Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    শ্যামাঙ্গীর ঈশ্বর সন্ধান – জর্জ বার্নাড শ

    জর্জ বার্নাড শ এক পাতা গল্প129 Mins Read0

    দ্বন্দ্বের নিরসন অথবা সূত্রপাত – কাবেরী বসু

    দ্বন্দ্বের নিরসন অথবা সূত্রপাত – কাবেরী বসু

    কর্ম ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। এমনকী কর্ম থেকে বিরত থাকা, যা হচ্ছে হোক বলে ছেড়ে দেওয়া— সেটাও এক ধরনের কর্ম . . . কর্ম ও নিষ্কর্মের মধ্যে সে যে একটিকে বেছে নেয় তা নয়; প্রকৃতপক্ষে বেছে নেয় জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে একটিকে।

    —ক্রিস্টোফার কডওয়েল।

    ঠিক এই কারণেই বার্নার্ড শ-এর The Adventures of the Black Girl in Her Search for God শুরু হয়েছিল— জীবন এবং মৃত্যুর মধ্যে একটিকে বেছে নিয়েছিল মেয়েটি— চলেছিল প্রশ্নমুখর জীবনের পথে।

    বার্নার্ড শ-এর বইটি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অসামান্য সুখপাঠ্য অনুবাদে হয়ে উঠেছে ‘শ্যামাঙ্গীর ঈশ্বর সন্ধান’। আখ্যানের প্রথম পাতাটি খোলার আগেই ‘Black’-এর পরিবর্তে এই ‘শ্যাম’ একটু ধন্দে ফেলে। অভিধানের সাহায্যেও কূল মেলে না। সংসদের ‘বাংলা-ইংরেজি’ অভিধান জানাচ্ছে এর পরিবর্ত একগুচ্ছ ইংরেজি শব্দ— cloud-coloured, dark-blue, bottle-green, green dark-coloured, jet-black— অদ্ভুত! একই শব্দার্থে green আর jet-black? মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। এবার বাঙালির শাব্দিক ব্যাপকতা বিচার করলে বলা যায় তান্ত্রিক হম্বিতম্বির চেয়ে রামপ্রসাদ আমাদের অনেক আপনার। কেননা যে শব্দ বা শব্দাবলিতে নিজেদের অন্তস্থল উন্মুক্ত করি তার উৎসে রয়েছে আমাদের দিন-প্রতিদিনের বেঁচে-থাকা— শুধু বর্তমানের নয়— নিকট অতীত থেকে দূর অতীতে অসংখ্য পূর্বজর বিবিধ অভিজ্ঞতার নির্যাস ধারণ করে আছে প্রতিটি শব্দ। তাদের অর্থে মিলেমিশে থাকে আমাদের গোষ্ঠীজীবনের আরব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞান। বঙ্গদেশে হিন্দুধর্মের (চলতি অর্থে) ভাবজগতের আওতায় বেড়ে উঠেছেন যিনি, তাঁর মননে ‘শ্যাম’ শব্দে ‘কালো’-র চেয়ে সুন্দরের ব্যঞ্জনাই প্রধান। আরও বিশদে বললে ‘শ্যামা মা কি আমার কালো রে!/কালো রূপে দিগম্বরী হৃদিপদ্ম করে আলো রে।’ ‘কালো’ অর্থে এখানে একাধারে অন্ধকার এবং আলো। আর এরই অনুষঙ্গে ‘শ্যামা’ হয়ে যায় ‘কালী’ অথবা বিপরীত অভীষ্টে ‘কালী’-ই শ্যামা। অন্যার্থে কৃষ্ণও কালো নয়, শ্যামসুন্দর। দৃশ্যমান বর্ণ থেকে অনায়াসে চলে-যাওয়া ভাগবত দ্যোতনায়। সম্ভবত সেই ধারাবাহিকতায় বার্নার্ড শ-এর The Black Girl বাঙালির আদরে হয়ে উঠেছে ‘শ্যামাঙ্গী’।

    একটি বাক্যের (পড়ুন শব্দগুচ্ছের) মৌল উপাদানগুলি কীভাবে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে আছে তার ওপরেই নির্ভর করে তার অর্থ।

    —নোয়াম চমস্কি

    শুধু তাই নয়, প্রতিটি শব্দর (মৌল উপাদান) সঙ্গে তার অর্থ যে অনন্য আত্মীয়তার সম্পর্কে বাঁধা, সেটি কোনোভাবেই মৃত নয় (যতই প্রাচীন হোক সে-শব্দ) কিংবা অন্যভাবে বললে যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের চিন্তাকে সেই সম্পর্কে ধরে রাখা যায় ততক্ষণ পর্যন্ত তারা প্রাণবন্ত, সজীব। সে-কারণে আখ্যানের মূল শরীরে পৌঁছোতে অনেক অনেক পাহাড় পেরোতে হয়। শিরোনামী শব্দার্থে কেমন করে নির্দিষ্ট আখ্যানের মর্মার্থ আনাচেকানাচে উঁকিঝুঁকি মারে তার সুলুকসন্ধান সর্বাগ্রে জরুরি। শুধু সন্ধানী টর্চের আলো নয়, ব্যবচ্ছেদী টেবিলে ছুরি-কাঁচির যথেচ্ছ ব্যবহারে এর যথাযথ পোস্টমর্টেম ছাড়া আখ্যান তার রাজপুরীর সিংহদরজাটি মোটেই খোলে না। অলমিতি বিস্তরেণ . . . হাত থাকতে মুখে কেন . . . ইত্যাদি . . . ইত্যাদি।

    অন্ধকার কথা কয়— আকাশের তারা কথা কয়
    তারপরে— সব গতি থেমে যায়— মুছে যায়
    শক্তির বিস্ময়

    —জীবনানন্দ দাশ

    মনে হতেই পারে যেন বার্নার্ড শ-এর এই আখ্যানটির প্রতিক্রিয়ায় এমন কথা লিখলেন জীবনানন্দ— কয়েকটি বাক্যে ছুঁয়ে ফেললেন ‘The Black Girl’-এর সম্পূর্ণ অভিযাত্রা। কিন্তু যে অন্ধকার কথা কয় সে কি কালো? তাহলে কেমন করে তার উৎসে ‘আলো’ উৎসারিত হয়! এমনই কি জীবনপ্রবাহের দ্বান্দ্বিক চলন? অনেক অধিবিদ্যক প্রশ্নে পাঠককে উদবেল করে তোলে এই আখ্যান। আবার কেউ হয়তো এর মধ্যে খুঁজে পাবেন দর্শনের ইতিহাস ও বিবর্তন। কিন্তু পা দুটি মাটিতে স্থির রাখি যদি তবে প্রথমেই জানতে ইচ্ছে করে ‘অন্ধকার’ আর ‘কালো’— এরা কি সমার্থক? তাহলে ‘কালো’-র বিপরীতে কখন লিখব ‘আলো’ আর কখনই-বা ‘সাদা’!

    ‘Black’-এর শব্দার্থ সন্ধানে যদি পৌঁছোই তার ইন্দো-ইউরোপীয় উৎসে তাহলে রীতিমতো চমকে উঠতে হয়— শব্দটি সেখানে blac— অর্থ pale (পাণ্ডুর), colourless (বর্ণহীন) অথবা albino। অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষাসমূহের প্রাচীন পর্বে এর রূপ— ফরাসিতে Blanc, ইতালিয় এবং স্প্যানিশে Blanco, Bianca, Bianco, Bianchi— প্রাচীন ইংরেজিতে ‘blac’ অর্থে ফর্সা রং (fair)— কিছুটা বর্ণহীন। এরই ধারাবাহিকতায় আজও ‘blanc’ শব্দটির অর্থ সাদা বা ফর্সা মানুষজন। আশ্চর্যজনকভাবে ষোড়শ শতাব্দীর পর এই শব্দার্থ একেবারে ৩৬০০ ঘুরে গেল— এটা ঘটল অর্থের দ্বিধাবিভক্তিতে— একটি আক্ষরিক অন্যটি ভাবগত। আক্ষরিক অর্থে ‘blac’-এর ক্রিয়ার রূপে বোঝাল ‘বর্ণহীন করা’ বা ‘সাদা/সোনালি/পাণ্ডুর’ করে তোলা আর ভাবার্থে কারোর ‘সুনাম নষ্ট করা’, তাকে ‘যশহীন করা’ অর্থাৎ তার ভবিষ্যৎ ‘অন্ধকার’ করে দেওয়া। এই সূত্রায়ণে নেতিবাচক বিবর্তনে ‘blac’-এর আক্ষরিক অর্থ হয়ে গেল ‘রাত্রির রং’— অন্ধকার। এরপর এরই বিস্তারে ‘black magic’ বা ‘black death’— এরও কিছুকাল পরে শব্দটির শেষে জুড়ে গেল ‘k’— blac থেকে black— এবং বিশেষণ থেকে এটি হয়ে গেল বিশেষ্য— রানির ‘Black Enemy’ থেকে শুরু করে একটা গোটা জনগোষ্ঠী তখন— ‘Blacks’. এরই ভাবার্থে ইউরোপীয় সাদা মানুষের মুখে আরও অনেক শব্দের আমদানি Niggers, Coloureds, Negros, Africans ইত্যাদি ইত্যাদি এবং সবই black-এর সমার্থক। এতেও অবশ্য অর্থের দ্বিচারী প্রস্তাবনা একেবারে বাতিল হল না— ‘কালো’ এবং ‘অন্ধকার’ দুটিই তার শরীরে মিলেমিশে রইল।

    বাংলা ভাষাতে এই বিবর্তনের ইতিহাস একটু অন্যরকম। আমাদের যেহেতু একজন ‘রবীন্দ্রনাথ’ আছেন, তাই এর বিস্তৃতিও বিশিষ্ট এবং অনন্য। কবির বিস্তার বাদ দিলে অন্যত্র অর্থাৎ আমাদের পুরাণ-কথা থেকে শুরু করে হাল আমলের বাংলা ধারাবাহিক— সবই এমনতরো অসংখ্য উদাহরণে পুষ্ট। পুরাণের দুষ্টু লোক অর্থাৎ অসুর এবং ঠাকুমার ঝুলি-র দানব বা রাক্ষস-খোক্কস— সকলেই নিকষ কালো। ‘কালো’-র অর্থ এখানে অধঃপতিত, খারাপ, নীচজাতীয়। টিভির ধারাবাহিকে অধুনা আরেক ধাপ এগিয়ে যেকোনো ভিলেন গোছের চরিত্র (বিশেষত নারী)— তাদের পোশাকের রং (টিপ, অলংকার সমেত) কালো— এবং মজার কথা আমাদের চোখে সেটি মোটেই বিসদৃশ লাগে না। কেননা বাঙালি হিন্দুর যেকোনো মঙ্গল অনুষ্ঠানে ‘কালো’ যেকোনো কিছু নিষিদ্ধ। এমনকী বিয়ের কনের চুল ‘কালো’ ফিতে দিয়ে বাঁধা হয় না। এমনটা যে কেন হল মননের গভীরতর ব্যঞ্জনায়, এমন অর্থ ঘাঁটি গেড়ে কেন বসল, যেখানে এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর গায়ের রং মোটের ওপর কালোই, সেকথা বোঝা শক্ত। শাসকের আরোপিত গূঢ়ার্থ বললেও স্পষ্ট হয় না; কেননা প্রাণের অঙ্কুরোদ্গম যে অন্ধকারেই, অভিজ্ঞতায় এই সত্য সকলেরই জানা। তবে সেই অন্ধকার— সেই কালো এমন অশুভ, এমন অশুচি কেন? সেখানে চোখের আলোয় কিছু দেখা যায় না, সেখানে আকারের সীমা শেষ, সেখানে এক অজানা পৃথিবীর আহ্বান— সেইজন্যই কি! এই ভাবনাতেই কি ‘সুদর্শনা’ ‘অন্ধকার’কে দেখতে চেয়েছিল আলোর মধ্যে? তবে বলতে হয় মানুষ আলোর মধ্যে তার পারিপার্শ্বিকের স্পষ্ট ধারণা পায়; তাই ‘শুভ্রতা’ শুচি এবং শুভ। নিজের বুদ্ধিমতো বাঁচার যে নিয়মকানুন সে বানিয়েছে— হোঁচট খাওয়া থেকে পিছু-ডাকা ইস্তক— সবই মঙ্গলের জন্য। যা কিছু রহস্যময়, যাকে সে কবজা করতে পারে না, যা থাকে মননের অন্ধকারে, তার মুখোমুখি হতে সে ভয় পায়— এই অজানা অনিশ্চিত ‘কালো’ তাই এত অশুভ।

    বিজ্ঞানীর বিচার অবশ্য অন্যরকম। তার কাছে ‘অন্ধকার’-এর বিশেষ মর্যাদা— সেই ‘অজানা’ গবেষণার দাবিদার। যেকোনো ধাতুর বর্ণালীতে যে অন্ধকার অংশ থাকে সেখানেই গোপন তার বিশিষ্টতার পরিচয়— বিজ্ঞানী সেকথা জানে তাই ‘কালো’ তার কাছে অনুঘটক— এর শুভাশুভের কোনো নৈতিকতা বিজ্ঞানীকে বিচলিত করে না। অবশ্য এমনতরো নৈর্ব্যক্তিকতায় অনেক সামাজিক বিপর্যয় নেমে আসে— একটা হিরোশিমা— একটা নাগাসাকি হয়ে যায়। যদিও সে-প্রশ্ন এখানে অবান্তর। বিজ্ঞানীর বীক্ষার কথা বাদ দিয়ে কবির বয়ানে আসা যাক। ‘দিনের বেলাটা মর্তলোকের, আর রাত্রিবেলাটা সুরলোকের। মানুষ ভয় পায়, মানুষ কাজকর্ম করে, মানুষ তার পায়ের কাছের পথ স্পষ্ট করে দেখতে চায়, এইজন্যে এত বড়ো একটা আলো জ্বালতে হয়েছে। . . . অসীম অন্ধকার দেবসভার আস্তরণ।’ (‘জাপান যাত্রীর ডায়েরী’/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) কিন্তু সুসভ্য মানুষ, বাণিজ্যিক সভ্যতার লেনদেনে নিমগ্ন মানুষ সেই ‘আস্তরণ’-কেও রেয়াত করে না। মানুষ যখন ‘আলোকের খুঁটি’ গেড়ে দেবতার অন্ধকারকে ‘আলো দিয়ে ফুটো করে দেয়’ তখন সে ‘অন্ধকারকেও অশুচি করে তোলে।’ সাংঘাতিক ভাবকল্প! কেননা কবির দৃষ্টিতে ‘দিন আলোকের দ্বারা আবিল, অন্ধকারই পরম নির্মল। অন্ধকার রাত্রি সমুদ্রের মতো, তা অঞ্জনের মতোই কালো কিন্তু তবু নিরঞ্জন। আর দিন নদীর মতো; তা কালো নয় কিন্তু পঙ্কিল।’ অথচ কবির এই ‘নির্মল’ অন্ধকার আর ‘পঙ্কিল’ দিনের ব্যঞ্জনা দৈনন্দিনতার আবছা আভাসে ধরা গেলেও মননের গভীরে প্রোথিত হতে পারে না। সেখানে ঘাঁটি আগলে বসে থাকে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের নৈতিকতা। অবশ্য শব্দার্থের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিমুখ প্রায় গোপনই রয়ে যায় লেখকের নির্দিষ্ট বয়ানে। কেননা যে চিন্তা বা যুক্তির প্রেক্ষিতে আখ্যান নির্মিত হয় অর্থাৎ লেখকের গভীর প্রকল্প, সেটি প্রকাশিত বয়ানে কখনোই সম্পূর্ণ বিধৃত হয় না। ভাষার এই সীমাবদ্ধতা মেনে নিতেই হয়। অতএব আক্ষরিক এবং ভাবগত অর্থের দ্বিচারী দ্যোতনাকে সঙ্গী করেই মূল আখ্যানের পাতায় মনোনিবেশ করতে হয়— হাঁটতে হয় শ্যামাঙ্গীর পায়ে পায়ে।

    শ্যামাঙ্গী চলেছে ‘God’-এর সন্ধানে। হাতে মুগুর আর মগজে বিজবিজ করছে অন্তহীন প্রশ্নের পোকা। একটি প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারেননি তার ‘মেমদিদি’— শুধু খুব পুরোনো একটা বাইবেল— পাতা উলটোলেই সেগুলো ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ে, হাওয়ায় উড়ে যায়। ‘কেননা ষোড়শ শতাব্দীর ইংরাজী এক মৃত ভাষা। নতুন অনুবাদগুলি ক্রমেই আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারণ অতি সোজা— পুরোনোটি আর সাধারণ মানুষের মগজে ঢুকছে না।’ (বার্নার্ড শ— ভূমিকা) এখন বাইবেলটি নতুন বা পুরোনো যাই হোক না কেন, কালো মেয়েটির এই ‘God’ খ্রিস্টীয় প্রাতিষ্ঠানিকতার প্রতিভূ— মেয়েটির প্রতিটি প্রশ্নেই তা প্রাঞ্জল হয়। কিন্তু কিছুতেই সে সন্তুষ্ট হয় না। এক হাতে বাইবেল আর অন্য হাতে মুগুর নিয়ে সে যে চলেছে ‘সত্যি’ God-এর সন্ধানে। স্থির বিশ্বাস তার, মুগুরের ঘায়ে ভেঙে ফেলবে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা— হটিয়ে দেবে মিথ্যে ‘God’দের। এই ‘God’— ঈশ্বর/ভগবান/আল্লা কোনোটিরই সমার্থক নয়। মেয়েটির স্বভূমি আফ্রিকা এবং আমাদের উপমহাদেশ— দুটি স্থানই ‘হোমোসেপিয়ান’ প্রজাতির প্রাথমিক চলন প্রত্যক্ষ করেছে। প্রাচীন সে-ভাবনায় এমন প্রথাগত ঈশ্বর-এর কোনো প্রকল্প কোথাও ছিল না। ছিল কিছু ভয়াবহ প্রাকৃতিক শক্তি যাদের কাজকর্মের থই পাওয়া যেত না। সন্ত্রস্ত মানুষ তাই স্তুতিতে তাদের সন্তুষ্ট রাখতে চাইত— নানান প্রতীকে (আইকন), অভিজ্ঞানে (চিহ্ন)— কখনো গাছ, কখনো-বা একটুকরো এবড়োখেবড়ো কাঠ, আবার কখনো বিচিত্র আকারের, রঙের পাথর কিংবা নিত্য ব্যবহারের নানান উপাদান— সেখানেই ওই অজ্ঞাত শক্তিদের অধিষ্ঠান কল্পনা করত। ‘বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর’— এই প্রকল্পটি ‘সর্বেশ্বরবাদী’ ঐতিহ্যের অতীত যার আছে, তেমন কোনো ধর্ম প্রচারকের চিন্তনেই স্বাভাবিক। এখানেই ‘black’ শব্দটির আক্ষরিক এবং ভাবগত অর্থ অতিক্রম করে তার ঐতিহাসিক এবং নৃতাত্ত্বিক অতীতকে প্রধান ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করতে হয়। আমার স্ববাসে বর্ণহিন্দুর ব্রাহ্মণ্যবাদের ধাক্কায় এই সর্বেশ্বরবাদী আইকন-পূজারি জনগোষ্ঠী ‘আদিবাসী’ এবং নিম্নবর্গ বিধায়ে অচ্ছুত। সর্বগ্রাসী প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম হাড়িডোমের ‘ধর্মঠাকুর’কে এক ধাক্কায় ‘শিবঠাকুর’ করে দিল— অবশ্য ‘শিব’, বলা যায়, আরও প্রাচীনকালের হাতবদল। এত সব ধান-ভানা কিন্তু একটা সিদ্ধান্তকে বিশিষ্টতা দেবার জন্য। চামড়ার রং ‘কালো’ হলেও এই উপমহাদেশের মানুষ ওই আফ্রিকান অভিযাত্রীর প্রতিতুলনায় প্রাচীন ধর্মীয় ‘অভিজ্ঞান’ থেকে অনেকাংশেই বিচ্যুত। সেখানে ‘God’-এর অন্যতর একটি ব্যঞ্জনা অধিবিদ্যক ব্যাখ্যায় রূপায়িত— তিনি ‘ব্রহ্ম’— যার শুরু নেই যার শেষ নেই— যিনি অজ্ঞেয় অথচ পরিব্যাপ্ত। অবশ্য এই চেতনার অংশীদার হবার অধিকার একমাত্র যারা এর প্রবক্তা সেই ক্ষুদ্র শাসকগোষ্ঠীর। তবু এরই মধ্যে আর একজন এমন সন্ধানীর কথা মনে আসে— তিনি গার্গী। তিনিও উত্তরোত্তর জানতে চেয়েছিলেন ব্রহ্মের স্বরূপ। কিন্তু কোনো উত্তরেই তাঁর ধোঁয়াশা কাটছিল না (কাটার কথাও নয়)। তখন যাজ্ঞবল্ক্য একটি মোক্ষম ধমকে তাঁকে থামালেন— ‘আর একটি প্রশ্ন উচ্চারণ করলে তোমার মাথা খসে পড়বে।’ অতএব থামতে হল গার্গীকে, কেননা আদতে তিনি শাসকগোষ্ঠীরই একজন, ক্ষমতার অংশভাগী। ওই কালো মেয়েটির মতো মুগুর হাতে বেপরোয়া পরিব্রজ্যা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। এ প্রসঙ্গে মৈত্রেয়ীর কথা মনে আসতে পারে, কিন্তু তিনি স্বামীর অনুগমন করেছিলেন মাত্র। বিপরীতে ওই কালো মেয়েটি— তার সামাজিক অবস্থানে অনন্য— সে ওই অধিকৃত শ্রেণির একজন, যাদের শ্রমে সাদা চামড়ার মানুষের বৈভবের প্রাসাদ গড়া। বস্তুত এই অভিযাত্রায় এমনই একদল আত্মজনের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় মেয়েটির। অতএব তার কিচ্ছুই হারাবার নেই, সে অকুতোভয়। যদিও কালচক্রে সাদা মানুষের জালেই সে ধরা পড়ে শেষমেষ।

    চলার পথে মেয়েটির সঙ্গে এককালে দেখা হয় খ্রিস্ট এবং মোহম্মদের। এ বড়ো চমকপ্রদ প্রস্তাবনা। এই বাদবিসংবাদের প্রথম অংশে মেয়েটি নীরব। যদিও পৃথিবীর নবীনতম এবং সর্বশেষ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম ইসলাম এবং তার শরীরে খ্রিস্টধর্মের মতোই প্রাচীন ইহুদি ধারণার অবশেষ। তবু ‘আল্লা’ বাইবেল-এর ‘God’ নন। প্রাক-ইসলামি যুগে আরবের হেজাজ অঞ্চলে (যেখানে মক্কা ও মদিনা অবস্থিত) অধিবাসীদের প্রধান দেবতা ছিলেন আল্লা। তখন আল্লাত, ওজ্জা ও মানাত নামে তিন দেবীকে আল্লার কন্যারূপে পুজো করা হত— এঁদের বলা হত বানাতাল্লাহ বা আল্লার কন্যা। কোরানে এঁদের উল্লেখ ছিল এবং কাবা-ঘরেও এঁদের মূর্তি ছিল। অর্থাৎ ইসলামি অভিযোজনের প্রতিতুলনায় খ্রিস্টীয় অভিযোজনটির সঙ্গে আমাদের তেমন পরিচয় নেই। সে-কারণে এদের চাপান-উতোরে মেয়েটির নীরবতা সহজেই অনুমান করতে পারি। বুঝতে পারি কেন এই অভিযাত্রায় আফ্রিকান জনগোষ্ঠীর একজন মানুষকেই শ-এর প্রয়োজন ছিল। কেননা ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’-এর অনুশাসনের ছায়ায় বেড়ে-ওঠা আরবী এবং ইউরোপীয় ধর্মীয় গোষ্ঠী আর খ্রিস্ট ও ‘বাইবেল’-এর ‘নিউ টেস্টামেন্ট’-এ দু-হাজার বছর ধরে নিমগ্ন ইউরোপীয় সমাজ— এদের কারোর পক্ষেই খ্রিস্টীয় দর্শনে বিধৃত নিরাকার অথচ পৌত্তলিক— এহেন বিপরীতমুখী দ্বিবিধ চলনের ধন্দ থেকে সহজে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। সেজন্যেই এই অভিযাত্রায় এমন একজন মানুষের প্রয়োজন ছিল যিনি সম্পূর্ণ বেপরোয়া হতে পারবেন। প্রাক এবং উত্তর-বাইবেলীয় প্রতিটি অধিবিদ্যক অভিযোজনকে সরাসরি টেনে আনতে পারবেন বাস্তবের জমিতে। এতে যদি কোনো অনুশাসন— কোনো নিয়মবিধি ভেঙে পড়ে তার তোয়াক্কা তিনি করবেন না। যিনি কথার কচকচিতে সত্যকে আবিষ্কার করবেন না, প্রয়োজনে প্রাচীন অসভ্যদের মতো মুগুরের ঘায়ে সব বানানো কূটতর্কের মীমাংসা করে ফেলবেন। সেই আদিম সরল সততায় ঋদ্ধ যে মানুষ, তাঁকেই প্রয়োজন। অতএব প্রাচীন সভ্যতার একজন প্রতিনিধিকেই শ বেছে নিয়েছেন। এই পর্বে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। এই প্রথম অভিযাত্রীটি ‘নারী’ হিসেবে কোনো পুরুষের (আরব) মুখোমুখি হয়। সঙ্গেসঙ্গে প্রশ্ন ওঠে, কোন অনুষঙ্গের প্রয়োজনে শ একজন কালো ছেলের পরিবর্তে ‘মেয়ে’কে বাছলেন! এর একটা সরল উত্তর আখ্যানের শেষে অবশ্য পাওয়া যায়। কিন্তু এই ‘চেনা’ প্রস্তাবনা ছাড়াও আরও গভীর এক অভিমুখ এই আখ্যানে নিহিত। এর সন্ধানে আবার ইতিহাসের পাতা উলটোতে হয়।

    শাসকের হাতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপে স্থিত হবার আগে গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষের যে ধর্মাচরণ, সেখানে পুজো অর্থে কিছু রিচুয়াল, আচার-অনুষ্ঠান এবং সমস্ত পূজ্য প্রাকৃতিক শক্তির নানাবিধ আইকন— মানবসদৃশ কোনো মূর্তি নয়। এখনও আদিবাসী সাঁওতাল সমাজের নানান ক্রিয়াকর্মে অসংখ্য চিহ্ন বিশেষ গূঢ়ার্থে আঁকা হয়। সাঁওতালি ভাষার যে লিপি (অলচিকি) রঘুনাথ মুর্মু তৈরি করেন, সেখানেও এই চিহ্নগুলির বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। এমনকী অন-আদিবাসী সমাজেও গোষ্ঠীজীবনের এই সমস্ত আইকন মেয়েলি আচার এবং ব্রতকথায় এমনকী আলপনায় আপন অস্তিত্বে আজও উজ্জ্বল। প্রাচীনকালে মূলত মেয়েরাই ছিল এই সমস্ত রিচুয়াল বা ধর্মীয় আচার-আচরণের উদ্যোক্তা এবং অংশগ্রহণকারী— একমাঠ ফসলের আকাঙ্ক্ষা অথবা বর্ষার আবাহন কিংবা নয়াবীজ বপন— সবেতে তারাই ছিল অনুষ্ঠানের চালিকাশক্তি। গোষ্ঠীধর্ম যখন শাসকের হাতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেল তখন আইকনের স্থলে এল মূর্তি কল্পনা (রাজার এবং শাসকের সাদৃশ্যে) আর মেয়েরা হারাল পুজোর অধিকার— পৌত্তলিকতায় পুরুষই পুরোহিত। তবুও আমাদের রোজকার যাপনায় জড়িত থাকে অজস্র আইকন। যেমন ‘তুলসী’— দুটি আখ্যানের জন্ম একে ঘিরে। ভগবান (!) বিষ্ণু তুলসীর সতীত্ব নষ্ট করেন তার অসুর স্বামীকে হত্যা করার জন্য অথচ সেই তুলসীর পাতা ছাড়া নারায়ণ শিলার (বিষ্ণুর আইকন) পুজো হয় না। আবার সেই পবিত্র তুলসীর গায়ে কুকুর প্রস্রাব করে (সীতার অভিশাপে) তবু তার পবিত্রতা নষ্ট হয় না। আসলে নিয়ত বদলে-যাওয়া এই পৃথিবীতে মানুষ তার চারপাশ এবং নিজের অবস্থান সম্পর্কে যেসব ধারণা গড়ে তোলে, তাদেরই অভিজ্ঞান এক-একটি আইকন। সেখানে পবিত্র-অপবিত্র, শুচি-অশুচির কোনো নৈতিক সিলমোহর নেই। সে-কারণেই ‘শিবলিঙ্গ’ নামক আইকনটি যে প্রকৃত প্রস্তাবে লিঙ্গ-যোনির সংগম-প্রতীক সে-বোধ ব্যতিরেকেই ভক্তের দল অনায়াসে তাকে স্পর্শ করে, অর্ঘ্য নিবেদন করে। মোদ্দা কথা নারীর মানসে আজও সেই প্রাচীন আইকনিক পূজার্চনার প্রতিভাস অধিষ্ঠিত। তার পক্ষেই সম্ভব প্রাতিষ্ঠানিক এবং আরোপিত এই ‘God’-এর সমস্ত ফাঁকি এবং তর্কের জাল ছিঁড়ে ফেলা। অতএব শ-এর অভিযাত্রী একটি মেয়ে— কালো মেয়ে।

    দুটি বিশেষণ ছাড়া মেয়েটির চেহারার কোনো বর্ণনা আখ্যানে নেই। মেয়েটি কালো, বড়িয়া চিজ এবং মোহম্মদের বয়ানে সে আকর্ষণীয়— এরই বিস্তারে একদল মেমসাহেবের আলাপ-সালাপে সে ‘ছেলেদের মাথা খেতে’ পারে! (আশ্চর্য! একজন মেয়ে কবে যে পুরুষের চোখে না দেখে শুধু নিজের চোখে অন্য একটি মেয়েকে দেখতে শিখবে!) অথচ বার্নার্ড শ-এর নির্দেশানুসারে আঁকা যেসমস্ত ছবি আখ্যানে সংশ্লিষ্ট তার মধ্যে দু-একটিতে বোঝাই যায় না শরীরটি নারীর না পুরুষের। বাকিগুলিতে নারীশরীরের ভাঁজ স্পষ্ট। মজার কথা, মেয়েটি যে নিরাবরণ, আখ্যানে তার কোনো উল্লেখ নেই। অর্থাৎ আখ্যান আর চিত্র পরস্পরের পরিপূরক। মেয়েটির এই পোশাক-না-থাকার একটি চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন অনুবাদক স্বয়ং। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বললে ‘উলঙ্গের কোন পরিচয় নেই, বানিয়ে-তোলা কাপড়ে কেউ-বা রাজা, কেউ ভিখারী।’ যেকোনো পোশাকই কোনো-না-কোনো শ্রেণি বা গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে। অতএব নিরাবরণ না হলে মেয়েটি কখনোই সাধারণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারত না। খুবই গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা সন্দেহ নেই। তবে আমার ভাবনায় এই পোশাকহীনতার অন্যতর একটি ব্যঞ্জনা রয়েছে। যেহেতু মূল আখ্যানটি ইংরেজিতে, সেইহেতু বলা যায় nude (নগ্ন) এবং naked (উলঙ্গ বা ল্যাংটো) বহিরঙ্গে সদৃশ হলেও অন্তর্গত অর্থে আলাদা। ‘নগ্নতা’ প্রকৃতপক্ষে আকারের বিশুদ্ধ প্রকাশ বা অভিব্যক্তি। যেমন ‘নগ্ন নির্জন হাত’— এখানে ‘হাত’-এর স্থলে ‘ঘর’ শব্দটি বসালেও বিশেষণ দুটি বাতিল হয় না। বিপরীতে ‘উলঙ্গ’ বা ‘ল্যাংটো’ শব্দে পাই এক নির্লজ্জ অবাধ আত্মপ্রকাশ। এই শব্দার্থের আধারে ‘পোশাক’ বা ‘আবরণ’-এর যে ধারণা বা concept জনমানসে ব্যাপ্ত সেটি হল, শীতগ্রীষ্মের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য নয়, ‘পোশাক’ সভ্যতার প্রতীক; যেখানে ‘আসল’ আমি-কে ঢাকতে হয়— না হলে লজ্জিত হতে হয়। পরে লিঙ্গভেদের নিরিখে এর সঙ্গে আরেকটু সংযোজিত হল। লজ্জা নারীর ভূষণ আর নির্লজ্জতা পুরুষের অহংকার। হিন্দু বাঙালির ধর্মীয় বাতাবরণে বেড়ে-ওঠা আমার মননে এই কালো ল্যাংটো মুগুর-হাতে মেয়েটি যেন খড়গ-হাতে কালীর চিত্র এঁকে দেয়। বার্নার্ড শ চেয়েছেন তাঁর ঈশ্বরসন্ধানী অভিযাত্রী ‘সভ্যতা’র এই বিশিষ্ট উপাদানটি বর্জন করে, অসংকোচ আত্মপ্রকাশে পথ চলুক।

    মেয়েটির প্রশ্ন মোটের উপর দুটি। ঈশ্বর যিনিই হোন না কেন এমন বদখত পৃথিবী কেন গড়লেন যখন ইচ্ছে করলেই যা খুশি তাই করা যায় অর্থাৎ চাইলে যখন সর্বাঙ্গসুন্দর একটা পৃথিবীই গড়তে পারতেন তিনি! অবশ্য ‘ইচ্ছে করলেই পারা যায় না’— গোছের উত্তরকে সে নস্যাৎ করেছে এই বলে যে ও উত্তর মানুষের, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নয়। এই প্রশ্নটি শহিদ ভগৎ সিংহ-ও করেছিলেন ফাঁসির কিছুদিন আগে জেলখানায়। তাঁর নাস্তিক হবার কার্যকারণের ব্যাখ্যায়। তাঁর বক্তব্য ছিল— ‘বোলো না এ তাঁর লীলা . . . তবে তিনি একজন নিরো, তাঁর সঙ্গেই আমার লড়াই।’ মেয়েটি অবশ্য এত কথা খরচ করেনি, স্রেফ মুগুর তুলেই মিথ্যে ‘God’-এর প্রবক্তাদের হাওয়া করে দিয়েছে। কিন্তু এরই বিস্তারে তার দ্বিতীয় প্রশ্ন— ঈশ্বর কেন পিতা? স্রষ্টার এই পুংলিঙ্গভিত্তিক ধারণা সব ধর্মেই প্রতিষ্ঠিত। খ্রিস্টধর্মে তো বটেই, এমনকী আল্লা (আরবী) অথবা খোদা (ফরাসি) নামবাচক বিশেষ্য— কোনো দ্বিবচন বহুবচন নেই এবং কোরানে নিজের সম্পর্কে তিনি পুরুষবাচক ক্রিয়া, বিশেষণ এবং সর্বনাম ব্যবহার করেছেন। বাংলায় অবশ্য সর্বনাম এবং ক্রিয়ার লিঙ্গ রূপ নেই— সংস্কৃতে ক্রিয়ার লিঙ্গান্তর হয়, সর্বনামের হয় না— তবু ধন্দ যেন কাটতেই চায় না। জগৎস্রষ্টার প্রায় সবকটি বিশেষ্যের— ব্রহ্ম (ব্রহ্মণী), ঈশ্বর (ঈশ্বরী), ভগবান (ভগবতী) ইত্যাদি ইত্যাদি স্ত্রী লিঙ্গান্তর হয়। ব্যতিক্রম ‘ঠাকুর’— সেটি লিঙ্গহীন— যেকোনো দেবদেবীর সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া যায়। তবু সর্বশক্তিমান নিরাকার স্রষ্টা অধিকাংশের ধারণায় ‘পুরুষ’ হিসেবেই চিহ্নিত। বাঙালি কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক ভক্তিবাদে একটা অন্য সমাধান দিয়েছেন— ‘জগৎজননী মা যদি না হতো দোপাটি পেতো কি ফোঁটা/গোলাপ পেতো কি রাঙা চেলি আর চামেলী গরদ-গোটা।’ এখানে অবশ্য মেয়েটি একটা প্রশ্ন তুলতেই পারত। ‘বেশ, সুন্দর সুন্দর সব কিছু না হয় মায়ের সৃষ্টি; কিন্তু বদখত তিমি, উদ্ভট বেবুন— এগুলো যাঁর হাতে গড়া তিনি তবে পিতা?’ অর্থাৎ ঈশ্বর একাধারে নারী এবং পুরুষ। ক্রমে গভীর এক অধিবিদ্যক সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়ছি। বিবেকানন্দের ‘দ্বৈতাদ্বৈত’ কলাকৌশলেও সেখান থেকে বেরোনো যাবে না। অতএব সাধু সাবধান— আখ্যানে ফেরা যাক। সেখানে মেয়েটি ‘God’-এর পিতৃ-রূপ প্রত্যাখ্যান করেছিল, কেননা তার বাস্তব অভিজ্ঞতায় ‘বাবা’রা খারাপ, কেবল মারে। কিন্তু এমন একটি প্রত্যক্ষ জ্ঞান ছাড়াও অন্য একটি চিরায়ত অভিজ্ঞতার কথাও বলা যায়— ‘নারী’ শরীরে যেহেতু বিবর্তন দৃশ্যমান, বারেবারেই নানাভাবে প্রকট, এবং যেহেতু সেটি ভ্রূণের আধার (আগার) তাই সর্বশক্তিমান, নিরাকার স্রষ্টার অব্যয়ী রূপকল্পনায় স্ত্রী-শরীর আসেই না। কেননা সেক্ষেত্রে স্বীকার করতে হয় এ শরীর সৃজনশীলতায় ‘God’-এর সমার্থক। অথচ এই শরীরই অবশেষে থামিয়ে দেয় মেয়েটির পরিব্রজ্যা— মাঝপথে আচমকা।

    Life only is sacred . . .
    Life only is freedom
    Why is she not alive
    Oh, Womb! I fear you!

    লিখেছিল ভেনেজুয়েলার ইভলিন। ১৯৮৮— অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে ‘ভারতবর্ষ’ সম্পর্কে তার কয়েক মাসের অভিজ্ঞতা ইভলিন লেখায়, রঙে আর রেখায় প্রকাশ করেছিল। আজও আমাকে নাড়িয়ে দেয় ওর শেষ লাইন ‘ও আমার গর্ভ! তোমাকে ভয় করি আমি।’ একথা সত্যি যে প্রজননই কোনো প্রজাতির টিকে থাকার প্রধান শর্ত। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো জীবের প্রজননে (বা সংগমে) যৌনতা নেই— সেটি তাদের বিশেষ প্রাকৃতিক ক্রিয়া (খাওয়া, ঘুম অথবা বর্জ্যত্যাগের মতো)— বড়োজোর তীব্র এক স্নায়বিক ক্রিয়া। কিন্তু মানুষ যেহেতু psychosomatic animal— মনন বা চিন্তন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তার ক্রিয়া, তাই সে নির্মাণ করেছে এক বিশিষ্ট ধারণা বা concept —যৌনতা। এরই আধারে মানুষের লিঙ্গ নির্মাণ।

    যৌনাঙ্গের প্রকৃতি-নির্ধারিত অবস্থান, আকার এবং ক্রিয়ার নিরিখে পুরুষের যৌন-সুখ এবং গর্ভসঞ্চার-ক্রিয়া প্রায় সমার্থক। যদিও নারীর ক্ষেত্রে দুটি ক্রিয়ার পারস্পরিক নির্ভরশীলতার কোনো সাধারণ ক্ষেত্র প্রায় নেই বললেই চলে। অথচ সমাজ নির্ধারিত যৌনতার সংজ্ঞায় নারীর যৌনতা মাতৃত্বেই সমাহিত। শিশুর জন্ম অবশ্যই কোনো মানবগোষ্ঠীর টিকে-থাকার প্রধান স্তম্ভ। সেক্ষেত্রে কুমুদরঞ্জন যতই গদগদ স্বরে বলুন না কেন ‘ছেলেমেয়েদের খেতে দিতে পারে/পারে সে সোহাগ দিতে/টিপ কাজলেতে সাজাইতে পারে/দেখি নি তো হেন পিতে!’ মানতেই হবে শিশুর জন্ম দেওয়া এবং প্রতিপালন দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। অথচ এ দুটিকে অবিচ্ছিন্ন একটা উপাদান হিসেবে ‘মাতৃত্ব’-র সংজ্ঞায় মোড়ক-বন্দি করা হয়েছে। আরোপ করা হয়েছে নতুন অভিধা— নারীত্বের পূর্ণ বিকাশ বা সাফল্য মাতৃত্বে। নারীপুরুষ নির্বিশেষে এই উপাদেয় শরবতটি পান করে তৃপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ। এই একটি ম্যাজিক মন্ত্রে নারীর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা যেন অলীক প্রস্তাবনা। নিজের শরীরই নারীর সম্পূর্ণ অধিকারে নেই, তো স্বাধীনতা! কষ্ট কল্পনায় যদি এমনটা ভাবি যে, পৃথিবীর প্রতিটি সক্ষম নারী সন্তানের জন্ম দিতে অস্বীকার করল— হ্যাঁ এ এক চরম উৎকেন্দ্রিক পরিস্থিতি— তবু যদি এমন করে তারা, তখন রাষ্ট্র কী করবে? প্রয়োজনে সে নারী-শরীরে ভ্রূণ-সঞ্চারের আগ্রাসনে নামবে না! গর্ভের অধিকার পরিস্থিতির শর্তাধীনে নারীর। অর্থাৎ রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কখনো ‘চতুর্থ’ সন্তানের জননী আবার কখনো ‘একের পর আর একটিও না’— এমত স্লোগানে নারী পুরস্কৃত হবে। অতএব সন্তানের জন্ম শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আবেগসঞ্জাত একটি ক্রিয়া নয়— সামাজিক প্রয়োজন। একে সামাজিক উৎপাদনের সঙ্গে এক সারিতে বসিয়ে ‘নারীর সামাজিক শ্রমদান’ চিহ্নিত করার কথা। তেমনই করা হয়েছে কল্যাণকামী রাষ্ট্রের আইনে। সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে শুরু করে প্রসূতি মা এবং গর্ভস্থ ভ্রূণের দেখভাল সংক্রান্ত নানান বিষয় রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু চিন্তনের এই যুক্তি-শৃঙ্খলা চরমে পৌঁছোলে নারী শুধু ‘সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র’ হিসেবে ব্যবহৃত হবে (যেমন সামন্ততন্ত্রে, হিটলারের জার্মানিতে, উগ্র ইসলামি আর হিন্দুত্ববাদীদের নানান প্রস্তাবে) ও ‘মানুষ’ হিসেবে নারী তার কর্মদক্ষতার প্রয়োগ ও সৃজনের মৌলিক অধিকার হারাবে। কীভাবে ‘নারী’ মানবিক সমস্ত ক্ষমতা বিকাশের পরিপূর্ণ সুযোগ পাবে, কীভাবে তার শরীর, তার গর্ভ সম্পর্কে ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার অধিকার অর্জন করবে অথচ সমাজে নতুন শিশুজন্মের ভারসাম্য জনসংখ্যার নিরিখে ঠিকঠাক হারেই নিয়ন্ত্রিত হবে— সে বড়ো জটিল রসায়ন। আপাতত আমার বলার কথা এইটুকু— বিষয়টা এত গোলমেলে বলেই ‘মাতৃত্ব’-র জয়গানে আকাশবাতাস সর্বদা ভরিয়ে রাখতে হয়। বোধ হওয়া অবধি একটি শিশু (যেকোনো লিঙ্গের) যেন এই কথা জেনে-বুঝে, অনুভব করে বড়ো হয় যে ‘মা’ সে-এক ঐশ্বরিক প্রতিবেদন, এক মহিমান্বিত অবস্থান; যাতে প্রয়োজনে এই ধারণাকে নিজের কাজে (উভয়ত) ব্যবহার করতে পারে। আরোপিত সব ধারণার মতো এখানেও থাকে কিছু ফাঁক। যার নিদানে বৃদ্ধা ‘মা’ গলগ্রহ হলে তাকে বাড়ির বাইরে বের করে দেওয়া এমনকী খুন করার মতো সামাজিক থুড়ি ব্যক্তিগত ক্রিয়ায় কোনো অসুবিধা হয় না। সন্তান ধারণের এই ক্ষমতাই পেল্লায় ফানুস হয়ে নারীকে স্বার্থপর এবং সংসার নামক যাপনার ঘেরাটোপে বন্দি হবার আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল করে তোলে। ‘নারীত্ব’-র সংজ্ঞায় একাকার হয়ে যায় মাতৃত্ব-গার্হস্থ্য এবং সার্থকতা। শুধু কি সামাজিক নৈতিকতা? সাহিত্যে, ছবিতে, গানে, কবিতায়— সর্বত্র— কোথাও গণেশজননী— কোথাও-বা যশোদা-মা, মেরির কোলে যিশু (লক্ষণীয় সন্তানটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছেলে)।— রবিবাবু তো ‘সীমাস্বর্গের ইন্দ্রাণী’ বলেই ক্ষান্ত হলেন না; ‘জাপান যাত্রীর ডায়েরি’তে একেবারে নির্দিষ্ট করে দিলেন বাইরের জগতে পা রাখলেও সেখানে কোন কাজটি মেয়েদের— যেখানে ‘উদ্ভাবনী শক্তি’-র কোনো প্রয়োজন হয় না শুধু ‘অভ্যাস’ আর ‘নিষ্ঠা’-তেই কাজ চলে যায় সে-ক্ষেত্রটিই ‘মেয়েদের’। কেননা ‘দেহযন্ত্রটার’ দেখভাল করাটা ‘ওদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি’। অর্থাৎ এটা জিনে বহন করেই ওরা জন্মায়। তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নিই ‘কথাটা সত্যি’, তাহলে বলতে হয়, মানবিক ক্ষমতার বিকাশে যদি বাধা দেয় অন্তর্গত কোনো DNA তবে সেটা কীটদষ্ট। ভ্রূণেই তার চিকিৎসা প্রয়োজন। যাইহোক, এই যশোগানের ধাক্কায় চার দেওয়ালের বাইরের যেকোনো কাজই নারীর কাছে অপরের (পড়ুন পুরুষের)। সময়সুযোগ থাকলে কিংবা নিজের (পড়ুন ঘরের) কাজকর্ম মিটিয়ে অবকাশে সে ‘অপর’-এর কাজটি করে। কিন্তু ‘আসল’ কাজটির ডাক এলে কখনো অনায়াসে আবার অনেক সময় চোখের জল ফেলতে ফেলতে ‘নিজের’ কাজে ফিরে যায়। না, না, সাংসারিক কাজকর্ম— প্রতিটি খুঁটিনাটি অত্যন্ত জরুরি। তবে কিনা সেসব ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবননির্বাহের চাহিদা— এক ছাদের নীচে একত্রে যাঁরা বসবাস করবেন এর বিলিবন্দোবস্ত তাঁরাই মিলেমিশে ঠিক করে নেবেন— এগুলোকে ‘নারী’র কাজ হিসেবে লেবেল মারাই হাস্যকর। আর শিশুর জন্ম দেওয়া— সে-এক অপরূপ অভিজ্ঞতা। শরীরের ভেতরে একটি জ্যান্ত মানুষের নড়াচড়া, বেড়ে-ওঠা— দশ দশটা মাস তাকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচা তারপর একাধারে উদবেগ-আকাঙ্ক্ষা, যন্ত্রণা-আনন্দ-র বিপরীত সম্মিলনে সেই ছোট্ট মানুষটাকে হাতের মধ্যে পাওয়া। কিন্তু এ তো মেয়েমানুষের সামগ্রিক ব্যক্তিত্বের একটা অংশমাত্র— একে সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্বের প্রকাশ বললে মানব কেন? অথচ আমরা মেয়েরা তাই করি— সম্মোহিত হই— ক-জনই-বা এসময়ের প্রথিতযশা পদার্থবিজ্ঞানী ড রোহিনি গডবলে-র মতো বলতে পারি— ‘I am a scientist— happen to be a woman’— ক-জনই এমন করে প্রাঞ্জল করতে পারি এমনকী নিজের কাছেও কাজের কোনো লিঙ্গ নির্ধারণ হয় না (শিশুর জন্ম-দেওয়া কাজ নয়— বিশেষ প্রাকৃতিক অভিব্যক্তি)— হয় ‘পারা-না-পারা’ আর কিছু নয়। পারি না তো! অনেক চেষ্টাতেও এমন কথা বলতে পারি না। নিজের অজান্তেই ওই মহিমার শৃঙ্খল কখন যেন অলংকার হয়ে গেছে। খুলে ফেললে নিজেকে শ্রীহীন, ব্যর্থ মনে হয়। এ কোনো যুক্তির ব্যাখ্যান নয়, এ আমার অভিজ্ঞতা, সারা জীবনের অনুভব এবং যন্ত্রণা।

    একবার ড রোহিনি গডবলে-র কাছে সাংবাদিকেরা জানতে চেয়েছিলেন— শিক্ষাক্ষেত্রের প্রথম দিকের ধাপগুলোতে (বিজ্ঞানের) এমনকী স্নাতকোত্তর স্তরেও মেয়েরা ছেলেদের সমানে-সমানে বা অনেক ক্ষেত্রে খানিকটা এগিয়েই থাকে। অথচ পরে— গবেষণাসংক্রান্ত কৃতির ক্ষেত্রে তাদের প্রায় খুঁজেই পাওয়া যায় না, এমনটা কেন হয়। উত্তরে ড গডবলে বলেন, ‘কেননা যাদের দেখতে পেতেন তারা পাঁচ বছর আগেই অন্যক্ষেত্রে— ঘরে না হলেও এমন কোনো মানানসই কাজ যেখানে থাকলে সংসারকে সময় দেওয়া যায়— সেখানে চলে গেছে আর ফেরেনি।’ এমনটি তো কালো মেয়ের জীবনেও ঘটল। ‘ঈশ্বর-ধর্ম-সত্য’ এসব অধিবিদ্যক আলাপ-আলোচনা মুলতুবি থাক। মোদ্দা কথা মেয়েটির অভিযাত্রা শেষ হয়ে গেল— আচমকা। নচিকেতা দৃঢ়প্রতিজ্ঞায় পৌঁছে গিয়েছিল যমের কাছে। আর এ মেয়েটি লক্ষ্যে পৌঁছোনো দূরে থাক লক্ষ্যের কথাই বেমালুম ভুলে গেল। এত পথ পেরিয়ে, এত পাহাড় ডিঙিয়ে কৃষির কাছে সে থিতু হল— মাতৃত্বের সার্থকতায় হয়তো নিজেকেই ভেবে নিল স্রষ্টা বা ঈশ্বর। একবার এ প্রশ্ন সে নিজেই তুলেছিল— ‘এমন ভাবা কি অন্যায়?’ তবু বাচ্ছাদের পরিচর্যার সময় কখনো-সখনো মনে পড়ত তার সেই অনুসন্ধানের কথা— ওদের কাছে জানতে চাইত, এখন ‘যদি ঈশ্বরকে পেয়ে যাই, তাঁর সঙ্গে জীবন কাটাই, তোদের বাপ রেগে যাবে না তো!’

    এখানেই শেষ হতে পারত আখ্যানটি। সত্যিই তো, আর কোনো গন্তব্যই অবশিষ্ট নেই। হলে হত কিন্তু সেখানে বার্নার্ড শ-কে খুঁজে পাওয়া যেত না। অতএব শেষ কয়েক বক্যে সেই যথাবিহিত শ্যভিনিস্ট কামড়।

    বাচ্ছাগুলো যখন বড়ো হয়ে গেল— কাজের অবসরে সে একা— তখন মনে পড়ত তার অসমাপ্ত অভিযাত্রার কথা। ‘কিন্তু তখন আর শক্তি নেই তার দেহে। ডাণ্ডাটা সে এখন আর তুলতেই পারে না।’ ড গডবলের সেই ‘হতে পারত অথচ হল-না’ বিজ্ঞানীদের দল— তাদের মতো কালো মেয়েটিও আর ফিরতে পারল না তার অভিযাত্রায়।

    আমরা যা কিছুই করি অন্যের ওপর তার ফলাফল বর্তায় . . . সমস্ত কর্মের সঙ্গেই ফলাফল জড়িত। আর মানুষের কর্তব্যই হল এইসব ফলাফলগুলির সন্ধান করা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা।

    —ক্রিস্টোফার কডওয়েল।

    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅ্যানিমেল ফার্ম – জর্জ অরওয়েল
    Next Article ষোল-আনি – জলধর সেন
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }