Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শেষ অশুভ সংকেত – কাজী মাহবুব হোসেন

    গর্ডন ম্যাকগিল এক পাতা গল্প150 Mins Read0

    শেষ অশুভ সংকেত – ১১

    এগারো

    চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে চেয়ে আছে ম্যাটিয়াস। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো ফাদার ডি কার্লোর আকৃতিটা ছোট হতে হতে বিন্দুতে পরিণত হল। শেষবারের মত আর একবার হাত নেড়ে নিজের সিটে এসে বসল সে। ঘড়ি দেখল—দুপুর বারোটাও বাজেনি, কিন্তু এরই মধ্যে বড্ড পরিশ্রান্ত বোধ করছে। দুঃস্বপ্ন দেখে সারারাত এপাশ ওপাশ করেছে। ব্রাদারদের মধ্যেই কেউ বারবার তাকে জাগিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল সে অসুস্থ বোধ করছে কিনা। সায়মন, ভাবল সে, কিংবা মার্টিনও হতে পারে। আর স্বপ্নের মধ্যে কে যেন তাকে বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। মানুষের দেহ আর জন্তুর মাথাওয়ালা ব্রাদারটা কে ছিল?

    শেষ পর্যন্ত ওকে গভীর ঘুমে অচেতন দেখে সঙ্গীরা আর ওকে জাগায়নি। জেগে উঠে কাউকে না দেখে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিল সে। ফাদার তাকে অভয় দিয়ে বলেছিলেন আর সবাই আগেই চলে গেছে—এবার তার পালা।

    ট্রেনের সহযাত্রীদের দিকে আড়চোখে তাকাল ম্যাটিয়াস। হঠাৎ তার খেয়াল হল আজ সে সম্পূর্ণ একা। আশ্রমে ঢোকার পর এই প্রথম সে একা বাইরে বেরিয়েছে। সুবিয়াকোতে কয়েকবার কাজে গ্রামে যেতে হয়েছে বটে, কিন্তু প্রত্যেকবারই সাথে কেউ না কেউ ছিল।

    পাশে বসা লোকটা ব্রিফকেসের কাগজপত্র নিয়ে ব্যস্ত। কামরার অন্যদিকে একটা পরিবার লাঞ্চ খাচ্ছে। আরও সামনে রয়েছে দুটো মেয়ে। নির্লজ্জ! খোলামেলা জামাকাপড় পরেছে। গা দেখা যাচ্ছে।

    ক্যানভাসের ব্যাগটা কাছে টেনে নিয়ে আঁকড়ে ধরে আছে ম্যাটিয়াস লাইনিং-এর ভিতর দিয়ে ছুরির বাঁটটা অনুভব করতে পারছে। কেউ যদি ভুলে নিয়ে যায়? এই ভয়ে সিটের তলায় বা বাঙ্কের ওপর ওটা রাখতে সাহস হচ্ছে না। ব্যাগ ধরে ঘামছে সে। সময় মত ছুরিটা ব্যবহার করতে পারবে তো? মাংস আর হাড় ভেদ করে বাঁট পর্যন্ত ঢুকাতে পারবে? সহ্য করতে পারবে অন্তিম আর্তচিৎকার? নাহ্, দিবা স্বপ্ন দেখা ঠিক হচ্ছে না। সহযাত্রীরা কে কি করছে দেখায় মন দিল। কামরার সবখানেই ঘুরল তার চোখ, কিন্তু ওই মেয়ে দুটোকে এড়িয়ে গেল।

    ‘আমাকে একটা সুযোগ দিন,’ গত রোববারে অনুরোধ জানিয়েছিল সে। তাকে না পাঠিয়ে বেনিটোকে পাঠানো হয়েছিল—কিন্তু সে আর ফিরে আসেনি। এবার তার পালা। একটা অশুভ আশঙ্কায় শিউরে উঠল ম্যাটিয়াস। সাক্ষাৎ শয়তানের সাথে হাইড পার্কে চোখাচোখি হয়েছে তার। ভয়ঙ্কর সে চোখ—হলুদ, উন্মাদ, জন্তুর চোখের সেই দৃষ্টি যেন তার মাথা ভেদ করে খুলির পিছনে গিয়ে ঠেকছিল। তবু ভয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়নি সে।

    তুমি যেমন ওর মনের ভাব টের পেয়েছ, তেমনি সেও তোমারটা বুঝেছে, ‘ বলেছিলেন, ফাদার। ওই কথাগুলো থেকেই পরিকল্পনাটা ওর মাথায় আসে। পাপ—পুরুষ তাকে অনুসরণ করবে—তাকে বিপাকে ফেলে জানতে চাইবে শিশু যীশু কোথায় আছেন। ইচ্ছে করেই টোপ হয়েছে ম্যাটিয়াস। পুলক জাগছে, কিন্তু সেই সাথে আবার ভয়ও করছে।

    হয়ত এই ট্রেনেই ফার্স্ট ক্লাস কামরায় আছে থর্ন, ভাবল সে। কিন্তু না। নিজস্ব যাতায়াত ব্যবস্থা আছে তার—গাড়ি, হেলিকপ্টার, আরও কত কি। তাকে অনুসরণ করতে ডেমিয়েনের মোটেও বেগ পেতে হবে না। ম্যাটিয়াস আর তার সঙ্গীরাও তাই চায়।

    ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে পড়ায় মন দিতে চেষ্টা করল। ট্রেনটা রেডিং (Read।ng) হয়ে অক্সফোর্ড পৌঁছবার আগেই ঝিমাতে ঝিমাতে শেষে ঘুমিয়েই পড়ল সে। স্বপ্নের মড়াখেকো জন্তুগুলো আবার ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে। হাঁ করা মুখ দিয়ে গার্গল করার মত ‘গরগর’ শব্দ হচ্ছে। জেগে উঠে দেখল ইউনিফর্ম পরা একজন লোক উদ্বিগ্ন ভাবে ঝুঁকে ওকে দেখছে। সে সুস্থ বোধ করছে কিনা জিজ্ঞেস করল লোকটা। অন্যান্য যাত্রীরা সিট ছেড়ে দাঁড়িয়ে ওকে দেখছে। ক্ষমা চেয়ে মাথা ঝাঁকাল ম্যাটিয়াস। যাত্রীরা নিজের সিটে ফিরে গেল।

    এরপর গন্তব্যস্থলে পৌঁছান পর্যন্ত চোখ খোলা রাখল সে টের পাচ্ছে কৌতূহলী দৃষ্টিতে সবাই ওকে লক্ষ্য করছে!

    বিকেলের দিকে ট্রেন থেকে নেমে ওভারব্রিজ পার হয়ে অন্য প্ল্যাটফর্মে একটা ছোট ট্রেনে উঠে বসল ম্যাটিয়াস। পিছন ফিরে চেয়ে দেখল তার সাথে আর কেউ নামেনি। সে একাই ওই ট্রেনের যাত্রী।

    দ্বিতীয় যাত্রায় নীরবেই সময় কাটল তার। লোকাল ট্রেন—প্ৰতি স্টেশনেই থামল—কিন্তু কাউকে উঠতে বা নামতে দেখল না। নির্বিঘ্নে পৌঁছে গেল সে।

    প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরোবার পথে গেটে কাউকে না দেখে ব্যারিয়ারের পাশে টিকিটটা রেখে দিয়ে বেরিয়ে বাস স্টপে এসে দাঁড়াল। কোথাও কিছুই নড়ছে না—কেবল কয়েকটা কাক আকাশে উড়ছে। এছাড়া সবই স্থির। মোড় ঘুরে বাসটাকে আসতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল সে।

    ড্রাইভারের পাশ দিয়ে ঢুকে একেবারে পিছনের সিটের দিকে এগোল ম্যাটিয়াস। বাস ছেড়ে দিল। বাসটা রওনা হওয়ার সাথে সাথে সিকি মাইল পিছনে গলি থেকে একটা রেঞ্জ রোভার বেরিয়ে বড় রাস্তায় পড়ল। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে গাড়িটা। এবার ড্রাইভারকে চিনতে পারল ম্যাটিয়াস-দু’জন দু’জনের দিকে চোখেচোখে চেয়ে রইল। তারপরে গাড়িটা আবার পিছিয়ে দু’শো গজ দূরে থেকে বাসটাকে অনুসরণ করে চলল।

    বসে পড়ল ম্যাটিয়াস। ওর সারা শরীর উত্তেজনায় কাঁপছে। টোপ গিলেছে মাছ। বাসটা দু’বার থামল। দ্বিতীয় স্টপে যারা বাকি ছিল তারাও নেমে গেল। বাসে এখন ম্যাটিয়াস একা। আশেপাশে কোন খামার বাড়ি বা সরাইখানা আর দেখা যাচ্ছে না—চারদিকে নির্জন মাঠ। রাস্তায় আর কোন গাড়িও নেই আধ মাইল পিছনে রয়েছে রেঞ্জ রোভারটা।

    ব্যাগ থেকে ম্যাপটা বের করে দেখল ম্যাটিয়াস। আর বেশি দূর নয়—কাছেপিঠেই আছে তার সঙ্গীরা। ব্যাগে ওয়াকিটকি (টু ওয়ে রেডিও) রয়েছে। ইচ্ছা করলেই পরিচিত গলা শোনা যাবে—চাইলে ওদের সাথে কথাও বলা যাবে।

    ইঞ্জিনের সুর বদলে গেল। গিয়ার বদলে বাঁক নিয়ে বাসের গতি মন্থর করল ড্রাইভার। ঘুরে ম্যাটিয়াসের দিকে চেয়ে সে জানাল এটাই শেষ স্টপ। সমুদ্রের পাড় পর্যন্ত লম্বা হাঁটা পথ। ধন্যবাদ জানিয়ে নেমে পড়ল ম্যাটিয়াস। হাত-পাগুলো ধরে গেছে যেন একটানা বহুদিন যাত্রা করে কেটেছে। বাসটা ওকে নামিয়ে রেখে অদৃশ্য হল। রেঞ্জ রোভারটার জন্যে একটু অপেক্ষা করল। নেই। ওটার কোন সাড়াশব্দই আর পাওয়া যাচ্ছে না।

    কয়েকবার ম্যাপ চেক করার পর দূরে তারের বেড়া পার হওয়ার সিঁড়ি দেখতে পেয়ে খুশি হয়ে ওদিক রওনা হল। কয়েকটা ভেড়া ঘাস খাচ্ছে। ওকে এগোতে দেখে একবার মুখ তুলে চেয়ে আবার খাওয়ায় মন দিল। সিঁড়ির কাছাকাছি পৌঁছে গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দে ফিরে দেখল রেঞ্জ রোভারটাকে রাস্তার ওপর দেখা যাচ্ছে।

    ‘গুড,’ বলে হাঁটা পথ ধরে টিলাগুলোর দিকে এগোল সে। ট্রেন, বাস আর শহরের আবদ্ধ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে মুক্ত আকাশের নিচে হাঁটতে তার ভাল লাগছে।

    মাটিতে সাদা দাগ দেখে দাঁড়াল ম্যাটিয়াস। ব্যাগ থেকে ওয়াকিটকি বের করে বোতাম টিপল। ‘আধ কিলোমিটার দাগের থেকে ম্যাটিয়াস বলছি। আমার পাঁচশো গজ পিছনে উত্তর-পশ্চিমে আমাকে অনুসরণ করছে থর্ন। ওর পরনে রয়েছে একটা নীল অ্যানোরা…’ থামল সে। ‘ওভার।’

    ওদিক থেকে সাথে সাথেই সাড়া এল। ‘প্ল্যান মত এগোও। ওভার অ্যাণ্ড আউট।’

    .

    সারা পথ কুকুরটা একটুও নড়েনি। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে নীরবে পিছনের সিটে বসে ছিল। রেঞ্জ রোভারটা যখন রাস্তা ছেড়ে মাঠে নেমে এঁকেবেঁকে অসমান জমির ওপর দিয়ে চলতে শুরু করল তখনও স্থির ছিল। গাড়ি থামার পর দরজা খোলা হলে নিঃশব্দ পায়ে নামল সে। ওকে কোন নির্দেশ দেয়া হল না-নিঃশব্দেই আঁধারে মিলিয়ে গেল কুকুরটা। প্রতি পদক্ষেপে তার শিকারের দিকে এগিয়ে চলল।

    সময় হয়ে এসেছে। কবরস্থানে পৌঁছে গেছে ম্যাটিয়াস। উপর দিকে চেয়ে দেখল বিরাট চ্যাপেলটা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ওটার ভাঙা জানালা দিয়ে চাঁদ দেখা যাচ্ছে। কাজটার জন্যে সুন্দর জায়গা বেছে দিয়েছেন ফাদার। এখন ধ্বংসাবশেষ হলেও ঈশ্বরের ঘর তো বটে? অদ্ভুত তৃপ্তি বোধ করছে ম্যাটিয়াস। তার অংশ সে সম্পূর্ণ করেছে-বাকিটা এবার ওদের ওপর।

    সাবধানে কবরের পাথরগুলো পার হয়ে এগোচ্ছে। কিছু ভেঙে গেছে, কোনটা আবার বাঁকা হয়ে আছে। পাথরের ওপর লেখাগুলো পড়ার চেষ্টা করে দেখল অনেক শব্দই মুছে গেছে। একটা ভেড়া হঠাৎ ওকে সামনে দেখে ছুটে পালাল।

    বৃথাই ভয় পেয়েছিল ম্যাটিয়াস। পলায়নরত ভেড়াটার দিকে চেয়ে মুচকি হেসে ঘুরে রাতের দুঃস্বপ্নটাই আবার চোখের সামনে দেখতে পেল। নরকের মুখোমুখি হল সে…

    .

    সারা বিকেল অপেক্ষা করে আছে ওরা দু’জন। মামুলি কথা বলে নিজেদের সাহস বজায় রাখছে। যেন সাধারণ কথা বললে আর অসাধারণ ঘটনা ঘটার ভয় নেই।

    এতক্ষণে ম্যাটিয়াসের পৌঁছে যাবার কথা। মার্টিন আর পাওলো দু’জনেই বাইরে অন্ধকারের দিকে চেয়ে বসে আছে। একটা ভেড়ার ডাক আর সেই সাথে তার ছুটে পালানোর শব্দ ওদের কানে এসেছে। কিন্তু দেখতে পায়নি কিছুই।

    কপাটবিহীন জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে চট করে আবার দেয়ালের আড়ালে লুকাল মার্টিন। দেখতে পেয়েছে সে-ম্যাটিয়াসের বর্ণনা মতই নীল অ্যানোরাক রয়েছে ওর গায়ে। পাওলোর হাত ধরে টেনে নিয়ে আরও অন্ধকার একটা জায়গায় পিছিয়ে গেল।

    ওদের মাথার ওপর আকাশের তারা দেখা যাচ্ছে। চ্যাপেলের ছাদ নেই মেঘের আড়ালে ঢুকেছে চাঁদ। নিঃশব্দে প্রার্থনা সেরে ছুরি বের করে পাওলোর দিকে চেয়ে একবার মাথা ঝাঁকাল মার্টিন। উৎকণ্ঠায় শ্বাস নিতেও ভুলে গেছে ওরা।

    বাইরে নড়াচড়ার শব্দ শোনা গেল। উপরে ওঠার পর স্বভাবতই পরিশ্রান্ত থাকবে সে। অনেকদূর উঠতে হয়-প্রায় ষাট ফুট। জোরে জোরে শ্বাস টানার শব্দ শোনা যাচ্ছে। অন্ধকারের ভিতরও দরজা দিয়ে ঢোকার সময়ে ওর আকৃতিটা স্পষ্ট দেখা গেল। দেয়ালের সাথে সেঁটে ছুরি হাতে তৈরি হয়ে অপেক্ষা করছে পাওলো আর মার্টিন।

    পায়ে পায়ে বেদীর দিকে এগিয়ে গেল লোকটা। পাওলোই প্রথমে লাফ দিল। ছুরিটা তলোয়ার ধরা ভঙ্গিতে ডান হাতে নিচু করে ধরা। বাম হাতে গলা জড়িয়ে ধরে সমস্ত শক্তি দিয়ে ছুরিটা বিধিয়ে দিল ওর বুকে। পাঁজরের খাঁচায় ঢোকার সময়ে হাড়ে একটু বাধা পেল, কিন্তু তারপরেই সড়সড় করে বাঁট পর্যন্ত ঢুকে গেল ছুরি। রাতের আকাশ চিরে অন্তিম আর্তনাদ উঠবে এবার—কিন্তু কই? কোন শব্দ হল না—যেন একটা লাশকে ছুরি মেরেছে সে।

    মার্টিনও ওর পাশে পৌঁছে গেছে। চড়া তীক্ষ্ণ সুরে কি যেন বলে ছুরি তুলেই বসিয়ে দিল। পাওলোর মুখটা এক ইঞ্চির জন্যে বেঁচে গেল। অ্যানার্যাকের হুড়ে লেগে পিছলে ঘাড়ের কাছে মেরুদণ্ডে বিধল ছুরি।

    শিউরে উঠে ছুরি ছেড়ে পিছিয়ে গেল ওরা। আতঙ্কিত চোখে দেখল আর এক পা এগিয়ে হুমড়ি খেয়ে উপুড় হয়ে পড়ল দেহটা। বাড়ি খেয়ে নাক ভাঙার একটা মৃদু ভোঁতা আওয়াজ হল।

    এই মুহূর্ত নীরবে কাটল। একটু সামনে বেড়ে নিজের বুকে ক্রুশ চিহ্ন আঁকল পাওলো।

    ‘ইন নমিনে পার্টি,’ মৃদু শব্দে আউড়াল সে, ‘ই ফিলিআই, ই স্পিরিটাই স্যাঙ্কটাই…আমেন।’

    মেঘের আড়াল থেকে চাঁদটা আবার বেরিয়ে এসেছে। আগে বেড়ে দেহটাবে চিত করল মার্টিন। শূন্য দৃষ্টিতে ম্যাটিয়াস চেয়ে আছে ওর দিকে। কোটরের ভিতর চোখ দুটো উল্টে গেল—শুধু সাদা অংশটা দেখা যাচ্ছে।

    লাফিয়ে পিছিয়ে এল পাওলো আর মার্টিন। নিজেদের আলখাল্লায় হাতের রক্ত মুছে পরস্পরের দিকে চেয়ে আছে ওরা-ঠোট নড়ছে, কিন্তু কোন শব্দ বের হচ্ছে না।

    মুখ তুলে আকাশের দিকে চাইল পাওলো। ‘প্রিয় ত্রাণকর্তা,’ বলল সে। ‘পাপ পুরুষের হাত থেকে আমাদের রক্ষা কর…’

    একটা ‘গরগর’ শব্দ শুনে ফিরে চাইল পাওলো। মার্টিন আগেই ঘুরেছে। স্থির দৃষ্টিতে কুকুরটার চোখের দিকে চেয়ে আছে সে।

    কুকুরটা ধীর পায়ে ওদের পাশ দিয়ে বৃত্তাকারে ঘুরে উল্টো দিকে গিয়ে দাঁড়াল। ওরা দু’জনেই কুকুরটার দিকে চেয়ে আছে। এবার আগে বাড়ল জন্তুটা। যেন ওদের তাড়িয়ে বাইরে নিয়ে যেতে চায়। কুকুরটার দিকে চোখ রেখেই একটু একটু করে পিছিয়ে বাইরে চলে এসেছে ওরা। একটা পাথরে পা বেধে পড়ে গেল পাওলো। চেয়ে দেখল তার পাশেই একটা কুয়া। গ্রিল দিয়ে কুয়ার মুখ অর্ধেকটা বন্ধ করা রয়েছে। কিছু না ভেবেই গ্রিল ধরে কুয়ার ভিতর ঝুলে পড়ল সে। কুকুরটা এখন আর ওর নাগাল পাবে না। দেখাদেখি মার্টিনও একই কাজ করল।

    কুয়ার পাড়ে দাঁড়িয়ে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে ওদের দিকে চেয়ে আছে কুকুরটা। এতদিনের অব্যবহৃত গ্রিলটা হঠাৎ ওদের পুরো ভার সহ নড়ে উঠল। আশ্চর্য এক অদৃশ্য শক্তির বলে ওটা সরতে সরতে কুয়ার মুখ বন্ধ হয়ে গেল।

    নিরুপায় ভাবে ঝোলা ছাড়া ওদের আর কিছুই করার নেই। কুয়ার ভিতর উঁকি দিল জন্তুটা। ওর জিভ থেকে ফোঁটা ফোঁটা লালা গড়িয়ে পড়ছে পাওলোর মুখে। নিষ্ফল আক্রোশে একটা হাত বের করে কুকুরটার ঠ্যাঙ চেপে ধরার চেষ্টা করল সে। লাভ হল না-নাগালের বাইরে রয়েছে। চট করে আবার গ্রিল ধরে ফেলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হল। এক হাতে ঝুলছে পাওলোর দেহ। ভয়ে মুখটা বিকৃত হয়ে গেছে। এক হাতে দেহের ভার আর রাখতে পারছে না—ম্যাটিয়াসের রক্ত মাখা থাকায় কেবলই পিছলে যাচ্ছে। পড়ে গেল সে। ওর অন্তিম চিৎকারটা সহ্য করতে না পেরে চোখ বুজল মার্টিন। পাথরের সাথে বাড়ি খেয়ে দেহটা থেঁতলে যাওয়ার শব্দের সাথে সাথে পাওলোর চিৎকারও বন্ধ হল। কিন্তু তার রেশটা এখনও যেন কুয়ার দেয়াল বেয়ে উঠছে।

    ঘোৎ করে একটা শব্দ করে কুকুরটা অদৃশ্য হল। চোখ খুলল মার্টিন। দু’হাতে শক্ত করে গ্রিল আঁকড়ে ধরে আছে-কিন্তু আর কতক্ষণ? বড় জোর এক মিনিট—দেড় মিনিট? তারপরেই অবধারিত মৃত্যু। গাল বেয়ে চোখের পানি নামল—অঝোরে কাঁদছে সে—খুব বেশি ব্যথা লাগবে কি?…

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপৌষ ফাগুনের পালা – গজেন্দ্রকুমার মিত্র
    Next Article বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন – গাজী শামছুর রহমান
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.