Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শেষ বিকেলের মেয়ে – জহির রায়হান

    জহির রায়হান এক পাতা গল্প115 Mins Read0

    ০৩. জাহানারার দু’চোখে তখন স্বপ্ন

    জাহানারার দু‘চোখে তখন স্বপ্ন

    জাহানারার দু’চোখে তখন স্বপ্ন।

    কি এক তন্ময়তায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে সে।

    চলুন, এবার ওঠা যাক। বড় সাহেব আস্তে করে বললেন।

    কোন কথা না বলে উঠে দাঁড়ালো কাসেদ।

    হয়তো সে অনেক বদলে গেছে।

    এখন দেখলে আর সেই পুরনো মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সিঁড়ি বেয়ে দোতলার ঘরে উঠে যাবার পথে ভাবলো কাসেদ।

    বারান্দার এককোণে একটা মোড়ার উপর বসেছিলো সালমা। চুলগুলো পিঠের ওপরে ফেলে দিয়েছে সে। পরনে একখানা কালো পাড়ের মিহি শাড়ি সাদা জমিনের ওপর হলুদ সুতোর ফুল আঁকা। কানে, গলায়, হাতে অলঙ্কারের বোঝা। সালমা চোখ তুলে কিছুক্ষণ এক পলকে তাকিয়ে রইলো। সহসা কিছু বলতে পারলো না সে, ওর ঠোঁটের কোণে ধীরে ধীরে এক টুকরো মিষ্টি হাসি জেগে উঠলো। পরীক্ষণে সারা মুখে সে হাসি ছড়িয়ে পড়লো, কাসেদ ভাই।

    কাসেদ বললো, তোমাকে দেখতে এলাম সালমা।

    সালমার মুখখানা অকারণে রাঙা হলো। উঠে দাঁড়িয়ে মোড়াটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিল সে, বসে।

    কাসেদ বসলো।

    বাড়িতে আজ অনেক অতিথি এসেছে। ঘরে, বারান্দায় ছাদে ছড়িয়ে আছে ওরা। কথা বলছে, হাসছে, আলাপ করছে এটা-সেটা নিয়ে।

    ব্যাপার কি, অনেক শুকিয়ে গেছ যে।

    সালমার কথার জবাবে কাসেদ কি বললো স্পষ্ট বোঝা গেলো না।

    সালমা আবার শুধালো, প্রেমে পড়নি তো?

    কাসেদ অপ্ৰস্তৃত গলায় বললো, তার মানে?

    মাথার চুলগুলো দু’হাতে খোপাবদ্ধ করতে করতে সালমা বললো, শুনেছি প্রেমে পড়লে নাকি লোক শুকিয়ে যায়।

    ওসব বাজে কথা। প্রসঙ্গটা পাল্টাবার জন্য হয়তো, কাসেদ হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো, তোমার মেয়ে হয়েছে জানাওনি তো, একটা চিঠি লিখলেও তো পারতে।

    সালমা বললো, জানাতাম, কয়েকবার ইচ্ছেও হয়েছিল লিখি, কিন্তু কি জানো, আজকাল বড় আলসে হয়ে গেছি। একখানি চিঠি লিখবো তাও লিখি লিখি করে হয়ে ওঠে না।

    কাসেদ বললো, কুড়িতেই বুড়ি হয়ে গেলে মনে হচ্ছে।

    সালমা বললো, বুড়ি হয়নি তো কি, ক’বছর পরে মেয়ে বিয়ে দেবো।

    বলতে গিয়ে নিজেই হেসে দিলো সালমা, তুমি বস, আমি পলিকে নিয়ে আসি।

    আলসে মেয়েটি চপল ভঙ্গি করে ঘরে চলে গেলো, একটু পরে আবার যখন সে সামনে এসে দাঁড়ালো তখন তার কোলে একটা ফুটফুটে মেয়ে।

    সালমা বললো, দেখতে ঠিক ওর বাবার মত হয়েছে।

    কাসেদ বললো, গায়ের রঙটাও।

    সালমা বললো, চোখজোড়া কিন্তু আমার।

    হবেও-বা। কাসেদ মৃদু গলায় বললো, নাম কি রেখেছাে?

    সালমা জবাব দিলো, পলি। ওর বাবার দেয়া নাম। তোমার নিশ্চয় পছন্দ হয় নি?

    কাসেদ সংক্ষেপে বললো, না।

    ঘাড়টা ঈষৎ বাঁকা করে সালমা অপুর্ব কণ্ঠে শুধালো, তুমি হলে কি নাম রাখতে?

    এসব বাতুল প্রশ্নের কোন মানে হয় না। কাসেদ নড়েচড়ে বসলো।

    সালমা বললো, তবু বল না শুনি।

    কাসেদ ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো, তারপর বললো, কি নাম রাখতাম জানি না, তবে এ মুহুর্তে একটা নাম মনে পড়ছে আমার, বিপাশা, হয়তো তাই রাখতাম।

    বিপাশা। বারিকয়েক নামটা উচ্চারণ করলো সালমা। কি যে ভাবলো, ভেবে পরীক্ষণে বললো, আমি ওকে বিপাশা নামেই ডাকবো।

    এতে আমার আপত্তি আছে, ওর কথাটা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে কাসেদ বললো, ওর বাবা যে নাম দিয়েছে সেই নামে তোমাকেও ডাকতে হবে। কাসেদের কণ্ঠে যেন ধমকের সুর। আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো কাসেদ। পরিচিত একজন মহিলাকে এদিকে এগিয়ে আসতে দেখে থেমে গেলো।

    কাসেদের মনে হল যেন এর আগে কোথাও দেখেছে তাকে। মহিলার চাউনি দেখে মনে হলো, তিনিও যেন তাকে চিনতে পেরেছেন। সালমা বললো, ইনি মিসেস চৌধুরী। ওর স্বামী বিপাশার বাবার সঙ্গে এক সাথে কাজ করতো কুড়িগ্রামে। আর ইনি হলেন–

    ওকে আমি চিনি। সালমাকে থামিয়ে দিয়ে মিসেস চৌধুরী অর্থপূর্ণ হাসি ছড়ালেন।

    কাসেদ তখন স্মৃতির খাতায় মহিলার ঠিকানা খুঁজে বেড়াচ্ছিলো। সহসা শুধালো, আপনাকে এর আগে কোথায় যেন দেখেছি?

    জী হ্যাঁ। মহিলা মৃদু হেসে বললেন, জাহানারাদের ওখানে।

    বেশি ভাবতে হলো না মিসেস চৌধুরীর জন্যে। জাহানারাদের বাসায় আলাপ হওয়া মিলি চৌধুরীকে একটু পরেই খুঁজে পাওয়া গেলো।

    মিলি চৌধুরী একটু শুধোলেন, ভালো আছেন তো?

    কাসেদ সংক্ষেপে বললো, ভালো।

    হঠাৎ কেন যেন সালমাকে গভীর দেখালো। কাসেদের মুখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে চেয়ে কি যেন আবিষ্কার করার চেষ্টায় মেতে উঠেছে সে।

    মিলি বললেন, নতুন কিছু লিখলেন?

    কাসেদ বললো, না।

    আলাপ জমলো না। একটু পরে বারান্দা ছেড়ে ঘরে চলে গেলেন মিলি চৌধুরী। এখানে দু’জন নীরব।

    নীরবতা গুঁড়িয়ে কাসেদ শুধালো, হঠাৎ এমন গম্ভীর হয়ে গেলে যে?

    না, এমনি। সালমা সহজ হতে চেষ্টা করলো, পলির চোখেমুখে আদর করলো সে। দুহাতে দোলনার মত করে বার কয়েক দোলাল তাকে।

    তারপর যতদূর সম্ভব সহজ গলায় শুধালো, জাহানারাটা কে?

    জাহানারা? সহসা কিছু বলতে পারলো না কাসেদ। অপ্ৰস্তৃত ভাবটা কাটিয়ে নিতে কিছুক্ষণ সময় লাগলো তার। একটু পরে বললো, জাহানারা আমার একজন বান্ধবীর নাম।

    বান্ধবী না আর কিছু? কাসেদের চোখেমুখে কি যেন খুঁজছে সালমা।

    ওর চোখের মণিজোড়া সহসা বড় তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে। ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসি। সে হাসির কোন অর্থ আছে হয়তো, কিম্বা নেই।

    কাসেদ শুধালো, বান্ধবীর অন্য কোন মানে আছে নাকি?

    সালমা বললো, আগে ছিলো না। এখন আছে। আগের দিনে ছেলের সঙ্গে ছেলের বন্ধুত্ব হতো। মেয়েদের সঙ্গে মেয়ের। আজকাল ছেলেতে মেয়েতে বন্ধুত্বের পালাটা বড় জোড়োশোরে শুরু হয়েছে।

    তাতে কি এর অর্থগত রূপটা পাল্টেছে?

    পাল্টেছে বই কি? সালমা দৃঢ় গলায় বললো, এখন তার অর্থ এক নয়, অনেক। বন্ধুর স্ত্রীকেও বলি বান্ধবী, নিজের স্ত্রীকেও বলি বান্ধবী। বন্ধুর প্রেমিকা, তাকেও ডাকি বান্ধবী বলে, আবার নিজের প্ৰেয়সী তার পরিচয় দিতে গিয়ে বলি, বান্ধবী। সব বান্ধবী এক হলো নাকি?

    সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালো সালমা।

    কাসেদ নীরব।

    ওকে চুপ থাকতে দেখে সালমা আবার শুধালো, তোমার বান্ধবীটি কোন শ্রেণীর জানতে পারি কি? বলতে গিয়ে সামনে ঝুঁকে এলো সালমা। কয়েকগুচ্ছ চুল মাথার উপর থেকে গড়িয়ে এসে কপালে ঢলে পড়লো, চুলগুলো এখন বাতাসে দুলছে।

    কাসেদ তখনো নীরব।

    খানিকক্ষণ পরে নীরবতা ভেঙে সে বললো, তুমি যে কয়েকটি শ্রেণীর কথা বললে তার কোনটিতেই সে পড়ে না।

    সামান্য জবাবটা দিতে এত দেরি হলো কেন? ভ্রূজোড়া বিস্তৃত করে আবার শুধালো সালমা।

    সহসা রেগে উঠলো কাসেদ। তোমার সঙ্গে বাজে তর্ক করতে আমি আসিনি সালমা।

    এসব আমার ভাল লাগে না। বলে উঠে দাঁড়ালো সে। সে আমি জানি। স্নান গলায় আস্তে করে বললো সালমা! বলে মুখখানা কেন যেন অন্যদিকে সরিয়ে নিলো, সে হয়তো আড়াল করে নিলো কাসেদের কাছ থেকে। কাসেদ শুধু একবার ফিরে তাকাল, কিছু বললো না।

    ঘরের ভেতর যেখানে ফরাস পেতে বুড়ো-বুড়িরা গল্পে মেতে উঠেছে সেখানে যাবার জন্যে পা বাড়ালো কাসেদ।

    বুড়ো-বুড়িদের আলোচনার ধারা ভিন্ন রকমের।

    এখানকার আলাপের প্রসঙ্গ অতি জাগতিক।

    সোনা রুপোর দর কমলো কি বাড়লো।

    কোন্‌ বাজারে ভালো তারি-তরকারি পাওয়া যায়।

    কোন্‌ দোকানে সস্তায় জিনিসপত্র বিক্রি হয়।

    কোথায় গেলে মেয়ের জন্য একটা ভালো পাত্র জোটার সম্ভাবনা আছে–এমনি সব আলোচনা।

    কাসেদকে আসতে দেখে খালু বললেন, এসো বাবা, বোসো।

    মা সস্নেহ দৃষ্টিতে তাকালেন ওর দিকে।

    খালা পান চিবেচ্ছিলেন বসে বসে। আঙ্গুলের ডগা থেকে একটুখানি চুন চুষে নিয়ে বললেন, তুমি এলে ভালই হলো, শোনো বাবা, তোমার খালুজী নাহারের জন্য একটা ভালো প্ৰস্তাব এনেছেন।

    মা বললেন, ওকে খুলে বলো না। সব। ওই তো এখন বিয়ে দেবার মালিক। খালু বললেন, শোনো বাবা, ছেলে তেমন কেউকেটা একটা কিছু নয়। আই-কম পর্যন্ত পড়ে, পরীক্ষা দিয়েছিলো, পাশ করেনি। এখন ইডেন বিল্ডিং-এ চাকরি করে। সোয়া শ’ টাকা বেতন।

    কাসেদ আবার জিজ্ঞেস করলো, পরীক্ষাটা আবার দেয়নি ক্যান?

    দেয়নি নয়, দেবে, আবার দেবে। খালু জবাব দিলেন, ছেলে ভালো এতে কোন সন্দেহ নেই।

    ঘরের কোণে পানের পিক ফেলে এসে বললেন, এক মায়ের এক ছেলে, বাবা মারা গেছে ছেলেবেলায়। এক ঘর।

    মা বললেন, কোন ঝামেলা নেই, নাহার সুখেই থাকবে।

    কাসেদ কোন মন্তব্য করলো না।

    কথার ফাঁকে সালমা এসে বসেছে একপাশে। একটু গভীর। একটু যেন অন্যমনস্ক।

    খালু বললেন, আজকাল মেয়ে বিয়ে দেবার মত ঝকমারী আর নেই বড়বু। যাদের টাকা আছে তারা টাকা-পয়সা নিয়ে ভালো ভালো ছেলে বেছে নেয়।

    খালা বললেন, শুধু মেয়ে কেন, ছেলে বিয়ে দিতেও কি কম ঝামেলা!! একটা ভালো মেয়ে পাওয়া যায় না, আমাদের নজরুলের জন্য মেয়ে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে গেলাম, যা-ও পাওয়া গেলো, ও খোদা মেয়ের বাবা সি. এস. পি. সি. এস. পি. করে পাগল। সি. এস. পি. ছাড়া মেয়ে বিয়ে দিবেন না।

    মা বললেন, আগের দিনে লোকে বংশ দেখতো। এখন সি. এস. পি. ছাড়া দেখে না।

    খালু বললেন, ও কিছু না বড়বু, যুগের হাওয়া। যেমন আদি যুগ, মধ্যযুগ, আর কলিযুগ আছে, তেমনি বিয়ের ব্যাপারেও কতগুলো যুগ রয়েছে। ডাক্তার যুগ, ইঞ্জিনিয়ার যুগ, সি. এস. পি, যুগ। এখন সি. এস. পি, যুগ চলছে। বলে শব্দ করে হেসে উঠলেন তিনি। অন্যমনস্ক সালমাও না হেসে পারলো না।

    হাসলো সবাই।

    খাওয়ার ডাক পড়ায় বৈবাহিক আলোচনা আর এগুলো না। আসর ছেড়ে সকলে উঠে পড়ল।

    সালমা সামনে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বললো, খাওয়ার টেবিলে তোমার পাশের চেয়ারটিতে আমি ছাড়া আর কাউকে বসতে দিয়ো না যেন, তুমি যাও, আমি বিপাশাকে বিছানায় রেখে আসি।

    কাসেদ কিছু বলার আগেই সামনে থেকে সরে গেলো সালমা। সে শুধু বোকার মত তাকিয়ে রইলো। ওর চলে যাওয়া পথের দিকে।

    দিন কয়েক পরে অফিসে এসে শিউলির কাছ থেকে আরেকখানা টেলিফোন পেলো কাসেদ।

    শিউলি বললো, আহ গলাটা চিনতে পারছেন তো?

    কাসেদ জবাব দিলো, অবশ্যই পারছি।

    শিউলি বললো, তাহলে শুনুন, আপনাকে কয়েকটা খবর দেবার আছে। বাবা কুমিল্লায় বদলী হয়ে গেলেন।

    তাই নাকি?

    আজ্ঞে হ্যাঁ, আমি এখন বাসা ছাড়া পাখি।

    তার মানে?

    মানে এখন হােস্টেলে আছি।

    হােষ্টেলো?

    জী।

    ওটা কি মুক্ত বিচরণ ভূমি নাকি?

    কেন বলুন তো?

    নিজেকে এইমাত্র বাসা ছাড়া পাখির সঙ্গে তুলনা করলেন কিনা, তাই।

    ওই যা, আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে, আপনি কবি মানুষ। টেলিফোনে মিহি হাসির শব্দ শোনা গেলো। ওর। শিউলি হাসছে।

    কাসেদ শুধালো, আপনার খবর বলা শেষ হলো?

    শিউলি বললো, না আছে। হ্যালো, শুনুন, প্রত্যেক শুক্রবার আর রোববার আমাদের বাইরে বেরুতে দেয়া হয়।

    ভালো কথা, তারপর?

    সামনের শুক্রবার আপনার কোন কাজ আছে কি?

    আছে কি-না এখনো বলতে পারি নে।

    না থাকলে আসুন না বিকেলের দিকে একটু বেড়ানো যাক।

    কাসেদ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর বললো, হঠাৎ বেড়াবার সাথী হিসেবে..

    শিউলি পরীক্ষণে জবাব দিলো, আপনাকে ভাল লাগে বলে। সেই পরিচিত শব্দে হেসে উঠলো সে।

    কাসেদ বিব্ৰত বোধ করলো। রিসিভারটা ডান হাত থেকে বা হাতে সরিয়ে নিয়ে আস্তে করে বললো, এবার রেখে দিই?

    কেন, কথা বলতে বিরক্তিবোধ করছেন বুঝি?

    না, তা নয়। কাসেদ ইতস্ততঃ করে বললো, অনেকক্ষণ ধরে ফোনটা আটকে রেখেছি কিনা।

    বুঝলাম। শিউলি মৃদু গলায় বললো, ফোনটা কষ্ট পাচ্ছে, রেখে দিন। বলে আর দেরি করলো না সে। রিসিভারটা রাখার শব্দ শুনতে পেল সে।

     

    দু’টার পর থেকে অফিসে আর কারো মন বসতে চায় না।

    কখন চারটা বাজবে আর কখন তারা এই চেয়ার-টেবিল আর ফাইলের অরণ্য থেকে বেরিয়ে বাইরে মুক্ত আকাশের নিচে গিয়ে দাঁড়াবে সে চিন্তায় সবার মন উদ্বিগ্ন হয়ে থাকে।

    দুটো থেকে চারটের মাঝখানকার সময়টা তাই কাজের চেয়ে আলাপ-আলোচনা আর গল্প করেই কাটে বেশির ভাগ সময়।

    এ সময় হেড ক্লার্কের পানের ডিবে দ্রুত ফুরিয়ে আসতে থাকে। হয়তো তাই কথা বলার মাত্রা বেড়ে যায়। মেজাজ রুক্ষ থাকলে সকলকে গাল দেয়। প্ৰসন্ন থাকলে সবার সঙ্গে হেসে কথা বলে। সকলের কুশল জিজ্ঞেস করে। আজ বিকেলে অফিস থেকে বেরুবার আগে হেড ক্লার্ক বললেন, আজ আপনি আমার বাসায় যাবেন কাসেদ সাহেব, আপনার ছাতাটা নিয়ে আসবেন। শুনছেন?

    কাসেদ বললো, আমি তো আপনার বাসা চিনি না। চেনেন না, চিনে নেবেন। পান চিবুতে চিবুতে হেড ক্লার্ক আবার বললেন, চলুন না আমার সঙ্গে আজ যাবেন বাসায়। বিকেলে বিশেষ কারো সঙ্গে কোন এনগেজমেন্ট নেই তো? শেষের কথাটার ওপর যেন তিনি বিশেষ জোর দিলেন।

    কাসেদ মুখ তুলে তাকালেন ওর দিকে। হেড ক্লার্কের কথা বলার ভঙ্গটা ভালো লাগলো না। ওর। ভেবেছিলো চুপ করে যাবে। কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। তবু বাড়াতে হলো, আমার বিশেষ কেউ আছে সেটা আপনি জানলেন কোথেকে?

    আহা, রেগে গেলেন নাকি? হেড ক্লার্ক পরীক্ষণে বললেন, কথাটা যদি বলেই থাকি এমন কি অন্যায় করেছি। বলুন? এ বয়সে সবার বিশেষ কেউ একজন থেকে থাকে, আমাদেরও ছিলো। ক্ষণকাল থেমে আবার শুধোলেন তিনি, আপনার বুঝি কেউ নেই?

    থাকলেই বা আপনাকে বলতে যাবে কে? কাসিদের হয়ে জবাবটা দিলেন এক নম্বর কেরানী।

    হেড ক্লার্ক সরোষ দৃষ্টিতে তাকালেন তার দিকে। তারপর বললেন, আপনাকে যে কাজটা করতে দিয়েছি ওটা হয়েছে?

    এক নম্বর কেরানীর মুখখানা মুহুর্তে স্নান হয়ে গেলো। হেড ক্লার্ক মুখে একটা পান তুলে দিয়ে বললেন, আগে কাজ শেষ করুন, তারপর কথা বলবেন।

    ঘাড় নিচু করে কাজে মন দিলো এক নম্বর কেরানী।

    কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বলতে পারলো না।

    হেড ক্লার্ক চুপ।

    কাসেদ নীরব।

    দেয়ালে কুলান বড় ঘড়িটা শুধু আওয়াজ তুলে এগিয়ে চলেছে তার নির্দিষ্ট গতিতে।

    আর কোন শব্দ নেই।

    অফিস থেকে দু’জনে এক সঙ্গে বেরিয়ে এলো ওরা।

    দু’জন গম্ভীর।

    রাস্তায় নেমে এসে কাসেদ প্রথমে কথা বললো, আপনি কি এখন সোজা বাসায় যাবেন?

    গুমোট অবস্থােটা কেটে যাওয়ায় যেন খুশি হলেন ভদ্রলোক, অফিস থেকে বেরিয়ে আমি অন্য কোথাও যাইনে।

    কাসেদ বললো, বেশ তাহলে চলুন আপনার বাসায় যাওয়া যাক।

    বলে হেড ক্লার্কের মুখের দিকে তাকালো কাসেদ। তাঁর কোন ভাবান্তর হয়েছে কিনা লক্ষ্য করলো, কিন্তু কিছু বুঝা গেল না।

    হেড ক্লার্ক মৃদু গলায় বললেন, বেশ তো চলুন। আপনার ছাতাটা–বলতে গিয়ে থেমে গেলেন তিনি, কথাটা শেষ করলেন না।

    অফিস থেকে মকবুল সাহেবের বাসাটা বেশ দূরে নয়, তবু অনেক দূর। পল্টন থেকে লালবাগ।

    মাসের শুরুতে বাসে চড়ে অফিসে আসেন। তিনি। বাসে চড়ে বাসায় ফেরেন। মাসের শেষে বাস ছেড়ে পদাতিক হন। হেঁটে আসেন, হেঁটে যান। কিছুদূর এসে মকবুল সাহেব বললেন, আমি পারতপক্ষে বাসে চড়িনে বুঝলেন। ওতে বড় ভিড়, আমার মাথা ঘু্রোয়। আগে রিক্সায় করে আসতাম যেতাম। কিন্তু ব্যাটারা এমন হুড়মুড় করে চালায়, দু’বার ট্রাকের নিচে পড়তে পড়তে অল্পের জন্যে বেঁচে গেছি। সেই থেকে আর রিক্সায় চড়িনে। আজকাল শ্ৰীচরণ ভরসা করেছি। এতে কোরে বিকেল বেলায় বেড়ানোটাও হয়ে যায়।

    কী বলেন?

    তাকে সমর্থন জানাতে গিয়ে শুধু একটুখানি হাসলো কাসেদ, কিছু বললো না। কারণ কিছু বলতে গেলে বিকেল বেলায় বেড়ানোর চেয়ে টাকাকড়ির সমস্যাটা এসে পড়ে সবার আগে।

    লালবাগে একটা সরু গলির ভেতরে একখানা আস্তর উঠা একতলা দালান, আর একটা দোচালা টিনের ঘর নিয়ে থাকেন মকবুল সাহেব। বড় পরিবার। ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি।

    বাইরের একখানা ঘর বৈঠকখানা এবং স্কুল পড়ুয়া দুই ছেলের শোবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করছেন তিনি।

    ঘরের মধ্যে আসবাবপত্রের চেয়ে ধুলোবালি আর আবর্জনার আধিপত্য সবার আগে চোখে পড়ে। জানালা দু’খানায় পর্দা সেই কবে লাগানো হয়েছে কে জানে। নিচের দিক থেকে কিসে যেন খেয়ে অর্ধেকটা করে ফেলেছে। বাতাসে মৃদু মৃদু দুলছে সেগুলো। আর কিছু নয়, শুধু ওই পর্দাগুলোর দিকে তাকালেই গৃহকর্তার দীনতা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভেতরে ঢুকে একখানা চেয়ারে ওকে বসতে বললেন মকবুল সাহেব। দীর্ঘ পথ হেঁটে এসে পঞ্চাশোত্তর বৃদ্ধ এখন ক্লান্ত। কাসেদকে বসতে বলে নিজে একখানা চৌকির উপর বসে পড়লেন। চারপাশে তাকিয়ে বললেন, বাড়িটা বিশেষ ভাল না। তবু, সেই পার্টিশানের পর থেকে আছি, একটা মায়া বসে গেছে। ছাড়ি ছাড়ি করেও ছাড়া যায় না।

    বাইরের ঘরে তাঁর গলার আওয়াজ পেয়ে ভেতরে থেকে কয়েকটি বাচ্চা ছেলেমেয়ে এসে জুটলো এ-ঘরে। কারো পরনে ময়লা ফ্রক, কারো পরনে ছেঁড়া হাফপ্যান্ট, কেউ-বা ন্যাংটা।

    বুড়ো মকবুল উঠে গিয়ে তাদের দু’জনকে কোলে তুলে নিলেন। তারপর চোখমুখে চিবুকে চুমু দিয়ে একগাল হেসে বললেন, এরা সব আমার নাতি নাতনি। বিকেলটা এদের নিয়ে কাটে আমার। বুড়োর চােখে-মুখে কি এক প্রশান্তি। এ মুহুর্তে যেন নিজের সকল দীনতা ভুলে গেছেন তিনি। চেয়ে দেখতে বেশ ভালো লাগছিলো কাসেদের। কিছুক্ষণের জন্যে হয়তো সে অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলো। হঠাৎ নজরে এলো, জানালায় ঝোলানো আধখানা পর্দার ওপাশে একটি মেয়ে এদিকে পিছন করে আছে। কালো ঘন চুলগুলো তার পিঠময় ছড়ানো। গায়ের রংটাও কালো। চিকন হাত জোড়া দিয়ে চুলের অরণ্যে উকুন খুঁজছে সে। চেহারাটা ভাল করে দেখবার উপায় নেই। পাশ থেকে যেটুকু দেখা গেল তাতে মনে হল নাকটা বেশ তীক্ষ্ণ আর চোখজোড়া বড় বড়।

    মকবুল সাহেব তার নাতি নাতনিদের নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। বলে গেলেন, আপনি বসুন, আমি এক্ষুণি আসছি।

    কাসেদ নড়েচড়ে বসলো।

    জানালার পাশ থেকে চোখজোড়া সরে এসেছিলো, আবার সেদিকে তাকালো কাসেদ। মেয়েটি এখনো বসে আছে। মকবুল সাহেবের মেয়ে। হয়তো সবার বড়। কিম্বা মেজো, কিম্বা সেজো। বিকেল বেলার স্নান আলোয় ধীরে ধীরে অস্পষ্ট হয়ে আসছে সে। একটু পরে তাকে আর দেখা যাবে না। কালো মেয়ে সন্ধ্যার আলোতে হারিয়ে যাবে।

    কাসেদ নিজেও জানে না, কখন সে জানালার দিকে ঈষৎ ঝুঁকে পড়েছিলো, ঔৎসুক্যে আনত দেহ সহসা সচকিত হলো। মনে মনে লজা পেলো কাসেদ। একটা অপরিচিত মেয়েকে দেখার জন্যে অমন করছে কেন সে? এ প্রশ্নের জবাব সে দিতে পারবে না। সে জানে মেয়েটাকে দেখতে তার ইচ্ছা করছে, ভালো লাগছে, সুন্দর লাগছে। অন্তত বিকেলের এই বিশেষ মুহুর্তটিতে। এ যে কাসেদ সাহেব, আপনাকে অনেকক্ষণ একা বসিয়ে রেখেছি, কিছু মনে করেন নি তো? মকবুল সাহেব এসে ঢুকলেন ভেতরে। পানে মুখখানা ভরে এসেছেন তিনি। হাতে একখানা ছাতা। ছাতাটার দিকে চোখ পড়তে কাসেদ চিনলো। তার ছাতা। কিন্তু যেমনটি ছিলো তেমনটি নেই। উপরে, নিচে, মাঝখানে অনেকগুলো ক্ষত। মকবুল সাহেব একবার ছাতা আর একবার কাসেদের মুখের দিকে তাকিয়ে সলজ্জ কণ্ঠে বললেন, ছাতাটা আপনাকে দেয়া গেলো না কাসেদ সাহেব, ওটা মেরামত করতে হবে।

    কাসেদ পরীক্ষণে বললো, ঠিক আছে, আমি নিজেই মেরামত করে নেবো।

    মকবুল সাহেব বললেন, না, না, তা কেমন করে হয়। বলতে গিয়ে মুখখানা বিরক্তিতে ভরে এলো তার। একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, এই ছেলে পিলেদের নিয়ে আর পারা গেলো না। একটা জিনিস এদের জন্যে ঠিক থাকে না, এত মারধোর করি– সহসা দরজার দিকে চোখ পড়তে থেমে গেলেন তিনি।

    দরজার ঝুলােন ময়লা পর্দাটা ঈষৎ নড়ে উঠলো।

    কে যেন পাশে দাঁড়িয়ে।

    অন্ধকারে তাকে ঠিক দেখা গেলো না।

    চুড়ির আওয়াজ শুনে মনে হলো একটি মেয়ে।

    হয়তো সেই মেয়েটি, যে একটু আগে আঙ্গিনার পাশে বসে বসে মাথায় উকুন খুঁজছিলো।

    কাসেদ নড়েচড়ে বসলো।

    মকবুল সাহেব হাতের ছাতাখানা টেবিলের উপর নামিয়ে রেখে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন।

    পর্দার ওপাশ থেকে একখানা শীর্ণ হাত বেরিয়ে এলো সামনে। এক পেয়ালা চা আর একটা পিরিচে কিছু মিষ্টি।

    হাতজোড়া সরে গেলো।

    পর্দাটি ঈষৎ নড়ে উঠলো আবার।

    কাপ আর পিরিচখানা সামনে নামিয়ে রাখলেন মকবুল সাহেব। বললেন, গরিবের বাসায় এসেছেন–কথাটা শেষ করলেন না তিনি। এ ধরনের কথা সাধারণত শেষ করা হয় না।

    চায়ের কাপটা নীরবে সামনে টেনে নিলো কাসেদ।

    চা খেয়ে যখন রাস্তায় বেরিয়ে এলো তখন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমেছে।

    জাহানারাদের ওখানে অনেকদিন যাওয়া হয় নি।

    আজ রাতে, এমনি রাতে একবার গেলে মন্দ হয় না। কিন্তু জাহানারা সেতার শেখবার জন্যে একটা মাস্টার রাখার কথা বলেছিলো। গেলেই হয়তো প্রশ্ন করবে, কই আমার মাস্টার ঠিক করেন নি?

    জবাবে কোন রকমের অজুহাত দেখানো যাবে না। বলা যাবে না, কাজের চাপ ছিলো কিম্বা সময় করে উঠতে পারিনি। তাহলে হয়তো অভিমান করে বসবে সে। বলবে, আমার জন্যে না হয় কাজের একটু ক্ষতিই হতো।

    মেয়েরা এমনি হয়। তারা যাকে ভালবাসে তাকে বড় স্বাৰ্থপরের মত ভালবাসে।

    লালবাগের চৌরাস্তায় এসে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে রইলো কাসেদ। যাবে কি যাবে না।

    রাস্তার মোড়ে বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে একখানা চলন্ত বাসে উঠে পড়লো সে। বসবার জায়গা নেই। রড ধরে এখানেও দাঁড়িয়ে থাকতে হলো তাকে।

    জাহানারীদের বুড়ে চাকরানীটা বারান্দায় বসে বসে কি যেন সেলাই করছিলো।

    কাসেদকে দেখে একগাল হেসে বললো, আপা মাস্টারের কাছে সেতার শিখছে।

    বাড়িতে ঢুকে থমকে দাঁড়ালো কাসেদ। তাহলে জাহানারা কাসেদের অপেক্ষায় না থেকে নিজেই একজনকে খুঁজে নিয়েছে। নিজেকে এ মুহুর্তেও বড় অপরাধী মনে হলো তার। কাসেদের জন্যে অপেক্ষা করে হয়তো হতাশ হয়ে পড়েছিলো জাহানারা। অবশেষে নিজেই একজনকে খুঁজে নিয়েছে।

    ওকে চুপ থাকতে দেখে বুড়ে চাকরানীটা কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো, তারপর মৃদু হেসে সেলাইয়ে মনােযোগ দিলো আবার।

    বুড়ির সামনে সহসা অস্বস্তি বোধ করলো কাসেদ।

    জাহানারার ঘর থেকে সেতারের টুং-টাং আওয়াজ শোনা যাচ্ছে আর মুদু হাসির শব্দ।

    সেতার শিখতে বসে হাসছে জাহানারা। কেন?

    সেতারের সঙ্গে হাসির কোন সম্পর্ক নেই।

    দৌড়গোড়ায় একটু ইতস্তত করে ভেতরে ঢুকে পড়লো কাসেদ।

    মেঝের উপর একখানা ফরাস পেতেছে জাহানারা; একপাশে একটা সেতার হাতে সে বসে; অন্য পাশে ফর্সা রঙের রোগা পাতলা একটি ছেলে। পরনে পায়জামা-পাঞ্জাবি। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা।

    কাসেদ ভেতরে ঢুকতেই সেতারের ওপর ধরা হাতখানা সহসা থেমে গেলো। কাসেদের চোখের দিকে এক পলকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো জাহানারা। তারপর হেসে দিয়ে বললো, আপনি? এতদিন আসেন নি যে?

    কাসেদ সহসা কোন জবাব দিতে পারলো না। কিছু বলতে গিয়েও পাশে বসা ছেলেটির দিকে চোখ পড়তে থেমে গেল সে।

    জাহানারা বললো, উনি আমাকে সেতার শেখাচ্ছেন।

    দু’জনে হাত তুলে আদাব বিনিময় করলো ওরা।

    কাসেদ বললো, ওনার কথা আগেই শুনেছি।

    জাহানারা কৌতুহলভরা চােখে তাকালো ওর দিকে, কার কাছ থেকে শুনেছেন?

    কাসেদ বললো, বুড়ির কাছ থেকে।

    জাহানারার সেতারের মাস্টার বললেন, দাঁড়িয়ে কেন, বসুন না।

    কাসেদ ইতস্তত করে বললো, তাহলে আমি এখন যাই। আপনাদের গুরুছাত্রীর সাধনায় অকারণ ব্যাঘাত সৃষ্টি করা উচিত নয়। ওর গলার স্বরে অসতর্ক অভিমান ঝরে পড়লো।

    পরীক্ষণে নিজেই সেটা বুঝতে পারলো কাসেদ। লজ্জায় দু’জনের কারো দিকে তাকাতে পারলো না সে।

    জাহানারা স্থিরচােখে ওর দিকে তাকিয়ে। একটু আগে মৃদু হাসছিল সে, এখন তার লেশমাত্র নেই। মাস্টার বললেন, একটু বসে গেলেই পারেন। আপনার উপস্থিতি আমাদের কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে না। বলে হেসে উঠলেন তিনি।

    হাসি নয়। এ যেন কাসেদকে বিদ্রুপ করা হলো।

    জাহানারা অত্যন্ত শান্ত গলায় বললো, জানেন তো সাধনার সময় আশ-পাশের কারো অস্তিত্বের কথা সাধকের মনে থাকে না। আমরাও আপনার উপস্থিতির কথা তুলে যাবো।

    কি বলেন? বলে নতুন মাস্টারের দিকে তাকালো জাহানারা। ঠোঁটের কোণে মৃদু। হাসলো। যেন অনেকদিনের চেনাজানা। অনেক কালের আপনজন।

    কাসেদ বসলো নীরবে।

    আজকের এই রাতে না এলেই ভালো হতো। কেন আসতে গেলো সে?

    স্নেহ-প্ৰেম ভালবাসা এর মূল্য নেই।

    এর কোন অর্থ নেই। কেরানী জীবনে।

    জাহানারা। এ কি করলে তুমি জাহানারা। যে তার হৃদয়ের সমস্ত অনুভূতি দিয়ে তোমাকে ভালবাসলো তার কথা তুমি একটুও ভাবলে না। একটিবার স্মরণ করলে না তাকে যে গোপনে তোমাকে নিয়ে অশেষ স্বপ্ন এঁকেছে মনে মনে। দুদিনের পরিচয়ে যাকে পেলে, তাকেই ভালবেসে ফেললে তুমি?

    ভালো বলেই ওকে আমি ভালবেসেছি। জাহানারার গলার স্বর তীব্র এবং তীক্ষ্ণ শোনালো

    কানে।

    কিন্তু ও যে ভালো এ কথা কেমন করে বুঝলে? ক’দিন ওর সঙ্গে মিশেছো তুমি? ওর কতটুকু তুমি জানো? ও একটা ঠগ হতে পারে, জোচ্চোর হতে পারে। তোমার ফুলের মতো পবিত্র জীবন নিয়ে হয়তো ছিনিমিনি খেলতে পারে সে।

    যদি খেলেই তাতে আপনার কিবা এলো গেলো।

    হয়তো কিছুই এসে যাবে না। কিন্তু জাহানারা, তুমি বাচ্চা খুকী নও, বোঝার মত বয়স হয়েছে তোমার। যে চরম সিদ্ধান্ত তুমি নিতে চলেছে, তার আগে কি একটুও ভাববে না, চিন্তা করবে না?

    চিন্তা আমি করিনি সেকথা কেমন করে বুঝলেন? জাহানারা হাসলো।

    হাসলে ওকে আরো সুন্দর দেখায়।

    ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আর কোন কথা বলতে পারলো না কাসেদ।

    হঠাৎ সুর কেটে গেলো।

    জাহানারা বললো, একি, সাধনা না হয় আমরা করছি। কিন্তু আপনি তন্ময় হয়ে আছেন কেন?

    কাসেদ ইতস্তত করে বললো, একটা কবিতার বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম।

    ও, তাহলে আপনি কবিতার ভাবে মগ্ন ছিলেন। আমি ভাবছিলাম বুঝি সেতারের সুর শুনে।

    মাস্টার সবিনয়ে উঠে দাঁড়ালেন। আমি তাহলে এখন চলি?

    জাহানারা ঘাড় দুলিয়ে বললো, কাল আসছেন তো?

    হ্যাঁ, আসবো।

    দেখবেন, আবার ভুলে যাবেন না যেন।

    না, ভুলবো না।

    আপনি সব ভুলে যান কিনা, তাই বললাম। মাস্টারকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেলো জাহানারা।

    ও ফিরে এলে কাসেদ বললো, আমি চলি।

    যাবার জন্যে অমন উতলা হয়ে গেলেন কেন? আপনি এসেছেন বলেই তো মাস্টারকে তাড়াতাড়ি বিদায় দিলাম। জাহানারা মৃদু গলায় বললো, এখানে চুপটি করে বসুন। আমি দু’কাপ চা করে নিয়ে আসি। আমি না। আসা পর্যন্ত যাবেন না যেন। শাসনের ভঙ্গিতে ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে ভেতরে চলে গেল জাহানারা।

    ওর শেষ কথাগুলো মুহুর্তে শান্ত করে দিয়ে গেলো তাকে। তাহলে এতক্ষণ যা নিয়ে এত চিন্তা করছিলো সে, তার কোনটাই সত্য নয়।

    কাসেদের সঙ্গে কথা বলবে বলে মাস্টারকে তাড়াতাড়ি বিদায় করে দিয়েছে জাহানারা।

    জাহানারা তুমি বড় ভালো মেয়ে। বড় লক্ষ্মী মেয়ে তুমি। তাইতো তোমাকে এত ভাল লাগে। ভালবাসি।

    দু’কাপ চা হাতে ওর সামনে এসে বসলো জাহানারা।

    চা আনতে গিয়ে মুখহাত ধুয়ে এসেছে সে।

    শাড়িটা পালটেছে।

    চুলে চিরুনি বুলিয়েছে কয়েক পোঁচ।

    কাসেদ বললো, তাহলে সেতারের মাস্টার ঠিক করেই ফেললেন আপনি?

    আপনার অপেক্ষায় আর কতকাল বসে থাকবো।

    চায়ের কাপটা টেনে নিতে গিয়ে হাত কেঁপে উঠলো। কাসেদের।

    বাইরে রাত।

    ভেতরে দু’জন নীরবে বসে।

    আশেপাশে কারো কোন সাড়া শব্দ নেই।

    সমস্ত পৃথিবী যেন চুপ করে আড়ি পেতে আছে ওরা কি বলে শুনবার জন্য। কাসেদ বললো, আপনার আঙ্গুলে একটা কালো দাগ পড়ে গেছে।

    জাহানারা বললো, সেতার শিখতে গেলে প্ৰথম প্রথম অমন হয় শুনেছি।

    কাসেদ বললো, হুঁ।

    আবার দু’জনে চুপ করে গেলো ওরা।

    বাইরে তারা জ্বলছে, ভেতরে বাতি।

    কাসেদ ভাবলো, জাহানারাকে মন খুলে আজ। সব কিছু বললে কেমন হয়।

    এখানে কেউ নেই।

    এইতো সময়।

    কাপটা মুখের কাছে এনে নামিয়ে রাখলো কাসেদ।

    জাহানারা নীরবে তাকিয়ে রয়েছে। ওর দিকে।

    সেও কিছু বলতে চায় ওকে।

    সে বলুক। প্রথম সেই বলুক। কাসেদ নড়েচড়ে বসলো।

    জাহানারা বললো, আপনি যেন আগের চেয়েও শুকিয়ে গেছেন।

    কাসেদ বললো, মা-ও তাই বলেন।

    হ্যাঁ, মা কেমন আছেন?

    ভালো।

    নাহার?

    সেও ভালো।

    আপনার শরীর কেমন?

    মোটামুটি যাচ্ছে।

    আবার নীরবতা। শূন্য চায়ের কাপ দুটাে সামনে নামিয়ে রেখেছে ওরা। ওরা এখন মুখোমুখি বসে। জাহানারা জানালার দিকে তাকিয়ে। হয়তো আকাশ দেখছে কিম্বা আঁধারের আলো। কাসেদ দেখছে জাহানারাকে। ওর চোখ, ওর মুখ, ওর চিবুক।

    কি সুন্দর।

    আমাকে কিছু বললেন, জানালা থেকে চোখ সরিয়ে এনে ওর দিকে তাকালো জাহানারা।

    কাসেদ অপ্ৰস্তৃত গলায় বললো কইনা নাতো।

    জাহানারা মৃদু হাসলো। কিছু বললো না।

    জাহানারা। আস্তে করে ওকে ডাকলো কাসেদ।

    বলুন। চাপা স্বরে জবাব দিলো জাহানারা।

    আমি এখন চলি।

    সেকি, এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন? অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো জাহানারা। যেন এমন কিছু একটু আগেও সে ভাবতে পারে নি। যেন এ সময় চলে যাওয়াটা কোনমতে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে।

    কাসেদ বললো, অনেকক্ষণ বসা হলো। আর কত?

    জাহানারা আরো কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর অস্পষ্ট গলায় বললো, আচ্ছা।

    বলতে বলতে উঠে দাড়ালো সে। এ মুহুর্তে ওকে বড় দুর্বল দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে শরীরটা যেন ক্লান্তির ভারে ভেঙ্গে পড়তে চাইছে। বাইরে বারান্দা পর্যন্ত ওকে এগিয়ে দিলো জাহানারা।

    আবার আসছেন তো?

    আসবো।

    বাইরে মুক্ত বাতাসে বেরিয়ে একটা জোর শ্বাস নিলো কাসেদ।

    দিন কয়েক পরে নিউ মার্কেটের মোড়ে শিউলির সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে গেলো। ওর। শিউলির পরনে বাদামী রঙের একখানা শাড়ি। চুলগুলো খোঁপায় বাঁধা। হাতে একটা কাপড়ের থলে।

    আপনি বেশ মানুষ তো, অনুযোগ ভরা কণ্ঠে শিউলি বললো, এত করে বললাম। শুক্রবার দিন গেটের সামনে আমার জন্যে অপেক্ষা করবেন, কই আপনি এলেন না তো? সারাটা বিকেল শুধু ঘর-বার করেছি। শিশুসুলভ হাসিতে সারা মুখ ভরে এলো তার।

    কাসেদ আস্তে করে বললো, ভুলে গিয়েছিলাম।

    ভুলে তো যাবেনই। আমি আপনার কে যে আমার সঙ্গে দেখা করার কথা আপনার মনে থাকবে। গলাটা যেন ঈষৎ কেঁপে উঠল তার।

    শিউলির সঙ্গে পরিচয়ের পর এই প্রথম চমকে উঠলো কাসেদ। ওর চোখের দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকালো সে। কি বলতে চায় শিউলি।

    কি বলতে চায় সে?

    সেই পুরোনো সুরে সহসা হেসে উঠলো শিউলি। আমার দিকে অমন করে চেয়ে থাকবেন না কিন্তু। সুন্দর চোখের চাউনি আমি বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারি না। কে বললো আমার চোখ দু’টি সুন্দর। কাসেদ তখনো ওর দিকে তাকিয়ে। হাতের ব্যাগটা সজোরে দুলিয়ে শিউলি বললো, শুধু কি সুন্দর, অদ্ভুত মায়াময় চোখ দুটাে আপনার, দেখলে ভালবাসতে ইচ্ছে করে।

    তাই নাকি? বলতে গিয়ে ঢোক গিললো কাসেদ।

    শিউলি হাসছে।

    সেই পুরনো হাসি।

    রাস্তার মোড়ে একটি ছেলে আর একটি মেয়েকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আলাপ করতে দেখে আশপাশের লোকজন আড়চােখে লক্ষ্য করছিলো। ওদের। ওদের দৃষ্টির অর্থ বুঝতে বিলম্ব হয় না কাসেদের।

    শিউলিকে সজাগ করে দিয়ে কাসেদ বললো, আপনি সত্যি একেবারে ছেলে মানুষ,

    শিউলি হাসি থামিয়ে বললো, আপনি বুঝি চাপা হাসি পছন্দ করেন?

    এ প্রসঙ্গ নিয়ে আর বেশিদূর এগুতে ইচ্ছে করলো না। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সে বললো, মার্কেটিং করতে এসেছিলেন বুঝি?

    শিউলি হাতের থলেটি দেখিয়ে বললো, হ্যাঁ।

    এখন কি হােস্টেলে ফিরবেন?

    ইচ্ছে তাই ছিলো কিন্তু এখন আর ফিরছি নে।

    তাহলে কি করবেন? একটু অবাক হয়ে শিউলির দিকে তাকালো কাসেদ। শিউলি নির্বিকার গলায় বললো, আপনার সঙ্গে ঘুরবো, বেড়াবো, গল্প করবো। কাসেদ বিব্রত বোধ করলো। ইতস্তত করে বললো, কিন্তু আমি এক বন্ধুর বাসায় যাব ভাবছিলাম।

    ঠিক আছে, সঙ্গে আমিও যাবো। শিউলি পরীক্ষণে বললো, আপনার বন্ধুটি নিশ্চয়ই আমাকে বের করে দেবেন না।

    না, তা কেন করবে, কিন্তু–

    আপনার আপত্তি আছে। এই তো। শিউলি মুখ টিপে হেসে বললো, বন্ধুর ওখান থেকে কোথায় যাবেন শুনি?

    বাসায় ফিরবো।

    বাহ্‌ কি মজা। হঠাৎ যেন হাততালি দিতে ইচ্ছে করলো শিউলির, আনন্দে আটখানা হয়ে বললো, আপনাদের বাসায়ও যাওয়া যাবে আজ। একবার চিনে আসি তো, তারপর আপনার সঙ্গে দেখা হোক না হােক বাসায় গিয়ে হামলা করবো।

    কাসেদ গম্ভীর হয়ে গিয়ে বললো, তারচে এক কাজ করুন, হােস্টেলে ফিরে যান আজ। অন্যদিন নিয়ে যাব বাসায়।

    মুখখানা কালো করে ওর দিকে কিছুক্ষণ নীরবে তাকিয়ে রইলো শিউলি। অদ্ভুত করে একটুখানি হাসলো সে। ধীরে ধীরে বললো, কোন কিছুতে অতিমাত্রায় আগ্রহ দেখানোটা বােকামো। যাকগে, আপনার বাসায় যাবার স্পৃহা আমার আর নেই। চলি। হােস্টেলের দিকে পা বাড়ালো শিউলি। প্রথমে রীতিমত অপ্ৰস্তৃত হয়ে গেলো কাসেদ। পর মুহুর্তে কয়েক পা এগিয়ে ডাকলো, এই যে শুনুন। শিউলি ফিরে দাঁড়িয়ে গম্ভীর স্বরে বললো, কিছু বলার থাকলে বলুন। আমার আবার দেরি হয়ে যাচ্ছে। হাতজোড়া কোথায় রাখবে ভেবে না পেয়ে, একটা হাত নিজের চুলের মধ্যে বুলোতে বুলোতে আর অন্যটা দিয়ে শিউলির ব্যাগটা টেনে ধরে কাসেদ আস্তে করে বললো, বলছিলাম কি চলুন।

    কোথায়? একটু অবাক হলো শিউলি।

    কাসেদ বললো, কেন আমাদের বাসায়।

    ওর মুখের দিকে আবারো কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো শিউলি। একটা সুন্দর হাসির তরঙ্গ সারা মুখে ছড়িয়ে পড়লো, হেসে দিয়ে শিউলি বললো, এতক্ষণ এত ঢং করছিলেন কেন শুনি?

    কাসেদ নিরুত্তর রইলো।

    বাসায় এসে ওর বইপত্র খাতাগুলো ছড়িয়ে একাকার করলো শিউলি।

    এক একটা করে খুললো, পড়লো, বন্ধ করে আবার খুললো সে।

    হঠাৎ তালাবদ্ধ সুটকেসটার দিকে চোখ পড়লে বললো, দেখি, চাবিটা দেখি আপনার?

    কাসেদ বললো, কোন চাবি দিয়ে কি করবেন। আপনি?

    সুটকেসটা খুলবো।

    কেন?

    খুলে দেখবো। ওর মধ্যে কি আছে। শিউলির কণ্ঠস্বর আশ্চর্য নির্লিপ্ত।

    কাসেদ বললো, না, ওটার চাবি আমি কাউকে দিই না।

    ও, ভ্রূজোড়া বিস্তারিত করে ঈষৎ হাসলো। সামনে এগিয়ে এসে চাপা স্বরে বললো, ওর মধ্যে প্রেমপত্রগুলো সব লুকিয়ে রেখেছেন বুঝি? তাহলে থাক।

    ওসব কাউকে না দেখানোই ভালো। হাসতে হাসতে আবার টেবিলটার দিকে সরে গেলো শিউলি।

    ও চলে গেলে মা শুধোলেন, মেয়েটি কে রে?

    কাসেদ বললো, জাহানারার চাচাত বোন।

    মা বললেন, ও তাই, গলার স্বরটা অনেকটা জাহানারার মত।

    মেয়েটি কি করে?

    কলেজে পড়ে।

    এখানে বুঝি বাসা আছে ওদের।

    না। ও হোষ্টেলে থাকে।

    মা। তবু এত কথা জিজ্ঞেস করলেন, নাহার একটি কথাও জিজ্ঞেস করলো না। ওরা যখন ভেতরের ঘরে বসে কথা বলছিলো তখন নিজ হাতে চা বানিয়ে ওদের দিয়ে গেছে। নাহার। আর কিছু লাগবে কিনা, কথা না বলে ইশারায় কাসেদকে প্রশ্ন করেছে। তারপর কাসেদ যখন শিউলির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ওর, তখনো উত্তরে একটা ছোট্ট আদাব জানিয়ে নিজের কাজে ফিরে গেছে নাহার। ওর ব্যবহারটা বড় অসামাজিক বলে মনে হলো কাসেদের।

    শিউলি চলে গেলে নাহারকে ডাকলে সে, আচ্ছা, তোমার একি স্বভাব বলতো? একজন ভদ্রমহিলা বাসায় এসেছে, তার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলাম, পরিচয় করিয়ে দিলাম, দু’চারটে কথা বলবে, একটু আলাপ করবে, তা নয়, একেবারে চুপ। তোমার কি কথা বলতে কষ্ট হয় নাকি। বুড়ো-আঙ্গুল দিয়ে মেঝেতে দাগ কাটতে কাটতে নাহার জবাব দিলো, আলাপ করার কিছু থাকলে তো। বলে এলোমেলো করে রাখা বইগুলো গুছাবার কাজে লেগে গেলো নাহার। একটার পর একটা, বইগুলো আবার সুন্দর করে সাজিয়ে রাখছে সে। কাসেদ চুপ করে রইলো। আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।

    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআরেক ফাল্গুন – জহির রায়হান
    Next Article দামেস্কের কারাগারে – এনায়েতুল্লাহ্ আলতামাশ

    Related Articles

    জহির রায়হান

    আরেক ফাল্গুন – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    হাজার বছর ধরে – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    আর কত দিন – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    একুশে ফেব্রুয়ারী – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    কয়েকটি মৃত্যু – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    তৃষ্ণা – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.