Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এক পাতা গল্প712 Mins Read0

    থলে রহস্য

    থলে রহস্য

    পটলডাঙার বিরিঞ্চি কখনও পাড়াগাঁ দেখেনি। তার বন্ধু নীরদ ওরফে ন্যাদারও সেই দশা। তাই ক্লাসের হারু যখন গ্রাম থেকে ঘুরে এসে বললে,–পাড়াগাঁ কী সুন্দর, তার মাঠে মাঠে ধান, গাছে গাছে ফল-ফুল, আকাশে কেবল কোকিল আর হংসবলাকা–তখন বিরিঞ্চির মন ভারি খারাপ হল। এত খারাপ হল যে নাকের ডগা সুড়সুড় করতে লাগল; আর টিফিন পিরিয়ডে বসে বসে একাই দু-আনার চীনেবাদাম খেয়ে ফেললে, কাউকে একটুও ভাগ দিলে না।

    বিরিঞ্চির এক পিসিমা থাকেন হুগলির এক পাড়াগাঁয়ে। কলকাতা থেকে তিন ঘন্টা লাগে সেখানে যেতে। কিন্তু বিরিঞ্চির বাবা কখনও সেখানে যাননি কাউকে যেতেও দেননি। তাঁর ধারণা, হাওড়া স্টেশনের চৌহদ্দি পেরুলেই ঝাঁকে ঝাঁকে মাছিমশা আর বীজাণু এসে আক্রমণ করবে, তারপর কালাজ্বর, ডেঙ্গুজ্বর, ম্যালেরিয়া, প্লেগ, বাত, টাকপড়া-সব একসঙ্গে চেপে ধরবে।

    –পাড়াগাঁ! উরে ব্বাস! সাক্ষাৎ যমপুরী! বলেই বিরিঞ্চির বাবা টপাৎ করে একটা প্যালড্রিন খেয়ে ফেলেন–পাড়াগাঁয়ে যাওয়ার আগেই।

    কিন্তু এ-যাত্ৰা বিরিঞ্চিকে তিনি আর ঠেকাতে পারলেন না। বিরিঞ্চি আসছে বারে স্কুল-ফাইন্যাল দেবে, সে বিদ্রোহ করে বসল : পিসিমার বাড়ি আমায় যেতে দেবে না?

    বিরিঞ্চির বাবা বললেন, উফ, অসম্ভব!

    –দেবে না তো? ঠিক আছে। তাহলে রাস্তায় বেরিয়ে আমি তেলেভাজা খাব।

    –আঁ! শুনে বিরিঞ্চির বাবা বিষম খেলেন : ওতে যে কলেরা হবে।

    তারপর পথের ধার থেকে ফিরিওলার শরবত

    বিরিঞ্চির বাবা আর্তনাদ করে বললেন, ডবল নিমোনিয়া।

    –আইসক্রিমও কিনে খেতে পারি

    বিরিঞ্চির বাবার প্রায় ফিট হওয়ার উপক্রম। ধরা গলায় বললেন, যক্ষ্মা!

    –তাহলে পিসিমার বাড়ি যেতে দাও!

    বিরিঞ্চির বাবা প্রায় অথই জলে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন, এমন সময় বিরিঞ্চির মা এসে হাজির। তিনি স্বামীকে একটা ধমক দিয়ে বললেন, তোমার না হয় মাথা খারাপ হয়েছে, তাই বলে ছেলেটাকেও পাগল করবে নাকি? যা বীরু, তোর তো এখন ছুটি আছে–দিনকয়েক ঘুরেই আয় পিসির বাড়ি থেকে। ঠাকুরঝি কত খুশি হবে। এই বলে সব মিটিয়ে দিয়ে বিরিঞ্চির মা ঝিকে বকতে গেলেন। ঝি দুটো কাচের গ্লাস ভেঙে ফেলেছিল।

    বিরিঞ্চির বাবার ভুঁড়ি কাঁপিয়ে সাইক্লোনের মতো একটা দীর্ঘশ্বাস বেরুল। চিঁ-চিঁ করে বললেন, তবে ঘুরে আয়। কিন্তু যাওয়ার সময় একবাক্স ওষুধ দিয়ে দেব-ক্লোরোডাইন, প্যালুড্রিন, চ্যবনপ্রাশ, সিনা থার্টি, বেলেডোনা টু হানড্রেড আর ভাস্কর লবণ। সব চার্ট করে দেব–দরকার পড়লেই খেয়ে নিবি। হ্যাঁ—হ্যাঁ–সেই সঙ্গে বেনজিন আর তুলোও দিতে হবে।

    বিরিঞ্চি বলতে যাচ্ছিল, মেডিক্যাল কলেজটাও সঙ্গে দিয়ে দিয়ো– আর কোনও ভাবনা থাকবে না। কিন্তু বাবাকে কি আর সে কথা বলা যায়? আপাতত পার্মিশন পাওয়ার আনন্দে সে লাফাতে লাফাতে তার বন্ধু ন্যাদাকে খবর দিতে ছুটল।

    .

    ট্রেন থেকে নেমে দেখা গেল, পিসেমশাই আসেননি। এই রে–এখন কোন্ দিকে যাওয়া যায়?

    বিরিঞ্চি বলে, আয়, এই প্ল্যাটফর্মে কিছুক্ষণ হাওয়া খেয়ে নিই, তারপর ভাবা যাবে ওসব।

    ন্যাদা বললে, বেজায় খিদে পেয়েছে যে! হাওয়ায় পেট ভরবে না।

    বলতে বলতেই পিসেমশাই এসে হাজির। পায়ে চটি, গায়ে গেঞ্জি, কাঁধে গামছা। হাঁপাচ্ছেন।

    বিরিঞ্চি দেখেই চিনল। তাদের কলকাতার বাড়িতে সে আগেও দু-তিনবার পিসেমশাইকে দেখেছে। ধাঁ করে তখুনি তাঁকে একটা প্রণাম ঠুকে ফেলল, সঙ্গে সঙ্গে ন্যাদাও।

    পিসেমশাই বললেন, আসতে একটু দেরি হয়ে গেল। রাস্তায় ভালো মাছ দেখলাম, তাতেই–আরে–আরে–পিসেমশাইয়ের হাতের ন্যাকড়ার পুঁটলিতে কী যেন দাপাদাপি করছিল। হঠাৎ তা থেকে কালো লম্বা-মতন একটা জিনিস ছিটকে পড়ল ন্যাদার পায়ের কাছে। ন্যাদা সঙ্গে সঙ্গে তিন হাত এক হাইজাম্প মারল : সাপ-সাপ!

    সঙ্গে সঙ্গে বিরিঞ্চি একটা আছাড় খেতে খেতে সামলে গেল : আঁঃ-সাপ! কোথায় সাপ? কী সাপ?

    কাঁচা-পাকা গোঁফের তলায় পিসেমশাইয়ের হাসি ঝিলিক দিয়ে উঠল : সাপ নয়–মাগুর মাছ। বলেই পিসেমশাই উবু হয়ে সেই কালো লম্বা জিনিসটাকে কপাৎ করে পাকড়াও করলেন; তারপর বললেন, তোমাদের জন্য এগুলো কিনতেই তো দেরি হয়ে গেল। নাও–এবার বাড়ি চলো

    বাড়ি কাছেই। কাঁচা রাস্তা দিয়ে মিনিট-দশেক হেঁটে, একটা আমবাগান পেরুতেই।

    পিসিমা দোরগোড়াতেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভারি খুশি হয়ে বললেন, আয়–আয়! এতদিন পরে বুঝি গরিব পিসিকে মনে পড়ল? আর এটি বুঝি তোর বন্ধু। কী নাম–ন্যাদা। বাঃ, বেশ নাম। তা এসো বাবা–ভেতরে এসো।

    তারপর চিড়ে মুড়ি নারকোলের নাড়ুর এলাহি কাণ্ড।

    খেতে খেতে বিরিঞ্চি বললে, বেশ লাগছে–না রে?

    ন্যাদা চোখ বুজে নারকোলের নাড়ু চিবুতে চিবুতে বললে, লা গ্র্যান্ডি।

    দুপুরেও সেই ব্যাপার। মাগুর মাছের কালিয়া, পোনা মাছের ঝাল, মুড়িঘন্ট, বাটি-চচ্চড়ি, পোস্তর বড়া, সোনামুগের ডাল। বাটির পর বাটি। ন্যাদা বললে, আমার আর পাড়াগাঁ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না রে! মনে হচ্ছে এখানেই থেকে যাই চিরকালের মতো!

    বিরিঞ্চি সুরুৎ করে মুড়িঘন্টের একটা কাঁটা চুষে নিয়ে আবেগভরা গলায় বললে, যা বলেছিস!

    ন্যাদা হাত চাটতে-চাটতে জিজ্ঞেস করলে, পাড়াগাঁয়ে এমন সব পিসিমা থাকতে লোকে পুঁইডাটা আর কুচো চিংড়ি খাবার জন্যে কলকাতায় কেন থাকে র‍্যা?

    মাগুর মাছের কালিয়াটাকে প্রবল বেগে আক্রমণ করতে করতে বিরিঞ্চি বললে, গোমুখ্যু বলে।

    খাওয়ার পর দু’জনে একেবারে অজগর। মানে, হরিণ-টরিণ গিলে অজগরের যে দশা হয় তাই আর কি! নড়াচড়াই মুশকিল।

    পিসিমা দোতলার বারান্দায় শীতলপাটি বিছিয়ে দিলেন। বললেন, এখানে একটু গড়িয়ে নাও। ঘরে গরম লাগবে–দিব্যি হাওয়া আছে এখানটায়।

    দিব্যি হাওয়াই বটে! শরীর জুড়িয়ে গেল। তায় আবার ঝিরঝির করে গাছের পাতা কাঁপছে, তাতে পাখি বসে আছে।

    ন্যাদা বললে, ওটা কী গাছ রে?

    বিরিঞ্চি ভেবে-চিন্তে বললে, পাড়াগাঁয়ে সব ভালো ভালো গাছ থাকে। খুব সম্ভব ওটা তমাল গাছ। কিংশুকও হতে পারে।

    ন্যাদা আরও খানিক ভেবে বললে, কুরুবকও হতে পারে। আচ্ছা–শাল্মলি নয় তো?

    –নাঃ, বোধহয় শাল্মলি নয়। তা হলে তো ফুলের মালা দিয়েই কাটা যেত। কেন–পণ্ডিতমশাই সেই যে পড়ায়নি?

    ফুলদল দিয়া, কাটিলা কি বিধাতা শাল্মলি তরুবরে? শাল্মলি নিশ্চয়ই খুব রোগা আর ছোট গাছ হবে।

    ন্যাদা বললে, ঠিক। তাহলে ওটা তমাল কিংবা কুরুবক। কিংশুকটা শুনতে আরও ভালো। আচ্ছা, ওতে একটা পাখি বসে আছে, দেখেছিস? ওটা কী পাখি বল দিকি?

    বিরিঞ্চি বললে, পাখিটা দেখতে কিন্তু বেশ। দোয়েল-শ্যামা-পাপিয়া কিছু একটা হবে। নীলকণ্ঠও হতে পারে।

    ন্যাদা বললে, নীলকণ্ঠ নামটা বেশ জুতসই। বাঃ কী সুন্দর। আমার ভাই কবিতা লিখতে ইচ্ছে করছে। ওই যে কিংশুক বৃক্ষের শাখায় বসিয়া আছে নীলকণ্ঠ বিহঙ্গ

    আমি মিলিয়ে দিচ্ছি, দাঁড়া-বিরিঞ্চি বললে, তাই দেখে মোর মনে নাচিতেছে পুলক-তরঙ্গ।

    হঠাৎ পিসেমশায়ের হাসিতে ওরা চমকে উঠল। হুঁকো হাতে কখন তিনি এসে হাজির।

    –কিংশুক বটে? পিসেমশাই হুঁকোয় টান দিয়ে বললেন, ওই গাছের নাম হচ্ছে ঘোড়ানিম। আর ও পাখিটা নীলকণ্ঠ নয়–ওর নাম হাঁড়িচাঁচা, ব্যাঙ আর কেঁচো ধরে খায়

    দুত্তোর! এমন কবিতাটা মাঠে মারা গেল! ভারি ব্যাজার হল ন্যাদা। বিরিঞ্চিরও মন খারাপ হয়ে গেল।

    খানিকক্ষণ কুড়ক কুড়ক করে হুঁকো টেনে পিসেমশাই এলোমেলো গল্প জুড়ে দিলেন। ধান চালের দর, গাঁয়ের গোমড়ক, কলকাতায় খাঁটি দুধ পাওয়া যায় কি না, রাইটার্স বিলডিঙের নতুন বাড়িটা কী প্রকাণ্ড–এই সব। কিন্তু ওদের তখন বিরক্তি ধরে গেছে। দুজনে হুঁ হুঁ করতে করতে কোন ফাঁকে টুপ করে ঘুমিয়ে পড়ল।

    বিকেলে লুচি হালুয়া আর চা খেয়ে দুজনে বেড়াতে বেরুল।

    পাড়াগাঁয়ের রাস্তা। মাঝে মাঝে দু-একখানা বাড়ি। তা ছাড়া গাছগাছড়া, পুকুর, ঝোপজঙ্গল। বেশ লাগছিল।

    হঠাৎ দেখা গেল জঙ্গলের মধ্যে এক জায়গায় একটা লোক কী যেন খুঁড়ছে কোদাল দিয়ে। একেবারে নিবিষ্ট মনে।

    বিরিঞ্চি ফিসফিস করে ন্যাদাকে বললে, গুপ্তধন খুঁজছে নাকি রে?

    ন্যাদা বললে, অসম্ভব কী! পাড়াগাঁয়েই তো এখানে-ওখানে ঘড়া-ঘড়া মোহর লুকোনো থাকে শুনেছি।

    গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে দুজনে দেখতে লাগল। হিঁসসো হিঁসসো করে লোকটা সমানে মাটি কাটছে। টপটপিয়ে ঘাম পড়ছে গা দিয়ে।

    খানিক পরেই কী যেন টেনে তুলল আঁকপাঁক করে। বেশ পেল্লায় জিনিস একটা।

    কী ওটা? ন্যাদা ফিসফিস করে বললে।

    –বোধহয় মোহরের ঘড়া বলেই উত্তেজিত হয়ে বিরিঞ্চি যেই গলা বাড়িয়ে দেখতে গেছে, অমনি শুকনো পাতায় খচর-মচর আওয়াজ শুনে লোকটা ফিরে তাকাল। দেখতেও পেল ওদের।

    এক মুখ দাঁত বের করে হেসে বললে, কী দেখছ খোকারা?

    বিরিঞ্চি আর কৌতূহল সামলাতে পারল না; বলল, মাটি থেকে ওটা কী তুললে তুমি? গুপ্তধন নাকি?

    লোকটা হি হি করে হেসে বললে, গুপ্তধনই বটে! জব্বর ওল একখানা। দেব একটুখানি কেটে? নিয়ে যাও না–তোফা ডালনা খাবে।

    ধুৎ; ডালনার নিকুচি করেছে। গুপ্তধনের বদলে শেষকালে কিনা ওল! ছ্যাঃ–ছ্যা। বিরিঞ্চি বললে, ন্যাদা,–যাই এখান থেকে।

    দুজনে হনহন করে এগিয়ে যেতে যেতে শুনল, পেছনে লোকটা খিকখিক করে হাসছে।

    আরও খানিকটা হাঁটতেই একটা পুরনো পোড়া বাড়ি।

    দরজা-জানলা কোথাও কিছু নেই। ভেতরে জন-মানুষ আছে বলে মনে হয় না। ওই গুপ্তধন কথাটা তখন বিরিঞ্চিকে পেয়ে বসেছে। এই বাড়িটা দেখে কেমন সন্দেহ হল তার। হঠাৎ মনে হল–এমনি পোড়ো বাড়িতে তো গুপ্তধন লুকোনো থাকে! কে জানে হয়তো এই বাড়িতেই আছে?

    বিরিঞ্চি দাঁড়িয়ে পড়ল।

    ন্যাদা!

    –কী রে?

    –এই বাড়িতে গুপ্তধন আছে!

    শুনে ন্যাদার রোমাঞ্চ হল; বললে, সত্যি? কী করে জানলি?

    আমার মনে হল। বাড়িটার কেমন রহস্যময় চেহারা দেখেছিস? পাড়াগাঁয়ের এসব বাড়িতেই মোহরের ঘড়া লুকোনো থাকে। যাবি খুঁজতে?

    ন্যাদার কান কুটকুট করতে লাগল। রোমাঞ্চ হলেই তার কান চুলকোয়।

    -মন্দ কী? চল না। বেশ অ্যাডভেঞ্চার হবে।

    এদিক-ওদিক তাকিয়ে দু’জনে ঢুকে পড়ল ভেতরে।

    অনেককালের পুরনো বাড়ি। ঠাণ্ডা সব শ্যাওলা-পড়া ঘর। ইট-বেরুনো দেওয়ালগুলো আবছা অন্ধকারে যেন হা-হা করে হাসছে।

    ন্যাদার ভারি ভয় করতে লাগল।

    –চল ভাই, এখানে আর নয়। এসব পোড়া বাড়িতে ভূত থাকে।

    –ভূত! বিরিঞ্চি ভ্রূকুটি করে বললে, এ-যুগের ছেলে হয়ে তুই ভূতে বিশ্বাস করিস?

    ন্যাদা বললে, ইয়ে–ভূত ঠিক নয়, তবে সাপ-টাপ

    বিরিঞ্চি বললে, সাপ-টাপ দু-একটা না থাকলে আর অ্যাডভেঞ্চার কিসের রে? আরে, দেখিই না এ-ঘর ও-ঘর একটু খুঁজে। মনে কর ফস করে একটা সুড়ঙ্গ পেয়ে গেলাম।

    বলতে বলতেই ন্যাদা হঠাৎ বিরিঞ্চির কাঁধে জোর থাবড়া দিলে একটা। বিরিঞ্চি আঁতকে উঠল।

    –ওখানে ওগুলো কী রে?

    –কোথায়?

    –ওই ছাদের গায়ে! পাঁচ-সাতটা থলে ঝুলছে না?

    –আঁ–তাই তো! থলেই তো! আবছা অন্ধকারেও পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।

    বিরিঞ্চি কাঁপতে কাঁপতে বললে, ন্যাদা রে–পেয়ে গেলাম।

    কী পেয়ে গেলি?

    –গুপ্তধন। ওগুলো মোহরের থলে বুঝতে পারছিস না।

    ন্যাদার তখন আনন্দে গলা ধরে এসেছে। কথা বলার আগে খানিকক্ষণ বু-বু করে নিলে।

    –কিন্তু ভাই, গুপ্তধন তো মাটির তলায় থাকে শুনেছি। ছাদে ঝুলিয়ে রাখে বলে তো কোনও বইয়ে পড়িনি!

    –যারা বই লেখে–তারা কি সব খবর জানে? চোখের সামনেই তো দেখছিস, কেউ কেউ গুপ্তধন থলেতে করে ছাদেও ঝুলিয়ে রাখে।

    -এখন কী করা যায় বল তো? ন্যাদা কথা কইতে পারছিল না।

    বিরিঞ্চি বললে, কী আর করা যায়? আয় এখুনি ওগুলো চটপট পেড়ে ফেলি। গুপ্তধন দেখলে কি আর দেরি করতে আছে? হয়তো কাল আর কারও চোখে পড়ে যাবে ব্যস, গেল!

    ন্যাদা বললে, তা ঠিক। কিন্তু ঘরটায় ভাই ভারি বিচ্ছিরি গন্ধ। আর পায়ের নীচে ময়লা কী-সব চটচট করছে।

    বিরিঞ্চি বললে, রেখে দে তোর গন্ধ! গুপ্তধন যেখানে থাকে সেখানে ওরকম অনেক ময়লা আর গন্ধও থাকে। ওতে কি ঘাবড়ালে চলে? নে এখন কাজে লেগে যা—

    ন্যাদা বললে, আমি?

    বিরিঞ্চি বললে, তুই বইকি। একখানা ঘুড়ির জন্যে তুই পাড়ার হেন ছাদ নেই যাতে উঠিসনি। আর গুপ্তধনের জন্যে ইটে পা দিয়ে এই ছাদে উঠতে পারবিনে? এই দরজার এখান দিয়ে উঠে যা–বেশ সোজা হবে।

    বলতে বলতে বিরিঞ্চির মাথায় কালো কী খানিকটা পড়ল। ইস–কী যাচ্ছেতাই গন্ধ!

    বিরিঞ্চি রুমাল দিয়ে মাথা ঘষতে ঘষতে বললে, নাঃ–আর দাঁড়ানো যাচ্ছে না। এই ন্যাদা, উঠে পড় না। আরে আটটা থলেতে কম করেও হাজারখানেক মোহর তো নির্ঘাত। হীরে-টিরেও থাকতে পারে। আধাআধি ভাগ করে নেব। ওভারনাইট বড়লোক বুঝলি না?

    ন্যাদা বললে, নিয়ে যাবি কী করে? লোকে দেখবে যে?

    বিরিঞ্চি বিরক্ত হয়ে বললে, কোঁচড়ে করে নিয়ে যাব। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলব–ওল নিয়ে যাচ্ছি। পাড়াগাঁয়ে পথেঘাটে কত ওল থাকে নিজের চোখেই তো দেখলি।

    –তা দেখলাম বটে। ন্যাদা মাথা নেড়ে বললে, তবে উঠি।

    ওঠ! আমি নীচে কোঁচা পেতে রাখছি। থলে পাড়বি–আর কোঁচার ভেতরে টুপটাপ করে ফেলে দিবি।

    –তা হলে জয়গুরু বলেই ন্যাদা দেওয়াল বাইতে শুরু করল। আর কী আশ্চর্য–উঠেও গেল ঠিক।

    বিরিঞ্চি কোঁচা পেতে এদিকে রেডি হয়েই আছে। এখুনি বড়লোক হয়ে যাবে। কোঁচার ভেতর পড়বে মোহর-হীরে–উঃ!

    –শিগগির দে, ফেলে দে ওপর থেকে! একেবারে দুটো করে।–ওয়ান-টু

    থ্রি বলবার আগেই ন্যাদা দুটো থলে ধরে টান দিয়েছিল এক হাতেই। কিন্তু তক্ষুনি হাউমাউ করে চেঁচিয়ে উঠল বাপরে! গেছি

    কী হল?

    আর্তনাদ করে ন্যাদা বললে, থলে আমায় কামড়াচ্ছে।

    -আঁ!

    –মোক্ষম কামড় মেরেছে। ন্যাদা সমানে হাউহাউ করতে লাগল। ইস–থলের কী দাঁত রে। রক্ত বের করে দিলে! এমন দাঁতাল থলে তো কখনও দেখিনি।

    –আঁ!

    বলতেই আবার সেই কালোকালো বিচ্ছিরি জিনিস বিরিঞ্চির একেবারে নাকেমুখে পড়ল। কী গন্ধ রে—ওয়াক–ওয়াক।

    বিরিঞ্চির গলায় পিসিমার সব মুড়িঘন্ট আর লুচি-হালুয়া উলটে এল।

    আর ন্যাদা চেঁচিয়ে উঠল, থলেরা আমায় কামড়াচ্ছে। আমায় খেয়ে ফেললে! থলে যে কখনও কামড়ায় সে তো জানতাম না!

    তাড়াতাড়ি করে দেওয়াল বেয়ে নামতে গিয়ে ন্যাদা একেবারে বিরিঞ্চির ঘাড়ে এসে পড়ল। তারপর দুজনে ময়লা দুর্গন্ধ মেঝেতে গড়াগড়ি।

    গুপ্তধনের থলেরা তখন ডানা মেলে উড়তে শুরু করেছে। ওরা উঠে দাঁড়াতেই ওদের নাক-মুখ খিমচে দিয়ে কিচিরমিচির করতে করতে বাইরের বিকেলের ছায়ায় তারা মিলিয়ে গেল।

    ওরা যখন পোড়ো বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল তখন আর কেউ কারও দিকে তাকাতে পারছে। ময়লায় পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভর্তি। আর গায়ের গন্ধ! যেন গন্ধমাদন পর্বত একজোড়া।

    বিরিঞ্চি বাজার মুখে বললে, বুঝেছি। ওগুলো মোহরের থলে নয়।

    ন্যাদা বললে,–থলে কখনও কামড়ায় না।

    বিরিঞ্চি বললে, বোধহয় বাদুড়।

    ন্যাদা মাথা নেড়ে বললে, আমারও তাই মনে হচ্ছে! বইয়ে পড়েছিলাম, অন্ধকার জায়গাতে বাদুড় ঝুলে থাকে।

    গায়ের খোশবু ছড়িয়ে দুজনে কিছুক্ষণ চুপচাপ হেঁটে চলল। গিয়েই সাবান মেখে চান করতে হবে। তাতেও গন্ধ ছাড়লে হয় গা থেকে!

    বিরিঞ্চি খানিক পরে বললে, পাড়াগাঁ একদম বাজে জায়গা না রে?

    ন্যাদা বললে, ঠিক তাই। চল না কাল চলে যাই কলকাতায়। আমার হাতে কী জোর কামড়ে দিয়েছে রে! রক্ত পড়ছে–উফ!

    আমার নাকও আঁচড়ে দিয়েছে–ভীষণ জ্বালা করছে! বাবার ওষুধের বাকসোটা এবারে সত্যিই কাজে লাগবে–

    বিরিঞ্চির বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাস পড়ল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    Related Articles

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.