Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শেবা – জ্যাক হিগিনস

    জ্যাক হিগিনস এক পাতা গল্প262 Mins Read0

    ১৬. প্রচুর খাবার পাওয়া গেল

    ১৬.

    ক্যাম্পটা তন্ন তন্ন করে খুঁজে প্রচুর খাবার পাওয়া গেল, তবে পানির এলুমিনিয়াম বোতল পাওয়া গেল মাত্র একটা। মধ্য রাতে যখন ওরা যাত্রা শুরু করল তখন কেইন বোতলটা এক কাঁধে ঝুলিয়ে নিল।

    পানিটা চারভাগে ভাগ করলে এর কোন মূল্য নেই। আর কোন পথও নেই, তবে সে সিদ্ধান্ত নিল একেবারে শেষ মুহূর্তে বোতলটা ব্যবহার করবে।

    সে বার বার কম্পাস দেখে দিক নির্ণয় করে দ্রুত পদক্ষেপে হেঁটে দলটাকে এগিয়ে নিয়ে চলল। কনকনে ঠাণ্ডায় সে বেশ সতেজ হয়ে দেহে পূর্ণ শক্তি পেল। অবশ্য ভাগ্যের কী পরিহাস, আর ছয় ঘণ্টা পরই মাথার উপর সূর্যের প্রখর রৌদ্রের তেজে ওরা ঝলসাবে। তারপর আর কতক্ষণ ওরা চলতে পারবে সেটা একটা ভাবনার বিষয়।

    একমাত্র মহিলাটিকে নিয়ে সমস্যা হতে পারে। কেইন আবার থেমে কম্পাসটা পরীক্ষা করল, তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাল। জামাল ওর কাছেই পিছু পিছু আসছে, আর কানিংহাম তার স্ত্রীকে নিয়ে ত্রিশ গজ পেছনে রয়েছে।

    কেইন আবার সামনে চলতে শুরু করল, চেষ্টা করল বালিয়াড়ির মাঝের সহজ পথ দিয়ে চলতে। তবে কোন কোন জায়গায় এটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াল, সেক্ষেত্রে তাকে কিছু কিছু বালুর পাহাড়ের খাড়া দিক বেয়ে পার হতে হচ্ছিল। প্রতিটা পদক্ষেপ কষ্ট করে এগোতে হচ্ছিল।

    প্রায় দুই ঘণ্টা পর ওরা বালিয়াড়িগুলো থেকে বের হয়ে এল, এরপর বিশাল এক সমতলভূমির উপর দিয়ে যেতে থাকল। শক্ত পোড়া মাটি আর নুড়ি পাথরে ছাওয়া সমতল ভূমিটা সামনে অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেছে। কম্পাস দেখে সঠিক অবস্থান আর দিক নির্ণয় করার জন্য কেইন আবার থামল, জামাল পেছন থেকে এগিয়ে এসে ওর কাঁধে একটা টোকা দিল। কেইন ঘুরে তাকাতেই জামাল পেছন দিকে দেখাল।

    কানিংহাম আর তার স্ত্রী প্রায় দুশো গজ পেছনে পড়ে রয়েছে। কেইন বালুতে বসে পড়ে ওদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। ওরা কাছে এসে পৌঁছাতেই কেইন ওদের জন্য উঠে দাঁড়াল। রুথ কানিংহাম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বালুতে বসে পড়ল। আমার মনে হচ্ছে যেন বিশ মাইল হেঁটেছি।’

    ‘আমরা বড়জোর আট কী নয় মাইল হেঁটেছি,’ কেইন তাকে জানাল। সূর্য মাথার উপর পুরোপুরি তেজ ছড়াবার আগে আমাদের অন্তত পঁচিশ মাইল পেরোতে হবে, আর নয়তো কোন আশা নেই।

    ‘এটা আপনার জন্য ঠিক আছে, কানিংহাম বলল। কিন্তু রুথ তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। আপনি খুব দ্রুত হাঁটছেন।

    রুথ সাথে সাথে ওর স্বামীর হাত ছুঁলো। গ্যাভিন কেবল সোজা কথাটা বলছে, জন। আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না, আমি ঠিক থাকব।’

    ‘আমি জানি এটা খুবই কষ্টকর, কেইন বলল। কিন্তু এটা পারতেই হবে আমাদের।’

    কানিংহাম উঠে দাঁড়াল, ‘তাহলে আর দেরি করছি কেন?

    প্রায় তিন ঘণ্টা লাগল ওদের পোড়া-মাটির প্রান্তরটা পেরোতে। তবে শক্ত মাটির উপর ওরা বেশ দ্রুত চলতে পেরেছিল। রুথ কানিংহাম আগের চেয়ে দ্রুত চলছিল। ওরা সবাই কাছাকাছি থেকে পোড়া মাটির প্রান্তরের অপর দিকের বালিয়াড়িতে এসে পৌঁছাল।

    কেইন মোটেই ক্লান্ত হয় নি। বছরের পর বছর ধরে পরিশ্রমী জীবন যাপনের কারণে শক্তিশালী লম্বা লম্বা পা ফেলে সে অনায়াসেই হেঁটে চলল। তার চিন্তা বর্তমানে ছিল না, সে ভাবছিল সকালের কথা, কি হবে তখন। জোর করে মন থেকে এসব চিন্তা হটিয়ে দিয়ে সে অন্য কিছু ভাবার চেষ্টা করতে লাগল।

    ঠিক তখনই তার মনে পড়ল আলেক্সিয়া এর আগে এই পথ দিয়েই গিয়েছিলেন আর তার কাছে কোন কম্পাস ছিল না। সে আবার সেই পাণ্ডুলিপিটা আরেকবার মনে মনে পড়তে শুরু করল। সেই প্রথমবার পড়ার পর লোকটির যে পরিষ্কার ছবি তার মনে ভেসে উঠেছিল তা আবার স্মরণ করার চেষ্টা করল।

    তিনি যে কষ্টসহিষ্ণু ছিলেন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। দৃঢ় ও পাকানো দড়ির মতো শক্ত আর প্রবল ইচ্ছাশক্তির অধিকারী একজন মানুষ। যিনি তার নিয়তি এবং সকল বাধা বিপত্তি জয় করার ক্ষমতায় বিশ্বাস করতেন। তারপরও শুধু এগুলোই কি যথেষ্ট ছিল? নিশ্চয়ই আরো কিছু একটা কারণ ছিল। এমন কিছু যার কারণে কেবল পায়ে হেঁটে তিনি এই মরুভূমি অতিক্রম করতে পেরেছিলেন, যেখানে যে কোন যুক্তিতে তার মৃত্যু অবধারিত ছিল। তাহলে কি একজন নারী তার জন্য তার দেশে অপেক্ষা করেছিল?

    এটি এমন একটি প্রশ্ন, যার কোন উত্তর পাওয়া যাবে না। সে একটু থেমে আবার অবস্থান পরীক্ষা করল। প্রায় পাঁচটা বেজেছে, সে মাটিতে বসে অন্যদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।

    ক্ষয়িষ্ণু চাঁদের আলোয় রুথ কানিংহামের চেহারা মলিন আর মুখ ঝুলে পড়েছে মনে হল। তার স্বামীকে বেশ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে। সে যত্ন করে তার স্ত্রীকে কেইনের পাশে মাটিতে বসালো। জামাল একটা ন্যাপস্যাক খুলে খেজুর আর সিদ্ধ ভাত বের করে সবার হাতে হাতে দিল।

    রুথ কানিংহাম হাতের ইশারায় তার খাবারের অংশ সরিয়ে দিতে চেষ্টা করল। কিন্তু কেইন সেটা জামালের হাতে থেকে নিয়ে তার সামনে ধরল। ‘আপনাকে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে।’

    রুথ ম্লান হেসে সামান্য সিদ্ধ ভাত মুখে দিল। কানিংহাম বলল, ‘আমরা কতদূর এসেছি বলে মনে হয়?

    কেইন কাঁধে ঝাঁকি দিল। “বিশ থেকে পঁচিশ মাইল হবে। সমতল ভূমিতে আমরা ভাল দূরত্ব অতিক্রম করতে পেরেছি।’

    কানিংহাম উপরে বিশাল আকাশের দিকে চেয়ে বলল। ফর্সা হয়ে আসছে মনে হয়।

    ‘এক ঘণ্টার মধ্যেই ভোর হবে,’ কেইন বলল। সূর্য ওঠার আগে আমরা আর সম্ভবত এক ঘণ্টা সময় পাবো তারপরই প্রচণ্ড রোদে সত্যিকার কষ্ট শুরু হবে।’

    ‘আর তারপর কী হবে?

    কেইন কাধ ঝাঁকাল। সেটা সময় এলে দেখা যাবে।’

    সে উঠে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করল। একটা বালিয়াড়ির মাথায় উঠে পেছন ফিরে দেখল ওরা বেশ জোরে হেঁটে তার কাছাকাছি থেকে তাকে অনুসরণ করছে।

    দিগন্তের কিনারায় সূর্য উদয় হওয়ার আগে ওরা আর সাত কি আট মাইল অতিক্রম করতে পেরেছে। শরীর থেকে রাতের ঠাণ্ডা দূর করে একটা রক্তলাল চাকতির মতো সূর্য ওদেরকে উষ্ণতায় ভরিয়ে দিল।

    কেইন হাটার গতি বাড়িয়ে দিল। তার চোখ দিগন্ত রেখার দিকে, সূর্য উঠছে দেখে সে নিরাশ হয়ে পড়ল। প্রথমবারের মতো এবার তার মনে হলো কোন লাভ নেই, ওরা যা করার চেষ্টা করছে তা সম্পন্ন করা অসম্ভব। দুপুর পর্যন্ত যদি ওরা হাঁটতে পারে সেটা একটা অলৌকিক ঘটনা হবে।

    সূর্য একটা কমলা রঙের অগ্নিগোলক। এর রশ্মি তাদের মাথার খুলি ভেদ করে পোড়াতে লাগল। সে কেফায়ার একপ্রান্ত টেনে মুখ ঢেকে ফেলল, শুধু চোখ খোলা রেখে। মৃদু বাতাসে মাটি থেকে ধুলো উড়ছিল।

    ফুসফুসে টেনে নেবার মতো কোন বাতাস নেই। কেবল আগুনের মতো সূর্যের গরম হলকা গায়ের চামড়ায় হেঁকা দিচ্ছে। ঠোঁট ফেটে একাকার আর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।

    পানির বোতলটার কথা মনে করতেই তার আঙুল চলে গেল বোতলের গায়ে। পা টেনে টেনে ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে বোতলটার দিকে তাকাল, কল্পনা করতে লাগল বোতলের ভেতরের পানির শীতলতা, এর আদ্রতা, তার জ্বলতে থাকা গলার মধ্য দিয়ে পানি টপটপ করে গড়িয়ে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ছে। সে বোতলটা ঠেলে পিঠের দিকে সরিয়ে দিল, যাতে আর চোখে না পড়ে। তারপর একটা বিরাট বালিয়াড়ির খাড়া গা বেয়ে ধীরে ধীরে উঠতে শুরু করল।

    উপরে পৌঁছার পর এই প্রথম সে টের পেল তার সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্লান্তিতে ভেঙে পড়ছে। দেহের প্রত্যেকটা লোমকুপ থেকে ঘাম বের হয়ে বেঁচে থাকার জন্য শরীরের প্রয়োজনীয় সমস্ত পানি শুষে নিচ্ছে।

    সে চোখের উপর হাত দিয়ে আড়াল করে সামনে তাকাল আর হঠাৎ চোখে পড়ল দূরে সূর্যের আলো পড়ে লাল রঙের কিছু একটা ঝিকমিক করে উঠল। ওটা সেই র‍্যাপিড প্লেনের ধ্বংসাবশেষ, যেটা চার দিন আগে সে আর রুথ চালিয়ে নিয়ে আসার সময় এখানে ক্র্যাশ করেছিল।

    হঠাৎ তার মনে আশা জেগে উঠল। প্লেনটার মধ্যে পানি ভর্তি একটা জেরিক্যান ছিল। এই কয়দিনের প্রচণ্ড গরমের পরও আশা করা যায় যে কিছু পানি হয়তো এখনো অবশিষ্ট আছে।

    তারপর হঠাৎ মনে পড়ল অনেকক্ষণ হলো সে তার সঙ্গীদের কোন খোঁজ খবর নেয় নি। ঘাড় ফিরিয়ে দেখল বালিয়াড়ির নিচে জামাল তার বিশাল হাতে রুথ কানিংহামকে কোলে করে নিয়েছে। কানিংহাম বালিয়াড়ির খাড়া গা বেয়ে উঠতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। ফোলা মুখে তার চোখ জ্বরে আক্রান্ত রোগীর মতো জ্বলছিল।

    সে কেইনের কয়েক ফুট কাছে এসে মাটিতে হাঁটু ভেঙে বসে পড়ল। আর ধীরে ধীরে এক হাত দিয়ে মুখ মুছলো। তারপর অতিকষ্টে সোজা হয়ে দাঁড়াল। কথা বলতেই মনে হলো অনেক দূর থেকে বলছে, আমাদের একটু বিশ্রাম নিতে হবে।’

    কেইন ফাটা ঠোঁট ভেজাবার চেষ্টা করে বলল, “আমাদের চলতেই হবে।’

    কানিংহাম একগুয়েভাবে মাথা নেড়ে চলল। বিশ্রাম নিতে হবে।’

    সে টলতে টলতে সামনে এক পা এগোতেই হাঁটু ভেঙে পড়ল। কেইন তাকে ধরতেই নরম বালুর মধ্যে তার পা ফসকে গেল। ওরা দুজনেই বালিয়াড়ির খাড়া গা বেয়ে নিচের দিকে গড়াতে গড়াতে এক রাশ বালু ছড়িয়ে মাটিতে পড়ল।

    কানিংহাম হাত পা ছড়িয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ল। আর কেইন ওর পাশে হাঁটু গেড়ে বসে ওর ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে একটুখানি পানি ঢোকাবার চেষ্টা করল। জামাল বালিয়াড়ির উপরে উঠল, তারপর নিচে ওদের কাছে এসে পৌঁছলো। সে রুথ কানিংহামকে তার স্বামীর পাশেই শোয়াল, তারপর কেইনের দিকে তাকাল।

    কেইন প্লেনটার ব্যাপারে তাকে বুঝিয়ে বলল। তার চোখে আশার আলো ঝিলিক দিয়ে উঠল। ঠিক সেই সময়েই কানিংহাম গুঙিয়ে উঠল, তারপর উঠে বসল। আমি কোথায়? কী হয়েছে?

    তার কণ্ঠস্বর এতো দূর্বল আর নিস্তেজ শোনালো যে মনে হলো এটা তার কণ্ঠস্বর নয়।

    কেইন তাকে ধরে দাঁড় করাল আর এক হাত দিয়ে তার কাঁধ পেচিয়ে ধরল। চিন্তা করবেন না, সে তাকে শান্ত করে বলল। এখন আমাদের আর বেশি দূর যেতে হবে না। খুব বেশি দূর নয়।’

    সে ঘুরে জামালের দিকে তাকিয়ে ঘাড় কাত করল। জামাল আবার রুথ কানিংহামকে কোলে তুলে নিল। তারপর আবার ওরা হাঁটতে শুরু করল।

    ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ওরা প্লেনটার কাছে এসে পৌঁছালো। সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতেই কানিংহাম কেইনের কাঁধে একটা বোঝা হয়ে দাঁড়াল। সে তাকে মাটিতে বসালো, তারপর টেনে নিয়ে গেল প্লেনটার ডানার নিচের ছায়ায়। প্লেনের গায়ে কানিংহামের পিঠ ঠেস দিয়ে বসালো। জামালকে বলল রুথকে দেখতে, তারপর সে প্লেনের কেবিনে উঠল।

    একটু খুঁজতেই পানির জেরিক্যানটা গেয়ে গেল। এটা নিয়ে আসার সময় তার হাত কাঁপতে লাগল। ভেতরে কিছু একটা নড়ছে বুঝে তাড়াতাড়ি মেটাল স্টপারটা খুলে ক্যানটা মুখে নিল। একটু লোনা, গরম আর জঘন্য স্বাদ পানিটার, তারপরও সেটা পানি। চার পাঁচ পাইন্টের মতো অবশিষ্ট আছে।

    সে প্লেনটার ডানার নিচে হামাগুড়ি দিয়ে রুথ কানিংহামের মুখে একটু পানি ছিটালো। সে গোঙানির মতো শব্দ করে আস্তে আস্তে চোখ মেলল। মুখের চামড়া শক্ত হয়ে রয়েছে আর ঠোঁট কয়েক জায়গায় ফেটে গেছে। কেইন আস্তে তার মাথা তুলে ধরে একটু পানি দিল তার মুখে।

    রুথ কেশে উঠল, কিছু পানি তার চিবুক বেয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ল। তারপর মনে হলো সে জেগে উঠে হাত বাড়িয়ে পানির বোতলটা তুলে নিয়ে ঢক ঢক করে বেশ খানিকটা পান করল।

    তারপর একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে হেলান দিয়ে বসল। এরপর কেইন কানিংহামের কাছে গেল, সে অবশ্য ইতোমধ্যে নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে। একটু দূর্বল হাসল। দূঃখিত আমি অনেক বিড়ম্বনা সৃষ্টি করেছি। এখন কি করবেন?

    কেইন জেরিক্যানটা দেখিয়ে বলল, এর মধ্যে চার পাইন্টের মতো পানি পাবেন, এই পানিতে আপনাদের সারাদিন চলে যাবে।

    কানিংহাম একটু ভুরু কুঁচকালো। আপনার আর জামালের কি হবে?

    কেইন বলল, ‘আমরা এগোতে থাকব, এছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই। আপনি আর আপনার স্ত্রী আর হাঁটতে পারবেন না। আমরা যদি আপনাদের সাথে এখানে থাকি তাহলে সবাই মরবো। যদি জামাল কিংবা আমি এ জায়গা থেকে বের হতে পারি, তাহলে শিগগির আপনাদের জন্য সাহায্য আনতে পারব।’

    এক মুহূর্তের জন্য সবাই নিরব হলো, তারপর কানিংহাম একটু নিস্তেজ হাসল। আপনি যে রকম বলেছেন, আসলেই আর কোন পথ নেই।’ সে হাত বাড়াল। কেবল শুভ কামনা করা ছাড়া আর তো আমার কিছু বলার নেই। তাহলে আর অপেক্ষা করছেন কেন?’

    একটু বেশিক্ষণ ওরা হাত ধরে থাকল তারপর কেইন জামালের দিকে ফিরল। পানির বোতলটা নিয়ে অর্ধেক পানি খেল। বাকিটা জামালের হাতে দিল, সে বাকি পানিটুকু শেষ করে খালি বোতলটা ছুঁড়ে ফেলে দিল। এক মুহূর্ত দুজন দুজনের দিকে তাকাল তারপর ওরা হাঁটতে শুরু করল। ছোট একটা টিলার উপর ওঠার পর কেইন একবার পেছন ফিরে তাকাল,তারপর একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে টিলাটার অপর পাশে নেমে গেল।

    .

    সূর্য যেন একটা জীবন্ত সত্তা, যা কোনভাবে তার একটা অংশে পরিণত হয়েছে। এখন ওরা দুজনে একটি সত্তা হয়ে হাঁটছে। এরোপ্লেনটা ছেড়ে আসার পর কত সময় পার হয়েছে তা নির্ণয় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে, কেননা এখানে সময়ের কোন অস্তিত্ব নেই আর সময়ের কোন মানেও নেই।

    বুকে আর হাটুতে বর্ম পরে একজন মানুষ হাঁটতে পারে না। এটা অসম্ভব। বরং এগুলো ফেলে দেয়াই ভাল। হেলমেটটা অনেক আগেই চলে গেছে, এখন শুধু রোমান সৈন্যরা ছোরার মতো যে রকম ছোট তরবারি ব্যবহার করে, সেটা একটা বোঝার মতো নিয়ে হাঁটছে। ঘোড়ায় চড়ার সময় পিঠে যে আলখাল্লাটা ব্যবহার করতো সেটা ভাঁজ করে মাথায় পেঁচিয়ে রেখেছে, সূর্যের প্রচণ্ড তাপ থেকে মগজ বাঁচাতে। তাকে যেতেই হবে, ফিরে গিয়ে সেনাপতির কাছে রিপোর্ট পৌঁছাতে হবে। দায়িত্ব কর্তব্য সবার আগে, যা একজন সৈন্যের বেলায় হয়ে থাকে, তবে আরো একটা কারণ ছিল। সেই মেয়েটি–কালো চুল, দুধ-সাদা হুক আর একটা শীতল কুয়ার মতো যার মুখ। এথেন্সে সেই পিরায়েসের কাছে সাগরের মতো শীতল। যেখানে সে ছোটকালে সাঁতার কাটতো, ঝাঁপিয়ে পড়তে সবুজ গভীরতায়। মাছগুলোর মাঝে একেবেকে সাঁতার কেটে বেড়াতো। ভয় পেয়ে মাছের দল বিশাল চকচকে মেঘের মতো দুরে পালিয়ে যেতো। তারপর সে আবার ধীরে ধীরে গোলাকার বুদবুদ ছড়িয়ে পানির উপরে ভেসে উঠতো।

    সে সামনে মাটিতে পড়ে গেল। কিছুক্ষণ হাঁটুর উপর উবু হয়ে বসে রইল, তারপর তাকে এক ঝটকা মেরে টেনে তুলে দাঁড় করিয়ে একটা হাত তার মুখে থাপড় কষালো। জামাল তাকে শক্ত করে ধরে তার চোখের দিকে উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে তাকাল। কেইন কথা বলতে চেষ্টা করে কিছুই বলতে পারল না। তারপর কয়েকবার মাথা নেড়ে সে আবার সামনের দিকে হাঁটা শুরু করল।

    হাঁটার চেষ্টা করাটা এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে নিদারুণ দৈহিক যন্ত্রণার মতো। সেই যন্ত্রণা পুরো দেহে ছড়িয়ে পড়েছে। তারপর মনে হলো এর আর অস্তিত্ব নেই। এখন তার ভেতরে কিছু একটা জ্বলছে, সেটা তাকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মরে যেতে দিচ্ছে না।

    বাতাসের ঝাপটায় মুখ ঢেকে রাখা কাপড়টা সরে যেতেই খোলা মুখের চামড়ায় জ্বলন্ত সূর্যের তেজ কেটে বসেছে। তারপর আবার সে মুখ থুবড়ে বালুতে পড়ে গেল, আবার জামাল তাকে টেনে তুলল। এবার সে জামালের চওড়া কাঁধে এলিয়ে পড়ল। সে ভ্রু কুঁচকে মাথা ঝাঁকাল, চেষ্টা করল পরিষ্কারভাবে সবকিছু ভাবতে, কিন্তু কোন কাজ হলো না। এখন আর কোন কিছুই ভাল নেই। সে অন্ধকার একটা তাপের শূন্যতার মাঝে সেঁধিয়ে একটু একটু করে তার সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলল।

    তার মুখে বালু ঢুকেছে। সে তার হাতের আঙুল দিয়ে মাটি আঁচড়াতে লাগল। কিন্তু এবার কোন শক্ত হাত তাকে ধরে টেনে তুলল না। এবার সে সম্পূর্ণ একা। জামাল চলে গেছে।

    সে আর কখনো সেই মেয়েটির কাছে ফিরে যেতে পারবে না। ফর্সা হাত পা আর শীতল ঠোঁট যে মেয়েটির। যাকে সে সারা জীবন ধরে চেয়েছে, তার সাথে মিশে দুজনে এক সত্তা হয়ে বেঁচে থাকবে। দুজনে এক সাথে মিলে জীবনকে উপভোগ করবে পরিপূর্ণভাবে।

    সে কি গ্যাভিন কেইন নাকি সে আলেক্সিয়াস, দ্য গ্রিক। দশম লিজিয়নের একশে সেনাদলের নেতা। আর সেই ফর্সা হাতপা আর শীতল ঠোঁটের মেয়েটি কে? এর কোন উত্তর নেই। অন্তত পৃথিবীর বুকে নেই।

    পানির ঝাপটা তার মুখের উপর পড়তেই যেন একটা প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়ে সে জেগে উঠল। কপাল থেকে পানি বেয়ে মুখে ঢুকতেই প্রচণ্ডভাবে কাশতে শুরু করল। একটা শক্ত হাত তাকে ধরে তুলল আর দাঁতের ফাঁকে ধাতব পানির বোতলের মুখ ঢুকিয়ে দিল। সে গপ গপ করে পানি গিলতেই বিষম খেলো।

    লাল লাল ফোলা চোখ খুলে সে দেখল জর্ডন তাকে এক হাঁটুর উপর ঠেস দিয়ে ধরে রেখেছে। পেছনে একটা ট্রাক পার্ক করা রয়েছে।

    কেইন মুখ খুলে কোন মতে এটুকু বলতে পারল-পেছনে মরুভূমিতে, সে কর্কশ কণ্ঠে বলল, তুমি ওদেরকে তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো।

    জর্ডন ওকে আশ্বস্ত করে মাথা নাড়ল। কোন কিছু নিয়ে তুমি চিন্তা করো না। ওদের আনার ব্যাপারে বন্দোবস্ত করা হয়েছে। আমার অন্য ট্রাকটা নিয়ে তোমার সেই বিশালদেহী সোমালি লোকটা পথ দেখিয়ে আমার দুজন লোককে সাথে করে নিয়ে গেছে। সে হেসে বলল। জামাল সত্যি একটা মানুষ বটে।

    কিন্তু কেইন আর কোন কিছু শুনতে পেল না। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে দুচোখ বুঝলো। সব কিছু তার সামনে অন্ধকার হয়ে গেল।

    .

    ১৭.

    সে ধীরে ধীরে চোখ খুলল। একটা মুহূর্ত তার মন সম্পূর্ণ ফাঁকা হয়েছিল। সে একটি কনুইয়ে ভর দিয়ে বসল, আতঙ্কে তার মন ছেয়ে গেল। তারপর সব কিছু মনে পড়তেই একটা লম্বা শ্বাস ফেলে আবার শুয়ে পড়ল।

    সে একটা ক্যাম্প খাটে শুয়েছিল, মাথার উপর চারটে খুঁটির উপর ঝোলানো একটা নিচু ছাউনি। কাছেই দুটো ট্রাক পার্ক করা আর কয়েক গজ দূরে একটা তাঁবু খাটানো হয়েছে।

    কেইন নড়ে উঠতেই খাটের পায়ের কাছে মাটিতে আসন গেড়ে বসে থাকা জামাল উঠে এসে তার উপর ঝুঁকে দৃষ্টি বুলালো। দুজনের মাঝে চোখাচোখি হতেই জামালের মুখ হাসিতে ভরে উঠল। কেইন নিঃশব্দে একটি হাত বাড়াল।

    জামাল হাতটা ধরল, তারপর ধীরে ধীরে তার মুখ থেকে মৃদু হাসিটা চলে গেল। একটা মুহূর্ত তাদের মধ্যে এমন একটা অনুভূতির সৃষ্টি হলো যা এর আগে ছিল না। তারপর সে ঘুরে জর্ডনের দিকে এগোলো, সে তখন ক্যাম্পের মাঝখানে একটা স্পিরিট স্টোভের উপর ঝুঁকে দাঁড়িয়েছিল।

    একহাতে একটা পট আর অন্য হাতে একটা প্লাস্টিক কাপ নিয়ে জর্ডন কেইনের কাছে এল। কফি?’ সে দাঁত বের করে হাসল।

    কেইন মাটিতে পা নামিয়ে খাটের উপর বসল। তখনো তার মাঝে দুর্বলতা আর মাথা হালকা মনে হচ্ছিল। আর সবকিছু কেমন অবাস্তব আর আবছা আবছা মনে হচ্ছিল।

    খানিকটা কফি গিলতেই গরম কফি গলা বেয়ে পেটে পড়তেই সে শিউড়ে উঠল। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আসলে আমার এখানে থাকার কথা নয়।’

    জর্ডন বলল, কম করে বললে তাই ভাবতে পার।

    কেইন ছাউনি থেকে উবু হয়ে বাইরে বের হল। ওরা পাহাড়ের পাদদেশেই তাঁবু গেড়েছে। সামনেই মরুভূমি চলে গেছে দূরে। আমরা এখন কোথায়?

    ‘শাবওয়া থেকে দশ বারো মাইল দূরে আছি,’ জর্ডন উত্তর দিল। ‘তাড়াহুড়া করে এখানে ক্যাম্প করেছি কারণ কানিংহাম আর তার স্ত্রীর অবস্থা কেমন তা বুঝে উঠতে পারিনি।’

    ‘এখন কেমন আছে ওরা?’ কেইন জিজ্ঞেস করল।

    জর্ডন তাকে একটা সিগারেট দিয়ে বলল, সামান্য পানি শূন্যতায় ভূগছে, আর সব ঠিক আছে। আমি ওদের দুজনকেই ঘুমের ওষুধ দিয়েছি। ওরা তাঁবুতেই ঘুমিয়ে আছে।

    কেইন সিগারেটে একটা লম্বা টান দিল। আমাদের ভাগ্য ভাল যে তুমি জামালের দেখা পেয়েছিলে। এত দূরে মরুভূমিতে তুমি কি করছিলে?’

    ‘গত তিন দিন ধরে আমি তোমাদের খুঁজছিলাম, জর্ডন বলল। মেরি যে ট্রাকটা নিয়ে গিয়েছিল সেটা নিয়ে ফিরে না আসায়, ট্রাকের ড্রাইভার– পরদিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে আমার কাছে এসে খবরটা জানাল। গতকাল এরোপ্লেনটা পেয়েছি কিন্তু ট্রাকের কোন চিহ্ন নেই। আমি ভাবলাম হয়তো ফেরার পথে ট্রাকটা নষ্ট হয়ে কোথাও না কোথাও পড়ে রয়েছে। আমরা এরোপ্লেন আর এই জায়গার মাঝে খুঁজতে খুঁজতে জামালের দেখা পেলাম।

    কেইন জামালের দিকে তাকাল। সে তখন স্পিরিট স্টোভের পাশে বসে একটা বোল থেকে ভাত খাচ্ছে। জর্ডনের লোকেরা তার দিকে চেয়ে রয়েছে। ‘আমি মনে করি আমাদের সবার জীবন রক্ষা পেয়েছে তার কারণে।

    ‘সেটা ঠিক বলেছো তুমি, জর্ডন বলল। এখন পুরো ব্যাপারটা খুলে বলো। প্লেনটা ক্র্যাশ করার পর তোমরা কোথায় ছিলে? আর মেরির কি হয়েছে?

    যত সংক্ষেপে সম্ভব কেইন গত চারদিনের ঘটনার বিবরণ খুলে বলল। তার বলা শেষ হবার পর জর্ডন তার মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, স্কিরোজ একজন নাৎসি–এটা আশ্চর্য।

    ‘এটাই সত্যি, কেইন বলল। তবে আমি যেরির ব্যাপারে চিন্তিত। রুথ কানিংহাম বলেছে ওদের হাজার অপেক্ষা করার কথা।

    জর্ডন কুঁচকালো। দু’সপ্তাহ আগে আমি ঐ জায়গাটা পার হয়ে এসেছি। ওখানে বাল হারিস নামে একটা বেদুঈন গোষ্ঠি ডেরা গেড়েছে। ওদের সর্দার মোহাম্মদ নামে পাকা দাড়িওয়ালা একজন অভিজ্ঞ বর্ষীয়ান ব্যক্তি।

    কেইন মাথা নাড়ল। তুমি যার কথা বলছো তাকে আমি চিনি। অতীতে তার সাথে আমি ব্যবসা করেছি। তারপর সে চোখ সরু করে বলল, ব্যাপারটা একটু ভেবে দেখো। আমি শুনেছিলাম মূলারের সাথে বাল হারিসের খুব মাখামাখি সম্পর্ক। হয়তো সে জানতো বাল হারিস এখন হাজারএ ক্যাম্প করেছে।’

    জর্ডন দেঁতো হাসি দিল। এ ধরনের বন্ধুই স্কিরোজের এখন দরকার। যখনই আমি পাশ দিয়ে যাই ভয়ংকর চেহারার এই লোকগুলো তখনই দাঁত বের করে রাইফেলে আঙুল বোলায়। এক জোড়া গোঁজার জন্য ওরা তোমার গলা কাটতে পারে।

    কেইন মাথা নাড়ল। মোহাম্মদ সে রকম মানুষ নয়। সে পুরোনো জমানার বেদুঈন সর্দার। সে তার সম্মান আর পুরোনো আদবকায়দা অত্যন্ত কঠোরভাবে মেনে চলে।

    সে উঠে দাঁড়িয়ে ছাউনির বাইরে বের হল। মাথা আবার ঘুরে উঠতেই সে টলে উঠল। তাড়াতাড়ি নিজেকে সোজা করে দাঁড়াল। জর্ডন উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, ‘তুমি ঠিক আছে তো?’

    ‘স্কিরোজকে ধরতে পারলে আমি একদম ঠিক হয়ে যাবো, কেইন তাকে বলল। এখন তোমার একটা ট্রাক নিতে পারব?

    জর্ডন মাথা নেড়ে বলল, কোন দরকার নাই। আমিও তোমার সাথে যাচ্ছি। আমি নিজেও মেরি পেরেটকে নিয়ে বেশ চিন্তিত আছি।

    কানিংহাম আর তার স্ত্রীর কি হবে?

    জর্ডন কাঁধ ঝাঁকাল। এখন ওরা বেশ কয়েক ঘণ্টা ঘুমাবে। ওদের দেখাশুনা করার জন্য আমার লোক থাকবে।

    কেইন আর তর্ক করল না। সে জামালকে ডেকে সবকিছু বুঝিয়ে বলল। তারপর ওরা একটা ট্রাকে চড়ে জর্ডনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। সে ওর লোকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে এল।

    কয়েক মিনিট পর ট্রাক চলতে শুরু করল। জর্ডন চালকের আসনে আর কেইন দুচোখ বুজে সিটে হেলান দিয়ে বসল। গত কয়েকদিনের কর্মকান্ড আর চিন্তাভাবনা যেন তার শরীরের সমস্ত শক্তি নিংড়ে নিঃশেষ করে নিয়েছে। সামনে কি হবে না হবে সেসব নিয়ে সে আর ভাবলো না।

    এক ঘণ্টার মধ্যেই ওরা হ্যাঁজারে পৌঁছে গেল। চওড়া উপত্যকার মাথায় জর্ডন ট্রাকের ব্রেক কষলো। নিচে বেদুঈনদের কালো তাবুগুলো দেখা যাচ্ছে।

    যাই ঘটুক না কেন, কথা বলার ভার আমার উপর ছেড়ে দাও, কেইন বলল। আমি জানি ঠিক কীভাবে ওদেরকে সামলাতে হবে।

    মরুদ্যানের পাম গাছের সারি উপত্যকার কয়েকশ গজ পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। পাতাগুলো একটা ছাদের মতো হয়ে সূর্য কিরণ থেকে মরুদ্যানকে ছায়া দিয়েছে। ওরা বেদুঈন বসতির দিকে ট্রাক চালিয়ে এগোতেই সামনে থেকে উট আর ছাগলগুলো চারপাশে ছত্রভঙ্গ হয়ে ছড়িয়ে পড়ল। বাচ্চারা ভয়ার্ত কণ্ঠে চিৎকার করতে করতে তাঁবুর দিকে ছুটে গেল। দীর্ঘদেহী কালো দাড়িওয়ালা আলখাল্লা পরা লোকজন রাইফেল হাতে তাবুগুলো থেকে বের হয়ে এল।

    বসতির মাঝখানে পৌঁছার পর কেইন সিটে সোজা হয়ে বসল। জামাল তার কাঁধে আলতো করে ‘লো। পঞ্চাশ ষাট গজ দুরে দুটো ট্রাক পার্ক করা রয়েছে।

    জর্ডনও একই সাথে ট্রাকগুলো দেখল। মনে হচ্ছে আমরা ঠিক জায়গাতেই এসেছি।’

    সে সবচেয়ে বড় তাবুটার সামনে ব্রেক কষে ট্রাকটা থামাল। একজন সর্দার গোছের ব্যক্তি বাইরে বের হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

    মাহমুদ অত্যন্ত বয়স্ক একজন মানুষ। তার লম্বা দাড়ি বেশিরভাগ রুপালি রঙের। গায়ের চামড়া অনেকটা পার্চমেন্ট কাগজের মতো হাড়ের সাথে লেগে রয়েছে। তার আলখাল্লা চকচকে উজ্জ্বল সাদা আর জাম্বিয়ার বাট খাঁটি সোনার।

    গোত্রের লোকজন নিঃশব্দে এগিয়ে গাড়িসহ পালাবার পথ বন্ধ করে ওদেরকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলল। আর যাই হোক ওদেরকে বন্ধুসুলভ মনে হচ্ছে না।

    জর্ডন বলল, ওদের রাইফেলগুলো দেখছ? সর্বাধুনিক। এবার বোঝা যাচ্ছে স্কিরোজ কেন অপেক্ষা করার জন্য এ জায়গা বেছে নিয়েছিল।

    কেইন ট্রাক থেকে নেমে ধীরে ধীরে সামনে এগোলো, তারপর মোহাম্মদের কয়েক পা দূরে থামল। কয়েক মুহূর্ত দুজন দুজনের চোখের দিকে চেয়ে রইল, তারপর বর্ষীয়ান আরব লোকটি মৃদু হেসে হাত বাড়াল। এই যে আমার বন্ধু কেইন। সেই কবে আমরা এক সাথে বাজপাখি নিয়ে শিকার করেছি। অনেক দিন হয়ে গেল তাই না।’

    কেইন বাড়ানো হাতটি ধরে মৃদু হাসল। সময় কিন্তু তোমাকে আরো ভাল করেছে, মাহমুদ। একেক বছর যায় আর তোমার বয়স যেন কমতে থাকে। সে জর্ডনের দিকে ফিরে বলল, “ইনি আমার একজন বন্ধু।

    মাহমুদ মুখ বিকৃত করল। একে আমি চিনি। এই যুবক মাটি খুঁড়ে তার মেশিন দিয়ে বাতাস দুষিত করছে।’ জর্ডনের চেহারায় অস্বস্তির ভাব ফুটে উঠল। কিন্তু বৃদ্ধ মানুষটি মৃদু হেসে এক হাত তুলে ভদ্রতাসূচক ইঙ্গিত করল। তবে এই যাত্রায় আমি আমার এক বন্ধুর খাতিরে তাকে স্বাগত জানাচ্ছি।’

    সে ঘুরে নিচু দরজা দিয়ে শীতল তাঁবুতে ঢুকল, কেইন আর জর্ডনও তাকে অনুসরণ করল।

    ওরা পা ভাজ করে নরম গালিচায় বসে অপেক্ষা করতে লাগল। একটু পর তাঁবুর পেছন দিক থেকে কালো বোরকায় ঢাকা একজন মহিলা একটা তামার ট্রেতে কফিপট, তিনটে কাপ আর এক বোল সিদ্ধ ভাত নিয়ে উপস্থিত হলো।

    কেইন আর জর্ডন যথারীতি ভদ্রতা দেখিয়ে কফি খেলো আর মাহমুদের মতো আঙুল ডুবিয়ে একই বোল থেকে ভাত খেলো।

    মহিলাটি একটা ভেজা কাপড় এগিয়ে দিতেই ওরা আঙুল মুছলো। কেইন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল, তার সমস্ত দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেল। এখন যাই আলোচনা হোক না কেন, ওরা এখন নিরাপদ। কেননা ওরা গোত্রের মধ্যে থেকে মাহমুদের সাথে খাওয়াদাওয়া করেছে। এখন ওদের কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।

    একটু নিশ্চুপ থেকে মাহমুদ ভদ্রভাবে বলল, বন্ধু, তোমরা অনেক দূর থেকে এসেছো?”

    কেইন মাথা নেড়ে সায় দিল। অনেক দূর থেকে খুব তাড়াতাড়ি এসেছি। আমি দুইজন মানুষকে খুঁজছি যারা আমার খুব ক্ষতি করেছে।

    একজন মানুষের সম্মানই হলো তার জীবন, মাহমুদ গম্ভীর হয়ে বলল। ‘আল্লাহ তোমার সহায় হোন।

    ‘আল্লাহ ইতোমধ্যেই আমাকে অনুগ্রহ করেছেন, কেইন উত্তর দিল। ‘আমি যে লোকগুলোকে খুঁজছি তারা আপনার ক্যাম্পেই আছে। আমি তাদের ট্রাকদুটো দেখেছি।

    মাহমুদের চেহারায় কোন ভাবান্তর দেখা গেল না। সে শান্তভাবে মাথা নেড়ে সায় দিল। আমার তাঁবুতে দুজন ইউরোপীয় আছে। আমার বন্ধু। প্রফেসার মূলার আর দাহরান থেকে আসা মোটা লোকটা। কীভাবে ওরা তোমার সম্মানহানি করেছে?

    কেইন একইভাবে আবেগহীন কণ্ঠে বলল, ওরা আমার মেয়েমানুষকে হরণ করেছে।

    একটু নিরবতা নামল আর বৃদ্ধ মানুষটি আস্তে আস্তে দাড়িতে আঙুল বোলাতে লাগল। এক মুহূর্ত পর সে বলল, “ওদের সাথে অবশ্য একজন মহিলা রয়েছে, মিশ্র রক্তের। এখানে পৌঁছার পর সে একবারও তাবু থেকে বের হয়নি।

    ‘ইনিই সেই মেয়েমানুষ,’ কেইন বলল।

    মাহমুদ সহজভাবে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, একটু অপেক্ষা কর।’ এ কথা বলে সে বাইরে বের হয়ে গেল।

    জর্ডন অস্থিরভাবে বলল, ‘এসবের অর্থ কী?

    কেইন দ্রুত উত্তর দিল, এভাবেই আমরা স্কিরোজকে বের করে আনতে পারি। একজন নারী একজন বেদুঈনের ঘরের আসবাবের মতো হতে পারে। কিন্তু এ পর্যন্তই, তারপর মিলটা এখানেই শেষ। কারও ঘরের নারীকে হরণ করা এদের মাঝে অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ মনে করা হয়।’

    ‘ঠিক আছে বুঝলাম সেটা, জর্ডন অধৈর্য হয়ে বলল। কিন্তু তারপরও আমি বুঝতে পারছি না এটা আমাদের কীভাবে সাহায্য করবে।

    কেইন এ কথার কোন উত্তর দেবার আগেই, মাহমুদ তাঁবুতে ঢুকল, পেছন পেছন মুলার আর স্কিরোজকে নিয়ে।

    কেইন আর জর্ডন দুজনেই উঠে দাঁড়াল, কেইন সামনে এক পা এগোলো। মুলারের চেহারায় হতাশার ভাব দেখে হাস্যকর মনে হচ্ছে, কিন্তু স্কিরোজের কোন ভাবান্তর নেই। আমরা তোমাদেরকে আসতে দেখেছি। মনে হচ্ছে। অলৌকিক ঘটনা এখনো ঘটে থাকে। সম্ভবত সেলিমের আসতে দেরি হয়েছে।’

    ‘আমার মনে হয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য, কেইন উত্তর দিল।

    ‘তোমরা পুরোনো বন্ধু মনে হচ্ছে, মাহমুদ মৃদুস্বরে বলল।

    স্কিরোজ তাকে জানাল। মোটেই না,’ এই লোক আমার অনেক ক্ষতি করেছে। একদিক দিয়ে বলতে পার সে এমনকি তোমার আর তোমার গোত্রের লোকজনেরও ক্ষতি করেছে। তার কর্মকান্ডের কারণে মুলার আর আমাকে এ দেশ ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। সীমান্তের উপজাতীয় গোষ্ঠীরা আর অস্ত্র পাবে না।

    ‘এটা সত্যি খুবই দুর্ভাগ্যজনক আর আমার গোত্রের লোকজন একথা শুনলে মোটেই খুশি হবে না,’ মাহমুদ বলল, “তবে কেন আমার তাবুতে একজন মেহমান, অতএব তার নিরাপত্তা রক্ষা করা আমার কর্তব্য, যেরকম তোমাদের নিরাপত্তা আমি দিয়েছি।’

    স্কিরোজ কাঁধ ঝাঁকাল। সেটা তোমার নিজস্ব ব্যাপার। তবে আমি মনে করি তোমাকে সাবধান করে দেওয়া উচিত যে এই লোক তোমার শত্রু।

    মাহমুদ কয়েক পা পায়চারি করল, তাকে গভীর চিন্তামগ্ন মনে হচ্ছে। “তোমাদের তাবুতে যে মেয়েটি আছে সেকি তোমাদের?

    স্কিরোজের দেহ হঠাৎ আড়ষ্ট হয়ে গেল আর মুলার কাঁপা কাঁপা হাতে মুখ থেকে ঘাম মুছলো।

    ‘এ বিষয়ের সাথে মেয়েটার কি সম্পর্ক?’ মুলার জিজ্ঞেস করল।

    মাহমুদ কণ্ঠস্বর শান্ত রেখে বলল, কেইন বলেছে মেয়েটা তোমাদের নয়। তোমরা তাকে তার কাছ থেকে অপহরণ করেছ।

    স্কিরোজ বলল, আমি এটাই আশা করেছিলাম যে, সে একথাই বলবে।’

    “আচ্ছা তাই নাকি, মাহমুদ চিন্তাযুক্ত স্বরে বলল, একই বিষয়ের দু-ধরনের মতামত, দুটোই আলাদা ধরনের। তার মানে কেউ না কেউ সত্যি কথাটা লুকাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সত্য জানার কেবল একটি উপায় আছে।

    সে হাততালি দিল, বাইরে কারও নড়াচড়ার আভাস পাওয়া গেল। তারপর মেরি দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে ওদের সামনে এসে দাঁড়াল। ভেতরের অন্ধকারে একটু চোখ পিট পিট করল, তারপর কেইনকে দেখতে পেল। সে প্রথমে অবাক হয়ে গেল তারপর বিস্ময়ে চেঁচিয়ে ছুটে গেল কেইনের দুবাহুর মাঝে।

    সে তাকে শক্ত করে ধরে তার কালো চুলের উপর হাত বুলিয়ে বলল, ‘তুমি ঠিক আছো?’

    ‘আমি ঠিক আছি, সে ধীরভাবে তার মুখ ছুঁলো। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।’

    মাহমুদ মেরির কাঁধে হাত রেখে তাকে তার মুখোমখি ফেরালো। তোমার নাম কি বাছা?’

    সে মাহমুদের মুখোমুখি হয়ে চিবুক উঁচু করে বলল, ‘মেরি পেরেট।

    সে মাথা নাড়ল। আমি তোমার কথা শুনেছি। তোমার মা রশিদ গোত্রের ছিল না?’ তারপর মাহমুদ এক পাশে একটু সরে দাঁড়াল, যাতে সবার মুখ পরিষ্কার দেখতে পারে। কেইন বলছে তুমি তার মেয়েমানুষ। স্কিরোজ তোমাকে তার কাছ থেকে অপহরণ করেছে, এটা সত্যি?

    মেরি মাথা কাত করে সায় দিল। বর্ষীয়ান শেখ বলে চলল-তোমরা কি খ্রিষ্টানমতে বিবাহিত?

    ‘না, আমরা বিবাহিত নই,’ সে বলল।

    ‘তুমি কি তার সাথে মিশেছো?’ মাহমুদ দ্রভাবে বলল।

    এক মুহূর্ত নিরবতা নেমে এল আর কেইন দম আটকে প্রার্থনা করতে লাগল, সে যেন সঠিক উত্তর দেয়। মেরি ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল। হ্যাঁ, আমি এই লোকের সাথে মিশেছি।’

    স্কিরোজ রাগে ফেটে পড়ল। এটা মিথ্যা। এটা কেইনের সাজানো গল্প। আমি তোমাকে বলেছি সে আমার শত্রু।

    মাহমুদ এক হাতু উঁচু করে তাকে থামাল। বিনা কারণে কোন্ মেয়ে নিজেকে লজ্জায় ফেলবে? যদি সে তার সাথে মেলা মেশা করে থাকে তাহলে সে তার। সে আর কারও হতে পারে না। তার শরীরে আমাদের গোত্রের মানুষের রক্ত বইছে আর এটাই আমাদের আইন।

    প্রচণ্ড রাগে স্কিারোজের চেহারা উত্তেজনায় ফেটে পড়ল। সে অতিকষ্টে নিজেকে সামলে নিল। শক্ত হয়ে একবার মাথা ঝুঁকালো তারপর এক ঝটকায় তাবুর পর্দা সরিয়ে বাইরে বের হয়ে গেল। মুলার তাকে অনুসরণ করল।

    জর্ডন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কেইন মাহমুদের দিকে ফিরে বলল, এবার কি হবে?

    বুড়ো শেখ মৃদু হাসল। আমার মনে হয় এটাই ভাল হবে, মেয়েটি এখন তাঁবুতে ফিরে যাক। আমার বন্ধুরা চলে যাওয়া পর্যন্ত সেখানেই পাহারায় থাকুক।’

    ‘আমি ওর সাথে একটু কথা বলতে পারি?’ কেইন বলল।

    মাহমুদ মাথা নাড়ল। বেশিক্ষণ নয় কিন্তু।

    সে জর্ডনের কাধ স্পর্শ করল, তারপর দুজনে বাইরে গেল।

    মেরি আবার কেইনের বাহুবন্ধনে আসতেই সে তাকে কিছুক্ষণ চেপে ধরে থাকল। তারপর ওরা বসল। কেইন হঠাৎ খুব ক্লান্তিবোধ করল। তোমার কাছে সিগারেট আছে?’ সে বলল।

    মেরি তার শার্টের পকেট থেকে একটা দোমড়ানো প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট কেইনকে দিল। সে একটা তৃপ্তির টান দিয়ে বলল, “আহ! বেশ ভাল লাগছে।’

    মেরি এগিয়ে হাত দিয়ে তার চুল সমান করল। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব খারাপ সময় কাটিয়েছ।

    ‘এক রকম তাই বলতে পার।’

    ‘খুলে বল।

    সে তাকে সংক্ষেপে ঘটনার একটা বিবরণ দিল। তার বলা শেষ হলে মেরি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কানিংহামরা ঠিক আছে জেনে ভাল লাগছে। এখন তুমি স্কিরোজ আর মুলারের বিষয়ে কি করবে?

    ‘আমি কী করব বল? আমার ধারণা যদি ঠিক হয় তবে ওরা চলে যাবার পর মাহমুদ আমাদের এখানে আটকে রাখবে। ওরা যেহেতু এদেরকে বন্দুক সাপ্লাই করে এসেছে সেক্ষেত্রে এটুকু অন্তত মাহমুদ করবে। কিন্তু একটা ব্যাপার আমি বুঝে উঠতে পারছি না স্কিরোজ এত তাড়াহুড়া করে কেন উপত্যকা ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছে। কী হয়েছে তার?

    ‘আমিও ঠিক জানিনা, সে বলল। সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পর সে অনেকক্ষণ রেডিওতে কথা বলছিল। খুব রেগে ছিল তখন। সেলিমের সাথে অনেকক্ষণ তর্ক করল। তারপর সে জানাল আমরা ভোরেই রওয়ানা হবো।

    ‘সে সম্ভবত বার্লিনে তার উপরওয়ালাকে প্লেনটা ধ্বংস হওয়ার খবর জানাচ্ছিল, কেইন বলল। ওরা মনে হয় ভীত হয়ে পড়েছিল। কারণ যদি সে ধরা পড়ে আর তার প্রকৃত জাতীয়তা জানাজানি হয়ে যায় তবে মারাত্মক বিপদ হতে পারতো। হয়তো সেজন্যই ওরা তাকে বলেছে যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে বের হয়ে যেতে।’

    ‘ওর সাথে আর দেখা না হলেই ভাল, মেরি বলল।

    কেইন ওর দুহাত বাড়াতেই মেরি তার দুহাতের মাঝে কেইনের হাত শক্ত করে চেপে ধরল।

    ‘এসব কিছু থেকে একটা ভাল জিনিস প্রকাশ পেয়েছে, আমি জানতে পারলাম কখন আমি জয়ী হয়েছি।’

    সে আবার তার দুবাহুর মাঝে আসতেই ওরা দ্রুত একবার চুম্বন করল। এরপরপরই তাবুর পর্দা সরিয়ে মাহমুদ ঢুকল। সে একপাশে সরে দাঁড়াতেই মেরি তাকে পাশ কাটিয়ে বাইরে চলে গেল।

    বৃদ্ধ বেদুঈন মৃদু হাসল। তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। এখন বরং একটা লম্বা ঘুম দাও। আমার লোক তোমাকে তোমার লোকজনের কাছে নিয়ে যাবে। পরে আবার কথা হবে।’

    কেইন কড়া রোদে বের হতেই একজন লোক তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল। সবার চোখ তার দিকে ফিরছে আর বাচ্চারা তার সাথে সাথে দৌড়ে তার তাঁবু পর্যন্ত গেল। ভেতরে ঢুকে সে দেখল জর্ডন তাঁবুর মাঝখানে গালিচার উপর আসন পেতে বসে একটা ক্যান থেকে খাবার খাচ্ছে।

    ‘তোমার চেহারা জঘন্য দেখাচ্ছে, ভূবিজ্ঞানী উৎফুল্ল স্বরে বলল।

    কেইন কোন রকমে হাসার চেষ্টা করল, তারপর তাবুর এক কোণে শোয়ার জন্য রাখা একটা খড়ের গাদির উপর শুয়ে পড়ল।

    জর্ডন কথা বলেই চলল, কিন্তু তার কোন কথার অর্থ সে বুঝতে পারছিল না। একটু পড়েই সে ঘুমিয়ে পড়ল।

    .

    ধীরে ধীরে ঘুম থেকে জেগে উঠে সে অন্ধকারে চেয়ে রইল। রাত হয়েছে, তার মাথার উপরে একটা খুঁটির উপর একটা তেলের বাতি ঝুলছে। এর আলোয় তাবুর মাঝখান থেকে ছায়াগুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।

    জর্ডন কাছেই বসে তার রিভলবার পরিষ্কার করছে। কেইনকে নড়াচড়া করতে দেখে তার মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠল। এখন কেমন লাগছে?

    ‘মনে হচ্ছে যেন এই পৃথিবীর বাইরে কোথাও রয়েছি,’ কোন রকমে বসে কেইন বলল।

    জর্ডন ওর হাতে একটা বোল দিল। নাও, এটা খেয়ে নাও।

    সে ভাত আর খাসির গোস্ত মুখে পুরতে লাগল, টের পেল তার বেশ খিদে পেয়েছিল।

    ‘আর কোন কিছু ঘটেছে?

    জর্ডন মাথা নাড়ল। কবরস্থানের মতো একদম নিরব। তুমি প্রায় আট ঘণ্টা ঘুমিয়েছো?’

    ‘আমাদের বন্ধুরা কি চলে গেছে?

    ‘ওরা ক্যাম্পের অন্য পাশে ছিল। আমার ধারণা বুড়ো শেখ এভাবেই বন্দোবস্ত করেছে। প্রায় দু’ঘন্টা আগে আমি ওদের গাড়ি চালিয়ে যাবার শব্দ পেয়েছি। তোমার কী মনে হয়, এখন ওরা কোথায় যাবে?

    কেইন কাঁধ ঝাঁকাল। সোজা দাহরান যাবে। আমরা কর্তৃপক্ষকে কিছু জানাবার আগেই কেটে পড়বে।’

    ‘তুমি কি ওদের থামাতে চেষ্টা করবে?

    কেইন মাথা নাড়ল। মনে হয় না। ওরা চলে গেলেই আমি খুশি। এখানে ওদের কাজ কারবার শেষ। সে উঠে দাঁড়িয়ে আড়মোড়া ভাঙলো। চল মাহমুদের সাথে দেখা করি।’

    ওরা দেখল বুড়ো শেখ ওর তাঁবুতে আগুনের সামনে একটা ছাগলের চামড়ার আসনের উপর বসে টার্কিশ সিগারেট টানছে। চোখ আগুনের শিখার দিকে।

    সে মৃদু হেসে ওদেরকে স্বাগত জানাল। তাহলে আমার বন্ধু সুস্থ হয়েছ? সে কেইনকে বলল।

    কেইন তার পাশেই বসে পড়ল। তাহলে স্কিরোজ আর মুলার চলে গেছে?”

    মাহমুদ মাথা কাত করল। আমি ওদেরকে কথা দিয়েছিলাম তোমাকে এখানে একদিন ধরে রাখবো। এতটুকু ওদের জন্য আমার করার কথা।

    ‘স্কিরোজ একজন জার্মান, কেইন বলল। তার মতো একজন লোকের সাথে কাজকারবার করা কি বুদ্ধিমানের কাজ?

    মাহমুদ মৃদু হাসল। তোমার বন্ধু একটা আমেরিকান তেল কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করছে? যদি সে তেল পায় তাহলে কতদিনে আমরা তথাকথিত আমেরিকান সাহায্য পাবো?

    ‘সেটা কি খুব একটা খারাপ হবে? জর্ডন বলল।

    মাহমুদ কাঁধ ঝাঁকাল। ওমানে ব্রিটিশরা আছে, ওরা ওদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। এখানে আমরা নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করব। আর যদি জার্মানরা বোকার মতো আমাদের বিনা মূল্যে অস্ত্র দেয় সেটা আমরা নেবো।

    কিন্তু সীমান্তের বেশিরভাগ উপজাতি গোষ্ঠি ঐ অস্ত্র দিয়ে ওমানে ব্রিটিশদের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে, কেইন বলল। আর জার্মানরা এটাই দেখতে চায়।’

    বুড়ো কাধ ঝাঁকাল। সেটা আমার দেখার বিষয় নয়।’

    বোঝা গেল এই বিষয়ে আর কোন কথা বলে লাভ নেই। তাই কেইন বিষয় পরিবর্তন করল। আমি কি ঐ মেয়েটার সাথে দেখা করতে পারি?

    মাহমুদ মাথা নাড়ল। সে তাবুতে পাহারায় আছে। আমি নিজে তোমাকে সেখানে নিয়ে যাবো। ওদেরকে নিয়ে তাবু থেকে বের হবার সময় সে বলল। ‘তুমি যদি একজন বৃদ্ধ লোকের উপদেশ শুনতে চাও, তবে আমি বলবো দাহরান যাবার পর সাবধানে থেকো। স্কিরোজ কখনো ভুলবে না তুমি তার যা করেছ।’

    মেরি পেরেটের তাঁবুর সামনে পৌঁছে সে একটু থামল। দরজার পাশেই ছায়ায় প্রহরি পা ভাজ করে বসে রয়েছে। তার মাথা বুকের উপর ঝুলছে। মাহমুদ বিরক্ত হয়ে সামনে এগিয়ে এক পা দিয়ে লোকটার গায়ে খোঁচা দিল।

    লোকটা ঘাড় কাত করে সামনে বালতে গড়িয়ে পড়ল। সে তখনো জীবিত, তবে বাম কানের কাছে ঘাড়ে রক্ত দেখা যাচ্ছে। ভারি আঘাতের চিহ্ন।

    তাবুতে ঢুকে কেইন দেখল ভেতরে কোন ধরনের ধস্তাধস্তি বা সংঘর্ষের আলামত নেই, তবে মেরিও সেখানে নেই। সে মাহমুদের দিকে ফিরে বলল। ‘ওরা তাকে ওদের সাথে নিয়ে গেছে।’

    ‘কিন্তু কেন?’ জর্ডন বলল।

    ‘এ দেশ থেকে নিরাপদে বের হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ওকে জিম্মি হিসেবে ব্যবহার করবে কিংবা আমার উপর একটা আঘাত দিল আর কি।’ কেইন কাঁধ ঝকাল। কারণটা জুরুরি নয়।’

    মাহমুদ তার বাহু স্পর্শ করল, বুড়ো শেখের চোখে দুঃখের ছায়া ভেসে উঠল। আমি লজ্জিত যে এরকম একটা ঘটনা আমার ক্যাম্পে ঘটল। ওদেরকে কথা দিয়েছিলাম তোমাকে একটা দিন আটকে রাখবো, এই ঘটনার পর এই প্রতিশ্রুতি থেকে আমি মুক্ত।

    কেইন বলল, কারও দোষ নেই। তবে আমাদের এখুনি রওয়ানা হতে হবে। জামাল কোথায়?’

    ‘সে আমার দেহরক্ষীর সাথে ঘুমিয়েছিল, মাহমুদ বলল। আমি এখুনি তাকে তোমার কাছে পাঠাচ্ছি।’ সে তার তাঁবুর দিকে হাঁটতে শুরু করল। এদিকে কেইন আর জর্ডন তাড়াতাড়ি ওদের ট্রাকের দিকে এগোলো।

    কানিংহামদের কী হবে? জর্ডন জিজ্ঞেস করল।

    কেইন কাঁধে ঝাঁকি দিল। আপাতত ওরা নিজেরাই নিজেদের সামলাবে। এ ব্যাপারটা বেশি জরুরি।’

    সে একটা সিগারেট ধরিয়ে পরিস্থিতিটা নিয়ে ভাবতে শুরু করল, এদিকে জর্ডন সবকিছু চালু আছে কিনা দেখে নিল। মাটির রাস্তায় এখান থেকে দাহরানের দূরত্ব প্রায় একশো বিশ মাইল, আবার জায়গায় জায়গায় রাস্তার অবস্থা বেশ খারাপ। স্কিরোজ আর মুলার দু’ঘন্টা আগে রওয়ানা দিয়েছে। যদি পথে কোথাও ওদের গাড়ি বিকল না হয়ে থাকে তাহলে দাহরানের আগে ওদেরকে ধরা অসম্ভব।

    জামাল অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এল, পিছু পিছু মাহমুদ তার কয়েকজন লোকসহ এল। জামাল পিছনের সিটে বসল আর জর্ডন চালকের আসনে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল।

    ইঞ্জিন গর্জে উঠতেই মাহমুদ একটু সামনে ঝুঁকে কেইনের হাত ধরল। সবই আল্লাহর ইচ্ছা, বন্ধু।

    পরে আবার দেখা হবে,’ কেইন বলল। জর্ডন গিয়ার বদল করতেই ট্রাকটা ধুলি উড়িয়ে এগিয়ে চলল।

    প্রথম এক ঘণ্টা ওরা পাহাড়ের মধ্য দিয়ে একটা পুরোনো উট চলার পথ দিয়ে চলল। জর্ডন অন্ধকারে সাবধানে নজর রেখে গাড়ি চালাচ্ছিল। অনেক সময় হেডলাইটের আলোয় কোন পাথর কিংবা অন্য কোন বাঁধা চোখে পড়তেই সাথে সাথে স্টিয়ারিং হুইল ঘুরিয়ে চলছিল।

    কেইন পাশের সিটে হেলান দিয়ে রয়েছে, দাঁতের ফাঁকে জর্ডনের সিগারেট প্যাকেট থেকে নেওয়া একটা সিগারেট কামড়ে ধরে রয়েছে। অনেকক্ষণ ঘুমালেও সে তখনো ক্লান্ত ছিল, কিন্তু মনের ভেতরের কোন এক জায়গা থেকে সে গোপন কোন শক্তির উৎস খুঁজে পেয়েছে। রহস্যজনক কোন এক শক্তি–যা তাকে জাগ্রত রেখেছে তার কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য।

    এক ঘণ্টা চলার পর সাগরের তীর থেকে বয়ে আসা জোর বাতাস পাহাড়ের মধ্য দিয়ে এসে সামনের মেঘের পর্দাটা সরিয়ে দিল। পূর্ণিমার চাঁদ উদয় হল। চাঁদের আলোয় উপত্যকার মধ্য দিয়ে ওদের পথ আলোকিত হলো।

    এবার সামনের পথ পরিষ্কার দেখা যাওয়ায় জর্ডন স্পিড বাড়িয়ে দিল। শুষ্ক উপত্যকার মাঝে শক্ত মাটির উপর দিয়ে বড় বড় বোল্ডার পাশ কাটিয়ে ওরা-গাড়ি ছুটিয়ে চলল।

    ঘণ্টাখানেক পর ওরা মানুষের হাতে তৈরি একটা পথে এল। পাহাড়ের এক পাশ দিয়ে কেটে তৈরি করা এবড়ো থেবড়ো রাস্তাটায় ছোট ছোট খোয়া ছড়ানো।

    জর্ডন গিয়ার বদল করে আরো স্পিড বাড়াতেই পেছন থেকে একটা বিকট আওয়াজ এল। আর ট্রাকটা বিপজ্জনকভাবে রাস্তার এক পাশে কাত হয়ে পড়ল।

    জর্ডন ইঞ্জিন বন্ধ করে ধুত্তরি’ বলে উঠল। “চাকার হাওয়া গেছে। এই অভিশপ্ত রাস্তায় বেশ কয়েকবারই যাওয়ার কথা।

    দশ মিনিটের মধ্যে ওরা চাকা বদলে আবার রওয়ানা দিল। তবে এবার কেইন চালকের আসনে বসল। ওর সামনে কী আছে তা ভাবার মতো অবস্থা এখন আর নেই। সে এখন পুরোপুরি মনোযোগ দিল রাস্তার দিকে। ট্রাক আর সামনে রাস্তা ছাড়া আর কোন কিছু এখন তার মনে নেই। পাহাড়ের পাশ দিয়ে একেবেঁকে ওরা নেমে চলেছে সমুদ্রতীরের দিকে।

    এই মনোযোগ সে রাখতে পারবে কী পারবে না সে প্রশ্ন ওঠার কোন সুযোগ নেই। মাইলের পর মাইল সে হুইলের পেছনে বসে ট্রাক চালাচ্ছে। ওর হাতের ঘামে হুইল ভিজে গেছে। তিনঘণ্টা পর ওরা সেই বিশাল উপত্যকায় পৌঁছলো যা সাগরের দিকে চলে গেছে।

    .

    ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেইন আর জর্ডন কোন কথা বলেনি। এবার দাহরান নজরে আসতেই কেইন বলল, ক’টা বেজেছে?

    জর্ডন ঘড়ির দিকে তাকাল। প্রায় ভোর চারটে। তুমি কেমন বোধ করছো?

    কেইন বেশ কয়েকবার নিঃশ্বাস নিয়ে মাথা পরিষ্কার করল, তারপর ঘাড় কাত করল। আমি ঠিক আছি।’

    ‘এরপর আমরা কী করব? জর্ডন বলল।

    কেইন ভুরু কুঁচকালো। আমার মনে হয় ওরা হোটেলে যাবে না। মুলারের বাড়িতে যাবে। বাড়িটা নিরব এলাকায়।

    এরপর ট্রাকটা নিয়ে সে বিমানক্ষেত্রের পাশের রাস্তাটা ধরে এগিয়ে চলল। শহরতলির বাড়িগুলোর মধ্য দিয়ে ওয়াটার ফ্রন্টের দিকে চলল। চারধার নিরব।

    দাহরান পুরো অন্ধকার, সে হেডলাইট জ্বেলে সাবধানে আঁকাবাঁকা অলিগলির মাঝখান দিয়ে মুলারের বাড়ির দিকে এগিয়ে চলল।

    রাস্তার শেষ মাথায় পৌঁছে গাড়ি থামিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করল। এরপরের পথটুকু হেঁটে যাওয়াই ভাল।

    সাব-মেশিনগানটা হাতে নিয়ে সে সবাইকে সাবধানে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল। দেয়ালের মাঝে একটা দরজার উপর একটা ল্যাম্প ঝুলছে। আলোর নিচে দেখা গেল একটা ট্রাক পার্ক করা।

    জর্ডন এগিয়ে গাড়ির বনেটের উপরটা ছুঁয়ে দেখল। এটা তখনও গরম রয়েছে। বেশিক্ষণ হয়নি ওরা এসেছে।

    কেইন মাথা নাড়ল। জানি, আমরা বেশ তাড়াতাড়ি এসেছি।’

    দরজা তালাবন্ধ। এক মুহর্ত সে ইতস্তত করল। তারপর জামাল তার কাঁধ চুলো।

    কেইন ঘুরে দেখল জামাল দেয়ালে হেলান দিয়ে দুপা ফাঁক করে মাটিতে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেইন মেশিন-গানটা কাঁধে ঝুলিয়ে জামালের পিঠে চড়লো। জামালের কাঁধে চড়তেই সে কেইনের দুই পায়ের গোড়ালির বাট ধরে তাকে উপরের দিকে ঠেলে তুলল।

    কেইন দেয়ালের উপর ওঠে লাফ দিয়ে ভেতরে বাগানে নেমে পড়ল। বাড়ির ভেতরে আলো দেখা যাচ্ছে। সে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে উপরে জানালার দিকে তাকাল। তারপর দ্রুত দরজার দিকে এগিয়ে দরজার তালা খুলল। এক মুহূর্ত পর জামাল আর জর্ডন ওর পাশে এসে দাঁড়াল।

    কেইন দরজার তালা বন্ধ করে চাবিটা পকেটে ভরলো। তারপর ওরা অন্ধকারের মধ্য দিয়ে বাড়িটার দিকে এগোলো।

    .

    ১৮.

    বাগান নিস্তব্ধ। সামনের দরজা থেকে কয়েকগজ দূরে একটা ঝোঁপের পেছনে কেইন হামাগুড়ি দিয়ে বসল। তারপর জর্ডন আর জামালকে পেছনে নিয়ে ছায়া থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে বারান্দায় উঠল।

    সামান্য ছোঁয়াতেই দরজা খুলে গেল, কেইন সাব-মেশিনগান রেডি করে ভেতরে ঢুকল। আলো জ্বলছে আর দোতলা থেকে অস্পষ্ট নড়াচড়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।

    সে ঘুরে জর্ডনের সাথে কথা বলতে যাবে এমন সময় হলের এক প্রান্তে ক্লিক করে একটা দরজা খুলে গেল। একটা সুটকেস হাতে সাদা আলখাল্লা পরা একজন আরব পরিচারক ঘরে ঢুকল। ওদের দেখার সাথে সাথে তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। সে কোন চিৎকার করার আগেই জামাল তড়িৎ গতিতে সামনে এগিয়ে লোকটার চোয়ালে প্রচণ্ড একটা ঘুসি মারল। টু শব্দ না করে লোকটার। দেহ মাটিতে ঢলে পড়ল। সুটকেসটা হাত থেকে খসে পড়ল।

    উপর থেকে চিৎকার শোনা গেল। মুলার সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে হাজির হলো। ‘জলদি কর!’ সে চেঁচিয়ে উঠল আর তখনই কেইনকে দেখতে পেল।

    পকেট থেকে একটা লুগার রিভলবার বের করে সে আন্দাজে একটা গুলি ছুঁড়লো। গুলিটা দেয়ালে লেগে ছিটকে পড়ল। সাথে সাথে ওরা সবাই মাথা বাঁচাতে বসে পড়ল। মুলার পেছন ফিরে ওর স্টাডিতে ঢুকে দড়াম করে দরজাটা বন্ধ করে দিল।

    কেইন সাবধানে পা টিপে টিপে ল্যান্ডিংয়ে উঠে দেয়ালে পিঠ দিয়ে দাঁড়াল। তারপর দ্রুত এগিয়ে দরজাটা খুলতে চেষ্টা করল। তালাবন্ধ। জামাল আর জর্ডন এসে অন্যপাশে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল, কিন্তু মুলারের কোন সাড়া পাওয়া গেল না।

    কেইন জামালের দিকে তাকিয়ে মাথা কাত করল। জামাল নিঃশব্দে এগিয়ে দরজার তালার উপর এক রাউন্ড গুলি ছুঁড়লো। দরজার তালা ছিন্নভিন্ন। হয়ে যেতেই সে এক লাথি মেরে দরজাটা খুলে ফেলল। তারপর একলাফ দেয়ালের আড়ালে আশ্রয় নিল। কিন্তু তবুও মুলারের কোন সাড়া নেই। এক মুহূর্ত পর কেইন কামরার চারপাশে উঁকি দিল। সব খালি আর দূরের দেয়ালে একটা দরজা হা করে খোলা।

    এদিক দিয়ে পেছনের একটা সিঁড়ি নিচে নেমে গেছে। কেইন সবাইকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল, সাবধানে নিচে অন্ধকারে নামল। নিচের দরজাটা বন্ধ। ঠেলা দিতেই দরজা খুলে গেল, ওরা বাগানে এসেছে।

    ‘তোমার কি মনে হয় সে এখনো সেখানে আছে?’ জর্ডন ফিসফিস করল।

    কেইন মাথা নাড়ল। থাকতেই হবে। আমি তালা বন্ধ করেছি। আর সে এতো বেঁটে যে কারও সাহায্য ছাড়া দেয়াল টপকাতে পারবে না।’

    ঝোঁপের মধ্য থেকে একটা বুলেট শই শাই করে এসে ওদের কয়েক ফুট দূরে দেয়ালে ধাক্কা মারল। ওরা নিচু হলো, জামালও ওদের পাশে এলো।

    ‘বোকার মতো কাজ করো না মুলার,’ কেইন বলে উঠল। আমরা এখানে তিনজন আছি আর সবার হাতে বন্দুক আছে। তুমি কিছুই করতে পারবে না।’

    অযাচিত শব্দে বিরক্ত হয়ে কোথাও একটা পাখি ঝোঁপের মাঝ থেকে উড়ে গেল। আর ছাদের কিনারায় রোজ রাতে যে কবুতরগুলো থাকতে আসে সেগুলো ঝটাপটি করে উঠল।

    ‘আমরা বরং দুদিকে চলে যাই,’ কেইন মৃদু কণ্ঠে জর্ডনকে বলল। এভাবে বসে থেকে কোন কাজ হবে না। আর দোহাই লাগে উল্টোপাল্টা গুলি ছুঁড়তে যেয়োনা। হয়তো মুলারের বদলে আমাকেই মেরে বসবে।’

    জর্ডন দাঁত বের করে হাসল।ঠিক আছে, আমি সাবধান থাকব।’

    জামাল ডানদিকে এগোলোলা আর কেইন সামনের দিকে ক্রল করে এগোতে শুরু করল। শিশির পড়ে মাটি ভেজা ছিল। সে একটা ডুমুর গাছের ছায়ার মাঝে উঠে দাঁড়াল। কান পেতে কোন শব্দ শুনতে চেষ্টা করল। তারপর আবার একটা বন্দুক ছোঁড়ার শব্দ পাওয়া গেল আর জর্ডন চেঁচিয়ে উঠল। সে গেটের দিকে যাচ্ছে কেইন! ওকে আটকাও!

    কেইন দ্রুত সামনে এগিয়ে পথের উপর এসে দাঁড়াল। মুলার ওর বিশ কি ত্রিশ ফুট দূরে এসে হাজির হল। সে দৌড়ে গেটের কাছে গিয়ে গেটটা খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হল। এদিকে জর্ডনও বের হয়ে কেইনের পাশে দাঁড়াল।

    মুলার ওদের দিকে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াল। তার চেহারায় হতাশা ফুটে উঠেছে। সে তার ডান উরুর সাথে লুগারটা চেপে ধরে রেখেছে। কেইন সাব মেশিনগানটা তুলে ধরল। কোন বোকামি করো না।

    কিন্তু মুলার লুগারটা উঠিয়েই গুলি ছুড়লো। জর্ডন দম বন্ধ করে এক পাশে কেইনের গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। মুলার আবার লুগারটা উঁচু করতেই জামাল ঝোঁপের মধ্য থেকে বের হয়ে সাব-মেশিনগান থেকে এক রাউন্ড গুলি ছুড়লো। গুলির ধাক্কায় মুলার গেটের গা ঘেষে পড়ে গেল।

    যন্ত্রণায় জর্ডনের মুখ কুঁচকে রয়েছে আর কেইন ওকে ধরে বসাতেই জর্ডনের ক্ষত থেকে ওর হাতে রক্ত চুঁইয়ে পড়ল। সে জামালকে ডাকল। জামাল জর্ডনকে পাঁজাকোলে করে ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল।

    কেইনও পিছু পিছু যাবে, এমন সময় মুলারের গোঙানি শোনা গেল। একটু ইতস্তত করে সে গেটের কাছে গিয়ে মুলারের পাশে হাঁটু গেড়ে বসল। মুলারের চোখ খোলা, সে যন্ত্রণায় কাতড়াচ্ছে। বুকটা গুলিতে ঝাঁঝড়া হয়ে গেছে।

    কেইন নিচু হয়ে ওকে বলল, ‘মুলার শুনতে পাচ্ছো? আর সবাই কোথায়?

    সে বৃথা সময় নষ্ট করল। মুলারের চোখ উল্টে গেল আর মুখ থেকে রক্ত বের হয়ে এল। মাথা এক পাশে হেলে পড়ল, তারপর সে স্থির হয়ে গেল।

    কেইন এক মুহূর্ত একটু চিন্তা করল, তারপর মৃতদেহটা পথ থেকে সরিয়ে ঝোঁপের মাঝে টেনে নিয়ে গেল। তারপর গেটের তালা খুলে আবার বাড়ির দিকে ফিরে চলল।

    জামাল জর্ডনের শার্ট খুলে ফেলেছিল। বুলেট তার বুকের নিচে বামদিকে জখম করেছে। তবে পরীক্ষা করে বোঝা গেল বুলেটটা পাজরের একটা হাড়ে লেগে সরে গেছে। মাংসে একটা গভীর ফুটো হয়ে সেখান থেকে রক্ত ঝড়ছে। এছাড়া বিপজ্জনক আর কিছু হয়নি।

    জামাল শার্টটা ফালি ফালি করে ছিঁড়ে দ্রুত ক্ষতটায় একটা ব্যান্ডেজ বাঁধল। জর্ডন তখন চোখ মেলল। আমার জন্য চিন্তা করো না,’ সে বলল। ‘তোমরা স্কিরোজের পেছনে যাও।’

    ‘আগে তোমাকে ডাক্তারের কাছে দিয়ে তারপর যাবো, কেইন বলল।

    জামাল তাকে কোলে তুলে নিতেই ভূতত্ত্ববিদ জ্ঞান হারালো। কেইন পথ দেখিয়ে বাগান পেরিয়ে ট্রাকের কাছে পৌঁছলো।

    যেতে যেতে ওরা দেখল আশেপাশের সব বাড়িঘর নিরব, তখন কেইন ভাবলো ভাগ্য ভালো যে দাহরানে রাতের বেলা বন্দুকের গুলির শব্দ এমন কিছু নয় যে মানুষ জেগে উঠবে।

    সে হোটেলের সামনে এসে থামল আর জামাল ওর পিছু পিছু জর্ডনকে কোলে তুলে নিয়ে এল। বারান্দায় কেউ নেই, শুধু একজন ভারতীয় কেরানি ডেস্কের পেছনে বসে দুলছে। কেইন তার কাঁধ ঝাঁকিয়ে জাগাল।

    ‘স্কিরোজ কোথায়?

    লোকটা দুদিকে দুহাত ছড়ালো। উনি দূরে গেছেন সাহেব। কয়েকদিন ধরে তিনি বাইরে আছেন।’

    কেইন বুঝতে পারল লোকটা মিথ্যা বলছে। তবে এ মুহূর্তে ছেড়ে দিল। ‘ডাক্তার হামিদ কি এখনো এখানে থাকেন?

    কেরানি মাথা নাড়তেই কেইন বলল, দোতলার একটা কামরার চাবি দাও আর ডাক্তারকে ঘুম থেকে তোল। তাকে বল খুব জরুরি দরকার।’

    কেরানি ডেস্ক ঘুরে এসে তার হাতে একটা চাবি দিল তারপর ওদের আগে আগে উপর তলায় চলে গেল। কেইন চাবির নম্বরটা দেখে কামরাটা খুঁজে বের করে দরজা খুলল।

    জামাল জর্ডনকে অত্যন্ত যত্নসহকারে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। জর্ডনের সারা মুখ ঘামে ভিজে গেছে, কেইন উদ্বিগ্ন হয়ে ওর দিকে তাকাতেই দরজা খুলে গেল। লম্বাটে মুখের একজন আরব ভেতরে ঢুকল। তার পরনে ড্রেসিং গাউন আর হাতে একটা কালো ব্যাগ। সে কেইনের দিকে একবার মাথা নেড়ে তাকে সরিয়ে জর্ডনের দিকে ঝুঁকে তাকাল।

    তারপর সোজা হয়ে তার ব্যাগটা খুলল। দেখতে যত খারাপ মনে হচ্ছে সেরকম নয়, পরিষ্কার ইংরেজিতে সে বলল। যদিও তার ভাগ্য ভাল বলতে হবে।

    ‘আমি তাকে আপনার কাছে রেখে যাচ্ছি, কেইন বলল। পরে এসে দেখবো সে কেমন আছে।’

    ডাক্তার হামিদ অধৈর্য হয়ে মাথা নেড়ে তার কাজে লেগে পড়লেন। কেইন আর জামাল কামরা থেকে বের হয়ে গেল।

    নিচে নেমে ওরা দেখল কেরানি ডেস্কের পেছনে বসে একটা খবরের কাগজ পড়ছে। কেইন সামনে এগিয়ে ডেস্কে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল।

    লোকটা খবরের কাগজের উপর থেকে তার দিকে তাকিয়ে অনিশ্চয়তা নিয়ে মৃদু হাসল। আপনার জন্য আর কিছু করতে পারি, সাহিব?’

    ‘তুমি বলতে পারো স্কিরোজ কোথায় আছে, কেইন বলল।

    সে কাঁধ ঝাঁকাল। আমিতো আপনাকে আগেই বলেছি সাহিব, মিস্টার স্কিরোজকে আমি কয়েকদিন ধরে দেখিনি।

    ‘সাধারণত আমি একজন ধৈর্যশীল মানুষ, কেইন বলল। “তুমি আমাকে এমন এক রাতে ধরেছো যখন আমি কাজের মধ্যে নেই। এখন হয় তুমি আমাকে বল স্কিরোজ কোথায় আর নয়তো আমি আমার বন্ধুকে বলব তোমার হাত ভেঙে দিতে।

    কেরানি জামালের দিকে তাকাল তারপর ব্যথায় কুঁচকে উঠল। তার কোন দরকার হবে না সাহিব। সব কিছুরই একটা সীমা আছে–এমনকি বিশ্বস্ততারও। মিষ্টার স্কিরোজ এক ঘণ্টা আগে এখানে ছিলেন। তিনি তার অফিস থেকে অনেক কাগজপত্র আর সেফ থেকে অনেক টাকা নেন। আমাকে বলেন কিছুদিনের জন্য দূরে যাচ্ছেন। কেউ জিজ্ঞস করলে আমি যেন বলি আমি কিছুই জানি না।’

    ‘মেরি পেরেট কি তার সাথে ছিলেন?

    কেরানি মাথা নাড়ল। তিনি দুটো টেলিফোন করলেন, ব্যস এই।’

    কেইন সুইচবোর্ডের দিকে একবার তাকিয়ে মৃদু হাসল। তুমি নিশ্চয়ই শুনেছ তিনি কোথায় কথা বলেছেন।

    কেরানি কাঁধ ঝাঁকাল। প্রথমটা ছিল প্রফেসর মুলারকে। মিষ্টার স্কিরোজ তাকে তাড়াতাড়ি করতে বললেন। তিনি জানালেন সব কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছে।

    ‘আর দ্বিতীয়টা?

    দ্বিতীয়টা ছিল কাস্টম চিফ, ক্যাপ্টেন গনজালেসকে। মিষ্টার স্কিরোজ তাকে বললেন খুব দ্রুত তার কাছে আসতে, আর তার কাছে যত টাকা আছে। সব নিয়ে আসতে।

    ‘তিনি কি এসেছিলেন?

    ‘তিনি বিশ মিনিট পরেই আসেন। খুব রেগেছিলেন, সাহিব। কিন্তু মিষ্টার স্কিরোজ তাকে ভয় দেখালেন।

    “কি ব্যাপারে?’ কেইন বলল।

    কেরানি মাথা নাড়ল। আমি ঠিক নিশ্চিত নই, সাহিব। তবে কথা শুনে মনে হচ্ছিল ওরা দুজন কোন ব্যবসায় অংশীদার ছিলেন।

    কেইন এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়াল, তার ভুরু কুঁচকে উঠল। তারপর জামালের দিকে মাথা কাত করে হল পেরিয়ে বাইরে রাস্তার দিকে চলে গেল।

    ওয়াটারফ্রন্ট দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনেক কিছুই তার মনে পরিষ্কার হলো। কানিংহামের এখানে আসার ব্যাপারে স্কিরোজ যে জানে, সেটা তার অস্বীকার করাটা বোধগম্য, তবে গনজালেস তাকে দেখেনি সে কথাটা সহজে বোঝা যায়নি। কাস্টম চিফ অলস আর দায়িত্বে অবহেলা করলেও, এ শহরের প্রতিটা ভিখারি তার স্পাই। এখানে খুব কম ঘটনাই ঘটে যা সে জানে না।

    আর এতো দিন যে কেইন স্কিরোজের জন্য দাহরানে কারেন্সি বয়ে এনেছিল? গনজালেস একবারও তার বোট পরীক্ষা করেনি। স্বভাবতই স্কিরোজ তার সাথে বন্দোবস্ত করে রেখেছিল, তাই তারা কেইনকে আস্থায় নেওয়াটা প্রয়োজন মনে করে নি।

    ওরা কাষ্টম চিফের বাসায় পৌঁছাল। কেইন খুব জোরে বেলের চেইন ধরে টানল। কিছুক্ষণ পর ওপাশে নড়াচড়ার আভাস পাওয়া গেল। গনজালেস গ্রিলের মধ্য দিয়ে তাকাল।

    সে বলল, কে ওখানে?

    কেইন বলল, “আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। খুব জরুরি।’

    গজগজ করে গনজালেস দরজার চেইন খুলল। একটুখানি খুলতেই জামাল এক লাথিতে দরজাটা সম্পূর্ণ খুলে দেয়ালের সাথে ধাক্কা লাগালো।

    কেইন গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখল গনজালেস মাটিতে চিৎ হয়ে পড়ে রয়েছে। সে রেগে বলল, এর মানে কী?

    কেইন তাকে টেনে তুলে দাঁড় করাল, তারপর কাছে টানল। স্কিরোজ কোথায়?

    তার মুখে ভয়ের ছায়া দেখা গেল। তারপরও শাসানির ভঙ্গিতে বলে উঠল, ‘তার আমি কি জানি?

    কেইন তাকে এক হাতে ধরে জামালের দিকে ফিরল। সে পরিষ্কার আরবিতে বলল, এই কুকুর জানে কোথায় মিস পেরেটকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। ওকে জানাতে বল।

    জামাল তার বিশাল হাত বাড়িয়ে গনজালেসের কাঁধের চারপাশে শক্ত করে দুই হাত বাঁধল। এক সেকেন্ড পর তার বিশাল হাঁটুর উপর গনজালেসের পিঠ বাকা করে শোয়াল। সে একবার চিৎকার করে উঠতেই কেইন সামনে এগিয়ে জামালের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল।

    জামাল হাতের চাপ কমাতেই, গনজালেস এক হাত সোজা করে কেইনের দিকে চেয়ে অনুরোধ করল, “এই কালো শয়তানকে বল আমাকে ছেড়ে দিতে।’

    কেইন কর্কশ কণ্ঠে বলল, যতক্ষণ না তুমি আমাকে জানাও, যা আমি জানতে চাই, তার আগে নয়।’

    গনজালেস বলল, “স্কিরোজ আর মেয়েটা সেলিমের ধাউ ফারাহ’তে আছে। ওরা ভোরের জোয়ারের সময় চলে যাবে।

    কেইন জামালকে ইশারা করতেই সে কাষ্টমস চিফকে মাটিতে ফেলে দিল। সে মাটিতে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগল।

    .

    কেইন দ্রুত ওয়াটারফ্রন্ট ধরে এগিয়ে জেটির দিকে মোড় ঘুরল। বেশ কয়েকটা ধাউ তীরে বাঁধা রয়েছে, কিন্তু ফারাহকে দেখা যাচ্ছে না। এক মুহূর্ত তার মনে আতংক ভর করল। আর ঠিক তখনই জামাল তার কাঁধ ছুঁয়ে সাগরের দিকে আঙুল তুলে দেখাল। ফারাহ বন্দরের মাঝখানে নোঙর করা রয়েছে। আশে পাশে আর কোন নৌকা নোঙর করা নেই। চাঁদের আলোয় সাগরের পানি রূপালি রং ধারণ করেছে।

    বোটে করে এগোলে কারো না কারো চোখে পড়ার সম্ভাবনা অবশ্যই রয়েছে। ওরা নিচু হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে জেটির শেষ মাথার দিকে এগোলো। হালকা একটা শব্দ শুনে কেইন থামল।

    জেটির কিনারায় এগিয়ে উঁকি দিয়ে দেখল অন্ধকার ছায়ায় দুটো ধাউয়ের মাঝে একটা ডিঙি নৌকার উপর একজন আরব বসে আছে। সাহিব এসেছেন নাকি? আরবটা মৃদু স্বরে ডাকল।

    কেইন বুঝলো লোকটা ভুল করে তাকেই মূলার মনে করেছে। সে পেছন ফিরে লোহার সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে খুব চাপা স্বরে বলল, তোমার হাত বাড়িয়ে আমাকে ধরে নামতে সাহায্য করো।

    লোকটা সোজা হয়ে দাঁড়াতেই সে অর্ধেক ঘুরে তার তলপেটে একটা লাথি কষালো। লোকটা গুঙিয়ে নৌকার মাঝখানে পড়ে গেল। আর কেইন তার পাশে নামল।

    সে দ্রুত শার্ট খুলে ফেলল। ডেজার্ট বুটের ফিতা খুলতে খুলতেই জামাল তার পাশে নামল। জামাল তার পাশে আসন পেতে বসতেই কেইন দ্রুত তাকে প্ল্যানটা বুঝিয়ে বলল। তার বলা শেষ হতেই জামালের চেহারায় উদ্বিগ্ন ভাব দেখা গেল, তারপরও সে অনিচ্ছা নিয়ে ঘাড় কাত করল।

    কেইনের পরনে এখন শুধু খাকি প্যান্ট। সে আরব মাঝির বেল্ট থেকে ছুরিটা নিয়ে নিজের কোমরে গুজলো। তারপর পানিতে নামল। নিঃশব্দে শক্তিশালী বেষ্ট স্ট্রোক দিয়ে সাগরে সাঁতার কেটে চলল।

    নোঙর করা ধাউগুলোর ছায়া থেকে বের হয়ে চাঁদের আলোয় আলোকিত রূপালি পানির মাঝে পৌঁছার পর তার নিজেকে নগ্ন আর একা মনে হলো। সৌভাগ্যবশত সাগর থেকে বয়ে আসা মৃদু বাতাসে সাগরের পানিতে ছোট ছোট ঢেউ সৃষ্টি হয়ে তাকে লুকোতে সাহায্য করল।

    ফারাহর কাছে এগোতেই সে দেখল কাঁধে রাইফেল ঝুলিয়ে একজন নাবিক জাহাজের ডেকের মাথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। কেইন নিঃশব্দে পালের দড়ি বাঁধার খুঁটির নিচ দিয়ে সাঁতার কেটে এগিয়ে নোঙরের দড়ি শক্ত করে ধরে একটু বিশ্রাম নিল।

    এক মুহূর্ত পর সে এক হাতের উপর অন্য হাত রেখে উপরে উঠতে শুরু করল। পাহারারত নাবিকটা ডেকের অন্য পাশে দাঁড়িয়ে জেটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কেইন রেইল টপকে নিঃশব্দ পায়ে এগোলো।

    এক হাতের কানা দিয়ে সে লোকটার ঘাড়ে কারাতের কোপ মারল। টু শব্দটি না করে আরব লোকটা ডেকে লুটিয়ে পড়ল। কেইন রাইফেলটা তুলে পরীক্ষা করল, তারপর কাঠের সিঁড়ি বেয়ে জাহাজের নিচের দিকে নামল। ছায়ায় একটু থামল।

    জাহাজের নাবিকরা হোল্ডের এক ধারে রয়েছে, সে হ্যাঁচের মধ্যে উঁকি দিল। নিচে হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে আর কিছু রান্নার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সে রাইফেলটা নামিয়ে রাখল, তারপর ভারী স্টর্ম কভারটা হ্যাঁচের উপর রেখে ধাতব ব্রাকেটগুলো লাগিয়ে দিল।

    রাইফেলের দিকে হাত বাড়িয়ে উঠে দাঁড়াবে, এমন সময় পেছনে মৃদু শব্দ হলো। একটা রিভলবারের ঠাণ্ডা নল আস্তে তার ঘাড় ছুঁলো, স্কিরোজ বলে উঠল। খুব চমৎকার বন্ধু। প্রায় সেরে ফেলেছিলে কাজটা।’

    কেইন আস্তে আস্তে ঘুরল, জার্মান স্কিরোজ মৃদু হাসল। তাহলে বুড়ো মাহমুদ তোমাকে আটকে রাখবে বলে যে কথা দিয়েছিল, সে কথা রাখেনি।

    কেইন বলল, যখন সে জানতে পারল তুমি মেরিকে নিয়ে গেছ, তখন তুমি তার আরব সম্মানে আঘাত করেছ।’

    তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি মূলারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। মনে হয় সে আর আসবে না।

    কেইন বলল, না সে আর আসবে না।

    স্কিরোজ আবার মৃদু হাসল। এক দিক দিয়ে তুমি আমার উপকার করেছ। সে ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারতো। তুমি আমার আশা পূর্ণ করেছ।’

    কেইন শুকনো কণ্ঠে বলল, তা আমি বিশ্বাস করি।

    স্কিরোজ হ্যচের দিকে নির্দেশ করল। এখন তুমি আবার ওটা খুলে দাও। আমাদের যাত্রা দেরি করার আর কোন কারণ নেই।

    কেইন যথাসম্ভব ধীরে ধাতব ব্রাকেটগুলো খুলল। হ্যাঁচের ঢাকনিটা উপরে তুলতেই স্কিরোজ ডেকে উঠল, ‘সবাই ডেকে উঠে এসো!’

    নিচে থেকে আরব নাবিকগুলো উঠে এলো, তারা দলবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে কথা বলতে লাগল আর কেইনের দিকে শত্রুভাবাপন্ন দষ্টিতে তাকাল। স্কিরোজ ওদের মধ্য থেকে মেটকে সামনে আসতে বলল এবং তাকে জাহাজ ছাড়ার নির্দেশ দিল। তারপর কেইনকে ঠেলতে ঠেলতে সে জাহাজের পেছন দিকে নিয়ে চলল।

    পুপ-ডেকের নিচে ক্যাপ্টেনের কেবিনের দরজা খুলে সে কেইনকে ধাক্কা মেরে ভেতরে ঢোকালো। সেই রাতে এখানে আসার কথা কেইনের মনে পড়ল, যে রাতে সেলিমের লোক ওর উপর আক্রমণ করেছিল। কেবিনটা একইরকম দেখাচ্ছে। একটা নিচু পিতলের টেবিলের চারধারে মাদুর আর কুশন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা আছে। আর বিশাল স্টার্ণ জানালার নিচে একটা শোয়ার কাউচ সদ্য পেতে রাখা হয়েছে।

    স্কিরোজ টেবিলের অন্য পাশে দাঁড়িয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল–যদি আমি আর তুমি পরস্পরের বন্ধু হতাম।’

    কেইন বলল, তার কোন আশা নেই। তুমি শেষ হয়ে গেছ। কোন ব্যু হলো না, সুয়েজ খাল এখনো খোলা। এখন তোমার ফুয়েরার কী বলবে?

    তার মনে এখন অন্য চিন্তা চলছে। প্যানজার ডিভিশন গতকালই এগিয়েছে, বন্ধু। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে পোলান্ড শোচনীয় পরাজয়ের সম্মুখীন হচ্ছে।’

    কেইন বলল, “আমি জানতাম সেই যুদ্ধে জার্মানির পরাজয় হয়েছিল।

    স্কিরোজ রুষ্ট চেহারা নিয়ে বলল, “তবে এবার নয়।’

    ‘আমি জানি, এরপর সারা পৃথিবী জানবে। মেরিকে কী করেছ?

    স্কিরোজ তার সেই তেলতেলে কালো রঙের একটা চুরুট বের করে বেশ কসরত করে এক হাতে ধরাল। চুরুটের ধোয়া গলার ভেতরে ঢুকতেই খুক খুক করে কেশে উঠল। সত্যি এ ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ মজার মনে হচ্ছে। আমি কখনো ভাবিনি যে তুমি ভালোবাসা, রোমান্স এ ধরনের ব্যাপারে বিশ্বাস কর।

    সে পকেট থেকে একটা চাবি বের করে সামনে একটা ছোট দরজার দিকে এগোলো। তারপর দরজার তালা খুলে এক পাশে দাঁড়াল। মেরি বের হয়ে কামরায় ঢুকল।

    এক মুহূর্ত সে সেখানে হতবুদ্ধি আর বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর কেইনকে দেখেই সোজা তার দিকে ছুটে গেল।

    “সে তোমার কোন ক্ষতি করেছে? কেইন বলল।

    সে দুদিকে মাথা নাড়ল–না, কিন্তু তার কথাবার্তা তার মতোই জঘন্য।’

    স্কিরোজ হাসতে লাগল, তার বিশাল শরীরের সমস্ত মাংশপেশি নাচতে শুরু করল। আমি ভাবছি যখন তোমার এই বন্ধু উপসাগরের শার্কের খাবার হবে তখন তুমি কীভাবে কথা বলবে।’ সে রিভলবারের ঘোড়া বুড়ো আঙুল দিয়ে পেছনে টেনে কেইনের পেটের মাঝ বরাবর তাক করল।

    কেইন স্কিরোজের পেছনে তাকাল। খোলা জানালা দিয়ে নোঙরের মোটা দড়ির গোছাটার দিকে তার দৃষ্টি পড়ল। হঠাৎ সে লক্ষ করল কিছু একটা সেখানে নড়ছে, তারপর দুটো হাত জানালার দু’পাশে উদয় হলো। এক মুহূর্ত পর জামাল সাবধানে মাথা উঁচু করে কেবিনের ভেতরে উঁকি দিল।

    কেইন সর্বপ্রকারে চেষ্টা করল যাতে স্কিরোজ কথা চালিয়ে যায়। সে এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে গিট দেওয়া রুমালটা বের করল যার মধ্যে ছিল সেই নেকলেসটা, যেটা সে শেবার সমাধির পথে পেয়েছিল।

    রুমালের পুটুলিটা সে পিতলের কফি-টেবিলের উপর ছুঁড়ে ফেলল। তারপর শান্তস্বরে বলল, আমাকে মেরে ফেললে, তুমি জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করবে।’

    জার্মান স্কিরোজ ককভাবে হেসে উঠল–”ওসব চেষ্টা করে কোন লাভ নেই। এসব বলে তুমি নিজেকে বাঁচাতে পারবে না।

    কেইন রুমালটা তুলে গিটগুলো খুলতে শুরু করল। নিজ চোখে দ্যাখো। এটা শুধু একটা নমুনা। শেবার নেকলেস। আমরা এটা ঐ মন্দিরে পেয়েছি।’

    সে নেকলেসটা আলোয় মেলে ধরল। পান্নার দূতি সবুজ আগুনের মতো ফুটে উঠল।

    স্কিরোজের চোয়াল ঝুলে গেল আর তার চেহারায় বিস্ময় ফুটে উঠল-হলি মাদার অফ গড, এরকম রত্ন আমি জীবনে কখনো দেখিনি।’

    সে কেইনের হাত থেকে নেকলেসটা কেড়ে নিয়ে পরীক্ষা করতে লাগল। এক মুহূর্ত পর মুখ তুলে তাকাল। তার মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠল। ঠিক জায়গামতো এর আকাশচুম্বি দাম পাওয়া যাবে। তোমাকে ধন্যবাদ।

    এই পৃথিবীর বুকে এটাই ছিল তার শেষ কথা। সে হাসতে শুরু করল, তার আঙুল রিভলবারের ট্রিগারে চেপে বসতে শুরু করেছে। আর তখনই জামাল দুহাত বাড়িয়ে শোয়ার কৌচটা পার হয়ে এল।

    এক হাতে সে জার্মান লোকটার মুখ চেপে ধরল আর অন্য হাতে রিভলবারটা তার মুঠো থেকে ছিনিয়ে নিল। স্কিরোজ ছাড়া পাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু জামাল এক হাতে তার গলা পেঁচিয়ে ধরল। তারপর তার এক হাঁটুর উপর স্কিরোজকে পেছন দিকে বাঁকা করে চেপে ধরল।

    স্কিরোজের চোখে আতঙ্ক ফুটে উঠল, সে পাগলের মতো দুই পা ছুঁড়তে শুরু করল। শুকনো গাছের ডাল ভাঙ্গার মতো মট করে একটা শব্দ হলো, তারপর তার দেহ স্থির হয়ে গেল।

    আতঙ্কে মেরির দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা হলো যখন জামাল তাকে মাটিতে শুইয়ে রাখল। কেইন মাটি থেকে নেকলেসটা তুলে নিল। এমন সময় জাহাজের পেছনের নোঙরটা জানালা অতিক্রম করে উপরের দিকে উঠে গেল আর বিশাল পালে বাতাস লাগতেই ধাউটা সামনের দিকে এগিয়ে চলল।

    কেইন জানালার দিকে ইঙ্গিত করে জামালকে সামনে ঠেলা দিল–’জলদি কর, আর সময় নষ্ট করা যাবে না।

    জামাল প্রথমে তার পা বের করে জানালা গলে অদৃশ্য হলো। ধাউয়ের গতি ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে আর এটা বন্দরের প্রবেশ মুখের দিকে চলতে শুরু করেছে। কেইন মেরিকে জানালা দিয়ে বাইরে ঠেলে দিল।

    তারপর সে পেছনে একবার জার্মান লোকটার পড়ে থাকা দেহের দিকে তাকাল। মুখ এদিকে ফেরানো আর চোখ খোলা। তারপর কেইন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালা দিয়ে ঝাঁপ দিল।

    পানি থেকে ভেসে উঠে সে দেখল ধাউটা দূরে চলে গেছে। সে মেরির দিকে সাঁতার কেটে এগিয়ে চলল। চাঁদের আলোয় তাকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।

    মেরি পানিতে পা চালিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছিল। কাছে আসতেই সে কেইনের হাত ধরল, তারপর তারা কিছুক্ষণ সেভাবে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকল।

    ধাউটা তখন খোলা সাগরে অনেক দূরে ভেসে গেছে। সাগরের বাতাস পেয়ে পালটা ফুলে উঠেছে। আর কেইন মেরির দিকে তাকাল, তারপর কোন কারণ ছাড়াই ওরা হাসতে শুরু করল।

    সে বেশ শক্ত করে তার হাত ধরল, তারপর ওরা ঘুরে একসাথে ধীরে ধীরে সাঁতার কেটে সৈকতের দিকে চলল।

    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআমি রুশো বলছি : দি কনফেশানস – সরদার ফজলুল করিম
    Next Article মৃচ্ছকটিক – শূদ্রক (অনুবাদ – জ্যোতিভূষণ চাকী)
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.