Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শ্যামাঙ্গীর ঈশ্বর সন্ধান – জর্জ বার্নাড শ

    জর্জ বার্নাড শ এক পাতা গল্প129 Mins Read0

    শ্যামাঙ্গীর ঈশ্বর সন্ধান – ১

    এক

    এ কাহিনীর পটভূমি আফ্রিকার গভীর অরণ্য। মিশনারী মেমদিদিটির কাছে অরণ্যের কালো মেয়েটির দীক্ষাগ্রহণ সম্পন্ন হল।

    খর্বুটে চেহারার মেমদিদিটির বয়েস তিরিশের নিচেই হবে। নিবাস, সুদূর ইংল্যাণ্ড। ছোট্ট দেহটায় বিশাল একটা হৃদয় বয়ে বেড়াচ্ছেন। সংসারে শান্তি-টান্তি জুটল না অমন একটা হৃদয় নিয়ে। তাই জঙ্গলে চলে এলেন অসভ্য বুনোগুলোর মাঝে পরিত্রাতা যীশুর ভালোবাসা বিলিয়ে দিতে। ছোটবেলায় ইস্কুলের ক্লাশে দিদিমণিদের দিকে তিনি এমন উদাস হয়ে শ্রদ্ধাভরে তাকিয়ে থাকতেন যে তাঁকে সবাই করুণা করতেন, কেউ বকাঝকা করতে পারতেন না। অথচ অন্য মেয়েদের সঙ্গে তিনি মিশতেনই না। আর আঠারো বছর না পুরতেই টপাটপ প্রেমে পড়তে লাগলেন চার্চের পাদ্রীগুলোর সঙ্গে। একসঙ্গে ছ জনের সঙ্গে জমে উঠল ভাবসাব। যেই বিয়ের প্রস্তাব এল অমনি টুক টুক করে কেটে পড়লেন। পাদ্রীগুলোও হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। তবে একজন হতাশায় সেঁকো বিষ খেল। এতে অবশ্য মেমদিদিটি তূরীয় আনন্দরই স্বাদ পেলেন। অপার্থিব মহিমার এক মাখো মাখো আস্বাদ আর কি!

    তবে এ ঘটনার পর তাঁর বিয়ের পাট চুকে গেল চিরতরে। যাই হোক, আফ্রিকার কালো মেয়েটি, যাকে খ্রীশ্চান করা হল, বেশ বড়িয়া চীজ মানতেই হবে। চকচকে গা হাত পা, মসৃণ সাটিনের মতো। তার শ্যামবর্ণের পাশে মেমদিদিটি যেন ফ্যাকফ্যাকে সাদা ছাই মাখা ভূত। আর চাল চলন? সে বেশ অস্বস্তিতেই ফেলেছে মেমদিদিকে। দীক্ষা শেষ হতে না হতেই বলে, ‘বলুন, ঈশ্বর কোথায়।’

    মেমদিদি উদাস কণ্ঠে বললেন, ‘তিনি তো বলেইছেন, আমায় খোঁজো!’ খ্রীশ্চান হলি, শিষ্ট মনে সব কিছু মেনে নে না বাবা, তা নয় ধম্মো নিয়ে এটা সেটা কূট প্রশ্ন। প্রভু যীশুকে নিয়ে কত কী যে বানাতে হল তার প্রশ্নের জবাবে! শেষমেষ তাকে ইংরিজি শিখিয়ে, হাতে একটা ছেঁড়া বাইবেল গুঁজে দিয়ে তবে মেমদিদির ছুটি। আর কালো মেয়েটাতো তার মুগুরের মত ডাণ্ডাটা ঘোরাতে ঘোরাতে জঙ্গলে ঢুকল। ঈশ্বরকে ঢুঁড়ে বার করবেই সে!

    প্রথমেই চোখে পড়ল একটা মাম্বা সাপ। ক্ষেপে গেলেই কামড়ায়। কালো মেয়েটি শিক্ষা পেয়েছে জীবজন্তুর প্রতি সদয় হতে। (জীবজন্তুরা কূট প্রশ্ন তোলে না বলে মেমদিদিটির একটু দুর্বলতা ছিল ওদের ওপর।) আর শিক্ষা পেয়েছে নির্ভয় চিত্ত হতে। তাই কালো মেয়েটি ডাণ্ডাটা একটু আড়াল করে বাগিয়ে ধরে সাপটিকে জিজ্ঞাসা করল, ‘ওহে শোনো, তোমাকে কে গড়েছে বল দেখি? কে জাগিয়েছে তোমার মধ্যে খুনের প্রবৃত্তি, আর সে জন্য দিয়েছে বিষ?’

    সাপটা এই শুনে থমকে দাঁড়াল। ইশারায় ডাকল মেয়েটিকে। বলল, ‘আমার সঙ্গে এস, তাঁকে দেখতে পাবে।’

    এঁকে বেঁকে সাপ চলল গাছপালা ছেড়ে পাথুরে জমি বেয়ে ওপর দিকে। মেয়েটিকে নিয়ে এল একটা চোখা নাক-মুখওলা মানুষের সামনে। বেশ খানদানী চেহারা, একমাথা ঘন দোলানো চুল। একমুখ দাড়ি গোঁফ। যেমনি সাদা দেহ, তেমনি সাদা চুল দাড়ি। হাতে একটা রাজদণ্ডের মত ঠ্যাঙা লাঠি।

    বলা নেই কওয়া নেই, সেই লাঠিটা দিয়ে হঠাৎ লোকটা সাপটাকে গদাম করে এক ঘা কসিয়ে সাবাড় করে দিলে।

    এই কাণ্ড দেখে মেয়েটা বেশ রেগেই গেল। বিরক্ত মুখে বলল, ‘ঈশ্বরকে খুঁজতে বেরিয়েছি, পারেন সন্ধান দিতে?’

    ‘তাকে তো পেয়েই গেছিস রে!’ লোকটা চেঁচিয়ে উঠল, ‘বোস দেখি হাঁটু গেড়ে আমার সামনে, পুজো কর আমায়। আমিই গড়েছি স্বর্গ, আমিই গড়েছি ধরিত্রী। যা কিছু দেখছিস সব, সব আমার গড়া। আমিই সাপের মুখে ঢেলেছি বিষ, মায়ের বুকে দিয়েছি দুধ। আমার হাতেই মৃত্যু আর জরা, আমার হাতেই বজ্র এবং বিদ্যুৎ, ঝড়, ঝঞ্ঝা আর মহামারী। এসবই আমার মাহাত্ম্যের চিহ্ন। . . .কই, হাঁটু গেড়ে বোস! . . .আমার কাছে খালি হাতে এসেছিস যে! পরের বার তোর বাচ্চাকে নিয়ে আসবি, বলি দেব। কচি ছানার রক্তের ঘ্রাণ বড় প্রিয় আমার।’

    —আমার বাচ্চা কোথায়, আমি যে কুমারী!

    —তবে তোর বাপকে ধরে নিয়ে আয়, সে তোকে আমার পায়ে বলি দিক। আর শোন, তোর বাপের যে সাঙ্গোপাঙ্গ আসবে তাদের বলিস কিছু পুরুষ্টু পাঁঠা আনতে। বহুদিন পাঁঠার ঝোল খাইনি। না আনলে সব কটাকে ব্যারাম ধরিয়ে টপাটপ মেরে ফেলব, এই বলে দিলুম।’

    মেয়েটির মাথায় আগুন চড়ে গেল। কঠিন গলায় বলল, ‘আমায় কি কচি খুকী পেয়েছ, না বাহাত্তুরে বুড়ি, যে তোমার এসব শয়তানী চালবাজিতে ভয় পাব? সত্যিই যদি ঈশ্বর থাকেন তো তাঁর নামে শপথ করে বলছি, ওই সাপটাকে যেমন মারলে তেমনি তোমায় আমি থেঁতলে—’ বলেই ডাণ্ডাটা মাথার ওপর তুলে পাহাড় বেয়ে তেড়ে এল। আশ্চর্য!চূড়োয় উঠে দেখে কোথা দিয়ে কখন কীভাবে কে জানে, লোকটা চম্পট দিয়েছে।

    মহা ধাঁধায় পড়ল মেয়েটি। এই সংকটে সে তার বাইবেলের প্রথম কয়েকটা পাতা খুলে পড়তে গেল, কিন্তু পাতাগুলো এতই উইয়ে খাওয়া যে ঝুর ঝুর করে বাতাসে আর ধূলোয় মিশে গেল। গভীর হতাশায় দীর্ঘশ্বাস পড়ল মেয়েটির। ফের শুরু হল তার পথ চলা। এবার পথে পড়ল একটা ঝমঝমা সাপ। চললেই তার গায়ের আঁশে শব্দ ওঠে ঝমর-ঝমর করে। মেয়েটি তাকে বলল, ‘তুমি দেখছি বেশ জানান দিয়ে আস। চুপিসাড়ে আস না। ভালো ভালো। তোমার দেবতাটি তাই নিশ্চয়ই ভালো হবেন। কোথায় তিনি বলতে পার?’

    মেয়েটি

    ঝমঝমা সাপ বলল, ‘এস আমার সঙ্গে।’

    সাপের সঙ্গে মেয়েটি হাজির হল এক মনোরম উপত্যকায়। সেখানে রূপোলী চুলদাড়িওলা এক আধবুড়ো লোক একটা ঝকঝকে টেবিল পেতে বসে রয়েছে। টেবিলে ছড়ানো রয়েছে গুচ্ছের লেখাজোকা কাগজ আর কলম। স্বর্গের পরীদের হাতে অমন সুন্দর সুন্দর কলম দেখা যায়। লোকটার বেশ দয়ালু চোখ মুখ, কিন্তু হলে হবে কী, গোঁফ জোড়া মোষের শিঙের মত ওপরদিকে পাকানো। আর ভুরু দুটিতে কীরকম একটা দুষ্টুমির ছায়া।

    বুড়োটা সাপকে দেখেই বলল, ‘বাঃ, এই তো এনেছিস! সাপটাও মহা খুশি হয়ে জঙ্গলে সেঁধোল ঝমর ঝমর করতে করতে। এবার বুড়োটা বলল, ‘ওহে শ্যামাঙ্গী, আমায় ভয় পেয়ো না। আমি নির্দয় ঈশ্বর নই। শুধু একটু তক্কো করি, এই যা। আমাকে পূজো আচ্চা করার কোন প্রয়োজন নেই। দোষে গুণে তৈরি আমি, বুঝলে হে! . . .কই, চুপ করে রইলে যে, কিছু একটা বলো, তক্কো জমাই।’

    কালো মেয়ে : আপনিই গড়েছেন এই পৃথিবী?

    বুড়ো : নিশ্চয়!

    কালো মেয়ে: কেন গড়তে গেলেন এই বিচ্ছিরি জায়গাটা?

    বুড়ো: চমৎকার! বেশ বলেছ হে, এই তক্কোটাই চাইছিলাম। খুব বুদ্ধি তোমার। . . .শোনো, জোব বলে আমার একটা চাকর ছিল। এত ম্যাদামারা যে তাকে অভিশাপ-টভিশাপ দিয়ে একটু চাঙ্গা করতে চাইলাম। তবু ব্যাটা মুখে খোলেনা। তার বৌ তাকে কত শেখাল আমায় গাল পাড়তে। দোষ নেই মেয়েটার। তাকে খুব জ্বালিয়েছি, কষ্ট দিয়ে একেবারে রোগা করে দিয়েছি। তা জোব ব্যাটা একটু-আধটু তক্কো করতে শিখল। তবে আমার প্রকোপে ব্যাটা জর্জরিত হয়ে শেষ পর্যন্ত হার স্বীকার করল।

    কালো মেয়ে: আমি তর্ক করতে আসিনি। জানতে এসেছি, পৃথিবী যখন গড়লেনই, এটাকে এত বদ মুল্লুক করলেন কেন?

    বুড়োটা এই শুনে ক্ষেপে উঠল— ‘বদ মুল্লুক, তারজন্য জবাবদিহি করব তোমার কাছে? আমার খুঁত ধরতে এসেছ? গড়ো না দেখি একটা রূপময় বসুন্ধরা, পারবে? যাও, একটা তিমি মাছ গড়ে নিয়ে এস দেখি! আরে বাবা, তিমি গড়তে গেলে একটা আস্ত সাগর আর আকাশও গড়তে জানা চাই হে। একটা ইঁদুর গড়ার ক্ষমতা নেই আবার জবাবদিহি চায়! মাটি খুঁড়ে এক ফোঁটা জল বের করতে পারে না, আর যে আমি সসাগরা ধরিত্রী খুলে বসে আছি তার কাছে এসেছে স্পর্ধা দেখাতে! আগে এই তক্কের জবাব দাও— তুমি কি নিজেকে আমার চেয়ে বড় বলে মনে কর?’

    কালো মেয়ে বলল, ‘এ তো তর্ক নয়, অহমিকার বুলি। তর্ক কাকে বলে সে সম্পর্কে আপনার কোন ধারণাই নেই।’

    ‘কী!’— গর্জন করে উঠল বুড়োটা। ‘আমি কী জানি আর কী জানি না তার বিচার করবে তুমি? . . .ওরে খুকী, তোর আস্পর্ধা দেখে হাসি পায়।’

    কালো মেয়ে : হাসুন, ক্ষতি নেই, আমি জবাব চাই কেন পৃথিবীটা এমন করে গড়লেন। আমি হলে মানুষগুলোকে এত পাপী করতাম না। কেন আপনি সাপের মুখে বিষের থলি গুঁজেছেন? পাখির মত সুন্দর জীব গড়তে পারেন অথচ কেন গড়লেন বাঁদরের মত কুৎসিত জানোয়ার?

    বুড়ো: বুদ্ধি থাকে তো জবাব দে না কেন গড়েছি এসব।

    কালো মেয়ে: বলব? আপনার মধ্যে লুকিয়ে আছে কুটিল মন।

    বুড়ো: হেঁয়ালি কোরো না, আমি তক্কো চাই!

    কালো মেয়ে : যে ঈশ্বর আমার কথার জবাব দিতে পারেন না তাঁকে আমার কোন প্রয়োজন নেই। এসব সৃষ্টি সত্যিই আপনার কিনা সন্দেহ আছে। তিমি মাছের কথা বলছিলেন না? সেও তো বিশ্রী, বেঢপ, কুচ্ছিৎ জন্তু। ছবি দেখেছি আমি।

    বুড়ো: ওরে বোকা, সবই আমার ইচ্ছে। কুচ্ছিৎ তিমি গড়ে যদি আমি মজা পাই তো তোর কী রে?

    কালো মেয়ে : নাঃ, আপনার সঙ্গে আর বকতে পারছি না। আপনি মেজাজ ঠিক রাখতে পারেন না, ব্যবহারও যথেষ্ট খারাপ। . . .বেচারা জোব! আপনাকে মিছিমিছি শুধু শ্রদ্ধাই করে গেল। এই জঙ্গলে দেখছি অনেক বুড়োই ঈশ্বর সেজে বসে আছে। দেখাচ্ছি মজা।

    এই বলে মেয়েটা ডাণ্ডা তুলল। আধবুড়ো ঈশ্বর অমনি ক্ষিপ্র গতিতে টেবিলের তলা দিয়ে মাটির গর্ভে সুড়ুৎ করে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

    মেয়েটি ফের বাইবেলে মনোনিবেশ করতে যাবে এমন সময় একটা দমকা হাওয়ায় গোটা বিশেক পাতা খুলে গিয়ে এদিক ওদিক উড়ে পালাল।

    ঈশ্বরের খোঁজ মিলল না

    মেয়েটি গভীর মনোবেদনা নিয়ে বসে রইল। ঈশ্বরের খোঁজ মিলল না, বাইবেলেরও দফা গয়া। আর বুড়ো দুটোর সঙ্গে বকে বকে মেজাজটাও খিঁচড়ে গেছে। সাত-পাঁচ ভাবছে এমন সময় গ্রীক পোষাকে ফিটফাট, দাড়ি গোঁফ কামানো এক ছোকরা কোত্থেকে এসে হাজির। মেয়েটি উঠে দাঁড়িয়ে গভীর শ্রদ্ধায় নত হয়ে বলল, ‘মশাইয়ের চোখ দুটি দেখছি জ্ঞানীর মত। বলতে পারেন, ঈশ্বর থাকেন কোথায়?’

    ছোকরাটি বলল, ‘ওসব ভেবে কষ্ট পেয়ো না। যেমন যা দেখছ, মেনে নাও। এসবের ঊর্ধ্বে আর কিছু নেই, থাকতে পারে না। সব পথ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে কবরের ধূলোয়। নৈরাজ্যের অন্ধকারে কী কাজে লাগবে জ্ঞানগম্মির অহঙ্কার? শোনো, নাকের ডগায় যা যা দেখছ, তাই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকো।’

    কালো মেয়ে : কিন্তু আমার মন যে আরো দূরে যেতে চায়! ঈশ্বরই যে আমার সব আশা ভরসা। তাঁকে পাচ্ছি কই?

    ছোকরা: যদি বলি ঈশ্বর-টিশ্বর কেউ নেই?

    কালো মেয়ে : সেকী! এ তো অজ্ঞতার কথা! এসব ভাবলে যে আমি খারাপ মেয়ে হয়ে যাব!

    ছোকরা: কে বলেছে এ সব? আর যদি খারাপ মেয়েই হয়ে যাও, ক্ষতিটা কী?

    কালো মেয়ে: না না, খারাপ হতে আছে নাকি?

    ছোকরা: তাহলে আগে ঠিক করে জানো, তুমি ভালো না খারাপ।

    মেয়েটি চিন্তায় পড়ে গেল। ভেবে-টেবে বলল, ‘এই শুধু জানি যে আমায় ভালো হতে হবে। ভালো হতে হবে। ভালো হওয়া কি খারাপ?’

    ছোকরা: হেসে বলল, ‘এ সব চিন্তার কোন মানেই নেই।’

    মেয়েটি বলল, ‘আপনার কাছে মানে নেই, কিন্তু ঈশ্বরের কাছে আছে। আমার সর্বদা কী মনে হয় জানেন? মনে হয় যেদিন সত্যিকারের ভালো মেয়ে হব সেদিনই পাব ঈশ্বরের দেখা।’

    ‘কী খুঁজতে কী পাও দেখ। আমার উপদেশ হচ্ছে, কাজকাম করে যাও, যে কটা দিন বাঁচবে জীবনের কাজে লাগাও। মরলে তো কাজও নেই কম্মোও নেই, এসব ফালতু জিজ্ঞাসাও অবশ্য নেই।’

    ‘মরার পরেও তো কিছু আছে!’ মেয়েটি বলল, ‘এখানে না বাঁচলেও মরার পরের ভবিষ্যৎটাতো মানতে হবে!’

    ছোকরা: তুমি কি তোমার জন্মের আগের কথা জানো? অতীত, যা এক সময় সত্যি ঘটেছে তা যদি না জানো তো ভবিষ্যৎ, যা ঘটেইনি সেটা নিয়ে মাথাব্যথায় কী লাভ?

    কালো মেয়ে: কিন্তু তাতো ঘটবেই, সূর্য তো রোজ উঠবেই!

    ছোকরা: কে বলেছে? সূর্যও একদিন জ্বলে জ্বলে ফুরিয়ে যাবে।

    কালো মেয়ে: জীবনও তো সূর্যের মতো, একটা শিখা। দিন দিন পুড়ে চলেছে। কিন্তু প্রতিটি শিশুর জন্মলগ্নে সে আগুন নতুন করে জ্বলে উঠছে। মৃত্যুর চেয়ে তাই জীবন বড়। হতাশার চেয়ে আশা। আমি আমার কাজ করব যখন জানব আমার কাজটা ভালো। সেটা জানতে হলে ভূত-ভবিষ্যৎ জ্ঞানের বড় প্রয়োজন।

    ছোকরা: এবার কট মট করে তাকিয়ে বলল, ‘অর্থাৎ তুমি নিজেই একটা আস্ত ঈশ্বর বনতে চাও!’

    কালো মেয়ে: মুখ নামিয়ে বলল, ‘সে চেষ্টা কি অন্যায়?’

    এ সবের পর মেয়েটি জানতে চাইল ছেলেটির পরিচয়। ছেলেটি বলল, ‘আমার নাম কোহেলেথ। ধর্মের জ্ঞান বিলোই। আমিও ঈশ্বরকে পেলাম না। যদি তুমি পাও, প্রার্থনা করি তিনি তোমার সহায় হোন, আর শোন, গ্রীক ভাষাটা রপ্ত কর, এটা তাবৎ জ্ঞানের ভাণ্ডার!’

    হাত নেড়ে বিদায় নিয়ে চলে গেল ছেলেটি। কালো মেয়ে সোজা দিকে না গিয়ে অন্য আর একদিকে হাঁটা দিল। গভীর চিন্তার ছায়া পড়েছে তার মনে। চলতে চলতে, ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে পড়ল, ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই চলতে লাগল।

    হাত নেড়ে বিদায়

    হঠাৎ নাকে এল হিংস্র জন্তুর ঘ্রাণ। চমকে চোখ খুলে দেখে পথ জুড়ে একটা ধেড়ে সিংহ বসে বসে রোদে গা গরম করছে, যেন উনুনের ধারে ছাপোষা বিড়ালটি। পশুরাজের কেশরটি সত্যিই মনোরম, অন্যপ্রদেশের সিংহের ভেজা ন্যাতার মত চুপসানো নয়, বেশ ফোলা ফোলা।

    কালো মেয়েটি এগিয়ে এল। যেন কোন পাহাড়ী ফুল তুলছে। এই ভাবে আদুরে হাতে সিংহের থুতনি ধরে একটু নেড়ে দিল সে। পশুরাজ (রাজা রিচার্ড তাঁর পোষাকী নাম) হাস্যময়তায় উদ্ভাসিত হলেন। বিগলিত হয়ে চলতে লাগলেন মেয়েটির সঙ্গে। সাবধানে চলল ওরা। সিংহের চেয়েও বলবান জন্তুর অভাব নেই জঙ্গলে। ওরা দেখতে পেল ঢেউ খেলানো চুল দোলানো এক মানুষকে। একটা বেঢপ ছয় নম্বরী নাক তার। পরনে তার কিচ্ছুটি নেই, এক জোড়া চটি ছাড়া। কুঞ্চিত চোখ মুখ, পেল্লায় নাসিকায় দুটো ইয়া ইয়া ফুটো। গলা দিয়ে তার ঘড়ঘড়ে আর্তনাদের মত একটা আজব শব্দ হচ্ছিল। যেন কোন বিপাকে পড়েছে। মেয়েটিকে দেখে কিন্তু গর্জন থামিয়ে বেশ নিবিষ্টচিত্তে চেয়ে রইল।

    কালো মেয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে মহোদয়, আপনি কি সেই ভবিষ্যৎদ্রষ্টা যোগী পুরুষ যিনি নগ্ন দেহে বিকট সুরে বিলাপ করেন?’

    ‘তা একটু বিলাপ-টিলাপ করি বইকী।’ বিনয়ী সুরে লোকটি বলল। ‘আমার নাম মাইকা। কী করতে পারি তোমার জন্যে?’ লোকটি শুধালো।

    ‘আমি ঈশ্বরকে খুঁজছি,’ মেয়েটি জানাল, ‘এক বুড়োর দেখা পেয়েছিলাম যিনি পাঁঠার ঝোল খেতে চাইলেন আর আমার বাচ্চাকে হাঁড়ি কাঠে ফেলে—’

    হিংস্র জন্তুর ঘ্রাণ

    এই না শুনে লোকটা এমন বিশ্রী, উৎকট বিলাপ শুরু করল যে রাজা রিচার্ড ভয়ের চোটে ঝটপট একটা ঝোপের আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে চুপচাপ বসে ল্যাজ আছড়াতে লাগলেন এদিক ওদিক। পরিস্থিতি খুব ভালো ঠেকল না তাঁর।

    লোকটা চেল্লাতে লাগল, ‘সে বুড়ো একটা জোচ্চোর। একটা রাক্ষস। সত্যিকারের ঈশ্বরকে পাওনি তুমি। তিনি তোমার কাছে প্রেম ছাড়া আর কী চাইতে পারেন? তিনি তোমার কাছে চাইবেন ক্ষমা আর ন্যায় বিচারের গুণ। চাইবেন তোমার সঙ্গে দীনজনের মতো পথ চলতে। আর কী চাইবেন তিনি! আর কী!. . .’

    মেয়েটি বুঝল এই বুড়োটা তিন নম্বর ঈশ্বর। একে অন্যগুলোর থেকে ভালোই ঠেকছে। তবে ক্ষমা, ন্যায় বিচার এ সব তো জজ সাহেবদের সম্পত্তি। আর কোথায় চলেছি না জানলে ঈশ্বরের পায়ে পায়ে হেঁটে কী লাভ তাও বুঝতে পারল না মেয়েটি।

    বুড়োটা বলল, ‘দরিদ্রের মত চলতে শেখ, পথ দেখাবেন তিনি। কোথায় চলেছ সে জেনে তুমি কী করবে?’

    কথাটা মেয়েটির মনঃপূত হল না। বলল, ‘আমার কি চোখ নেই? আমি নিজেই চলতে পারি। তিনি আমায় চোখ, মন সব দিয়েছেন। তবে কেন আর তাঁকে আমার হয়ে দেখতে কিংবা ভাবতে বলি?’

    এই শুনেই বুড়ো লোকটা ফের বীভৎস বিলাপ জুড়ল। রাজা রিচার্ড তো চমকে ল্যাজ তুলে দে দৌড়। মাইল দুয়েক টানা ছুটে তবে হাঁফ ছাড়ে। আর মেয়েটি তার উল্টো দিকে দৌড়ল প্রায় মাইল খানেক। অবশেষে তার হুঁস ফিরল। ভাবল, ‘বেআক্কেলে বুড়োটার ভয়ে এমন দৌড়চ্ছি কেন? দূর দূর!’ তারপর ডাণ্ডাটা পাকাতে লাগল সে।

    বুড়ো লোকটা

    কে যেন কোত্থেকে বলে উঠল, ‘তোমার ভয়, তোমার আশা আকাঙ্ক্ষা সবই তোমার মনগড়া।’ এ বক্তাটিও প্রৌঢ়, দৃষ্টি অতি ক্ষীণ। চোখে মোটা কাচের চশমা। একটা এবড়ো-খেবড়ো গাছের গুঁড়ির ওপর বসে আছেন।

    ‘তোমার অভ্যাসের অজানিত প্রতিক্রিয়ার তাড়নায় তুমি অমন দৌড়াচ্ছিলে।’— লোকটি বললেন। ‘সিংহের বনে বাস কর, তাই গর্জন শুনলেই পালানোর অভ্যাস অর্জিত হয়েছে। ঐ যে বললাম, অভ্যাসজনিত অজানিত তাড়না। পঁচিশ বছর গবেষণাগারে কাটিয়ে আমি এইসব আবিষ্কার করেছি। অসংখ্য কুকুরের খুলি ঘেঁটেছি। ওদের গাল ফুটো করে লালা ঝরিয়েছি। মানুষেরা আমায় নতমস্তকে প্রণাম করেছে প্রাণীর আচার ব্যবহার সংক্রান্ত এইসব আবিষ্কারের জন্যে।’

    মেয়েটি ব্যঙ্গ করল, ‘এর জন্যে পঁচিশ বছর লাগল! পঁচিশ সেকেণ্ডে আমি এসব বলে দিতে পারতাম। আর অতগুলো কুকুরের প্রাণ যেতনা।’

    ‘তোমার অজ্ঞতা সীমাহীন’, ক্ষীণ দৃষ্টির মানুষটি বললেন। ‘ব্যাপারটা একটা কচি বাচ্ছাও বোঝে, এই যেমন তুমি বুঝে গেলে। কিন্তু গবেষণাগারে প্রমাণিত তো হয়নি কোনদিন! আর তাই এটাকে বৈজ্ঞানিক সত্য কোনদিনই বলা যেত না যদি না আমি এ বিষয়ে গবেষণা করতাম। আচ্ছা, তুমি কি কোনদিন কোন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছ?’

    ‘বহুবার!’ বলল মেয়েটি। ‘এই তো, এক্ষুনি করতে পারি। . . .জানেন কি আপনি কীসের ওপর বসে আছেন?’

    ‘জানি। আমি বসে আছি এক অতি প্রাচীন মৃত মহীরুহের শরীরে, যে শরীর সময়ের বিধ্বংসী প্রভাবে সতত ক্ষয়িষ্ণু—’

    ‘ভুল কথা!’ কালো মেয়ে চেঁচিয়ে উঠল, ‘আপনি জানেনও না, দিব্যি বসে আছেন একটা ঘুমন্ত কুমীরের পিঠে!’

    আঁক করে উঠে চশমা সামলে লোকটা উদভ্রান্তের মত দৌড় দিল। তারপর কাছাকাছি যে গাছটা পেল সেটায় হাঁচড় পাঁচড় করে বেয়ে তরতর করে উঠে গেল। কাজটা এ বয়েসে বেশ অস্বাভাবিকই বটে।

    চশমা সামলে লোকটা

    মেয়েটি হেসে বলল, ‘আরে মশাই, নেমে আসুন। আপনার জানা উচিৎ ছিল কুমীর নদীতে থাকে। আমি শুধু মাত্র একটা বৈজ্ঞানিক গবেষণা করলাম আপনার ওপর।’

    লোকটা পিট পিট করে চারিদিক দেখে কাতর কণ্ঠে বলে উঠল, ‘নামি কী করে? পড়ে যে হাত পা ভাঙব!’

    ‘তাহলে উঠলেন কী করে?’ মেয়েটি জিজ্ঞাসা করল।

    ‘তাই তো ভাবছি!’ লোকটি প্রায় কেঁদে ফেলে আর কি!

    ‘হায় হায়, আমার বোধ হয় আর মাটিতে নামা এ জীবনে আর হল না!’ চশমা খুলে চোখ মুছতে লাগল লোকটি।

    কালো মেয়েটি শুধু বলল, ‘আমার গবেষণাটি বেশ চমকপ্রদ বলুন?’

    ‘নির্দয় গবেষণা, কুটিল গবেষণা। বদমাশ মেয়ে কোথাকার—’ গাছ থেকে চিৎকার ভেসে এল— ‘আমার মত এমন ক্ষীণজীবী মানুষকে মানসিক আঘাত হেনে তার হৃদযন্ত্রকে এমন দুর্বল করা কি উচিৎ কাজ? সারাজীবন আমি দ্বিতীয়বার কোন গাছের গুঁড়িতে বসতে পারব না। . . . আমার নাড়ী দ্রুত ছুটছে! হাত যদি ছেড়ে যায় তবে মাধ্যাকর্ষণে টুপ করে একটা আধলা ইঁটের মত খসে পড়ব আমি। আমার এ কী হাল করলে!’

    ‘জন্তু-টন্তু নিয়ে এত গবেষণা করেছেন, আর এটুকুতেই এত ভয়? আমাদের জঙ্গলে আদিম জাদুর জোর আপনার গবেষণার চেয়ে দেখছি শতগুণ বেশি। একটা কথা বলে কেমন আপনার মত দুর্বল মানুষকে গাছে চড়িয়ে দিয়েছি!’

    ‘দোহাই, আরো একটা কথা বল যাতে আমি আবার মাটিতে নেমে পড়তে পারি!’ লোকটা কাকুতি মিনতি করল।

    ‘আচ্ছা তাই বলব’, এই বলেই মেয়েটি হঠাৎ বিকট চেঁচাল, ‘আরে আরে, সাবধান! একটা কালকেউটে আপনার ঘাড় চাটছে!’

    এই না শুনেই লোকটা এক মুহূর্তে গাছ থেকে কী কায়দায় যেন সটান পৌঁছে গেল মাটিতে। যদিও শেষটায় পিঠের দিক করে পড়ল, তবে সামলে নিয়ে খাড়া হল। তারপর ব্যাজার মুখে গা হাত পা ঝেড়েঝুড়ে বলল, ‘নিশ্চয়ই মিথ্যে কথা, সাপটাপ কিছু নেই।’

    ‘তা তো নেইই। মিথ্যে অমন ভয় পেয়ে গেলেন!’

    ‘মোটেই ভয় পাইনি, বিন্দুমাত্র না’— চিৎকার জুড়ল লোকটি। মেয়েটি নরম গলায় জানাল, ‘কিন্তু যে ভাবে নেমে এলেন মনে হল ভয় পেয়েছেন।’

    যেন কিছুই হয়নি এইভাবে লোকটি বলল, ‘ঐ যে বলছিলাম না অভ্যাসজনিত অজানিত প্রতিক্রিয়ার তাড়না। . . .ভাবছি কুকুরকে এমনভাবে গাছে চড়ানো যায় কিনা।

    কালো মেয়ে : কেন, কুকুরকে গাছে চড়িয়ে কী হবে?

    বৈজ্ঞানিক: মানে বিষয়টি বেশ একটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে স্থাপন করা আর কি!

    কালো মেয়ে: যত বাজে কথা। কুকুর আবার গাছে চড়ে?

    বৈজ্ঞানিক: আরে, আমিও কি চড়তে পারতাম কল্পিত কুমীরের তাড়া না খেলে? কী করে কুকুরকে কুমীরের কল্পনা করানো যায় বলোতো?

    কালো মেয়ে: সত্যিকারের কুমীর ছেড়ে দিলে কেমন হয়?

    বৈজ্ঞানিক: ওতে খরচ পড়বে বেশি। কুকুরের পিছনে তেমন খরচাই নেই। কুকুরের ট্যাক্সোওলা আসে মাঝে মাঝে, তখন কুকুরটাকে খড়ের গাদায় লুকিয়ে ফেললেই হল। আর চোরাই কুকুর আজকাল পাওয়াও যাচ্ছে বেশ সস্তায়। সেক্ষেত্রে কুমীর বড় মাগগী। এ নিয়ে অনেক ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন।

    কালো মেয়ে: চলে যাবার আগে দয়া করে বলে যাবেন ঈশ্বরে আপনার বিশ্বাস আছে কিনা।

    বৈজ্ঞানিক: ঈশ্বর নামক বস্তুটি এক বস্তাপচা আদিম প্রকল্পনা। এই সৌরজগৎ এক বিশাল প্রকল্পধাক্কা আর কম্পনজনিত তাড়নায় এর সৃষ্টি। . . .ধর একটা চিমটে দিয়ে তোমার হাঁটুটা খুবলে নিলাম, তাহলে—

    কালো মেয়ে: তাহলে আমার এই ডাণ্ডাটা দিয়ে তোমার ঠ্যাঙেও আমি দেব একটি ঘা।

    বৈজ্ঞানিক: একটু চমকে উঠে সামলে নিলেন। তারপর বকেই চললেন, ‘বৈজ্ঞানিক সূত্রের খাতিরে এইসব অপ্রয়োজনীয় আঘাতের তাড়না বারণ হওয়া উচিৎ। তবুও চিন্তার পারম্পর্যজনিত তাড়নায় নানা উদাহরণের পরিপ্রেক্ষিতে এইসব আঘাতেরও মূল্য আছে বইকী! এই প্রতিক্রিয়ার ওপর আমার দীর্ঘ পঁচিশ বছরের গবেষণা আছে।’

    কালো মেয়ে: কীসের প্রতিক্রিয়া?

    বৈজ্ঞানিক: সারমেয়র থুতুর।

    কালো মেয়ে: আপনি একজন জ্ঞানবৃদ্ধ, তাই না?

    বৈজ্ঞানিক: না, জ্ঞানী হবার আগ্রহ আমার নেই। নানা অজানা তথ্য আমি পৃথিবীকে সরবরাহ করে থাকি, আর এইভাবে প্রতিষ্ঠা করি বৈজ্ঞানিক সত্যকে।

    কালো মেয়ে দয়া, প্রেম এসব যদি নিঃশেষ হয়ে যায়, শুধু জেনে আর জেনে পৃথিবীর কী ভালোটা হবে শুনি? কী যে জানতে চান তাই আপনারা জানতে শেখেননি। সে বুদ্ধিই নেই।

    বৈজ্ঞানিক: বুদ্ধি নেই! সত্যিই বড় অজ্ঞ তুমি হে কিশোরী! জান কি, বৈজ্ঞানিকদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত কেবল বুদ্ধি আর বুদ্ধি।

    কালো মেয়ে: আপনার কুকুরদের ওসব বোঝান গিয়ে। আপনার প্রতিক্রিয়া পদ্ধতি কি কোন মানুষের মন আর চরিত্রে কোনদিন প্রয়োগ করে দেখেছেন? শুধুই কুকুর নিয়ে তাদের মুখ ভেঙেছেন আর লালা বের করেছেন।

    বৈজ্ঞানিক: অর্থহীন কথাবার্তা। গবেষণা চলবেই, যতদিন না মানুষের হৃদয় নামক বস্তুটিকে টেবিলে এনে ফেলতে পারছি! মুস্কিল হল, সেটা করতে গেলেই লোকটা মরছে।

    কালো মেয়ে: আমি কিন্তু এই ডাণ্ডার একঘায়ে হৃদয়-টিদয় শুদ্ধু একটা জ্যান্ত মানুষকে পঞ্চত্ব পাইয়ে দিতে পারি।

    বৈজ্ঞানিক: ভাবনায় পড়লেন কথাটা শুনে। বললেন, ‘হৃদয় শুদ্ধু! বল কী! . . .একবার একটা লোককে মরতে দেখেছিলাম। তবে কারোর হৃদয়ের অপমৃত্যু তো চোখে পড়েনি!’

    কালো মেয়েটি বলল, ‘আপনি জাহান্নমে গেছেন, তাই চোখে পড়েনি। আচ্ছা চলি।’

    এই শুনে বৈজ্ঞানিকটি মহাখাপ্পা হয়ে চলে গেলেন। বলে গেলেন, ‘এসব ব্যক্তিগত আক্রমণ আমার মোটে পছন্দ হয় না। চলি।’

    তিনি গেলেন একদিকে, কালো মেয়েটি অন্যদিকে হাঁটতে হাঁটতে একটা মস্ত পাহাড়ের ধারে এল। সেটা বেয়ে বেয়ে একেবারে চূড়োয় এসে পৌঁছাল সে। সেখানে যীশুখ্রীষ্টের এক বিশাল ক্রুশ আগলে এক রোমান সৈনিক গম্ভীর মুখে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে। এই ক্রুশ জিনিসটাকে সহ্য করতে পারে না কালো মেয়েটি। মনে পড়ে যায় এতে গেঁথেই মারা হয়েছিল বেচারা যীশুকে। মনে পড়ে যায় যীশুর যন্ত্রণার কথা। কী কষ্টই না পেয়েছিলেন তিনি! অথচ সেই মিশনারী মেমদিদিটি ক্রুশের কথা উঠলেই কীরকম যেন গদগদ হয়ে উঠতেন; আবেগে উদ্ভাসিত হত তাঁর মুখখানি। গা জ্বলে যেত কালো মেয়ের। তাই সে বিরক্ত হয়ে চেয়ে রইল ক্রুশটার দিকে। অমনি খ্যাঁক করে উঠল সৈনিকটা। বর্শা বাগিয়ে চিৎকার করল, ‘অ্যাই কেলে জানোয়ার, অমন ঘেন্না-ঘেন্না মুখে কী দেখছিস রে? শীগগির মুণ্ডু নামা! জানিস, এই পবিত্র ক্রুশ হচ্ছে আইন আর ন্যায় বিচারের প্রতীক! এই পবিত্র ক্রুশ হচ্ছে পরম শান্তির আধার!’ মেয়েটির ভাবের কোন পরিবর্তন ঘটল না দেখে বর্শা উঁচিয়ে মারতে এল সৈনিকটি। মেয়েটি ঝট করে সরে গিয়ে সৈনিকটির ঠ্যাঙেই বসিয়ে দিল তার ডাণ্ডার বেদম এক ঘা। গোড়ালি ভেঙে পড়ে গেল সৈনিকটি। কাৎরাতে লাগল। মেয়েটি বলল, ‘কী, কেমন লাগল! এই ডাণ্ডাটা হচ্ছে আমাদের শান্তিশৃঙ্খলা, আইন সবকিছুর, কী বলে যেন, ইয়ে, ঐ প্রতীক।’

    মেয়েটাকে খতম করবে বলে সৈনিকটি উঠে দাঁড়াতে গেল, কিন্তু পারল না। ফের পড়ল ধপাস করে। আর পড়েই ভেউ ভেউ করে কাঁদতে লাগল। মেয়েটা ছুটতে ছুটতে পালিয়ে গেল অনেক দূরে। একটা পাহাড়ের বাঁকে অদৃশ্য হবার আগে সে একবার দম নেবার জন্য দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে চাইল। দেখল সৈনিকটি মাটিতে বসেই প্রবল আক্রোশে ঘুসি দেখাচ্ছে তাকে।

    সৈনিকটি
    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅ্যানিমেল ফার্ম – জর্জ অরওয়েল
    Next Article ষোল-আনি – জলধর সেন
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }