিটা পাবার পরই তিনি আমার কাছে আসেন।

    কানিংহাম সোজা হয়ে দাঁড়াল, তার কণ্ঠস্বরে উত্তেজনার আভাস। রুথ পাঠিয়েছে আপনাকে? আপনি কি তাকে এর মধ্যে দেখেছেন?

    ‘মাত্র দুঘণ্টা আগেই তার সাথে আমার দেখা হয়েছে, কেইন তাকে জানাল। তিনি উপরেই আছেন মেরি পেরেট নামে আমার এক বন্ধুর সাথে। দুর্ভাগ্যবশত মুলার আর স্কিরোজ আমাদের সবাইকে আটকে রেখেছে।

    কানিংহাম জানতে চাইল, কেমন আছে সে? ঠিক আছেতো?”

    ‘শেষ যখন তাকে আমি দেখি তখন তার মানসিক অবস্থা ভালই ছিল, তবে আপনার ব্যাপারে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন।’

    কানিংহাম জঞ্জালের স্তূপের উপর বসে পড়ল। পুরো ব্যাপারটা দয়া করে আমাকে খুলে বলুন।

    কেইন দ্রুত তাকে সব কিছু খুলে বলল, সেই দাহরানের জেটিতে রুথ কানিংহামের সাথে প্রথম দেখা হওয়ার পর থেকে যা যা ঘটেছে আর একটু আগে স্কিরোজ যা বলেছে সবই জানাল।

    তার বলা শেষ হলে কানিংহাম বলল, এ তো বিরাট এক কাহিনী।

    কেইন মাথা নাড়ল–’আমিও তাই মনে করি। কিন্তু আপনার কি হয়েছিল?

    কানিংহাম তিক্ত হাসি দিয়ে বলল, আমি একজন মহা বোকা, এখন অবশ্য তাই মনে হচ্ছে। বিভিন্ন কারণে এটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে কারো সাহায্য ছাড়াই এই জায়গাটা আমি একাই আবিষ্কার করতে পারব। বার আল-মাদানিতে পৌঁছে বুঝতে পারলাম, মরুভুমির মাঝে একা প্রবেশ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট সাহসী কিংবা যথেষ্ট বোকা রশিদ গোত্রের একজন বেদুঈনকে সঙ্গী হিসেবে খুঁজে পেলাম।’

    ‘আমার ধারণা আপনি বিরান এলাকার মধ্য দিয়ে শাবওয়া থেকে মারিব পর্যন্ত সরাসরি একটা পথ বেছে নিয়েছিলেন, তাই না?

    কানিংহাম সায় দিয়ে বলল, ‘আশ্চর্যজনকভাবে এটা সহজ ছিল। আমাদের সাথে অতিরিক্ত একটা উট আর প্রচুর পানি ছিল। দ্বিতীয় দিনেই আমরা সেই স্তম্ভটা খুঁজে পেয়েছিলাম।

    যার কাছে আমরা এলুমিনিয়ামের পানির বোতলটা পাই?

    কানিংহাম মাথা নাড়ল, সে রাতে সেখানেই ক্যাম্প করেছিলাম। বোতলটা খালি ছিল আর আমরা ওজন কমাচ্ছিলাম। সত্যি বলতে কি আমি আর কোন স্তম্ভ অক্ষত অবস্থায় দেখতে পাবো বলে আশা করিনি।’

    ‘কেবল সেটাই আমরা দেখেছিলাম, কেইন তাকে জানাল।

    ‘আমি অবশ্য আরেকটা খুঁজে পেয়েছিলাম, কানিংহাম বলল। মাটিতে অর্ধেক পোঁতা অবস্থায় সেটা এক পাশে কাত হয়ে পড়ে ছিল।

    ‘এখানে আসার পর কী হলো?

    ‘এটা একটা বিশ্রি ঘটনা বলতে পারেন। গিরিখাতে ঢুকতেই ওরা চারদিক থেকে আমাদের ঘিরে ফেলল। আমার রশিদ বেদুঈনটা বেশ সাহসী ছিল। সে বাধা দিতে চেষ্টা করতেই ওরা তাকে গুলি করে মেরে ফেলল। পরদিন স্কিরোজ আসা পর্যন্ত আমাকে একটা অব্যবহৃত কুয়ার নিচে ঠাণ্ডা গুদামঘরে আটকে রাখল। আপনি যে ক্যাটালিনার কথা বলছিলেন, আমি এখানে আসার পর সেটা গিরিখাতের বাইরে সমতল ভূমিতে দুবার ল্যান্ড করেছিল। আমার ধারণা স্কিরোজ আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু পরে মুলার এসে জানাল সে আমাকে তার কাজে ব্যবহার করতে পারবে। তখন স্কিরোজ তাকে তার মতো চলতে দিল।

    ‘আমার আশঙ্কা আপনি ভয়ঙ্কর দিনটা কেবল কিছু সময়ের জন্য স্থগিত করেছেন, কেইন তাকে বলল।

    কানিংহাম কাঁধ ঝাঁকালো। আমার কি হবে তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না, আমার শুধু দুশ্চিন্তা রুথকে নিয়ে।

    কেইন সায় দিল। বুঝতে পারছি আপনার মনের অবস্থা। তবে এখনো আমাদের আশা আছে। একদম শেষ হয়ে যাই নি। কিছু একটা উপায় আমাদের খুঁজে বের করতেই হবে। রাতে ওরা আপনাদের কোথায় থাকতে দেয়?

    কানিংহাম একটু হাসল–এক সপ্তাহ আগেও বেদুঈনদের পাহারায় একটা তাবুতে ঘুমাতাম। এক রাতে পালাতে চেষ্টা করে বেশি দূর এগোতে পারলাম না। তারপর থেকেই কুয়ার ভেতরে থাকতে হচ্ছে।’

    ‘খুব একটা আশাব্যঞ্জক মনে হচ্ছে না, কেইন বলল।

    কানিংহাম বলল। অন্তত এই কুয়াটা শুকনো। তবে আমার ধারণা এক দেড় হাজার বছর আগেও হয়তো এতে কোন পানি ছিল না। তারপর সে উঠে দাঁড়িয়ে হাত পা লম্বা করে আড়মোড়া ভাঙল। চলুন আমরা বরং কাজে লেগে পড়ি। মুলার কিন্তু আশ্চর্য রকম খারাপ হতে পাওে, যদি সে মনে করে যথেষ্ট কাজ হয় নি।

    সে স্পট ল্যাম্পটা হাতে নিয়ে পথ দেখিয়ে এগোল। প্যাসেজটা সম্ভবত ষাট সত্তর ফুট লম্বা আর একটু ঢালু হয়ে নিচে চলে গেছে। একেবারে শেষ মাথায় জামাল একটা ঝুড়ি ভর্তি করছিল। তার গাইতির ফলা স্পটলাইটের আলোয় ঝলসে উঠছিল। দুজন মানুষ পাশাপাশি কাজ করার মতো যথেষ্ট জায়গা নেই। ওদের আসার শব্দে জামাল ঘুরে তাকাল। কেইন তার কাঁধে একটা চাপড় দিতেই সে আবার মাটি খোঁড়ার কাজে ফিরে গেল।

    কানিংহাম বলল, দেখতেই তো পাচ্ছেন অবস্থা খুব একটা সুবিধার নয়।

    কেইন একটা বাতি হাতে নিয়ে খুব কাছে থেকে দেয়ালটা পরীক্ষা করল, তার ভুরু কুঁচকে উঠল। আমি শাবওয়া অঞ্চলের পাহাড়গুলোতে অনেক পাথুরে সমাধি খনন করেছি। কিন্তু এ ধরনের প্রবেশ পথ কখনো খুঁজে পাই নি।

    কানিংহাম সায় দিল–”আমিও মনে করি মুলার ভুল করছে। এমনকি সে এটাও জানে না যে শেবার রানি বিলকিস এই মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন, কিন্তু আমি জানি।

    ‘আজ সারা দিনে এটাই প্রথম মন ভালো করার মতো কথা শুনলাম, কেইন তাকে জানাল। কিন্তু আমি নিজেও জানতে চাই এই টানেলটা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে।

    ‘তা জানার একটি মাত্র উপায় আছে, তার হাতে একটা বেলচা দিয়ে কানিংহাম বলল।

    কেইন একটু থেমে কোমর পর্যন্ত পোশাক খুলে জামালের পাশে গিয়ে খুঁড়তে শুরু করল।

    .

    এদিকে বার্লিনে, টুরপিজ উফারে ক্যানারিস তার ডেস্কে কাজ করছিলেন, এমন সময় রিটার ঘরে ঢুকল। সে বলল, “আমি এখুনি স্কিরোজের কাছ থেকে খবর শুনে এলাম।

    এডমিরাল সোজা হয়ে বসলেন—’সব কিছু সময় মেনে হচ্ছে তো?”

    ‘একদম ঠিক মতো।

    ক্যাটালিনা ছেড়ে আসার পর রোমেরো আর তার সঙ্গীদের কী হবে?

    ‘আমাদের মিশরীয় ব্যুরোর একজন সদস্য ওদেরকে তুলে নিয়ে সোজা ড্রাইভ করে ইটালীয় এলাকায় নিয়ে যাবে।’

    ক্যানারিস মৃদু হেসে বললেন, ‘চমৎকার। তাহলে আর বেশি দেরি নেই, হান্স।’

    ‘না, হের এডমিরাল।

    ‘তাহলে কাজ চালিয়ে যাও। ক্যানারিস বললেন। তারপর রিটার বের হয়ে গেল।

    .

    ১২.

    মুলার যখন ওদেরকে নিচে ক্যাম্পে নামিয়ে দিয়ে গেল, তখন গিরিখাতের পাশ দিয়ে আকাশে চাঁদ ওঠার পর এর স্নিগ্ধ আলোয় উপত্যকা ভরে উঠল। গুহা থেকে বের হয়ে কেইন ক্লান্ত পেশীগুলোকে একটু আরাম দেবার জন্য একটা টানা দিল। তারপর চন্দ্রালোকিত মন্দিরটির দিকে তাকাল। এটা দেখতে অপুর্ব সুন্দর আর সম্ভ্রম জাগিয়ে তুলে, কিন্তু প্রহরীরা অন্য কিছু মনে করল। রাইফেলের বাট দিয়ে তার পেছনে জোরে একটা গুতা মেরে তাকে নিচে যেতে বাধ্য করল।

    উপত্যকার চারধার নিরব হয়ে আছে। ছায়া আর একাকীত্ব মরুভূমি থেকে এসে ঢুকলো। ওরা তাঁবুগুলোর মধ্য দিয়ে গাছগুলোর মাঝে প্রবেশ করল। কোথাও একটা উট কেশে উঠল। একজন আরব জলাধারে হাঁটু পর্যন্ত দাঁড়িয়ে গা ধুচ্ছিল। সে কৌতূহলী হয়ে ওদের চলে যাওয়া দেখল।

    গাছগুলোর অন্যপাশে পৌঁছার পর ওরা ঘোড়ার খুড়ের আকৃতির একটা ছোট পাহাড়ের কাছে এসে থেমে দাঁড়াল। পাহাড়টা গোলাকার, কালো, প্রায় পাঁচ ফুট ব্যাসের একটা গর্তকে ঘিরে রয়েছে। কাছাকাছি একটা খেজুর গাছের সাথে একটা মোটা দড়ি বাঁধা রয়েছে। একজন প্রহরী দড়ির মুক্ত অংশটা তুলে নিয়ে নিচে অন্ধকারে ছুঁড়ে ফেলল। প্রথমে কানিংহাম নামল। দুহাতে শক্ত করে দড়িটা ধরে গর্তের কিনারা দিয়ে দড়ি বেয়ে বেয়ে নামল। জামাল নামার পর মুলার কেইনের দিকে তাকিয়ে দুহাত দুপাশে ছড়িয়ে দিয়ে এক বিশেষ ভঙ্গিতে বলল–এসবের জন্য আমি দুঃখিত বন্ধু, কিন্ত স্কিরোজ এ ব্যাপারে খুব জোর দিয়েছে। সে তোমাকে অত্যন্ত রিসোর্সফুল একজন লোক মনে করে।

    “ঠিক আছে, আর বেশি বলার দরকার নাই, কেইন ঠাণ্ডা স্বরে বলল। সে দড়িটা তুলে নিয়ে আর একটা কথাও না বলে নামতে শুরু করল।

    কঠিন শিলাস্তর কেটে খনি গহ্বরটা তৈরি করা হয়েছিল। সে সহজেই দেয়ালের গায়ে পা ঠেকিয়ে নামতে পারল। একবার একটু থেমে গোলাকার মুখ দিয়ে দেখতে পেল উপরে আকাশে তারাগুলো জুল জুল করছে আর তার পর পরই হঠাৎ মনে হলো তারাগুলো অনেক দূরের। নিচে হালকা নড়াচড়ার আভাস পেল।

    গর্তটা দুপাশে একটু ছড়িয়ে যেতেই কয়েকটা হাত ওর পা ধরে নিচের দিকে নামাল। নরম বালুতে নেমে দাঁড়াতেই হতেই দড়িটা তার মুখে জোরে একটা ঘসা দিয়ে উপরে অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেল। অপ্রীতিকর এই পরিস্থিতিতে সে হঠাৎ পেছনের দিকে একটু হটতেই কারও দেহের সাথে ধাক্কা লাগল।

    কানিংহাম বলল, যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। ওরা এরপরই একটা ঝুড়ি ভর্তি খাবার নামাবে। এক মুহূর্ত পর সে সন্তুষ্টি নিয়ে বলল হ্যাঁ পেয়েছি!’ সে কেইনের কনুই ধরল। সাবধানে ছয় পা এগোলেই আপনি দেয়ালটা পাবেন।’

    কেইন সামনে হাত বাড়িয়ে অন্ধকারের মধ্য দিয়ে চলতে লাগল, যতক্ষণ না তার আঙুল পাথরে ঘসা খেল। সে দেয়ালে পিঠ দিয়ে বসল, পাশেই জামাল বসে ছিল। তারপর কানিংহাম মিলে সবাই খাবারগুলো ভাগাভাগি করে খেতে শুরু করল। খাওয়া দাওয়া শেষ হবার পর ওরা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে বসল।

    কেইন বলল, কখনো এখান থেকে বের হতে চেষ্টা করেছেন?’।

    কানিংহাম উঠে দাঁড়াল। দিনে হলে আপনাকে দেখাতে পারতাম। আমাদের মাথার উপরে গুহাটা প্রায় পাঁচ ফুট চওড়া। এত চওড়া না হলে হয়তো মূল গুহা বেয়ে ওঠা যেত। বাকি পথটা বেশ সরু আর দুপাশের দেয়াল এবড়ো থেবড়ো পাথর দিয়ে গাঁথা।

    কেইন পকেট হাতড়ে একটা ম্যাচবুক বের করল। প্রথম কাঠিটা জ্বেলে সে মাথার উপরে তুলে ধরল। কানিংহামের কথাই ঠিক। খনিকূপের নিচের অংশটি বেশ চওড়া। দেশলাই কাঠিতে তার আঙুল পুড়তেই সে উহ্ করে কাঠিটা ফেলে দিল।

    কানিংহামের দিকে ফিরল। আপনি বুঝতে পেরেছেন আমাদের হাতে সময় নেই?’ বড় জোর আর একটা দিন হাতে আছে। সত্যি বলতে কি আমাদের হাতে দুটো পথ রয়েছে। হয় এই গর্ত থেকে আমরা বের হবো আর নয়তো মরবো।’

    কানিংহাম বলল, আমি আপনার সাথে আছি। কিন্তু কীভাবে কি করবেন?

    কেইন জামালের কাছে গিয়ে ওর সামনে আসন গেড়ে বসল, তারপর ধীরে ধীরে পরিষ্কার আরবিতে তার সাথে কথা বলতে শুরু করল। তার কথা বলা শেষ হলে বিশালদেহী জামাল তার কাঁধে একটা ঝাঁকি দিয়ে ইঙ্গিত করল যে সে সব বুঝেছে। তারপর সে উঠে দাঁড়াল।

    কেইন কানিংহামের দিকে ফিরল। জামাল অসাধারণ শক্তিশালী। সে হয়তো আমাকে উপরের দিকে ঠেলে তুলতে পারবে যাতে আমি উপরে সরু অংশের কোন জায়গার দেয়ালে হাত দিয়ে ধরতে পারি। আমি তার কাঁধে চড়বো আর আপনি আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আমাকে স্থির হতে সাহায্য করবেন।

    ‘আমার মনে হয়, প্ল্যানটা ভালই,’ কানিংহাম বলল।

    জামাল সোজা হয়ে দাঁড়াতেই কেইন তার কাঁধে চড়লো। তারপর খুব সাবধানে নিজের দেহ সোজা করে মাথার উপরে দুহাত উঁচু করে ধরল।

    ‘এবার,’ সে আরবিতে বলার সাথে সাথে জামাল তার শক্তিশালী হাত কেইনের পায়ের নিচে দিয়ে তাকে সরাসরি উপরের দিকে উঠাতে শুরু করল।

    কেইন আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল দুহাত দিয়ে কিছু একটা খামচে ধরার। জামালের হাত কাঁপা শুরু হতেই তার মনে আতঙ্ক জেগে উঠল। ঠিক তখনই দেয়ালে পাথরের গায়ে ভাঙ্গা একটা অংশে আঙ্গুলে ঠেকতেই সে তা আঁকড়ে ধরে দুলতে শুরু করল। এক মুহূর্ত পর সে গুহার গায়ে শরীর আটকাতে পারল। এক পাশের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে অন্য পাশের দেয়ালে পা ঠেকালো।

    এভাবে সে দেয়াল বেয়ে সোজা উপরের দিকে ধীরে ধীরে উঠতে শুরু করল। একটু পর পর বিশ্রাম নিল। এবড়ো থেবড়ো পাথরগুলো তার পিঠে বিধতেই মাঝে মাঝে খুব যন্ত্রণা হচ্ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও মুখ কামড়ে যন্ত্রণা সহ্য করে উপরের দিকে উঠতে লাগল। কিছুক্ষণ পর কূপের মুখ আকারে বড় হলো। কূপের মুখের কাছে আসতেই সে এক ফুট নিচে পা রেখে একটু বিশ্রাম নিল। তারপর দ্রুত কুপের ভেতর থেকে বাইরে বের হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে দড়িটার দিকে এগিয়ে চলল।

    ঠিক সেই মুহূর্তে দুজন বেদুঈন পাম গাছগুলোর মধ্য থেকে বের হয়ে কূপের কয়েক ফুট দূরত্বে এসে এক ফালি চাঁদের আলোর মাঝে দাঁড়িয়ে অলসভাবে গল্প করতে লাগল।

    প্রথম শব্দটা পেতেই কেইন লম্বা হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েছিল। এবার বেশ সাবধানে এক ইঞ্চি ইঞ্চি করে হামাগুড়ি দিয়ে ছায়ার মধ্য দিয়ে পাম গাছগুলোর দিকে এগোতে লাগল। এ মুহূর্তে কানিংহাম আর জামালের জন্য তার কিছুই করার নেই। দুই বেদুঈনই সশস্ত্র আর একজন হাতে রাইফেল ধরে রেখেছে। দুজনকে কাবু করা অসম্ভব ব্যাপার।

    সে উঠে দাঁড়িয়ে পাম গাছগুলোর মধ্য দিয়ে নিঃশব্দে ক্যাম্পের দিকে হেঁটে চলল। কাছে পৌঁছতেই গানবাজনার আওয়াজ শোনা গেল। বেদুঈনরা এক তূপ আগুন জ্বালিয়ে তার চারপাশে গোল হয়ে আসন গেড়ে বসেছিল। কয়েকজন দলবদ্ধভাবে নেচে বেড়াচ্ছে অদ্ভুত ভঙ্গিতে। একজন একটি রাখালের বাঁশি বাজাচ্ছিল, আর একজন ছোট একটা চামড়ার ঢোলকে অনবরত একঘেয়ে তালে বাজিয়ে চলছিল। বাকিরা গোল হয়ে বসে গানের সুরের সাথে তাল মিলিয়ে দুই হাতে তালি দিচ্ছিল আর সামনে পেছনে শরীর দোলাচ্ছিল। সে অগ্নিকুন্ডকে পাশ কাটিয়ে ছায়ার মধ্য দিয়ে তাঁবুগুলোর মাঝে চলতে শুরু করল। প্রথম দুটো তাবু খালি আর সবচেয়ে বড়টা সে এড়িয়ে গেল।

    ক্যাম্প থেকে একটু দূরত্বে দুজন প্রহরী একটা তাঁবুর সামনে দাঁড়িয়েছিল। সে ঘুরে তাবুটার পেছন দিকে গিয়ে তাঁবুর নিচে ছায়ার মধ্যে হামাগুড়ি দিতে লাগল। ভেতর থেকে নড়াচড়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। রুথ কানিংহাম মৃদু কণ্ঠে কিছু বলে উঠল আর মেরি উত্তর দিল। তবে ঠিক মতো বোঝা গেল না

    কেইন খুব আস্তে তাঁবুর মোটা দড়িটা ঢিলা করে তাঁবুর নিচের প্রান্তটা কয়েক ইঞ্চি উঁচু করল। এবার মাটিতে চিৎ হয়ে সে ভেতরের দৃশ্য দেখতে পেল।

    মেরি একটা স্লিপিং ব্যাগের উপর বসেছিল, তার পেছনটা কেইনের কাছ থেকে মাত্র ছয় ইঞ্চি দূরত্বে। আর রুথ কানিংহাম রয়েছে তাঁবুর দরজার কাছে।

    কেইন খুব নরম গলায় বলল,’মেরি পেছনে তাকিও না। রুথকে কথা চালিয়ে যেতে বলো।’

    পাতলা শার্টের নিচে মেরির কাধ হঠাৎ শক্ত হয়ে গেল। সে সামনে ঝুঁকে রুখকে মদুস্বরে কিছু বলল। রুথ কানিংহাম প্রথমে আঁতকে উঠে মদুস্বরে কিছু একটা বলে উঠলেও, সাথে সাথে নিজেকে সামলে নিল। এরপর সে জোরে জোরে কথা চালিয়ে যেতে লাগল, কী কী হয়েছে আর ভবিষ্যতে ওদের কপালে আর কী আছে সে সব বলে যেতে লাগল।

    মেরি সোজা চিৎ হয়ে স্লিপিং ব্যাগে শুয়ে মাথা অর্ধেক ফেরাতেই সরাসরি কেইনের দিকে তাকাল। দুজনের মুখের মাঝে কেবল তিন চার ইঞ্চি ফাঁক।

    ‘এই মুহূর্তে আমি কিছুই করতে পারব না, আমার কাছে কোন অস্ত্র নেই, সে বলল। ওরা তোমাদের সাথে কি ধরনের আচরণ করেছে?

    ‘এখন পর্যন্ত সবই ঠিক আছে, তবে সেলিম যে দৃষ্টিতে রুথের দিকে তাকাচ্ছিল সেটা আমার খুব একটা ভাল মনে হলো না। তাকে দেখে মনে হলো সে চরম খারাপ কোন কিছু করে ফেলতে পারে।’

    কেইন ওকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে বলল। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের কিছু একটা করতে হবে। আমি এখন ওদের কাছে যাই। যাই হোক চিন্তা করো না। ভাগ্য ভাল হলে আমরা এক ঘণ্টার মধ্যে ফিরে আসবো, তোমাদেরকে এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে।

    সে চলে যাবার জন্য ঘুরতেই একটু থামল। রুথকে বলো তার স্বামী সুস্থ এবং ভাল আছেন।’

    মেরি তাবুর নিচ দিয়ে হাত বাড়িয়ে কেইনের মুখে আলতো করে বোলালো। তার চোখ কালো পানির মতো টলটলে, যেখানে রয়েছে ভয়ংকর স্রোত যা তাকে টেনে নিতে পারে। সে তাঁবুর মাথাটা আরেকটু উপরে তুলল, মেরি তার মুখ বাড়িয়ে দিতেই তার ঠোঁট স্পর্শ করল। এটা কোন আবেগের চুম্বন নয়–এটা ছিল একজন নারীর চুম্বন যে তার কোমল হৃদয়ের সমস্ত তন্ত্রী দিয়ে গভীরভাবে ভালোবাসতে পারে। এক মুহূর্ত সে তার হাত দিয়ে মেরির হাত চেপে ধরল তারপর সেখান থেকে দ্রুত চলে এল।

    সাবধানে গাছগুলোর মধ্য দিয়ে সে খনি-কুপটির দিকে এগোতে লাগল। হঠাৎ সামনে থেকে কারও আসার শব্দ পেয়ে একটা গাছের পেছনে উপুড় হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ল। একটা লোক তার এতো কাছ দিয়ে পাশ কাটালো যে কেইন অতি সহজেই তার আলখাল্লার প্রান্ত ছুঁতে পারতো।

    গাছগুলো যেখানে শেষ হয়েছে সে পর্যন্ত পৌঁছে কেইন দেখতে পেল, অন্য বেদুঈনটা খনিকুপের মুখের কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে। লোকটার হাতে রাইফেল নেই। কেইন অপেক্ষা করতে লাগল, তারপর বেদুঈন লোকটা অন্ধকার উপত্যকার দিকে মুখ ফেরাতেই সে নিঃশব্দে বালুর উপর দিয়ে এগোল। লোকটা কোন সুযোগ পেল না। এক হাত দিয়ে সে তার গলা এমন শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরল, যেন তার মুখ থেকে কোন শব্দ বের না হয়। তারপর ধীরে ধীরে চাপ দিতে থাকল। এক দুই মুহূর্ত লোকটা চেষ্টা করল বজ্রআঁটুনি ছাড়াতে তারপর তার দেহ শিথিল হয়ে পড়ল। কেইন দেহটা টেনে নিয়ে পেছনে গাছগুলোর আড়ালে ছায়ার মাঝে শুইয়ে রাখল।

    দড়িটা তখনো সেই গাছের সাথে কুন্ডলী পাকানো অবস্থায় বেঁধে রাখা ছিল।

    কেইন দড়িটা নিচে কূপের ভেতরে ছুঁড়ে ফেলে মৃদু কণ্ঠে ডেকে উঠল, ‘যত জলদি পারেন উপরে উঠে আসুন।

    সে উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে ক্যাম্পের সামনের গাছগুলোর দিকে নযর রেখে অপেক্ষা করতে লাগল। কয়েক মিনিটের মধ্যে কানিংহাম তারপর জামাল তার পাশে এসে দাঁড়াল।

    ওরা পাম গাছগুলোর দিকে এগিয়ে চলল, কেইন দ্রুত পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলল।

    ‘মেয়ে দুজনকে পাহারা দিয়ে একটা তাবুতে রেখেছে। আমি যা বুঝতে পারছি, কোন অস্ত্ৰছাড়া ক্যাম্প আক্রমণ করে লাভ হবে না। তাই বলতে চাচ্ছি যে গুহাতে স্কিরোজ অস্ত্রশস্ত্র রেখেছে সেখানে বরং যাই। সেখানে একটা রেডিও আছে। মুকাল্লা কিংবা এডেন ধরতে না পারলেও অন্তত জর্ডনের সাথে যোগাযোগ করতে পারব।’

    কানিংহাম বলল, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে ভাল উপায় মনে হচ্ছে।’

    কেইন দ্রুত আরবিতে জামালকে সব বুঝিয়ে বলল। তারপর গাছের ফাঁক দিয়ে তাঁবুগুলোর দিকে এগিয়ে চলল। আগুনটা এড়িয়ে গেল, বেদুঈনরা তখন আগুনের চারপাশ ঘিরে নেচে চলছিল। এরপর ওরা মাটির উপর হামাগুড়ি দিয়ে ক্যাম্পের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলল।

    সবচেয়ে বড় ভাবুটার শেষ প্রান্ত পার হতেই রাতের বাতাসে পরিষ্কার মুলারের গলার শব্দ শোনা যেতেই কেইন একটু থামল। সে কানিংহামের এক কাঁধ আলতো করে ছুঁয়ে তাবুটার কাছে এগোল।

    এবার স্কিরোজ কথা বলছিল, বেশ খুশি খুশি মনে হচ্ছিল তাকে। আমার খুব ভাল লাগছে হেডকোয়ার্টারের সাথে রেডিওতে যোগাযোগ করে, সে বলল, আমার সৌভাগ্য যে আমি রোমেরোর সাথেও যোগাযোগ করতে পেরেছিলাম। ওরা আজ রাতেই আসছে।

    মুলার বলল, কিন্তু আমি এর কোন অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না।’

    স্কিরোজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল–”তুমি অসম্ভব একজন বোকা লোক, মুলার। এখানে আমাদের কাজ শেষ। কেইনকে যে রকম আমি এর আগে বলেছিলাম, অন্তত এক মাসের জন্য আমরা নিরাপদ, কিন্তু অনেক সময় মানুষের জীবনে অনেক অযৌক্তিক খেলা খেলে যায়। সেজন্য আমরা রোমেরোর সাথে ক্যাটালিনাতে চড়ে উড়ে যাওয়ার চমৎকার সুযোগটা নিতে যাচ্ছি, মুলার। আনন্দ করো। তুমি ইতিহাসের একটা অংশ হতে যাচ্ছো।’

    ‘বন্দিদের কি হবে? সেলিম মাঝখানে বাধা দিয়ে বলল।

    কেইনের চোখে ভেসে উঠল স্কিরোজের স্ফীত মুখের মদ হাসি। ‘পুরুষদের আমি তোমার জিম্মায় রেখে যাবো। মেয়েরা আমাদের সাথে ক্যাটালিনাতে যাবে।

    কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছিলে কানিংহাম মেয়েটাকে আমার হাতে ছেড়ে দেবে, সেলিম রাগত স্বরে বলল।

    ‘আমি আমার মত বদলেছি এর পরেই, শীতল কণ্ঠে বলল স্কিরোজ। ‘এখানে কে বস সেটা ভুলে যেও না। তুমি অন্য কোন মেয়ে খুঁজে নিও।

    ‘ওদের কী হবে?’ মুলার জিজ্ঞেস করল।

    স্কিরোজ তাকে বলল, ‘আমি ঠিক বলতে পারব না। তবে পেরেট মেয়েটাকে আমি একটা ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে চাই। ওকে কাবু করতে অনেক মজা হবে।’

    রাতের বাতাসে দুর থেকে মৃদু গুঞ্জন শোনা গেল। স্কিরোজ উঠে দাঁড়াল। ‘ঐ যে ঠিক সময়ে প্লেন আসছে ভদ্রমহোদয়গণ। মেয়েদেরকে নিচে ট্রাকে নিয়ে যাও সেলিম। মুলার আর আমি একটু পরেই আসছি।’

    কানিংহাম হঠাৎ নড়ে উঠল। কিন্তু কেইন তার কাধ শক্ত করে চেপে ধরে টেনে নামাল মাটিতে। বোকার মত কাজ করবেন না, সে তার কানে ফিস ফিস করে বলল।

    হামাগুড়ি দিয়ে তাঁবুগুলোর মধ্য থেকে বেরিয়ে ওরা ছায়ার মাঝে অদৃশ্য হয়ে গেল। কেইন ওদেরকে পথ দেখিয়ে পাহাড় চূড়ার দিকে এগিয়ে চলল, তখন কানিংহাম বলল, এখন আমরা কী করব?

    কেইন তাকে বলল, “এখন একটি মাত্র কাজ আমাদের করতে হবে। প্লেনটা থামাতে হবে। তবে খুব দ্রুত কাজ করতে হবে।’

    পাথরের র‍্যাম্প দিয়ে ওরা নিঃশব্দে হেঁটে চলল, তারপর অতি সাবধানে সেই গুহামুখটার কাছে এগোল যেখানে অস্ত্রের ভান্ডারটা রয়েছে। একজন মাত্র আরব পিঠে রাইফেল ঝুলিয়ে পাথরে বসে বসে দুলছিল আর আকাশের দিতে তাকিয়ে একঘেয়ে সুরে একটা বিষাদক্লিষ্ট রাখালি গান গেয়ে চলছিল।

    কেইন জামালের কাঁধে চাপ দিল, বিশালকায় সোমালি নিঃশব্দে এগোল। উঁচু সুরে পৌঁছার পর গানটা হঠাৎ মাঝখানে থেমে গেল। তারপর হঠাৎ মট করে একটা শব্দ হলো, যেন কোন শুকনো ডাল ভেঙেছে। জামাল মৃতদেহটা মাটিতে নামিয়ে রাখল।

    গুহার ভেতরে অন্ধকার, সামনে যেতে যেতে কেইন একটা ম্যাচ জ্বাললো। রেডিওর উপরে একটা বড় স্পট ল্যাম্প দেখা গেল। কেইন তাড়াতাড়ি বোতাম টিপে ল্যাম্পটা জ্বেলে অস্ত্রের বাক্সগুলোর দিকে ঘোরাল।

    আর মাত্র কয়েকটা বাক্স অবশিষ্ট রয়েছে। প্রথম দুটো পরীক্ষা করে সে। দেখল গাদাগাদি করে রাইফেল রাখা আছে। তবে তৃতীয়টাতে সাবমেশিন গান রয়েছে। আরো খুঁজে এক বাক্স ভর্তি গোলাকার একশো রাউন্ড বুলেটের ক্লিপ পেল। কানিংহাম আর জামাল, দুজনকে কেইন দুটো করে ক্লিপ দিল।

    কানিংহাম বলল, রেডিওর কী হবে?

    মেশিনগানে গোলা ভরতে ভরতে কেইন মাথা নাড়ল–এখন আর তার সময় হবে না।

    বাইরে বের হতেই একটা ইঞ্জিনের শব্দ শোনা গেল, ওরা দেখল একটা ট্রাক মন্দির হয়ে বাইরে মরুভুমির দিকে যাওয়ার রাস্তার দিকে ছুটে চলেছে।

    বেশিরভাগ বেদুঈন তখনো আগুনের চারপাশে বসে রয়েছে। কেইন দ্রুত ছায়ার মধ্য দিয়ে ক্যাম্পের অন্যপাশে যেতে লাগল।

    যে ট্রাকে চড়ে ওরা সকালে পৌঁছেছিল সেটা তখনো তাঁবুগুলোর পাশে উজ্জ্বল চাঁদের আলোয় দাঁড় করিয়ে রাখা আছে। সে কানিংহামকে বলল, এটা এখন আমাদের। আপনি ড্রাইভ করব, এমন জোরে চালাবে যেন জীবনে কখনো তেমন জোরে চালান নি।

    ওরা ছায়া থেকে বের হয়ে ট্রাকটায় চড়ে বসল। কানিংহাম স্টাট দিতেই পেছন থেকে তীক্ষ্ণ চিৎকার শোনা গেল। কয়েকজন বেদুঈন দৌড়ে সামনে এগোতেই কেইন পেছনে ঘুরল। সাব-মেশিন গানটা তুলে দ্রুত এক রাউন্ড গুলি চালালো। লোকগুলো অন্ধকারে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল। ঠিক তখনই কানিংহাম প্রচণ্ড গতিতে ট্রাক ছুটিয়ে চলল।

    মন্দিরের সামনের উঁচু টিলাটার উপরে উঠে ওরা গিরিপথে ঢোকার প্রবেশ পথের দিকে ছুটে চলল। ঠিক তখনই মাথার উপরে ক্যাটালিনার গর্জন শোনা গেল, চাকা আর ফ্ল্যাপ নামানো রয়েছে, বাইরে সমতল জায়গায় নামার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    কেইন চেঁচিয়ে বলল, “যত জোরে পারেন ট্রাকটা চালাতে থাকুন। কানিংহাম সাথে সাথে তার পা পাদানিতে দাবিয়ে রাখল। উপত্যকার উঁচু নি পাথুরে ভুমির উপর দিয়ে ট্রাকটা লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে শুরু করল। সে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখল, তারপর একটু পরেই খোলা জায়গায় বের হয়ে প্লেনটার পিছু পিছু চলতে শুরু করল।

    তাদের ঠিক ডান পাশে চাঁদের আলোয় অপর ট্রাকটিকে পরিষ্কার দেখা গেল। সামনে এগোতেই কেইন পরিষ্কার দেখতে পেল সেলিম পেছনে বসে আছে, স্কিরোজ আর মুলার সামনের সিটে।

    স্কিরোজের মুখ রাগে মুচড়িয়ে রয়েছে, সে ঘাড় ফিরিয়ে চিৎকার করে পেছনে বসা সেলিমকে কিছু বলল। ট্রাক দুটো সমান সমান হতেই সেলিম একটা রাইফেল তুলে গুলি করল। স্কিরোজ অন্য ট্রাকটি ঘুরিয়ে ওদের কাছে যেতেই সেলিম আবার গুলি করল। গুলি লেগে উইন্ডস্ক্রিন ভেঙে চুর্ণবিচুর্ণ হতেই কেইন মাথা নিচু করে নিজেকে বাঁচাল। কানিংহাম প্রাণপনে স্টিয়ারিং হুইলটা ঝাঁকি দিয়ে ট্রাকটা এক পাশে নিয়ে গেল, তারপর ট্রাকটা স্কিড করে পুরো এক চক্কর ঘুরল।

    এই মুহূর্তে ওরা নিরাপদ এবং প্লেনটার দিকে তাদের মনোযোগ ফেরালো। প্লেনটা তখন নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। রোমেরো ব্রেক চাপতেই রাতের আকাশে উপরের দিকে ধুলা-বালুর একটা বিরাট মেঘ সৃষ্টি হলো।

    সেকেন্ড পাইলটের সিটে বসা নোভাল ঘুরে তাকিয়ে হঠাৎ রোমেরোর কাঁধ আঁকড়ে ধরল। পেছনে গোলাগুলি চলছে। চল আমরা এখান থেকে বেরিয়ে পড়ি।’

    ‘ফর গড’স সেক একটা সুযোগতো নিতে দাও আমাকে,’ এ কথা বলে রোমেরো পাওয়ার বাড়িয়ে দিল।

    কেইন পেছন ফিরে দেখল অপর ট্রাকটি দ্রুত ওদেরকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কানিংহাম অর্ধচন্দ্রকারে হুইল ঘুরিয়ে ট্রাকটাকে বিশাল ধুলির মেঘের ঠিক মাঝখানে আনল যেদিক দিয়ে প্লেনটা আবার উড়বে।

    কয়েকটা মুহূর্ত ওরা অন্ধের মতো চলতে লাগল। কাশতে কাশতে দম আটকে, মাথা নিচু করে সামনে থেকে উড়ে আসা ছোট ছোট পাথরের টুকরা সামলে ওরা চলতে লাগল। তারপর কানিংহাম হুইল ঘোরাতেই ওরা আবার চাঁদের আলোর মাঝে বেরিয়ে এল।

    ক্যাটালিনাটা এখন ঘণ্টায় বিশ থেকে ত্রিশ মাইল গতিতে ট্যাক্সি করে উপত্যকার প্রবেশ পথের দিকে এগোচ্ছিল। কানিংহাম হুইলে আরেকটা ঝাঁকি মেরে ট্রাকটা ঘুরালো, তারপর এক মুহূর্ত পরেই ওরা সমান্তরাল পথে ছুটতে শুরু করল।

    কানিংহাম ট্রাকটা কাছাকাছি আনতেই কেইন আর জামাল দাঁড়িয়ে প্লেনটা লক্ষ করে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জে একটানা গুলি বৃষ্টি করে চলল। কেইন রোমেরোকে দেখতে পেল প্লেনের উঁচু নাকের মধ্যে। ইট্রুমেন্ট প্যানেলের হালকা আলোয় তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। সে সাব মেশিনগানটা তুলে কেবিনের ভেতরে কয়েক রাউন্ড গুলি করল। রোমেরো মাথা নিচু করে অদৃশ্য হল তারপর প্লেনের লেজটা বিশাল এক বৃত্ত জুড়ে উল্টো দিকে ঘুরল। বাতাসে বালুর মেঘ উড়তে শুরু করল।

    কানিংহাম হুইল ঘুরিয়ে প্লেনের সাথে সংঘর্ষ এড়াতে ট্রাকটা সরিয়ে নিল। প্লেনটা বৃত্তাকারে ঘুরতে ঘুরতে আবার মরুভূমির দিকে এগোতে লাগল। রোমেরো টেক অফ করার প্রস্তুতি নিতেই ইঞ্জিনের গর্জন বাড়তে লাগল।

    তারপর পুরো প্লেনটা এক পাশ থেকে অন্য পাশে ভিষণভাবে কাঁপতে কাঁপতে বামদিকে ঘুরে গেল। একমুহূর্ত পর নাকটা সামনে গোত্তা খেল, তারপর জমিতে লাঙ্গল দেওয়ার মতো সামনের দিকে প্রায় একশো গজ বালুর মাঝে ছুটে গিয়ে একটা দোমড়ানো মোচড়ানো ধাতুর স্তূপে পরিণত হয়ে থামল। রাতের আকাশে কমলা রঙের আগুনের লকলকে শিখা উপরের দিকে লাফিয়ে উঠল।

    প্রচণ্ড একটা বিস্ফোরণ হলো, তারপর পেট্রল ট্যাংকে আগুন লাগতেই আরেকটা বিস্ফোরণ হলো। আগুনের শিখা আর ধাতুর ছোট ছোট টুকরা বাতাসে উড়ে ওদের কাছে আসার আগেই কানিংহাম দ্রুত হুইল ঘুরিয়ে ট্রাকটা সরিয়ে নিল।

    এদিকে অন্য ট্রাকটা দ্রুত গিরিখাতের দিকে ছুটছিল। ওরা ট্রাকটার পিছু নিল। মাটির উপর দিয়ে এমনভাবে ওরা ছুটছিল যেন জীবন্ত কিছু একটা ছুটছে। কেইন সাবমেশিন গান হাতে নিয়ে প্রস্তুত হয়ে এক পা রানিং বোর্ডে রেখে দাঁড়াল। তাকিয়ে রইল অন্য গাড়িটার টেইল লাইটের দিকে।

    গিরিখাতের মধ্যে প্রবেশ করার সময় একটা উঁচু ঢিবি পার হতে গিয়ে ট্রাকটা হঠাৎ শূন্যে লাফিয়ে উঠল। কেইন একপাশে কাত হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। তাল সামলাতে না পেরে সাব মেশিন গানটা তার হাত থেকে ছুটে মাটিতে পড়ে গেল আর সে নরম বালুতে পড়ে গড়াতে লাগল।

    ত্রিশ চল্লিশ গজ এগিয়ে ট্রাকটা ব্রেক করে থামতেই ওদের উপর ভারী গোলাবর্ষণ শুরু হলো। কেইন দেখল কয়েকজন বেদুঈন এক জায়গায় পড়ে থাকা কিছু বোল্ডারের পেছন থেকে উদয় হলো।

    ট্রাকের গায়ে গুলির ধুপ ধুপ শব্দ শুনতে পেয়ে সে কোনমতে উঠে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে উঠলকানিংহাম, এখান থেকে বেরিয়ে যাও। মেয়েদেরকে উদ্ধার কর!

    সাথে সাথে ট্রাকটা চলে গেল আর কেইন নিচু হয়ে সাব-মেশিনগানটা হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগল। দেখতে পেল ওটা এক টুকরা চাঁদের আলোর মাঝে মাটিতে পড়ে রয়েছে। সাথে সাথে দৌড়ে চলল ওটা নিতে। এক দুই মুহূর্ত সম্পূর্ণ নিরবতা, তারপর একটা পাথরের টুকরা গড়িয়ে পড়ার খট খট আওয়াজ পাওয়া গেল। সে রাতের আকাশে গুলি ছুঁড়লো। উল্টোদিক থেকে কয়েকটা গুলি তার মাথার উপর দিয়ে শন শন করে উড়ে পাহাড়ের গায়ে লেগে ঠিকরে পড়ল। গুলি থামতেই সে একলাফে একটা বোল্ডারের পেছনে চলে গেল। তারপর ছায়ার মাঝে থেকে উপত্যকা দিয়ে দৌড়াতে শুরু করল।

    ওদিকে পেছন থেকে ওরা তখনো অন্ধের মতো গুলি চালিয়ে যাচ্ছে, তবে এ মুহূর্তে সে একা। মন্দিরের দিকে চলে যাওয়া চওড়া রাজপথ দিয়ে সে ছুটলো। তারপর মন্দির অতিক্রম করে মরুদ্যানের দিকে ছুটে চলল।

    খালি জায়গাটার কিনারায় পৌঁছে সে একটু থামল, তারপর নিচে ক্যাম্পের দিকে তাকাল। কানিংহাম তাঁবুগুলো থেকে বিশ-ত্রিশ গজ দূরত্বে ট্রাকটা থামিয়েছে। সে আর জামাল এর পেছনে আশ্রয় নিয়েছে।

    কয়েকজন বেদুঈন ডানদিক দিয়ে উঁচু ঢাল বেয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করছে, যাতে উপর থেকে ওদের উপর গুলিবর্ষণ করতে পারে। কেইন সাবধান করার আগেই কানিংহাম উপরের দিকে তাকিয়ে বিপদটা টের পেল। সে জামালের কাঁধে একটা টোকা দিল, তারপর দুজনেই ছায়ার মাঝ থেকে ঘুরে ঢাল বেয়ে উপরে সেই গুহাটার দিকে উঠতে শুরু করল, যেখানে অস্ত্রভান্ডার রয়েছে।

    তখনো ওদের দেখা যায় নি। আর স্কিরোজ বুঝে উঠতে পারেনি যে ওরা সেখান থেকে চলে গেছে। কিছুক্ষণ নিঃশব্দে কাটলো, তারপর কেইন ঢাল বেয়ে কোণাকুণি উঠতে শুরু করল।

    একটা বোল্ডারের পেছনে থেমে উপরের দিকে তাকাল। কানিংহাম আর জামাল পাহাড়ের সরু তাকটার কাছে পৌঁছাতেই দেখল কয়েকজন বেদুঈন ওদের আগেই বুকে হেঁটে ঢাল বেয়ে উঠে ওদের সামনের পথ বন্ধ করে ফেলেছে। কানিংহাম একটানা দীর্ঘ এক রাউন্ড গুলি চালিয়ে ওদের মাথা নিচু করে রাখতে বাধ্য করল। এই ফাঁকে সে আর জামাল দৌড়ে অন্য গুহাটার আশ্রয়ে চলে গেল। কেইন বোল্ডারের পেছন থেকে বের হয়ে ঢাল বেয়ে ওদের কাছে যেতে শুরু করল, আশা করল অন্ধকার ছায়া তাকে ঢেকে রাখবে।

    নিচে উপত্যকা থেকে সেলিমের রাগি চিৎকার শোনা গেল, আর সাথে সাথে ভারী গুলি বর্ষণ শুরু হলো। কেইন দম নিতে নিতে এক হাতে সাব মেশিনগানটা বুকে চেপে ধরল আর অন্য হাত দিয়ে আলগা মাটি আঁকড়ে ধরল। সে পেছন থেকে অনুসরণরত লোকজনের গর্জনের শব্দ শুনতে পেল, তারপর মাথার উপরের দিক থেকে একটানা বন্দুকের গুলির আওয়াজ ভেসে এল। সে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখল পাহাড়ের একটা তাকের কিনারায় কানিংহাম সাব-মেশিনগান কাঁধে নিয়ে হাঁটুগেড়ে বসে আছে।

    কেইন মুখ থুবড়ে সামনের দিকে পড়ে যেতেই জামাল শক্ত হাতে তাকে ধরে উপরে তুলল, তারপর টেনে গুহার ভেতরে নিয়ে গেল। তারা ভেতরে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। কানিংহাম গুহামুখের ধারে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। চাঁদের আলোয় তার মুখ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।

    বিপদটা বেশ ভয়ানক ছিল,’ একটু পর কেইন বলল।

    কানিংহাম সায় দিল, মেয়েদের গায়ে গুলি লাগবে এই ভয়ে আমরা খুব জোড়ালো আক্রমণ চালাতে পারিনি।

    কেইন সায় দিয়ে বলল, সেটাই ওর ট্রাম্প কার্ড আর স্কিরোজ সেটা জানে।’

    কয়েকটা বুলেট শন শন করে গুহামুখ দিয়ে ছুটে এসে উল্টোদিকের দেয়ালে আছড়ে পড়ল। সে সাবধানে বাইরে তাকাল। পুরো উপত্যকা চাঁদের আলোয় ভেসে রয়েছে, আর পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে শত্রুরা এক বোল্ডার থেকে অন্য বোল্ডার পার হয়ে সামনে এগোচ্ছে।

    ‘ঢাল বেয়ে অর্ধেক আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর, তারপর আমি বলা মাত্রই গুলি শুরু করো, কেইন বলল।

    ওরা নিঃশব্দে অপেক্ষা করতে লাগল। স্কিরোজ ছিল একদম সামনে, সে উপরের দিকে তাকাতেই তার মুখে চাঁদের আলো এসে পড়ল। কেইন বলল, ‘বেজন্মা লোকটার সাহস আছে, বলতে হবে।’

    চাঁদের আলোয় আলোকিত বড় যে বোল্ডারটাকে কেইন অর্ধেক পথের চিহ্ন হিসেবে ধরে নিয়েছিল, তার কাছে স্কিরোজ পৌঁছাতেই কেইন বলে উঠল, ‘এবার’ তারপর সে ট্রিগার চাপলো। তিনটে বন্দুক এক সাথে গর্জে উঠতেই নিচে থেকে চিৎকার আর আর্তনাদ ভেসে এল, কয়েকজন আরব ঢাল বেয়ে

    গড়িয়ে নিচে উপত্যকার মাটিতে পড়ল।

    বাকিরা দ্রুত পিছু হটতে শুরু করল, পিছন পিছন স্কিরোজও পিছুতে লাগল। সে জার্মান ভাষায় চিৎকার করে গালাগাল করতে লাগল।

    তারপর একটু নিরব হলে কানিংহাম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, যাক এই মুহূর্তের জন্য বাঁচা গেল।

    কেইন মাথা নেড়ে বলল, “উঁহু, সে হাল ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। আমার মনে হচ্ছে, যে কোন মুহূর্তে সে আরো বিশ্রি কোন কিছু ঘটিয়ে বসতে পারে। একথা বলতেই, স্কিরোজ সামনে এগিয়ে এল–’কেইন, সে ডেকে উঠল। ‘আমি তোমার সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করব না। আমি তোমাকে দুহাত মাথার উপর তুলে নিচে আসার জন্য পনেরো মিনিট সময় দেব। আর যদি তা না কর, তবে মেয়েদের খারাপ কিছু ঘটবে। আমি জানি তুমি আর কানিংহাম নিশ্চয়ই তা চাও না।’

    কেইন জামালের কাঁধ ছুঁলো, তারপর তিনজনেই প্রবেশ মুখ থেকে ওঠে পেছনের দিকে এল। সে আমাদের ফাঁদে ফেলেছে, কানিংহাম বলল।তাকে আমরা মেয়েদের ক্ষতি করতে দেব না।’

    কেইন মাথা নাড়ল, তার মুখ গম্ভীর হলো। সে যদি সত্যিই ওদের ক্ষতি করতে চায় তবে সে তা করবে, আমরা যাই করি না কেন তাতে তার কিছু যায় আসে না। সে মাথা নাড়ল। আমার মনে হয় সে সময় নিচ্ছে। সম্ভবত কোন ফন্দি আঁটছে।’

    ঠিক সেই মুহূর্তে উপরে পাহাড়ের মুখে বাইরে নড়াচড়ার আভাস পাওয়া গেল আর গুহা মুখের সামনে ছোট ছোট পাথরখন্ড ঝুরঝুর করে পড়তে শুরু করল।

    ‘আমি বললাম না ঐ বেজন্মাটা কোন একটা মতলব এঁটেছে, কেইন বলে উঠল। আর ঠিক তখনই একটা গ্রেনেড গুহা মুখ দিয়ে ভেতরে গড়িয়ে পড়ল। গ্রেনেডটা চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখা গেল।

    কেইন ঘুরে কানিংহাম আর জামালকে ভীষণ জোরে ধাক্কা দিয়ে সমাধির সরু প্রবেশ পথের দিকে ঠেলে দিল, তারপর সে নিজেও পেছনে ছুটে গিয়ে হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ল।

    গ্রেনেডটা ফাটতেই গুহার মুখে পাথরের বৃষ্টি ঝরতে লাগল। পুরো পাহাড়টা মনে হলো কাঁপছে আর ছাদটা ভেতরের দিকে দেবে যেতে লাগল।

    মুলার উপরের দিকে তাকিয়ে চাঁদের আলোয় পরিষ্কার ধুলার মেঘ দেখতে পেল। “ওহ মাই গড! এবার কী হবে?

    স্কিরোজ বলল, ‘আমরা এখান থেকে চলে যাবো। সেলিমের ধাউয়ে চড়ে দাহরান ফিরে যাবো। বেজন্মা কেইন আর তার বন্ধুদের এবার ঠিক শাস্তি হয়েছে। আশা করি যেন মাটি চাপা পড়ে ওরা অনেক সময় নিয়ে মারা যায়।

    ‘কিন্ত বার্লিন, ফুয়েরার? আমাদের কী হবে এরপর?’

    কিছু হবে না, বোকারাম। আমি সোজা রেডিওতে রিটারকে বলবো ক্যাটালিনা ক্র্যাশ করেছে। আমাদেরতো কোন দোষ নেই। কেবল এটাই তারা জানবে।

    ‘আর মেয়েদের কী হবে?

    ‘আপাতত তারা আমাদের সাথেই যাবে। এখন চল যাওয়ার ব্যবস্থা করি।’

    সে ঘুরে নিচে ক্যাম্পের দিকে রওয়ানা দিল। সেলিম আর অন্যান্য বেদুঈনদের ইশারা করল পিছু পিছু আসতে।

    .

    এদিকে বার্লিনে ক্যানারিস তার অফিসে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে কোনিয়াক ব্রান্ডি পান করছিলেন। তখনই দরজায় একটা টোকা পড়ল আর রিটার ভেতরে ঢুকলো। তরুণ মেজরের চেহারা বিবর্ণ দেখাচ্ছে আর তাকে মনে হলো বেশ বিধ্বস্ত।

    ‘কোন খারাপ খবর, হান্স?’

    ‘অপারেশন শেবা, হের এডমিরাল। আমি স্কিরোজের কাছ থেকে একটা বিদঘুঁটে মেসেজ পেয়েছি। সে সব কিছু বন্ধ করে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েছে। কোন ধরনের সমস্যা হয়েছিল, ক্যাটালিনা ধ্বংস হয়েছে। রোমেরো আর তার লোকজন সবাই মারা গেছে।’

    ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা, ক্যানারিস বললেন।

    ‘কিন্তু ফুয়েরার, হের এডমিরাল। তিনি কী বলবেন?

    দ্যাখো হান্স সোমবারে কোন বিষয় নিয়ে আমাদের ফুয়েরারের অত্যন্ত উত্তেজিত হবার স্বভাব রয়েছে, যেটা উনি শুক্রবারের মধ্যে পুরোপুরি ভুলে বসেন। ক্যানারিস মৃদু হাসলেন। তাছাড়া তার হাতে এখনও পোলান্ড আছে।’

    ‘আপনি নিশ্চিত তিনি এভাবেই প্রতিক্রিয়া দেখাবেন?’ রিটার বলল।

    ‘অবশ্যই। ফুয়েরারের মানসিক চিন্তাভাবনার গতির ধারণা নিয়ে আমার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে হান্স।

    ক্যানারিস উঠে গিয়ে আরেকটা গ্লাস নিলেন। নাও তুমি এক গ্লাস কোনিয়াক নাও। যতদিন তুমি এই খেলায় আছে আর যতদিন আমি আছি, ততদিন তুমি যে কোন কঠিন বিষয়কে সহজভাবে গ্রহণ করতে শেখো।

    ‘আপনি যা বলেন, হের এডমিরাল। হ্যাঁ আমি অবশ্যই তা বলছি। ক্যানারিস গ্লাস তুললেন। থার্ড রাইখের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ কর হান্স। আর হাজার বছর এটা টিকে থাকুক।’ তিনি হাসলেন। আর তা যদি তুমি বিশ্বাস কর, তাহলে যে কোন জিনিসে বিশ্বাস করতে পার।

    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআমি রুশো বলছি : দি কনফেশানস – সরদার ফজলুল করিম
    Next Article মৃচ্ছকটিক – শূদ্রক (অনুবাদ – জ্যোতিভূষণ চাকী)
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.