Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সত্যার্থ প্রকাশ – দয়ানন্দ সরস্বতী

    দয়ানন্দ সরস্বতী এক পাতা গল্প919 Mins Read0

    ১৩. খৃষ্টান মত বিষয়

    খৃষ্টান মত বিষয়

    অনুভূমিকা ৩

    ১।বাইবেলের মত কেবল খ্রীষ্টানদের মত নহে, ইহুদী প্রভৃতিও ইহার অন্তর্গত। এই ত্রয়োদশ সমুল্লাসে খ্রীষ্টান মতের বিষয় লিখিত হইয়াছে। ইহার উল্লেখ করিবার অভিপ্রায় এই যে, আজকাল বাইবেল মতাবলম্বী বলিতে মুখ্যতঃ খ্রীষ্টান বুঝায়; ইহুদী প্রভৃতি গৌণ। মুখ্যের উল্লেখ করিলে গৌণেরও উল্লেখ করা হয়। সুতরাং বুঝিতে হইবে যে, এ স্থলে ইহুদী প্রভৃতিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছে।

    ২। এস্থলে কেবলমাত্র বাইবেল অবলম্বন করিয়াই ইহাদের সম্বন্ধে লিখিত হইয়াছে; কারণ। খ্রীষ্টান এবংইহুদী প্রভৃতি সকলেই বাইবেল বিশ্বাস করেন এবং এই গ্রন্থকে স্বীয় ধর্মের মূল কারণ মনে করেন। কয়েক জন প্রসিদ্ধ খ্রীষ্টান ধর্মাজক কর্তৃক বহু ভাষায় বাইবেলের অনুবাদহইয়াছে। তন্মধ্যে দেবনাগরী অক্ষরে লিখিত সংস্কৃত অনুবাদ পাঠ করিয়া বাইবেল সম্বন্ধে আমার মনে যে সকল সংশয় উৎপন্ন হইয়াছে, ঐ সকলের অল্প কয়েকটি সর্বসাধারণের বিচারার্থে এই ত্রয়োদশ সমুল্লাসে লিখিত হইয়াছে।

    ৩।ইহার উদ্দেশ্য এই যে, সত্যের প্রসার এবং অসত্যের হ্রাস হউক। কাহাকেওদুঃখ দেওয়া, অনিষ্ট সাধন কিংবা কাহারও প্রতি দোষারোপ করা অভিপ্রেত নহে। বাইবেল এবং খ্রীষ্টানদের মত কীরূপ তাহা প্রশ্নোত্তর হইতে সকলেই বুঝিতে পারিবেন।

    ৪। ইহাতে পড়া, শুনা এবং লেখা সহজ হইবে, এবং বাদী প্রতিবাদীরূপে খ্রীষ্টানমতের আলোচনারও সুবিধা হইবে। তদ্ব্যতীত আরও একটি উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইবে যে, এতদ্বারা লোকের ধর্মবিষয়ক জ্ঞান বৃদ্ধি পাইবে, এবং সত্যমত কী, অসত্যমত কী, কর্তব্যকর্ম কী এবং অকর্তব্যকর্ম। কী, তাহা জানা যাইবে; ফলে সত্য কর্তব্য কর্মের গ্রহণ এবং অসত্য অকর্তব্য কর্মের বর্জন। সহজসাধ্য হইবে!

    ৫। সকল মত সম্বন্ধীয় গ্রন্থ পাঠ করিয়া এবং বুঝিয়া সম্মতি এবং কিংবা অসম্মতি জ্ঞাপন। করা, লেখা অথবা শুনান সকলের কর্তব্য। অধ্যয়ন দ্বারা যেরূপ পণ্ডিত হওয়া যায়, সেইরূপ শ্রবণ দ্বারাও বহুশ্রুত হওয়া যায়। শ্রোতা অপরকে বুঝাইতে সমর্থ না হইলেও স্বয়ং উপলব্ধি করিতে পারে। যাঁহারা পক্ষপাতরূপ যানারূঢ় হইয়া অবলোকন করেন, তাহারা নিজেদের কিংবা পরের দোষগুণ দেখিতে পান না।

    ৬। মানবাত্মার সত্যাসত্য নির্ণয় করিবার যথোচিত সামর্থ্য আছে। যিনি যত অধ্যয়ন কিংবা শ্রবণ করেন, তিনি ততনির্ণয় করিতে সমর্থ হন। সকল মতবাদী পরস্পরের মত অবগত থাকিলেই যথোচিত বাদ প্রতিবাদ হয়। কিন্তু সকল পক্ষ পরস্পর মত না জানিলে, যে পক্ষ অজ্ঞ, সে পক্ষ ভ্রান্তির আবেষ্টনের মধ্যে পতিত হয়।

    যাহাতে তাহা না হয়, সেই উদ্দেশ্যে প্রচলিত সকল মত সম্বন্ধে কিছু এই গ্রন্থে লেখা হইয়াছে। তদ্বারা অবশিষ্ট বিষয় সমূহের মধ্যে কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা, তাহাও অনুমান করা যাইতে পারে।

    ৭। যাহা হউক, সবর্মান্য সত্য সমূহ সকলের মধ্যেই একরূপ, কেবল মিথ্যা লইয়াই বিবাদ। যে স্থলে একটি বিষয় সত্য, অপরটি মিথ্যা, সে স্থলেও বিবাদের কারণ থাকে। কেবল সত্যাসত্য নির্ণয়ের জন্য বাদীরূপে তর্কবিতর্ক করা হইলে নিশ্চয় সত্য নির্ণয় হইতে পারে। এখন, আমি এই ত্রয়োদশ সমুল্লাসে খ্রীষ্টানমত বিষয়ক কিঞ্চিৎ আলোচনা সর্বসাধারণের সমক্ষে উপস্থিত করিতেছি। ইহা কীরূপ, তাহা তাঁহারা বিচার করিবেন।

    অলমতিলেখেন বিচক্ষণবরেষু।

    .

    অথ ত্রয়োদশ-সমুল্লাসারম্ভঃ
    অথকৃশ্চানমত বিষয়ং ব্যাখ্যাসামঃ ॥

    অতঃপর খৃষ্টানমত সম্বন্ধে লিখিত হইতেছে। এতদ্বারা এই মত ভ্ৰম, প্রমাদশূন্য বা বাইবেল ঈশ্বরকৃত কি না, তাহা সকলে জানিতে পারিবেন। প্রথমতঃ প্রাচীন বাইবেলসম্বন্ধে আলোচনা করা হইতেছে —

    ১। আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করিলেন। পৃথিবী বন্ধুর, শূন্য এবং গভীর অন্ধকারে আচ্ছাদিত, জলধির উপর ছিল। আর ঈশ্বরের আত্মা জলের উপর দুলিতেছিল। (তৌরেত উৎপত্তি পুস্তক) পর্ব ১। আয় ১২ ॥

    সমীক্ষক –আরম্ভ কাহাকে বলে?

    খৃষ্টান –সৃষ্টির প্রথম উৎপত্তিকে।

    সমীক্ষক –এই কি প্রথম সৃষ্টি হইল; এর পূর্বে কখনও হয়নি?

    খৃষ্টান –হইয়াছিল কিনা, আমরা জানি না, ঈশ্বর জানেন।

    সমীক্ষক — যদি না জান তবে এই পুস্তকের উপর বিশ্বাস করিলে কেন? যাহার সাহায্যে সংশয় দূর হইতে পারে না, তাহারই ভরসায় উপদেশ দিয়া জনসাধারণকে এই সন্দিগ্ধ মতে। জড়িত করিতেছ কেন? নিশ্চিত রূপে সর্ব সংশয়নিবারক বেদ-মত গ্রহণ করিতেছ না কেন? তোমরা ঈশ্বরের সৃষ্টিতত্ত্ব না জানিয়া ঈশ্বরকে জানিবে কীরূপে? আকাশ কাহাকে বলে?

    খৃষ্টান –শূন্য এবং উপর।

    সমীক্ষক — শূন্যের উৎপত্তি কীরূপে হইল? শূন্য বিভু এবং অত্যন্ত সূক্ষ্ম পদার্থ; উহা উপরে ও নিম্নে একরূপ। যখন আকাশ সৃষ্ট হয় নাই, তখন শূন্য এবং অবকাশ ছিল কি না? যদি না থাকিয়া থাকে, তবে জগতের কারণ ঈশ্বর এবং জীব কোথায় ছিল? অবকাশ ব্যতীত কোন পদার্থ। থাকিতে পারে না। অতএব, তোমাদের বাইবেলের উক্তি যুক্তিসঙ্গত নহে।

    ঈশ্বর এবং তাহার জ্ঞান ও কর্ম কি অবন্ধুর অথবা বন্ধুর?

    খৃষ্টান –অবন্ধুর।

    সমীক্ষক — তবে এস্থলে ঈশ্বরসৃষ্ট পৃথিবী বন্ধুর ছিল, এইরূপ লিখিত হইয়াছে কেন?

    খৃষ্টান –বন্ধুর বলিতে বুঝিতে হইবে, উঁচু-নীচু, সমতল ছিল না।

    সমীক্ষক-–পরে কেসমতল করিল? এখনও কি উহা উঁচুনীচুনহে? ঈশ্বরের কাৰ্য্য সামঞ্জস্যহীন হইতে পারে না। কারণ, তিনি সর্বজ্ঞ; তাঁহার কাৰ্য্যে কখনও ভ্রমপ্রমাদ হইতে পারে না। কিন্তু বাইবেলে লিখিত হইয়াছে যে, ঈশ্বরের সৃষ্টি সামঞ্জস্যহীন। সুতরাং এই পুস্তক ঈশ্বরকৃত হইতে পারে না।

    প্রথমতঃ — ঈশ্বরের আত্মা কী পদার্থ?

    খৃষ্টান –চেতন।

    সমীক্ষক –তিনি কি সাকার না নিরাকার? তিনি কি ব্যাপক না একদেশী?

    খৃষ্টান –তিনি নিরাকার, চেতন এবং ব্যাপক। তিনি “সনাই” নামক কোন এক পর্বতে এবং চতুর্থ আকাশ প্রভৃতি স্থানে বিশেষরূপে অবস্থান করেন।

    সমীক্ষক –যদি ঈশ্বর নিরাকার হন, তবে তাহাকে দেখিতে পাইল কে? যিনি ব্যাপক, তিনি জলের উপর কখনও দুলিতে পারেন না। ভাল, –যখন ঈশ্বরের আত্মা জলের উপর দুলিতেছিল, তখন ঈশ্বর কোথায় ছিলেন? এতদ্বারা জানা যাইতেছে যে, ঈশ্বরের স্ত্রীর অন্য কোন স্থানে ছিল, অথবা তিনি তাঁহার আত্মার অংশ বিশেষ জলের উপর দোলাইতে ছিলেন। তাহা হইলে তিনি কখনও বিভুও সর্বজ্ঞ হইতে পারেন না। বিভু না হইলে তিনি জগতের রচনা, ধারণ-পালন, জীবের কর্মব্যবস্থা এবং প্রলয় কখনও করিতে পারেন না। কারণ, যিনি স্বরূপতঃ একদেশী, তাঁহার গুণ, কর্ম, স্বভাবও একদেশী। তাহা হইলে তিনি ঈশ্বর হইতে পারেন না। বেদে বর্ণিত হইয়াছে যে, ঈশ্বর সর্বব্যাপক, অনন্ত গুণকর্মস্বভাব বিশিষ্ট, সচ্চিদানন্দস্বরূপ, নিত্যশুদ্ধবুদ্ধমুক্ত স্বভাব, অনাদি এবং অনন্তাদি লক্ষণযুক্ত। তাহাকেই বিশ্বাস কর। তাহাতেই কল্যাণ হইবে অন্যথা নহে ॥ ১ ॥

    ২। পরে ঈশ্বর কহিলেন, আলো হও; আলো হইল। তখন ঈশ্বর আলোক দেখিলেন –অতি উত্তম। –তৌরেত উৎপত্তি পর্ব ১। আ০ ৩৪ ॥

    সমীক্ষক –আলো জড় পদার্থ; সে কি ঈশ্বরের কথা শুনিবে? যদি শুনিয়া থাকে, তবে সূৰ্য্য, প্রদীপ, এবং অগ্নির আলো আমাদের এবং তোমাদের কথা শুনে না কেন? জড় আলো কখনও কাহারও কথা শুনিতে পায় না।

    ঈশ্বর কি আলো দেখিবার পরেই জানিতে পারিলেন যে, উহা উত্তম? পূর্বে কি জানিতেন না? যদি পূর্বে জানিতেন, তাহা হইলে দেখিয়া “উত্তম” বলিলেন কেন? যদি না জানিতেন, তাহা হইলে তিনি ঈশ্বরই নহেন। সুতরাং বাইবেল ঈশ্বরের বাণী নহে, এবং বাইবেল বর্ণিত ঈশ্বর সর্বজ্ঞ নহেন।২ ॥

    ৩। পরে ঈশ্বর কহিলেন, জলের মধ্যে আকাশ হউক, জলকে জল দ্বারা পৃথক করা হউক। ঈশ্বর এইরপে আকাশ করিয়া আকাশের উদ্ধৃস্থিত জল হইতে আকাশের অধঃস্থিত জলকে পৃথক্ করিলেন। তাহাতে সেইরূপ হইল। পরে ঈশ্বর আকাশের নাম স্বর্গ রাখিলেন। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল দ্বিতীয় দিবস হইল। –তৌরেত উৎপত্তি ॥ পর্ব ১। আ০ ৬। ৭। ৮ ॥

    সমীক্ষক –আকাশ এবং জলও কি ঈশ্বরের কথা শুনিল? জলের মধ্যে আকাশ না থাকিলে জল কোথায় থাকিত? প্রথমে আয়তে আকাশ সৃষ্টির উল্লেখ আছে; সুতরাং পুনরায় আকাশ নির্মাণ বৃথা।

    আকাশকে স্বর্গ বলা হইল; আকাশ সর্বব্যাপক, সুতরাং স্বর্গ সর্বত্র হইল; তাহা হইলে পুনরায় উপরিভাগকে স্বর্গ বলা বৃথা। সূৰ্য্য সৃষ্ট হইবার পূর্বে দিবারাত্রি কীরূপে হইল? পরবর্তী আয়তগুলিও এইরূপ অসম্ভব কথায় পরিপূর্ণ ॥৩ ॥

    ৪। পরে ঈশ্বর কহিলেন, আমি আদমকে নিজের স্বরূপে নিজের সাদৃশ্যে নির্মাণ করিব;ঈশ্বর আপন স্বরূপে আদমকে সৃষ্টি করিলেন। পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে আশীর্বাদ করিলেন। (তৌরেত উৎপত্তি) পর্ব ১। আ০ ২৬২৭-২৮ ॥

    সমীক্ষক –যদি ঈশ্বর আদমকে তাহার স্বরূপে নির্মাণ করিয়া থাকেন, তাহা হইলে তিনি যেমন পবিত্র, জ্ঞানস্বরূপ এবং আনন্দময় ইত্যাদি লক্ষণযুক্ত, আদমও সেইরূপ হইল না। আবার আদমকে নিজ স্বরূপে নির্মাণ করিবার অর্থ এই যে, ঈশ্বর নিজ স্বরূপকেই উৎপত্তি বিশিষ্ট করিলেন। তাহা হইলে তাহাকে অনিত্য বলা হইবে না কেন?

    তদ্ব্যতীত তিনি আদমকে কোথা হইতে উৎপন্ন করিলেন?

    খৃষ্টান –মৃওিকা হইতে।

    সমীক্ষক –মৃত্তিকা কীসের দ্বারা নির্মাণ করিলেন?

    খৃষ্টান –নিজ সামর্থ্য দ্বারা।

    সমীক্ষক — ঈশ্বরের সামর্থ্য কি অনাদি, না –নবীন?

    খৃষ্টান –অনাদি।

    সমীক্ষক –অনাদি হইলে, জগতের কারণ সনাতন হইল। তবে অভাব হইতে ভাব স্বীকার কর কেন?

    খৃষ্টান –সৃষ্টির পূর্বে ঈশ্বর ব্যতীত কিছুই ছিল না।

    সমীক্ষক — তাহা হইলে এই জগৎ কোথা হইতে উৎপন্ন হইল? আর ঈশ্বরের সামর্থ্য দ্রব্য গুণ? যদি দ্রব্য হয়, তবে সৃষ্টির পূর্বে ঈশ্বর ব্যতীত অন্য পদার্থও ছিল। যদি গুণ হয় তবে গুণ হইতে দ্রব্য হইতে পারে না। উদাহরণ স্বরূপ, রূপ হইতে অগ্নি এবং রস হইতে জল উৎপন্ন হইতে পারে না। আবার যদি ঈশ্বর হইতে জগৎ উৎপন্ন হইয়া থাকে, তবে জগৎ ঈশ্বর সদৃশ গুণ, কর্ম ও স্বভাব বিশিষ্ট হইত। কিন্তু তদ্রপ না হওয়ায় নিশ্চিত রূপে জানা যাইতেছে যে, জগৎ ঈশ্বর হইতে উৎপন্ন হয় নাই; কিন্তু জগতের কারণ অর্থাৎ পরমাণু ইত্যাদি নামবিশিষ্ট জড়পদার্থ। হইতে উৎপন্ন হইয়াছে।

    বেদাদিশাস্ত্রে জগতের উৎপত্তি যেরূপ বর্ণিত আছে তাহা স্বীকার কর, এবং যদ্বারা জগৎ নির্মিত হইয়াছে তাহাও জানিবার চেষ্টা কর। যদি আদমের অভ্যন্তর স্বরূপ জীবাত্মা এবং বহিঃ স্বরূপ মনুষ্য সদৃশ হয় তাহা হইলে ঈশ্বরের স্বরূপও তাদৃশ্য হইবে না কেন? যেহেতু আদম ঈশ্বরের সাদৃশ্যে নির্মিত, অতএব ঈশ্বরেরও আদমের সদৃশ হওয়া আবশ্যক ॥ ৪ ॥

    ৫। আর সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকার ধূলি হইতে আদমকে নির্মাণ করিলেন এবং তাহার নাসিকায়। যুঁ দিয়া প্রাণবায়ু প্রবেশ করাইলেন, তাহাতে আদম জীবিত প্রাণী হইল। আর সদাপ্রভু ঈশ্বর পূর্বদিকে অদনে এক উদ্যান প্রস্তুত করিলেন এবং সেই স্থানে আপনার নির্মিত আদমকে রাখিলেন। আর সদাপ্রভু ঈশ্বর ভূমি হইতে সেই উদ্যানের মধ্যস্থলে জীবনবৃক্ষ ও সৎ অসৎ জ্ঞানদায়ক বৃক্ষ উৎপন্ন করিলেন। (তৌরেত উৎপত্তি) গৰ্ব ২। আ০৭ ৮ ৯ ॥

    সমীক্ষক –যখন ঈশ্বর অদনে উদ্যান রচনা করিয়া তন্মধ্যে আদমকে রাখিলেন তখন কি জানিতেন না যে, তাহাকে পুনরায় সে স্থান হইতে বহিষ্কার করিতে হইবে? যেহেতু ঈশ্বর আদমকে ধূলি দ্বারা নির্মাণ করিলেন অতএব ঈশ্বরের সাদৃশ্যে নির্মাণ করা হইল না। যদি ঈশ্বরের সাদৃশ্যে নির্মাণ করা হইয়া থাকে, তবে ঈশ্বরও ধূলি হইতে নির্মিত হইয়া থাকিবেন। ঈশ্বর আদমের নাসারন্ধ্রে যে প্রাণবায়ু সঞ্চারিত করিলেন, সে প্রাণবায়ু কি ঈশ্বরের স্বরূপ অথবা অন্য কিছু ছিল? যদি বলা হয় যে, অন্য কিছু ছিল, তাহা হইলে আদমকে ঈশ্বরের স্বরূপে নির্মাণ করা হয় নাই। যদি বলা হয় যে, সে প্রাণবায়ু ঈশ্বরের স্বরূপ ছিল, তাহা হইলে ঈশ্বর এবং আদম পরস্পর সদৃশ। এমতাবস্থায় আদমের ন্যায় জন্মমৃত্যু, হ্রাসবৃদ্ধি, ক্ষুৎপিপাসাদি দোষ ঈশ্বরে আসিল। এইরূপ হইলে তিনি কীরূপে ঈশ্বর হইতে পারেন? সুতরাং প্রাচীন বাইবেলের এই বিবরণ সত্য বলিয়া বোধ হয় না এবং এই বাইবেলও ঈশ্বরকৃত হইতে পারে না ৷৫ ॥

    ৬। পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে ঘোর নিদ্রায় মগ্ন করিলে তিনি নিদ্রিত হইলেন; আর তিনি তাহার পার্শ্বদেশ হইতে একখানা হাড় লইলেন এবং মাংস দ্বারা সেই স্থান পূর্ণ করিলেন। সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমের সেই হাড় দিয়া একটি নারী নির্মিত করিয়া তাহাকে আদমের নিকটে আনিলেন। (তৌরেত উৎপত্তি) পর্ব ২।২ /আ০ ২১। ২২ ॥

    সমীক্ষক –যদি পরমেশ্বর আদমকে ধূলি দিয়া নির্মাণ করিয়া থাকেন, তাহা হইলে আদমের স্ত্রীকেও ধূলি দিয়া নির্মাণ করিলেন না কেন? আবার যদি আদমের স্ত্রীকে অস্থি দ্বারা নির্মাণ করিয়া থাকেন, তাই হইলে আদমকেও অস্থি দ্বারা নির্মাণ করিলেন না কেন? যেরূপ নর হইতে নির্গত বলিয়া নারী নাম হইল, তদ্রপ নারী হইতেও নর নাম হওয়া উচিত। পতি-পত্নীর মধ্যে প্রেম থাকা বাঞ্ছনীয়। স্ত্রী পতিকে এবং পতি স্ত্রীকে ভালবাসিবে।

    সুধীগণ দেখুন! ঈশ্বরের কি চমৎকার ‘পদার্থবিদ্যা’ অর্থাৎ ‘ফিলসফি’ ঠিকরাইয়া পড়িতেছে। ঈশ্বর যদি আদমের একটি অস্থি বাহির করিয়া তদ্বারা নারী নির্মাণ করিয়া থাকেন, তাহা হইলে প্রত্যেক মানুষের একটি অস্থি কম থাকে না কেন? অধিকন্তু প্রত্যেক নারীর শরীরে একটিমাত্র অস্থি থাকা উচিত; কারণ তাহার শরীর একটিমাত্র অস্থি দ্বারা নির্মিত হইয়াছে। যে উপাদান দ্বারা জগৎ রচিত হইয়াছে সেই উপাদান দ্বারা কি নারীদেহ নির্মিত হইতে পারিত না এই নিমিত্ত বাইবেল বর্ণিত সৃষ্টিক্রম সৃষ্টি বিদ্যার বিরুদ্ধ ৷৬ ॥

    ৭। সদাপ্রভু ঈশ্বরের নির্মিত ভূ-চর প্রাণীদের মধ্যে সর্প ছিল সর্বাপেক্ষা ধূৰ্ত্ত। সে ঐ নারীকে কহিল –ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না? নারী সৰ্পকে কহিল, আমরা তো এই উদ্যানস্থ বৃক্ষসকলের ফল খাইতে পারি; কেবল উদ্যানের মধ্যস্থলে যে বৃক্ষ আছে, তাহার ফলের বিষয়ে ঈশ্বর বলিয়াছেন, তোমরা তাহা খাইও না, স্পর্শ করিও না, নহিলে মরিবে।

    তখন সর্প নারীকে কহিল তুমি কোনক্রমে মরিবে না, কেননা ঈশ্বর জানেন যেদিন তোমরা ফল খাইবে সেই দিন তোমাদের জ্ঞানচক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে ঈশ্বরের সদৃশ সদসজ্ঞান প্রাপ্ত হইবে। নারী যখন জানিতে পারিল যে, ঐ বৃক্ষ সুখদায়ক ও চক্ষুর পক্ষে দৃষ্টি নন্দন, আর ঐ বৃক্ষ জ্ঞানদায়ক বলিয়া বাঞ্ছনীয় তখন সে তাহার ফল পাড়িয়া নিজ স্বামীকেও দিল এবং নিজেও ভক্ষণ করিল। তাহাতে তাহাদের উভয়ের জ্ঞানচক্ষু খুলিয়া গেল এবং তাহারা জানিল যে, তাহারা উলঙ্গ। তাই তাহারা নিজেদের জন্য ডুমুর বৃক্ষের পত্র সেলাই করিয়া আচ্ছাদন প্রস্তুত করিয়া লইল।

    পরে সদাপ্রভু সৰ্পকে কহিলেন–তুমি এই কর্ম করিয়াছ, এই জন্য গ্রাম্য ও বন্য পশুগণের মধ্যে তুমি সর্বাপেক্ষা অধিক শাপগ্রস্ত হইবে, তুমি বুকে হাঁটিবে যাবজ্জীবন ধূলি ভক্ষণ করিবে ॥

    আর তোমাতে ও নারীতে এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব। সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে এবং তুমি তাহার পাদমূলে দংশন করিবে। পরে তিনি নারীকে কহিলেন– আমি তোমার গর্ভবেদনা অতিশয় বৃদ্ধি করিব, তুমি বেদনান্তে প্রসব করিবে। স্বামীর প্রতি তোমার বাসনা থাকিবে এবং সে তোমার উপর কর্তৃত্ব করিবে।

    আর তিনি আদমকে কহিলেন–যে বৃক্ষের ফলের বিষয়ে আমি তোমাকে বলিয়াছিলাম, তুমি উহা খাইও না। তুমি তোমার স্ত্রীর কথা শুনিয়া তাহার ফল খাইয়াছ এইজন্য তোমার নিমিত্ত ভূমি অভিশপ্ত হইল। তুমি যাবজ্জীবন ক্লেশে উহা ভোগ করিবে। আর উহাতে তোমার জন্য কন্টক ও শেয়ালকাটা জন্মিবে এবং তুমি ক্ষেত্রের শাক-পাতা ভোজন করিবে। তৌরেত উৎপত্তি পৰ্ব্ব ৩। আ০১-৭,১৪-১৮।

    সমীক্ষক –খ্রীষ্টানদিগের ঈশ্বর সর্বজ্ঞ হইলে এই ধূওঁ সৰ্প অর্থাৎ শয়তানকে সৃষ্টি করিবেন। কেন? সৃষ্টি করিবার জন্য তিনিই অপরাধী। কারণ তিনি শয়তানকে দৃষ্ট প্রকৃতি না দিলে, সে কুকর্ম করিত না। তিনি তো পূর্বজন্ম স্বীকার করেন না। তাহা হইলে তিনি বিনা অপরাধে শয়তানকে দুষ্টপ্রকৃতি করিয়া সৃষ্টি করিলেন কেন? প্রকৃতপক্ষে শয়তান সর্প ছিল না, কিন্তু মনুষ্য ছিল। তাহা হইলে সে মনুষ্যের ভাষা কীরূপে বলিত?

    যে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী এবং অপরকে অসত্য পথে পরিচালিত করে, তাহাকেই শয়তান বলা উচিত। কিন্তু এ স্থলে শয়তান সত্যবাদী; তাই স্ত্রীলোকটিকে বিভ্রান্ত না করিয়া সত্য কথা বলিয়াছিল। পক্ষান্তরে, ঈশ্বর আদম এবং হাব্বাকে মিথ্যা কথা বলিয়াছিলেন, “এই বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করিলে তোমরা মরিয়া যাইবে।” যে বৃক্ষের ফল, জ্ঞান এবং অমরত্ব প্রদানকারী ছিল, ঈশ্বর তাহাদিগকে তাহা ভক্ষণ করিতে নিষেধ করিলেন কেন? তাহা হইলে দেখা যাইতেছে যে, তিনি মিথ্যাবাদী। এবং বিভ্রান্তকারী! সেই বৃক্ষের ফল মনুষ্যের পক্ষে জ্ঞান ও সুখদায়ক ছিল, অজ্ঞান এবং মৃত্যুজনক ছিল না।

    ঈশ্বর যদি সেই ফল ভক্ষণ করিতে নিষেধ করিয়া থাকেন, তবে তিনি উহা সৃষ্টিই করিলেন। কেন? তিনি যদি উহা নিজের জন্যই সৃষ্টি করিয়া থাকেন, তাহা হইলে কি তিনি অজ্ঞান এবং মরণধর্মী ছিলেন? যদি অপরের জন্য সৃষ্টি করিয়া থাকেন, তাহা হইলে ফল ভক্ষণ করায় কোন অপরাধ হয় নাই। আজকাল জ্ঞানপ্রদ এবং মৃত্যু-নিবারক কোন বৃক্ষই দেখিতে পাওয়া যায় না। তবে কি ঈশ্বর সেই বৃক্ষের বীজ পৰ্য্যন্ত নষ্ট করিয়া ফেলিয়াছেন?

    যাহারা এরূপ কাৰ্য্য করে, তাহারা ভণ্ড এবং কপটাচারী। তাহা হইলে ঈশ্বরকে ভণ্ড ও কপটাচারী বলা হইবে না কেন? পুনশ্চ, ঈশ্বর বিনা অপরাধে তিনজনকে অভিশাপ দিলেন। তাহাতে তিনি অন্যায়কারী হইলেন। এই অভিশাপ তাহার নিজের উপরেই পড়া উচিত। কারণ তিনিই মিথ্যা কথা বলিয়া তাহাদিগকে বিভ্রান্ত করিয়াছিলেন।

    কীরূপ “ফিলসফি” দেখ। বিনা ক্লেশে কি গর্ভধারণ এবং সন্তান প্রসব সম্ভব? কেহ কি বিনা। পরিশ্রমে জীবিকা অর্জন করিতে পারে? পূৰ্ব্বে কি কন্টকাদি বৃক্ষ ছিল না? ঈশ্বরের আদেশ অনুসারে শাক-পত্র ভোজন করাই যদি মনুষ্যের কর্তব্য হয়, তাহা হইলে বাইবেলের উত্তরাংশে যে। মাংস ভোজনের কথা লিখিত আছে, তাহা মিথ্যা নহে কেন? পূর্বোক্ত বাক্য সত্য হইলে, শেষোক্ত বাক্য মিথ্যা।

    আদমের কোন অপরাধই প্রমাণিত হয় নাই; তাহা হইলে খ্রীষ্টানগণ মনুষ্যমাত্রকেই আদমের সন্তান বলিয়া অপরাধী বলেন কেন? আচ্ছা, এরূপ পুস্তক এবং এমন ঈশ্বর কি কখনও সুধীগণ গ্রহণযোগ্য মনে করিতে পারেন? ॥ ৭ ॥

    ৮। আর সদাপ্রভু ঈশ্বর কহিলেন, –দেখ, সদসৎজ্ঞান প্রাপ্ত হইবার বিধানে আদম আমাদের। ন্যায় ছিল। পাছে এরূপ হয় যে, সে স্বহস্ত বিস্তার করিয়া জীবন বৃক্ষের ফলও পাড়িয়া ভোজন করে ও অমর হয়; এই নিমিত্ত সদাপ্রভু তাহাকে আদমের উদ্যান হইতে বাহির করিয়া দিলেন। এইরূপে ঈশ্বর মনুষ্যকে তাড়াইয়া দিলেন এবং জীবন বৃক্ষের পথ রক্ষা করিবার জন্য অদনস্থ উদ্যানের পূর্বদিকে করোবীম গণকে ও ঘূর্ণায়মান তেজোময় খড়গ রাখিলেন ॥ (তৌরেত উৎপত্তি) পর্ব ৩। আ০ ২২। ২৪ ॥

    সমীক্ষক –ভাল! ঈশ্বরের এরূপ হিংসা এবং ভ্রম হইল কেন? তিনি কেন ভাবিলেন যে, আদম জ্ঞানে তাহার সমক্ষক হইয়া উঠিল? সমকক্ষ হইলেই বা তাহাতে কিছু অন্যায় ছিল কী? এরূপ শঙ্কাই বা হইল কেন? কেননা, কেহ কখনও ঈশ্বরের সমকক্ষ হইতে পারে না। এইরূপ লেখা হইতে প্রমাণিত হইতেছে যে, সেই ঈশ্বর প্রকৃত ঈশ্বর ছিলেন না, কিন্তু মনুষ্য বিশেষ ছিলেন। বাইবেলের যেখানে ঈশ্বরের প্রসঙ্গ আসিয়াছে সেখানে ঈশ্বরের বর্ণনা মনুষ্যের ন্যায় করা হইয়াছে।

    এখন দেখ! আদমের জ্ঞান বৃদ্ধি হওয়াতে ঈশ্বর কীরূপ দুঃখিত হইলেন। আবার অমর বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করায় আদমের প্রতি তাহার কতই না ঈর্ষা হইল। যখন তিনি পূর্বে আদমকে উদ্যানে রাখিয়াছেন, তখন কি তাহার এই ভবিষ্যৎ জ্ঞান ছিল না যে, আদমকে পুনরায় বহিষ্কার করিতে হইবে। এই নিমিত্ত খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর সর্বজ্ঞ ছিলেন না। আর তেজময় খড়গ প্রহরীরূপে রাখাও মনুষ্যের কাৰ্য্য, ঈশ্বরের নহে ॥ ৮ ॥

    ৯। পরে কালানুক্রমে কাইন উপহার রূপে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে ভূমির ফল উৎসর্গ করিল। আর হাবিল ও আপন মেষপালক হইতে কয়েকটি প্রথম প্রসূত হৃষ্টপুষ্ট মেষ আনয়ন করিল। তখন সদাপ্রভু হাবিলকে এবং তাহার উপহারকে সমাদরের সহিত গ্রহণ করিলেন; কিন্তু কাইনকে ও তাহার উপহারকে সমাদরের সহিত গ্রহণ করিলেন না; এই নিমিত্ত কাইন অতিশয় ক্রুদ্ধ হইল; তাহার মূর্খ বিষণ্ণ হইল। তখন পরমেশ্বর কাইনকে বলিলেন –“তুমি কেন ক্রুদ্ধ হইলে? তোমার মুখ বিষণ্ণ হইল কেন?” ॥তৌরেত পর্ব ৪ ॥ আ০ ৩৬ ॥

    সমীক্ষক –ঈশ্বর হাবিলের সমাদর এবং তাহার মেষ উপহাররূপে গ্রহণ করিলেন কিন্তু কাইনের সমাদর এবং তাহার উপহার গ্রহণ করিলেন না। তিনি মাংসাহারী না হইলে এইরূপ করিবেন কেন? এইরূপ বিবাদ বাধাইয়া হাবিলের মৃত্যু ঘটাইবার জন্য তিনিই দায়ী। খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর এস্থলে মনুষ্যের ন্যায় কথোপকথন করিতেছেন। উদ্যান রচনা এবং উদ্যানে যাতায়াতও মনুষ্যের কাৰ্য। অতএব জানা যাইতেছে যে, বাইবেল মনুষ্যকৃত, ঈশ্বরকৃত নহে ॥৯ ॥

    ১০। পরে সদাপ্রভু কাইনকে বলিলেন –“তোমার ভ্রাতা হাবিল কোথায়?” সে উত্তর দিল– “আমি জানি না; আমি কি আমার ভ্রাতার রক্ষক?” তিনি কহিলেন –“তুমি কী করিয়াছ? তোমার ভ্রাতার রক্ত ভূমি হইতে আমাকে ডাকিতেছে এবং তুমি পৃথিবীতে শাপগ্রস্ত”। তৌরেত পর্ব ৪ ॥ আ০ ৯-১১ ॥

    সমীক্ষক –কাইনকে জিজ্ঞাসা করিবার পূর্বে ঈশ্বর কি হাবিলের অবস্থা জানিতেন না? রক্তের শব্দ কি কাহাকেও কখনও ভূমি হইতে আহ্বান করিতে পারে? এ সকল অজ্ঞানের কথা, অতএব এরূপ পুস্তক ঈশ্বর রচিত হওয়া দূরে থাকুক, কোন বিদ্বানেরও রচিত নহে ॥ ১০ ॥

    ১১। “মথুশেলহের জন্মের পর হনুক তিন শত বৎসর ঈশ্বরের সঙ্গে সঙ্গে চলিতে ছিলেন।” ॥ তৌ০ (উৎপত্তি) পর্ব ৫। আ০ ২২ ॥

    সমীক্ষক –খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর মনুষ্য না হইলে, হনুক তাহার সঙ্গে সঙ্গে চলিবে কেন? অতএব যদি খ্রীষ্টানগণ বেদোক্ত নিরাকার, ব্যাপক ঈশ্বর বিশ্বাস করেন, তাহা হইলে তাহাদের কল্যাণ হইতে।।১১।।

    ১২। এইরূপ যখন ভূমণ্ডলে মনুষ্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাইতে লাগিল ও তাহাদের অনেক কন্যা সন্তান জন্মিল তখন ঈশ্বরের পুত্রেরা আদমের কন্যাগণকে সুন্দরী দেখিয়া যাহার যাহাকে ইচ্ছা সে। তাহাকে বিবাহ করিল। তৎকালে পৃথিবীতে দানবগণ ছিল, এবং তৎপরেও ঈশ্বরের পুত্র আদমের কন্যাদের সহিত মিলিত হইল। তাহাদের গর্ভে সন্তান জন্মিলে তাহারাও বলবান হইয়া সেকালে প্রসিদ্ধ হইলেন।

    আর সদাপ্রভু দেখিলেন, পৃথিবীতে আদমের দুষ্টতা বেশী এবং তাহার অন্তঃকরণে চিন্তাও সমস্ত ভাবনা নিরন্তর কেবল মন্দই হইতেছে, তখন সদাপ্রভু পৃথিবীতে আদমকে নির্মাণ করিয়া অনুতাপ করিলেন এবং তাহার অতি দুঃখ হইল। আর সদাপ্রভু কহিলেন –আমি যে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিয়াছি, তাহাকে ভূমণ্ডল হইতে উচ্ছিন্ন করিব, মনুষ্যের সহিত পশু, সরীসৃপ জীব ও আকাশের পক্ষীদিগকেও বিনষ্ট করিব কেননা, তাহাদের নির্মাণ করিয়া আমি অনুতপ্ত হইতেছি। তৌ০ (উৎপত্তি) প০ ৬। আ০ ১,২,৪-৭ ॥

    সমীক্ষক –খ্রীষ্টানদিগের নিকট জিজ্ঞাস্য এই যে, ঈশ্বরের পুত্র কে এবং ঈশ্বরের স্ত্রী, শ্বশুর, শ্বশ্রু, শালক এবং আত্মীয়ই বা কাহারা? কেননা এবার তো আদমের কন্যাদের সহিত বিবাহ হওয়ায় ঈশ্বর মনুষ্যদের কুটুম্ব হইলেন। বিবাহ জাত সন্তানগণ পুত্রও প্রপৌত্র হইল। ঈশ্বরের সম্বন্ধে এ সকল কথা বলা যাইতে পারে কী? ঈশ্বরকৃত পুস্তকে এ সকল থাকা কি সম্ভব? এতদ্বারা সিদ্ধ হইতেছে যে, বাইবেল রচয়িতারা বন্য মনুষ্য ছিলেন।

    যিনি সর্বজ্ঞ নহেন এবং ভবিষ্যতের বিষয় জানেন না, তিনি ঈশ্বরই নহেন, তিনি জীব। সৃষ্টির পূর্বে ঈশ্বর কি জানিতেন না যে, মনুষ্য ভবিষ্যতে দৃষ্ট-প্রকৃতির হইবে? কাৰ্যাবসানে দুঃখ করা, শোকার্ত হওয়া, ভ্রম বশতঃ কোন কাৰ্য্য করিয়া পরে অনুতাপ করা ইত্যাদি খ্রীষ্টানদের ঈশ্বরে প্রযোজ্য হইতে পারে, বেদোক্ত ঈশ্বরে নয়। এবং ইহাতে ইহাও প্রতিপন্ন হইল যে, খৃষ্টানদের। ঈশ্বর পূর্ণ বিদ্বান্ এবং যোগীও নহেন। অন্যথায় তিনি শান্তি ও বিজ্ঞান বলে শোকাতিশয্য প্রভৃতি হইতে দূরে থাকিতে পারিতেন। ভাল, পশুপক্ষীরাও কি দুষ্ট হইয়া উঠিয়াছিল?

    খ্রষ্টানদের ঈশ্বর সর্বজ্ঞ হইলে এমন বিষাদগ্রস্ত হইবেন কেন? অতএব তিনি যথার্থ ঈশ্বর নহেন এবং এই পুস্তকও ঈশ্বরকৃত নহে। বেদোক্ত ঈশ্বর পাপ-ক্লেশ-দুঃখ-শোকাদি রহিত এবং সচ্চিদানন্দরূপ! যদি খ্রীষ্টানগণ ঈশ্বরকে সেইরূপে বিশ্বাস করিতেন, কিংবা এখনও করেন তাহা হইলে তাহাদের মানব জন্ম সার্থক হইত ॥১২ ।।

    ১৩। জাহাজ দৈর্ঘ্যে তিন শত হাত, প্রস্থে পঞ্চাশ হাত, উচ্চতায় ত্রিশ হাত। তুমি আপন। পুত্রগণ, স্ত্রী ও পুত্রবধূদের সঙ্গে লইয়া সেই জাহাজে যাইবে। আর সমস্ত জীব জন্তুর মধ্য হইতে স্ত্রী পুরুষের জোড়া জোড়া লইয়া তাহাদের প্রাণ রক্ষার্থে তাহাদের সহিত সেই জাহাজে উঠিবে।

    সর্বজাতীয় পক্ষী ও সর্বজাতীয় পশু ও সর্বজাতীয় ভূচর সরীসৃপের জোড়া জোড়া প্রাণরক্ষার্থে তোমার নিকট থাকিবে। আর তোমরাও নিজেদের ও তাহাদের আহারার্থে সর্ব প্রকার খাদ্য সামগ্রী আনিয়া নিজের নিকটে সঞ্চয় করিবে। তাহাতে নূহ ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারেই সেইরূপ সকল কর্ম করিলেন। (উৎপত্তি ) তৌ০ প আ০ ১৫, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২ ॥

    সমীক্ষক –ভাল! যিনি এমন বিজ্ঞানবিরুদ্ধ অসম্ভব কথা বলেন, কোনও বিদ্বান্ কি তাহাকে ঈশ্বর বলিয়া মান্য করিতে পারেন? তাদৃশ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ,উচ্চতাযুক্ত নৌকায় কি হস্তী, হস্তিনী, উষ্ট্র, উষ্ট্রী প্রভৃতি কোটি কোটি জন্তু লওয়ার পর এবং ঐ সকলের ও সমস্ত পরিবারের খাদ্য ও পানীয় সামগ্রী প্রভৃতির সমাবেশ হইতে পারে? অতএব ইহা মনুষ্যকৃত গ্রন্থ এবং ইহার লেখকগণ। বিদ্বাও ছিলেন না ॥১৩ ॥

    ১৪। পরে নূহ সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে বেদী নির্মাণ করিলেন এবং সর্বপ্রকার পবিত্র পশুর ও সর্বপ্রকার পবিত্র পক্ষীর মধ্যে কতকগুলিকে লইয়া বেদীর উপরে হোম করিলেন। তাহাতে সদাপ্রভু তাহার সৌরভ আঘ্রাণ করিলেন আর মনে-মনে বলিলেন –“আমি মনুষ্যের জন্য ভূমিকে আর অভিশাপ দিব না, কারণ বাল্যকাল অবধি মনুষ্যের মনের ভাবনা দুষ্ট। যেরূপ সব সংহার করিয়াছি, সেরূপ আর কখনও প্রাণীগণকে সংহার করিব না ॥ তৌ০ (উৎপত্তি) পর্ব ৮ ॥ আ০ ২০,২১ ॥

    সমীক্ষক — বেদী নির্মাণ এবং হোমানুষ্ঠানের উল্লেখ থাকাতে সিদ্ধ হইতেছে যে, এ সমস্ত বেদ হইতে বাইবেলে গৃহীত হইয়াছে। পরমেশ্বরের কি নাসিকাও আছে, যে তিনি সুগন্ধ আঘ্রাণ করিলেন? খ্রীষ্টানদের এই ঈশ্বর কি মনুষ্যের ন্যায় অল্পজ্ঞ নহেন? তিনি কখনও অভিশাপ দেন, কখনও অনুতাপ করেন। কখনও বলেন যে, আর অভিশাপ দিবেন না। তিনি পূর্বে অভিশাপ দিয়াছিলেন, পরে আবার দিবেন। তিনি পূর্বে সকলকে বিনাশ করিয়াছিলেন, এখন বলিতেছেন যে, আর কখনও বিনাশ করিবেন না! এ সকল বালকের কার্য্য, ঈশ্বরের নহে; এমন কি কোনও শিক্ষিত লোকেরও কাৰ্য্য নহে; কারণ যিনি শিক্ষিত, তাহার বাক্য এবং প্রতিজ্ঞা অটল ॥১৪ ॥

    ১৫। পরে ঈশ্বর নূহ ও তাহার পুত্রগণকে আশীর্বাদ করিলেন এবং তাহাদের বলিলেন– “প্রত্যেক গমনশীল জীবিত প্রাণী তোমাদের খাদ্য হইবে; আমি হরিৎ বর্ণ তরিতরকারীর ন্যায়, সে সকল তোমাদিগকে দিলাম। কিন্তু কেবল মাংস খাইও তাহার আত্মা অর্থাৎ রক্ত সহিত মাংস ভোজন করিও না”। তৌ০ (উৎপত্তি) পৰ্ব ৯ ॥ আ০ ১,৩,৪ ॥

    সমীক্ষক –একের প্রাণ বিনষ্ট করিয়া অপরকে আনন্দ দান করায় খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর কি নির্দয় নহেন? যে মাতা-পিতা এক সন্তানকে নিহত করাইয়া অপরকে খাওয়ান, তাঁহারা কি মহা পাপী হন না? ইহাও তদ্রপ। সকল প্রাণীই ঈশ্বরের নিকট পুত্র তুল্য। কিন্তু খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর সেইরূপ নহেন; তাই তিনি কসাইয়ের ন্যায় কাৰ্য্য করিয়া থাকেন। এইভাবে তিনিই সকল মনুষ্যকে হিংসক করিয়াছেন। সুতরাং নির্দয় হওয়ায় খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর পাপী নহেন কেন? ॥১৫ ॥

    ১৬। সমস্ত পৃথিবীতে এক ভাষা ও একরূপ কথা ছিল। আর তাহারা পরস্পর কহিল, –“এস আমরা নিজেদের নিমিত্ত এক নগর ও স্বর্গস্পর্শী এক উচ্চগৃহ নির্মাণ করিয়া নিজেদের নাম বিখ্যাত করি, সমস্ত ভূমণ্ডলে যেন আমরা ছিন্নভিন্ন না হই।”

    পরে আদমের সন্তানেরা যে নগর ও উচ্চগৃহ নির্মাণ করিতেছিল, তাহা দেখিতে সদাপ্রভু নামিয়া আসিলেন। আর সদাপ্রভু তথা কহিলেন, দেখ, ইহারা সকলে একই ও এক ভাষাভাষী। এখন এইরূপ কর্মে তাহারা প্রবৃত্ত হইল যে, ইহার পরে যাহা কিছু করিতে সঙ্কল্প করিবে, তাহা হইতে নিবারিত হইবে না।

    এস, আমরা নীচে গিয়া, সেইস্থানে তাহাদের ভাষায় গোলমাল জন্মাই, যেন তাহারা একে অন্যের ভাষা বুঝিতে না পারে। আর সদাপ্রভু হইতে সমস্ত ভূমণ্ডলে তাহাদের ছিন্নভিন্ন করিলেন, এবং তাহারা নগর পত্তনে নিবৃত্ত হইল। তৌ০ (উৎপত্তি) প০ ১১। আ০ ১,৪-৮ ॥

    সমীক্ষক –যখন সমস্ত পৃথিবীতে এক ভাষা এবং একরূপ কথা প্রচলিত ছিল, তখন বোধ হয় মনুষ্যেরা অত্যন্ত আনন্দে থাকিত। কিন্তু উপায় কী? খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর সকলের ভাষার গোলমাল সৃষ্টি করিয়া সর্বনাশ করিয়াছেন। তজ্জন্য তিনি জঘন্য অপরাধী। বাস্তবিক ইহা কি শয়তানের কাৰ্য্য অপেক্ষাও অধিকতর ঘৃণিত নহে? এতদ্বারা ইহাও জানা যাইতেছে যে, খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর সনাই পৰ্বত প্রভৃতি স্থানে বাস করিতেন। তিনি কখনও জীবের উন্নতি কামনা করিতেন না। এ সকল অজ্ঞানীদের কথা, ঈশ্বরের নহে; আর এই পুস্তকও ঈশ্বর কৃত নহে ॥ ১৬ ॥

    ১৭। তিনি তখন আপন স্ত্রী সারীকে কহিলেন, –“দেখ আমি জানি, তুমি দেখিতে সুন্দর; এই কারণ মিস্ত্রীরা যখন তোমাকে দেখিবে, তখন, –তুমি আমার স্ত্রী জানিয়া তাহারা আমাকে বধ করিবে, আর তোমাকে জীবিত রাখিবে। বিনয় করি, এই কথা তাহাদের বলিও যে, তুমি আমার ভগিনী; তোমার অনুরোধে যেন আমার মঙ্গল হয় ও তোমার জন্য আমার প্রাণ বাঁচে ॥ তৌ০ (উৎপত্তি) প০ ১২। আ০ ১১-১৩ ॥

    সমীক্ষক –এখন দেখুন! খ্রীষ্টান এবং মুসলমানদিগের একজন বিখ্যাত পয়গম্বর এব্রাহাম মিথ্যাভাষণ প্রভৃতি কুকর্ম করিতেন। হায়রে, যাহাদের পয়গম্বর এইরূপ, তাহারা কীরূপে বিজ্ঞান এবং কল্যাণের পথ লাভ করিতে পারেন? ॥১৭ ॥

    ১৮। ঈশ্বর এব্রাহামকে আরও কহিলেন, –“তুমি ও তোমার বংশধরেরা আমার নিয়ম পালন করিবে; তুমি ও তোমার ভাবীবংশ পুরুষানুক্রমে তাহা পালন করিবে। তোমাদের সহিত ও তোমার ভাবী বংশের সহিত কৃত আমার যে নিয়ম তোমরা পালন করিবে, তাহা এই, –তোমাদের প্রত্যেক পুরুষের খতনা হইবে। তোমরা আপন লিঙ্গা-চর্ম ছেদন করিবে, তাহাই তোমাদের সহিত আমার নিয়মের চিহ্ন হইবে। পুরুষানুক্রমে তোমাদের প্রত্যেক পুত্র সন্তানের আট দিন বয়সে লিঙ্গাগ্র চর্ম এবং যাহারা তোমার বংশীয় নয় এমন পরজাতীয়দের মধ্যে যাহারা। তোমার গৃহে জাত কিংবা মূল্য দ্বারা ক্রীত তাহাদেরও লিঙ্গাগ্র চর্মচ্ছেদ অবশ্য কর্তব্য।

    আর তোমাদের মাংসে আমার নিয়ম চিরকাল বিদ্যমান থাকিবে। কিন্তু যাহার লিঙ্গাচর্ম ছেদন হইবে না এমন অচ্ছিন্ন লিঙ্গত্ব আপন লোকদের মধ্য হইতে বিচ্ছিন্ন হইবে, কারণ সে। আমার নিয়ম ভঙ্গ করিয়াছে ॥ তৌ০ (উৎপত্তি) পর্ব ১৭। আ০ ৯-১৪ ॥

    সমীক্ষক — এখন দেখুন। ঈশ্বরের একটি বিরুদ্ধ আজ্ঞা। লিঙ্গাগ্ৰত্বচ্ছেদন ঈশ্বরের অভিপ্রেত হইলে, সৃষ্টির প্রারম্ভে তিনি উহা নির্মাণই করিতেন না। চক্ষুর উপরিস্থিত চর্মের ন্যায় কোমল স্থানের রক্ষণও সেই চর্ম-নির্মাণের উদ্দেশ্য। সেই গুপ্ত স্থান অত্যন্ত কোমল; তদুপরি চর্ম না থাকিলে কোন কীটের দংশনে এবং মূত্রত্যাগান্তে বস্ত্রে কিঞ্চিৎ মূত্র যেন না লাগে; এই নিমিত্ত উক্ত চর্ম কৰ্ত্তন করা উচিত নহে।

    কিন্তু খ্রীষ্টানগণ আজকাল এই আদেশ পালন করেন না কেন? এই আদেশ তো সর্বকালের জন্য। ইহা পালন না করিলে, ঈশার সাক্ষ্য, “ব্যবস্থা পুস্তকের এক বিন্দুও মিথ্যা নহে” মিথ্যা। হইল। খ্রীষ্টানগণ এ বিষয়ে কিছুই চিন্তা করেন না ॥১৮ ॥

    ১৯। পরে কথোপকথন শেষ করিয়া ঈশ্বর এব্রাহামের নিকট হইতে উর্ধ্বে গমন করিলেন ॥ তৌ০ (উৎপত্তি) পৰ্ব্ব ১৭ আ০ ২২ ॥

    সমীক্ষক –এতদ্বারা সিদ্ধ হইতেছে যে, ঈশ্বর মনুষ্য ছিলেন কিংবা পক্ষী সদৃশ ছিলেন। তিনি উপর নিম্নে এবং নিম্ন হইতে উপরে যাতায়াত করিতেন। তিনি একজন যাদুকরের ন্যায়। প্রতীয়মান হইতেছেন ৷১৯।

    ২০। পরে সদাপ্রভু মমরের বনের নিকটে তাহাকে দর্শন দিলেন। তিনি দিনের উত্তাপ সময়ে তবু দ্বারে বসিয়াছিলেন, চক্ষু তুলিয়া দৃষ্টিপাত করিলেন এবং দেখিলেন –তিনটি পুরুষ সম্মুখে দণ্ডায়মান। দেখিব মাত্র তিনি তাঁবুর দ্বার হইতে তাঁহাদের নিকট দৌড়াইয়া গিয়া ভূমিতে প্রণাম করিলেন। কহিলেন –“হে প্রভো! বিনয় করি, যদি আমি আপনার দৃষ্টিতে অনুগ্রহের পাত্র হইয়া থাকি, তবে আপনি আপনার এই দাসের নিকট হইতে চলিয়া যাইবেন না। বিনয় করি কিঞ্চিৎ জল আনাইয়া দিই, আপনার পা ধুইয়া এই বৃক্ষতলে বিশ্রাম করুন। কিছু রুটি আনিয়া দিই, উহা দ্বারা আপ্যায়িত হউন। পরে পথে অগ্রসর হইবেন। কেননা এই নিমিত্ত আপনি দাসের নিকট আগমন করিয়াছেন।” তখন তিনি কহিলেন–”যাহা বলিলে তাহাই কর ॥ ”

    এব্রাহাম সত্বর তাঁবু মধ্যে সারার নিকট গিয়া কহিলেন, –“শীঘ্র তিন মণ উত্তম ময়দা লইয়া ছানিয়া ফুলকা প্রস্তুত কর। পরে এব্রাহাম গোবাথানে দৌড়াইয়া গিয়া উৎকৃষ্ট এক কোমল গোবৎস লইয়া ভৃত্যকে দিল। সে তাহা শীঘ্র পাক করিল। তখন তিনি মাখন, দুগ্ধ, গোবৎসের পাক করা মাংস লইয়া তাঁহাদের সম্মুখে দিলেন, তাহাদের নিকটে বৃক্ষতলে দাঁড়াইলেন ও তাহারা উহা ভোজন করিলেন। তৌ০ (উৎপত্তি) পর্ব ১৮/আ০ ১-৮ ॥

    সমীক্ষক –ভদ্র মহোদয় দেখুন! যাঁহাদের ঈশ্বর গোবৎস ভক্ষণ করেন, তাহার উপাসকগণ গো, গোবৎস এবং অন্যান্য পশু ভক্ষণ করিবে না কেন? যাঁহার কিঞ্চিত্র দয়া নাই এবং যিনি মাংসের জন্য লালায়িত, তিনি কি কখনও হিংসক মনুষ্য ব্যতীত ঈশ্বর হইতে পারেন?

    ঈশ্বরের সহিত দুই জন কে কে ছিল জানা যায় না। সম্ভবতঃ বন্য মনুষ্যদের একটি মণ্ডলী ছিল, তন্মধ্যে প্রধান ব্যক্তির নাম বাইবেলে “ঈশ্বর” রাখা হইয়াছে। এ সকল কারণে বুদ্ধিমানেরা খ্রীষ্টানদের এই পুস্তককে ঈশ্বরকৃত বলিয়া বিশ্বাস করিতে পারেন না এবং ঈদৃশ ব্যক্তিকে ঈশ্বর মনে করিতে পারেন না ।।২০ ॥

    ২১। সদাপ্রভু এব্রাহামকে কহিলেন, — সারা কেন এই বলিয়া হাসিল –“আমি কি সত্যই প্রসব করিব, আমি যে বুড়ি! কোন কর্ম কি সদাপ্রভুর অসাধ্য”? তৌ০ (উৎপত্তি) প০ ১৮। আ০ ১৩।১৪।।

    সমীক্ষক –খ্রীষ্টানদের ঈশ্বরের লীলা দেখুন! তিনি বালক বা স্ত্রীলোকের ন্যায় উত্যক্ত হন এবং টিটকারী মারেন!

    ২২। এমন সময়ে সদাপ্রভু আপনার নিকট হইতে স্বর্গ হইতে সমূদ ও অমূরঃ উপরে গন্ধক ও অগ্নি বর্ষণ করিয়া সেই সমুদয় নগর, সমস্ত অঞ্চল, নগরবাসী, সকল লোক ও সেই ভূমিতে জাত বস্তু উচ্ছিন্ন করিলেন। তৌ০ উৎপত্তি প০ ১৯। আ০ ২৪,২৫ ॥

    সমীক্ষক –বাইবেলের ঈশ্বরের এই লীলাও দেখুন! শিশুদের প্রতিও অণুমাত্র দয়া হইল না। তাহারা সকলেই কি অপরাধী ছিল যে, তিনি ভূমি বিপর্যস্ত করিয়া সকলকে একসঙ্গে চাপিয়া মারিলেন? যে ঈশ্বর এইরূপ ন্যায়, দয়া এবং বিবেকবিরুদ্ধ কাৰ্য্য করেন, তাহার উপাসকগণও সেইরূপ করিবে না কেন?

    ২৩। এস, আমরা পিতাকে দ্রাক্ষারস পান করাইয়া তাহার সহিত শয়ন করি, এইরূপে পিতার বংশ রক্ষা করিব। তাহাতে তাহারা সেই রাত্রিতে নিজেদের পিতাকে দ্রাক্ষারস পান করাইল। জ্যেষ্ঠ যাইয়া পিতার সহিত শয়ন করিল। পরে জ্যেষ্ঠা কনিষ্ঠাকে কহিল-অদ্য রাত্রিতেও দ্রাক্ষারস পান করাই; পরে তুমি যাইয়া তাহার সহিত শয়ন করিও। এইরূপে লুৎ এর দুই কন্যাই নিজেদের পিতার দ্বারা গর্ভবতী হইল। তৌ০ উৎপত্তি পৰ্ব আ০ ৩২-৩৪,৩৬ ॥

    সমীক্ষক –দেখুন! মদ্যপানজনিত মত্ততা বশতঃ কন্যা ও পিতা কুকর্ম হইতে বিরত হয় না। খ্রীষ্টান প্রভৃতি যে সকল ব্যক্তি সেই জঘন্য মদ্যপান করে, তাহাদের কুকর্মের কী পারাপার আছে? অতএব মদ্যপানের নাম করাও সৎপুরুষদের উচিত নহে ॥২৩ ॥

    ২৪। পরে সদাপ্রভু আপন বাক্যানুসারে সারার সহিত দেখা করিলেন; সদাপ্রভু যাহা। বলিয়াছিলেন, সারার প্রতি তাহাই করিলেন। আর সারা গর্ভবতী হইলেন। তৌ০ উৎপত্তি পর্ব ২১। আ০ ১২ ॥

    সমীক্ষক — এখন চিন্তা করিয়া দেখুন! দর্শন দান করিয়া গর্ভবতী করা কীরূপ কাৰ্য্য হইল! পরমেশ্বর ও সারা ব্যতীত গর্ভস্থাপনের তৃতীয় কারণ দৃষ্ট হয় কী? সুতরাং জানা গেল যে, সারা পরমেশ্বর কর্তৃক গর্ভবতী হইয়াছিল ॥ ২৪ ॥

    ২৫। পরে এব্রাহাম প্রত্যূষে উঠিয়া রুটী ও জলপূর্ণ কুঁজো লইয়া হাজিরার স্কন্ধে দিয়া ছেলেকেও সমর্পণ করিয়া তাহাকে বিদায় করিলেন। সে এক ঝোঁপের নীচে বালকটিকে ফেলিয়া রাখিল, আর তাহার সম্মুখে বসিয়া উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিল। তখন ঈশ্বর বালকটির রব শুনিলেন। তৌ০ উৎপত্তি পর্ব ২১। আ০ ১৪-১৭ ॥

    সমীক্ষক –খ্রীষ্টানদের ঈশ্বরের লীলা দেখুন। তিনি প্রথমে সারার প্রতি পক্ষপাত করিয়া হাজিরাকে সে স্থান হইতে বহিঃষ্কৃত করিলেন। পরে হাজিরা উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করিতে থাকিলে ঈশ্বর বালকের রোদন শুনিতে পাইলেন। কী আশ্চর্য্য! ঈশ্বরের হয়তো ভুল হইয়া থাকিবে যে, বালকই রোদন করিতেছে। ভাল, এ সকল কথা কি ঈশ্বর এবং ঈশ্বরকৃত পুস্তকের কথা হইতে পারে? সাধারণ ব্যক্তির কথার উপযোগী কয়েকটি সত্য ব্যতীত এই পুস্তকের সমস্ত কথাই অসার ॥ ২৫ ॥

    ২৬। এই সকল ঘটনার পরে ঈশ্বর এব্রাহামের পরীক্ষা লইলেন। তিনি তাহাকে কহিলেন, — “হে এব্রাহাম! তুমি আপন পুত্রকে, তোমার একমাত্র পুত্র ইসাককে, যাহাকে তুমি ভালবাস, তাহাকে এখানে হোমে অর্পণ কর।” সে আপন পুত্র ইসাককে বাঁধিয়া বেদীতে কাষ্ঠের উপরে রাখিলেন।

    পরে এব্রাহাম হাত বাড়াইয়া আপন পুত্রকে বধ করিবার জন্য ছুরি গ্রহণ করিলেন। এমন সময়ে স্বর্গ হইতে সদাপ্রভু ঈশ্বর তাহাকে ডাকিয়া কহিলেন, “এব্রাহাম! পুত্রের প্রতি হাত বাড়াইও না, উহার প্রতি কিছু করিও না, কেননা, এখন আমি বুঝিলাম তুমি ঈশ্বরকে ভয় কর”। তৌ০ উৎপত্তি পৰ্ব্ব ২২। আ০ ১। ২। ৯-১২ ॥

    সমীক্ষক –এখন স্পষ্টরূপে জানা গেল যে, বাইবেলের ঈশ্বর অল্পজ্ঞ, সর্বজ্ঞ নহেন। এব্রাহাম নির্বোধ না হইলে এমন কাৰ্য্যই বা করিবে কেন? বাইবেলের ঈশ্বর সর্বজ্ঞ হইলে সর্বজ্ঞতা দ্বারা এব্রাহামের ভাবী শ্রদ্ধাকেও জানিতে পারিতেন। সুতরাং খৃষ্টানদের ঈশ্বর যে সর্বজ্ঞ নহেন, তাহা সুনিশ্চিত ॥ ২৬ ॥

    ২৭। আপনি আপনার শবকে আমাদের কবর স্থানের মধ্যে অভীষ্ট কবরে রাখুন। তৌ০ উৎপত্তি ০ প০ ২৩। আ০ ৬ ॥

    সমীক্ষক –শবকে কবর দিলে সংসারের অপকার হয়; কারণ শব পচিলে বায়ু দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় রোগ ছড়াইয়া পড়ে।

    প্রশ্ন– দেখ, আমরা যাহাদের ভালবাসি, তাহাদের মৃতক শরীরকে দাহ করা বাঞ্ছনীয় নহে। কবরস্থ করা যেন শোয়াইয়া রাখা, সুতরাং কবরস্থ করাই শ্রেয়।

    উত্তর –যদি মৃত প্রিয়জনকে ভালবাস, তাহা হইলে তাহাকে গৃহে রাখ না কেন, কবরে রাখিবারই বা প্রয়োজন কী? যে জীবাত্মাকে ভালবাসিতে, সে তো চলিয়া গিয়াছে। এখন পচা দুর্গন্ধময় মৃত্তিকার প্রতি কীসের ভালবাসা? যদি ভালই বাস, তবে মৃত্তিকার মধ্যে পুঁতিয়া রাখ কেন? কেহ যদি কাহাকেও বলে, “তোমাকে মাটিতে পুঁতিয়া রাখিব”, তাহা শুনিয়া সে প্রীত হয় না। তাহার শরীর, মুখ, চক্ষুর উপর বালি, প্রস্তর, ইষ্টক এবং চুন নিক্ষেপ করা এবং বক্ষের উপর প্রস্তর রাখা কীরূপ প্রীতির কাৰ্য্য?

    শবকে বাসের মধ্যে রাখিয়া পুঁতিয়া দেওয়ায় অধিক দুর্গন্ধ নির্গত হইয়া বায়ু দূষিত করে এবং তজ্জন্য নিদারুণ রোগেৎপত্তি হয়। তদ্ব্যতীত এক একটি শবের জন্য ন্যূনকল্পে ছয় হাত দীর্ঘ এবং চারি হাত বিস্তৃত ভূমি আবশ্যক। সেই হিসাব শত সহস্র লোক অথবা কোটি মনুষ্যের জন্য বহু পরিমাণ ভূমি বৃথা অবরুদ্ধ থাকে। সেই ভূমিতে কৃষিক্ষেত্র, উদ্যান অথবা বাসস্থানের উপযুক্ত থাকে না। এই কারণে কবরস্থ করা বা কবর দেওয়া সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট ব্যবস্থা।

    জলে নিক্ষেপ করা তদপেক্ষা কম দূষণীয়; কারণ জলজন্তুগণ শবকে তৎক্ষণাৎ ছিন্ন-ভিন্ন করিয়া ভক্ষণ করে। কিন্তু জলের ভিতরে যে অস্থি ও মল পড়িয়া থাকে, ঐ সকল পচিয়া জগতের দুঃখের কারণ হইয়া থাকে।

    শবকে অরণ্যে নিক্ষেপ করা অপেক্ষাকৃত কম অনিষ্টকর। কারণ মাংস-ভক্ষক পশুপক্ষীগণ উহাকে তৎক্ষণাৎ ছিন্ন-ভিন্ন করিয়া ভক্ষণ করে। তথাপি শবের অস্থি, মজ্জা এবং মল পচিয়া যতই দুর্গন্ধ উৎপন্ন হয়, ততই উহা জগতের অনিষ্ট কারক। সুতরাং দাহ করাই উৎকৃষ্ট ব্যবস্থা। কেননা, তদ্বারা সমস্ত পদার্থ অণু হইয়া বায়ুর সহিত মিশিয়া যাইবে।

    প্রশ্ন –দাহ করিলেও দুর্গন্ধ উৎপন্ন হয়।

    উত্তর –বিধিবিরুদ্ধ প্রণালীতে দাহ করিলে কিঞ্চিৎ দুর্গন্ধ উৎপন্ন হয় বটে, কিন্তু সমাহিত করিলে অধিক দুর্গন্ধ উৎপন্ন হয়।

    বিধিপূর্বক দাহ ব্যবস্থার কথা বেদে এইরূপ লিখিত আছে– শবের হাতের তিন হাত গভীর, সাড়ে তিন হাত প্রশস্ত এবং পাঁচ হাত দীর্ঘ গর্ত খনন করিয়া উহার মধ্যে অবতরণ করতঃ অষ্টাদশ অঙ্গুলী উচ্চ একটি বেদী নির্মাণ করিবে। ন্যূনকল্পে আধ মণ, ইচ্ছা করিলে তদপেক্ষা অধিক পরিমাণ চন্দন কাষ্ঠ, এবং অগুরু, ৩গর, কর্পূর এবং পলাশ প্রভৃতি কাষ্ঠ বেদীর উপর এক করিয়া তদুপরি শব স্থাপন করিবে। পুনরায় শবের উপর উচিত পরিমাণে কাষ্ঠ রাখিবে, যেন বেদীর মুখ হইতে এক বিঘত খালি থাকে। পরে বেদীতে অগ্নি সংযোগ করিয়া শবের ওজনের সমপরিমাণ ঘৃত, এক রতি কস্তুরী এবং এক মাস কেসর মিশ্রিত করিয়া তদ্বারা আহুতি প্রদান করিবে। এইরূপে দাহ করিলে কিঞ্চিত্মাত্র দুর্গন্ধ হয় না।

    ইহাকেই অন্ত্যেষ্টি, নরমেধ অথবা পুরুষমেধ যজ্ঞ বলে। দরিদ্রের পক্ষেও চিতায় অৰ্দ্ধর্মণের কম ঘৃত নিক্ষেপ করা উচিত নহে। ভিক্ষা করিয়াই হউক, জাতি বন্ধুরাই দিক, কিংবা রাজার সাহায্যে হউক এই পরিমাণ ঘৃত সংগ্রহ করিতে হইবে। এই প্রণালীতে দাহ করিবে। ঘৃতাদি কোনরূপে সংগৃহীত না হইলেও সমাহিত কাষ্ঠদ্বারা শবদাহ করাও শ্রেয়। কারণ এক বিঘা (২০ বিঘত) স্থানে কিংবা একটি মাত্র বেদীতে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি শব দাহ করা যাইতে পারে। শব প্রোথিত করিলে ভূমি যেমন বিকৃত হয়, দাহ করিলে সেরূপ হয় না। তদ্ব্যতীত কবর দেখিলে মনে ভয়েরও সঞ্চার হইয়া থাকে। অতএব প্রোথিত ইত্যাদি করা সর্বতোভাবে নিষিদ্ধ ॥ ২৭ ॥

    ২৮। আমার কৰ্ত্তা এব্রাহামের ঈশ্বর সদাপ্রভু ধন্য। তিনি আমার কর্তাকে দয়া ও সত্য ব্যবহার রহিত করেন নাই; সদাপ্রভু আমাকে ও আমার কৰ্ত্তার জ্ঞাতিদের বাটিতে পথ প্রদর্শন করিয়া আগে আগে আসিলেন। তৌ০ উৎপত্তি পৰ্ব্ব ২৪। আ০২৭ ॥

    সমীক্ষক –তিনি কি কেবল এব্রাহামের ঈশ্বর ছিলেন? ঈশ্বরও কি আজকালকার ভৃত্য এবং পথ প্রদর্শকদের ন্যায় অগ্রে অগ্রে গমন করিয়া পথ প্রদর্শন করিয়াছিলেন। তাহা হইলে আজকাল তিনি পথ প্রদর্শন এবং মনুষ্যের সহিত কথোপকথন করেন না কেন? অতএব এ সকল কখনও ঈশ্বরের কিংবা ঈশ্বরকৃত পুস্তকের বিষয় হইতে পারে না; কিন্তু এ সকল বন্য মনুষ্যের কথা ॥২৮ ॥

    ২৯। ইস্মাইলের সন্তানদের নাম –ইস্মাইলের জ্যেষ্ঠ পুত্র নবীত ও কীদার, অবিএল, মিবসম, মিশমার, দূমঃ, মত্সা, হদর, তৈমা, ইতুর, নাফীস, ও কিমিঃ”তৌ০ উৎপত্তি পৰ্ব্ব ২৫ আ০ ১৩-১৫ ॥

    সমীক্ষক –এই ইস্মাইল এব্রাহামের ঔরসে তাহার দাসী হাজীরার গর্ভে জন্মিয়াছে ॥ ২৯ ॥

    ৩০। তোমার পিতা যেরূপ ভালবাসেন, তদ্রপ সুখাদ্য আমি প্রস্তুত করিয়া দিব; পরে তুমি আপন পিতার নিকটে তাহা লইয়া যাইও, তিনি তাহা ভোজন করুন, যাহাতে তিনি মৃত্যুর পূর্বে তোমাকে আর্শীবাদ দান করেন। আর রিবিকা ঘরের মধ্যে আপনার জ্যৈষ্ঠ পুত্র এসৌরের যে মনোহর বস্ত্র ছিল তাহা লইল এবং ঐ দুই ছাগবৎসের চর্ম লইয়া হস্তে ও গলদেশের নির্লোম। স্থানে জড়াইয়া দিল। য়াকোব আপন পিতাকে কহিলেন, “আমি আপনার জ্যেষ্ঠপুত্র এসৌ; আপনি আমাকে যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তাহা করিয়াছি। বিনয় করি আপনি উঠিয়া বসিয়া আমার আনীত মৃগমাংস হইতে ভোজন করুন যেন আপনার প্রাণ আমাকে আশীর্বাদ দান করে। তৌ০ উৎপত্তি পর্ব ২৭। আ০ ৯, ১০। ১৫, ১৬। ১৯ ॥

    সমীক্ষক –দেখুন! এরূপ মিথ্যাবাদী কপটতার সাহায্যে আশীর্বাদ লইয়া সিদ্ধপুরুষ এবং পরে পয়গম্বর সাজিতেছেন। ইহা কি আশ্চর্যের বিষয় নহে? যখন এতাদৃশ লোক খ্রীষ্টানদের অগ্রণী, তখন তাহাদের ধর্মে কি কম গোলমাল থাকিবে? ॥৩০ ॥

    ৩১। পরে য়াকোব প্রত্যূষে শীঘ্র উত্থিত হইয়া বালিশের নিমিত্ত যে প্রস্তর রাখিয়াছিলেন উহা লইয়া স্তম্ভরূপে স্থাপন করিলেন, তাহার উপর তৈল ঢালিয়া সেই স্থানের নাম বৈতএল (ঈশ্বরের গৃহ) রাখিলেন। য়াকোব মানত করিলেন এই, যে প্রস্তর সমূহ আমি স্তম্ভরূপে স্থাপন করিয়াছি, ইহা ঈশ্বরের গৃহ হইবে ॥ তৌ০ উৎপত্তি পৰ্ব ২৮। আ০ ১৮,১৯,২২ ॥

    সমীক্ষক –বন্য মানুষ্যদের কাৰ্য্য দেখুন। ইহারা প্রস্তর পূজা করে এবং অপরকেও তাহাতে প্রবর্তিত করে। মুসলমানগণ ইহাকে “বয়তএলমুকস” বলে। এই প্রস্তরখণ্ডই কি ঈশ্বরের গৃহ? তিনি কি ইহার মধ্যেই বাস করিতেন? বাহবা! খ্রীষ্টানগণ! কী বলিব তোমরাই তো ঘোরতর পৌত্তলিক ॥৩১ ॥

    ৩২। আর ঈশ্বর রাখেলকে স্মরণ করিলেন, ঈশ্বর তাহার প্রার্থনা শুনিলেন ও তাহার গর্ভাশয় উন্মোচন করিলেন। তখন তাহার গর্ভ হইতে তিনি পুত্র প্রসব করিয়া কহিলেন, ঈশ্বর আমার অপযশ হরণ করিয়াছে। তৌ০ উৎপত্তি পর্ব ৩০। আ০ ২২, ২৩ ॥

    সমীক্ষক –বাহবা — খৃষ্টানদের ঈশ্বর? তিনি কত বড় ডাক্তার। তাহার নিকট এরূপ কোন্ শস্ত্রপাতি ছিল যাহার সাহায্যে নারীর গর্ভাশয় উন্মোচন করিলেন? এ সকল অজ্ঞানান্ধকার ব্যতীত আর কিছুই নহে ॥ ৩২ ॥

    ৩৩। কিন্তু ঈশ্বর রাত্রিতে স্বপ্নযোগে আরামপ্রিয় লাবন সমীপে উপস্থিত হইয়া তাহাকে কহিলেন –সাবধান! য়াকোবকে ভাল মন্দ কিছুই বলিও না। এখন পিত্রালয়ে যাইবার নিতান্ত আকাঙ্খায় তুমি যাত্রা করিলে বটে, কিন্তু আমার দেবতাদিগকে কেন চুরি করিলে? তৌ০ উৎপত্তি পর্ব ৩১। আ০ ২৪, ৩০ ॥

    সমীক্ষক –ইহা একটি উদাহরণ মাত্র লিখিলাম। বাইবেলে লিখিত আছে যে, ঈশ্বর সহস্ৰব্যক্তিকে স্বপ্নে দর্শন দিয়াছেন এবং পানভোজন, বাৰ্তালাপ ও গমনাগমন ইত্যাদি করিয়াছেন। কিন্তু এখন তিনি আছেন কি না কে জানে? এখন তো স্বপ্নে কিংবা জাগরণে কাহারও ঈশ্বর দর্শন ঘটে না। যাহা হউক জানা গেল যে, বন্য মনুষ্যেরা প্রস্তরাদি নির্মিত মূৰ্ত্তিকে দেবতাজ্ঞানে পূজা করিত। খৃষ্টানদের ঈশ্বরও প্রস্তরকে দেবতা মনে করিতেন; নতুবা দেবতাদের অপহরণ কীরূপে সম্ভবপর হইতে পারে? ॥৩৩ ॥

    ৩৪। আর য়াকোব আপন পথে অগ্রসর হইলে ঈশ্বরের দূতগণ তাহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন। তখন য়াকোব তাঁহাদেরকে দেখিয়া কহিলেন–ইহারা ঈশ্বরের সেনাদল ॥ তৌ০ উৎপত্তি পর্ব ৩২। আ০ ১/২ ॥

    সমীক্ষক –খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর যে মনুষ্য, এখন এ বিষয়ে কোন সন্দেহ রহিল না, কারণ তাঁহারও সেনা আছে। তাহা হইলে তাহার নিকট অস্ত্রশস্ত্রও আছে এবং তিনি যে কোন স্থানের উপর আক্রমণ করিয়া যুদ্ধও করিয়া থাকেন, নতুবা সেনা রাখিবার প্রয়োজন কী? ॥ ৩৪ ॥

    ৩৫। আর য়াকোব তথায় একাকী রহিলেন এবং একজন প্রভাত পৰ্য্যন্ত তাঁহার সহিত মল্লযুদ্ধ করিতেছিলেন। কিন্তু তাঁহাকে জয় করিতে পারিলেন না দেখিয়া তিনি য়াকোবের জঙ্র মধ্যে আঘাত করিলেন। তাহাতে য়াকোবের জঙ্ঘার শিরা ক্ষতিগ্রস্থ হইল। পরে সেই পুরুষ কহিলেন, আমাকে ছাড়, কেননা প্রভাত হইতেছে। যাকোব কহিলেন, আপনি আমাকে আশীর্বাদ না দিলে আপনাকে ছাড়িব না।

    তখন তিনি কহিলেন,–তোমার নাম কী? তিনি উত্তর দিলেন ‘য়াকোব’। তিনি কহিলেন, –“তুমি য়াকোব নামে আর আখ্যাত হইবে না। কিন্তু ইস্রায়েল নামে আখ্যাত হইবে, কেননা তুমি ঈশ্বরের ও মনুষ্যদের সহিত রাজার মত মল্ল যুদ্ধে জয়ী হইয়াছ।”তখন য়াকোব তাহাকে জিজ্ঞাসা করিয়া কহিল বিনয় করি, আপনারা নাম কী বলুন। তিনি বললেন- “কী জন্য আমার নাম জিজ্ঞাসা করিতেছ?” পরে তিনি যাকোবকে আশীর্বাদ দিলেন।

    তখন য়াকোব সেই স্থানের নাম ফনুয়েল রাখিলেন; কেননা তিনি কহিলেন–আমি ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ দেখিলাম এবং আমার প্রাণ বাঁচিল। পরে তিনি ফনুয়েল পার হইলে সূর্যের জ্যোতি তাহার উপরে পড়িল। আর তিনি উরু লইয়া খোঁড়াইতে লাগিলেন। এই কারণ ইস্রায়েলের সন্তানেরা অদ্যাপি ফলকের উপরিস্থ উরু সন্ধির শিরা ভোজন করে না, কারণ তিনি য়াকোবের উরু সন্ধির শিরা স্পর্শ করিয়াছিলেন ॥ তৌ০ উৎপত্তি পর্ব ৩২। আ০ ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১ ৩২ ॥

    সমীক্ষক –খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর মল্ল যোদ্ধা বলিয়াই কৃপা করিয়া সারা এবং রাখেলকে পুত্রদানের। কৃপা করিয়াছিলেন। ভাল, এমন ঈশ্বর কি প্রকৃত হইতে পারেন? সেই ঈশ্বরের আরও লীলা। দেখুন! কেহ নাম জিজ্ঞাসা করিলে, তাহার নাম বলা উচিত নহে?

    ঈশ্বর য়াকোবের শিরা ক্ষতিগ্রস্ত করায় সে পরাজিত হইল। কিন্তু ঈশ্বর যদি ডাক্তার হইতেন, তাহা হইলে তাহার উরুস্থলের শিরাকে আরোগ্যও করিয়া দিতেন। এইরূপে ঈশ্বর ভক্তির জন্য য়াকোবের ন্যায় অন্যান্য ভক্তদেরকেও খঞ্জ হইতে হইবে। ঈশ্বর শরীরধারী না হইলে তাঁহার প্রত্যক্ষ দর্শন এবং তাঁহার সহিত মল্লযুদ্ধ ইত্যাদি কীরূপে সম্ভবপর হইতে পারে? সুতরাং এ সকল কেবল বালকোচিত ব্যাপার ॥৩৫ ॥

    ৩৬। ঈশ্বরের মুখ দেখিলাম ৷ তৌ, উৎপ,পর্ব, ৩৩। আ০ ১০।

    সমীক্ষক –যখন ঈশ্বরের মুখ আছে এখন সর্ব অবয়বও থাকিবে এবং তিনি জন্মমরণশীল হইবেন সন্দেহ নাই ॥৩৬ ॥

    ৩৭। কিন্তু যিহূদাহের জ্যৈষ্ঠ পুত্র এর সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে দুষ্ট হওয়াতে সদাপ্রভু তাহাকে মারিয়া ফেলিলেন। তাহাতে যিহূদাহ ওনান কে কহিল –“তুমি আপন ভ্রাতার স্ত্রীর কাছে গমন কর ও তাহাকে বিবাহ করিয়া নিজ ভ্রাতার বংশরক্ষা কর।” কিন্তু ঐ বংশ নিজের হইবে না ইহা বুঝিয়া ওনান ভ্রাতৃজয়ার কাছে গমন করিলেন। ভূমিতে তাহার রেতঃপাত হইল। তাঁহার সেই কাৰ্য্য সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে মন্দ হওয়াতে তিনি তাহাকেও বধ করিলেন ॥ তৌ০ উৎপত্তি পর্ব ৩৮। আ০ ৭-১০ ॥

    সমীক্ষক –এখন দেখুন! ইহা কি মনুষ্যের, না ঈশ্বর কাৰ্য্য? তাঁহার সহিত তো নিয়োগ হইল, তবে ঈশ্বর তাহাকে বধ করিলেন কেন? তাহার বুদ্ধি নির্মল করিয়া দিলেন না কেন? এতদ্বারা নিশ্চিতভাবে ইহাও জানা গেল, পূর্বকালে বেদোক্ত নিয়োগ প্রথা সর্বত্র প্রচলিত ছিল। ॥৩৭ ॥ তৌরেত যাত্রা পুস্তক।

    ৩৮।মুসা বড় হইলে একদিন দেখিলেন, ভ্রাতৃগণের মধ্যে জনৈক ইবরাণীকেমিশ্ৰী মারিতেছে। তখন তিনি এদিক ওদিক চাহিয়া কাহাকেও দেখিতে না পাইয়া ঐ মিশ্রীকে বধ করিয়া বালির মধ্যে পুঁতিয়া রাখিলেন। পরে দ্বিতীয় দিন তিনি বাহিরে গেলেন, দেখিলেন দুইজন ইবরাণী পরস্পর বিবাদ করিতেছে; তিনি দোষী ব্যক্তিকে কহিলেন– “তোমার প্রতিবেশীকে কেন মারিতেছ?” সে। কহিল, –“তোমাকে অধ্যক্ষ ও বিচারকর্তা করিয়া আমাদের উপরে কে নিযুক্ত করিয়াছে? তুমি যেরূপ সেই মিশ্রীকে বধ করিয়াছ, তদ্রূপ কি আমাকেও বধ করিতে চাও?” তখন মুসা ভীত হইয়া পলাইয়া গেলেন। তৌ০ যাত্রা প০ ২। আ০ ১১-১৫ ॥

    সমীক্ষক –এখুন দেখুন! যে মুসা বাইবেলের মুখ্যসিদ্ধান্তকর্তা এবং আচার্য্য, তাহার চরিত্রে। ক্রোধাদি দুগুণ বর্তমান। তিনি তস্কর এবং নরহন্তার ন্যায় রাজদণ্ড এড়াইতে চাহিতেছেন। যেহেতু তিনি সত্যগোপন করিতেছেন, অতএব তিনি মিথ্যা কথা বলিতেও অভ্যস্ত। মুসার ন্যায় একজন লোক ঈশ্বর দর্শন করিয়া পয়গম্বর এবং ইহুদী প্রভৃতি মতের প্রবর্তক হইলেন। তাহাতে বুঝা যায় যে, মুসা হইতে আরম্ভ করিয়া খ্রীষ্টানদের যাবতীয় পূর্বপুরুষ সকলেই বন্য অবস্থায় ছিলেন; কেহই বিদ্বান ছিলেন না। ৩৮ ॥

    ৩৯। যখন সদাপ্রভু দেখিলেন যে, সে অন্য দিকে তাকাইয়া আছে তখন ঈশ্বর তাহাকে ঝোঁপের মধ্য হইতে ডাকিলেন, “হে মুসা, হে মুসা!” তখন সে বলিল, আমি এখানে আছি। “তখন তিনি বলিলেন, “এদিকে আসিও না, পা হইতে জুতা খোল কেননা তুমি পবিত্র ভূমির উপর দাঁড়াইয়া আছো ॥ ৷ তৌ০ আ০ পু০ ৩। আ০ ৪ ।৫ ॥

    সমীক্ষক –দেখুন, মনুষ্যকে মারিয়া বালির ভিতর পুঁতিয়া রাখিলেও তাহাকে ঈশ্বর মিত্র ও পয়গম্বর মানেন। আরও দেখুন, যখন তোমাদের ঈশ্বর মুসাকে পবিত্র স্থানে জুতা পরিয়া যাইতে নিষেধ করিয়াছেন তখন তোমরা খৃষ্টানরা তাঁহার আজ্ঞার অবহেলনা কেন করিতেছ?

    প্রশ্ন –আমরা জুতার বদলে টুপি খুলিয়া রাখি।

    উত্তর –ইহা আর একটা অপরাধ তোমরা করিতেছ; কেননা ঈশ্বর তোমাদিগকে টুপি খুলিতে বলেন নাই এবং তোমাদের কোন পুস্তকে ইহা লিখিত নাই। যাহা খুলিবার যোগ্য তাহা না খুলিয়া যাহা খুলিবার অযোগ্য তাহাই খুলিতেছ। উভয় প্রকারে তোমরা তোমাদের গ্রন্থের বিরুদ্ধে চলিতেছ।

    প্রশ্ন –আমাদের ইউরোপ দেশে শীতাধিক্য থাকার ফলে আমরা জুতা খুলিনা।

    উত্তর –মাথায় কি শীত লাগে না? ইউরোপ দেশে যাইয়া এরূপ করিবে কিন্তু আমাদের গৃহে আসিলে বা বিছানায় বসিলে জুতা খুলিয়া ফেলিতে হইবে। আর যদি না খোল তাহা হইলে তোমরা নিজেদের বাইবেল পুস্তকের বিরুদ্ধাচরণ কর; এইরকম তোমাদের করা উচিত নয় ৷৩৯ ॥

    ৪০। তখন ঈশ্বর তাহাকে বলিলেন, “তোমার হাতে ওটা কী?” সে বলিল ষষ্টি। তখন তিনি বললেন –“উহা ভূমির উপর ফেলিয়া দাও”। সে ভূমির উপর ফেলিবামাত্র উহা সর্পে পরিণত হইয়া গেল। তখন মুসা তাহার সম্মুখ হইতে পলায়ন করিতে চাহিল। ঈশ্বর মুসাকে বলিলেন, “তুমি হাত বাড়াইয়া উহার লেজ ধরিয়া ফেল”। “হাত বাড়াইয়া সর্পের লেজ ধরিবা মাত্র তাহা পুনরায় যষ্টি হইয়া গেল। পরমেশ্বর তাহাকে বলিলেন,”তুমি তোমার হাত কোলে করিয়া বইস।” সে তাহার কথামত কোলে করিয়া বসিল এবং যখন বাহির করিল তখন দেখিল যে তাহার হাত শ্বেতকুষ্ঠে ভরিয়া গিয়াছে। ঈশ্বর কহিলেন, “পুনরায় হাত কোলে করিয়া বইস,।” তদ্রপ করা হইলে দেখা গেল যে, তাহার পূর্ববৎ দেহ যেমন ছিল তেমনই হইয়াছে। ঈশ্বর– তুমি নীল নদীর জল লইয়া এই শুষ্ক স্থলে ঢালিলে সেই জল রক্তে পরিণত হইয়া যাইবে’ । তৌ০ $০ প০ ৪। প্রা ২-৪, ৬৭৯ ॥

    সমীক্ষক –এখন দেখুন কেমন জাদুকরের খেলা! জাদুকর ঈশ্বর, মুসা তার চেলা? এই কথা কীভাবে মানা যাইতে পারে? আজকাল জাদুকররা কি ইহা অপেক্ষা কম ভেলকি দেখাইতে পারেন? এ ঈশ্বর কী করিয়া হইল? এতো মস্তবড় খেলোয়াড়। এই সব কথা বিদ্বানরা কী করিয়া বিশ্বাস করিবেন? এবং প্রতি বার আমিই সদাপ্রভু এবং ইব্রাহিম, ইজহাক ও য়াকুবের ঈশ্বর ইত্যাদি স্বয়ং প্রত্যেক ব্যক্তির নিকট প্রশংসা করিতে থাকেন। ইহা উত্তম জনের নিকট শোভনীয় হইতে পারে না। ইহা একমাত্র অহংকারী লোকের কাজ ॥৪০ ॥

    ৪১। তোমরা এক একটি মেষশাবক বাহির করিয়া নিস্তার পর্বীয় বলি হনন কর। আর এক এসোব লইয়া ডাবরস্থিত রক্তে ডুবাইয়া দ্বারের দুই দিকে কপালিতে ডাবরস্থিত রক্তের কিঞ্চিৎ ছাপ লাগাইয়া দিবে, প্রভাত পৰ্য্যন্ত তোমরা কেহই গৃহদ্বারের বাহিরে যাইবে না। কেননা সদাপ্রভু মিশ্রী দিগকে আঘাত করিবার জন্য তোমাদের নিকট দিয়া গমন করিবেন, তাহাতে দ্বারের উপরের দিকে কপালিতে ও দ্বারের দুই দিকে সেই রক্ত দেখিলে সদাপ্রভু সেই দ্বার ছাড়িয়া অগ্রে যাইবেন, তোমাদের গৃহে সংহার-কৰ্ত্তাকে প্রবেশ করিয়া আঘাত করিতে দিবেন না। তৌ০ যাত্রা পর্ব ১২। আ০ ২১, ২২, ২৩ ॥

    সমীক্ষক — ভাল, ইহা ইন্দ্রজালের ন্যায় দেখাইতেছে। এরূপ ঈশ্বর কি কখনও সর্বজ্ঞ হইতে পারেন? তিনি রক্তের চিহ্ননা দেখিয়া ইস্রায়েল বংশীয়দের বাসভবন চিনিতে পারেন না। ইহা তো ক্ষুদ্রবুদ্ধির লক্ষণ। সুতরাং জানা যাইতেছে যে, এ সকল কোন বন্য মনুষ্য কর্তৃক লিখিত হইয়াছে ॥ ৪১ ॥

    ৪২। পরে অর্ধরাত্রে এই ঘটনা হইল, সদাপ্রভু সিংহাসনে উপবিষ্ট ফিরাউনের প্রথমজাত সন্তান হইতে আরম্ভ করিয়া মিশর দেশস্থ সমস্ত প্রথমজাত সন্তান, কারাগৃহবন্দীর প্রথমজাত সন্তান, পশুদের প্রথমজাত শাবকগণকেও বিনাশ করিলেন। তাহাতে ফিরাউন, তাহার দাসগণ । এবং সমস্ত মিশরীয় রাত্রিতে উঠিল এবং মিশরে মহাক্রন্দন উত্থিত হইল; কেননা ঘরে কেহ মরে নাই, এমন ঘরই ছিল না। তৌ০ যাত্রা পর্ব ১২। আ০ ২৯,৩০ ॥

    সমীক্ষক –বাহবা! খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর নির্দয় হইয়া অর্ধরাত্রে দস্যুর ন্যায় বিনা অপরাধে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলকে, এমন কি পশুগুলিকে পৰ্য্যন্ত হত্যা করিলেন। তাহার কিছুমাত্র দয়া হইল না! মিশরে অতিশয় ক্রন্দন সত্ত্বেও খ্রীষ্টানদের ঈশ্বরের চিত্ত হইতে নিষ্ঠুরতা দূরীভূত হইল। না। ঈশ্বরের কথা তো দূরে থাকুক, একজন সাধারণ লোকও এরূপ কাৰ্য্য করিতে পারে না। তবে। ইহাতে আশ্চর্যের কিছুই নাই; কেননা লিখিত আছে, “মাংসাহারিণঃ কুতো দয়া”। খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর মাংসাহারী, তাহার দয়ার কী প্রয়োজন? ॥ ৪২ ॥

    ৪৩। “সদাপ্রভু তোমাদের পক্ষ লইয়া যুদ্ধ করিবেন। ইস্রায়েলের সন্তানদিগকে অগ্রসর হইতে বল। আর তুমি আপন যষ্টি তুলিয়া সমুদ্রের উপরে হস্ত বিস্তার কর, সমুদ্রকে দুই ভাগে ভাগ কর, তাহাতে ইস্রায়েল-সন্তানেরা সমুদ্র মধ্যে শুষ্কপথ ধরিয়া চলিয়া যাইবে ॥” তৌ০ যাত্রা পর্ব ১৪। আ০ ১৪, ১৫,১৬।

    সমীক্ষক — কেন মহাশয়! ঈশ্বর তো পূর্বে মেষপালের পশ্চাতে মেষপালকের ন্যায় ইস্রায়েলবংশীয়দের অনুসরণ করিতেন। কে জানে এখন তিনি কোথায় অন্তর্হিত হইলেন? নতুবা তিনি সমুদ্রের মধ্যে দিয়া চতুর্দিকে রেলপথ প্রস্তুত করিয়া দিতেন। তাহাতে সমগ্র সংসারের উপকার হইত;জলযান প্রভৃতি নির্মাণের জন্য পরিশ্রম করিতে হইত না। কিন্তু উপায় কী? তিনি এখন কোথায় লুকাইয়া রহিলেন? বাইবেলের ঈশ্বর মুসার সহিত এইরূপ অনেক অসম্ভব লীলা-খেলা করিয়াছেন। সুতরাং জানা যাইতেছে যে, যেরূপ খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর ও তাঁহার সেবক, তেমনি তাহার রচিত পুস্তকও। এরূপ পুস্তক এবং এরূপ ঈশ্বর আমাদের নিকট হইতে যতই দূরে। থাকেন, ততই শ্রেয়ঃ ॥৪৩ ॥

    ৪৪। কেননা আমি সদাপ্রভু, তোমার ঈশ্বর, প্রত্যক্ষ সৰ্ব্বশক্তিমান্। আমি পিতৃগণের অপরাধের দণ্ড তাহাদের সন্তানের উপর বর্তাই, যাহারা আমাকে দ্বেষ করে, তাহাদের তৃতীয় ও চতুর্থ পুরুষ। পৰ্য্যন্তকে দণ্ড দিয়া থাকি । তৌ০ যাত্রা পর্ব ০ ২০। আ০ ৫ ॥

    সমীক্ষক –ভাল, ইহা কীরূপ ন্যায় বিচার যে পিতার অপরাধের জন্য সন্তানদিগকে চারি। পুরুষ পৰ্য্যন্ত দণ্ড দেওয়া যুক্তিসঙ্গত বিবেচিত হয়? সৎপিতার কুসন্তান এবং অসৎপিতার সুসন্তান হয় কি না? তাহা হইলে চতুর্থ পুরুষ পৰ্য্যন্ত কীরূপে দণ্ড দেওয়া যাইতে পারে? পঞ্চম পুরুষের পরে কেহ দুষ্ট হইলে তাহাকে দণ্ড দেওয়া যাইবে না। বিনা অপরাধে কাহাকেও দণ্ড দেওয়া। অন্যায় ॥৪৪ ॥

    ৪৫। তুমি বিশ্রাম দিনকে পবিত্র করিয়া স্মরণ করিও। ছয় দিন শ্রম করিও, আপনার সমস্ত কাৰ্য্য করিও; কিন্তু সপ্তম দিন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে বিশ্রাম দিবস। সদাপ্রভু বিশ্রাম দিবসকে আশীর্বাদ করিলেন। তৌ০ যাত্রা প০ ২০ ॥ আ০ ৮-১১ ॥

    সমীক্ষক — কেবল রবিবার দিনই কি পবিত্র? অবশিষ্ট ছয় দিন কি অপবিত্র? পরমেশ্বর কি ছয় দিনের কঠোর পরিশ্রমে ক্লান্ত হইয়া সপ্তম দিবসে ঘুমাইয়া পড়িয়াছিলেন? তিনি রবিবারকে আশীর্বাদ করিলেন, কিন্তু সোমবার প্রভৃতি ছয়টি দিনকে কী করিলেন? বোধ হয় অভিশাপ দিয়া থাকিবেন। কোন বিদ্বান্ এরূপ কাৰ্য্য করিতে পারেন না; ঈশ্বরের পক্ষে ইহা করা কীরূপে সম্ভবপর? রবিবারের কী গুণ এবং সোমবার প্রভৃতির কী দোষ আছে যে, ঈশ্বর রবিবারকে পবিত্র ঘোষণা করিলেন এবং বর দিলেন, কিন্তু অপর দিনগুলিকে অপবিত্র ঘোষণা করিলেন? ॥৪৫ ॥

    ৪৬। তোমার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না। তোমার প্রতিবেশীর গৃহে লোভ করিও; প্রতিবেশীর স্ত্রীতে, তাহার দাস-দাসীতে, কিম্বা তাহার গরুতে, কিম্বা গর্দভে, প্রতিবেশীর কোন বস্তুতেও লোভ করিও না। তৌ০ যাত্রা প০ ২০। আ০ ১৬,১৭ ॥

    সমীক্ষক –বাহবা! এই জন্যই তো যেমন ক্ষুধার্ত অন্নের দিকে এবং তৃষ্ণার্ত জলের দিকে আকৃষ্ট হয়, সেইরূপ খ্রীষ্টানগণও বিদেশীয়দের ধন সম্পত্তির জন্য লালায়িত হইয়া থাকে। ইহা কেবল স্বার্থপর এবং পক্ষপাতদুষ্টের কাৰ্য। বোধ হয় খ্রীষ্টানদের ঈশ্বরও তদ্রূপ। যদি বলা হয়, আমরা মনুষ্যমাত্রকেই প্রতিবেশী মনে করি, তাহা হইলে মনুষ্য ব্যতীত অপর কাহারও স্ত্রী ও দাসী আছে যে, তাহাকে প্রতিবেশী মনে করা যাইবে না? অতএব এ সকল স্বার্থপরের কথা, ঈশ্বরের নহে ॥ ৪৬ ॥

    ৪৭। কেহ যদি কোন মনুষ্যকে এরূপ আঘাত করে যে, তাহার মৃত্যু হয়, তবে অবশ্য প্রাণদণ্ড হইবে। আর যদি কোন ব্যক্তি অন্যকে বধ করিতে চেষ্টা না করে, কিন্তু ঈশ্বর তাহাকে তাহার হস্তে সমর্পণ করেন, তবে যে স্থানে সে পলাইতে পারে, এমন স্থান তোমার নিমিত্ত আমি নিরূপণ করিব ॥ তৌ০ যা প০ ২১। আ০ ১২, ১৩ ॥

    সমীক্ষক — ঈশ্বরের এই কাৰ্য্য ন্যায়সঙ্গত হইলে মুসা যখন এক ব্যক্তিকে হত্যা করিয়া পুঁতিয়া রাখিয়া পলায়ন করিলেন, তখন ঈশ্বর তাহাকে দণ্ড দিলেন না কেন? যদি বলা হয় যে, ঈশ্বর উক্ত ব্যক্তিকে বধের জন্য মুসার হস্তে সমর্পণ করিয়াছিলেন তাহা হইলে ঈশ্বর পক্ষপাতগ্রস্ত। কারণ রাষ্ট্রবিধি অনুসারে মুসার প্রতি দণ্ড ব্যবস্থা প্রতিপালিত হইতে দিলেন না ॥৪৭ ॥

    ৪৮। তাহারা সদাপ্রভুর উদ্দেশ্য মঙ্গলার্থে বৃষদিগকে বলিদান করিল। তখন মুসা তাহার অর্ধেক রক্ত লইয়া থালিতে রাখিলেন এবং অর্ধেক রক্ত বেদীর উপরে প্রক্ষেপ করিলেন। পরে মুসা সেই রক্ত লইয়া লোকদের উপরে প্রক্ষেপ করিয়া কহিলেন, “দেখ –এ সেই নিয়মের রক্ত, যাহা সদাপ্রভু তোমাদের সহিত এই সকল বাক্য সম্বন্ধে স্থির করিয়াছেন।”

    আর সদাপ্রভু মুসাকে কহিলেন –তুমি পর্বতে আমার নিকটে উঠিয়া আসিয়া এই স্থানে থাক, তাহাতে আমি দুইখানা প্রস্তর ফলক এবং আমার লিখিত ব্যবস্থা ও আজ্ঞা তোমাকে দিব ॥ তৌ০ যা প০ ২৪। আ০ ৫,৬,৮,১২ ॥

    সমীক্ষক –দেখুন! এ সকল বন্য মনুষ্যের কাৰ্য্য কিনা। পরমেশ্বরের বৃষবলি গ্রহণ এবং বেদীর উপর রুধির সিঞ্চন কেমন বন্যতা ও অসভ্যতার ব্যাপার। ঈশ্বর যখন বৃষের বলিদান গ্রহণ করেন তখন তাহার ভক্তগণ বৃষ ও ধেনু বলির প্রসাদ গ্রহণ করিয়া উদর পূর্ণ করিবেন না কেন? তাঁহারা জগতের অনিষ্টই বা করিবেন না কেন?

    বাইবেল এইরূপ জঘন্য ব্যাপারে পরিপূর্ণ। বাইবেলের কুসংস্কার বশতঃ খ্রীষ্টানগণ বেদের বিরুদ্ধেও এই সকল দোষ আরোপ করিয়া থাকেন। কিন্তু বেদে এসকল বিষয়ের উল্লেখ মাত্রও নাই। ইহাও জানা যাইতেছে যে,খ্রষ্টানদের ঈশ্বর একজন পার্বত্য লোক ছিলেন। তিনি পর্বতে বাস করিতেন এবং কালি, লেখনী ও কাগজ প্রস্তুত করিতে জানিতেন না। এ সকল সামগ্রীর অভাবে তিনি প্রস্তর ফলকে লিখিতেন। বন্য মনুষ্যেরা তাহাকেই ঈশ্বর বলিয়া মান্য করিত ॥ ৪৮ ॥

    ৪৯। আরও কহিলেন– “তুমি আমার রূপ দেখিতে পাইবে না। কেননা, মনুষ্য আমাকে দেখিলে বাঁচিতে পারে না।” সদাপ্রভু কহিলেন, “দেখ আমার নিকটে এক স্থান আছে; তুমি ঐ টিলার উপরে দাঁড়াইবে। তাহাতে তোমার নিকট দিয়া আমার বীর যাত্রার সময় আমি তোমাকে শৈলের এক ফাটলে রাখিব ও আমার গমনের শেষ পর্যন্ত করতল দিয়া তোমাকে আচ্ছন্ন করিব; পরে আমি করতল উঠাইলে আমার পশ্চাদ্ভাগ দেখিতে পাইবে, কিন্তু আমার মুখের দর্শন পাওয়া যাইবে না ॥ ” তৌ০ যা প০ ৩৩। আ০ ২০-২৩ ॥

    সমীক্ষক –এখন দেখুন, খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর মনুষ্যের ন্যায় দেহধারী। তিনি মুসার সহিত কীরূপ ছল-চাতুরী করিয়া স্বয়ংসিদ্ধ ঈশ্বর হইয়া পড়িয়াছেন। যাহার কেবল পশ্চাদভাগ দেখা। যায়, কিন্তু আকৃতি দেখা যায় না। যখন ঈশ্বর মুসাকে হস্ত দ্বারা ঢাকিলেন,তখন কি মুসা তাহার হস্তের আকৃতি দেখিতে পাইলেন না? ॥৪৯ ॥

    প্রাচীন বাইবেলের লৈব্য ব্যবস্থার পুস্তক ৫০। পরে সদাপ্রভু মুসাকে ডাকিয়া মণ্ডলীর তাম্বু হইতে এইকথা কহিলেন, “তুমি ইস্রায়েলের সন্তানদিগকে এই কথা বল, তোমাদের কেহ যদি সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে উপহার উৎসর্গ করে, তবে সে পশুপালন হইতে অর্থাৎ বৃষ, গাভী কিম্বা মেষপাল হইতে আপন উপহার লইয়া উৎসর্গ করুক।” তৌ০ লৈব্য ব্যবস্থার পুস্তক ॥ পর্ব ১ আ০ ১, ২ ॥

    সমীক্ষক –এখন ভাবিয়া দেখুন! খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর গাভী এবং বৃষ প্রভৃতি বলিরূপে গ্রহণ। করিতেন এবং নিজের জন্য বলিদানের উপদেশও দিয়া থাকেন। তাহা হইলে ঈশ্বর গবাদি পশুর রক্তপিপাসু এবং মাংসলোলুপ কি না? সুতরাং তাঁহাকে অহিংসক এবং ঈশ্বর শ্রেণিতে গণ্য করা যাইতে পারে না, কেননা তিনি একজন মাংসাহারী এবং কপটাচারী মনুষ্য সদৃশ। ৫০ ॥

    ৫১। “পরে সে সদাপ্রভুর সম্মুখে সেই বৃষকে হনন করিবে ও হারুণের পুত্র যাজক তাহার । নিকট রক্ত আনিবে এবং যজ্ঞবেদীর মণ্ডলীর তাম্বুর দ্বার সমীপে স্থিত বেদীর উপরে সেই রক্ত চারি দিকে প্রক্ষেপ করিবে। তখন সে সেই উপহার প্রাপ্ত হোমবলির চর্ম ছাড়াইয়া তাহা খণ্ড খণ্ড করিবে। পরে হারুণ যাজকের পুত্রগণ বেদীর উপরে অগ্নি রাখিবে ও অগ্নির উপরে কাষ্ঠ সাজাইবে। আর হারুণের পুত্র যাজকেরা সেই বেদীর উপরিস্থ অগ্নি ও কাষ্ঠের উপর তাহার সকল খণ্ড এবং মস্তক ও মেদ রাখিবে। পরে যাজক বেদীর উপরে সে সমস্ত দগ্ধ করিবে; ইহা হোমবলি, সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে সৌরভার্থক অগ্নির উপহার।”

    তৌ০ লৈ পৰ্ব ১। আ০ ৫,৬,৭,৮,৯ ॥ সমীক্ষক –একটু চিন্তা করিয়া দেখুন! পরমেশ্বরের ভক্ত তাঁহার সম্মুখে বৃষহত্যা করিবে এবং অপরের দ্বারা হত্যা করাইবে; ভক্ত চারিদিকে রুধির সিঞ্চন করিবে, অগ্নিতে হোম করিবে এবং পরমেশ্বর সুগন্ধ আঘ্রাণ করিবেন। কসাইদের গৃহে যাহা হইয়া থাকে, এ সকল কি তদপেক্ষা কম? এই নিমিত্ত বাইবেল ঈশ্বরকৃত নহে এবং যে ঈশ্বর বন্য মনুষ্যের ন্যায় কাৰ্য্য করেন, তিনি কখনও যথার্থ ঈশ্বর হইতে পারেন না। ৫১।

    ৫২। আর সদাপ্রভু মুসাকে কহিলেন,–”অতিষিক্ত যাজক যদি সাধারণ মনুষ্যের ন্যায় পাপ করে, তবে সে স্বকৃত পাপের জন্য সদাপ্রভুর নির্দোষ এক গোবৎস পাপনাশক বলিরূপে উৎসর্গ করিবে এবং বৎসের শিরোপরি নিজ হস্ত রখিয়া বসকে সদাপ্রভুর সম্মুখে বলি দিবে। তৌ০ লৈ বা প০ ৪। আ০ ১। ৩৪ ॥

    সমীক্ষক –এবার পাপক্ষালনের জন্য প্রায়শ্চিত্ত কীরূপ দেখুন। কেহ পাপ করিবার পর প্রায়শ্চিত্তের জন্য প্রয়োজনীয় গবাদি পশুকে হত্যা করিবে, আর স্বয়ং ঈশ্বর হত্যা করাইবেন! ধন্য খ্রীষ্টানগণ! যিনি এই সকল কাৰ্য্য করেন, আপনারা তাহাকেই ঈশ্বর বলিয়া বিশ্বাস করেন এবং তাঁহার নিকট মুক্তি প্রভৃতিও আশা করেন! ॥ ৫০ ॥ ৷

    ৫৩। “আর যদি কোন অধ্যক্ষ পাপ করে, আপনার উপহার স্বরূপ এক নির্দোষ ছাগ শিশু আনিবে। পরে সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহাকে হনন করিবে; ইহা পাপনাশকাৰ্থ বলিদান।” তৌ০ লৈ প০ ৪। ২২, ২৩, ২৪ ॥

    সমীক্ষক –বাহবা! তাহা হইলে কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ বিচারপতি এবং সেনাপতি প্রভৃতি পাপ করিতে ভয় পাইবেন কেন? তাহারা স্বয়ং যথেষ্ট পাপ করিবেন, পরে প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ গাভী, বাছুর এবং ছাগাদি হত্যা করিবেন। এই জন্যই তো খ্রীষ্টানেরা কোন পশুর বা পক্ষীর হত্যায় শঙ্কিত হন না। শুনুন খ্রীষ্টানগণ! এখন এই বন্য মত পরিত্যাগ করিয়া সুসভ্য ধর্মময় বেদমত গ্রহণ করুন; তাহাতেই কল্যাণ হইবে ৷৫৪ ॥

    ৫৪। “আর সে যদি মেষ আনিতে অসমর্থ হয়, তবে নিজ কৃতপাপ মোচনের জন্য দুইটি ঘুঘু কিংবা দুইটি কপোত শাবককে বলিস্বরূপ সদাপ্রভুর নিকট আনিবে। যাজক তাহার গলা মুচড়াইবে, কিন্তু ছিঁড়িয়া ফেলিবে না। যাজক তাহার কৃতপাপের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে, ইহাতে তাহার পাপের ক্ষমা হইবে।”

    “আর সে যদি দুইটি ঘুঘু কিম্বা দুইটি কপোত শাবক আনিতে অসমর্থ হয়, তবে তাহার উপহার স্বরূপ এক সেরের দশাংশ সুজি পাকাৰ্থ বলিরূপে আনিবে।* তাহার উপরে তৈল দিবে না। তাহাতে তাহার পাপের ক্ষমা হইবে ॥ ” তৌ০ তৈ০ প০ ৫। আ০ ৭,৮,১০,১১,১৩ ॥ [* যে ঈশ্বর গোবৎস, ছাগশাবক, কপোত এবং আটা পর্যন্ত গ্রহণের ব্যবস্থা করিয়াছেন, তিনিই ধন্য। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, কপোত শাবকের গলা মুচড়াইয়া দেওয়া হইত, কৰ্ত্তন করিবার পরিশ্রম ও করিতে হইত না। এতদ্বারা অনুমান করা যাইতে পারে যে, বন্য মনুষ্যদের মধ্যে একজন বিশেষ চতুর ছিল। যে পর্বতের উপর বাস করিত এবং নিজেকে ঈশ্বর বলিয়া ঘোষণা করিত। অজ্ঞ বন্য মনুষ্যেরা তাহাকে ঈশ্বর বলিয়া লইলে, সে কৌশলে পর্বতের উপরেই পশুপক্ষী এবং অন্নাদি আনয়ন করিয়া আনন্দ উপভোগ করিত। ফেরিস্তাগণ তাহার দূতের কাৰ্য্য করিতেন। সদাশয় ব্যক্তিগণ ভাবিয়া দেখুন, কোথায় বাইবেলের গোবৎস, মেষ,ছাগ শাবক, কপোত এবং ডাল-আটা ভক্ষণকারী ঈশ্বর, আর কোথায় সর্বজ্ঞ, জন্মরহিত, নিরাকার এবং ন্যায়কারী ইত্যাদি সগুণান্বিত বেদোক্ত ঈশ্বর!]

    সমীক্ষক –এখন দেখুন! বোধ হয়, খ্রীষ্টানদের মধ্যে ধনী কিংবা দরিদ্র কেহই পাপ করিতে ভীত হন না; কারণ তাহাদের ঈশ্বর পাপের প্রায়শ্চিত্ত সহজ করিয়া রাখিয়াছেন! খ্রীষ্টানদের বাইবেলে একটি অদ্ভুত কথা আছে, তাহা এই যে, বিনা কষ্টে পাপের দ্বারাই পাপখণ্ডন হইয়া থাকে; অর্থাৎ প্রথমতঃ পাপ করা হইল, অতঃপর জীবহিংসা করিয়া অত্যন্ত আনন্দের সহিত মাংস খাইল এবং মনে করা হইল যে, পাপখণ্ডন হইয়া গিয়াছে ॥

    গলা মুচড়ান হইলে সম্ভবতঃ কপোতশাবক বহুক্ষণ ধরিয়া ধড়ফড় করিতে থাকে; তথাপি। কিন্তু খ্রীষ্টানদের মনে দয়ার উদ্রেক হয় না। হইবে কেন? তাহাদের ঈশ্বর যে সকলকে হিংসা। করিবার জন্যই উপদেশ দিয়াছেন। সকল পাপেরই যে এইরূপ প্রায়শ্চিত্ত। তাহা হইলে যীশুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন দ্বারা পাপমোচনের আড়ম্বর করা হয় কেন? ॥ ৫২ ॥

    ৫৫। “আর যদি কেহ কাহারও হোম বলি উৎসর্গ করে, সেই যাজক তাহার উৎকৃষ্ট হোম বলির চর্ম পাইবে এবং তন্দুরে কটাহে পাক করা কিম্বা চাটুতে যত পক্ক ভক্ষ্য নৈবেদ্য থাকিবে, সে সকল উৎসর্গকারী যাজকের হইবে।” তৈ০ লৈ পর্ব ৭। আ০ ৮,৯ ॥

    সমীক্ষক –আমরা জানিতাম যে এদেশেই দেবদেবীভক্ত এবং মন্দিরস্থ পূজারীদের মধ্যে বিচিত্র “পোপলীলা” আছে। কিন্তু এখন দেখিতেছি খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর এবং তাঁহার পূজারীদের “পোপলীলা”তদপেক্ষা সহস্রগুণ অধিক কেননা চর্মের মূল্য এবং ভোজ্য সামগ্রী পাইলে খ্রীষ্টানগণ। অত্যন্ত আমোদ প্রমোদ করিতেন এবং এখনও করিয়া থাকেন।

    ভাল, নিজের এক পুত্রকে হত্যা করাইয়া অন্য পুত্রকে তাহার মাংস ভক্ষণ করান কি কোন মনুষ্যের পক্ষে সম্ভব? মনুষ্য পশু-পক্ষী প্রভৃতি যাবতীয় জীব ঈশ্বরের সন্তান তুল্য। সুতরাং তিনি কখনও এরূপ কাৰ্য্য করিতে পারেন না। অতএব বাইবেল ঈশ্বরকৃত নহে এবং বাইবেলের ঈশ্বর এবং তাহার প্রতি যাহারা বিশ্বাসপরায়ণ, তাহারাও কখনও ধর্মজ্ঞ হইতে পারে না। লৈব্য ব্যবস্থা। প্রভৃতি পুস্তক এইরূপ কথায় পরিপূর্ণ। কত আর উল্লেখ করা যাইবে? ॥৫৫ ॥ ৷

    গণনার পুস্তক

    ৫৬। “আর গর্দভী দেখিল, সদাপ্রভুর দূত কোষমুক্ত খড়গ হস্তে পথের মধ্যে দাঁড়াইয়া আছেন। তখন গর্দভী পথ ছাড়িয়া ক্ষেত্রে গমন করিল, তাহাতে বিলিয়ম গর্দভীকে পথে আনিবার জন্য লাঠি দ্বারা প্রহার করিল। তখন সদাপ্রভু গর্দভীর মুখ খুলিয়া দিলেন এবং সে বিলিয়মকে কহিল–আমি তোমার কী করিলাম যে তুমি এই তিন বার আমাকে প্রহার করিলে”? । তৌ০ গ০ প০ ২১। আ০ ২৩,২৮ ॥

    সমীক্ষক– পূর্বে গর্দভ পৰ্য্যন্তও ঈশ্বরের দূতগণকে দেখিতে পাইত। কিন্তু আজকাল বিশপ এবং পাদ্রী প্রভৃতি শ্রেষ্ঠ অথবা নিকৃষ্ট কেহই ঈশ্বর কিংবা তাহার দূতগণকে দেখিতে পান না। তবে কি এখন খ্রীস্টানদের ঈশ্বর এবং তাহার দূতগণ নাই? থাকিলে কি তাহারা গভীর নিদ্রায়। অভিভূত অথবা পীড়িত আছেন, না অপর কোন ভূমণ্ডলে প্রস্থান করিয়াছেন? তাহারা কি অন্য কোন কার্যে নিযুক্ত আছেন, অথবা খ্রীষ্টানদের প্রতি ক্রুদ্ধ হইয়াছেন, না –মরিয়া গিয়াছেন? বাস্তবিক তাহাদের যে কী হইয়াছে তাহা জানা যায় না। তবে যেহেতু তাহারা এখন নাই এবং দৃষ্টি গোচরও হন না; অতএব অনুমান হইতেছে যে, তাঁহারা পূর্বে ছিলেন না এবং দৃষ্টিগোচরও হইতেন না। ইহারা কেবল মনগড়া কাহিনী ছড়াইয়াছেন।৫৬ ॥

    ৫৭। এখন শিশুদের মধ্যে সমস্ত বালককে বধ কর, এবং পুরুষের সহিত সংযুক্ত হইয়াছে। এরূপ সমস্ত স্ত্রীলোককেই বধ কর; কিন্তু যে বালিকারা নিজ পুরুষের সহিত সংযুক্ত হয় নাই তাহাদের নিজেদের জন্য জীবিত রাখ ॥ তৌ০ গণনা পর্ব ৩১ আ০ ১৭১৮ ॥

    সমীক্ষক –বাহবা! তোমাদের পয়গম্বর মুসা এবং ঈশ্বর ধন্য! তাহারা নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং পশ্বাদিকেও হত্যা করিতে কুণ্ঠিত হয় না। এতদ্বারা নিশ্চিতরূপে জানা যাইতেছে যে, মুসা ইন্দ্রিয়াসক্ত ছিলেন; নতুবা তিনি যে সকল কন্যার অক্ষতযোনি পুরুষ সংসর্গ হয় নাই, তাহাদের নিজেদের জন্য আনয়ন করিতে এমন নির্দয় এবং লম্পটোচিত আদেশ দিবেন কেন? ॥৫৭৷ তৌ০ গণনা পর্ব ৩১ আ০ ১৭। ১৮ ॥

    সমুএলের দ্বিতীয় পুস্তক

    ৫৮। কিন্তু সেই রাত্রিতে সদাপ্রভুর এই বাক্য নাথনের নিকটে এইভাবে পৌঁছিল –”তুমি যাও, আমার দাস দায়ুদকে বল যে, সদাপ্রভু এই কথা বলিয়াছেন। তুমি কি আমার বাসের জন্য গৃহ নির্মাণ করিবে? ইস্রায়েলের সন্তানগণকে মিশর হইতে বাহির করিয়া আনিবার দিন হইতে অদ্য পর্যন্ত আমি কোন গৃহে বাস করি নাই, কেবল তাম্বুতে ও আবাসে থাকিয়া যাতায়াত করিতেছি।” তৌ০ সেমুয়েল ২য় পু০ ৭। আ০ ৪ ।৫।৬।

    সমীক্ষক –এখন আর কোন সন্দেহ রহিল না যে, খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর মনুষ্যের ন্যায় দেহধারী। যিনি অভিযোগ করিতেছেন “আমি বহু পরিশ্রম এবং ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিয়াছি। এখন যদি দাউদ গৃহ নির্মাণ করিয়া দেয়, তবে তন্মধ্যে বিশ্রাম করিব”। এমন ঈশ্বর এবং পুস্তক বিশ্বাস করিতে কি খ্রীষ্টানদের লজ্জা হয় না? কিন্তু উপায় কী? হতভাগ্যগণ যে জড়াইয়া পড়িয়াছে। এবার বাহির হইবার জন্য তাহাদের বিশেষ চেষ্টা করা উচিত ॥৫৮ ॥

    রাজাদিগের পুস্তক

    ৫৯। ঊনবিংশতি বর্ষের পঞ্চম মাসের সপ্তম দিনে বাবুলের রাজা নবুখুদ নজরেব রাজ্যে বাবুলের রাজার একজন সেবক নবুসরঅদ্দান নামক প্রধান সেনাপতি যরূসলেমে আসিলেন। তিনি পরমেশ্বরের মন্দির, রাজভবন, যরূসলেমের সব গৃহ ও সব অট্টালিকা জ্বালাইয়া দিলেন। আর সেই রক্ষক সেনাপতির অনুগামী কসদীয় সমস্ত সৈন্য যরূসলেমের চারি দিকের প্রাচীর ভাঙ্গিয়া ফেলিল ॥ তৌ০ রা০ প০ ২৫। আ০ ৮ ।৯১০ ॥

    সমীক্ষক –উপায় কী? বোধ হয় খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর বিশ্রামার্থ দায়ুদের দ্বারা এক গৃহ নির্মাণ করাইয়া তন্মদ্যে স্বচ্ছন্দে বাস করিতেছিলেন। কিন্তু নবুসরঅদ্দান সেই গৃহ নষ্ট করিলে ঈশ্বর এবং তাহার দূতসেনা কিছুই করিতে পারেন নাই! পূর্বে খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর মহাযোদ্ধা এবং দিগ্বিজয়ী ছিলেন। এখন তাঁহার গৃহ ভগ্ন এবং দগ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তিনি নিশ্চেষ্ট রহিলেন কেন? তাহার দূতগণ কোথায় পলায়ন করিল তাহা জানা যায় না। এরূপ সময়ে কেহ কোন কাৰ্য্যে আসিল না। ঈশ্বরের পরাক্রমও যে কোথায় উধাও হইল তাহাও জানা যায় না। যদি শেষোক্ত ঘটনা সত্য হয়। তবে পূর্বোক্ত বিজয়বার্তা সমস্তই নিরর্থক। ঈশ্বর কি মিশর দেশের শিশুদিগকে হত্যা করিবার জন্যই শূর বীর হইয়াছিলেন? এখন তিনি শূর বীরদের সম্মুখে নিশ্চেষ্ট হইয়া রহিলেন কেন? সুতরাং খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর নিন্দা এবং অকীৰ্ত্তিৰ্ভজন! এইরূপ সহস্র সহস্র অসার গল্পে পুস্তকটি পরিপূর্ণ ॥৫৬ ॥

    জবুর এর দ্বিতীয় ভাগ ॥
    সামগ্রিক ঘটনাবলী সংক্রান্ত প্রথম পুস্তক।

    ৬০। পরে সদাপ্রভু ইস্রায়েলের প্রতি মড়ক পাঠাইলেন, তাহাতে ইস্রায়েলের সত্তর সহস্র  লোক মারা পড়িল ॥ জবুর ০২ কাল প্রথম পুস্তক প০ ২১। আ০ ১৪।।

    সমীক্ষক –এখন ইস্রায়েলবংশীয় খ্রীষ্টানদের ঈশ্বরের লীলাখেলা দেখুন! যে ইস্রায়েল বংশীয়দিগকে তিনি বহু বার বর প্রদান করিয়াছিলেন এবং যাহাদের কল্যাণার্থ তিনি দিবারাত্র পরিশ্রম করিতেন, এখন হঠাৎ তাহাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হইয়া মহামারী প্রেরণ করিলেন এবং তদ্বারা। সত্তর সহস্র লোককে বিনাশ করিলেন। এ বিষয়ে জনৈক কবি সত্যই বলিয়াছিলেন —

    ক্ষণে রুষ্টঃ ক্ষণে তুষ্টো রুষ্টষ্টঃ ক্ষণে ক্ষণে। অব্যবস্থিতচিত্তস্য প্রসাদোপি ভয়ঙ্কর ॥৯॥

    যে ব্যক্তি ক্ষণে ক্ষণে প্রসন্ন এবং ক্ষণে ক্ষণে অপ্রসন্ন হয় অর্থাৎ এই মুহূর্তে প্রসন্ন কিন্তু পরমুহূর্তেই অপ্রসন্ন হয় তাহার প্রসন্নতাও ভীতিজনক। খ্রীষ্টানদের ঈশ্বরের লীলাখেলাও এইরূপ ॥ ৫৭ ॥

    ঐয়ুবের পুস্তক

    ৬১। আর একদিন ঈশ্বরের পুত্রগণ সদাপ্রভুর সম্মুখে দণ্ডায়মান হইবার জন্য উপস্থিত হইলে তাঁহাদের মধ্যে শয়তানও সদাপ্রভুর সম্মুখে দণ্ডায়মান হইবার জন্য উপস্থিত হইল। সদাপ্রভু শয়তানকে কহিলেন, “তুমি কোথা হইতে আসিলে?”শয়তান সদাপ্রভুকে উত্তর দিয়া কহিল– “আমি পৃথিবী পৰ্যটন ও তথায় ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিয়া আসিলাম।”

    তখন সদাপ্রভু শয়তানকে কহিলেন, “আমার দাস ঐয়ুবকে কি তুমি পরীক্ষা করিয়াছ? কেননা তাহার তুল্য সিদ্ধ ও যথার্থবাদী, ঈশ্বরভীরু ও কুকর্মত্যাগী লোক পৃথিবীতে কেহই নাই; সে এখনও আপন সত্যতা রক্ষা করিতেছে, যদিও তুমি অকারণে তাহাকে বিনষ্ট করিতে আমায় প্রবৃত্ত করিয়াছ।”

    শয়তান সদাপ্রভুকে উত্তর দিয়া কহিল, –“লোকে চর্মের জন্য চর্ম, প্রাণের জন্য সর্বস্ব দিবে। কিন্তু তুমি একবার হস্ত বিস্তার করিয়া তাহার অস্থি ও মাংস স্পর্শ করিলে, সে অবশ্য তোমার সম্মুখেই তোমাকে জলাঞ্জলি দিবে।”

    সদাপ্রভু শয়তানকে কহিলেন, –“দেখ সে তোমার হস্তগত; কেবল তাহার প্রাণটি থাকিতে দিও”। পরে শয়তান সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে বাহির হইয়া ঐয়ুবের আপাদ মস্তকে আঘাত করিয়া দুষ্ট স্ফোটক জন্মাইল।” জবুর ঐয়ুব প০ ২। আ০ ১-৭ ॥

    সমীক্ষক –খ্রীষ্টানদের ঈশ্বরের ক্ষমতা দেখুন? শয়তান তাঁহারই সম্মুখে তাহার ভক্তকে নিৰ্যাতন করিতেছে; কিন্তু তিনি শয়তানকে দন্ড দিতে বা ভক্তকে রক্ষা করিতে পারিতেছেন না। এবং তাহার কোন দূতও শয়তানের বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হইতে সাহস করিতেছেন না। শয়তান। একাই সকলকে সন্ত্রস্ত করিয়া রাখিয়াছে। খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর সর্বজ্ঞও নহেন। সর্বজ্ঞ হইলে তিনি শয়তান দ্বারা ঐয়ুবের পরীক্ষা করাইবেন কেন?

    উপদেশ পুস্তক

    ৬২। “হ্যাঁ, আমার হৃদয় নানা প্রকার প্রজ্ঞায় ও বুদ্ধিতে পারদর্শী হইয়াছে। আমি প্রজ্ঞা জানিতে এবং ক্ষিপ্রতা ও অজ্ঞানতা জানিতে মনোযোগ দিলাম। আমি জানিলাম যে, তাহাও মনের ঝঞ্ঝাট মাত্র। কেননা প্রজ্ঞার বাহুল্যে মনস্তপের বাহুল্য ঘটে এবং যে জ্ঞানের বৃদ্ধি করে, সে দুঃখের বৃদ্ধি করে।” জ০ উ০ প০ ১। আ০ ১৬-১৮

    সমীক্ষক –এখন দেখুন। জ্ঞান এবং বুদ্ধি পৰ্য্যায় বাচক। এই দুইটি শব্দকে পৃথক্ এবং জ্ঞানবৃদ্ধিকে দুঃখ ও শোকের কারণ মনে করা, অবিদ্বান্ ব্যতীত অপর কাহার পক্ষে সম্ভব? এই বাইবেল ঈশ্বর- রচিত হওয়া দূরে থাকুক, বিদ্বান্ ব্যক্তিদের দ্বারাও রচিত নহে ॥ ৬২ ॥

    প্রাচীন বাইবেল সম্বন্ধে এই যৎকিঞ্চিৎ লিখিত হইল। অতঃপর মথি প্রভৃতি রচিত নব্য বাইবেল সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ লিখিত হইতেছে। খ্রীষ্টানগণ ইহাকে বিশেষ প্রমাণ মনে করেন! ইহার নাম “এঞ্জেল” রাখা হইয়াছে। এই পুস্তক কীরূপ তাহা আমরা এখন পরীক্ষা করিয়া দেখিব।

    মথি রচিত এঞ্জেল ৬৩। যীশুখ্রীষ্টের জন্ম এইরূপে হইয়াছিল। তাহার মাতা মেরী য়ুসফের প্রতি বাগদত্তা হইলে তাহাদের সহবাসের পূর্বেই জানা গেল, পবিত্র আত্মা হইতে তাহার গর্ভ সঞ্চার হইয়াছে। প্রভুর এক দূত স্বপ্নে তাহাকে দর্শন দিয়া কহিলেন– “দায়ুদ- সন্তান য়ুসফ তুমি তোমার স্ত্রী মেরীকে এখানে আনিতে ভয় করিও না, কেননা তাহার গর্ভে যাহা আছে, তাহা পবিত্র আত্মা হইতে হইয়াছে ॥ ” মথি০ ই০ প০ আ০ ১৮২০ ॥

    সমীক্ষক –এ সকল প্রত্যক্ষাদি প্রমাণ এবং সৃষ্টিক্রমের বিরুদ্ধ কথা। ইহা বিশ্বাস করা, মূর্খ ও বন্য মনুষ্যের কাৰ্য্য, সত্য বিদ্বান্ পুরুষের কাৰ্য্য নহে। ভাল, কেহ কি পরমেশ্বরের বিধান লঙ্ঘন করিতে পারে? পরমেশ্বর স্বয়ং তাঁহার নিয়ম পরিবর্তন করিলে, কেহই তাহার আদেশ মান্য করিবে না, পরমেশ্বরও সর্বজ্ঞ এবং অভ্রান্ত থাকিবে না।

    এইরূপে তো প্রত্যেক কুমারী গর্ভবতী হইলে বলিতে পারিবে যে, সে পরমেশ্বরের কৃপায় গর্ভবতী হইয়াছে, সে এইরূপে মিথ্যা বলিতে পারিবে, –“পরমেশ্বরের দূত আমাকে স্বপ্নে বলিয়া দিয়াছিলেন যে, পরমাত্মার কৃপায় এই গর্ভ সঞ্চার হইয়াছে।”

    পুরাণেও এইরূপ সূৰ্য কর্তৃক কুন্তীর গর্ভাধান ইত্যাদি অসম্ভব গল্প রচিত হইয়াছে। নির্বোধ এবং শেয়ানা মূর্খ এ সকল অলীক গল্প বিশ্বাস করিয়া ভ্রমজালে পতিত হয়। এ স্থলে এইরূপ ঘটিয়া থাকিবে যে, মেরী কোন পুরুষের সংসর্গে গর্ভবতী হইয়াছিলেন। সেই ব্যক্তি বা অপর কেহ এই অসম্ভব কাহিনী প্রচার করিয়া থাকিবে যে, তিনি পরমাত্মা কর্তৃক গর্ভবতী হইয়াছেন ৷৬৩ ॥ । ৬৪। “তখন যীশু, শয়তান দ্বারা পরীক্ষিত হইবার জন্য, আত্মা দ্বারা জঙ্গলে নীত হইলেন। আর তিনি চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত্র অনাহারে থাকিয়া শেষে ক্ষুধিত হইলেন। তখন পরীক্ষক নিকটে আসিয়া তাহাকে কহিল, –তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে বল যেন এই প্রস্তরসমুহ রুটি হইয়া যায়।” ই০ প০ ৪। আ০১-৩।

    সমীক্ষক –এতদ্বারা স্পষ্টরূপে প্রমাণিত হইল যে, খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর সর্বজ্ঞ নহেন, নতুবা তিনি স্বয়ং জানিতে পারিতেন। শয়তানের দ্বারা ঈশ্বর পরীক্ষা করাইবেন কেন? ভাল, আজকাল কোন খ্রীষ্টানকে ৪০ দিন এবং ৪০ রাত্রি অনাহারে রাখা হইলে তিনি কি জীবিত থাকিতে পারেন?

    এতদ্বারা প্রমাণিত হইল যে, ঈশা ঈশ্বরের পুত্র নহেন এবং তাঁহার কোন অলৌকিক শক্তি ছিল না, নতুবা তিনি শয়তানের সম্মুখে প্রস্তরকে রুটিতে পরিণত করিলেন না কেন? নিজেই বা

    অনাহারে রহিলেন কেন? অতএব সিদ্ধান্ত এই যে, পরমেশ্বর নির্মিত প্রস্তরকে কেহই রুটিতে পরিণত করিতে পারে না; ঈশ্বর নিজেও তাঁহার পূর্বকৃত নিয়ম পরিবর্তন করিতে পারেন না; কারণ তিনি সর্বজ্ঞ এবং তাহার সকল কার্য্য ভ্ৰম-প্রমাদ রহিত ॥ ৬৪ ॥

    ৬৫।”তিনি তাহাদের সকলকে কহিলেন, আমার পশ্চাতে আইস। মনুষ্য ধরিতে পারিবে। আর তখনই তাহারা জাল পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার পশ্চাগামী হইলেন ॥ ”

    সমীক্ষক –এতদ্বারা তৌরেতে (প্রাচীন বাইবেলে) পাপের উল্লেখ করিয়া দশ আজ্ঞায় লিখিত আছে যে, সন্তানগণ তাহারা মাতা-পিতার সেবা ও মান্য করিবে, যাহাতে তাহাদের আয়ু বৃদ্ধি হয় না করার ফলে সন্তানদের আয়ুক্ষয় হইবে। ঈশা তাহার মাতা-পিতার সেবাও করেন নাই এবং অন্যকেও মাতা-পিতার সেবা পরিত্যাগ করাইয়াছেন। এই অপরাধের ফলে তিনি দীর্ঘজীবি হন নাই। এতদ্বারা জানা গেল যে, ঈশা জনসাধারণকে জালে আবদ্ধ করিবার জন্য মতবিশেষের প্রচার করিয়াছিলেন। তিনি ভাবিয়াছিলেন যে, তিনি সকলকে মৎস্যের ন্যায় তাহার মতজালে আবদ্ধ করিয়া স্বার্থসিদ্ধি করিবেন। স্বয়ং ঈশা যখন এইরূপ ছিলেন, তখন আধুনিক পাদ্রীগণ যে জনসাধারণকে তাঁহাদের জালে আবদ্ধ করিবেন, তাহাতে আশ্চর্য কী? কারণ যেমন অনেক বৃহৎ বৃহৎ মৎস জালে ধরিতে পারিলে ধীবরের যশ এবং উত্তম জীবিকা লাভ হয়, সেইরূপ বহু লোককে স্বমতে আনয়ন করিতে পারিলে পাদ্রিগণের বিশেষ সম্মান এবং জীবিকালাভ হইয়া থাকে।

    যে সকল লোক সরল প্রকৃতির এবং যাহারা বেদাদি শাস্ত্র অধ্যয়ন ও শ্রবণ করে নাই, পাদ্রিগণ তাহাদিগকে জালবদ্ধ করিয়া তাহাদের মাতাপিতা এবং আত্মীয় স্বজন হইতে বিচ্ছিন্ন করেন। অতএব স্বয়ং পাদ্রীদের ভ্রমজাল হইতে নিরাপদ থাকা এবং নির্বোধ ভ্রাতৃগণকেও নিরাপদে রাখিতে যত্নবান হওয়া বিদ্বান্ আৰ্যদের কর্তব্য ৬৫ ॥

    ৬৬। “পরে যীশু সমুদয় গালীলদেশে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন। তিনি লোকদের সভায় উপদেশ দিলেন, রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিলেন, বিভিন্ন রোগগ্রস্ত রোগী, দুঃখক্লিষ্ট, ভূতগ্রস্ত, মৃগীরোগগ্রস্ত ও অর্ধাঙ্গ রোগীকে তাঁহার নিকট আনা হইয়াছিল। তিনি রোগী লোকদের সর্বপ্রকার রোগ ও সর্বপ্রকার পীড়া নিরাময় করিলেন।”ই মথি০ প০ ॥ আ০ ২৩।২৫ ॥ ৷

    সমীক্ষক –মন্ত্র, পুনশ্চরণ, আশীর্বাদ, বীজ এবং ভস্মের ফোঁটা দিয়া ভূত বিতাড়ন ও রোগনিরাময় প্রভৃতি পোপলীলা সত্য হইলে, নব্য বাইবেলের ঘটনাগুলিও সত্য। এই যুক্তি অনুসারে নির্বোধ লোকদিগকে বিভ্রান্ত করিবার জন্য এ সকল বিষয় লেখা হইয়াছে। সুতরাং এ সম্বন্ধে ঈশার সহিত পোপদের সাদৃশ্য আছে। যদি খ্রীষ্টানগণ ঈশার বাক্যে বিশ্বাস করেন, তবে তাহারা। এখানকার দেব-দেবীপূজক পোপদের বাক্য বিশ্বাস করেন না কেন? ॥৬৬ ॥

    ৬৭। “ধন্য তাহারা যাঁহারা মনে দীন, কারণ স্বর্গরাজ্য তাহাদেরই কেননা আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যে পর্যন্ত আকাশ ও পৃথিবী লুপ্ত না হইবে, সে পর্যন্ত ব্যবস্থার এক মাত্রা তো কী, এক বিন্দুও লুপ্ত হইবে না, সমস্তই সফল হইবে। অতএব যে কেহ এই সকল অতি ক্ষুদ্র আজ্ঞার মধ্যে যে কোন একটি আজ্ঞা লঙ্ঘন করে ও জনগণকে সেইরূপ শিক্ষা দেয়, তাহাকে স্বর্গরাজ্যে।

    অতি ক্ষুদ্র বলা যাইবে। ই০ মথি প০ ৫ ॥ আ০ ৩১৮,১৯ ॥

    সমীক্ষক –যদি স্বর্গ একটি মাত্রই থাকে, তাহা হইলে রাজাও একজন মাত্রই থাকা উচিত। যত দীন আছে, তাহারা যদি সকলেই স্বর্গে যায় তাহা হইলে স্বর্গে তাহাদের মধ্যে কে রাজা হইবে? এ বিষয় লইয়া তাহারা পরস্পর কলহ বিবাদ করিবে, তাহাতে রাজ্যব্যবস্থা ছিন্নভিন্ন হইয়া যাইবে। দীন শব্দের কাঙ্গাল অর্থ গ্রহণ করা সঙ্গত নহে। দীন শব্দের অর্থ নিরহঙ্কারী ইহাও সঙ্গত নহে, কারণ দীন এবং নিরহঙ্কার একার্থবোধক নহে। যে ব্যক্তি মনে দীন, তাহার সন্তোষ কখনও হয় না। অতএব এই অর্থও যুক্তিবিরুদ্ধ।

    যখন আকাশ এবং পৃথিবী টলিবে তখন বিধানও টলিবে –এইরূপ অনিত্য ব্যবস্থা মনুষ্যের হইতে পারে, সর্বজ্ঞ পরমেশ্বরের নহে। এইরূপ ভয় এবং প্রলোভন প্রদর্শন করা হইয়াছে যে, যে ব্যক্তি এ সকল আদেশ মান্য করিবে না, সে স্বর্গে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট বলিয়া পরিগণিত হইবে ৷৬৭ ॥

    ৬৮। আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য আজ আমাদিগকে দাও। তোমরা পৃথিবীতে নিজেদের জন্য ধন সঞ্চয় করিও না। ই ম০ প০ ৬। আ০ ১১১৯ ॥

    সমীক্ষক –এতদ্বারা জানা যাইতেছে যে, যে সময়ে যীশুর জন্ম হয়, সে সময়ে জনসাধারণ বন্য ও দরিদ্র অবস্থায় ছিল এবং যীশু নিজেও দরিদ্র ছিলেন। সেইজন্য তিনি প্রতিদিনের রুটির জন্য ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিতেন এবং সেইরূপ উপদেশ দিতেন। তাহা হইলে খ্রীষ্টানগণ ধন সঞ্চয় করিবেন কেন? যীশুর উপদেশ অমান্য না করিয়া পুণ্যসঞ্চয় করা এবং দীন হওয়া তাহাদের কৰ্ত্তব্য ॥ ৬৫ ॥

    ৬৯। “যাঁহারা আমাকে ‘হে প্রভু’ ‘হে প্রভু’ বলে, তাহারা স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করিবে না।”

    ই০ ম০ প০ ৭। আ০ ২১ ৷ সমীক্ষক — এখন ভাবিয়া দেখুন। যদি প্রধান ধর্মযাজক বিশপ এবং খ্রীষ্টানগণ মনে করেন যে, যীশু এস্থলে যাহা বলিয়াছেন তাহা সত্য, তাহা হইলে ঈশাকে প্রভু অর্থাৎ ঈশ্বর বলা তাহাদের উচিত নহে। এই উপদেশ লঙ্ঘন করিলে তাহারা পাপী হইবেন ৷৬৯ ॥

    ৭০। “সেই দিন অনেকে আমাকে বলিবে, তখন আমি তাহাদিগকে স্পষ্টই বলিব, আমি কখনও তোমাদিগকে জানি না; হে অধর্মাচারীরা, আমার নিকট হইতে তোমরা দূর হও।” ই০ ম০ প০ ৭। আ০ ২২,২৩ ॥

    সমীক্ষক –দেখুন! যীশু বন্য মনুষ্যদের বিশ্বাস উৎপাদনের জন্য স্বর্গের বিচারপতি সাজিতে চাহিতেছেন। কেবল নির্বোধ মনুষ্যদিগকে প্রলুব্ধ করাই তাঁহার উদ্দেশ্য ॥ ৭০ ॥

    ৭১। “আর দেখ, একজন কুষ্ঠ রোগী নিকটে আসিয়া তাহাকে প্রণাম করিয়া কহিল। –‘হে প্রভু, যদি আপনার ইচ্ছা হয়, আমাকে শুচি করিতে পারেন।’ তখন তিনি হাত বাড়াইয়া তাহাকে স্পর্শ করিলেন, ‘আমার ইচ্ছা তুমি শুচি হও’; আর তখনই সে কুষ্ঠরোগ হইতে শুচি হইল ॥” ই০ ম০ প০ ৮। আ০ ২, ৩ ॥

    সমীক্ষক — কেবল নির্বোধ মনুষ্যদিগকে আবদ্ধ করিবার জন্য এসকল বলা হইয়াছে। যদি খ্রীষ্টানগণ এ সকল বিদ্যা ও সৃষ্টিক্রম বিরুদ্ধ কথা সত্য বলিয়া বিশ্বাস করেন, তাহা হইলে শুক্রাচার্য্য, ধন্বন্তরি এবং কশ্যপ প্রভৃতির আখ্যায়িকা মিথ্যা বলিবার কারণ কী? পুরাণ এবং মহাভারতে বর্ণিত হইয়াছে যে, দৈত্যদের বহু মৃত সৈন্যকে পুনর্জীবিত করা হইয়াছিল। বৃহস্পতির পুত্র কচকে খণ্ড খণ্ড করিয়া পশু, মৎস্য দ্বারা ভক্ষণ করান হইয়াছিল। তাহা সত্ত্বেও শুক্রাচাৰ্য্য তাহাকে উদরমধ্যে পুনর্জীবিত করিয়া বহির্গত করেন। শুক্রাচার্য্য স্বয়ং নিহত হন; কিন্তু কচ তাহাকে পুনর্জীবিত করেন। কশ্যপ ঋষি তক্ষক কর্তৃক ভস্মীভূত মনুষ্য এবং বৃক্ষকে পুনজ্জীবিত করেন। ধন্বন্তরি লক্ষ লক্ষ মৃতকে পুনর্জীবিত, লক্ষ লক্ষ কুষ্ঠরোগীকে রোগমুক্ত এবং লক্ষ লক্ষ অন্ধকে চক্ষুদান ও বধিরকে শ্রবণশক্তি দান করেন।

    এ সমস্ত ঘটনা মিথ্যা বলিবার কারণ কী? অপরের বাক্যকে মিথ্যা, আর নিজের মিথ্যাকে সত্য প্রতিপন্ন করা হঠকারিতা নহে তো কী? অতএব আলৌকিক ঘটনা সম্বন্ধে খ্রীষ্টানদের উক্তি হঠকারিতাপূর্ণ এবং বালকোচিত ৷৭১।

    ৭২। “তখন দুইজন ভূতগ্রস্ত লোকেরা কবরস্থানে হইতে বাহির হইয়া তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইল; তাহারা এত বড় দুর্দান্ত ছিল যে, ঐ পথ দিয়া কেহই যাইতে পারিত না। আর দেখ, তাহারা। চেঁচাইয়া বলিল, –“হে ঈশ্বরের পুত্র যীশু। আপনার সহিত আমাদের কাজ কী? আপনি কি নিরুপিত সময়ের পূর্বেই আমাদিগকে যাতনা দিতে এখানে আসিলেন?”

    “এইরূপ ভূতেরা বিনয় করিয়া তাহাকে কহিল, যদি আমাদিগকে ছাড়াইবেন মনে করেন, তাহা হইলে ঐ শূকরপালে পাঠাইয়া দিন”। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, “চলিয়া যাও”। তখন তাহারা বাহির হইয়া সেই শূকরপালে প্রবেশ করিল। আর দেখ, সমুদয় শূকর মহাবেগে ঢালু পাড় দিয়া দৌড়িয়া গিয়া সমুদ্রে পড়িল ও জলে ডুবিয়া মরিল। ই০ ম০ প০ ৮২৮-৩২ ॥

    সমীক্ষক –ভাল, এ স্থলে একটু চিন্তা করিলেই এ সকল কথা মিথ্যা বলিয়া প্রতিপন্ন হইবে। কারণ কোন মৃত ব্যক্তি কখনও কবর হইতে বাহিরে আসিতে পারে না, কাহারও নিকট যায় না, কাহারও সহিত কথোপকথনও করে না। অজ্ঞ লোকেরাই এ সকল কথা বলে এবং নিতন্ত বন্য লোকেরাই এ সকল কথা বিশ্বাস করে।

    শূকরগুলিকে হত্যা করাইয়া শূকর পালকদিগকে ক্ষতিগ্রস্ত করায় ঈশা পাপী হইয়া থাকিবেন। খ্রীষ্টানদের বিশ্বাস ঈশা পাপের ক্ষমাকারী এবং তিনি সকলকে পবিত্রও করেন। তবে তিনি ভূতগুলিকে পবিত্র করিতে পারিলেন না কেন? আর তিনি শূকর পালদিগকে ক্ষতিপূরণ দিলেন না কেন?

    আধুনিক সুশিক্ষিত খ্রীষ্টান ইংরাজগণও কি এ সকল অলীক গল্প বিশ্বাস করেন? যদি বিশ্বাস করেন, তবে তাহারাও ভ্রমজালে পতিত রহিয়াছেন ৷৭২ ॥

    ৭৩। “দেখ, কয়েকটি লোক তাহার নিকটে এক জন পক্ষাঘাতরোগীকে আনিল, সে খাটের উপরে শায়িত ছিল। যীশু তাহাদের বিশ্বাস দেখিয়া সেই পক্ষাঘাতরোগীকে কহিলেন, –“বৎস, সাহস কর, তোমার পাপের ক্ষমা করা হইল। কেননা, আমি ধার্মিকদিগকে নয়, কিন্তু পাপীদিগকে পশ্চাত্তাপের জন্য ডাকিতে আসিয়াছি।” ই ম প ৯। ২।১৩।

    সমীক্ষক –পূর্বোক্ত অন্যান্য বিষয়ের ন্যায় ইহাও অসম্ভব। কেবল মূঢ়দিগকে প্রলোভন দেখাইয়া জালে আবদ্ধ করিবার জন্য বলা হইয়াছে যে, ঈশা পাপ ক্ষমা করেন। এক ব্যক্তি মদ্যপান, ভাঙ ও অহিফেন সেবন করিলে, যেমন অপর ব্যক্তির নেশা হয় না, সেইরূপ একের কৃতপাপ অপরের নিকট যাইতে পারে না, পাপকারীই পাপের ফল ভোগ করে। ইহাই ঈশ্বরের। ন্যায়কারিতা। একের পাপপূণ্য অন্যে প্রাপ্ত হইলে, কিংবা বিচারপতি স্বয়ং গ্রহণ করিলে, অথবা কর্মকর্তাকে যথাযোগ্য ফল দেওয়া না হইলে ঈশ্বর অন্যায়কারী হইয়া পড়েন।

    দেখুন, ধর্মই একমাত্র কল্যাণকারী, ঈশা কিংবা অপর কেহ কল্যাণকারী নহেন। ধর্মাত্মা বা পাপীদের জন্য ঈশার বা অপর কাহারও প্রয়োজন নাই, কারণ কাহারও পাপ ভোগ ব্যতীত খণ্ডন। হইতে পারে না ॥৭০ ॥

    ৭৪। “যীশু আপনার বার জন শিষ্যকে নিকটে ডাকিয়া তাঁহাদিগকে অশুচি আত্মাদের উপরে ক্ষমতা দিলেন, যেন তাহারা তাহাদিগকে বাহির করিতে পারেন এবং সর্বপ্রকার রোগ ও ব্যাধি আরোগ্য করিতে পারেন। তোমরা কথা বলিবে এমন নয়, কিন্তু তোমাদের পিতার যে আত্মা তোমাদের অন্তরে কথা কহেন তিনিই বলিবেন। মনে করিও না যে, আমি পৃথিবীতে মিলন করাইতে আসিয়াছি আমি খড়গ চালাইতে আসিয়াছি। আমি পিতা হইতে পুত্রের, মাতা হইতে কন্যার এবং শাশুড়ী হইতে পুত্রবধূর বিচ্ছেদ ঘটাইতে আসিয়াছি। আপন পরিজনই মনুষ্যের শত্রু হইবে।” ইং ম০ প০ ১৭। আ০ ১।২০৩৪-৩৬ ॥

    সমীক্ষক –এই সকল শিষ্যের মধ্যেই কেবল এক জন মাত্র ৩০.০০ টাকার লোভে ঈশাকে ধরাইয়া দিবে এবং অন্যেরা মত পরিবর্তন করিয়া ছিন্ন বিচ্ছিন্নভাবে পলায়ন করিবে। ভাল, ভূতের যাতায়াত এবং ঔষধ বা পণ্য ব্যতীত রোগ দূর করা ইত্যাদি বিজ্ঞান বিরুদ্ধ কথা এবং এ সব সৃষ্টি ক্রমানুসারে অসম্ভব। অজ্ঞানীরাই এ সকল বিশ্বাস করে।

    যদি জীব বক্তা না হয়, জীবের মধ্যে ঈশ্বরই কথা বলেন, তাহা হইলে জীবের প্রয়োজন কী? তবে কি ঈশ্বরকেই সত্যভাষণের ফল সুখ এবং মিথ্যা ভাষণের ফল দুঃখ ভোগ করিতে হয়? ইহাও মিথ্যা।

    ঈশা বিভেদ ঘটাইবার এবং বিবাদ বাধাইবার জন্য আসিয়াছিলেন। আজ কালও জনসাধারণের মধ্যে সেই কলহ বিবাদ চলিতেছে। পরস্পরের মধ্যে অনৈক্য আনয়ন করা অত্যন্ত গর্হিত কাৰ্য্য। তাহাতে মনুষ্যগণ নিদারুণ দুঃখ ভোগ করেন। কিন্তু খ্রীষ্টানগণ যেন কলহ-বিবাদ সৃষ্টি করাকেই গুরুমন্ত্র করিয়া লইয়াছেন। ঈশা যখন নিজেই জনসাধারণের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করা উত্তম করেন, তখন খ্রীষ্টানগণ তাহা করিবেন না কেন? ঈশাই পরিবারস্থ লোকদিগকে পরস্পর শত্রুভাবাপন্ন করিতে পারেন, কিন্তু এরূপ করা কোন শ্রেষ্ঠ পুরুষের কাৰ্য্য নহে।৭৪ ॥

    ৭৫। যীশু তাহাদিগকে বলিলেন, তোমাদের কয়টি রুটি আছে? তাহারা কহিলেন, সাত খানা আর কয়েকটি ছোট মাছ আছে। তখন তিনি সকলকে ভূমিতে বসিতে আদেশ দিলেন। পরে তিনি সেই সাত খানা রুটি ও সেই কয়টি মাছ লইলেন, ধন্যবাদ পূর্বক টুকরা করিলেন এবং শিষ্যদিগকে দিলেন, শিষ্যেরা সকলকে দিলেন। তখন সকলে আহার করিয়া তৃপ্ত হইল এবং যে সকল গুড়াগুড়ি অবশিষ্ট রহিল, উহার পূর্ণ সাত ঝুড়ি তাহারা উঠাইয়া লইলেন। যাহারা। আহার করিয়াছিল, তাহারা স্ত্রী ও শিশু ছাড়া চারি সহস্র পুরুষ। ই ম০ প০ ১৫। আ০ ৩৪। ৩৫। ৩৬। ৩৭ । ৩৮ ॥

    সমীক্ষক –এখন দেখুন! ইনি আধুনিক ভণ্ড সিদ্ধপুরুষ এবং যাদুকরের ভেল্কির ন্যায় ছলনা করেন কি না? ঐ সকল রুটির মধ্যে অন্য রুটি কোথা হইতে আসিল? ঈশার এরূপ আলৌকিক শক্তি থাকিলে, তিনি স্বয়ং অনাহারে থাকিয়া ডুমুর ফল ভক্ষণ করিবার জন্য ঘুরিয়া বেড়াইবেন। কেন? মৃত্তিকা, জল এবং প্রস্তরাদি হইতে নিজেদের জন্য রুটী এবং মোহন ভোগ প্রস্তুত করিয়া লইলেন না কেন? বাস্তবিক পক্ষে এ সকল ছেলেখেলার ন্যায় দেখাইতেছে। বহু সাধু বৈরাগী এইরূপ ছলনা দ্বারা নির্বোধ লোকদিগকে প্রতারিত করে ॥ ৭৫ ॥

    ৭৬। “আর তখন তিনি প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাহার ক্রিয়ানুসারে ফল দিবেন ॥ ” ই০ ম০ প০ ১৬। আ০ ২৭ ॥

    সমীক্ষক –যদি কর্মানুসারেই ফল দেওয়া হয়, তাহা হইলে খ্রীষ্টানদের পাপক্ষমা বিষয়ক উপদেশ বৃথা। আবার পাপক্ষমা সত্য হইলে কর্মানুসারে ফলদান মিথ্যা। যদি কেহ বলেন যে, যে ব্যক্তি ক্ষমার যোগ্য, তাহাকেই ক্ষমা করা হয়, যে ব্যক্তি ক্ষমার অযোগ্য, তাহাকে ক্ষমা করা হয় না; তাহা হইলে তাহাও যুক্তিসঙ্গত নহে। কারণ সকল কর্মের যথাযোগ্য ফলদান করাতেই ন্যায় এবং পূর্ণ দয়া করা হয় ॥৭৬ ॥

    ৭৭। হে অবিশ্বাসী ও বিপথগামী মনুষ্যগণ। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যদি তোমাদের একটি রাই দানার ন্যায় বিশ্বাসও থাকে, তবে তোমরা এই পর্বর্তকেও যদি বল, ‘এখন হইতে ঐখানে সরিয়া যাও, তবে উহা সরিয়া যাইবে এবং তোমাদের অসাধ্য কিছুই থাকিবে না। ই ০ ম০ প০ ১৭। আ০ ১৭, ২০ ॥

    সমীক্ষক –আজকাল খ্রীষ্টানগণ এইরূপ উপদেশ দিয়া থাকেন, –“আমাদের ধর্মে আইস, পাপ ক্ষমা করাইয়া লহ, মুক্তিলাভ কর” ইত্যাদি। তাঁহাদের ঐ সকল উপদেশ মিথ্যা। ঈশার যদি পাপখণ্ডন এবং মনুষ্যকে বিশ্বাসী এবং পবিত্র করিবার সামর্থ্য থাকিত, তাহা হইলে তিনি তাহাদের শিষ্যদের আত্মাকে নিষ্পাপ, বিশ্বাসী এবং পবিত্র করেন নাই কেন? যখন তাহার শিষ্যগণ তাঁহার সহিত ভ্রমণ করিত তখনও তিনি তাহাদিগকে পবিত্র বিশ্বাসী এবং শুভগুণান্বিত করিতে পারেন নাই। কে জানে মৃত্যুর পর তিনি কোথায় আছেন? এখন তো তিনি কাহাকেও পবিত্র করিতে পারিবেন না।

    তাহার শিষ্যদিগের মনে এক রাই কণিকা পরিমাণও বিশ্বাস ছিল না; কিন্তু তাহারই নব্য বাইবেল রচনা করিয়াছিলেন। সুতরাং এই গ্রন্থ প্রামাণিক হইতে পারে না। যাঁহারা কল্যাণকামী, তাঁহারা কোন অবিশ্বাসী, অপবিত্ৰাত্মা এবং অধার্মিক লোকের লিখিত গ্রন্থ বিশ্বাস করিতে পারে না। এতদ্বারা ইহাও সিদ্ধ হইতে পারে যে, ঈশার বাক্য সত্য হইলে কোন খৃষ্টানদের মনে এক রাই (সরিষা) কণিকা পরিমাণ বিশ্বাস অর্থাৎ ধর্মজ্ঞান নাই।

    যদি কেহ বলেন, “আমার সম্পূর্ণ কিংবা অল্প বিশ্বাস আছে, তবে তাঁহাকে বলিতে হইবে, “আপনি এই পর্বর্তকে স্থানান্তরিত করুন। যদি তিনি তাহা করিতে সমর্থ হন, তাহা হইলেও বুঝিতে হইবে যে, তাহার পূর্ণ বিশ্বাস নাই; মাত্র এক রাই কণিকা পরিমাণ বিশ্বাস আছে। তিনি যদি পর্বত অপসারিত করিতে অসমর্থ হন, তাহা হইলেও বুঝিত হইবে যে, তাহার মনে বিশ্বাসের বা ধর্মের লেশমাত্রও নাই।

    যদি কেহ বলেন যে, এ স্থলে আত্মাভিমান প্রভৃতি দুগুণকে রূপক অর্থে পর্বত বলা হইয়াছে। তবে তাহাও সঙ্গত নহে। কারণ তাহা হইলে মৃতদেহে জীবন সঞ্চার, অন্ধ, কুষ্ঠরোগী এবং ভূতগ্রস্তের আরোগ্যবিধান প্রভৃতিকেও সেইরূপ অলসের আলস্য, জ্ঞানান্ধের জ্ঞানান্ধতা, বিষয়াসক্তের বিষয়লালসা এবং ভ্রান্তিনিবারণ বলা যাইতে পারে। কিন্তু এই ব্যাখ্যাও যুক্তিযুক্ত নহে, কারণ তাহা সত্য হইলে ঈশা তাহার শিষ্যদের সম্বন্ধে এ সকল কাৰ্য্য করিতে পারেন নাই। কেন? অতএব অসম্ভব কথা বলায় ঈশার অজ্ঞানতাই প্রকাশ পাইতেছে ॥

    যদি ঈশার যৎসামান্য বিদ্যাও থাকিত তাহা হইলে তিনি বন্য মনুষ্যের ন্যায় এ সকল নিরর্থক বাক্য বলিতেন না। তবে কিনা, “য়ত্র দেশে মো নাস্তি তত্রৈ এরণ্ডোপি দ্রুমায়তে” যে দেশে বৃক্ষ নাই, সে দেশে এরন্ড বৃক্ষই উৎকৃষ্ট ও শ্রেষ্ঠ বৃক্ষরূপে গণ্য হয়। সেইরূপ নিত্যন্ত বন্য প্রকৃতি মূর্খদের দেশে ঈশাও সম্ভবতঃ শ্রেষ্ঠ পুরুষ ছিলেন। কিন্তু আজকাল শিক্ষিত ও বিদ্বৎসমাজে ঈশার স্থান কোথায়? ॥৭৭ ॥

    ৭৮। “আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমরা যদি মন না ফিরাও শিশুদের ন্যায় না হইয়া উঠ, তবে কোনও মতেই স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করিতে পারিবে না৷” ॥ই ম০ প০ ১৮। আ০ ৩ ॥

    সমীক্ষক –যদি স্বেচ্ছাকৃত মানসিক পরিবর্তন স্বর্গের এবং তদ্বিরুদ্ধ মনোভাব নরকের কারণ। হয়, তাহা হইলে সিদ্ধ হইতেছে যে, কেহ কাহারও পাপ-পুণ্য কখনও গ্রহণ করিতে পারে না। আর শিশুদের ন্যায় হইবার যে উপদেশ লিখিত আছে তাহাতে জানা যাইতেছে যে, ঈশার বাক্য সম্পূর্ণরূপে। বিজ্ঞান ও সৃষ্টিক্রমের বিরুদ্ধ! ঈশা হয়তো ইহাও ভাবিয়া থাকিবেন যে সকলে শিশুর ন্যায় বিনাশ্রমে চক্ষু বুজিয়া তাহার বাক্য বিশ্বাস করুক।

    খৃষ্টানদের মধ্যে এরূপ বাল-বুদ্ধির ন্যায় কার্য করা বহু লোক আছে; বিদ্যাহীন বালবুদ্ধি না হইলে তাহারা এ সকল যুক্তি ও বিজ্ঞান বিরুদ্ধ কথা বিশ্বাস করিবেন কেন? ইহাও বুঝা যাইতেছে যে ঈশা স্বয়ং বিদ্যাহীন এবং বাল, বুদ্ধি ছিলেন; নতুবা তিনি অপরকে শিশুর ন্যায় হইতে উপদেশ দিবেন কেন? যিনি নিজে যেরূপ, অপরেও সেইরূপ হউক ইহাই তাহার ইচ্ছা ॥৭৮ ॥

    ৭৯। “আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, ধনবানের পক্ষে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করা দুষ্কর। আবার তোমাদিগকে কহিতেছি, ঈশ্বরের রাজ্যে ধনবানের প্রবেশ করা অপেক্ষা বরং সূচীর ছিদ্র দিয়া উটের যাওয়া সহজ ॥” ই ম০ প০ ১৯। আ০ ২৩, ২৪ ॥

    সমীক্ষক –এতদ্বারা সিদ্ধ হইতেছে যে, ঈশা নিত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন। বোধ হয় ধনাঢ্যগণ তাঁহাকে সম্মান করিতেন না; তাই তিনি এইরূপ বলিয়াছেন। কিন্তু তাহার উপদেশ সত্য নহে, কারণ ধনাঢ্য ও দরিদ্রের মধ্যে উত্তম ও অধম দুইই আছে। যে ব্যক্তি উত্তম কর্ম করে, সে উত্তম এবং যে ব্যক্তি অধম কর্ম করে, সে নিকৃষ্ট ফল লাভ করে।

    আর ইহাও সিদ্ধ হইতেছে যে, ঈশার বিশ্বাস অনুসারে ঈশ্বরের রাজ্য কোন নির্দিষ্ট স্থান বিশেষে অবস্থিত, উহা সর্বত্র ব্যাপ্ত নহে। তাহা হইলে, সেই ঈশ্বর যথার্থ ঈশ্বরই নহেন। যিনি যথার্থ ঈশ্বর তাঁহার রাজ্য সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত; তন্মধ্যে প্রবেশ করা অথবা না করার কথা বলা অজ্ঞতাসূচক।

    আবার এ স্থলে প্রশ্ন উঠিতেছে যে, ধনাঢ্য খ্রীষ্টানগণ কি সকলেই নরকে এবং দরিদ্র খ্রীষ্টানগণ কি সকলেই স্বর্গে যাইবেন? ঈশা একটু চিন্তা করিলেই বুঝিতে পারিতেন যে, ধনাঢ্যদিগের যে সঙ্গতি থাকে, দরিদ্রদিগের তাহা থাকে না। যদি ধনাঢ্যগণ বিচার পূর্বক ধর্মপথে অর্থব্যয় করেন, তাহা হইলে তাহারা উত্তম গতি লাভ করিতে পারেন কিন্তু দরিদ্রগণ হীন অবস্থাতেই নিপতিত থাকেন ॥৭৯ ॥

    ৮০। যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, –“আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমরা যতজন আমার অনুগামী হইয়াছ পুনঃ নূতন সৃষ্টিকালে যখন মনুষ্য-পুত্র আপন ঐশ্বর্য্যের সিংহাসনে বসিবে, তখন তোমরাও দ্বাদশ সিংহাসনে বসিয়া ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিচার করিবে। আর যে কোন ব্যক্তি আমার নামের জন্য গৃহ, ভ্রাতা, ভগিনী, পিতা, মাতা, সন্তান, বা ক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়াছে, সে তাহার শতগুণ পাইবে এবং অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবে”। ই০ ম০ প০ ১৯। আ০ ২৮, ২৯ ॥

    সমীক্ষক — এখন ঈশার মনের কথা বুঝুন। তাহার উদ্দেশ্য এই যে, তাহার মৃত্যুর পরেও কেহ তাহার জাল হইতে বহির্গত না হউক। যে ব্যক্তি ৩০,০০ টাকার লোভে তাহার গুরুকে ধরাইয়া দিয়া তাহার বধের কারণ হইয়াছিল, তাদৃশ পাপীও তাহার পার্শ্বে সিংহাসনে উপবেশন করিবে।

    ইস্রায়েল বংশীয়দের প্রতি পক্ষপাত বশতঃ ন্যায় বিচারই করিবে না পরন্তু তাহাদের সকল পাপ ক্ষমা করিবে এবং ইস্রায়েল ব্যতীত অপর বংশীয়দিগের বিচার করিবে। অনুমান হয় যে, এই কারণেই খ্রীষ্টানরা খ্রীষ্টানদের প্রতি বিশেষ পক্ষপাত করিয়া থাকেন। কোন শ্বেতাঙ্গ কোন কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যা করিলে, শ্বেতাঙ্গের প্রতি নানারূপ পক্ষপাত করা হয় এবং তাহাকে নিরপরাধ স্থির করিয়া মুক্তি দেওয়া হয়। স্বর্গে ঈশ্বরের ন্যায় বিচারও বোধ হয় এইরূপ।

    ইহাতে একটি গুরুতর দোষ উপস্থিত হয়। সৃষ্টির আদিতে এক জনের মৃত্যু ঘটিল। অপর জনের ‘কয়ামত’-র রাত্রে মৃত্যু ঘটিল; একজন আদি হইতে অন্ত পৰ্য্যন্ত বিচারের প্রতীক্ষায় পড়িয়া রহিল কিন্তু অপর ব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গেই বিচার হইয়া গেল। ইহা ভয়ানক অন্যায় নহে কি?

    আবার যে ব্যক্তি নরকে যাইবে, সে অনন্তকাল নরক ভোগ করিবে; কিন্তু যে ব্যক্তি স্বর্গে যাইবে, সে চিরকাল স্বর্গ ভোগ করিবে। ইহাও নিত্যন্ত অন্যায়; কারণ সীমাবদ্ধ কর্ম এবং সাধনের ফলও সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত।

    পুনশ্চ দুইজনের পাপপুণ্যও সমান হইতে পারে না। সুতরাং সুখ দুঃখের তারতম্য অনুসারে। ন্যূনাধিক সুখদুঃখ হয়। বহু স্বর্গ এবং বহু নরক থাকিলেই সুখ-দুঃখ ভোগ হইতে পারে। কিন্তু খ্রীষ্টিয় ধর্মশাস্ত্রের কোন স্থলে সেরূপ ব্যবস্থা নাই। অতএব এই গ্রন্থ ঈশ্বরকৃত নহে এবং ঈশাও কখনও ঈশ্বরের পুত্র হইতে পারেন না।

    একজন লোকের শত শত মাতাপিতা। বড়ই অনর্থের কথা। একজনের একই পিতা এবং একই মাতা থাকাই স্বাভাবিক। মুসলমান স্বর্গে একজন পুরুষের ৭২টি স্ত্রী লাভ হয় ইত্যাদি লিখিয়াছেন। অনুমান করা হইতেছে যে, তাঁহারা এ সকল ব্যাপার এই স্থল হইতেই গ্রহণ করিয়াছেন ॥ ৮০ ॥

    ৮১। “প্রাতঃকালে নগরে ফিরিয়া যাইবার সময়ে তিনি ক্ষুধিত হইলেন। পথের পার্শ্বে একটা ডুমুর গাছ দেখিয়া তিনি তাহার নিকটে গেলেন, কিন্তু তাহাতে পত্র ছাড়া আর কিছুই দেখিতে পাইলেন না। তখন তিনি গাছটিকে কহিলেন, আর কখনও তোমাতে ফল না ধরুক। ইহাতে হঠাৎ সেই ডুমুর গাছটা শুকাইয়া গেল।” ই০ ম০ প০ আ০ ১৮১৯ ॥

    সমীক্ষক –খ্রীষ্টান ধর্মর্যাজকগণ বলিয়া থাকেন যে, ঈশা নিত্যন্ত শান্ত-প্রকৃতি, শমগুণান্বিত এবং ক্রোধাদি দোষ রহিত ছিলেন। কিন্তু এই কথায় জানা যাইতেছে যে, তিনি ক্রুদ্ধস্বভাব, ঋতুজ্ঞানবিহীন এবং বন্য প্রকৃতির ছিলেন। ভাল, বৃক্ষ জড়পদার্থ; তিনি কোন অপরাধে উহাকে অভিশাপ দিলেন? অভিশাপের ফলে বৃক্ষটি তৎক্ষণাৎ শুষ্ক হইয়া গেল। বোধ হয় তাহার অভিশাপে উহা শুষ্ক হয় নাই; কাহারও দ্বারা ঔষধ প্রয়োগের ফলে বৃক্ষটির শুষ্ক হওয়া কিছুই আশ্চর্যনহে ॥ ৮১ ॥

    ৮২। “আর সেই সময়ের ক্লেশের পরেই সূৰ্য্য অন্ধকার হইবে, চন্দ্র জ্যোৎস্না দিবে না, আকাশ হইতে তারাগণের পতন হইবে ও আকাশ মণ্ডলের সেনা সকল বিচলিত হইবে।” ই০ ম০ প০ ২৪। আ০ ২৯ ॥

    সমীক্ষক –বাহবা! ঈশা কোন বিদ্যাবলে জানিতে পারিলেন আকাশ হইতে নক্ষত্র ভূতলে পতিত হয়? আকাশের কোন্ সেনাই বা বিচলিত হইবে? যদি ঈশার কিঞ্চিত্রও পড়াশুনা থাকিত, তবে তিনি নিশ্চয় জানিতেন যে, এই সকল তারা ভূমণ্ডলের ন্যায় এক একটি লোক সুতরাং ঐ সকলের পতন হওয়া অসম্ভব। ইহাতে জানা যাইতেছে যে, ঈশা সূত্রধরকূলে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, তিনি সর্বদা কাঠ কাটা, ছেদন, ভেদন এবং সংযোজন প্রভৃতিকার্যে নিযুক্ত থাকিতেন। তাহার মনে চিন্তার উদয় হইল, “আমিও এই বন্যদেশে পয়গম্বর হইতে পারিব।” অতঃপর তিনি উপদেশ দিতে লাগিলেন ॥

    ভাল মন্দ অনেক কথাই তাঁহার মুখ হইতে বহির্গত হইল। তথাকার বন্য লোকেরা তাঁহার । উপদেশ মানিয়া লইলেন। তদানীন্তন ইউরোপ আধুনিক ইউরোপের ন্যায় উন্নতিশীল থাকিলে, তাহার এ সকল অলৌকিক শক্তিপ্রদর্শন কিছুমাত্র সম্ভবপর হইত না। বর্তমান সময়ে ইউরোপীয়দের কিঞ্চিৎ বিদ্যোন্নতি হওয়া সত্ত্বেও তাঁহারা সুবিধাবাদ ও দুরাগ্রহ বশতঃ এই অসার মত পরিত্যাগ করিয়া সর্বতোভাবে সত্য বৈদিক ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হইতেছেন না; ইহাই তাহাদের ত্রুটি ॥৭৯ ॥

    ৮৩। “আকাশ ও পৃথিবীর নড়চড় হইবে, কিন্তু আমার বাক্যের নড়চড় কখনও হইবে না।” ই০ ম০ ২৪। আ০ ৩৫ ॥

    সমীক্ষক –ইহাতেও ঈশার অজ্ঞতা এবং মূর্খতা প্রকাশ পাইতেছে। ভাল, আকাশ নড়িয়া কোথায় যাইবে? আকাশ অতীব সূক্ষ্ম, উহা চক্ষুগোচর নহে, তাহা হইলে আকাশের অপসরণ কে দেখিতে পায়? তদ্ব্যতীত নিজ মুখে আত্মপ্রশংসা করা ভাল লোকের কাৰ্য্য নহে ॥ ৮৩ ॥

    ৮৪। “পরে তিনি বামদিকে অবস্থিত লোকদিগকে বলিলেন, ওহে শাপগ্রস্ত লোক সকল। আমার নিকট হইতে দূর হও, শয়তানের ও তাহার দূতগণের জন্য যে অগ্নি প্রস্তুত করা হইয়াছে, তাহাতে প্রবেশ কর”। ই০ ম০ প০ ২৫। আ০ ৪১ ॥

    সমীক্ষক –ভাল, নিজ শিষ্যদিগকে স্বর্গে প্রেরণ করা এবং অপর লোকদিগকে অগ্নিতে নিক্ষেপ করা কী ভয়ঙ্কর পক্ষপাতিত্ব। কিন্তু যখন আকাশই থাকিবে না, তখন অনন্ত অগ্নিনরক এবং স্বর্গ কোথায় থাকিবে?

    যদি ঈশ্বর শয়তানকে এবং তাহাদের দূতকে সৃষ্টি না করিতেন, তাহা হইলে তাহাকে নরকের জন্য এ সকল আয়োজন করিতে হইত না। একমাত্র শয়তানই ঈশ্বরকে ভয় করে না, তিনিই বা কেমন ঈশ্বর? শয়তান ঈশ্বরের দূত হওয়া সত্ত্বে তাঁহার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিল; তথাপি যে ঈশ্বর প্রথমেই তাহাকে ধরিয়া কারারুদ্ধ অথবা নিহত করিতে পারেন নাই, তাহার ঈশ্বরত্বই বা কীরূপ? শয়তান ঈশাকেও ৪০ দিন ধরিয়া নির্যাতন করিল, তথাপি ঈশা তাহার কিছুই করিতে পারিলেন না, সুতরাং ঈশ্বরের পুত্র হওয়া ব্যর্থ হইল। এইজন্য ঈশা ঈশ্বরের পুত্র নয় বাইবেলের ঈশ্বর-ঈশ্বর হইতে পারে না ॥ ৮৪ ॥

    ১৮৫। “তখন বার জন শিষ্যের মধ্যে একজন যাহাকে ঈস্করিয়োতী য়িহুদা বলা যায়, সে প্রধান যাজকের নিকটে গিয়া কহিল, –‘আমাকে কী দিতে চান বলুন, আমি যীশুকে আপনাদের হস্তে সমপর্ণ করিব।’ তাঁহারা তাহাকে ত্রিশ রৌপ্যখণ্ড দেওয়া ঠি করিলেন।” ই০ ম০ প০ ২৬। আ০ ১৪১৫ ॥

    সমীক্ষক –এখন দেখুন। এ স্থলে ঈশার সমস্ত অলৌকিকত্ব এবং ঈশ্বরত্বের পরিচয় পাওয়া গেল। তাহার প্রধান শিষ্য তাহার সাক্ষাৎ সংসর্গে থাকিয়াও পবিত্ৰাত্মা হইল না; তাহা হইলে ঈশা মৃত্যুর পর অপরকে কীরূপে পবিত্ৰাত্মা করিবেন? যাঁহারা ঈশা-বিশ্বাসী, তাহার উপর নির্ভর করিয়া কতই না প্রতারিত হইয়াছেন! যিনি সাক্ষাৎ সংসর্গে থাকিয়া শিষ্যদের কোনরূপ কল্যাণ করিতে পারিলেন না, তিনি মৃত্যুর পর কাহার কী কল্যাণ করিবেন? ॥ ৮৫ ॥

    ৮৬। যখন তাহারা ভোজন করিতেছিলেন, তখন যীশু রুটি লইয়া ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিলেন এবং শিষ্যদিগকে দিলেন আর কহিলেন– লও, ভোজন কর, ইহা আমার শরীর। পরে পানপাত্র লইয়া ধন্যবাদ পূর্বক তাহাদিগকে দিয়া কহিলেন –তোমরা সকলে ইহা পান কর। কারণ ইহা আমার নব বিধানের রক্ত। ই০ পর্ব ২৬। আ০ ২৬২৭।২৮ ॥

    সমীক্ষক — ভাল, জ্ঞানহীন বন্য মনুষ্য ব্যতীত কোন সভ্য মনুষ্য কি শিষ্যদের ভোজ্য বস্তুকে নিজের মাংস এবং পানীয় বস্তুকে রুধির বলিতে পারে? কিন্তু আধুনিক খ্রীষ্টানগণ ইহাকেই প্রভু ভোজন বলেন; অর্থাৎ তাহারা ঈশার মাংস এবং রুধিরের ভাবনা করিয়া ভোজ্য ও পানীয় গ্রহণ করিয়া থাকেন। ইহা কী জঘন্য ব্যাপার! যাঁহারা আপন গুরুর মাংস ভোজন ও রুধিরপানের ভাবনা পরিত্যাগ করিতে পারেন নাই, তাঁহারা কীরূপে অপর প্রাণীদের মাংস ভক্ষণ ও রুধির পান। পরিত্যাগ করিবেন? ॥৮৬ ॥

    ৮৭। পরে তিনি পিতাকে এবং জবদীর দুই পুত্রকে সঙ্গে লইয়া গেলেন, আর দুঃখাৰ্ত্ত ও ব্যাকুল হইতে লাগিলেন। তখন তিনি তাহাদিগকে কহিলেন; আমার প্রাণ দুঃখাৰ্ত্ত হইয়াছে। আমি মরিতে চলিয়াছি। তখন তিনি কিঞ্চিৎ অগ্রে উপুড় হইয়া পড়িয়া প্রার্থনা করিলেন, হে পিতঃ যদি সম্ভব হয়, তবে এই পানপাত্র আমার নিকট হইতে দূরে যাক। ই০ ম০ প০ ৩৭/৩৮ ৩৯ ॥

    সমীক্ষক –যদি ঈশা মনুষ্যের পরিবর্তে ঈশ্বরের পুত্র, ত্রিকালদর্শী ও বিদ্বান্ হইতেন তাহা হইলে এরূপ অশোভন কাৰ্য্য করিতেন না। এতদ্বারা স্পষ্টরূপে জানা যাইতেছে যে, ঈশা কিংবা । তাঁহার শিষ্যগণ এই মিথ্যা প্রপঞ্চ রচনা করিয়াছিলেন –তিনি ঈশ্বরের পুত্র, ভূত-ভবিষ্যৎবেত্তা এবং পাপক্ষমাকারী। বস্তুতঃ বুঝিতে হইবে,তিনি একজন সরলপ্রকৃতির সাধারণ অশিক্ষিত লোক ছিলেন; বিদ্বান্ যোগী কিংবা সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন না ॥৮৭ ॥

    ৮৮। তিনি যখন কথা কহিতেছেন, দেখা, সেই বার জনের একজন য়িহুদা আসিল এবং তাহার সঙ্গে বিস্তর লোক লাঠি ও খড়গ লইয়া প্রধান যাজকদের ও প্রাচীনবর্গের লোকদের নিকট হইতে আসিল। যে তাহাকে ধরিয়া দিতেছিল, সে তাহাদিগকে এই সঙ্কেত বলিয়াছিল, আমি যাহাকে চুম্বন করিব, সে ঐ ব্যক্তি,তোমরা তাহাকে ধরিবে। সে তখনই যীশুর নিকট গিয়া বলিল, ‘গুরুদেব প্রণাম’ আর তাহাকে আগ্রহ পূর্বক চুম্বন করিল ॥

    তখন তাহারা নিকটে আসিয়া যীশুর উপরে হস্তক্ষেপ করিয়া তাহাকে ধরিল।………তখন শিষ্যেরা সকলে তাহাতে পলাইয়া গেল।……… অবশেষে দুইজন মিথ্যা সাক্ষী আসিয়া বলিল, এই ব্যক্তি বলিয়াছিল, আমি ঈশ্বরের মন্দির ভাঙিয়া ফেলিয়া আবার তিন দিনের মধ্যে গাঁথিয়া তুলিতে পারি। তখন মহাযাজক উঠিয়া দাঁড়াইয়া তাহাকে কহিলেন –তুমি কিছুই উওর দিতেছ না? ইহারা তোমার বিরুদ্ধে কত কিছু সাক্ষ্য দিতেছে? কিন্তু যীশু নির্বাক্ রহিলেন। তখন মহাযাজক যীশুকে বলিলেন- আমি তোমাকে জীবন্ত ঈশ্বরের নামে দিব্য দিতেছি; আমাদিগকে বল দেখি, তুমি কি সেই খ্রীষ্ট ঈশ্বরের পুত্র’? যীশু উত্তর করিলেন, –তুমিই তো বলিয়া দিলে ॥

    তখন মহাযাজক আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া কহিলেন, এ ঈশ্বরের নিন্দা করিল, আমাদের আর সাক্ষীর প্রয়োজন কী? দেখ, এখন তোমরা ঈশ্বরের নিন্দা শুনিলে; তোমাদের কী বিবেচনা হয়? তাহারা উত্তরে কহিল, এ মারিবার যোগ্য। তখন তাহারা তাঁহার মুখে থুথু দিল ও তাহাকে ঘুষি। মারিল। আর কেহ তাহাকে চপেটাঘাত করিয়া কহিল,– রে খ্রীষ্ট! আমাদের কাছে ভবিষ্যৎ বাণী বল, কে তোকে মারিয়াছে।

    পিতর বাহির প্রাঙ্গনে বসিয়াছিলেন; আর একজন দাসী তাহার নিকট আসিয়া কহিল “তুমিও সেই গালীলীর যীশুর সঙ্গে ছিলে? তিনি সকলের সাক্ষাতে অস্বীকার করিয়া কহিলেন, –“তুমি কী বলিতেছ? আমি কিছুই বুঝিতে পারিলাম না। তিনি ফটকের নিকটে গেলে, আর এক দাসী তাঁহাকে দেখিয়া সে স্থানের লোকদিগকে কহিল, –এ ব্যক্তি সেই নাসরী যীশুর সঙ্গে ছিল।

    তিনি আবার অস্বীকার করিলেন, তিনি দিব্য করিয়া কহিলেন, –আমি সে ব্যক্তিকে চিনি না। তখন তিনি ধিক্কার দিয়া শপথ করিয়া বলিতে লাগিলেন, আমি সে ব্যক্তিকে চিনি না।” ই০ ম প০ ২৬। আ০ ৪৭ ৪৮ ৪৯ ৫০ ৬১ ৬২ ৬৩ ৬৪ ৬৫ ৬৬ ৬৭ ৬৮ ৬৯ ৭০ ৭১/৭২/৭৪।

    সমীক্ষক –এখন দেখুন! ঈশার এমন ক্ষমতা এবং প্রতিপত্তি ছিল না যদ্বারা তিনি শিষ্যদের মনে দৃঢ় বিশ্বাস উৎপাদন করিতে পারিবেন। তাহাকে লাভবশতঃ ধরাইয়া দেওয়া, অস্বীকার করা এবং মিথ্যা শপথ করার পরিবর্তে জীবন বিসর্জন দেওয়াই তাহার শিষ্যদের কর্তব্য ছিল।

    ঈশার কোন অলৌকিক শক্তি ছিল না। প্রাচীন বাইবেলে উক্ত হইয়াছে যে, লুতের গৃহে অতিথিদের বধ করিবার জন্য বহু লোক আক্রমণ করিয়াছিল। সেই স্থানে ঈশ্বরের দুইজন দূত ছিলেন; তাহারা তাহাদিগকে অন্ধ করিয়া দিলেন। যদিও ইহা একটি অসম্ভব গল্প, তথাপি ইহা হইতে জানা যায় যে, দূতগণের যে সামর্থ্য ছিল ঈশার তাহাও ছিল না।

    আজকাল খৃষ্টানগণ ঈশার অলৌকিক শক্তি সম্বন্ধে কতই না গর্ব করিয়া থাকেন। হায়রে! এইরূপ দুর্দশাগ্রস্ত হইয়া মরা অপেক্ষা স্বয়ং যুদ্ধ করিয়া বা যোগে সমাধিস্থ হইয়া কিংবা অন্য কোন রূপে মৃত্যুবরণ করাই উত্তম ছিল। কিন্তু বিদ্যা ব্যতীত সেইরূপবুদ্ধি কোথা হইতে আসিবে? ॥ ৮৮ ॥

    আবার ঈশা ইহাও বলিয়াছিলেন –

    ॥ ৮৯। “আমি এখন আমার পিতার কাছে মিনতি করিতেছি না। তিনি আমার জন্য দ্বাদশ বাহিনী অপেক্ষা অধিক স্বর্গদূত পাঠাইবেন না ॥ ”

    সমীক্ষক –তিনি ভীতি প্রদর্শন করিতেছেন, নিজের এবং পিতার দর্পও করিতেছেন; কিন্তু কিছুই করিতে পারিতেছেন না। দেখুন, কীরূপ আশ্চর্যের বিষয়! যখন মহাযাজক জিজ্ঞাসা করিলেন–এসকল লোক তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতেছে, তুমি ইহার উত্তর দাও। তখন ঈশা নীরব হইয়া রহিলেন। তিনি ইহা ভাল করেন নাই; সত্য প্রকাশ করা উচিত ছিল। তাহার পক্ষে এইরূপ অহঙ্কার করা উচিত ছিল না।

    আর তাহার হত্যাকারীদের পক্ষেও তাহার বিরুদ্ধে মিথ্যা দোষারোপ করিয়া তাহাকে হত্যা করা উচিত কাৰ্য্য হয় নাই। তাহারা যে অপরাধের জন্য তাহাকে অভিযুক্ত করিয়াছিল তাহার সে অপরাধ ছিল না। কিন্তু তাহারাও তো বন্য প্রকৃতির লোক ছিল; তাহারা ন্যায়বিচার কী বুঝিবে?

    যদি ঈশা অনর্থক নিজেকে ঈশ্বর পুত্র বলিয়া ছলনা না করিতেন এবং তাহারাও তাহার প্রতি এমন দুর্ব্যবহার না করিতেন, তাহা হইলে উভয় পক্ষেরই ভাল হইত। কিন্তু এত বিদ্যা ধর্ম ও ন্যায়পরায়ণতা ইহারা কোথায় পাইবে? ॥ ৮৯ ॥

    ৯০। “যীশুকে অধ্যক্ষের সম্মুখে দাঁড় করান হইল। অধ্যক্ষ তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলে, ‘তুমি কি ইহুদীদের রাজা’? যীশু তাঁহাকে বলিলেন– তুমিই বলিলে’। আর যখন প্রধান-প্রধান যাজকেরা ও প্রাচীন বর্গ তাহার উপরে দোষারোপ করিতেছিল, তিনি তখন তাহার কিছুই উত্তর দিলেন না।”

    “তখন পীলাত তাঁহাকে কহিলেন, –“তুমি কি শুনিতেছ না, উহারা তোমার বিপক্ষে কত বিষয় সাক্ষ্য দিতেছে। তিনি তাহার এক কথারও উত্তর দিলেন না, ইহাতে অধ্যক্ষ অতিশয় আশ্চৰ্য্য মনে করিলেন। পীলাত তাহাদিগকে বলিলেন যাহাকে খ্রীষ্ট বলে সেই যীশুকে কী করিব? তাহারা সকলে কহিল, –“উহাকে ক্রুশে দেওয়া হউক।’তিনি যীশুকে চাবুক মারিয়া ক্রুশে দিবার জন্য সমর্পণ করিলেন।”

    “তখন অধ্যক্ষের সেনাগণ যীশুকে রাজবাটীতে লইয়া গিয়া তাঁহার নিকটে সকল সেনাদল একত্র করিল। আর তাহারা তাহার বস্ত্র খুলিয়া লইয়া একখানি লোহিত বস্ত্র পরিধান করাইল। আর কাঁটার মুকুট গাঁথিয়া তাহার মস্তকে দিল ও তাহার দক্ষিণ হস্তে একটি নল দিল; পরে তাহার সম্মুখে জানু পাতিয়া, তাঁহাকে বিদ্রূপ করিয়া বলিল, –ইহুদী-রাজ, প্রণাম’! আর তাহারা তাহার গাত্রে থুথু দিল ও সেই নল লইয়া তাহার মস্তকে আঘাত করিতে লাগিল!

    আর তাহাকে বিদ্রূপ করিবার পর বস্ত্রখানি খুলিয়া ফেলিয়া তাহারা আবার নিজের বস্ত্র পরাইয়া। দিল এবং তাহাকে ক্রুশে দিবার জন্য লইয়া চলিল। পরে গথা নামক স্থানে,অর্থাৎ যাহাকে মাথার খুলির স্থান বলে, সেখানে উপস্থিত হইয়া তাহারা তাহাকে পিত্তমিশ্রিত দ্রাক্ষারস পান করিতে দিল; তিনি তাহা পান করিতে চাহিলেন না। তখন তাঁহাকে ক্রুশে উঠানো হইল। আর উহারা তাহার মস্তকের উপর তাহার বিরুদ্ধে তাঁহার দোষের কথা লিখিয়া লাগাইয়া দিল। তখন দুই জন্য দস্যু তাহার সঙ্গে ক্রুশ বিদ্ধ হইল, একজন দক্ষিণ পার্শে, আর একজন বাম পার্শে ॥

    তখন যে সকল লোক সেই পথ দিয়া যাতায়াত করিতেছিল, তাহারা মাথা নাড়িতে নাড়িতে তাঁহার নিন্দা করিয়া কহিল–ও হে, তুমি না মন্দির ভাঙিয়া ফেল, আর তিন দিনের মধ্যে গাঁথিয়া তুল! আপনাকে রক্ষা কর, যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, ক্রুশ হইতে নামিয়া আইস। সেইরূপ প্রধান যাজকেরা, অধ্যাপকগণের ও প্রাচীনবর্গের সহিত বিদ্রূপ করিয়া কহিল, –“ঐ ব্যক্তি অন্যান্য লোককে রক্ষা করিত, আপনাকে রক্ষা করিতে পারে না, ও তো ইস্রায়েলের রাজা। এখন ক্রুশ হইতে নামিয়া আসুক; তাহা হইলে আমরা উহার উপরে বিশ্বাস করিব; ও ঈশ্বরে ভরসা রাখে, আর ঈশ্বর উহাকে চান, এখন তিনি নিস্তার করুন, কেননা সে বলিয়াছে — ‘আমি ঈশ্বরের পুত্র। আর যে দুইজন দস্যু তাহার সঙ্গে ক্রুশে বিদ্ধ হইয়াছিল তাহারাও সেইরূপে তাঁহাকে তিরস্কার করিল। আর দ্বিপ্রহর হইতে তৃতীয় প্রহরের মধ্য সময়ে সমস্ত দেশ অন্ধকারে আচ্ছাদিত হইয়া গেল। তৃতীয় প্রহর সমীপ হইলে, যীশু উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া ডাকিয়া কহিলেন, — ‘এলী এলী লামা সবক্তানী’। অর্থাৎ ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ’? তাহাতে যাহারা সেখানে দাঁড়াইয়া ছিল, তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ শুনিয়া কহিল–এ ব্যক্তি এলিয়াকে ডাকিতেছে। আর তাহাদের মধ্যে একজন অমনি দৌড়িয়া গেল, একখানা স্পঞ্জ লইয়া তাহাতে দ্রাক্ষারস ভিজাইল, একটা নলে লাগাইয়া উহা তাঁহাকে পান করিতে দিল। পরে যীশু আবার উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া প্রাণত্যাগ করিলেন।” ই০ ম০ প০ ২৭। আ০ ১১-১৪, ২২-২৪, ২৬-৩১,৩৩-৩৭,৩৮-৪৮ ৫০

    সমীক্ষক –দুর্বত্তগণ ঈশার প্রতি সকল প্রকার দুর্ব্যবহার করিয়াছিল। কিন্তু ঈশারও দোষ ছিল। কারণ কেহই ঈশ্বরের পুত্র নহে, কাহারও পিতা নহেন। কাহারও পিতা হইতে হইলে, তাঁহাকে কাহারও শ্বশুর, কাহারও শ্যালক এবং কাহারও সম্বন্ধী ইত্যাদি হইতে হইবে।

    যখন অধ্যক্ষ জিজ্ঞাসা করিলেন, তখন তাঁহার সত্য বলাই উচিত ছিল। তাঁহার পূর্ব কথিত অলৌকিক কাৰ্য্যগুলি সত্য হইলে তিনি ক্রুশ হইতে অবতরণ করিয়া সকলকে শিষ্য করিয়া ফেলিতেন। তিনি যদি সত্যই ঈশ্বর পুত্র হইতেন, তাহা হইলে ঈশ্বরও তাঁহাকে রক্ষা করিতেন।

    তিনি ত্রিকালদর্শী হইলে, পিত্তমিশ্রিত দ্রাক্ষারস আস্বাদন করিয়া ছাড়িবেন কেন? পূর্বেই জানিতে পারিতেন। তিনি অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন হইলে এমন চীৎকার করিতে করিতে প্রাণত্যাগ করিবেন। কেন? সুতরাং জানা উচিত যে, যিনি যতই চতুর হউন না কেন, পরিণামে যাহা সত্য উহা সত্যই এবং যাহা মিথ্যা উহা মিথ্যাই হইয়া থাকে। আর ইহাও জানা গেল যে, ঐ সময়ে ঈশা বন্য মনুষ্যদের মধ্যে কিঞ্চিৎ উন্নত ছিলেন। তাহার অলৌকিক শক্তি ছিল না। ঈশ্বরের পুত্র এবং বিদ্বানও ছিলেন না। নতুবা তাহাকে এমন দুঃখ ভোগ করিতে হইবে কেন?

    ৯১। আর দেখ, মহাভূমিকম্প হইল, কেননা প্রভুর এক দূত নামিয়া আসিয়া সেই কবর দ্বার হইতে পাথরখানা সরাইয়া দিলেন এবং তাহার উপরে বসিলেন।…তিনি এখানে নাই? কেননা তিনি জীবিত হইয়া উঠিয়াছেন, যেমন বলিয়াছিলেন।…..শিষ্যদিগকে সংবাদ দিবার জন্য তাহারা দৌড়াইয়া গেলেন। আর দেখ, যীশু তাহার সম্মুখবর্তী হইলেন, কহিলেন,’ –তোমাদের মঙ্গল হউক”। তখন তাঁহারা নিকটে আসিয়া তাহার চরণ ধরিলেন ও তাহাকে প্রণাম করিলেন। তখন যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, –“ভয় করিও না; যাও, আমার ভ্রাতৃগণকে সংবাদ দাও, যেন তাহারা গালীলে যায়; সেইখানে তাহারা আমাকে দেখিতে পারিবে।

    পরে একাদশ শিষ্য গালীলে যীশুর নিরূপিত পর্বতে গমন করিলেন, আর তাহাকে দেখিয়া প্রণাম করিলেন; কিন্তু কেহ কেহ সন্দেহ করিলেন। তখন যীশু নিকটে আসিয়া তাঁহাদের সহিত কথা কহিলেন। বলিলেন, –“আমায় স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্তৃত্ব প্রদত্ত হইয়াছে। আর দেখ, আমি যুগান্তর পর্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গেই আছি ॥ ”। ই০ ম০ প০ ২৮। আ০ ২/৬৯১০১৬। ১৭১৮২০ ॥

    সমীক্ষক –ইহাও সৃষ্টিক্রম এবং বিজ্ঞান বিরুদ্ধ বলিয়া বিশ্বাসযোগ্য নহে। ঈশ্বরের দূত থাকা, তাহাদিগকে যত্র তত্র প্রেরণ করা এবং স্বর্গ হইতে তাহাদের অবতরণ ইত্যাদি বিবরণ দ্বারা ঈশ্বরকে কি ‘তহশীলদার’ অথবা কালেক্টার’সদৃশ করা হয় নাই?

    ঈশা কি সশরীরেই স্বর্গে গমন করিলেন? আবার মৃত্যুর পর তিনি কি পুনর্জীবিত হইয়া উঠিলেন? স্ত্রীলোকেরা তাহার চরণ স্পর্শ করিয়া প্রণাম করিলেন। তাহা হইলে তাহার কি তখন সেই শরীরই ছিল? সেই শরীর তো তিন দিন কবরের মধ্যে ছিল; তবে উহা পচে নাই কেন?

    নিজের মুখে ‘আমি সর্বাধিকারী হইয়াছি’ বলা আত্মম্ভরিতা মাত্র। কবর হইতে উত্থানের পর শিষ্যদের সহিত মিলিত হওয়া এবং তাহাদের সহিত কথোপকথন করা অসম্ভব। এ সকল সত্য হইলে, আজকালও কেহ কবর হইতে পুনর্জীবিত উত্থান করে না কেন? সশরীরের স্বর্গেই বা গমন করে না কেন? ॥ ৯১ ॥

    এই পর্যন্ত মথিলিখিত সুসমাচার বিষয়ে লিখিত হইল। অতঃপর মার্কলিখিত সুসমাচার সম্বন্ধে লিখিত হইতেছে ॥

    মার্ক লিখিত সুসমাচার

    ৯২। “একি সেই সূত্রধর নয়?” ই০ মার্ক প০ ৬। আ০ ৩ ॥

    সমীক্ষক –প্রকৃতপক্ষে য়ুসফ সূত্রধর ছিলেন, সুতরাং ঈশাও সূত্রধর ছিলেন। ঈশা কয়েক বৎসর সূত্রধরের কাৰ্য্য করিয়া পরে পয়গম্বর হইলেন এবং পয়গম্বর হইতে ঈশ্বরের পুত্র হইয়া পড়িলেন। বন্য মনুষ্যেরা তাঁহাকে ঈশ্বরের পুত্র বলিয়া বিশ্বাস করিল। সেই কারণেই তিনি অত্যন্ত চতুরতা দেখাইতে পারিয়াছিলেন; কিন্তু কাঠকাটা-কাঠ চিরাই করাই তাঁহার বৃত্তি ছিল ॥ ৮৯ ॥

    লুক লিখিত সুসমাচার

    ৯৩। “যীশু তাহাকে কহিলেন, –“আমাকে উত্তম বলিতেছ কেন? একজন ব্যতিরেকে উত্তম আর কেহ নাই, তিনি ঈশ্বর”। ই০ লুক০০ ১৮। আ০ ১৯

    সমীক্ষক — ঈশা যখন স্বয়ং বলিতেছেন যে, ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়, তাহা হইলে খ্রীষ্টানগণ পিতা, পুত্র এবং পবিত্ৰাত্মা–এই তিন কোথায় পাইলেন? ॥ ৯০ ॥

    ৯৪। “তখন তাহাকে হেরোদ এর নিকটে পাঠাইয়া দিলেন। যীশুকে দেখিয়া হেরোদ অতিশয় আনন্দিত হইলেন, কেননা তিনি তাহার বিষয় শুনিয়াছিলেন। এই জন্য অনেক দিন হইতে তাহাকে দেখিতে বাঞ্ছা করিয়াছিলেন এবং তাহার কৃত কোন অলৌকিক কাৰ্য্য দেখিবার আশা করিতে লাগিলেন। তিনি তাহাকে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করিলেন, কিন্তু যীশু তাহাকে কোন উত্তর দিলেন না ॥ ” ই০ লুক০ পর্ব ২৬। আ০ ৭। ৮ ॥ ৯ ॥

    সমীক্ষক –মথিলিখিত সুসমাচারে ইহার কোন উল্লেখ নাই। সুতরাং এই সাক্ষ্য বিকৃত। সকল সাক্ষীর বিবৃতি একরূপ হওয়া উচিত। যদি ঈশা চতুর এবং শক্তিশালী হইতেন, তাহা হইলে তিনি হেরোদকে উত্তর দিতেন এবং তাহার অলৌকিক শক্তিও প্রদর্শন করিতেন। সুতরাং জানা। যাইতেছে যে, ঈশার বিদ্যা ও অলৌকিক শক্তি কিছুই ছিল না। ॥৯৪ ॥

    যোহন লিখিত সুসমাচার

    ৯৫। “আদিতে বাক্য ছিল এবং বাক্য ঈশ্বরের সঙ্গে ছিল এবং বাক্য ঈশ্বর ছিল। সকলই তাঁহার দ্বারা সৃষ্ট হইয়াছিল, যাহা হইয়াছে, তাহা তাহার ব্যতিরেকে হয় নাই। তাহার মধ্যে জীবন ছিল এবং সেই জীবন মনুষ্যগণের জ্যোতি ছিল ॥ “ যোহন প০ ১। আ০১২।৩৪।

    সমীক্ষক — আদিতে বক্তা ব্যতীত শব্দ থাকিতে পারে না। অতএব শব্দ ঈশ্বরের সঙ্গে ছিল, বলা বৃথা। শব্দ কখনও ঈশ্বর হইতে পারে না। শব্দ যখন আদিতে ঈশ্বরের সঙ্গে ছিল, তখন শব্দ ঈশ্বরের পূর্বে ছিল কিংবা ঈশ্বর শব্দের পূর্বে ছিলেন, এইরূপ প্রয়োগ ঘটিতে পারে না। অধিকন্তু কারণ ব্যতিরেকে শব্দ দ্বারা কখনও সৃষ্টি হইতে পারে না।

    শব্দ ব্যতিরেকেও সৃষ্টিকর্তা নিঃশব্দে সৃষ্টি করিতে পারেন। জীব কী? জীব কোথায় ছিল? যদি এই বচন দ্বারা জীবকে অনাদি মনে করা হয়, তাহা হইলে আদমের নাসারন্ধ্রে শ্বাস প্রবাহিত করার কথা মিথ্যা। কেবল কি মনুষ্যেরই জীবন উজ্জ্বল? পশ্বাদির জীবন কি উজ্জ্বল নহে? ॥ ৯৫ ॥

    ৯৬। “আর রাত্রিভোজের সময় শয়তান তাহাকে ধরাইয়া দিবার সংকল্প শিমোনের পুত্র ঈস্করিয়োতী য়িহুদার হৃদয়ে স্থাপন করিয়াছিল।” য়ো০ ই০ পর্ব ১৩। আ০ ২। ॥

    সমীক্ষক — ইহাও সত্য নহে। খ্রীষ্টানদের জিজ্ঞাসা করা যাইতে পারে, যদি শয়তান সকলকেই বিভ্রান্ত করে, তাহা হইলে শয়তানকে বিভ্রান্ত করে কে? যদি বলা হয় যে শয়তান নিজেই নিজেকে বিভ্রান্ত করে, তাহা হইলে মনুষ্যও নিজে নিজেকে বিভ্রান্ত করিতে পারে, শয়তানের প্রয়োজন কী? যদি পরমেশ্বরইশয়তানের সৃষ্টিকর্তা হন এবংশয়তানকে বিভ্রান্ত করেন তাহা হইলে খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর শয়তানের শয়তান; তিনিই শয়তানের দ্বারা সকলকে বিভ্রান্ত করিয়া থাকেন।

    ভাল, এমন কাৰ্য্য কি পরমেশ্বরের পক্ষে সম্ভব? সত্য বলিতে গেলে, যিনি খ্রীষ্টানদের এই পুস্তক রচনা করিয়াছেন, এবং যিনি ঈশাকে ঈশ্বরের পুত্ররূপে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনিই শয়তান। বাস্তবিক এই পুস্তক ঈশ্বরকৃত নহে, এই পুস্তকে বর্ণিত যথার্থ ঈশ্বর নহেন এবং যীশু ঈশ্বরপুত্র হইতে পারেন না ॥৯৬ ॥

    ৯৭। তোমাদের হৃদয় উদ্বিগ্ন না হউক, ঈশ্বরে বিশ্বাস কর, আমাতেও বিশ্বাস কর। আমার পিতার গৃহে অনেক বাসস্থান আছে। যদি না থাকিত, তোমাদিগকে বলিতাম; কেননা আমি তোমাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করিতে যাইতেছি। আর আমি যখন যাই ও তোমাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করি, তখন পুনর্বার আসিব এবং আমার নিকটে তোমাদিগকে লইয়া যাইব; আমি যেখানে থাকি, তোমরাও সেইখানে থাকিবে। যীশু তাহাদিগকে বলিলেন, আমিই পথ, সত্য ও জীবন; আমার দ্বারা না আসিলে কেহ পিতার নিকট পৌঁছাইতে পারে না। আমাকে জানিলে আমার পিতাকেও জানিবে ৷ যো০ প০ ১৪ ॥ আ০ ১২।৩৬ ॥ ৭ ॥

    সমীক্ষক –এখন দেখুন! ঈশার এ সকল কথা কি পোপলীলা অপেক্ষা কোন অংশে কম? এমন রচনা না করিলে, কে তাহার মতজালে জড়িত হইত? ঈশা কি তাঁহার পিতার অধিকার একচেটিয়া করিয়াছিলেন? ঈশ্বর যদি ঈশার বশীভূত হন, তবে তিনি পরাধীন। যিনি পরাধীন তিনি ঈশ্বরই নহেন। কেননা ঈশ্বর কাহারও অনুরোধ শুনেন না।

    ঈশার পূর্বে কি কেহ ঈশ্বরকে প্রাপ্ত হন নাই? এইরূপে স্থানাদির প্রলোভন প্রদর্শন করা এবং নিজ মুখে নিজেকে পন্থা, সত্য ও জীবন বলা সম্পূর্ণ আত্মম্ভরিতার পরিচায়ক। সুতরাং এ সকল কখনও সত্য হইতে পারে না। ৯৪ ॥

    ৯৮। “আমি তোমাদিগকে সত্য-সত্য বলিতেছি, যে আমাতে বিশ্বাস রাখে, আমি যে সকল কাৰ্য্য করিতেছি সেও তাহা করিবে, এমন কি এ সকল হইতেও বড় কাৰ্য্য করিবে।” যো ০ পর্ব ১৪। আ০ ১২ ॥ ৷

    সমীক্ষক –এখন দেখুন! যদি খ্রীষ্টানগণ ঈশাকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করেন, তাহা হইলে তাহারা মৃতসঞ্জীবনাদি কাৰ্য্য করিতে পারেন না কেন? তাঁহারা যদি বিশ্বাস বলে বিস্ময়জনক কাৰ্য্য করিতে না পারেন তবে নিশ্চয় জানিতে হইবে যে, ঈশাও তাহা করেন নাই। ঈশা স্বয়ং বলিতেছেন, “তোমরাও আশ্চর্যজনক কাৰ্য্য করিবে”। তাহা সত্ত্বেও কোন খ্রীষ্টান সেইরূপ কাৰ্য্য করিতে পারেন । তাহা হইলে এমন অজ্ঞানান্ধ কে আছে যে, ঈশার মৃতসঞ্জীবনী প্রভৃতি বিশ্বাস করিবে? ॥৯৮ ॥

    ৯৯। “ঈশ্বর অদ্বিতীয় এবং সত্য”। যো০ প০১৭ ॥ আ০ ৩ ॥

    সমীক্ষক –যদি ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়, তাহা হইলে খ্রীষ্টানগণ যে তাঁহাকে তিন বলেন তাহা সর্বথা মিথ্যা। ৯৬ ॥

    নব্য বাইবেলের বহুলাংশে এইরূপ বিরুদ্ধ কথায় পরিপূর্ণ।

    যোহনের প্রকাশিত বাক্য

    এবার যোহনের অদ্ভুত কথাগুলি শ্রবণ করুন –১০০। “তাহাদের মস্তকের উপর সুবর্ণ মুকুট। সেই সিংহাসনের সম্মুখে সপ্ত প্রদীপ জ্বলিতেছে, তাহা ঈশ্বরের সপ্ত আত্মা। আর সেই সিংহাসনের সম্মুখে কাঁচময় এক সমুদ্র আছে এবং সিংহাসনের চারি দিকে চারটি প্রাণী আছে। তাহাদের আগে পিছে নেত্র রহিয়াছে।

    যো০ প্ৰ০ প০ ৪। আ8 ।৫।৬ ॥

    সমীক্ষক — দেখুন, খৃষ্টানদের স্বর্গ যেন একটি নগর এবং তাহাদের ঈশ্বর যেন একটি জ্বলন্ত প্রদীপ! স্বর্ণমুকুট প্রভৃতি অলঙ্কার ধারণ এবং সম্মুখে ও পশ্চাতে নেত্রবিশিষ্ট জীবের অস্তিত্ব অসম্ভব। তদ্ব্যতীত সেস্থলে সিংহ প্রভৃতি চারিটি পশুরও উল্লেখ আছে। এসকল কথা কে বিশ্বাস করিতে পারে? ॥১০০ ॥

    ১০১। আর যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, আমি তাহার দক্ষিণ হস্তে একখানা পুস্তক দেখিলাম, তাহার ভিতর ও বাহির লিখিত ও সপ্ত মুদ্রায় অঙ্কিত। ঐ পুস্তক খুলিবার ও তাহার ছাপা সকল ভাঙা-চোরা করিবার কে যোগ্যতা রাখে?

    কিন্তু স্বর্গে, পৃথিবীতে ও পৃথিবীর নীচে সেই পুস্তক খুলিতে অথবা তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে কাহারও সাধ্য হইল না। তখন আমি বিস্তর রোদন করিতে লাগিলাম, কারণ সেই পুস্তক খুলিবার ও তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিবার মত যোগ্য ব্যক্তি কাহাকেও পাওয়া গেল না। যো০ প্র০। পর্ব ৫। আ০ ১২।৩৪ ॥

    সমীক্ষক –দেখুন! খ্রীষ্টানদের স্বর্গে সিংহাসন এবং মানবসুলভ আড়ম্বর আছে। তদ্ব্যতীত বহু শীলমোহরযুক্ত পুস্তক আছে। স্বর্গস্থ কিংবা পৃথিবীস্থ কাহারও উহা খুলিবার বা দেখিবার অধিকার নাই। যোহন রোদন করিতে থাকিলে, একজন প্রাচীন লোক বলিলেন- ‘ঈশাই উহা খুলিতে পারেন।’ একটি প্রবাদ বাক্য আছে –’যাহার বিবাহ তাহারই গীত’ ঈশার উপরেই সমস্ত মাহাত্ম্য আরোপ করা হইতেছে; কিন্তু এ সকল কেবল কথার কথা মাত্র ॥১০১ ॥

    ১০২। পরে আমি দেখিলাম ঐ সিংহাসনের এবং চারি প্রাণীর তথা প্রাচীনবর্গের মধ্যে এক মেষশাবক দাঁড়াইয়া আছে, তাহাকে যেন বন্ধন করা হইয়াছিল; তাহার সপ্ত শৃঙ্গ ও সপ্ত চক্ষু; সেই চক্ষু সমস্ত পৃথিবীতে প্রেরিত ঈশ্বরের সপ্ত আত্মা। যো০০ প০ ৫। আ০ ৬ ॥

    সমীক্ষক — যোহনের স্বপ্নে কীরূপ মনোবৃত্তি রহিয়াছে দেখুন। উক্ত স্বর্গে কেবল খ্রীষ্টানগণ, চারিটি পশু এবং ঈশা ব্যতীত অপর কেহই নাই! নিত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ইহলোকে ঈশার দুইটিমাত্র চক্ষু ছিল, শৃঙ্গের নামমাত্রও ছিল না; কিন্তু স্বর্গে তাঁহার সাতটি চক্ষু এবং সাতটি শৃঙ্গ হইল, আবার ঐ সকল প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের আত্মা। দুঃখের বিষয় খ্রীষ্টানগণ এ সকল বিষয়। কেন বিশ্বাস করিয়াছেন? তাহারা কিঞ্চিৎ বুদ্ধিও কাৰ্য্যে প্রয়োগ করিতে পারিতেন ॥ ৯৯ ॥

    ১০৩। তিনি যখন পুস্তকখানি গ্রহণ করেন, তখনও চারি প্রাণী ও প্রাচীন বর্গের চব্বিশ জন মেষশাবকের সাক্ষাতে প্রণিপাত করিলেন। তাহাদের প্রত্যেকের কাছে একটি বীণা ও সুগন্ধি ধূপে। পরিপূর্ণ পবিত্র লোকদের কাম্য স্বর্ণময় বাটি ছিল। যো০ প্ৰ০ প০ ৫। আ০৮।

    সমীক্ষক –ভাল, যে সময়ে ঈশা স্বর্গে ছিলেন না, সে সময়ে এই হতভাগ্যগণ ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য এবং আরতি প্রভৃতি দ্বারা কাহার পূজা করিত? এখানে প্রোটেষ্টান্ট খ্রীষ্টানগণ মূর্তিপূজা খণ্ডন করিয়া থাকেন; কিন্তু তাহাদের স্বর্গ মূর্তিপূজার গৃহস্বরূপ ॥১০৩ ॥

    ১০৪। যখন মেষশাবক সেই ছাপাসমূহ হইতে প্রথমটি খুলিলেন, তখন আমি সেই চারি প্রাণীর মধ্যে এক প্রাণীর মেঘ গর্জনের তুল্য এই বাণী শুনিলাম, –“এসো এবং দেখ।” আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখিলাম এক শুক্লবর্ণ অশ্ব এবং তাহার উপর যিনি বসিয়া আছেন, তিনি ধনুর্ধারী, তাঁহাকে এক মুকুট প্রদত্ত হইল এবং তিনি জয় করিতে করিতে সবই জয় করিবার জন্য। বাহির হইলেন।

    যখন তিনি দ্বিতীয় শীলমোহর খুলিলেন তখন রক্তবর্ণ অশ্ব বাহির হইল। পৃথিবী হইতে ঐক্য নষ্ট করার আদেশ তাহাকে প্রদত্ত হইল। তৃতীয় শীলমোহর খুলিলে এক কৃষ্ণবর্ণ ঘোড়া দেখা গেল। চতুর্থ শীলমোহর খুলিলে এক পীতবর্ণ ঘোড়া দেখা গেল। তাহার উপর মৃত্যু আরোহণ করিয়া আছে ইত্যাদি ॥ সো০ প্ৰ০ প০ ৬। আ০ ১-৮ ॥

    সমীক্ষক — এখন দেখুন, এ সকল গল্প পুরাণের গল্প অপেক্ষাও অধিকতর অসম্ভব কিনা। পুস্তকের শীলমোহরের মধ্যে অশ্ব এবং অশ্বারোহী কীরূপে থাকিতে পারে? যিনি এ সকল স্বপ্নপ্রলাপকে সত্য বলিয়া বিশ্বাস করেন, তাহার অজ্ঞতা সম্বন্ধে যত অধিক বলা যায় ততই কম ।১০৪ ॥

    ১০৫। তাহারা উচ্চ রবে ডাকিয়া কহিলেন–হে পবিত্র সত্যমত অধিপতি, বিচার করিতে এবং পৃথিবীর নিবাসীদিগকে আমাদের রক্তপাতের প্রতিফল দিতে কতকাল বিলম্ব করিবে? তখন তাহাদের প্রত্যেককে শুক্লবস্ত্র দেওয়া হইল, এবং তাহাদিগকে বলা হইল যে, তাহাদের সঙ্গী দাস ও ভ্রাতৃগণকে তোমাদের ন্যায় বধ করিতে করিতে যতক্ষণ তাহা শেষ না হয় ততক্ষণের জন্য অপেক্ষা করিতে হইবে।” য়ো প্ৰ০ প০ ৬। আ০ ১১ ॥

    সমীক্ষক — এইরূপে খ্রীষ্টানেরা “দায়রা সোপর্দ” হইয়া বিচারের জন্য ক্রন্দন করিবেন কিন্তু যাঁহারা বেদমতাবলম্বী তাহাদের বিচার হইতে কিঞ্চিত্মাত্রও বিলম্ব হইবে না। যদি খ্রীষ্টানদিগকে জিজ্ঞাসা করা হয়, “আজকাল কি ঈশ্বরের আদালত বন্ধ আছে? বিচারকার্য্যের অভাবে তিনি কি নিষ্কর্মা হইয়া বসিয়া আছেন”? তাহা হইলে তাহার এই প্রশ্নের কোন যুক্তিসঙ্গত উত্তর দিতে পারিবেন না।

    আবার খ্রীষ্টানদের ঈশ্বরকে সহজে প্রলুব্ধ করা যাইতে পারে। কারণ ঈশ্বর খ্রীষ্টানদের অনুরোধে সহসা তাহাদের শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ লইতে আরম্ভ করেন। তিনি এমন নৃশংস প্রকৃতির যে, মৃত্যুর পরেও বৈর নির্যাতন করেন। খ্রীষ্টানদের মধ্যে শান্তি কিঞ্চিৎ মাত্রও নাই। যেখানে শান্তি নাই, সেখানে দুঃখের কি পারাপার আছে? ১০৫ ॥

    ১০৬। “আর ডুমুর গাছ প্রবল বায়ুতে দোলায়িত হওয়ায় যেমন তাহার অপক্ক ফলগুলি ঝরিয়া যায়, তেমনই আকাশ মণ্ডলস্থ নক্ষত্র সকল পৃথিবীতে পতিত হইল; আর আকাশ কাগজের ন্যায় কুঁচকিয়া পৃথক্‌ হইল ॥ ” যো০ প্ৰ০ ৬। আ০ ১৩১৪

    সমীক্ষক — এখন দেখুন, ভবিষ্যদ্বক্তা যোহন অজ্ঞ ছিলেন, তাই তিনি এইরূপ আবোল তাবোল অসার কথা বলিয়াছেন। প্রত্যেকটি নক্ষত্র এক একটি লোক বিশেষ; এমতাবস্থায় নক্ষত্র সমূহ কীরূপে পৃথিবীর উপর পতিত হইতে পারে? সূৰ্য্যাদির আকর্ষণ নক্ষত্র সমূহকে ইতস্ততঃ যাতায়াত করিতে দিবে কেন?

    যোহন আকাশকে কি চাটাই মনে করিয়াছিলেন? আকাশ সাকার পদার্থ নহে যে, কেহ উহাকে গুটাইয়া কিংবা একত্র করিয়া লইবে। বাস্তবিক যোহন প্রভৃতি সকলেই বন্য মনুষ্য ছিলেন, তাহারা এ সকল বিষয়ের কী জানিবেন? ১০৬ ॥

    ১০৭। পরে আমি ঐ মুদ্রাঙ্কিত লোকদের সংখ্যা শুনিলাম; ইস্রায়েল সন্তানদের সমস্ত বংশের একলক্ষ চুয়াল্লিশ সহস্র লোক মুদ্রাঙ্কিত। য়ীহূদা বংশের দ্বাদশ সহস্র লোক মুদ্রাঙ্কিত। যো০ প্ৰ০ প০ ৭। আ০ ৪৫ ॥

    সমীক্ষক — বাইবেলে বর্ণিত ঈশ্বর কি কেবল ইস্রায়েলবংশীয় মনুষ্যদের প্রভু, না, সমস্ত জগতের প্রভু? কেবল বন্য মনুষ্যদেরই প্রভু না হইলে তিনি তাহাদের সংসর্গে থাকিবেন কেন? তিনি কেবল তাহাদেরই সাহায্য করিতেন, অপর কাহারও নাম করিতেনও না, ইহারই বা কারণ কী? অতএব তিনি যথার্থ ঈশ্বর নহেন। ইস্রায়েল বংশীয়দের উপর শীলমোহরের ছাপ লাগাইয়া দেওয়া অল্পজ্ঞতার লক্ষণ হইতে পারে, কিংবা উহা যোহনের মিথ্যা কল্পনা ॥ ১০৭ ॥

    ১০৮। এইজন্য ইহারা ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে আছে এবং ইহারা দিবারাত্র তাহার মন্দিরে আরাধনা করে।” যো প্রক০ প০ ৭ । আ০। ১৫ ॥

    সমীক্ষক –ইহা কি মহা পৌত্তলিকতা নহে? তাহা হইলে কি খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর দেহধারী মনুষ্যের ন্যায় নহেন? তিনি কি রাত্রিকালে নিদ্রাও যান না? তিনি যদি রাত্রিকালে নিদ্রিত থাকেন, তাহা হইলে সে সময়ে তিনি পূজা কীরূপে করিতে পারেন? সম্ভবতঃ তাহার নিদ্রাও লোপ পায়। যে ব্যক্তি দিবারাত্র জাগিয়া থাকে তাহার চিত্ত বিক্ষিপ্ত থাকে এবং সে অত্যন্ত রোগাক্রান্ত হইয়া পড়ে ৷১০৮ ॥

    ১০৯। পরে আর এক দূত আসিয়া বেদীর নিকটে দাঁড়াইলেন, তাহার হস্তে স্বর্ণ-নির্মিত ধূপদানী ছিল এবং তাহাতে প্রচুর ধূপ প্রদত্ত হইল। তাহাতে পবিত্র ব্যক্তিগণের প্রার্থনার সহিত দূতের হস্ত হইতে ধূপের ধূম ঈশ্বরের সম্মুখে উঠিল। পরে ঐ দূত ধূপদানী লইয়া উহাকে বেদীর অগ্নিতে পূর্ণ করিয়া পৃথিবীতে নিক্ষেপ করিলেন; তাহাতে মেঘগর্জন, বিদ্যুৎ ও ভূমিকম্প হইল। যো০ প্ৰ০ প০ ৮। আ০ ৩৪ ৫ ॥

    সমীক্ষক –এখন দেখুন! খ্রীষ্টানদের স্বর্গে তো বেদী, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য এবং তুরীবাদ্য আছে। সুতরাং বৈরাগীদের মন্দির অপেক্ষা তাহাদের স্বর্গ কী কম? বরং তাঁহাদের স্বর্গে জাঁকজমক কিছু অধিক৷১০৯ ॥

    ১১০। প্রথম দুত তুরী বাজাইলেন আর রক্ত মিশ্রিত শিলা ও অগ্নি হইয়া তাহা পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হইল, তাহাতে পৃথিবীর এক তৃতীয় অংশ পুড়িয়া গেল। য়ো প্ৰ০ প০ ৮৭ ॥

    সমীক্ষক –বাহবা! খ্রীষ্টানদের ভবিষ্যদ্বক্তা! ঈশ্বর ও ঈশ্বরের দূত, তুরীর শব্দ এবং প্রলয়ের লীলা কেবল শিশুর ক্রীড়ার ন্যায় দেখাইতেছে। ১১০ ॥

    ১১১। পরে পঞ্চম দূত তুরী বাজাইলেন, আর স্বর্গ হইতে পৃথিবীতে পড়িতেছে এইরূপ। একটা তারা দেখিলাম; তাহাকে অগাধ কুণ্ডের কূপের চাবি প্রদত্ত হইল। তাহা দ্বারা সে অগাধ কূপ খুলিল, আর ঐ কূপ হইতে বৃহৎ ভাটির ধূম উঠিল। পরে ঐ ধূম হইতে পঙ্গপাল বাহির হইয়া পৃথিবীতে আসিল। আর তাহাদিগকে পৃথিবীস্থ বৃশ্চিকের ক্ষমতার ন্যায় ক্ষমতা প্রদত্ত হইল। আর তাহাদিগকে বলা হইল কেবল সেই মনুষ্যদেরই পীড়ন কর যাহাদের ললাটে ঈশ্বরের মুদ্রাঙ্কন নাই। তাহাদিগকে কেবল পাঁচ মাস পর্যন্ত যাতনা দিবার অনুমতি প্রদত্ত হইল।” য়ো প্ৰ০ প০ ৯ । আ০ ১-৫ ॥

    সমীক্ষক — তুরীশব্দ শুনিয়া কি নক্ষত্র সমূহ স্বর্গে সেই দূতগণের উপর পতিত হইল? এখানে তো পতিত হয় নাই। ভাল, ঈশ্বর কি প্রলয়ের জন্য সেই কূপটি রাখিয়া ছিলেন? তিনিই কি পঙ্গপালগুলিকে পুষিয়াছিলেন? বোধ হয় পঙ্গপালগুলি শীলমোহর দেখিলেই ঐ সকল লোককে দংশন করা হইবে কি না জানিতে পারিত! নির্বোধ লোকদিগকে ভয় দেখাইয়া খ্রীষ্টান করিবার ও প্রতারণা করিবার জন্য এইরূপ বলা হইত, তুমি যদি খ্রীষ্টান না হও, তাহা হইলে তোমাকে পঙ্গপাল দংশন করিবে। যে দেশে বিদ্যা নাই, সেই দেশেই এ সকল কথা সম্ভব, আৰ্য্যাবর্তে নহে। এটা কি প্রলয়ের কথা হইতে পারে? ॥১১১ ॥

    ১১২। ঐ অশ্বারোহী সৈন্যের সংখ্যা বিশ কোটি। যো০ প্র০ প০ ৯। আ০ ১৬ ॥

    সমীক্ষক –ভাল, স্বর্গে এতগুলি অশ্ব কোথায় থাকিত? কোথায় বা বিচরণ করিত? বলা। নিষ্প্রয়োজন। আমরা আৰ্যাগণ এমন স্বর্গ, এমন ঈশ্বর এবং এমন মতকে জলাঞ্জলি দিয়াছি ॥ সর্বশক্তিমান পরমেশ্বরের কৃপায় এ সকল ঝাট খ্রীষ্টানদের মস্তিষ্ক হইতে দূর হইলে মঙ্গলও। হইত ॥১১২ ॥

    ১১৩। পরে আমি আর এক শক্তিমান দুতকে স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিতে দেখিলাম। তাহার পরিচ্ছেদ মেঘ, তাহার মস্তকের উপরে মেঘ ও ধনুক, তাঁহার মুখ সূৰ্য্যতুল্য, তাহার চরণ অগ্নিস্তম্ভ তুল্য। তিনি সমুদ্রে দক্ষিণ চরণ ও স্থলে বাম চরণ রাখিলেন।” য়ো০ প০ ১০ আ০ ॥১। ২ ॥

    সমীক্ষক –সমীক্ষক দেখুন! এ সকল দূতের বৃত্তান্ত! পুরাণের কাহিনী কিংবা ভাটের গল্প অপেক্ষাও অধিক কৌতুকপ্রদ।১১৩ ॥

    ১১৪। পরে দণ্ডের ন্যায় এক নল আমাকে দেওয়া হইলে এক জন কহিলেন –উঠ, ঈশ্বরের মন্দিরকে, যজ্ঞবেদীকে ও যাহারা তাহার মধ্যে ভজনা করে, তাহাদেরকে পরিমাপ কর। য়ো প্ৰ০ প০ ১১। আ০ ১ ॥

    সমীক্ষক –এখানকার কথা তো দূরে থাকুক, স্বর্গেও খ্রীষ্টানদের জন্য মন্দির নির্মিত হইয়াছে। এবং মন্দিরের মাপও লওয়া হইয়াছে। যেমন তাঁহাদের স্বর্গ, তেমনই তাহাদের কথা! উদাহরণ স্বরূপ, প্রভু-ভোজনের সময় খ্রীষ্টানগণ ঈশার মাংস ও রুটির ভক্ষণ কল্পনা করিয়া রুধিভক্ষণ এবং মদ্যপান করেন। গীর্জায় ক্রুশের প্রতিমূৰ্ত্তি রাখাও এক প্রকার মূর্তিপূজা ॥১১৪ ॥

    ১১৫। পরে ঈশ্বরের স্বর্গস্থ মন্দির মুক্ত হইল, সেই মন্দিরের মধ্যে তাহার বিধানের সিন্দুক দেখা গেল। য়ো প্ৰ০ প০ ১১। আ০ ১৯ ॥

    সমীক্ষক — বোধ হয়, স্বর্গের মন্দির সর্বদা বন্ধ থাকে, কখনও কখনও খোলা হয়। পরমেশ্বরের কোন মন্দির থাকা কি সম্ভব? বেদোক্ত ঈশ্বর সর্বব্যাপক, তাহার কোন মন্দির হইতে পারে না –অবশ্য খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর সাকার; তিনি স্বর্গে কিংবা পৃথিবীতে থাকুন, এখানকার ন্যায় স্বর্গের শঙ্খ-ঘন্টাধ্বনি, পোঁ পোঁ, ঢং ঢং সহকারে তাহার পূজা হইয়া থাকে।

    সম্ভবতঃ খ্রীষ্টানগণ কখনও কখনও ধর্মবিধানের সিন্দুক দেখিয়া থাকেন। তদ্বারা কি প্রয়োজন। সিদ্ধ হয় তাহা জানা যায় না। বোধ হয় মনুষ্যদিগকে প্রলুব্ধ করিবার জন্য এ সকল কাৰ্য্য করা হইয়া থাকে ৷১১৫ ॥

    ১১৬। আর স্বর্গ মধ্যে এত বড় আশ্চৰ্য্য দেখা গেল। একটি স্ত্রীলোক, সূৰ্য্য তাহার পরিধান, চন্দ্র তাহার পায়ের নীচে এবং তাহার মস্তকের উপরে দ্বাদশ তারার এক মুকুট। সে গর্ভবতী, আর ব্যথিত হইয়া চেঁচাইতেছে, সন্তান প্রসবের জন্য ব্যথা হইতেছে।

    দ্বিতীয় আশ্চৰ্য্য স্বর্গে দেখা গেল। এক প্রকাণ্ড লোহিতবর্ণ অজগর। তাহার সপ্ত মস্তক ও দশ শৃঙ্গ এবং সপ্ত মস্তকে সপ্ত রাজমুকুট, আর তাহার লাঙ্গুল আকাশের এক তৃতীয়াংশ নক্ষত্রকে আকর্ষণ করিয়া পৃথিবীতে নিক্ষেপ করিল ॥  যো০ প্র০১২। আ০ ১২।৩৪ ॥

    সমীক্ষক — কেমন লম্বা-চওড়া গল্প ফাঁদা হইয়াছে, দেখুন। খ্রীষ্টানদের স্বর্গেও হতভাগিনী স্ত্রীলোকটি চীৎকার করিতেছে। কেহই তাহার দুঃখের কথা শুনিতেছ না এবং কেহ তাহার দুঃখ নিবারণ করিতেও পারিতেছেনা। অজগর যে পুচ্ছদ্বারা নক্ষত্র সমূহের এক তৃতীয়াংশকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করিল, সেই পুচ্ছ কত বড় ছিল? ভাল, পৃথিবী তো ক্ষুদ্র, কিন্তু নক্ষত্রগুলি এক একটি বিশাল ভূমণ্ডল। সুতরাং পৃথিবীর মধ্যে একটি নক্ষত্রেরই সমাবেশ হইতে পারে না। তাহা হইলে অনুমান করা যাইতে পারে যে, যিনি এই গল্প ফাঁদিয়াছেন নক্ষত্র সমূহের এক তৃতীয়াংশ তাহারই গৃহের উপর পতিত হইয়া থাকিবে। আর সেই অজগরের পুচ্ছ এত প্রকাণ্ড ছিল যে, সে নক্ষত্রসমূহের এক তৃতীয়াংশকে লেজে জড়াইয়া পৃথিবীতে নিক্ষেপ করিয়াছিল, সেই অজগরও বোধ হয় তাহারই গৃহে থাকিত ॥ ১১৬ ॥

    ১১৭। আর স্বর্গে যুদ্ধ হইল,মখায়েল ও তাহার দূতগণ অজগরের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিল। যো প্র০ প০ ১২। আ০ ৭।

    সমীক্ষক –যদি কেহ খ্রীষ্টানদের স্বর্গে গমন করিয়া থাকে, তাহাকে তথাকার যুদ্ধের জন্য। অত্যন্ত দুঃখ ভোগ করিতে হইয়াছে। অতএব এখানে থাকিতেই এরূপ স্বর্গের আশা পরিত্যাগ করুন। যে স্থানে শান্তিভঙ্গ এবং উপদ্রব ঘটে, সেই স্থানই খ্রীষ্টানদের উপযুক্ত ॥১১৭ ।

    ১১৮। আর সেই বৃহৎ অজগর নিক্ষিপ্ত হইল; এ সেই পুরাতন সর্প যাহাকে শয়তান বলা হয়, যে সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মায় ॥ যো০ প্ৰ০ প০ ১২। আ০ ৯ ॥

    সমীক্ষক — যখন শয়তান স্বর্গে ছিল, তখন কি সে মনুষ্যদের প্রতারণা করিত না?শয়তানকে যাবজ্জীবন কারারুদ্ধ অথবা নিহত করা হয় না কেন? তাহাকে পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত করা হইল কেন? যদি শয়তান সংসারের সকলকেই প্রলুব্ধ করে, তবে শয়তানকে প্রলুব্ধ করিবে কে? যদি সে নিজেই নিজেকে প্রলুব্ধ করে, তবে যাহারা প্রলুব্ধ হয় তাহারাও শয়তান ব্যতীতই প্রলুব্ধ হইতে পারে। যদি ঈশ্বর শয়তানকে প্রলুব্ধ করেন, তিনি ঈশ্বরই নহেন।

    দেখা যাইতেছে যে, খ্রীষ্টানদের ঈশ্বরও শয়তানকে ভয় করেন; কারণ তিনি শয়তান অপেক্ষা অধিকতর শক্তিশালী হইলে শয়তানকে পাপ করিবার সঙ্গে সঙ্গেই দণ্ড দিতেন। কিন্তু জগতে শয়তানদের যত রাজ্য আছে তাহার সহস্রাংশের একাংশও খ্রীষ্টানদের রাজ্য নয়। বোধ হয় এই কারণেই খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর শয়তানকে তাহার দুষ্কর্মে বাধা দিতে পারেন না।

    সুতরাং জানা গেল যে, আজকাল খ্রীষ্টান রাজ্যাধিকারীগণ যেমন দস্যুতস্করদিগকে সত্ত্বর দণ্ডদান করেন, খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর সেরূপ করেন না। সেরূপ করিলে এরূপ নির্বোধ কে আছে যে, সে বেদ মত পরিত্যাগ করিয়া কপোল-কল্পিত খ্ৰীষ্টানমত গ্রহণ করিবে? ॥১১৮ ॥

    ১১৯। হায়! পৃথিবী ও সমুদ্রবাসিগণ, শয়তান তোমাদের নিকট নামিয়া গিয়াছে ॥ য়ো প্ৰ০ প০ ১২। আ০ ১২ ॥

    সমীক্ষক — ঈশ্বর কি কেবল সেখানেরই অধিপতি এবং রক্ষক? তিনি কি পৃথিবী এবং মনুষ্যাদি প্রাণীর অধিপতি এবং রক্ষক নহেন? তিনি যদি পৃথিবীরও রাজা হন, তাহা হইলে শয়তানকে বিনাশ করিতে পারিলেন না কেন? শয়তান সকলকে প্রতারিত করিতেছে, তাহা দেখিয়াও ঈশ্বর তাহাকে বাধা দিতেছেন না। ইহাতে জানা যাইতেছে যে, দুই ঈশ্বর আছেন, তাহাদের একজন সৎপ্রকৃতির, অন্য জন অপেক্ষাকৃত অধিক শক্তিশালী অথচ দুষ্ট প্রকৃতির ॥১১৯ ॥

    ১২০। তাহাকে বিয়াল্লিশ মাস পর্যন্ত যুদ্ধ করিবার ক্ষমতা দেওয়া গেল। তাহাতে সে ঈশ্বরের। নিন্দা করিতে মুখ খুলিল। তাহার নামের, তাহার, তাঁবুর স্বর্গবাসীদের নিন্দা করিতে হইবে। আর পবিত্র ব্যক্তিগণের সহিত যুদ্ধ করিবার ও তাহাদিগকে জয় করিবার ক্ষমতা এবং সব বংশের, ভাষায় ও দেশের উপরে অধিকার প্রদত্ত হইল ৷ যো০ প্ৰ০ প০ ১৩ ॥ আ০ ৫৬৭ ॥

    সমীক্ষক –ভাল, পৃথিবীর লোকদিগকে বিভ্রান্ত করিবার জন্য শয়তান ও পশু প্রভৃতিকে প্রেরণ করা এবং সৎপ্রকৃতির মনুষ্যদিগকে তাহাদের সহিত যুদ্ধে লিপ্ত করা কি দস্যু দলপতির কাৰ্য্য নহে? কোন ঈশ্বর ভক্ত এরূপ কাৰ্য্য করিতে পারে না ॥১২০ ॥

    ১২১। পরে আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখিলাম, সেই মেষশাবক সিয়োন পর্বতের উপরে দাঁড়াইয়া আছেন এবং তাহার সহিত এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার লোক। তাহাদের ললাটে তাহার  নাম ও পিতার নাম লিখিত ॥ য়ো০ প্ৰ০ প০ ১৪। আ০ ১।

    সমীক্ষক –দেখুন! ঈশার পিতা এবং ঈশা সিয়োন পর্বতে অবস্থান করিতেন। কিন্তু ১, ৪৪০০০ মনুষ্যের গণনা কীরূপে করা হইল? স্বর্গবাসীদের সংখ্যা কি কেবল ১,৪৪০০০? অবশিষ্ট কোটি কোটি খ্রীষ্টানের মস্তক শীলমোহর যুক্ত করা হইল কেন? তাঁহারা সকলেই কি নরকে গেলেন?

    সিয়োন পর্বতে গিয়া খ্রীষ্টানদের দেখা উচিত সেস্থানে সেনার সহিত ঈশার পিতা আছেন কিনা? যদি থাকেন, তবে যাহা লিখিত আছে তাহা সত্য নতুবা সমস্তই মিথ্যা। যদি তাঁহারা অন্য কোন স্থান হইতে সে স্থানে আসিয়া থাকেন, তাহা হইলে তাহারা কোথা হইতে আসিলেন? যদি বলা হয় যে, স্বর্গ হইতে আসিয়াছেন, তাহা হইলে তাহারা কি পক্ষী যে, এরূপ বিশাল সেনা লইয়া উপরে এবং নিম্নে যাতায়াত করিতে পারেন?

    যদি যাতায়াত করেন তাহা হইলে ঈশ্বর একজন জিলা ম্যাজিষ্ট্রেট সদৃশ হইলেন। সে ক্ষেত্রে এক, দুই অথবা তিন জন ঈশ্বরের দ্বারা চলিবে না, কিন্তু প্রত্যেক ভূমণ্ডলের জন্য ন্যূনকল্পে এক এক জন ঈশ্বরের প্রয়োজন হইবে। কারণ এক দুই কিংবা তিন জন ঈশ্বরের পক্ষে বহু ব্রহ্মাণ্ডে বিচরণ করা ও বিচারপতির কাৰ্য্য করা অসম্ভব ॥ ১২১ ॥

    ১২২। আত্মা কহিতেছেন– হা তাহারা আপন আপন শ্ৰম হইতে বিশ্রাম পাইবে; কারণ তাহাদের কাৰ্য্য সকল তাহাদের সঙ্গে সঙ্গে চলে ॥ যো প্ৰ০ প০ ১৪। আ০ ১৩ ॥

    সমীক্ষক— দেখুন! খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর তো বলিতেছেন তাহাদের কর্ম তাহাদের সঙ্গেই থাকিবে অর্থাৎ সকলকে কর্মানুসারেই ফল প্রদত্ত হইবে। কিন্তু ইহারা বলেন যে, ঈশা তাহাদের সমস্ত পাপ গ্রহণ এবং তাহাদিগকে ক্ষমা করিবেন। সুধীগণ বিচার করুন যে, এস্থলে ঈশ্বরের বাক্য সত্য না, খ্রীষ্টানদের বাক্য সত্য? দুইটি বিরুদ্ধ বাক্যের মধ্যে একটি অবশ্য মিথ্যা, কারণ দুইটিই সত্য হইতে পারে না। খ্রীষ্টানদের ঈশ্বরের বাক্য কিংবা খ্রীষ্টানদের বাক্য মিথ্যা হউক, তাহাতে আমাদের কিছুই আসে যায় না ॥১২২ ॥

    ১২৩। আর উহাকে ঈশ্বরের রোষের মহাকুণ্ডে নিক্ষেপ করিলেন। পরে নগরের বাহিরে ঐ কুণ্ডে তাহা দলন করা হইল, ফলে কুণ্ড হইতে রক্ত বাহির হইল, এবং অশ্বগণের বন্ধা পৰ্য্যন্ত এক শত ক্রোশ পৰ্য্যন্ত প্রবাহিত হইল। যো০ প্র০ প০ ১৪। আ০ ১৯, ২০ ॥

    সমীক্ষক –দেখুন! এ সকল গল্প পুরাণকেও অতিক্রম করিয়াছে। বোধ হয় খ্রীষ্টানদের উপর ঈশ্বর ক্রুদ্ধ হইলে অত্যন্ত কষ্ট অনুভব করেন। তাহার কোপের কুণ্ড পূর্ণ হইল। তবে কি তাহার ক্রোধ জল কিংবা অপর তরল পদার্থ বিশেষ যে,তদ্বারা কুণ্ডটি পরিপূর্ণ হইল? এক শত ক্রোশ পৰ্য্যন্ত রুধির প্রবাহিত হওয়া অসম্ভব। বায়ু সংযোগে রুধির তৎক্ষণাৎ ঘনীভূত হইয়া যায়। তাহা হইলে উহা কীরূপে প্রবাহিত হইতে পারে? সুতরাং এ সকল কথা মিথ্যা ॥১২৩ ॥

    ১২৪। “স্বর্গে সাক্ষীর জন্য তাম্বুর মন্দির খুলিয়া দেওয়া হইল ॥ ” যো০ প্র০ প০ ১৫। আ০৫ ॥

    সমীক্ষক –খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর সর্বজ্ঞ হইলে সাক্ষীর কী প্রয়োজন ছিল? তিনি তো নিজেই সমস্ত জানিতে পারিতেন। সুতরাং নিশ্চিতরূপে জানা যাইতেছে যে, তিনি সর্বজ্ঞ নহেন, কিন্তু মনুষ্যের ন্যায় অল্পজ্ঞ। তাহার পক্ষে ঈশ্বরের কাৰ্য্য করা কি সম্ভব? না, না, না, কখনই না। আবার এই প্রকরণে দূতদিগের সম্বন্ধে অনেক অসম্ভব কথা লেখা হইয়াছে; সেগুলিকে কেহই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিতে পারে না। আর কত লেখা যাইবে? এই প্রকরণ ঐ সমস্ত বিষয়ে পরিপূর্ণ ॥১২৪।।

    ১২৫। ঈশ্বর উহার অপরাধ সকল স্মরণ করিয়াছেন। সে যেরূপ ব্যবহার করিত;তোমরাও তাহার প্রতি সেইরূপ ব্যবহার কর, আর তাহার ক্রিয়ানুসারে দ্বিগুণ প্রতিফল তাহাকে দাও ॥ যো০ প্ৰ০ প০ ১৮ । আ০ ৫, ৬ ॥

    সমীক্ষক — দেখুন! দেখা যাইতেছে যে, খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর অন্যায়কারী। কারণ যাহার যাদৃশ বা যত কর্ম, তাহাকে তাদৃশ বা তত ফলদান করাকে ন্যায় এবং ন্যূনাধিক দান করাকে অন্যায়। বলে। যিনি স্বয়ং অন্যায়কারী তাহার উপাসকগণ অন্যায় করিবে না কেন? ।।১২৫ ॥

    ১২৬। মেষশাবকের বিবাহ উপস্থিত হইল এবং তাঁহার ভাৰ্য্যা নিজেকে প্রস্তুত করিল ॥ যো০ প্ৰ০ প০ ১৯। আ০ ৭ ॥

    সমীক্ষক — এখন শুনুন! খ্রীষ্টানদের স্বর্গে বিবাহও হইয়া থাকে। ঈশ্বর স্বর্গেই ঈশার বিবাহ দিয়াছিলেন। এখন জিজ্ঞাস্য এই যে, ঈশার শ্বশুর, শাশুড়ী এবং শ্যালক কাহারা ছিলেন? ঈশার কয়টি সন্তান ছিল? বীর্যনাশ বশতঃ বল, বুদ্ধি, পরাক্রম,এবং আয়ু হ্রাস পাওয়ায় আজ পর্যন্ত তিনি অবশ্যই জীবিত নাই! কারণ সংযোগ জন্য পদার্থের বিয়োগ অবশ্যম্ভাবী। অদ্যাবধি খ্রীষ্টানগণ। ঈশার প্রতি বিশ্বাসবান হইয়া প্রতারিত হইতেছেন,জানি না আরও কত কাল প্রতারিত হইতে থাকিবেন ॥১২৬ ॥

    ১২৭। তিনি সেই অজগরকে ধরিলেন; এ সেই পুরাতন অপবাদক ও শয়তান। তিনি তাহাকে সহস্র বৎসর বন্ধ রাখিলেন আর তাহাকে অগাধ কুণ্ডে ফেলিয়া দিয়া সেই স্থানের মুখ বন্ধ করিয়া মুদ্রাঙ্কিত করিলেন; যেন ঐ সহস্র বৎসর সম্পূর্ণ না হইলে সে সব দেশের লোককে আর ভ্রান্ত করিতে না পারে ॥ যো০ ০ ০ ২০। আ০ ২, ৩ ॥

    সমীক্ষক –দেখুন! বহু কষ্টে শয়তানকে ধরিয়া এক সহস্র বৎসর কারারুদ্ধ করা হইল। কারামুক্ত হইয়া সে কি সকলকে প্রতারিত করিবে না? এমন দুর্বৃত্তকে যাবজ্জীবন কারারুদ্ধ রাখা কিংবা বধ করাই উচিত ছিল।

    কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে খ্রীষ্টানদের শয়তান বলিয়া কেহই নাই। শয়তান খ্রীষ্টানদের ভ্রম মাত্র। কেবল জনসাধারণকে ভীতি প্রদর্শন করিয়া স্বীয় জালে আবদ্ধ করিবার জন্য এই উপায় অবলম্বন করা হইয়াছে। জনৈক ধূৰ্ত্ত কয়েকজন নির্বোধকে বলিল, ‘চল তোমাদিগকে দেবতা দর্শন করাইব’। সে একা নির্জন স্থানে এক ব্যক্তিকে চতুর্ভুজ সাজাইয়া একটি ঝোঁপের মধ্যে দাঁড় করাইয়া রাখে এবং সে স্থানে তাহাদিগকে লইয়া গিয়া বলে, ‘চক্ষু মুদিয়া থাকিবে, যখন চক্ষু খুলিতে বলিব, তখন খুলিবে; যখন চক্ষু বন্ধ করিতে বলিব,তখন বন্ধ করিবে। নতুবা অন্ধ হইয়া যাইবে।তাহারা চতুর্ভুজ সম্মুখে আসিলে ধূর্ত বলিল, “দর্শন কর’ আবার তৎক্ষণাৎ বলিল– ‘চক্ষু বন্ধ কর। তখন নিমেষ মধ্যে সেই চতুর্ভুজ মূৰ্ত্তি ঝোঁপের অন্তরালে অদৃশ্য হইল। অদৃশ্য হইলে ধূর্ত বলিল, ‘চক্ষু খোল, নারায়ণ দর্শন কর, তোমাদের নারায়ণ দর্শন হইয়া গেল।

    মজহব বিশ্বাসীদের যেরূপ লীলা সেইরূপ এই মতবাদীদের। তাহারা বলিয়া থাকেন, যে ব্যক্তি আমাদের মজহব মানিবে না সে শয়তান কর্তৃক বিভ্রান্ত জানিবে। এইজন্য তাহাদের প্রবঞ্চনা জালে কাহারও জড়িত হওয়া উচিত নহে ৷১২৭ ॥

    ১২৮। তাঁহার সম্মুখ হইতে পৃথিবী এবং আকাশ পলায়ন করিল। তাহাদের নিমিত্ত আর স্থান। পাওয়া গেল না। আর আমি দেখিলাম, ক্ষুদ্র ও মহান্ সমস্ত মৃত ব্যক্তি ঈশ্বরের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে। পরে পুস্তক খোলা হইল। আর একখানি পুস্তক অর্থাৎ জীবনপুস্তক খোলা হইল এবং পুস্তক সমূহের লিখিত প্রমাণ মত আপন আপন কর্মানুসারে মৃতদেহের বিচার হইল ৷ যো০ ০ প০ ২০। আ০ ১১১২ ॥

    সমীক্ষক –কীরূপ বালকোচিত কথা শুনুন! আচ্ছা পৃথিবী এবং আকাশ কীরূপে পলাইতে পারে? এ সকল কীসের উপরেই বা অবস্থান করিবে? যাঁহার নিকট হইতে এ সকল পলায়ন করিল, তিনি কোথায় এবং তাহার সিংহাসনই বা কোথায় ছিল?

    যদি মৃতদিগকে পরমেশ্বরের সম্মুখে দণ্ডায়মান রাখা হইয়া থাকে, তাহা হইলে বোধ হয়, তিনিও উপবিষ্ট কিংবা দণ্ডায়মান ছিলেন। তবে এখানকার কাজ আদালতে অথবা দোকানে যেরূপ চলে, পুস্তকের বর্ণনা অনুসারে স্বর্গেও কি ঈশ্বরের কাৰ্য সেইরূপে চলিয়া থাকে? ঈশ্বর কি নিজেই জীবদের কর্মলিকা লিখিয়াছিলেন, না তাহার গোমস্তাগণ লিখিয়াছিল? এ সকল কথা বিশ্বাস করিয়া খ্রীষ্টানগণ অনীশ্বরকে ঈশ্বর এবং ঈশ্বরকে অনীশ্বর করিয়াছেন ৷১২৮ ॥

    ১২৯। তাঁহাদের মধ্যে একজন আসিয়া আমার সঙ্গে আলাপ করিয়া কহিলেন –এস, আমি তোমাকে সেই বধূকে অর্থাৎ মেষশাবকের ভাৰ্য্যাকে দেখাই ॥ যো০ প্ৰ০ প০ ২১। আ০ 9 ॥

    সমীক্ষক — ঈশা সম্ভবতঃ স্বর্গে ভাল বধূ অর্থাৎ পত্নীলাভ করিয়া আনন্দভোগ করিতেছিলেন। যে সকল খৃষ্টান স্বর্গে গমন করেন, তাহারাও বোধ হয় সে স্থানে স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততি লাভ করেন এবং অত্যধিক জনসমাগম বশতঃ রোগেৎপত্তি হওয়ায় অনেকে মৃত্যু-গ্রস্তও হইয়া থাকেন। এমন স্বর্গকে দূর হইতে করজোড়ে নমস্কার ॥১২৯ ॥

    ১৩০। আর তিনি সেই নল দ্বারা নগর মাপিলেন। উহা সাড়ে সাত শত ক্রোশ পরিমিত হইল, তাহার দৈর্ঘ্য, বিস্তার ও উচ্চতা এক সমান। পরে তাহার প্রাচীর মাপিলে, মনুষ্যের অর্থাৎ দূতের পরিমাণ অনুসারে একশত চুয়াল্লিশ হস্ত হইল।

    প্রাচীরের গাঁথুনি সূৰ্য্যকান্তমণির এবং নগর নির্মল কঁচের সদৃশ স্বচ্ছ সুবর্ণময়। নগরের প্রাচীরের ভিত্তি মূলগুলি সর্ববিধ মূল্যবান প্রস্তরে ভূষিত। প্রথম ভিত্তিমূল সূৰ্য্যকান্তের, দ্বিতীয় নীল কান্তের, তৃতীয় রক্তকান্তের, চতুর্থ মরকতের, পঞ্চম বৈদুৰ্য্যের, ষষ্ঠ মাণিক্যের, সপ্তম পীতমণির, অষ্টম পরাগ মণির, নবম পুষ্পরাজের, দশম শুনীয়ের, একাদশ ধূম্ৰকান্তের, দ্বাদশ মটীষের ।

    আর দ্বাদশ দ্বারে দ্বাদশটি মুক্তো, এক এক দ্বার এক এক মুক্তা দ্বারা নির্মিত এবং নগরের পথ স্বচ্ছ কাঁচবৎ বিমল সুবর্ণময় ॥ যো০ প্ৰ০ প০ ২১ । আ০ ১৬-২১ ।

    সমীক্ষক –খ্রীষ্টানদের স্বর্গের বর্ণনা শুনুন! মৃত্যুর পর তাহারা স্বর্গে জন্মগ্রহণ করিতে থাকিলে এরূপ বিশাল নগরের ন্যায় স্বর্গেও তাহাদের সকলের সঙ্কুলান হইতে পারিবে না। কারণ সে স্থানে মনুষ্যের আগমন আছে, কিন্তু সে স্থান হইতে প্রত্যাবর্তন নাই।

    আর স্বর্গকে যে মহামূল্য রত্ন ও সুবর্ণ নির্মিত নগররূপে বর্ণনা করা হইয়াছে তাহা কেবল নির্বোধ মনুষ্যদিগকে বিভ্রান্ত করিয়া জালে জড়িত করিবার ছলনা মাত্র। স্বর্গ নগরের দৈর্ঘ্যপ্রস্থ যেরূপ বর্ণিত হইয়াছে তাহা সম্ভবপর, কিন্তু উহার উচ্চতা সাড়ে সাত ক্রোশ কীরূপে হইতে পারে? সুতরাং এ সকল মিথ্যা কপোল কল্পনা মাত্র। এত বড় প্রকাণ্ড মুক্তা কোথা হইতে আসিল? যাঁহারা এ সকল লিখিয়াছেন, উহা তাহাদের গৃহস্থিত কলসের মধ্য হইতে আসিয়া থাকিবে। এ সকল গল্প পুরাণেরও বাবা ॥১৩০ ॥

    ১৩১। আর অপবিত্র বস্তু অথবা ঘৃণ্যর কর্ম ও মিথ্যাচারে রত ব্যক্তির কেহ কদাচ সেখানে (স্বর্গে) প্রবেশ করিতে পারিবে না ॥ যো০ প্ৰ০ প০ ২১। আ০ ২৭ ॥

    সমীক্ষক –যদি তাই হয়, তাহা হইলে খ্রীষ্টানদের বলিবার কারণ কী যে, পাপীরাও খ্রীষ্টান হইলে স্বর্গে যাইবে? ইহা অবশ্য সত্য নহে, সত্য হইলে যে যোহন স্বপ্নের এ সকল মিথ্যা কথা লিখিয়াছেন তিনিও বোধ হয় স্বর্গে প্রবেশ করিতে পারেন নাই। ঈশাও বোধহয় স্বর্গে যান নাই। কারণ যদি একজন পাপীও স্বর্গে যাইতে না পারে, তাহা হইলে যিনি বহু পাপীর পাপভার বহনকারী, তিনি কীরূপে স্বর্গের নিবাসী হইতে পারিবেন? ॥১৩১

    ১৩২। এবং কোন অভিশাপ আর হইবে না; আর ঈশ্বরের ও মেষশাবকের সিংহাসন তাহার মধ্যে থাকিবে। তাঁহার দাসেরা তাহার আরাধনা করিবে এবং ঈশ্বরের মুখদর্শন করিবে আর তাহার নাম তাহাদের ললাটে লেখা থাকিবে।

    সেখানে আর রাত্রি হইবে না এবং প্রদীপের আলোক কিংবা সূর্যের আলোকের কোন প্রয়োজন। হইবে না। কারণ প্রভু ঈশ্বর তাহাদিগকে আলোকিত করিবেন এবং তাহারা সদা সর্বদা রাজত্ব করিবে ॥ যো০ প্ৰ০ প০ ২২। ৩, ৪, ৫ ॥

    সমীক্ষক –খ্রীষ্টানদের স্বর্গে নিবাস কীরূপ দেখুন। ঈশ্বর এবং ঈশা কি সর্বদা সিংহাসনে বসিয়া থাকিবেন, আর ভৃত্যগণ ঈশ্বরের মুখপানে তাকাইয়া থাকিবে? এখন বলুন দেখি, খ্রীষ্টানদের ঈশ্বরের মুখ কি ইউরোপীয় মুখের ন্যায় শ্বেতবর্ণ, অথবা নিগ্রোদের মুখের ন্যায় কৃষ্ণবর্ণ, অথবা আর কোন দেশীয়ের মুখের ন্যায়?

    খ্রিষ্টানদের এই স্বর্গও এক প্রকারের বন্ধন। কারণ সে স্থানে ছোট-বড় বিচার আছে। আর যখন সেই একই নগরে বাস করিতে বাধ্য তখন কষ্ট হইবে না কেন? তদ্ব্যতীত যাঁহার মুখ আছে তিনি কখনও সর্বজ্ঞ এবং সর্বেশ্বর হইতে পারেন না ৷১৩২

    ১৩৩। দেখ, আমি শীঘ্র আসিতেছি এবং আমার প্রতিফল আমার সঙ্গে। যাহার কেমন কর্ম, তাহকে তেমনি ফল দিব ॥ যো০ প্র০ প০ ২২। আ০ ১২ ॥

    সমীক্ষক –যদি সত্যই মনুষ্য কর্মানুসারে ফল পায় তবে পাপ কখনও ক্ষমা করা যায় না। যদি ক্ষমা করা যায়, তবে বাইবেলের বাক্য মিথ্যা। যদি বলা হয় যে, পাপ ক্ষমা করার কথাও বাইবেলে লিখিত আছে, তবে পূর্বাপর বিরুদ্ধ বলিয়া উহা মিথ্যা। অতএব এ সকল কথা বিশ্বাস করা যাইতে পারে না।

    আর কত লেখা যাইবে? ইহাদের বাইবেলে এইরূপ লক্ষ লক্ষ খণ্ডন বিষয় আছে। এই স্থলে বাইবেলের কিঞ্চিৎ নিদর্শন মাত্র দেওয়া হইল। এতদ্বারা বিস্তৃতরূপে বুঝিয়া লইবেন।

    এইপুস্তকে অল্প কয়েকটি মাত্র সত্য আছে; অবশিষ্ট মিথ্যায় পরিপূর্ণ। অসত্যের সংসর্গে সত্য। বিশুদ্ধ থাকিতে পারে না; এই কারণে বাইবেল বিশ্বাসযোগ্য নহে। কিন্তু বেদ গ্রহণ করা হইলেই বিশুদ্ধ সত্য গৃহীত হয় ॥১২৯ ॥

    ইতি শ্রীমদ্দয়ানন্দসরস্বতীস্বামীকৃতে সত্যার্থপ্রকাশে
    সুভাষাবিভূষিতে কৃষ্ণীনমতবিষয়ে ত্র
    ত্রয়োদশঃ সমুল্লাস সম্পূর্ণ ॥১৩ ॥

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশুনছ, কোথাও আছো কি কেউ?
    Next Article টোটেম ও টাবু – সিগমুন্ড ফ্রয়েড (ভাষান্তর : ধনপতি বাগ)
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.