Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এক পাতা গল্প712 Mins Read0

    ছেলেধরার ইতিহাস

    ছেলেধরার ইতিহাস

    –ঝন্টু—ঝন্টু–

    পিতার কণ্ঠস্বর বেজে উঠল সারা বাড়িতে। কিন্তু পুত্র নিরুত্তর। উত্তর দেবার উপায়ও ছিল না। দুগালে দুটো অ্যাই বড়বড় ছানাবড়া ঠেসে রাখলে কেই বা উত্তর দিতে পারে বলো? শুধু চোখদুটো ছানাবড়া হয়ে ওঠে, তার বেশি নয়।

    তা ছাড়া কাজটা যে খুব মহৎ হচ্ছে না, এ-খবরটিও বিলক্ষণ জানা আছে ঝন্টুচন্দরের। এই বয়সেই অমন পাখোয়াজ ছেলে পৃথিবীতে আর দুটি জন্মেছে কিনা সন্দেহ। পাখোয়াজ কথাটা শুনেই ভুল কোরো না। বাজনা নয়, পাখনাওয়ালা ছেলে। আট বছরের ছেলের মাথায় আটানব্বই বছরের মগজ। বাপ জগন্নাথ চাকলাদারকে এক হাটে কিনে স্রেফ তিনহাটে বিক্রি করে আনতে পারে; তাও কানাকড়িতে।

    জগন্নাথ চাকলাদার বদরাগী লোক। চটে গিয়ে দমাদ্দম গাড়বদনাই ভেঙে ফেলেন গোটা কতক। একবার রাগের মাথায় দেওয়ালে লাথি মেরে পা ভেঙে বিছানাতেই লম্বা হয়ে রইলেন দেড় মাস। এ-হেন মনুষ্যও সামলাতে পারছেন না ঝন্টুচন্দরকে। পাখোয়াজের মতোই পাখোয়াজ ছেলেকে দুহাতে ঠেঙিয়েছেন তিনি। কিন্তু লাভের মধ্যে তাঁরই হাতের মাসল বেড়েছে–ঝন্টু যথাপূর্বং তথাপরম্।

    চেহারার তুলনায় মাথাটা একটু বেশি বড় ঝন্টুর। তারকেশ্বরে ছেলের মাথা কামিয়ে লাউয়ের বোঁটার মতো একটা টিকি রেখে জগন্নাথ ভেবেছিল, এ-ছেলে তাঁর বিদ্যাসাগর না হয়ে যায় না। বিদ্যাসাগর হয়েছে বটে, কিন্তু বড়বিদ্যার।

    ও হরি! বড়বিদ্যা কাকে বলে তা বুঝি জানো না? সেই যে শাস্ত্রে আছে : চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা, যদি না পড়ো ধরা–

    হ্যাঁ, হ্যাঁ, সেই কথাই বলছি। এই বয়সেই ঝন্টু ও কাজে যা হাত পাকিয়েছে তাতে বড়বড় সিঁদেল চোরেরও লজ্জা পাবার কথা। বাবার পকেট হাতড়ে পয়সা নিয়ে তেলেভাজা খাওয়া তার রোজকার ব্যাপার। ঠাকুরমার ভাঁড়ারে তো হাহাকার! সন্দেশ, কলা, নাড়ু, ক্ষীর ঝন্টুর দৃষ্টি পড়লে বেমালুম হাওয়া। পিঁপড়ে এসেও চাটবার জিনিস খুঁজে পাবে না।

    ভুল কি আর হয় না? আরে হয় বই কি স্বয়ং ভগবানই যখন মাঝে মাঝে প্যাঁচে পড়ে যান, তখন ঝন্টুর আর কী দোষ? একবার এক হাঁড়ি দই ভেবে এক খাবলা চুন খেয়ে যা কাণ্ড! সাত দিন গাল-গলা ঢোল হয়ে রইল। আর-একবার আচারের বয়ামে নেংটি ইঁদুর পড়েছিল–অন্ধকারে সেইটেকে আচার ভেবে কামড় দিয়ে

    আরে থুঃ থুঃ!

    তা ওতে ঘাবড়াবার বান্দা নয় ঝন্টু। আসলে কোনও কিছুতেই সে ঘাবড়ায় না।

    জগন্নাথ চাকলাদার তাকে যতই থাবড়ান না কেন–কিছুতেই দমাতে পারেননি। বরং সে-ই তাঁকে দমিয়ে ফেলেছে।

    তেল ঢেলে দিয়েছে তাঁর লেখবার দোয়াতে। চেয়ারের পায়ার নীচে সাইকেলের বল রেখে দিয়েছিল একবার, বসতে গিয়ে চেয়ার-ফেয়ার সুদ্ধ উলটে-পালটে একেবারে গজকচ্ছপ হয়ে গেলেন চাকলাদার। আর-একবার নেমন্তন্নে যাবেন, ঝন্টুকে নিয়ে যেতে চাননি সঙ্গে করে! খানিকক্ষণ গোঁ ধরে বসে রইল ঝন্টু, তারপর বেমালুম চুপচাপ। যেন নেমন্তন্নে তার এক বিন্দু রুচি নেই–তার কাছে জুতোর সুকতলা আর ফুলকো লুচি দুই-ই সমান।

    বদরাগী হলেও জগন্নাথ চাকলাদার মাথামোটা লোক। নিজের ছেলের অতলগর্ভ রহস্যের কথা তাঁর জানা ছিল না। জানলেন যথাসময়ে।

    গরদের পাঞ্জাবি পাট করে সাজিয়ে রেখেছিলেন আলনায়। তরিবত করে যেই গায়ে দিতে যাবেন, অমনি তাজ্জব ব্যাপার। হাতদুটো হাতেই রইলবাকি জামাটা খসে পড়ল তিন-চার টুকরো হয়ে। জগন্নাথ হাঁ করে রইলেন। নতুন জামাটার এই বিতিকিচ্ছিরি কাণ্ড দেখে কথাই খুঁজে পেলেন না তিনি।

    ব্যাপারটা জলের মতো তরল। একখানা দাড়ি কামাবার ব্লেড ব্যস! তারপর কচাকচ শব্দে সেলাইগুলো কেটে ফেলতে আর কতক্ষণ।

    রাগের চোখে জগন্নাথ একটা কাঁচের গ্লাস ভেঙে ফেললেন, ভাঙা কাঁচে আঙুল কেটে গেল। তারপর সেই কাটা আঙুলে জলপট্টি বেঁধে তিনি ঝন্টুর বাপের মানে নিজের শ্রাদ্ধ করতে শুরু করলেন প্রাণপণ চিৎকারে। আর ঠিক সেই সময় তেতলার চিলেকোঠায় বসে নির্বিকার মুখে একখানা আস্ত তাল-পাটালি সাবাড় করলে ঝন্টু।

    সংক্ষেপে এই হল পিতা-পুত্র সংবাদ।

    জগন্নাথ আবার হুঙ্কার করলেন : এই ঝন্টু, ঝন্টু

    হুঙ্কার করার কারণ ছিল যুক্তিসঙ্গত। অফিসের কাগজ বার করবার জন্যে যেই টেবিলের টানাটা খুলেছেন, অমনি তার ভেতর থেকে একটা কটকটে ব্যাং লাফিয়ে পড়েছে তাঁর গায়ে। তিনি হাঁইমাই করে চেঁচিয়ে উঠতেই দোতলার জানলা থেকে একলাফে ব্যাংটা নেমে গেছে সদর রাস্তায়।

    উকিলের ড্রয়ারে মামলা গজায়, টাকাও গজায়, কিন্তু ব্যাং যে গজায় এমন কথা কোনও অভিধানে লেখেনি। পরপর তিনটে চায়ের পেয়ালা আর একটা মস্ত জামবাটি ভেঙে ফেলে জগন্নাথবাবু সারা বাড়িময় দাপাদাপি করে বেড়াতে লাগলেন; ঝন্টু ঝন্টু

    ভাঁড়ারের অন্ধকার কোনায় ঝন্টু তখন ধ্যানস্থ। একেবারে পরমহংসত্ব লাভ করে বসে আছে। দুগালে ছানাবড়া, চোখদুটোও বেরিয়ে আসছে ছানাবড়ার মতো।

    অর্থাৎ জগন্নাথবাবু শুধু ব্যাংই দেখেছেন। তাঁর অজ্ঞাতে কত বড় আর-একটা সর্বনাশ যে ঘটতে চলেছে তা তিনি টেরও পাননি।

    সকালে কেষ্টনগর থেকে তাঁর একজন মক্কেল এসেছিল। জগন্নাথবাবুর মতে মক্কেল মানে বে-আক্কেল জীব, পয়সা দেবার নামেই চোখ উলটে যায় তাদের। কিন্তু এ-মক্কেলটি লোক ভালো। টাকা তো তাঁকে দিয়েছেই, সেই সঙ্গে একহাঁড়ি ছানাবড়া।

    জগন্নাথবাবু খাওয়া-দাওয়া করতে একটু ভালোই বাসেন। তা ছাড়া ভালো জিনিস খেতে তাঁর আরও ভালো লাগে। ভেবেছেন, বিকেলে বেশ দরদ দিয়ে ওগুলো সাবাড় করবেন। তাই নিজের হাতেই লুকিয়ে রেখেছেন ভাঁড়ারে, বাড়ির কাকপক্ষীতেও টের পায়নি।

    কিন্তু কাকপক্ষীতে টের না পেলেও ঝন্টু পাবে না এর কী মানে আছে।

    অতএব

    অতএব কটকটে ব্যাংয়ের দ্বারা বিপর্যস্ত জগন্নাথবাবু যখন ঝন্টুর হাড়-মাংস গুড়ো করে চাপ বানিয়ে খাওয়ার জন্যে লাফাচ্ছেন, তখন উলটে ঝন্টুই তাঁকে খেয়ে ফেলেছে, মানে তাঁর ছানাবড়াকে।

    –ঝন্টে–ঝন্টি–ঝন্টা–ওরে হারামজাদা

    ভদ্রলোক চেঁচিয়ে যাচ্ছেন সমানে। এমন সময় উড়ে চাকর দাশরথি ঘটনাস্থলে প্রবেশ করলে।

    বাবু, ম দেখিথিলা–

    কী দেখেছিস?

    –ছোটবাবু ভাণ্ডারে ঢুকি ছানাবড়া খাইথিলা–

    অ্যাঁ!–জগন্নাথ ধাবিত হলেন ভাঁড়ারের দিকে।

    কিন্তু ঝন্টুর কান অনেক খাড়া। এসব বড়বিদ্যার ব্যাপারে হাত পাকাতে হলে অনেক হুঁশিয়ার থাকতে হয়। জগন্নাথ ভাঁড়ার পর্যন্ত পৌঁছুবার আগেই ঝন্টু লাফিয়ে পড়ল উঠনে, তারপর সদর রাস্তা দিয়ে–

    –আজ ওরই একদিন, কি আমারই একদিন।–গর্জন করলেন জগন্নাথ চাকলাদার। তাঁর টিকিতে একটা জবাফুল বাঁধা ছিল, প্রতিজ্ঞা শুনে সেটাও যেন নেচে উঠল তড়াক করে।

    কিন্তু ততক্ষণে টালিগঞ্জের রাস্তায় ঝন্টু হাওয়া।

    –যাবে কোথায়? কান ধরে টেনে আনব না। নিপাত করে ছাড়ব আজ-জগন্নাথ প্রতিজ্ঞা করলেন। তারপর টিকিটাকে আর একবার নাচিয়ে যাত্রা করলেন পুত্রবধের মহৎ উদ্দেশ্যে।

    হায়, তখন কি তিনি জানতেন

    না, জানতেন না। জানতেন না সিধু নন্দী আর বিধু দত্ত গাঁজা খেয়ে ভাম হয়ে বসে আছে। আরও জানতেন না, তারা একটা দুর্দান্ত কিছু করে ফেলবে বলে দস্তুরমতো বদ্ধপরিকর।

    হারানমুদির দোকানের সামনে একটা দড়ির খাটিয়ায় বসেছিল দুজনে। মুখ থেকে খানিকটা দুর্গন্ধ ধোঁয়া ছেড়ে দিলে সিধু নন্দী। তারপর :

    সুনেচিস বিধু, কলকাতায় ছেলেধরা এসেছে।

    সিধু নন্দীর মুখে শ বেরোয় না সব S।

    কী করা যায় বল দিকি?

    গাঁজা খেলেই বিধু দত্তের মুখ দিয়ে হিন্দী বেরুতে থাকে। গোঁফে তা দিয়ে বললে, জানসে মার দেগা, আউর কেয়া?

    সিধু বললে, সেদিন শ্যামবাজারে দুটো ছেলেধরা ধরেছে। আমরা একটাও পেলাম না। কী দুঃখের কথা বল দিকি। কেমন চমৎকার হাতের সুখ করে নেওয়া যেত।

    –এ তো বাত ঠিকই হ্যায়।-বিধু গোঁফে চাড়া দিলে : বুঝলি, হামলোককা নসিব খারাপ। এক ব্যাটাকে পাতা তো পিটকে পিটকে একদম ছাতু বানা দেতা

    -সত্যি, একটা ছেলেধরা ঠ্যাঙাতে না পারলে আর প্রাণে সুখ নেই–সিধু দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

    বিধু বললে, যা বলেছিস। ছেলেধরাই যদি পিটতে না পারলুম, তবে বেঁচে থেকে আর কেয়া সুখ যায়। চল, হিমালয়মে যাই হামলোক। সাধু বন যাই বিধুর গলার স্বরে নিদারুণ বৈরাগ্যের আভাস।

    সিধু আরও করুণ কী একটা বলতে যাচ্ছিল, এমন সময় :

    বিধু হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল তড়াক করে। গোঁফে চাড়া দিয়ে বললে, এই, দেখতা হ্যায়?

    -কী রে?

    –একঠো টিকিওলা আদমি এক বাচ্চাকে টানতে টানতে লে যাতা হ্যায়।

    –তাই তো। সিধুও লাফিয়ে উঠল : এই যে হিচকে নিয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাটা কাঁদছে, যেতে চাইছে না। হুম!

    –তা হলে

    কোনও সন্দেহ নেই, নির্ঘাত ছেলেধরা। টালিগঞ্জের রাস্তা নির্জন দেখে–ছেলেটাকে

    মারো উসকো–বিধু লাফিয়ে পড়ল : জান্‌সে মার দো—

    –জয় হিন্দ। রণহুঙ্কার ছাড়ল সিধু নন্দী। তারপর দুজনে তাড়া করল ছেলেধরাকে।

    টিকিওলা আদমি প্রথমটায় কিছু বুঝতে পারেনি, পেছন থেকে পিঠের ওপর একটি রাম-কিল পড়তেই ক্যাঁক করে উঠল সে।

    এই মারছ কেন?

    –মারব না? তুমি তো ছেলেধরা–আর একটা চাঁটি পড়ল টাকের ওপর।

    বা রে, এ আমার নিজের ছেলে

    –সকলেই ওরকম বলে বিশেষ করে পরের ছেলে গায়েব করতে হলে গালে একটি থাপ্পড় পড়ল।

    জগন্নাথ এবারে রুখে উঠলেন : রাস্তার মধ্যে এসব কী মশাই। নিরীহ লোককে ধরে মার দেওয়া? আমি পুলিশ ডাকব।

    –পুলিশ ডাকবে। তার আগে পুলটিশ করে ছাড়ব তোমার–এবার টিকিতে হ্যাঁচকা টান পড়ল একটা! রামটান যাকে বলে!

    উঃ গেছি-গেছি–জগন্নাথ আর্তনাদ করে উঠলেন : এই ঝন্টে, তুই বল না? আমি কি ছেলেধরা? আমি কি তোর বাবা নই?

    ঝন্টুর তখনও কান দুটো টনটন করছে জগন্নাথের কড়া হাতের মোচড়ে। একবার চোখ পিটপিট করে উঠল তার। তারপর বললে, তা তো জানি না। তুমি আমাকে এমন মেরেছ। যে আমার বাপের নাম ভুলিয়ে দিয়েছ। আমার কি এখন মনে আছে তুমি আমার বাবা কি না!

    জগন্নাথ কেঁদে বললেন, ওরে ঝন্টে, তোর মনে কি এই ছিল? আমি কি তোর বাবা নই? আমিই কি তোর বাপ জগন্নাথ চাকলাদার নই?

    ঝন্টু বললে, কী জানি, মনে পড়ছে না।

    সিধু গর্জে বললে, তবে রে ব্যাটা মিথ্যুক—

    বিধু হেঁকে বললে, টিক্কি উখার লেও উসকো

    তারপরে যা ঘটল তা প্রলয়।

    –মার মার–ছেলেধরা—

    সিধুর চাঁটি চলছে, বিধুর কিল। ঝন্টুর মুখে হাসি দেখা দিল। হ্যাঁ, মন্দ হয়নি এতক্ষণে। তাকে রাস্তায় ধরে যে-পরিমাণে ঠ্যাঙানি দিয়েছিল জগন্নাথবাবু তা উসুল হয়ে গেছে সুদে-আসলে।

    জগন্নাথবাবু তখন গোঙাচ্ছেন : ঝন্টু ঝন্টু ঝন্টু! বাপ আমার

    ঝন্টু বললে, গায়ে হাত তুলবে আর?

    জগন্নাথ গোঙাতে লাগলেন : নাকে খত।

    ছানাবড়া?

    সব তোর। দু হাঁড়ি মিঠাই এনে দেব আরও—

    মনে থাকবে?

    –আর ভুল হয়? এখন আমায় বাঁচা বাপধন

    ততক্ষণে চারদিকে লোকে লোকারণ্য :কী! কী হয়েছে?

    ঝন্টু চেঁচিয়ে উঠল, ওগো, তোমরা দাঁড়িয়ে দেখছ কী…দুটো ছেলেধরা যে আমার বাবাকে মেরে ফেলল।

    সিধু বিধু আঁতকে উঠল।

    ঝন্টু বললে, সত্যি বলছি মশাইরা। এই লোকদুটো আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল, বাবা বাধা দেওয়াতে এরা–

    আর বলতে হল না।–মারো ব্যাটাদের–তিন-চারশো লোক ঝাঁপ দিয়ে পড়ল সিধু-বিধুর ওপরে।

    বিধু চেঁচাতে লাগল : শুনুন মোশাইরা–শুনিয়ে আপলোগ—

    কিন্তু কে শোনে তার কথা। হাটুর কিল তখন চলছে পাইকারি হারে। টালিগঞ্জের রাস্তায় কুরুক্ষেত্র কাণ্ড!

    ওদিকে একফাঁকে পাশের গলি দিয়ে কেটে পড়েছে পিতাপুত্র।

    অনেকটা এগিয়ে যখন সম্পূর্ণ নিরাপদ বোধ হল, তখন ঝন্টু ডাকল : বাবা!

    কী বাপধন? সুধামাখা গলায় জগন্নাথ বললেন :কী চাই?

    ছানাবড়া?

    –আরও দুহাঁড়ি এনে দেব। তোমার জন্যই তো সব–জগন্নাথের গলার স্বরে ছানাবড়ার রস ঝরে পড়ল যেন।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    Related Articles

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.