Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শেবা – জ্যাক হিগিনস

    জ্যাক হিগিনস এক পাতা গল্প262 Mins Read0

    ১৩. গুহাটা সম্পূর্ণ অন্ধকার

    ১৩.

    গুহাটা সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে গেল। কেইন ছোট ম্যাচ বুকটা বের করল যেটা সে এর আগে খাদে ব্যবহার করেছিল। আর তিনটে মাত্র কাঠি অবশিষ্ট আছে, সে কাঁপা কাঁপা হাতে একটা কাঠি জ্বাললো।

    ম্যাচের আগুনের শিখা সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই অন্ধকার থেকে কানিংহামের ঘর্মাক্ত মুখ দেখা গেল। সে বিচলিত ভাবে হাসল। এখন কি হবে?’

    ‘পরিস্থিতিটা একটু বুঝে নিতে দিন, কেইন বলল। আমরা যখন কাজ শেষ করেছিলাম তখন আপনি যন্ত্রপাতিগুলো আর একটা স্পট-ল্যাম্প এই প্যাসেজের শেষ মাথায় রেখেছিলেন, তাই না?

    ম্যাচের কাঠিটা জ্বলতে জ্বলতে শেষ হয়ে তার আঙ্গুলে আগুনের ছ্যাকা লাগতেই কেইন কাঠিটা ফেলে দিয়ে আরেকটা কাঠি জ্বাললো। উবু হয়ে বসে সে কাঠিশুদ্ধ হাতটা মেলে ধরল। তারপর কানিংহাম বললো, ‘পেয়েছি!’

    এক মুহূর্ত পর শক্তিশালী সাদা আলোকরশ্মি গুহার অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল। গুহাটার আকার অন্তত অর্ধেক কমে গেছে আর ঢালু হয়ে পড়া খোয়া আর পাথরের স্তূপ জমা হয়ে প্রবেশ মুখটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে ফেলেছে।

    ভেতরে বেশ গরম আর বাতাস ভারী হয়ে আছে ধুলা ও বিস্ফোরকের তীব্র গন্ধে। এবার আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী?’ কানিংহাম বলল।

    কেইন পরনের শার্ট খুলতে শুরু করল। আমার আগেই ভাবা উচিত ছিল। যে এটাই স্বাভাবিক হতে পারতো। আমাদের অনেকদূর খুঁড়ে যেতে হবে। অন্তত, যন্ত্রপাতিগুলো আছে, এটাও কম নয়।

    ‘আর বাইরে আমাদের বন্ধুদের কী হবে?

    তাদের এখন যদুর ধারণা আমরা মৃত, কেইন বলল। ওরা সম্ভবত ভেবেছে সম্পূর্ণ পাহাড়টা আমাদের চাপা দিয়েছে।’

    ‘খুব একটা ভুল কথা ভাবেনি ওরা,’ কানিংহাম তাকে বলল। সে ল্যাম্পটা উপরের দিকে তুলে ছাদ আর দেয়াল পরীক্ষা করল। পুরো জায়গাটা আমার কাছে দেখতে নড়বড়ে মনে হচ্ছে।

    কেইন তার হাত থেকে ল্যাম্পটা নিয়ে এমনভাবে মেঝেতে রাখল যাতে আলো সরাসরি পাথরচাপা প্রবেশ পথের দিকে পড়ে। এখন আমাদের শুধু একটা বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা, সেটা হলো এই স্পট ল্যাম্পের ব্যাটারি। আপনি বরং প্রার্থনা করুন যেন অনেক বেশি সময় এটা কাজ করে।

    কিন্তু দুশ্চিন্তার আরো অনেক বিষয় ছিল এবং রয়েছে। ওরা কোমর পর্যন্ত। খালি গায়ে সেই অদ্ভুত ধুলায় ভরা আলোর মাঝে পরিশ্রম করে যাচ্ছিল। ঘাম দর দর করে ওদের নগ্ন দেহ থেকে ঝরে পড়ছে।

    জামাল এমন এক ব্যক্তি যার উপর নির্ভয়ে নির্ভর করা যায়। সে তার বিশাল হাত দিয়ে যে পাথরগুলো অবলীলায় তুলতে পারছিল সেগুলো কেইন আর কানিংহাম দুজনে মিলেও নড়াতে পারেনি। কাজ করতে করতে সময় সম্পর্কে ধারণা ওরা ভুলে গেছে। আঙুল কেটে ছড়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত জামাল আজব এক ধরনের জান্তব গোঙানি দিয়ে পেছন ফিরে তাকাল। সে কেইনের একটু সামনে কাজ করছিল।

    কী ব্যাপার? কেইন আরবিতে জানতে চাইল।

    জামাল ঘুরল, তার চোখের সাদা অংশ বাতির আলোয় জ্বলজ্বল করছে। সে আঙুল দিয়ে দেখাল আর কেইন হামাগুড়ি দিয়ে সামনে পাথর সরিয়ে সদ্য তৈরি করা সরু পথটা দিয়ে এগোল।

    স্পট ল্যাম্পের আলোয় দেখা গেল তিন কিংবা চার টন ওজনের একটা বিশাল পাথরের স্লাব সামনের পথ জুড়ে রয়েছে। স্ল্যাবটা বিভিন্ন আকৃতির পাথরের সাথে শক্তভাবে আটকানো।

    কানিংহাম তার কাঁধের উপর দিয়ে ঝুঁকে দেখল তারপর মৃদু শিস দিল। ‘মাই গড। ঐ জিনিসটা সরাবার কোন আশাই নেই।’

    সে সত্য কথাই বলেছে, এর কোন উত্তরও নেই। ধীরে ধীরে পিছু হটে ওরা প্যাসেজের প্রবেশ পথের কাছেই দেয়ালে হেলান দিয়ে ধপ করে বসে পড়ল।

    কেইন একটা মুহূর্ত ল্যাম্পের আলোর দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর সামনে ঝুঁকে ল্যাম্পের সুইচ অফ করে দিল। ব্যাটারি খরচ করার কোন মানে হয় না।

    কানিংহাম হালকাভাবে হেসে উঠল, কেইন বুঝতে পারল সে প্রায় ভেঙে পড়েছে। ভীষণ গরম এখানে, একটা সিগারেট খেলে ভালো হতো।

    কেউ কোন শব্দ উচ্চারণ করেনি, তারপরও এটা ওদের মাঝে একটা তরবারির মতো ঝুলে রয়েছে। অকথিত, অস্বীকার্য সত্যটি–যে ওরা একদম শেষ হয়ে গেছে। আর কোন আশা নেই।

    অন্ধকার একটা ওজনহীন চাপের মতো ওদের উপর চেপে বসেছে। কিছু একটা ওজনহীন ঢেউয়ের মতো এর মধ্য দিয়ে নড়ছে আর গুহার দেয়ালে ফিসফিসানি প্রতিধ্বনিতু হচ্ছে। যেন কেউ দীর্ঘশ্বাস ফেলছে আর শব্দগুলো একটা পুকুরে ছোট ছোট ঢেউয়ের মতো অন্তহীন ভেসে চলেছে।

    কেইন শিউড়ে উঠল। অশুভ চিন্তাটা সে মন থেকে ঠেলে সরিয়ে দিল। এত তাড়াতাতি হাল ছেড়ে দেওয়া মোটেই কাজের কথা নয়। এখন তার মনকে সচল রাখতে হবে। এই অন্ধকার বাক্সের কথা ছাড়া তাকে অন্য কোন বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে।

    সে পেছনের জীবনের কথা স্মরণ করতে শুরু করল, চিন্তাকে পেছনের দিকে ভাসিয়ে দিল। জীবনের প্রতিটা মাইলস্টোন, ভাল মন্দ সব কিছু নিয়ে। পরীক্ষা করতে লাগল।

    এর আগে কেবল একবার সে এরকম নৈরাশ্যজনক অবস্থায় পড়েছিল-আর্মি এয়ার কোরে সেকেন্ড পাইলট হিসেবে প্রশান্ত মহাসাগর এলাকার গুয়ামে ডিসি-৩ চালাবার সময়। যাত্রীসহ দশজন মানুষ আর একটা মাত্র লাইফ র‍্যাফট নিয়ে ওরা প্রশান্ত মহাসাগরে পড়ে গিয়েছিল। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে অনেকগুলো শার্ক চারপাশে ঘুর ঘুর করতে শুরু করেছিল। তৃতীয় দিনে ওরা তিনজনে এসে দাঁড়ায়, সপ্তম দিনে কেবল দুজন রইল। আর ঠিক যখনই ভাবছিল সে মরতে চলেছে তখনই আকাশে গুঞ্জন শোনা গেল। সে উপরে তাকিয়ে দেখল একটা ক্যাটালিনা প্লেন পানিতে ল্যান্ড করতে যাচ্ছে। তার জীবনে দুবার ক্যাটালিনা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। একটি তার জীবন বাঁচিয়েছে আর একটি সে ধ্বংস করেছে।

    তারপর বাড়ি ফেরা। তার মনে পড়ল সেই প্রথম দিনটির কথা, লা গার্ডিয়া এয়ারপোর্টে পৌঁছে আবার নিউইয়র্ক দেখা। কিন্তু বাড়ি কোথায়? সেন্ট্রাল পার্কের দিকে মুখ করা এপার্টমেন্টটা? নাকি কানেকটিকাটে তার বাবার খামার? এর কোনটাই তার বাড়ি নয়। আসলে এর কোন অস্তিত্ব ছিল না, এটা ছিল তার মনে। সে অনেকদিন ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছিল এটা, কোন দিন পায় নি, এখনও খুঁজে বেড়াচ্ছে।

    অন্ধকারে মেরির মুখটা তার সামনে একটা প্রদীপ শিখার মতো ভেসে উঠল। সে মৃদ হাসল। অন্তত একটা ভালো জিনিস এর মধ্য থেকে বের হয়ে এসেছে। সে এখন বুঝতে পেরেছে মেরি তার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ জীবনের অন্য সব কিছু থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তার ভাবনা কেইনের মনে উষ্ণতা আর আনন্দ জাগিয়ে তুলল। অনেকটা তার ঠোঁটে যে চুম্বন সে এঁকে দিয়েছিল সেরকম। তবে এসব কথা সে আর তাকে জানাতে পারবে না।

    সে উঠে দাঁড়াল হাত পায়ের খিল ছাড়াতে, ঠিক তখনই প্যাসেজ থেকে বয়ে আসা শীতল বাতাস তার চামড়ায় আঙুল ছুঁইয়ে গেল। সে কেঁপে উঠল।

    এ বিষয়টার সঠিক অর্থ তার মনে জাগতেই সে হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে ল্যাম্পটা খুঁজতে লাগল। হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে চোখ কুঁচকে কানিংহাম বলল, “কি ব্যাপার?

    টানেলের দিক থেকে ঠাণ্ডা বাতাস ভেসে আসছে,’ কেইন তাকে জানাল।

    কানিংহাম ভুরু কুঁচকে বলল, ‘অসম্ভব! কোত্থেকে আসবে বাতাস?

    ‘একটিই উপায় আছে কেবল তা জানার, কেইন বলল।

    সে জামালকে আরবিতে বিষয়টা বুঝিয়ে বলল তারপর কানিংহামের পিছু পিছু প্যাসেজ ধরে এগিয়ে চলল সেই জায়গায় যেখানে ওরা সেদিন এর আগে কাজ শেষ করেছিল। কানিংহাম খোয়া আর পাথর কুচির স্তূপের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। তারপর সাথে সাথে চিৎকার করে উঠল, আপনার কথাই সঠিক কেইন, আমি আমার শরীরে হাওয়া টের পাচ্ছি।

    কেইন তার পাশেই বসে পড়ল আর সাথে সাথে সেও তার উদোম বুকে বাতাসের চাপ অনুভব করল। একটা বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেল, সে বলল। ‘মুলার ভুল করেছে। এটা আর যাই হোক, অন্তত পাথরের সমাধির প্রবেশ পথ নয়।’

    ‘তাহলে কোথায় গেছে এটা?’ কানিংহাম জানতে চাইল।

    কেইন দাঁত বের করে হাসল। এর চেয়ে ভালো কোন গর্তে হবে–এটা নিশ্চিত।

    জামাল যন্ত্রপাতিগুলো নিয়ে ফিরে এল। কেইন আর কানিংহাম খুঁড়তে শুরু করল। জায়গাটা বেশ সংকীর্ণ, কিছুক্ষণ পর জামাল ওদের দুজনকে হটিয়ে বড় একটা পাথর দুহাতে ধরে সরালো। একটা ছিদ্র দেখা গেল, যেখান দিয়ে হঠাৎ বাতাসের ঝটকা ভেসে এলো। জামাল সাবধানে আরো কয়েকটা পাথর সরিয়ে ফাঁকটা আরো একটু বড় করে উপুড় হয়ে শুয়ে হামাগুড়ি দিয়ে সামনে এগোতে লাগল। কেইন ল্যাম্পটা তুলে ধরল। তারপর ওরা লক্ষ করল জামালকে অদৃশ্য হয়ে যেতে।

    একটু পরই তার মাথা উদয় হলো মুখ ভরা হাসি নিয়ে। সে ওদেরকে ইশারা করতেই কানিংহাম উপুড় হয়ে শুয়ে হামাগুড়ি দিয়ে সামনে এগোলো, কেইনও তাকে অনুসরণ করল।

    পাথরের দেয়ালের অন্য পাশে প্যাসেজটা পরিষ্কার। কিন্তু এখানে ছাদ খুব নিচু হওয়ায় ওদেরকে উবু হয়ে হাঁটতে হচ্ছিল। কেইন ল্যাম্পটা সামনে এগিয়ে ধরে কানিংহামকে অনুসরণ করছিল।

    ওরা টানেলটার শেষ মাথায় এসে পৌঁছাল। তারপর হামাগুড়ি দিয়ে থাক থাক করে রাখা নরম শিলাস্তরের কাছে এসে পৌঁছাল। শিলাস্তরটা খাড়া হয়ে নিচে অন্ধকারে পঞ্চাশ কিংবা ষাট ফুট নেমে গেছে একটা কালো ছলছল করা নদীর পানিতে। নদীটা গুহার মূল থেকে উঠে এসে পাথরের মাঝে সরু একটা ফাঁকের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলেছে। কেইন ল্যাম্পটা অর্ধবৃত্তাকারে ঘোরাল। ছাদটা অন্ধকারে ঢেকে রয়েছে, তার মানে ছাদটা অ পাথরের দেয়ালগুলো কালো আর ভেজা ভেজা।

    কানিংহাম হাঁটু গেড়ে বসল। আর কোন উপায় নেই, কী বলেন?’

    ‘অনেকটা সেরকমই, কেইন তাকে জানাল। আপনি এখানে অপেক্ষা করুন, আমি বন্দুকগুলো নিয়ে আসি।

    সে ফিরে এসে দেখল জামাল আর কানিংহাম পানির কিনারায় এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কেইন খাড়া পার বেয়ে সাবধানে নামল। জামাল ধীরে ধীরে নদীর মাঝে পিছুতে লাগল। কানিংহাম তার দুই হাত ধরে রয়েছে।

    পানি কোমর পর্যন্ত উঠে থেমে পড়েছে। কেইন দুহাত সামনে বাড়িয়ে সাবধানে এগোলো। হাতের আঙ্গুলের ডগা উল্টোদিকের দেয়াল ছুঁতেই সে মুখে চওড়া হাসি নিয়ে পেছন দিকে হেঁটে এলো। কানিংহাম উত্তেজিত হয়ে হেসে উঠল। মনে হচ্ছে ভাগ্যদেবী সদয় হতে শুরু করেছে।

    ‘আশা করি তাই যেন হয়, কেইন বলল।

    সে সবার হাতে হাতে বন্দুকগুলো দিয়ে ল্যাম্পটা জামালের হাতে দিল। জামাল পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল আর কেইন আর কানিংহাম পানিতে নেমে তাকে অনুসরণ করতে লাগল।

    কনকনে ঠাণ্ডা পানি, একটু পর পানির স্তর কেইনের বাহুমুল পর্যন্ত উঠে এলো। প্রথমে সে সাব-মেশিনগানটা মাথার উপরে উঁচু করে ধরে রেখেছিল, কিন্তু এভাবে ধরে রাখায় একটু পর হাত ব্যাথা করতেই সে বন্দুকটা কাঁধে ঝুলিয়ে নিল।

    পানির স্রোতের শক্তি ক্রমশ বেড়ে উঠতে শুরু করল। কেননা যে পথ দিয়ে পানির স্রোতটা বয়ে যাচ্ছিল তা ক্রমশ সরু হয়ে এসেছে। কেইন কানিংহামের এক ফুট পেছনে ছিল আর জামালকে দেখতে পাচ্ছিল সামনে ল্যাম্পটা উঁচু করে ধরে রেখেছে।

    ছাদটা মনে হলো নিচের দিকে ঢালু হয়ে নেমে এসেছে, সে বুঝতে পারল এটা মাথা থেকে দুই কি তিন ফুট উচ্চতায় রয়েছে। পানির প্রবল স্রোত তাকে উপরের দিকে উঠাতেই সে প্রাণপণে সামনের দিকে ঠেলে এগোতে লাগল। তারপর তার মনে হলো সে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে, পানিতে তার মাথা ডুবে গেল।

    পা মাটি ছুঁতেই সে নিচের দিকে লাথি দিয়ে আবার উপরে ভেসে উঠল। উজ্জ্বল আলোয় চোখ ধাধিয়ে গেল আর ঢালু হয়ে আসা নরম শিলার সাথে হাঁটুর ধাক্কা লাগল।

    এক মুহূর্ত সেখানে অপেক্ষা করল, বুক যন্ত্রণায় উঠানামা করছে। একটু পর বুঝতে পারল কানিংহাম তার পাশেই শুয়ে রয়েছে। জামাল হাত বাড়িয়ে দুজনকে তুলে হাঁটু পানিতে দাঁড় করাল। কনকনে ঠাণ্ডায় ওরা কাঁপছিল।

    নদীটা একটা বিশাল গোলাকার জলাধারে এসে পড়েছে। আর আপাত বহির্গমনের পথ হচ্ছে পাথরের মাঝে সরু একটা ফাঁক। পথটা পাথর সাজিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পানির উপরিভাগ থেকে তিন ফুট উঁচুতে এর অবস্থান।

    দীর্ঘকাল ধরে এটা এখানে রয়েছে মনে হচ্ছে,’ কানিংহাম বলল।

    কেইন মাথা নেড়ে সায় দিল। কিন্তু কি কাজের জন্য এটা এখানে রয়েছে সেটাই প্রশ্ন।

    সে জামালের কাছ থেকে স্পট ল্যাম্পটা নিয়ে উপরে উঠল। দেয়ালটা প্রায় দশ ফুট উঁচু আর এর অসংখ্য ফাটল থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি ঝরে পড়ছে। তারপর দেয়ালটা বাঁকা হয়ে নিচের দিকে চলে গেছে। অন্ধকারে পানি পড়ার শব্দ প্রতিধ্বনি তুলছে।

    ‘এটা নিশ্চয়ই মূল নদীপথ ছিল, কেইন বলল। দেয়ালটা এখানে তৈরি করা হয়েছে এর গতিপথ বদলাবার জন্য।’

    সে ল্যাম্পটা হাতে নিয়ে নিচের গভীর খাড়ির কালো পানির দিকে আলোটা ফেলল। এর অর্থ হলো এই পানি বের হওয়ার জন্য ওরা একটা কৃত্রিম বহির্গমন পথ তৈরি করেছে।

    ‘কিন্তু কেন?’ কানিংহাম বলল।

    ঈশ্বর জানেন? কারণটা এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ জায়গা থেকে বের হবার পথ বের করাটাই আসল কাজ। কেইন তার সাব-মেশিনগানটা দেয়ালের উপর রেখে ল্যাম্পটা কানিংহামের হাতে দিল। আপনি আমাকে যতদূর সম্ভব আলো দেখান। আমি নিচে গিয়ে একবার দেখে আসি।’

    সে পানিতে নামল, তারপর লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে পানির নিচে গেল। জলাধারটা প্রায় দশ ফুট গভীর আর উপর থেকে ল্যাম্পের আলো পানির মধ্য দিয়ে তাকে সাথে সাথে দেখতে সহায়তা করল যা সে দেখতে চেয়েছিল। এটা একটা নিচু খিলানযুক্ত প্রায় চার ফুট উঁচু টানেলের প্রবেশ পথ।

    সে ভেতরের দিকে এগোলো, তার আঙুল দুপাশের পিচ্ছিল ও মসৃন দেয়ালে ঘষা খেল। তারপর অন্ধকার-ঘুটঘুঁটে অন্ধকার দেখে সে আতঙ্কিত হয়ে ঘুরল। তারপর পেছন দিকে সাঁতার কেটে ল্যাম্পের হালকা আলোর দিকে ফিরে উপরে ভেসে উঠে বাতাসের জন্য হাঁসফাস করতে লাগল।

    ‘কী দেখলেন?’ কানিংহাম জানতে চাইল।

    কেইন পানির মধ্য থেকে হেঁটে বের হয়ে দেয়ালের পাশে নরম শিলা স্তরের উপরে দাঁড়াল। ব্লাডি মার্ডার, ওখানে খুব সরু একটা টানেল রয়েছে যার মধ্য দিয়ে কোনমতে হামাগুড়ি দিয়ে যাওয়া যায়। আমি কয়েক গজ সাঁতার কেটে এগিয়ে ছিলাম, কিন্তু কোথায় গিয়ে এটা পৌঁছেছে সেটা বোঝার উপায় নেই।

    সে উপরে উঠে দেয়ালের উপরে বসল। কানিংহাম নিচের ফাঁকটার দিকে ল্যাম্পটা মেলে ধরল। মনে হয় আবার আমরা একটা গ্যাড়াকলে আটকা পড়লাম, আর কোন উপায় আছে?

    নিচের দিকে নামতে কোন সমস্যা নেই। পাথরের ব্লকগুলো মাঝে মাঝে ক্ষয়ে যাওয়ায় গভীর ফাটল সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে যথেষ্ট পা রাখার জায়গা হয়েছে। ফাটলগুলো দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি অনবরত ঝরে চলেছে।

    নিচের খাড়া ও বাঁকা হয়ে নেমে যাওয়া মেঝেটা পিচ্ছিল আর পা হড়কে যাওয়ার সম্ভাবনা সব সময় রয়েছে। কেইন সাবধানে পঞ্চাশ গজ এগোল। তারপর ছাদটা নিচু হয়ে নেমে এসেছে আর ওরা একটা নিকশ অন্ধকার পথের মুখোমুখি হলো।

    এখানে পানি পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত নেমে এসেছে। কেইন ল্যাম্পটা এক পাশ থেকে অন্য পাশ পর্যন্ত ঘোরাল। মসৃণ দেয়ালে আলো পড়তেই হাজার হাজার ছোট ছোট গাইতির দাগ চোখে ভেসে উঠল।

    ‘নদীটা প্রথমে নিশ্চয়ই এই পথ দিয়েই গিয়েছিল, কানিংহাম মন্তব্য করল।তবে তার পর কেউ এর মধ্যে প্রচুর কাজ করেছে।

    কেইন ধীরে ধীরে সামনে এগোল, তার মনে এক অদ্ভুত উত্তেজনা জেগে উঠেছে। নদীর শব্দ পেছনে মিলিয়ে গেছে,ওরা এখন একাকী দাঁড়িয়ে রয়েছে। এক অন্ধকার ও রহস্যময় জগতে।

    প্যাসেজটা এঁকেবেঁকে ঘুরে ঘুরে নিচের দিকে এগিয়ে চলেছে। পানির গভীরতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। একটা বাঁক ঘুরতেই ওরা এক পাশে একটা শাখার সামনে এল।

    কানিংহাম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে কেইনের দিকে তাকাল। দেখি কি আছে!

    প্রায় দশ ফুট আয়তনের একটা চৌকোনা কামরায় ওরা প্রবেশ করল। দেয়ালগুলো রাজমিস্ত্রির হাতে তৈরি। দুই ধারে মানুষ সমান উঁচু বিশাল বিশাল রসদ রাখার পাত্র দাঁড়িয়ে আছে নিরব প্রহরীর মতো।

    ‘শস্য ভান্ডার,’ কেইন বলল।

    সে ঘুরতেই ল্যাম্পের আলো অপর দিকের দেয়ালে পড়তেই পরিষ্কার রঙিন আঁকা ছবি ভেসে উঠল।

    পেইনটিংগুলো প্রাচীন কোন যুদ্ধ বিজয়ের দৃশ্য তুলে ধরেছে। পায়ে শিকল বাঁধা বন্দিরা সারিবদ্ধভাবে চলছে, বেশিরভাগের মুখে ছোট কোকড়ানো দাড়ি। তাদের পিঠ বাঁকা হয়ে রয়েছে মাছের লেজের আকারের বর্ম আর শিরস্ত্রাণ পড়া সৈন্যদের চাবুকের আঘাতে।

    ‘মাই গড, কানিংহাম বলল। এরকম কোন কিছু এর আগে আর কোথাও দেখেছেন?

    ‘কেবল নীল নদীর উপত্যকায় দেখেছি, কেইন জানাল তাকে। আরবে অবশ্যই নয়।

    ওরা বাইরে বের হয়ে প্যাসেজে ঢুকল। তারপর আরো কয়েকটা কামরা পার হয়ে শেষ পর্যন্ত দুপাশে চওড়া পিলারওয়ালা একটা প্যাসেজে এলো। এর দেয়ালগুলো চিত্রকলায় পরিপূর্ণ।

    এক জায়গায় কেইন একটা কুলুঙ্গির পাশে এসে থামল। এতে দুপাশে রং করা কয়েকটা মাটির বয়াম রাখা আছে। সে একটা তুলে পরীক্ষা করতে লাগল। কানিংহাম উত্তেজিত হয়ে কাছে এগিয়ে এল। এগুলো ভস্মাধার, তাই না?

    কেইন মাথা কাত করে সায় দিল। পুরো ব্যাপারটা এবার ঠিক ঠিক মিলতে শুরু করেছে। ঐ শস্য রাখার পাত্র আর এগুলো। নিরাপদ যাত্রার জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত বস্তু। আমরা নিশ্চয়ই একটা সমাধির কাছে এসে পড়েছি।’

    সে বয়ামটার গোল ঢাকনিটা তুলে ভেতরে তাকালো। ভেতরে কিছু নেই।

    ‘সম্ভবত তেল, মশলা কিংবা এ জাতীয় কিছু একটা ছিল–এত বছরে এটা উবে গেছে।

    কানিংহাম আরেকটা বয়াম নিয়ে দেখল সেটাও খালি। কেইন ঘুরতে যাবে, এমন সময় তার চোখে পড়ল একটা ছোট বয়াম কুলুঙ্গির পেছনে একটা ছোট তাকের উপর দাঁড় করানো রয়েছে। উপরে মাটির সীলমোহর করা।

    সে ল্যাম্পটা মাটিতে রেখে অন্য হাত দিয়ে বয়ামটা তুলে আনল। এক পা পিছুতেই পাত্রটা তার আঙুল ফসকে পাথরের মেঝেতে পড়ে ভেঙে খান খান হয়ে গেল।

    সে ল্যাম্পটা তুলে মেঝের কাছে আলো ফেলে দেখল ভাঙ্গা মাটির টুকরোগুলোর মাঝে সোনার মতো কিছু একটা চক চক করছে আর এক ঝলক সবুজ আগুনের মতো দেখা গেল।

    সে হাঁটু গেড়ে বসে সাবধানে জিনিসটা তুলে ধরল। চমৎকার একটা সোনার নেকলেস আর একটা পেনডেন্ট।

    সোনার নেকলেসের মধ্যে অত্যন্ত যত্ন সহকারে তিনটে নিখুঁত পান্না সেট করা হয়েছে। পাথরগুলো ল্যাম্পের আলোয় চমকাচ্ছিল।

    কানিংহাম মৃদু শিস দিয়ে উঠল। এটার জন্য ব্রিটিশ মিউজিয়াম যে কোন মূল্য দিতে পারে।’

    কেইন রুমাল বের করে নেকলেসটা এর মধ্যে রেখে রুমালের চার কোণে গিঁট দিয়ে পকেটে রাখল।

    আবার ল্যাম্পটা তুলে নিল। আমার মনে হয় সামনে আরো আছে। অনেক বেশি আছে।’

    সে দ্রুত এগোতে লাগল। তারপর কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে একটা ব্রোঞ্জের তৈরি দরজার সামনে এলো। এখানে পানি উরু পর্যন্ত উঠেছে। কানিংহাম পানি ঠেলে সামনে এগিয়ে দরজা বন্ধ করে রাখার ডান্ডাটা উপরে তুলল, তারপর সে আর জামাল দুজনে মিলে ভারী দরজাটা ধীরে ধীরে সামনের দিকে ঠেলে খুলল।

    দরজার সুইং পিনগুলো কঠিন পাথরে ড্রিল করে ছিদ্রে আটকানো ছিল আর দরজাটা অতি সহজেই কোন ধরনের চেষ্টা ছাড়াই সামান্য ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করে খুলে গেল।

    একটা মুহূর্ত কেইন সেখানে দাঁড়িয়ে রইল, তার মনের মধ্য দিয়ে এক ধরনের কালো ঢেউ বয়ে গেল, যেন ওরা সাংঘাতিক কোন কিছুর সামনে এসেছে। কিন্তু কানিংহাম অধৈর্য হয়ে তাকে সামনে ঠেলে দিল।

    .

    ১৪.

    ওরা একটার বড় চেম্বারে প্রবেশ করল। ভেতরে পানির গভীরতা প্রায় তিন ফুট। এছাড়া কামরাটা সম্পূর্ণ খালি, তবে দেয়ালগুলো পেইনটিংয়ে পরিপূর্ণ। কেইন ধীরে ধীরে আলোটা ঘুরিয়ে পেইনটিংগুলো পরীক্ষা করতে লাগল। তারপর কিছু একটা যেন লাফিয়ে উঠে প্রচণ্ড শক্তিতে তাকে ধাক্কা মারল।

    একটি দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে একজন রাজা কয়েক ধাপ সিঁড়ির উপরে একটি সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তার গলায় ঝুলে রয়েছে স্টার অফ ডেভিড়। তিনি দুহাত বাড়িয়ে স্বাগতম করছেন একজন নারীকে, যিনি তার দিকে এগিয়ে আসছেন। তার পোশাকের দীর্ঘ ঝুল বহন করছে বারোজন কুমারী।

    এক মুহূর্ত মনে হলো এই নারী অন্ধকার থেকে ভেসে উঠেছেন কিন্তু সেটা আসলে আলোর একটা কারসাজি। যেন অনেক দূর থেকে রাজার দিকে তাকিয়ে আছেন তার সৌন্দর্য নিয়ে। তার সৌন্দর্য চিরন্তন। আর রাজাও তার দিকে চেয়ে রয়েছেন। পেইনটিংয়ের উপরে সাবেঈন ভাষায় কিছু লিপি উৎকীর্ণ করা রয়েছে। কেইন ধীরে ধীরে এর অর্থোদ্ধার করতে লাগল। যখন পুরো লিপির মর্মোদ্ধার শেষ হলো তখন মনে হলো যেন দেয়ালটা দুলছে, আর অজানা একটা নিঃশব্দের ফিসফিসানি কামরার মাঝে ঢেউ খেলে বেড়াচ্ছে। যেন সময়ের অন্য প্রান্ত থেকে সেই নারীর কণ্ঠ তাকে ডাকছে।

    সে এক হাত সামনে বাড়িয়ে মাথা ঠেকালো ঠাণ্ডা পাথরের দেয়ালের গায়ে। কানিংহাম বলল, “এখানে কী বলছে?

    কেইন সোজা হলো। এখানে সোলায়মান বাদশাহ বিলকিসকে স্বাগতম জানাচ্ছেন।”

    কানিংহাম এক পাশে হেলে পড়তেই, জামাল দ্রুত এগিয়ে এসে তাকে ধরল। ল্যাম্পের আলোয় দেখা গেল ইংরেজ লোকটির মুখ সাদা হয়ে ঝুলে পড়েছে, আর চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।

    বিলকিস, সে ফিস ফিস করে বলল, ‘শেবার রানি।’

    জামালের হাত ছাড়িয়ে সে সামনে এগোল তারপর আঙ্গুলের ডগা দিয়ে আঁকা চিত্রটি অত্যন্ত যত্ন সহকারে স্পর্শ করল। যখন সে মুখ খুলল তখন তার কণ্ঠে বিস্ময়। বাইবেলের একটি কাহিনীকে আমরা জীবন দিয়েছি।

    কেইন পানি ঠেলে কামরার অন্য প্রান্তে হেঁটে গেল। ল্যাম্পের আলোয় সেখানে আরেকটা প্রবেশ পথ দেখা গেল, এর চারপাশে বাঁকা পিলার। দরজার বদলে এখানে পাথর সাজানো রয়েছে।

    কানিংহাম তার পাশে এসে দাঁড়াল। আপনি কি মনে করেন? তার কণ্ঠস্বর অস্বাভাবিক আর অন্যরকম মনে হচ্ছে।

    ‘আমি বলেছিলাম এখানে প্রচণ্ড রকম মিশরীয় প্রভাব রয়েছে, কেইন তাকে বলল। অপর পাশে একটা পাথরের সমাধি কক্ষ অবশ্যই থাকার কথা।

    কানিংহামের কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। সে একটা ঢোক গিলে বলল, ‘আপনার কি তাই মনে হয় এটা সেখানে আছে?

    ‘এসব বিষয়ে যে কোন কিছু সম্ভবপর’ কেইন বলল। এটা আমি যেমন জানি আপনিও তেমন জানেন।’

    কানিংহাম মাথা নাড়ল, তারপর ঘুরে দেয়ালের পেইনটিংগুলোর দিকে তাকাল। তাদের চলাফেরার কারণে পানিতে যে ঢেউ সৃষ্টি হয়েছিল তা আছড়ে পড়ছিল দেয়ালের গায়ে। তার দাঁতের মাঝ দিয়ে হিশশ শব্দ করে নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এল।

    সে কেইনের হাত থেকে ল্যাম্পটা নিয়ে সামনে চলতে শুরু করল। পানি তার চারপাশে বুদবুদ সৃষ্টি করছে। সে সোলায়মান আর বিলিকিসের পেইনটিংয়ের নিচে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল।

    সে ককিয়ে উঠল। পানি পেইনটিংটা নষ্ট করছে, কেইন। কিছু অংশ ইতোমধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে।’

    কেইন কোন কথা না বলে তার হাত থেকে ল্যাম্পটা নিয়ে তাকে টেনে দাঁড় করাল।

    ‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে আমরা এটা আবিষ্কার করতে পেরেছি,’ কানিংহাম বলল। আর কয়েক বছর পর ঐ বাধটা ভেঙে গেলে নদী এখানে চলে আসতো। সব কিছু ধ্বংস হয়ে যেতো।

    কেইন শান্তভাবে বলল, আমি জানি,

    কানিংহাম উন্মাদের মতো হেসে উঠল। “ফর গড’স সেক, তুমি কি বুঝতে পারছে না আমরা এখানে কি পেয়েছি? আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রত্নতাত্তিক সম্পদ আবিষ্কার করেছি। আমরা জগত বিখ্যাত হয়ে যাবো।’

    কেইন বলল, তার কোন সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না,’ ‘অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, তাতে আপনি আর কখনো কাউকে এই ঘটনার কথা বলার সুযোগ পাবেন বলে মনে হয় না।’

    সে কানিংহামের হঠাৎ মর্মাহত চেহারা থেকে মুখ ফিরিয়ে ল্যাম্পটা জামালের হাতে দিয়ে পানি ঠেলে দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করল। কানিংহাম সেখানেই, কামরার মাঝখানে দাঁড়িয়ে রইল আর সে ওদের অনুসরণ করার আগেই ওরা প্যাসেজ দিয়ে পেছন দিকে ফিরে চলল।

    নিচু প্রবেশ পথটা দিয়ে মাথা নিচু করে ফিরে গিয়ে ওরা জলাধারের জলবন্ধনের জন্য যে দেয়াল ছিল তার খাড়া পার বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করল। কানিংহাম পিছু পিছু গিয়ে কেইনের কাঁধ খামচে ধরল।

    তার মুখ ফ্যাকাশে, ক্লান্ত আর উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে। আমাদের এখান থেকে বের হতে হবে, কেইন। একটা পথ খুঁজে বের করতেই হবে।’

    ‘পথ একটা খুঁজে বের করা সহজ, কেইন বলল। সেটা আমি এখন বুঝছি। তবে সমস্যা হলো আপনি সে পথ গ্রহণ করতে রাজি আছেন কি না।

    জামাল দেয়াল বেয়ে উপরে উঠে হাত বাড়িয়ে একে একে দুজনকেই উপরে ওঠালো। কেইন ল্যাম্পটা নিয়ে পানির দিকে আলোটা ধরল। কানিংহাম বলল, “আপনি কি পানির নিচের টানেলের কথা বলছেন? কিন্তু আপনি নিজেই তো বলেছিলেন এ পথে যাওয়া অসম্ভব।’

    ‘অসম্ভব হবে না যদি সেখানে পানি না থাকে, কেইন বলল।

    কানিংহাম ভ্রু কুঁচকালো। বুঝলাম না।

    ‘অত্যন্ত সহজ ব্যাপার। আমরা নদীর উজানে গিয়ে গুহার যে জায়গায় যন্ত্রপাতিগুলো রেখেছি সেগুলো আনতে যাবো। দেয়ালটা ইতোমধ্যেই নড়বড়ে অবস্থায় আছে। এটা ভাঙ্গতে আমাদের বেশি সময় লাগবে না। তারপর জলাধারের পানি খালি করে নদীকে তার মূল গতিপথে ফিরিয়ে দেব।

    কানিংহাম তখনো ভ্রু কুঁচকে রয়েছে। আপনি তামাসা করছেন। এতে পুরো প্যাসেজ আর মূল কামরা পানিতে ভেসে যাবে, এমনকি সমাধিতেও পানি ঢুকে যেতে পারে। ঐ পেইনটিংগুলো পানিতে একদিনও টিকবে না। ওগুলো চিরদিনের জন্য ধ্বংস হয়ে যাবে।’

    ‘আমি জানি, কেইন ধৈর্য সহকারে বলল। এছাড়া আমার হাতে আর কোন উপায়ও নেই। আমি মনে করি আপনার মনে এখনো আপনার স্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আছে।’

    কানিংহাম এমন প্রতিক্রিয়া দেখাল যেন তাকে শারীরিকভাবে কেউ একটা ধাক্কা দিয়েছে। সে অন্যদিকে মুখ ফেরালো। কেইন বলেই চলল-”আপনার আসার দরকার নেই। জামাল আর আমি সামলাতে পারব, তবে আলোটা আমাদের নিয়ে যেতে হবে। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে আসবো।

    ‘আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না, কানিংহাম বলল। আমি ঠিক থাকব।’

    কেইন একটু ইতস্তত করল, সে ভাবলো এই ইংরেজ লোকটি হয়তো বোকার মতো কিছু একটা করে বসতে পারে। তারপর সে ঘুরে দ্রুত আরবিতে জামালকে পরিস্থিতিটা বুঝিয়ে বলল।

    জামাল ল্যাম্পটা নিয়ে পিছন দিকে পথ দেখিয়ে চলল। ওরা পিছল পাথুরে ঢাল বেয়ে উল্টোদিকে টানেলের অন্ধকার মুখটার দিকে উঠতে শুরু করল, যে পথ দিয়ে নদীর পানি জলাধারে এসে পড়েছে। কেইন যেরকম ভেবেছিল, ফেরত যাত্রাটা সেরকম মন্দ হলো না। কেবল দুয়েক জায়গায় ফাঁকটা একটু সরু হওয়ায় পানির স্রোত ওদেরকে পেছন দিকে চাপ দিচ্ছিল।

    নরম শিলার খাড়া পারের কাছে পৌঁছে ওরা হাঁচড়ে পাঁচড়ে উপরে টানেলের মুখে পৌঁছে গুহা থেকে মুক্ত হলো। এখন এক অদ্ভুত অপরিচিত অনুভূতি হচ্ছিল মনে, যেন এটি এমন এক জায়গা যেখানে ইতোপূর্বে বহু বছর আগে কেউ স্বল্প সময়ের জন্য এসেছিল, আর কখনো নয়।

    কেইন গাইতি তিনটা তুলে নিল, জামাল হাতুড়ি আর ক্রোবারগুলো নিল। তারপর ওরা আবার নিচে পানির মাঝে প্রবেশ করল। ফিরতি যাত্রায় মনে হলো মাত্র কয়েক মিনিট লেগেছে আর জামাল সাবধানে পিছল ঢাল বেয়ে নিচে জলাধারে নামল। ল্যাম্প ঘুরিয়ে দেখল কানিংহামকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।

    ওরা যন্ত্রপাতিগুলো তাড়াতাড়ি মাটিতে রাখল আর কেইন ল্যাম্পটা নিয়ে ডেকে উঠল, কানিংহাম!’

    তার কণ্ঠস্বর গুহার চার দেয়ালের মধ্য থেকে প্রতিধ্বনিত্ব হয়ে ফিরে এল কিন্তু কোন উত্তর এলো না। সে আবার ডাকতে যাবে, এমন সময় নিচে পাথরের মেঝেতে বুটের শব্দ পাওয়া গেল। কেইন ল্যাম্পটা ফাঁকটার দিবে নামিয়ে ধরতেই দেখা গেল কানিংহাম খাড়া পথ দিয়ে উঠে আসছে।

    সে শান্ত দৃষ্টিতে কেইনের দিকে তাকাল। চোখের সামনে হাত দিয়ে আলো ঢেকে বলল, “আপনারা বেশ তাড়াতাড়ি চলে এসেছেন।

    ‘আপনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন? কেইন জানতে চাইল।

    কানিংহাম ঘুরে নিচে টানেলের প্রবেশ পথটার দিকে তাকাল। আমি আরেকবার দেখতে গিয়েছিলাম।’

    ‘আলো ছাড়া?’ কেইন হতবাক হয়ে বলল।

    কানিংহাম মৃদু হাসল আর সাথে সাথে তার চেহারা থেকে যেন সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। আমি তাকে দেখতে পাইনি, কিন্তু জানতাম সে সেখানেই আছে। সে একটা গভীর শ্বাস নিল। এখানে এই গোড়া থেকে কাজটা শুরু করলে ভাল হবে। কিছু কিছু পাথর ক্ষয়ে গেছে।’

    কেইন বলার মতো কিছু ভেবে পেল না। সে জামালের দিকে তাকিয়ে ঘাড় কাত করে দেয়ালের কাছে গেল। জামাল যন্ত্রপাতিগুলো হাতে হাতে দিতেই ওরা কাজ শুরু করে দিল।

    আধ ঘণ্টা লাগল প্রথম পাথরটা তুলতে, জামালের প্রচণ্ড শক্তি খুব কাজে দিল। শেষ কয়েক ইঞ্চি পানির চাপ পাথরটার গায়ে জোর ঠেলা দিল, বোতলের ছিপিতে যে রকম হয়। তারপর পানি ছিটকে বেরিয়ে ফেনা তুলে ফাঁকের মধ্য দিয়ে নিচে অন্ধকারে প্রবল বেগে পড়তে লাগল।

    একটা ফাঁক তৈরি করার পর বাকি কাজটা বেশ সহজ হয়ে পড়ল। জামাল এগিয়ে গেল, পানি তার পিঠ বেয়ে নেমে চলেছে, সে পরের পাথরটা দুহাতে টেনে সরালো।

    এক মিনিটের মধ্যে পানি হাঁটু পর্যন্ত নেমে এলো। কেইন কানিংহামের দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি বলল। একবার যখন পথটা আমরা ভেঙেছি, কাজেই একটু পরেই পুরোটা ভেঙে পড়বে। চলুন কোন ক্ষতি হওয়ার আগেই তাড়াতাড়ি আমরা অন্য পাশে চলে যাই।

    ওরা দেয়াল বেয়ে উপরে উঠে নরম শিলাস্তর আর বালুর উপরে এসে দাঁড়াল। বছরের পর বছর ধরে দেয়াল আর গুহার কোণে বালুর স্তর জমা হয়েছিল। ধীরে ধীরে জলাধারের পানির স্তর নেমে যেতে লাগল।

    এখন নদীর পানি ফাঁক থেকে বের হয়ে নতুন পথ খুঁজে পেয়ে সেখান দিয়ে বের হয়ে যেতে লাগল। এই ধাক্কায় দেয়ালটা কাঁপতে শুরু করল। প্রায় আধ ঘণ্টা পর এটি মাঝখানে ধ্বসে পড়ল, তারপর পানি জলপ্রপাতের মতো ফাঁক দিয়ে বাইরের দিকে চলতে লাগল।

    ইতোমধ্যে টানেলের উপরিভাগ দষ্টিগোচর হলো আর দশ মিনিটের মধ্যে পানি দুই ফুটে নেমে এল। জামাল ল্যাম্পটা নিয়ে মাথা নিচু করে টানেলে ঢুকে পড়ল। আর কেইন সাব-মেশিনগানটা কাঁধে ঝুলিয়ে তাকে অনুসরণ করল।

    সামনে অন্ধকারে ঢুকতেই পানি তার হাঁটুর চারপাশে ঘুরতে শুরু করল। তার মনে পড়ল সেই লোকগুলোর কথা যারা বহু বছর আগে মাটির নিচে এই অন্ধকারে বছরের পর বছর ধৈর্য ধরে কাজ করে চলেছিল এই আশায় যেন তাদের রানি মৃত্যুর পর একটি নিরাপদ বিশ্রামের জায়গা পায়।

    নদীটা হঠাৎ একটি চওড়া লেকে এসে পড়ল। কেইন আবার সাঁতার কাটতে লাগল। জামাল আলো উঁচু করে ধরতেই দূর প্রান্তে কতগুলো কারুকাজ করা স্তম্ভ আর একটা নৌকার ঘাট দেখা গেল।

    জামাল প্রথমে সেখানে পৌঁছে সহজেই উপরে উঠে পড়ল যদিও লেকের পানি কয়েক ফুট নেমে গেছে। তারপর সে নিচু হয়ে একের পর এক কেইন আর কানিংহামকে উপরে তুলল।

    কেইন ল্যাম্পটা নিয়ে স্তম্ভগুলোর মধ্য দিয়ে সামনে এগোলো। তারপর একটা চওড়া প্যাসেজে ঢুকল। প্যাসেজটা একটু উপরের দিকে উঠে গেছে। কয়েক মুহূর্ত পর ল্যাম্পের আলো গিয়ে পড়ল একটা খালি দেয়ালে।

    কেইন হাঁটু গেড়ে বসে দেয়ালটা নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করল। দেখে মনে হচ্ছে এই মাঝখানের ব্লকটাই ঘুরবে।’ সে কানিংহামকে বলল।

    সে দ্রুত আরবিতে জামালকে কিছু বলল আর জামাল হাঁটু গেড়ে বসে সর্বশক্তি দিয়ে ঐ পাথরটা ঠেলতে শুরু করল। পাথরটা একচুলও নড়লো না। জামাল ঘোৎ করে একবার শব্দ করে উঠল, তার পিঠ বাকা হলো আর পেশিগুলো দড়ির মতো ফুলে উঠল। তারপরও পাথরটা তখনো নড়ছে না।

    কেইন হাঁটু গেড়ে বসে কাঁধ দিয়ে ঠেলতে শুরু করল। আর কানিংহাম অন্য দিকে দিয়ে কাঁধ দিল। একটা মুহূর্ত মনে হলো ওরা পৃথিবীর সমস্ত শক্তির সামনে দাঁড়িয়েছে। যেন কোন এক অলৌকিক শক্তি বলে তারা দৃঢ় সংকল্পিত হয়েছে যে এখান থেকে সরবে না। তারপর একটা গোঙানি দিয়ে পাথরটা ঘুরল।

    কেইন উঠে দাঁড়াল তারপর চারপাশে তাকাল। ওরা এখন মন্দিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর এই পাথরটা সেই উঁচু বেদির তলায় বসানো ছিল।

    ওরা পাথরটা আবার আগের জায়গায় ঠেলে বসিয়ে বাইরে বের হয়ে এলো। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই ভোরের সূর্যের আলো তাদের চোখে পড়ল। ওদের সামনে গিরিপথটা স্থির আর শান্ত হয়ে আছে। কানিংহাম কুঁচকালো। ‘খুব বেশি নিরব মনে হচ্ছে।

    বেশিরভাগ বেদুঈনই গতকাল বিকেলে তাদের কাফেলা নিয়ে চলে গেছে, কেইন বলল। বাদবাকি যারা ছিল তারা হয়তো আজ ভোরেই রওয়ানা দিয়েছে।’

    সে সাবধানে যদূর সম্ভব আড়ালে থেকে তাঁবুগুলো যেখানে ছিল সেদিকে ওদের এগিয়ে নিয়ে চলল। গর্তটার কিনারার কাছে পৌঁছে সে পেটের উপর ভর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বাকি পথটা গেল।

    অস্থায়ী ক্যাম্পটা আর নেই। তবু, ট্রাক–কিছুই নেই। এক মুহূর্ত সেখানে শুয়ে ভ্রু কুঁচকে সে ভাবলো। তারপর জামাল তার কাঁধে টোকা দিয়ে আঙুল নির্দেশ করে মরুদ্যানের বাইরে একটা জায়গা দেখাল–সকালের বাতাসে হালকা ধোঁয়া উড়ছে।

    সাব-মেশিনগানটা কাঁধ থেকে নামিয়ে কেইন ওদেরকে পেছনে নিয়ে আগে আগে গর্তে নামল। গাছগুলোর কাছে আসতেই একটা উট কেশে উঠল আর তার সাথে হাসির শব্দ শোনা গেল।

    মরুদ্যানের অপর ধারে দুটি বেদুঈন তাঁবু তখনো দাঁড়িয়ে আছে, কাছেই অন্তত এক ডজন উটের দু’পা বেঁধে রাখা হয়েছে। একজন লোক আগুনের সামনে আসন পেতে বসে কিছু রান্না করছে। আর বাকি তিনজন ডোবার হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে গা ধুচ্ছে।

    কেইন কানিংহামের দিকে ফিরে চুপিচুপি বলল, আপনি তাঁবুর পেছন দিক দিয়ে আসুন। জামাল ডেরাটার অন্য পাশ থেকে আর আমি এখান থেকে এগোবো।’

    বাকি দুজন জায়গামতো পজিশন না নেওয়া পর্যন্ত সে অপেক্ষা করল। তারপর একটা গাছের আড়াল থেকে বের হয়ে সে ধীরে ধীরে সামনে এগোলো। আগুনের একগজ দূরত্বে এসে সে থামল। বেদুঈন লোকটি হাঁড়িতে কিছু একটা নাড়ছিল। সে হেসে উঠে ডোবার পানিতে থাকা লোকগুলিকে ডাকার জন্য মুখ তুলতেই সামনে কেইনকে দেখতে পেল। তার হাসি থেমে গেল।

    ‘আমি যা করতে বলছি তা করলে তোমার কোন ক্ষতি হবে না, কেইন আরবিতে বলল।

    লোকটি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। আমি অতো বোকা নাই।

    কেইন প্রথমে যা ভেবেছিল, তার থেকে লোকটি বেশি বয়স্ক। চমৎকার বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা, মুখ ভর্তি বলিরেখা আর কাঁচাপাকা দাড়ি। বাকি তিন সঙ্গী ডোবার পানি ঠেলে তার কাছে উঠে এল। জামাল আর কানিংহামও ওদের পেছনে এসে দাঁড়াল।

    ‘বাকি লোকজন কোথায়? কেইন জিজ্ঞেস করল।

    ‘সবাই মনে করেছিল তোমরা মরে গেছো,’ বৃদ্ধ লোকটি বলল।

    ‘সাহেব দুটো আর তাদের লোকজন ভোরের আলো ফোঁটার আগেই ট্রাকে করে চলে গেছে। এরপর ইয়েমনিরা ভোরবেলায় চলে যায়।

    ‘তোমরা রয়ে গেলে কেন?

    ‘আমরা রশিদ,’ বৃদ্ধ সহজভাবে বলল। আমরা আমাদের আত্মীয়কে ছেড়ে চলে যেতে পারি না। আমার জ্ঞাতি ভাই একটা তাঁবুতে শুয়ে আছে। গত রাতে তোমার বন্দুকের গুলি তার কাঁধে লেগেছিল। ঐ সাহেবদের একজন চলে যাওয়ার আগে গুলিটা বের করে দেয়।

    ‘আর মেয়েরা?’

    বৃদ্ধ কাঁধে একটা ঝাঁকি দিল। ওরাও ট্রাকে আছে।

    কেইন কানিংহামের দিকে তাকাল। আপনি বুঝতে পেরেছেন সব কথা?

    সে ঘাড় কাত করল। এখন আমরা কি করব?

    ‘একমাত্র যে কাজটি আমরা করতে পারি, তা হলো ওদের পেছনে যাওয়া।’ কেইন বৃদ্ধ রশিদ গোত্রের লোকটির দিকে ঘুরল। তোমাকে আমাদের সাহায্য করতে হবে।

    অন্য তিন সঙ্গী বিড় বিড় করে বিরক্তি প্রকাশ করল। আর বৃদ্ধ এক হাত উঠিয়ে ওদের থামাল। কেন সাহায্য করব আমরা? তোমরা আমাদের শত্রু।’

    কারণ, এছাড়া তোমাদের আর কোন উপায় নেই, সাব-মেশিনগানটা উঁচু করে কেইন বলল। আমাদের খাওয়াদাওয়া শেষ হবার পর তোমার সবচেয়ে ভাল তিনটা উট বেছে দেবে। জেনে রাখ এই সোমালি লোকটি কিন্তু এ ব্যাপারে একজন ওস্তাদ।’

    বৃদ্ধ রশিদ বলে উঠল, ‘আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন। তার তিন সঙ্গী পা ভাঁজ করে গোমরামুখে বসে রইল। আর বৃদ্ধ দুটো টিনের মগে কফি ঢেলে বিনয়ের সাথে কেইন আর কানিংহামকে দিল।

    কেইন কৃতজ্ঞতার সাথে একটু কফি পান করল। কানিংহাম বলল, কিন্তু ওদেরকে ধরার তো কোন আশা নেই।’

    কেইন সায় দিল। আমি জানি, তবে যদি আমরা অল্প সময়ের মধ্যে বার আল-মাদানিতে পৌঁছে জর্ডনের কাছ থেকে একটা ট্রাক নিতে পারি, তাহলে ওদের আগেই দাহরান পৌঁছার একটা আশা আছে।’

    ‘মাই গড, আমার মনে হয় আপনি ঠিক বলছেন, কানিংহাম ব্যগ্র হয়ে বলল। আমার যখনই রুথের কথা মনে পড়ে…’ তার গলা থেমে গেল। সে তাড়াতাড়ি এক ঢোক কফি খেল।

    কেইন দৃঢ়বিশ্বাস নিয়ে বলতে চেষ্টা করল। আপনি কোন চিন্তা করবেন না। স্কিরোজ খুব তাড়াতাড়ি দাহরান ছেড়ে যাবে না। তাড়াহুড়া করার তো কারণ নেই তার।

    কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে খুব একটা নিশ্চিত ছিল না। স্কিরোজ নিশ্চয়ই খুব দুঃশ্চিন্তায় আছে। এছাড়া তার হঠাৎ করে চলে যাবার আর কী কারণ থাকতে পারে? হয়তো সে বুঝতে পেরেছে তার সুদিন শেষ হয়ে এসেছে। আর তাই একজন ভালো জুয়ারির মতো খেলায় এগিয়ে থাকতে থাকতে সে উঠে যাচ্ছে।

    কেইন চোখ কুঁচকে নীল আকাশের দিকে তাকাল। দেখলো একটা বাজ পাখি বিরাট একটা বৃত্ত ঘুরে ঘুরে নিচের দিকে নামার আগের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জীবনে কী হতে পারে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। এই দেশ যদি কিছু তাকে শিখিয়ে থাকে, সেটা এই।

    .

    ১৫.

    জামাল সবচেয়ে ভালো তিনটা উট বেছে নিল। তারপর ঘণ্টাখানেক পর ওরা রওয়ানা হলো। কেইন আর কানিংহাম বেদুঈনদের ঢিলাঢালা আলখাল্লা আর মাথায় আরবি স্টাইলে কাপড় জড়িয়ে নিল। জামাল পানি ভর্তি দুটো ছাগলের চামড়ার মশক নিয়ে তার উটের পিঠের গদির দুপাশে ঝুলিয়ে নিল। বৃদ্ধ রশিদ আর তার সঙ্গী বেদুঈনরা অনিচ্ছাসত্ত্বেও এগুলো দিতে বাধ্য হলো।

    কেইন একটা মদ্দা উটের পিঠে সওয়ার হয়েছিল। বিশাল, শক্তিশালী কালো উটটা অসম্ভব দ্রুত গতিতে গিরিখাতের বাইরের সমতল ভূমির উপর দিয়ে ছুটতে শুরু করল।

    ক্যাটালিনা প্লেনটার টুকরো টুকরো দোমরানো মোড়ানো ধাতব অংশ আর ফিউজলেজটা বিরাট জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। আগুনে পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ পার হওয়ার সময় কেইন অবাক হয়ে তাকাল। তার বিশ্বাসই হচ্ছিল না কত সহজে ওরা এটা ধ্বংস করেছিল।

    সমতল ভূমি পার হয়ে বালিয়াড়ির মাঝে ঢুকতেই প্রচণ্ড দাবদাহ থেকে মুখ বাঁচাবার জন্য সে মাথার কাপড়ের একটা ভাজ তুলে মুখ ঢাকলো।

    বিশাল বিশাল বালুর ঢেউ নিয়ে যতদূর চোখ যায় মরুভূমি গড়িয়ে চলেছে সামনে। সে উটের পিঠে কাঠের গদিতে আরো আরাম করে বসে উটটিকে চালিয়ে নিতে লাগল। গতিই একমাত্র জিনিস যা এখন তাদের সাহায্য করতে পারে। সেটা আর এই সত্যটা যে স্কিরোজ হয়তো আশা করবে না যে ওরা তার পিছু নেবে।

    পেছন ফিরে দেখল জামাল কাছেই আছে আর তার পিছনে কানিংহাম অনুসরণ করছে। তাকে দেখে কানিংহাম হাত তুলে স্যালুট করল। কেইন মুখ ফিরিয়ে সামনের পদচিহ্নের দিকে মনোনিবেশ করল।

    লম্বা লম্বা পা ফেলে চলার পথে উটটি একবারও হোঁচট খায়নি। বিশাল পা দিয়ে অক্লান্ত ভাবে মরুভূমি পার হয়ে চলেছে। কড়া রোদের তাপে কেইন চোখ অর্ধেক বন্ধ করে ধীরে ধীরে আধো ঘুম আধো জাগ্রত এমন একটা অবস্থায় চলে গেল।

    সে ভাবছিল স্কিরোজের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে পারে। সম্ভবত সে দাহরানের দিকে যেতে চেষ্টা করবে, কেননা সে নিশ্চিত ধরে নিয়েছে তাকে অনুসরণ করার মতো আর কেউ নেই। আমেরিকান কনসাল কোন ধরনের খোঁজ খবর নেওয়ার আগেই সেখানে কয়েকদিন থেকে সব কিছু গুছিয়ে নেবে, তারপর সেখান থেকে চলে যাবে।

    মেয়েদেরকে নিয়ে কি করবে সেটা ভাবনার বিষয়। আগের রাতে তাবুর বাইরে থেকে যে আলোচনা শুনেছিল সে কথাগুলো স্মরণ করল। স্কিরোজ কি বলেছিল? সে মেরি পেরেটকে একটা ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে।

    কথাটা ভাবতেই কেইন শিউরে উঠল। সেই সাথে এ চিন্তাটা মন থেকে ঠেলে সরালো। এখন তাকে বার আল-মাদানিতে পৌঁছার বিষয়ে পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। সে আরো আরাম করে গদিতে বসে উটটিকে তাড়া দিল।

    .

    স্বপ্নের মতো সকালটা পেরিয়ে গেল, তারপর যেন একটা বিশাল জাহাজে চড়ে বালুর উপর ভাসতে ভাসতেই দুপুর গড়ালো। বেশ কয়েকবার ওদেরকে নিচে নেমে বড় বড় বালিয়াড়ির খাড়া দিক দিয়ে উটগুলোকে টেনে নিতে হয়েছিল। একবার থেমে শুকনো খেজুর আর পানি খেলো।

    কানিংহামকে দেখে পরিশ্রান্ত মনে হচ্ছিল। তার দুচোখে ক্ষত আর চারপাশ লাল হয়ে উঠেছে। পাতলা, সংবেদনশীল মুখ বালুতে মাখামাখি হয়ে রয়েছে। কেইন অত্যন্ত কটু আর বিস্বাদ পানি একটু খানি গিলে সামান্য মুখ বিকৃত করল। তারপর কানিংহামের দিকে উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে তাকাল। আপনি ঠিক আছেন তো?’

    কানিংহাম ঠোঁট সামান্য ফাঁক করে একটু হাসল। একটু ক্লান্ত বোধ করছি। তবে ঠিক হয়ে যাবে। ভুলে যাবেন না এই পথ দিয়েই আমি উল্টো দিকে গিয়েছিলাম।’

    ওরা আবার উটের পিঠে চড়ে চলতে শুরু করল। সূর্য এখন ঠিক মাথার উপর। প্রচণ্ড তাপ আগুনের চাবুক দিয়ে যেন ওদের পিঠ চাবকাচ্ছে। কেইনের মাথা ঝুঁকে রয়েছে ওর বুকের কাছে, ওর উটটি নিজের ইচ্ছে মতো পথ চলছে। সে ক্লান্ত–খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন চার দিনে অনেক কিছু ঘটে গেছে। একজন মানুষের পক্ষে যা অত্যন্ত বেশি।

    সে ধারণা করল বিকেলের বাকি সময়টা সে উটের পিঠে অজ্ঞান অবস্থায় ছিল, কেননা হঠাৎ অনুভব করল সূর্য পশ্চিম দিগন্তে ডুবে যাচ্ছে আর মৃদু বাতাস তার মুখে হুল ফোঁটাচ্ছে। জামাল তার উটের লাগাম হাতে নিয়ে পাশে পাশে চলছিল।

    কেইন উটের পিঠ থেকে নেমে মাটিতে বসে পড়ল। এপাশ ওপাশ মাথা আঁকিয়ে জেগে উঠতে চেষ্টা করতে লাগল। তার মুখ শুকনো হয়ে রয়েছে আর মুখ ভর্তি বালু। কানিংহাম তার পাশে এসে ঢলে পড়তেই জামাল একটা ছাগলের চামড়ার পানির মশক নিয়ে ওদের হাতে দিল।

    ওরা দুজনে দু’বার করে পানি খেতেই মশকটা খালি হয়ে গেল। জামাল খালি মশকটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তার উটের কাছে গিয়ে দূরে তাকিয়ে রইল।

    কানিংহামের মুখ বসে পড়েছে। মুখের চামড়া চিবুকের হাড়ের উপর টাইট হয়ে লেগে রয়েছে। সে একজন বুড়ো মানুষের মতো কর্কশ গলায় বলে উঠল, ‘এখন আমরা কী করব–রাতেও কী চলবো?”

    কেইন সায় দিল। “উটগুলো এখনও ভাল অবস্থায় আছে। ওদের আগেই আমরা পানির অভাব অনুভব করব। রাতের ঠাণ্ডায় আমাদের চলতে সুবিধা হবে।

    ‘আর স্কিরোজ কী করবে?

    কেইন বলল, সেটা আরেক বিষয়। সেও হয়তো শীঘ্রই ক্যাম্প করবে।’

    তারপর সে অনেক কষ্ট করে দুপায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াল। বাতাসে বালু উডে এসে তার মুখে পড়ছে। এমন সময় জামাল ওর দিকে দ্রুত ছুটে এল চোখ বড় বড় করে।

    সে ওর এক কানে হাত গোল করে ধরল, অর্থাৎ বোঝাতে চেষ্টা করল কিছু শুনতে। কেইন শুনলো। দূর থেকে বাতাসে ভেসে আসছে মানুষের অস্পষ্ট কণ্ঠস্বর।

    তার মাঝে উত্তেজনা জেগে উঠতেই সমস্ত ক্লান্তি তার কাঁধের উপর থেকে একটা পুরোনো আলখাল্লার মতো ঝরে পড়লো। আপনি শুনতে পেয়েছেন? সে কানিংহামকে জিজ্ঞেস করল।

    কানিংহাম মাথা নাড়ল। কিছু একটা ঘটেছে, সেজন্য ওরা আগেভাগেই ক্যাম্প করেছে।’

    ‘কারণটা যাই হোক, ওদের জন্য একটা চমক অপেক্ষা করছে, কেইন বলল।

    ওরা উটগুলোকে বেঁধে রেখে সাবধানে পায়ে হেঁটে সামনে এগোতে লাগল। গাড়ির চাকার দাগ একটা বড় বালিয়াড়ির গোড়া ঘিরে ঘুরে গেছে কেইন এক মুহূর্ত ইতস্তত করল, তারপর বালিয়াড়ির খাড়া দিক দিয়ে উঠতে শুরু করল। নরম বালুতে হাঁটু পর্যন্ত ওদের পা ডুবে যেতে লাগল।

    চূড়ার শেষ কয়েক ফুট সে পেটে ভর দিয়ে বেয়ে উঠল তারপর সাবধানে মাথা তুলল। সত্তর কি আশি ফুট নিচে একটা শূন্য গর্ভে একটা তাঁবু খাটানো রয়েছে। তাবুর পাশে হুড উঠানো অবস্থায় একটা ট্রাক রয়েছে। একজন আরব ইঞ্জিনের মধ্যে কিছু মেরামতি কাজ করছে।

    কানিংহাম যখন উপরে উঠে এলো, তখন দেখা গেল তাবুর পর্দা সরিয়ে রুথ কানিংহাম বের হলো। সেলিম তাকে পেছন থেকে ঠেলছে। মনে হলো রুথ সমস্ত আশা হারিয়ে পা টেনে টেনে সামনে একটা জ্বলন্ত স্পিরিট স্টোভের দিকে এগোচ্ছে। সে একটা পাত্র নিয়ে স্টোভের উপর বসালো। সেলিম তার কাছে দাঁড়িয়ে হাসছে।

    কানিংহাম উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করতেই কেইন তাকে টেনে বালিয়াড়ির চূড়ার প্রান্তের নিচে বসালো। বোকামি করবেন না। সেলিমকে আঘাত করতে গেলে রুথ আহত হতে পারে। আর যদি আপনি হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তবে অর্ধেক পথ যাওয়ার আগেই সে রাইফেল তাক করবে রুথের দিকে।

    ‘কিন্তু কিছু একটা তো করতে হবে, কানিংহাম মরিয়া হয়ে বলল। ‘অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করতে পারব না।’

    কেইন চোখ সরু করে একটা সমাধানের পথ খুঁজতে লাগল। তারপর হঠাৎ একটা উত্তেজনায় তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আমার মনে হয়ে একটা উপায় পেয়েছি, তারপর সে দ্রুত প্ল্যানটা খুলে বলল।

    তার বলা শেষ হওয়ার পর কানিংহাম উঠে বসল, তারপর ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল। প্ল্যানটা ভালই। অন্তত একটা সুযোগ নেওয়া যায়।

    সে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করতেই কেইন তার শার্টের হাতা টেনে ধরল। ‘এটা আমি সামলাবো। আপনার অবস্থা দেখে খুব একটা ভাল মনে হচ্ছে না।’

    চোয়াল শক্ত করে সে মাথা নাড়ল। সে আমার স্ত্রী, শুধু এ কথাটাই বলল, কাজেই এটা আমার কাজ।

    কেইন তার সাথে আর তর্ক করার চেষ্টা করল না। কানিংহাম সাব মেশিনগানটি একবার পরীক্ষা করে আলখাল্লার নিচে লুকিয়ে এক হাতে ধরে রাখল। একবার মৃদু হেসে মাথার কাপড়টা পেছনের দিকে ঠেলে সরিয়ে বালিয়াড়ির চূড়ার উপর উঠে দাঁড়াল।

    প্রথমে তারা ওকে দেখতে পায়নি, তারপর সে মুখ খুলে কর্কশ ও ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল, ‘পানি! পানি, ঈশ্বরের দোহাই আমাকে পানি দিন! সে ইচ্ছে করে হাতড়ে হাতড়ে এক পা এগোলো, তারপর হুড়মুড় করে বালুর উপর মাথা নিচু করে পড়ে গেল। গড়াতে গড়াতে নিচে শূন্য গর্ভের দিকে পড়তে লাগল।

    প্রথম চিৎকারটা শুনেই সেলিম আর তার সঙ্গীরা বিপদাশঙ্কা করে সাথে সাথে রাইফেল হাতে নিয়ে প্রস্তুত হলো। কানিংহাম গড়াতে গড়াতে বালিয়াড়ির নিচে এসে থামতেই কেইন সাবধানে সামনে এগিয়ে বালিয়াড়ির চূড়ার কিনারা দিয়ে নিচে উঁকি দিল। কানিংহাম কিছুক্ষণ মাটিতে পড়ে থাকল, তারপর খুব কষ্ট করে পায়ের উপর ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আবার সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। পানি!’ সে গুঙিয়ে উঠল, তারপর মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে গেল।

    রুথ কানিংহাম লাফিয়ে উঠল। চোখে অবিশ্বাস নিয়ে একটা মুহূর্ত সে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল, তারপর সামনে এগোতে শুরু করল। সেলিম তার কাঁধ ধরে তাকে টেনে তাঁবুর দিকে নিয়ে ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়ে দিল। তারপর ঘুরে তাকাল।

    কানিংহাম এক হাঁটুর উপর ভর দিয়ে কাতর প্রার্থনার ভঙ্গীতে তার দিকে এক হাত বাড়াতেই সেলিম হেসে উঠল। সে তার সঙ্গীর উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে কিছু একটা বলে রাইফেলটা মাটিতে রেখে সামনে এগোল।

    এবার কানিংহাম উঠে দাঁড়িয়ে সাব-মেশিনগানটা বের করতেই সেলিম ঘুরে দৌড়াতে শুরু করল। সাব-মেশিনগানের লম্বা একটানা গুলির সবগুলো তার পিঠে গিয়ে পড়ল। পিঠ ঝাঁঝরা হয়ে গেল।

    অন্য লোকটি তখনও রাইফেল হাতে ট্রাকটার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। সে রাইফেল উঠিয়ে লক্ষহীন ভাবে একটা শট ফায়ার করল। কানিংহাম তার দিকে ঘুরল, এক লাইনে গুলি বালু উড়িয়ে নিয়ে লোকটিকে পেছনের দিকে ঠেলে ট্রাকটার গায়ে ছুঁড়ে ফেলল।

    তারপর সে গুলি করা থামাল। হেঁটে সামনের দিকে এগিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা সেলিমের উপরে এসে দাঁড়াল। তখনই তাঁবুর পর্দা সরিয়ে রুথ বেরিয়ে এসে কানিংহামের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল।

    কেইন বালিয়াড়ির চূড়ায় উঠে দাঁড়িয়ে ওদের দিকে তাকাল। বাতাসের ঝটকায় বালুকণা উড়িয়ে নিয়ে এসে ওর মুখে ঝাপটা মারল। সে টিলাটা বেয়ে নিচে নেমে পড়ল, জামালও তার সাথে সর সর করে ঢাল বেয়ে নামল।

    কানিংহাম তার স্ত্রীকে শক্ত করে ধরে রাখল। আকস্মিক ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সে কাঁপতে শুরু করল। সব ঠিক হয়ে গেছে, সে বলল। সে আর তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

    সেলিম মারা গেছে, তার আঙুলগুলো বালু আঁকড়ে ধরে রয়েছে। কেইন তার দিকে তাকাল, তার মনে কোন অনুকম্পা জাগলো না। অন্য লোকটা ভয়ানকভাবে গোঙাচ্ছিল। জামাল তার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে লোকটার মাথা তুলল। কেইন এগোতেই লোকটার শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মুখ থেকে রক্ত বের হতে লাগল। মাথা পেছনের দিকে হেলে পড়ল আর জামাল আস্তে করে তাকে মাটিতে শোয়াল।

    কেইন জিজ্ঞেস করল, ‘লোকটা কি মরে গেছে?

    জামাল মাথা নেড়ে সায় দিল, তারপর ট্রাকের দিকে আঙুল উঁচিয়ে দেখাল। ট্রাকের এক পাশের বডিতে পরিষ্কার এক লাইন বেঁধে বুলেটের ছিদ্র দেখা গেল। গাড়ির গায়ে ব্রাকেটে আটকানো পানির জেরি ক্যানগুলো সব খালি হয়ে গেছে। তারপর কেইন ইঞ্জিন পরীক্ষা করে দেখল এটা আর সারানো যাবে না।

    সে কানিংহাম আর তার স্ত্রীর দিকে ফিরে তাকাল। শেষের গুলিগুলো ট্রাকের গায়েও লেগেছে। এখন একমাত্র উটের উপর ভরসা করেই আমাদের এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। আপনার কী অবস্থা?

    কানিংহামের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে রয়েছে। তারপরও সে মৃদু হাসল। ‘যেহেতু রুথ এখন নিরাপদ, কাজেই আমি আগের চেয়ে ভাল আছি।’

    বাতাসের গতি বেড়ে যাচ্ছিল। শূন্যগর্ভের মাঝে বালু উড়িয়ে নিয়ে ট্রাকটির চতুর্দিকে শোঁ শোঁ শব্দ করে ঘুরছিল। কেইন সাব-মেশিনগানটা কাঁধে ঝুলিয়ে তাড়াতাড়ি বলল, মনে হচ্ছে আমরা খারাপ আবহওয়ার মধ্যে পড়তে যাচ্ছি। আপনারা দুজনে তাঁবুর ভেতরে ঢুকে পড়ুন, আমি জামালকে নিয়ে উঁটগুলোকে নিয়ে আসছি।’

    সে আরবিতে জামালকে সংক্ষিপ্তভাবে বিষয়টা বুঝিয়ে বলল। তারপর ওরা দ্রুত পেছনের দিকে গিয়ে বালিয়াড়ির উপরে উঠতে শুরু করল। উপরে পৌঁছার পর বাতাস প্রচণ্ড বেগে বইতে শুরু করল। একটা বালুর পর্দা এসে সব কিছু মুছে ফেলল।

    কেইন তার কেফায়ার কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে বালিয়াড়ির অন্যপাশ দিয়ে নামতে শুরু করল। ওদের পায়ের দাগ ইতোমধ্যেই মুছে গেছে আর কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ওরা একা হয়ে গেল। ঘুর্ণিবায়ুর মতো একটা ঘন বালুর মেঘ ওদেরকে ঢেকে ফেলল।

    কোন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সে একটু থামল, আধো–অন্ধকার ভেদ করে দেখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। তারপর ঘুরতেই জামালের সাথে ধাক্কা খেল। সে আর জামাল শক্ত করে হাত ধরে আবার বালিয়াড়ির এই পাশ দিয়ে উপরে উঠার আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল। উপরে দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব ছিল, অন্য পাশ দিয়ে ওরা গড়িয়ে গড়িয়ে নেমে তাঁবুর কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়ল।

    তাঁবুর গোড়ার চারপাশে ইতোমধ্যে বালু জমে গেছে। পর্দা সরিয়ে কেইন তাঁবুর ভেতরে ঢুকতেই রুথ কানিংহাম তার দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকাল। আর কতক্ষণ চলবে এরকম?’ সে জানতে চাইল।

    কেইন মাথা থেকে কেফায়াটা খুলে নিরুদ্বেগ ভাব দেখাবার চেষ্টা করে বলল। এক কি দুইঘণ্টা। হয়তো আরো বেশিক্ষণ। শেষের দিকে বাতাস বালুগুলো উড়িয়ে নিয়ে যায়। এখানে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’

    জামাল খুব সাবধানে তাবুর প্রবেশমুখের ফিতাগুলো শক্ত করে বেঁধে ওর উপর বসল। কানিংহাম এক হাত তার স্ত্রীর কাঁধের উপর দিয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখল। আপনি এখন কেমন আছেন? কেইন তাকে জিজ্ঞেস করল।

    যখন সে কথা বলল, তার কণ্ঠস্বর অস্বাভাবিক আর ক্লান্ত শোনালো। ‘আমি আশা করিনি যে আবার আপনাদের দেখা পাবো। গতরাতের সংঘষের পর স্কিরোজ আমাদের জানিয়েছিল আপনারা পাহাড়ের নিচে চাপা পড়েছেন।

    কেইন বলল ‘পুরো ঘটনাটা আপনি খুলে বলুন,’। আজ সারাদিন কি কি ঘটেছে আর কেনইবা ওরা দুই দলে আলাদা হলো।

    রুথ এক গুচ্ছ চুল এক হাতে সামনে থেকে পেছনে ঠেলে দিল। পুরো বিষয়টা ভয়াবহ বলা চলে। আমরা সকালে দুটো ট্রাকে করে গিরিখাত থেকে বের হই। সামনের ট্রাকে ছিল স্কিরোজ, মুলার আর মেরি; সেলিম তার লোকজন আর আমি ছিলাম অন্যটাতে।’

    ‘তুমি সেলিমের সাথে ছিলে কেন?’ তার স্বামী জিজ্ঞেস করল।

    তার মুখ লাল হলো। সে একটু উত্তেজিত হলো। স্কিরোজ তার সাথে একধরনের চুক্তিতে এসেছিল। দাহরান পৌঁছাবার পর তার সেলিমের সহযোগিতার প্রয়োজন ছিল। অবশ্য আমি জানি না সেটা কি, তবে তার জন্য মূল্য হিসেবে সেলিম আমাকে চেয়েছিল।

    একটু খানি নিরবতা নেমে এল। কানিংহাম এক হাত তার স্ত্রীর কাঁধে রাখতেই কেইন আবার বলল, কিন্তু ওরা দু’দল আলাদা কেন হলো?

    সে কাঁধ ঝাঁকাল। ট্রাকটার ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এটা সারাবার জন্য সেলিম এখানে থামল আর স্কিরোজ আর মুলার মেরিকে নিয়ে এগিয়ে গেল। ওদের মধ্যে কথা হয়েছিল বার আল-মাদানির কাছে হাজার নামে একটা জায়গায় ওরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে।

    ‘সেলিমের জন্য ওদের অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে, কানিংহাম বলল।

    রুথ তার দুহাত কোলে রেখে নার্ভাস হয়ে বার বার মোচড়াচ্ছিল। সে বার বার আমাকে শোনাচ্ছিল রাতে ক্যাম্প করার পর আমার সাথে কি কি করবে। এমন জঘন্য ছিল লোকটা।’

    কানিংহাম তাকে কাছে টেনে নিজেই সে তার বুকে মাথা রেখে কাঁদতে শুরু করল। কান্নার দমকের সাথে সাথে তার পুরো দেহ ভিষণভাবে কাঁপতে শুরু করল।

    বাইরে বাতাসের গর্জন শোনা যাচ্ছে। ঝড়ো বাতাস বালু উড়িয়ে নিয়ে প্রচণ্ডভাবে পলকা তাবুর গায়ে অনবরত আছড়াচ্ছিল। কেইন দু’হাটুর মাঝে মাথা গুজলো। অর্ধেক খোলা মুখে গভীর ভাবে নিঃশ্বাস নিতে নিতে ক্লান্ত পেশিগুলো শিথিল করল।

    চারদিক ক্রমশ সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে গেল। আর বাতাসের বেগ এমন প্রচণ্ডভাবে বেড়ে গেল যে, জামাল আর তাকে তাবুর দুইপাশে দুটো খুঁটি শক্ত করে ধরে রাখতে হলো যাতে প্রবল বাতাসের তোড়ে তাবুটা ছিঁড়ে উড়ে না যায়।

    চার ঘণ্টা পর যে রকম হঠাৎ ঝড়টা এসেছিল সে রকমই হঠাৎ চলে গেল। কেইন তাবুর পর্দার ফিতার জোড়গুলো খুলে হামাগুড়ি দিয়ে বাইরে বের হলো। রাতের আকাশ পরিষ্কার আর কোটি কোটি তারা মোমবাতির মতো আকাশে জ্বলছে। পূর্ণিমার উজ্জ্বল আলোয় গর্তটার সব জায়গা আলোকিত হয়ে উঠেছে।

    তাবুর দুদিক বালুর ওজনে বসে গিয়েছিল আর ট্রাকটা বালুতে অর্ধেক ডেবে গিয়েছিল। কানিংহামও তাঁবুর নিচ দিয়ে বের হয়ে এল। এখন আমরা কী করব?

    ‘দেখি উটগুলোকে খুঁজে পাওয়া যায় কী না,’ কেইন বলল। আমি জামালকে সাথে নিয়ে যাচ্ছি।’

    ‘আপনাকে খুব একটা আশাবাদী মনে হচ্ছে না, কানিংহাম বলল।

    ‘ঝড়টা খুব খারাপ ছিল। আমরা ওদের পা বেঁধে রেখেছিলাম, কিন্তু একটা ভীত উটের আশ্চর্যরকম শক্তি আছে। কোন কারণে আতঙ্কিত হলে এরা লাথি মেরে বাঁধন মুক্ত হতে পারে।

    সে জামালকে ডেকে নিয়ে ক্যাম্পের উল্টোদিকে বালিয়াড়ির খাড়া বেয়ে উঠতে শুরু করল। উপর থেকে চারদিকের দৃশ্যটা চমৎকার দেখাচ্ছিল। একের পর এক বালিয়াড়ি গড়িয়ে চলেছে দিগন্ত রেখা পর্যন্ত। এগুলোর মাঝখানের গর্তগুলো দেখতে অন্ধকার আর ভীতিপ্রদ মনে হচ্ছিল। তবে সাদা চাঁদের আলোয় মাটির উঁচু জায়গাগুলো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল।

    ওরা বালিয়াড়ির অন্য পাশ দিয়ে নেমে যেখানে উটগুলো বেঁধে রেখেছিল। সেদিকে এগোল। ধুলিঝড়ে সমস্ত চিহ্ন মুছে গেছে, কেইনের মন ভেঙে গেল। সে থেমে কয়েকবার শিস দিল, রাতের শীতল বাতাসে শিসের শব্দটা তীক্ষ্ণ শোনালো। কিন্তু উত্তরে কোন চিৎকার শোনা গেল না।

    দুজন আলাদা হয়ে, কেইন গেল একদিকে আর জামাল গেল অন্য দিকে। কিন্তু কোন লাভ হলো না। এক ঘণ্টা পর উট ছাড়াই ওরা ক্যাম্পে ফিরে এল।

    কানিংহাম ক্যাম্পের বাইরে বসে ছিল। রাতের ঠাণ্ডা এড়াতে সে বেদুঈন আলখাল্লাটা তার পোশাকের উপর পরেছিল। ওদেরকে ফিরতে দেখে সে উঠে দাঁড়াল। তার স্ত্রীও তাবু থেকে বের হয়ে ওদের কাছে এল।

    ‘কপাল খারাপ,’ কেইন বলল। এতক্ষণে উটগুলো হয়তো কয়েক মাইল দূরে চলে গেছে। আর আমাদের পানির শেষ মশকটাও ওদের সাথে চলে গেছে।’

    কানিংহাম এক হাতে তার স্ত্রীর কাধ জড়িয়ে ধরে বলল, ‘এখন কী হবে?

    কেইন কাঁধ ঝাঁকাল। আর কোন উপায় নেই–চলুন আমরা হাঁটতে শুরু করি।’

    ‘কিন্তু সবচেয়ে কাছে পানি পাওয়া যাবে শাবওয়াতে আর সেটা অন্তত চল্লিশ মাইল দূরে, কানিংহাম বলল। এটা অসম্ভব, বিশেষ করে রুথের পক্ষে।’

    কেইন ট্রাকের কাছে গিয়ে ভেতরে ঝুঁকে কেবিন থেকে কম্পাসটা খুলে ফেলল। যখন ঘুরল তখন তার মুখ কঠোর দেখাল। এ বিষয়ে কোন যদি বা কিন্তু নেই। আমরা হাঁটবো আর এখনই হাঁটা শুরু করতে হবে। ভাগ্য ভাল থাকলে ভোর হবার আগে আমরা বিশ থেকে পঁচিশ মাইল হেঁটে পার হতে পারব। আর যদি তা না পারি তবে আমরা শেষ হয়ে যায়।

    কানিংহামের কাঁধ ঝুলে পড়ল। সে তার স্ত্রীর দিকে ফিরল। তোমাকে এ অবস্থায় আনার জন্য আমি দায়ী। এর জন্য আমি দুঃখিত।

    রুথ আলতোভাবে তার মুখ ছুঁয়ে মৃদু হাসল। এ জায়গা ছাড়া আমি আর অন্য কোথাও থাকতে চাই না।’

    ওরা দুজনে পরস্পরের চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, যেন আশেপাশে আর কেউ নেই কেবল ওরা দুজন ছাড়া। কেইন তাড়াতাড়ি ঘুরে জামালের সাথে কথা বলতে গেল।

    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআমি রুশো বলছি : দি কনফেশানস – সরদার ফজলুল করিম
    Next Article মৃচ্ছকটিক – শূদ্রক (অনুবাদ – জ্যোতিভূষণ চাকী)
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.