Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শেষ অশুভ সংকেত – কাজী মাহবুব হোসেন

    গর্ডন ম্যাকগিল এক পাতা গল্প150 Mins Read0

    শেষ অশুভ সংকেত – ৪

    চার

    অনন্তকাল থেকে তাড়া খেয়ে প্রাণপণে ছুটছে—এখন সে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। পা দুটো খুব ভারি ঠেকছে। কাশতে চেষ্টা করে ভিতর থেকে একটা বমির দমক উঠল। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে রয়েছে। মরুভূমির ধুলোর ওপর দিয়ে ছুটছে সে। সামনে দূরে গাছের ডাল বাতাসে দুলছে। ওগুলো যেন তাকে ওই নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছবার জন্যে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। আরও জোরে ছোটার উৎসাহ দিতে চাচ্ছে। কিন্তু শুরু থেকেই সে জানে ওই গাছের ছায়ায় পৌঁছানো তার কপালে নেই। জানে, তবু ছুটছে। তার পা দুটো এখন আর শূন্যে উঠছে না—মাটির ওপরই ঘসে ঘসে চলছে। ঠিক এক হাঁটু কাদার ভিতর দিয়ে ছোটার মত।

    পিছন থেকে ওটার এগিয়ে আসার শব্দ শুনতে পাচ্ছে সে। উত্তেজনায় ওর শরীর ঘেমে ঝাঁঝাল তীব্র দুর্গন্ধ উঠছে। তবু পিছন ফিরে চাইল না। ঘাড়ের ওপর ভেজা গরম নিঃশ্বাস টের পেয়েও ঝাপসা চোখে সামনের দিকেই দেখছে সে। অবশেষে ঘাড়ে তীক্ষ্ণ কামড়ের যন্ত্রণায় চিৎকার করে হাত ছুঁড়ে ওটাকে তাড়াতে চেষ্টা করল। নখের আঁচড়ে দেহের চামড়া ফালিফালি করে চিরে জানোয়ারটা ওকে ছেড়ে দিল। আবার আর্তনাদ করল। কিন্তু গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বেরোল না তার। হাঁটু মুড়ে পড়ে গিয়ে উঠতে চেষ্টা করল—কিন্তু জানোয়ারটা আবার তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। কুঁকড়ে গোল হয়ে নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টা করল সে। সশব্দে ঘনঘন শ্বাস ফেলে জন্তুটা তার তলপেট আর কুঁচকি শুঁকছে। বিষাক্ত নিঃশ্বাস নাকে ঢুকে দম আটকে আসছে ওর।

    প্রাণপণে যুঝছে—চোখ বুজে থাকতে মন চাইছে তবু বিস্ফারিত আতঙ্ক ভরা চোখে সব দেখতে বাধ্য হচ্ছে। কোন মাংস বা লোম নেই—কেবল হাড় আর খুলি। দু’হাতে হাঁ করা চোয়াল ধরে জোর করে ওটা বন্ধ করার চেষ্টা করেও পারল না। জন্তুটার শক্তি অনেক বেশি। দুর্বল হয়ে পড়ছে সে-সময় ফুরিয়ে আসছে। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে ধারালো নখগুলো তার দেহে ঢুকে যাচ্ছে। এবার জন্তুটা তলপেটে কামড় বসাল।

    চিৎকার করে জেগে উঠল সে।

    ‘অ্যানড্রু!’ জোর করে আবার তাকে বালিশের ওপর শোওয়াতে চেষ্টা করল আইলীন। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি করে স্ত্রীর উদ্বিগ্ন মুখের দিকে চেয়ে একটু আশ্বস্ত হল। তারপর নিজের অজান্তেই একবার শিউরে উঠে বিছানায় গা এলিয়ে চাদরটা গলা পর্যন্ত টেনে নিল।

    ‘কি হয়েছে তোমার? অমন করছ কেন?’

    স্ত্রীকে আশ্বস্ত করতে চাইল সে—কিন্তু গলায় স্বর ফুটল না।

    ‘তোমার ভাল কোন ডাক্তার…

    ‘না।’ প্রচণ্ডভাবে মাথা নাড়ল সে। তারপর হাসতে চেষ্টা করল। হাসিটা ভেংচির মত দেখাল। ‘আমি ঠিক আছি…তুমি ঘুমোও।’

    তর্ক না করে বাধ্য মেয়ের মত আবার শুয়ে পড়ল আইলীন। একটু অপেক্ষা করল অ্যানড্রু। আইলীনের শ্বাস ভারি হয়ে এলে সে এক হাতে পেটের ক্ষত চেপে ধরে বিছানা ছেড়ে নামল। আইলীনকে সে কিছুই বলতে পারবে না। শুধু আইলীন নয়, সবার কাছেই তার শক্ত মানুষ বলে নাম আছে। বলতে গেলে ওরা নির্ঘাত ভাববে সে পাগল হয়ে গেছে।

    শাওয়ার ছেড়ে দিল অ্যানড্রু। পানির সাথে পা বেয়ে তাজা রক্ত নামছে। পিঠে নখের আঁচড়গুলোতে পানি লেগে জ্বালা করছে। পেটের ক্ষতটা স্পর্শ করল সে। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার এত কিছুর পরও ডাক্তার বা আর কারও সাহায্য নেয়ার কোন তাগিদ সে অনুভব করছে না। কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে।

    ফিরে এসে বিছানার চাদর তুলে ঘেন্নায় মুখ কুঁচকাল অ্যানড্র। সে যেখানটায় শুয়েছিল সেখানে রক্ত আর শেয়ালের বিষ্ঠা মেখে একাকার হয়ে রয়েছে। বেড় শীটটা আবার যথাস্থানে নামিয়ে রেখে নিঃশব্দে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এল সে। আইলীন ঘুমের মধ্যে গড়িয়ে ওর জায়গায় চলে না এলেই রক্ষা। স্টাডিতে কাওচে শুয়েই সে বাকি রাতটা কাটাবে।

    .

    প্রত্যেকদিন সকালে হাইড পার্কে বেড়ানো অ্যানড্রু ডয়েলের অভ্যাস। অফিসের ব্যস্ততা আর নোংরা কূটনৈতিক চাল থেকে কিছুটা সময় দূরে থাকতে পারে বলে এই বেড়ানোটা সে নিশ্চিন্ত আয়েশে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করে।

    গত এক বছরে এটা তার দৈনন্দিন জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। লণ্ডনের এক নাম করা সাপ্তাহিক পত্রিকায় ইউনাইটেড স্টেটস-এর অ্যামব্যাসেডর সম্পর্কে লিখতে গিয়ে তার সকালে বেড়ানোর সময় আর পথ উল্লেখ করায় সিক্রেট সার্ভিসের লোকজন খুব খেপেছিল। মনে মনে হাসল অ্যানড্র ওদের সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি।

    হাইড পার্কের পথটা এঁকেবেঁকে এগিয়ে গেছে উত্তরে। অ্যানড্রুর বিশ গজ সামনে হাঁটছে একটা লোক। পিছনে না চেয়েই সে জানে ঠিক বিশ গজ তফাতে আরও একজন রয়েছে—আমেরিকান সিকিউরিটির লোক। প্রথম যেদিন নিরাপত্তার জন্য তাকে বডিগার্ড দেয়া হল, মনে মনে বেশ পুলকিত হয়েছিল সে—এখন কিছুটা বিরক্তই বোধ করে।

    আজ ওদের প্রয়োজনীয়তা মৰ্মে মর্মে উপলব্ধি করলেও সাহায্য চাওয়া যাবে না। স্বপ্ন বা দৈব নিয়ে ওদের কারবার নয়। এসব বলতে গেলে ওরা তাকে পাগলই ঠাওরাবে।

    .

    পথের ওপর দৃষ্টি রেখে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল কুকুরটা। মিসমিসে কালো রঙ, হলুদ চোখ আর শক্ত চোয়াল। স্থির ভাবে অপেক্ষা করছে। কুকুরটার গলায় কোন বেল্ট নেই–আশেপাশে ওর মালিককেও দেখা যাচ্ছে না। অন্য কুকুর বা বাচ্চারা কেউ ভয়ে ওর কাছে ভেড়েনি। অপেক্ষা শেষ। মাথা তুলে চেয়ে নিশ্চিত হয়ে সে ঢাল বেয়ে ঝোপের আড়ালে অদৃশ্য হল। মাটিতে ওর পায়ের কোন চিহ্ন পড়ল না।

    .

    ধীর পায়ে চারপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছে অ্যানড্র ডয়েল। কাঠবিড়ালীগুলো কয়েকজন জাপানী ট্যুরিস্টের দেয়া বাদাম চিবুচ্ছে। আর একদল ট্যুরিস্ট একটা মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে পরস্পরের ছবি তুলছে। ডান দিকে একটু উঁচু জমিতে দু’জন লোক করাত দিয়ে একটা মরা এম্ গাছ কাটছে।

    থমকে পিছন ফিরে চাইল অ্যানড্র। হঠাৎ থামায় ওঁর সাথে গুঁতো খেল একটা ছেলে।

    ‘দেখে চলুন!’

    কথাটার কোন জবাব দিল না ডয়েল। কাছেই প্লাস্টিক ব্যাগ থেকে খাবার বার করে হাঁসগুলোকে খাওয়াচ্ছে এক বুড়ি। সশব্দে শ্বাস ফেলে মাথা নেড়ে আবার হাঁটা শুরু করল সে।

    মুহূর্তের জন্যে চোখ বুজেছিল, চোখ খুলে সামনে সিকিউরিটির লোকটাকে আর দেখতে পেল না। ভোজবাজিতে খালি হয়ে গেছে পার্ক। হঠাৎ দমকা হাওয়ায় গাছের ডাল ককিয়ে উঠে দুলতে শুরু করল। অজানা ভয়ে অ্যানড্রুর সারা দেহ কেঁপে উঠল। ডান দিকে ঢালের ওপর ঝোপগুলোর থেকে পায়ের আওয়াজ পেয়ে ওদিকে চাইল—কিন্তু ওখানে কিছুই নেই।

    চলার গতি বাড়াল অ্যানড্র। আতঙ্কিত হয়ে ছুটে পালানোর প্রবল ইচ্ছাকে অনেক কষ্টে সামলাচ্ছে। পিছন থেকে পায়ের শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে—মাটি শুঁকতে শুঁকতে ফুঁসে এগিয়ে আসছে ওটা। অল্পক্ষণের মধ্যেই জন্তুটার বিষাক্ত শ্বাসের দুর্গন্ধ তার নাকে আসবে।

    ‘ঈশ্বর, রক্ষা কর,’ ফিসফিস করে বলল সে। বাতাসটা আরও জোরালো হয়েছে। বাতাসের বিরুদ্ধে ঝুঁকে কুঁজো হয়ে এগোতে হচ্ছে। পিছন ফিরে চাইতে পারছে না। একবারও পিছু ফিরে চায়নি। চাইলে তার স্বপ্নকেই যে বাস্তবে রূপ নিতে দেখবে—এ বিষয়ে সে নিশ্চিত।

    ‘দয়া কর, ঈশ্বর,’ বিড়বিড় করে প্রার্থনা করল অ্যানড্র। দৌড়াতে শুরু করেছে সে। পা দুটো ভারি ঠেকছে— যেন কাদার ভিতর দিয়ে চলেছে। তার প্রার্থনা মঞ্জুর হয়েছে। বাঁক নিয়েই পনেরো গজ সামনে একটা হট ডগের ভ্যান দেখতে পেল। ভ্যানের মোটা সেলসম্যান তার দিকে চেয়ে হাসছে। চলার গতি কমিয়ে যথাসম্ভব হাসিহাসি মুখ করে এগিয়ে গেল ডয়েল। একটা হ্যামবার্গার খাবে—ছাত্রজীবনের পরে আর ও জিনিস খাওয়া হয়নি—ওটার স্বাদ প্রায় ভুলতে বসেছে সে। সভ্য সমাজে অচল, কিন্তু পরোয়া নেই, আজ সর্ষে বাঁটা, পেঁয়াজ আর টমেটো কেচাপ (সস্) দিয়ে হ্যামবার্গার খাবে সে। মুখ থেকে পেঁয়াজের গন্ধ পেয়ে অতিথিরা কে কি বলবে তার তোয়াক্কা রাখে না সে। আসলে কূটনৈতিক কারণে এসব কথা কেউ তুলতেই সাহস পাবে না।

    অর্ডার দিল অ্যানড্রু। অর্ডার দেয়ার সময়ে গলাটা স্বাভাবিক আছে দেখে মনে মনে খুশি হল।

    ‘এক মিনিট, স্যার,’ বলে সেলসম্যান কাজে ব্যস্ত হল। কেচাপ, মাস্টার্ড আর পেঁয়াজ তার আলসারের কতটা ক্ষতি করবে ভাবতে ভাবতে পিছন ফিরে ঝোপগুলোর দিকে চাইল অ্যানড্রু।

    ফিরে দেখল ভ্যানটা নেই। কেবল একটা মানুষের খুলি চক্ষুহীন কোটর থেকে ওর দিকে চেয়ে আছে। টক নিঃশ্বাসের গন্ধ নাকে আসছে।

    ‘যীশু!’ পিছিয়ে যেতে গিয়ে একবার হোঁচট খেল, তারপর সম্ভ্রম ভুলে ঝেড়ে দৌড় দিল অ্যানড্রু। ভ্যান সেলসম্যানের চিৎকার ওর কানে পৌঁছল না। গাল দিয়ে কুকুরের থাবা দুটো কাউন্টারের ওপর থেকে সরিয়ে দিলো সে। কুকুরটা অ্যানড্রুর পিছু নিল। কাঁধ ঝাঁকিয়ে বন-রুটিটা আবার বাক্সে রেখে দিল সেলসম্যান।

    পার্কের লোকজনকে আর দেখতে পাচ্ছে না অ্যানড্র। কল্পনার ছবিটাই তার কাছে বাস্তব হয়ে উঠেছে। তীক্ষ্ণ দাঁতের মাড়ি মড়াখেকো জীবগুলো জীবন্ত প্রাণীর নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে খাচ্ছে।

    হায়না।

    শকুন।

    শিয়াল।

    নিজের লিমোসিনের কাছে পৌঁছে এক মুহূর্ত দম নেয়ার জন্য থামল। কিন্তু গাড়িতে উঠল না। শোফারের স্যালিউট উপেক্ষা করে টলতে টলতে এগিয়ে গেল সে পার্ক লেনের দিকে। তিন সারিতে অগুনতি গাড়ি উত্তরে মার্বেল আর্চের দিকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলেছে। প্রাইভেট কার, লরি, ট্রাক, আর বাসগুলো যেন একে অন্যের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটছে। বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে রাস্তায় নামল অ্যানড্র। গাড়ি ব্রেক কষার তীক্ষ্ণ আওয়াজ আর ড্রাইভারদের ধমকানি কিছুই ওর কানে ঢুকছে না। অক্ষত অবস্থাতেই অর্ধেক রাস্তা পার হয়ে ব্যারিয়ার অতিক্রম করে আবার দক্ষিণমুখী ট্রাফিকের ভিতর দিয়ে বাম্পারের ফাঁক গলে ওপাশের ফুটপাথে গিয়ে উঠল। এবার ডরচেস্টারের দিকে ছুটে কয়েকটা ব্যাকস্ট্রীট পার হয়ে গ্রোভ্নার স্কোয়ার-এ (Grosvenor Square) পৌছল।

    এমব্যাসির সিঁড়ি বেয়ে উঠে ঝড়ের বেগে সিকিউরিটি গার্ডদের পাশ কাটিয়ে নিজের কামরার দিকে এগিয়ে গেল ডয়েল। সেক্রেটারির টেবিলের পাশ দিয়ে যাবার সময়ে তাকে দেখে সেক্রেটারি হাসিমুখে একটা মেসেজ দেয়ার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সোজা দরজা ঠেলে অফিসে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দরজায় হেলান দিয়ে চোখ বুজল। হাঁপাচ্ছে সে।

    ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে চারপাশে পরিচিত দৃশ্য দেখে অনেকটা আশ্বস্ত বোধ করল. অ্যানড্রু। ইবনি কাঠের ডেস্ক আর দেয়ালে ইউনাইটেড স্টেটস এর প্রতীক, ফ্ল্যাগ তার উত্তেজনা অনেকখানি শান্ত করল।

    ধীরে ধীরে ওর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসছে। হাতমুখ ধুয়ে চাঙ্গা হতে বাথরূমে ঢুকল অ্যানড্রু। মনে মনে পঞ্চাশ গুনে আঙুল চালিয়ে চুল ঠিক করে কপালের দু’পাশ টিপে ধরল। আত্মবিশ্বাস ফিরে আসছে। এবারে ঠাণ্ডা পানির কল ছেড়ে চোখ-মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলল। তোয়ালের জন্যে হাত বাড়িয়ে আয়নার দিকে চাইল।

    সেই ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন জ্বলন্ত চোখে চেয়ে আছে ওর দিকে!

    ধীর পায়ে পিছিয়ে এল সে। জন্তুর খুলিতে চোখ নেই–শূন্য কোটরে শিরাগুলো রক্তের চাপে দপদপ করছে।

    ব্যাপারটা দিনের আলোর মতই পরিষ্কার হয়ে গেল। কোথাও পালিয়ে বাঁচার উপায় নেই তার।

    আড়ষ্টভাবে পায়ে পায়ে নিজের ডেস্কের সামনে ফিরে এসে পুরো এক মিনিট দেয়ালের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে। তারপর হাত বাড়িয়ে ইন্টারকমের সুইচ অন করল।

    সাথে সাথেই একটু ঘড়ঘড় আওয়াজের সাথে সাড়া এল।

    ‘প্রেস অফিস।’

    ‘অ্যামব্যাসেডর বলছি।’ প্রাণহীন সাদামাঠা শোনাল ওর গলা। ‘আজ সকাল দশটায় আমার অফিসে প্রেস কনফারেন্স ডাক।’

    ‘স্যার, কিন্তু আপনার প্রেস কনফারেন্স তো আগামীকাল সকাল দশটায় ডাকা হয়েছে।‘

    দেয়ালে আঁটা বিরাট প্রতীকটার দিকে চেয়ে নিজের চুল সমান করল ডয়েল।

    ‘মিস্টার অ্যামব্যাসেডর?’

    ‘আজ দশটায়। আমার অফিসে,’ বলে সুইচ অফ করে দিল সে।

    আজ একটু সকালেই অফিসে পৌঁছেছে ডয়েল। ঘড়ি দেখল। আর দেড় ঘন্টা। ডেস্কে বসে কিছুক্ষণ শূন্যে চেয়ে থেকে শেষে ড্রয়ার থেকে পিস্তল বের করল। ওটার দিকে চেয়ে আপনা-আপনি একবার চোখের পাতা পড়ল। নীরব প্রার্থনায় কিছুক্ষণ ওর ঠোঁট নড়ল। পিস্তলটা টেবিলের ওপর রেখে টাইপ—রাইটারের ফিতে খুলে নিল। রিবনের একপ্রান্ত দরজার হাতলে বেঁধে সাবধানে অন্য প্রাস্ত হাতে নিজের ডেস্কে ফিরে এল। টেবিলে রাখা পিস্তলটার দিকে একবার তাকিয়ে নিজের চেয়ারে বসে আবার ঘড়ি দেখল।

    আর বেশি দেরি নেই, অল্প পরেই তার সব দুঃস্বপ্ন আর বিভীষিকার অবসান ঘটবে। ট্যাক্সি ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি এমব্যাসিতে ঢুকে পড়ল কেট রেনল্ডস। ট্যাক্সি থেকে বেরিয়ে বেঁচেছে সে। অনর্গল কথা বলতে পারে ওই ট্যাক্সি’ ড্রাইভার। তার টেলিভিশন প্রোগ্রাম থেকে লোকটা তাকে ঠিকই চিনেছে। প্রথম দেখাতেই তাকে সে অন্তরঙ্গ ভাবে ‘কেটি’ বলে ডেকেছে। আর পাঁচ মিনিট সময় পোল কি করে বসত কে জানে?

    রিসেপশনে কার্ড দেখাতেই একজন তাকে পথ দেখিয়ে উপরে নিয়ে গেল। ওখানে যারা জড়ো হয়েছে তাদের প্রায় সবাইকেই চেনে কেট। বিভিন্ন নিউজ রিপোর্টার বিবিসি ক্রু—তার সহযোগী লোকজন ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছে ওরা। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটছে বলে আশা করছে সবাই। নইলে এত শর্ট নোটিসে কখনও প্রেস কনফারেন্স ডাকা হয় না। পেশাগত কৌতূহল নিয়ে আর সবার মত কেটও ঘটনা জানার জন্যে অধীর আগ্রহে উসখুস করছে। বড় দরজাটার দিকে আরও এগিয়ে গেল সে। এই সময়ে সেক্রেটারি ঘোষণা করল অ্যামব্যাসেডর এখন তাদের সাথে দেখা করবেন।

    দরজার কাছে সেক্রেটারির ঠিক পিছনেই রয়েছে কেট। দরজাটা সরছে না। আরও জোরে টান দিতেই দরজাটা খুলে গেল। হাতলে বাঁধা টাইপরাইটারের রিবন কেটের চোখে পড়ল। রিবনটা হাতল থেকে সোজা ডেস্ক পর্যন্ত চলে গেছে। অ্যামব্যাসেডরের দুই হাঁটুর ফাঁকে রয়েছে একটা পিস্তল।

    রিবনটা টানটান হতে দেখে চিৎকার করে উঠল কেট। বিস্ফোরণের শব্দের সাথে সাথে অ্যামব্যাসেডরের দেহটা একটু লাফিয়ে উঠল। মাথাটা ঝাঁকি খেয়ে পিছন দিকে সরে গেল। মুখের অর্ধেকটা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। পিছনের দেয়াল রক্তের ছিটায় ভরে গেছে। হাঁটু ভাঁজ হয়ে পড়ে গেল কেট। তবু ভয়াবহ দৃশ্য থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতে পারল না। দেখল ডয়েল ধীরে ধীরে আবার সামনে হেলে পড়ছে। বাম পা-টা হেঁচকি টানে থেকে থেকে নড়ছে। এক চোখে ডয়েল চেয়ে আছে ওর দিকে। ভারি বুলেটের আঘাতে তার অন্য চোখটা অদৃশ্য হয়েছে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপৌষ ফাগুনের পালা – গজেন্দ্রকুমার মিত্র
    Next Article বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন – গাজী শামছুর রহমান
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.