Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সব ভুতুড়ে – ইশতিয়াক হাসান

    ইশতিয়াক হাসান এক পাতা গল্প188 Mins Read0

    সব ভুতুড়ে

    এমন অনেক ঘটনা আছে যেগুলো আগের নয়টি অধ্যায়ের কোনোটির মধ্যেই ফেলা যাচ্ছে না। কিন্তু তাই বলে এগুলো পড়ার আনন্দ থেকে তো পাঠকদের বঞ্চিত করতে পারি না। তাই এ ধরনের কিছু অশুভ, ব্যাখ্যার অতীত ঘটনাকে আমরা একসূত্রে গেঁথেছি, ‘সব ভুতুড়ে’ নামে।

    সেই বুড়ো লোকটা

    এবারের কাহিনিটি ভারতীয় এক তরুণের। চলুন এটা শুনি তার মুখ থেকেই।

    ১৯৮৮-৮৯ সালের ঘটনা। বাবা তখন মুম্বাই থেকে লনাভালা বদলি হলেন। মুম্বাই থেকে মোটামুটি ১২০ কিলোমিটার দূরের পাহাড়ি একটা স্টেশন এই নাভালা। তখন আমি পড়ি ক্লাস নাইনে। গ্রীষ্মের ছুটিতে মা, বড় ভাই আর আমি বাবার কাছে চলে যেতাম।

    আমার চাচাতো ভাই পরাগ, যে আমার থেকে কয়েক বছরের বড়, থাকত লনাভালাতেই। সেখানে গেলেই তাই একসঙ্গে প্রচুর ঘোরাফেরা আর আড্ডাবাজি হত। তবে আমাদের অবসর বিনোদনের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল কাছের একটা পাহাড়। একটা স্কুলের পাশেই ছিল ওটা। সাইকেলে চেপে ফ্লাস্ক ভর্তি কফি নিয়ে চলে যেতাম পাহাড়টায়। ঠাণ্ডা হাওয়া খেতে-খেতে গল্প চলত, আর তাকিয়ে থাকতাম তারার দিকে। পরাগের দু-জন বন্ধুও সাধারণত সাইকেল নিয়ে আসত আমাদের সঙ্গ দিতে।

    এক রাতের ঘটনা। প্রিয় জায়গাটায় বসে কফি পান আর নানান আলাপে মশগুল আমরা। এসময়ই একজন মানুষকে আসতে দেখলাম এদিকে। কাছাকাছি হতেই দেখলাম রোগা, বুড়ো একজন মানুষ। এত রাতে এমন একজন লোককে এখানে দেখে অবাক হলাম সবাই। কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তিনি এখানে কী করছেন আর তার কোনো সাহায্য লাগবে কিনা। বুড়ো জানালেন কাছের একটা গ্রামে থাকেন। আর মুম্বাইয়ের দিকে যাওয়া রাতের শেষ ট্রেনটা ধরবেন। মুম্বাইয়ে ছেলের কাছে যাবেন। লোকটার দুর্বল শরীর দেখে এমনিতেই মায়া হচ্ছে। তারপর আবার মনে হলো হেঁটে গেলে নির্ঘাত ট্রেনটা মিস করবেন। আর এসময় এদিক থেকে রেলস্টেশনে পৌঁছনোর কোনো যান পাওয়ারও সুযোগ নেই। কাজেই পরাগ তাকে তার বাই সাইকেলে করে স্টেশনে পৌঁছে দিতে চাইল। পরাগের বন্ধুর সাইকেলে চেপে আমি আর আমার ভাইও ওদের সঙ্গী হলাম। তঁকে স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে এসে আবারও গল্পে মেতে উঠলাম।

    তারপরই যেটা ঘটল এটা মনে করে আজও শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে আমার। লোকটাকে নামিয়ে দিয়ে আসার পর আধ ঘণ্টাও পার হয়নি। সবারই ঘুম-ঘুম আসছে। বাসায় ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতে শুরু করলাম। এসময়ই অন্ধকারে একটা কাঠামোকে আসতে দেখলাম, একটু আগের লোকটা যেদিক থেকে এসেছেন সেদিক থেকেই। তারপরই অবাক বিস্ময়ে আবিষ্কার করলাম সেই পলকা দেহের বুড়ো লোকটাই এগিয়ে এল আমাদের দিকে,যাকে অল্প আগে স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে এসেছি। বুড়ো কাছে এসে স্টেশনে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করলেন।

    আমরা সবাইই বড় রকমের একটা ধাক্কা খেয়েছি। মনে হলো যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছি। নড়তে পর্যন্ত পারছি না। মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে লোকটার পক্ষে কোনোমতেই হেঁটে এখানে আসা সম্ভব নয়। আর তিনি ফিরে এসে আবার স্টেশনেই বা যেতে চাইবেন কেন?

    মনে-মনে প্রার্থনা করতে শুরু করলাম। আর এর জোরেই হোক কিংবা অন্য কোনো কারণে হঠাৎ করেই যেন ঘোর কেটে গেল আমার। ধাক্কা দিয়ে অন্যদেরও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনলাম। তারপর সাইকেলে উঠে দ্রুত এই জায়গা ছাড়লাম, একবারও পিছু ফিরে তাকাবার সাহস করলাম না।

    রাতে আমাদের একজনেরও ঘুম হলো না।

    কয়েকদিন পর স্থানীয় লোকেদের সেই বুড়ো লোকটার কথা জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু কেউই তার ব্যাপারে কিছু বলতে পারল না। এমনকী বুড়ো লোকটাকে দেখেছে এমন মানুষও পাওয়া গেল।। তবে রাতে ওই পাহাড়টার কাছে না ঘেঁষার পরামর্শ দেওয়া হলো।

    এরপরও আরও অনেকবার লনাভালা গিয়েছি। কিন্তু কখনও আমাদের পুরানো আড্ডার জায়গাটায় যাওয়ার সাহস করিনি।

    যখন ট্রেন এল

    আমেরিকার মিনেসোটার এক তরুণের অভিজ্ঞতার কাহিনি এটি। আমরা শুনব এটা তার মুখ থেকেই।

    কয়েক বছর আগের ঘটনা। সম্ভবত ২০০৫-৬ সালের দিকে হবে। আমার এবং আমার বন্ধুদের মাছ ধরার প্রবল একটা নেশা ছিল সেসময়। নিয়ম করে প্রায় প্রতি হপ্তাতেই মাছ শিকারে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। বিশেষ করে এলক নদীর একটি বিশেষ জায়গায় অনেকবার মাছ ধরতে গিয়েছি আমরা। মাছ ধরার এলাকাটা ছোট্ট একটা সেতুর নীচে। আর এদিকটায় রাস্তাও এক লেনের। সেতুর নীচে নদীটাতে একটা বাঁধ দেওয়া হয়েছে।

    এই নির্দিষ্ট জায়গাটাতে পৌঁছতে হলে প্রথমে ছোটখাট একটা বাণিজ্যিক ভবনের কাছে গাড়ি রেখে নেমে পড়তে হয়। তারপর হেঁটে গাছপালার ভিতর দিয়ে ঢালু পথ ধরে নদীর কাছে পৌঁছতে হয়। নদীতে নামার জন্য সে অর্থে কোনো রাস্তা নেই। লোকজন চলাচলের ফলে একটা পায়ে চলা পথ মত তৈরি হয়েছে। তবে রাস্তার ধার থেকেই পথের দু-পাশে দুই-তিন ফুট উঁচু ঘাসের বিস্তার। কাছেই একটা রেললাইন আছে। ওটাতে খুব একটা ট্রেন চলাচল নেই। রেললাইনটা দেখিনি কখনও। তবে এর কথা জানি।

    আরও অনেক রাতের মত সে বিশেষ রাতটিতেও আমাদের এই প্রিয় জায়গাটিকে মাছ শিকারের জন্য বেছে নিই। কিন্তু এদিন এখানে পৌঁছার সঙ্গে-সঙ্গেই কেন যেন অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি হলো। মনে হচ্ছে যেন কেউ আমাদের দিকে নজর রাখছে। যে কোনো মুহূর্তে ঝাপিয়ে পড়বে গায়ের ওপর। তবে জোর করে মনের কল্পনা বলে বিষয়টাকে উড়িয়ে দিতে চাইলাম।

    আগুন জ্বেলে মাছ ধরা শুরু করলাম। কয়েক মিনিট পরেই হঠাৎ মনে হলো গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস গাড়িতে রেখে এসেছি। ওটা আনতে রওয়ানা হলাম। তবে একা না, দুজন বন্ধুকে জোর করে সঙ্গে নিয়ে নিয়েছি। লম্বা ঘাসের মধ্য দিয়ে তাদের দুজনের পিছু-পিছু এগোলাম। এসময়ই আবার অদ্ভুত একটা অনুভূতি হলো। মনে হলো কেউ যেন ঘাসের ভিতর থেকে আমাদের দেখছে। উঁকি-ঝুঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করলাম, তবে অন্যদের কিছু বললাম না। কারণ আমার বন্ধু দুজনও বেশ ভীতু। আর অতিপ্রাকৃত ঘটনার প্রতি বিশ্বাসে আমার চেয়েও এক কাঠি বাড়া।

    যে জিনিসটা দরকার সেটা নিয়ে আবার ফিরে এলাম। মোটামুটি আধ ঘণ্টা পর হঠাৎ একটা ট্রেন এল। তবে আশ্চর্য ঘটনা, এর আগে যতগুলো রাতে এখানে সময় কাটিয়েছি একবারের জন্যও কোনো ট্রেনের আওয়াজ শুনিনি। আর এটাও এল যেন কোনো ধরনের জানান না দিয়ে। মনে হলো যেন। নিঃশব্দে উড়ে এসেছে। তারপরই ট্রেন থেকে একটা কিছু ফেলার শব্দ হলো। গড়িয়ে-গড়িয়ে একটা গর্তে পড়ল ওটা। ভয়ঙ্কর একটা চিৎকার করে উঠল জিনিসটা। আর যাই হোক, ওটা রক্তমাংসের কোনো মানুষের কণ্ঠ না।

    আমার পাশেই এক বন্ধু মাছ ধরছে। দুজন দুজনের দিকে তাকালাম। তবে কেউ কোনো কথা বললাম না। কয়েক মুহূর্ত পরেই আগুনের পাশের লম্বা জংলা ঝোপের মধ্যে একটা প্রচণ্ড আলোড়ন উঠল। ঝোপটা ওই গর্তটার ধারেই। মনে হচ্ছে যেন ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঝোপটার কাছে বরাবরই বসে আছে আমার বন্ধু। সে কোনো ধরনের বাতাস অনুভব করছে না। দমকা বাতাস গায়ে লাগল না আমাদের আর কারোও। গ্রীষ্মের শান্ত একটা রাত এটা। সেতুটার নীচে মাছ ধরছি আমি। এখান থেকেই জঙ্গলটার দিকে তাকালাম। বাতাস যে নাড়াচ্ছে না ওটাকে এখন পরিষ্কার, বরং মনে হলো এর ভিতরে কেউ একজন আছে, সেই খেপে গিয়ে নাড়াচ্ছে ঝোপগুলো।

    এরপর আর ওখানে অপেক্ষা করার মত অবস্থা ছিল না আমাদের। নদীতে আরও কিছু লোক মাছ ধরছে। তবে তাদের দিকে মনোযোগ দেওয়ার কিংবা কিছু জিজ্ঞেস করার কথা চিন্তাতেও এল না। তারপরই আমার এক বন্ধু বলল, চল, দোকানে যাই। কারণ অশুভ কিছুর উপস্থিতি টের পেলে বাড়িতে যাওয়ার কথা বলতে নেই। তাহলে ওটা আপনার পিছু-পিছু বাড়ি হাজির হতে পারে।

    দেরি না করে তল্পিতল্পা গুটিয়ে গাড়িতে উঠলাম। তবে সোজা বাড়িতে না গিয়ে সত্যি একটা দোকানে গেলাম। পাছে আবার জিনিসটা অনুসরণ করে আমাদের কারও বাড়ি পৌঁছে যায়। পরে কথা বলে জানলাম, শুধু আমার নয়, আজ এখানে যাবার পর বেশিরভাগেরই কেমন ভয়-ভয় করছিল। ওটা কী জানি না। তবে ভয়ঙ্কর কিছু একটা যে তাতে সন্দেহ নেই। আর কিছুক্ষণ সেখানে থাকলে, হয়তো আমাদের কারও কারও ওটাই হত জীবনের শেষ মাছ শিকার।

    মুরগীর খামারে আতংক

    এবারের ঘটনাটি ভারতীয় এক তরুণের। আট-দশ বছর আগের কথা। হিমান তখন তার এক বন্ধু বিনোদের সঙ্গে সবে একটা মুরগীর খামার দিয়েছে।

    মুম্বাইয়ের কিনারা ঘেঁষে কালিয়ান নামের একটি জায়গা আছে। তার কয়েক মাইলের মধ্যে একটা গ্রামে মাঝারি আকারের একটা জায়গা বাছাই করে তারা। আর মুরগীর খামার এতটাই পরিচিত যে যারা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয় তাদেরও জানা আছে এ ধরনের খামার চালানো কী ঝক্কির ব্যাপার। যত্ন-আত্তিতে -একটু এদিক-সেদিক হলেই দেখা যাবে খামারের বারোটা বেজে গেছে। নিয়মিত খাবার, পানি দিতে হবে। তাও পরিমিত মাত্রায়। রোগ-বালাই আর মড়ক থেকে রক্ষার জন্য ওষুধও দিতে হবে পুরো নিয়ম মেনে। আর এটা এমন এক কাজ যেখানে পুরো দায়িত্ব ভাড়া করা লোকদের হাতে দিয়ে দিলে সর্বনাশ হওয়ার সম্ভাবনা ষােলো আনা।

    কাজেই হিমান স্ত্রীসহ খামারেই থাকার সিদ্ধান্ত নিল। তার স্ত্রী আবার এসময় বেশ কয়েক মাসের অন্তঃসত্ত্বা। স্ত্রীকে নিয়ে এখানে যাওয়াতে আপত্তি তুলল পরিচিত অনেকেই। বলা হয় এ ধরনের খামারে অনেক সময়ই অশুভ শক্তির আনাগোনা থাকে। তারপর আবার একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলার জন্য এটা আরও বিপজ্জনক জায়গা। তবে হিমানের স্ত্রী দারুণ সাহসী মেয়ে। কাজেই এসব কুসংস্কারে কান না দিয়ে স্বামীর সঙ্গে থাকা স্থির করল সে।

    খামারের কাজ সাহায্য করার জন্য তিন-চারজন স্থানীয় গ্রামবাসীকে নিয়োগ দিল হিমান আর তার বন্ধু বিনোদ। এদের মধ্যে দুজন মুসলমান। বলা হয় এই এলাকার মুসলমানরা এ ধরনের খামারের কাজে দারুণ দক্ষ।

    শুরুর কয়েকটা মাস ঠিকঠাকমতই চলল সব কিছু। তারপর হঠাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে শুরু করল পরিস্থিতি। সব ধরনের তদারকির পরেও প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যায় মুরগী মরতে লাগল। কোনো রোগ-বালাইয়ের চিহ্নও পাওয়া যাচ্ছে না। মুরগীগুলোকে নিয়মিত খাওয়ানো-দাওয়ানো হচ্ছে, ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, সর্বোচ্চ জীবাণুমুক্ত পরিবেশে রাখা হয়েছে। কিন্তু দিনকে দিন অবস্থা আরও খারাপ হতে লাগল। এমনকী পশু চিকিৎসকও হঠাৎ এভাবে প্রাণীগুলোর মৃত্যুর কোনো কারণ আবিষ্কারে ব্যার্থ হলেন।

    এদিকে হিমানের স্ত্রীর মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মাল এখানে কোনো অশুভ শক্তির উপস্থিতি আছে। আর ওটা তার বাচ্চাটার ক্ষতি করতে চায়। মাঝে-মাঝেই মূৰ্ছা যেতে লাগল সে। অথচ হিমান সবসময়ই দেখে এসেছে তার স্ত্রী সহজে ঘাবড়ে যাওয়ার পাত্রী না। এই পর্যায়ে হিমানের স্ত্রী আপাতত খামার ছেড়ে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠতে রাজি হলো। ঠিক হলো বাচ্চাটা না জন্মাননা পর্যন্ত খামারে আসবে না সে।

    কোনো কোনো মানুষ বিশ্বাস করে অন্তঃসত্ত্বা নারী আর বয়ঃসন্ধিকালের মেয়েদের উপস্থিতি অশুভ শক্তি আর আত্মাদের উৎসাহী করে তোলে। কারণ এ ধরনের মেয়েদের মানসিক অস্থিরতা অশুভ শক্তিদের সুবিধা করে দেয়। কাজেই হিমান আশা করল তার স্ত্রী খামার ছাড়ার পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

    কিন্তু হলো উল্টোটা। নতুন ধরনের একটা ঘটনা শুরু হলো। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে-সঙ্গে বিপুল পরিমাণে পাথর পড়তে থাকল বাড়ির উপর। পাথরগুলোর উৎস কী তাও বোঝা গেল না, কারণ মনে হয় যেন ওগুলো আকাশ থেকে পড়ছে। গ্রামবাসীরা এগিয়ে এল তাদের সাহায্যে। আশপাশের ঝোপঝাড়ে আর গাছে লুকিয়ে থেকে পাথরের রহস্যভেদে তৎপর হলো সবাই। এমনকী সার্চ লাইট মারা হলো আকাশেও। কিন্তু পাথরগুলো মনে হলো যেন শূন্য থেকেই গজিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় পুলিশকে জনানো হলো বিষয়টা। কিন্তু অতিপ্রাকৃত শক্তির বিরুদ্ধে পুলিশদেরই বা কী করার আছে? তারাও ব্যর্থ হলো এটা থামাতে।

    তবে সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় হলো পাথরগুলো কারও শরীরে এসে লাগে না। এমনকী যদি পাথর বৃষ্টির মাঝখানেও দাঁড়িয়ে থাকেন আপনাকে বাঁচিয়ে চারপাশে পড়তে শুরু করবে ওগুলো।

    শেষমেশ আর কোনো উপায় না দেখে অতিপ্রাকৃত ঘটনা সম্পর্কে অভিজ্ঞ কারও সাহায্য নেওয়া স্থির করল হিমান আর বিনোদ। দমবিভলির একজন বিখ্যাত ওঝার কথা শুনেছে তারা। ভূত, আত্মা এসব নামাতে নাকি ওস্তাদ ভদ্রলোক। পরোপকারী হিসাবেও সুনাম আছে তাঁর। মানুষকে সাহায্য করার বিনিময়ে কোনো অর্থ-কড়িও নেন না।

    হিমান আর বিনোদের কাছ থেকে সব কিছু শুনে জ্ঞানী ওঝা বুঝে গেলেন এটা শক্তিশালী কোনো কালো জাদুকরের কাজ। কিন্তু হিমান আর বিনোদ অবাক হয়ে আবিষ্কার করল বুড়ো ভদ্রলোকটি খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তারপরই তিনি বললেন, এই শক্তিটি এত ক্ষমতাশালী যে তাঁর পক্ষে এর সঙ্গে টক্কর দেওয়া সম্ভব নয়। ভাল হয় যদি তারা অন্য কারও সাহায্য নেয়।

    কিন্তু হিমানের বার-বার অনুরোধে টলে গেলেন বুড়ো ওঝা। আগামীকাল আসতে বললেন তাদের। পরের দিন যখন এল তখন একটা পাত্র দিলেন। কালো রং করা পাত্রটা লাল কাপড়ে ঢাকা। বেশ ভারি। ওঝা তাদের বললেন এটার মধ্যে যে জিনিসটা আছে আশা করা যায় সেটি অশুভ আত্মাটাকে বশ মানাতে পারবে।

    কালিয়ান থেকে মুরগীর খামারের দিকে যেতে হলে একটা নদী পড়ে। নদীর ওপরে একটা সেতু আছে। সাধারণত রাতের বেলা খুব দরকার না হলে কেউ এই নদীর তীরে ভিড়ে না। বলা হয় এই জায়গাটাতে কালো জাদুর চর্চা হয়। রাতে সেতু পেরোনোর সময় অনেক সময়ই রহস্যজনকভাবে যানবাহনে গোলমাল দেখা দেয়।

    বুড়ো ভদ্রলোক হিমান আর তার বন্ধুকে রাত বারোটার পর পটটা নদীর তীরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। নদীর তীরে একটা বড় পাথর আছে, যেটায় রেখে সাধারণত নারকেল ভাঙা হয়। ওঝা পটটা ওই পাথরে ভেঙে সঙ্গে-সঙ্গে চলে আসতে বলেন। সতর্ক করে দেন কোনো অবস্থাতেই যেন ঘুরে কী ঘটেছে দেখার চেষ্টা না করে। আর জায়গাটা ছেড়ে আসার সময় দৌড়নো চলবে না, জোর কদমে হেঁটে আসতে হবে।

    হিমান বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মনে-মনে। কিন্তু কালো জাদুর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এ ছাড়া আর কোনো পথও খোলা নেই সামনে। কাজেই বিনোদসহ পটটা নিয়ে বের হলো রাতের অভিযানে। নদীর ধারটা রাতের বেলা একেবারেই নির্জন থাকে। তারপর আবার দু-পাশের গভীর জঙ্গল, এমনকী প্রচণ্ড সাহসী লোকটির আত্মাও কাঁপিয়ে দেবে। কাজেই দুরুদুরু বুকে পাথরটা খুঁজে বের করল তারা। তারপর ওটার ওপরে পটটা রেখে গুঁড়িয়ে দিল ওটাকে হিমান। ঘুরে মাত্র কয়েক কদম এগিয়েছে এমন সময় একটা অট্টহাসির আওয়াজ শুনল পিছনে। তারপরই মনে হলো কে যেন পিছন থেকে ডাকছে তাদের।

    হতচকিত হয়ে হিমান প্রায় মাথা ঘুরিয়ে ফেলেছিল কী ঘটেছে দেখার জন্য। কিন্তু বিনোদ এই পরিস্থিতিতেও মাথা ঠাণ্ডা রেখেছে। হিমানের কাঁধে হাত দিয়ে আস্তে-আস্তে তাকে দূরে সরিয়ে আনতে লাগল অভিশপ্ত জায়গাটি থেকে। বাড়ি পৌঁছেই বিছানায় শরীর এলিয়ে দিল তারা। তারপর তলিয়ে গেল গভীর ঘুমে। পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙল। এখন নির্ভার। কারণ গতদিনের কাজ ঠিকমতই সমাধা করেছে, একেবারে ওঝা যেমন যেমন বলেছেন ঠিক তেমন তেমন। অর্থাৎ তাদের সমস্ত সমস্যারও সমাধান হয়ে গেছে। খুশি মনে বুড়ো ভদ্রলোকের বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো তাকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য।

    কিন্তু বাড়িটাতে পৌঁছেই চমকে উঠল তারা। কেমন একটা থমথমে ভাব বিরাজ করছে। বাড়িতে ঢোকার পর ওঝার ছেলের সঙ্গে দেখা হলো তাদের। এমনিতে হাসি-খুশি লোকটাকে খুব বিষণ্ণ দেখে অবাক হলো। তারপরই জানালেন তার বাবা, বৃদ্ধ ওঝা গত রাত সাড়ে বারোটায় মারাত্মক একটা হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন। এর কিছুক্ষণ পরেই মারা যান তিনি।

    হিমান আর বিনোদ এতটাই ধাক্কা খেয়েছে যে কিছু বলতে পারল না। মন খারাপ করে বাড়িতে ফিরে এল। তবে সন্ধ্যা নামার পরপরই শুরু হলো আবার সেই পাথর বৃষ্টি। চলতেই থাকল পরের দিনগুলোতে। ওঝার নির্দেশ অনুযায়ী সব কিছুই করেছে তারা। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। তারপর আবার ওঝার হঠাৎ মৃত্যুতে দারুণ ভেঙে পড়ল হিমান আর বিনোদ। খামারের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলল তারা।

    তবে এখান থেকে যাবার সময় একটা জিনিসই বার-বার তাদের কুরে-কুরে খাচ্ছিল। ওঝার মৃত্যুটা কি নিছক স্বাভাবিক ঘটনা, নাকি ওই কালো জাদুকরের সঙ্গে লাগতে যাওয়াই কাল হয়েছে তার? ভদ্রলোকের খুব ভালই জানা ছিল শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়তে চলেছেন। তারপরও অসহায় দুই যুবককে সাহায্য করতে গিয়েছিলেন। তবে কি তাঁর তুলনায় অনেক শক্তিশালী কোনো শক্তির বিরুদ্ধে লাগতে যাওয়ার মূল্য দিতে হয়েছে?

    বারান্দায়, আমার অপেক্ষায়

    কাহিনিটা শুনিয়েছেন সিংগাপুরের পঁয়তাল্লিশ বছর বয়স্ক এক অফিস সহকারী। গল্পটা বরং তাঁর মুখ থেকেই শুনি।

    ফ্ল্যাটে বেশ রাত করে ফেরার অভ্যাস আমার। আর কখনও এটা নিয়ে কোনো ঝামেলায়ও পড়তে হয়নি। তবে একদিন রাত এগারোটার দিকে এমন একটা ঘটনা ঘটল যেটা কোনোদিন ভুলতে পারব না।

    কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার আগে সেদিন শহরের. অপর পাশের এক বন্ধুর বাড়িতে আড্ডা দিতে গিয়েছি। সন্ধ্যায় আবার আমার স্ত্রী, বাচ্চাদের নিয়ে তার বাবার বাড়িতে গিয়েছে। বাসাতে তাই কেউ নেই।

    বেডক সংরক্ষিত এলাকায় এসে বাস থেকে নেমে পড়লাম। তারপর যে ব্লকে থাকি সেদিকে চলে-যাওয়া রাস্তা ধরে রওয়ানা হলাম। বেশ রাত হয়ে যাওয়ায় পথে খুব একটা লোকজন নেই দেখে অবাক হলাম না। তবে আমার সামনে একটা মেয়ে হাঁটছে। মেয়েটার লম্বা চুল, আর চমৎকার কাঠামো পিছন থেকেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।

    স্বাভাবিকভাবেই একজন পুরুষ হিসাবে মনে কৌতূহল জেগে উঠল। পিছন থেকে যেমন দেখা যাচ্ছে সামনে থেকেও কি সে এমন সুন্দর? তাকে অতিক্রম করে যাওয়ার জন্য দ্রুত পা চালালাম।

    মেয়েটাকে পেরিয়ে গিয়েই চটজলদি একবার পিছন ফিরে চাইলাম দেখার জন্য। মন্দ না। তবে চেহারাটা কেমন ফ্যাকাসে। যেহেতু সামনে চলে এসেছি তাই দ্রুত আমার ব্লকের দিকে হাঁটতে লাগলাম। পাছে আবার আমি তার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছি ভেবে মেয়েটা অস্বস্তিতে পড়ে যায়।

    যখন আমার ব্লকে পৌঁছলাম তখন পিছনে মেয়েটার আর কোনো নাম নিশানা পেলাম না, সামনে তো নয়ই। বাড়ির সামনে এসে লিফটের অপেক্ষায় না থেকে সিঁড়ি বেয়ে পাঁচ তলায় ওঠা স্থির করলাম।

    পাঁচ তলায় পৌঁছে সিঁড়ির কোনা থেকে সামনে তাকাতেই তাকে দেখতে পেলাম। এটা সেই মেয়েটা, যে আমার পিছনে ছিল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমার অপেক্ষা করছে এখন।

    আমার দিকে তাকিয়ে হাসল সে।

    উল্টো ঘুরেই দৌড়তে শুরু করলাম। পাশের ব্লকে বন্ধুর বাসায় পৌঁছনোর আগ পর্যন্ত থামলাম না। সেই রাতে আর বাড়ি ফিরলাম না।

    ঈশ্বরকে ধন্যবাদ এমন ঘটনা জীবনে আর ঘটেনি।

    পথ হারানো আত্মা

    এই কাহিনিটা শোনান সিংগাপুরের এক তরুণী ক্লার্ক। তাঁর জবানীতেই পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো এটা।

    ভূত-প্রেতের ব্যাপারে আমার বড় ভাইয়ের কখনওই খুব একটা আগ্রহ ছিল না। এসবে ওর বিশ্বাস ছিল বলেও মনে হয় না। তারপরই তার জীবনে ঘটল অস্বাভাবিক একটা ঘটনা।

    বছর দুয়েক আগের কথা। একদিন বাসায় ফিরল সে হতবিহ্বল চেহারা নিয়ে। কপালে চিন্তার রেখা। রাতে খাবার সময় এমনকী তার পরেও তাকে বেশ বিষণ্ণ দেখাল। ঘুমানোর আগে আমি আর আমার বোন জানতে চাইলাম এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন তাকে? শুরুতে কিছু বলতে চাইল না। তবে পরের দিন রইল কেন যেন মনে হচ্ছে দুটো চোখ তার মাথার পিছনে সেঁটে আছে। তার সব কিছুর ওপরই নজর রাখছে ওই দুটো চোখ। আমি আর আমার বোন হেসে উড়িয়ে দিলাম কথাটা। বিষয়টা নিয়ে বেশ কিছুটা সময় ঠাট্টা-মস্করাও করলাম। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই বুঝে গেলাম এটা মোটেই হেলাফেলা করার মত ব্যাপার নয়।

    আমার ভাই সবসময়ই বেশ ঠাণ্ডা মাথার মানুষ। তবে এই সপ্তাহে সে কেমন উদ্ভট আচরণ করতে লাগল। ঘুমের মধ্যে বিড়বিড় করে কী যেন বলে, আরা সারা রাত এপাশ-ওপাশ করে। কখনও কখনও তার ঘুমের মধ্যে কথা বলার শব্দে আমাদেরও ঘুম ভেঙে যায়। ধীরে-ধীরে ওজন হারাতে লাগল সে। এমনকি কেউ তার সঙ্গে কথা বললেও সেদিকে নজর থাকে না। খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম আমরা। তার এক বন্ধুকে বিষয়টা জানালাম। বাসায় এসে একবার ওর দিকে তাকিয়েই বলল, এটা মোটেই সাধারণ কোনো ব্যাপার মনে হচ্ছে না।

    ভাইয়ের বন্ধু তাকে দুজন লোকের কাছে নিয়ে গেল। তাদের পারিবার যে কোনো অস্বাভাবিক সমস্যার মুখোমুখি হলেই এই দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাদের একজনই ধরতে পারলেন ভাইয়ার সমস্যাটা।

    যেদিন ভাইয়ার প্রথম মনে হয়েছে দুটো চোখ তার পিছনে সেঁটে আছে সেদিনই ঘটনাটি ঘটে। কাজ থেকে ফিরবার সময় একটা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের জায়গার পাশ দিয়ে আসছিল সে। এসময় এমন একটা পথে পা দিয়ে বসে যেটা একটা আত্মা অন্য পৃথিবীতে যাবার জন্য ব্যবহার করে। দুর্ভাগ্যক্রমে ওই একই সময়ই অন্য পৃথিবীতে যাওয়ার পথে ছিল ওটা। ভাইয়া তার যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে আত্মাটা তার শরীরে ঢুকে পড়ে। এখন সে পথ হারিয়েছে।

    আত্মাটা তার যাত্রাটা শেষ করতে চায়, আর ভাইয়াও চায় মুক্তি। এর একটাই সমাধান। তা হলো ভাইয়াকে আবার সেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের জায়গাটার কাছে গিয়ে পথটার ঠিক যেখানে পা দিয়েছে সেটা খুঁজে বের করে সেখানে দাঁড়াতে হবে। আর আত্মাটাও সেক্ষেত্রে খুশি মনে তাকে ছেড়ে যাবে।

    ভাইয়া লোকটির পরামর্শটা মেনে নিল। তারপর যেখানে ঘটনাটা ঘটেছে সেখানে ফিরে গেল। সৌভাগ্যক্রমে যে জায়গায় আত্মাটা তার ওপর সওয়ার হয়েছিল বলে মনে হয়েছে সেটা খুঁজে পেল। পরে সে আমাদের বলেছে ঠিক সেই মুহূর্তে তার দারুণ শান্তি লাগে। আর মনে হয় কী একটা বোঝা শরীর থেকে সরে গেছে।

    ভুতুড়ে পুতুল

    রবার্ট দ্য হান্টেড ডল নামেই বেশি পরিচিত সে। আমেরিকার ছোট্ট, পৈশাচিক এই মুখটিকে একবার যে দেখেছে ভুলতে পারবে না যতদিন বেঁচে থাকবে।

    ভুতুড়ে পুতুল নিয়ে নানান ধরনের কিচ্ছা কাহিনি তৈরি হয়ে আসছে সম্ভবত মানুষ পুতুল বানানো শেখার পর থেকেই। তবে রবার্ট অন্যদের চেয়ে আলাদা, কারণ অনেক লোকই রবার্টকে পুতুলত্বের খোলস ছেড়ে, চলাফেরা কিংবা কাজ করতে দেখার দাবি করেছে। কেউ-কেউ আবার তার আক্রোশের শিকারও হয়েছে।

    রবার্ট দ্য হন্টেড ডলের অশুভ প্রভাব বিস্তারের শুরু গত শতকের গোড়ার দিকে, যখন খেয়ালি শিল্পী রবার্ট ইউজেন অটো ফ্লোরিডা শহরের কেন্দ্রে বিখ্যাত আর্টিস্টস হাউস-এ বসবাস শুরু করেন।

    প্রচুর বিত্তশালী ছিল অটো পরিবার। ফ্লোরিডার জীবনে বেশ মানিয়ে গেলেন তাঁরা। স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে এই বাড়িতে থাকত তাঁদের ছোট্ট ছেলে আর বেশ কিছু চাকর-বাকর। স্থানীয় কিংবদন্তী বলে অটোরা নিয়ম-কানুনের ব্যাপারে খুব কড়া ছিলেন। কর্মচারী আর বাড়ির চাকর-বাকরদের কাছ থেকেও পুরো আনুগত্য আশা করতেন। ছেলে গেনের দেখভালের জন্য জ্যামাইকান একটা মেয়েকে চাকরি দেন তাঁরা। অটোরা বেশিরভাগ সময় আমেরিকার বিভিন্ন জায়গাসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়াতেন। এসময় এই জ্যামাইকান মহিলাই শিশুটাকে সঙ্গ দিত। কিন্তু ছোট্ট ছেলে আর জ্যামাইকান মহিলার এই চমৎকার সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হলো না।

    একদিন মিসেস অটোর বিছানায় বসার জন্য চাকরি গেল জ্যামাইকান সেবিকার। তবে যাবার আগে গেনেকে সে দিয়ে গেল হাতে বোনা একটা স্টাফ করা পুতুল। লোকে বলে জ্যামাইকান এই নারী ভুডু আর কালো জাদুর কৌশল জানত। পুতুলটা বানানো হয় গেনের চেহারার আদলে। যদিও একেবারে পুরোপুরি গেনের আদল পায়নি পুতুলটা, তারপরও ওটা দারুণ মনে ধরল ছোট্ট ছেলেটির।

    পুতুলটার নাম দেওয়া হল রবার্ট, গেনের নামেরই প্রথম অংশ এটা। জ্যামাইকান সেবিকার কাছ থেকে পুতুলটা নেওয়ার পর থেকে আর ওটাকে এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল হতে দিল না ছোট্ট গেনে। সব জায়গাতেই পুতুলটাকে নিয়ে যাওয়া চাই তার। শহরের লোকেরা প্রায়ই মিসেস অটো আর ব্যক্তিগত পরিচারকদের সঙ্গে গেনে আর রবার্টকে শহরে ঘুরে বেড়াতে দেখতে লাগল।

    খাবার সময় গেনের পাশেই নিজের ছোট্ট চেয়ারটায় বসে রবার্ট। আর মা-বাবার অগোচরে কখনও কখনও পুতুলটার মুখে দু-এক দলা খাবার পুরে দেয় গেনে। গোসলের সময় পানিতে ভিজতে-ভিজতে কাঠের জাহাজ নিয়ে যখন খেলা করে গেনে, রবার্টও থাকে পাশেই, একটা শুকনো তোয়ালের আশ্রয়ে। রাতে ঘুমে ঢুলতে থাকা ছেলেটার পাশে শুইয়ে দেওয়া হয় রবার্টকে, স্বপ্নেও ছোট্ট ছেলেটার সঙ্গী হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত তখন সে।

    তবে ধীরে-ধীরে গেনে আর তার পুতুলের সম্পর্ক একটা অশুভ দিকে মোড় নিল। গেনেকে তার খেলার ঘরে লাফালাফি, হৈচৈ করতে দেখে যায় কিছুক্ষণ। তারপর মুহূর্তের বিরতি। এবার নিচু গলায় কথা-বার্তার আওয়াজ ভেসে আসে পরিচারকদের কানে। প্রথমে গেনের বালকসুলভ কণ্ঠ, তারপরই সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটা কণ্ঠ। কখনও কখনও গেনের কণ্ঠ কোনো কারণে চড়ে যায়। তবে অপর তরফ থেকে যেন কেবল বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করা হয় তাকে। এই সময় থেকেই অস্বস্তি শুরু হলো বাড়ির চাকর-বাকর এমনকি মিসেস অটোর মধ্যেও। কখনও কখনও উদ্বিগ্ন মা আবিষ্কার করেন ছেলেটা জড়সড় হয়ে কামরার এক কোনায় বসে আছে। আর পুতুলটা বিছানায় কিংবা নিজের চেয়ারে বসে যেন একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

    বাড়ির কাঁচের আর রূপার জিনিসপত্র মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যেতে লাগল। মনে হয় যেন কেউ ওগুলো ছুঁড়ে ফেলেছে। এদিকে রাতে ঘরের চাকর-বাকররা বিভিন্ন কামরায় আটকা পড়তে লাগল। কে যেন বাইরে থেকে দোর আটকে দেয়। কাপড়-চোপড় ছেড়া অবস্থায় পাওয়া যেতে লাগল। অনেক দিন ব্যবহার করা হয় না এমনকামরার বিছানার চাদরও এলোমেলো এমনকি কখনও কখনও বিক্ষিপ্তভাবে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেল। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ছোট্ট গেনের পছন্দের অন্য খেলনাগুলো বর্বরের মত কে যেন ছিঁড়ে ফালাফালা করে ফেলে। আর গভীর রাতে শোনা যায় শরীরে শির শির করা ফিকফিক হাসি।

    তবে দোষ পড়তে লাগল সব পিচ্চি গেনের ঘাড়ে। বাবা-মা খুব বকা-ঝকাও করলো তাকে। তবে প্রতিবারই সে সাফাই গায়, রবার্ট ওটা করেছে। যদিও তার এই কৈফিয়তে মন টলে না বাবা-মার। পুতুল নড়তে-চড়তে শিখে একটার পর একটা অকাণ্ড ঘটাচ্ছে এটা কে-ই বা বিশ্বাস করবে? এদিকে এসব আলামতের পর বাড়িতে কাজের লোকদের মন রাখতে প্রচুর অর্থ গুণতে হয় অটোদের। একপর্যায়ে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনরা চেষ্টা করলেন সমস্যা সমাধানের। গেনের এক দাদীর পরামর্শে রবার্টকে গেনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে চিলেকোঠার একটা বাক্সে বন্দি করে রাখা হলো। তার পরের রাতেই বুড়ো মহিলাকে তার বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল। ধারণা করা হলো স্ট্রোক হয়েছে তাঁর। তবে ভদ্রমহিলার অপ্রত্যাশিত এই মৃত্যুর পরপরই রবার্ট আবার ফিরে পেল গেনের সঙ্গীর জায়গা।

    তারপর থেকে কোনো ঝামেলা ছাড়াই ওটা থাকতে লাগল এই বাড়িতে। বাবা-মা মারা যাওয়ার পরও এই বাড়িতেই থাকল গেনে। এমনকী বেশ বয়স হওয়ার পরও দেখা গেল ছোটবেলার সঙ্গী পুতুলটাকে কাছছাড়া করছে না সে। পরে গেনের ঘনিষ্ঠরা মত প্রকাশ করেন পুতুলটাই প্রভাব খাটিয়ে গেনেকে ওটাকে ছাড়তে দেয়নি।

    এদিকে বালক বয়সে বাড়ির কোনার যে কামরাটায় গেনে থাকত সেটা এক সময় রবার্টের আস্তানায় পরিণত হয়। ওখান থেকে সময়-অসময়ে ফিক ফিক আর পাগলাটে হাসি ভেসে আসতে লাগল। একে-একে চাকর-বাকরেরা আর্টিস্ট হাউস ছাড়তে লাগল। এমনকী সবচেয়ে দুঃসাহসী, লোকটিকেও এখানে খুব বেশিদিন রাখা যায় না। শেষমেশ দেখা গেল বাড়িতে মাত্র দুজন কাজের লোক আছে। তারা স্বামী-স্ত্রী। কয়েক ঘণ্টার জন্য আর্টিস্ট হাউসে আসে তারা। এর মধ্যে স্ত্রীটি গেনের জন্য রান্না-বান্না করে। আর স্বামীটি বাড়ির টুকটাক কাজ করে। তাও দুজনেই সন্ধ্যা নামার অনেক আগেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। যাই ঘটুক না কেন বাড়ির কোনার ওই কামরাটার কাছে তারা ঘেঁষে না। এমনকি গেনে বকা-বাদ্য করেও ওটায় ঢুকাতে পারেনি তাদের।

    একপর্যায়ে বিয়ে করল গেনে অটো। তবে গোড়া থেকেই সুখের হলো না দম্পতির জীবন। শুরু থেকেই অপার্থিব একটা ছায়ার মত তাদের দাম্পত্য জীবনে লেগে রইল রবার্ট। যেখানেই যাবে পুতুলটাকে সঙ্গী করবে গেনে। খাবার টেবিলে একটা চেয়ার বরাদ্দ থাকে, ওটার জন্য। শুধু তাই না, নববিবাহিত দম্পতির শয্যার পাশেও তার প্রিয় চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায় পুতুলটাকে। স্বাভাবিকভাবেই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ফাটল ধরল। আর এই পরিবেশে থাকতে-থাকতে একসময় উন্মত্ত আচরণ শুরু করল মিসেস অটো। তারপর একদিন রহস্যময়ভাবে মারা গেল। লোকে বলে এখনও আর্টিস্ট হাউসে ঘুরে বেড়ায় তার প্রেতাত্মা।

    একসময় মৃত্যু হলো গেনে অটোর। কিছু দিনের জন্য বাড়িতে একা হয়ে গেল রবার্ট। নতুন মালিক বাড়িটায় আসার পর আবার রবার্টের জায়গা হলো চিলেকোঠা একটা বাক্সে। কিন্তু প্রথমবারের মতই এই ব্যবস্থায় খুশি হতে পারল না অশুভ পুতুলটা। রাতগুলো দুর্বিষহ করে তুলল সে পরিবারটির জন্য। বাড়ির এখানে-সেখানে তার উপস্থিতির নজির রাখতে শুরু করল। ঘটাতে থাকল একটার পর একটা অঘটন। তারপর রান্নাঘরের ছুরি হাতে যখন ওটা নতুন মালিক-মালিকানের বিছানার কাছে হাজির হলো, আর ফিক ফিক করে হাসতে লাগল, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল তাদের। দেরি না করে বাড়ি ছাড়লেন তারা। আর রবার্টের ঠাই হলো নতুন ঠিকানা, ফ্লোরিডার কি ওয়েস্টের ইস্ট মার্টেলো জাদুঘরে। যেখানে কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হয় তাকে।

    এখনও আর্টিস্ট হাউসে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকরা বলেন, রবার্ট সম্ভবত তার নতুন বাড়ির সঙ্গে ঠিক মানিয়ে নিতে পারেনি। কারণ যেসব খালি ঘরে ট্যুরিস্ট গাইডরা তাদের ভয়ে নিতে যেতে চান , সেসব ঘর থেকে প্রায়ই খিলখিল হাসি আর ছোট্ট পায়ের কারও হেঁটে বেড়ানোর শব্দ শুনতে পান। কখনও কখনও ছোট শিশুরা স্কুলে যাওয়ার সময় কোনার কামরাটার জানালা গলে রবার্টকে উঁকি মারতে দেখে ভয়ে ছুটে পালায়।

    তবে ইস্ট মার্টেলো জাদুঘরে এভাবে তাকে সাজিয়ে রাখায় সে যে ক্রুদ্ধ তার প্রমাণ রবার্ট রেখে চলেছে অবিরত। তাকে দেখেই শিউরে ওঠেন পর্যটকরা। এক নারী পর্যটক তার চোখের সামনে পুতুলটার মুখের ভঙ্গী দেখে আঁতকে ওঠেন। ঠিক আগের মুহূর্তে ওটা হাসছিল, তারপরই বিরক্ত হয়ে ভ্রুকুটি করে রাখল।

    আবার কোনো কোনো পর্যটক এমনও দাবি করেছেন বিখ্যাত পুতুলটা ছবি তোলার পর কালো ফ্রেম ছাড়া আর কিছুই পাননি। রবার্ট যে জায়গাটায় এখন আছে সেখানে আলোর অবস্থা বেশ খারাপ। এত কম আলোতে ছবি তোলা এমনিতেই কঠিন। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ জায়গাটাকে আলোকিত করার নানা ধরনের ব্যবস্থা নিলেও কী এক অজানা কারণে সুবিধা হয়নি। আবার এ ধরনের গুজবও আছে ছবি তোলার আগে পুতুলটার কাছে। ভদ্রভাবে অনুমতি চাইতে হয়। তা না হলে যে ছবি তুলবে তার উপর নেমে আসে রবার্টের অভিশাপ। আর এখনও জাদুঘরে রাতে অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে কিংবা কিছু পড়ে গেলে বলা হয়, রবার্ট এটা করেছে। রাতে শেষ ব্যক্তি হিসাবে জাদুঘর ছাড়তে চায় না কোনো কর্মচারীই।

    প্রতি অক্টোবরে কি ওয়েস্টের কাস্টমস হাউসে কাঁচের ডিসপ্লেতে সাজিয়ে রাখা হয় রবার্টকে। জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়কদের মতে রবার্টের সঙ্গে দেখা করার এটাই সেরা সুযোগ। আর এসময় রবার্টের সঙ্গে নিজের পরিচয় তুলে না ধরা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তবে এই দ্রতাটুকু দেখাননি এমন লোকেরও অভাব নেই। তাদেরই একজন অরল্যাণ্ডোর এক নারী বলেন রবার্ট কিংবা তার মত দেখতে কেউ একজন কাস্টমস, হাউস থেকে বের হয়ে আসার পর তাকে বাড়ি পর্যন্ত অনুসরণ করে। শুধু তাই না ওই রাতে একটু পর পরই তার শোবার ঘরের জানালায় পুতুলটার ছায়া দেখেছেন। বাড়ির আর সবখানে বিদ্যুৎ থাকলেও সে রাতে তাঁর শোবার ঘর অন্ধকারে ডুবে ছিল।

    রবার্টের পাশেই থাকে পিপারমিন্ট। যেগুলো জাদুঘরের কর্মচারীরা তার পাশে রেখে দেয়। কে জানে, ওগুলো চিবুতেচিবুতে রবার্ট হয়তো এমন কোনো পরিবারের খোঁজ করে যাদের কেবল একটি বাচ্চা আছে গেনের মত, আর তাঁরা রবার্টকে ভালবাসবে সত্যিকারের ছেলের মতই।

    রাত সাড়ে তিনটা

    সিঙ্গাপুর যখন ব্রিটিশদের শাসনে ছিল তখনকার ঘটনা। দুই জিগির দোস্ত ছিল। শ্রমিকের কাজ করে তারা। একজন আবার নতুন বিয়ে করেছে তখন। কাজেই সবসময় তার চিন্তা থাকে কীভাবে একটু বেশি কামাই করা যায়।

    একদিন তার বন্ধু তাকে জানাল ব্রিটিশরা একটা সেতু তৈরির কাজে এক শিফটের শ্রমিকদের সাধারণ মজুরির চেয়ে বেশি টাকা দিচ্ছে। তবে সমস্যাটা হলো সময়টা একেবারেই খারাপ। এই শিফটের কাজ শুরু হয় ভোর চারটায়। বিবাহিত বন্ধুটি এক বাক্যে রাজি। কাজেই তার বন্ধু নির্মাণ প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ককে বলে দুজনের কাজ পাঁকা করে ফেলল। তারপর বিবাহিত বন্ধুটিকে জানাল রাত সাড়ে তিনটার দিকে তার বাসায় আসবে সে। তারপর দুজন একসঙ্গে কাজে যাবে।

    রাতে বিবাহিত পুরুষটি শুধু বিছানায় এপাশ-ওপাশ করল। তার স্ত্রীর মেজাজ চটলেও কিছু করার নেই। কারণ লোকটার ঘুম আসছে না, কাজে যাবার চিন্তায়।

    এভাবে কয়েক ঘণ্টা পার হয়ে গেল। এসময়ই লোকটির মনে হলো বন্ধু তার নাম ধরে ডাকছে। বউকে বলে টুকটাক জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এল। এদিকে তার বন্ধুটি রাস্তার ধারের একটা ল্যাম্প পোস্টের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকায় চেহারা বোঝা যাচ্ছে না তার।

    চলো, বলেই বন্ধুটি দ্রুত হাঁটা ধরল। বিবাহিত লোকটি চাইল বন্ধুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে। কিন্তু যখনই কাছাকাছি হবার চেষ্টা করে মনে হয় যেন বন্ধুটি দূরে সরে যায়।

    এদিকে স্বামী চলে যাওয়ার পর স্ত্রী আবার বিছানায় যায়। একটু পরেই পারিবারিক বন্ধুটির দরজা ধাক্কানোর আর তার স্বামীর নাম ধরে ডাকার শব্দ শুনতে পেল। কী হয়েছে বুঝতে না পেরেও চিন্তিত মহিলাটি তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল। দেখে বন্ধুটি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

    কই? ঘুমকাতুরে লোকটা কোথায়? উঠে রেডি হয়েছে তো? জানতে চাইল সে।

    কী বলছেন? মাত্র আধ ঘণ্টা আগে না আপনার ডাক শুনে বেরিয়ে গেল সে? চমকে উঠে বলল মেয়েটা।

    আধ ঘণ্টা আগে? আমার সঙ্গে? কিন্তু আমি তো কেবলই এলাম। এখন সাড়ে তিনটা বাজে, তাই না? অবিশ্বাসভরা কণ্ঠে বলল বন্ধুটি।

    এবার ঘড়িটার দিকে তাকাল মহিলাটি। দেখল ঠিকই তো ঘড়িতে তিনটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। এবার স্বামীর জন্য ভয় হতে লাগল তার। কীভাবে একজন লোক এসে তার স্বামীকে নাম ধরে ডেকেছে আর সে উঠে চলে গেল, পুরো ঘটনাটা খুলে বলল বন্ধুটিকে।

    এদিকে বন্ধুটিও এখন চিন্তায় পড়ে গেছে। নিশ্চয়ই রহস্যময় কোনো ব্যাপার আছে এর মধ্যে, ভাবল। কেউ একজন তার বন্ধুকে ভুলিয়ে নিয়ে গেছে। দ্রুত সেতুর কাজ যেখানে চলছে সেদিকে রওয়ানা হলো সে। বন্ধু আসলেই সেখানে পৌঁছে থাকলে তার দেখা পেয়ে যাবে।

    পথেই পেল বন্ধুকে। তবে শুধু কাটা মাথাটা, রাস্তার ধারের একটা গর্তের মধ্যে। কোনো দিনই আর ধড়টা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

    ক্লান্ত চালক

    সিংগাপুরের এক গাড়ি চালক মালয়েশিয়ান হাইওয়ে ধরে গাড়ি চালাচ্ছিল। কুয়ালালামপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে যাবে সে। পথে এক জায়গায় গাড়ি নষ্ট হয়ে গেল। আশপাশে কোনো বসতি চোখে পড়ল না। শুধু রাবারের বন। সাহায্যের জন্য কোথায় যাবে এ সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। এমনকী পাশ দিয়ে শাঁ শাঁ করে ছুটে চলা একটা গাড়িও দাঁড়াল না তার ইশারায়। চারপাশে আরও একবার ভালভাবে নজর বুলাল উপায়ন্তর না দেখে, যদি জনমানবের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়। এসময়ই রাবার বনের গভীরে একটা আলো নজরে এল। যাক, অন্তত ওখানে সাহায্য করার মত কাউকে না কাউকে পাওয়া যাবে, ভাবল লোকটা। সৌভাগ্যক্রমে রাবার বাগানের ভিতর দিয়ে পায়ে-চলা একটা পথ চলে গেছে। ক্লান্ত শরীরটা টেনে-টেনে আলোটার দিকে এগুতে লাগল এই পথটা ধরে।

    কাছাকাছি হতেই নির্মাণ শ্রমিকদের কাঠের তৈরি দু-তলা কাঠামোটা চোখে পড়ল। সিংগাপুর, মালয়েশিয়ায় নির্মাণ প্রকল্পের এলাকায় এক সময় এ ধরনের অস্থায়ী বাড়ি বেশ দেখা যেত। কিন্তু বাড়িতে পৌঁছার আগেই বৃষ্টি শুরু হলো। অল্প সময়ের মধ্যে বৃষ্টির বেগ বেড়ে গেল। চালাঘরটার সামনে যখন পৌঁছল ততক্ষণে ভিজে একসা হয়ে গেছে।

    জোরে দরজায় ধাক্কা দিল সে। গেঞ্জি আর পাজামা পরা একটা লোক দরজা খুলল। তার সমস্যাটা খুলে বলল সিংগাপুরের লোকটা। তারপর জানতে চাইল তাদের এখানে ফোন আছে কিনা আর সেটা সে ব্যবহার করতে পারবে কিনা। শ্রমিক লোকটা তখন বলল, গাড়িটা যদি ঠিকও করতে পার তাহলেও এই আবহাওয়ায় গাড়ি চালানো ঠিক হবে না তোমার। তার চেয়ে বরং রাতটা এখানে কাটিয়ে দাও। সকালে আমরা দেখব তোমার গাড়ির জন্য কী করতে পারি।

    সিংগাপুরিয় মনে-মনে কৃতজ্ঞ হয়ে উঠল লোকটার ওপর। ভিতরে তাকিয়ে আরও দুজনকে দেখতে পেল। তিনজনে মিলে তাস খেলছিল। লোকগুলো তাকে বলল ওপরতলায় উঠে বিছানায় শুয়ে পড়তে। তারা রাতভর খেলা চালিয়ে যাবে। লোকগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এল সে। এখানে এসে অবাক হয়ে দেখল কিছু আসবাবপত্র এমনকি আয়নাসহ একটা ড্রেসিং টেবিলও আছে কামরাটায়। তবে ওটা নিয়ে বেশি একটা চিন্তা করল না। কাপড় ছেড়ে চারটা বিছানার একটায় শুয়ে পড়ল।

    রাতের কোনো এক সময় সিংগাপুরিয় লোকটার ঘুম ভেঙে গেল। এসময়ই দেখল সাদা পোশাক পরা এক মহিলা ড্রেসিংটেবিলে বসে ধীরে-সুস্থে তার লম্বা চুল আঁচড়াচ্ছে। এক পর্যায়ে লোকটাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখল মহিলাটি। চিরুনিটা নামিয়ে রেখে তার দিকে ফিরে একটা হাসি দিল। কী করা উচিত বুঝতে না পেরে পাল্টা হাসল সিংগাপুরিয় লোকটাও।

    তারপরই নিজের মাথাটা ঘাড় থেকে নামিয়ে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখল মহিলাটি। আতংকে চিৎকার করতে চাইল লোকটা। কিন্তু গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হলো না। মহিলাটি নড়ছে না। তবে টেবিলের ওপর রাখা মাথাটা তার দিকে চেয়ে হাসছে।

    থর থর করে কাঁপছে লোকটা। তবে শেষ পর্যন্ত নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ খুঁজে পেল। পড়িমরি করে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এল সে।

    দেখল নীচের তিনজন এখনও শান্তভাবে তাস পিটিয়ে যাচ্ছে। বাঁচাও, বাঁচাও, হাঁফাতে-হাঁফাতে বলল সিংগাপুরিয়, ওপরে একটা মহিলা দেখে এলাম, মাথা খুলে ফেলল চোখের সামনে।

    তিন তালুড়ে খেলা থামিয়ে তার দিকে তাকিয়ে হাসল। তারপর একজন-একজন করে নিজেদের মাথা খুলে টেবিলে রাখতে লাগল।

    রহস্যময় হাত

    এবারের কাহিনিটা শুনিয়েছেন সিংগাপুরের ২৪ বছর বয়স্কা এক সরকারী চাকরিজীবী। আমরা এটা তাঁর মুখ থেকেই শুনব।

    বাবা-মার সঙ্গে একটা দু-তলা বাড়িতে থাকি আমি। একদিন বেশ রাতে বিছানায় শুয়ে-শুয়ে পড়ছি। কারণ রাতে দেরি করে ঘুমালেও কিছু আসে যায় না আমার। সকালে তাড়াতাড়ি ওঠার তাগিদ নেই। পা মচকে যাওয়ার কারণে কয়েকদিন ছুটি নিয়েছি। যে গল্পের বইগুলো কিনেছি অবসর কাটানোর জন্য তার সবগুলোই পড়ে শেষ। ওগুলোর একটারই আবার পাতা উল্টাচ্ছি।

    আমার বিছানাটা জানালার দিকে মুখ করা। নীচের তলার গ্র্যাণ্ডফাদার ক্লকটা বারোটা বাজার সংকেত দেওয়ার ঠিক সঙ্গেসঙ্গে একটা শব্দ কানে এসে বাজল। জানালার কাছে বাইরের দেয়ালে কে যেন ধাক্কা দিচ্ছে। তারপরই জানালার ধারে একটা মহিলার হাত দেখা গেল। হাতটাতে কয়েকটা আংটি পরা। হাতটা জানালা গলে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। মহিলার জামার আস্তিনের একটা অংশও নজরে পড়ছে। কালোর ওপর গাঢ় লাল নকশা কাপড়টায়।

    ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। জানালা গলে বেশ কিছুটা ঢুকে পড়েছে ইতিমধ্যে হাতটা। জামার হাতার অনেকটুকু দেখা যাচ্ছে এখন। গোড়ালির মারাত্মক ব্যথা থাকা সত্ত্বেও লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে পড়লাম। খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে বারান্দায় এসেই বাবার সঙ্গে ঢাক্কা খেলাম। আমার চিৎকার শুনে দৌড়ে তাঁর রুম থেকে বেরিয়ে এসেছেন।

    হড়বড় করে কিছু বলতে-বলতে আঙুল দিয়ে আমার কামরার দিকে দেখিয়ে দিলাম। অবাক; বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন বাবা। আমার মুখ দিয়ে কেবল বেরোল, আমার রুম…আমার রুম…

    সমস্যাটা কী? তোমার রুমে কী হয়েছে?জানতে চাইলেন তিনি। সন্দেহ নেই ধরে নিয়েছেন বাদুড় বা অন্য কোনো ধরনের কীট-পতঙ্গ ঢুকেছে ,কামরাটায়। আর এখানেই আমি এই কাহিনি শুরু করেছি।

    পাপা, জানালা গলে কেউ আমার কামরায় ঢুকতে চাইছে। বলতে-বলতে আবারও আতংকে শিউরে উঠলাম।

    কোনো কথা না বলে কামরাটার দিকে দৌড়ে গেলেন তিনি। হঠাৎ তাঁর জন্য ভয় হতে লাগল আমার। অশুভ একটা কিছু দেখার জন্য মনটাকে প্রস্তুত করে কামরাটার দিকে ফিরে তাকালাম।

    কিন্তু রুমটা খালি।

    যেভাবে রেখে গেছি সেভাবেই আছে, তবে জানালা গলে উঁকি দেওয়া হাতটা নেই। আমার হাতের বইটা পড়ে আছে মেঝেতে। দৌড়ে পালানোর সময় হাত থেকে ফেলে দিয়েছিলাম ওটাকে।

    আমার দিকে ফিরলেন বাবা। চোখে প্রশ্ন। সম্ভবত কোনো একটা ব্যাখ্যা আশা করছেন। কিন্তু বলার মত কিছু নেই আমার।

    এই রোমাঞ্চের বইগুলো কল্পনার দৌড় বাড়িয়ে দিয়েছে তোমার। এখন থেকে ওগুলো দিনের বেলা পড়বে। ক্লান্ত, একই সঙ্গে কিছুটা রুক্ষ গলায় বললেন তিনি। মাথা ঝাঁকালাম, তবে চোখ আধ খোলা খালি জানালাটার দিকে। বাবার পরামর্শ মেনে বইটা সরিয়ে রাখলাম। তবে রাতে ঘুমালাম বাতি জ্বেলে।

    ঘুম ভাঙল সকাল ছয়টার দিকে। মনে হলো, কেউ যেন আমার নাম ধরে ডাকছে। মনে হলো যে ঘরের বাইরে গেটের কাছ থেকে আসছে। একটা নারী কণ্ঠের আওয়াজ। জানালার দিকে তাকানোর সাহস হলো না। গত রাতের কথা মনে পড়ে গেছে। বাবাকে চিৎকার দিয়ে ডাকার জন্য মনে-মনে প্রস্তুতিও নিয়ে নিয়েছি।

    এদিকে কণ্ঠটা আরও তীব্র হয়েছে। মনে-মনে নিজেকে একটা গাল দিলাম। আসলে আমি একটা নির্বোধ। সম্ভবত পরিচিত কেউই ডাকছে। হয়তোবা বুয়া কিংবা তার বাড়ির কেউ জানাতে এসেছে সে আজ সকালে কাজে আসবে না। তারপরও জানালার কিনারে এগিয়ে যাওয়ার সাহস সঞ্চয় করতে কয়েক মিনিট লাগল।

    নীচে গেটের সামনে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। আমার দিকে পিছন ফিরে বাস স্টপে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। কি আশ্চর্য, গত রাতের জামার হাতটা যে নকশার ছিল তার পরনের কাপড়টাও সেই নকশার। এসময়ই তার হাতের দিকে নজর গেল আমার। হায় খোদা! গত রাতের হাতের আংটিগুলো এই হাতেও আছে।

    পিছন ফিরে থাকায় চেহারাটা দেখতে পেলাম না। আরও ভাল মত দেখার জন্য একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।

    এসময়ই একটা বাস এসে দাঁড়াল রাস্তায়। বাস স্টপের তিনজন মানুষ, দুজন পুরুষ আর রহস্যময় মহিলা, বাসে ওঠা শুরু করলেন। সবার শেষে উঠলেন মহিলাটি। বাসের নীচের ধাপে একটা পা দিয়ে ধীরে ধীরে আমার দিকে ঘুরলেন।

    শরীরে শিরশিরে একটা অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল। মহিলাটি আমার দিকে তাকালেন। একটা হাসি দিলেন। তারপরই গাড়ির ভিতরে অদৃশ্য হলেন। আর কোনো দিন তাঁকে দেখিনি। এখনও ভাবি কখনও কি আর তাকে দেখতে পাব? আর যদি দেখা হয় কোন্ পরিস্থিতিতে?

    বুড়ো ভিখারি

    এবারের অভিজ্ঞতাটি বেশ নতুনই বলা চলে। এই বছর দুই-ছিন আগের কথা। অঞ্জলি নামে এক ভারতীয় তরুণীর কাহিনি এটি। বছর পাঁচেক আগেও তিনি আমেরিকা ছিলেন। এখন স্বামীর সঙ্গে থিতু হয়েছেন। চাকরি করেন মুম্বাইয়ে।

    যখনকার কথা তখন তার বয়স সাতাশ, আর আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মাতৃকালীন ছুটি কাটাচ্ছেন আর প্রথম শিশুর পৃথিবীতে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঘটনার দিন স্বামী অফিস থেকে ফেরার পর দুজনে ঠিক করলেন শিবাজী পার্কে বেড়াতে যাবেন। তাদের বাসা থেকে বেশি দূরে না জায়গাটি। তখনও পার্কে প্রচুর মানুষ। কিছুক্ষণ ঘোরাফেরার পর বাসায় ফিরে আসা স্থির করলেন দুজনে। তাঁর স্বামী চালকের আসনে বসলেন। অঞ্জলি সামনের অন্য পাশের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকবেন এমন সময় একজন বুড়ো ভিক্ষুক মহিলা তার জামার হাত ধরে টান দিল। ভারতে এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কাজেই এটাতে আতংকিত হওয়ার কোনো কারণ অনুভব করলেন না। মহিলাটির দিকে মুখ তুলে চাইলেন। সাধারণ এক বুড়ি ভিক্ষুকের মতই লাগল তাকে। তাকে কিছু না দিয়েই গাড়ির ভিতর ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলেন অঞ্জলি। বাসার দিকে রওয়ানা হলেন তাঁরা।

    মোটামুটি মিনিট তিনেক গাড়ি চালাতেই বাড়ির কাছাকাছি চলে এলেন। এসময়ই লাল বাতি জ্বলায় গাড়ি থামাতে হলো। তখনই রাস্তার পাশে ভিখারি বুড়িটিকে দেখলেন আবার। অবাক হলেও আতংকিত হয়ে পড়লেন না, অঞ্জলি। বরং ওই সময় এটা নিয়ে আর কিছু চিন্তাও করলেন না। বাসায় ফিরে এলেন কিছুক্ষণের মধ্যেই। রাতে অস্বাভাবিক কিছু ঘটল না। পরের দিন অঞ্জলির স্বামী অফিসে গেলে বাসায় একা হয়ে পড়লেন। দুপুর আড়াইটার মত বাজে তখন। খাওয়া-দাওয়া শেষে হালকা একটা তামত চলে এসেছে তাঁর। হঠাৎ খুব শীত করতে লাগল। মনে হচ্ছে যেন শরীরে কাঁপন ধরে যাবে। চোখ মেললেন, তারপর যা দেখলেন কোনো মতেই বিশ্বাস করতে মন চাইল না। পরিষ্কার দেখলেন কাল রাতের সেই বুড়ো মহিলাটি তাঁর খাটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। হাতটা বাড়িয়ে তার কাছে আসার ইশারা করছে যেন মহিলাটি। এক মুহূর্তের জন্য অঞ্জলির মনে হলো স্বপ্ন দেখছেন। চোখ বন্ধ করে ফেললেন। তারপর সাহস সঞ্চয় করে আবার চোখ মেললেন। মহিলাটি এখনও আছে। এবার আর নির্জেকে সামলানো সম্ভব হলো না তার পক্ষে। বার-বার শুধু মনে হচ্ছে, বাচ্চাটার যদি কোনো ক্ষতি করে সে। দৌড়ে কামরা এবং বাসা থেকে বের হয়ে পাশের বাসার দরজায় ধাক্কা দিলেন। দরজা খুললে স্বাভাবিকভাবে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলেন। প্রতিবেশী মহিলাটিকে কিছু বললেন না, পাছে আবার ভাবেন পাগল হয়ে গেছেন কিংবা অন্তঃসত্ত্বা থাকার কারণে দুশ্চিন্তায় উল্টো-পাল্টা দেখেছেন। তখনই স্বামীকে বাসায় আসতে বললেন ফোন করে। ভদ্রলোক যখন এলেন তখনই কেবল বাসায় ঢুকলেন আবার। তবে তখন বাসায় কাউকে পেলেন না।

    মায়ের পরামর্শে বাসায় বিশেষ একটা পূজা দিলেন অঞ্জলি। তারপর অবশ্য আর কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। বাচ্চাটা নিয়েও কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। আর কখনও দেখা যায়নি ওই বুড়ো মহিলাকেও। তবে অঞ্জলির পীড়াপীড়িতে ওই বাসা বদলে নতুন ফ্ল্যাটে উঠে পড়েন তাঁরা।

    প্রেতাত্মার প্রতিশোধ

    ১৭ অক্টোবর ১৯৬৩। ঘড়ির কাঁটা রাত দশটার আশপাশে ঘুরঘুর করছে। গ্রিনহা বাড়ির দিকে রওয়ানা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমেরিকার আলাবামার এই পুলিশ প্রধানকে ধরা হয় সবচেয়ে তরুণ পুলিশ চীফদের একজন হিসাবে। দারুণ যুক্তিবাদী মানুষ হিসাবে সুনাম আছে তাঁর। ভূত, অতৃপ্ত আত্মা এসবে বিশ্বাস নেই এক রত্তিও। এমনকী এসব নিয়ে ভাবাটাকেও সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু মনে করেন না।

    ক্যামেরাটা তুলে নিয়ে সরকারি গাড়িটায় উঠলেন। তারপর ফাল্কভিলেতে তার বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হলেন। আবাসিক এলাকায় প্রবেশের ঠিক আগে রাস্তার মাঝখানে অস্বাভাবিক একটা মানুষের কাঠামো চোখে পড়ল তার। অন্তত সাত ফুট লম্বা হবে ওটা। জ্বলজ্বলে কিছুতে রঞ্জিত মনে হচ্ছে দেহটা। রূপার মত ঝিকমিক করছে। এক মুহূর্তের জন্য গ্রিনহার মনে হলো লোকটার মাথায় শিং আছে।

    এই অদ্ভুত জিনিসটা কী? মনে-মনে নিজেকেই প্রশ্ন করলেন গ্রিনহা। এটা কি তবে ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী? তবে চৌহদ্দিতে কোনো ধরনের উড়যান বা ফ্লাইং সসার দেখা যাচ্ছে না। কাজেই এটা ভিনগ্রহের প্রাণী এই সম্ভাবনাটা বাদ দিতে হলো।

    দেরি না করে ক্যামেরাটা টেনে নিয়ে চারটা ছবি তুললেন অদ্ভুত জিনিসটার। যেই না এটা করলেন কাঠামোটা যেন তার দিকেই এগিয়ে আসতে লাগল। তবে আশ্চর্য ব্যাপার, মনে হচ্ছে

    যেন শূন্যে ভেসে-ভেসে কিংবা পিছলে-পিছলে আসছে।

    সঙ্গে-সঙ্গে গাড়ির সাইরেন বাজানো শুরু করলেন গ্রিনহা, আর ছাদের ঘুরতে থাকা বাতিটাও জ্বেলে দিলেন। এবার জিনিসটা যেন সেই অদ্ভুতভাবে পিছলে-পিছলে দূরে সরে যেতে লাগল, তারপর অদৃশ্য হয়ে গেল।

    ছবিগুলো একটা পত্রিকা অফিসে পাঠিয়ে দিলেন গ্রিনহা। আশ্চর্য এই জিনিস বা প্রাণীটিকে নিয়ে বেশ আলোড়ন উঠল মানুষের মধ্যে। বিস্তর আলোচনাও হলো একে ঘিরে। কিন্তু এর পরপরই দুর্ভাগ্যের বেড়াজালে বন্দি হলেন গ্রিনহা। তাঁর স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে গেলেন। সপ্তাহ খানেক পর রহস্যজনকভাবে আগুনে পুড়ল গ্রিনহার গাড়ি।

    ১৯৬৩ সালের ১৫ নভেম্বর সরকারি চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হলো তাকে। অব্যাহতির কারণ জানতে চাইলে বলা হলো, আমরা এমন একজন পুলিশ প্রধান চাই না যে অকাট্য প্রমাণ ছাড়া উদ্ভট কোনো জিনিসে বিশ্বাস করে। শুধু তাই না মানুষের মনেও ভীতির জন্ম দিয়েছেন আপনি। তাই পুলিশ বিভাগের আপনাকে আর প্রয়োজন নেই।

    এই ভুতুড়ে জিনিসটা আসলে কী সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি কখনও। এই এলাকায় আর কখনওই দেখা যায়নি ওটাকে। কেউ-কেউ অনুমান করলেন গ্রিনহার দৃষ্টিবিভ্রম হয়েছে। অতি উৎসাহী অনেকে আবার দাবি করলেন গোটা বিষয়টাই প্রাক্তন পুলিশ প্রধানের তৈরি করা গল্প। তবে একটা বিষয় এখানে জানিয়ে রাখা উচিত, ১৯৬৩ সালের ১৭ অক্টোবর আলাবামার অনেক লোকই অদ্ভুত সব শব্দ শুনেছেন, কেউ-কেউ অপার্থিব একটা আলোও দেখেছেন।

    তবে সবচেয়ে বেশি লোকে যেটা বিশ্বাস করলেন তা হলো, অজানা কোনো কারণে অশরীরী কেউ একজন গ্রিনহার ওপর প্রতিশোধ নিয়েছে। তবে এই আশ্চর্য প্রতিষােধের কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি কেউ-এমনকী গ্রিনহা নিজেও।

    খানওয়াহর সেনারা

    মার্চের স্যাঁতস্যাতে একটা দিন। সম্ভবত সালটা ১৯৩৬। মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে ফিরছি আমরা। এসময়ই হঠাৎ বর্মের সঙ্গে তরোয়াল বাড়ি খাওয়ার আর সৈন্যদের যুদ্ধ করার আওয়াজ পেলাম। প্রচুর শব্দ হচ্ছে। মনে হলো যেন নরক ভেঙে পড়েছে। কিন্তু চৌহদ্দিতে কোনো জনমানব দেখা গেল না। কিছুক্ষণ থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কী হয়েছে বোঝার চেষ্টা করছি। তারপরই ভয়ে দৌড়তে দৌড়তে গ্রামে ফিরে এলাম। সংবাদপত্রের এক প্রতিনিধিকে কথাগুলো বলেছিলেন ১১৪ বছরের বৃদ্ধ সরদার আলি। ভারতের রূপবাস এলাকার খানওয়াহ গ্রামের এই বুড়োকে এলাকার লোকেরাও দারুণ শ্রদ্ধা করে।

    ১১০০ বছর আগে গ্রামটি প্রতিষ্ঠা করেন খান মুহাম্মদ পাঠান। গোটা গ্রামটাতেই এখনও দেখতে পাবেন ঐতিহাসিক বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ। নানা ধরনের গল্প, লোককাহিনি ছড়িয়ে আছে একে ঘিরে। গ্রাম লগোয়া বিশাল এক মাঠে রাজপুতদের সঙ্গে তুমুল লড়াই বেধেছিল মোঘল সেনাদের, তাই পর্যটকদেরও আনাগোনা দেখা যায় এই গ্রামে।

    সরদার আলির কাছ থেকে জানা যায় তার অনেক পূর্বপুরুষই রাতের বেলায় মরণপণ যুদ্ধের শব্দ আর অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনেছেন। এমনকী তাঁদের কেউ-কেউ ময়দানে লড়াইয়ে মত্ত সেনাদেরও দেখেছেন। তার ছোট বয়সে বাপ-দাদারা বলেছেন রাজপুত আর মোঘল সেনাদের আত্মারা গ্রামের পশ্চিমে পাহাড়ের পিছনের সমতলে ঘোরাফেরা করে। রাজপুত আর মোঘলদের যুদ্ধে যেসব সেনা প্রাণ হারিয়েছে এরা তাদেরই আত্মা।

    ইতিহাস বলে ১৫২৭ সালের ১৬ মার্চ, শনিবার রাজপুত শাসক রানা সংগা আর জহিরুদ্দিন বাবরের সেনাদের মধ্যে লড়াই হয়েছে এই এলাকায়। এর বেশিদিন আগের কথা না, ইব্রাহীম লোদীর মুখোমুখি হয়েছিলেন বাবর। ১৫২৬ সালের ২১ এপ্রিলে পানিপথের ওই যুদ্ধে লোদীর সেনাদের ভালমতই নাকানিচুবানি খাইয়েছিলেন বাবর।

    খানওয়াহর যুদ্ধে বাবরের সেনারা অবস্থান নিয়েছিল পাহাড়ের ধারের ময়দানে। পিছন থেকে যেন রাজপুতরা আক্রমণ করে ভড়কে দিতে না পারে তাই গভীর পরিখা খনন করা হয় এলাকাটায়। এদিকে সামনে গরুর গাড়ির পিছনে বসানো হয় কামান। মার্চের ১৬ তারিখ সকাল ৯টার দিকে রানা সংগার লোকেরা আক্রমণ চালায়। লড়াই চলে দশ ঘণ্টা। এসময় কামানের গোলার আঘাতে রানা সংগার প্রচুর সেনা মারা পড়ে। রানা সংগা নিজেও মারাত্মকভাবে আহত হন। আর এই আঘাতের কারণেই মাত্র ৪৬ বছর বয়সে মারা যান তিনি।

    খানওয়াহর গ্রামবাসীরা আর রাজস্থানের সাধারণ লোকেরা বিশ্বাস করে পরাজিত, ক্রুদ্ধ রাজপুত সেনারা এখনও এই এলাকায় ঘুরে বেড়ায় শত্রুর খোঁজে। রাজস্থানে নিহত রাজপুতদের নিয়ে নানার ধরনের গল্প প্রচলিত আছে। বলা হয় খানওয়াহর অশুভ এই যুদ্ধক্ষেত্রে রাতের বেলা জ্বলন্ত মশাল নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় ছায়ামূর্তিদের। কেউ জানে না কীজন্য তারা ঘুরে বেড়ায় আর কী-ই বা খোঁজে তারা?

    মড়া যখন জ্যান্ত হলো

    এই ঘটনাটা বেশ আগের। শ দেড়েক বছর তো হবেই। নায়ক চার্লস ডি. ব্র্যাডলাফ নামের এক তরুণ। ভূত, প্রেতাত্মা এসবের প্রতি মোটেই বিশ্বাস নেই। শুধু তাই না এ সম্পর্কে যে কোনো কাহিনি ভাঁওতাবাজি, হ্যালুসিনেশন এসব প্রমাণ করার জন্য এক পায়ে খাড়া। সে কোনো কিছুকেই ভয় পায় না, এমন কথাও বলে বেড়ায় ব্র্যাডলাফ। একদিন তার এই আচরণে খেপে গিয়ে একজন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বসল, তুমি যদি এতই সাহসী হও তবে তার প্রমাণ দিতে হবে। রাতে দুয়ার আটকানো একটা গির্জার মধ্যে থাকতে হবে, সঙ্গে থাকরে কফিনে ভরা একটা লাশ।

    সঙ্গে-সঙ্গে ব্র্যাডলাফ জানাল তার কোনো আপত্তি নেই এতে। কিছুদিনের মধ্যে সুযোগও মিলে গেল। গির্জায় নিয়মিত আসা ধার্মিক এক লোক মারা গেলেন। গির্জার পাতাল ঘরে রাখা হলো কফিনে ভরা মৃতদেহটা। তবে কফিনের ডালাটা খুলে দেওয়া হলো। নিভিয়ে দেওয়া হলো গির্জার সমস্ত বাতি। দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে চলে গেল সবাই। গির্জায় জীবিত মানুষ বলতে থাকল কেবল ব্র্যাডলাফ।

    বাইরে থেকে যখন দরজাটা লাগানো হলো গির্জার, তখনই অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল তরুণটির মনে। এখান থেকে পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করল। মনের ভিতর জমতে শুরু করা ভয়, কুসংস্কার এগুলোকে জোর করে সরিয়ে দিয়ে গির্জাটা ঘুরেফিরে দেখতে অগ্রসর হলো।

    জানালা গলে উজ্জ্বল চাঁদের আলো ঢুকছে ভিতরে। তবে এতে করে নানান দিকে, বিশেষ করে গির্জার শেষ প্রান্তের সারবাঁধা বেদি আর বসার আসনগুলোর পাশে অদ্ভুত ছায়া তৈরি হয়েছে। হেঁটে-হেঁটে, কৌতূহলী দৃষ্টিতে সব কিছু দেখছে ব্র্যাডলাফ। কারণ অনেক দিন পর আবার একটা গির্জায় ঢুকেছে সে। তারপর পাতাল ঘরের দিকে এগোল সিঁড়ি ভেঙে। নীচে নেমে সাহস করে চলে এল একেবারে কফিনের ধারে। একদৃষ্টিতে বেশ কিছুক্ষণ মৃতদেহটার দিকে তাকিয়ে রইল। আশা করছে ওটার সঙ্গে পরচিত হয়ে গেল মনের অস্বস্তিটা দূর হয়ে যাবে। তারপর আবার গির্জার মূল অংশে চলে এল। এখানে একটা সুবিধা মত জায়গা খুঁজে পেয়ে শুয়ে পড়ল। একটু পরেই কেমন ঘুম-ঘুম আসতে লাগল। সন্দেহ নেই অল্প সময়ের মধ্যে ঘুমিয়েও যেত। কিন্তু এমন সময় পাতাল ঘর থেকে মৃদু একটা শব্দ কানে এল। কারও জোরে শ্বাস নেওয়ার আওয়াজের মত লাগল। তারপর আরও কিছু শব্দ হলো যার বর্ণনা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। তার শুধু মনে হলো চাপা নিস্তব্ধতার মধ্যে এই মৃদু শব্দগুলোই ভয়ের শির শির অনুভূতি ছড়িয়ে দিচ্ছে শরীরে। ওগুলোর অস্পষ্টতা আরও বেশি আতংকিত করে তুলল তাকে। এমন ভুতুড়ে আওয়াজ কে করছে ভেবে কূল-কিনারা পেল না। অন্ধকারে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল, আবছাভাবে যদি কিছু ধরা দেয় চোখে। তারপরই প্রথমবারের মত পাতাল ঘরের সিঁড়িতে ক্ষীণ একটা পদশব্দের মত শুনল। শুরুতে ওটা মৃদুই থাকল, তবে ধীরে-ধীরে চড়ল। এখন পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছে। আর কোনো সন্দেহ নেই এটা পায়ের শব্দ। যেন কোনো মানুষ পাতাল ঘর থেকে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে আসছে। কিন্ত পাতাল ঘরে আছে কেবল মড়াটা।

    উঠে দাঁড়াল ব্র্যাডলাফ। মাথার পিছনের চুল খাড়া হয়ে গেছে। কাঁপুনি ধরে গেছে শরীরে। দরজার দিকে দু-কদম এগোল, কী আশা করছে নিজেও জানে না। তারপর যখন তাকাল চাঁদের আলোয় ওটাকে দেখল এগিয়ে আসতে। মড়াটা। যেটাকে পাতালে কফিনের মধ্যে দেখে এসেছে। আতংকে তখন উন্মাদ অবস্থা একদা সাহসী তরুণের। দৌড়ে গেল মড়াটার দিকে। ওটার গায়ে এখনও জড়ানো শবের সাদা কাপড়, তবে ছেড়াআলুথালু। একটা হাত তুললব্র্যাডলাফ। মড়াটাকে আবার মারতে নাকি ভয়াবহ জিনিসটাকে ঠেলা দিয়ে তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে, কে জানে? কিন্তু এ সময়েই মড়ার হাত সচল হলো। চোয়ালে প্রচণ্ড এক আঘাতে ধরাশায়ী হলো ব্র্যাডলাফ।

    এদিকে ভোরে যখন ব্র্যাডলাফের বন্ধুরা গির্জায় এল চমকে উঠল তারা। ব্র্যাডলাফ অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। আর মড়াটা ঝুঁকে ঠাণ্ডা পানির ছিটা দিচ্ছে তার মুখে। তবে এখন সে শবের সাদা পোশাক থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিয়েছে। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই রহস্য ভাঙল। সংক্ষেপে তাই, বলছি পাঠকদের।

    মড়া ভেবে যাকে কফিনে পুরে গির্জার পাতালে এনে রাখা হয় সে আসলে মরেনি। বরং কোনো একটা ধাক্কায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। কিছুক্ষণের জন্য সম্ভবত শ্বাস-প্রশ্বাসও পাওয়া যায়নি। তাই সবাই ধরে নেয় লোকটা মারা গেছে। রাতে জ্ঞান ফিরে আসে তার। তারপর হেঁটে-হেঁটে গির্জার ওপরে ওঠা শুরু করে। ঠিক তখনই দোরগোড়ায় আতংকিত ব্র্যাডলাফের সঙ্গে দেখা হয়। রাতের বেলা গির্জায় একটা লোককে দেখে স্বভাবতই। দুস্কৃতিকারী ধরে নেয়। তাই দেরি না করে আঘাত হানে। শক্তিশালী একজন মানুষ সে, তারপর আবার মুষ্টিযোদ্ধা। আর তাই চোয়ালে ঘুষি খেয়ে ধরাশায়ী হয় ব্র্যাডলাফ। অবশ্য প্রাক্তন মড়া আর অন্যদের চেষ্টায় দ্রুতই জ্ঞান ফিরে আসে ব্র্যাডলাফের। তবে আর কখনও সাহসের বড়াই করেনি সে।

    সান জুয়ানের আত্মারা

    ভুতুড়ে কাণ্ড-কীর্তির জন্য নাম আছে ফিলিপাইনের শহর সান জুয়ানের। শহরটির ইতিহাস বেশ পুরানো। গির্জাসহ বেশ কিছু পুরানো ইমারতের ধ্বংসস্তূপ পাবেন এখনও। এসব পুরানো ইমরাতগুলোর ধ্বংসস্তুপগুলোর মধ্যে প্রায়ই দেখা মেলে ভৌতিক আর রহস্যময় সব চরিত্রদের। অন্তত লোকে তাই বলে। এদের মধ্যে বেশ বিখ্যাত হলো মাথাহীন এক পাদ্রীর ভূত। রাতের বেলা শহরে যত্রতত্র ঘুরে বেড়ায় সে। কখনও কাটা মাথাটা হাতে নিয়ে ইতস্তত ঘোরাফেরা করে, কখনও আবার তার মুণ্ডুহীন ধড়টাকে মাথা খুঁজতে দেখা যায়। আবার এই এলাকা দিয়ে রাতে যাওয়া কোনো কোনো লোক দাবী করেছেন পাদ্রীর মাথাটাকে চিৎকার করে ধড়ের খোঁজ করতে শুনেছেন তারা।

    আবার এখানে আরেক ধরনের ভূতদের দেখা যায়, যারা পরিচিত পাস্তাসাত নামে। পাস্তাসাতের মানে করলে দাঁড়ায় যাকে ছুরি মারতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফিলিপাইনে যেসব মানুষ মারা গিয়েছে তাদের ভূতেরা পরিচিত পাস্তাসাত নামে। এসময় কফিন ছিল খুব দুর্মূল্য। কাজেই মৃতদেহ খড়ের মাদুর দিয়ে মুড়িয়ে কবর দিতে বাধ্য হত লোকেরা। সাধারণত গোরস্থানের বদলে অন্য কোনো জায়গায় সমাহিত করা হত মৃতদের। কারণ ওই সময় প্রচণ্ড দারিদ্র্যের কারণে কবর চুরির হিড়িক পড়ে যায়। নির্জন রাস্তা কিংবা গলিতে চলার সময় নিঃসঙ্গ পথচারীদের সামনে হাজির হয়ে হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন থামিয়ে দেওয়ার উপক্রম করে এরা। বলা হয় এই ভূতেদের কবল থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ছুরি দিয়ে মাদুরটা কেটে একে মুক্ত করতে হবে। তবে মাদুর কাটার পর কোনো মৃতদেহের খোঁজ করলে হতাশ হতে হবে। মাদুর থেকে কেবল ভয়ঙ্কর একটা দুর্গন্ধ ভেসে আসবে, যার সঙ্গে মিল আছে পচা মাংসের গন্ধের।

    ১৮৯৮ সালে, ফিলিপিনিয় বিপ্লবের শেষের দিকে, ভয়ঙ্কর এক অগ্নিকাণ্ডে গোটা সান জুয়ানের বেশিরভাগ ইমারত বিধ্বস্ত হয়। এরপর থেকেই এখানকার রাস্তা আর অলিগলিতে নানান ধরনের অশরীরী আর আত্মাদের আনাগোনা বেড়ে যায়। অনেকে অস্বাভাবিক কোনো ছায়ামূর্তি কিংবা ভুতুড়ে কাঠামোর দেখা পাওয়ার দাবি করেন। কেউ আবার বলেন অদ্ভুতুড়ে সব শব্দ শোনার কথা। সন্দেহ নেই মানুষের অভিজ্ঞতা রং চড়ে আর এর সঙ্গে কিংবদন্তী মিশে দস্তুরমত এক ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয় সান জুয়ান।

    সান জুয়ানের প্রেতাত্মাদের মধ্যে বেশ বিখ্যাত হলো ডেভিল সিগার ম্যান। ঘটনার শুরু যুদ্ধের ঠিক আগে। এসময় শহরের তরুণেরা পরিত্যক্ত একটা ম্যানহোলের চারপাশে ভীড় করে ধূমপান করতে-করতে আড্ডায় মেতে উঠত। তারপরই এক মধ্যরাতে ঘটল ভয়ঙ্কর এক ঘটনা। এক আগন্তুক হাজির হলো তাদের সামনে। পরনে কালো আলখেল্লা, লম্বা চুল বিনুনি করে বাঁধা। খড়ের লম্বা কিনারাওলা একটা খড়ের টুপিতে ঢাকা মুখটা। তাদের কাছে সিগারেট ধরানোর আলো চাইল আগন্তুক। তরুণদের একজন যখন তার জ্বলন্ত সিগারেটটা দিল তাকে, নিজেরটা জ্বালবার জন্য মুখ উঁচু করল লোকটা। আর তখনই

    আতংকে শিউরে উঠল উপস্থিত সবাই। লোকটার যেখানে মুখ। থাকার কথা সেখানে কেবলই একটা গর্ত। তারপর থেকে মাঝেমাঝেই দেখা যেত তাকে। এমনকী এখনও রাতের বেলা সান জুয়ানের রাস্তায় একা-একা হাঁটতে বের হওয়া লোকেদের নাকি চমকে দেওয়ার অভ্যাস আছে ডেভিলম্যানের। তবে পুরানো দিনের স্থানীয় সিগারেটই তার পছন্দ। যদি তাকে আলো না দেন তবেই সর্বনাশ। বিপদ ঘনিয়ে আসবে আপনার ওপর। আবার লোকেরা গল্প করে ডেভিলম্যানের লম্বা কিনারাওলা টুপি নিয়েও। বলা হয় এ ধরনের কোনো টুপি পথের পাশে পড়ে থাকতে দেখলে কোনোভাবেই স্পর্শ করা যাবে না। আর এটা করলেই ডেভিলম্যানের দোসর বানিয়ে ফেলবেন নিজেকে। সেক্ষেত্রে নরকবাস নিশ্চিত।

    সান জুয়ানের ভুতুড়ে সন্ন্যাসিনীও হাজির হয় মাঝে মাঝে। যতদূর জানা যায় জাপানিরা তার মঠ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। আর অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হিসাবে ধর্মভীরু এই কুমারী মহিলার মাথা কেটে নেয়। তারপর থেকেই দেখা দিতে শুরু করে সন্ন্যাসিনীর অতৃপ্ত আত্মা।

    মঠের ধ্বংসাবশেষ এখনও আছে। দিনের বেলা এর পাশ দিয়ে যান কিংবা ঘুরে ফিরে দেখেন ইমারতগুলো, কোনো সমস্যা নেই। তবে রাত হলেই বিপদ, বিশেষ করে পূর্ণিমার রাত হলেই সেরেছে। মধ্যরাতে ভরা পূর্ণিমার সময় মন্দভাগ্য কোনো লোক মঠের ধ্বংসাবশেষকে পাশ কাটানোর সময় হঠাৎই হয়তো শুনবেন ভুতুড়ে একটা ঘণ্টার আওয়াজ। শব্দটা কোন্‌খান থেকে আসছে কেউ জানে না। তবে বুদ্ধিমান হলে এটা শোনার সঙ্গে-সঙ্গে ঝেড়ে দৌড় দেবেন। যদিও তাতেও শেষ রক্ষা হবে এমন নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না কেউ। কারণ ঘণ্টা বাজা মানে ধরে নিতে হবে সন্ন্যাসিনীর আত্মা কাছে-ধারেই কোথাও আছে। হয়তো লোকটার পিছনেই, চুপিসারে এগিয়ে আসছে আরও কাছে। মানুষের ধারণা তাকে যে মেরেছে তার কিংবা তার খুনির বংশধরের খোঁজ করে এখনও সে হন্যে হয়ে। সাধারণত পিছন থেকে এসে আচমকা বাম কাঁধে হাত রাখে ভুতুড়ে সন্ন্যাসিনী। পিছন থেকে তাকে এভাবে গায়ে হাত রাখতে দেখে ভয়ে হার্টফেল করে নাকি মারা গেছেন বেশ কয়েকজন মানুষ। বাকিরা হয়ে যায় বদ্ধ উন্মাদ।

    হিসপানিয়দেরও আগের আমলের পুরানো একটা টাওয়ারের ধ্বংসাবশেষ আছে সান জুয়ানে। এই টাওয়ারে মাঝে-মাঝেই দেখা দেয় রহস্যময় এক সাদা পোশাকের নারী মূর্তি। সাধারণএকা হেঁটে-চলা পথচারীদেরই ভয় দেখায় নারীটি। স্তম্ভ ছাড়াও সান জুয়ানের আরও অনেক পুরনো স্থাপনাতেই ঘুরে-ফিরে হানা দেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। অনেক সময় গায়ে কাঁপন ধরানো শব্দে হেসে ওঠে সে। বলা হয় তার চোখের জায়গায় কিছুই নেই। কেউ-কেউ ভয়ঙ্কর হাসির শব্দ শুনেই আর মহিলাকে দেখার সাহস না দেখিয়ে জান বাজি রেখে পালিয়ে এসেছেন।

    এদিকে গাড়িতে লিফট চাওয়া এক তরুণীর কাহিনিও বেশ প্রচলিত সান জুয়ানে। যতদূর জানা যায় তিন যুবক এক গোরস্থানের কাছ থেকে অপরূপা এক মেয়েকে গাড়িতে তুলে নেয়। তারপর তাকে একটা পার্টিতে নিয়ে যায় তারা। ফেরার পথে মেয়েটি জানায় তার খুব শীত করছে। তখন যুবকদের একজন তার জ্যাকেট ধার দেয় মেয়েটিকে। তারপরই গোরস্থানের কাছে অদৃশ্য হয় মেয়েটি। একটু খোঁজাখুঁজি করতেই জ্যাকেটটা পায় ছেলেরা। একটা সমাধিফলকের ওপর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে পরিপাটিভাবে। তারপরই তারা আবিষ্কার করে সমাধিটি মেয়েটি যে নাম বলেছে ওই নামের এক তরুণীর। কেউকেউ আবার দাবি করেছেন ওই সময় যুবকেরা একটা সদ্য খোঁড়া কবর খুঁজে পায়-যেখান একটা মৃতদেহ মাটি থেকে বের করে আংশিক খেয়ে গেছে কেউ। ধারণা করা হয় রাস্তা-ঘাটে গাড়িতে উঠতে চাওয়া এই নারীটি পিশাচীর মত কোনো প্রাণী, যার সত্যিকারের অস্তিত্ব আছে। এমনিতে পিশাচ হলো ফিলিপাইনের লোককাহিনির এক দানব, যে কিনা কবর খুঁড়ে মড়ার মাংস খায়।

    অবশ্য কখনও আবার নারীর বদলে এক পুরুষকে দেখা যায় লিফট চাইতে। গন্তব্যে পৌঁছার পর লোকটা অদৃশ্য হয়ে যায়। তখন তার দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে দেখা যায় একসময় এখানে ঠিকই থাকত সে, আর আজ তার মৃত্যুবার্ষিকী। সাধারণত যখন হাজির হয় দেখে মনে হয় কোনো দুর্ঘটনা থেকে কোনো মতে বেঁচে ফিরেছে সে, কাপড়-চোপড়ে লেগে থাকে রক্তের দাগ।

    রেলের ভূত

    আয়ারল্যাণ্ডের স্ট্রাবান ক্রনিকলস পত্রিকায় ছাপ হয় এই কাহিনিটি। এতে স্ট্যাবান রেলওয়ের একটা এঞ্জিন কারখানায় কাজ করার সময় কয়েকজন শ্রমিকের ভীতিকর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা হয়। ১৯১৩ সালের অক্টোবরের পর পর দু-রাতে রহস্যময় ঘটনাগুলো ঘটে। পত্রিকাটির সাংবাদিক, জোসেফ ক্রিসান শ্রমিকদের একজন পিংকারটনের সাক্ষাৎকার নেন। আমরা এটা শুনব পিংকারটনের জবানীতেই।

    মাইকেল মেডেন, ফ্রেড অলিফ্যান্ট আর আমি একটা ছাউনির ভিতর এঞ্জিন ধুচ্ছিলাম। রাত সাড়ে বারোটার দিকে ছাউনির সবগুলো দরজাতে কে বা কারা যেন ধাক্কাতে শুরু করল। সেই সঙ্গে শুরু হলো টানা একটা অপার্থিব চিৎকার। আমরা তিনজন একটা দরজার কাছে এগিয়ে গেলাম। দিব্যি দিয়ে বলতে পারি যেটা দেখেছি সেটা মানুষের চেহারারই, তবে গায়ে গতরে অনেক বিশাল। মনে হলো মূৰ্ছা যাব। মাথার সবগুলো চুল দাড়িয়ে গেছে আমার। সাহায্যের জন্য পাগলের মত চিৎকার শুরু করলাম তিনজনে। এসময়ই প্রহরী আৱ সিগন্যাল ম্যান দ্রুত এগিয়ে এল আমাদের সাহায্য করার জন্য। হাতের ক্রোবারটা (বাঁকানো লোহার ডাণ্ডার মত জিনিস) নিয়ে ভয়ঙ্কর জিনিসটার দিকে দৌড়ে গেল সিগন্যাল ম্যান। কিন্তু আঘাতটা যেন ওটার শরীর কেটে বেরিয়ে গেল। রাত আড়াইটা পর্যন্ত ছাউনির চৌহদ্দিতে শূন্যে ঝুলে রইল আত্মাটা চাঁদের আলোয় ওটাকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম আমরা। পরে ওটা অদৃশ্য হলে একটা এঞ্জিনের ছাদে উঠে সেখানে লুকিয়ে রইলাম তিনজন, ভোর না হওয়া পর্যন্ত।

    পরের রাতেও ওটা এল, এবার দেড়টার দিকে। অলিফ্যান্ট আত্মাটার দিকে এগোল। কিন্তু দুই গজের মধ্যে গিয়ে মাটিতে পড়ল ধড়াম করে। ভয়ঙ্কর শব্দে চেঁচিয়ে উঠল ওটা। কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার মুখের দিকে এভাবে তাকাল রক্ত পানি হয়ে গেল। এবার ওটাকে দেখলাম মোটমাট সাত জন। ছাউনির মধ্যে আমাদের পোশাকসহ যা কিছু ছিল সব ছুঁড়ে মারল দানবটা।

    এঞ্জিনের কাজ করা অন্য শ্রমিকদেরও সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তাদের কথার সঙ্গে পিংকারটনের কথার কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি। এদের একজন বলল পানির একটা ট্যাংকের দিকে-যাওয়া মই বেয়ে ওটাকে বার-বার ওঠানামা করতে দেখেছে সে। এক পর্যায়ে ওই ট্যাঙ্কের ভিতরে অদৃশ্য হয় জিনিসটা। এদিকে সিগন্যাল ম্যান জানাল কীভাবে সে ক্রোবার দিয়ে আত্মাটাকে আঘাত করে আর মনে হয় জিনিসটা ওটার শরীরের ভিতর দিয়ে চলে গেছে। শেষমেশ একটা জানালা দিয়ে চলে যায় আত্মাটা।

    পুরো ঘটনাটা শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এতগুলো মানুষের একসঙ্গে মতিভ্রম হওয়ার কোনো কারণ নেই। সবাই মিথ্যা বলেছে এটাও ভাবা যায় না। তবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বছর কয়েক আগে এই ছাউনির ধারে একটা লোক খুন হয়। এই ঘটনার সঙ্গে রাতের এই দানবটার আগমনের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি কখনওই।শেষ বাস (প্রথম পর্ব)

    সিংগাপুরের চাঙ্গির দিকে যাওয়া শেষ বাস এটি। তানাহ মেরাহর দিকে রাস্তাটা বিপজ্জনক সব বাঁকে ভরা। তবে গাড়ির চালক খুব ওস্তাদ লোক। বেশ দ্রুতগতিতে একটার পর একটা বাঁক পেরিয়ে যাচ্ছে। তারপরই হঠাৎ বাস দাঁড় করাতে হলো তাকে। কারণ, তার নজরে পড়েছে রাস্তায় দাঁড়ানো সাদা জিন্স পরা একটা মেয়ে গাড়ি থামানোর ইশারা করছে। গাড়ির মাঝখানে দাঁড়ানো কণ্ডাক্টর আর একটু হলে হুমড়ি খেয়ে পড়ত মেঝেতে।

    বাসে উঠে পড়ল মেয়েটি। চালক আর কণ্ডাক্টর কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইল এই রাতে একা একা কী করছে সে। কিন্তু মেয়েটা কেবল ভাড়া দিল, কোনো জবাব না। কণ্ডাক্টর তাকে একটা টিকেট ধরিয়ে দিল। তারপর তার প্রতি মনোযোগ হারাল। কারণ পুরো দিনের হিসাব-কিতাব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সে।

    এদিকে মনের সুখে গাড়ি উড়িয়ে নিয়ে চলেছে চালক।

    বাস যখন শেষ স্টেশনের কাছাকাছি চলে এল তখন কণ্ডাক্টরের মনে হলো মেয়েটা এখনও গাড়ি থেকে নামেনি। উঠেই বাসের পিছনের দিকে চলে গিয়েছিল সে। মেয়েটা কোথায় নামতে চায় জানার জন্য পিছন দিকে ঘুরল সে।

    কিন্তু বাসের পিছনে কেউ নেই।

    ভয় পেয়ে গেল সে। দৌড়ে গিয়ে চালককে জানাল কী ঘটেছে। অবিশ্বাসভরা দৃষ্টিতে পিছনে তাকাল চালক। কিন্তু কণ্ডাক্টরের মতই সেখানে কাউকে দেখতে পেল না সে-ও।

    বাসটা যখন দাঁড় করাল চালক, তখন কণ্ডাক্টর মেয়েটার দেওয়া কয়েনগুলো বের করার জন্য মানিব্যাগে হাত পুরল। কিন্তু মানিব্যাগের মধ্যে তার হাতে অদ্ভুত কিছু একটা ঠেকল। আর যখন বের করল, আঁতকে উঠে সঙ্গে-সঙ্গে ফেলে দিল। কী হয়েছে দেখার জন্য ঘুরল চালক। কণ্ডাক্টরের চোখ যেন গাড়ির মেঝেতে আটকে আছে। তবে তার আসন থেকে কিছু নজরে এল না চালকের।

    ওটা কী? জানতে চাইল সে।

    যখন কথা বলার অবস্থায় পৌঁছল কণ্ডাক্টর, সে বলল, একটা হাড়। সে বাসের ভাড়া মিটিয়েছে আঙুলের একটা হাড় দিয়ে।

    শেষ বাস (দ্বিতীয় পর্ব)

    সিংগাপুরের দুই বন্ধু শেষ বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। তবে মনে-মনে তাদের আশংকা ছিল ওটা চলে গেছে আগেই। কারণ এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে তাদের। যে বাস স্টপে দাঁড়িয়ে আছে এর সামনের রাস্তা দিয়ে কোনো গাড়ি যাচ্ছে না। আশপাশে কোনো ফোনও নেই। ( কাহিনিটি যখনকার তখনও মোবাইল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি)। বেশ চিন্তায় পড়ে গেল দুজনে। তারা এখন কী করবে?

    তারপরেই দেখল একটা বাস ধীরে-ধীরে এগিয়ে আসছে এদিকে। ওহ! শেষ বাস। যাক তাহলে ওটা চলে যায়নি, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল দুই বন্ধু।

    কাহিনিটা অনেক দিন আগের। তখন বাসের মাঝখানে একটা দরজা থাকত কেবল। বাসটা থামতেই হুড়মুড় করে ভিতরে ঢুকে পড়ল দুই তরুণ।

    তারপর আবার চলতে শুরু করল বাসটা। কয়েক মিনিট পরে দুই বন্ধু বুঝতে পারল কোথাও বড় ধরনের একটা গোলমাল আছে।

    প্রথম কথা, বাসটা চলছে খুব ধীরে। দ্বিতীয় কথা, ভাড়া নেওয়ার জন্য কোনো কণ্ডাক্টর নেই বাসে। তারপরই আবিষ্কার করল বাসে কোনো চালকই নেই।

    আতংকে খাড়া হয়ে গেল দুজনের চুল। হৃৎপিণ্ড যেন গলার কাছে উঠে এসেছে। দুজন দুজনের দিকে তাকাল অবাক বিস্ময়ে, আতংকে চেঁচিয়ে উঠল।

    তারপরই বাসটা থেমে গেল।

    গাড়ির চালক আর কণ্ডাক্টর পিছন থেকে এসে হাজির হলো। তারা দুজনে নষ্ট বাসটাকে ঠেলছিল। এখন দেখতে এসেছে কী কাণ্ড ঘটেছে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅশরীরীজগৎ – ইশতিয়াক হাসান
    Next Article ম্যালিস – কিয়েগো হিগাশিনো

    Related Articles

    ইশতিয়াক হাসান

    অশরীরীজগৎ – ইশতিয়াক হাসান

    July 11, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.